সহীহ বুখারী শরীফ হাদিস তাফসীর অধ্যায় ২য় ভাগ হাদিস নং ৪৫০৬– ৪৫৪৬

৬৫/২/২৬. অধ্যায়ঃ
‘‘সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে এ মাস পাবে সে যেন এ মাসে সওম করে ।’’ (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/১৮৫)

৪৫০৬
عَيَّاشُ بْنُ الْوَلِيْدِ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْأَعْلَى حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللهِ عَنْ نَافِعٍ عَنْ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّهُ قَرَأَ {فِدْيَةٌ طَعَامُ مَسَاكِيْنَ} قَالَ هِيَ مَنْسُوْخَةٌ.

ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি পাঠ করতেন فِدْيَةٌ طَعَامُ مَسَاكِينَ রাবী বলেন, এ আয়াত (فَمَنْ شَهِدَ الخ আয়াত দ্বারা) রহিত হয়ে গেছে। [১৯৪৯] (আ.প্র. ৪১৪৮, ই.ফা. ৪১৫১)

৪৫০৭
قُتَيْبَةُ حَدَّثَنَا بَكْرُ بْنُ مُضَرَ عَنْ عَمْرِو بْنِ الْحَارِثِ عَنْ بُكَيْرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ عَنْ يَزِيْدَ مَوْلَى سَلَمَةَ بْنِ الْأَكْوَعِ عَنْ سَلَمَةَ قَالَ لَمَّا نَزَلَتْ {وَعَلَى الَّذِيْنَ يُطَوَّقُوْنَه”” فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِيْنٍ} كَانَ مَنْ أَرَادَ أَنْ يُفْطِرَ وَيَفْتَدِيَ حَتَّى نَزَلَتْ الْآيَةُ الَّتِيْ بَعْدَهَا فَنَسَخَتْهَا.

قَالَ أَبُوْ عَبْد اللهِ مَاتَ بُكَيْرٌ قَبْلَ يَزِيْدَ.

সালামাহ ইবনু আকওয়া‘ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, وَعَلَى الَّذِينَ يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ এ আয়াত অবতীর্ণ হল এবং যারা সওম পালনের সামর্থ্য রাখে তারা একজন মিসকীনকে ফিদ্য়া স্বরূপ আহার্য দান করবে। তখন যে ইচ্ছা সওম ভঙ্গ করত এবং তার পরিবর্তে ফিদ্য়া প্রদান করত। এরপর পরবর্তী আয়াত অবতীর্ণ হয় এবং পূর্বোক্ত আয়াতের হুকুম রহিত করে দেয়।

আবূ ‘আবদুল্লাহ (রহ.) বলেন, ইয়াযীদের পূর্বে বুকায়র মারা যান। [মুসলিম ১৩/২৫, হাঃ ১১৪৫] (আ.প্র. ৪১৪৯, ই.ফা. ৪১৫২)

৬৫/২/২৭. অধ্যায়ঃ
মহান আল্লাহর বাণীঃ

{أُحِلَّ لَكُمْ لَيْلَةَ الصِّيَامِ الرَّفَثُ إِلٰى نِسَآئِكُمْ ط هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنْتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ ط عَلِمَ اللهُ أَنَّكُمْ كُنْتُمْ تَخْتَانُوْنَ أَنْفُسَكُمْ فَتَابَ عَلَيْكُمْ وَعَفَا عَنْكُمْ ج فَالْئٰنَ بَاشِرُوْهُنَّ وَابْتَغُوْا مَا كَتَبَ اللهُ لَكُمْ}

‘‘তোমাদের জন্য বৈধ করা হয়েছে সিয়ামের রাতে তোমাদের স্ত্রীদের সঙ্গে সহবাস করা। তারা তোমাদের পোশাক এবং তোমরা তাদের পোশাক। আল্লাহ জানতেন যে, তোমরা নিজেদের সঙ্গে প্রতারণা করছিলে। সুতরাং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করলেন এবং তোমাদের অব্যাহতি দিলেন। অতএব, এখন থেকে তোমরা তাদের সঙ্গে সহবাস করতে পার এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যা কিছু বিধিবদ্ধ করেছেন তা লাভ কর।’’ (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/১৮৭)

৪৫০৮
عُبَيْدُ اللهِ عَنْ إِسْرَائِيْلَ عَنْ أَبِيْ إِسْحَاقَ عَنِ الْبَرَاءِ ح و حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ عُثْمَانَ حَدَّثَنَا شُرَيْحُ بْنُ مَسْلَمَةَ قَالَ حَدَّثَنِيْ إِبْرَاهِيْمُ بْنُ يُوْسُفَ عَنْ أَبِيْهِ عَنْ أَبِيْ إِسْحَاقَ قَالَ سَمِعْتُ الْبَرَاءَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ لَمَّا نَزَلَ صَوْمُ رَمَضَانَ كَانُوْا لَا يَقْرَبُوْنَ النِّسَاءَ رَمَضَانَ كُلَّهُ وَكَانَ رِجَالٌ يَخُوْنُوْنَ أَنْفُسَهُمْ فَأَنْزَلَ اللهُ {عَلِمَ اللهُ أَنَّكُمْ كُنْتُمْ تَخْتَانُوْنَ أَنْفُسَكُمْ فَتَابَ عَلَيْكُمْ وَعَفَا عَنْكُمْ}.

বারাআ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যখন রমাযানের সওমের হুকুম অবতীর্ণ হল তখন মুসলিমরা গোটা রমাযান মাস স্ত্রীদের নিকটবর্তী হতেন না আর কিছু সংখ্যক লোক এ ব্যাপারে নিজেদের উপর (স্ত্রী-সম্ভোগ করে) অবিচার করে বসে। তখন আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত অবতীর্ণ করেন عَلِمَ اللهُ أَنَّكُمْ كُنْتُمْ تَخْتَانُونَ أَنْفُسَكُمْ فَتَابَ عَلَيْكُمْ وَعَفَا عَنْكُمْ “আল্লাহ জানতেন যে, তোমরা নিজেদের সঙ্গে প্রতারণা করছিলে। সুতরাং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করলেন এবং তোমাদের অব্যাহতি দিলেন। অতএব, এখন থেকে তোমরা তাদের সঙ্গে সহবাস করতে পার এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যা কিছু বিধিবদ্ধ করেছেন তা লাভ কর” (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/১৮৭)। [১৯১৬] (আ.প্র. ৪১৫১, ই.ফা. ৪১৫৩)

৬৫/২/২৮. অধ্যায়ঃ
মহান আল্লাহর বাণীঃ

{وَكُلُوْا وَاشْرَبُوْا حَتّٰى يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الْأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الْأَسْوَدِ مِنَ الْفَجْرِص ثُمَّ أَتِمُّوا الصِّيَامَ إِلَى اللَّيْلِ ج وَلَا تُبَاشِرُوْهُنَّ وَأَنْتُمْ عٰكِفُوْنَ فِي الْمَسَاجِدِ} إِلَى قَوْلِهِ {يَتَّقُوْنَ} الْعَاكِفُ : الْمُقِيْمُ.

‘‘আর তোমরা পানাহার কর যতক্ষণ না কালো রেখা থেকে ভোরের সাদা রেখা পরিষ্কার দেখা যায়। তারপর সওম পূর্ণ কর রাত পর্যন্ত। আর তোমরা যখন মসজিদে ই‘তিকাফ করবে তখন স্ত্রীদের সঙ্গে সহবাস করবে না। এগুলো আল্লাহর বেঁধে দেয়া সীমারেখা। সুতরাং এর কাছেও যেও না। এমনিভাবে আল্লাহ তাঁর নিদর্শনাবলী মানুষের জন্য সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তারা সতর্কতা অবলম্বন করতে পারে।’’ (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/১৮৭)

আল ‘আকিফু الْعَاكِفُ الْمُقِيْمُ অবস্থানকারী।

৪৫০৯
مُوْسَى بْنُ إِسْمَاعِيْلَ حَدَّثَنَا أَبُوْ عَوَانَةَ عَنْ حُصَيْنٍ عَنْ الشَّعْبِيِّ عَنْ عَدِيٍّ قَالَ أَخَذَ عَدِيٌّ عِقَالًا أَبْيَضَ وَعِقَالًا أَسْوَدَ حَتَّى كَانَ بَعْضُ اللَّيْلِ نَظَرَ فَلَمْ يَسْتَبِيْنَا فَلَمَّا أَصْبَحَ قَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ جَعَلْتُ تَحْتَ وِسَادِيْ عِقَالَيْنِ قَالَ إِنَّ وِسَادَكَ إِذًا لَعَرِيْضٌ أَنْ كَانَ الْخَيْطُ الْأَبْيَضُ وَالأَسْوَدُ تَحْتَ وِسَادَتِكَ.

আদী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি (আদী) একটি সাদা ও একটি কালো সুতা সঙ্গে রাখলেন। কিন্তু রাত অতিবাহিত হলে খুলে দেখলেন কিন্তু তার কাছে সাদা কালোর কোন পার্থক্য নিরূপিত হল না। যখন সকাল হল তখন তিনি বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমি আমার বালিশের নিচে (সাদা ও কালো রংয়ের দু’টি সুতা) রেখেছিলাম (এবং তিনি রাতের ঘটনাটি বললেন)। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমার বালিশ তো খুবই বড় দেখছি, যদি কালো ও সাদা সুতা (সুবহি কাযিব ও সুবহি সাদিক) তোমার বালিশের নিচে থেকে থাকে। (রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ‘আদী (রা.)-এর বর্ণনা শুনে কৌতুক করে বলেছেন যে, গোটা পূর্বাকাশ যদি তোমার বালিশের নিচে রেখে থাক তাহলে সে বালিশ তো খুব বড়ই দেখছি) [১৯১৬] (আ.প্র. ৪১৫২, ই.ফা. ৪১৫৪)

৬৫/২/২৮. অধ্যায়ঃ
মহান আল্লাহর বাণীঃ

৪৫১০
قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيْدٍ حَدَّثَنَا جَرِيْرٌ عَنْ مُطَرِّفٍ عَنْ الشَّعْبِيِّ عَنْ عَدِيِّ بْنِ حَاتِمٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ مَا الْخَيْطُ الْأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الْأَسْوَدِ أَهُمَا الْخَيْطَانِ قَالَ إِنَّكَ لَعَرِيْضُ الْقَفَا إِنْ أَبْصَرْتَ الْخَيْطَيْنِ ثُمَّ قَالَ لَا بَلْ هُوَ سَوَادُ اللَّيْلِ وَبَيَاضُ النَّهَارِ

আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! (আল্লাহ্‌র বাণীতে) الْخَيْطُ الأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الأَسْوَدِ সাদা সুতা কালো সুতা থেকে বের হয়ে আসার অর্থ কী? আসলে কি ঐ দু’টি সুতা? তিনি উত্তর দিলেন, তুমি আজব লোক দেখছি যে, সূতা দু’টি তুমি দেখতে পেয়েছ। তারপর তিনি বললেন, তা নয় বরং এ হল রাতের কৃষ্ণতা ও দিনের শুভ্রতা। [১৯১৬] (আ.প্র. ৪১৫৩, ই.ফা. ৪১৫৫)

৬৫/২/২৯. অধ্যায়ঃ
মহান আল্লাহর বাণীঃ

{وَلَيْسَ الْبِرُّ بِأَنْ تَأْتُوا الْبُيُوْتَ مِنْ ظُهُوْرِهَا وَلٰكِنَّ الْبِرَّ مَنِ اتَّقٰى ج وَأْتُوا الْبُيُوْتَ مِنْ أَبْوٰبِهَا ص وَاتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ}

‘‘আর পেছনের দিক দিয়ে ঘরে প্রবেশ করাতে কোন পুণ্য নেই, বরং পুণ্য আছে কেউ তাকওয়া অবলম্বন করলে। সুতরাং তোমরা দরজা দিয়ে ঘরে প্রবেশ কর এবং আল্লাহ্কে ভয় কর, যাতে তোমরা কৃতকার্য হতে পার।’’ (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/১৮৯)

৪৫১১
حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِيْ مَرْيَمَ حَدَّثَنَا أَبُوْ غَسَّانَ مُحَمَّدُ بْنُ مُطَرِّفٍ حَدَّثَنِيْ أَبُوْ حَازِمٍ عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ وَأُنْزِلَتْ {وَكُلُوْا وَاشْرَبُوْا حَتّٰى يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الْأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الْأَسْوَدِ} وَلَمْ يُنْزَلْ {مِنَ الْفَجْرِ} وَكَانَ رِجَالٌ إِذَا أَرَادُوا الصَّوْمَ رَبَطَ أَحَدُهُمْ فِيْ رِجْلَيْهِ الْخَيْطَ الْأَبْيَضَ وَالْخَيْطَ الْأَسْوَدَ وَلَا يَزَالُ يَأْكُلُ حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَهُ رُؤْيَتُهُمَا فَأَنْزَلَ اللهُ بَعْدَهُ {مِنَ الْفَجْرِ} فَعَلِمُوْا أَنَّمَا يَعْنِي اللَّيْلَ مِنْ النَّهَارِ

সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, وَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَكُمْ الْخَيْطُ الأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الأَسْوَدِ এ আয়াত যখন অবতীর্ণ হয় তখন مِنَ الْفَجْرِ ‘ফজর হতে’ কথাটি অবতীর্ণ হয়নি। তাই লোকেরা সওম পালনের ইচ্ছা করলে তখন তাদের কেউ কেউ দুই পায়ে সাদা ও কালো রঙের সূতা বেঁধে রাখত। এরপর ঐ দু’টি সুতা পরিষ্কারভাবে দেখা না যাওয়া পর্যন্ত তারা পানাহার করত। তখন আল্লাহ তা‘আলা পরে مِنَ الْفَجْرِ শব্দটি অবতীর্ণ করেন। এতে লোকেরা জানতে পারেন যে, এ দ্বারা উদ্দেশ্য হল দিন হতে রাত্রির স্পষ্টতা। [১৯১৭] (আ.প্র. ৪১৫৪, ই.ফা. ৪১৫৬)

