সহীহ বুখারী শরীফ হাদিস দুআ অধ্যায় ২য় ভাগ হাদিস নং ৬৩৪১ – ৬৩৬০

৮০/২৩. অধ্যায়ঃ
দু’আর সময় দু’খানা হাত উঠানো। [১] আবূ মূসা (রা.) বর্ণনা করেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’খানা হাত এতটুকু তুলে দু’আ করতেন যে, আমি তাঁর বগলের ফর্সা রং দেখেতে পেয়েছি। ইব্‌ন উমর (রা.) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’খানা হাত তুলে দু’আ করেছেনঃ ইয়া আল্লাহ্‌! খালিদ যা করেছে আমি তা থেকে অসন্তোষ প্রকাশ করছি।

[১] যে সকল স্থানে হাত তুলে দু’আ করা যায়

(১) বৃষ্টি প্রার্থনার জন্যঃ

আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী কারীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর যামানায় এক বছর দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। সে সময় একদিন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) খুৎবা প্রদানকালে জনৈক বেদুঈন উঠে দাঁড়াল এবং আরয করল, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! বৃষ্টি না হওয়ার কারণে সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, পরিবার পরিজন অনাহারে মরছে। আপনি আমাদের জন্য দু’আ করুন। অতঃপর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) স্বীয়হস্তদ্বয় উত্তোলন পূর্বক দু’আ করলেন। সে সময় আকাশে কোন মেঘ ছিল না। (রাবী বলেন) আল্লাহর কসম করে বলছি, তিনি হাত না নামাতেই পাহাড়ের মত মেঘের খণ্ড এসে একত্র হয়ে গেল এবং তাঁর মিম্বর থেকে নামার সাথে সাথেই ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি পড়তে লাগল। এভাবে দিনের পর দিন ক্রমাগত পরবর্তী জুম’আ পর্যন্ত হ’তে থাকল। অতঃপর পরবর্তী জুম’আর দিনে সে বেদুঈন অথবা অন্য কেউ দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অতি বৃষ্টিতে আমাদের বাড়ী-ঘর ভেঙ্গে পড়ে যাচ্ছে, ফসল ডুবে যাচ্ছে । অতএব আপনি আল্লাহর নিকট আমাদের জন্য দু’আ করুন। তখন তিনি দু’হাত তুললেন এবং বললেন, ‘হে আল্লাহ! আমাদের পার্শ্ববর্তী এলাকায় বৃষ্টি দাও, আমাদের এখানে নয়। এ সময় তিনি স্বীয় অঙ্গুলি দ্বারা মেঘের দিকে ইশারা করেছিলেন। ফলে সেখান থেকে মেঘ কেটে যাচ্ছিল। (বুখারী, ১ম খণ্ড, পৃঃ ১২৭, হা/৯৩৩ জুম’আর ছালাত’ অধ্যায়)

আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা জুম’আর দিন জনৈক বেদুঈন রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, হে আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)!(বৃষ্টির অভাবে গৃহপালিত পশুগুলো মারা যাচ্ছে। মানুষ খতম হয়ে যাচ্ছে। তখন রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দু’আর জন্য হাত উঠালেন। আর লোকেরাও রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর সাথে হাত উঠাল। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা মসজিদ থেকে বের হওয়ার পূর্বেই বৃষ্টি আরম্ভ হয়ে গেল। এমনকি পরবর্তী জুম’আ পর্যন্ত বৃষ্টি বর্ষিত হ’তে থাকল। তখন একটি লোক রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! রাস্তা-ঘাট অচল হয়ে গেল’। (বুখারী ১ম খণ্ড, পৃঃ ১৪০, হা/১০২৯ ‘ইস্তিস্কা’ অধ্যায়)

আনাস (রাঃ) বলেন, কোন এক জুম’আয় কোন এক ব্যক্তি দারুল কোযার দিক হ’তে মসজিদে প্রবেশ করল এমতাবস্থায় যে, রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তখন খুৎবা দিচ্ছিলেন। লোকটি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! সম্পদ ধ্বংস হয়ে গেল এবং রাস্তা-ঘাট বন্ধ হয়ে গেল। আপনি আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করুন, আল্লাহ আমাদেরকে বৃষ্টি দান করবেন। আনাস (রাঃ) বলেন, তখন রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) স্বীয় হস্তদ্বয় উত্তোলন করতঃ প্রার্থনা করলেন, হে আল্লাহ! আমাদের বৃষ্টি দান করুন! হে আল্লাহ! আমাদের বৃষ্টি দান করুন! (বুখারী ১ম খণ্ড, পৃঃ ১৩৭; মুসলিম ১ম খণ্ড, পৃঃ ২৯৩-২৯৪)

