সহীহ বুখারী শরীফ হাদিস তাফসীর অধ্যায় ১১শ ভাগ হাদিস নং ৪৮০০ – ৪৮২৭

৬৫/৩৪/১.অধ্যায়ঃ
অধ্যায়: আল্লাহ্ তা‘আলার বাণীঃ এমনকি, যখন তাদের অন্তর থেকে ভয় দূর হবে তখন তারা একে অন্যকে বলবে- তোমাদের রব কী বললেন? তারা বলবে, সত্য বলেছেন। তিনিই সমুন্নত, সুমহান। (সূরাহ সাবা ৩৪/২৩)

সূরাহ (৩৪) : সাবা

يُقَالُ {مُعَاجِزِيْنَ} مُسَابِقِيْنَ {بِمُعْجِزِيْنَ} بِفَائِتِيْنَ {مُعَاجِزِيْنَ} مُغَالِبِيْنَ {سَبَقُوْا} فَاتُوْا {لَايُعْجِزُوْنَ} لَا يَفُوْتُوْنَ {يَسْبِقُوْنَا} يُعْجِزُوْنَا وَقَوْلُهُ {بِمُعْجِزِيْنَ} بِفَائِتِيْنَ وَمَعْنَى {مُعَاجِزِيْنَ} مُغَالِبِيْنَ يُرِيْدُ كُلُّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا أَنْ يُظْهِرَ عَجْزَ صَاحِبِهِ {مِعْشَارٌ} عُشْرٌ يُقَالُ {الْأُكُلُ} الثَّمَرُ {بَاعِدْ} وَبَعِّدْ وَاحِدٌ وَقَالَ مُجَاهِدٌ {لَايَعْزُبُ}لَا يَغِيْبُ سَيْلَ {الْعَرِمِ} السُّدُّ مَاءٌ أَحْمَرُ أَرْسَلَهُ اللهُ فِي السُّدِّ فَشَقَّهُ وَهَدَمَهُ وَحَفَرَ الْوَادِيَ فَارْتَفَعَتَا عَنِ الْجَنْبَيْنِ وَغَابَ عَنْهُمَا الْمَاءُ فَيَبِسَتَا وَلَمْ يَكُنْ الْمَاءُ الْأَحْمَرُ مِنْ السُّدِّ وَلَكِنْ كَانَ عَذَابًا أَرْسَلَهُ اللهُ عَلَيْهِمْ مِنْ حَيْثُ شَاءَ

وَقَالَ عَمْرُوْ بْنُ شُرَحْبِيْلَ الْعَرِمُ الْمُسَنَّاةُ بِلَحْنِ أَهْلِ الْيَمَنِ وَقَالَ غَيْرُهُ الْعَرِمُ الْوَادِيْ {السَّابِغَاتُ} الدُّرُوْعُ وَقَالَ مُجَاهِدٌ {يُجَازَى} يُعَاقَبُ {أَعِظُكُمْ بِوَاحِدَةٍ} بِطَاعَةِ اللهِ {مَثْنٰى وَفُرَادٰى} وَاحِدٌ وَاثْنَيْنِ {التَّنَاوُشُ} الرَّدُّ مِنَ الْآخِرَةِ إِلَى الدُّنْيَا {وَبَيْنَ مَا يَشْتَهُوْنَ} مِنْ مَالٍ أَوْ وَلَدٍ أَوْ زَهْرَةٍ {بِأَشْيَاعِهِمْ} بِأَمْثَالِهِمْ وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ كَالْجَوَابِ {كَالْجَوْبَةِ} مِنَ الْأَرْضِ {الْخَمْطُ} الْأَرَاكُ {وَالأَثَلُ} الطَّرْفَاءُ {الْعَرِمُ} الشَّدِيْدُ.

مُعَاجِزِيْنَ প্রতিযোগিতাকারী بِمُعْجِزِيْنَ ব্যর্থকারী। مُعَاجِزِيْنَ বিজয়ী হওয়ার প্রয়াসী। سَبَقُوْا ছুটে গিয়েছে, পরিত্রাণ পেয়েছে। لَايُعْجِزُوْنَ তারা ছুটে যেতে পারবে না, ছাড়া পাবে না। يَسْبِقُوْنَا আমাদের অক্ষম করবে। بِمُعْجِزِيْنَ ব্যর্থকারী। مُعَاجِزِيْنَ পরস্পর বিজয়ী হওয়ার প্রত্যাশী। প্রত্যেকেই তার প্রতিপক্ষের অক্ষমতা প্রকাশ করতে চায়। مِعْشَارٌ এক-দশমাংশ। الْأُكُلُ ফল, بَاعِدْ – بَعِّدْ একই অর্থ, দূরত্ব করে দাও। মুজাহিদ (রহ.) বলেন, لَايَعْزُبُ অদৃশ্য হয় না। الْعَرِمِ বাঁধ, আল্লাহ্ তা‘আলা সে বাঁধের মধ্য দিয়ে লাল পানি প্রবাহিত করে তা ফাটিয়ে ধ্বংস করে দেন এবং একটি উপত্যকা খুদে ফেলেন। ফলে তার দু’পার্শ্ব উঁচু হয়ে তা থেকে পানি সরে পড়ে এবং উভয় পার্শ্ব শুকিয়ে যায়। এ লাল পানি বাঁধ থেকে আসেনি, বরং তা ছিল তাদের প্রতি আল্লাহর প্রেরিত আযাব, যা তিনি যেখান থেকে ইচ্ছে পাঠিয়েছিলেন।

‘আমর ইবনু শুরাহ্বীল (রহ.) বলেন, الْعَرِمُ ইয়ামানবাসীদের ভাষায় কুঁজের মত উঁচু। অন্য হতে বর্ণিত। الْعَرِمُউপত্যকা, السَّابِغَاتُ বর্মসমূহ। মুজাহিদ (রহ.) বলেন, يُجَازَى শাস্তি দেয়া হবে। أَعِظُكُمْ بِوَاحِدَةٍআল্লাহর আনুগত্য। مَثْنَىوَفُرَادَى একা একা এবং দু’ দু’জন। التَّنَاوُشُ পরজগত থেকে দুনিয়ার দিকে ফিরে আসা। وَبَيْنَ مَا يَشْتَهُوْنَ অর্থাৎ সম্পদ, সন্ততি বা জাঁক-জমক। بِأَشْيَاعِهِمْ তাদের মত। ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেন, كَالْجَوْبَةِ যমীনে হাউজ সদৃশ। الْخَمْطُ বিস্বাদ বৃক্ষ। الْأَثَلُ ঝাউ গাছ। الْعَرِمُ কঠিন।

৪৮০০
الْحُمَيْدِيُّ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ حَدَّثَنَا عَمْرٌو قَالَ سَمِعْتُ عِكْرِمَةَ يَقُوْلُ سَمِعْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ يَقُوْلُ إِنَّ نَبِيَّ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِذَا قَضَى اللهُ الْأَمْرَ فِي السَّمَاءِ ضَرَبَتْ الْمَلَائِكَةُ بِأَجْنِحَتِهَا خُضْعَانًا لِقَوْلِهِ كَأَنَّهُ سِلْسِلَةٌ عَلَى صَفْوَانٍ {إِذَا فُزِّعَ عَنْ قُلُوْبِهِمْ قَالُوْا مَاذَا قَالَ رَبُّكُمْ} قَالُوْا لِلَّذِيْ قَالَ الْحَقَّ وَهُوَ الْعَلِيُّ الْكَبِيْرُ فَيَسْمَعُهَا مُسْتَرِقُ السَّمْعِ وَمُسْتَرِقُ السَّمْعِ هَكَذَا بَعْضُهُ فَوْقَ بَعْضٍ وَوَصَفَ سُفْيَانُ بِكَفِّهِ فَحَرَفَهَا وَبَدَّدَ بَيْنَ أَصَابِعِهِ فَيَسْمَعُ الْكَلِمَةَ فَيُلْقِيْهَا إِلَى مَنْ تَحْتَهُ ثُمَّ يُلْقِيْهَا الآخَرُ إِلَى مَنْ تَحْتَهُ حَتَّى يُلْقِيَهَا عَلَى لِسَانِ السَّاحِرِ أَوِ الْكَاهِنِ فَرُبَّمَا أَدْرَكَ الشِّهَابُ قَبْلَ أَنْ يُلْقِيَهَا وَرُبَّمَا أَلْقَاهَا قَبْلَ أَنْ يُدْرِكَهُ فَيَكْذِبُ مَعَهَا مِائَةَ كَذْبَةٍ فَيُقَالُ أَلَيْسَ قَدْ قَالَ لَنَا يَوْمَ كَذَا وَكَذَا كَذَا وَكَذَا فَيُصَدَّقُ بِتِلْكَ الْكَلِمَةِ الَّتِيْ سَمِعَ مِنْ السَّمَاءِ.

‘ইকরিমাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আবূ হুরাইরাহ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা‘আলা যখন আকাশে কোন ফায়সালা করেন তখন মালায়িকাহ আল্লাহ্‌র নির্দেশের প্রতি অতি নম্রভাবে তাদের ডানা ঝাড়তে থাকে; যেন মসৃণ পাথরের উপর শিকলের আওয়াজ। যখন তাদের মনের ভয়-ভীতি দূর হয় তারা (একে অপরকে) জিজ্ঞেস করে, তোমাদের প্রতিপালক কী বলেছেন? তারা বলেন, তিনি যা বলেছেন, সত্যই বলেছেন। তিনি মহান উচ্চ। যে সময়ে লুকোচুরিকারী (শায়ত্বন) তা শোনে, আর লুকোচুরিকারী এরূপ একের ওপর এক। সুফ্ইয়ান তাঁর হাত উপরে উঠিয়ে আঙ্গুলগুলো ফাঁক করে দেখান। তারপর শয়তান কথাগুলো শুনে নেয় এবং প্রথমজন তার নিচের জনকে এবং সে তার নিচের জনকে জানিয়ে দেয়। এমনিভাবে এ খবর দুনিয়ার জাদুকর ও জ্যোতিষের কাছে পৌঁছে দেয়। কোন কোন সময় কথা পৌঁছানোর আগে তার উপর অগ্নিশিখা নিক্ষিপ্ত হয় আবার অগ্নিশিখা নিক্ষিপ্ত হওয়ার আগে সে কথা পৌঁছিয়ে দেয় এবং এর সাথে শত মিথ্যা মিশিয়ে বলে। এরপর লোকেরা বলাবলি করে সে কি অমুক দিন অমুক অমুক কথা আমাদের বলেনি? এবং সেই কথা যা আসমান থেকে শুনে এসেছে তার জন্য সব কথা সত্য বলে মনে করে। [৪৭০১] (আ.প্র. ৪৪৩৬, ই.ফা. ৪৪৩৭)

৬৫/৩৪/২.অধ্যায়ঃ
আল্লাহ্ তা‘আলার বাণীঃ সে তো পরবর্তী কঠিন আযাব সম্পর্কে তোমাদের একজন সতর্ককারী মাত্র। (সূরাহ সাবা ৩৪/৪৬)

৪৮০১
عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللهِ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ خَازِمٍ حَدَّثَنَا الْأَعْمَشُ عَنْ عَمْرِو بْنِ مُرَّةَ عَنْ سَعِيْدِ بْنِ جُبَيْرٍ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ صَعِدَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم الصَّفَا ذَاتَ يَوْمٍ فَقَالَ يَا صَبَاحَاهْ فَاجْتَمَعَتْ إِلَيْهِ قُرَيْشٌ قَالُوْا مَا لَكَ قَالَ أَرَأَيْتُمْ لَوْ أَخْبَرْتُكُمْ أَنَّ الْعَدُوَّ يُصَبِّحُكُمْ أَوْ يُمَسِّيْكُمْ أَمَا كُنْتُمْ تُصَدِّقُوْنِيْ قَالُوْا بَلَى قَالَ فَإِنِّيْ {نَذِيْرٌ لَّكُمْ بَيْنَ يَدَيْ عَذَابٍ شَدِيْدٍ} فَقَالَ أَبُوْ لَهَبٍ تَبًّا لَكَ أَلِهَذَا جَمَعْتَنَا فَأَنْزَلَ اللهُ {تَبَّتْ يَدَآ أَبِيْ لَهَبٍ}.

ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদিন সাফা পাহাড়ে আরোহণ করে ‘ইয়া সাবাহাহ’ বলে সবাইকে ডাক দিলেন। কুরাইশগণ তাঁর কাছে জমায়েত হয়ে বলল, তোমার ব্যাপার কী? তিনি বললেন, তোমরা বল তো, আমি যদি তোমাদের বলি যে, শত্রুবাহিনী সকাল বা সন্ধ্যায় তোমাদের উপর আক্রমণ করতে প্রস্তুত, তবে কি তোমরা আমার এ কথা বিশ্বাস করবে? তারা বলল, নিশ্চয়ই। তিনি বললেন, আমি তোমাদের জন্য এক আসন্ন কঠিন শাস্তি সম্পর্কে ভয় প্রদর্শন করছি। এ কথা শুনে আবূ লাহাব বলল, তোমার ধ্বংস হোক। এই জন্যই কি আমাদেরকে জমায়েত করেছিলে? তখন আল্লাহ্ নাযিল করেন ঃ تَبَّتْ يَدَا أَبِي لَهَبٍ “আবূ লাহাবের হাত দু’টো ধ্বংস হোক।” [১৩৯৪] (আ.প্র. ৪৪৩৭, ই.ফা. ৪৪৩৮)

৬৫/৩৬/১.অধ্যায়ঃ
আল্লাহর বাণীঃ আর সূর্য নিজ গন্তব্য স্থানের দিকে চলতে থাকে। এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ। (সূরাহ ইয়াসীন ৩৬/৩৮)

সূরাহ (৩৫) : মালায়িকাহ (ফাতির)

قَالَ مُجَاهِدٌ {الْقِطْمِيْرُ} لِفَافَةُ النَّوَاةِ {مُثْقَلَةٌ} مُثَقَّلَةٌ وَقَالَ غَيْرُهُ {الْحَرُوْرُ} بِالنَّهَارِ مَعَ الشَّمْسِ وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ الْحَرُوْرُ بِاللَّيْلِ وَالسَّمُوْمُ بِالنَّهَارِ {وَغَرَابِيْبُ أَشَدُّ} سَوَادٍ الْغِرْبِيْبُ الشَّدِيْدُ السَّوَادِ.

মুজাহিদ (রহ.) বলেন, الْقِطْمِيْرُ অর্থ-খেজুরের অাঁটির পর্দা। مُثْقَلَةٌ ভারাক্রান্ত ব্যক্তি। অন্যরা বলেছেন, (আল-হারূর- অর্থ-দিবাভাগে সূর্যের উত্তাপ। ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেছেন, রাতের উত্তাপকে الْحَرُوْرُ এবং দিনের উত্তাপকে السَّمُوْمُ বলা হয়। وَغَرَابِيْبُ أَشَدُّ অধিক কালো।



সূরাহ (৩৬) : ইয়াসীন

وَقَالَ مُجَاهِدٌ {فَعَزَّزْنَا} شَدَّدْنَا {يَا حَسْرَةً عَلَى الْعِبَادِ} كَانَ حَسْرَةً عَلَيْهِمْ اسْتِهْزَاؤُهُمْ بِالرُّسُلِ {أَنْتُدْرِكَالْقَمَرَ} لَا يَسْتُرُ ضَوْءُ أَحَدِهِمَا ضَوْءَ الآخَرِ وَلَا يَنْبَغِيْ لَهُمَا ذَلِكَ {سَابِقُ النَّهَارِ} يَتَطَالَبَانِ حَثِيْثَيْنِ {نَسْلَخُ} نُخْرِجُ أَحَدَهُمَا مِنَ الْآخَرِ وَيَجْرِيْ كُلُّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا {مِنْ مِثْلِهِ} مِنَ الْأَنْعَامِ {فَكِهُوْنَ} مُعْجَبُوْنَ {جُنْدٌ مُحْضَرُوْنَ} عِنْدَ الْحِسَابِ وَيُذْكَرُ عَنْ عِكْرِمَةَ الْمَشْحُوْنِ الْمُوْقَرُ

وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ {طَائِرُكُمْ}مَصَائِبُكُمْ {يَنْسِلُوْنَ} يَخْرُجُوْنَ {مَرْقَدِنَا} مَخْرَجِنَا {أَحْصَيْنَاهُ} حَفِظْنَاهُ {مَكَانَتُهُمْ} وَمَكَانُهُمْ وَاحِدٌ.

মুজাহিদ (রহ.) বলেন, فَعَزَّزْنَا আমি অধিক শক্তি দিলাম। يَا حَسْرَةً عَلَى الْعِبَادِ দুনিয়াতে রাসূলদের সঙ্গে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করার ফলে আখিরাতে তাদের অবস্থা দুঃখময় হবে। أَنْ تُدْرِكَ الْقَمَرَ একটির আলো অন্যটির আলোর উপর কোন প্রভাব ফেলতে পারে না এবং চন্দ্র ও সূর্যের জন্য তা সম্ভব নয়। سَابِقُ النَّهَارِ রাত্র এবং দিন উভয়ই একে অপরের পেছনে অবিরাম গতিতে চলছে। نَسْلَخُ (রাত-দিন) উভয়ের মধ্যে একটিকে আমি অপরটি থেকে সরিয়ে দিই এবং প্রত্যেকেই নিজ নিজ কক্ষপথে সাঁতার কাটে। مِنْ مِثْلِهِ অনুরূপ চতুষ্পদ জন্তু। فَكِهُوْنَ আনন্দিত। جُنْدٌ مُحْضَرُوْنَ হিসাবের সময় তাদের উপস্থিত করা হবে তাদের বাহিনীরূপে। ইকরামাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, الْمَشْحُوْنِবোঝাইকৃত।

ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেন, طَائِرُكُمْ তোমাদের বিপদাপদ। يَنْسِلُوْنَ তারা বেরিয়ে আসবে। مَرْقَدِنَا আমাদের বের হবার স্থান। أَحْصَيْنَاهُ হিফাযাত করেছি আমি প্রতিটি বস্তুকে। مَكَانَتُهُمْ এবং مَكَانُهُمْএকই ; তাদের স্থানে।

৪৮০২
أَبُوْ نُعَيْمٍ حَدَّثَنَا الْأَعْمَشُ عَنْ إِبْرَاهِيْمَ التَّيْمِيِّ عَنْ أَبِيْهِ عَنْ أَبِيْ ذَرٍّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كُنْتُ مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِي الْمَسْجِدِ عِنْدَ غُرُوْبِ الشَّمْسِ فَقَالَ يَا أَبَا ذَرٍّ أَتَدْرِيْ أَيْنَ تَغْرُبُ الشَّمْسُ قُلْتُ اللهُ وَرَسُوْلُهُ أَعْلَمُ قَالَ فَإِنَّهَا تَذْهَبُ حَتَّى تَسْجُدَ تَحْتَ الْعَرْشِ فَذَلِكَ قَوْلُهُ تَعَالَى{وَالشَّمْسُ تَجْرِيْ لِمُسْتَقَرٍّ لَّهَا ذٰلِكَ تَقْدِيْرُ الْعَزِيْزِ الْعَلِيْمِ}.

আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সঙ্গে মাসজিদে ছিলাম। তিনি বললেন, হে আবূ যার! তুমি কি জান সূর্য কোথায় ডুবে? আমি বললাম, আল্লাহ্ এবং তাঁর রসূল সবচেয়ে ভাল জানেন। তিনি বললেন, সূর্য চলে, অবশেষে আরশের নিচে গিয়ে সাজদাহ করে। নিুবর্ণিত وَالشَّمْسُ تَجْرِي لِمُسْتَقَرٍّ لَهَا ذَلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ এ আয়াতের কথাই বর্ণনা করা হয়েছে, অর্থাৎ সূর্য ভ্রমণ করে তার নির্দিষ্ট গন্তব্যের পানে, এ হল পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ। [৩১৯৯] (আ.প্র. ৪৪৩৮, ই.ফা. ৪৪৩৯)

৪৮০৩
الْحُمَيْدِيُّ حَدَّثَنَا وَكِيْعٌ حَدَّثَنَا الْأَعْمَشُ عَنْ إِبْرَاهِيْمَ التَّيْمِيِّ عَنْ أَبِيْهِ عَنْ أَبِيْ ذَرٍّ قَالَ سَأَلْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم عَنْ قَوْلِهِ تَعَالَى {وَالشَّمْسُ تَجْرِيْ لِمُسْتَقَرٍّ لَّهَا} قَالَ مُسْتَقَرُّهَا تَحْتَ الْعَرْشِ.

আবূ যার গিফারী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে আল্লাহ্‌র বাণী ঃ وَالشَّمْسُ تَجْرِي لِمُسْتَقَرٍّ لَهَا সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেছেন, সূর্যের গন্তব্যস্থল আরশের নিচে। [৩১৯৯] (আ.প্র. ৪৪৩৯, ই.ফা. ৪৪৪০)

৬৫/৩৭/১.অধ্যায়ঃ
আল্লাহর বাণীঃ ইউনুস ছিল রসূলদের অন্তর্গত। (সূরাহ সাফ্ফাত ৩৭/১৩৯)

(37) سُوْرَةُ الصَّافَّاتِ

সূরাহ (৩৭) : ওয়াস্সাফফাত

وَقَالَ مُجَاهِدٌ {وَيَقْذِفُوْنَ بِالْغَيْبِ مِنْ مَّكَانٍمبَعِيْدٍ} مِنْ كُلِّ {مَكَانٍ وَّيُقْذَفُوْنَ مِنْ كُلِّ جَانِبٍ} يُرْمَوْنَ {وَاصِبٌ} دَائِمٌ {لَازِبٌ} لَازِمٌ {تَأْتُوْنَنَا عَنِ الْيَمِيْنِ} يَعْنِي الْحَقَّ الْكُفَّارُ تَقُوْلُهُ لِلشَّيْطَانِ {غَوْلٌ} وَجَعُ بَطْنٍ {يُنْزَفُوْنَ} لَا تَذْهَبُ عُقُوْلُهُمْ {قَرِيْنٌ} شَيْطَانٌ {يُهْرَعُوْنَ} كَهَيْئَةِ الْهَرْوَلَةِ {يَزِفُّوْنَ} النَّسَلَانُ فِي الْمَشْيِ {وَبَيْنَ الْجِنَّةِ نَسَبًا} قَالَ كُفَّارُ قُرَيْشٍ الْمَلَائِكَةُ بَنَاتُ اللهِ وَأُمَّهَاتُهُمْ بَنَاتُ سَرَوَاتِ الْجِنِّ وَقَالَ اللهُ تَعَالَى {وَلَقَدْ عَلِمَتِ الْجِنَّةُ إِنَّهُمْ لَمُحْضَرُوْنَ} سَتُحْضَرُ لِلْحِسَابِ

وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ {لَنَحْنُ الصَّافُّوْنَ} الْمَلَائِكَةُ{صِرَاطِ الْجَحِيْمِ} سَوَاءِ الْجَحِيْمِ وَوَسَطِ الْجَحِيْمِ {لَشَوْبًا} يُخْلَطُ طَعَامُهُمْ وَيُسَاطُ بِالْحَمِيْمِ {مَدْحُوْرًا} مَطْرُوْدًا {بَيْضٌ مَّكْنُوْنٌ} اللُّؤْلُؤُ الْمَكْنُوْنُ {وَتَرَكْنَا عَلَيْهِ فِي الْآخِرِيْنَ} يُذْكَرُ بِخَيْرٍ وَيُقَالُ {يَسْتَسْخِرُوْنَ} يَسْخَرُوْنَ{بَعْلًا} رَبًّا.

মুজাহিদ (রহ.) বলেছেন, আল্লাহর বাণীঃ مِنْ مَكَانٍمبَعِيْدٍমানে সকল স্থান থেকে। يُقْذَفُوْنَনিক্ষিপ্ত হবে তাদের প্রতি। وَاصِبٌঅবিরাম বা অব্যাহত। لَازِبٌআঠালো। تَأْتُوْنَنَا عَنِ الْيَمِيْنِতোমরা তো হাক, কল্যাণ এবং সুখ-শান্তির বাণী নিয়ে আমাদের কাছে আসতে, এ কথাগুলো কাফিররা শায়ত্বনকে বলবে। غَوْلٌপেটের ব্যথা। يُنْزَفُوْنَতাদের বুদ্ধি নষ্ট হবে না। قَرِيْنٌশায়ত্বন। يُهْرَعُوْنَদ্রুত পদক্ষেপে চলা। يَزِفُّوْنَদ্রুতগতিতে পথ চলা। بَيْنَ الْجِنَّةِ نَسَبًاকুরাইশ কাফেররা বলত, মালাক আল্লাহর কন্যা এবং তাদের মা জিন নেতাদের কন্যারা। আল্লাহ্ বলেন, وَلَقَدْ عَلِمَتِ الْجِنَّةُ إِنَّهُمْ لَمُحْضَرُوْنَজিনেরা জানে, তাদেরও উপস্থিত করা হবে- তাদের হাজির করা হবে শাস্তির জন্য।

ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেন, لَنَحْنُ الصَّافُّوْنَ‘আমরা তো সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মান’ দ্বারা মালাইকা বোঝানো হয়েছে। صِرَاطِ الْجَحِيْمِজাহান্নামের পথে বা জাহান্নামের মধ্যে। لَشَوْبًاতাদের খাদ্য ফুটন্ত পানি মিশ্রিত। مَدْحُوْرًاবিতাড়িত। بَيْضٌ مَكْنُوْنٌসুরক্ষিত মুক্তা। وَتَرَكْنَا عَلَيْهِ فِي الاٰخِرِيْنَতাদেরকে সম্মানের সঙ্গে স্মরণ করা হবে। يَسْتَسْخِرُوْنَতারা উপহাস করত। بَعْلًا দেবমূর্তি।

৪৮০৪
قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيْدٍ حَدَّثَنَا جَرِيْرٌ عَنِ الْأَعْمَشِ عَنْ أَبِيْ وَائِلٍ عَنْ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَا يَنْبَغِيْ لِأَحَدٍ أَنْ يَكُوْنَ خَيْرًا مِنْ يُوْنُسَ بْنِ مَتَّى

‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ (ইউনুস) ইব্‌নু মাত্তার চেয়ে উত্তম বলে মনে করা কারো জন্য শোভনীয় নয়। [৩৪১২] (আ.প্র. ৪৪৪০, ই.ফা. ৪৪৪১)

৪৮০৫
إِبْرَاهِيْمُ بْنُ الْمُنْذِرِ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ فُلَيْحٍ قَالَ حَدَّثَنِيْ أَبِيْ عَنْ هِلَالِ بْنِ عَلِيٍّ مِنْ بَنِيْ عَامِرِ بْنِ لُؤَيٍّ عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَسَارٍ عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَنْ قَالَ أَنَا خَيْرٌ مِنْ يُوْنُسَ بْنِ مَتَّى فَقَدْ كَذَبَ.

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে বলল, আমি ইউনুস ইব্‌নু মাত্তার চেয়ে উত্তম, সে মিথ্যা বলল। [৩৪১৫] (আ.প্র. ৪৪৪১, ই.ফা. ৪৪৪২)

৬৫/৩৮/১.অধ্যায়ঃ
পরিচ্ছেদ নাই।

৪৮০৬
مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ حَدَّثَنَا غُنْدَرٌ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنِ الْعَوَّامِ قَالَ سَأَلْتُ مُجَاهِدًا عَنْ السَّجْدَةِ فِيْ ص قَالَ سُئِلَ ابْنُ عَبَّاسٍ فَقَالَ {أُوْلَئِكَ الَّذِيْنَ هَدَى اللهُ فَبِهُدَاهُمْ اقْتَدِهْ} وَكَانَ ابْنُ عَبَّاسٍ يَسْجُدُ فِيْهَا.

‘আও্ওয়াম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি মুজাহিদকে সূরাহ সাদ-এর সাজদা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, (এ বিষয়ে) ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি পাঠ করলেন, أُولَئِكَ الَّذِينَ هَدَى اللهُ فَبِهُدَاهُمْ اقْتَدِهْ ‘তাদেরকেই আল্লাহ্ সৎপথে পরিচালিত করেছেন, সুতরাং তাঁদের পথের অনুসরণ কর। ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) এতে সাজদাহ্ করতেন।” [৩৪২১] (আ.প্র. ৪৪৪২, ই.ফা. ৪৪৪৩)

৪৮০৭
مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللهِ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عُبَيْدٍ الطَّنَافِسِيُّ عَنِ الْعَوَّامِ قَالَ سَأَلْتُ مُجَاهِدًا عَنْ سَجْدَةٍ فِيْ ص فَقَالَ سَأَلْتُ ابْنَ عَبَّاسٍ مِنْ أَيْنَ سَجَدْتَ فَقَالَ أَوَ مَا تَقْرَأُ {وَمِنْ ذُرِّيَّتِهٰ دَاو”دَ وَسُلَيْمَانَ أُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ هَدَى اللهُ فَبِهُدَاهُمْ اقْتَدِهْ} فَكَانَ دَاوُدُ مِمَّنْ أُمِرَ نَبِيُّكُمْ صلى الله عليه وسلم أَنْ يَقْتَدِيَ بِهِ فَسَجَدَهَا دَاوُدُ عَلَيْهِ السَّلَام فَسَجَدَهَا رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم

{عُجَابٌ} عَجِيْبٌ {الْقِطُّ}الصَّحِيْفَةُ هُوَ هَا هُنَا صَحِيْفَةُ الْحِسَابِ وَقَالَ مُجَاهِدٌ {فِيْ عِزَّةٍ} مُعَازِّيْنَ {الْمِلَّةِالْاٰخِرَةِ} مِلَّةُ قُرَيْشٍ الاخْتِلَاقُ : الْكَذِبُ {الْأَسْبَابُ} طُرُقُ السَّمَاءِ فِيْ أَبْوَابِهَا قَوْلُهُ {جُنْدٌمَاهُنَالِكَمَهْزُوْمٌ} يَعْنِيْ قُرَيْشًا {أُولٰٓ ئِكَ الْأَحْزَابُ} الْقُرُوْنُ الْمَاضِيَةُ {فَوَاقٍ} رُجُوْعٍ {قِطَّنَا}عَذَابَنَا {اتَّخَذْنَاهُمْ سُخْرِيًّا} أَحَطْنَا بِهِمْ {أَتْرَابٌ} أَمْثَالٌ وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ الْأَيْدُ الْقُوَّةُ فِي الْعِبَادَةِ {الْأَبْصَارُ} الْبَصَرُ فِيْ أَمْرِ اللهِ {حُبَّ الْخَيْرِ عَنْ ذِكْرِ رَبِّي} مِنْ ذِكْرِ {طَفِقَ مَسْحًا} يَمْسَحُ أَعْرَافَ الْخَيْلِ وَعَرَاقِيْبَهَا {الأَصْفَادِ} الْوَثَاقِ.

‘আও্ওয়াম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি মুজাহিদকে সূরাহ সাদ-এর সাজদা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, আমি ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেছিলাম, (এ সূরায়) সাজদা কোত্থেকে? তিনি বললেন, তুমি কি কুরআনের এ আয়াত পড়নি। وَمِنْ ذُرِّيَّتِهِ دَاوُدَ وَسُلَيْمَانَ أُولَئِكَ الَّذِينَ هَدَى اللهُ فَبِهُدَاهُمْ اقْتَدِهْ “আর তার বংশধর দাউদ ও সুলায়মান- তাদেরই আল্লাহ্ সৎপথে পরিচালিত করেছেন, সুতরাং তাঁদের পথের অনুসরণ কর। দাঊদ তাঁদের একজন, তোমাদের নাবীকে যাদের অনুসরণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাই নাবী এ সূরায় সাজ্দাহ করেছেন।

عُجَابٌ অত্যাশ্চর্য। الْقِطُّ লিপি। এখানে صَحِيفَةُ দ্বারা নেক লিপি বোঝানো হয়েছে। মুজাহিদ বলেছেন, فِي عِزَّةٍ ঔদ্ধত্য। الْمِلَّةِ الْآخِرَةِ কুরাইশদের ধর্ম। الاخْتِلاَقُ মিথ্যা। الأَسْبَابُ আকাশের পথসমূহ جُنْدٌ مَا هُنَالِكَ مَهْزُومٌ এ বাহিনীও সে ক্ষেত্রে অবশ্যই পরাজিত হবে অর্থাৎ কুরাইশ সম্প্রদায়। أُولَئِكَ الأَحْزَابُ অতীতকাল। فَوَاقٍ প্রত্যাবর্তন। قِطَّنَا আমাদের শাস্তি। اتَّخَذْنَاهُمْ سُخْرِيًّا আমি তাদের বেষ্টন করে রেখেছি। أَتْرَابٌ সমবয়স্কা। ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, ‘ইবাদাতে শক্তিশালী ব্যক্তি। الأَبْصَارُ আল্লাহ্‌র কাছে সূক্ষ্মদর্শী ব্যক্তি। حُبَّ الْخَيْرِ عَنْ ذِكْرِ رَبِّي আল্লাহ্‌র স্মরণ থেকে। طَفِقَ مَسْحًا তিনি ঘোড়াগুলোর পা ও গলায় হাত বুলাতে লাগলেন। الأَصْفَادِ শৃংখল (বাঁধন)। [৩৪২১] (আ.প্র. ৪৪৪৩, ই.ফা. ৪৪৪৪)

৬৫/৩৮/২.অধ্যায়ঃ
আল্লাহর বাণীঃ হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমাকে এমন রাজ্য দান করুন, যা আমি ব্যতীত আর কারও ভাগ্যে যেন না জোটে। নিশ্চয়ই আপনি পরম দাতা। (সূরাহ স-দ ৩৮/৩৫)

৪৮০৮
إِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيْمَ حَدَّثَنَا رَوْحٌ وَمُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ عَنْ شُعْبَةَ عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ زِيَادٍ عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِنَّ عِفْرِيْتًا مِنَ الْجِنِّ تَفَلَّتَ عَلَيَّ الْبَارِحَةَ أَوْ كَلِمَةً نَحْوَهَا لِيَقْطَعَ عَلَيَّ الصَّلَاةَ فَأَمْكَنَنِي اللهُ مِنْهُ وَأَرَدْتُ أَنْ أَرْبِطَهُ إِلَى سَارِيَةٍ مِنْ سَوَارِي الْمَسْجِدِ حَتَّى تُصْبِحُوْا وَتَنْظُرُوْا إِلَيْهِ كُلُّكُمْ فَذَكَرْتُ قَوْلَ أَخِيْ سُلَيْمَانَ {رَبِّ هَبْ لِيْ مُلْكًا لَّا يَنْبَغِيْ لِأَحَدٍ مِّنْمبَعْدِي} قَالَ رَوْحٌ فَرَدَّهُ خَاسِئًا.

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, গতরাতে অবাধ্য জিনের একটি দৈত্য আমার কাছে এসেছিল অথবা এ ধরনের কিছু কথা তিনি বললেন, আমার সলাত নষ্ট করার উদ্দেশে। তখন আল্লাহ্ আমাকে তার উপর আধিপত্য দিলেন। আমি ইচ্ছা করলাম, মসজিদের খুঁটিগুলোর একটির সঙ্গে ওকে বেঁধে রাখতে, যাতে ভোরে তোমরা সকলে ওটা দেখতে পাও। তখন আমার ভাই সুলায়মান (‘আ.)-এর দু‘আ স্মরণ হল, رَبِّ هَبْ لِي مُلْكًا لاَ يَنْبَغِي لِأَحَدٍ مِنْ بَعْدِي “হে আমার প্রতিপালক! আমাকে দান কর এমন এক রাজ্য যার অধিকারী আমি ব্যতীত আর কেউ না হয়।” রাবী রাওহ্ বলেন, এরপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে অপমান করে তাড়িয়ে দেন। [৪৬১] (আ.প্র. ৪৪৪৪, ই.ফা. ৪৪৪৫)

৬৫/৩৮/৩.অধ্যায়ঃ
আল্লাহর বাণীঃ আমি নকল লৌকিকতাকারীও নই। (সূরাহ সোয়াদ ৩৮/৮৬)

৪৮০৯
قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيْدٍ حَدَّثَنَا جَرِيْرٌ عَنِ الْأَعْمَشِ عَنْ أَبِي الضُّحَى عَنْ مَسْرُوْقٍ قَالَ دَخَلْنَا عَلَى عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ يَا أَيُّهَا النَّاسُ مَنْ عَلِمَ شَيْئًا فَلْيَقُلْ بِهِ وَمَنْ لَمْ يَعْلَمْ فَلْيَقُلْ اللهُ أَعْلَمُ فَإِنَّ مِنَ الْعِلْمِ أَنْ يَقُوْلَ لِمَا لَا يَعْلَمُ اللهُ أَعْلَمُ قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ لِنَبِيِّهِ {قُلْ مَآ أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ وَّمَآ أَنَا مِنَ الْمُتَكَلِّفِيْنَ} وَسَأُحَدِّثُكُمْ عَنْ الدُّخَانِ إِنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم دَعَا قُرَيْشًا إِلَى الإِسْلَامِ فَأَبْطَئُوْا عَلَيْهِ فَقَالَ اللهُمَّ أَعِنِّيْ عَلَيْهِمْ بِسَبْعٍ كَسَبْعِ يُوْسُفَ فَأَخَذَتْهُمْ سَنَةٌ فَحَصَّتْ كُلَّ شَيْءٍ حَتَّى أَكَلُوا الْمَيْتَةَ وَالْجُلُوْدَ حَتَّى جَعَلَ الرَّجُلُ يَرَى بَيْنَهُ وَبَيْنَ السَّمَاءِ دُخَانًا مِنَ الْجُوْعِ قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ {فَارْتَقِبْ يَوْمَ تَأْتِي السَّمَآءُ بِدُخَانٍ مُّبِيْنٍ لا – يَّغْشَى النَّاسَ ط هٰذَا عَذَابٌ أَلِيْمٌ (11)} قَالَ فَدَعَوْا {رَبَّنَا اكْشِفْ عَنَّا الْعَذَابَ إِنَّا مُؤْمِنُوْنَ – أَنّٰى لَهُمُ الذِّكْرٰى وَقَدْ جَآءَهُمْ رَسُوْلٌ مُّبِيْنٌ لا – ثُمَّ تَوَلَّوْا عَنْهُ وَقَالُوْا مُعَلَّمٌ مَّجْنُوْنٌ ﻣ- إِنَّا كَاشِفُوا الْعَذَابِ قَلِيْلًا إِنَّكُمْ عَآئِدُوْنَ ﻣ} أَفَيُكْشَفُ الْعَذَابُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ قَالَ فَكُشِفَ ثُمَّ عَادُوْا فِيْ كُفْرِهِمْ فَأَخَذَهُمْ اللهُ يَوْمَ بَدْرٍ قَالَ اللهُ تَعَالَى {يَوْمَ نَبْطِشُ الْبَطْشَةَ الْكُبْرٰى ج إِنَّا مُنْتَقِمُوْنَ}.