৬৫/২/৩০. অধ্যায়ঃ
মহান আল্লাহর বাণীঃ

{وَقٰتِلُوْهُمْ حَتّٰى لَا تَكُوْنَ فِتْنَةٌ وَّيَكُوْنَ الدِّيْنُ لِلهِ ط فَإِنِ انْتَهَوْا فَلَا عُدْوَانَ إِلَّا عَلَى الظّٰلِمِيْنَ}

‘‘আর তোমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে যতক্ষণ না ফিতনার অবসান হয় এবং দ্বীন শুধু আল্লাহর জন্য হয়। তারপর যদি তারা নিবৃত হয়ে যায় তবে সীমালংঘনকারীদের ব্যতীত কাউকে জবরদস্তি করা চলবে না।’’ (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/১৯৩)

৪৫১২
حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللهِ بْنُ مُوْسَى عَنْ إِسْرَائِيْلَ عَنْ أَبِيْ إِسْحَاقَ عَنِ الْبَرَاءِ قَالَ كَانُوْا إِذَا أَحْرَمُوْا فِي الْجَاهِلِيَّةِ أَتَوْا الْبَيْتَ مِنْ ظَهْرِهِ فَأَنْزَلَ اللهُ {وَلَيْسَ الْبِرُّ بِأَنْ تَأْتُوا الْبُيُوْتَ مِنْ ظُهُوْرِهَا وَلٰكِنَّ الْبِرَّ مَنِ اتَّقٰى ج وَأْتُوا الْبُيُوْتَ مِنْ أَبْوٰبِهَا}

বারাআ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, জাহিলী যুগে যখন লোকেরা ইহরাম বাঁধত, তারা পেছনের দরজা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করত। তখন আল্লাহ তা‘আলা অবতীর্ণ করলেন “আর পেছনের দিক দিয়ে ঘরে প্রবেশ করাতে কোন পুণ্য নেই, বরং পুণ্য আছে কেউ তাকওয়া অবলম্বন করলে। সুতরাং তোমরা দরজা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করো” (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/১৮৯)। [১৮০৩] (আ.প্র. ৪১৫৫, ই.ফা. ৪১৫৭)

৬৫/২/৩১. অধ্যায়ঃ
মহান আল্লাহর বাণীঃ

{وَأَنْفِقُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَلَا تُلْقُوْا بِأَيْدِيْكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ ؁ج وَأَحْسِنُوْا ؁ج إِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِيْنَ (195)} التَّهْلُكَةُ وَالْهَلَاكُ وَاحِدٌ.

‘‘আর ব্যয় কর আল্লাহর পথে এবং নিজেদের হাতে নিজেদেরকে তোমরা ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করো না। আর তোমরা সৎকাজ কর। নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালবাসেন’’- (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/১৯৫)। আয়াতে উল্লেখিত التَّهْلُكَةُ ও الْهَلَاك একই অর্থে ব্যবহৃত।

৪৫১৩
مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَهَّابِ حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللهِ عَنْ نَافِعٍ عَنْ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَتَاهُ رَجُلَانِ فِيْ فِتْنَةِ ابْنِ الزُّبَيْرِ فَقَالَا إِنَّ النَّاسَ صَنَعُوْا وَأَنْتَ ابْنُ عُمَرَ وَصَاحِبُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَمَا يَمْنَعُكَ أَنْ تَخْرُجَ فَقَالَ يَمْنَعُنِيْ أَنَّ اللهَ حَرَّمَ دَمَ أَخِيْ فَقَالَا أَلَمْ يَقُلْ اللهُ : {وَقٰتِلُوْهُمْ حَتّٰى لَا تَكُوْنَ فِتْنَةٌ} : فَقَالَ قَاتَلْنَا حَتَّى لَمْ تَكُنْ فِتْنَةٌ وَكَانَ الدِّيْنُ لِلهِ وَأَنْتُمْ تُرِيْدُوْنَ أَنْ تُقَاتِلُوْا حَتَّى تَكُوْنَ فِتْنَةٌ وَيَكُوْنَ الدِّيْنُ لِغَيْرِ اللهِ.

ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তাঁর কাছে দুই ব্যক্তি ‘আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়রের যুগে সৃষ্ট ফিতনার সময় আগমন করল এবং বলল, লোকেরা সব ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে আর আপনি ‘‘উমার (রাঃ)-এর পুত্র এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সহাবী! কী কারণে আপনি বের হন না? তিনি উত্তর দিলেন আমাকে নিষেধ করেছে এই কথা‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা আমার ভাইয়ের রক্ত হারাম করেছে। তারা দু’জন বললেন, আল্লাহ কি এ কথা বলেননি যে, তোমরা তাদের সঙ্গে যুদ্ধ কর যাবৎ না ফিতনার অবসান ঘটে। তখন ইবনু ‘‘উমার (রাঃ) বললেন, আমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি যাবৎ না ফিতনার অবসান ঘটেছে এবং দ্বীনও আল্লাহ্‌র জন্য হয়ে গেছে। আর তোমরা ফিতনা প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করার ইচ্ছা করছ আর যেন আল্লাহ ব্যতীত অন্যের জন্য দ্বীন হয়ে গেছে। [৩১৩০] (আ.প্র. ৪১৫৬, ই.ফা. ৪১৫৮)

৪৫১৪
وَزَادَ عُثْمَانُ بْنُ صَالِحٍ عَنْ ابْنِ وَهْبٍ قَالَ أَخْبَرَنِيْ فُلَانٌ وَحَيْوَةُ بْنُ شُرَيْحٍ عَنْ بَكْرِ بْنِ عَمْرٍو الْمَعَافِرِيِّ أَنَّ بُكَيْرَ بْنَ عَبْدِ اللهِ حَدَّثَهُ عَنْ نَافِعٍ أَنَّ رَجُلًا أَتَى ابْنَ عُمَرَ فَقَالَ يَا أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ مَا حَمَلَكَ عَلَى أَنْ تَحُجَّ عَامًا وَتَعْتَمِرَ عَامًا وَتَتْرُكَ الْجِهَادَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ وَقَدْ عَلِمْتَ مَا رَغَّبَ اللهُ فِيْهِ قَالَ يَا ابْنَ أَخِيْ بُنِيَ الإِسْلَامُ عَلَى خَمْسٍ إِيْمَانٍ بِاللهِ وَرَسُوْلِهِ وَالصَّلَاةِ الْخَمْسِ وَصِيَامِ رَمَضَانَ وَأَدَاءِ الزَّكَاةِ وَحَجِّ الْبَيْتِ قَالَ يَا أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ أَلَا تَسْمَعُ مَا ذَكَرَ اللهُ فِيْ كِتَابِهِ {وَإِنْ طَآئِفَتٰنِ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ اقْتَتَلُوْا فَأَصْلِحُوْا بَيْنَهُمَا ج فَإِنْمبَغَتْ إِحْدَاهُمَا عَلَى الْأُخْرٰى فَقَاتِلُوا الَّتِيْ تَبْغِيْ حَتّٰى تَفِيْٓءَ إِلٰٓى أَمْرِ اللهِ} وَ{قَاتِلُوْهُمْ حَتّٰى لَا تَكُوْنَ فِتْنَةٌ} قَالَ فَعَلْنَا عَلَى عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَكَانَ الإِسْلَامُ قَلِيْلًا فَكَانَ الرَّجُلُ يُفْتَنُ فِيْ دِيْنِهِ إِمَّا قَتَلُوْهُ وَإِمَّا يُعَذِّبُوْنَهُ حَتَّى كَثُرَ الإِسْلَامُ فَلَمْ تَكُنْ فِتْنَةٌ

নাফি’ (রহ.) থেকে বর্ণিতঃ

এক ব্যক্তি ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর নিকট এসে বলল, হে আবূ ‘আবদুর রহমান! কী কারণে আপনি এক বছর হাজ্জ করেন এবং এক বছর ‘উমরাহ করেন অথচ আল্লাহ্‌র পথে জিহাদ ত্যাগ করেছেন? আপনি পরিজ্ঞাত আছেন যে, আল্লাহ এ বিষয়ে জিহাদ সম্পর্কে কীভাবে উদ্বুদ্ধ করেছেন। ইবনু ‘উমার (রাঃ) বললেন, হে ভাতিজা! ইসলামের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে পাঁচটি বস্তুর উপর ঃ আল্লাহ ও তাঁর রসূল (সঃ)-এর প্রতি ঈমান আনা, পাঁচ ওয়াক্ত সলাত প্রতিষ্ঠা, রমাযানের সওম পালন, যাকাত প্রদান এবং বাইতুল্লাহ্র হাজ্জ পালন। তখন সে ব্যক্তি বলল, হে আবূ ‘আবদুর রহমান! আল্লাহ তা‘আলা তাঁর কিতাবে কী বর্ণনা করেছেন তা কি আপনি শুনেননি? وَإِنْ طَائِفَتَانِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ اقْتَتَلُوا فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا فَإِنْ بَغَتْ إِحْدَاهُمَا عَلَى الْأُخْرَى فَقَاتِلُوا الَّتِي تَبْغِي حَتَّى تَفِيءَ إِلَى أَمْرِ اللهِ “আর যদি মু‘মিনদের দু’টি দল পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পড়ে, তবে তোমরা তাদের মধ্যে সন্ধি স্থাপন করে দিবে। অতঃপর যদি তাদের একদল অন্য দলের উপর বাড়াবাড়ি করে, তবে তোমরা যারা বাড়াবাড়ি করে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহ্‌র হুকুমের দিকে ফিরে আসে। যদি তারা ফিরে আসে, তবে তোমরা উভয় দলের মধ্যে ন্যায়ের সঙ্গে সন্ধি করে দিবে এবং ইনসাফ করবে। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফ কায়িমকারীদেরকে ভালবাসেন।” (সূরাহ আল-হুজরাত ৪৯/৯)

قَاتِلُوهُمْ حَتَّى لاَ تَكُونَ فِتْنَةٌ (এ আয়াতগুলো শ্রবণ করার পর) ইবনু ‘উমার (রাঃ) বললেন, আমরা এ কাজ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর যুগে করেছি এবং তখন ইসলামের অনুসারীর দল স্বল্প সংখ্যক ছিল। যদি কোন লোক দ্বীন সম্পর্কে ফিতনায় নিপতিত হত তখন হয় তাকে হত্যা করা হত অথবা শাস্তি প্রদান করা হত। এভাবে ইসলামের অনুসারীর সংখ্যা বেড়ে গেল। তখন আর কোন ফিতনা রইল না। [৮, ৩১৩০] (আ.প্র. ৪১৫৭, ই.ফা. ৪১৫৮ শেষাংশ)

৬৫/২/৩২. অধ্যায়ঃ
আল্লাহর বাণীঃ তোমাদের মধ্যে যদি কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ে কিংবা মাথায় কোন কষ্ট থাকে তবে সওম কিংবা সদাকাহ অথবা কুরবানী দিয়ে তার ফিদ্ইয়া দিবে। (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/১৯৬)

৪৫১৭
آدَمُ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ الْأَصْبَهَانِيِّ قَالَ سَمِعْتُ عَبْدَ اللهِ بْنَ مَعْقِلٍ قَالَ قَعَدْتُ إِلَى كَعْبِ بْنِ عُجْرَةَ فِيْ هَذَا الْمَسْجِدِ يَعْنِيْ مَسْجِدَ الْكُوْفَةِ فَسَأَلْتُهُ عَنْ فِدْيَةٌ مِنْ صِيَامٍ فَقَالَ حُمِلْتُ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَالْقَمْلُ يَتَنَاثَرُ عَلَى وَجْهِيْ فَقَالَ مَا كُنْتُ أُرَى أَنَّ الْجَهْدَ قَدْ بَلَغَ بِكَ هَذَا أَمَا تَجِدُ شَاةً قُلْتُ لَا قَالَ صُمْ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ أَوْ أَطْعِمْ سِتَّةَ مَسَاكِيْنَ لِكُلِّ مِسْكِيْنٍ نِصْفُ صَاعٍ مِنْ طَعَامٍ وَاحْلِقْ رَأْسَكَ فَنَزَلَتْ فِيَّ خَاصَّةً وَهْيَ لَكُمْ عَامَّةً.

‘আবদুল্লাহ ইবনু মা‘কিল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি কা‘ব ইবনু উজরা-এর নিকট এই কূফার মাসজিদে বসে থাকাকালে সওমের ফিদ্য়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, আমার চেহারায় উকুন ছড়িয়ে পড়া অবস্থায় আমাকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে আনা হয়। তিনি তখন বললেন, আমি মনে করি যে, এতে তোমার কষ্ট হচ্ছে। তুমি কি একটি বকরী সংগ্রহ করতে পার? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তুমি তিনদিন সওম পালন কর অথবা ছয়জন দরিদ্রকে খাদ্য দান কর। প্রতিটি দরিদ্রকে অর্ধ সা‘ খাদ্য দান করতে হবে এবং তোমার মাথার চুল কামিয়ে ফেল। তখন আমার ব্যাপারে বিশেষভাবে আয়াত অবতীর্ণ হয়। তবে তোমাদের সকলের জন্য এই হুকুম। [১৮১৪] (আ.প্র. ৪১৫৯, ই.ফা. ৪১৬০)

৬৫/২/৩৩. অধ্যায়ঃ
আল্লাহর বাণীঃ যখন তোমরা নিরাপদ হবে, তখন তোমাদের মধ্যে যে কেউ হাজ্জ ও ‘উমরাহ একত্রে পালন করতে চায়, সে যা কিছু সহজলভ্য তা দিয়ে কুরবানী করবে। (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/১৯৬)

৪৫১৮
مُسَدَّدٌ حَدَّثَنَا يَحْيَى عَنْ عِمْرَانَ أَبِيْ بَكْرٍ حَدَّثَنَا أَبُوْ رَجَاءٍ عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ أُنْزِلَتْ آيَةُ الْمُتْعَةِ فِيْ كِتَابِ اللهِ فَفَعَلْنَاهَا مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَلَمْ يُنْزَلْ قُرْآنٌ يُحَرِّمُهُ وَلَمْ يَنْهَ عَنْهَا حَتَّى مَاتَ قَالَ رَجُلٌ بِرَأْيِهِ مَا شَاءَ.

