সহীহ বুখারী শরীফ হাদিস তাফসীর অধ্যায় ১ম ভাগ হাদিস নং ৪৪৭৪ – ৪৫০৫

৬৫/১/১. অধ্যায়ঃ
সূরাতুল ফাতিহা (ফাতিহাতুল কিতাব) প্রসঙ্গে

{الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ} اسْمَانِ مِنْ الرَّحْمَةِ الرَّحِيْمُ وَالرَّاحِمُ بِمَعْنًى وَاحِدٍ كَالْعَلِيْمِ وَالْعَالِمِ.

‘‘রহমান ও রহীম’’ শব্দদ্বয় ‘রহমাত’ শব্দ থেকে নিষ্পন্ন এবং রহীম ও র-হিম দু’টো শব্দই একই অর্ধবোধক যেমন ‘আলীম ও আ-লিম।

সূরাহ (১) : ফাতিহা

وَسُمِّيَةْ أُمَّ الْكِةَابِ أَنَّهُ يُبْدَأُ بِكِةَابَةِهَا فِي الْمَصَاحِفِ وَيُبْدَأُ بِقِرَاءَةِهَا فِي الصَّلَاة.

وَ{الدِّيْنُ} الْجَزَاءُ فِي الْخَيْرِ وَقَالَ مُجَاهِدٌ {بِالدِّيْنِ} بِالْحِسَابِ {مَدِيْنِيْنَ} مُحَاسَبِيْنَ.

সূরাহ ফাতিহাকে উম্মুল কিতাব (কিতাবের মূল) হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে এজন্য যে, সূরাহ ফাতিহা লেখা দ্বারাই কুরআন গ্রন্থাকারে লেখা শুরু হয়েছে।

আর সূরাহ ফাতিহা পাঠের মাধ্যমে সালাতও আরম্ভ করা হয়। ‘‘দ্বীন’’ অর্থ -ভাল ও মন্দের প্রতিফল। যেমন বলা হয়ে থাকে وَالشَّرِّ كَمَا تَدِيْنُ تُدَانُ ‘‘যেমন কর্ম তেমন ফল’’। আর মুজাহিদ (রহ.) বলেন, بِالدِّيْنِ হিসাব-নিকাশ। مَدِيْنِيْنَ যার হিসাব নেয়া হবে।

৪৪৭৪
مُسَدَّدٌ حَدَّثَنَا يَحْيَى عَنْ شُعْبَةَ قَالَ حَدَّثَنِيْ خُبَيْبُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ عَنْ حَفْصِ بْنِ عَاصِمٍ عَنْ أَبِيْ سَعِيْدِ بْنِ الْمُعَلَّى قَالَ كُنْتُ أُصَلِّيْ فِي الْمَسْجِدِ فَدَعَانِيْ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَلَمْ أُجِبْهُ فَقُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنِّيْ كُنْتُ أُصَلِّيْ فَقَالَ أَلَمْ يَقُلْ اللهُ {اسْتَجِيْبُوْا لِلهِ وَلِلرَّسُوْلِ إِذَا دَعَاكُمْ لِمَا يُحْيِيْكُمْ} ثُمَّ قَالَ لِيْ لَأُعَلِّمَنَّكَ سُوْرَةً هِيَ أَعْظَمُ السُّوَرِ فِي الْقُرْآنِ قَبْلَ أَنْ تَخْرُجَ مِنَ الْمَسْجِدِ ثُمَّ أَخَذَ بِيَدِيْ فَلَمَّا أَرَادَ أَنْ يَخْرُجَ قُلْتُ لَهُ أَلَمْ تَقُلْ لَأُعَلِّمَنَّكَ سُوْرَةً هِيَ أَعْظَمُ سُوْرَةٍ فِي الْقُرْآنِ قَالَ {الْحَمْدُ لِلهِ رَبِّ الْعٰلَمِيْنَ}هِيَ السَّبْعُ الْمَثَانِيْ وَالْقُرْآنُ الْعَظِيْمُ الَّذِيْ أُوْتِيْتُهُ

আবূ সা‘ঈদ ইবনু মু‘আল্লা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি একদা মাসজিদে নাববীতে সলাত আদায় করছিলাম, এমন সময় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে ডাকেন। কিন্তু ডাকে আমি সাড়া দেইনি। পরে আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমি সলাত আদায় করছিলাম। তখন তিনি বললেন, আল্লাহ কি বলেননি যে, ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা সাড়া দেবে আল্লাহ্ ও রসূলের ডাকে, যখন তিনি তোমাদেরকে ডাক দেন (সূরাহ আনফাল ৮/২৪)। তারপর তিনি আমাকে বললেন, তুমি মাসজিদ থেকে বের হওয়ার আগেই তোমাকে আমি কুরআনের এক অতি মহান সূরাহ্ শিক্ষা দিব। তারপর তিনি আমার হাত ধরেন। এরপর যখন তিনি মাসজিদ থেকে বের হওয়ার ইচ্ছা করেন তখন আমি তাঁকে বললাম, আপনি কি বলেননি যে আমাকে কুরআনের অতি মহান সূরাহ্ শিক্ষা দিবেন? তিনি বললেন, الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্‌র জন্য যিনি বিশ্ব জগতের প্রতিপালক, এটা বারবার পঠিত সাতটি আয়াত এবং মহান কুরআন যা কেবল আমাকেই দেয়া হয়েছে। [৪৬৪৭, ৪৭০৩, ৫০০৬] (আ.প্র. ৪১১৬, ই.ফা. ৪১১৯)






[১] সূরাতুল ফাতিহা জ্ঞান লাভের, হিদায়াত গ্রহণের জন্য প্রতিটি মানুষের নিজের পরিবারের, দেশ, জাতি তথা সারা বিশ্ববাসীর জন্য অতীব কল্যাণকর এক মহাসাগর। উক্ত কল্যাণের এই অথৈ পারাবার হতে স্বীয় আগ্রহে তাড়িত হয়ে এক সার্বিক পথ নির্দেশনা গ্রহণ করার অবারিত ও উন্মুক্ত সুযোগ মানব জাতির জন্য উজ্জ্বল ও ভাস্বর হয়ে আছে। যে কারণে উক্ত সূরাখানি মহাপবিত্র কুরআনের ভূমিকা হিসেবে কুরআনের শুরুতেই সন্নিবেশ করা হয়েছে। সুতরাং এর গভীর ও তাত্ত্বিক আলোচনা করতে গিয়ে তাফসীরকারগণ বলেছেনঃ মানবজাতির হিদায়াতের জন্য কেবল এই একটি মাত্র সূরাই যথেষ্ট, যদি সে নিরপেক্ষ অনাবিল মন মানসিকতা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে। সুতরাং ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আববাস (রাঃ) সহ অন্যান্য সহাবায়ি কিরাম (y) আলোচ্য সূরাটিকে আল্লাহ তা‘আলার শ্রেষ্ঠ দান ও অপূর্ব নি‘মাত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। সূরা ফাতিহা দু’বার নাযিলকৃত সূরা বটে। প্রথমবার মাক্কাহ্য় ওয়াহী নাযিলের প্রাথমিক অবস্থায় এবং দ্বিতীয়বার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মদিনায় হিজরাতের পরবর্তী সময়ে নাযিল হয়। যথা সহীহ হাদীসভিত্তিক তাফসীরের গ্রন্থসমূহে সনদ সহকারে উপরোক্ত বক্তব্যের সমর্থন পাওয়া যায়। যেমন তাফসীরে ‘ফাতহুল ক্বাদীর’ ১ম খন্ড, ১৩-১৪ পৃষ্ঠায় আছেঃ

وكان ذلك قبل الهجرة واخرج ابو بكر بن الانباري في المصاحف عن عبادة قال : فاتحة الكتاب نزلت المكة فهذا جملة ما استدل به من قال انها نزلت بمكة : واستدل من قال انها نزلت بالمدينة بما اخرجه ابن أبي شيبة في المصنف وأبو سعيد ابن الْأعرابي في معجمه والطبراني في الْأوسط من طرق مجاهد عن أبي هريرة رن ابليس حين انزلت فاتحة الكتاب وانزلت بالمدينت واخرج ابن أبي شيبت في المصنف وعبد بن حميد وابن المنذر وأبو نعيم في الحليت وغيرهم من طرق عن مجاهد قال : نزلت فاتحت الكتاب بالمدينت وقيل إنها نزلت مرتين مرت بمكت ومرت بالمدينت جمعًا بين هذه الروايات

প্রকাশ থাকে যে, ইমাম ইবনু কাসীর তাঁর বিখ্যাত তাফসীর ইবনু কাসীর ১ম খন্ড, ৮ম পৃষ্ঠায়ও সূরা ফাতিহা দু’বার নাযিল হওয়ার কথা সমর্থন করে ভিন্ন আসমাউর রিজাল সম্বলিত এক শক্তিশালী তথ্য উপস্থাপন করেছেনঃ

وهي مكية : قال ابن عباس (رض) وقتادة وأبو العالية وقيل مدنية قاله أبو هريرة (رض) ومجاهد وعطاء بن يسار والزهري ويقال نزلت مرتين : مرة بمكة ومرة بالمدينة والأول اشبه لقوله تعالى : وَلَقَدْ آتَيْنَكَ سَبْعًا مِنَ الْمَثَانِيْ والله تعالى اعلم منها

উল্লেখ্য, সূরায়ে ফাতিহা দু’ দু’বার নাযিল হওয়ার কারণে সূরাখানির গুরুত্ব, মহত্ব, আবশ্যকতা ও প্রয়োজনীয়তা অন্যান্য সূরা হতে এক স্বতন্ত্র মর্যাদা লাভ করেছে, যা খুব সহজেই অনুমেয় বটে। এতদ্ব্যতীত উক্ত সূরার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে স্বয়ং নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ سورة ما انزل في التوراة ولا في الانجيل ولا في الفرقان مثلها

অর্থাৎ এটা এমন একটি সূরা যা তাওরাত, ইঞ্জিল ও ফুরকানেও নাযিল করা হয়নি। অর্থাৎ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কেই বিশেষ মর্যাদা সম্পন্ন উক্ত সূরাখানি প্রদান করা হয়েছে। (ফাতহুল ক্বাদীর ১ম খন্ড, ১৫ পৃষ্ঠা)

এখানে একটি লক্ষ্যণীয় বিষয় এই যে, উক্ত সূরাখানির স্বাতন্ত্র্য ও বৈশিষ্ট্যের আর একটি দিক এই যে, আলোচ্য সূরাখানির গুরুত্ব মানব জীবনের সব দিকে এতই বেশী পরিব্যপ্ত যে, স্থান বিশেষ ব্যাখ্যায় সম্মানিত তাফসীরকারগণ আলোচ্য সূরাখানির প্রায় ৪২টি নাম দিয়েছেন। যে নামগুলো তাফসীর ইবনু কাসীর, ইবনু জারীর, রুহুল মায়ানী, তাফসীর কবীর, তাফসীর খাযিন, তাফসীরে ফাতহুল ক্বাদীর, তাফসীরে কুরতুবী সহ নির্ভরযোগ্য তাফসীরাতের কিতাবসমূহে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে এতদ সমূদয় হতে মাত্র কয়েকটি নাম চয়ন করা হলো। যথাক্রমেঃ (১) سورة مفتاح القرآنকুরআনের কুঞ্জিকা, (২) سورة أم القرآن কুরআনের মা বা আসল, (৩) سورة الدعاء দু‘আর সূরা, (৪) سورة الشفاءরোগ মুক্তির সূরা, (৫) سورة الحمد প্রশংসার সূরা, (৬) أساس القرآن কুরআনের ভিত্তি, (৭) سورة الرحمة রাহমাতের সূরা, (৮) سورة البركة বারকাতের সূরা, (৯) سورة النعمة নি‘আমাতের সূরা, (১০) سورة العبادة ‘ইবাদাতের সূরা, (১১) سورة الهداية হিদায়াত প্রাপ্তির সূরা, (১২) سورة الإسةقامة দৃঢ়তার সূরা, (১৩) سورة الإسةعانة সাহায্য প্রার্থনার সূরা, (১৪) سورة الكافية অত্যধিক ও বিপুলতা দানকারী সূরা, (১৫) سورة الوافية পূর্ণত্ব প্রাপ্ত সূরা, (১৬) سورة الكنـز খণির সূরা (জ্ঞানের খনি, রাহমাত, বারাকাত, নি‘আমাত ও যাবতীয় সাফল্যের খণি বলে এ সূরাকে আখ্যায়িত করা হয়েছে), (১৭) سورة الشكر শুকর করার সূরা বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সূরা (১৮) سورة الصبر সবরের উৎসাহ দানকারী সূরা, (১৯) سورة التكرار বার বার পঠিতব্য সূরা, (২০) سورة التعلق مع الله আল্লাহর সাথে বান্দার গভীর সম্পর্ক স্থাপনের সূরা, (২১) سورة الصراط المستقيم সরল সঠিক পথ লাভের সূরা, (২২) سورة الربوبية প্রভুত্ব সনাক্ত করণের সূরা, (২৩) سورة الوحدانية আল্লাহ তা‘আলার একত্ববাদের প্রতি স্বীকৃতি প্রকাশের সূরা, (২৪) سورة الاجةناب الغضب والضلالة আল্লাহর গযব ও গোমরাহী হতে আত্মরক্ষা করার সূরা, (২৫) سورة الصلاة সলাতে একান্তই পঠিতব্য সূরা।

উল্লেখ্য, সর্বশেষ নামকরণ সলাত আদায়ে একান্তই পঠিতব্য সূরা নামকরণ থেকেও মনে হয়, উক্ত সূরা পাঠ ব্যতীত সলাত পূর্ণ হয় না। ইমাম মুক্তাদী সকলের জন্যই উক্ত সূরা পাঠ করা ওয়াজিব বটে। এ বিষয়ে চার মাযহাবের নিকট গ্রহণযোগ্য তাফসীরের কিতাব ইবনু কাসীর ১ম খন্ড ১১ পৃষ্ঠার যা বিবৃত হয়েছে তা সত্যিই প্রণিধানযোগ্য।

هل ةجب قرأة الفاةحة على المأموم ؟ فيه ثلاثة أقوال للعلماء أحدها أنه ةجب عليه قرأةها كما ةجب على امامه لعموم الْأحاديث المةقدمة-

প্রকাশ থাকে যে, উলামায়ে কিরামদের ৩টি قول এর মধ্যে সবচেয়ে বেশী গ্রহণযোগ্য ও শক্তিশালী (أرجح)সিদ্ধান্ত যা তা-ই প্রথম সিদ্ধান্ত বলে ইবনু কাসীর (রহ.) স্বীয় তাফসীরে উদ্ধৃত করেছেন। অতঃপর দ্বিতীয় সিদ্ধান্তটি ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহ.)-এর থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছেন। যেমন বলা হয়েছে,