আনাস (রাঃ) বলেন, আমি রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -কে হস্তদ্বয়ের পিঠ আকাশের দিকে করে পানি চাইতে দেখেছি। (মুসলিম, মিশকাত হা/১৪৯৮ ‘ইসতিস্কা’ অনুচ্ছেদ)

আনাস (রাঃ) বলেন, নবী কারীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বৃষ্টির জন্য ছাড়া (অর্থাৎ বৃষ্টির জন্য দু’আ ছাড়া জামাতবদ্ধভাবে অন্য কোথাও হাত তুলতেন না। আর হাত এত পরিমাণ উঠাতেন যে, তার বগলের শুভ্র অংশ দেখা যেত। (বুখারী, ১ম খণ্ড, পৃঃ ১৪০, হা/১০৩১; মিশকাত হা/১৪৯৯)

(২) বৃষ্টি বন্ধের জন্যঃ

আনাস (রাঃ) বলেন, পরবর্তী জুম’আয় ঐ দরজা দিয়েই এক ব্যক্তি প্রবেশ করল রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-দাঁড়িয়ে খুৎবা দান রত অবস্থায়। অতঃপর লোকটি রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! সম্পদ ধ্বংস হয়ে গেল এবং রাস্তা-ঘাট বন্ধ হয়ে গেল। আপনি আল্লাহর নিকট দু’আ করুন, আল্লাহ বৃষ্টি বন্ধ করে দিবেন। রাবী আনাস (রাঃ) বলেন, তখন রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) স্বীয় হস্তদ্বয় উত্তোলন পূর্বক বললেন, হে আল্লাহ! আমাদের নিকট থেকে বৃষ্টি সরিয়ে নিন, আমদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন না। হে আল্লাহ! অনাবাদী জমিতে, উঁচু জমিতে উপত্যকায় এবং ঘন বৃক্ষের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করুন। (বুখারী, ১ম খণ্ড, ১৩৭ পৃঃ; মুসলিম, ১ম খণ্ড, পৃঃ ২৯৩-২৯৪)

(৩) চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণের সময়ঃ

আব্দুর রহমান ইবনু সামুরাহ (রাঃ) বলেন, আমি রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর জীবদ্দশায় এক সময় তীর নিক্ষেপ করছিলাম। হঠাৎ দেখি সূর্যগ্রহণ লেগেছে। আমি তীরগুলো নিক্ষেপ করলাম এবং বললাম, আজ সূর্যগ্রহণে রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর অবস্থান লক্ষ্য করব। অতঃপর আমি তাঁর নিকট পৌছলাম। তিনি তখন দু’হাত উঠিয়ে প্রার্থনা করছিলেন এবং তিনি ‘আল্লাহু আকবার’, ‘আল হামদুলিল্লাহ’, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্ল-হ’ বলছিলেন। শেষ পর্যন্ত সূর্য প্রকাশ হয়ে গেল। অতঃপর তিনি দু’টি সূরা পড়লেন এবং দু’রাকা’আত সলাত আদায় করলেন। (মুসলিম ১ম খণ্ড, পৃঃ ২৯৯ হা/৯১৩, ‘চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণের ছালাত’ অধ্যায়)

(৪) উম্মাতের জন্য রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর দু’আঃ

আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু ‘আস (রাঃ) বলেন, একদা রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সূরা ইবরাহীমের ৩৫ নং আয়াত পাঠ করে দু’হাত উঠিয়ে বলেন, আমার উম্মাত, আমার উম্মাত এবং কাঁদতে থাকেন। তখন আল্লাহ তা’আলা বলেন, হে জিবরীল! তুমি মুহাম্মাদের নিকট যাও এবং জিজ্ঞেস কর, কেন তিনি কাঁদেন। অতঃপর জিবরীল তাঁর নিকটে আগমন করে কাঁদার কারণ জানতে চাইলেন। তখন রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে বললেন, আল্লাহ তা’আলা তা অবগত। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা জিবরীলকে বললেন, যাও, মুহাম্মাদকে বল যে, আমি তার উপর এবং তার উম্মতের উপর সন্তুষ্ট আছি। আমি তার অকল্যাণ করব না’। (মুসলিম, ১ম খণ্ড, পৃঃ ১১৩, হা/৩৪৬ ‘ঈমান’ অধ্যায়)

