সহীহ বুখারী শরীফ হাদিস তাফসীর অধ্যায় ১৪শ ভাগ হাদিস নং ৪৯০২ – ৪৯২১

৬৫/৬৩/৩.অধ্যায়ঃ
আল্লাহর বাণীঃ এটা এ কারণে যে, তারা ঈমান আনার পর কুফরী করেছে, ফলে তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেয়া হয়েছে, তাই তারা বোঝে না। (সূরাহ মুনাফিকুন ৬৩/৩)

৪৯০২
آدَمُ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنِ الْحَكَمِ قَالَ سَمِعْتُ مُحَمَّدَ بْنَ كَعْبٍ الْقُرَظِيَّ قَالَ سَمِعْتُ زَيْدَ بْنَ أَرْقَمَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ لَمَّا قَالَ عَبْدُ اللهِ بْنُ أُبَيٍّ لَا تُنْفِقُوْا عَلَى مَنْ عِنْدَ رَسُوْلِ اللهِ وَقَالَ أَيْضًا لَئِنْ رَجَعْنَا إِلَى الْمَدِيْنَةِ أَخْبَرْتُ بِهِ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَلَامَنِي الْأَنْصَارُ وَحَلَفَ عَبْدُ اللهِ بْنُ أُبَيٍّ مَا قَالَ ذَلِكَ فَرَجَعْتُ إِلَى الْمَنْزِلِ فَنِمْتُ فَدَعَانِيْ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَأَتَيْتُهُ فَقَالَ إِنَّ اللهَ قَدْ صَدَّقَكَ وَنَزَلَ {هُمُ الَّذِيْنَ يَقُوْلُوْنَ لَا تُنْفِقُوْا} الْآيَةَ وَقَالَ ابْنُ أَبِيْ زَائِدَةَ عَنِ الْأَعْمَشِ عَنْ عَمْرٍو عَنْ ابْنِ أَبِيْ لَيْلَى عَنْ زَيْدٍ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم

যায়দ ইব্‌নু আরকাম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ্ ইব্‌নু উবাই যখন বলল, “আল্লাহ্‌র রসূলের সহচরদের জন্য তোমরা ব্যয় করবে না” এবং এ-ও বলল যে, “যদি আমরা মদিনায় প্রত্যাবর্তন করি…..।” তখন এ খবর আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে জানিয়ে দিলাম। এ কারণে আনসারগণ আমাকে ভর্ৎসনা করলেন এবং ‘আবদুল্লাহ্ ইব্‌নু উবাই কসম করে বলল, এমন কথা সে বলেনি। এরপর আমি আমার অবস্থানে ফিরে আসলাম এবং ঘুমিয়ে পড়লাম। এরপর রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে ডেকে পাঠালেন। আমি তাঁর কাছে গেলাম। তখন তিনি বললেন, আল্লাহ্ তোমাকে সত্য বলে ঘোষণা করেছেন এবং অবতীর্ণ করেছেন- “তারা বলে তোমরা ব্যয় করবে না….শেষ পর্যন্ত। ইব্‌নু আবূ যায়িদাহ (রহ.) উক্ত হাদীস যায়দ ইব্‌নু আরকামের মাধ্যমে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন। [৪৯০০] (আ.প্র. ৪৫৩৪, ই.ফা. ৪৫৩৮)

৬৫/৬৩/৪.অধ্যায়ঃ
আল্লাহর বাণীঃ আর যখন আপনি তাদেরকে দেখবেন, তখন তাদের দৈহিক গঠন আপনাকে চমৎকৃত করবে। আর যদি তারা কথা বলতে থাকে, আপনি তাদের কথা শুনবেন, যদিও তারা দেয়ালে ঠেস লাগানো কাঠ সদৃশ। তারা প্রত্যেকটি শোরগোলকে নিজেদের বিরুদ্ধে মনে করে। তারাই শত্রু, আপনি এদের থেকে সতর্ক থাকুন। আল্লাহ্ এদেরকে বিনাশ করুন। এরা বিভ্রান্ত হয়ে কোন্ দিকে যাচ্ছে? (সূরাহ মুনাফিকূন ৬৩/৪)

৪৯০৩
عَمْرُوْ بْنُ خَالِدٍ حَدَّثَنَا زُهَيْرُ بْنُ مُعَاوِيَةَ حَدَّثَنَا أَبُوْ إِسْحَاقَ قَالَ سَمِعْتُ زَيْدَ بْنَ أَرْقَمَ قَالَ خَرَجْنَا مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِيْ سَفَرٍ أَصَابَ النَّاسَ فِيْهِ شِدَّةٌ فَقَالَ عَبْدُ اللهِ بْنُ أُبَيٍّ لِأَصْحَابِهِ لَا تُنْفِقُوْا عَلَى مَنْ عِنْدَ رَسُوْلِ اللهِ حَتَّى يَنْفَضُّوْا مِنْ حَوْلِهِ وَقَالَ لَئِنْ رَجَعْنَا إِلَى الْمَدِيْنَةِ لَيُخْرِجَنَّ الْأَعَزُّ مِنْهَا الْأَذَلَّ فَأَتَيْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَأَخْبَرْتُهُ فَأَرْسَلَ إِلَى عَبْدِ اللهِ بْنِ أُبَيٍّ فَسَأَلَهُ فَاجْتَهَدَ يَمِيْنَهُ مَا فَعَلَ قَالُوْا كَذَبَ زَيْدٌ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَوَقَعَ فِيْ نَفْسِيْ مِمَّا قَالُوْا شِدَّةٌ حَتَّى أَنْزَلَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ تَصْدِيْقِيْ فِيْ {إِذَا جَآءَكَ الْمُنٰفِقُوْنَ} فَدَعَاهُمْ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم لِيَسْتَغْفِرَ لَهُمْ فَلَوَّوْا رُءُوْسَهُمْ وَقَوْلُهُ {خُشُبٌ مُّسَنَّدَةٌ} قَالَ كَانُوْا رِجَالًا أَجْمَلَ شَيْءٍ.

যায়দ ইব্‌নু আরকাম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা কোন এক সফরে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সঙ্গে বের হলাম। সফরে এক কঠিন অবস্থা লোকদেরকে গ্রাস করে নিল। তখন ‘আবদুল্লাহ্ ইব্‌নু উবাই তার সাথী-সঙ্গীদেরকে বলল, “আল্লাহ্‌র রসূলের সহচরদের জন্য তোমরা ব্যয় করবে না যতক্ষণ তারা সরে পড়ে যারা তার আশে পাশে আছে।” সে এও বলল, “আমরা মদিনায় প্রত্যাবর্তন করলে তথা হতে প্রবল লোকেরা দুর্বল লোকদের বহিষ্কৃত করবেই।” (এ কথা শুনে) আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে এলাম এবং তাঁকে এ সম্পর্কে জানালাম। তখন তিনি ‘আবদুল্লাহ্ ইব্‌নু উবাইকে ডেকে পাঠালেন। সে অতি জোর দিয়ে কসম খেয়ে বলল, এ কথা সে বলেনি। তখন লোকেরা বলল, যায়দ রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে মিথ্যা কথা বলেছে। তাদের এ কথায় আমার খুব দুঃখ হল। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ্ তা‘আলা আমার সত্যতার পক্ষে আয়াত অবতীর্ণ করলেন ঃ “যখন মুনাফিকরা তোমার কাছে আসে।” এরপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদেরকে ডাকলেন, যাতে তিনি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন, “কিন্তু তারা তাদের মাথা ফিরিয়ে নিল।” (আ.প্র. ৪৫৩৫, ই.ফা. ৪৫৩৯)

আল্লাহ্‌র বাণী ঃ “দেয়ালে ঠেস লাগানো কাঠ সদৃশ” (সূরাহ মুনাফিকূন ৬৩/৪)। রাবী বলেন, লোকগুলো দেখতে খুব সুন্দর ছিল। [৪৯০০] (আ.প্র. অনুচ্ছেদ, ই.ফা. অনুচ্ছেদ)

৬৫/৬৩/৫.অধ্যায়ঃ
আল্লাহর বাণীঃ

وَإِذَا قِيْلَ لَهُمْ تَعَالَوْا يَسْتَغْفِرْ لَكُمْ رَسُوْلُ اللهِ لَوَّوْا رُؤُوْسَهُمْ وَرَأَيْتَهُمْ يَصُدُّوْنَ وَهُمْ مُّسْتَكْبِرُوْنَ}

আর যখন তাদেরকে বলা হয়ঃ তোমরা এসো আল্লাহর রসূল তোমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবেন, তখন তারা নিজেদের মাথা ঘুরিয়ে নেয়। আর আপনি তাদের দেখবেন যে, তারা অহংকারের সঙ্গে মুখ ফিরিয়ে নেয়। (সূরাহ মুনাফিকুন ৬৩/৫)

حَرَّكُوا اسْتَهْزَءُوْا بِالنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَيُقْرَأُ بِالتَّخْفِيْفِ مِنْ لَوَيْتُ.

لَوَّوْا তারা মাথা নেড়ে নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ঠাট্টা করত। কেউ কেউ لَوَّوْا শব্দটিকে لَوَيْتُ (تَخْفِيْفِ সহকারে) পড়ে থাকেন।

৪৯০৪
عُبَيْدُ اللهِ بْنُ مُوْسَى عَنْ إِسْرَائِيْلَ عَنْ أَبِيْ إِسْحَاقَ عَنْ زَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ قَالَ كُنْتُ مَعَ عَمِّيْ فَسَمِعْتُ عَبْدَ اللهِ بْنَ أُبَيٍّ ابْنَ سَلُوْلَ يَقُوْلُ لَا تُنْفِقُوْا عَلَى مَنْ عِنْدَ رَسُوْلِ اللهِ حَتَّى يَنْفَضُّوْا وَلَئِنْ رَجَعْنَا إِلَى الْمَدِيْنَةِ لَيُخْرِجَنَّ الْأَعَزُّ مِنْهَا الْأَذَلَّ فَذَكَرْتُ ذَلِكَ لِعَمِّيْ فَذَكَرَ عَمِّيْ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَدَعَانِيْ فَحَدَّثْتُهُ فَأَرْسَلَ إِلَى عَبْدِ اللهِ بْنِ أُبَيٍّ وَأَصْحَابِهِ فَحَلَفُوْا مَا قَالُوْا وَكَذَّبَنِي النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم وَصَدَّقَهُمْ فَأَصَابَنِيْ غَمٌّ لَمْ يُصِبْنِيْ مِثْلُهُ قَطُّ فَجَلَسْتُ فِيْ بَيْتِيْ وَقَالَ عَمِّيْ مَا أَرَدْتَ إِلَى أَنْ كَذَّبَكَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم وَمَقَتَكَ فَأَنْزَلَ اللهُ تَعَالَى {إِذَا جَاءَكَ الْمُنَافِقُوْنَ قَالُوْا نَشْهَدُ إِنَّكَ لَرَسُوْلُ اللهِ} وَأَرْسَلَ إِلَيَّ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَقَرَأَهَا وَقَالَ إِنَّ اللهَ قَدْ صَدَّقَكَ