والثاني لا تجب على المأموم قرأة بالكلية للفاتحة ولا غيرها ولا في صلاة الجهرية ولا في صلاة السرية لـما رواه الإمام أحمد بن حنبل (رح) في سنده عن جابر بن عبد الله عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه قال من كان له إمام فقرأة الإمام له قرأة ولكن في اسناده ضعيف ورواه مالك (رح) عن وهب ابن كسان عن جابر من كلامه وقد رواي هذا الحديث من طرق ولا يصح منها شيء عن النبي صلى الله عليه وسلم

অর্থাৎ দ্বিতীয় এই যে, সূরায়ে ফাতিহার পাঠ মুক্তাদীর উপর ওয়াজিব হবে না বা অন্য কিছু পাঠ করাও ওয়াজিব হবে না, তা জাহরী (প্রকাশ্য) ক্বিরাআতেই হোক, বা গোপন (سري) ক্বিরাআতেই হোক, যা আহমাদ বিন হাম্বল (রহ.) স্বীয় কিতাব মুসনাদে আহমাদে রিওয়ায়াতে করেছেন জাবির বিন আবদুল্লাহ হতে, আর তিনি রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে। তিনি বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ইমামের ইক্তিদায় আছে, ইমামের ক্বিরাআতই তার ক্বিরাআত বলে গণ্য হবে। এখানে ইমাম ইবনু কাসীর (রহ.) বলেছেন, উক্ত রিওয়ায়াতের সনদ যঈফ। ইমাম মালিক (রহ.) উক্ত হাদীস সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে উল্লেখ করেন যে, জাবির (রাঃ) উক্ত বাক্য দ্বারা নিজের মত পোষণ করেছেন, এ বাক্যটি রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী বা নির্দেশ এ কথা মোটেই সহীহ নয়।

والثالث أنه ةجب القرأة على الـماموم في السرية لـما ةقدم ولايحب ذلك في الجهرية-

তৃতীয় মত এই যে, সিররী (চুপি চুপি) সলাতে ফাতিহা পড়া ওয়াজিব হবে, প্রকাশ্য সলাতে ওয়াজিব হবে না।

সূরায়ে ফাতিহার বিষয়ে নিম্নোক্ত হাদীসটি আমাদের যাবতীয় তর্কের মীগোশতা করে দিয়েছে যা আবূ দাউদ, নাসায়ী, তিরমিযীর ক্বিরাআত অধ্যায়ে নির্ভরযোগ্য রিওয়ায়াতে দেখা যায় যে, রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন ফাজ্রের সলাতের ক্বিরাআত আদায় করছেন, পেছনে সহাবায়ে কিরামদের অনেকেই রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহিত সমস্ত ক্বিরাআত পাঠ করছিলেন। অতঃপর সলাত শেষে রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ لا تفعلو إلَّا بأم القرأن فإنه لا صلاة لـمن لـم يقرأبها-

তোমরা সূরায়ে ফাতিহা ব্যতীত আর কোন সূরা পড়বে না। কেননা যে তা পড়ে না তার সলাত হয় না। এখানে ফাজরের ক্বিরাআত উচ্চ আওয়াজে পড়া হয়েছিল, এখানে নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে স্পষ্ট সিদ্ধান্ত পাওয়া গেল। নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহাবায়ে কিরাম, অতঃপর ইমাম হাসান বাসরী, ইমাম জুহরী, ইমাম আওজা‘ঈ, ইমাম ইবরাহীম নাখ‘ঈ, ইমাম মালিক, ইমাম আবদুল্লাহ বিন আল মুবারক, ইমাম বুখারী, ইমাম মুসলিম, ইমাম তিরমিযী, ইমাম নাসায়ী, ইবনু হাজার আসক্বালানী, হাফিয আস সাখাবী, ইমাম শাফি‘ঈ (রহ.), ইমাম নাবাবী, ইমাম শওকানী, হাফিয ইবনু কাসীর, ইমাম গাযযালী, বড়পীর আবদুল কাদের জিলানী (রহিমাহুমুল্লাহ আজমা‘ঈন) প্রমুখাত মনীষী সহ হিজাজ, নজদ, ‘আসির, ইয়ামান, সিরিয়া, মিশর, মরক্কো, আরব আমিরাত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মাক্কাহ ও মাদীনাহর লক্ষ লক্ষ উলামায়ে কিরাম শতাব্দীর পর শতাব্দী এমন কি আজ পর্যন্ত ইমামের পিছনে সর্বাবস্থায় সূরা ফাতিহা পাঠ করে এসেছেন এবং বর্তমানেও পাঠ করে থাকেন, উপরে যেসব মনীষীদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তাদের বদৌলতেই রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীসশাস্ত্র, পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা লাভ করে অদ্যাবধি টিকে আছে। তাঁদের প্রত্যেকেই ইমাম মুক্তাদী উভয়ের জন্য সূরা ফাতিহা পাঠ অত্যাবশ্যক বলে মনে করেন, তাই আমরাও অবশ্য পঠিতব্য বলে মনে করছি। ইমামের পিছনে ফাতিহা পাঠকারীদেরকে যদি গোমরাহ মনে করা হয়, তবে নাউযুবিল্লাহ, উল্লেখিত ইসলামের মহামনীষীদেরকেও তো এই দৃষ্টিতে তারা প্রকারান্তরে গোমরাহ বলেই মনে করছে। তাঁদের রিওয়ায়াতকে অমান্য করে, উক্ত রিওয়ায়াত পালনকারীদের বিভ্রান্ত ও গোমরাহ বলেই মনে করে কেবল উক্ত মনীষীদের নামের শেষে (রহ.) বলে ভক্তি জাহির করা কি স্ববিরোধিতা নয়? অন্য কারো ব্যক্তিগত চিন্তা-ভাবনা, ইজতিহাদ মানতে গিয়ে যেন রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এবং তাঁর রেখে যাওয়া সহীহ হাদীসকে অগ্রাহ্য করা না হয়, সে দিকে আমাদের সকলের যত্নবান হওয়া আবশ্যক।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

 সরাসরি

৬৫/১/২. অধ্যায়ঃ
যারা ক্রোধে পতিত নয়।

৪৪৭৫
عَبْدُ اللهِ بْنُ يُوْسُفَ أَخْبَرَنَا مَالِكٌ عَنْ سُمَيٍّ عَنْ أَبِيْ صَالِحٍ عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِذَا قَالَ الإِمَامُ {غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّآلِّيْنَ} فَقُوْلُوْا آمِيْنَ فَمَنْ وَافَقَ قَوْلُهُ قَوْلَ الْمَلَائِكَةِ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ.

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, যখন ইমাম বলবে غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ তখন তোমরা বলবে آمِينَ আল্লাহ আপনি কবূল করুন। যার পড়া মালায়িকাদের পড়ার সময় হবে, তার আগের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। [৭৮২] (আ.প্র. ৪১১৭, ই.ফা. ৪১২০)






[১] সলাতের ভেতরে, সলাতের বাইরে যে কোন অবস্থায় সূরা ফাতিহা শেষ করে آمِيْنَ বলতে হবে। নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তদীয় সহাবায়ে কিরাম (রাঃ) وَلَا الضَّالِّيْنَ বলার পরে آمِيْنَ বলতেন। ফাতিহা চুপে চুপে পড়লে আ-মীনও চুপে চুপে বলতেন। আর উক্ত সূরাটি যখন তাঁরা জোরে জোরে ও সশব্দে পাঠ করতেন, তখন আ-মীনও সশব্দে পাঠ করতেন, তা সলাত আদায়কালীন সময় হোক, কি সলাতের বাইরে। উক্ত পদ্ধতি নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে পরবর্তী কালের তাবিঈনদের যুগ পর্যন্ত প্রচলিত ছিল। পরবর্তীকালে ইসলামের ফিক্বহ শাস্ত্রবিদদের মধ্যে মতপার্থক্য সৃষ্টি হওয়ার কারণে তাদের একদল সলাত আদায়কালে সশব্দে আ-মীন বলাকে অপছন্দ করতেন এবং অপর জামা‘আত উচ্চ আওয়াজে আ-মীন বলাকেই সহীহ হাদীসের সঠিক অনুশীলন বলে মনে করে থাকেন। এখন পর্যালোচনা করে দেখা দরকার যে, উপরোক্ত দু’টি নিয়মের কোনটি সহীহ হাদীসের ভিত্তিতে বেশী গ্রহণযোগ্য। যেহেতু ‘কিতাবুত তাফসীর’ অধ্যায় আলোচনা করা যাচ্ছে বিধায় চার মাযহাবের নিকট বেশী গ্রহণযোগ্য তাফসীরের কিতাব ইবনু কাসীরের উদ্ধৃতি দেয়া যেতে পারে। তাফসীরে ইবনু কাসীর ১ম খন্ড, ২৭ পৃষ্ঠায় আছে-

والدليل على استحباب التأمين ما رواه الإمام أحمد وأبو داود والترمذي عن وائل بن حجر قال: سمعت النبي صلى الله عليه وسلم قرأ “غير المغضوب عليهم ولا الضالين” فقال “آمين” مد بها صوته ولأبي داود رفع بها صوته وقال الترمذي هذا حديث حسن ورُوي عن علي وابن مسعود وغيرهم. وعن أبي هريرة قال: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا تلا “غير المغضوب عليهم ولا الضالين” قال “آمين” حتى يسمع من يليه من الصف الْأول رواه أبو داود وابن ماجه وزاد فيه: فيرتج بها المسجد. والدارقطني وقال: هذا إسناد حسن.

অর্থাৎ সূরায়ে ফাতিহার শেষে উচ্চ আওয়াজে আ-মীন বলা মুস্তাহাব- এ কথার দলীল এই যে, এ বিষয়ে মহামতি ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল, আবূ দাউদ, তিরমিযী (রহ.) ওয়ায়িল বিন হুজর থেকে রিওয়ায়াত করেছেন। তিনি রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট শুনেছি, যখন তিনি غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّيْنَ পর্যন্ত পাঠ করলেন, তখন বললেন, আ-মীন ও স্বীয় আওয়াজকে বাড়িয়ে দিলেন (সশব্দে) এবং ইমাম আবূ দাউদ (রহ.) বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় আওয়াজকে উচ্চ করেই আ-মীন বলেছিলেন। ইমাম তিরমিযী (রহ.) বলেন, উক্ত হাদীসটি হাসান বটে। অতঃপর একই বিষয়ে একই রকম বর্ণনা করেছেন ইবনু মাস‘ঊদ ও ‘আলী (রাঃ) এবং আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বলেন যে, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّيْنَ বলতেন, তখন আ-মীন বলতেন, যা এক কাতার পেছন থেকে শোনা যেত। আবূ দাউদ, ইবনু মাজাহ একটু বাড়িয়ে বর্ণনা করেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তদীয় সহাবায়ে কিরামদের আ-মীন বলার কারণে মাসজিদ কেঁপে উঠত। দারাকুতনী বলেন, এ হাদীসের সনদও হাসান পর্যায়েভুক্ত বটে। উল্লেখ্য, উক্ত সহীহুল বুখারীর ১ম খন্ডে ‘কিতাবুস সলাত’-এর মধ্যে ইমাম বুখারী (রহ.) সহীহ সনদের উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণনা করেছেনঃ إذا أمن الإمام فأمنوا

ইমাম যখন আ-মীন বলবে, তোমরা তখন আ-মীন বল। ইমাম যদি চুপে চুপে আ-মীন বলে তাহলে মুক্তাদীরা কীভাবে আ-মীন বলবে? সুতরাং فأمنوا শব্দটিকে ব্যাখ্যা করলেই দেখা যাচ্ছে যে, আ-মীন সশব্দেই বলতে হবে। অন্যথায় ইমাম যখন বলবে তখন মুক্তাদীদের আ-মীন বলা সম্ভব হবে না। বিস্তারিত জানার জন্য বুখারীর ১ম খন্ডের সলাত অধ্যায়ের টীকাটি পড়ে দেখুন। সহীহ হাদীস অনুযায়ী সলাত আদায় করলে মানুষ যদি গোমরাহ-বিভ্রান্ত হয়, তাহলে নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাড়া অন্য লোকদের মনগড়া ব্যাখ্যা মত ‘আমাল করলে হিদায়াত পাওয়া কী করে সম্ভব?

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

 সরাসরি

৬৫/২/১. অধ্যায়ঃ
মহান আল্লাহর বাণীঃ ‘‘আর তিনি শিখালেন আদমকে সব কিছুর নাম। (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/৩১)

৪৪৭৬
مُسْلِمُ بْنُ إِبْرَاهِيْمَ حَدَّثَنَا هِشَامٌ حَدَّثَنَا قَتَادَةُ عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ح و قَالَ لِيْ خَلِيْفَةُ حَدَّثَنَا يَزِيْدُ بْنُ زُرَيْعٍ حَدَّثَنَا سَعِيْدٌ عَنْ قَتَادَةَ عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ يَجْتَمِعُ الْمُؤْمِنُوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيَقُوْلُوْنَ لَوْ اسْتَشْفَعْنَا إِلَى رَبِّنَا فَيَأْتُوْنَ آدَمَ فَيَقُوْلُوْنَ أَنْتَ أَبُو النَّاسِ خَلَقَكَ اللهُ بِيَدِهِ وَأَسْجَدَ لَكَ مَلَائِكَتَهُ وَعَلَّمَكَ أَسْمَاءَ كُلِّ شَيْءٍ فَاشْفَعْ لَنَا عِنْدَ رَبِّكَ حَتَّى يُرِيْحَنَا مِنْ مَكَانِنَا هَذَا فَيَقُوْلُ لَسْتُ هُنَاكُمْ وَيَذْكُرُ ذَنْبَهُ فَيَسْتَحِي ائْتُوْا نُوْحًا فَإِنَّهُ أَوَّلُ رَسُوْلٍ بَعَثَهُ اللهُ إِلَى أَهْلِ الْأَرْضِ فَيَأْتُوْنَهُ فَيَقُوْلُ لَسْتُ هُنَاكُمْ وَيَذْكُرُ سُؤَالَهُ رَبَّهُ مَا لَيْسَ لَهُ بِهِ عِلْمٌ فَيَسْتَحِيْ فَيَقُوْلُ ائْتُوْا خَلِيْلَ الرَّحْمَنِ فَيَأْتُوْنَهُ فَيَقُوْلُ لَسْتُ هُنَاكُمْ ائْتُوْا مُوْسَى عَبْدًا كَلَّمَهُ اللهُ وَأَعْطَاهُ التَّوْرَاةَ فَيَأْتُوْنَهُ فَيَقُوْلُ لَسْتُ هُنَاكُمْ وَيَذْكُرُ قَتْلَ النَّفْسِ بِغَيْرِ نَفْسٍ فَيَسْتَحِيْ مِنْ رَبِّهِ فَيَقُوْلُ ائْتُوْا عِيْسَى عَبْدَ اللهِ وَرَسُوْلَهُ وَكَلِمَةَ اللهِ وَرُوْحَهُ فَيَقُوْلُ لَسْتُ هُنَاكُمْ ائْتُوْا مُحَمَّدًا عَبْدًا غَفَرَ اللهُ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَمَا تَأَخَّرَ فَيَأْتُوْنِيْ فَأَنْطَلِقُ حَتَّى أَسْتَأْذِنَ عَلَى رَبِّيْ فَيُؤْذَنَ لِيْ فَإِذَا رَأَيْتُ رَبِّيْ وَقَعْتُ سَاجِدًا فَيَدَعُنِيْ مَا شَاءَ اللهُ ثُمَّ يُقَالُ ارْفَعْ رَأْسَكَ وَسَلْ تُعْطَهْ وَقُلْ يُسْمَعْ وَاشْفَعْ تُشَفَّعْ فَأَرْفَعُ رَأْسِيْ فَأَحْمَدُهُ بِتَحْمِيْدٍ يُعَلِّمُنِيْهِ ثُمَّ أَشْفَعُ فَيَحُدُّ لِيْ حَدًّا فَأُدْخِلُهُمْ الْجَنَّةَ ثُمَّ أَعُوْدُ إِلَيْهِ فَإِذَا رَأَيْتُ رَبِّيْ مِثْلَهُ ثُمَّ أَشْفَعُ فَيَحُدُّ لِيْ حَدًّا فَأُدْخِلُهُمْ الْجَنَّةَ ثُمَّ أَعُوْدُ الرَّابِعَةَ فَأَقُوْلُ مَا بَقِيَ فِي النَّارِ إِلَّا مَنْ حَبَسَهُ الْقُرْآنُ وَوَجَبَ عَلَيْهِ الْخُلُوْدُ

