ঔষধের জেনেরিক নাম ও কাজ ঔষধের ব্র্যান্ড এবং জেনেরিক নাম বলতে কি বুঝায়?

আপনি অসুস্থ হয়ে যখন ডাক্তারের কাছে যান, ডাক্তার আপনার রোগের অবস্থা বুঝে একটি প্রেসক্রিপশনে ঔষধের নাম লিখে থাকেন। এরপর ফার্মেসিতে গিয়ে প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে য়াম্রা ঔষধ ক্রয় করি। কিন্তু কখনও খেয়াল করেছেন যে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনের সাথে আপনার কেনা ঔষধের নামের মিল থাকলেও ঐ ঔষধের নামের সাথে আরেকটা নাম লেখা থাকে। এর কারণ কি? 

আবার অনেক সময় প্রেসক্রিপশনের লেখা ঔষধ না পাওয়া গেলে অন্য নামের একই ধরণের ঔষধ কিনে থাকি। কিন্তু প্রেসক্রিপশনের নামের সাথে মিল না থাকলেও অন্য নামের ঔষধ কেন কিনি?

আসলে এই নাম বিভ্রাট কিন্তু জটিল কোন সমস্যা নয়। আমাদের কেউ কখনও ঠিকভাবে জানায়নি অথবা আমরা কখনও জানতে চেষ্টা করি নি।  আসুন আজকেই ঔষধের এই নাম বিভ্রাট থেকে নিজেকে মুক্ত করি।

 

ঔষধের নামকরণ

আমরা সবাই জানি অসুস্থ হলে আরোগ্যলাভের জন্য ডাক্তারের পরামর্শে নির্দিষ্ট মাত্রায় যে উপাদান খাই তাই হচ্ছে ঔষধ। একে আমরা অনেক সময় মেডিসিন বা ড্রাগও বলে থাকি।

ড্রাগগুলির প্রায়শই বেশ কয়েকটি নাম থাকে। যখন কোনও ড্রাগ প্রথম আবিষ্কার হয়, তখন তাকে রাসায়নিক নাম দেওয়া হয়, যা ড্রাগের পারমাণবিক বা আণবিক কাঠামো বর্ণনা করে। রাসায়নিক নামটি সাধারণত ব্যবহারের জন্য খুব জটিল। এরপরে গবেষকরা কাজের সুবিধার্থে রাসায়নিক নাম বা কোড নামের সংক্ষিপ্ত রূপ ব্যবহার করেন (যেমন, আরইউ-৪৮৬)।

জেনেরিক নাম

যখন কোনও ড্রাগ কোনও ঔষধ প্রশাসন কর্তৃক অনুমোদিত হয় তখন এটিকে একটি নাম দেওয়া হয়। একেই জেনেরিক (অফিসিয়াল) নাম বলে। একটি ঔষধের জেনেরিক নাম সবসময় একই থাকে এবং সেটা ঐ নামেই সব জায়গায় পরিচিত থাকবে। আসলে জেনেরিক নামটাই ঔষধের সক্রিয় উপাদান (অ্যাকটিভ ইনগ্রিডিয়েন্ট)। উদাহরণস্বরূপ “অ্যাসপিরিন” একটি ঔষধের জেনেরিক নাম যা ব্যথা, জ্বর বা প্রদাহ হ্রাস করতে ব্যবহৃত হয়।

ব্র্যান্ড নাম

এরপর বিভিন্ন ফার্মাসিউটিকাল প্রতিষ্ঠান ঐ জেনেরিক ঔষধের একটি নির্দিষ্ট নাম দিয়ে তাদের প্রতিষ্ঠানের নামে বাজারজাত করে। যাকে আমরা ব্র্যান্ড নাম (মালিকানাধীন বা ট্রেডমার্ক বা বাণিজ্য নাম) বলে থাকি। উদাহরণস্বরূপ “ইকোস্প্রিন” একটি প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড নাম যার জেনেরিক নাম হচ্ছে “অ্যাসপিরিন”।

কয়েকটি উদাহরণ দিলে আপনারা সহজেই জেনেরিক আর ব্র্যান্ড নামের পার্থক্য বুঝতে পারবেন।

১. আমাদের সাধারণ জ্বর বা মাথা ব্যাথা হলে সবার আগে যে ঔষধটা খেয়ে থাকি তা হচ্ছে প্যারাসিটামল। “প্যারাসিটামল” হল জেনেরিক নাম এবং “নাপা” বা “এইস” একই ড্রাগের দুটি ফার্মাসিউটিকাল প্রতিষ্ঠানের দুটি ভিন্ন ব্র্যান্ড নাম। অর্থাৎ ঔষধ কিন্তু একই থাকল তবে প্রতিষ্ঠান ভিক্তিক নাম আলাদা হয়ে গেল। 