যায়দ ইব্‌নু আরকাম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আমার চাচার সঙ্গে ছিলাম। এ সময় শুনলাম, ‘আবদুল্লাহ্ ইব্‌নু উবাই ইব্‌নু সালূল বলছে, “আল্লাহ্‌র রসূলের সঙ্গীদের জন্য তোমরা ব্যয় করবে না যতক্ষণ না তারা সরে পড়ে” এবং “আমরা মদিনায় ফিরলে সেখান থেকে প্রবল লোকেরা দুর্বল লোকদেরকে অবশ্যই বের করে দিবে”। এ কথা আমি আমার চাচার কাছে জানালাম। আমার চাচা তা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে জানালেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে ডাকলেন। আমি বিস্তারিতভাবে এ কথা তাঁর কাছে বললাম। তখন তিনি ‘আবদুল্লাহ্ ইব্‌নু উবাই ও তার সাথী-সঙ্গীদেরকে ডেকে পাঠালেন। তারা সকলেই কসম করে বলল, এ কথা তারা বলেনি। ফলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে মিথ্যাচারী ও তাদেরকে সত্যবাদী মনে করলেন। এতে আমি এমন দুঃখ পেলাম যে, এমন দুঃখ আর কখনও পাইনি। এরপর আমি ঘরে বসে গেলাম। তখন আমার চাচা আমাকে বললেন, এমন কাজের কেন ইচ্ছে করলে, যার ফলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তোমাকে মিথ্যাচারী স্থির করলেন এবং তোমার প্রতি অসন্তুষ্ট হলেন? এ সময় আল্লাহ্ তা‘আলা অবতীর্ণ করলেন ঃ “যখন মুনাফিকরা তোমার কাছে আসে তারা বলে, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌র রসূল” তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার কাছে লোক পাঠালেন এবং সূরাটি আমার সামনে তিলাওয়াত করলেন ও বললেন, আল্লাহ্ তোমাকে সত্যবাদী বলে ঘোষণা করেছেন। [৪৯০০] (আ.প্র. ৪৫৩৬, ই.ফা. ৪৫৪০)

৬৫/৬৩/৬.অধ্যায়ঃ
আল্লাহর বাণীঃ আপনি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন অথবা তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা না করেন উভয়ই তাদের জন্য সমান। আল্লাহ্ তাদেরকে কখনও ক্ষমা করবেন না। আল্লাহ্ তো পাপাচারী লোকদেরকে হিদায়াতের তাওফীক দান করেন না। (সূরাহ মুনাফিকুন ৬৩/৬)

৪৯০৫
عَلِيٌّ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ قَالَ عَمْرٌو سَمِعْتُ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ كُنَّا فِيْ غَزَاةٍ قَالَ سُفْيَانُ مَرَّةً فِيْ جَيْشٍ فَكَسَعَ رَجُلٌ مِنَ الْمُهَاجِرِيْنَ رَجُلًا مِنَ الْأَنْصَارِ فَقَالَ الْأَنْصَارِيُّ يَا لَلْأَنْصَارِ وَقَالَ الْمُهَاجِرِيُّ يَا لَلْمُهَاجِرِيْنَ فَسَمِعَ ذَلِكَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ مَا بَالُ دَعْوَى الْجَاهِلِيَّةِ قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ كَسَعَ رَجُلٌ مِنَ الْمُهَاجِرِيْنَ رَجُلًا مِنَ الْأَنْصَارِ فَقَالَ دَعُوْهَا فَإِنَّهَا مُنْتِنَةٌ فَسَمِعَ بِذَلِكَ عَبْدُ اللهِ بْنُ أُبَيٍّ فَقَالَ فَعَلُوْهَا أَمَا وَاللهِ لَئِنْ رَجَعْنَا إِلَى الْمَدِيْنَةِ لَيُخْرِجَنَّ الْأَعَزُّ مِنْهَا الْأَذَلَّ فَبَلَغَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَقَامَ عُمَرُ فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ دَعْنِيْ أَضْرِبْ عُنُقَ هَذَا الْمُنَافِقِ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم دَعْهُ لَا يَتَحَدَّثُ النَّاسُ أَنَّ مُحَمَّدًا يَقْتُلُ أَصْحَابَهُ وَكَانَتْ الْأَنْصَارُ أَكْثَرَ مِنَ الْمُهَاجِرِيْنَ حِيْنَ قَدِمُوا الْمَدِيْنَةَ ثُمَّ إِنَّ الْمُهَاجِرِيْنَ كَثُرُوْا بَعْدُ قَالَ سُفْيَانُ فَحَفِظْتُهُ مِنْ عَمْرٍو قَالَ عَمْرٌو سَمِعْتُ جَابِرًا كُنَّا مَعَ النَّبِيِ صلى الله عليه وسلم

জাবির ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক যুদ্ধে আমরা উপস্থিত ছিলাম। বর্ণনাকারী সুফ্ইয়ান (রহ.) একবার جَيْشٍ এর স্থলে غَزَاةٍ বর্ণনা করেছেন। এ সময় জনৈক মুহাজির এক আনসারীর নিতম্বে আঘাত করলেন। তখন আনসারী হে আনসারী ভাইগণ! বলে সাহায্য প্রার্থনা করলেন এবং মুহাজির সহাবী, ওহে মুহাজির ভাইগণ! বলে সাহায্য প্রার্থনা করলেন। রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তা শুনে বললেন, কী খবর, জাহিলী যুগের মত ডাকাডাকি করছ কেন? তখন উপস্থিত লোকেরা বললেন, এক মুহাজির এক আনসারীর নিতম্বে আঘাত করেছে। তিনি বললেন, এমন ডাকাডাকি পরিত্যাগ কর। এটা অত্যন্ত গন্ধময় কথা। এরপর ঘটনাটি ‘আবদুল্লাহ্ ইব্‌নু উবায়র কানে পৌঁছল, সে বলল, আচ্ছা, মুহাজিররা এমন কাজ করেছে? “আল্লাহ্‌র কসম! আমরা মদিনায় ফিরলে সেখান থেকে প্রবল লোকেরা দুর্বল লোকেদেরকে অবশ্যই বের করে দিবে।” এ কথা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে পৌঁছল। তখন ‘উমার (রাঃ) উঠে দাঁড়ালেন এবং বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনি আমাকে অনুমতি দিন। আমি এক্ষুণি এ মুনাফিকের গর্দান উড়িয়ে দিচ্ছি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তাকে ছেড়ে দাও। ভবিষ্যতে যাতে কেউ এ কথা বলতে না পারে যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর সঙ্গী-সাথীদেরকে হত্যা করেন। জাবির (রাঃ) বলেন, মুহাজিররা যখন মদিনায় হিজরাত করে আসেন, তখন মুহাজিরদের তুলনায় আনসাররা সংখ্যায় বেশি ছিলেন। অবশ্য পরে মুহাজিররা সংখ্যায় বেশি হয়ে যান। সুফ্ইয়ান (রহ.)…..বলেন, এ হাদীসটি আমি আমর (রহ.) থেকে মুখস্থ করেছি। ‘আম্‌র (রহ.) বলেন, আমি জাবির (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সঙ্গে ছিলাম। [৩৫১৮] (আ.প্র. ৪৫৩৭. ই.ফা. ৪৫৪১)

৬৫/৬৩/৭.অধ্যায়ঃ
আল্লাহর বাণীঃ ‘‘এরাই তারা যারা বলে, আল্লাহর রাসূলের সাহচর্যে যারা রয়েছে তাদের জন্য ব্যয় করো না, যতক্ষণ না তারা সরে পড়ে। আসমান ও যমীনের ধনভান্ডার তো আল্লাহরই। কিন্তু মুনাফিকরা তা বুঝে না।’’ (সূরাহ মুনাফিকূন ৬৩/৭)

৪৯০৬
. إِسْمَاعِيْلُ بْنُ عَبْدِ اللهِ قَالَ حَدَّثَنِيْ إِسْمَاعِيْلُ بْنُ إِبْرَاهِيْمَ بْنِ عُقْبَةَ عَنْ مُوْسَى بْنِ عُقْبَةَ قَالَ حَدَّثَنِيْ عَبْدُ اللهِ بْنُ الْفَضْلِ أَنَّهُ سَمِعَ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ يَقُوْلُ حَزِنْتُ عَلَى مَنْ أُصِيْبَ بِالْحَرَّةِ فَكَتَبَ إِلَيَّ زَيْدُ بْنُ أَرْقَمَ وَبَلَغَهُ شِدَّةُ حُزْنِيْ يَذْكُرُ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ اللهُمَّ اغْفِرْ لِلْأَنْصَارِ وَلِأَبْنَاءِ الْأَنْصَارِ وَشَكَّ ابْنُ الْفَضْلِ فِيْ أَبْنَاءِ أَبْنَاءِ الْأَنْصَارِ فَسَأَلَ أَنَسًا بَعْضُ مَنْ كَانَ عِنْدَهُ فَقَالَ هُوَ الَّذِيْ يَقُوْلُ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم هَذَا الَّذِيْ أَوْفَى اللهُ لَهُ بِأُذُنِهِ.

আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, র্হারায় যাদেরকে শহীদ করা হয়েছিল তাদের খবর শুনে শোকে মুহ্যমান হয়েছিলাম। আমার এ শোকের সংবাদ যায়দ ইব্‌নু আরকাম (রাঃ)-এর কাছে পৌঁছলে তিনি আমার কাছে পত্র লিখেন। পত্রে তিনি উল্লেখ করেন যে, তিনি রসূলকে বলতে শুনেছেন, হে আল্লাহ্! আনসার ও আনসারদের সন্তানদেরকে তুমি ক্ষমা করে দাও। এ দু‘আয় রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আনসারদের সন্তানদের সন্তানদের জন্য দু‘আ করেছেন কিনা এ ব্যাপারে ইব্‌নু ফায্ল (রাঃ) সন্দেহ করেছেন। এ ব্যাপারে আনাস (রাঃ) তার কাছে উপস্থিত ব্যক্তিদের কাউকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, যায়দ ইব্‌নু আরকাম (রাঃ) ঐ ব্যক্তি যার শ্রবণকে আল্লাহ্ তা‘আলা সত্য বলে ঘোষণা দিয়েছেন। [মুসলিম ৪৪/৪৩, হাঃ ২৫০৬, আহমাদ ১৯৬৬২] (আ.প্র. ৪৫৩৮, ই.ফা. ৪৫৪২)

৬৫/৬৩/৮.অধ্যায়ঃ
আল্লাহর বাণীঃ তারা বলে: আমরা যদি মদীনায় ফিরে যাই, তবে প্রতিপত্তিশালীরা সেখান থেকে হীন লোকদের অবশ্যই বের করে দিবে। তাদের জেনে রাখা উচিত যে, ইজ্জত ও প্রতিপত্তি তো একমাত্র আল্লাহরই এবং তাঁর রাসূলের ও মু‘মিনদের। কিন্তু মুনাফিকরা তা জানে না। (সূরাহ মুনাফিকূন ৬৩/৮)

৪৯০৭
الْحُمَيْدِيُّ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ قَالَ حَفِظْنَاهُ مِنْ عَمْرِو بْنِ دِيْنَارٍ قَالَ سَمِعْتُ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا يَقُوْلُ كُنَّا فِيْ غَزَاةٍ فَكَسَعَ رَجُلٌ مِنَ الْمُهَاجِرِيْنَ رَجُلًا مِنَ الْأَنْصَارِ فَقَالَ الْأَنْصَارِيُّ يَا لَلْأَنْصَارِ وَقَالَ الْمُهَاجِرِيُّ يَا لَلْمُهَاجِرِيْنَ فَسَمَّعَهَا اللهُ رَسُوْلَهُ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَا هَذَا فَقَالُوْا كَسَعَ رَجُلٌ مِنَ الْمُهَاجِرِيْنَ رَجُلًا مِنَ الْأَنْصَارِ فَقَالَ الْأَنْصَارِيُّ يَا لَلْأَنْصَارِ وَقَالَ الْمُهَاجِرِيُّ يَا لَلْمُهَاجِرِيْنَ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم دَعُوْهَا فَإِنَّهَا مُنْتِنَةٌ قَالَ جَابِرٌ وَكَانَتْ الْأَنْصَارُ حِيْنَ قَدِمَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَكْثَرَ ثُمَّ كَثُرَ الْمُهَاجِرُوْنَ بَعْدُ فَقَالَ عَبْدُ اللهِ بْنُ أُبَيٍّ أَوَقَدْ فَعَلُوْا وَاللهِ لَئِنْ رَجَعْنَا إِلَى الْمَدِيْنَةِ لَيُخْرِجَنَّ الْأَعَزُّ مِنْهَا الْأَذَلَّ فَقَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ دَعْنِيْ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَضْرِبْ عُنُقَ هَذَا الْمُنَافِقِ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم دَعْهُ لَا يَتَحَدَّثُ النَّاسُ أَنَّ مُحَمَّدًا يَقْتُلُ أَصْحَابَهُ.