قَالَ أَبُوْ عَبْد اللهِ إِلَّا مَنْ حَبَسَهُ الْقُرْآنُ يَعْنِيْ قَوْلَ اللهِ تَعَالَى {خَالِدِيْنَ فِيْهَا}

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ক্বিয়ামাতের দিন মু’মিনগণ একত্রিত হবে এবং তারা বলবে, আমরা যদি আমাদের রবের কাছে আমাদের জন্য একজন সুপারিশকারী পেতাম। এরপর তারা আদম (‘আ.)-এর কাছে আসবে এবং তাঁকে বলবে, আপনি মানব জাতির পিতা। আপনাকে আল্লাহ তা‘আলা নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন। তাঁর মালায়িকাহ দ্বারা আপনাকে সাজদাহ্ করিয়েছেন এবং যাবতীয় বস্তুর নাম আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন। অতএব আপনি আপনার রবের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন, যেন আমাদের কঠিন স্থান থেকে আরাম দিতে পারেন। তিনি বলবেন, আমি এ কাজের যোগ্য নই। তিনি নিজ ভুলের কথা স্মরণ করে লজ্জাবোধ করবেন। (তিনি বলবেন) তোমরা নূহ (‘আ.)-এর কাছে যাও। তিনিই প্রথম রসূল (‘আ.) যাকে আল্লাহ জগৎবাসীর কাছে পাঠিয়েছেন। তখন তারা তাঁর কাছে আসবে। তিনিও বলবেন, এ কাজ আমার দ্বারা হওয়ার নয়। তিনি তাঁর রবের কাছে প্রশ্ন করেছিলেন এমন বিষয়ে যা তাঁর জানা ছিল না। সে কথা স্মরণ করে তিনি লজ্জাবোধ করবেন এবং বলবেন বরং তোমরা আল্লাহ্‌র খলীল (ইব্রাহীম) (‘আ.)-এর কাছে যাও। তারা তখন তাঁর কাছে আসবে, তখন তিনি বলবেন, এ কাজ আমার দ্বারা হওয়ার নয়। তোমরা মূসা (‘আ.)-এর কাছে যাও। তিনি এমন বান্দা যে, তাঁর সঙ্গে আল্লাহ কথা বলেছেন এবং তাঁকে তাওরাত গ্রন্থ দান করেছেন। তখন তারা তাঁর কাছে আসবে। তিনি বলবেন, তোমাদের এ কাজের জন্য আমার সাহস হচ্ছে না এবং তিনি এক কিবতীকে বিনা দোষে হত্যা করার কথা স্মরণ করে তাঁর রবের নিকট লজ্জাবোধ করবেন। তিনি বলবেন, তোমরা ঈসা (‘আ.)-এর কাছে যাও। তিনি আল্লাহ্‌র বান্দা ও রসূল এবং আল্লাহ্‌র বাণী ও রূহ্। (তারা সেখানে যাবে) তিনি বলবেন, এ কাজ আমার দ্বারা হওয়ার নয়। তোমরা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে যাও। তিনি এমন এক বান্দা যার পূর্ব ও পরের ভুলত্র“টি আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। তখন তারা আমার কাছে আসবে। তখন আমি আমার রবের কাছে যাব এবং অনুমতি চাব, আমাকে অনুমতি প্রদান করা হবে। আর আমি যখন আমার রবকে দেখব, তখন আমি সাজদাহ্য় লুটিয়ে পড়ব। আল্লাহ যতক্ষণ চান এ অবস্থায় আমাকে রাখবেন। তারপর বলা হবে, আপনার মাথা উঠান এবং চান দেয়া হবে, বলুন শোনা হবে, সুপারিশ করুন কবূল করা হবে। তখন আমি আমার মাথা উঠাব এবং আমাকে যে প্রশংসাসূচক বাক্য শিক্ষা দিবেন তা দ্বারা আমি তাঁর প্রশংসা করব। তারপর সুপারিশ করব। আমাকে একটি সীমারেখা নির্দিষ্ট করে দেয়া হবে। (সেই সীমিত সংখ্যায়) আমি তাদের জান্নাতে প্রবেশ করাব। আমি পুনরায় রবের সমীপে ফিরে আসব। যখন আমি আমার রবকে দেখব তখন আগের মত সবকিছু করব। তারপর আমি সুপারিশ করব। আর আমাকে একটি সীমারেখা নির্দিষ্ট করে দেয়া হবে। তদনুসারে আমি তাদের জান্নাতে দাখিল করাব। (তারপর তৃতীয়বার) আমি আবার রবের দরবারে উপস্থিত হয়ে অনুরূপ করব। এরপর আমি চতুর্থবার ফিরে আসব এবং আরয করব এখন তারাই কেবল জাহান্নামে অবশিষ্ট রয়ে গেছে যারা কুরআনের ঘোষণা অনুযায়ী অনেক আছে যাদের উপর জাহান্নামে চিরবাস অবধারিত হয়ে গেছে।

আবূ ‘আবদুল্লাহ বুখারী (রহ.) বলেন, কুরআনের যে ঘোষণায় তারা জাহান্নামে আবদ্ধ রয়েছে তা হল মহান আল্লাহ্‌র বাণী ঃ “তারা চিরকাল জাহান্নামে থাকবে।” [৪৪; মুসলিম ১/৮৪, হাঃ ১৯৩, আহমাদ ১২১৫৩] (আ.প্র. ৪১১৮, ই.ফা. ৪১২১)

৬৫/২/২. অধ্যায়ঃ


মুজাহিদ (রহ.) বলেন, إِلَى شَيَاطِيْنِهِمْ-তাদের সঙ্গী-সাথী মুনাফিক ও মুশরিক। مُحِيْطٌ بِالْكَافِرِيْنَ -আল্লাহ কাফিরদের পরিবেষ্টন করে আছেন- (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/১৯)। অর্থাৎ আল্লাহ তাদের একত্রকারী। صِبْغَةَ অর্থাৎ দ্বীন। عَلَى الْخَاشِعِيْنَ-প্রকৃত মু’মিনদের নিকট। মুজাহিদ (রহ.) বলেন, بِقُوَّةٍ-তাতে যা আছে তা ‘আমাল করে। আবুল আলিয়া (রহ.) বলেন, مَرَضٌ-সন্দেহ। وَمَا خَلْفَهَا -পরবর্তীদের জন্য নাসীহাত। لَا شِيَةَ -দাগ বিহীন। অন্যরা বলেন, يَسُوْمُوْنَكُمْ-তারা তোমাদের কষ্ট দিত- (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/৪৯)। الْوَلَايَةُ-আল ওয়াও মাফতুহ্ অবস্থায় الْوَلَاء-আল-ওয়ালা এর ধাতু। অর্থাৎ প্রভুত্ব, আর যখন ‘ওয়াও’-কে যের দেয়া হবে, তখন অর্থ দাঁড়াবে নেতৃত্ব। কেউ কেউ বলেন, যে সমস্ত বীজ খাওয়া হয় তাকে ফুম فُوْمٌ বলে। ক্বাতাদাহ (রহ.) বলেন, فَبَاءُوْا তারা (আল্লাহর গযবের দিকে) ফিরে গেল। يَسْتَفْتِحُوْنَ তারা সাহায্য চাইতো। شَرَوْا-তারা বিক্রি করল। رَاعِنَا নির্গত হয়েছে الرُّعُوْنَةِ মাসদার থেকে। যখন তারা লোককে বোকা বানাতে চাইত তখন বলত, রায়িনা رَاعِنَا। لَا يَجْزِيْ -অর্থাৎ কোন কাজে আসবে না। خُطُوَاتِ নির্গত হয়েছে الْخَطْوِ মাসদার হতে যার অর্থ পদচিহ্ন। ابْتَلَى -পরীক্ষা করলেন।

৬৫/২/৩. অধ্যায়ঃ
মহান আল্লাহর বাণীঃ অতএব, তোমরা জেনে-বুঝে কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ স্থির করো না। (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/২২)

৪৪৭৭
عُثْمَانُ بْنُ أَبِيْ شَيْبَةَ حَدَّثَنَا جَرِيْرٌ عَنْ مَنْصُوْرٍ عَنْ أَبِيْ وَائِلٍ عَنْ عَمْرِو بْنِ شُرَحْبِيْلَ عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ سَأَلْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أَيُّ الذَّنْبِ أَعْظَمُ عِنْدَ اللهِ قَالَ أَنْ تَجْعَلَ لِلهِ نِدًّا وَهُوَ خَلَقَكَ قُلْتُ إِنَّ ذَلِكَ لَعَظِيْمٌ قُلْتُ ثُمَّ أَيُّ قَالَ وَأَنْ تَقْتُلَ وَلَدَكَ تَخَافُ أَنْ يَطْعَمَ مَعَكَ قُلْتُ ثُمَّ أَيُّ قَالَ أَنْ تُزَانِيَ حَلِيْلَةَ جَارِكَ.

‘আবদুল্লাহ (ইবনু মাস‘ঊদ) (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলাম যে, কোন্ গুনাহ আল্লাহ্‌র কাছে সবচেয়ে বড়? তিনি বললেন, আল্লাহ্‌র জন্য অংশীদার দাঁড় করান। অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। আমি বললাম, এতো সত্যিই বড় গুনাহ। আমি বললাম, তারপর কোন্ গুনাহ? তিনি উত্তর দিলেন, তুমি তোমার সন্তানকে এই ভয়ে হত্যা করবে যে, সে তোমার সঙ্গে আহার করবে। আমি আরয করলাম, এরপর কোনটি? তিনি উত্তর দিলেন, তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সঙ্গে তোমার ব্যভিচার করা। [৪৭৬১, ৬০০১, ৬৮১১, ৬৮৬১, ৭৫২০, ৭৫৩২; মুসলিম ১/৩৭, হাঃ ৮৬০] (আ.প্র. ৪১১৯, ই.ফা. ৪১২২)

৬৫/২/৪. অধ্যায়ঃ
মহান আল্লাহর বাণীঃ

{وَظَلَّلْنَا عَلَيْكُمْ الْغَمَامَ وَأَنْزَلْنَا عَلَيْكُمْ الْمَنَّ وَالسَّلْوٰى كُلُوْا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ وَمَا ظَلَمُوْنَا وَلٰكِنْ كَانُوْآ أَنْفُسَهُمْ يَظْلِمُوْنَ}

وَقَالَ مُجَاهِدٌ {الْمَنُّ}صَمْغَةٌ {وَالسَّلْوَى} الطَّيْرُ.

‘‘আর আমি মেঘমালা দিয়ে তোমাদের উপর ছায়া দান করেছি এবং তোমাদের জন্য খাবার পাঠিয়েছি মান্না ও সালওয়া। তোমরা খাও সেসব পবিত্র বস্তু যা আমি তোমাদের দান করেছি। তারা আমার প্রতি কোন জুলুম করেনি, বরং তারা নিজেদের উপরই জুলুম করেছিল।’’ (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/৫৭)

মুজাহিদ (রহ.) বলেন, মান্ন শিশির জাতীয় সুস্বাদু খাদ্য (যা পাথর ও গাছের উপর অবতীর্ণ হত পরে জমে গিয়ে ব্যাঙের ছাতার মতো হত) আর সাল্ওয়া-পাখি।

৪৪৭৮
أَبُوْ نُعَيْمٍ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ عَنْ عَبْدِ الْمَلِكِ عَنْ عَمْرِو بْنِ حُرَيْثٍ عَنْ سَعِيْدِ بْنِ زَيْدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم الْكَمْأَةُ مِنَ الْمَنِّ وَمَاؤُهَا شِفَاءٌ لِلْعَيْنِ

সা‘ঈদ ইবনু যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ …… আল কামাআত (ব্যাঙের ছাতা) মান্ন জাতীয়। আর তার পানি চোখের রোগের প্রতিষেধক। [৪৬৩৯, ৫৭০৮; মুসলিম ৩৬/২৮, হাঃ ২০৪৯, আহমাদ ১৬২৫] (আ.প্র. ৪১২০, ই.ফা. ৪১২৩)

৬৫/২/৫. অধ্যায়ঃ


{وَإِذْ قُلْنَا ادْخُلُوْا هٰذِهِ الْقَرْيَةَ فَكُلُوْا مِنْهَا حَيْثُ شِئْتُمْ رَغَدًا وَادْخُلُوا الْبَابَ سُجَّدًا وَّقُوْلُوْا حِطَّةٌ نَّغْفِرْ لَكُمْ خَطَايَاكُمْ وَسَنَزِيْدُ الْمُحْسِنِيْنَ} رَغَدًا وَاسِعٌ كَثِيْرٌ.

