অসুস্থ হওয়ার পর রোগ থেকে মুক্তির জন্য ঔষধই আমাদের একমাত্র ভরসা। কিন্তু প্রায়ই দেখা যায় আমরা ঔষধ খেতে ভুলে যাই। আপনি যত বেশি ঔষধ খাবেন, সেগুলি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মনে রাখা তত বেশি কঠিন হয়ে পরে। আবার ঔষধ ঠিকমত গুছিয়ে রাখাও একটা ঝামেলার ব্যাপার।
আপনার ঔষধ সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য একসাথে রাখার জন্য একটি ঔষধের তালিকা কার্যকর উপায় হতে পারে। এটি আপনাকে এবং আপনার পরিবারকে স্বাস্থ্যকর রাখতে আপনাদের গ্রহণকৃত সমস্ত ঔষধের উপর নজর রাখতে সহায়তা করে। ঔষধের তালিকাটি আপনার চিকিত্সক, ফার্মাসিস্ট, হাসপাতাল বা অন্য স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের আপনার আরও ভাল যত্ন নিতে সহায়তা করে।
আপনার ঔষধের তালিকা দ্বারা আপনি নিম্নোক্ত তথ্যগুলি সংরক্ষণ করতে পারেনঃ
প্রেসক্রিপশন ঔষধ, নন প্রেসক্রিপশন ঔষধ, ওভার-দ্য কাউন্টার (ওটিসি ড্রাগ), খনিজ বা মিনারেল, ভেষজ, আয়ুর্বেদিক এবং প্রাকৃতিক ঔষধ সহ আপনি যে ঔষধগুলি ব্যবহার করেন সেগুলি
প্রতিটি ঔষধ কি জন্য অর্থাৎ কোন ঔষধ কি কাজে ব্যবহৃত হয়
প্রতিটি ঔষধ কত ব্যবহার করতে হবে অর্থাৎ দিনে কত বার খেতে হবে এবং কত দিন খেতে হবে
কখন এবং কীভাবে প্রতিটি ঔষধ ব্যবহার করবেন
ঔষধের তালিকাটি আপনাকে সাহায্য করবেঃ
আপনার ঔষধ সম্পর্কে আরও জানতে
আপনার ঔষধগুলি কখন এবং কিভাবে গ্রহণ করবেন তা আপনাকে স্মরণ করিয়ে দেয়
আপনার স্বাস্থ্যসেবাতে জড়িত সবাই নিশ্চিত হতে পারে যে আপনি কোন ঔষধ ব্যবহার করছেন
আপনার চিকিত্সক এবং ফার্মাসিস্টকে আপনার ঔষধগুলি পরীক্ষা এবং পর্যালোচনা করতে সহায়তা করে
জরুরী অবস্থায় আপনার ঔষধ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করবে
ঔষধ সম্পর্কিত জ্ঞান আপনাকে বিভিন্ন ভাবে সহায়তা করেঃ
আপনি যে ঔষধগুলি ব্যবহার করছেন সেগুলি থেকে আরও ভাল ফলাফল পেতে পারেন
আপনার চিকিত্সক বা ফার্মাসিস্টের সাথে পরামর্শের মাধ্যমে সর্বাধিক সুবিধা পাবেন
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এবং বিরূপ প্রতিক্রিয়া রোধ করতে সহায়তা করবে
ভাল স্বাস্থ্য উপভোগ করবেন
আপনি যে সমস্ত ঔষধ খাচ্ছেন প্রতিটি ওষুধের জন্য আপনার নিম্নোক্ত জিনিসগুলি লিখতে হবেঃ
আপনি যে সমস্ত ঔষধ খাচ্ছেন তার নাম (ব্র্যান্ড নাম এবং জেনেরিক নাম) এবং সাথে ডোস বা শক্তিমাত্রা। উদাহারণস্বরূপ, আপনি যদি “নাপা” নামে কোন ঔষধ খেয়ে থাকেন তবে এভাবে লিখে রাখুন - “নাপা (প্যারাসিটামল) ৫০০ মিলিগ্রাম”। এখানে, নাপা হচ্ছে ব্র্যান্ড নাম, প্যারাসিটামল হচ্ছে জেনেরিক নাম এবং ডোস বা শক্তিমাত্রা হচ্ছে ৫০০ মিলিগ্রাম।
ঔষধটি কি ধরণের (ডোসেস ফরম)। অর্থাৎ ঔষধটি কি ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, সিরাপ, ক্রীম, স্প্রে, ইনহেলার নাকি অন্য কিছু তা লিখে রাখুন।
ঔষধটি দেখতে কেমন তা লিখে রাখুন (গোলাকার, সাদা নাকি লাল, পরিষ্কার তরল ইত্যাদি)
আপনি কখন কি ঔষধ খাবেন (সকালে, দুপুরে, বিকেলে, রাতে, বিছানায় যাওয়ার আগে) সেটি ঔষধের নামের পাশে লিখে রাখুন।
আপনি ঔষধের কতটুকু গ্রহণ করেন (যেমন, ১ টি বড়ি, ৩ টি ড্রপ, ৩ পাফ ইত্যাদি)
ঔষধটি খাবারের আগে, পরে নাকি খাবারের সাথে খাবেন তাও লিপিবদ্ধ করুন
আপনি কীভাবে ঔষধটি গ্রহণ করেন (মুখে করে, নাকে, কানে নাকি শরীরের ত্বকে)
আপনি কবে ঔষধটি শুরু করেছেন (যেমন, ২ মার্চ ২০২০)
আপনি কবে ঔষধটি বন্ধ করবেন (যেমন, ৮ মার্চ ২০২০)
আপনি কেন ঔষধটি গ্রহণ করছেন (ব্যাথার জন্য, হৃদরোগের জন্য, ঠাণ্ডার জন্য, কোলেস্টেরল কমাতে ইত্যাদি)
কে আমাকে এটি ব্যবহার করতে বলেছিল (আমার পারিবারিক ডাক্তার, আমার হার্টের চিকিত্সক ইত্যাদি)
ঔষধের তালিকার ব্যাপারে আপনার নিম্নোক্ত বিষয়গুলি খেয়াল রাখতে হবেঃ
ঔষধের তালিকাটি সর্বদা আপনার সাথে রাখুন। এটিকে ভাঁজ করুন এবং এটি আপনার মানিব্যাগ বা পার্সে রেখে দিন। জরুরী পরিস্থিতিতে আপনার কাছে এটি থাকবে।
আপনি যখনই কোন ঔষধ নেওয়া বন্ধ করেন বা নতুন কিছু নেওয়া শুরু করেন, তা আপনার ঔষধের তালিকায় হালনাগাদ করে নিন।
যখন আপনি চিকিত্সকের কাছে যান, ফার্মাসিস্টের সাথে দেখা করেন, কোন পরীক্ষা করাতে যান, বা হাসপাতাল যান তখন এই তালিকাটি আপনার সাথে রাখুন।
আপনার ওষুধ সম্পর্কে আপনার যদি কোনও প্রশ্ন থাকে তবে আপনার ডাক্তার এবং রেজিস্টার্ড ফার্মাসিস্টের সাথে যোগাযোগ করুন।
সর্বোপরি ঔষধের ব্যাপারে আপনার কখনও অবহেলা করা উচিৎ নয়। ঔষধ যেমন আপনাকে সুস্থ্য করতে পারে আবার ঔষধের অপব্যবহার আপনাকে মারাত্মক ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। তাই ঔষধের তালিকা করে তা নিয়ম করে খাওয়া উচিৎ।