‘ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, তামাত্তুর (‘উমরাহ ও হাজ্জ একসঙ্গে করে লাভবাব হওয়ার) আয়াত আল্লাহ্‌র কিতাবে অবতীর্ণ হয়েছে। এরপর আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সঙ্গে তা) করেছি এবং এর নিষিদ্ধতা ঘোষণা করে কুরআনের কোন আয়াত অবতীর্ণ হয়নি এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইন্তিকাল পর্যন্ত তা থেকে নিষেধও করেনি। এ ব্যাপারে এক ব্যক্তি নিজের ইচ্ছানুযায়ী মতামত ব্যক্ত করেছেন। [১৫৭১; মুসলিম ১৫/২৩, হাঃ ১২২৬, আহমাদ ১৯৮৭১] (আ.প্র. ৪১৬০, ই.ফা. ৪১৬১)

৬৫/২/৩৪. অধ্যায়ঃ
‘‘তোমাদের পালনকর্তার অনুগ্রহ অন্বেষণ করায় তোমাদের কোন পাপ নেই।’’ (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/১৯৮)

৪৫১৯
مُحَمَّدٌ قَالَ أَخْبَرَنِي ابْنُ عُيَيْنَةَ عَنْ عَمْرٍو عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ كَانَتْ عُكَاظُ وَمَجَنَّةُ وَذُو الْمَجَازِ أَسْوَاقًا فِي الْجَاهِلِيَّةِ فَتَأَثَّمُوْا أَنْ يَتَّجِرُوْا فِي الْمَوَاسِمِ فَنَزَلَتْ : {لَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَنْ تَبْتَغُوْا فَضْلًا مِّنْ رَّبِّكُ} فِيْ مَوَاسِمِ الْحَجِّ.

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, উকায, মাজান্না এবং যুল-মাজায নামক স্থানে জাহিলী যুগে বাজার ছিল। মুসলিমগণ সেখানে হাজ্জ মওসুমে ব্যবসা করতে যাওয়া দূষণীয় মনে করত। তাই অবতীর্ণ হলঃ “তোমাদের পালনকর্তার অনুগ্রহ অন্বেষণ করায় তোমাদের কোন পাপ নেই” (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/১৯৮)। [১৭৭০] (আ.প্র. ৪১৬১, ই.ফা. ৪১৬২)

৬৫/২/৩৫. অধ্যায়ঃ
‘‘তারপর তোমরা দ্রুতগতিতে সেখান থেকে ফিরে আস যেখান থেকে সবাই ফিরে।’’ (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/১৯৯)

৪৫২০
عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللهِ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ خَازِمٍ حَدَّثَنَا هِشَامٌ عَنْ أَبِيْهِ عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا كَانَتْ قُرَيْشٌ وَمَنْ دَانَ دِيْنَهَا يَقِفُوْنَ بِالْمُزْدَلِفَةِ وَكَانُوْا يُسَمَّوْنَ الْحُمْسَ وَكَانَ سَائِرُ الْعَرَبِ يَقِفُوْنَ بِعَرَفَاتٍ فَلَمَّا جَاءَ الإِسْلَامُ أَمَرَ اللهُ نَبِيَّهُ صلى الله عليه وسلم أَنْ يَأْتِيَ عَرَفَاتٍ ثُمَّ يَقِفَ بِهَا ثُمَّ يُفِيْضَ مِنْهَا فَذَلِكَ قَوْلُهُ تَعَالَى {ثُمَّ أَفِيْضُوْا مِنْ حَيْثُ أَفَاضَ النَّاسُ}

‘আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

কুরাইশ এবং যারা তাদের দ্বীনের অনুসারী ছিল তারা (হাজ্জের সময়) মুযদালাফাহতে অবস্থান করত। আর কুরাইশগণ নিজেদের ‘হুকুম’ ও (ধর্মে অটল) বলে অভিহিত করত এবং অপরাপর আরবগণ আরাফাতে অবস্থান করত। অতঃপর ইসলামের আগমন ঘটলে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে ‘আরাফাতে আসার, সেখানে ওকুফের এবং এরপর সেখান থেকে ফেরার নির্দেশ দিলেন। ثُمَّ أَفِيضُوا مِنْ حَيْثُ أَفَاضَ النَّاسُ আয়াত আল্লাহ এ সম্পর্কেই ব্যক্ত করেছেন। [১৬৬৫] (আ.প্র. ৪১৬২, ই.ফা. ৪১৬৩)

৪৫২১
مُحَمَّدُ بْنُ أَبِيْ بَكْرٍ حَدَّثَنَا فُضَيْلُ بْنُ سُلَيْمَانَ حَدَّثَنَا مُوْسَى بْنُ عُقْبَةَ أَخْبَرَنِيْ كُرَيْبٌ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ يَطَّوَّفُ الرَّجُلُ بِالْبَيْتِ مَا كَانَ حَلَالًا حَتَّى يُهِلَّ بِالْحَجِّ فَإِذَا رَكِبَ إِلَى عَرَفَةَ فَمَنْ تَيَسَّرَ لَهُ هَدِيَّةٌ مِنَ الإِبِلِ أَوِ الْبَقَرِ أَوِ الْغَنَمِ مَا تَيَسَّرَ لَهُ مِنْ ذَلِكَ أَيَّ ذَلِكَ شَاءَ غَيْرَ أَنَّهُ إِنْ لَمْ يَتَيَسَّرْ لَهُ فَعَلَيْهِ ثَلَاثَةُ أَيَّامٍ فِي الْحَجِّ وَذَلِكَ قَبْلَ يَوْمِ عَرَفَةَ فَإِنْ كَانَ آخِرُ يَوْمٍ مِنَ الْأَيَّامِ الثَلَاثَةِ يَوْمَ عَرَفَةَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِ ثُمَّ لِيَنْطَلِقْ حَتَّى يَقِفَ بِعَرَفَاتٍ مِنْ صَلَاةِ الْعَصْرِ إِلَى أَنْ يَكُوْنَ الظَّلَامُ ثُمَّ لِيَدْفَعُوْا مِنْ عَرَفَاتٍ إِذَا أَفَاضُوْا مِنْهَا حَتَّى يَبْلُغُوْا جَمْعًا الَّذِيْ يَبِيْتُوْنَ بِهِ ثُمَّ لِيَذْكُرُوا اللهَ كَثِيْرًا وَأَكْثِرُوا التَّكْبِيْرَ وَالتَّهْلِيْلَ قَبْلَ أَنْ تُصْبِحُوْا ثُمَّ أَفِيْضُوْا فَإِنَّ النَّاسَ كَانُوْا يُفِيْضُوْنَ وَقَالَ اللهُ تَعَالَى {ثُمَّ أَفِيْضُوْا مِنْ حَيْثُ أَفَاضَ النَّاسُ وَاسْتَغْفِرُوا اللهَ إِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ} حَتَّى تَرْمُوا الْجَمْرَةَ.

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, তামাত্তু আদায়কারী ‘উমরাহ আদায়ের পর যদ্দিন হালাল অবস্থায় থাকবে তদ্দিন বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করবে। তারপর হাজ্জের জন্য ইহ্রাম বাঁধবে। এরপর যখন ‘আরাফাতে যাবে তখন উট, গরু, ছাগল ইত্যাদি যা মুহ্রিমের জন্য সহজলভ্য হয় তা মীনাতে কুরবানী করবে। আর যে কুরবানীর সঙ্গতি রাখে না সে হাজ্জের দিনসমূহের মধ্যে তিনদিন সওম পালন করবে। আর তা ‘আরাফার দিনের আগে হতে হবে। আর তিনদিনের শেষ দিন যদি ‘আরাফার দিন হয়, তবে তাতে কোন দোষ নেই। তারপর ‘আরাফাত ময়দানে যাবে এবং সেখানে ‘আসরের সলাত হতে সূর্যাস্তের অন্ধকার পর্যন্ত ‘ওকুফ (অবস্থান) করবে। এরপর ‘আরাফা হতে প্রত্যাবর্তন করে মুযদালাফায় পৌঁছে সেখানে পুণ্য অর্জনের কাজ করতে থাকবে আর সেখানে আল্লাহ্কে অধিক অথবা (রাবীর সন্দেহ) সবচেয়ে অধিক স্মরণ করবে। সেখানে ফাজ্র হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাকবীর ও তাহলীল পাঠ করবে। এরপর (মীনার দিকে) প্রত্যাবর্তন করবে যেভাবে অন্যান্য লোক প্রত্যাবর্তন করে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “এরপর প্রত্যাবর্তন কর সেখান হতে, যেখান হতে লোকজন প্রত্যাবর্তন করে এবং আল্লাহ্‌র কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমাশীল, দয়াময়।” তারপর জামরায় প্রস্তর নিক্ষেপ করবে। (আ.প্র. ৪১৬৩, ই.ফা. ৪১৬৪)

৬৫/২/৩৬. অধ্যায়ঃ


{وَمِنْهُمْ مَّنْ يَّقُوْلُ رَبَّنَآ اٰتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَّفِي الْاٰخِرَةِ حَسَنَةً وَّقِنَا عَذَابَ النَّارِ (201) }

‘‘এবং তাদের মধ্যে এমন লোকও রয়েছে যে বলেঃ হে আমাদের প্রতিপালক! এ দুনিয়াতেও আমাদের কল্যাণ দান কর এবং আখিরাতেও কল্যাণ দান কর এবং জাহান্নামের ‘আযাব থেকে আমাদের রক্ষা কর।’’[১] (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/২০১)

৪৫২২
أَبُوْ مَعْمَرٍ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَارِثِ عَنْ عَبْدِ الْعَزِيْزِ عَنْ أَنَسٍ قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ {اللّٰهُمَّ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ}

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এই বলে দু‘আ করতেন ঃ اللهُمَّ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ “হে আমাদের প্রভু! এ দুনিয়াতেও আমাদের কল্যাণ দান কর এবং আখিরাতেও কল্যাণ দান কর এবং দোজখের ‘আযাব থেকে আমাদের রক্ষা কর” (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/২০১)। (আ.প্র. ৪১৬৪, ই.ফা. ৪১৬৫)






[১] উপরোক্ত আয়াতটিকে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকাংশ সময় পঠিতব্য দু‘আ হিসেবে ব্যবহার করেছেন। কারণ উক্ত দু‘আ ও আয়াতের দ্বারা বান্দা আল্লাহর নিকট দুনিয়ার সামগ্রিক কল্যাণ ও আখিরাতের যাবতীয় কল্যাণ কামনা করে থাকে। আখিরাতের অনন্ত জীবনকে ভুলে গিয়ে যারা কেবল পার্থিব জীবনকে নিয়ে ব্যস্ত, তাদেরকে এই বস্ত্তজগতের মোহ-মমতার প্রতি এত বিপুল পরিমাণে আকর্ষণ করে যে, শেষ পর্যন্ত এই শ্রেণীর মানুষ আল্লাহকে ভুলে গিয়ে সীমাহীনভাবে পাপাসক্তিতে লিপ্ত হয়, স্বীয় স্বার্থ হাসিলের জন্য প্রয়োজনে অন্যায়-অত্যাচার, অবিচার, ব্যভিচার ও লুণ্ঠনসহ যাবতীয় নৃশংসতা, নিষ্ঠুরতার সীমা ছাড়িয়ে এক হিংস্র পশুতে পরিণত হয়। অবলীলায় সৃষ্টি জগতের প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বার্থপরতা, ভোগবাদিতা, লোলুপতা ও লাম্পট্য তাকে আল্লাহ বিমুখ করে দেয়। ফলে এই শ্রেণীর মানুষদের মধ্য হতেই নাস্তিক্যবাদ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। শেষ পর্যন্ত নাস্তিক হয়ে তাকে দুনিয়া ত্যাগ করতে হয়।