‘‘স্মরণ করুন, যখন আমি বললাম, এই জনপদে প্রবেশ কর, যেখানে ইচ্ছা স্বাচ্ছন্দে খাও, অবনত মস্তকে প্রবেশ কর দ্বার দিয়ে এবং বল حِطَّةٌ-‘ক্ষমা চাই’। আমি তোমাদের ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করব এবং সৎকর্মশীলদের প্রতি আমার দান বৃদ্ধি করব’’- (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/৫৮)। رَغَدًا প্রভূত স্বাচ্ছন্দ্য।

৪৪৭৯
مُحَمَّدٌ حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ مَهْدِيٍّ عَنْ ابْنِ الْمُبَارَكِ عَنْ مَعْمَرٍ عَنْ هَمَّامِ بْنِ مُنَبِّهٍ عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ قِيْلَ لِبَنِيْ إِسْرَائِيْلَ {ادْخُلُوا الْبَابَ سُجَّدًا وَقُوْلُوْا حِطَّةٌ} فَدَخَلُوْا يَزْحَفُوْنَ عَلَى أَسْتَاهِهِمْ فَبَدَّلُوْا وَقَالُوْا حِطَّةٌ حَبَّةٌ فِيْ شَعَرَةٍ.

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, বানী ইসরাঈলকে বলা হয়েছিল যে, তোমরা সাজদাহ্ অবস্থায় নগর দ্বারে প্রবেশ কর এবং বল حِطَّةٌ (ক্ষমা চাই) কিন্তু তারা প্রবেশ করল নিতম্ব হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে এবং শব্দকে পরিবর্তন করে তদস্থলে বলল, গম ও যবের দানা। [৩৪০৩] (আ.প্র. ৪১২১, ই.ফা. ৪১২৪)

৬৫/২/৬. অধ্যায়ঃ
আল্লাহর বাণীঃ

{مَنْ كَانَ عَدُوًّا لِّجِبْرِيْلَ} وَقَالَ عِكْرِمَةُ جَبْرَ وَمِيْكَ وَسَرَافِ عَبْدٌ إِيْلْ اللهُ.

‘‘যারা জিবরীলের শত্রুতা করবে।’’ ‘ইকরিমাহ (রহ.) বলেন, জবর, মীক, সরাফ অর্থ ‘আবদ-বান্দা, ঈল-আল্লাহ্। (অর্থ হল ‘আবদুল্লাহ-আল্লাহর বান্দা) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪১২১, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৪১২৪)

৪৪৮০
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ مُنِيْرٍ سَمِعَ عَبْدَ اللهِ بْنَ بَكْرٍ حَدَّثَنَا حُمَيْدٌ عَنْ أَنَسٍ قَالَ سَمِعَ عَبْدُ اللهِ بْنُ سَلَامٍ بِقُدُوْمِ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَهْوَ فِيْ أَرْضٍ يَخْتَرِفُ فَأَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ إِنِّيْ سَائِلُكَ عَنْ ثَلَاثٍ لَا يَعْلَمُهُنَّ إِلَّا نَبِيٌّ فَمَا أَوَّلُ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ وَمَا أَوَّلُ طَعَامِ أَهْلِ الْجَنَّةِ وَمَا يَنْزِعُ الْوَلَدُ إِلَى أَبِيْهِ أَوْ إِلَى أُمِّهِ قَالَ أَخْبَرَنِيْ بِهِنَّ جِبْرِيْلُ آنِفًا قَالَ جِبْرِيْلُ قَالَ نَعَمْ قَالَ ذَاكَ عَدُوُّ الْيَهُوْدِ مِنَ الْمَلَائِكَةِ فَقَرَأَ هَذِهِ الْآيَةَ {مَنْ كَانَ عَدُوًّا لِّجِبْرِيْلَ فَإِنَّه” نَزَّلَه” عَلٰى قَلْبِكَ} بِإِذْنِ اللهِ أَمَّا أَوَّلُ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ فَنَارٌ تَحْشُرُ النَّاسَ مِنَ الْمَشْرِقِ إِلَى الْمَغْرِبِ وَأَمَّا أَوَّلُ طَعَامٍ يَأْكُلُهُ أَهْلُ الْجَنَّةِ فَزِيَادَةُ كَبِدِ حُوْتٍ وَإِذَا سَبَقَ مَاءُ الرَّجُلِ مَاءَ الْمَرْأَةِ نَزَعَ الْوَلَدَ وَإِذَا سَبَقَ مَاءُ الْمَرْأَةِ نَزَعَتْ قَالَ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَشْهَدُ أَنَّكَ رَسُوْلُ اللهِ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنَّ الْيَهُوْدَ قَوْمٌ بُهُتٌ وَإِنَّهُمْ إِنْ يَعْلَمُوْا بِإِسْلَامِيْ قَبْلَ أَنْ تَسْأَلَهُمْ يَبْهَتُوْنِيْ فَجَاءَتْ الْيَهُوْدُ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَيُّ رَجُلٍ عَبْدُ اللهِ فِيْكُمْ قَالُوْا خَيْرُنَا وَابْنُ خَيْرِنَا وَسَيِّدُنَا وَابْنُ سَيِّدِنَا قَالَ أَرَأَيْتُمْ إِنْ أَسْلَمَ عَبْدُ اللهِ بْنُ سَلَامٍ فَقَالُوْا أَعَاذَهُ اللهُ مِنْ ذَلِكَ فَخَرَجَ عَبْدُ اللهِ فَقَالَ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُوْلُ اللهِ فَقَالُوْا شَرُّنَا وَابْنُ شَرِّنَا وَانْتَقَصُوْهُ قَالَ فَهَذَا الَّذِيْ كُنْتُ أَخَافُ يَا رَسُوْلَ اللهِ.

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর শুভাগমনের খবর পেলেন। তখন তিনি (‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম) বাগানে ফল সংগ্রহ করছিলেন। তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে এসে বললেন, আমি আপনাকে তিনটি বিষয়ে জিজ্ঞেস করব যা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ব্যতীত অন্য কেউ জানেন না। তা হল ক্বিয়ামাতের প্রথম আলামাত কী? জান্নাতীদের প্রথম খাদ্য কী হবে? এবং সন্তান কখন পিতার মত হয় আর কখন মাতার মত হয়? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমাকে জিব্রীল (‘আ.) এখনই এসব ব্যাপারে জানিয়ে গেলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম বললেন, জিবরীল? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলল, হ্যাঁ। ইবনু সালাম বললেন, সে তো মালায়িকাদের মধ্যে ইয়াহূদীদের শত্রু। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এই আয়াত পাঠ করলেন, আপনি বলে দিনঃ যে কেউ জিবরাঈলের শত্র“ এ কারণে যে, সে আল্লাহ্‌র নির্দেশে আপনার অন্তরে কুরআন অবতীর্ণ করেছে (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/৯৭)। ক্বিয়ামাতের প্রথম আলামাত হল, এক রকম আগুন মানুষদেরকে পূর্ব থেকে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত একত্রিত করবে। আর জান্নাতীরা প্রথমে যা খাবেন তা হল মাছের কলিজার টুকরা। আর যখন পুরুষের বীর্য স্ত্রীর উপর প্রাধান্য লাভ করে তখন সন্তান পিতার আকৃতি পায় এবং যখন স্ত্রীর বীর্য পুরুষের উপর প্রাধান্য লাভ করে তখন সন্তান মাতার আকৃতি পায়। তখন ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই এবং আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি অবশ্যই আল্লাহ্‌র রসূল। হে আল্লাহ্‌র রসূল! ইয়াহূদরা চরম মিথ্যারোপকারী। যদি তারা আপনার প্রশ্ন করার পূর্বেই আমার ইসলাম গ্রহণের সংবাদ জেনে যায় তবে তারা আমার প্রতি অপবাদ আরোপ করবে। ইতোমধ্যে ইয়াহূদীরা এসে গেল। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইয়াহূদীদের জিজ্ঞেস করলেন, আবদুল্লাহ তোমাদের মধ্যে কেমন লোক? তারা উত্তর দিল, তিনি আমাদের মধ্যে উত্তম এবং আমাদের মধ্যে সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির পুত্র। তিনি আমাদের নেতা এবং আমাদের নেতার ছেলে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যদি ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম ইসলাম গ্রহণ করেন, তাহলে তোমাদের অভিমত কী? তারা বলল, আল্লাহ তাকে এর থেকে রক্ষা করুন। তখন [‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ)] বের হয়ে এসে বললেন, আমি সাক্ষ্য দেই যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অবশ্যই আল্লাহ্‌র প্রেরিত রসূল। তখন তারা বলল, সে আমাদের মধ্যে মন্দ ব্যক্তি ও মন্দ ব্যক্তির ছেলে। তারপর তারা ইবনু সালাম (রাঃ)-কে দোষী সাব্যস্ত করে সমালোচনা করতে লাগল। তখন ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! এটাই আমি আশঙ্কা করছিলাম। [৩৩২৯] (আ.প্র. ৪১২২, ই.ফা. ৪১২৫)

৬৫/২/৭. অধ্যায়ঃ
মহান আল্লাহর বাণীঃ আমি কোন আয়াত রহিত করলে কিংবা ভুলিয়ে দিলে। (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/১০৬)

৪৪৮১
عَمْرُوْ بْنُ عَلِيٍّ حَدَّثَنَا يَحْيَى حَدَّثَنَا سُفْيَانُ عَنْ حَبِيْبٍ عَنْ سَعِيْدِ بْنِ جُبَيْرٍ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ عُمَرُ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَقْرَؤُنَا أُبَيٌّ وَأَقْضَانَا عَلِيٌّ وَإِنَّا لَنَدَعُ مِنْ قَوْلِ أُبَيٍّ وَذَاكَ أَنَّ أُبَيًّا يَقُوْلُ لَا أَدَعُ شَيْئًا سَمِعْتُهُ مِنْ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَقَدْ قَالَ اللهُ تَعَالَى {مَا نَنْسَخْ مِنْ اٰيَةٍ أَوْ نُنْسِهَا}

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ‘উমার (রাঃ) বলেন, উবাই (রাঃ) আমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম ক্বারী, আর ‘আলী (রাঃ) আমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম বিচারক। কিন্তু আমরা উবাই (রাঃ)-এর কিছু কথা বাদ দেই। কারণ উবাই (রাঃ) বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে যা শুনেছি তার কিছুই ছাড়ব না। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমি যে আয়াত রহিত করি অথবা ভুলিয়ে দেই …….. (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/১০৬)। [৫০০৫] (আ.প্র. ৪১২৩, ই.ফা. ৪১২৬)

৬৫/২/৮. অধ্যায়ঃ
মহান আল্লাহর বাণীঃ আর তারা বলেঃ ‘আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন।’ তিনি অতি পবিত্র। (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/১১৬)

৪৪৮২
أَبُو الْيَمَانِ أَخْبَرَنَا شُعَيْبٌ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِيْ حُسَيْنٍ حَدَّثَنَا نَافِعُ بْنُ جُبَيْرٍ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ قَالَ اللهُ كَذَّبَنِي ابْنُ آدَمَ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ ذَلِكَ وَشَتَمَنِيْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ ذَلِكَ فَأَمَّا تَكْذِيْبُهُ إِيَّايَ فَزَعَمَ أَنِّيْ لَا أَقْدِرُ أَنْ أُعِيْدَهُ كَمَا كَانَ وَأَمَّا شَتْمُهُ إِيَّايَ فَقَوْلُهُ لِيْ وَلَدٌ فَسُبْحَانِيْ أَنْ أَتَّخِذَ صَاحِبَةً أَوْ وَلَدًا

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আদম সন্তান আমার ব্যাপারে মিথ্যা কথা বলে। অথচ তার এ কাজ ঠিক নয়। আমাকে গালি দিয়েছে অথচ তার জন্য এটা ঠিক নয়। তার আমার প্রতি মিথ্যারোপ হল, সে বলে যে, আমি তাকে (মৃত্যুর) পূর্বের মত পুনরায় জীবিত করতে সক্ষম নই। আর আমাকে তার গালি দেয়া হলতার এ কথা যে, আমার সন্তান আছে অথচ আমি স্ত্রী ও সন্তান গ্রহণ থেকে পবিত্র। (আ.প্র. ৪১২৩, ই.ফা. ৪১১৭)

৬৫/২/৯. অধ্যায়ঃ
মহান আল্লাহর বাণীঃ তোমরা ইব্রাহীমের দাঁড়ানোর জায়গাকে সলাতের জায়গারূপে গ্রহণ কর। (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/১২৫)

{مَثَابَةً} يَثُوْبُوْنَ يَرْجِعُوْنَ.

مَثَابَةً-ফিরে আসার স্থান। يَثُوْبُوْنَ লোকজন প্রত্যাবর্তন করে।

৪৪৮৩
مُسَدَّدٌ عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيْدٍ عَنْ حُمَيْدٍ عَنْ أَنَسٍ قَالَ قَالَ عُمَرُ وَافَقْتُ اللهَ فِيْ ثَلَاثٍ أَوْ وَافَقَنِيْ رَبِّيْ فِيْ ثَلَاثٍ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ لَوْ اتَّخَذْتَ مَقَامَ إِبْرَاهِيْمَ مُصَلًّى وَقُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ يَدْخُلُ عَلَيْكَ الْبَرُّ وَالْفَاجِرُ فَلَوْ أَمَرْتَ أُمَّهَاتِ الْمُؤْمِنِيْنَ بِالْحِجَابِ فَأَنْزَلَ اللهُ آيَةَ الْحِجَابِ قَالَ وَبَلَغَنِيْ مُعَاتَبَةُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم بَعْضَ نِسَائِهِ فَدَخَلْتُ عَلَيْهِنَّ قُلْتُ إِنْ انْتَهَيْتُنَّ أَوْ لَيُبَدِّلَنَّ اللهُ رَسُوْلَهُ صلى الله عليه وسلم خَيْرًا مِنْكُنَّ حَتَّى أَتَيْتُ إِحْدَى نِسَائِهِ قَالَتْ يَا عُمَرُ أَمَا فِيْ رَسُوْلِ اللهِ مَا يَعِظُ نِسَاءَهُ حَتَّى تَعِظَهُنَّ أَنْتَ فَأَنْزَلَ اللهُ : {عَسٰى رَبُّه” إِنْ طَلَّقَكُنَّ أَنْ يُّبَدِّلَه” أَزْوَاجًا خَيْرًا مِّنْكُنَّ مُسْلِمٰتٍ}

وَقَالَ ابْنُ أَبِيْ مَرْيَمَ أَخْبَرَنَا يَحْيَى بْنُ أَيُّوْبَ حَدَّثَنِيْ حُمَيْدٌ سَمِعْتُ أَنَسًا عَنْ عُمَرَ

