দুইজনের সংসারে নতুন কাউকে নিয়ে আসার কথা ভাবছেন? পরিবারের নতুন এই পদক্ষেপ নিয়ে সবার মধ্যে কাজ করে অনেক অনেক উত্তেজনা আর নানান রকমের চিন্তাভাবনা। তবে এই সমস্ত আশা-প্রত্যাশাকে সুস্থ একটা জীবন হিসেবে পৃথিবীতে স্বাগতম জানাতে চিন্তার পাশাপাশি প্রয়োজন যথাযথ পরিকল্পনারও। সন্তান জন্মের আগে থেকে গর্ভকালীন এবং এর পরবর্তী সময়ে একজন মা, বাবা ও একটি পরিবারের প্রয়োজন পরিকল্পনার। এতে করে শুধু সন্তান নয়, মায়ের সুস্থতা নিশ্চিত করাও সম্ভবপর হয়ে উঠবে।
এই সময় একজনের মায়ের মনে হরেক রকম প্রশ্নের জন্ম নিয়ে থাকে। মা হওয়ার উপযুক্ত সময় কখন? গর্ভকালীন আমার সন্তান সুস্থ থাকবে কোন খাবারগুলো খেলে? আমার ওজন কি সন্তানের স্বাস্থ্যের উপরে কোন প্রভাব ফেলবে? ইত্যাদি। গর্ভধারণ ও সন্তান জন্মদানের সময়কালীন সুস্থতা নিয়ে জানতে চাওয়া প্রশ্নগুলোর প্রথম পর্বে চলুন আজ একটু চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাকক।
গর্ভধারণ করার সবচাইতে সেরা সময় কোনটা, এই প্রশ্নের উত্তরটা ঠিক দুইরকম হতে পারে। একভাবে যদি বলা হয়, গর্ভধারণ করার জন্য একজন মা ও বাবা- দুজনেরই মানসিক, শারীরিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে সাবলম্বী হওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। কারো কথা শুনে বা সামাজিক চাপে, বয়স বেড়ে যাওয়ার কারণে বা শুধুই শখের বশে সন্তানকে পৃথিবীতে নিয়ে আসা কোনদিক দিয়েই খুব একটা ভালো ফলাফল রাখে না।
তবে এসব বাদেও আরেকটি দিক আছে এই প্রশ্নের। আর সেটি হলো, ঠিক কোন সময়ে, কীভাবে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করলে গর্ভধারণ করাটা কার্যকরী বেশি হয়।
সাধারণত গর্ভধারণের সবচাইতে উর্বর সময় মনে করা হয় আপনার পরবর্তী পিরিয়ড শুরু হওয়ার ১২-১৪ দিন পূর্বে। এই সময় জরায়ু ডিম্বানু নিঃসরণ করে এবং শুক্রাণু সবচেয়ে বেশি নিষিক্ত হওয়ার সম্ভাবনায় থাকে। তবে তার অর্থ কিন্তু এই নয় যে, পিরিয়ড হওয়ায় পরপরই গর্ভধারণের সম্ভাবনা বেশি থাকে। কারণ, অনেকসময় শুক্রাণু শারীরিক মিলনের ৭ দিন পর্যন্ত জরায়ুতে অবস্থান করতে পারে। আপনার জরায়ু দ্রুত ডিম্বানু নিঃসরণ করলে দ্রুত গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকে পিরিয়ডের পর।
আপনার যদি পিরিয়ড ২৮ দিনের সার্কেল মেনে চলে, সেক্ষেত্রে আপনার শরীরে পিরিয়ডের ১৪ দিনের পর ডিম্বানু উৎপন্ন হবে এমন সম্ভাবনাই বেশি। সবচেয়ে ভালো হয় চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে এই সময় ওভালুয়েশনের সময় নির্ধারণ করা এবং সেই অনুযায়ী শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা।