মাসরূক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ্ ইব্‌নু মাসঊদ (রাঃ)-এর কাছে গেলাম। তিনি বললেন, হে লোকসকল! যে ব্যক্তি কোন বিষয়ে অবগত সে তা বর্ণনা করবে। আর যে না জানে, তার বলা উচিত, আল্লাহ্ই ভাল জানেন। কেননা অজানা বিষয় সম্বন্ধে আল্লাহ্ই ভাল জানেন, এ কথা বলাও জ্ঞানের নিদর্শন। আল্লাহ্ তাঁর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলেছেন, ‘বল, এর (কুরআন বা তাওহীদ প্রচারের) জন্য আমি তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাই না এবং আমি বানোয়াটকারীদের অন্তর্ভুক্ত নই।” (কুরআনে উল্লেখিত) ধূম্র সম্পর্কে শীঘ্র আমি তোমাদের বলব। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কুরাইশদেরকে ইসলামের প্রতি দাওয়াত দিলে তারা (সাড়া দিতে) বিলম্ব করল। তখন তিনি বললেন, হে আল্লাহ্! ইউসুফ (‘আ.)-এর জীনবকালের দুর্ভিক্ষের সাত বছরের মত দুর্ভিক্ষ দ্বারা তুমি আমাকে তাদের বিরুদ্ধে সাহায্য কর। এরপর দুর্ভিক্ষ তাদেরকে ঘিরে ফেলল। শেষ হয়ে গেল সমস্ত কিছু। অবশেষে তারা মৃত জন্তু ও চামড়া খেতে লাগল। তখন তাদের কেউ আকাশের দিকে তাকালে ক্ষুধার জ্বালায় চোখে আকাশ ও তার মধ্যে ধূম্র দেখত। আল্লাহ্ বললেন, “অতএব তুমি সেদিনের অপেক্ষা কর, যেদিন ধূম্র হবে আকাশে, এবং তা ঘিরে ফেলবে সকল মানুষ। এ তো মর্মন্তুদ শাস্তি।” রাবী বলেন, তারপর তারা দু‘আ করল, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের এ আযাব থেকে নাজাত দাও, আমরা ঈমান আনব। তারা কীভাবে নাসীহাত মানবে? তাদের কাছে তো এসেছে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যাদাতা এক রসূল। তারপর তারা মুখ ঘুরিয়ে নিল তাঁর থেকে এবং বলল, সে তো শিখানো কথা বলে, সে তো এক উন্মাদ। আমি তোমাদের শাস্তি কিছুকালের জন্য রহিত করছি। তোমরা তো অবশ্য তোমাদের আগের অবস্থায় ফিরে যাবে। (ইব্‌নু মাসউদ বলেন), ক্বিয়ামাতের দিনও কি তাদের থেকে ‘আযাব রহিত করা হবে? তিনি (ইব্‌নু মাসউদ) বলেন, ‘আযাব সরানো হলে তারা পুনরায় কুফ্রীর দিকে ফিরে গেল। তারপর আল্লাহ্ তা‘আলা বদর যুদ্ধের দিন তাদের পাকড়াও করলেন। আল্লাহ্ বলেন, যেদিন আমি তোমাদের কঠিনভাবে ধরব, সেদিন আমি তোমাদের শাস্তি দেবই। [১০০৭] (আ.প্র. ৪৪৪৫, ই.ফা. ৪৪৪৬)

৬৫/৩৯/১.অধ্যায়ঃ
আল্লাহর বাণীঃ

(39) سُوْرَةُ الزُّمَرِ

সূরাহ (৩৯) : যুমার

وَقَالَ مُجَاهِدٌ {أَفَمَنْ يَتَّقِيْ بِوَجْهِهٰ} يُجَرُّ عَلَى وَجْهِهِ فِي النَّارِ وَهُوَ قَوْلُهُ تَعَالَى {أَفَمَنْ يُّلْقٰى فِي النَّارِ خَيْرٌ أَمْ مَّنْ يَّأْتِيْ اٰمِنًا يَّوْمَ الْقِيَامَةِ غَيْرَ ذِيْ عِوَجٍ} لَبْسٍ وَرَجُلًا سَلَمًا لِرَجُلٍ مَثَلٌ لِآلِهَتِهِمْ الْبَاطِلِ وَالإِلَهِ الْحَقِّ{وَيُخَوِّفُوْنَكَ بِالَّذِيْنَ مِنْ دُوْنِهٰ} بِالأَوْثَانِ {خَوَّلْنَا} أَعْطَيْنَا {وَالَّذِيْ جَآءَ بِالصِّدْقِ} الْقُرْآنُ {وَصَدَّقَ بِهٰ}الْمُؤْمِنُ يَجِيْءُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَقُوْلُ هَذَا الَّذِيْ أَعْطَيْتَنِيْ عَمِلْتُ بِمَا فِيْهِ وَقَالَ غَيْرُهُ {مُتَشَاكِسُوْنَ} الرَّجُلُ الشَّكِسُ الْعَسِرُ لَا يَرْضَى بِالْإِنْصَافِ {وَرَجُلًا سِلْمًا} وَيُقَالُ سَالِمًا صَالِحًا {اشْمَأَزَّتْ} نَفَرَتْ {بِمَفَازَتِهِمْ} مِنَ الْفَوْزِ {حَآفِّيْنَ} أَطَافُوْا بِهِ مُطِيْفِيْنَ {بِحِفَافَيْهِ}بِجَوَانِبِهِ {مُتَشَابِهًا} لَيْسَ مِنَ الْاشْتِبَاهِ وَلَكِنْ يُشْبِهُ بَعْضُهُ بَعْضًا فِي التَّصْدِيْقِ.

মুজাহিদ (রহ.) বলেছেন, أَفَمَنْ يَتَّقِيْ بِوَجْهِهٰঅধোমুখী করে তাদেরকে জাহান্নামের দিকে হেঁচড়িয়ে নেয়া হবে। এ আয়াতটি নিম্নোক্ত আয়াতের মতই, أَفَمَنْ يُّلْقٰى فِي النَّارِ خَيْرٌ أَمْ مَّنْ يَّأْتِيْاٰمِنًا يَّوْمَ الْقِيَامَةِ غَيْرَ ذِيْ عِوَجٍ ‘‘যে ব্যক্তি জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে সে শ্রেষ্ঠ, না যে ক্বিয়ামাতের দিন নিরাপদে থাকবে সে?’’ ذِيْعِوَجٍ সন্দেহপূর্ণ। وَرَجُلًا سَلَمًا لِرَجُلٍ মুশরিকদের বাতিল মাবূদ এবং হক মাবূদের উদাহরণ দেয়া হয়েছে। وَيُخَوِّفُوْنَكَ بِالَّذِيْنَ مِنْ دُوْنِهٰ তারা তোমাকে আল্লাহর পরিবর্তে অপরের ভয় দেখায়। এখানে دُوْنِهٰ মানে প্রতিমা। خَوَّلْنَا আমি দিলাম। وَالَّذِيْ جَآءَ بِالصِّدْقِ এর الصِّدْقِ মানে কুরআন। وَصَدَّقَ بِهِ মু’মিনগণ ক্বিয়ামাতের দিন বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! এই সে কুরআন যা আপনি আমাকে দিয়েছেন এবং আমি তার বিধানসমূহের ওপর ‘আমাল করেছি। مُتَشَاكِسُوْنَ ঐ উদ্ধত পশু প্রকৃতির ব্যক্তি, যে ইনসাফে সন্তুষ্ট নয়। وَرَجُلًا سِلْمًا যোগ্য বা নেককার ; যেমন বলা হয় سَالِمًاصَالِحًا। اشْمَأَزَّتْ পলায়ন করে। بِمَفَازَتِهِمْ নির্গত হয়েছে الْفَوْزِ হতে যার অর্থ; সাফল্যসহ। بِحِفَافَيْهِ তারা ঘুরবে; তাওয়াফ করবে। حَافِّيْنَ চতুষ্পার্শ্বে। مُتَشَابِهًا শব্দটি الاشْتِبَاهِ মাসদার হতে নির্গত নয় : কুরআন সত্যায়নের ব্যাপারে পরস্পর সামঞ্জস্যপূর্ণ।

{قُلْ يٰعِبَادِيَ الَّذِيْنَ أَسْرَفُوْا عَلٰٓى أَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوْا مِنْ رَّحْمَةِ اللهِ ط إِنَّ اللهَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ جَمِيْعًا ط إِنَّه” هُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ}.

হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের উপর যুল্ম করেছ, তোমরা আল্লাহর রাহমাত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমা করবেন সকল গুনাহ। বস্তুতঃ তিনি পরম ক্ষমাশীল, অত্যন্ত দয়ালু।

(সূর আয্-যুমার ৩৯/৫৩)

৪৮১০
إِبْرَاهِيْمُ بْنُ مُوْسَى أَخْبَرَنَا هِشَامُ بْنُ يُوْسُفَ أَنَّ ابْنَ جُرَيْجٍ أَخْبَرَهُمْ قَالَ يَعْلَى إِنَّ سَعِيْدَ بْنَ جُبَيْرٍ أَخْبَرَهُ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ نَاسًا مِنْ أَهْلِ الشِّرْكِ كَانُوْا قَدْ قَتَلُوْا وَأَكْثَرُوْا وَزَنَوْا وَأَكْثَرُوْا فَأَتَوْا مُحَمَّدًا صلى الله عليه وسلم فَقَالُوْا إِنَّ الَّذِيْ تَقُوْلُ وَتَدْعُوْ إِلَيْهِ لَحَسَنٌ لَوْ تُخْبِرُنَا أَنَّ لِمَا عَمِلْنَا كَفَّارَةً {وَالَّذِيْنَ لَا يَدْعُوْنَ مَعَ اللهِ إلٰهًا اٰخَرَ وَلَا يَقْتُلُوْنَ النَّفْسَ الَّتِيْ حَرَّمَ اللهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَلَا يَزْنُوْنَ} وَنَزَلَتْ {قُلْ يٰعِبَادِيَ الَّذِيْنَ أَسْرَفُوْا عَلٰٓى أَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوْا مِنْ رَّحْمَةِ اللهِ ط إِنَّ اللهَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ جَمِيْعًا ط إِنَّه” هُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ}.

ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, মুশরিকদের কিছু লোক বহু হত্যা করে এবং বেশি বেশি ব্যভিচারে লিপ্ত হয়। তারপর তারা মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে এল এবং বলল, আপনি যা বলেন এবং আপনি যেদিকে আহ্বান করেন, তা অতি উত্তম। আমাদের যদি অবগত করতেন, আমরা যা করেছি, তার কাফ্ফারা কী? এর প্রেক্ষাপটে অবতীর্ণ হয় ‘এবং যারা আল্লাহ্‌র সঙ্গে অন্য কোন ইলাহ্কে ডাকে না, আল্লাহ্ যাকে হত্যা করা নিষেধ করেছেন, তাকে না-হক হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। আরো অবতীর্ণ হলঃ “হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অন্যায় করে ফেলেছ, আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না।” [মুসলিম ১/৫৪, হাঃ ১২২] (আ.প্র. ৪৪৪৬, ই.ফা. ৪৪৪৭)

৬৫/৩৯/২.অধ্যায়ঃ
আল্লাহর বাণীঃ আল্লাহর প্রতি যতটুকু মর্যাদা দেয়া উচিত ছিল, তারা তা দেয়নি। (সূরাহ যুমার ৩৯/৬৭)

৪৮১১
آدَمُ حَدَّثَنَا شَيْبَانُ عَنْ مَنْصُوْرٍ عَنْ إِبْرَاهِيْمَ عَنْ عَبِيْدَةَ عَنْ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ جَاءَ حَبْرٌ مِنَ الْأَحْبَارِ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ إِنَّا نَجِدُ أَنَّ اللهَ يَجْعَلُ السَّمَوَاتِ عَلَى إِصْبَعٍ وَالأَرَضِيْنَ عَلَى إِصْبَعٍ وَالشَّجَرَ عَلَى إِصْبَعٍ وَالْمَاءَ وَالثَّرَى عَلَى إِصْبَعٍ وَسَائِرَ الْخَلَائِقِ عَلَى إِصْبَعٍ فَيَقُوْلُ أَنَا الْمَلِكُ فَضَحِكَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم حَتَّى بَدَتْ نَوَاجِذُهُ تَصْدِيْقًا لِقَوْلِ الْحَبْرِ ثُمَّ قَرَأَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم {وَمَا قَدَرُوا اللهَ حَقَّ قَدْرِهٰ}.

‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ইয়াহূদী আলিমদের থেকে এক আলিম রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে এসে বলল, হে মুহাম্মাদ! আমরা (তাওরাতে দেখতে) পাই যে, আল্লাহ্ তা‘আলা আকাশসমূহকে এক আঙ্গুলের উপর স্থাপন করবেন। যমীনকে এক আঙ্গুলের উপর, বৃক্ষসমূহকে এক আঙ্গুলের উপর, পানি এক আঙ্গুলের উপর, মাটি এক আঙ্গুলের উপর এবং অন্যান্য সৃষ্টি জগত এক আঙ্গুলের উপর স্থাপন করবেন। তারপর বলবেন, আমিই বাদশাহ। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তা সমর্থনে হেসে ফেললেন; এমনকি তাঁর সামনের দাঁত প্রকাশ হয়ে পড়ে। এরপর রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পাঠ করলেন, তারা আল্লাহকে যথোচিত মর্যাদা দান করে না। [৭৪১৪, ৭৪১৫, ৭৪৫১, ৭৫১৩; মুসলিম ৫০/হাঃ ২৭৮৬, আহমাদ ৪৩৬৮] (আ.প্র. ৪৪৪৭, ই.ফা. ৪৪৪৮)






[১] আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আক্বীদাহ হলো, আল্লাহর সিফাতকে তাঁর কোন মাখ্লুকের সাথে সাদৃশ্য না করে তাঁর উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। অতএব আল্লাহ তা‘আলাকে নিরাকার বলা বা বিশ্বাস করা ঠিক নয়। যেমন উক্ত হাদীসে আল্লাহর আঙ্গুলের কথা এসেছে এবং পরের অধ্যায়ের আয়াতে তাঁর ডান হাত ও মুঠের কথাও বলা হয়েছে। সর্বপরি আল্লাহ নিরাকার কথাটি কুরআন ও সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। বরং হিন্দু সংস্কৃতি থেকে আমদানীকৃত বটে। যারা আল্লাহকে নিরাকার বলেন, তারা কুরআন ও হাদীসে অনেক প্রমাণের দাবী করলেও তা কখনই পেশ করেন না।



যেহেতু বিষয়টি আকীদাহর সাথে সম্পৃক্ত সেহেতু এ বিষয়টি আরো পরিষ্কার করার জন্য কিছু দলীল উপস্থাপন করা হলোঃ

কুরআন মাজীদের বিভিন্ন আয়াত ও হাদীসে আল্লাহ তা‘আলার চেহারা, হাত, পা, চক্ষু, যাত বা সত্ত্বা, সূরাত বা আকারের কথা উল্লেখ হয়েছে যার অর্থ স্পষ্ট। এর মাধ্যমে আল্লাহর নির্দিষ্ট আকার-আকৃতি আছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। কারণ যিনি নিরাকার তার এ সব কিছু থাকার কথা নয়। তবে হ্যাঁ, আকার আকৃতি কেমন তা তিনি ছাড়া কেউ জানেন না। মু’মিনগণ কিয়ামাতের দিন তাঁকে দেখতে পাবে। জান্নাতের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ নি‘মাত হবে আল্লাহর দীদার। আর দীদারযোগ্য কোন কিছু নিরাকার হতে পারে না। তেমনি ভাবে নিরাকার কখনও দীদারযোগ্য হতে পারে না। আর এমন নয় যে, তিনি এখন নিরাকার তবে কিয়ামতের দিন অবয়ব বিশিষ্ট হয়ে যাবেন। কারণ আল্লাহকে পরিবর্তনশীল মনে করাটাও আকীদাহ বিরোধী। সুতরাং আল্লাহকে নিরাকার বলা শুধু ভ্রান্তই নয় বরং বোকামী ও অজ্ঞতাও বটে। এ ভ্রান্ত ধারণা সালাফদের যুগে ছিলনা। এটা ভারতবর্ষের অধিকাংশ মুসলিমদের আকীদাহ যা হিন্দু ধর্ম থেকে আমদানীকৃত। শিখরাও এ ধারণা পোষণ করে থাকে।

কুরআন মাজীদের যে সকল আয়াতে আল্লাহর অবয়বের প্রমাণ পাওয়া যায় তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেঃ

সূরা স-দের ৭৫ নং আয়াতে আল্লাহর দু’হাতের কথা বলা হয়েছে। সূরা আল-মায়িদাহ ৬৪ নং আয়াতেও হাতের কথা বলা হয়েছে। সূরা আর-রহমান এর ২৭ নং আয়াত, বাকারাহ ১১৫, ২৭২, সূরা রূম এর ৩৮ নং আয়াত, সূরা দাহর ৯ আয়াত ও সূরা লাইল ২০ নং আয়াতে আল্লাহর চেহারার প্রমাণ পাওয়া যায়। সূরা ক্বলম এর ১৬৪ নং আয়াতে আল্লাহর পায়ের গোছার প্রমাণ পাওয়া যায়। সূরা যুমার এর ৬৭ নং আয়াতে আল্লাহর মুষ্ঠির প্রমাণ পাওয়া যায়। মুসনাদ আহমাদ এর বরাতে মিশকাতের হাদীসে আল্লাহর হাতের তালুর প্রমাণ পাওয়া যায়।

যদি আল্লাহ নিরাকার হতেন তাহলে সূরা আ‘রাফের ১৪৩ নং আয়াতে বর্ণিত তূর পাহাড়ে মূসা (আঃ) আল্লাহকে দেখতে চাইতেন না। জবাবে আল্লাহ তা‘আলা বললেন لن تراني অর্থাৎ তুমি আমাকে দেখতে পাবে না। এখানে তিনি বলেননি যে, তুমি আমাকে কখনই দেখতে পাবে না। বরং বললেন, যদি পাহাড় স্থির থাকতে পারে তাহলে তুমি আমাকে দেখতে পাবে।

এমনি ভাবে সূরা আশ-শূরার ৫১ নং আয়াতে বর্ণিত, আল্লাহ যদি নিরাকারই হবেন তাহলে পর্দার আড়ালের কথাই বা কেন বলবেন। এরকম আরো অসংখ্য প্রমাণ থাকার পরেও যারা আল্লাহ তা‘আলাকে নিরাকার সাব্যস্ত করার চেষ্টা করবেন নিঃসন্দেহে তারা উক্ত আয়াতকে অস্বীকারকারীদের দলভুক্ত হবেন।

হাফিয ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ) আল্লাহর হাত ও চেহারার বিষয়ে নিরাকার ও নির্গুণবাদীদের বিভিন্ন গৌণ ও রূপক অর্থের প্রতিবাদে যথাক্রমে ২০টি ও ২৬টি যুক্তি পেশ করেছেন।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

 সরাসরি

৬৫/৩৯/৩.অধ্যায়ঃ
আল্লাহর বাণীঃ

{وَالْأَرْضُ جَمِيْعًا قَبْضَتُه” يَوْمَ الْقِيٰمَةِ وَالسَّمٰوٰتُ مَطْوِيّٰتٌمبِيَمِيْنِهٰط سُبْحٰنَه” وَتَعَالٰى عَمَّا يُشْرِكُوْنَ}.