পক্ষান্তরে আল্লাহয় বিশ্বাসী আর এক শ্রেণীর মানুষ দুনিয়ার প্রতি এতই ত্যক্ত, বিরক্ত যে তারা বিবাহ-শাদীতে অনাগ্রহী ব্যবসা-বাণিজ্যে অমনোযোগী, ঘর-সংসারের কাজে-কর্মে অনুৎসাহী হয়ে এক ধরনের বৈরাগ্য জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে কালাতিপাত করতে থাকে। বলা বাহুল্য, এই শ্রেণীর মানুষ সমাজ, দেশ, জাতি ও বিশ্ব সভ্যতার উপরে দুর্বহ বোঝার ন্যায় বিচরণ করছে। উল্লেখ্য, উপরোক্ত উভয় শ্রেণীর মানুষই মানবতা, সভ্যতা ও বিশ্ব বিবেকের বিচারে অবাঞ্ছিত, অনাকাঙ্ক্ষিত বটে। অতএব আলোচ্য প্রার্থনামূলক আয়াত দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা এতদুভয়কেই এক নৈতিক, আধ্যাত্মিক, ব্যবহারিক তথা মানুষের প্রাত্যহিক জীবনকে পরিমার্জিত ও সুষমামন্ডিত করার জন্য এক অভূতপূর্ব প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন। আলোচ্য দু‘আর আয়াতে উভয় শ্রেণীকে এক সুসমন্বয় ও ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় উন্নীত করার সুচিন্তিত ব্যবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। আর এ বিষয়ের সংক্ষিপ্ত কথা এই যে, কেবল দুনিয়া দুনিয়া করে মহামূল্যবান জীবনকে শেষ করলে চলবে না, আখিরাত অবশ্যম্ভাবী। আবার আখিরাতের প্রতি মনোযোগ দিতে গিয়ে কেউ যেন সংসারবিরাগী হয়ে না যায়। কৃচ্ছ্র সাধনায়, বৈরাগ্য সাধনায় ইহ-পরকালের কোন কল্যাণ নেই, আল্লাহ প্রেমিক যেন এ কথাটিকে শিরোধার্য করে নেয়। উক্ত আয়াতের একান্ত ও মৌল লক্ষ্য এটাই। দুনিয়ার প্রতি আসক্তি আসার প্রয়োজন আছে, অতটুকু যতটুকু উপায়-উপকরণ ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবন যাপনে আবশ্যক। যেমন কবির ভাষায় প্রতিভাত হয়েছেঃ آب اندر در هلاك كشتى است – آب اندر زير كشتى ﭘشتى است (رومي رح)

নৌকা চলতে পানির আবশ্যকতা অনস্বীকার্য। কিন্তু সেই পানি নৌকায় বেশী পরিমাণে প্রবেশ করলে নৌকার ধ্বংস ও নিমজ্জিত হওয়ার আশঙ্কা আছে। সুতরাং এ দুনিয়ার সাথে একজন মু’মিনের সম্পর্ক তেমন, যেমন নৌকার সাথে পানির সম্পর্ক। একজন মু’মিনের জন্য দুনিয়ায় সতর্কতা আবশ্যক। যাতে সে এ ভব সাগরে চিরতরেই ডুবে না যায়। আসুন! এখন এ বিষয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অমিয় বাণী থেকে হিদায়াত গ্রহণে মনোনিবেশ করি। সহীহুল বুখারীর বর্ণনায় নিম্নোক্ত সহীহ হাদীস, আহমাদ বিন হাম্বলের বর্ণনায় ও অন্যান্য গ্রহণযোগ্য বর্ণনাকারীদের রিওয়ায়াতে আছে।

فقال البخاري: حدثنا معمر حدثنا عبد الوارث عن عبد العزيز عن أنس بن مالك قال: كان النبي – صلى الله عليه وسلم – يقول “اللهم ربنا آتنا في الدنيا حسنة وفي الآخرة حسنة وقنا عذاب النار” وقال أحمد: حدثنا إسماعيل بن إبراهيم حدثنا عبد العزيز بن صهيب قال: سأل قتادة أنسا أي دعوة كان أكثر ما يدعوها النبي صلى الله عليه وسلم قال: يقول “اللهم ربنا آتنا في الدنيا حسنة وفي الآخرة حسنة وقنا عذاب النار” وكان أنس إذا أراد أن يدعو بدعوة دعا بها وإذا أراد أن يدعو بدعاء دعا بها فيه ورواه مسلم وقال ابن أبي حاتم: حدثنا أبي حدثنا أبو نعيم حدثنا عبدالسلام بن شداد يعني أبا طالوت قال: كنت عند أنس بن مالك فقال له ثابت إن إخوانك يحبون أن تدعو لهم فقال: اللهم آتنا في الدنيا حسنة وفي الآخرة حسنة وقنا عذاب النار وتحدثوا ساعة حتى إذا أرادوا القيام قال أبا حمزة: إن إخوانك يريدون القيام فادع الله لهم فقال: أتريدون أن أشقق لكم الْأمور إذا آتاكم الله في الدنيا حسنة وفي الآخرة حسنة ووقاكم عذاب النار فقد آتاكم الخير كله. وقال أحمد أيضا: حدثنا محمد بن أبي عدي عن حميد عن ثابت عن أنس أن رسول الله – صلى الله عليه وسلم – عاد رجلا من المسلمين قد صار مثل الفرخ فقال له رسول الله – صلى الله عليه وسلم – “هل تدعو الله بشيء أو تسأله إياه” قال نعم: كنت أقول اللهم ما كنت معاقبي به في الآخرة فعجله لي في الدنيا. فقال رسول الله – صلى الله عليه وسلم – “سبحان الله لا تطيقه أو لا تستطيعه فهلا قلت “ربنا آتنا في الدنيا حسنة وفي الآخرة حسنة وقنا عذاب النار” قال فدعا الله فشفاه

অর্থঃ ইমাম বুখারী (রহ.) পরপর কয়েকজন বর্ণনাকারীর উল্লেখ করে আনাস বিন মালিক (রাঃ) থেকে তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই বলে দু‘আ করতেন, হে আল্লাহ! তুমি আমাদের দুনিয়ার যাবতীয় কল্যাণ দান কর এবং আখিরাতের সমস্ত কল্যাণও দান কর এবং জাহান্নামের শাস্তি হতে বাঁচাও। অতঃপর ইমাম আহমাদ বলেন, ক্বাতাদাহ আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন দু‘আটি বেশী বেশী করতেন? তিনি (উত্তরে) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘রাববানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া . . . . . . . . ওয়াক্বিনা ‘আযাবান নার’ এই দু‘আই বেশী বেশী করতেন। অতঃপর ইমাম মুসলিম বলেন, আনাস (রাঃ) দু‘আ করার ইচ্ছা করলে তিনিও উক্ত দু‘আ করতেন। আনাস বিন মালিক (রাঃ)-এর অন্য বর্ণনায় দেখা যায় তাঁকে ‘সাবিত’ নামক জনৈক তাবিয়ী বলেন যে, আপনার ভাইয়েরা কামনা করছে, আপনি তাদের জন্য একটু দু‘আ করুন, তখন তিনি উপরোক্ত দু‘আই করেন। আনাস হতে আর একটি ঘটনার উল্লেখ দেখা যায়, তা এই যে, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মুসলিম রোগীকে ডাকলেন; যে স্বীয় রোগব্যাধির কারণে অত্যন্ত ভীত হয়ে পড়েছিল। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি কি আল্লাহর কাছে দু‘আর মাধ্যমে কোন কিছু চাও? লোকটি বলল, হ্যাঁ চাই। আর তা এই যে, আমি আল্লাহ তা‘আলার নিকট দু‘আ করছি, তিনি যেন আমাকে আখিরাতে শাস্তি না দিয়ে তাড়াতাড়ি এই দুনিয়াতেই শাস্তি দেন। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সুবহানাল্লাহ! ওহে! তোমার তা সহ্য করার ক্ষমতা নেই। কেন তুমি ‘রাববানা আতিনা . . . . . ওয়াক্বিনা ‘আযাবান্ নার’- এই দু‘আটি আল্লাহর নিকট করছ না? রাবী বলেন, অতঃপর এই দু‘আর ওয়াসীলায় আল্লাহ তা‘আলা উক্ত লোকটিকে রোগ-যন্ত্রণা হতে মুক্তি দেন ও সুস্থ করেন। সুবহানাল্লাহ! আলোচ্য আয়াত ও উল্লেখিত হাদীসসমূহ দ্বারা নিশ্চিতভাবেই প্রমাণিত হচ্ছে নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়া আখিরাত উভয়টিকেই মানুষের জন্য অত্যাবশ্যকীয় বিধায় স্বীয় মুবারক দু‘আর মাধ্যমে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের জন্য দু‘আ করতেন এবং আল্লাহ তা‘আলার বিধান ও মর্জি এ বিষয়ে এমন বলেই তিনি কুরআন মাজীদের দ্বারা তদীয় নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সমস্ত মু’মিনদেরকে দুনিয়ার কল্যাণ, আখিরাতের কল্যাণ ও জাহান্নাম হতে মুক্তির জন্য প্রার্থনা বাক্য শিক্ষা দিয়েছেন। যাতে একটা করতে গিয়ে আর একটা হালকা হয়ে না যায়। সুতরাং এ বিষয়টির উপসংহার করতে গিয়ে ফারসী ভাষায় রচিত আল্লাহর ওয়ালীর কবিতাখানি এখানে যথার্থই প্রণিধানযোগ্য। কবি বলেনঃ نمردانست كه دينا دوست دارد ু اكر دارد برائ دوست دارد (سعدي رح)

এ দুনিয়া আমার প্রকৃত বন্ধু নয়, তবে আমার পরম বন্ধু আল্লাহর কাজ করতে গিয়ে দুনিয়ার সাহায্য নিতে হয়। এজন্য যতটুকু একান্ত প্রয়োজন, হালাল-হারামের সীমার মধ্যে অবস্থান করে ঠিক ততটুকু দুনিয়াদারী করা দূষণীয় নয়। বরং আবশ্যক বটে।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

 সরাসরি

৬৫/২/৩৭. অধ্যায়ঃ
আল্লাহর বাণীঃ প্রকৃতপক্ষে সে কিন্তু ঘোর বিরোধী। (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/২০৪) وَقَالَ عَطَاءٌ النَّسْلُ الْحَيَوَانُ.

‘আতা বলেন, النَّسْلُজানোয়ার।

৪৫২৩
قَبِيْصَةُ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ عَنْ ابْنِ جُرَيْجٍ عَنْ ابْنِ أَبِيْ مُلَيْكَةَ عَنْ عَائِشَةَ تَرْفَعُهُ قَالَ أَبْغَضُ الرِّجَالِ إِلَى اللهِ الْأَلَدُّ الْخَصِمُ.

وَقَالَ عَبْدُ اللهِ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ حَدَّثَنِي ابْنُ جُرَيْجٍ عَنْ ابْنِ أَبِيْ مُلَيْكَةَ عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم

‘আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, আল্লাহ্‌র নিকট অতিশয় ঘৃণিত মানুষ হচ্ছে অতিরিক্ত ঝগড়াটে ব্যক্তি। [২৪৫৭]

‘আবদুল্লাহ বলেন, আমার কাছে সুফ্ইয়ান হাদীস বর্ণনা করেন, সুফ্ইয়ান বলেন, আমার কাছে ইবনু জুরায়জ ইবনু আবূ মুলাইকাহ হতে ‘আয়িশাহ (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে এই মর্মে বর্ণনা করেছেন। (আ.প্র. ৪১৬৫, ই.ফা. ৪১৬৬)

৬৫/২/৩৮. অধ্যায়ঃ
‘তোমরা কি মনে কর যে, তোমরা বেহেশতে চলে যাবে, যদিও এখনও তোমরা তাদের অবস্থা অতিক্রম করনি যারা তোমাদের পূর্বে গত হয়েছে? তাদের উপর পতিত হয়েছিল অর্থ-সংকট ও দুঃখ-ক্লেশ। তারা এমনভাবে ভীত-শিহরিত হয়েছিল যে, রসূল এবং তার সঙ্গে যারা ঈমান এনেছিল তাদের বলতে হয়েছিলঃ কখন আসবে আল্লাহর সাহায্য? হাঁ, আল্লাহর সাহায্য একান্তই কাছে।’’ (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/২১৪)

৪৫২৪
إِبْرَاهِيْمُ بْنُ مُوْسَى أَخْبَرَنَا هِشَامٌ عَنْ ابْنِ جُرَيْجٍ قَالَ سَمِعْتُ ابْنَ أَبِيْ مُلَيْكَةَ يَقُوْلُ قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا {حَتّٰى إِذَا اسْتَيْأَسَ الرُّسُلُ وَظَنُّوْآ أَنَّهُمْ قَدْ كُذِبُوْا} خَفِيْفَةً ذَهَبَ بِهَا هُنَاكَ وَتَلَا : {حَتّٰى يَقُوْلَ الرَّسُوْلُ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مَعَه” مَتٰى نَصْرُ اللهِ أَلَآ إِنَّ نَصْرَ اللهِ قَرِيْبٌ} فَلَقِيْتُ عُرْوَةَ بْنَ الزُّبَيْرِ فَذَكَرْتُ لَهُ ذَلِكَ

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র বাণীঃ এমনকি যখন রসূলগণ নিরাশ হয়ে পড়ল এবং ভাবতে লাগল যে, তাদেরকে মিথ্যা আশ্বাস দেয়া হয়েছে (সূরাহ ইউসুফ ১২/১১০)। তখন ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) এই আয়াতসহ সূরাহ আল-বাকারাহর আয়াতের শরণাপন্ন হন ও তিলাওয়াত করেন, যেমনঃ حَتَّى يَقُولَ الرَّسُولُ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ مَتَى نَصْرُ اللهِ أَلاَ إِنَّ نَصْرَ اللهِ قَرِيبٌ এমনকি রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং তাঁর সঙ্গে ঈমান আনয়নকারীগণ বলে উঠেছিলআল্লাহ্‌র সাহায্য কখন আসবে? হ্যাঁ, হ্যাঁ, আল্লাহ্‌র সাহায্য নিকটেই (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/২১৪)।

৬৫/২/৩৮. অধ্যায়ঃ
‘তোমরা কি মনে কর যে, তোমরা বেহেশতে চলে যাবে, যদিও এখনও তোমরা তাদের অবস্থা অতিক্রম করনি যারা তোমাদের পূর্বে গত হয়েছে? তাদের উপর পতিত হয়েছিল অর্থ-সংকট ও দুঃখ-ক্লেশ। তারা এমনভাবে ভীত-শিহরিত হয়েছিল যে, রসূল এবং তার সঙ্গে যারা ঈমান এনেছিল তাদের বলতে হয়েছিলঃ কখন আসবে আল্লাহর সাহায্য? হাঁ, আল্লাহর সাহায্য একান্তই কাছে।’’ (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/২১৪)

