মাতৃত্বকালীন সময়ে এন্টিবায়োটিক এর ক্ষতিকর প্রভাব! প্রেগন্যান্সিতে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রভাবে জন্মগত ত্রুটি

সন্তান জন্মাবার পর মায়ের দুধই শিশুর প্রথম ও প্রধান খাদ্য। শিশুর ৬ মাস বয়স পর্যন্ত অন্য কোনো খাবার এমনকি এক ফোঁটা পানিও খাওয়াবার দরকার পড়ে না। সন্তানের জন্য এটাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে মায়ের যেকোন অসুস্থতা এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারে। এ সময় মায়েদের কানের ইনফেকশন, সাইনাস ইনফেকশন, দাঁতের সমস্যা এবং স্তনের প্রদাহের কারণে অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হতে পারে। যেহেতু মায়ের রক্তে উপস্থিত যেকোন ঔষধ বুকের দুধের মাধ্যমে সন্তানের শরীরে স্থানান্তরিত হয়, তাই যেকোন ঔষধ বিশেষ করে অ্যান্টিবায়োটিক খাবার আগে মাকে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। 

আপনার সন্তান যদি আপনার বুকের দুধ পান করে এবং সাথে আপনাকে ঔষধ সেবন করতে হচ্ছে তবে আপনার জন্য নিম্নোক্ত বিষয়গুলি জানা দরকার-

বুকের দুধের মাধ্যমে কি অ্যান্টিবায়োটিক বা অন্যান্য ঔষধ শিশুর শরীরে স্থানান্তরিত হয়? 

রক্তে উপস্থিত প্রায় সকল ঔষধই বুকের দুধের মধ্যে দিয়ে স্থানান্তরিত হয়। তবে বেশির ভাগ সময়ই তার পরিমাণ এত অল্প থাকে যে তাতে শিশুর কোনো রকম ক্ষতি হয় না। তবে এর ব্যতিক্রমও রয়েছে। কিছু কিছু ঔষধ বুকের দুধে কনসেন্ট্রেটেড হয় অর্থাৎ ঔষধের ঘনত্ব বেড়ে যায়। তাই প্রতিটি ঔষধ আলাদা আলাদা ভাবে বিবেচনা করতে হবে। 

ঔষধ চলাকালীন সময়ে ব্রেস্টফিডিং কি বন্ধ রাখা উচিত?

৬ মাস বয়স পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধই শিশুর প্রথম ও একমাত্র খাদ্য। কিন্তু কিছু কিছু ঔষধ মায়ের শরীর থেকে বুকের দুধের মাধ্যমে শিশুর শরীরে স্থানান্তরিত হয়। সেটা শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ নাও হতে পারে। এক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অপেক্ষাকৃত নিরাপদ ঔষধ ব্যবহার করতে পারেন। অথবা দিনের যে সময়ে ঔষধের ঘনত্ব কম থাকবে তখন ব্রেস্ট ফিডিং করাতে পারেন। 

কখনও কখনও আপনার চিকিৎসক আপনাকে অস্থায়ীভাবে বা স্থায়ীভাবে বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করার পরামর্শ দিতে পারে যেটা নির্ভর করে আপনাকে ঔষধটি কত সময় ধরে খেতে হবে তার উপর।

যদি আপনাকে স্থায়ীভাবে বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করতে হয়  যা সাধারণত দেখা যায় না, সেক্ষেত্রে আপনার চিকিৎসককে বুকের দুধ খাওয়ানোর পদ্ধতি সম্পর্কে এবং দুধ ছাড়ানোর ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করুন।

বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় কোন কোন ঔষধ খাওয়া নিরাপদ?

সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময়টায় রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী একজন মা নিম্নোক্ত ঔষধগুলি খেতে পারেন - 

যদিও বেশিরভাগ ঔষধই কোনো রকম সমস্যার সৃষ্টি করে না, তবুও এ সময়ে মায়েদের অপ্রয়োজনীয় বা অতিরিক্ত কোনো ঔষধ খাওয়া উচিত নয়। বিশেষ করে কোনো হার্বাল বা ভেষজ ঔষধ, কোনো ধরনের সাপ্লিমেন্ট, হাই ডোজ ভিটামিন এড়িয়ে চলা উচিত।

 

অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স ও আমাদের যত ভুল ধারণা

ঔষধের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করুন, সুস্থ থাকুন

 

কিছু ঔষধ এড়িয়ে চলুন

যদিও ঔষধ খাওয়া না খাওয়ার ব্যাপারে ডাক্তারের মতামতই শেষ কথা, তবে যেসব মায়েরা ব্রেস্টফিডিং করান তাদের পক্ষে নিম্নোক্ত ঔষধগুলো এড়িয়ে চলাই নিরাপদ হবে - 

অ্যান্টিবায়োটিক চলাকালীন কিছু জিনিস খেয়াল রাখুন 

মায়ের অ্যান্টিবায়োটিক সেবনে শিশুর কি কি সমস্যা হতে পারে?