২. “ওমিপ্রাজোল” একটি জেনেরিক নাম যা গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই ওমিপ্রাজোলের দুটি ব্র্যান্ড নাম হচ্ছে “লোসেকটিল” এবং “সেকলো”।

বাংলাদেশে আমরা একটি জেনেরিক নামের বিপরিতে অনেক ব্র্যান্ড নাম পাব কারণ আমাদের অনেকগুলি ফার্মাসিউটিকাল প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

                                                    টেবিল-১ঃ ঔষধের নামের বিভিন্নতা

জেনারিক নামগুলি সাধারণত ব্র্যান্ডের নামগুলির চেয়ে বেশি জটিল এবং মনে রাখা শক্ত। অনেক জেনেরিক নামগুলি ড্রাগের রাসায়নিক নাম, কাঠামো বা সূত্রের সংক্ষিপ্ত সংস্করণ। বিপরীতে ব্র্যান্ডের নামগুলি সাধারণত আকর্ষণীয়, প্রায়শই ঔষধের উদ্দেশ্যে ব্যবহারের সাথে সম্পর্কিত এবং মনে রাখা অপেক্ষাকৃত সহজ, যাতে চিকিৎসকরা প্রেসক্রিপশনে ঔষধ লিখতে পারে এবং রোগীরা সেই নাম অনুসারে সন্ধান করতে পারে। 

ব্র্যান্ডের নামগুলি ঔষধের একটি বৈশিষ্ট্য প্রায়শই নির্দেশ করে। উদাহরণস্বরূপ, “ওমিগাট” ঔষধটি গ্যাস্ট্রিক সমস্যার জন্য অর্থাৎ গাট (গ্যাস্ট্রো ইনটেস্টিনাল ট্র্যাক্ট) নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। আবার কখনও ব্র্যান্ডের নামটি ড্রাগের জেনেরিক নামটির একটি সংক্ষিপ্ত সংস্করণ। উদাহরণস্বরূপ,”মেটফো” ঔষধের জেনেরিক নাম “মেটফোরমিন” যা ডায়াবেটিসের জন্য ব্যবহৃত হয়।

 

বিকল্প ব্র্যান্ডের ব্যাপারে আপনি কিভাবে জানবেন?

একই সক্রিয় উপাদান সহ অনেকগুলি ঔষধ কয়েকটি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের অধীনে পাওয়া যায়: একটি আসল ব্র্যান্ড এবং কখনও কখনও কয়েকটি ব্র্যান্ড। তারা একইভাবে কাজ করে তবে একেক ব্র্যান্ডের একেক নাম এবং বিভিন্ন প্যাকেজিং (মোড়কজাত) রয়েছে।

আপনার যদি ব্র্যান্ডের ব্যাপারে কোন কিছু জানা না থাকে তবে নিম্নোক্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে বিকল্প ব্র্যান্ডের ধারণা পাবেন। 

আপনি চাইলেই উপরোক্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে জেনে আপনার ঔষধের ব্র্যান্ডটি পরিবর্তন করতে পারেন।

 

বিকল্প ব্র্যান্ড ব্যবহার করলে কী কোন পার্থক্য হবে?

যতক্ষণ না ঔষধের সক্রিয় উপাদান এবং শক্তিমাত্রা একই থাকে, বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে ব্র্যান্ডের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। সক্রিয় উপাদানটা (জেনেরিক) কী সেটাই কী গুরুত্বপূর্ণ। সক্রিয় উপাদানটি ঔষধের রাসায়নিক যা আমাদের শরীরে কাজ করে।

সুতরাং যদি আপনাকে কোনও বিকল্প ব্র্যান্ডের প্রস্তাব দেওয়া হয় তবে আপনি আত্মবিশ্বাসের সাথে বিশ্বাস রাখতে পারেন যে এটি একইরকম কাজ করবে। তবে সেটা আপনি নিবেন কিনা তা আপনার পছন্দ।

 

বিকল্প ব্র্যান্ড পরিবর্তনে আপনার কী দায়িত্ব আছে?

যখন আপনার ফার্মাসিস্ট আপনাকে বিকল্প ব্র্যান্ড সরবরাহ করে, তখন সেটিতে সর্বদা আপনার প্রেসক্রিপশনে লেখা ঔষধের মতো একই সক্রিয় উপাদান থাকে। সুতরাং যদি আপনাকে কোনও প্রস্তাব দেওয়া হয়, তবে এটি ঠিক আছে।

তবে আপনাকে যদি বিকল্প ব্র্যান্ডের ঔষধের প্রস্তাব দেওয়া হয় তখন পাঁচটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন:

১. আমার ঔষধের জন্য আলাদা ব্র্যান্ড চয়ন করা কি ঠিক আছে?

