চেনাজানা যেসব ওষুধ আপনার জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে দীর্ঘমেয়াদে ব্যথার ঔষধ খেলে আপনার যেসব জটিল রোগ হতে পারে

সাধারণত ব্যথার ঔষধ বলতে বোঝায় যে ঔষধ ব্যথা উপশম করে। শরীরের কোথাও চোট পেলে বা চিকিৎসা পরবর্তী যেমন- সার্জারি পরবর্তী ব্যথা উপশম করে যে ঔষধ। এটা এমন একটি ঔষধ যা আপনাকে অজ্ঞান না করে ব্যথা থেকে মুক্তি দেয়।

ব্যথানাশক ঔষধ সাধারণত দুই ধরণের। অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি অ্যানালজেসিক (anti inflammatory analgesic) এবং অপয়েড অ্যানালজেসিক (Opioid Analgesics)। অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি অ্যানালজেসিক প্রদাহ কমায়, এবং এবং অপয়েড অ্যানালজেসিক মস্তিষ্কের ব্যথা বোঝার উপায় পরিবর্তন করে। কিছু ব্যথানাশক ওষুধ প্রেসক্রিপশন ছাড়া কেনা যায়, অধিকাংশ ব্যথানাশক ঔষধ কেনার জন্য প্রেসক্রিপশন প্রয়োজন।  

ব্যথানাশক ঔষধের অপব্যবহার

দৈনন্দিন জীবনে ব্যথা এবং অস্বস্তি প্রায়ই ওভার-দ্য-কাউন্টার (OTC) ব্যথানাশক ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। এই ওষুধগুলি অনেক বেশি নিরাপদ, কিন্তু নিয়মিত ব্যবহারে গুরুতর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও ঘটতে পারে। প্রাথমিক মাথাব্যথা, অন্যান্য নির্দিষ্ট ব্যথা এবং জ্বরজনিত অসুস্থতার জন্য পশ্চিমা দেশগুলির জনসংখ্যার ৭০% পর্যন্ত নিয়মিত ব্যথানাশক ব্যবহার করে থাকে। যদিও সাধারণ ক্ষেত্রে এইসব ঔষধ নিরাপদ বলে গন্য করা হয় কিন্তু নিয়মিত ব্যবহার ডেকে আনতে পারে মারাত্বক বিপদ। দীর্ঘমেয়াদে ব্যথানাশক ঔষধ পাকস্থলিতে ক্ষত, পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা এমনকি কিডনীর কার্যকারীতা কমিয়ে ফেলতে পারে।

একটি বিষয় ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করুন। যখন কোন ব্যথাজনিত কারণ বা অসুখে আপনার নিয়মিত ব্যথানাশক ঔষধ সেবন করতে হচ্ছে, তার অর্থ ঔষধটি আপনার উপসর্গ কমিয়ে রাখতে সাহায্য করছে। অথচ, মূল অসুখের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া। এক্ষেত্রে যদি আপনি ঘরোয়াভাবে প্যারাসিটামল চিকিৎসাই চালিয়ে যান, তবে একে তো নিজের ক্ষতি করছেনই, তার সঙ্গে মূল অসুখের পরিণতিও খারাপের দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলছেন।

প্রতিদিন ৪ গ্রামের বেশি বা দীর্ঘ সময় ধরে প্যারাসিটামল এর ব্যবহার, অপব্যবহার হিসাবে বিবেচনা করা হয়। যারা অত্যধিক পরিমাণে OTC ব্যথানাশক ব্যবহার করেন তাদের দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা, বিষণ্ণতা বা ডিসথেমিয়ার জন্য আরও কার্যকর চিকিত্সার প্রয়োজন হতে পারে।

ব্যথানাশক ঔষধ অপব্যবহারের উপসর্গ এবং প্রভাব

ব্যথানাশক ঔষধের অপব্যবহারে, ঔষধের ইন্টারএকশানের কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হয়। যার পরিণতি হতে পারে খিঁচুনি, কোমা এমনকি মৃত্যু!