৬৫/২/৩৯. অধ্যায়ঃ
মহান আল্লাহর বাণীঃ তোমাদের স্ত্রীরা হল তোমাদের শস্যক্ষেত্র। যেভাবে ইচ্ছা তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে গমন করতে পার। তবে তোমরা নিজেদের জন্য কিছু আগামী দিনের ব্যবস্থা করবে এবং আল্লাহ্কে ভয় করবে। আর জেনে রেখ যে, আল্লাহর সঙ্গে তোমাদের সাক্ষাৎ হবেই এবং মু’মিনদের সুসংবাদ দাও। (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/২২৩)

৪৫২৬
إِسْحَاقُ أَخْبَرَنَا النَّضْرُ بْنُ شُمَيْلٍ أَخْبَرَنَا ابْنُ عَوْنٍ عَنْ نَافِعٍ قَالَ كَانَ ابْنُ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا إِذَا قَرَأَ الْقُرْآنَ لَمْ يَتَكَلَّمْ حَتَّى يَفْرُغَ مِنْهُ فَأَخَذْتُ عَلَيْهِ يَوْمًا فَقَرَأَ سُوْرَةَ الْبَقَرَةِ حَتَّى انْتَهَى إِلَى مَكَانٍ قَالَ تَدْرِيْ فِيْمَ أُنْزِلَتْ قُلْتُ لَا قَالَ أُنْزِلَتْ فِيْ كَذَا وَكَذَا ثُمَّ مَضَى

নাফি‘ (রহ.) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ইবনু ‘উমার (রাঃ) যখন কুরআন তিলাওয়াত করতেন তখন কুরআন তিলাওয়াত হতে অবসর না হয়ে কোন কথা বলতেন না। একদা আমি সূরাহ আল-বাকারাহ পাঠরত অবস্থায় তাঁকে পেলাম। পড়তে পড়তে এক স্থানে তিনি পৌঁছলেন। তখন তিনি বললেন, তুমি জান, কী ব্যাপারে এ আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে? আমি বললাম, না। তিনি তখন বললেন, অমুক অমুক ব্যাপারে আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। তারপর আবার পাঠে অগ্রসর হলেন। [৪৫২৭] (আ.প্র. ৪১৬৭, ই.ফা. ৪১৬৮)

৬৫/২/৩৯. অধ্যায়ঃ
মহান আল্লাহর বাণীঃ তোমাদের স্ত্রীরা হল তোমাদের শস্যক্ষেত্র। যেভাবে ইচ্ছা তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে গমন করতে পার। তবে তোমরা নিজেদের জন্য কিছু আগামী দিনের ব্যবস্থা করবে এবং আল্লাহ্কে ভয় করবে। আর জেনে রেখ যে, আল্লাহর সঙ্গে তোমাদের সাক্ষাৎ হবেই এবং মু’মিনদের সুসংবাদ দাও। (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/২২৩)

৪৫২৭
وَعَنْ عَبْدِ الصَّمَدِ حَدَّثَنِيْ أَبِيْ حَدَّثَنِيْ أَيُّوْبُ عَنْ نَافِعٍ عَنْ ابْنِ عُمَرَ {فَأْتُوْا حَرْثَكُمْ أَنّٰى شِئْتُم} قَالَ يَأْتِيْهَا فِيْ رَوَاهُ مُحَمَّدُ بْنُ يَحْيَى بْنِ سَعِيْدٍ عَنْ أَبِيْهِ عَنْ عُبَيْدِ اللهِ عَنْ نَافِعٍ عَنْ ابْنِ عُمَرَ.

‘আবদুস সামাদ থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমার কাছে হাদীস বর্ণনা করেন, আমার পিতা, তিনি বলেন, আমার কাছে হাদীস বর্ণনা করেন আইয়ুব, তিনি নাফি‘ থেকে আর নাফি‘ ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে। فَأْتُوا حَرْثَكُمْ أَنَّى شِئْتُمْ “অতএব তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছা গমন করতে পার” (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/২২৩)। রাবী বলেন, স্ত্রীলোকের পশ্চাৎদিক দিয়ে সহবাস করতে পারে। মুহাম্মাদ ইবনু ইয়াহ্ইয়া ইবনু সা‘ঈদ তাঁর পিতা থেকে, তিনি ‘উবাইদুল্লাহ থেকে, তিনি নাফি‘ থেকে এবং তিনি ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। [৪৫২৬] (আ.প্র. ৪১৬৭, ই.ফা. ৪১৬৮)

৬৫/২/২৮. অধ্যায়ঃ
মহান আল্লাহর বাণীঃ

৪৫২৮
أَبُوْ نُعَيْمٍ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ عَنْ ابْنِ الْمُنْكَدِرِ سَمِعْتُ جَابِرًا رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كَانَتْ الْيَهُوْدُ تَقُوْلُ إِذَا جَامَعَهَا مِنْ وَرَائِهَا جَاءَ الْوَلَدُ أَحْوَلَ فَنَزَلَتْ {نِسَآؤُكُمْ حَرْثٌ لَكُمْ فَأْتُوْا حَرْثَكُمْ أَنّٰى شِئْتُمْ وَقَدِّمُوْا لِأَنْفُسِكُم}

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ইয়াহূদীরা বলত যে, যদি কেউ স্ত্রীর পেছন দিক থেকে সহবাস করে তাহলে সন্তান টেরা চোখের হয়। তখন (এর প্রতিবাদে) نِسَاؤُكُمْ حَرْثٌ لَكُمْ আয়াত অবতীর্ণ হয়। [মুসলিম ত্বলাক/১৮, হাঃ ১৪৩৫] (আ.প্র. ৪১৬৮, ই.ফা. ৪১৬৯)

৬৫/২/৪০. অধ্যায়ঃ
আল্লাহর বাণীঃ আর যখন তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের তালাক দিয়ে দাও এবং তারা তাদের ‘ইদ্দাত’কাল পূর্ণ করতে থাকে তখন যদি তারা পরস্পর সম্মত হয়ে নিজেদের স্বামীদের বিধিমত বিয়ে করতে চায় তাহলে তোমরা তাদের বাধা দিবে না। (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/২৩২)

৪৫২৯
عُبَيْدُ اللهِ بْنُ سَعِيْدٍ حَدَّثَنَا أَبُوْ عَامِرٍ الْعَقَدِيُّ حَدَّثَنَا عَبَّادُ بْنُ رَاشِدٍ حَدَّثَنَا الْحَسَنُ قَالَ حَدَّثَنِيْ مَعْقِلُ بْنُ يَسَارٍ قَالَ كَانَتْ لِيْ أُخْتٌ تُخْطَبُ إِلَيَّ.

وَقَالَ إِبْرَاهِيْمُ عَنْ يُوْنُسَ عَنِ الْحَسَنِ حَدَّثَنِيْ مَعْقِلُ بْنُ يَسَارٍ ح حَدَّثَنَا أَبُوْ مَعْمَرٍ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَارِثِ حَدَّثَنَا يُوْنُسُ عَنِ الْحَسَنِ أَنَّ أُخْتَ مَعْقِلِ بْنِ يَسَارٍ طَلَّقَهَا زَوْجُهَا فَتَرَكَهَا حَتَّى انْقَضَتْ عِدَّتُهَا فَخَطَبَهَا فَأَبَى مَعْقِلٌ فَنَزَلَتْ {فَلَا تَعْضُلُوْهُنَّ أَنْ يَنْكِحْنَ أَزْوَاجَهُنَّ}.

মা‘কিল ইবনু ইয়াসার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমার এক বোনের বিয়ের পয়গাম আমার নিকট পেশ করা হয়। আবূ ‘আবদুল্লাহ (রহ.) বলেন যে, ইবরাহীম (রহ.) ইউনুস (রহ.) থেকে, তিনি হাসান বসরী (রহ.) থেকে এবং তিনি মা‘কির ইবনু ইয়াসার (রহ.) থেকে বর্ণনা করেছেন।

আবূ মা‘মার (রহ.) ……. হাসান (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, মা‘কিল ইবনু ইয়াসার (রাঃ)-এর বোনকে তার স্বামী তালাক দিয়ে আলাদা করে রাখে। যখন ইদ্দত কাল পূর্ণ হয় তখন তার স্বামী তাকে আবার পয়গাম পাঠায়। মা‘কিল (রাঃ) অমত করে পুনর্বিবাহে তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। فَلاَ تَعْضُلُوهُنَّ أَنْ يَنْكِحْنَ أَزْوَاجَهُنَّ “তখন যদি তারা পরস্পর সম্মত হয়ে নিজেদের স্বামীদের বিধিমত বিয়ে করতে চায় তাহলে তোমরা তাদের বাধা দিবে না” (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/২৩২)। [৫১৩০, ৫৩৩০, ৫৩৩১] (আ.প্র. ৪১৬৯, ই.ফা. ৪১৭০)

৬৫/২/৪১. অধ্যায়ঃ


{وَالَّذِيْنَ يُتَوَفَّوْنَ مِنْكُمْ وَيَذَرُوْنَ أَزْوَاجًا يَّتَرَبَّصْنَ بِأَنْفُسِهِنَّ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَّعَشْرًا ج فَإِذَا بَلَغْنَ أَجَلَهُنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيْمَا فَعَلْنَ فِيْٓ أَنْفُسِهِنَّ بِالْمَعْرُوْفِ ط وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِيْرٌ} يَعْفُوْنَ يَهَبْنَ.

তোমাদের মধ্যে যারা স্ত্রী রেখে মৃত্যুবরণ করে, তাদের স্ত্রীরা চার মাস দশদিন প্রতীক্ষা করবে। তারপর যখন তারা তাদের ‘ইদ্দাতকাল পূর্ণ করে নেবে, তখন বিধিমত তারা নিজেদের ব্যাপারে যা করবে তাতে তোমাদের কোন পাপ নেই। তোমরা যা কর সে সম্বন্ধে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত। (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/২৩৪)

৪৫৩০
أُمَيَّةُ بْنُ بِسْطَامٍ حَدَّثَنَا يَزِيْدُ بْنُ زُرَيْعٍ عَنْ حَبِيْبٍ عَنْ ابْنِ أَبِيْ مُلَيْكَةَ قَالَ ابْنُ الزُّبَيْرِ قُلْتُ لِعُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ {وَالَّذِيْنَ يُتَوَفَّوْنَ مِنْكُمْ وَيَذَرُوْنَ أَزْوَاجًا} قَالَ قَدْ نَسَخَتْهَا الآيَةُ الْأُخْرَى فَلِمَ تَكْتُبُهَا أَوْ تَدَعُهَا قَالَ يَا ابْنَ أَخِيْ لَا أُغَيِّرُ شَيْئًا مِنْهُ مِنْ مَكَانِهِ.

. ‘আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি ‘উসমান ইবনু ‘আফ্ফান (রাঃ)-কে উক্ত আয়াত সম্পর্কে বললাম যে, এ আয়াত তো অন্য আয়াত দ্বারা মানসূখ (রহিত) হয়ে গেছে। অতএব উক্ত আয়াত আপনি মুসহাফে কেন লিখেছেন, (অথবা রাবী বলেন) কেন বর্জন করছেন না, তখন তিনি [‘উসমান (রাঃ)] বললেন, হে ভাতিজা! আমি মুসহাফের স্থান থেকে কোন জিনিস পরিবর্তন করব না। [৪৫৩৬] (আ.প্র. ৪১৭০, ই.ফা. ৪১৭১)

৬৫/২/৪১. অধ্যায়ঃ


৪৫৩১
إِسْحَاقُ حَدَّثَنَا رَوْحٌ حَدَّثَنَا شِبْلٌ عَنْ ابْنِ أَبِيْ نَجِيْحٍ عَنْ مُجَاهِدٍ : {وَالَّذِيْنَ يُتَوَفَّوْنَ مِنْكُمْ وَيَذَرُوْنَ أَزْوَاجًا} قَالَ كَانَتْ هَذِهِ الْعِدَّةُ تَعْتَدُّ عِنْدَ أَهْلِ زَوْجِهَا وَاجِبٌ فَأَنْزَلَ اللهُ : {وَالَّذِيْنَ يُتَوَفَّوْنَ مِنْكُمْ وَيَذَرُوْنَ أَزْوَاجًا ﺻﻠﮯج وَّصِيَّةً لِّأَزْوَاجِهِمْ مَّتَاعًا إِلَى الْحَوْلِ غَيْرَ إِخْرَاجٍ ج فَإِنْ خَرَجْنَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيْ مَا فَعَلْنَ فِيْٓ أَنْفُسِهِنَّ مِنْ مَّعْرُوْفٍ ط وَاللهُ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ}. قَالَ : جَعَلَ اللهُ لَهَا تَمَامَ السَّنَةِ سَبْعَةَ أَشْهُرٍ وَعِشْرِيْنَ لَيْلَةً وَصِيَّةً إِنْ شَاءَتْ سَكَنَتْ فِيْ وَصِيَّتِهَا وَإِنْ شَاءَتْ خَرَجَتْ وَهْوَ قَوْلُ اللهِ تَعَالَى : {غَيْرَ إِخْرَاجٍ فَإِنْ خَرَجْنَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ} فَالْعِدَّةُ كَمَا هِيَ وَاجِبٌ عَلَيْهَا زَعَمَ ذَلِكَ عَنْ مُجَاهِدٍ وَقَالَ عَطَاءٌ قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ نَسَخَتْ هَذِهِ الْآيَةُ عِدَّتَهَا عِنْدَ أَهْلِهَا فَتَعْتَدُّ حَيْثُ شَاءَتْ وَهْوَ قَوْلُ اللهِ تَعَالَى : {غَيْرَ إِخْرَاجٍ}.