ক্বিয়ামাতের দিন সমগ্র পৃথিবী থাকবে তাঁর হাতের মুঠোতে এবং গোটা আসমান থাকবে গুটানো অবস্থায় তাঁর ডান হাতে। তিনি পবিত্র-মহান, আর তারা যা শারীক করে তা থেকে তিনি অনেক ঊর্ধ্বে। (সূরাহ যুমার ৩৯/৬৭)

৪৮১২
سَعِيْدُ بْنُ عُفَيْرٍ قَالَ حَدَّثَنِي اللَّيْثُ قَالَ حَدَّثَنِيْ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ خَالِدِ بْنِ مُسَافِرٍ عَنْ ابْنِ شِهَابٍ عَنْ أَبِيْ سَلَمَةَ أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ يَقْبِضُ اللهُ الْأَرْضَ وَيَطْوِي السَّمَوَاتِ بِيَمِيْنِهِ ثُمَّ يَقُوْلُ أَنَا الْمَلِكُ أَيْنَ مُلُوْكُ الْأَرْضِ.

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ্ তা‘আলা যমীনকে নিজ মুষ্ঠিতে নিবেন এবং আকাশমণ্ডলীকে ভাঁজ করে তাঁর ডান হাতে নিবেন, তারপর বলবেন, আমিই মালিক, দুনিয়ার বাদশারা কোথায়? [৬৫১৯, ৭৩৮২, ৭৪১৩; মুসলিম ৫০/হাঃ ২৭৮৭, আহমাদ ৮৮৭২] (আ.প্র. ৪৪৪৮, ই.ফা. ৪৪৪৯)

৬৫/৩৯/৪.অধ্যায়ঃ
আল্লাহর বাণীঃ

ونفخ فِي الصُّوْرِ فَصَعِقَ مَنْ فِي السَّمٰوٰتِ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ إِلَّا مَنْ شَآءَ اللهُ ط ثُمَّ نُفِخَ فِيْهِ أُخْرٰى فَإِذَا هُمْ قِيَامٌ يَّنْظُرُوْنَ}.



আর শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে তখন আল্লাহ যাদের ইচ্ছা করবেন তাদের বাদে আসমান ও যমীনে যারা আছে তারা সবাই সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়বে। অতঃপর শিঙ্গায় আবার ফুঁ দেয়া হবে, তখন হঠাৎ তারা সবাই উঠে দাঁড়াবে এবং তাকাতে থাকবে। (সূরাহ আয্-যুমার ৩৯/৬৮)

৪৮১৩
الْحَسَنُ حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيْلُ بْنُ خَلِيْلٍ أَخْبَرَنَا عَبْدُ الرَّحِيْمِ عَنْ زَكَرِيَّاءَ بْنِ أَبِيْ زَائِدَةَ عَنْ عَامِرٍ عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِنِّيْ أَوَّلُ مَنْ يَرْفَعُ رَأْسَهُ بَعْدَ النَّفْخَةِ الآخِرَةِ فَإِذَا أَنَا بِمُوْسَى مُتَعَلِّقٌ بِالْعَرْشِ فَلَا أَدْرِيْ أَكَذَلِكَ كَانَ أَمْ بَعْدَ النَّفْخَةِ.

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, শেষবার শিঙ্গায় ফুঁক দেয়ার পর যে সবার আগে মাথা উঠাবে, সে আমি। তখন আমি মূসা (‘আ.)-কে দেখব আরশের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায়। আমি জানি না, তিনি আগে থেকেই এভাবে ছিলেন, না শিঙ্গায় ফুঁক দেয়ার পর। [২৪১১] (আ.প্র. ৪৪৪৯, ই.ফা. ৪৪৫০)

৪৮১৪
عُمَرُ بْنُ حَفْصٍ حَدَّثَنَا أَبِيْ قَالَ حَدَّثَنَا الْأَعْمَشُ قَالَ سَمِعْتُ أَبَا صَالِحٍ قَالَ سَمِعْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ بَيْنَ النَّفْخَتَيْنِ أَرْبَعُوْنَ قَالُوْا يَا أَبَا هُرَيْرَةَ أَرْبَعُوْنَ يَوْمًا قَالَ أَبَيْتُ قَالَ أَرْبَعُوْنَ سَنَةً قَالَ أَبَيْتُ قَالَ أَرْبَعُوْنَ شَهْرًا قَالَ أَبَيْتُ وَيَبْلَى كُلُّ شَيْءٍ مِنَ الإِنْسَانِ إِلَّا عَجْبَ ذَنَبِهِ فِيْهِ يُرَكَّبُ الْخَلْقُ.

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, দু’বার ফুঁৎকারের মাঝে ব্যবধান চল্লিশ। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আবূ হুরাইরাহ! চল্লিশ দিন? তিনি বললেন, আমার জানা নেই। তারপর তারা জিজ্ঞেস করল, চল্লিশ বছর? তিনি বললেন, আমার জানা নেই। এরপর তাঁরা আবার জিজ্ঞেস করলেন, তাহলে কি চল্লিশ মাস। তিনি বললেন, আমার জানা নেই এবং বললেন, শিরদাঁড়ার হাড় বাদে মানুষের সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে। এ দ্বারাই সৃষ্টি জগত আবার সৃষ্টি করা হবে। [৪৯৩৫; মুসলিম ৫২/২৭, হাঃ ৯৫৫, আহমাদ ৯৫৩৩] (আ.প্র. ৪৪৫০, ই.ফা. ৪৪৫১)

৬৫/৪০/১.অধ্যায়ঃ
পরিচ্ছেদ নাই।

(40) سُوْرَةُ الْمُؤْمِنِ

সূরাহ (৪০) : আল-মু’মিন (গাফির)

قَالَ مُجَاهِدٌ {حم}مَجَازُهَا مَجَازُ أَوَائِلِ السُّوَرِ وَيُقَالُ بَلْ هُوَ اسْمٌ لِقَوْلِ شُرَيْحِ بْنِ أَبِيْ أَوْفَى الْعَبْسِيِّ

يُذَكِّرُنِيْ حَامِيْمَ وَالرُّمْحُ شَاجِرٌ فَهَلَّا تَلَا حاميم قَبْلَ التَّقَدُّمِ

{الطَّوْلِ} التَّفَضُّلُ {دَاخِرِيْنَ} خَاضِعِيْنَ وَقَالَ مُجَاهِدٌ {إِلَىالنَّجَاةِ} الإِيْمَانُ {لَيْسَلَهُدَعْوَةٌ} يَعْنِي الْوَثَنَ {يُسْجَرُوْنَ} تُوْقَدُ بِهِمْ النَّارُ {تَمْرَحُوْنَ} تَبْطَرُوْنَ وَكَانَ الْعَلَاءُ بْنُ زِيَادٍ يُذَكِّرُ النَّارَ فَقَالَ رَجُلٌ لِمَ تُقَنِّطْ النَّاسَ قَالَ وَأَنَا أَقْدِرُ أَنْ أُقَنِّطَ النَّاسَ وَاللهُ عَزَّ وَجَلَّ يَقُوْلُ {قُلْ يٰعِبَادِيَ الَّذِيْنَ أَسْرَفُوْا عَلٰٓى أَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوْا مِنْ رَّحْمَةِ اللهِ}وَيَقُوْلُ {وَأَنَّ الْمُسْرِفِيْنَ هُمْ أَصْحَابُ النَّارِ} وَلَكِنَّكُمْ تُحِبُّوْنَ أَنْ تُبَشَّرُوْا بِالْجَنَّةِ عَلَى مَسَاوِئِ أَعْمَالِكُمْ وَإِنَّمَا بَعَثَ اللهُ مُحَمَّدًا e مُبَشِّرًا بِالْجَنَّةِ لِمَنْ أَطَاعَهُ وَمُنْذِرًا بِالنَّارِ مَنْ عَصَاهُ.

মুজাহিদ (রহ.) বলেছেন, অন্যান্য সূরাতে حم শব্দটি যেভাবে ব্যবহৃত হয়েছে, এখানেও তা একইভাবেই ব্যবহৃত হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন حم এই সূরার নাম। এর প্রমাণস্বরূপ তাঁরা শুরায়হ্ ইবনু আবূ আওফা আবসীর কবিতাটি পেশ করছেন। তিনি বলেছেনيُذَكِّرُنِيْ حاميم وَالرُّمْحُ شَاجِرٌ فَهَلَّا تَلَا حاميم قَبْلَ التَّقَدُّمِ (জঙ্গে জামালের মধ্যে) বর্শা যখন উভয় দিক থেকে বর্ষিত হচ্ছিল, তখন আমার حَامِيْمَ স্মরণ এল। হায়! যুদ্ধে আসার পুর্বে কেন حم পাঠ করা হল না। الطَّوْلِ সম্মানিত হওয়া। دَاخِرِيْنَ অর্থ خَاضِعِيْنَ লাঞ্ছিত বা বিনয়ী। মুজাহিদ (রহ.) বলেন, إِلَى النَّجَاةِ এর النَّجَاةঅর্থ الإِيْمَانُঈমান। لَيْسَ لَهُ دَعْوَةٌ -এর لَهُ মানে প্রতিমা। يُسْجَرُوْنَ তাদের জন্য আগুন জ্বালানো হবে تَمْرَحُوْنَ তোমরা দম্ভ করতে।

আলা ইবনু যিয়াদ (রহ.) লোকদেরকে জাহান্নামের ভয় দেখাতেন। ফলে এক ব্যক্তি তাকে প্রশ্ন করলেন, আপনি লোকদের নিরাশ করে দিচ্ছেন কেন? তিনি বললেন, আমি কি (আল্লাহর রহমাত থেকে) লোকদের নিরাশ করে দিতে পারি! কেননা, আল্লাহ্ বলেছেন, ‘‘হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ, আল্লাহর রহমাত থেকে নিরাশ হয়ো না।’’ আরও বলেছেন, ‘‘সীমাতিক্রমকারীরাই জাহান্নামের অধিবাসী।’’ বস্তুত তোমরা চাও, পাপাচারে লিপ্ত থাকা সত্ত্বেও তোমাদের জান্নাতের সুসংবাদ দেয়া হোক। কিন্তু তোমরা জেনে রেখ, আল্লাহ্ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ঐ সমস্ত লোকদের সুসংবাদদাতারূপে পাঠিয়েছেন, যারা তাঁর আনুগত্য করে এবং যারা তাঁর নাফরমানী করবে তাদের জন্য তিনি ভয় প্রদর্শনকারী।

৪৮১৫
عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللهِ حَدَّثَنَا الْوَلِيْدُ بْنُ مُسْلِمٍ حَدَّثَنَا الْأَوْزَاعِيُّ قَالَ حَدَّثَنِيْ يَحْيَى بْنُ أَبِيْ كَثِيْرٍ قَالَ حَدَّثَنِيْ مُحَمَّدُ بْنُ إِبْرَاهِيْمَ التَّيْمِيُّ قَالَ حَدَّثَنِيْ عُرْوَةُ بْنُ الزُّبَيْرِ قَالَ قُلْتُ لِعَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ أَخْبِرْنِيْ بِأَشَدِّ مَا صَنَعَ الْمُشْرِكُوْنَ بِرَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ بَيْنَا رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يُصَلِّيْ بِفِنَاءِ الْكَعْبَةِ إِذْ أَقْبَلَ عُقْبَةُ بْنُ أَبِيْ مُعَيْطٍ فَأَخَذَ بِمَنْكِبِ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَلَوَى ثَوْبَهُ فِيْ عُنُقِهِ فَخَنَقَهُ بِهِ خَنْقًا شَدِيْدًا فَأَقْبَلَ أَبُوْ بَكْرٍ فَأَخَذَ بِمَنْكِبِهِ وَدَفَعَ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَقَالَ {أَتَقْتُلُوْنَ رَجُلًا أَنْ يَّقُوْلَ رَبِّـِيَ اللهُ وَقَدْ جَآءَكُمْ بِالْبَيِّنٰتِ مِنْ رَّبِّكُمْ}.

‘উরওয়াহ ইব্‌নু যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ্ ইব্‌নু আম্র ইবনুল আ‘স (রাঃ)-কে বললাম, মুশরিকরা রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সঙ্গে কঠোরতম কী আচরণ করেছে, সে সম্পর্কে আপনি আমাকে বলুন। তিনি বললেন, একদা রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কা‘বার আঙ্গিণায় সলাত আদায় করছিলেন। এমন সময় ‘উকবাহ ইব্‌নু আবূ মু’আইত আসল এবং সে রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ঘাড় ধরল এবং তার কাপড় দিয়ে তাঁর গলায় পেচিয়ে খুব শক্ত করে চিপা দিল। এ সময় আবূ বকর (রাঃ) হাজির হয়ে তার ঘাড় ধরে রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে তাকে সরিয়ে দিলেন এবং বললেন, তোমরা কি এ ব্যক্তিকে এ জন্য হত্যা করবে যে সে বলে ‘আমার রব আল্লাহ্’; অথচ তিনি তোমাদের রবের নিকট থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণ সহকারে তোমাদের কাছে এসেছেন। [৩৬৭৮] (আ.প্র. ৪৪৫১, ই.ফা. ৪৪৫২)

৬৫/৪১/১.অধ্যায়ঃ
আল্লাহর বাণীঃ

(41) سُوْرَةُ حم السَّجْدَةِ

সূরাহ (৪১) : হা-মীম আস্সাজদাহ (ফুসসিলাত)