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক যুদ্ধে আমরা যোগদান করেছিলাম। জনৈক মুহাজির আনসারদের এক ব্যক্তির নিতম্বে আঘাত করলেন। তখন আনসারী সহাবী “আনসারী ভাইগণ!” বলে এবং মুহাজির সহাবী “হে মুহাজির ভাইগণ!” বলে ডাক দিলেন। আল্লাহ্ তাঁর রাসূলের কানে এ কথা পৌঁছিয়ে দিলেন। তিনি বললেন, এটা কেমন ডাকাডাকি? উপস্থিত লোকেরা বললেন, জনৈক মুহাজির ব্যক্তি এক আনসারী ব্যক্তির নিতম্বে আঘাত করেছে। আনসারী ব্যক্তি “হে আনসারী ভাইগণ!” বলে এবং মুহাজির ব্যক্তি “হে মুহাজির ভাইগণ!” বলে নিজ নিজ গোত্রকে ডাক দিলেন। এ কথা শুনে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এ রকম ডাকাডাকি ত্যাগ কর। এগুলো অত্যন্ত দুর্গন্ধযুক্ত কথা। জাবির (রাঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন মদিনায় হিজরাত করে আসেন তখন আনসার সহাবীগণ ছিলেন সংখ্যায় বেশি। পরে মুহাজিরগণ সংখ্যায় বেশি হয়ে যান। এ সব কথা শুনার পর ‘আবদুল্লাহ্ ইব্‌নু উবাই বলল, সত্যিই তারা কি এমন করেছে? আল্লাহ্‌র কসম! আমরা মদিনায় ফিরলে সেখান হতে প্রবল লোকেরা দুর্বল লোকদেরকে বের করে দিবেই। তখন ইব্‌নু খাত্তাব (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনি আমাকে অনুমতি দিন। আমি এ মুনাফিকের গর্দান উড়িয়ে দেই। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘উমার! তাকে ছেড়ে দাও, যাতে লোকেরা এমন কথা বলতে না পারে যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর সাথীদের হত্যা করছেন। [৩৫১৮] (আ.প্র. ৪৫৩৯, ই.ফা. ৪৫৪৩)

৬৫/৬৫/১.অধ্যায়ঃ
পরিচ্ছেদ নাই।

(64) سُوْرَةُ التَّغَابُنِ

সূরাহ (৬৪) : আত্-তাগাবুন

وَقَالَ عَلْقَمَةُ عَنْ عَبْدِ اللهِ {وَمَنْ يُّؤْمِنْمبِاللهِ يَهْدِ قَلْبَه”} هُوَ الَّذِيْ إِذَا أَصَابَتْهُ مُصِيْبَةٌ رَضِيَ وَعَرَفَ أَنَّهَا مِنْ اللهِ وَقَالَ مُجَاهِدٌ التَّغَابُنُ غَبْنُ أَهْلِ الْجَنَّةِ أَهْلَ النَّارِ.

‘আলক্বামাহ (রহ.) ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু মাস‘উদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহর বাণীঃ وَمَنْ يُّؤْمِنْمبِاللهِ يَهْدِ قَلْبَهচ ‘‘আর যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে, তিনি তার অন্তরকে সৎপথ প্রদর্শন করেন।’’ (সূরাহ আত্-তাগাবুন ৬৪/১১)-এর ব্যাখ্যায় বলেন যে, এর দ্বারা এমন লোককে বোঝানো হয়েছে, যখন বিপদগ্রস্ত হয় তখন আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট থাকে এবং এ কথা বুঝতে পারে যে, এ বিপদ আল্লাহর পক্ষ হতেই এসেছে।

(65) سُوْرَةُ الطَّلَاقِ

সূরাহ (৬৫) : আত্-তালাক

وَقَالَ مُجَاهِدٌ {إِنْ ارْتَبْتُمْ} إِنْ لَمْ تَعْلَمُوْا أَتَحِيْضُ أَمْ لَا تَحِيْضُ فَاللَّائِيْ قَعَدْنَ عَنِ الْمَحِيْضِ وَاللَائِيْ لَمْ يَحِضْنَ بَعْدُ {فَعِدَّتُهُنَّ ثَلَاثَةُ أَشْهُرٍ} وَبَالَ أَمْرِهَا جَزَاءَ أَمْرِهَا.

মুজাহিদ (রহ.) বলেন, إِنْ ارْتَبْتُمْ যদি তোমরা অবগত না থাক যে তারা ঋতুমতী হবে কি না, যারা ঋতু হতে অবসর গ্রহণ করেছে আর যাদের এখনও তা শুরু হয়নি। فَعِدَّتُهُنَّ ثَلَاثَةُ أَشْهُرٍ তাদের কৃতকর্মের শাস্তি স্বরূপ।

وَقَالَ مُجَاهِدٌ {إِنْ ارْتَبْتُمْ} إِنْ لَمْ تَعْلَمُوْا أَتَحِيْضُ أَمْ لَا تَحِيْضُ فَاللَّائِيْ قَعَدْنَ عَنِ الْمَحِيْضِ وَاللَائِيْ لَمْ يَحِضْنَ بَعْدُ {فَعِدَّتُهُنَّ ثَلَاثَةُ أَشْهُرٍ} وَبَالَ أَمْرِهَا جَزَاءَ أَمْرِهَا.

মুজাহিদ (রহ.) বলেন, إِنْ ارْتَبْتُمْ যদি তোমরা অবগত না থাক যে তারা ঋতুমতী হবে কি না, যারা ঋতু হতে অবসর গ্রহণ করেছে আর যাদের এখনও তা শুরু হয়নি। فَعِدَّتُهُنَّ ثَلَاثَةُ أَشْهُرٍ তাদের কৃতকর্মের শাস্তি স্বরূপ।

৪৯০৮
يَحْيَى بْنُ بُكَيْرٍ حَدَّثَنَا اللَّيْثُ قَالَ حَدَّثَنِيْ عُقَيْلٌ عَنْ ابْنِ شِهَابٍ قَالَ أَخْبَرَنِيْ سَالِمٌ أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَخْبَرَهُ أَنَّهُ طَلَّقَ امْرَأَتَهُ وَهِيَ حَائِضٌ فَذَكَرَ عُمَرُ لِرَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَتَغَيَّظَ فِيْهِ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم ثُمَّ قَالَ لِيُرَاجِعْهَا ثُمَّ يُمْسِكْهَا حَتَّى تَطْهُرَ ثُمَّ تَحِيْضَ فَتَطْهُرَ فَإِنْ بَدَا لَهُ أَنْ يُطَلِّقَهَا فَلْيُطَلِّقْهَا طَاهِرًا قَبْلَ أَنْ يَمَسَّهَا فَتِلْكَ الْعِدَّةُ كَمَا أَمَرَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ.

‘আবদুল্লাহ্ ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি তাঁর ঋতুবতী স্ত্রীকে ত্বলাক দেয়ার পর ‘উমার (রাঃ) তা রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে উল্লেখ করলেন। এতে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অত্যন্ত নাখোশ হলেন। এরপর তিনি বললেন, সে যেন তাকে ফিরিয়ে নেয়। এরপর পবিত্রাবস্থা না আসা পর্যন্ত তাকে নিজের কাছে রেখে দিক। এরপর ঋতু এসে আবার পবিত্র হলে তখন যদি ত্বলাক দিতে চায় তাহলে পবিত্রাবস্থায় স্পর্শ করার পূর্বে সে যেন তাকে ত্বলাক দেয়। এটি সেই ইদ্দত যেটি পালনের নির্দেশ আল্লাহ দিয়েছেন। [৫২৫১, ৫২৫২, ৫২৫৩, ৫২৫৮, ৫২৬৪, ৫৩৩২, ৫৩৩৩, ৭১৬০] (আ.প্র. ৪৫৪০, ই.ফা. ৪৫৪৪)

৬৫/৬৫/২.অধ্যায়ঃ
পরিচ্ছেদ নাই।

{وَأُولَاتُ الْأَحْمَالِ أَجَلُهُنَّ أَنْ يَّضَعْنَ حَمْلَهُنَّ ط وَمَنْ يَّتَّقِ اللهَ يَجْعَلْ لَّه” مِنْ أَمْرِهٰ يُسْرًا}

‘‘তবে গর্ভবতী স্ত্রীলোকদের ইদ্দাত তাদের গর্ভের সন্তান প্রসব হওয়া পর্যন্ত। যে ব্যক্তি আল্লাহ্কে ভয় করে, তিনি তার প্রত্যেক কাজ সহজ করে দেন।’’ (সূরাহ আত্-ত্বলাক্ব ৬৫/৪)

وَأُوْلَاتُ الْأَحْمَالِ وَاحِدُهَا ذَاتُ حَمْلٍ.

أُوْلَاتُ الْأَحْمَالِ এর একবচন ذَاتُ حَمْلٍ

৪৯০৯
سَعْدُ بْنُ حَفْصٍ حَدَّثَنَا شَيْبَانُ عَنْ يَحْيَى قَالَ أَخْبَرَنِيْ أَبُوْ سَلَمَةَ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى ابْنِ عَبَّاسٍ وَأَبُوْ هُرَيْرَةَ جَالِسٌ عِنْدَهُ فَقَالَ أَفْتِنِيْ فِي امْرَأَةٍ وَلَدَتْ بَعْدَ زَوْجِهَا بِأَرْبَعِيْنَ لَيْلَةً فَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ آخِرُ الْأَجَلَيْنِ قُلْتُ أَنَا {وَأُوْلَاتُ الْأَحْمَالِ أَجَلُهُنَّ أَنْ يَضَعْنَ حَمْلَهُنَّ} قَالَ أَبُوْ هُرَيْرَةَ أَنَا مَعَ ابْنِ أَخِيْ يَعْنِيْ أَبَا سَلَمَةَ فَأَرْسَلَ ابْنُ عَبَّاسٍ غُلَامَهُ كُرَيْبًا إِلَى أُمِّ سَلَمَةَ يَسْأَلُهَا فَقَالَتْ قُتِلَ زَوْجُ سُبَيْعَةَ الْأَسْلَمِيَّةِ وَهِيَ حُبْلَى فَوَضَعَتْ بَعْدَ مَوْتِهِ بِأَرْبَعِيْنَ لَيْلَةً فَخُطِبَتْ فَأَنْكَحَهَا رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَكَانَ أَبُو السَّنَابِلِ فِيْمَنْ خَطَبَهَا.