قَالَ عَطَاءٌ إِنْ شَاءَتْ اعْتَدَّتْ عِنْدَ أَهْلِهِ وَسَكَنَتْ فِيْ وَصِيَّتِهَا وَإِنْ شَاءَتْ خَرَجَتْ لِقَوْلِ اللهِ تَعَالَى {فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيْمَا فَعَلْنَ} قَالَ عَطَاءٌ ثُمَّ جَاءَ الْمِيْرَاثُ فَنَسَخَ السُّكْنَى فَتَعْتَدُّ حَيْثُ شَاءَتْ وَلَا سُكْنَى لَهَا وَعَنْ مُحَمَّدِ بْنِ يُوْسُفَ حَدَّثَنَا وَرْقَاءُ عَنْ ابْنِ أَبِيْ نَجِيْحٍ عَنْ مُجَاهِدٍ بِهَذَا.

وَعَنْ ابْنِ أَبِيْ نَجِيْحٍ عَنْ عَطَاءٍ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ نَسَخَتْ هَذِهِ الْآيَةُ عِدَّتَهَا فِيْ أَهْلِهَا فَتَعْتَدُّ حَيْثُ شَاءَتْ لِقَوْلِ اللهِ {غَيْرَ إِخْرَاجٍ} نَحْوَهُ.

মুজাহিদ (রহ.) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, وَالَّذِينَ يُتَوَفَّوْنَ مِنْكُمْ وَيَذَرُونَ أَزْوَاجًا আয়াতে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর পরিবারে থেকে ইদ্দত পালন করা ওয়াজিব। আয়াতে উল্লিখিত يَعْفُوْنَ শব্দের অর্থيَهَبْنَ দান করে। অনন্তর আল্লাহ তা‘আলা অবতীর্ণ করেনঃ وَالَّذِينَ يُتَوَفَّوْنَ مِنْكُمْ وَيَذَرُونَ أَزْوَاجًا وَصِيَّةً لِأَزْوَاجِهِمْ مَتَاعًا إِلَى الْحَوْلِ غَيْرَ إِخْرَاجٍ فَإِنْ خَرَجْنَ فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا فَعَلْنَ فِي أَنْفُسِهِنَّ مِنْ مَعْرُوفٍ وَاللهُ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ “আর তোমাদের মধ্যে যারা স্ত্রী রেখে মৃত্যুমুখে পতিত হবে, তারা (মৃত্যুর পূর্বে) স্ত্রীদের ঘর থেকে বের না করে দিয়ে তাদের জন্য এক বছরের ভরণপোষণের অসিয়াত করে যাবে। কিন্তু যদি তারা নিজেরা বেরিয়ে যায় তবে বিধিমত তারা নিজেদের ব্যাপারে যা করবে তাতে তোমাদের কোন পাপ হবে না। আর আল্লাহ হলেন পরাক্রমশালী, মহাবিজ্ঞ” (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/২৪০)। রাবী বলেন, আল্লাহ তা‘আলা স্ত্রীর জন্য পূর্ণ বছর পূর্ণ করার জন্য সাত মাস এবং বিশ রজনী নির্ধারিত করেছেন ওসীয়ত হিসেবে। সে ইচ্ছা করলে তার ওসীয়তে থাকতে পারে, ইচ্ছা করলে বের হয়েও যেতে পারে। এ কথারই ইঙ্গিত করে আল্লাহ্‌র বাণী ঃ غَيْرَ إِخْرَاجٍ فَإِنْ خَرَجْنَ فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْكُمْ মোটকথা যেভাবেই হোক স্ত্রীর উপর ‘ইদ্দত পালন করা ওয়াজিব। মুজাহিদ থেকে এরূপই জানা গেছে। কিন্তু ইমাম ‘আত্বা বলেন যে, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, এই আয়াত স্ত্রীর প্রতি তার স্বামীর বাড়িতে ‘ইদ্দত পালন করার হুকুম রহিত করে দিয়েছে। সুতরাং স্ত্রী যথেচ্ছা ‘ইদ্দত পালন করতে পারে। আল্লাহ্‌র এই বাণীর দলীল বলে ঃ غَيْرَ إِخْرَاجٍ ইমাম ‘আত্বা বলেন, স্ত্রী ইচ্ছা করলে স্বামীর পরিবারে থেকে ‘ইদ্দত পালন করতে পারে এবং তার ওসীয়ত থাকতে পারে অথবা তথা হতে চলেও যেতে পারে। فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيْمَا فَعَلْنَ এর আয়াতের মর্ম মুতাবিক।

ইমাম ‘আত্বা (রহ.) বলেন, তারপর মিরাস বা উত্তরাধিকারের হুকুম فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا فَعَلْنَ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হল। সুতরাং ঘর ও বাসস্থানের নির্দেশ রহিত হয়ে যায়। কাজেই যথেচ্ছা স্ত্রী ‘ইদ্দত পালন করত পারে। আর তার জন্য ঘরের বা বাসস্থানের দাবী অগ্রাহ্য।

মুহাম্মাদ ইবনু ইউসুফ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাদীস বর্ণনা করেন আমার নিকট ওরাকা’ ইবনু আবী নাজীহ্ থেকে আর তিনি মুজাহিদ থেকে এ সম্পর্কে এবং আরও আবূ নাজীহ্ ‘আত্বা থেকে এবং তিনি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, এই আয়াত স্ত্রীর ‘ইদ্দত স্বামীর বাড়িতে পালন করার হুকুম রহিত করে দেয়। সুতরাং স্ত্রী যথেচ্ছা ‘ইদ্দত পালন করতে পারে। আল্লাহ্‌র এই বাণী ঃ غَيْرَ إِخْرَاجٍ এবং অনুরূপ আয়াত এর দলীল অনুসারে। [৫৩৪৪] (আ.প্র. ৪১৭১, ই.ফা. ৪১৭২)

৪৫৩২
حِبَّانُ حَدَّثَنَا عَبْدُ اللهِ أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ عَوْنٍ عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ سِيْرِيْنَ قَالَ جَلَسْتُ إِلَى مَجْلِسٍ فِيْهِ عُظْمٌ مِنَ الْأَنْصَارِ وَفِيْهِمْ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ أَبِيْ لَيْلَى فَذَكَرْتُ حَدِيْثَ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُتْبَةَ فِيْ شَأْنِ سُبَيْعَةَ بِنْتِ الْحَارِثِ فَقَالَ عَبْدُ الرَّحْمَنِ وَلَكِنَّ عَمَّهُ كَانَ لَا يَقُوْلُ ذَلِكَ فَقُلْتُ إِنِّيْ لَجَرِيْءٌ إِنْ كَذَبْتُ عَلَى رَجُلٍ فِيْ جَانِبِ الْكُوْفَةِ وَرَفَعَ صَوْتَهُ قَالَ ثُمَّ خَرَجْتُ فَلَقِيْتُ مَالِكَ بْنَ عَامِرٍ أَوْ مَالِكَ بْنَ عَوْفٍ قُلْتُ كَيْفَ كَانَ قَوْلُ ابْنِ مَسْعُوْدٍ فِي الْمُتَوَفَّى عَنْهَا زَوْجُهَا وَهْيَ حَامِلٌ فَقَالَ قَالَ ابْنُ مَسْعُوْدٍ أَتَجْعَلُوْنَ عَلَيْهَا التَّغْلِيْظَ وَلَا تَجْعَلُوْنَ لَهَا الرُّخْصَةَ لَنَزَلَتْ سُوْرَةُ النِّسَاءِ الْقُصْرَى بَعْدَ الطُّوْلَى.

وَقَالَ أَيُّوْبُ عَنْ مُحَمَّدٍ لَقِيْتُ أَبَا عَطِيَّةَ مَالِكَ بْنَ عَامِرٍ.

মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি এমন একটি মজলিসে উপবিষ্ট ছিলাম যেখানে নেতৃস্থানীয় আনসারদের কতক ছিলেন এবং তাঁদের মাঝে ‘আবদুর রহমান বিন আবূ লাইলা (রহ.)-ও ছিলেন। এরপর সুরাইয়া বিনতে হারিস (রহ.) প্রসঙ্গে বর্ণিত ‘আবদুল্লাহ বিন উত্বা (রহ.)-এর হাদীসটি নিয়ে আলোচনা করলাম, এরপর ‘আবদুর রহমান (রহ.) বললেন, “পক্ষান্তরে তাঁর চাচা এ রকম বলতেন না” অনন্তর আমি বললাম, কূফায় বসবাসরত ব্যক্তিটি সম্পর্কে যদি আমি মিথ্যা বলি তবে আমি হব চরম ধৃষ্ট এবং তিনি তাঁর স্বর উঁচু করলেন, তিনি বললেন, তারপর আমি বের হলাম এবং মালিক বিন ‘আমির (রাঃ) মালিক ইবনু ‘আওফ (রহ.)-এর সঙ্গে আমি বললাম, গর্ভাবস্থায় বিধবা রমণীর ব্যাপারে ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ)-এর মন্তব্য কী ছিল, বললেন যে ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) বলেছেন, তোমরা কি তার উপর কঠোরতা অবলম্বন করছ আর তার জন্য সহজ বিধানটি অবলম্বন করছ না, সংক্ষিপ্ত সূরাহ নাসটি (সূরাহ ত্বালাক) দীর্ঘটি পরে অবতীর্ণ হয়েছে। আইয়ুব (রহ.) মুহাম্মাদ (রহ.) থেকে বর্ণনা করেছেন, আবূ আতিয়াহ মালিক বিন ‘আমির (রহ.)-এর সঙ্গে আমি সাক্ষাৎ করেছিলাম। [৪৯১০] (আ.প্র. ৪১৭২, ই.ফা. ৪১৭৩)

৬৫/২/৪২. অধ্যায়ঃ
‘‘তোমরা সলাতের প্রতি যত্নবান হবে বিশেষত মধ্যবর্তী সলাতের।’’ (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/২৩৮)

৪৫৩৩
عَبْدُ اللهِ بْنُ مُحَمَّدٍ حَدَّثَنَا يَزِيْدُ أَخْبَرَنَا هِشَامٌ عَنْ مُحَمَّدٍ عَنْ عَبِيْدَةَ عَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ح و حَدَّثَنِيْ عَبْدُ الرَّحْمَنِ حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيْدٍ قَالَ حَدَّثَنَا هِشَامٌ قَالَ حَدَّثَنَا مُحَمَّدٌ عَنْ عَبِيْدَةَ عَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ يَوْمَ الْخَنْدَقِ حَبَسُوْنَا عَنْ صَلَاةِ الْوُسْطَى حَتَّى غَابَتْ الشَّمْسُ مَلَا اللهُ قُبُوْرَهُمْ وَبُيُوْتَهُمْ أَوْ أَجْوَافَهُمْ شَكَّ يَحْيَى نَارًا

‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘আবদুর রহমান ……. ‘আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, খন্দক যুদ্ধের দিন কাফিরগণ আমাদেরকে মধ্যবর্তী সলাত থেকে বিরত রাখে এমনকি এ অবস্থায় সূর্য অস্তমিত হয়ে যায়। আল্লাহ তাদের কবর ও তাদের ঘরকে অথবা (রাবীর সন্দেহ) পেটকে আগুন দ্বারা পূর্ণ করুক। [২৯৩১] (আ.প্র. ৪১৭৩, ই.ফা. ৪১৭৪)

৬৫/২/৪৩. অধ্যায়ঃ
‘‘এবং আল্লাহর উদ্দেশে তোমরা বিনীতভাবে দাঁড়াবে।’’ (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/২৩৮)

৪৫৩৪
مُسَدَّدٌ حَدَّثَنَا يَحْيَى عَنْ إِسْمَاعِيْلَ بْنِ أَبِيْ خَالِدٍ عَنِ الْحَارِثِ بْنِ شُبَيْلٍ عَنْ أَبِيْ عَمْرٍو الشَّيْبَانِيِّ عَنْ زَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ قَالَ كُنَّا نَتَكَلَّمُ فِي الصَّلَاةِ يُكَلِّمُ أَحَدُنَا أَخَاهُ فِيْ حَاجَتِهِ حَتَّى نَزَلَتْ هَذِهِ الْآيَةُ {حَافِظُوْا عَلَى الصَّلَوٰتِ وَالصَّلَاةِ الْوُسْطٰى وَقُوْمُوْا لِلهِ قَانِتِيْنَ} فَأُمِرْنَا بِالسُّكُوْتِ

যায়দ ইবনু আরকাম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা সলাতের মধ্যে কথাবার্তা বলতাম আর আমাদের কেউ অন্য ভাইয়ের প্রয়োজন নিয়ে কথা বলতেন। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয় ঃحَافِظُوا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَالصَّلاَةِ الْوُسْطَى وَقُومُوا لِلَّهِ قَانِتِينَ তখন আমাদেরকে চুপ থাকার নির্দেশ দেয়া হয়। [১২০০] (আ.প্র. ৪১৭৪, ই.ফা. ৪১৭৫)

৬৫/২/৪৪. অধ্যায়ঃ
আল্লাহর বাণীঃ

{فَإِنْ خِفْتُمْ فَرِجَالًا أَوْ رُكْبَانًا فَإِذَآ أَمِنْتُمْ فَاذْكُرُوا اللهَ كَمَا عَلَّمَكُمْ مَا لَمْ تَكُوْنُوْا تَعْلَمُوْنَ}

وَقَالَ ابْنُ جُبَيْرٍ : {وَسِعَ كُرْسِيُّهُ} : عِلْمُهُ’ يُقَالُ {بَسْطَةً} زِيَادَةً وَفَضْلًا. {أَفْرِغْ}أَنْزِلْ، {وَلَا يَئُوْدُهُ} : لَا يُثْقِلُهُ، آدَنِيْ : أَثْقَلَنِيْ وَالْآدُ وَالأَيْدُ : الْقُوَّةُ. {السِّنَةُ} : نُعَاسٌ. {لَمْ يَتَسَنَّهْ} : لَمْ يَتَغَيَّرْ. {فَبُهِتَ} :ذَهَبَتْ حُجَّتُهُ. {خَاوِيَةٌ} : لَا أَنِيْسَ فِيْهَا. {عُرُوْشُهَا} أَبْنِيَتُهَا. {السِّنَةُ} : نُعَاسٌ. {نُنْشِرُهَا} : نُخْرِجُهَا. {إِعْصَارٌ} : رِيْحٌ عَاصِفٌ تَهُبُّ مِنَ الْأَرْضِ إِلَى السَّمَاءِ كَعَمُوْدٍ فِيْهِ نَارٌ وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ :{صَلْدًا} لَيْسَ عَلَيْهِ شَيْءٌ وَقَالَ عِكْرِمَةُ {وَابِلٌ}مَطَرٌ شَدِيْدٌ {الطَّلُّ}النَّدَى وَهَذَا مَثَلُ عَمَلِ الْمُؤْمِنِ يَتَسَنَّهْ يَتَغَيَّرْ.