وَقَالَ طَاوُسٌ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ {اِئْتِيَا طَوْعًا} أَوْ كَرْهًا أَعْطِيَا {قَالَتَا أَتَيْنَا طَآئِعِيْنَ} أَعْطَيْنَا وَقَالَ الْمِنْهَالُ عَنْ سَعِيْدِ بْنِ جُبَيْرٍ قَالَ قَالَ رَجُلٌ لِابْنِ عَبَّاسٍ إِنِّيْ أَجِدُ فِي الْقُرْآنِ أَشْيَاءَ تَخْتَلِفُ عَلَيَّ قَالَ فَلَا أَنْسَابَ بَيْنَهُمْ {يَوْمَئِذٍ وَّلَا يَتَسَآءَلُوْنَ} و {وَأَقْبَلَ بَعْضُهُمْ عَلٰى بَعْضٍ يَّتَسَآءَلُوْنَ وَلَا يَكْتُمُوْنَ اللهَ حَدِيْثًا وَاللهِ رَبِّنَا مَا كُنَّا مُشْرِكِيْنَ} فَقَدْ كَتَمُوْا فِيْ هَذِهِ الْآيَةِ وَقَالَ {أَمِ السَّمَآءُ بَنَاهَا} إِلَى قَوْلِهِ {دَحَاهَا} فَذَكَرَ خَلْقَ السَّمَاءِ قَبْلَ خَلْقِ الْأَرْضِ ثُمَّ قَالَ {أَئِنَّكُمْ لَتَكْفُرُوْنَ بِالَّذِيْ خَلَقَ الْأَرْضَ فِيْ يَوْمَيْنِ} إِلَى قَوْلِهِ {طَآئِعِيْنَ} فَذَكَرَ فِيْ هَذِهِ خَلْقَ الْأَرْضِ قَبْلَ خَلْقِ السَّمَاءِ وَقـَالَ {وَكَانَ اللهُ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا}{عَزِيْزًا حَكِيْمًا}{سَمِيْعًامبَصِيْرًا} فَكَأَنَّهُ كَانَ ثُمَّ مَضَى فَقَالَ فَلَا أَنْسَابَ بَيْنَهُمْ فِي النَّفْخَةِ الْأُوْلَى ثُمَّ يُنْفَخُ فِي الصُّوْرِ فَصَعِقَ مَنْ فِي السَّمَوَاتِ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ إِلَّا مَنْ شَاءَ اللهُ فَلَا أَنْسَابَ بَيْنَهُمْ عِنْدَ ذَلِكَ وَلَا يَتَسَاءَلُوْنَ ثُمَّ فِي النَّفْخَةِ الآخِرَةِ {أَقْبَلَ بَعْضُهُمْ عَلٰى بَعْضٍ يَّتَسَآءَلُوْنَ}وَأَمَّا قَوْلُهُ {مَا كُنَّا مُشْرِكِيْنَ وَلَا يَكْتُمُوْنَ اللهَ} حَدِيْثًا فَإِنَّ اللهَ يَغْفِرُ لِأَهْلِ الإِخْلَاصِ ذُنُوْبَهُمْ وَقَالَ الْمُشْرِكُوْنَ تَعَالَوْا نَقُوْلُ لَمْ نَكُنْ مُشْرِكِيْنَ فَخُتِمَ عَلَى أَفْوَاهِهِمْ فَتَنْطِقُ أَيْدِيْهِمْ فَعِنْدَ ذَلِكَ عُرِفَ أَنَّ اللهَ لَا يُكْتَمُ حَدِيْثًا وَعِنْدَهُ {يَوَدُّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا} الْآيَةَ وَ{خَلَقَ الْأَرْضَ فِيْ يَوْمَيْنِ ثُمَّ خَلَقَ السَّمَآءَ ثُمَّ اسْتَوٰى إِلَى السَّمَآءِ فَسَوَّاهُنَّ فِيْ يَوْمَيْنِ اٰخَرَيْنِ ثُمَّ دَحَا الْأَرْضَ} وَدَحْوُهَا أَنْ أَخْرَجَ مِنْهَا الْمَاءَ وَالْمَرْعَى وَخَلَقَ الْجِبَالَ وَالْجِمَالَ وَالآكَامَ وَمَا بَيْنَهُمَا فِيْ يَوْمَيْنِ آخَرَيْنِ فَذَلِكَ قَوْلُهُ {دَحَاهَا} وَقَوْلُهُ {خَلَقَ الْأَرْضَ فِيْ يَوْمَيْنِ} فَجُعِلَتْ الْأَرْضُ وَمَا فِيْهَا مِنْ شَيْءٍ فِيْ أَرْبَعَةِ أَيَّامٍ وَخُلِقَتْ السَّمَوَاتُ فِيْ يَوْمَيْنِ {وَكَانَ اللهُ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا} سَمَّى نَفْسَهُ ذَلِكَ وَذَلِكَ قَوْلُهُ أَيْ لَمْ يَزَلْ كَذَلِكَ فَإِنَّ اللهَ لَمْ يُرِدْ شَيْئًا إِلَّا أَصَابَ بِهِ الَّذِيْ أَرَادَ فَلَا يَخْتَلِفْ عَلَيْكَ الْقُرْآنُ فَإِنَّ كُلاًّ مِنْ عِنْدِ اللهِ قَالَ أَبُوْ عَبْد اللهِ حَدَّثَنِيْ يُوْسُفُ بْنُ عَدِيٍّ حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللهِ بْنُ عَمْرٍو عَنْ زَيْدِ بْنِ أَبِيْ أُنَيْسَةَ عَنِ الْمِنْهَالِ بِهَذَا.

وَقَالَ مُجَاهِدٌ لَهُمْ أَجْرٌ غَيْرُ مَمْنُوْنٍ مَحْسُوْبٍ أَقْوَاتَهَا أَرْزَاقَهَا فِيْ كُلِّ سَمَاءٍ أَمْرَهَا مِمَّا أَمَرَ بِهِ نَحِسَاتٍ مَشَائِيْمَ وَقَيَّضْنَا لَهُمْ قُرَنَاءَ قَرَنَّاهُمْ بِهِمْ تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمْ الْمَلَائِكَةُ عِنْدَ الْمَوْتِ اهْتَزَّتْ بِالنَّبَاتِ وَرَبَتْ ارْتَفَعَتْ مِنْ أَكْمَامِهَا حِيْنَ تَطْلُعُ لَيَقُوْلَنَّ هَذَا لِيْ أَيْ بِعَمَلِيْ أَنَا مَحْقُوْقٌ بِهَذَا وَقَالَ غَيْرُهُ سَوَاءً لِلسَّائِلِيْنَ قَدَّرَهَا سَوَاءً فَهَدَيْنَاهُمْ دَلَلْنَاهُمْ عَلَى الْخَيْرِ وَالشَّرِّ كَقَوْلِهِ وَهَدَيْنَاهُ النَّجْدَيْنِ وَكَقَوْلِهِ هَدَيْنَاهُ السَّبِيْلَ وَالْهُدَى الَّذِيْ هُوَ الإِرْشَادُ بِمَنْزِلَةِ أَصْعَدْنَاهُ وَمِنْ ذَلِكَ قَوْلُهُ أُوْلَئِكَ الَّذِيْنَ هَدَى اللهُ فَبِهُدَاهُمْ اقْتَدِهْ يُوْزَعُوْنَ يُكَفُّوْنَ مِنْ أَكْمَامِهَا قِشْرُ الْكُفُرَّى هِيَ الْكُمُّ وَقَالَ غَيْرُهُ وَيُقَالُ لِلْعِنَبِ إِذَا خَرَجَ أَيْضًا كَافُوْرٌ وَكُفُرَّى وَلِيٌّ حَمِيْمٌ الْقَرِيْبُ مِنْ مَحِيْصٍ حَاصَ عَنْهُ أَيْ حَادَ مِرْيَةٍ وَمُرْيَةٌ وَاحِدٌ أَيْ امْتِرَاءٌ وَقَالَ مُجَاهِدٌ اعْمَلُوْا مَا شِئْتُمْ هِيَ وَعِيْدٌ وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ ادْفَعْ بِالَّتِيْ هِيَ أَحْسَنُ الصَّبْرُ عِنْدَ الْغَضَبِ وَالْعَفْوُ عِنْدَ الإِسَاءَةِ فَإِذَا فَعَلُوْهُ عَصَمَهُمْ اللهُ وَخَضَعَ لَهُمْ عَدُوُّهُمْ كَأَنَّهُ وَلِيٌّ حَمِيْمٌ.



তাউস (রহ.)….ইবনু ‘আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন, ائْتِيَا طَوْعًاأعطيا অর্থাৎ তোমরা উভয় আস; তারা উভয়ে বলল, أَتَيْنَا طَآئِعِيْنَ অর্থাৎ আমরা এলাম। মিনহাল (রহ.) সা‘ঈদ (রহ.) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, জনৈক ব্যক্তি ইবনু ‘আববাস (রাঃ)-কে প্রশ্ন করল, আমি কুরআনে এমন বিষয় পাচ্ছি, যা আমার কাছে পরস্পর বিরোধী মনে হচ্ছে। আল্লাহ্ বলেছেন, যে দিন (যে দিন শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে) সেদিন পরস্পরের মধ্যে আত্মীয়তার বন্ধন থাকবে না এবং একে অপরের খোঁজ খবর নেবে না।’’ আবার বলেছেন, ‘‘তারা একে অপরের সামনা-সামনি হয়ে খোঁজ খবর নেবে।’’ ‘‘তারা আল্লাহ্ থেকে কোন কথাই গোপন করতে পারবে না।’’ (তারা বলবে) ‘‘আল্লাহ আমাদের রব! আমরা মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না।’’ এতে বোঝা যাচ্ছে যে, তারা আল্লাহ্ থেকে নিজেদের মুশরিক হবার ব্যাপারটিকে লুকিয়ে রাখবে। (তোমাদেরকে সৃষ্টি করা কঠিন), না আকাশ সৃষ্টি? তিনিই তা নির্মাণ করেছেন….এরপর পৃথিবীকে করেছেন সুবিস্তৃত’’ পর্যন্ত। এখানে আকাশকে যমীনের পূর্বে সৃষ্টি করার কথা বলেছেন; কিন্তু অন্য এক স্থানে বর্ণিত আছে যে, ‘‘তোমরা কি তাঁকে স্বীকার করবেই যিনি পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন দুই দিনে, আমরা এলাম অনুগত হয়ে।’’ এখানে যমীনকে আকাশের পূর্বে সৃষ্টির কথা উল্লেখ রয়েছে।

আল্লাহ্ বলেছেনঃ {وَكَانَ اللهُ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا}{عَزِيْزًا حَكِيْمًا}{سَمِيْعًامبَصِيْرًا} উপরোক্ত আয়াতসমূহের প্রেক্ষাপটে বোঝা যাচ্ছে যে, উপরোক্ত গুণাবলী প্রথমে আল্লাহর মধ্যে ছিল; কিন্তু এখন নেই। (জনৈক ব্যক্তির এসব প্রশ্ন শুনার পর) ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বললেন, ‘‘যে দিন পরস্পরের মধ্যে আত্মীয়তার বন্ধন থাকবে না।’’

এ আয়াতের সম্পর্ক হল প্রথমবার শিঙ্গায় ফুঁক দেয়ার সঙ্গে। কেননা, ইরশাদ হয়েছে যে, এরপর শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে। ফলে যাদেরকে আল্লাহ্ ইচ্ছে করেন, তারা বাদে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সকলে মূর্ছিত হয়ে পড়বে। এ সময় পরস্পরের মধ্যে আত্মীয়তার বন্ধন থাকবে না এবং একে অন্যের খোঁজ খবর নেবে না। তারপর শেষবারের মত শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়ার পর তারা একে অপরের সামনাসামনি হয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে।

দ্বিতীয় প্রশ্ন সম্পর্কে এক আয়াতে আছে, ‘‘তারা আল্লাহ্ থেকে কোন কথাই গোপন করতে পারে না।’’ অন্য আয়াতে আছে ‘‘মুশরিকগণ বলবে যে, আমরা তো মুশরিক ছিলাম না।’’ এর সমাধান হচ্ছে এই যে, ক্বিয়ামাতের দিন প্রথমে আল্লাহ্ রাববুল আলামীন মুখ্লিস লোকদের গুনাহ্ ক্ষমা করে দেবেন। এ দেখে মুশরিকরা বলবে, আস! আমরাও বলব, (হে আল্লাহ্! আমরাও তো মুশ্রিক ছিলাম না। তখন আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের মুখে মোহর লাগিয়ে দেবেন। তখন তাদের হাত কথা বলবে। এ সময় প্রকাশ পাবে যে, ‘‘তাদের কোন কথাই আল্লাহ্ থেকে গোপন রাখা যাবে না।’’ এবং এ সময়ই কাফিরগণ আকাঙ্ক্ষা করবে (…..হায়! যদি তারা মাটির সঙ্গে মিশে যেত)। তৃতীয় প্রশ্ন সম্বন্ধে সমাধান হচ্ছে এই যে, প্রথমে আল্লাহ্ তা‘আলা দু’দিনে যমীন সৃষ্টি করেছেন। এরপর আসমান সৃষ্টি করেন। তারপর তিনি আকাশের প্রতি মনোযোগ দেন এবং তাকে বিন্যস্ত করেন দু’দিনে। তারপর তিনি যমীনকে বিছিয়ে দিয়েছেন। যমীনকে বিছিয়ে দেয়ার অর্থ হচ্ছে, এর মাঝে পানি ও চারণভূমির বন্দোবস্ত করা, পর্বত-টিলা, উট এবং আসমান ও মধ্যবর্তী সমস্ত কিছু সৃষ্টি করা। এ সবকিছুও তিনি আরো দু’দিনে সৃষ্টি করেন। আল্লাহর বাণীঃ دَحَاهَا -এর মধ্যে এ কথাই বর্ণনা করা হয়েছে : خَلَقَ الْأَرْضَ فِيْ يَوْمَيْنِ ‘এবং তিনি দু’দিনে যমীন সৃষ্টি করেছেন’’ এ কথাও ঠিক; তবে যমীন এবং যত কিছু যমীনের মধ্যে বিদ্যমান আছে এসব তিনি চার দিনে সৃষ্টি করেছেন এবং আকাশমন্ডলী সৃষ্টি করা হয়েছে দু’দিনে।

وَكَانَ اللهُ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا সম্বন্ধে উত্তর এই যে, আল্লাহ্ রাববুল আলামীন নিজেই এ সমস্ত বিশেষণযুক্ত নামের দ্বারা নিজের নামকরণ করেছেন। উল্লিখিত গুণবাচক নামের অর্থ হচ্ছে এই যে, আল্লাহ্ রাববুল ‘আলামীন সর্বদাই এই গুণে গুণান্বিত থাকবেন। কারণ, আল্লাহ্ রাববুল আলামীন যখন কারো প্রতি কিছু করার ইচ্ছে করেন, তখন তিনি তাঁর ইচ্ছে অনুযায়ী করেই থাকেন, সুতরাং কুরআনের আলোচ্য বিষয়ের একটিকে অপরটির বিপরীত সাব্যস্ত করবে না। কেননা, এগুলো সব আল্লাহর পক্ষ হতে অবতীর্ণ হয়েছে। মুজাহিদ (রহ.) বলেছেন ممنون অর্থ গণনাকৃত। أَقْوَاتَهَا তাদের জীবিকা। فِيْ كُلِّ سَمَآءٍ أَمْرَهَا যার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। نَحِسَاتٍ শুভ। وَقَيَّضْنَا لَهُمْ قُرَنَآءَআমি তাদের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম তাদের সহচর। تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمْ الْمَلَآئِكَةُতাদের নিকটবর্তী হয় মালায়িকাহ। আর এ সময়টি হচ্ছে عِنْدَ الْمَوْتِমৃত্যুর সময়। اهْتَزَّتْফলে ফুলে আন্দোলিত হয়ে উঠে। وَرَبَتْ বেড়ে যায় এবং স্ফীত হয়ে উঠে। মুজাহিদ ব্যতীত অন্যেরা বলেছেন, مِنْ أَكْمَامِهَاযখন তা আবরণ হতে বিকশিত হয়। لَيَقُوْلَنَّهَذَالِيْ আমলের ভিত্তিতে এ সমস্ত অনুগ্রহের হকদার আমিই। سَوَآءً لِلسَّآئِلِيْنَআমি সমভাবে নির্ধারণ করেছি। فَهَدَيْنَاهُمْ অর্থাৎ আমি তাদেরকে ভাল-মন্দ সম্বন্ধে পথ বলে দিয়েছি। যেমন, আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেন, ‘‘এবং আমি তাকে দু’টি পথই দেখিয়েছি।’’ অন্যত্র বর্ণিত আছে যে, ‘‘আমি তাকে ভাল পথের নির্দেশ দিয়েছি।’’ الْهُدٰىপথ দেখানো এবং গন্তব্য স্থান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেয়া। এ অর্থেই কুরআনে বর্ণিত আছে যে, ‘‘তাদেরই আল্লাহ্ সৎপথে পরিচালিত করেন। يُوْزَعُوْنَ তাদের আটক রাখা হবে। مِنْ أَكْمَامِهَا অর্থ বাকলের উপরের আবরণ। এটাকে كم ও বলা হয়। وَلِيٌّحَمِيْمٌ নিকটতম বন্ধু। مِنْ مَحِيْصٍ শব্দটি حَاصَعَنْهُ থেকে নির্গত হয়েছে। যার অর্থ হচ্ছে, সে তার থেকে পলায়ন করেছে। مِرْيَةٌ এবং مُرْيَةٌ একার্থবোধক শব্দ, যার অর্থ হচ্ছে সন্দেহ। মুজাহিদ বলেছেন, اعْمَلُوْامَاشِئْتُمْ (তোমাদের যা ইচ্ছে কর) বাক্যটি মূলত সতর্কবাণী হিসেবে এখানে ব্যবহৃত হয়েছে। ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেছেন, بِالَّتِيْ هِيَأَحْسَنُ -এর মর্মার্থ হচ্ছে, রাগের মুহূর্তে ধৈর্যধারণ করা এবং অন্যায় ব্যবহারকে ক্ষমা করে দেয়া। যখন কোন মানুষ ক্ষমা ও ধৈর্যধারণ করে তখন আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে হেফাজত করেন এবং তার শত্রুকে তার সামনে নত করে দেন। ফলে সে তার অন্তরঙ্গ বন্ধুতে পরিণত হয়ে যায়।

{وَمَا كُنْتُمْ تَسْتَتِرُوْنَ أَنْ يَّشْهَدَ عَلَيْكُمْ سَمْعُكُمْ وَلَآ أَبْصَارُكُمْ وَلَا جُلُوْدُكُمْ وَلٰكِنْ ظَنَنْتُمْ أَنَّ اللهَ لَا يَعْلَمُ كَثِيْرًا مِّمَّا تَعْمَلُوْنَ}

তোমাদের কান, তোমাদের চোখ ও তোমাদের চামড়া তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে না- এ ধারণার বশবর্তী হয়ে তোমরা তাদের কাছে কিছু গোপন করতে না। উপরন্তু তোমরা মনে করতে যে, তোমরা যা কর তার অনেক কিছুই আল্লাহ জানেন না। (সূরাহ হা-মীম আস্-সাজদাহ ৪১/২২)

৪৮১৬
الصَّلْتُ بْنُ مُحَمَّدٍ حَدَّثَنَا يَزِيْدُ بْنُ زُرَيْعٍ عَنْ رَوْحِ بْنِ الْقَاسِمِ عَنْ مَنْصُوْرٍ عَنْ مُجَاهِدٍ عَنْ أَبِيْ مَعْمَرٍ عَنْ ابْنِ مَسْعُوْدٍ {وَمَا كُنْتُمْ تَسْتَتِرُوْنَ أَنْ يَّشْهَدَ عَلَيْكُمْ سَمْعُكُمْ} وَلَا أَبْصَارُكُمْ الْآيَةَ قَالَ كَانَ رَجُلَانِ مِنْ قُرَيْشٍ وَخَتَنٌ لَهُمَا مِنْ ثَقِيْفَ أَوْ رَجُلَانِ مِنْ ثَقِيْفَ وَخَتَنٌ لَهُمَا مِنْ قُرَيْشٍ فِيْ بَيْتٍ فَقَالَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ أَتُرَوْنَ أَنَّ اللهَ يَسْمَعُ حَدِيْثَنَا قَالَ بَعْضُهُمْ يَسْمَعُ بَعْضَهُ وَقَالَ بَعْضُهُمْ لَئِنْ كَانَ يَسْمَعُ بَعْضَهُ لَقَدْ يَسْمَعُ كُلَّهُ فَأُنْزِلَتْ {وَمَا كُنْتُمْ تَسْتَتِرُوْنَ أَنْ يَّشْهَدَ عَلَيْكُمْ سَمْعُكُمْ وَلَآ أَبْصَارُكُمْ}.