আপনি যদি ভেবেই থাকেন সন্তান নেওয়া কথা, তাহলে বার্থ কন্ট্রোল পিল খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। গর্ভধারণের চেষ্টা করার এক মাস আগে থেকেই পিল খাওয়া বন্ধ রাখুন। সাধারণত যেকোন নারীর পিরিয়ডের সাইকেল স্বাভাবিকভাবে একরকম থাকে। ফলে তার ডিম্বাণু তৈরি হওয়ার সময়টাও নির্দিষ্ট থাকে। তবে বার্থ কন্ট্রোল পিল গ্রহণ করলে এই সাইকেল বদলে যায়।
তাই গর্ভধারণের আগে পিল সেবন বন্ধ করে দিন। এক্ষেত্রে ধীরে ধীরে আপনার শরীরে স্বাভাবিক হরমোন উৎপন্ন হবে এবং শরীর গর্ভধারণের জন্য প্রস্তুত হবে। তবে পিল বন্ধ করার আগে কয়েকটি ব্যাপার নিয়ে একদম নিশ্চিত থাকুন যে, আপনি গর্ভধারনের জন্য মানসিকভাবে পুরোপুরি নিশ্চিত। একইসাথে খেয়াল রাখুন যেন পিল খাওয়া পুরো সাইকেল শেষ হওয়ার আগে বন্ধ না করা হয়। অন্যথায়, শরীর তার গতানুগতিক অভ্যস্ত সাইকেল থেকে বের হয়ে আসতে আরো বেশি সমস্যার মুখোমুখি হবে।
দ্রুত গর্ভধারণের জন্য নিচের প্রক্রিয়াগুলো মাথায় রাখুন-
নিজের পিরিয়ডের সাইকেল নিয়ে সচেতন হোন এবং হিসেব রাখুন। আপনার পিরিয়ড যদি অনিয়মিত বা দীর্ঘ সময় ধরে হয়ে থাকে, অথবা পিরিয়ডের সিকেলে কোন অস্বাভাবিকতা দেখতেই চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন। বার্থ কন্ট্রোল পিল খাওয়া বন্ধ রাখুন এবং শারীরিক হরমোনকে পিরিয়ড সাইকেল কন্ট্রোল করার সুযোগ দিন।
সাধারণত পিরিয়ড ২৮ দিনের হলে ১৪-১৫ দিনের মাথায় একজন নারীর শরীরে ডিম্বাণু জন্ম নেয়। তাই মানসিক ও শারীরিকভাবে তৈরি থাকুন এবং ক্যালেন্ডার মেনে চলুন এই ডিম্বাণু তঈরির সময়ে ও এই সময়েই শারীরিক মিলন করুন।
ডিম্বাণু জন্ম নেওয়ার সময়ের ৫ দিন আগ থেকে ওই দিন পর্যন্ত একজন নারীর শরীর নিষিক্ত হওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রস্তুত থাকে। এই সময়টায় তাই একদিন গ্যাপ রেখে রেহে শারীরিক মিলনের জন্য প্রস্তুত হয়ে নিন। এতে করে আপনার গর্ভধারণের পরিমাণ শতকরা ৩৩ থেকে ৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।
ওজন গর্ভধারণের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখে। তাই আপনার শরীরের বডি মাস ইন্ডিকেটর অনুযায়ী চিকিৎসকের সাথে কথা বলে ওজন কমিয়ে বা বাড়িয়ে নেওয়ার চেষতা করুন এবং প্রিন্যাটাল সাপ্লিমেন্ট সেবন করুন।