‘‘তবে যদি তোমরা আশঙ্কা কর তবে পদচারী অথবা আরোহী অবস্থায়; যখন তোমরা নিরাপদ বোধ কর তখন আল্লাহ্কে স্মরণ করবে, যেভাবে তিনি তোমাদের শিক্ষা দিয়েছেন যা তোমরা জানতে না।’’ (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/২৩৯)

ইবনু যুবায়র (রাঃ) বলেন, كُرْسِيُّهُ আল্লাহর কুরসীর অর্থ হলঃ عِلْمُهُ তাঁর জ্ঞান। আর بَسْطَةً অতিরিক্ত ও অধিক। أَفْرِغْ অবতীর্ণ কর। يَئُوْدُهُ ভারী ও বোঝা বোধ হয় না তাঁর। যেমন آدَنِيْ أَثْقَلَنِيْ শক্ত ও ভারী করেছে আমাকে। الآدُ وَالأَيْدُ শক্ত ও শক্তি। فَبُهِتَ তার দলীল-প্রমাণ শেষ হয়ে গেছে। خَاوِيَةٌ বিরান, জনশূন্য, عُرُوْشُهَا বুনিয়াদ ও ভিত্তি, السِّنَةُ তন্দ্রা, ঝিমুনি, نُنْشزُهَا আমি খাড়া করছি বা উঠাচ্ছি। إِعْصَارٌ ঝড়ো বাতাস বা ঘূর্ণি বায়ু যা ভূমি থেকে আকাশের দিকে প্রলম্বিত হয় এবং এর মধ্যে আগুন বা লু থাকে। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেছেনঃ صَلْدًا মসৃণ পরিচ্ছ্ন্ন পাথর যার উপর কিছু্ই থাকে না। ‘ইকরামাহ বলেছেনঃ وَابِلٌ মুষলধারে বৃষ্টি। الطَّلُّ শিশির। এ দ্বারা ঈমানদার ব্যক্তির ‘আমালের উদাহরণ দেয়া হয়েছে। يَتَسَنَّهْ বিকৃত বা পরিবর্তিত হয়ে যায়নি।

৪৫৩৫
عَبْدُ اللهِ بْنُ يُوْسُفَ حَدَّثَنَا مَالِكٌ عَنْ نَافِعٍ أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا كَانَ إِذَا سُئِلَ عَنْ صَلَاةِ الْخَوْفِ قَالَ يَتَقَدَّمُ الإِمَامُ وَطَائِفَةٌ مِنْ النَّاسِ فَيُصَلِّيْ بِهِمْ الإِمَامُ رَكْعَةً وَتَكُوْنُ طَائِفَةٌ مِنْهُمْ بَيْنَهُمْ وَبَيْنَ الْعَدُوِّ لَمْ يُصَلُّوْا فَإِذَا صَلَّى الَّذِيْنَ مَعَهُ رَكْعَةً اسْتَأْخَرُوْا مَكَانَ الَّذِيْنَ لَمْ يُصَلُّوْا وَلَا يُسَلِّمُوْنَ وَيَتَقَدَّمُ الَّذِيْنَ لَمْ يُصَلُّوْا فَيُصَلُّوْنَ مَعَهُ رَكْعَةً ثُمَّ يَنْصَرِفُ الإِمَامُ وَقَدْ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ فَيَقُوْمُ كُلُّ وَاحِدٍ مِنْ الطَّائِفَتَيْنِ فَيُصَلُّوْنَ لِأَنْفُسِهِمْ رَكْعَةً بَعْدَ أَنْ يَنْصَرِفَ الإِمَامُ فَيَكُوْنُ كُلُّ وَاحِدٍ مِنْ الطَّائِفَتَيْنِ قَدْ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ فَإِنْ كَانَ خَوْفٌ هُوَ أَشَدَّ مِنْ ذَلِكَ صَلَّوْا رِجَالًا قِيَامًا عَلَى أَقْدَامِهِمْ أَوْ رُكْبَانًا مُسْتَقْبِلِي الْقِبْلَةِ أَوْ غَيْرَ مُسْتَقْبِلِيْهَا قَالَ مَالِكٌ قَالَ نَافِعٌ لَا أُرَى عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ ذَكَرَ ذَلِكَ إِلَّا عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم

নাফি‘ (রহ.) থেকে বর্ণিতঃ

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ)-কে যখন সলাতুল খাওফ (যুদ্ধক্ষেত্রে শত্র“র ভয় থাকা অবস্থায় সলাত) প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হত তখন তিনি বলতেন, ইমাম সামনে যাবেন এবং একদল লোকও জামা‘আতে শামিল হবে। তিনি তাদের সঙ্গে এক রাক‘আত সলাত আদায় করবেন এবং তাদের আর একদল জামা‘আতে শামিল না হয়ে তাদের ও শত্র“র মাঝখানে থেকে যারা সলাত আদায় করেনি তাদের পাহারা দিবে। ইমামের সঙ্গে যারা এক রাক‘আত সলাত আদায় করেছে তারা পেছনে গিয়ে যারা এখনও সলাত আদায় করেনি তাদের স্থানে দাঁড়াবে কিন্তু সালাম ফেরাবে না। যারা সলাত আদায় করেনি তারা আগে বাড়বে এবং ইমামের সঙ্গে এক রাক‘আত আদায় করবে। তারপর ইমাম সলাত হতে নিষ্ক্রান্ত হবেন। কেননা তিনি দু’ রাক‘আত সলাত আদায় করেছেন। এরপর উভয় দল দাঁড়িয়ে নিজে নিজে বাকি এক রাক‘আত ইমামের সলাত শেষে আদায় করে নেবে। তাহলে প্রত্যেক জনেরই দু’ রাক‘আত সলাত আদায় হয়ে যাবে। ভয়-ভীতি এর চেয়েও অধিক হলে নিজে নিজে দাঁড়িয়ে অথবা যানবাহনে আরোহী অবস্থায় কিবলার দিকে মুখ করে বা যেদিকে সম্ভব মুখ করে সলাত আদায় করবে। ইমাম মালিক (রহ.) বলেন, ইমাম নাফি‘ (রহ.) বলেন, আমি অবশ্য মনে করি ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে শুনেই এই হাদীস বর্ণনা করেছেন। [৯৪২] (আ.প্র. ৪১৭৫, ই.ফা. ৪১৭৬)

৬৫/২/৪৫. অধ্যায়ঃ
আর তোমাদের মধ্যে যারা স্ত্রী রেখে মৃত্যুমুখে পতিত হবে, …..(সূরাহ আল-বাকারাহ ২/২৪০)

৪৫৩৬
عَبْدُ اللهِ بْنُ أَبِي الْأَسْوَدِ حَدَّثَنَا حُمَيْدُ بْنُ الْأَسْوَدِ وَيَزِيْدُ بْنُ زُرَيْعٍ قَالَا حَدَّثَنَا حَبِيْبُ بْنُ الشَّهِيْدِ عَنْ ابْنِ أَبِيْ مُلَيْكَةَ قَالَ قَالَ ابْنُ الزُّبَيْرِ قُلْتُ لِعُثْمَانَ هَذِهِ الْآيَةُ الَّتِيْ فِي الْبَقَرَةِ {وَالَّذِيْنَ يُتَوَفَّوْنَ مِنْكُمْ وَيَذَرُوْنَ أَزْوَاجًا} إِلَى قَوْلِهِ {غَيْرَ إِخْرَاجٍ} قَدْ نَسَخَتْهَا الْأُخْرَى فَلِمَ تَكْتُبُهَا قَالَ تَدَعُهَا يَا ابْنَ أَخِيْ لَا أُغَيِّرُ شَيْئًا مِنْهُ مِنْ مَكَانِهِ قَالَ حُمَيْدٌ أَوْ نَحْوَ هَذَا

ইবনু আবূ মুলাইকাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু যুবায়র (রাঃ) বললেন, আমি ‘উসমান (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম যে, সূরাহ আল-বাকারাহর এ আয়াতটি وَالَّذِينَ يُتَوَفَّوْنَ مِنْكُمْ وَيَذَرُونَ أَزْوَاجًا কে তো অন্য একটি আয়াত রহিত করে দিয়েছে। তারপরও আপনি তা কেন লিখছেন? জবাবে ‘উসমান (রাঃ) বললেন, ভ্রাতুষ্পুত্র। আমরা তা যথাস্থানে রেখে দিয়েছি। আপন স্থান থেকে কোন কিছুই আমরা সরিয়ে ফেলিনি। হুমাইদ (রহ.) বললেন, অথবা প্রায় এ রকমই উত্তর দিয়ে দিলেন। [৪৫৩০] (আ.প্র. ৪১৭৬, ই.ফা. ৪১৭৭)

৬৫/২/৪৬. অধ্যায়ঃ
আর স্মরণ কর যখন ইবরাহীম বললঃ হে আমার পালনকর্তা! আমাকে দেখাও কীভাবে তুমি মৃতকে জীবিত কর। (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/২৬০)

৪৫৩৭
أَحْمَدُ بْنُ صَالِحٍ حَدَّثَنَا ابْنُ وَهْبٍ أَخْبَرَنِيْ يُوْنُسُ عَنْ ابْنِ شِهَابٍ عَنْ أَبِيْ سَلَمَةَ وَسَعِيْدٍ عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم نَحْنُ أَحَقُّ بِالشَّكِّ مِنْ إِبْرَاهِيْمَ إِذْ قَالَ {رَبِّ أَرِنِيْ كَيْفَ تُحْيِي الْمَوْتٰى قَالَ أَوَلَمْ تُؤْمِنْ قَالَ بَلٰى وَلٰكِنْ لِيَطْمَئِنَّ قَلْبِيْ}.

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন যে, ইবরাহীম (‘আ.) যখন رَبِّ أَرِنِي كَيْفَ تُحْيِي الْمَوْتَى قَالَ أَوَلَمْ تُؤْمِنْ قَالَ بَلَى وَلَكِنْ لِيَطْمَئِنَّ قَلْبِي হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে দেখাও কেমন করে তুমি মৃতকে জীবিত কর? তখন ইবরাহীম (‘আ.)-এর তুলনায় সন্দেহ করার ব্যাপারে আমিই অগ্রসর ছিলাম । [৩৩৭২] (আ.প্র. ৪১৭৭, ই.ফা. ৪১৭৮)

৬৫/২/৪৭. অধ্যায়ঃ
আল্লাহর বাণীঃ {أَيَوَدُّ أَحَدُكُمْ أَنْ تَكُوْنَ لَه” جَنَّةٌ مِّنْ نَخِيْلٍ وَّأَعْنَابٍ} إِلَى قَوْلِهِ {لَعَلَّكُمْ تَتَفَكَّرُوْنَ}.