ব্যথানাশক ঔষধের অপব্যবহারের কারণে বিভিন্ন লক্ষন ও উপসর্গ যেমন মাইগ্রেনের মাথাব্যথা, গ্যাস্ট্রাইটিস, পেপটিক আলসার, অ্যানিমিয়া,  এবং মানসিক রোগ দেখা দিতে পারে।

দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব

অপয়েডের ক্রমাগত ব্যবহার বা অপব্যবহারের ফলে শারীরিক নির্ভরতা এবং আসক্তি হতে পারে। শরীর ওষুধের উপস্থিতির সাথে খাপ খায় এবং ব্যবহার হ্রাস বা বন্ধ হলে বিভিন্ন ধরনের প্রভাব পড়ে। এর মধ্যে রয়েছে অস্থিরতা, পেশী এবং হাড়ের ব্যথা, অনিদ্রা, ডায়রিয়া, বমি ইত্যাদি। তাছাড়া পরিপাকতন্ত্রে আলসার ও কিডনী জটিলতার সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

স্বল্পমেয়াদী প্রভাব

অপয়েড এবং মরফিন ডেরিভেটিভের স্বল্পমেয়াদী প্রভাবগুলির মধ্যে রয়েছে:

দীর্ঘদিন ব্যথার ঔষধ খেলে স্বাস্থ্যের উপর কি ধরনের প্রভাব পড়ে? 

দীর্ঘদিন ব্যথার ঔষধ খেলে স্বাস্থ্যের উপর কি ধরনের প্রভাব পড়ে এটা জানা প্রত্যেকটি মানুষের জন্য খুবই জরুরী। ব্যথানাশক ওষুধের দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের উপর কি ধরনের প্রভাব ফেলে তা নিচে আলোচনা করা হলঃ

কিডনির উপর প্রভাব

নির্দিষ্ট ব্যথানাশক ওষুধের দীর্ঘমেয়াদী এক্সপোজার কিডনির ছোট ফিল্টারিং রক্তনালীকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এটি ব্যথানাশক নেফ্রোপ্যাথি, একটি দীর্ঘস্থায়ী কিডনি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

আপনি যদি অ্যাসপিরিন, নেপ্রোক্সেন এবং আইবুপ্রোফেনের মতো বেশি পরিমাণে ওভার-দ্য-কাউন্টার ওষুধ খান তাহলে আপনার কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে প্রথমে কথা না বলে এই ওষুধগুলির কোনটিই প্রতিদিন বা নিয়মিত গ্রহণ করা উচিত নয়।

লিভারের উপর প্রভাব

প্রেসক্রিপশন ছাড়া ব্যথা উপশমকারী যেমন প্যারাসিটামল, অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রোফেন এবং নেপ্রোক্সেন আপনার লিভারের ক্ষতি করতে পারে, বিশেষ করে যদি ঘন ঘন গ্রহণ করা হয় বা অ্যালকোহলের সাথে মিলিত হয়।

এসব ওষুধের দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারের ফলে লিভারের সিরোসিস বা দীর্ঘস্থায়ী লিভারের ক্ষতি হয়। যাইহোক, কিছু ওষুধ এবং এর সম্পূরক যখন একা নেওয়া হয় বা অন্যান্য ওষুধের সাথে মিশ্রিত করা হয়, তখন আপনার লিভারের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।

হার্টের উপর প্রভাব

অপয়েড ব্যথার ঔষুধগুলি আপনাকে কার্ডিওভাসকুলার অবস্থার জন্য আরও বেশি ঝুঁকিতে ফেলতে পারে যার মধ্যে রয়েছে- 

পরিপাকতন্ত্রের উপর প্রভাব

অপয়েড রিসিপ্টর গুলো পাকস্থলীতে অনেক বেশী ঘন থাকে তাই পাকস্থলীতে অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়। 

অপয়েড ঔষধ বন্ধ করার প্রধান কারন হল গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যেমন বমি বমি ভাব, গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং পাকস্থলীতে ঘা।

কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের উপর প্রভাব

কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের রিসিপ্টর গুলো সক্রিয় হওয়ার ফলে ঘুম ঘুম ভাব, মানসিক ক্লাউডিং, রেস্পিরেটরি ডিপ্রেশন এবং উচ্ছ্বাসের মত প্রভাবগুলো দেখা যায়। রোগীরা সাধারণত এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও অপয়েডের ব্যথানাশক প্রভাবের প্রতি সহনশীল হয়ে ওঠে অর্থাৎ একই প্রতিক্রিয়া তৈরী করতে উচ্চমাত্রার ঔষধের প্রয়োজন হয়।

গর্ভাবস্থায় ব্যথানাশক খাওয়া যাবে কিনা?

গবেষনা মতে, গর্ভাবস্থায় এসিটামাইনোফেন (Acetaminophen) জাতীয় ঔষধ নিরাপদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু NSAIDs and Opioids জাতীয় ঔষধের কারণে গর্ভপাতের মতো ঘটনা ঘটতে পারে। তাই ব্যথা নাশক ঔষধ গ্রহনের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ।

ব্যথার ঔষধ খাওয়ার সঠিক নিয়ম

আপনি যদি নিজে চিকিৎসার জন্য এই ঔষুধটি গ্রহণ করেন তবে ঔষধের প্যাকেজের সমস্ত নির্দেশাবলী অনুসরণ করুন। আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে, আপনার ডাক্তার বা ফার্মাসিস্টকে জিজ্ঞাসা করুন। যদি আপনার ডাক্তার আপনাকে ঔষুধটি খাওয়ার নির্দেশ দেন, তবে এটি ঠিক যেভাবে দেওয়া হয়েছে সেভাবে গ্রহণ করুন।

মুখ দিয়ে ঔষধ গ্রহণের সময়  এটির সাথে এক গ্লাস পানি (৮ আউন্স/২৪০ মিলিলিটার) পান করুন যদি না আপনার ডাক্তার আপনাকে অন্যরকম কিছু বলে। 

ঔষুধটি গ্রহণ করার সময় যদি পেটে কোন অস্বস্তি হয় তবে আপনি এটি খাবার বা দুধের সাথে নিতে পারেন।

এন্টেরিক-কোটেড ট্যাবলেট পুরোটা গিলে ফেলুন। এন্টেরিক-কোটেড ট্যাবলেটগুলি গুড়ো করে বা চিবিয়ে খাবেন না। এমনটা করলে পেটের পীড়া বাড়তে পারে।

এক্সটেন্ডেড-রিলিজ ট্যাবলেট বা ক্যাপসুলগুলিকে গুড়ো করে বা চিবিয়ে খাবেন না। এটি করার ফলে সমস্ত ঔষুধ একবারে বের হতে পারে যেটা পরবর্তীতে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলির ঝুঁকি বাড়ায়। 

এছাড়াও, এক্সটেন্ডেড-রিলিজ ট্যাবলেটগুলিকে বিভক্ত করবেন না, যদি না তাদের একটি স্কোর লাইন থাকে এবং আপনার ডাক্তার বা ফার্মাসিস্ট আপনাকে তা করতে বলেন। পিষে বা চিবানো ছাড়া পুরো বা বিভক্ত ট্যাবলেট গিলে ফেলুন।

কখন ব্যথার ঔষধ খাওয়া যাবে? 

ব্যথা এবং প্রদাহ উপশম করতে ব্যথানাশক ব্যবহার করা হয়। উদাহরণ স্বরূপ,

ইত্যাদি কারণে বিভিন্ন সময় আমাদের ব্যথানাশক ঔষধ গ্রহণ করতে হয়।

হঠাৎ জ্বর হলো, কিংবা কোন কারণে গায়ে ব্যাথা হলো এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ ব্যথার ঔষধ সেবন করতে পারেন। কিন্তু কোন অবস্থাতেই এটি দৈনন্দিন জীবনের অংশ বানিয়ে ফেলা ঠিক নয়। কোন অসুখ দুই-তিন দিনে না সারলে বা ক্রমাগত ফিরে আসতে থাকলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করবেন।

FOR MORE CLICK HERE

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]