(৫) কবর জিয়ারতের সময়ঃ

আয়েশা (রাঃ) বলেন, একদা রাতে রসূল আমার নিকটে ছিলেন। শোয়ার সময় চাদর রাখলেন এবং জুতা খুলে পায়ের নিচে রেখে শুয়ে পড়লেন। তিনি অল্প সময় এ খেয়ালে থাকলেন যে, আমি ঘুমিয়ে পড়েছি। অতঃপর ধীরে চাদর ও জুতা নিলেন এবং ধীরে দরজা খুলে বেরিয়ে পড়লেন এবং দরজা বন্ধ করে দিলেন। তখন আমিও কাপড় পরে চাদর মাথায় দিয়ে তাঁর পিছনে চললাম। তিনি “বাক্বীউল গারক্বাদে” (জান্নাতুল বাক্বী) পৌছলেন এবং দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলেন। অতঃপর তিন তিন বার হাত উঠিয়ে প্রার্থনা করলেন। (মুসলিম ১ম খণ্ড, পৃঃ ৩১৩, হা/৯৭৪ ‘জানাযা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩৫)

আয়েশা (রাঃ) বলেন, কোন এক রাতে রসূল বের হ’লেন, আমি বারিরা (রাঃ) কে পাঠালাম, তাঁকে দেখার জন্য যে, তিনি কোথায় যান। তিনি জান্নাতুল বাক্বীতে গেলেন এবং পার্শ্বে দাঁড়ালেন। অতঃপর হাত তুলে দু’আ করলেন। তারপর ফিরে আসলেন। বারিরাও ফিরে আসলো এবং আমাকে খবর দিল। আমি সকালে তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি গত রাতে কোথায় গিয়েছিলেন? তিনি বললেন, জান্নাতুল বাক্বীতে গিয়েছিলাম কবরবাসীর জন্য দু’আ করতে। [ইমাম বুখারী, রাফ’উল ইয়াদায়েন, পৃঃ ১৭, হাদীস ছহীহ; মুসলিম, হা/৯৭৪ (মর্মার্থ)]।

(৬) কারো জন্য ক্ষমা চাওয়ার লক্ষ্যে হাত তুলে দু’আঃ

আউতাসের যুদ্ধে আবু আমেরকে তীর লাগলে আবূ আমের স্বীয় ভাতিজা আবূ মূসার মাধ্যমে বলে পাঠান যে, আপনি আমার পক্ষ থেকে রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -কে সালাম পৌঁছে দিবেন এবং ক্ষমা চাইতে বলবেন। আবূ মূসা আশ’আরী (রাঃ) রসূলুল্লাহ-এর কাছে এ সংবাদ পৌঁছালে তিনি পানি নিয়ে ডাকলেন এবং ওযূ করলেন। অতঃপর হাত তুলে প্রার্থনা করলেন ‘হে আল্লাহ! উবাইদ ও আবূ আমেরকে ক্ষমা করে দাও। (রাবী বলেন) এ সময়ে আমি তাঁর বগলের শুভ্রতা দেখলাম। তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহ! ক্বিয়ামতের দিন তুমি তাকে তোমার সৃষ্টি মানুষের অনেকের উর্ধ্বে করে দিও’। (বুখারী, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৯৪৪, হা/৪৩২৩ ও ৬৩৮৩ ‘দু’আ সমূহ’ অধ্যায়)

(৭) হজ্জে পাথর নিক্ষেপের সময়ঃ

আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) তিনটি জামারায় সাতটি পাথর খণ্ড নিক্ষেপ করতেন এবং প্রতিটি পাথর নিক্ষেপের সাথে তাকবীর বলতেন। প্রথম দু’ জামারায় পাথর নিক্ষেপের পর ক্বিবলামুখী হয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে দু’হাত তুলে দু’আ করতেন। তবে তৃতীয় জামারায় পাথর নিক্ষেপের পর দাঁড়াতেন না। শেষে বলতেন, আমি রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -কে এগুলো এভাবেই পালন করতে দেখেছি’। (বুখারী ১ম খণ্ড পৃঃ ২৩৬, হা/১৭৫১ ‘হজ্জ’ অধ্যায়)