সুস্থ শিশুকে পৃথিবীতে স্বাগতম জানানোর জন্য প্রয়োজন সুস্থ মা, সুস্থ পরিবেশ ও সুস্থ পরিবারের। গর্ভধারণ বা সন্তান জন্মদান খুব হুটহাট করে ফেলার মতো ব্যাপার নয়। তাই চেষ্টা করুন গর্ভধারণের পরিকল্পনাটা সময় নিয়ে করে তারপর এগোতে। এতে করে আপনি যেমন সুস্থ থাকবেন, মাতৃত্বকে উপভোগ করবেন, তেমনি আপনার শিশুও বড় হয়ে উঠবে সুস্থ-সবলভাবে! আপনি গর্ভধারণ করতে সফল হলেও কিন্তু এটাই শেষ নয়। একজন সুস্থ সন্তানকে পৃথিবীতে আনার জন্য প্রয়োজন জীবনযাপনে অনেকটা পরিবর্তন নিয়ে আসা। চলুন, জেনে নেওয়া যাক গর্ভধারণের জন্য ও সুস্থ শিশুকে জন্মদান করতে ঠিক কোন কোন ব্যাপারগুলো মেনে চলতে হবে আপনাকে-
সুস্থ শিশুর জন্মদানে অনেকটা বড় ভূমিকা পালন করে মায়ের ওজন। গর্ভকালীন সময়ে একজন মায়ের ওজন বাড়বেই। তবে আপনি যদি আগে থেকেই শরীরচর্চা ও খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের মাধ্যমে ওজন স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসেন, সেক্ষেত্রে প্রেগনেন্সির বাড়তে ওজন আপনি বা আপনার শিশুকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে না।
এমনকি গর্ভধারণের বেলায়ও দ্রুত ফলাফলের জন্য ওজন বড় ভূমিকা রাখে। শুধু স্থুলতা নয়, অতিরিক্ত কম ওজনও এক্ষেত্রে মাকে সমস্যায় ফেলতে পারে। গবেষণানুসারে, সঠিক ওজনের নারীদের গর্ভধারণ ও সন্তান জন্মদানে স্বাস্থ্যঝুকি ও ঝামেলা কম হয়। তবে নিজ থেকে নয়, চিকিৎসকের সাথে কথা বলে ওজন বাড়ানো বা কমানোর সিদ্ধান্ত নিন। এজন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী শরীরচর্চাও করতে পারেন।
প্রতিদিন সাধারণত ৩০ মিনিটের শরীরচর্চাই আপনাকে ওজন কমাতে সাহায্য করবে। এমনকি গর্ভধারণের পরেও শারীরিক কোন সমস্যা না দেখা দিলে আপনি চিকিৎসকের পরামর্শমতো শরীরচর্চা করতে পারেন। খুব বেশি কিছু না করতে চাইলেও দিনে কিছুটা সময় হাঁটাহাঁটি করতে পারেন আপনি।
মা যা খায়, শিশুও তাই খায়। গর্ভধারণ মানেই একটু বাড়তি পুষ্টিকর খাবার, বেশি পরিমাণে খাওয়া। খাদ্যাভ্যাসে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসতে, প্রতিদিন চেষ্টা করুন-
অন্তত ২ কাপ ফল ও আড়াই কাপ সবজি
বেশি পরিমাণে হোল গ্রেইন
ক্যালসিয়াম বেশি আছে এমন খাবার, যেমন- দুধ, কমলার রস, দই ইত্যাদি খেতে
বেশি করে আমিষ, যেমন- বীজ, বাদাম, সয়া, মাংস ইত্যাদি খেতে
আপনি যদি মাছ খেতে অনেক ভালোবাসেন সেক্ষেত্রে কয়েকটি ব্যাপার খেয়াল রাখুন। মাছ ওমেগা-৩ এর একটা বড় উৎস। এই উপাদানটি অনাগত শিশুর মস্তিষ্ক ও চোখের গঠনে সাহায্য করে। একইসাথে মাছে থাকে আমিষ, ভিটামিন-ডি ও অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদান। তবে কিছু মাছে উচ্চমাত্রায় মার্কারিও পাওয়া যায়। যেটি মা ও শিশু দুজনের শরীরের জন্যই ক্ষতিকর হতে পারে।