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ‘উমার (রাঃ) বলেছেন, তিনটি বিষয়ে আমার মতামত আল্লাহ্‌র ওয়াহীর অনুরূপ হয়েছে অথবা (তিনি বলেছেন) তিনটি বিষয়ে আমার মতামতের অনুকূলে আল্লাহ ওয়াহী অবতীর্ণ করেছেন। তা হল, আমি বলেছিলাম হে আল্লাহ্‌র রসূল! যদি আপনি মাকামে ইব্রাহীমকে সলাতের স্থান হিসাবে গ্রহণ করতেন। এ বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা অবতীর্ণ করলেন ……. তোমরা ইবরাহীমের দাঁড়ানোর জায়গাকে সলাতের জায়গারূপে গ্রহণ কর (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/১২৫)। আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনার কাছে ভাল ও মন্দ উভয় প্রকারের লোক আসে। কাজেই আপনি যদি উম্মাহাতুল মু’মিনীনদেরকে পর্দা করার আদেশ করবেন। তখন আল্লাহ তা‘আলা পর্দার আয়াত অবতীর্ণ করেন। তিনি আরো বলেন, আমি জানতে পেরেছিলাম যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর কতক স্ত্রীর প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছেন। তখন আমি তাদের কাছে উপস্থিত হই এবং বলি যে, আপনারা এর থেকে বিরত থাকুন নচেৎ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে আপনাদের পরিবর্তে উত্তম স্ত্রী দান করবেন। এরপর আমি তাঁর কোন স্ত্রীর কাছে আসি, তখন তিনি বললেন, হে ‘উমার! রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপারেও নাক গলাতে শুরু করেছ। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) স্ত্রীগণকে নাসীহাত করে থাকেন আর এখন তুমি তাদের নাসীহাত করতে আরম্ভ করেছ? তখন আল্লাহ তা‘আলা অবতীর্ণ করেন ঃ عَسَى رَبُّهُ إِنْ طَلَّقَكُنَّ أَنْ يُبَدِّلَهُ أَزْوَاجًا خَيْرًا مِنْكُنَّ مُسْلِمَاتٍ “যদি নাবী তোমাদের সবাইকে তালাক দেন, তবে তাঁর রব অচিরেই তোমাদের পরিবর্তে তোমাদের চেয়ে উত্তম স্ত্রী তাঁকে দিবেন, যারা হবে আজ্ঞাবহ, ঈমানদার, অনুগত, তাওবাহকারিণী, ‘ইবাদাতকারিণী, সিয়াম পালনকারী, অকুমারী ও কুমারী” (সূরাহ আত্-তাহরীম ৬৬/৫)।

ইবনু আবী মারইয়াম (রহ.) বলেন, আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, ‘উমার (রাঃ) আমার কাছে এরূপ বলেছেন। [৪০২] (আ.প্র. ৪১২৫, ই.ফা. ৪১২৮)

৬৫/২/১০. অধ্যায়ঃ
মহান আল্লাহর বাণীঃ

{وَإِذْ يَرْفَعُ إِبْرَاهِيْمُ الْقَوَاعِدَ مِنَ الْبَيْتِ وَإِسْمَاعِيْلُ رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا إِنَّكَ أَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ}

{الْقَوَاعِدُ} : أَسَاسُهُ وَاحِدَتُهَا، قَاعِدَةٌ، وَالْقَوَاعِدُ مِنْ النِّسَاءِ وَاحِدُهَا : قَاعِدٌ.

‘‘স্মরণ কর, যখন ইব্রাহীম ও ইসমাঈল কা‘বাঘরের ভিত নির্মাণ করছিল তখন তারা দু‘আ করেছিলঃ হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের এ প্রয়াস ক্ববূল কর, নিশ্চয় তুমি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা।’’ (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/১২৭)

الْقَوَاعِدُ ভিত্তি, একবচনে কায়িদাতু قَاعِدَةٌ। আল কাওয়ায়িদ মহিলাদের সম্পর্কে বলা হলে এর অর্থ বৃদ্ধা নারী, তখন এর একবচন قَاعِدٌ হবে।

৪৪৮৪
إِسْمَاعِيْلُ قَالَ حَدَّثَنِيْ مَالِكٌ عَنْ ابْنِ شِهَابٍ عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللهِ أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ مُحَمَّدِ بْنِ أَبِيْ بَكْرٍ أَخْبَرَ عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا زَوْجِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ أَلَمْ تَرَيْ أَنْ قَوْمَكِ بَنَوْا الْكَعْبَةَ وَاقْتَصَرُوْا عَنْ قَوَاعِدِ إِبْرَاهِيْمَ فَقُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَلَا تَرُدُّهَا عَلَى قَوَاعِدِ إِبْرَاهِيْمَ قَالَ لَوْلَا حِدْثَانُ قَوْمِكِ بِالْكُفْرِ فَقَالَ عَبْدُ اللهِ بْنُ عُمَرَ لَئِنْ كَانَتْ عَائِشَةُ سَمِعَتْ هَذَا مِنْ رَسُوْلِ اللهِ مَا أُرَى رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم تَرَكَ اسْتِلَامَ الرُّكْنَيْنِ اللَّذَيْنِ يَلِيَانِ الْحِجْرَ إِلَّا أَنَّ الْبَيْتَ لَمْ يُتَمَّمْ عَلَى قَوَاعِدِ إِبْرَاهِيْمَ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সহধর্মিণী ‘আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তোমার কি জানা নেই যে, তোমার সম্প্রদায় কুরাইশ কা‘বা তৈরী করেছে এবং ইবরাহীম (‘আ.)-এর ভিত্তির থেকে ছোট নির্মাণ করেছে? [‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন] আমি তখন বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনি কি ইবরাহীম (‘আ.)-এর ভিত্তির উপর কা‘বাকে আবার নির্মাণ করবেন না? তিনি বললেন, যদি তোমার গোত্রের কুফরীর যুগ নিকট অতীতে না হত। এ কথা শুনে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) বললেন, যদি ‘আয়িশাহ (রাঃ) এ কথা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হতে শুনে থাকেন, তবে আমার মনে হয় যে এ কারণেই রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হাজরে আসওয়াদ সংলগ্ন দু’ রুকনকে চুম্বন করতেন না, বর্জন করেছেন, যেহেতু বাইতুল্লাহ্র নির্মাণ কাজ ইবরাহীম (‘আ.)-এর ভিতের উপর সম্পূর্ণ করা হয়নি। [১২৬] (আ.প্র. ৪১২৬, ই.ফা. ৪১২৯)

৬৫/২/১১. অধ্যায়ঃ
মহান আল্লাহর বাণীঃ তোমরা বল, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর উপর এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে আমাদের প্রতি। (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/১৩৬)

৪৪৮৫
مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ عُمَرَ أَخْبَرَنَا عَلِيُّ بْنُ الْمُبَارَكِ عَنْ يَحْيَى بْنِ أَبِيْ كَثِيْرٍ عَنْ أَبِيْ سَلَمَةَ عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كَانَ أَهْلُ الْكِتَابِ يَقْرَءُوْنَ التَّوْرَاةَ بِالْعِبْرَانِيَّةِ وَيُفَسِّرُوْنَهَا بِالْعَرَبِيَّةِ لِأَهْلِ الإِسْلَامِ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لَا تُصَدِّقُوْا أَهْلَ الْكِتَابِ وَلَا تُكَذِّبُوْهُمْ وَقُوْلُوْا {اٰٰمَنَّا بِاللهِ وَمَآ أُنْزِلَ إِلَيْنَا}

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আহলে কিতাব (ইয়াহূদী) ইবরানী ভাষায় তাওরাত পাঠ করে মুসলিমদের কাছে তা আরবী ভাষায় ব্যাখ্যা করত। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমরা আহলে কিতাবকে বিশ্বাসও কর না আর অবিশ্বাসও কর না এবং (আল্লাহ্‌র বাণী) “তোমরা বল, আমরা আল্লাহ্তে ঈমান এনেছি এবং যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তাতে . . . .” (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/১৩৬)। [৭৩৬২, ৭৫৪২] (আ.প্র. ৪১২৭, ই.ফা. ৪১৩০)

৬৫/২/১২. অধ্যায়ঃ


{سَيَقُوْلُ السُّفَهَآءُ مِنَ النَّاسِ مَا وَلَّاهُمْ عَنْ قِبْلَتِهِمْ الَّتِيْ كَانُوْا عَلَيْهَا قُلْ لِّـلّٰهِ الْمَشْرِقُ وَالْمَغْرِبُ يَهْدِيْ مَنْ يَّشَآءُ إِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ}

‘‘অচিরেই নির্বোধ লোকেরা বলবেঃ কিসে ফিরিয়ে দিল তাদের সে কিবলা থেকে, যে কিবলা তারা এ যাবৎ অনুসরণ করে আসছিল? আপনি বলুনঃ পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহরই। তিনি যাকে ইচ্ছা সরল-সঠিক পথে পরিচালিত করেন।’’ (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/১৪২)

৪৪৮৬
أَبُوْ نُعَيْمٍ سَمِعَ زُهَيْرًا عَنْ أَبِيْ إِسْحَاقَ عَنِ الْبَرَاءِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صَلَّى إِلَى بَيْتِ الْمَقْدِسِ سِتَّةَ عَشَرَ شَهْرًا أَوْ سَبْعَةَ عَشَرَ شَهْرًا وَكَانَ يُعْجِبُهُ أَنْ تَكُوْنَ قِبْلَتُهُ قِبَلَ الْبَيْتِ وَأَنَّهُ صَلَّى أَوْ صَلَّاهَا صَلَاةَ الْعَصْرِ وَصَلَّى مَعَهُ قَوْمٌ فَخَرَجَ رَجُلٌ مِمَّنْ كَانَ صَلَّى مَعَهُ فَمَرَّ عَلَى أَهْلِ الْمَسْجِدِ وَهُمْ رَاكِعُوْنَ قَالَ أَشْهَدُ بِاللهِ لَقَدْ صَلَّيْتُ مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قِبَلَ مَكَّةَ فَدَارُوْا كَمَا هُمْ قِبَلَ الْبَيْتِ وَكَانَ الَّذِيْ مَاتَ عَلَى الْقِبْلَةِ قَبْلَ أَنْ تُحَوَّلَ قِبَلَ الْبَيْتِ رِجَالٌ قُتِلُوْا لَمْ نَدْرِ مَا نَقُوْلُ فِيْهِمْ فَأَنْزَلَ اللهُ {وَمَا كَانَ اللهُ لِيُضِيْعَ إِيْمَانَكُمْ إِنَّ اللهَ بِالنَّاسِ لَرَءُوْفٌ رَّحِيْمٌ}

বারাআ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মাদীনাতে ষোল অথবা সতের মাস যাবৎ বাইতুল মাকদাসের দিকে মুখ করে সলাত আদায় করেন। অথচ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বাইতুল্লাহর দিকে তার কিবলা হওয়াকে পছন্দ করতেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ‘আসর এর সলাত (কা‘বার দিকে মুখ করে) আদায় করেন এবং লোকেরাও তাঁর সঙ্গে সলাত আদায় করেন। এরপর তাঁর সঙ্গে সলাত আদায়কারী একজন বের হন এবং তিনি একটি মাসজিদের লোকেদের পার্শ্ব দিয়ে গেলেন তখন তারা রুকু অবস্থায় ছিলেন। তিনি বললেন, আমি আল্লাহ্কে সাক্ষী রেখে বলছি যে, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সঙ্গে মাক্কাহর দিকে মুখ করে সলাত আদায় করেছি। এ কথা শোনার পর তাঁরা যে অবস্থায় ছিলেন, সে অবস্থায় বাইতুল্লাহর দিকে ফিরে গেলেন। আর যারা কিবলা বাইতুল্লাহর দিকে পরিবর্তনের পূর্বে বাইতুল মাকদাসের দিকে সলাত আদায় অবস্থায় মারা গিয়েছেন, শহীদ হয়েছেন, তাদের সম্পর্কে আমরা কী বলব তা আমাদের জানা ছিল না। তখন আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত অবতীর্ণ করেন “আল্লাহ এমন নন যে, তোমাদের ঈমান ব্যর্থ করে দেবেন। নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি পরম মমতাময়, পরম দয়ালু” (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/১৪৩)। [৪০] (আ.প্র. ৪১২৮, ই.ফা. ৪১৩১)

৬৫/২/১৩. অধ্যায়ঃ
আল্লাহর বাণীঃ

{وَكَذٰلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَّسَطًا لِّتَكُوْنُوْا شُهَدَآءَ عَلَى النَّاسِ وَيَكُوْنَ الرَّسُوْلُ عَلَيْكُمْ شَهِيْدًا}

‘‘আর এভাবে আমি তোমদেরকে করেছি এক মধ্যপন্থী জাতি যাতে তোমরা মানব জাতির জন্য সাক্ষ্যদাতা হও এবং রাসূল তোমাদের জন্য সাক্ষ্যদাতা হন।’’ (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/৪৩)

৪৪৮৭
يُوْسُفُ بْنُ رَاشِدٍ حَدَّثَنَا جَرِيْرٌ وَأَبُوْ أُسَامَةَ وَاللَّفْظُ لِجَرِيْرٍ عَنِ الْأَعْمَشِ عَنْ أَبِيْ صَالِحٍ وَقَالَ أَبُوْ أُسَامَةَ حَدَّثَنَا أَبُوْ صَالِحٍ عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يُدْعَى نُوْحٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيَقُوْلُ لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ يَا رَبِّ فَيَقُوْلُ هَلْ بَلَّغْتَ فَيَقُوْلُ نَعَمْ فَيُقَالُ لِأُمَّتِهِ هَلْ بَلَّغَكُمْ فَيَقُوْلُوْنَ مَا أَتَانَا مِنْ نَذِيْرٍ فَيَقُوْلُ مَنْ يَشْهَدُ لَكَ فَيَقُوْلُ مُحَمَّدٌ وَأُمَّتُهُ فَتَشْهَدُوْنَ أَنَّهُ قَدْ بَلَّغَ وَيَكُوْنَ الرَّسُوْلُ عَلَيْكُمْ شَهِيْدًا فَذَلِكَ قَوْلُهُ جَلَّ ذِكْرُهُ : {وَكَذٰلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَّسَطًا لِّتَكُوْنُوْا شُهَدَآءَ عَلَى النَّاسِ وَيَكُوْنَ الرَّسُوْلُ عَلَيْكُمْ شَهِيْدً} وَالْوَسَطُ الْعَدْلُز.

আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ক্বিয়ামাতের দিন নূহ্ (‘আ.)-কে ডাকা হবে। তখন তিনি বলবেনঃ হে আমাদের রব! আমি আপনার পবিত্র দরবারে হাযির (তখন আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেন) তুমি কি (আল্লাহ্‌র বাণী) পৌঁছে দিয়েছিলে? তিনি বলবেন, হ্যাঁ। এরপর তার উম্মতকে জিজ্ঞেস করা হবে, [নূহ (‘আ.) কি] তোমাদের নিকট (আল্লাহ্‌র বাণী) পৌঁছে দিয়েছে? তারা তখন বলবে, আমাদের কাছে কোন ভয়প্রদর্শনকারী আসেনি। তখন আল্লাহ তা‘আলা [নূহ (‘আ.)-কে] বলবেন, তোমার পক্ষে কে সাক্ষ্য দেবে? তিনি বলবেন, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং তাঁর উম্মতগণ। তখন তারা সাক্ষ্য দেবে যে, নূহ (‘আ.) তাঁর উম্মতের নিকট আল্লাহ্‌র বাণী পৌঁছে দিয়েছেন এবং রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তোমাদের জন্য সাক্ষী হবেন। এটাই মহান আল্লাহ্‌র বাণী “আর এ ভাবেই আমি তোমাদেরকে একটি মধ্যপন্থী উম্মাত করেছি যাতে তোমরা মানবজাতির সাক্ষী হতে পার আর রসূল তোমাদের সাক্ষী হন।” (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/১৪৩) ‘ওয়াসাত’ ন্যায়নিষ্ঠ। [৩৩৩৯] (আ.প্র. ৪১২৯, ই.ফা. ৪১৩২)

৬৫/২/১৪. অধ্যায়ঃ
আল্লাহর বাণীঃ

{وَمَا جَعَلْنَا الْقِبْلَةَ الَّتِيْ كُنْتَ عَلَيْهَآ إِلَّا لِنَعْلَمَ مَنْ يَّتَّبِعُ الرَّسُوْلَ مِمَّنْ يَّنْقَلِبُ عَلٰى عَقِبَيْهِ ط وَإِنْ كَانَتْ لَكَبِيْرَةً إِلَّا عَلَى الَّذِيْنَ هَدَى اللهُ ط وَمَا كَانَ اللهُ لِيُضِيْعَ إِيْمَانَكُمْ ط إِنَّ اللهَ بِالنَّاسِ لَرَؤُوْفٌ رَّحِيْمٌ (143).

আপনি যে কিবলার এ যাবত অনুসরণ করছিলেন তাকে আমি এজন্য প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম যাতে জানতে পারি কে রাসূলের অনুসরণ করে, আর কে পিঠটান দেয়? আল্লাহ যাদের সৎপথ প্রদর্শন করেছেন তাদের ব্যতীত অন্যদের কাছে এটা নিশ্চিত কঠোরতর বিষয়। আল্লাহ এমন নন যে, তোমাদের ঈমান ব্যর্থ করে দেবেন। নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি পরম মমতাময়, পরম দয়ালু। (সূরাহ আল-বাকারাহ্ ২/১৪৩)

৪৪৮৮
مُسَدَّدٌ حَدَّثَنَا يَحْيَى عَنْ سُفْيَانَ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ دِيْنَارٍ عَنْ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا بَيْنَا النَّاسُ يُصَلُّوْنَ الصُّبْحَ فِيْ مَسْجِدِ قُبَاءٍ إِذْ جَاءَ جَاءٍ فَقَالَ أَنْزَلَ اللهُ عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قُرْآنًا أَنْ يَسْتَقْبِلَ الْكَعْبَةَ فَاسْتَقْبِلُوْهَا فَتَوَجَّهُوْا إِلَى الْكَعْبَةِ.

ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

একদিন লোকেরা কূবা মাসজিদে ফাজ্রের সলাত আদায় করছিলেন। এমন সময় এক আগন্তুক এসে বলল, আল্লাহ তা‘আলা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর প্রতি কুরআনের এ আয়াত অবতীর্ণ করেছেন যে, তিনি যেন (সলাতে) কা‘বার দিকে মুখ করেন। কাজেই আপনারাও কা‘বার দিকে মুখ করুন। তখন লোকেরা কা‘বার দিকে মুখ ফিরিয়ে নেন। [৪০৩] (আ.প্র. ৪১৩০, ই.ফা. ৪১৩৩)

৬৫/২/১৫. অধ্যায়ঃ
মহান আল্লাহর বাণীঃ

{قَدْ نَرٰى تَقَلُّبَ وَجْهِكَ فِي السَّمَآءِ ج فَلَنُوَلِّيَنَّكَ قِبْلَةً تَرْضٰهَا ص فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ ط} إِلَى قوله : {عَمَّا تَعْمَلُوْنَ}.

‘‘বার বার আকাশের দিকে আপনার তাকানোকে আমি অবশ্য লক্ষ্য করছি….. আল্লাহ সে সম্বন্ধে বেখবর নন যা তারা করে।’’ (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/১৪৪)

৪৪৮৯
عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللهِ حَدَّثَنَا مُعْتَمِرٌ عَنْ أَبِيْهِ عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ لَمْ يَبْقَ مِمَّنْ صَلَّى الْقِبْلَتَيْنِ غَيْرِي

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যারা উভয় কিবলার (বাইতুল মাকদাস কা‘বা-এর) দিকে মুখ করে সলাত আদায় করেছেন তাদের মধ্যে আমি ব্যতীত আর কেউ বেঁচে নেই। (আ.প্র. ৪১৩১, ই.ফা. ৪১৩৪)

৬৫/২/১৬. অধ্যায়ঃ


{وَلَئِنْ أَتَيْتَ الَّذِيْنَ أُوْتُوا الْكِتٰبَ بِكُلِّ اٰيَةٍ مَّا تَبِعُوْا قِبْلَتَكَ} إِلَى قَوْلِهِ : {إِنَّكَ إِذًا لَّمِنَ الظَّالِمِيْنَ}.

‘‘যাদের কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের কাছে আপনি সমস্ত প্রমাণ পেশ করলেও তারা আপনার কিবলার অনুসরণ করবে না, আর আপনি তাদের কিবলা অনুসরণ করার নন। আর তারা একে অন্যের কিবলা অনুসরণ করে না। আপনি যদি আপনার কাছে জ্ঞান আসার পর তাদের বাসনার অনুসরণ করেন, তবে নিশ্চয়ই আপনি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়বেন।’’ (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/১৪৫)

৪৪৯০
دَّثَنَا خَالِدُ بْنُ مَخْلَدٍ حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ حَدَّثَنِيْ عَبْدُ اللهِ بْنُ دِيْنَارٍ عَنْ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا بَيْنَمَا النَّاسُ فِي الصُّبْحِ بِقُبَاءٍ جَاءَهُمْ رَجُلٌ فَقَالَ إِنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَدْ أُنْزِلَ عَلَيْهِ اللَّيْلَةَ قُرْآنٌ وَأُمِرَ أَنْ يَسْتَقْبِلَ الْكَعْبَةَ أَلَا فَاسْتَقْبِلُوْهَا وَكَانَ وَجْهُ النَّاسِ إِلَى الشَّأْمِ فَاسْتَدَارُوْا بِوُجُوْهِهِمْ إِلَى الْكَعْبَةِ.

ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

একদা লোকেরা মাসজিদে কুবায় ফাজ্রের সলাত আদায় করছিলেন। এমন সময় তাদের কাছে একজন লোক এসে বলল, এ রাতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর উপর কুরআনের আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে এবং কা‘বার দিকে মুখ করে সলাত আদায় করার জন্য তিনি নির্দেশিত হয়েছেন। অতএব আপনারা কা‘বার দিকে মুখ ফিরিয়ে নিন। আর তখন লোকেদের চেহারা শামের দিকে ছিল। তখন তারা তাদের চেহারা কা‘বার দিকে ঘুরিয়ে নিলেন। [৪০৩] (আ.প্র. ৪১৩২, ই.ফা. ৪১৩৫)

৬৫/২/১৭. অধ্যায়ঃ


{اَلَّذِيْنَ اٰتَيْنَاهُمُ الْكِتٰبَ يَعْرِفُوْنَه” كَمَا يَعْرِفُوْنَ أَبْنَآءَهُمْ ط وَإِنَّ فَرِيْقًا مِّنْهُمْ لَيَكْتُمُوْنَ الْحَقَّ} إِلَى قَوْلِهِ : {فَلَا تَكُوْنَنَّ مِنَ الْمُمْتَرِيْنَ}.

‘‘যাদের আমি কিতাব দিয়েছি তারা তাকে সেরূপ চেনে, যেরূপ তারা তাদের পুত্রদের চেনে। আর তাদের একদল জেনেশুনে নিশ্চিতভাবে সত্য গোপন করে। প্রকৃত সত্য তো তা, যা তোমার পালনকর্তার তরফ থেকে প্রাপ্ত। কাজেই তুমি সন্দিহানদের দলভুক্ত হয়ো না।’’ (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/১৪৬-১৪৭)

৪৪৯১
يَحْيَى بْنُ قَزَعَةَ حَدَّثَنَا مَالِكٌ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ دِيْنَارٍ عَنْ ابْنِ عُمَرَ قَالَ بَيْنَا النَّاسُ بِقُبَاءٍ فِيْ صَلَاةِ الصُّبْحِ إِذْ جَاءَهُمْ آتٍ فَقَالَ إِنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَدْ أُنْزِلَ عَلَيْهِ اللَّيْلَةَ قُرْآنٌ وَقَدْ أُمِرَ أَنْ يَسْتَقْبِلَ الْكَعْبَةَ فَاسْتَقْبِلُوْهَا وَكَانَتْ وُجُوْهُهُمْ إِلَى الشَّأْمِ فَاسْتَدَارُوْا إِلَى الْكَعْبَةِ.

ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা লোকেরা কুবা মাসজিদে ফাজ্রের সলাতে ছিলেন, তখন তাদের কাছে একজন আগন্তুক এসে বললেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর প্রতি এ রাতে কুরআন (এর আয়াত) অবতীর্ণ করা হয়েছে, আর এতে তিনি কা‘বার দিকে মুখ ফিরানোর জন্য নির্দেশিত হয়েছেন। কাজেই আপনারা কা’বার দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিন। আর তখন তাদের মুখ শামের দিকে ছিল। তখন তারা কা‘বার দিকে ঘুরে গেলেন। [৪০৩] (আ.প্র. ৪১৩৩, ই.ফা. ৪১৩৬)

৬৫/৪/২৩. অধ্যায়ঃ
আল্লাহর বাণীঃ

{وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ إِنْ كَانَ بِكُمْ أَذًى مِّنْ مَطَرٍ أَوْ كُنْتُمْ مَرْضٰىٓ أَنْ تَضَعُوْآ أَسْلِحَتَكُمْ}.

যদি তোমরা বৃষ্টির কারণে কষ্ট পাও অথবা যদি তোমরা অসুস্থ হও, এ অবস্থায় নিজেদের অস্ত্র পরিত্যাগ করলে তোমাদের কোন গুনাহ নেই। (সূরাহ আন-নিসা ৪/১০২)

৪৫৯৯
مُحَمَّدُ بْنُ مُقَاتِلٍ أَبُو الْحَسَنِ أَخْبَرَنَا حَجَّاجٌ عَنْ ابْنِ جُرَيْجٍ قَالَ أَخْبَرَنِيْ يَعْلَى عَنْ سَعِيْدِ بْنِ جُبَيْرٍ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا : {وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ إِنْ كَانَ بِكُمْ أَذًى مِّنْ مَطَرٍ أَوْ كُنْتُمْ مَرْضٰى} قَالَ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عَوْفٍ وَكَانَ جَرِيْحًا.

ইবনু ‘আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

إِنْ كَانَ بِكُمْ أَذًى مِنْ مَطَرٍ أَوْ كُنْتُمْ مَرْضَى আয়াতটি নাযিল হয়েছিল যখন ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ (রাঃ) আহত হয়েছিলেন। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪২৩৮, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৪২৪১)

৬৫/২/১৮. অধ্যায়ঃ


{وَلِكُلٍّ وِّجْهَةٌ هُوَ مُوَلِّيْهَا فَاسْتَبِقُوا الْخَيْرٰتِ ط صـ أَيْنَ مَا تَكُوْنُوْا يَأْتِ بِكُمُ اللهُ جَمِيْعًا ط إِنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ (148)}.

‘‘আর প্রত্যেকেরই রয়েছে একটি দিক, যেদিকে সে মুখ করে। সুতরাং তোমরা সৎকাজে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যাও। যেখানেই তোমরা থাক না কেন, আল্লাহ তোমাদের সবাইকে একত্র সমবেত করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।’’ (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/১৪৮)

৪৪৯২
مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى حَدَّثَنَا يَحْيَى عَنْ سُفْيَانَ حَدَّثَنِيْ أَبُوْ إِسْحَاقَ قَالَ سَمِعْتُ الْبَرَاءَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ صَلَّيْنَا مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم نَحْوَ بَيْتِ الْمَقْدِسِ سِتَّةَ عَشَرَ أَوْ سَبْعَةَ عَشَرَ شَهْرًا ثُمَّ صَرَفَهُ نَحْوَ الْقِبْلَةِ

বারাআ (ইবনু ‘আযিব) (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সঙ্গে ষোল অথবা সতের মাস ব্যাপী (মাদীনাতে) বাইতুল মাকদাসের দিকে মুখ করে সলাত আদায় করেছি। তারপর আল্লাহ তাঁকে কা‘বার পানে ফিরিয়ে দেন। [৪০] (আ.প্র. ৪১৩৪, ই.ফা. ৪১৩৭)

৬৫/২/১৯. অধ্যায়ঃ


{وَمِنْ حَيْثُ خَرَجْتَ فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ ط وَإِنَّه” لَلْحَقُّ مِنْ رَّبِّكَ ط وَمَا اللهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُوْنَ (149)} شَطْرُهُ تِلْقَاؤُهُ.

‘‘যেখান থেকেই তুমি বের হও না কেন, তোমার মুখ আল-মাসজিদুল হারামের দিকে ফেরাও। নিশ্চয় এটা হল তোমার পালনকর্তার তরফ থেকে অবধারিত সত্য। তোমরা যা কর সে সম্বন্ধে আল্লাহ বেখবর নন’’- (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/১৪৯)। شَطْرُهُ সেই দিকে।

৪৪৯৩
مُوْسَى بْنُ إِسْمَاعِيْلَ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيْزِ بْنُ مُسْلِمٍ حَدَّثَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ دِيْنَارٍ قَالَ سَمِعْتُ ابْنَ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا يَقُوْلُ بَيْنَا النَّاسُ فِي الصُّبْحِ بِقُبَاءٍ إِذْ جَاءَهُمْ رَجُلٌ فَقَالَ أُنْزِلَ اللَّيْلَةَ قُرْآنٌ فَأُمِرَ أَنْ يَسْتَقْبِلَ الْكَعْبَةَ فَاسْتَقْبِلُوْهَا وَاسْتَدَارُوْا كَهَيْئَتِهِمْ فَتَوَجَّهُوْا إِلَى الْكَعْبَةِ وَكَانَ وَجْهُ النَّاس إِلَى الشَّأْمِ.

ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা কূবা মাসজিদে সহাবীগণ ফাজ্রের সলাত সম্পাদন করছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে বলল, আজ রাতে [নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর প্রতি] কুরআনের আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে, তাতে কা‘বার দিকে মুখ ফিরানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কাজেই আপনারা সেদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিন। তখন তারা আপন আপন অবস্থায় মুখ ঘুরিয়ে নেন এবং কা‘বার দিকে মুখ করেন। তখন তাদের মুখ সিরিয়ার দিকে ছিল। [৪০৩] (আ.প্র. ৪১৩৫, ই.ফা. ৪১৩৮)

৬৫/২/২০. অধ্যায়ঃ


{وَمِنْ حَيْثُ خَرَجْتَ فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ ط وَحَيْثُ مَا كُنْتُمْ} إِلَى قَوْلِهِ : {وَلَعَلَّكُمْ تَهْتَدُوْنَ}.

‘‘এবং যেখান থেকেই তুমি বের হও না কেন, তোমার মুখ আল-মাসজিদুল হারামের দিকে ফেরাও এবং তোমরা যেখানেই থাক না কেন সেদিকেই মুখ ফেরাবে, যাতে….. তোমরা সৎপথে পরিচালিত হতে পার।’’ (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/১৫০)

৪৪৯৪
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، عَنْ مَالِكٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ دِينَارٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ بَيْنَمَا النَّاسُ فِي صَلاَةِ الصُّبْحِ بِقُبَاءٍ إِذْ جَاءَهُمْ آتٍ فَقَالَ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَدْ أُنْزِلَ عَلَيْهِ اللَّيْلَةَ، وَقَدْ أُمِرَ أَنْ يَسْتَقْبِلَ الْكَعْبَةَ، فَاسْتَقْبِلُوهَا‏.‏ وَكَانَتْ وُجُوهُهُمْ إِلَى الشَّأْمِ فَاسْتَدَارُوا إِلَى الْقِبْلَةِ‏.‏

ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা কূবাতে সহাবীগণ ফাজ্রের সলাত সম্পাদন করছিলেন এমন সময় এক আগন্তুক এসে বলল, রসূলুল্লাহ -এর প্রতি আজ রাতে কুরআনের আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে এবং তিনি কা‘বার দিকে মুখ ফিরানোর নির্দেশপ্রাপ্ত হয়েছেন। অতএব আপনারাও সেদিকে মুখ ফিরিয়ে নিন। তাদের মুখ তখন ছিল সিরিয়ার দিকে। তখন তারা কা‘বার দিকে ফিরে গেলেন। [৪০৩] (আ.প্র. ৪১৩৬, ই.ফা. ৪১৩৯)

৬৫/২/২১. অধ্যায়ঃ
মহান আল্লাহর বাণীঃ

{إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَآئِرِ اللهِ ج فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ أَوِ اعْتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِ أَنْ يَّطَّوَّفَ بِهِمَا ط وَمَنْ تَطَوَّعَ خَيْرًا لا فَإِنَّ اللهَ شَاكِرٌ عَلِيْمٌ (158)}

{شَعَآئِرٌ} : عَلَامَاتٌ وَاحِدَتُهَا شَعِيْرَةٌ وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ الصَّفْوَانُ الْحَجَرُ وَيُقَالُ الْحِجَارَةُ الْمُلْسُ الَّتِيْ لَا تُنْبِتُ شَيْئًا وَالْوَاحِدَةُ صَفْوَانَةٌ بِمَعْنَى الصَّفَا وَالصَّفَا لِلْجَمِيْعِ.

নিশ্চয় সাফা ও মারওয়াহ হল আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং যে কেউ কা‘বা ঘরে হাজ্জ বা ‘উমরাহ পালন করে তার পক্ষে এ দু‘টির মধ্যে প্রদক্ষিণ করাতে কোন পাপ নেই। আর কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে কোন নেক কাজ করলে আল্লাহ তার পুরস্কার দেবেন, তিনি সর্বজ্ঞ। (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/১৫৮)

شَعَائِرٌ হলো شَعِيْرَةٌ এর বহু বচন। নিদর্শন। ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেন, সাফওয়ান অর্থ পাথর; বলা হত এমন পাথর যা কিছু উৎপন্ন করে না। একবচনেصَفْوَانَةٌ হয়ে থাকে। الصَّفَا বহুবচনে ব্যবহৃত হয়।

৪৪৯৫
عَبْدُ اللهِ بْنُ يُوْسُفَ أَخْبَرَنَا مَالِكٌ عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ عَنْ أَبِيْهِ أَنَّهُ قَالَ قُلْتُ لِعَائِشَةَ زَوْجِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَأَنَا يَوْمَئِذٍ حَدِيْثُ السِّنِّ أَرَأَيْتِ قَوْلَ اللهِ تَبَارَكَ وَتَعَالَى {إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَآئِرِ اللهِ ج فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ أَوِ اعْتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِ أَنْ يَّطَّوَّفَ بِهِمَا} فَمَا أُرَى عَلَى أَحَدٍ شَيْئًا أَنْ لَا يَطَّوَّفَ بِهِمَا فَقَالَتْ عَائِشَةُ كَلَّا لَوْ كَانَتْ كَمَا تَقُوْلُ كَانَتْ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِ أَنْ لَا يَطَّوَّفَ بِهِمَا إِنَّمَا أُنْزِلَتْ هَذِهِ الْآيَةُ فِي الْأَنْصَارِ كَانُوْا يُهِلُّوْنَ لِمَنَاةَ وَكَانَتْ مَنَاةُ حَذْوَ قُدَيْدٍ وَكَانُوْا يَتَحَرَّجُوْنَ أَنْ يَطُوْفُوْا بَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ فَلَمَّا جَاءَ الإِسْلَامُ سَأَلُوْا رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَنْ ذَلِكَ فَأَنْزَلَ اللهُ {إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَآئِرِ اللهِ ج فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ أَوِ اعْتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِ أَنْ يَّطَّوَّفَ بِهِمَا}.

‘উরওয়াহ (রহ.) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সহধর্মিণী ‘আয়িশাহ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম আর তখন আমি অল্প বয়সের ছিলাম।

মহান আল্লাহ্‌র বাণীঃ إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ এ আয়াত সম্পর্কে আপনার অভিমত কী? “নিশ্চয় সাফা ও মারওয়াহ হল আল্লাহ্‌র নিদর্শনসমূহের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং যে কেউ কা‘বা ঘরে হাজ্জ বা ‘উমরাহ পালন করে তার পক্ষে এ দু‘টির মধ্যে প্রদক্ষিণ করাতে কোন পাপ নেই” (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/১৫৮)। আমি মনে করি উক্ত দুই পর্বত সায়ী না করলে কোন ব্যক্তির উপর গুনাহ বর্তাবে না। তখন ‘আয়িশাহ (রাঃ) বললেন, কক্ষনো তা নয়। তুমি যা বলছ যদি তাই হত তাহলে বলা হত এভাবে فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْهِ أَنْ يَطَّوَّفَ “উভয় পর্বত তাওয়াফ না করাতে কোন গুনাহ বর্তাবে না। বস্তুতঃ এই আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে আনসারদের ব্যাপারে। তারা ‘মানাত’-এর পূজা করত। আর ‘মানাত’ ছিল কুদায়েদের পথে অবস্থিত। আনসারগণ সাফা এবং মারওয়াহর মধ্যে সায়ী করা খারাপ জানত। ইসলামের আগমনের পর তারা এ সম্পর্কে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করল। তখন আল্লাহ অবতীর্ণ করলেন إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللهِ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ أَوْ اعْتَمَرَ فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْهِ أَنْ يَطَّوَّفَ بِهِمَا। [১৬৪৩] (আ.প্র. ৪১৩৭, ই.ফা. ৪১৪০)

৬৫/২/২১. অধ্যায়ঃ
মহান আল্লাহর বাণীঃ

৪৪৯৬
مُحَمَّدُ بْنُ يُوْسُفَ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ عَنْ عَاصِمِ بْنِ سُلَيْمَانَ قَالَ سَأَلْتُ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنْ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ فَقَالَ كُنَّا نَرَى أَنَّهُمَا مِنْ أَمْرِ الْجَاهِلِيَّةِ فَلَمَّا كَانَ الإِسْلَامُ أَمْسَكْنَا عَنْهُمَا فَأَنْزَلَ اللهُ تَعَالَى {إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَآئِرِ اللهِ ج فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ أَوِ اعْتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِ أَنْ يَّطَّوَّفَ بِهِمَا}.

‘আসিম ইবনু সুলাইমান (রহ.) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে সাফা ও মারওয়াহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমরা ঐ দু’টিকে জাহিলী যুগের কাজ বলে মনে করতাম। যখন ইসলাম আসল, তখন আমরা এ দু’টির মধ্যে সায়ী করা থেকে বিরত থাকি। তখন আল্লাহ আয়াত অবতীর্ণ করেন إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ থেকে أَنْ يَطَّوَّفَ পর্যন্ত। [১৬৪৮] (আ.প্র. ৪১৩৮, ই.ফা. ৪১৪১)

৬৫/২/২২. অধ্যায়ঃ
মহান আল্লাহর বাণীঃ

{وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّتَّخِذُ مِنْ دُوْنِ اللهِ أَنْدَادًا} أَنْدَادًا : وَاحِدُهَا نِدٌّ.

‘‘মানুষের মধ্যে এমন লোকও আছে যে আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে তাঁর সমকক্ষরূপে গ্রহণ করে।’’ (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/১৬৫)

এখানেأَنْدَادًا অর্থ সমকক্ষ ও বরাবর। نِدٌّ এর একবচন।

৪৪৯৭
‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একটি কথা বললেন, আর আমি একটি বললাম। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে তাঁর সমকক্ষ হিসেবে আহ্বান করা অবস্থায় মারা যায়, সে জাহান্নামে যাবে। আর আমি বললাম, যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র সঙ্গে কাউকে সমকক্ষ হিসেবে আহ্বান না করা অবস্থায় মারা যায়? (তিনি বললেন) সে জান্নাতে যাবে। [১২৩৮] (আ.প্র. ৪১৩৯, ই.ফা. ৪১৪২)

৬৫/২/২৩. অধ্যায়ঃ
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের জন্য নিহতদের ব্যাপারে কিসাসের১ বিধান দেয়া হল, স্বাধীন ব্যক্তির বদলে স্বাধীন ব্যক্তি, ক্রীতদাসের বদলে ক্রীতদাস এবং নারীর বদলে নারী। তবে তার ভাইয়ের তরফ থেকে কাউকে কিছু ক্ষমা করে দেয়া হলে যথাযথ বিধির অনুসরণ করতে হবে এবং সততার সঙ্গে তা তাকে প্রদান করতে হবে। এটা তোমাদের প্রতিপালকের তরফ থেকে ভার লাঘব ও বিশেষ রাহমাত। এরপরও যে কেউ বাড়াবাড়ি করে, তার জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/১৭৮)

৪৪৯৮
الْحُمَيْدِيُّ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ حَدَّثَنَا عَمْرٌو قَالَ سَمِعْتُ مُجَاهِدًا قَالَ سَمِعْتُ ابْنَ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا يَقُوْلُ كَانَ فِيْ بَنِيْ إِسْرَائِيْلَ الْقِصَاصُ وَلَمْ تَكُنْ فِيْهِمْ الدِّيَةُ فَقَالَ اللهُ تَعَالَى لِهَذِهِ الْأُمَّةِ {يٰٓأَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِصَاصُ فِي الْقَتْلٰى ط اَلْحُرُّ بِالْحُرِّ وَالْعَبْدُ بِالْعَبْدِ وَالْأُنْثٰى بِالْأُنْثٰى ط فَمَنْ عُفِيَ لَه”مِنْ أَخِيْهِ شَيْءٌ} فَالْعَفْوُ أَنْ يَقْبَلَ الدِّيَةَ فِي الْعَمْدِ. {فَاتِّبَاعٌم بِالْمَعْرُوْفِ وَأَدَآءٌ إِلَيْهِ بِإِحْسَانٍ} يَتَّبِعُ بِالْمَعْرُوْفِ وَيُؤَدِّيْ بِإِحْسَانٍ {ذٰلِكَ تَخْفِيْفٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَرَحْمَة} مِمَّا كُتِبَ عَلَى مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ {فَمَنِ اعْتَدٰى بَعْدَ ذٰلِكَ فَلَه”عَذَابٌ أَلِيْمٌ} قَتَلَ بَعْدَ قَبُوْلِ الدِّيَةِ

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, বানী ইসরাঈল সম্প্রদায়ের কিসাস প্রথা চালু ছিল কিন্তু দিয়াত তাদের মধ্যে চালু ছিল না। অনন্তর আল্লাহ তা‘আলা এ উম্মতের জন্য এ আয়াত অবতীর্ণ করেনঃ হত্যার ক্ষেত্রে কিসাস বা খুনের বদলে খুন তোমাদের জন্য ফরয করা হয়েছে। স্বাধীন মানুষের বদলে স্বাধীন মানুষ, ক্রীতদাসের বদলে ক্রীতদাস এবং স্ত্রীলোকের বদলে স্ত্রীলোকের কিসাস নেয়া হবে। হাঁ, কোন হত্যাকারীর সঙ্গে তার কোন (মুসলিম) ভাই নম্রতা দেখাতে চাইলে। উল্লিখিত আয়াতে আলআফুব فَالْعَفْوُ -এর অর্থ ইচ্ছাকৃত হত্যার ক্ষেত্রে দিয়াত গ্রহণ করতঃ কিসাস ক্ষমা করে দেয়া। فَاتِّبَاعٌ بِالْمَعْرُوفِ وَأَدَاءٌ إِلَيْهِ بِإِحْسَانٍ অর্থাৎ এ ব্যাপারে যথাযথ বিধি মেনে চলবে এবং নিষ্ঠার সঙ্গে দিয়াত আদায় করে দেবে। তোমাদের পূর্বের লোকেদের উপরে আরোপিত কিসাস হতে তোমাদের প্রতি দিয়াত ব্যবস্থা আল্লাহ্‌র পক্ষ হতে তোমাদের প্রতি শাস্তি হ্রাস ও বিশেষ অনুগ্রহ। দিয়াত কবূল করার পরও যদি হত্যা করে তাহলে তার জন্য কঠিন শাস্তি রয়েছে। [৬৮৮১] (আ.প্র. ৪১৪০, ই.ফা. ৪১৪৩)

৬৫/২/২৩. অধ্যায়ঃ
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের জন্য নিহতদের ব্যাপারে কিসাসের১ বিধান দেয়া হল, স্বাধীন ব্যক্তির বদলে স্বাধীন ব্যক্তি, ক্রীতদাসের বদলে ক্রীতদাস এবং নারীর বদলে নারী। তবে তার ভাইয়ের তরফ থেকে কাউকে কিছু ক্ষমা করে দেয়া হলে যথাযথ বিধির অনুসরণ করতে হবে এবং সততার সঙ্গে তা তাকে প্রদান করতে হবে। এটা তোমাদের প্রতিপালকের তরফ থেকে ভার লাঘব ও বিশেষ রাহমাত। এরপরও যে কেউ বাড়াবাড়ি করে, তার জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/১৭৮)

৪৪৯৯
مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللهِ الْأَنْصَارِيُّ حَدَّثَنَا حُمَيْدٌ أَنَّ أَنَسًا حَدَّثَهُمْ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ كِتَابُ اللهِ الْقِصَاصُ.