(৮) যুদ্ধক্ষেত্রেঃ

ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বদরের যুদ্ধে মুশরিকদের দিকে লক্ষ্য করে দেখলেন, তাদের সংখ্যা এক হাজার। আর তাঁর সাথীদের সংখ্যা মাত্র তিনশত ঊনিশ জন। তখন তিনি ক্বিবলামুখী হয়ে দু’হাত উঠিয়ে দু’আ করতে লাগলেন। এ সময় তিনি বলছিলেন, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমাকে সাহায্য করার ওয়াদা করেছ। হে আল্লাহ! তুমি যদি এই জামা’আতকে আজ ধ্বংস করে দাও, তাহ’লে এই যমীনে তোমাকে ডাকার মত আর কেউ অবশিষ্ট থাকবে না। এভাবে তিনি উভয় হাত তুলে ক্বিবলামুখী হয়ে প্রার্থনা করতে থাকলেন। এ সময় তাঁর কাঁধ হ’তে চাদরখানা পড়ে গেল। আবূ বকর (রাঃ) তখন চাদরখানা কাঁধে তুলে দিয়ে রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -কে জড়িয়ে ধরে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনার প্রতিপালক প্রার্থনা কবুলে যথেষ্ট। নিশ্চয়ই তিনি আপনার সাথে কৃত ওয়াদা পূরণ করবেন। (মুসলিম, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৯৩, হা/১৭৬৩, ‘জিহাদ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৮)।

(৯) কোন গোত্রের জন্য দু’আ করাঃ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, একদা আবূ তুফাইল রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে গিয়ে বলল, হে আল্লাহর রসূল! দাঊস গোত্রও অবাধ্য ও অবশীভূত হয়ে গেছে, আপনি তাদের জন্য আল্লাহর কাছে বদ দু’আ করুন। তখন রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ক্বিবলামুখী হ’লেন এবং দু’হাত তুলে বললেন, হে আল্লাহ! তুমি দাঊস গোত্রকে হেদায়াত দান কর এবং তাদেরকে সঠিক পথে নিয়ে আস’। (বুখারী, মুসলিম, ছহীহ আল আদাবুল মুফরাদ, পৃঃ ২০৯, হা/৬১১ সনদ ছহীহ)



(১০) সাফা-মারওয়া সায়ী করার সময়ঃ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মাক্কায় প্রবেশ করলেন এবং পাথরের নিকট এসে পাথর চুম্বন করলেন, বায়ুতুল্লাহ তাওয়াফ করলেন এবং ছাফা পাহাড়ে এসে তার উপর উঠলেন। অতঃপর তিনি বায়তুল্লাহ্‌র দিকে লক্ষ্য করে দু’হাত উত্তোলনপূর্বক আল্লাহ্‌কে ইচ্ছামত স্মরণ করতে লাগলেন এবং প্রার্থনা করতে লাগলেন। (ছহীহ আবূ দাঊদ, হা/১৮৭২ সনদ ছহীহ মিশকাত হা/২৫৭৫ ‘হজ্জ’ অধ্যায়)

(১১) কুনূতে নাযেলার সময়ঃ

আবূ ওসামা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কুনূতে নাযেলায় হাত তুলে দু’আ করেছিলেন। (ইমাম বুখারী, রাফ’উল ইয়াদায়েন সনদ ছহীহ)

হাত তুলে দু’আ করার অন্যান্য সহীহ হাদীসসমূহঃ

(১২) খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) -এর অপছন্দ কর্মের কারণে হাত তুলে দু’আঃ