আবূ সালামাহ (রহ.) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর কাছে ছিলেন, এমন সময় এক ব্যক্তি ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর কাছে এলেন এবং বললেন, এক মহিলা তাঁর স্বামীর মৃত্যুর চল্লিশ দিন পর বাচ্চা প্রসব করেছে। সে এখন কীভাবে ইদ্দত পালন করবে, এ বিষয়ে আমাকে ফতোয়া দিন। ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, ইদ্দত সম্পর্কিত হুকুম্ দু’টির যেটি দীর্ঘ, তাকে সেটি পালন করতে হবে। আবূ সালামাহ (রহ.) বলেন, আমি বললাম, আল্লাহ্‌র হুকুম তো হল ঃ গর্ভবতী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বলেন, আমি আমার ভ্রাতুষ্পুত্র অর্থাৎ আবূ সালামার সঙ্গে আছি। তখন ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) তাঁর ক্রীতদাস কুরায়বকে বিষয়টি জিজ্ঞেস করার জন্য উম্মু সালামাহ (রাঃ)-এর কাছে পাঠালেন। তিনি বললেন, সুবায়‘আ আসলামিয়া (রাঃ)-এর স্বামীকে হত্যা করা হল, তিনি তখন গর্ভবতী ছিলেন। স্বামীর মৃত্যুর চল্লিশ দিন পর তিনি সন্তান প্রসব করলেন। এরপরই তার কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠানো হল। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে বিয়ে করিয়ে দিলেন। যারা তাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন আবুস্ সানাবিল তাদের মধ্যে একজন। [৫৩১৮] (আ.প্র. ৪৫৪১, ই.ফা. ৪৫৪৫)

৬৫/৬৬/১.অধ্যায়ঃ
‘‘হে নাবী! আল্লাহ্ আপনার জন্য যা হালাল করেছেন, আপনি তা হারাম করেছেন কেন? আপনি আপনার স্ত্রীদের খুশী করতে চাইছেন। আল্লাহ্ অতিশয় ক্ষমাশীল, পরম দয়াল।’’ (সূরাহ আত্-তাহরীম ৬৬/১)

(66) سُوْرَةُ التَّحْرِيْمِ

সূরাহ (৬৬) : আত্-তাহরীম

৪৯১১
مُعَاذُ بْنُ فَضَالَةَ حَدَّثَنَا هِشَامٌ عَنْ يَحْيَى عَنْ ابْنِ حَكِيْمٍ هُوَ يَعْلَى بْنُ حَكِيْمٍ الثَّقَفِيُّ عَنْ سَعِيْدِ بْنِ جُبَيْرٍ أَنَّ ابْنَ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ فِي الْحَرَامِ يُكَفَّرُ وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ {لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيْ رَسُوْلِ اللهِ إِسْوَةٌ حَسَنَةٌ}.

সা‘ঈদ ইব্‌নু যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, এরূপ হারাম করে নেয়া হলে কাফ্ফারা দিতে হবে। ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) এ-ও বলেছেন যে, “রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর মাঝে রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ।” [৫২৬৬; মুসলিম ১৮/৩, হাঃ ১৪৭৩, আহমাদ ১৯৭৬] আ.প্র. ৪৫৪২, ই.ফা. ৪৫৪৬)

৪৯১২
إِبْرَاهِيْمُ بْنُ مُوْسَى أَخْبَرَنَا هِشَامُ بْنُ يُوْسُفَ عَنْ ابْنِ جُرَيْجٍ عَنْ عَطَاءٍ عَنْ عُبَيْدِ بْنِ عُمَيْرٍ عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَشْرَبُ عَسَلًا عِنْدَ زَيْنَبَ بِنْتِ جَحْشٍ وَيَمْكُثُ عِنْدَهَا فَوَاطَيْتُ أَنَا وَحَفْصَةُ عَلَى أَيَّتُنَا دَخَلَ عَلَيْهَا فَلْتَقُلْ لَهُ أَكَلْتَ مَغَافِيْرَ إِنِّيْ أَجِدُ مِنْكَ رِيْحَ مَغَافِيْرَ قَالَ لَا وَلَكِنِّيْ كُنْتُ أَشْرَبُ عَسَلًا عِنْدَ زَيْنَبَ بِنْتِ جَحْشٍ فَلَنْ أَعُوْدَ لَهُ وَقَدْ حَلَفْتُ لَا تُخْبِرِيْ بِذَلِكَ أَحَدًا.

‘আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যয়নব বিন্ত জাহ্শ (রাঃ)-এর কাছে মধু পান করতেন এবং সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান করতেন। তাই আমি এবং হাফ্সাহ স্থির করলাম যে, আমাদের যার ঘরেই রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আসবেন, সে তাঁকে বলবে, আপনি কি মাগাফীর খেয়েছেন? আপনার মুখ থেকে মাগাফীরের গন্ধ পাচ্ছি। তিনি বললেন, না, বরং আমি যয়নব বিন্ত জাহ্শ (রাঃ)-এর নিকট মধু পান করেছি। আমি কসম করলাম, আর কখনও মধু পান করব না। তুমি এ ব্যাপারে অন্য কাউকে জানাবে না। [৫২১৬, ৫২৬৭, ৫২৬৮, ৫৪৩১, ৫৫৯৯, ৫৬১৪, ৫৬৮২, ৬৬৯১, ৬৯৭২] (আ.প্র. ৪৫৪৩, ই.ফা. ৪৫৪৭)

৬৫/৬৬/২.অধ্যায়ঃ
আল্লাহর বাণীঃ

{تَبْتَغِيْ مَرْضَاتَ أَزْوَاجِكَ ط وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ – قَدْ فَرَضَ اللهُ لَكُمْ تَحِلَّةَ أَيْمَانِكُمْ ج وَاللهُ مَوْلٰكُمْ ج وَهُوَ الْعَلِيْمُ الْحَكِيْمُ}.

আপনি আপনার স্ত্রীদের খুশী করতে চাইছেন। আল্লাহ তো তোমাদের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন কসম থেকে মুক্তির ব্যবস্থা। আল্লাহ তোমাদের বন্ধু। তিনি সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। (সূরাহ আত্-তাহরীম ৬৬/১-২)

৪৯১৩
عَبْدُ الْعَزِيْزِ بْنُ عَبْدِ اللهِ حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ بِلَالٍ عَنْ يَحْيَى عَنْ عُبَيْدِ بْنِ حُنَيْنٍ أَنَّهُ سَمِعَ ابْنَ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا يُحَدِّثُ أَنَّهُ قَالَ مَكَثْتُ سَنَةً أُرِيْدُ أَنْ أَسْأَلَ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ عَنْ آيَةٍ فَمَا أَسْتَطِيْعُ أَنْ أَسْأَلَهُ هَيْبَةً لَهُ حَتَّى خَرَجَ حَاجًّا فَخَرَجْتُ مَعَهُ فَلَمَّا رَجَعْنَا وَكُنَّا بِبَعْضِ الطَّرِيْقِ عَدَلَ إِلَى الْأَرَاكِ لِحَاجَةٍ لَهُ قَالَ فَوَقَفْتُ لَهُ حَتَّى فَرَغَ ثُمَّ سِرْتُ مَعَهُ فَقُلْتُ يَا أَمِيْرَ الْمُؤْمِنِيْنَ مَنْ اللَّتَانِ تَظَاهَرَتَا عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم مِنْ أَزْوَاجِهِ فَقَالَ تِلْكَ حَفْصَةُ وَعَائِشَةُ قَالَ فَقُلْتُ وَاللهِ إِنْ كُنْتُ لَأُرِيْدُ أَنْ أَسْأَلَكَ عَنْ هَذَا مُنْذُ سَنَةٍ فَمَا أَسْتَطِيْعُ هَيْبَةً لَكَ قَالَ فَلَا تَفْعَلْ مَا ظَنَنْتَ أَنَّ عِنْدِيْ مِنْ عِلْمٍ فَاسْأَلْنِيْ فَإِنْ كَانَ لِيْ عِلْمٌ خَبَّرْتُكَ بِهِ قَالَ ثُمَّ قَالَ عُمَرُ وَاللهِ إِنْ كُنَّا فِي الْجَاهِلِيَّةِ مَا نَعُدُّ لِلنِّسَاءِ أَمْرًا حَتَّى أَنْزَلَ اللهُ فِيْهِنَّ مَا أَنْزَلَ وَقَسَمَ لَهُنَّ مَا قَسَمَ قَالَ فَبَيْنَا أَنَا فِيْ أَمْرٍ أَتَأَمَّرُهُ إِذْ قَالَتْ امْرَأَتِيْ لَوْ صَنَعْتَ كَذَا وَكَذَا قَالَ فَقُلْتُ لَهَا مَا لَكَ وَلِمَا هَا هُنَا وَفِيْمَ تَكَلُّفُكِ فِيْ أَمْرٍ أُرِيْدُهُ فَقَالَتْ لِيْ عَجَبًا لَكَ يَا ابْنَ الْخَطَّابِ مَا تُرِيْدُ أَنْ تُرَاجَعَ أَنْتَ وَإِنَّ ابْنَتَكَ لَتُرَاجِعُ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم حَتَّى يَظَلَّ يَوْمَهُ غَضْبَانَ فَقَامَ عُمَرُ فَأَخَذَ رِدَاءَهُ مَكَانَهُ حَتَّى دَخَلَ عَلَى حَفْصَةَ فَقَالَ لَهَا يَا بُنَيَّةُ إِنَّكِ لَتُرَاجِعِيْنَ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم حَتَّى يَظَلَّ يَوْمَهُ غَضْبَانَ فَقَالَتْ حَفْصَةُ وَاللهِ إِنَّا لَنُرَاجِعُهُ فَقُلْتُ تَعْلَمِيْنَ أَنِّيْ أُحَذِّرُكِ عُقُوْبَةَ اللهِ وَغَضَبَ رَسُوْلِهِ صلى الله عليه وسلم يَا بُنَيَّةُ لَا يَغُرَّنَّكِ هَذِهِ الَّتِيْ أَعْجَبَهَا حُسْنُهَا حُبُّ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِيَّاهَا يُرِيْدُ عَائِشَةَ قَالَ ثُمَّ خَرَجْتُ حَتَّى دَخَلْتُ عَلَى أُمِّ سَلَمَةَ لِقَرَابَتِيْ مِنْهَا فَكَلَّمْتُهَا فَقَالَتْ أُمُّ سَلَمَةَ عَجَبًا لَكَ يَا ابْنَ الْخَطَّابِ دَخَلْتَ فِيْ كُلِّ شَيْءٍ حَتَّى تَبْتَغِيَ أَنْ تَدْخُلَ بَيْنَ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَأَزْوَاجِهِ فَأَخَذَتْنِيْ وَاللهِ أَخْذًا كَسَرَتْنِيْ عَنْ بَعْضِ مَا كُنْتُ أَجِدُ فَخَرَجْتُ مِنْ عِنْدِهَا وَكَانَ لِيْ صَاحِبٌ مِنَ الْأَنْصَارِ إِذَا غِبْتُ أَتَانِيْ بِالْخَبَرِ وَإِذَا غَابَ كُنْتُ أَنَا آتِيْهِ بِالْخَبَرِ وَنَحْنُ نَتَخَوَّفُ مَلِكًا مِنْ مُلُوْكِ غَسَّانَ ذُكِرَ لَنَا أَنَّهُ يُرِيْدُ أَنْ يَسِيْرَ إِلَيْنَا فَقَدْ امْتَلَأَتْ صُدُوْرُنَا مِنْهُ فَإِذَا صَاحِبِي الْأَنْصَارِيُّ يَدُقُّ الْبَابَ فَقَالَ افْتَحْ افْتَحْ فَقُلْتُ جَاءَ الْغَسَّانِيُّ فَقَالَ بَلْ أَشَدُّ مِنْ ذَلِكَ اعْتَزَلَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَزْوَاجَهُ فَقُلْتُ رَغَمَ أَنْفُ حَفْصَةَ وَعَائِشَةَ فَأَخَذْتُ ثَوْبِيْ فَأَخْرُجُ حَتَّى جِئْتُ فَإِذَا رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فِيْ مَشْرُبَةٍ لَهُ يَرْقَى عَلَيْهَا بِعَجَلَةٍ وَغُلَامٌ لِرَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلمأَسْوَدُ عَلَى رَأْسِ الدَّرَجَةِ فَقُلْتُ لَهُ قُلْ هَذَا عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ فَأَذِنَ لِيْ قَالَ عُمَرُ فَقَصَصْتُ عَلَى رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم هَذَا الْحَدِيْثَ فَلَمَّا بَلَغْتُ حَدِيْثَ أُمِّ سَلَمَةَ تَبَسَّمَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَإِنَّهُ لَعَلَى حَصِيْرٍ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَهُ شَيْءٌ وَتَحْتَ رَأْسِهِ وِسَادَةٌ مِنْ أَدَمٍ حَشْوُهَا لِيْفٌ وَإِنَّ عِنْدَ رِجْلَيْهِ قَرَظًا مَصْبُوْبًا وَعِنْدَ رَأْسِهِ أَهَبٌ مُعَلَّقَةٌ فَرَأَيْتُ أَثَرَ الْحَصِيْرِ فِيْ جَنْبِهِ فَبَكَيْتُ فَقَالَ مَا يُبْكِيْكَ فَقُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنَّ كِسْرَى وَقَيْصَرَ فِيْمَا هُمَا فِيْهِ وَأَنْتَ رَسُوْلُ اللهِ فَقَالَ أَمَا تَرْضَى أَنْ تَكُوْنَ لَهُمْ الدُّنْيَا وَلَنَا الآخِرَةُ.

‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ‘উমার ইব্‌নু খাত্তাব (রাঃ)-কে এ আয়াতের ব্যাখ্যা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য আমি এক বছর অপেক্ষা করেছি। কিন্তু তাঁর ব্যক্তি প্রভাবের ভয়ে আমি তাঁকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে পারিনি। অবশেষে তিনি হাজ্জের উদ্দেশে রওয়ানা হলে, আমিও তাঁর সঙ্গে গেলাম। ফেরার পথে আমরা যখন কোন একটি রাস্তা অতিক্রম করছিলাম, তখন তিনি প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণের জন্য একটি পিলু গাছের আড়ালে গেলেন। ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, তিনি প্রয়োজন সেরে না আসা পর্যন্ত আমি সেখানে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করলাম। এরপর তাঁর সঙ্গে পথ চলতে চলতে বললাম, হে আমীরুল মু’মিনীন! নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর স্ত্রীদের কোন্ দু’জন তার বিপক্ষে একমত হয়ে পরস্পর একে অন্যকে সহযোগিতা করেছিলেন? তিনি বললেন, তাঁরা দু’জন হল হাফসাহ ও ‘আয়িশাহ (রাঃ)। ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, আল্লাহ্‌র শপথ! আমি আপনাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করার জন্য এক বছর যাবৎ ইচ্ছে করেছিলাম। কিন্তু আপনার ভয়ে আমার পক্ষে তা সম্ভব হয়নি। তখন ‘উমার (রাঃ) বললেন, এ রকম করবে না। যে বিষয়ে তুমি মনে করবে যে, আমি তা জানি, তা আমাকে জিজ্ঞেস করবে। এ বিষয়ে আমার জানা থাকলে আমি তোমাকে জানিয়ে দেব। তিনি বলেন, এরপর ‘উমার (রাঃ) বললেন, আল্লাহ্‌র শপথ! জাহিলী যুগে মহিলাদের কোন অধিকার আছে বলে আমরা মনে করতাম না। অবশেষে আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের সম্পর্কে যে বিধান অবতীর্ণ করার ছিল তা অবতীর্ণ করলেন এবং তাদের হক হিসাবে যা নির্দিষ্ট করার ছিল তা নির্দিষ্ট করলেন। তিনি বলেন, একদিন আমি কোন এক ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা করছিলাম, এমন সময় আমার স্ত্রী আমাকে বললেন, কাজটি যদি তুমি এভাবে এভাবে করতে। আমি বললাম, তোমার কী প্রয়োজন? এবং আমার কাজে তোমার এ অনধিকার চর্চা কেন। সে আমাকে বলল, হে খাত্তাবের বেটা! কি আশ্চর্য, তুমি চাও না যে, আমি তোমার কথার উত্তর দান করি অথচ তোমার কন্যা হাফ্সাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কথার পৃষ্ঠে কথা বলে থাকে। এমনকি একদিন তো সে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে রাগানি¦ত করে ফেলে। এ কথা শুনে ‘উমার (রাঃ) দাঁড়িয়ে গেলেন এবং চাদরখানা নিয়ে তার বাড়িতে চলে গেলেন। তিনি তাকে বললেন, বেটী! তুমি নাকি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কথার প্রতি-উত্তর করে থাক। ফলে তিনি দিনভর দুঃখিত থাকেন। হাফ্সাহ (রাঃ) বলেন, আল্লাহ্‌র কসম! আমরা তো অবশ্যই তাঁর কথার জবাব দিয়ে থাকি। ‘উমার (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, জেনে রাখ! আমি তোমাকে আল্লাহ্‌র শাস্তি এবং রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর অসন্তুষ্টি সম্পর্কে সতর্ক করছি। রূপ-সৌন্দর্যের কারণে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ভালবাসা যাকে গর্বিতা করে রেখেছে, সে যেন তোমাকে প্রতারিত না করতে পারে। এ কথা বলে ‘উমার (রাঃ) ‘আয়িশাহ (রাঃ)-কে বোঝাচ্ছিলেন। ‘উমার (রাঃ) বলেন, এরপর আমি সেখান থেকে বেরিয়ে আসলাম এবং উম্মু সালামাহ (রাঃ)-এর ঘরে প্রবেশ করলাম ও এ ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করলাম। কারণ, তাঁর সঙ্গে আমার আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল। তখন উম্মু সালামাহ (রাঃ) বললেন, হে খাত্তাবের বেটা! কি আশ্চর্য, তুমি প্রত্যেক ব্যাপারেই নাক গলাচ্ছ, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও তার স্ত্রীদের ব্যাপারেও হস্তক্ষেপ করতে চাচ্ছ। আল্লাহ্‌র কসম! তিনি আমাকে এমন শক্তভাবে ধরলেন যে, আমার রাগ খতম হয়ে গেল। এরপর আমি তাঁর নিকট হতে চলে আসলাম। আমার একজন আনসার বন্ধু ছিল। যদি আমি কোন মাজলিসে অনুপস্থিত থাকতাম তাহলে সে এসে মাজলিসের খবর আমাকে জানাত। আর সে যদি অনুপস্থিত থাকত তাহলে আমি এসে তাকে মাজলিসের খবর জানাতাম। সে সময় আমরা গাস্সানী বাদশার আক্রমণের আশংকা করছিলাম। আমাদেরকে বলা হয়েছিল যে, সে আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য রওয়ানা হয়েছে। তাই আমাদের হৃদয়-মন এ ভয়ে শংকিত ছিল। এমন সময় আমার আনসার বন্ধু এসে দরজায় আঘাত করে বললেন, দরজা খুলুন, দরজা খুলুন। আমি বললাম, গাস্সানীরা চলে এসেছে নাকি? তিনি বললেন, বরং এর চেয়েও কঠিন ব্যাপার ঘটে গেছে। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর সহধর্মিণীদের থেকে পৃথক হয়ে গিয়েছেন। তখন আমি বললাম, হাফ্সাহ ও ‘আয়িশাহর নাক ধূলায় ধূসরিত হোক। এরপর আমি কাপড় নিয়ে বেরিয়ে গেলাম। গিয়ে দেখলাম, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একটি উঁচু কক্ষে অবস্থান করছেন। সিঁড়ি বেয়ে সেখানে পৌঁছতে হয়। সিঁড়ির মুখে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর একজন কালো গোলাম বসা ছিল। আমি বললাম, বলুন, ‘উমার ইব্‌নু খাত্তাব এসেছেন। এরপর রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে অনুমতি দিলেন, আমি তাঁকে সব কথা বললাম, আমি যখন উম্মু সালামার কপোপকথন পর্যন্ত পৌঁছলাম তখন রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মুচকি হাসলেন। এ সময় তিনি একটা চাটাইয়ের উপর শুয়ে ছিলেন। চাটাই এবং রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর মাঝে আর কিছুই ছিল না। তাঁর মাথার নিচে ছিল খেজুরের ছালভর্তি চামড়ার একটি বালিশ এবং পায়ের কাছে ছিল সল্ম বৃক্ষের পাতার একটি স্তূপ ও মাথার উপর লটকানো ছিল চামড়ার একটি মশক। আমি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর এক পার্শ্বে চাটাইয়ের দাগ দেখে কেঁদে ফেললে তিনি বললেন, তুমি কেন কাঁদছ? আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! কিসরা ও কায়সার পার্থিব ভোগ-বিলাসের মধ্যে ডুবে আছে, অথচ আপনি আল্লাহ্‌র রসূল। তখন রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি এতে সন্তুষ্ট নও যে, তারা দুনিয়া লাভ করুক, আর আমরা আখিরাত লাভ করি। [৮৯; মুসলিম ১৮/৫, হাঃ ১৪৭৯] (আ.প্র. ৪৫৪৪, ই.ফা. ৪৫৪৮)

৬৫/৬৬/৩.অধ্যায়ঃ
পরিচ্ছেদ নাই।

{وَإِذْ أَسَرَّ النَّبِيُّ إِلٰى بَعْضِ أَزْوَاجِهٰ حَدِيْثًا ج فَلَمَّا نَبَّأَتْ بِهٰ وَأَظْهَرَهُ اللهُ عَلَيْهِ عَرَّفَ بَعْضَه” وَأَعْرَضَ عَنْمبَعْضٍ ج فَلَمَّا نَبَّأَهَا بِهٰ قَالَتْ مَنْ أَنْـ.ـبَأَكَ هٰذَا ط قَالَ نَبَّأَنِيَ الْعَلِيْمُ الْخَبِيْرُ}

‘‘স্মরণ কর, নাবী তাঁর স্ত্রীদের একজনের কাছে গোপনে কিছু কথা বলেছিলেন, তারপর যখন সে তা অন্যকে বলে দিল এবং আল্লাহ নাবীকে তা জানিয়ে দিলেন, তখন নাবী সে বিষয়ে কিছু ব্যক্ত করলেন এবং কিছু ব্যক্ত করলেন না। অতঃপর যখন তিনি তা তার স্ত্রীকে বললেন তখন সে বললঃ কে আপনাকে এ ব্যাপারে অবহিত করেছেন? নাবী বললেনঃ আমাকে অবহিত করেছেন আল্লাহ্ যিনি সর্বজ্ঞ, সব কিছুর খবর রাখেন।’’ (সূরাহ আত্-তাহরীম ৬৬/৩)

فِيْهِ عَائِشَةُ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم

এ বিষয়ে ‘আয়িশাহ (রাঃ)-ও এক হাদীস নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন।

৪৯১৪
عَلِيٌّ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيْدٍ قَالَ سَمِعْتُ عُبَيْدَ بْنَ حُنَيْنٍ قَالَ سَمِعْتُ ابْنَ عَبَّاسٍ يَقُوْلُ أَرَدْتُ أَنْ أَسْأَلَ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ فَقُلْتُ يَا أَمِيْرَ الْمُؤْمِنِيْنَ مَنْ الْمَرْأَتَانِ اللَّتَانِ تَظَاهَرَتَا عَلَى رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَمَا أَتْمَمْتُ كَلَامِيْ حَتَّى قَالَ عَائِشَةُ وَحَفْصَةُ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا. قُوْا {أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيْكُمْ} قَالَ مُجَاهِدٌ أَوْصُوْا.

ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি ‘উমার (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করতে চাইলাম। আমি বললাম, হে আমীরুল মু’মিনীন! নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সহধর্মিণীদের কোন্ দু’জন তাঁর ব্যাপারে একমত হয়ে পরস্পর একে অন্যকে সহযোগিতা করেছিলেন? আমি আমার কথা শেষ করার আগেই তিনি বললেন, ‘আয়িশাহ এবং হাফসাহ (রাঃ)। (আ.প্র. ৪৫৪৫, ই.ফা. ৪৫৪৯)

৬৫/৬৬/৪.অধ্যায়ঃ
আল্লাহর বাণীঃ তোমাদের অন্তর অন্যায়ের দিকে ঝুঁকে পড়েছে, তাই তোমরা উভয়ে তাওবা করলে ভাল হয়। (সূরাহ আত্-তাহরীম ৬৬/৪)

صَغَوْتُ وَأَصْغَيْتُ مِلْتُ لِتَصْغَى لِتَمِيْلَ وَإِنْ تَظَاهَرَا عَلَيْهِ فَإِنَّ اللهَ هُوَ مَوْلَاهُ وَجِبْرِيْلُ وَصَالِحُ الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمَلَائِكَةُ بَعْدَ ذَلِكَ ظَهِيْرٌ عَوْنٌ تَظَاهَرُوْنَ تَعَاوَنُوْنَ وَقَالَ مُجَاهِدٌ {قُوْآ أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيْكُمْ} أَوْصُوْا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيْكُمْ بِتَقْوَى اللهِ وَأَدِّبُوْهُمْ.

صَغَوْتُ এবং َأَصْغَيْتُ(ثلاثى مجرد وموزيد فيه) উভয়ের অর্থ আমি ঝুঁকে পড়েছি। لِتَصْغَى অর্থ- لِتَمِيْلَ মানে যেন সে অনুরাগী হয়, ঝুঁকে পড়ে। ‘‘কিন্তু যদি তোমরা নাবীর বিরুদ্ধে একে অপরকে সাহায্য কর তবে জেনে রাখ, আল্লাহ্ই তাঁর বন্ধু এবং জিব্রীল ও নেককার মু’মিনরাও, তাছাড়া অন্যান্য মালাকগণও তাঁর সাহায্যকারী’’- (সূরাহ আত্-তাহরীম ৬৬/৪)।ظَهِيْرٌ সাহায্যকারী تَظَاهَرُوْنَ পরস্পর তোমরা একে অপরকে সাহায্য করছ। মুজাহিদ (রহ.) বলেন,قُوْآ أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيْكُمْ بِتَقْوَى اللهِ وَأَدِّبُوْهُمْ ‘‘তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে রক্ষা কর’’- (সূরাহ আত্-তাহরীম ৬৬/৬)। তাকওয়া অবলম্বন করার জন্য ওসীয়াত কর এবং তাদেরকে আদব শিক্ষা দাও।

৪৯১৫
الْحُمَيْدِيُّ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيْدٍ قَالَ سَمِعْتُ عُبَيْدَ بْنَ حُنَيْنٍ يَقُوْلُ سَمِعْتُ ابْنَ عَبَّاسٍ يَقُوْلُ كُنْتُ أُرِيْدُ أَنْ أَسْأَلَ عُمَرَ عَنِ الْمَرْأَتَيْنِ اللَّتَيْنِ تَظَاهَرَتَا عَلَى رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَمَكَثْتُ سَنَةً فَلَمْ أَجِدْ لَهُ مَوْضِعًا حَتَّى خَرَجْتُ مَعَهُ حَاجًّا فَلَمَّا كُنَّا بِظَهْرَانَ ذَهَبَ عُمَرُ لِحَاجَتِهِ فَقَالَ أَدْرِكْنِيْ بِالْوَضُوْءِ فَأَدْرَكْتُهُ بِالإِدَاوَةِ فَجَعَلْتُ أَسْكُبُ عَلَيْهِ الْمَاءَ وَرَأَيْتُ مَوْضِعًا فَقُلْتُ يَا أَمِيْرَ الْمُؤْمِنِيْنَ مَنْ الْمَرْأَتَانِ اللَّتَانِ تَظَاهَرَتَا قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ فَمَا أَتْمَمْتُ كَلَامِيْ حَتَّى قَالَ عَائِشَةُ وَحَفْصَةُ.

ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যে দু’জন মহিলা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর বিরুদ্ধে পরস্পর একে অন্যকে সাহায্য করেছিল, তাদের সম্পর্কে ‘উমার (রাঃ)-কে আমি জিজ্ঞেস করার ইচ্ছে করছিলাম। কিন্তু জিজ্ঞেস করার সুযোগ না পেয়ে আমি এক বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। শেষে একবার হজ্জ করার জন্য তাঁর সঙ্গে আমি যাত্রা করলাম। আমরা ‘যাহ্রান’ নামক স্থানে পৌঁছলে ‘উমার (রাঃ) প্রাকৃতিক প্রয়োজনে গেলেন। এরপর আমাকে বললেন, আমার জন্য ওযুর পানির ব্যবস্থা কর। আমি পাত্র ভরে পানি নিয়ে আসলাম এবং ঢেলে দিতে লাগলাম। সুযোগ মনে করে আমি তাঁকে বললাম, হে আমীরুল মু’মিনীন! ঐ দু’জন মহিলা কে কে, যারা একে অন্যকে সাহায্য করেছিল? ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমি আমার কথা শেষ করার আগেই তিনি বললেন, ‘আয়িশাহ ও হাফ্সাহ (রাঃ)। [৮৯] (আ.প্র. ৪৫৪৬, ই.ফা. ৪৫৫০)

৬৫/৬৬/৫.অধ্যায়ঃ
আল্লাহর বাণীঃ

{عَسٰى رَبُّه”ٓ إِنْ طَلَّقَكُنَّ أَنْ يُّبْدِلَهٓ” أَزْوَاجًا خَيْرًا مِّنْكُنَّ مُسْلِمٰتٍ مُّؤْمِنٰتٍ قٰنِتٰتٍ تَآئِبٰتٍ عَابِدٰتٍ سَآئِحٰتٍ ثَيِّبٰتٍ وَّأَبْكَارًا}

‘‘যদি নাবী তোমাদের সবাইকে ত্বলাক দেন, তবে তাঁর রব অচিরেই তোমাদের পরিবর্তে তোমাদের চেয়ে উত্তম স্ত্রী তাঁকে দিবেন, যারা হবে আজ্ঞাবহ, ঈমানদার, অনুগত, তাওবাহ্কারিণী, ‘ইবাদাতকারিণী, সওম পালনকারীণী, অকুমারী ও কুমারী।’’ (সূরাহ আত্-তাহরীম ৬৬/৫)

৪৯১৬
عَمْرُوْ بْنُ عَوْنٍ حَدَّثَنَا هُشَيْمٌ عَنْ حُمَيْدٍ عَنْ أَنَسٍ قَالَ قَالَ عُمَرُ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ اجْتَمَعَ نِسَاءُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِي الْغَيْرَةِ عَلَيْهِ فَقُلْتُ لَهُنَّ {عَسٰى رَبُّه”ٓ إِنْ طَلَّقَكُنَّ أَنْ يُّبْدِلَهٓ” أَزْوَاجًا خَيْرًا مِّنْكُنَّ} فَنَزَلَتْ هَذِهِ الْآيَةُ.

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ‘উমার (রাঃ) বলেছেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে সতর্কতা দানের জন্য তাঁর সহধর্মিণীগণ একত্রিত হয়েছিলেন। আমি তাঁদেরকে বললাম, যদি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তোমাদের সকলকে পরিত্যাগ করেন তবে তাঁর প্রতিপালক সম্ভবত তাঁকে দেবেন তোমাদের অপেক্ষা উৎকৃষ্টতর স্ত্রী। তখন এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছিল। [৪০২] (আ.প্র. ৪৫৪৭, ই.ফা. ৪৫৫১)

৬৫/৬৮/১.অধ্যায়ঃ
‘‘যে রুক্ষ স্বভাব, এতদ্ব্যতীত জারজ।’’ (সূরাহ আল-ক্বলাম ৬৮/১৩)

(67) سُوْرَةُ الْمُلْكِ تَبَارَكَ الَّذِيْ بِيَدِهِ الْمُلْكُ

সূরাহ (৬৭) : আল-মুলক

{التَّفَاوُتُ} الِاخْتِلَافُ وَالتَّفَاوُتُ وَالتَّفَوُّتُ وَاحِدٌ {تَمَيَّزُ} تَقَطَّعُ {مَنَاكِبِهَا} جَوَانِبِهَا {تَدَّعُوْنَ} وَتَدْعُوْنَ وَاحِدٌ مِثْلُ تَذَّكَّرُوْنَ وَتَذْكُرُوْنَ {وَيَقْبِضْنَ} يَضْرِبْنَ بِأَجْنِحَتِهِنَّ وَقَالَ مُجَاهِدٌ {صَافَّاتٍ} بَسْطُ أَجْنِحَتِهِنَّ {وَنُفُوْرٌ} الْكُفُوْرُ.

التَّفَاوُتُ বিভিন্নতা। التَّفَاوُتُএবং التَّفَوُّتُ শব্দ দু’টো একই অর্থবোধক। تَمَيَّزُ টুকরো হয়ে যাবে বা ফেটে পড়বে। مَنَاكِبِهَا তার দিগদিগন্ত। تَدَّعُوْنَ এবং تَدْعُوْنَবাক্যদ্বয় تَذَّكَّرُوْنَ ও تَذْكُرُوْنَ এর মতই। يَقْبِضْنَ তারা তাদের পাখা মেলে উড়ে বেড়ায়। মুজাহিদ (রহ.) বলেন, صَافَّاتٍ তারা তাদের পাখা বিস্তার করে। نُفُوْرٌ কুফর ও সত্যবিমুখতা।

(68) سُوْرَةُ ن وَالْقَلَمِ

সূরাহ (৬৮) : আল-ক্বলাম

وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ يَتَخَافَتُوْنَ يَنْتَجُوْنَ السِّرَارَ وَالْكَلَامَ الْخَفِيَّ وَقَالَ قَتَادَةُ {حَرْدٍ} جِدٍّ فِيْ أَنْفُسِهِمْ وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ {لَضَآلُّوْنَ} أَضْلَلْنَا مَكَانَ جَنَّتِنَا وَقَالَ غَيْرُهُ {كَالصَّرِيْمِ} كَالصُّبْحِ انْصَرَمَ مِنْ اللَّيْلِ وَاللَّيْلِ انْصَرَمَ مِنْ النَّهَارِ وَهُوَ أَيْضًا كُلُّ رَمْلَةٍ انْصَرَمَتْ مِنْ مُعْظَمِ الرَّمْلِ وَالصَّرِيْمُ أَيْضًا الْمَصْرُوْمُ مِثْلُ قَتِيْلٍ وَمَقْتُوْلٍ. [{مَكْظُوْمٌ} وَكَظِيْمٌ مَغْمُوْمٌ، تُدْهِنُ فِيُدْهِنُوْن تَرْخُصُ فَيَرْ خُصُوْنَ].