বেশিরভাগ চিকিৎসক গর্ভবতী নারীদের মাছ খেতে উৎসাহ দিলেও মার্কারির কারনে মাছ বেছে খেতে বলেন। এছাড়াও, দূষিত পানিতে বড় হওয়া মাছ খেতেও বিরত থাকার পরামর্শ দেন তারা।
শিশু যেন সঠিকভাবে বেড়ে ওঠে এবং আপনার শরীর যেন অনাগত শিশুকে পরিপূর্ণভাবে যথেষ্ট পুষ্টি প্রদান করতে পারে তা নিশ্চিত করতে প্রিন্যাটাল সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা আবশ্যক। এক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা মাকে ফলিক এসিড ও বি ভিটামিন গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। একজন নারীর শরীরে গর্ভধারণের অন্তত এক মাস পূর্বে যদি যথেষ্ট পরিমাণ ফলিক এসিড থেকে থাকে তাহলে শিশুর মধ্যে কোন জন্মগত ত্রুটি থাকার সম্ভাবনা কমে যায়। একইসাথে শিশুর মস্তিষ্ক ও মেরুদন্ডও সঠিকভাবে বেড়ে ওঠে।
শুধু এই দুইটি উপাদানই নয়। গর্ভকালীন সময়ে মায়র শরীরে পর্যাপ্ত পুষ্টি ও ভিটামিন থাকা প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, ক্যালসিয়াম ও আয়রনও। সাধারণত চিকিৎসকেরা গর্ভধারণের অন্তত একমাস আগে থেকে শুরু করে প্রথম ট্রাইমেটার পর্যন্ত মাকে ৪০০ মাইক্রোগ্রামের ফলিক এসিড গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাই এই সময়ে যে ভিটামিনগুলোই গ্রহণ করুন না কেন, দেখুন সেখানে যথাযথ পরিমাণ ফলিক এসিড আছে কিনা।
তবে অতিরিক্ত ভিটামিন গ্রহণও এসময় ভালো নয়। তাই নিশ্চিন্ত করুন আপনি দিনে ৭৭০ এমচিজি আরএই-এর বেশি ভিটামিন এ গ্রহণ করছেন কিনা। অন্যথায় অতিরিক্ত ভিটামিন এ আপনার শিশুর গঠনগত সমস্যা তৈরি করতে পারে।
এবং প্রিন্যাটাল সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করার সময় অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে কথা বলে, তার পরামর্শ মেনে পরিমাণ ঠিক করার চেষ্টা করুন।
যেমনটা উপরেই বলা হয়েছে, গর্ভধারণের সময় মায়ের ওজন অনেক বেশি প্রভাব রাখে গর্ভকালীন সুস্থতা আর শিশুর সুস্থতার উপরে। আপনি যদি গর্ভধারণের পূর্বে ওজন না কমাতে পারেন, সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে গর্ভকালীন সময়েও ওজন কিছুটা কমিয়ে আনতে পারেন আপনি।
জন্মের আগে থেকেই প্রায় ৪০ সপ্তাহ একজন শিশুর সুস্থতা মায়ের শারীরিক অবস্থার উপরে নির্ভর করে। স্থুলতার জন্য গর্ভকালীন সময়ে-
অকালজন্ম
সিজারিয়ান ডেলিভারি
শিশুর হৃদপিণ্ডের সমস্যা
টাইপ টু ডায়াবেটিস
উচ্চরক্তচাপ
নাক ডাকা
সংক্রমণ
রক্ত জমাট বাঁধা ইত্যাদি সমস্যা তৈরি হতে পারে।
খুব ধীরে ধীরে চাইলে গর্ভকালীন সময়েও আপনার ওজন স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসতে পারেন আপনি, তাও আবার সম্পূর্ণ সুস্থতা বজায় রেখে। এক্ষেত্রে-