‘‘তোমাদের কেউ কি চায় যে, তার একটি খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান থাকবে, যার পাদদেশ দিয়ে নহর প্রবাহিত হবে এবং যাতে সব ধরনের ফলমূল থাকবে, যখন সে বার্ধক্যে উপনীত হবে আর তার থাকবে দুর্বল সন্তান-সন্তুতি, তারপর বয়ে যাবে ঐ বাগানের উপর দিয়ে এক অগ্নিগর্ভ প্রবল ঘূর্ণিঝড়, ফলে বাগানটি ভস্মীভূত হয়ে যাবে। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর নিদর্শনাবলী স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা চিন্তা-ভাবনা করতে পার।’’ (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/২৬৬)

৪৫৩৮
إِبْرَاهِيْمُ أَخْبَرَنَا هِشَامٌ عَنْ ابْنِ جُرَيْجٍ سَمِعْتُ عَبْدَ اللهِ بْنَ أَبِيْ مُلَيْكَةَ يُحَدِّثُ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ وَسَمِعْتُ أَخَاهُ أَبَا بَكْرِ بْنَ أَبِيْ مُلَيْكَةَ يُحَدِّثُ عَنْ عُبَيْدِ بْنِ عُمَيْرٍ قَالَ قَالَ عُمَرُ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ يَوْمًا لِأَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِيْمَ تَرَوْنَ هَذِهِ الْآيَةَ نَزَلَتْ {أَيَوَدُّ أَحَدُكُمْ أَنْ تَكُوْنَ لَه” جَنَّةٌ} قَالُوا اللهُ أَعْلَمُ فَغَضِبَ عُمَرُ فَقَالَ قُوْلُوْا نَعْلَمُ أَوْ لَا نَعْلَمُ فَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ فِيْ نَفْسِيْ مِنْهَا شَيْءٌ يَا أَمِيْرَ الْمُؤْمِنِيْنَ قَالَ عُمَرُ يَا ابْنَ أَخِيْ قُلْ وَلَا تَحْقِرْ نَفْسَكَ قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ ضُرِبَتْ مَثَلًا لِعَمَلٍ قَالَ عُمَرُ أَيُّ عَمَلٍ قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ لِعَمَلٍ قَالَ عُمَرُ لِرَجُلٍ غَنِيٍّ يَعْمَلُ بِطَاعَةِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ ثُمَّ بَعَثَ اللهُ لَهُ الشَّيْطَانَ فَعَمِلَ بِالْمَعَاصِيْ حَتَّى أَغْرَقَ أَعْمَالَهُ

‘উবায়দ ইবনু ‘উমায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

একদা ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সহাবীদের জিজ্ঞেস করলেন যে, أَيَوَدُّ أَحَدُكُمْ أَنْ تَكُونَ لَهُ جَنَّةٌ এ আয়াতটি যে উপলক্ষে অবতীর্ণ হয়েছে, সে ব্যাপারে আপনাদের মতামত কী? তখন তারা বললেন, আল্লাহই জানেন। ‘উমার (রাঃ) এতে রেগে গিয়ে বললেন, বল আমরা জানি অথবা আমরা জানি না। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন! এ ব্যাপারে আমার অন্তরে কিছুটা ধারণা আছে। ‘উমার (রাঃ) বললেন, বৎস! বলে ফেল এবং নিজেকে তুচ্ছ ভেবো না। তখন ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, এটা কর্মের দৃষ্টান্ত হিসেবে পেশ করা হয়েছে। ‘উমার (রাঃ) বললেন, কোন্ কর্মের? ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, একটি কর্মের। ‘উমার (রাঃ) বললেন, এটি উদাহরণ হচ্ছে সেই ধনবান ব্যক্তির, যে মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ্‌র ‘ইবাদাত করতে থাকে, এরপর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর প্রতি শায়ত্বকে প্রেরণ করেন। অতঃপর সে কাজ করে শেষ পর্যন্ত তাঁর সকল সৎকর্ম বরবাদ করে ফেলে। (আ.প্র. ৪১৭৮, ই.ফা. ৪১৭৯)

৬৫/২/৪৮. অধ্যায়ঃ
আল্লাহর বাণীঃ কাকুতি-মিনতি করে তারা মানুষের কাছে ভিক্ষা চায় না। (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/২৭৩)

يُقَالُ : أَلْحَفَ عَلَيَّ، وَأَلَحَّ عَلَيَّ، وَأَحْفَانِيْ بِالْمَسْأَلَةِ فَيُحْفِكُمْ يُجْهِدْكُمْز.

أَلْحَفَ عَلَيَّ، وَأَلَحَّ عَلَيَّ এবং وَأَحْفَانِيْ بِالْمَسْأَلَةِ সবই একই অর্থে ব্যবহৃত হয়। فَيُحْفِكُمْ জোর প্রচেষ্টা চালায়।

৪৫৩৯
ابْنُ أَبِيْ مَرْيَمَ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ قَالَ حَدَّثَنِيْ شَرِيْكُ بْنُ أَبِيْ نَمِرٍ أَنَّ عَطَاءَ بْنَ يَسَارٍ وَعَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ أَبِيْ عَمْرَةَ الْأَنْصَارِيَّ قَالَا سَمِعْنَا أَبَا هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ يَقُوْلُ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم لَيْسَ الْمِسْكِيْنُ الَّذِيْ تَرُدُّهُ التَّمْرَةُ وَالتَّمْرَتَانِ وَلَا اللُّقْمَةُ وَلَا اللُّقْمَتَانِ إِنَّمَا الْمِسْكِيْنُ الَّذِيْ يَتَعَفَّفُ وَاقْرَءُوْا إِنْ شِئْتُمْ يَعْنِيْ قَوْلَهُ {لَا يَسْأَلُوْنَ النَّاسَ إِلْحَافًا}

‘আত্বা ইবনু ইয়াসার এবং আবূ ‘আম্‌র আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তাঁরা উভয়ে বলেন যে, আমরা আবূ হুরাইরাহ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, একটি খেজুর কি দু’টি খেজুর আর এক গ্রাস কি দু’ গ্রাস খাদ্য যাকে দ্বারে দ্বারে ঘোরাতে থাকে সে প্রকৃত মিসকীন নয়। মিসকীন তো সে, যে ভিক্ষা করা থেকে বেঁচে থাকে। তোমরা (মিসকীন অর্থ) জানতে চাইলে আল্লাহ্‌র বাণী পাঠ করতে পার لاَ يَسْأَلُونَ النَّاسَ إِلْحَافًا । [১৪৭৬] (আ.প্র. ৪১৭৯, ই.ফা. ৪১৮০)

৬৫/২/৪৯. অধ্যায়ঃ
আল্লাহর বাণীঃ অথচ আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয়কে বৈধ এবং সুদকে অবৈধ করেছেন- (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/২৭৫)।

৪৫৪০
عُمَرُ بْنُ حَفْصِ بْنِ غِيَاثٍ حَدَّثَنَا أَبِيْ حَدَّثَنَا الْأَعْمَشُ حَدَّثَنَا مُسْلِمٌ عَنْ مَسْرُوْقٍ عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ لَمَّا نَزَلَتْ الآيَاتُ مِنْ آخِرِ سُوْرَةِ الْبَقَرَةِ فِي الرِّبَا قَرَأَهَا رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَلَى النَّاسِ ثُمَّ حَرَّمَ التِّجَارَةَ فِي الْخَمْرِ.

‘আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, সুদ সম্পর্কে সূরাহ আল-বাকারাহর শেষ আয়াতগুলো যখন অবতীর্ণ হল তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) লোকেদের নিকট তা পাঠ করে শোনালেন। তারপর মদের ব্যবসা নিষিদ্ধ করে দিলেন। [৪৫৯] (আ.প্র. ৪১৮০, ই.ফা. ৪১৮১)

৬৫/২/৫০. অধ্যায়ঃ
আল্লাহর বাণীঃ আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন। (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/২৭৬)

৪৫৪১
بِشْرُ بْنُ خَالِدٍ أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ عَنْ شُعْبَةَ عَنْ سُلَيْمَانَ الْأَعْمَشِ سَمِعْتُ أَبَا الضُّحَى يُحَدِّثُ عَنْ مَسْرُوْقٍ عَنْ عَائِشَةَ أَنَّهَا قَالَتْ لَمَّا أُنْزِلَتْ الْآيَاتُ الْأَوَاخِرُ مِنْ سُوْرَةِ الْبَقَرَةِ خَرَجَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَتَلَاهُنَّ فِي الْمَسْجِدِ فَحَرَّمَ التِّجَارَةَ فِي الْخَمْرِ.

‘আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, সূরাহ আল-বাকারাহর শেষ আয়াতগুলো যখন অবতীর্ণ হল, তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঘর থেকে বের হলেন এবং মাসজিদে লোকেদেরকে তা পড়ে শোনালেন। এরপর মদের ব্যবসা নিষিদ্ধ করে দিলেন। [৪৫৯] (আ.প্র. ৪১৮১, ই.ফা. ৪১৮২)

৬৫/২/৫১. অধ্যায়ঃ
‘‘তারপর যদি তোমরা পরিত্যাগ না কর, তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সঙ্গে যুদ্ধ করতে তৈরি হয়ে যাও’’- (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/২৭৯)।

৪৫৪২
مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ حَدَّثَنَا غُنْدَرٌ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ مَنْصُوْرٍ عَنْ أَبِي الضُّحَى عَنْ مَسْرُوْقٍ عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ لَمَّا أُنْزِلَتْ الآيَاتُ مِنْ آخِرِ سُوْرَةِ الْبَقَرَةِ قَرَأَهُنَّ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم عَلَيْهِمْ فِي الْمَسْجِدِ وَحَرَّمَ التِّجَارَةَ فِي الْخَمْرِ.

‘আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, সূরাহ আল-বাকারাহর শেষ আয়াতগুলো যখন অবতীর্ণ হল, তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মাসজিদে তা পাঠ করে শুনান এবং মদের ব্যবসা নিষিদ্ধ করে দেন। (আ.প্র. ৪১৮২, ই.ফা. ৪১৮৩)

৬৫/২/৫২. অধ্যায়ঃ
আল্লাহর বাণীঃ খাতক (ঋণী) যদি অভাবগ্রস্ত হয় তবে তার সচ্ছলতা আসা পর্যন্ত তাকে অবকাশ দেয়া উচিত। আর যদি তোমরা ক্ষমা করে দাও, তা হবে তোমাদের জন্য অতি উত্তম কাজ, যদি তোমরা জানতে। (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/২৮০)

৪৫৪৩
وَ قَالَ لَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يُوْسُفَ عَنْ سُفْيَانَ عَنْ مَنْصُوْرٍ وَالأَعْمَشِ عَنْ أَبِي الضُّحَى عَنْ مَسْرُوْقٍ عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ لَمَّا أُنْزِلَتْ الآيَاتُ مِنْ آخِرِ سُوْرَةِ الْبَقَرَةِ قَامَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَرَأَهُنَّ عَلَيْنَا ثُمَّ حَرَّمَ التِّجَارَةَ فِي الْخَمْرِ

‘আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, সূরাহ আল-বাকারার শেষ দিকের আয়াতগুলো যখন অবতীর্ণ হল, তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দাঁড়ালেন এবং আমাদের সামনে তা পাঠ করলেন। তারপর মদের ব্যবসা নিষিদ্ধ করে দিলেন। [৪৫৯] (আ.প্র. ৪১৮৩, ই.ফা. ৪১৮৪)

৬৫/২/৫৩. অধ্যায়ঃ
আল্লাহর বাণীঃ আর সেদিনকে ভয় কর, যেদিন তোমরা আল্লাহর কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/২৮১)

৪৫৪৪
قَبِيْصَةُ بْنُ عُقْبَةَ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ عَنْ عَاصِمٍ عَنْ الشَّعْبِيِّ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ آخِرُ آيَةٍ نَزَلَتْ عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم آيَةُ الرِّبَا

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর উপর অবতীর্ণ কৃত শেষ আয়াতটি হল সুদ সম্পর্কিত। (আ.প্র. ৪১৮৪, ই.ফা. ৪১৮৫)

৬৫/২/৫৪. অধ্যায়ঃ
“তোমাদের মনে যা আছে তা তোমরা প্রকাশ কর কিংবা গোপন রাখ আল্লাহ তোমাদের নিকট হতে তার হিসাব নেবেন। তারপর যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করবেন এবং যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেবেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।’’ (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/২৮৪)

৪৫৪৫
مُحَمَّدٌ حَدَّثَنَا النُّفَيْلِيُّ حَدَّثَنَا مِسْكِيْنٌ عَنْ شُعْبَةَ عَنْ خَالِدٍ الْحَذَّاءِ عَنْ مَرْوَانَ الْأَصْفَرِ عَنْ رَجُلٍ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَهْوَ ابْنُ عُمَرَ أَنَّهَا قَدْ نُسِخَتْ {وَإِنْ تُبْدُوْا مَا فِىْٓ أَنْفُسِكُمْ أَو تُخْفُوْهُ} الآيَةَ.

মারওয়ান আল আসফার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সহাবীদের কোন একজন থেকে বর্ণনা করেন, আর তিনি হচ্ছেন ইবনু ‘উমার (রাঃ) যে, وَإِنْ تُبْدُوا مَا فِي أَنْفُسِكُمْ أَوْ تُخْفُوهُ (তোমাদের অন্তরের কথা প্রকাশ কর আর গোপন কর তার হিসাব আল্লাহ তোমাদের থেকে নেবেন) আয়াতটি রহিত হয়ে গেছে। [৪৫৪৬] (আ.প্র. ৪১৮৫, ই.ফা. ৪১৮৬)

৬৫/২/৫৫. অধ্যায়ঃ
আল্লাহর বাণীঃ রসূল ঈমান এনেছেন ঐ সব বিষয়ের উপর যা তাঁর প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে তাঁর পালনকর্তার পক্ষ থেকে এবং মু’মিনরাও ঈমান এনেছে। (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/২৮৫)

وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ : {إِصْرًا} عَهْدًا. وَيُقَالُ : غُفْرَانَكَ مَغْفِرَتَكَ فَاغْفِرْ لَنَا.

ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেন, إِصْرًا অঙ্গীকার বা প্রতিশ্রুতি, غُفْرَانَكَ অর্থ مَغْفِرَتَكَ, আর مَغْفِرَتَكَ অর্থ فَاغْفِرْ لَنَا -তোমার নিকট ক্ষমাপ্রার্থী, অর্থাৎ আমাদের ক্ষমা করুন। (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/২৮৫)

৪৫৪৬
إِسْحَاقُ بْنُ مَنْصُوْرٍ أَخْبَرَنَا رَوْحٌ أَخْبَرَنَا شُعْبَةُ عَنْ خَالِدٍ الْحَذَّاءِ عَنْ مَرْوَانَ الْأَصْفَرِ عَنْ رَجُلٍ مِنْ أَصْحَابِ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ أَحْسِبُهُ ابْنَ عُمَرَ {وَإِنْ تُبْدُوْا مَا فِىْٓ أَنْفُسِكُمْ أَو تُخْفُوْهُ}قَالَ : نَسَخَتْهَا الْآيَةُ الَّتِيْ بَعْدَهَا.

মারওয়ানুল আসফার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

একজন সহাবী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন আর তিনি ধারণা করেন যে, তিনি ইবনু ‘উমার (রাঃ) হবেন। وَإِنْ تُبْدُوا مَا فِي أَنْفُسِكُمْ أَوْ تُخْفُوهُ আয়াতটি মানসুখ হয়ে গেছে। [৪৫৪৫] (আ.প্র. ৪১৮৬, ই.ফা. ৪১৮৭)

FOR MORE CLICK HERE

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]