ক্বাতাদাহ (রহ.) বলেন, حَرْدٍ অর্থ جِدٍّ فِيْٓ أَنْفُسِهِمْ ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেন, اِنَّالَضَآلُّوْنَ অর্থ আমরা আমাদের জান্নাতের স্থানের কথা ভুলে গিয়েছি। ইবনু ‘আববাস (রাঃ) ব্যতীত অন্যান্য ভাষ্যকার বলেছেন, كَالصَّرِيْمِ অর্থ রাত থেকে বিচ্ছিন্ন প্রভাতের মত বা দিন থেকে বিচ্ছিন্ন রাতের মত। صَّرِيْمُ ঐ বালুকণাকেও বলা হয় যা বালুস্তূপ হতে বিচ্ছিন্ন। مَصْرُوْمُ- صَرِيْمُ শব্দ قَتِيْلٍ এবং مَقْتُوْلٍ এর মত।

৪৯১৭
مَحْمُوْدٌ حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللهِ بْنُ مُوْسَى عَنْ إِسْرَائِيْلَ عَنْ أَبِيْ حَصِيْنٍ عَنْ مُجَاهِدٍ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا عُتُلٍّ بَعْدَ ذَلِكَ زَنِيْمٍ قَالَ رَجُلٌ مِنْ قُرَيْشٍ لَهُ زَنَمَةٌ مِثْلُ زَنَمَةِ الشَّاةِ.

ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি عُتُلٍّ بَعْدَ ذَلِكَ زَنِيمٍ (রূঢ় স্বভাব এবং তদুপরি কুখ্যাত) আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, এ লোকটি হলো কুরাইশ গোত্রের এমন এক লোক, যার স্কন্ধে ছাগলের চিহ্নের মত একটি বিশেষ চিহ্ন ছিল। (আ.প্র. ৪৫৪৮, ই.ফা. ৪৫৫২)

৪৯১৮
أَبُوْ نُعَيْمٍ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ عَنْ مَعْبَدِ بْنِ خَالِدٍ قَالَ سَمِعْتُ حَارِثَةَ بْنَ وَهْبٍ الْخُزَاعِيَّ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ أَلَا أُخْبِرُكُمْ بِأَهْلِ الْجَنَّةِ كُلُّ ضَعِيْفٍ مُتَضَعِّفٍ لَوْ أَقْسَمَ عَلَى اللهِ لَأَبَرَّهُ أَلَا أُخْبِرُكُمْ بِأَهْلِ النَّارِ كُلُّ عُتُلٍّ جَوَّاظٍ مُسْتَكْبِرٍ.

হারিস ইব্‌নু ওয়াহাব খুযাঈ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, আমি কি তোমাদেরকে জান্নাতী লোকদের পরিচয় বলব না? তারা দুর্বল এবং অসহায়; কিন্তু তাঁরা যদি কোন ব্যাপারে আল্লাহ্‌র নামে কসম করে বসেন, তাহলে তা পূরণ করে দেন। আমি কি তোমাদেরকে জাহান্নামী লোকদের পরিচয় বলব না? তারা রূঢ় স্বভাব, অধিক মোটা এবং অহংকারী তারাই জাহান্নামী। [৬০৭১, ৬৬৫৭; মুসলিম ৫১/১৩, হাঃ ২৮৫৩, আহমাদ ১৮৭৫৩] (আ.প্র. ৪৫৪৯, ই.ফা. ৪৫৫৩)

৬৫/৬৮/২.অধ্যায়ঃ
আল্লাহর বাণীঃ পায়ের গোছা পর্যন্ত উন্মুক্ত করার দিনের কথা স্মরণ কর। (সূরাহ আল-ক্বলাম ৬৮/৪২)

৪৯১৯
آدَمُ حَدَّثَنَا اللَّيْثُ عَنْ خَالِدِ بْنِ يَزِيْدَ عَنْ سَعِيْدِ بْنِ أَبِيْ هِلَالٍ عَنْ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَسَارٍ عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ يَقُوْلُ يَكْشِفُ رَبُّنَا عَنْ سَاقِهِ فَيَسْجُدُ لَهُ كُلُّ مُؤْمِنٍ وَمُؤْمِنَةٍ فَيَبْقَى كُلُّ مَنْ كَانَ يَسْجُدُ فِي الدُّنْيَا رِيَاءً وَسُمْعَةً فَيَذْهَبُ لِيَسْجُدَ فَيَعُوْدُ ظَهْرُهُ طَبَقًا وَاحِدًا.

আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, আমাদের প্রতিপালক যখন তাঁর পায়ের গোড়ালির জ্যোতি বিকীর্ণ করবেন, তখন ঈমানদার নারী ও পুরুষ সবাই তাকে সাজ্দাহ করবে। কিন্তু যারা দুনিয়াতে লোক দেখানো ও প্রচারের জন্য সাজ্দাহ করত, তারা কেবল বাকী থাকবে। তারা সাজদাহ করতে ইচ্ছে করলে তাদের পিঠ একখণ্ড কাঠের ন্যায় শক্ত হয়ে যাবে। [২২] (আ.প্র. ৪৫৫০, ই.ফা. ৪৫৫৪)

৬৫/৭১/১.অধ্যায়ঃ
আল্লাহর বাণীঃ তোমরা ত্যাগ করো না ওয়াদ, সূওয়া, ইয়াগুছ, ইয়াউক ও নাসারকে। (সূরাহ নূহ ৭১/২৩)

(69) سُوْرَةُ الْحَاقَّةِ

সূরাহ (৬৯) : আল-হাক্কাহ্

{حُسُوْمًا} مُتَتَابُعَةً وَقَالَ ابْنُ جُبَيْرٍ {عِيْشَةٍ رَّاضِيَةٍ} يُرِيْدُ فِيْهَا الرِّضَا {الْقَاضِيَةَ} الْمَوْتَةَ الْأُوْلَى الَّتِيْ مُتُّهَا لَمْ أُحْيَ بَعْدَهَا {مِنْ أَحَدٍ عَنْهُ حَاجِزِيْنَ} أَحَدٌ يَكُوْنُ لِلْجَمْعِ وَلِلْوَاحِدِ وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ {الْوَتِيْنَ} نِيَاطُ الْقَلْبِ قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ {طَغٰى}كَثُرَ وَيُقَالُ بِالطَّاغِيَةِ بِطُغْيَانِهِمْ. وَيُقَالُ طَغَتْ عَلَى الْخَزَّانِ كَمَا طَغَى الْمَاءُ عَلَى قَوْمِ نُوْحٍ e. وَغِسْلِيْنٍ : مَا يَسِيْلُ مِنْ صَدِيْدِ أهْلِ النَّارِ. وَقَالَ غَيْرُهُ : {مِنْ غِسْلِنٍ} : كلُّ شَيْءٍ غَسَلْتَهُ فَخَرَجَ مِنْهُ شَيْءٌ فَهُوَ غَسْلَيْنٌ، فِعْلَيْنٌ مِنَ الغَسْلِ مِنَ الْجَرْحِ وَالدُّبُرِ. {أعْجَارُ نَخْلٍ} : أُصُوْلُهَا. {بَاقِيةٍ} : بِقيّةٍ.

عِيْشَةٍ رَّاضِيَةٍ সন্তোষজনক জীবন। الْقَاضِيَةَ প্রথম মৃত্যুটাই যদি এমন হত যে, তারপর আর জীবিত না করা হত। مِنْ أَحَدٍ عَنْهُ حَاجِزِيْنَ তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যে তাকে রক্ষা করতে পারে। احِدِ শব্দটি একবচন ও বহুবচন উভয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেন, الْوَتِيْنَ হৃদপিন্ডের সঙ্গে যুক্ত রগ। ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেন, طَغٰى অতিরিক্ত হয়েছে বা বেশি হয়েছে। বলা হয় بِالطَّاغِيَةِ তাদের বিদ্রোহ এবং কুফ্রীর কারণে طَغَتْ عَلَى الْخَزَّانِ বায়ু নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে এবং সামূদ সম্প্রদায়কে ধ্বংস করে দিয়েছে যেমন পানি নূহ্ সম্প্রদায়ের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল।

(70) سُوْرَةُ المعارج [سَأَلَ سَآئِلٌ]

সূরাহ (৭০) : আল-মা‘আরিজ

{الْفَصِيْلَةُ} أَصْغَرُ آبَائِهِ الْقُرْبَى إِلَيْهِ يَنْتَمِيْ مَنْ انْتَمَى {لِلشَّوٰى} الْيَدَانِ وَالرِّجْلَانِ وَالأَطْرَافُ وَجِلْدَةُ الرَّأْسِ يُقَالُ لَهَا شَوَاةٌ وَمَا كَانَ غَيْرَ مَقْتَلٍ فَهُوَ شَوًى عِزِيْنَ {وَالْعِزُوْنَ} وَالْجَمَاعَاتُ وَوَاحِدُهَا عِزَةٌ. [{يُوْفِضُوْنَ} : الإيفاضُ الإسْرَاعِ]

الْفَصِيْلَةُ তাদের পূর্ব-পুরষদের থেকে সর্বাধিক নিকটাত্মীয়, যাদের থেকে তারা পৃথক হয়েছে এবং যাদের দিকে তাদেরকে সম্পৃক্ত করা হয়। لِلشَّوٰى দু’হাত, দু’পা, শরীরের বিভিন্ন প্রান্ত ভাগ এবং মাথার চামড়া সবগুলোকে شَوَاةٌ বলা হয়। الْعِزُوْنَ দলসমূহ। এর একবচন عِزَةٌ।

(71) سُوْرَةُ نُوْحٍ [إِنَّا أَرْسَلْنَا]

সূরাহ (৭১) : নূহ (ইন্না আরসালনা)

{أَطْوَارًا} طَوْرًا كَذَا وَطَوْرًا كَذَا يُقَالُ عَدَا طَوْرَهُ أَيْ قَدْرَهُ وَالْكُبَّارُ أَشَدُّ مِنَ الْكِبَارِ وَكَذَلِكَ جُمَّالٌ وَجَمِيْلٌ لِأَنَّهَا أَشَدُّ مُبَالَغَةً وَكُبَّارٌ الْكَبِيْرُ وَكُبَارًا أَيْضًا بِالتَّخْفِيْفِ وَالْعَرَبُ تَقُوْلُ رَجُلٌ حُسَّانٌ وَجُمَّالٌ وَحُسَانٌ مُخَفَّفٌ وَجُمَالٌ مُخَفَّفٌ {دَيَّارًا} مِنْ دَوْرٍ وَلَكِنَّهُ فَيْعَالٌ مِنْ الدَّوَرَانِ كَمَا قَرَأَ عُمَرُ الْحَيُّ الْقَيَّامُ وَهِيَ مِنْ قُمْتُ وَقَالَ غَيْرُهُ {دَيَّارًا} أَحَدًا {تَبَارًا} هَلَاكًا وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ {مِدْرَارًا} يَتْبَعُ بَعْضُهَا بَعْضًا {وَقَارًا} عَظَمَةً.