সালেমের পিতা হ’তে বর্ণিত, নবী কারীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) খালেদ ইবনু ওয়ালীদকে বনী জাযীমার বিরুদ্ধে এক অভিযানে পাঠালেন। খালেদ তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন। তারা এ দাওয়াত গ্রহণ করে নিল। কিন্তু ‘ইসলাম গ্রহণ করেছি’ না বলে তারা বলতে লাগল, ‘আমরা নিজেদের ধর্ম ত্যাগ করেছি’ ‘আমরা নিজেদের ধর্ম ত্যাগ করেছি। তখন খালেদ তাদেরকে কতল ও বন্দী করতে লাগলেন এবং বন্দীদেরকে আমাদের প্রত্যেকের হাতে সমর্পণ করতে থাকলেন। একদিন খালেদ আমাদের প্রত্যেককে স্ব স্ব বন্দী হত্যা করার নির্দেশ দিলেন। আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আমি নিজের বন্দীকে হত্যা করব না এবং আমার সাথীদের কেউই তার বন্দীকে হত্যা করবে না। অবশেষে আমরা নবী কারীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর খেদমতে হাযির হ’লাম তাঁর কাছে উক্ত ঘটনা বর্ণনা করলাম। তখন নবী কারীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) স্বীয় হস্ত উত্তোলন পূর্বক প্রার্থনা করলেন, ‘হে আল্লাহ! খালেদ যা করেছে তার দায় থেকে আমি মুক্ত।

এ কথা তিনি দু’বার বললেন। (বুখারী, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৬২২, হা/ ৪৩৩৯ ‘মাগাযী’ অধ্যায়)

(১৩) সদাক্বাহ আদায়কারীর ভুল মন্তব্য শুনে হাত তুলে দু’আঃ

আবূ হুমায়েদ সায়েদী (রাঃ) বলেন, একবার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইবনু লুত্ববিইয়াহ নামক ‘আসাদ’ গোত্রের এক ব্যক্তিকে যাকাত আদায়ের জন্য কর্মচারী নিযুক্ত করলেন। তখন সে যাকাত নিয়ে মাদীনায় ফিরে এসে বলল, এ অংশ আপনাদের প্রাপ্য যাকাত, আর এ অংশ আমাকে হাদিয়া স্বরূপ দেয়া হয়েছে। এ কথা শুনে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ভাষণ দানের জন্য দাঁড়ালেন এবং প্রথমে আল্লাহর গুণগান বর্ণনা করলেন। অতঃপর বললেন, আমি তোমাদের কোন ব্যক্তিকে সে সকল কাজের জন্য কর্মচারী নিযুক্ত করি, যে সকল কাজের দায়িত্ব আল্লাহ তা’আলা আমার উপর সমর্পণ করেছেন। অতঃপর তোমাদের সে ব্যক্তি এসে বলে যে, এটা আপনাদের প্রাপ্য যাকাত, আর এটা আমাকে হাদিয়া স্বরূপ দেয়া হয়েছে। সে কেন তার পিতা-মাতার ঘরে বসে থাকল না? দেখা যেত কে তাকে হাদিয়া দিয়ে যায়। আল্লাহর কসম, যে ব্যক্তি এর কোন কিছু গ্রহণ করবে, সে নিশ্চয়ই ক্বিয়ামতের দিন তা আপন ঘাড়ে বহন করে হাযির হবে। যদি আত্মসাৎকৃত বস্তু উট হয়, উটের ন্যায় ‘চি চি’ করবে, যদি গরু হয় তবে ‘হাম্বা হাম্বা’ করবে। আর যদি ছাগল-ভেড়া হয়, তবে ‘ম্যা ম্যা’ করবে। অতঃপর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) স্বীয় হস্তদ্বয় উঠালেন, তাতে আমরা তাঁর বগলের শুভ্রতা প্রত্যক্ষ করলাম। তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই তোমার নির্দেশ পৌঁছে দিলাম। হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি পৌঁছে দিলাম’। (বুখারী পৃঃ ৯৮২, হা/৬৬৩৬ ‘কসম ও মানত’ অধ্যায়)

(১৪) মুমিনকে কষ্ট বা গালি দেয়ার প্রতিকারে হাত তুলে দু’আঃ

আয়েশা (রাঃ) রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -কে হাত তুলে দু’আ করতে দেখেন। তিনি দু’আয় বলছিলেন, নিশ্চয়ই আমি মানুষ। কোন মুমিনকে গালি বা কষ্ট দিয়ে থাকলে তুমি আমাকে শাস্তি প্রদান কর না’। (ছহীহ আল-আদাবুল মুফরাদ, হা/৬১০, পৃঃ ২০৯; সিলসিলা ছহীহা, হা/৮২-৮৩ সনদ ছহীহ)