ইব্‌নু মাস‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আল্লাহ্‌র বাণী ঃ “তোমাদের কর্ণ তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে- এ থেকে তোমরা কখনো নিজেদের লুকাতে পারবে না।” আয়াত সম্পর্কে বলেন, কুরাইশ গোত্রের দু’ ব্যক্তি ছিল, যাদের জামাতা ছিল বানী সাকীফ গোত্রের অথবা (বর্ণনাকারীর সন্দেহ) দু’ ব্যক্তি ছিল বানী সাকীফ গোত্রের আর তাদের জামাতা ছিল কুরাইশ গোত্রের। তারা সকলেই একটি ঘরে ছিল। তারা পরস্পর বলল, তোমার কী ধারণা, আল্লাহ্ কি আমাদের কথা শুনতে পাচ্ছেন? একজন বলল, তিনি আমাদের কিছু কথা শুনছেন। এরপর দ্বিতীয় ব্যক্তি বলল, তিনি যদি আমাদের কিছু কথা শুনতে পান, তাহলে সব কথাও শুনতে পাবেন। তখন নাযিল হল ঃ “তোমাদের কান ও তোমাদের চোখ তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে, এ থেকে তোমরা কখনো নিজেদের লুকাতে পারবে না।…..আয়াতের শেষ পর্যন্ত। [৪৮১৭, ৭৫২১; মুসলিম ৫০/২৭৭৫, আহমাদ ৩৮৭৫] (আ.প্র. ৪৪৫২, ই.ফা. ৪৪৫৩)

৬৫/৪১/২.অধ্যায়ঃ
আল্লাহর বাণীঃ আর তোমাদের এ ধারণাই যা তোমরা স্বীয় রব সম্বন্ধে করতে, তোমাদের সর্বনাশ করেছে। ফলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্তদের শামিল হয়ে গেছ। (সূরাহ হা-মীম আস্-সাজদাহ ৪২/২৩)

৪৮১৭
الْحُمَيْدِيُّ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ حَدَّثَنَا مَنْصُوْرٌ عَنْ مُجَاهِدٍ عَنْ أَبِيْ مَعْمَرٍ عَنْ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ اجْتَمَعَ عِنْدَ الْبَيْتِ قُرَشِيَّانِ وَثَقَفِيٌّ أَوْ ثَقَفِيَّانِ وَقُرَشِيٌّ كَثِيْرَةٌ شَحْمُ بُطُوْنِهِمْ قَلِيْلَةٌ فِقْهُ قُلُوْبِهِمْ فَقَالَ أَحَدُهُمْ أَتُرَوْنَ أَنَّ اللهَ يَسْمَعُ مَا نَقُوْلُ قَالَ الآخَرُ يَسْمَعُ إِنْ جَهَرْنَا وَلَا يَسْمَعُ إِنْ أَخْفَيْنَا وَقَالَ الْآخَرُ إِنْ كَانَ يَسْمَعُ إِذَا جَهَرْنَا فَإِنَّهُ يَسْمَعُ إِذَا أَخْفَيْنَا فَأَنْزَلَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ {وَمَا كُنْتُمْ تَسْتَتِرُوْنَ أَنْ يَّشْهَدَ عَلَيْكُمْ سَمْعُكُمْ وَلَآ أَبْصَارُكُمْ وَلَا جُلُوْدُكُمْ}.

وَكَانَ سُفْيَانُ يُحَدِّثُنَا بِهَذَا فَيَقُوْلُ حَدَّثَنَا مَنْصُوْرٌ أَوْ ابْنُ أَبِيْ نَجِيْحٍ أَوْ حُمَيْدٌ أَحَدُهُمْ أَوْ اثْنَانِ مِنْهُمْ ثُمَّ ثَبَتَ عَلَى مَنْصُوْرٍ وَتَرَكَ ذَلِكَ مِرَارًا غَيْرَ مَرَّةٍ وَاحِدَةٍ.

‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

বর্ণিত। তিনি বলেন, কা‘বার কাছে দু’জন কুরাইশী এবং একজন সাকাফী অথবা দু’জন সাকাফী ও একজন কুরাইশী একত্রিত হয়। তাদের পেটের মেদ ছিল অধিক; কিন্তু অন্তরে বুদ্ধি ছিল কম। তাদের একজন বলল, তোমাদের কী ধারণা, আমরা যা বলছি তা কি আল্লাহ্ শুনছেন? উত্তরে অপর এক ব্যক্তি বলল, আমরা যদি জোরে বলি, তাহলে তিনি শুনতে পান। আর যদি চুপে চুপে বলি, তাহলে তিনি শুনতে পান না। তৃতীয় ব্যক্তি বলল, আমরা জোরে বললে যদি তিনি শুনতে পান, তাহলে চুপে চুপে বললেও তিনি শুনতে পাবেন। তখন আল্লাহ্ অবতীর্ণ করলেন, ‘তোমাদের চোখ, কান এবং তোমাদের চামড়া তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে, এ থেকে তোমরা কখনো নিজেদের লুকাতে পারবে না….. (আয়াতের শেষ পর্যন্ত)।

হুমাইদী বলেন, সুফ্ইয়ান এ হাদীস বর্ণনার সময় বলতেন, মানসুর বলেছেন, অথবা ইব্‌নু আবূ নাজীহ্ অথবা হুমায়দ তাঁদের একজন বা দু’জন। এরপর তিনি মানসূরের উপরই নির্ভর করেছেন এবং একাধিকবার তিনি সন্দেহ বর্জন করে বর্ণনা করেছেন। [৪৮১৬] (আ.প্র. ৪৪৫৩, ই.ফা. ৪৪৫৪)

৬৫/৪২/১.অধ্যায়ঃ
আল্লাহর বাণীঃ আত্মীয়ের সৌহার্দ ব্যতীত। (সূরাহ শূরা ৪২/২৩)

65/41/3. باب قوله :{فَإِنْ يَّصْبِرُوْا فَالنَّارُ مَثْوًى لَّهُمْ} … الآية

৬৫/৪১/৩. অধ্যায়: আল্লাহর বাণীঃ এখন তারা সবর করলেও জাহান্নামই তাদের আবাসস্থল হবে; আর যদি তারা ওযরখাহী করে তবুও তাদের ওযর ক্ববুল করা হবে না। (সূরাহ হা-মীম সাজদাহ্হ ৪১/২৪)

حَدَّثَنَا عَمْرُوْ بْنُ عَلِيٍّ حَدَّثَنَا يَحْيَى حَدَّثَنَا سُفْيَانُ الثَّوْرِيُّ قَالَ حَدَّثَنِيْ مَنْصُوْرٌ عَنْ مُجَاهِدٍ عَنْ أَبِيْ مَعْمَرٍ عَنْ عَبْدِ اللهِ بِنَحْوِهِ.

‘আবদুল্লাহ্ ইবনু মাস‘উদ (রাঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (আধুনিক প্রকাশনীঃ , ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৪৪৫৫)





(42) سُوْرَةُ حم عسق

সূরাহ (৪২) : শূরা (হা-মীম, ‘আইন সাদ ক্বাফ)

وَيُذْكَرُ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ {عَقِيْمًا} الَّتِيْ لَا تَلِدُ {رُوْحًا مِّنْ أَمْرِنَا} الْقُرْآنُ وَقَالَ مُجَاهِدٌ {يَذْرَؤُكُمْ فِيْهِ} نَسْلٌ بَعْدَ نَسْلٍ {لَا حُجَّةَ بَيْنَنَا} وَبَيْنَكُمْ لَا خُصُوْمَةَ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ {مِنْ طَرْفٍ خَفِيٍّ} ذَلِيْلٍ وَقَالَ غَيْرُهُ {فَيَظْلَلْنَ رَوَاكِدَ عَلٰى ظَهْرِهٰ} يَتَحَرَّكْنَ وَلَا يَجْرِيْنَ فِي الْبَحْرِ {شَرَعُوْا} ابْتَدَعُوْا.



ইবনু ‘আববাস হতে বর্ণিত। عَقِيْمًا অর্থ বন্ধ্যা। رُوْحًا مِّنْ أَمْرِنَا অর্থাৎ আল কুরআন। মুজাহিদ বলেছেন- يَذْرَؤُكُمْ فِيْهِ, আল্লাহ্ তোমাদেরকে গর্ভাশয়ের মধ্যে ধারাবাহিক বংশ পরম্পরার সঙ্গে সৃষ্টি করতে থাকবেন। لَا حُجَّةَ بَيْنَنَا আমাদের মধ্যে কোন ঝগড়া-বিবাদ নেই। مِنْ طَرْفٍ خَفِيٍّ অবনমিত। মুজাহিদ ছাড়া অন্যরা বলেন। فَيَظْلَلْنَ رَوَاكِدَ عَلٰى ظَهْرِهٰনৌযানগুলো সমুদ্রপৃষ্ঠে আন্দোলিত হতে থাকে; কিন্তু চলতে পারবে না। شَرَعُوْا তারা আবিষ্কার করেছে।

৪৮১৮
مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ عَبْدِ الْمَلِكِ بْنِ مَيْسَرَةَ قَالَ سَمِعْتُ طَاوُسًا عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّهُ سُئِلَ عَنْ قَوْلِهِ {إِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبٰى} فَقَالَ سَعِيْدُ بْنُ جُبَيْرٍ قُرْبَى آلِ مُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ عَجِلْتَ إِنَّ النَّبِيَّ لَمْ يَكُنْ بَطْنٌ مِنْ قُرَيْشٍ إِلَّا كَانَ لَهُ فِيْهِمْ قَرَابَةٌ فَقَالَ إِلَّا أَنْ تَصِلُوْا مَا بَيْنِيْ وَبَيْنَكُمْ مِنَ الْقَرَابَةِ.

ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

একদা তাকে إِلاَّ الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبَى সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার পর (কাছে উপস্থিত) সা‘ঈদ ইব্‌নু যুবায়র (রাঃ) বললেন, এর অর্থ নাবী পরিবারের আত্মীয়তার বন্ধন। (এ কথা শুনে) ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, তুমি তাড়াহুড়া করে ফেললে। কেননা কুরাইশের এমন কোন শাখা ছিল না যেখানে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর আত্মীয়তা ছিল না। রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের বলেছেন, আমার এবং তোমাদের মাঝে যে আত্মীয়তার বন্ধন রয়েছে তার ভিত্তিতে তোমরা আমার সঙ্গে আত্মীয়সুলভ আচরণ কর। এই আমি তোমাদের থেকে কামনা করি। [৩৪৯৭] (আ.প্র. ৪৪৫৪, ই.ফা. ৪৪৫৬)

৬৫/৪৩/১.অধ্যায়ঃ
আল্লাহর বাণীঃ তারা চীৎকার করে বলবে, হে মালিক! তোমার প্রতিপালক যেন আমাদের নিঃশেষ করে দেন। (সূরাহ যুখরুফ ৪৩/৭৭)

(43) سُوْرَةُ حم الزُّخْرُفِ

সূরাহ (৪৩) : হা-মীম যুখরুফ

وَقَالَ مُجَاهِدٌ {عَلٰى أُمَّةٍ} عَلَى إِمَامٍ {وَقِيْلَه” يَا رَبِّ} تَفْسِيْرُهُ أَيَحْسِبُوْنَ أَنَّا لَا نَسْمَعُ سِرَّهُمْ وَنَجْوَاهُمْ وَلَا نَسْمَعُ قِيْلَهُمْ وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ {وَلَوْلَآ أَنْ يَّكُوْنَ النَّاسُ أُمَّةً وَّاحِدَةً} لَوْلَا أَنْ جَعَلَ النَّاسَ كُلَّهُمْ كُفَّارًا لَجَعَلْتُ لِبُيُوْتِ الْكُفَّارِ سَقْفًا مِنْ فِضَّةٍ وَمَعَارِجَ مِنْ فِضَّةٍ وَهِيَ دَرَجٌ وَسُرُرَ فِضَّةٍ {مُقْرِنِيْنَ} مُطِيْقِيْنَ {اٰسَفُوْنَا} أَسْخَطُوْنَا {يَعْشُ} يَعْمَى وَقَالَ مُجَاهِدٌ {أَفَنَضْرِبُ عَنْكُمْ الذِّكْرَ} أَيْ تُكَذِّبُوْنَ بِالْقُرْآنِ ثُمَّ لَا تُعَاقَبُوْنَ عَلَيْهِ {وَمَضٰى مَثَلُ الْأَوَّلِيْنَ} سُنَّةُ الْأَوَّلِيْنَ {وَمَا كُنَّا لَه” مُقْرِنِيْنَ} يَعْنِي الإِبِلَ وَالْخَيْلَ وَالْبِغَالَ وَالْحَمِيْرَ {يَنْشَأُ فِي الْحِلْيَةِ} الْجَوَارِيْ جَعَلْتُمُوْهُنَّ لِلرَّحْمَنِ وَلَدًا {فَكَيْفَ تَحْكُمُوْنَ لَوْ شَآءَ الرَّحْمٰنُ مَا عَبَدْنَاهُمْ} يَعْنُوْنَ الْأَوْثَانَ يَقُوْلُ اللهُ تَعَالَى {مَا لَهُمْ بِذٰلِكَ مِنْ عِلْمٍ} أَيْ الْأَوْثَانُ إِنَّهُمْ لَا يَعْلَمُوْنَ {فِيْ عَقِبِهِ} وَلَدِهِ {مُقْتَرِنِيْنَ} يَمْشُوْنَ مَعًا {سَلَفًا} قَوْمُ فِرْعَوْنَ سَلَفًا لِكُفَّارِ أُمَّةِ مُحَمَّدٍ e وَمَثَلًا عِبْرَةً {يَصِدُّوْنَ} يَضِجُّوْنَ {مُبْرِمُوْنَ} مُجْمِعُوْنَ {أَوَّلُ الْعَابِدِيْنَ} أَوَّلُ الْمُؤْمِنِيْنَ وَقَالَ غَيْرُهُ {إِنَّنِيْ بَرَآءٌ مِمَّاتَعْبُدُوْنَ} الْعَرَبُ تَقُوْلُ نَحْنُ مِنْكَ الْبَرَاءُ وَالْخَلَاءُ وَالْوَاحِدُ وَالِاثْنَانِ وَالْجَمِيْعُ مِنَ الْمُذَكَّرِ وَالْمُؤَنَّثِ يُقَالُ فِيْهِ بَرَاءٌ لِأَنَّهُ مَصْدَرٌ وَلَوْ قَالَ بَرِيْءٌ لَقِيْلَ فِي الِاثْنَيْنِ بَرِيئَانِ وَفِي الْجَمِيْعِ بَرِيئُوْنَ وَقَرَأَ عَبْدُ اللهِ إِنَّنِيْ بَرِيْءٌ بِالْيَاءِ وَالزُّخْرُفُ الذَّهَبُ {مَلَآئِكَةً} يَخْلُفُوْنَ يَخْلُفُ بَعْضُهُمْ بَعْضًا.



মুজাহিদ (রহ.) বলেছেন, عَلٰى أُمَّةٍ এক নেতার অনুসারী। وَقِيْلَه يَا رَبِّ এর ব্যাখ্যা এই যে, কাফিররা কি মনে করে, আমি তাদের গোপন বিষয় ও মন্ত্রণার খবর রাখি না এবং আমি তাদের কথাবার্তা শুনি না? ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেছেন, وَلَوْلَا أَنْ يَّكُوْنَ النَّاسُ أُمَّةً وَّاحِدَةً যদি সমস্ত মানুষ কাফের হয়ে যাবার আশংকা না থাকত, তাহলে আমি কাফেরদের গৃহের জন্য দিতাম রৌপ্য নির্মিত ছাদ এবং রৌপ্য নির্মিত মা‘রিজ অর্থাৎ সিঁড়ি আর রৌপ্য নির্মিত পালঙ্ক। مُقْرِنِيْنَ সামর্থ্যবান লোক। اٰسَفُوْنَا তারা আমাকে রাগান্বিত করল। يَعْشُ অন্ধ হয়ে যায়। মুজাহিদ বলেছেন, أَفَنَضْرِبُ عَنْكُمْ الذِّكْرَ তোমরা কুরআন মাজীদকে মিথ্যা মনে করবে, তারপর এজন্য কি তোমাদের শাস্তি দেয়া হবে না? وَمَضٰى مَثَلُ الْأَوَّلِيْنَ পূর্ববর্তী লোকদের উদাহরণ। وَمَا كُنَّا لَهচ مُقْرِنِيْنَ উট, ঘোড়া, খচ্চর ও গাধাকে বোঝানো হয়েছে। يَنْشَأُ فِي الْحِلْيَةِ কন্যা সন্তান; এদের তোমরা আল্লাহর সন্তান সাব্যস্ত করছ- এ তোমরা কেমন সিদ্ধান্ত দিচ্ছ ……… لَوْ شَآءَ الرَّحْمٰنُ مَا عَبَدْنَاهُمْ আয়াতাংশে বর্ণিত هم সর্বনাম-এর দ্বারা মূর্তিকে বোঝানো হয়েছে। কেননা, আল্লাহ্ বলেছেন, مَا لَهُمْ بِذَلِكَ مِنْ عِلْمٍ এ সম্বন্ধে প্রতিমাদের কোন জ্ঞান নেই। فِيْ عَقِبِهٰ তার সন্তানদের মধ্যে مُقْتَرِنِيْنَ এক সঙ্গে তারা চলে আসছিল। سَلَفًا দ্বারা উদ্দেশ্য ফির‘আউন সম্প্রদায়। কেননা, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উম্মাতের কাফেরদের জন্য তারা হচ্ছে অগ্রগামী দল এবং তারা হচ্ছে শিক্ষা গ্রহণের এক নমুনা। يَصِدُّوْنَ তারা চেঁচামেচি শুরু করে দেয়। مُبْرِمُوْنَ আমিই তো সিদ্ধান্ত দানকারী। أَوَّلُالْعَابِدِيْنَ মু’মিনদের অগ্রণী। إِنَّنِيْ بَرَآءٌ مِّمَّا تَعْبُدُوْنَ আরবরা বলে, نَحْنُ مِنْكَ الْبَرَآءُ وَالْخَلَآءُ আমরা তোমার থেকে পৃথক, পুরুষলিঙ্গ, স্ত্রীলিঙ্গ, বহুবচন, দ্বিবচন ও একবচন সকল ক্ষেত্রে الْبَرَآءُ শব্দটি একইভাবে ব্যবহৃত হয়। কেননা, এ শব্দটি হচ্ছে মাসদার (মূল শব্দ) । যদি بَرِيْءٌ বল, তাহলে দ্বিবচনে بَرِيئَآنِ বলা হবে এবং বহুবচনে বলা হবে بَرِيــٓئُوْنَ। ‘আবদুল্লাহ্ إِنَّنِيْبَرِيْٓءٌ (ياদ্বারা) পাঠ করতেন। الزُّخْرُفُ স্বর্ণ। مَلَآئِكَةً তারা পরস্পরের স্থলাভিষিক্ত হতো।