পেট খারাপ

মায়েরা প্রায়ই অভিযোগ করেন যে, তাদের অ্যান্টিবায়োটিক চলাকালীন সময়ে শিশুর পেট খারাপ বা ডায়রিয়ার উপসর্গ দেখা যায়। যেহেতু অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের কারণে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার পাশাপাশি আন্ত্রিক ব্যাকটেরিয়াও ধ্বংস হয়ে যায় তাই শিশুর পেট খারাপের মত হতে পারে। সাধারণত কোনো ওষুধ ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক কোর্স শেষ হবার পরই এই সমস্যা সমাধান হয়ে যায়।  

সেপসিস

বাচ্চাদের ইমিউন সিস্টেম সাধারণের তুলনায় দুর্বল হয়। অ্যান্টিবায়োটিকের প্রভাবে শিশুর দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা প্রয়োজনের অতিরিক্ত কার্যকর হয়, ফলে শরীরের অন্যান্য সুস্থ টিস্যু ধ্বংস হয়। তখন তাকে সেপসিস বল। 

থ্রাশ

বাচ্চা বা বাচ্চার মায়ের থ্রাশ হতে পারে। এটা এক ধরনের ফাংগাল ইনফেকশন। এক্ষেত্রে বাচ্চার ডায়রিয়া, র‍্যাশ, জিহ্বা এবং মুখের ভেতরের দিকে সাদা আস্তরণ পরার মত সমস্যা হতে পারে। মায়েদের স্তনে সংক্রমণ হতে পারে। এই সমস্যা এড়ানোর জন্য অ্যান্টিবায়োটিক চলাকালীন সময়ে প্রবায়োটিক খেতে পারেন। 

মেজাজে পরিবর্তন

অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের ফলে শিশুটি কিছুটা অশান্ত এবং অস্বস্তি বোধ করতে পারে।

অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের আগে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন

মায়েদের যেকোন ঔষধ খাবার আগে বাচ্চার চিকিৎসকের (পেডিয়াট্রিসিয়ানের) সাথে আলোচনা করে নেয়া উচিত। বিশেষ করে সন্তান জন্মের পর ৬ মাস বয়স পর্যন্ত। ঔষধটি আপনার সন্তানের পক্ষে কতটুকু নিরাপদ, কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি না, প্রবায়োটিক সেবন করার দরকার আছে কি নেই ভালো করে জেনে নিতে হবে। প্রয়োজন হলে আগের ঔষধ বদলে অলটারনেটিভ কোনো ঔষধ খেতে পারেন। 

তবে কখনো কখনো অলটারনেটিভ ঔষধ পাওয়া নাও যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সন্তানকে বিকল্প খাবার খাওয়াতে হবে। ঔষধের কোর্স শেষ হবার পর আবার ব্রেস্টফিডিং চালু করতে হবে। 

শিশুর উপর অ্যান্টিবায়োটিকের প্রভাব এড়ানোর উপায় 

অ্যান্টিবায়োটিকের প্রভাব এড়ানোর সবচেয়ে ভাল উপায় হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক না খাওয়া। কিন্তু অনেক সময় অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া জরুরী হয়ে পড়ে। সেক্ষেত্রে এই উপায়গুলি কাজে লাগিয়ে দেখতে পারেন - 

 

জন্মের পর প্রথম কয়েক সপ্তাহ শিশুর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভাইটাল অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গুলি তখনো বিকশিত হচ্ছে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও তত শক্তিশালী নয়। এ অবস্থায় মায়ের শালদুধ ও গাট ফ্লোরা বা আন্ত্রিক ব্যাকটেরিয়া রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অ্যান্টিবায়োটিক ক্ষতিকর প্যাথোজেনের পাশাপাশি এই গাট ফ্লোরার উপর প্রভাব ফেলে। এ সময় মায়ের বুকের দুধই শিশুর একমাত্র খাদ্য। আর বুকের দুধের মাধ্যমে মা থেকে সকল ঔষধ সন্তানের দেহে পৌঁছায়। তাই অ্যান্টিবায়োটিকসহ যেকোন ঔষধ ব্যবহারে মায়ের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

FOR MORE CLICK HERE

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]