সম্মানিত পাঠকগণ! আলোচ্য অধ্যায়ে হাত তুলে দু’আ করার প্রমাণে অনেকগুলো হাদীস পেশ করা হল, যদ্‌দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, হাত তুলে দু’আ করার বিধান শরী’আতে রয়েছে। উক্ত হাদীসগুলোতে এককভাবে হাত তুলে দু’আ করার কথা এসেছে। শুধু প্রথম হাদীসটিতে সম্মিলিতভাবে হাত তুলার কথা এসেছে যা ইসতিস্‌ক্বা বা পানি চাওয়া সংক্রান্ত। ইসতিসক্বা বিষয়ে অনেক হাদীস বর্ণিত যাতে সম্মিলিতভাবে দু’আ করার কথা আছে। তাই এ দু’আ করতে গিয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর নিয়ম-পদ্ধতির এক চুলও ব্যতিক্রম করা যাবে না যে ক্ষেত্রে যেভাবে দু’আ করার কথা সহীহ হাদীসে বর্ণিত আছে সেভাবেই দু’আ করতে হবে। কেননা দু’আও ইবাদতেরই অংশ বিশেষ। অতএব এর ব্যতিক্রম ঘটলে তা বিদ’আতে পরিণত হবে। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৭ ‘ঈমান’ অধ্যায়)

হাত তুলে দু’আর প্রমাণে পেশকৃত য’ঈফ হাদীসসমূহঃ

(১) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যখন কোন বান্দা প্রত্যেক সালাতের পর দু’হাত প্রশস্ত করে, অতঃপর বলে, হে আমার মা’বূদ এবং ইবরাহীম, ইসহাক্ব (আঃ) -এর মা’বূদ এবং জিবরীল, মীকাইল ও ইসরাফীল (আঃ) -এর মা’বূদ, তোমার কাছে আমি চাচ্ছি, তুমি আমার প্রার্থনা কবুল কর। আমি বিপথগামী, তুমি আমাকে আমার দ্বীনের উপর রক্ষা কর। তুমি আমার উপর রহমত বর্ষণ কর। আমি অপরাধী, তুমি আমার দরিদ্রতা দূর কর। আমি দৃঢ়ভাবে তোমাকে গ্রহণ করি। তখন আল্লাহ্‌র উপর হক্ব হয়ে যায় তার খালি হাত দু’খানা ফেরত না দেয়া। (ইবনুস সুন্নী, আমালুল ইয়াম ওয়াল লাইল ৪৯ পৃঃ)

হাদীসটি য’ঈফ। হাদীসটির সনদে ‘আবদুল আযীয ইবনু ‘আবদুর রহমান ও খাদীফ নামে দু’জন দুর্বল রাবী রয়েছে।

তা সত্ত্বেও অত্র দুর্বল হাদীসে একক ব্যক্তির হাত তুলে দু’আ প্রমাণিত হয়, দলবদ্ধভাবে দু’আ প্রমাণিত হয় না।

(২) আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, একদা রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সালাম ফিরার পর ক্বিবলা মুখ হয়ে দু’হাত উঠালেন এবং বললেন, হে আল্লাহ! ওয়ালীদ ইবনু ওয়ালীদকে পরিত্রাণ দাও। আইয়াশ, ইবনু আবী রবী‘আহ, সালাম ইবনু হিশাম এবং দুর্বল মুসলমানদের পরিত্রাণ দাও। যারা কোন কৌশল জানে না। যারা কাফিরদের হাত হতে কোন পথ পায় না-(ইবনু কাসীর ২য় খণ্ড, পৃঃ ৫৫৫; সূরা নিসা ৯৭ আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রঃ)। হাদীসটি য’ঈফ [ইবনু হাজার আসক্বালানী, তাহযীবুত তাহযীব (বৈরুত ছাপা ১৯৯৪), ৭/২৭৪ রাবী নং ৪৯০৫]

আলোচ্য হাদীসে ‘আলী ইবনু যায়দ ইবনু জাদ’আন য’ঈফ রাবী। [ইবনু হাজার আসক্বালানী, তাক্বরীব (বৈরুত ছাপা ১৯৮৮), পৃঃ ৪০১ রাবী নং ৪৭৩৪। এ ‘আলীকে শাইখ আলবানীও দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন, দেখুন “যিলালিল জান্নাহ্‌” (৬৩০), “আল-ইসরা ওয়াল মি’রাজ” (পৃঃ ৫২) ও কিস্‌সাতু মাসীহিদ দাজ্জাল” গ্রন্থে (পৃঃ ৯৪) অন্য প্রসঙ্গে বর্ণিত একটি হাদীসে]