প্রথমত, হিসেব করে নিন যে গর্ভকালীন সময়ে আপনার উচ্চতা হিসেবে কতটুকু ওজন স্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে। গর্ভকালীন স্বাভাবিক ওজন জানতে পারলে সেখান থেকে আপনার ঠিক কতটা ওজন কমানো প্রয়োজন সেটা বুঝতে পারবেন আপনি।
দ্বিতীয়ত, নিয়মিত কিছু পরিমাণ ক্যালোরি খাবার থেকে বাদ দিয়ে ওজন কমাতে পারেন আপনি। গর্ভকালীন সময়ে একজন মায়ের নিয়মিত ২২০০ থেকে ২৯০০ ক্যালোরি গ্রহণ করার প্রয়োজন পড়ে। প্রথম ট্রাইমেস্টারে কোন বাড়তি ক্যালোরির প্রয়োজন না হলেও পরবর্তীতে শিশুর জন্য মায়ের বাড়তি ক্যালোরি খাওয়ার দরকার পড়ে। তবে এই ক্যালোরি থেকে চিকিৎসকের সাথে কথা বলে নির্দিষ্ট কিছু ক্যালোরি বাদ দিতে পারেন আপনি। পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করে অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট, সোডা, জাংক ফুড ইত্যাদি এড়িয়ে গিয়ে সহজেই পুষ্টি নিশ্চিত করেই ওজন কমানো সম্ভব।
তৃতীয়ত, গর্ভকালীন মায়ের জন্য ভারী কোন ব্যায়াম ঠিক না হলেও আপন দিনে ৩০ মিনিট সাঁতার কাটা, হাঁটা, বাগানে কাজ করা, ইয়োগা করা ইত্যাদির মাধ্যমে শরীরচর্চা করতে পারেন। এতে করে আপনি যেমন সুস্থ থাকবেন, আপনার ওজনটাও কমে আসবে। তবে ব্যালেন্স রাখোতে হয়, ব্যথা তৈরি হয়, গরমের মধ্যে থাকতে হয় বা মাথা ঘোরায় এমন কোন শরীরচর্চা করা থেকে বিরত থাকুন।
তবে এসব বাদেও চিকিৎসকের সাথে কথা বলে নিজের সঠিক ওজন ও শিশুর স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা করে তবেই ওজন কমানোর চেষ্টা করুন।
এই কাজটি সবচেয়ে শুরুতেই আপনার করা প্রয়োজন গর্ভধারণের সময়। আপনার সন্তানের জন্মদানের জন্য ডাক্তার প্রয়োজন তো বটেই। তবে তারচেয়েও বেশি প্রয়োজন আপনার শরীর কতটা স্বাভাবিক আছে একজন সুস্থ শিশুকে জন্ম দেওয়ার জন্য তা সম্পর্কে জানা। এজন্য, প্রথমেই-
আপনার চিকিৎসকের সাথে নিজের ও নিজের পরিবারের মেডিকেল হিস্ট্রি শেয়ার করুন। এতে করে আপনার যদি আগে থেকেই কোন ব্যাপারে সাবধান থাকতে হয় সেটা জেনে যাবেন আপনি।
আপনি বর্তমানে কোন কোন সমস্যায় ভুগছেন এবং সেজন্য কী কী ওষুধ সেবন করছেন তা জানান চিকিৎসককে। ডাক্তার সব জেনে তবেই আপনি কোন ওষুধ সেবন করতে পারবেন বা কোনটি পরিবর্তন করতে হবে সেটা বলতে পারবেন।
আপনার যদি কোন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর অভ্যাস থেকে থাকে, সেটা মদ্যপ্পান হোক কিংবা কোন এক্সট্রিম ডায়েট অনুসরণ করা, চিকিৎসককে জানান এবং সেগুলোকত দ্রুত বা আদৌ বাদ দেওয়া উচিৎ কিনা নিশ্চিন হোন।