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তাদের কাছে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আল্লাহ্‌র কিতাবের নির্দেশ হল কিসাস। [২৭০৩] (আ.প্র. ৪১৪৩, ই.ফা. ৪১৪৪)

৬৫/২/২৩. অধ্যায়ঃ
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের জন্য নিহতদের ব্যাপারে কিসাসের১ বিধান দেয়া হল, স্বাধীন ব্যক্তির বদলে স্বাধীন ব্যক্তি, ক্রীতদাসের বদলে ক্রীতদাস এবং নারীর বদলে নারী। তবে তার ভাইয়ের তরফ থেকে কাউকে কিছু ক্ষমা করে দেয়া হলে যথাযথ বিধির অনুসরণ করতে হবে এবং সততার সঙ্গে তা তাকে প্রদান করতে হবে। এটা তোমাদের প্রতিপালকের তরফ থেকে ভার লাঘব ও বিশেষ রাহমাত। এরপরও যে কেউ বাড়াবাড়ি করে, তার জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/১৭৮)

৪৫০০
عَبْدُ اللهِ بْنُ مُنِيْرٍ سَمِعَ عَبْدَ اللهِ بْنَ بَكْرٍ السَّهْمِيَّ حَدَّثَنَا حُمَيْدٌ عَنْ أَنَسٍ أَنَّ الرُّبَيِّعَ عَمَّتَهُ كَسَرَتْ ثَنِيَّةَ جَارِيَةٍ فَطَلَبُوْا إِلَيْهَا الْعَفْوَ فَأَبَوْا فَعَرَضُوا الْأَرْشَ فَأَبَوْا فَأَتَوْا رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَأَبَوْا إِلَّا الْقِصَاصَ فَأَمَرَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم بِالْقِصَاصِ فَقَالَ أَنَسُ بْنُ النَّضْرِ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَتُكْسَرُ ثَنِيَّةُ الرُّبَيِّعِ لَا وَالَّذِيْ بَعَثَكَ بِالْحَقِّ لَا تُكْسَرُ ثَنِيَّتُهَا فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَا أَنَسُ كِتَابُ اللهِ الْقِصَاصُ فَرَضِيَ الْقَوْمُ فَعَفَوْا فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّ مِنْ عِبَادِ اللهِ مَنْ لَوْ أَقْسَمَ عَلَى اللهِ لَأَبَرَّهُ.

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আনাসের ফুফু রুবাঈ এক বাঁদির সম্মুখ দাঁত ভেঙ্গে ফেলে। এরপর বাঁদির কাছে রুবাঈয়ের লোকজন ক্ষমা চাইলে বাঁদির লোকেরা অস্বীকার করে। তখন তাদের কাছে দিয়াত পেশ করা হল, তখন তা তারা গ্রহণ করল না। অগত্যা তারা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সমীপে এসে ঘটনা জানাল। কিন্তু কিসাস ব্যতীত অন্য কিছু গ্রহণ করতে তারা অস্বীকার করল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কিসাসের নির্দেশ দিলেন। তখন আনাস ইবনু নযর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! রুবাঈদের সামনের দাঁত ভাঙ্গা হবে? না, যে সত্তা আপনাকে সত্য সহ পাঠিয়েছেন তাঁর শপথ, তাঁর দাঁত ভাঙ্গা হবে না। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হে আনাস! আল্লাহ্‌র কিতাব তো কিসাসের নির্দেশ দেয়। এরপর বাঁদির লোকেরা রাযী হয়ে যায় এবং রুবাঈ‘কে ক্ষমা করে দেয়। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহ্‌র বান্দাদের মাঝে এমন মানুষও আছে যিনি আল্লাহ্‌র নামে শপথ করলে আল্লাহ তা পূরণ করেন। [২৭০৩] (আ.প্র. ৪১৪২, ই.ফা. ৪১৪৫)

৬৫/২/২৪. অধ্যায়ঃ


{يٰٓأَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ}

‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর সওম ফারয করা হল যেরূপ ফারয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেদের উপর, যেন তোমরা মুত্তাকী হতে পার।’’ (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/১৮৩)

৪৫০১
مُسَدَّدٌ حَدَّثَنَا يَحْيَى عَنْ عُبَيْدِ اللهِ قَالَ أَخْبَرَنِيْ نَافِعٌ عَنْ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ كَانَ عَاشُوْرَاءُ يَصُوْمُهُ أَهْلُ الْجَاهِلِيَّةِ فَلَمَّا نَزَلَ رَمَضَانُ قَالَ مَنْ شَاءَ صَامَهُ وَمَنْ شَاءَ لَمْ يَصُمْهُ.

ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, জাহিলী যুগের লোকেরা আশুরার সওম পালন করত। এরপর যখন রমাযানের সওমের বিধান অবতীর্ণ হল, তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যার ইচ্ছা সে আশুরার সওম পালন করবে আর যার ইচ্ছা সে তার সওম পালন করবে না। [১৮৯২; মুসলিম ১৩/১৯, হাঃ ১১২৬, আহমাদ ৬৩০০] (আ.প্র. ৪১৪৩, ই.ফা. ৪১৪৬)

৬৫/২/২৪. অধ্যায়ঃ


৪৫০২
عَبْدُ اللهِ بْنُ مُحَمَّدٍ حَدَّثَنَا ابْنُ عُيَيْنَةَ عَنْ الزُّهْرِيِّ عَنْ عُرْوَةَ عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا كَانَ عَاشُوْرَاءُ يُصَامُ قَبْلَ رَمَضَانَ فَلَمَّا نَزَلَ رَمَضَانُ قَالَ مَنْ شَاءَ صَامَ وَمَنْ شَاءَ أَفْطَرَ.

‘আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রমাযানের সওমের (আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার) পূর্বে আশুরার সওম পালন করা হত। এরপর যখন রমাযানের (সম্পর্কিত বিধান) অবতীর্ণ হল, তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যে ইচ্ছা করে (আশুরার) সওম পালন করবে, আর যে চায় সে সওম পালন করবে না। [১৫৯২] (আ.প্র. ৪১৪৪, ই.ফা. ৪১৪৭)

৬৫/২/২৪. অধ্যায়ঃ


৪৫০৩
مَحْمُوْدٌ أَخْبَرَنَا عُبَيْدُ اللهِ عَنْ إِسْرَائِيْلَ عَنْ مَنْصُوْرٍ عَنْ إِبْرَاهِيْمَ عَنْ عَلْقَمَةَ عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ دَخَلَ عَلَيْهِ الْأَشْعَثُ وَهْوَ يَطْعَمُ فَقَالَ الْيَوْمُ عَاشُوْرَاءُ فَقَالَ كَانَ يُصَامُ قَبْلَ أَنْ يَنْزِلَ رَمَضَانُ فَلَمَّا نَزَلَ رَمَضَانُ تُرِكَ فَادْنُ فَكُلْ.

‘আবদুল্লাহ (রহ.) (ইবনু মাস‘ঊদ) (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, তাঁর নিকট ‘আশ‘আস (রাঃ) আসেন। এ সময় ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) পানাহার করছিলেন। তখন আশ‘আস (রাঃ) বললেন, আজ তো ‘আশুরা। তিনি বললেন, রমাযানের (এর সওমের বিধান) অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে ‘আশুরার সওম পালন করা হত। যখন রমাযানের (এর সওমের বিধান) অবতীর্ণ হল তখন তা পরিত্যাগ করা হয়েছে। এসো, তুমিও খাও। [মুসলিম ১৩/১৯, হাঃ ১১২৭] (আ.প্র. ৪১৪৫, ই.ফা. ৪১৪৮)

৬৫/২/২৪. অধ্যায়ঃ


৪৫০৪
مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى حَدَّثَنَا يَحْيَى حَدَّثَنَا هِشَامٌ قَالَ أَخْبَرَنِيْ أَبِيْ عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ كَانَ يَوْمُ عَاشُوْرَاءَ تَصُوْمُهُ قُرَيْشٌ فِي الْجَاهِلِيَّةِ وَكَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَصُوْمُهُ فَلَمَّا قَدِمَ الْمَدِيْنَةَ صَامَهُ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ فَلَمَّا نَزَلَ رَمَضَانُ كَانَ رَمَضَانُ الْفَرِيْضَةَ وَتُرِكَ عَاشُوْرَاءُ فَكَانَ مَنْ شَاءَ صَامَهُ وَمَنْ شَاءَ لَمْ يَصُمْهُ.

‘আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, জাহিলী যুগে কুরাইশগণ আশুরার দিন সওম পালন করত। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-ও সে সওম পালন করতেন। যখন তিনি মদিনায় হিজরাত করলেন তখনও তিনি সে সওম পালন করতেন এবং অন্যদের পালনের নির্দেশ দিতেন। এরপর যখন রমাযান (সম্পর্কিত আয়াত) অবতীর্ণ হলে রমাযানের সওম ফরয হল এবং আশুরার সওম বাদ গেল। এরপর যে চাইত সে উক্ত সওম পালন করত আর যে চাইত তা পালন করত না। [১৫৯২] (আ.প্র. ৪১৪৬, ই.ফা. ৪১৪৯)

৬৫/২/২৫. অধ্যায়ঃ
মহান আল্লাহর বাণীঃ

{أَيَّامًا مَّعْدُوْدٰتٍ ط فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَّرِيْضًا أَوْ عَلٰى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ ط وَعَلَى الَّذِيْنَ يُطِيْقُوْنَه” فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِيْنٍ ط فَمَنْ تَطَوَّعَ خَيْرًا فَهُوَ خَيْرٌ لَّه”ط وَأَنْ تَصُوْمُوْا خَيْرٌ لَّكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ (184)}

নির্দিষ্ট কয়েক দিনের জন্য। তবে তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে কিংবা সফরে থাকলে সে অন্য সময়ে সওমের সংখ্যা পূরণ করে নিবে। আর সওম যাদের জন্য অতিশয় কষ্টদায়ক, তারা এর পরিবর্তে ফিদয়া দিবে একজন মিসকীনকে খাদ্যদান করে। কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৎকাজ করলে তা তার জন্য কল্যাণকর হয়। যদি তোমরা সওম কর; তবে তা হবে তোমাদের জন্য অধিকতর কল্যাণকর, যদি তোমরা তা বুঝতে। (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/১৮৪)

وَقَالَ عَطَاءٌ يُفْطِرُ مِنَ الْمَرَضِ كُلِّهِ كَمَا قَالَ اللهُ تَعَالَى وَقَالَ الْحَسَنُ وَإِبْرَاهِيْمُ فِي الْمُرْضِعِ أَوِ الْحَامِلِ إِذَا خَافَتَا عَلَى أَنْفُسِهِمَا أَوْ وَلَدِهِمَا تُفْطِرَانِ ثُمَّ تَقْضِيَانِ وَأَمَّا الشَّيْخُ الْكَبِيْرُ إِذَا لَمْ يُطِقْ الصِّيَامَ فَقَدْ أَطْعَمَ أَنَسٌ بَعْدَ مَا كَبِرَ عَامًا أَوْ عَامَيْنِ كُلَّ يَوْمٍ مِسْكِيْنًا خُبْزًا وَلَحْمًا وَأَفْطَرَ قِرَاءَةُ الْعَامَّةِ يُطِيْقُوْنَهُ وَهْوَ أَكْثَرُ.

ইমাম ‘আত্বা (রহ.) বলেন, সর্বপ্রকার রোগেই সওম ভাঙ্গা যাবে। যেমন আল্লাহ বলেছেন। পক্ষান্তরে ইমাম হাসান ও ইবরাহীম (রহ.) বলেন, স্তন্যদাত্রী এবং গর্ভবতী স্ত্রীলোক যখন নিজ প্রাণ অথবা তাদের সন্তানের জীবনের প্রতি হুমকির আশঙ্কা করে তখন তারা উভয়ে সওম ভঙ্গ করতে পারবে। পরে তা আদায় করে নিতে হবে। অতিবৃদ্ধ ব্যক্তি সওম পালনে অক্ষম হলে যেমন আনাস (রাঃ) বৃদ্ধ হওয়ার পর এক বছর অথবা দু’বছর প্রতিদিন এক দরিদ্র ব্যক্তিকে রুটি ও গোশ্ত খেতে দিতেন এবং সওম ত্যাগ করতেন। অধিকাংশ লোকের কিরাআত হল يُطِيْقُوْنَهُ অর্থাৎ যারা সওমের সামর্থ্য রাখে এবং এটাই সাধারণ্যে প্রচলিত।

৪৫০৫
إِسْحَاقُ أَخْبَرَنَا رَوْحٌ حَدَّثَنَا زَكَرِيَّاءُ بْنُ إِسْحَاقَ حَدَّثَنَا عَمْرُوْ بْنُ دِيْنَارٍ عَنْ عَطَاءٍ سَمِعَ ابْنَ عَبَّاسٍ يَقْرَأُ (وَعَلَى الَّذِيْنَ يُطَوَّقُوْنَه” فَلَا يُطِيْقُوْنَه” فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِيْنٍ) قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ لَيْسَتْ بِمَنْسُوْخَةٍ هُوَ الشَّيْخُ الْكَبِيْرُ وَالْمَرْأَةُ الْكَبِيْرَةُ لَا يَسْتَطِيْعَانِ أَنْ يَصُوْمَا فَيُطْعِمَانِ مَكَانَ كُلِّ يَوْمٍ مِسْكِيْنًا.

আতা (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে পড়তে শুনেছেন …… অর্থাৎ যারা সওম পালনে সক্ষম নয়। তাদের জন্য একজন মিসকীনকে খানা খাওয়ানোই ফিদ্য়া। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, এ আয়াত রহিত হয়নি। এ হুকুম সেই অতিবৃদ্ধ পুরুষ ও স্ত্রীলোকের জন্য যারা সওম পালনে সমর্থ নয়। এরা প্রত্যেক দিনের সওমের পরিবর্তে একজন মিসকীনকে পেট পুরে আহার করাবে।

(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪১৪৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪১৫০)

FOR MORE CLICK HERE

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]