৪৮১৯
حَجَّاجُ بْنُ مِنْهَالٍ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ عَنْ عَمْرٍو عَنْ عَطَاءٍ عَنْ صَفْوَانَ بْنِ يَعْلَى عَنْ أَبِيْهِ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقْرَأُ عَلَى الْمِنْبَرِ {وَنَادَوْا يَا مَالِكُ لِيَقْضِ عَلَيْنَا رَبُّكَ} وَقَالَ قَتَادَةُ {مَثَلًا لِّلْاٰخِرِيْنَ} عِظَةً لِمَنْ بَعْدَهُمْ وَقَالَ غَيْرُهُ {مُقْرِنِيْنَ} ضَابِطِيْنَ يُقَالُ فُلَانٌ مُقْرِنٌ لِفُلَانٍ ضَابِطٌ لَهُ. وَالأَكْوَابُ الْأَبَارِيْقُ الَّتِيْ لَا خَرَاطِيْمَ لَهَا. وَقَالَ قَتَادَةُ {فِيْ أُمِّ الْكِتَابِ} جُمْلَةِ الْكِتَابِ أَصْلِ الْكِتَابِ. {أَوَّلُالْعَابِدِيْنَ} أَيْ مَا كَانَ فَأَنَا أَوَّلُ الآنِفِيْنَ وَهُمَا لُغَتَانِ رَجُلٌ عَابِدٌ وَعَبِدٌ وَقَرَأَ عَبْدُ اللهِ وَقَالَ الرَّسُوْلُ يَا رَبِّ وَيُقَالُ أَوَّلُ الْعَابِدِيْنَ الْجَاحِدِيْنَ مِنْ عَبِدَ يَعْبَد

ইয়া‘লা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে মিম্বরে পড়তে শুনেছি وَنَادَوْا يَا مَالِكُ لِيَقْضِ عَلَيْنَا رَبُّكَ (তারা চীৎকার করে বলবে, হে মালিক! তোমার প্রতিপালক যেন আমাদের নিঃশেষ করে দেন।) ক্বাতাদাহ বলেন, مَثَلاً لِلْآخِرِينَ এর অর্থ পরবর্তী লোকদের জন্য নাসীহাত।

ক্বাতাদাহ (রহ.) ব্যতীত অন্যান্য মুফাস্সির বলেছেন, مُقْرِنِينَ নিয়ন্ত্রণকারী। বলা হয় فُلاَنٌ مُقْرِنٌ لِفُلاَنٍ অর্থাৎ তার নিয়ন্তা। َالأَكْوَابُ অর্থ হাতল বিহীন পানপাত্র। ক্বাতাদাহ (রহ.) أُمِّ الْكِتَابِ সম্পর্কে বলেন, তা হচ্ছে মূল কিতাব ও সারাংশ। أَوَّلُ الْعَابِدِينَ অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ্‌র কোন সন্তান নেই- এ কথা প্রত্যাখ্যানকারী সর্বপ্রথম আমি নিজেই। رَجُلٌ عَابِدٌ وَعَبِدٌ দু’ ধরনের ব্যবহার রয়েছে। ‘আবদুল্লাহ্ ইব্‌নু মাস‘উদ (রাঃ) وَقَالَ الرَّسُولُ يَا رَبِّ পাঠ করতেন। কোন কোন মুফাস্সির বলেন, أَوَّلُ الْعَابِدِينَ -এ বর্ণিত الْعَابِدِينَ শব্দটি عَبِدَ يَعْبَد এর ওজনে এসেছে; যার অর্থ অস্বীকারকারী। [৩২৩০] (আ.প্র. ৪৪৫৫, ই.ফা. ৪৪৫৭)

৬৫/৪৩/২.অধ্যায়ঃ
আল্লাহর বাণীঃ আমি কি তোমাদের থেকে নাসীহাতপূর্ণ কুরআন এজন্য প্রত্যাহার করে নেব যে, তোমরা সীমালঙ্ঘনকারী লোক? (সূরাহ যুখরুফ ৪৩/৫)

مُشْرِكِيْنَ وَاللهِ لَوْ أَنَّ هَذَا الْقُرْآنَ رُفِعَ حَيْثُ رَدَّهُ أَوَائِلُ هَذِهِ الْأُمَّةِ لَهَلَكُوْا {فَأَهْلَكْنَآ أَشَدَّ مِنْهُمْ بَطْشًا وَّمَضَى مَثَلُ الْأَوَّلِيْنَ} عُقُوْبَةُ الْأَوَّلِيْنَ {جُزْءًا} عِدْلًا.

উপরোক্ত আয়াতে উল্লিখিত مُسْرِفِيْنَ এর অর্থ مُشْرِكِيْنَ অর্থাৎ আমি কি তোমাদের হতে এই নাসীহাত বাণী সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করে নেব এই কারণে যে, তোমরা মুশরিক? আল্লাহর কসম! এ উম্মাতের প্রথম অবস্থায় যখন (কুরাইশগণ) আল-কুরআনকে প্রত্যাখ্যান করেছিল; তখন যদি তাকে প্রত্যাহার করা হত, তাহলে তাঁরা সকলেই ধ্বংস হয়ে যেত। فَأَهْلَكْنَآ أَشَدَّ مِنْهُمْ بَطْشًا وَّمَضٰى مَثَلُ الْأَوَّلِيْنَএর মাঝে বর্ণিত مَثَلُ الْأَوَّلِيْنَএর অর্থ তাদের মধ্যে যারা তাদের অপেক্ষা শক্তিতে প্রবল ছিল, তাদের আমি ধ্বংস করেছিলাম। আর এভাবেই চলে এসেছে পূর্ববর্তী লোকদের শাস্তির দৃষ্টান্ত। جُزْءًا সমকক্ষ। (আ.প্র. ৪৪৫৫, ই.ফা. ৪৪৫৭)



(44) سُوْرَةُ حم الدُّخَانِ

সূরাহ (৪৪) : হামীম আদ্-দুখান

وَقَالَ مُجَاهِدٌ {رَهْوًا} طَرِيْقًا يَابِسًا وَيُقَالُ رَهْوًا سَاكِنًا عَلَى عِلْمٍ{عَلَى الْعَالَمِيْنَ} عَلَى مَنْ بَيْنَ ظَهْرَيْهِ. {فَاعْتُلُوْهُ} ادْفَعُوْهُ {وَزَوَّجْنَاهُمْ بِحُوْرٍ عِيْنٍ} أَنْكَحْنَاهُمْ حُوْرًا عِيْنًا يَحَارُ فِيْهَا الطَّرْفُ {تَرْجُمُوْنِ} الْقَتْلُ وَ {رَهْوَا} : سَاكِنًا. وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ {كَالْمُهْلِ} أَسْوَدُ كَمُهْلِ الزَّيْتِ وَقَالَ غَيْرُهُ {تُبَّعُ} مُلُوْكُ الْيَمَنِ كُلُّ وَاحِدٍ مِنْهُمْ يُسَمَّى تُبَّعًا لِأَنَّهُ يَتْبَعُ صَاحِبَهُ وَالظِّلُّ يُسَمَّى تُبَّعًا لِأَنَّهُ يَتْبَعُ الشَّمْسَ.

মুজাহিদ (রহ.) বলেন, رَهْوًا শুষ্ক পথ। عَلَى الْعَالَمِيْنَ সমকালীন লোকদের উপর। فَاعْتُلُوْهُ নিক্ষেপ কর তাকে।وَزَوَّجْنَاهُمْ بِحُوْرٍ عِيْنٍ আমি তাদের ডাগর চক্ষু বিশিষ্ট হুরদের সঙ্গে বিয়ে দেব, যাদেরকে দেখলে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। تَرْجُمُوْنِ হত্যা করা। رَهْوَا স্থির। ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেন, كَالْمُهْلِ যায়তুনের গাদের মত কাল। অন্যরা বলেছেন, تُبَّعُ ইয়ামানের বাদশাদের উপাধি। তাদের একজনের পর যেহেতু অপরজনের আগমন ঘটত, এজন্য তাদের প্রত্যেক বাদশাহ্কেই تُبَّعُ বলা হত। ছায়াকেও تُبَّعُ বলা হয়। কেননা, ছায়া সূর্যের অনুসরণ করে।



قَالَ قَتَادَةُ فَارْتَقِبْ فَانْتَظِرْ.

ক্বাতাদাহ (রহ.) বলেন, فَارْتَقِبْঅপেক্ষা কর।

৬৫/৪৪/১.অধ্যায়ঃ
‘‘অতএব, তুমি অপেক্ষা কর সেদিনের, যেদিন ধূম্রাচ্ছন্ন হবে আকাশ।’’ (সূরাহ আদ্ দুখান ৪৪/১০)

৪৮২০
عَبْدَانُ عَنْ أَبِيْ حَمْزَةَ عَنِ الْأَعْمَشِ عَنْ مُسْلِمٍ عَنْ مَسْرُوْقٍ عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ مَضَى خَمْسٌ الدُّخَانُ وَالرُّوْمُ وَالْقَمَرُ وَالْبَطْشَةُ وَاللِّزَامُ.

‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, পাঁচটি নিদর্শনই বাস্তবায়িত হয়ে গেছে। ধোঁয়া (দুর্ভিক্ষ), রোম (পরাজয়), চন্দ্র (দ্বিখণ্ডিত হওয়া), পাকড়াও (বদর যুদ্ধে) এবং ধ্বংস। [১০০৭] (আ.প্র. ৪৪৫৬, ই.ফা. ৪৪৫৮)

৬৫/৪৪/২.অধ্যায়ঃ
আল্লাহর বাণীঃ তা আবৃত করে ফেলবে মানব জাতিকে, এ হবে মর্মন্তুদ শাস্তি। (সূরাহ আদ্ দুখান ৪৪/১১)

৪৮২১
يَحْيَى حَدَّثَنَا أَبُوْ مُعَاوِيَةَ عَنِ الْأَعْمَشِ عَنْ مُسْلِمٍ عَنْ مَسْرُوْقٍ قَالَ قَالَ عَبْدُ اللهِ إِنَّمَا كَانَ هَذَا لِأَنَّ قُرَيْشًا لَمَّا اسْتَعْصَوْا عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم دَعَا عَلَيْهِمْ بِسِنِيْنَ كَسِنِيْ يُوْسُفَ فَأَصَابَهُمْ قَحْطٌ وَجَهْدٌ حَتَّى أَكَلُوا الْعِظَامَ فَجَعَلَ الرَّجُلُ يَنْظُرُ إِلَى السَّمَاءِ فَيَرَى مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَهَا كَهَيْئَةِ الدُّخَانِ مِنَ الْجَهْدِ فَأَنْزَلَ اللهُ تَعَالَى {فَارْتَقِبْ يَوْمَ تَأْتِي السَّمَآءُ بِدُخَانٍ مُّبِيْنٍ لا – يَّغْشَى النَّاسَ ط هٰذَا عَذَابٌ أَلِيْمٌ} قَالَ فَأُتِيَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقِيْلَ لَهُ يَا رَسُوْلَ اللهِ اسْتَسْقِ اللهَ لِمُضَرَ فَإِنَّهَا قَدْ هَلَكَتْ قَالَ لِمُضَرَ إِنَّكَ لَجَرِيْءٌ فَاسْتَسْقَى لَهُمْ فَسُقُوْا فَنَزَلَتْ {إِنَّكُمْ عَآئِدُوْنَ} فَلَمَّا أَصَابَتْهُمْ الرَّفَاهِيَةُ عَادُوْا إِلَى حَالِهِمْ حِيْنَ أَصَابَتْهُمْ الرَّفَاهِيَةُ فَأَنْزَلَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ {يَوْمَ نَبْطِشُ الْبَطْشَةَ الْكُبْرٰى إِنَّا مُنْتَقِمُوْنَ} قَالَ يَعْنِيْ يَوْمَ بَدْرٍ.

মাসরূক (রহ.) থেকে বর্ণিতঃ

‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) বলেছেন, এ অবস্থা এ জন্য যে, কুরাইশরা যখন রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নাফরমানী করল, তখন তিনি তাদের বিরুদ্ধে এমন দুর্ভিক্ষের দু‘আ করলেন, যেমন দুর্ভিক্ষ হয়েছিল ইউসুফ (‘আ.)-এর সময়ে। তারপর তাদের উপর দুর্ভিক্ষ ও ক্ষুধার কষ্ট এমনভাবে আপতিত হ’ল যে, তারা হাড্ডি খেতে আরম্ভ করল। তখন মানুষ আকাশের দিকে তাকালে ক্ষুধার তাড়নায় তারা আকাশ ও তাদের মাঝে শুধু ধোঁয়ার মত দেখতে পেত। এ সম্পর্কেই আল্লাহ্ অবতীর্ণ করলেন, “অতএব তুমি অপেক্ষা কর সেদিনের, যেদিন স্পষ্ট ধূম্রাচ্ছন্ন হবে আকাশ এবং তা ছেয়ে ফেলবে মানব জাতিকে। এ হবে মর্মন্তুদ শাস্তি।” বর্ণনাকারী বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট (কাফিরদের পক্ষ থেকে) এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! মুদার গোত্রের জন্য বৃষ্টির দু‘আ করুন। তারা তো ধ্বংস হয়ে গেল। তিনি [রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)] বললেন, মুদার গোত্রের জন্য দু‘আ করতে বলছ। তুমি তো খুব সাহসী। তারপর তিনি বৃষ্টির জন্য দু‘আ করলেন এবং বৃষ্টি হল। তখন অবতীর্ণ হল, তোমরা তো তোমাদের আগের অবস্থায় ফিরে যাবে। যখন তাদের সচ্ছলতা ফিরে এলো, তখন আবার নিজেদের আগের অবস্থায় ফিরে গেল। তারপর আল্লাহ্ নাযিল করলেন, “যেদিন আমি তোমাদের প্রবলভাবে পাকড়াও করব, সেদিন আমি তোমাদের প্রতিশোধ নেই। বর্ণনাকারী বলেন, অর্থাৎ বদর যুদ্ধের দিন। [১০০৭; মুসলিম ৫০/৭, হাঃ ২৭৯৮, আহমাদ ৪২০৬] (আ.প্র. ৪৪৫৭, ই.ফা. ৪৪৫৯)

৬৫/৪৪/৩.অধ্যায়ঃ
আল্লাহর বাণীঃ তখন তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এ শাস্তি থেকে মুক্তি দান কর, নিশ্চয়ই আমরা ঈমান আনব। (সূরাহ আদ্ দুখান ৪৪/১২)

৪৮২২
يَحْيَى حَدَّثَنَا وَكِيْعٌ عَنِ الْأَعْمَشِ عَنْ أَبِي الضُّحَى عَنْ مَسْرُوْقٍ قَالَ دَخَلْتُ عَلَى عَبْدِ اللهِ فَقَالَ إِنَّ مِنَ الْعِلْمِ أَنْ تَقُوْلَ لِمَا لَا تَعْلَمُ اللهُ أَعْلَمُ إِنَّ اللهَ قَالَ لِنَبِيِّهِ صلى الله عليه وسلم {قُلْ مَآ أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ وَّمَآ أَنَا مِنَ الْمُتَكَلِّفِيْنَ} إِنَّ قُرَيْشًا لَمَّا غَلَبُوا النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم وَاسْتَعْصَوْا عَلَيْهِ قَالَ اللهُمَّ أَعِنِّيْ عَلَيْهِمْ بِسَبْعٍ كَسَبْعِ يُوْسُفَ فَأَخَذَتْهُمْ سَنَةٌ أَكَلُوْا فِيْهَا الْعِظَامَ وَالْمَيْتَةَ مِنَ الْجَهْدِ حَتَّى جَعَلَ أَحَدُهُمْ يَرَى مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ السَّمَاءِ كَهَيْئَةِ الدُّخَانِ مِنَ الْجُوْعِ قَالُوْا {رَبَّنَا اكْشِفْ عَنَّا الْعَذَابَ إِنَّا مُؤْمِنُوْنَ} فَقِيْلَ لَهُ إِنْ كَشَفْنَا عَنْهُمْ عَادُوْا فَدَعَا رَبَّهُ فَكَشَفَ عَنْهُمْ فَعَادُوْا فَانْتَقَمَ اللهُ مِنْهُمْ يَوْمَ بَدْرٍ فَذَلِكَ قَوْلُهُ تَعَالَى فَارْتَقِبْ {يَوْمَ تَأْتِي السَّمَآءُ بِدُخَانٍ مُّبِيْنٍ} إِلَى قَوْلِهِ جَلَّ ذِكْرُهُ {إِنَّا مُنْتَقِمُوْنَ}.

মাসরূক (রহ.) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ)-এর কাছে গেলাম। তখন তিনি বললেন, যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই, সে সম্পর্কে ‘আল্লাহ্ই ভাল জানেন’ একথা বলাও জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। নিশ্চয় আল্লাহ্ তার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলেছেন, “বল, আমি এর জন্য তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাই না এবং আমি বানোয়াটকারীদের অন্তর্ভুক্ত নই।” কুরাইশরা যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সঙ্গে বাড়াবাড়ি করল এবং বিরোধিতা করল, তখন তিনি দু‘আ করলেন, হে আল্লাহ্! ইউসুফ (‘আ.)-এর সময়কার সাত বছরের দুর্ভিক্ষের মত দুর্ভিক্ষের দ্বারা তুমি আমাকে তাদের বিরুদ্ধে সাহায্য কর। তারপর দুর্ভিক্ষ তাদেরকে পাকড়াও করল। ক্ষুধার জ্বালায় তারা হাড্ডি এবং মরা খেতে আরম্ভ করল। এমনকি তাদের কোন ব্যক্তি আকাশের দিকে তাকালে ক্ষুধার জ্বালায় তার ও আকাশের মাঝে শুধু ধোঁয়ার মতই দেখতে পেত। তখন তারা বলল, “হে আমাদের রব! আমাদের থেকে এ শাস্তি সরিয়ে নাও, নিশ্চয়ই আমরা ঈমান আনব।” তাঁকে বলা হল, যদি তাদের থেকে শাস্তি সরিয়ে দেই, তাহলে তারা আবার আগের অবস্থায় ফিরে যাবে। তারপর তিনি তাঁর রবের নিকট দু‘আ করলেন। আল্লাহ্ তাদের থেকে শাস্তি সরিয়ে দিলেন; কিন্তু তারা আবার আগের অবস্থায় ফিরে এল। তাই আল্লাহ্ বদর যুদ্ধের দিন তাদের থেকে প্রতিশোধ নিলেন। নিম্নোক্ত আয়াতসমূহে এ কথাই বর্ণনা করা হয়েছে। আয়াত إِنَّا مُنْتَقِمُونَ পর্যন্ত। [১০০৭] (আ.প্র. ৪৪৫৮, ই.ফা. ৪৪৬০)

৬৫/৪৪/৪.অধ্যায়ঃ
আল্লাহর বাণীঃ তারা কী করে নাসীহাত গ্রহণ করবে? তাদের নিকট তো এসেছে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দানকারী এক রসূল। (সূরাহ আদ্ দুখান ৪৪/১৩)

الذِّكْرُ وَالذِّكْرَى وَاحِدٌ.