আপনার যদি কোন অসুস্থতা থেকে থাকে এবং সেজন্য আগে থেকেই কোন ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে সেটা চিকিৎসকের সাথে আলোচনা করুন।
বছরে একবার হলেও পেলভিক এক্সামিনেশন করান। গর্ভধারণের ক্ষেত্রে এটি আপনাকে অবশ্যই সাহায্য করবে।
এছাড়াও গর্ভধারণ নিয়ে আপনার যদি কোন প্রশ্ন থেকে থাকে সেটার উত্তর জানতে চিকিৎসকের সাথে কথা বলতে পারেন আপনি।
গর্ভধারণের আগে বা সময়ে চিকিৎসকের সাথে আলোচনা করার মাধ্যমে নিজের শারীরিক অবস্থা এবং পরবর্তীতে কী কী সমস্যার মুখোমুখি আপনি হতে পারেন সেটা সম্পর্কে জেনে নেওয়াটাই এই প্রক্রিয়ার মূল উদ্দেশ্য।
গর্ভধারণের পরিকল্পনা করার ক্ষেত্রে শুধু শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা, পুষ্টির যোগান নিশ্চিত করাই নয়, আপনার দাঁতের স্বাস্থ্যের দিকেও খেয়াল রাখুন। গর্ভধারণ শুধু শরীরকে নয়, দাঁতকেও অনেক বেশি প্রভাবিত করে। দাঁতের নানারকম ক্ষতিকারক সুখ জন্ম নেয় এই সময়। প্রোজেস্টেরন বা এস্ট্রোজেনের উচ্চমাত্রা প্ল্যাকের ব্যাক্টেরিয়ার দ্বারা বাজেভাবে প্রভাবিত হতে পারে, যার ফলে দাঁত দিয়ে রক্ত পড়ার মতো সমস্যা শুরু হয়। এছাড়াও গবেষণায় দেখা যায় যে, গর্ভধারণকালীন সময়ে দাঁতের এই সমস্যাগুলো পরবর্তীতে শিশুর জন্মের সময়কালীন ওজনেও প্রভাব রাখে। ফলে শিশুর ওজন কমে যায়।
মায়ের দাঁতের সমস্যার কারণে শিশুর অকাল মৃত্যু, অকালজন্ম ও প্রিক্ল্যাম্পসিয়ার মতো ব্যাপারগুলোও দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে এই ছোট্ট কারণেই মিসক্যারেজের সম্ভাবনা ৭০ শতাংশ বেড়ে যেতে পারে।
যেসব নারী গর্ভধারণের অনেক আগ থেকেই নিজের দাঁতের সুস্থতার ব্যাপারে খেয়াল রাখেন তাদের জন্য অবশ্য এই সময়ের বাড়তি সমস্যাগুলো খুব সহজেই এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। গত ছয় মাসে যদি আপনি ডেন্টিস্টকে না দেখিয়ে থাকেন, তাহলে গর্ভধারণের চেষ্টার আগে দ্রুত একবার চলে যান সেখানে আর নিজের দাঁতের সুস্থতা নিয়ে নিশ্চিত হয়ে নিন।
শারীরিক অবস্থা ও সাধারণ গর্ভধারণের কথা মাথায় রেখেই চিকিৎসকেরা আপনাকে কিছু নির্দিষ্ট টিকা নেওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন। গর্ভধারণ করার আগে উক্ত টিকাগুলো না নিলে সেই প্রভাব আপনি ও আপনার সন্তান দুজনের উপরেই পড়তে পারে। কোন টিকা কখন দিতে হবে- গর্ভধারণের আগে, পরে, নাকি গর্ভধারণকালীন সময়ে তা ভালোভাবে জানুন ও সেই অনুযায়ী টিকাগুলো গ্রহণ করুন।
এতে করে আপনি যেমন সুস্থ থাকবেন তেমনি আপনার শিশুও পুরোটা সময়জুড়ে সুস্থ ও সবল থাকবে।