আলোচ্য হাদীসটি মুনকার তথা সহীহ্‌ বুখারী ও মুসলিম সহ বিভিন্ন গ্রন্থে বর্ণিত সহীহ্‌ হাদীস বিরোধী। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত বুখারীর হাদীসে সালাতের মধ্যে রুকূ’র পর দু’আ করার কথা রয়েছে। অথচ এ দুর্বল হাদীসে সালামের পরের কথা রয়েছে। বুখারীর হাদীসে হাত তোলার কথা নেই, কিন্তু এ হাদীসে হাত তোলার কথা বলা হয়েছে। অথচ ঘটনা একটিই এবং দু’আ হ’ল কুনূতে নাযিলা। (সহীহুল বুখারী হাঃ ২৯৩২, ‘জিহাদ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ ৯৮, মুসলিম ৬৭৫, নাসাঈ ১০৭৪, আবূ দাউদ ১৪৪২, ইবনু মাজাহ্‌ ১২৯৪, আহমাদ ৭৪১৫ ও দারেমী ১৫৯৫)

অতএব সালাতের পর দলবদ্ধভাবে দু’আর প্রমাণ পেশ করা শরীয়ত বিকৃত করার শামিল।

(৩) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, সালাত দু’ দু’ রাক’আত এবং প্রত্যেক দু’রাক’আতেই তাশাহহুদ, ভয়, বিনয় ও দীনতার ভাব থাকবে। অতঃপর তুমি ক্বিবলামুখী হয়ে তোমার দু’হাতকে তোমার মুখের সামনে উঠাবে এবং বলবে, হে আমার প্রতিপালক! হে আমার প্রতিপালক! যে এরূপ করবে না তার সালাত অসম্পূর্ণ- (মিশকাত পৃঃ ৭৭, হাঃ ৮০৫ ‘সালাতের বর্ণনা’ অনুচ্ছেদ)। হাদীসটি য’ঈফ। ‘আবদুল্লাহ ইবনু নাফি’ ইবনিল আময়া য’ঈফ রাবী। (আলবানী যঈফ আবী দাঊদ হাঃ ১২৯৬, য’ঈফ ইবনে মাজাহ্‌ ১৩২৫, সহীহ্‌ ইবনে খুযায়মাহ্‌ ১২১২ (য’ঈফ), যঈফুল জামে’ আস-সগীর হাঃ ৩৫১২; তাহক্বীক্ব মিশকাত হাঃ ৮০৫-এর টীকা নং ৩; তাক্বরীবুত তাহযীব পৃঃ ৩২৬, রাবী নং ৩৬৫৮)

হাদীসটি দুর্বল হওয়া সত্ত্বেও এতে নফল সালাতের কথা বলা হয়েছে এবং এককভাবে দু’আর কথা এসেছে।

(৪) খাল্লাদ ইবনু সায়িব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন দু’আ করতেন, তখন তাঁর দু’হাত মুখের সামনে উঠাতেন-(মাযমাউয যাওয়ারেদ ১ম খণ্ড, পৃঃ ১৬৯)। হাদীসটি য’ঈফ। হাফস্‌ ইবনু হাশি ইবনু ‘উত্‌বাহ্‌ য’ঈফ রাবী। (তাক্বরীবুত তাহযীব পৃঃ ১৭৪, রাবী নং ১৪৩৪)

(৫) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তোমরা হাতের পেট দ্বারা চাও পিঠ দ্বারা চেয়ো না। অতঃপর তোমরা যখন দু’আ শেষ কর তখন তোমাদের হাত দ্বারা চেহারা মুছে নাও’। [হাদীসটি দুর্বল, দেখুন “য’ঈফ আবী দাঊদ” ১৪৮৫, উল্লেখ্য দাগ দেয়া অংশ বাদে হাদীসটি দুর্বল। দাগ দেয়া অংশটুকু সহীহ, দেখুন ‘সহীহ আবী দাঊদ” ১৪৮৬, “সহীহ জামে’ইস সাগীর” ৫৯৩, ৩৬৩৪ ও “সিলসিলা আহাদীসিস সহীহাহ” ৫৯৫)।