طْوَارًا পর্যায়ক্রমে, বলা হয়। عَدَا طَوْرَهُ সে তার মর্যাদাকে অতিক্রম করে গেছে। بِالتَّخْفِيْفِ الكُبَّارُ এর তুলনায় بالتشديد الكُبَّارُ এর অর্থের মাঝে কিছু আধিক্য ও কঠোরতা বিদ্যমান আছে। এমনিভাবে جُمَّالٌ এর মাঝে جَمِيْلٌ -এর তুলনায় অধিকতর সৌন্দর্যের অর্থ বিদ্যমান আছে। كُبَّارٌ الْكَبِيْرُ ও بِالتَّخْفِيْفِ الكُبَّارُ -এর অবস্থা অনুরূপই। আরবীয় লোকের তাশ্দীদের সঙ্গে رَجُلٌ حُسَّانٌ وَجُمَّالٌ ও বলেন, এমনিভাবে তাখ্ফীফের সঙ্গে رَجُلٌ حُسَّانٌ وَجُمَّالٌ ও বলে থাকেন। دَيَّارًا শব্দটির উৎপত্তি دَوْرٍ ধাতু থেকে। তবে যদি তাকে فَيْعَالٌ এর ওযনে ধরা হয় তাহলে এর উৎপত্তি হবে الدَّوَرَانِ শব্দমূল থেকে। যেমন, ‘উমার (রাঃ)الْحَيُّ الْقَيَّامُ পড়েছেন। قُمْتُথেকে الْقَيَّامُ শব্দটির উৎপত্তি। অন্যান্য মুফাস্সির বলেছেন, دَيَّارًا কাউকে। تَبَارًا ধ্বংস। ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেন, مِدْرَارًا একটি অপরটির পেছনে। وَقَارًا শ্রেষ্ঠত্ব।

৪৯২০
إِبْرَاهِيْمُ بْنُ مُوْسَى أَخْبَرَنَا هِشَامٌ عَنْ ابْنِ جُرَيْجٍ وَقَالَ عَطَاءٌ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا صَارَتْ الْأَوْثَانُ الَّتِيْ كَانَتْ فِيْ قَوْمِ نُوْحٍ فِي الْعَرَبِ بَعْدُ أَمَّا وَدٌّ كَانَتْ لِكَلْبٍ بِدَوْمَةِ الْجَنْدَلِ وَأَمَّا سُوَاعٌ كَانَتْ لِهُذَيْلٍ وَأَمَّا يَغُوْثُ فَكَانَتْ لِمُرَادٍ ثُمَّ لِبَنِيْ غُطَيْفٍ بِالْجَوْفِ عِنْدَ سَبَإٍ وَأَمَّا يَعُوْقُ فَكَانَتْ لِهَمْدَانَ وَأَمَّا نَسْرٌ فَكَانَتْ لِحِمْيَرَ لِآلِ ذِي الْكَلَاعِ أَسْمَاءُ رِجَالٍ صَالِحِيْنَ مِنْ قَوْمِ نُوْحٍ فَلَمَّا هَلَكُوْا أَوْحَى الشَّيْطَانُ إِلَى قَوْمِهِمْ أَنْ انْصِبُوْا إِلَى مَجَالِسِهِمْ الَّتِيْ كَانُوْا يَجْلِسُوْنَ أَنْصَابًا وَسَمُّوْهَا بِأَسْمَائِهِمْ فَفَعَلُوْا فَلَمْ تُعْبَدْ حَتَّى إِذَا هَلَكَ أُوْلَئِكَ وَتَنَسَّخَ الْعِلْمُ عُبِدَتْ

ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যে প্রতিমার পূজা নূহ্ (‘আ.)-এর কওমের মাঝে চালু ছিল, পরবর্তী সময়ে আরবদের মাঝেও তার পূজা প্রচলিত হয়েছিল। ওয়াদ “দুমাতুল জান্দাল” নামক জায়গার কাল্ব গোত্রের একটি দেবমূর্তি, সূওয়া‘আ, হল, হুযায়ল গোত্রের একটি দেবমূর্তি এবং ইয়াগুছ ছিল মুরাদ গোত্রের, অবশ্য পরবর্তীতে তা গাতীফ গোত্রের হয়ে যায়। এর আস্তানা ছিল কওমে সাবার নিকটবর্তী ‘জাওফ’ নামক স্থান। ইয়া‘উক ছিল হামাদান গোত্রের দেবমূর্তি, নাস্র ছিল যুলকালা‘ গোত্রের হিময়ার শাখার মূর্তি। নূহ (‘আ.)-এর সম্প্রদায়ের কতিপয় নেক লোকের নাম নাস্র ছিল। তারা মারা গেলে, শয়তান তাদের কওমের লোকদের অন্তরে এ কথা ঢেলে দিল যে, তারা যেখানে বসে মাজলিস করত, সেখানে তোমরা কতিপয় মূর্তি স্থাপন কর এবং ঐ সমস্ত পুণ্যবান লোকের নামেই এগুলোর নামকরণ কর। কাজেই তারা তাই করল, কিন্তু তখনও ঐ সব মূর্তির পূজা করা হত না। তবে মূর্তি স্থাপনকারী লোকগুলো মারা গেলে এবং মূর্তিগুলোর ব্যাপারে সত্যিকারের জ্ঞান বিলুপ্ত হলে লোকজন তাদের পূজা আরম্ভ করে দেয়। (আ.প্র. ৪৫৫১, ই.ফা. ৪৫৫৫)

৬৫/৭২/১.অধ্যায়ঃ
পরিচ্ছেদ নাই।

(72) سُوْرَةُ الجن [قُلْ أُوْحِيَ إِلَيَّ]

সূরাহ (৭২) : আল-জ্বিন (ক্বুল উহিয়্যা ইলাইয়া)

قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ لِبَدًا أَعْوَانًا. {بَخْسًا} : نَقْصًا.

আর ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেন, لِبَدًا সাহায্যকারী। بَخْسًا স্বল্পতার ভয় করবে না।

৪৯২১
مُوْسَى بْنُ إِسْمَاعِيْلَ حَدَّثَنَا أَبُوْ عَوَانَةَ عَنْ أَبِيْ بِشْرٍ عَنْ سَعِيْدِ بْنِ جُبَيْرٍ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ انْطَلَقَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فِيْ طَائِفَةٍ مِنْ أَصْحَابِهِ عَامِدِيْنَ إِلَى سُوْقِ عُكَاظٍ وَقَدْ حِيْلَ بَيْنَ الشَّيَاطِيْنِ وَبَيْنَ خَبَرِ السَّمَاءِ وَأُرْسِلَتْ عَلَيْهِمْ الشُّهُبُ فَرَجَعَتْ الشَّيَاطِيْنُ فَقَالُوْا مَا لَكُمْ فَقَالُوْا حِيْلَ بَيْنَنَا وَبَيْنَ خَبَرِ السَّمَاءِ وَأُرْسِلَتْ عَلَيْنَا الشُّهُبُ قَالَ مَا حَالَ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَ خَبَرِ السَّمَاءِ إِلَّا مَا حَدَثَ فَاضْرِبُوْا مَشَارِقَ الْأَرْضِ وَمَغَارِبَهَا فَانْظُرُوْا مَا هَذَا الْأَمْرُ الَّذِيْ حَدَثَ فَانْطَلَقُوْا فَضَرَبُوْا مَشَارِقَ الْأَرْضِ وَمَغَارِبَهَا يَنْظُرُوْنَ مَا هَذَا الْأَمْرُ الَّذِيْ حَالَ بَيْنَهُمْ وَبَيْنَ خَبَرِ السَّمَاءِ قَالَ فَانْطَلَقَ الَّذِيْنَ تَوَجَّهُوْا نَحْوَ تِهَامَةَ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم بِنَخْلَةَ وَهُوَ عَامِدٌ إِلَى سُوْقِ عُكَاظٍ وَهُوَ يُصَلِّيْ بِأَصْحَابِهِ صَلَاةَ الْفَجْرِ فَلَمَّا سَمِعُوا الْقُرْآنَ تَسَمَّعُوْا لَهُ فَقَالُوْا هَذَا الَّذِيْ حَالَ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَ خَبَرِ السَّمَاءِ فَهُنَالِكَ رَجَعُوْا إِلَى قَوْمِهِمْ فَقَالُوْا يَا قَوْمَنَا إِنَّا سَمِعْنَا قُرْآنًا عَجَبًا يَهْدِيْ إِلَى الرُّشْدِ فَآمَنَّا بِهِ وَلَنْ نُشْرِكَ بِرَبِّنَا أَحَدًا وَأَنْزَلَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ عَلَى نَبِيِّهِ صلى الله عليه وسلم{قُلْ أُوْحِيَ إِلَيَّ أَنَّهُ اسْتَمَعَ نَفَرٌ مِّنَ الْجِنِّ} وَإِنَّمَا أُوْحِيَ إِلَيْهِ قَوْلُ الْجِنِّ.

ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদল সহাবীকে নিয়ে উকায বাজারের দিকে রওয়ানা হলেন। এ সময়ই জিনদের আসমানী খবরাদি শোনার ব্যাপারে বাধা সৃষ্টি করে দেয়া হয়েছে এবং ছুঁড়ে মারা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে লেলিহান অগ্নিশিখা। ফলে জিন শায়ত্বনরা ফিরে আসলে অন্য জিনরা তাদেরকে বলল, তোমাদের কী হয়েছে? তারা বলল, আসমানী খবরাদি সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে আমাদের উপর বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে এবং আমাদের প্রতি লেলিহান অগ্নিশিখা ছুঁড়ে মারা হয়েছে। তখন শয়তান বলল, আসমানী খবরাদি সংগ্রহের ব্যাপারে তোমাদের প্রতি যে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে, অবশ্যই তা কোন নতুন ঘটনা ঘটার কারণেই হয়েছে। সুতরাং তোমরা পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিম দিগন্ত পর্যন্ত সফর কর এবং দেখ ব্যাপারটা কী ঘটেছে? তাই আসমানী খবরাদি সংগ্রহের ক্ষেত্রে যে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে, এর কারণ খুঁজে বের করার জন্য তারা সকলেই পৃথিবীর পূর্ব এবং পশ্চিমে অনুসন্ধানে বেরিয়ে পড়ল। ‘আবদুল্লাহ্ ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, যারা তিহামার উদ্দেশে বেরিয়েছিল, তারা ‘নাখলা’ নামক স্থানে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে এসে উপস্থিত হল। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এখান থেকে উকায বাজারের দিকে যাওয়ার মনস্থ করেছিলেন। এ সময় রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সহাবীদেরকে নিয়ে ফাজ্রের সলাত আদায় করছিলেন। জিনদের ঐ দলটি কুরআন মাজীদ শুনতে পেয়ে আরো বেশি মনোযোগ দিয়ে তা শুনতে লাগল এবং বলল, আসমানী খবর আর তোমাদের মাঝে এটাই সত্যিকারে বাধা সৃষ্টি করেছে। এরপর তারা তাদের কওমের কাছে ফিরে এসে বলল, হে আমাদের কওম! আমরা এক আশ্চর্যজনক কুরআন শ্রবণ করেছি, যা সঠিক পথ নির্দেশ করে। এতে আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি। আমরা কখনও আমাদের প্রতিপালকের কোন শরীক স্থির করব না। এরপর আল্লাহ তাঁর নাবীর প্রতি অবতীর্ণ করলেন ঃ বল, আমার প্রতি ওয়াহী প্রেরিত হয়েছে যে জিনদের একটি দল মনোযোগ দিয়ে শুনেছে। জিনদের উপরোক্ত কথা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে ওয়াহীর মারফত জানিয়ে দেয়া হয়েছিল। [৭৭৩] (আ.প্র. ৪৫৫২, ই.ফা. ৪৫৫৬)

FOR MORE CLICK HERE

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]