২. আমি যদি অন্য ব্র্যান্ড ব্যবহার করি তবে আমার জন্য কী কী সুবিধা এবং অসুবিধাগুলি রয়েছে?

৩. দামের কোন পার্থক্য আছে কিনা?

৪. আমার কোন ঔষধটি প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে?

৫. আমার ঔষধে সক্রিয় উপাদান কী?

সব যদি ঠিকঠাক থাকে তখন আপনি আপনার ঔষধের ব্র্যান্ডটি পরিবর্তন করতে পারবেন।

 

জেনেরিক এবং ব্র্যান্ড ঔষধগুলি সরকার কর্তৃক অনুমোদিত 

বাংলাদেশে বিক্রি হওয়া সমস্ত ঔষধগুলি বাংলাদেশ ঔষধ প্রশাসন (ডিজিডিএ) এর মাধ্যমে সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হতে হবে। বাংলাদেশের সব ফার্মাসিউটিকাল প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফার্মাকোপিয়ার মান অক্ষুণ্ণ রেখে ঔষধ তৈরি করে। এটি প্রেসক্রিপশন এবং ওভার-দ্য কাউন্টার ঔষধ উভয়ের জন্য প্রযোজ্য। একই জেনেরিকের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের  মান, সুরক্ষা এবং কার্যকারিতা অবশ্যই কাছাকাছি থাকবে। বাংলাদেশ ঔষধ প্রশাসন এই বিষয়গুলি খেয়াল রাখেন।

এটি জেনেরিক বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বায়োইকভ্যালেন্ট একই থাকবে। এর অর্থ এই যে সক্রিয় উপাদানটি অভিন্ন এবং ঔষধটি শরীরে একই প্রভাব ফেলতে তৈরি করা হয়েছে। তাই আপনি আত্মবিশ্বাসের সাথে বলতে পারেন যে আপনার প্রেসক্রিপশনের ব্র্যান্ডটি এবং বিকল্প ব্র্যান্ডটি একই সম্ভাব্য স্বাস্থ্য সুবিধা অর্জন করবে। সম্ভাব্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলিও একই রকম হবে।

 

কখন আপনাকে বিকল্প ব্র্যান্ডের প্রস্তাব দেওয়া হবে না

একটি জেনেরিক ব্র্যান্ডের ঔষধ অন্য ব্র্যান্ডের তুলনায় সস্তা হতে পারে। যদি ফার্মাসিস্টের আপনার সাধারণ ব্র্যান্ড স্টক না থাকে তবে আপনি জেনেরিক ব্র্যান্ড ব্যবহার করতে পারেন এবং আপনার ঔষধের স্বাভাবিক সুবিধা পেতে পারেন।

তবে কখনও কখনও আপনাকে বিকল্প ব্র্যান্ডের প্রস্তাব দেওয়া হবে নাঃ

যদি আপনার ডাক্তার প্রেসক্রিপশনে ব্র্যান্ডের বিকল্পের অনুমতি না দিয়ে থাকে তবে তা ফার্মাসিস্টকে জানবেন। আর আপনি পরিবর্তন করতে না চাইলে আপনি নিজের স্বাভাবিক ব্র্যান্ডের জন্যও অনুরোধ করতে পারেন।

আবার কিছু ক্ষেত্রে আপনি ব্র্যান্ডগুলি পরিবর্তন না করতে পারেন।

মনে রাখবেন, বিকল্প ব্র্যান্ডের মধ্যে পছন্দটি আপনার। আপনার চিকিৎসক বা ফার্মাসিস্টের সাথে আপনার বিকল্পগুলির সাথে আলোচনা করে আপনার পছন্দগুলি সম্পর্কে অভিহত হন।

 

ঔষধের তালিকা লিপিবদ্ধ রাখুন

আপনার ঔষধের সমস্ত নাম একটি ঔষধের তালিকায় লিপিবদ্ধ করুন। আপনাকে, আপনার চিকিৎসক এবং আপনার ফার্মাসিস্ট আপনার ঔষধ এবং ব্র্যান্ডের পছন্দ করতে সহায়তা করতে পারে। এটি আপনার ঔষধের সক্রিয় উপাদানগুলির নাম মনে রাখার একটি সহজ উপায়। যদি কেউ আপনার যত্ন নিতে সহায়তা করে তবে তাদের জন্য একটি অনুলিপি রাখা আপনার পক্ষে দরকারী।

FOR MORE CLICK HERE

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]