الذِّكْرُ এবং الذِّكْرَى একই অর্থে ব্যবহৃত শব্দ।

৪৮২৩
سُلَيْمَانُ بْنُ حَرْبٍ حَدَّثَنَا جَرِيْرُ بْنُ حَازِمٍ عَنِ الْأَعْمَشِ عَنْ أَبِي الضُّحَى عَنْ مَسْرُوْقٍ قَالَ دَخَلْتُ عَلَى عَبْدِ اللهِ ثُمَّ قَالَ إِنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم لَمَّا دَعَا قُرَيْشًا كَذَّبُوْهُ وَاسْتَعْصَوْا عَلَيْهِ فَقَالَ اللهُمَّ أَعِنِّيْ عَلَيْهِمْ بِسَبْعٍ كَسَبْعِ يُوْسُفَ فَأَصَابَتْهُمْ سَنَةٌ حَصَّتْ يَعْنِيْ كُلَّ شَيْءٍ حَتَّى كَانُوْا يَأْكُلُوْنَ الْمَيْتَةَ فَكَانَ يَقُوْمُ أَحَدُهُمْ فَكَانَ يَرَى بَيْنَهُ وَبَيْنَ السَّمَاءِ مِثْلَ الدُّخَانِ مِنَ الْجَهْدِ وَالْجُوْعِ ثُمَّ قَرَأَ {فَارْتَقِبْ يَوْمَ تَأْتِي السَّمَآءُ بِدُخَانٍ مُّبِيْنٍ لا – يَّغْشَى النَّاسَ ط هٰذَا عَذَابٌ أَلِيْمٌ} أَلِيْمٌ حَتَّى بَلَغَ إِنَّا كَاشِفُو الْعَذَابِ قَلِيْلًا إِنَّكُمْ عَائِدُوْنَ قَالَ عَبْدُ اللهِ أَفَيُكْشَفُ عَنْهُمْ الْعَذَابُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ قَالَ وَالْبَطْشَةُ الْكُبْرَى يَوْمَ بَدْرٍ.

মাসরূক থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহর কাছে গেলাম। তারপর তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন কুরাইশদের ইসলামের দাওয়াত দিলেন এবং তারা তাঁকে মিথ্যাচারী বলল ও তার নাফরমানী করল, তখন তিনি বললেন, হে আল্লাহ্! ইউসুফ (‘আ.)-এর সময়কার সাত বছরের দুর্ভিক্ষের মত দুর্ভিক্ষের দ্বারা তুমি আমাকে তাদের বিরুদ্ধে সাহায্য কর। ফলে দুর্ভিক্ষ তাদের এমনভাবে গ্রাস করল যে, নির্মূল হয়ে গেল সমস্ত কিছু; অবশেষে তারা মৃতদেহ খেতে আরম্ভ করল। তাদের কেউ দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকালে ক্ষুধার জ্বালায় সে তার ও আকাশের মাঝে ধোঁয়ার মতই দেখতে পেত। এরপর তিনি পাঠ করলেন, “অতএব তুমি অপেক্ষা কর সে দিনের, যেদিন স্পষ্ট ধূম্রাচ্ছন্ন হবে আকাশ এবং তা ছেয়ে ফেলবে মানব জাতিকে। এ হবে মর্মন্তুদ শাস্তি। আমি তোমাদের শাস্তি কিছুকালের জন্য সরিয়ে দিচ্ছি, তোমরা তো তোমাদের আগের অবস্থায় ফিরে যাবে।” পর্যন্ত ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) বলেন, ক্বিয়ামাতের দিনও কি তাদের থেকে শাস্তি সরিয়ে ফেলা হবে? তিনি বলেন, وَالْبَطْشَةُ الْكُبْرَى দ্বারা বাদরের দিনের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। [১০০৭] (আ.প্র. ৪৪৫৯, ই.ফা. ৪৪৬১)

৬৫/৪৪/৫.অধ্যায়ঃ
আল্লাহর বাণীঃ এরপর তারা তাকে অমান্য করে বলে সে তো শিখানো বুলি বলছে, সে এক পাগল। (সূরাহ আদ্ দুখান ৪৪/১৪)

৪৮২৪
بِشْرُ بْنُ خَالِدٍ أَخْبَرَنَا مُحَمَّدٌ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ سُلَيْمَانَ وَمَنْصُوْرٍ عَنْ أَبِي الضُّحَى عَنْ مَسْرُوْقٍ قَالَ قَالَ عَبْدُ اللهِ إِنَّ اللهَ بَعَثَ مُحَمَّدًا صلى الله عليه وسلم وَقَالَ {قُلْ مَآ أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ وَّمَآ أَنَا مِنَ الْمُتَكَلِّفِيْنَ} فَإِنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم لَمَّا رَأَى قُرَيْشًا اسْتَعْصَوْا عَلَيْهِ فَقَالَ اللهُمَّ أَعِنِّيْ عَلَيْهِمْ بِسَبْعٍ كَسَبْعِ يُوْسُفَ فَأَخَذَتْهُمْ السَّنَةُ حَتَّى حَصَّتْ كُلَّ شَيْءٍ حَتَّى أَكَلُوا الْعِظَامَ وَالْجُلُوْدَ فَقَالَ أَحَدُهُمْ حَتَّى أَكَلُوا الْجُلُوْدَ وَالْمَيْتَةَ وَجَعَلَ يَخْرُجُ مِنَ الْأَرْضِ كَهَيْئَةِ الدُّخَانِ فَأَتَاهُ أَبُوْ سُفْيَانَ فَقَالَ أَيْ مُحَمَّدُ إِنَّ قَوْمَكَ قَدْ هَلَكُوْا فَادْعُ اللهَ أَنْ يَكْشِفَ عَنْهُمْ فَدَعَا ثُمَّ قَالَ تَعُوْدُوْنَ بَعْدَ هَذَا فِيْ حَدِيْثِ مَنْصُوْرٍ ثُمَّ قَرَأَ {فَارْتَقِبْ يَوْمَ تَأْتِي السَّمَآءُ بِدُخَانٍ مُّبِيْنٍ} إِلَى {عَآئِدُوْنَ} أَنَكْشِفُ عَنْهُمْ عَذَابَ الآخِرَةِ فَقَدْ مَضَى الدُّخَانُ وَالْبَطْشَةُ وَاللِّزَامُ وَقَالَ أَحَدُهُمْ الْقَمَرُ وَقَالَ الْآخَرُ وَالرُّوْمُ.

‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহ্ তা‘আলা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে পাঠিয়ে বলেছেন, “বল, আমি এর জন্য তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাই না এবং যারা মিথ্যা দাবী করে আমি তাদের অন্তর্ভুক্ত নই।” রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন দেখলেন যে, কুরাইশরা তাঁর নাফরমানী করছে, তখন তিনি ললেন, ইউসুফ (‘আ.)-এর সময়কার সাত বছরের দুর্ভিক্ষের মত দুর্ভিক্ষের দ্বারা তুমি আমাকে তাদের বিরুদ্ধে সাহায্য কর। ফলে দুর্ভিক্ষ তাদের পেয়ে বসল। নিঃশেষ করে দিল তাদের সমস্ত কিছু, এমনকি তারা হাড় এবং চামড়া খেতে আরম্ভ করল। আর একজন রাবী বলেছেন, তারা চামড়া ও মরা খেতে লাগল। তখন যামীন থেকে ধোঁয়ার মত বের হতে লাগল। এ সময় আবূ সুফ্ইয়ান নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে এসে বলল, হে মুহাম্মাদ! তোমার কওম তো ধ্বংস হয়ে গেল। আল্লাহ্‌র কাছে দু‘আ কর, যেন তিনি তাদের থেকে এ অবস্থা দূর করে দেন। তখন তিনি দু‘আ করলেন, এবং বললেন, এরপর তারা আবার নিজেদের আগের অবস্থায় ফিরে যাবে। মানসুর হতে বর্ণিত হাদীসে আছে, তারপর তিনি এ আয়াত পাঠ করলেন, “অতএব, তুমি অপেক্ষা কর সে দিনের, যে দিন স্পষ্ট ধূম্রাচ্ছন্ন হবে আকাশ, তোমরা তো আগের অবস্থায় ফিরে যাবেই…..পর্যন্ত। (তিনি বলেন) আখিরাতের শাস্তিও কি দূর হয়ে যাবে? ধোঁয়া, প্রবল পাকড়াও এবং ধ্বংস তো অতিক্রান্ত হয়েছে। এক রাবী চন্দ্র এবং অন্য রাবী রোমের পরাজয়ের কথাও উল্লেখ করেছেন। [১০০৭] (আ.প্র. ৪৪৬০, ই.ফা. ৪৪৬২)

৬৫/৪৪/৬.অধ্যায়ঃ
আল্লাহর বাণীঃ যে দিন আমি তোমাদেরকে প্রবলভাবে পাকড়াও করব, সেদিন আমি তোমাদেরকে শাস্তি দেবই। (সূরাহ আদ্ দুখান ৪৪/১৬)

৪৮২৫
يَحْيَى حَدَّثَنَا وَكِيْعٌ عَنِ الْأَعْمَشِ عَنْ مُسْلِمٍ عَنْ مَسْرُوْقٍ عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ خَمْسٌ قَدْ مَضَيْنَ اللِّزَامُ وَالرُّوْمُ وَالْبَطْشَةُ وَالْقَمَرُ وَالدُّخَانُ.

‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, পাঁচটি বিষয় ঘটে গেছে ঃ ধ্বংস, রূম, পাকড়াও, চন্দ্র ও ধোঁয়া। [১০০৭] (আ.প্র. ৪৪৬১, ই.ফা. ৪৪৬৩)

৬৫/৪৫/১.অধ্যায়ঃ
‘‘আমরা মরি ও বাঁচি আর কাল-ই আমাদেরকে ধ্বংস করে।’’ (সূরাহ জাসিয়া ৪৫/২৪)

(45) سُوْرَةُ حَم الجَاثِيَةَ



সূরাহ (৪৫) : হা-মীম আল-জাসিয়াহ



{الْجَاثِيَةِ} مُسْتَوْفِزِيْنَ عَلَى الرُّكَبِ وَقَالَ مُجَاهِدٌ {نَسْتَنْسِخُ} نَكْتُبُ {نَنْسَاكُمْ} نَتْرُكُكُمْ.



الْجَاثِيَةِ ভয়ে নতজানু। মুজাহিদ (রহ.) বলেন, نَسْتَنْسِخُ অর্থ- আমি লিখছিলাম। نَنْسَاكُمْ অর্থ-আমি তোমাদেরকে ত্যাগ করব।

৪৮২৬
الْحُمَيْدِيُّ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ حَدَّثَنَا الزُّهْرِيُّ عَنْ سَعِيْدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ يُؤْذِيْنِي ابْنُ آدَمَ يَسُبُّ الدَّهْرَ وَأَنَا الدَّهْرُ بِيَدِي الْأَمْرُ أُقَلِّبُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ.

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ্ বলেন, আদাম সন্তানরা আমাকে কষ্ট দেয়। তারা যামানাকে গালি দেয়; অথচ আমিই যামানা। আমার হাতেই সকল ক্ষমতা; রাত ও দিন আমিই পরিবর্তন করি। [৬১৮১,৭৪৯১; মুসলিম ৪০/১, হাঃ ২২৪৬] (আ.প্র. ৪৪৬২, ই.ফা. ৪৪৬৪)

৬৫/৪৬/১.অধ্যায়ঃ
পরিচ্ছেদ নাই।

(46) سُوْرَةُ حم الْأَحْقَافِ

সূরাহ (৪৬) : হা-মীম আল-আহক্বাফ

وَقَالَ مُجَاهِدٌ {تُفِيْضُوْنَ} تَقُوْلُوْنَ وَقَالَ بَعْضُهُمْ {أَثَرَةٍ} وَأُثْرَةٍ وَأَثَارَةٍ بَقِيَّةٌ مِنْ عِلْمٍ وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ {بِدْعًامِّنْالرُّسُلِ} لَسْتُ بِأَوَّلِ الرُّسُلِ وَقَالَ غَيْرُهُ {أَرَأَيْتُمْ} هَذِهِ الْأَلِفُ إِنَّمَا هِيَ تَوَعُّدٌ إِنْ صَحَّ مَا تَدَّعُوْنَ لَا يَسْتَحِقُّ أَنْ يُعْبَدَ وَلَيْسَ قَوْلُهُ أَرَأَيْتُمْ بِرُؤْيَةِ الْعَيْنِ إِنَّمَا هُوَ أَتَعْلَمُوْنَ أَبَلَغَكُمْ أَنَّ مَا تَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ خَلَقُوْا شَيْئًا.



মুজাহিদ (রহ.) বলেন, تُفِيْضُوْنَতোমরা বলছ বা বলবে। কোন কোন মুফাস্সির বলেছেন, أَثَرَةٍ এবং أُثْرَةٍ ও وَأَثَارَةٍএর অর্থ ‘ইলমের অবশিষ্টাংশ। ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেছেন, بِدْعًا مِنْ الرُّسُلِ আমি তো প্রথম রাসূল নই। অন্য তাফসীরকারগণ বলেছেন, أَرَأَيْتُمْ এর الف অক্ষরটি استفهام تهديد এর জন্য এখানে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ তোমাদের দাবী যদি সঠিক হয়, তাহলেও তাদের ‘ইবাদাত করার উপযুক্ত তারা নয়। أَرَأَيْتُمْ -এর অর্থ, চাক্ষুস দেখা নয়; বরং এর অর্থ হচ্ছে, তোমরা কি জানতে যে, আল্লাহ্ ছাড়া তোমরা যাদের ‘ইবাদাত করছ, তারা কি কোন কিছু সৃষ্টি করতে সক্ষম?

{وَالَّذِيْ قَالَ لِوَالِدَيْهِ أُفٍّ لَّكُمَآ أَتَعِدَانِنِيْٓ أَنْ أُخْرَجَ وَقَدْ خَلَتِ الْقُرُوْنُ مِنْ قَبْلِيْ ج وَهُمَا يَسْتَغِيْثَانِ اللهَ وَيْلَكَ اٰمِنْ – إِنَّ وَعْدَ اللهِ حَقٌّ ج فَيَقُوْلُ مَا هٰذَآ إِلَّآ أَسَاطِيْرُ الْأَوَّلِيْنَ}

‘‘আর যে ব্যক্তি তার মাতা-পিতাকে বলেঃ ধিক্ তোমাদেরকে! তোমরা কি আমাকে এ ভয় দেখাও যে, আমি কবর থেকে পুনর্জীবিত হয়ে বহির্গত হব, অথচ আমার পূর্বে বহু জনগোষ্ঠী অতীত হয়েছে? তখন তার মাতা-পিতা আল্লাহর নিকটে ফরিয়াদ করে বলেঃ তোর সর্বনাশ হোক! ঈমান আন। আল্লাহর ওয়াদা অবশ্যই সত্য। কিন্তু সে বলেঃ এটা তো অতীত কালের ভিত্তিহীন উপকথা ব্যতীত আর কিছু নয়।’’ (সূরাহ আল-আহক্বাফ ৪৬/১৭)

৪৮২৭
مُوْسَى بْنُ إِسْمَاعِيْلَ حَدَّثَنَا أَبُوْ عَوَانَةَ عَنْ أَبِيْ بِشْرٍ عَنْ يُوْسُفَ بْنِ مَاهَكَ قَالَ كَانَ مَرْوَانُ عَلَى الْحِجَازِ اسْتَعْمَلَهُ مُعَاوِيَةُ فَخَطَبَ فَجَعَلَ يَذْكُرُ يَزِيْدَ بْنَ مُعَاوِيَةَ لِكَيْ يُبَايَعَ لَهُ بَعْدَ أَبِيْهِ فَقَالَ لَهُ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ أَبِيْ بَكْرٍ شَيْئًا فَقَالَ خُذُوْهُ فَدَخَلَ بَيْتَ عَائِشَةَ فَلَمْ يَقْدِرُوْا فَقَالَ مَرْوَانُ إِنَّ هَذَا الَّذِيْ أَنْزَلَ اللهُ فِيْهِ {وَالَّذِيْ قَالَ لِوَالِدَيْهِ أُفٍّ لَّكُمَآ أَتَعِدَانِنِيْ} فَقَالَتْ عَائِشَةُ مِنْ وَرَاءِ الْحِجَابِ مَا أَنْزَلَ اللهُ فِيْنَا شَيْئًا مِنَ الْقُرْآنِ إِلَّا أَنَّ اللهَ أَنْزَلَ عُذْرِي.

ইউসুফ ইব্‌নু মাহাক থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, মারওয়ান ছিলেন হিজাযের গভর্নর। তাকে নিয়োগ করেছিলেন মু‘আবিয়াহ (রাঃ)। তিনি একদা খুতবা দিলেন এবং তাতে ইয়াযীদ ইব্‌নু মু‘আবিয়ার কথা বারবার বলতে লাগলেন, যেন তাঁর পিতার মৃত্যুর পর তার বায়‘আত গ্রহণ করা হয়। এ সময় তাকে ‘আবদুর রহমান ইব্‌নু আবূ বাক্র কিছু কথা বললেন। মারওয়ান বললেন, তাঁকে পাকড়াও কর। তৎক্ষণাৎ তিনি ‘আয়িশাহ (রাঃ)-এর ঘরে চলে গেলেন। তারা তাঁকে ধরতে পারল না। তারপর মারওয়ান বললেন, এ তো সেই লোক যার সম্বন্ধে আল্লাহ্ অবতীর্ণ করেছেন, “আর এমন লোক আছে যে, মাতাপিতাকে বলে, তোমাদের জন্য আফসোস! তোমরা কি আমাকে এ ভয় দেখাতে চাও যে, আমি পুনরুত্থিত হব যদিও আমার পূর্বে বহু পুরুষ গত হয়েছে, তখন তার মাতাপিতা আল্লাহ্‌র নিকট ফরিয়াদ করে বলে, দুর্ভোগ তোমার জন্য। বিশ্বাস স্থাপন কর, আল্লাহ্‌র প্রতিশ্রুতি অবশ্যই সত্য। কিন্তু সে বলে এ তো অতীতকালের উপকথা ব্যতীত কিছুই নয়।” (আ.প্র. ৪৪৬৩, ই.ফা. ৪৪৬৫)

FOR MORE CLICK HERE

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]