প্রকাশ থাকে যে, হাত তুলে দু’আ করার পর হাত মুছার প্রমাণে কোন সহীহ হাদীস নেই। বিস্তারিত দেখুন- ইরওয়াউল গালীল ২/১৭৮-১৮২, হাঃ ৪৩৩ ও ৪৩৪-এর আলোচনা তাহক্বীক্ব মিশকাত হাঃ ২২৫৫ এর টীকা নং ৪।

(৬) সায়িব ইবনু ইয়াযীদ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন দু’আ করতেন তখন দু’হাত উঠাতেন এবং দু’হাত দ্বারা চেহারা মুছে নিতেন- (আবূ দাউদ, হাঃ ১৪৯২, মিশকাত হাঃ ২২৫৫)। হাদীসটি য’ঈফ। আলোচ্য হাদীসে ‘আবদুল্লাহ ইবনু লাহইয়াহ নামক রাবী য’ঈফ। (যঈফ আবূ দাঊদ হাঃ ১৪৯২, পৃঃ ১১২; আউনুল মা’বূদ ১ম খণ্ড, পৃঃ ৩৬০; তাক্বরীব পৃঃ ৩১৯ রাবী নং ৩৫৬৩)

(৭) ‘আসওয়াদ ‘আমিরী তার পিতা হ’তে বর্ণনা করেন, তার পিতা বলেন, আমি রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর সাথে ফজরের সালাত আদায় করেছি। যখন তিনি সালাম ফিরালেন এবং ঘুরলেন তখন হাত উঠিয়ে দু’আ করলেন। (ইবনু আবী শায়বা ১ম খণ্ড, পৃঃ ৩৩৭)

প্রকাশ থাকে যে, (আরবী) রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর দু’হাত উঠালেন এবং দু’আ করলেন’ এ অংশটুকু মূল হাদীসে নেই (ইবনু আবী শায়বা) [ইবনু আবী শায়বা, আল-মুছান্নাফ (বৈরুতঃ দারুল ফিকর, ১৯৮৯), ১/৩৩৭। ছালাত অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৭৬] মিয়াঁ নাযীর হুসাইন দেহলভী এবং আল্লামা আব্দুর রহমান মুবারকপুরী তাঁরা নিজ নিজ গ্রন্থে হাদীসগুলো আলোচনা করেছেন। কিন্তু সহী জঈফের মানদণ্ডে হাদীসগুলো সহীহ নয়। তাই এখানো যারা এ হাদীস বক্তব্য বা লিখনীর মাধ্যমে প্রচার করতে চাইবেন তাদেরকে অবশ্যই মূল কিতাব দেখে পরিত্যাগ করতে হবে অন্যথা তারা হবেন নবীর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উপর মিথ্যারোপকারী এবং মিথ্যা প্রচারকারী, যাদের পরিণতি ভয়াবহ’। (মুসলিম, মিশকাত হাঃ ১৯৮, ১৯৯ ‘ইল্‌ম অধ্যায়)

(৮) ‘আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়ের একজন লোককে সালাত শেষের পূর্বে হাত তুলে দু’আ করতে দেখলেন। যখন তিনি দু’আ শেষ করলেন, তখন আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়ের তাকে বললেন, রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সালাত শেষ না করা পর্যন্ত হাত তুলে দু’আ করতেন না- (মাজমাউয যাওয়ারেদ ১ম খণ্ড, পৃঃ ১৬৯)। হাদীসটি য’ঈফ, (মুনকার), সহীহ হাদীস বিরোধী। সহীহ হাদীসে সলাতের মধ্যে রুকূর পর কুনুতে নাযেলা পড়ার সময় হাত তুলার কথা আছে- (আহমাদ, তাবরানী, সনদ ছহীহ, ইরওয়া)ল গালীল, ২/১৮১, হা/৮৩৮-এর আলোচনা দ্রঃ)। তবে সলাতের পর হাত তুলার কোন সহীহ হাদীস নেই।

(৯) ‘আবূ নুঈম (রাঃ) বলেন, আমি ওমর ও ইবনু যুবায়ের (রাঃ) -কে তাদের দু’হাতের তালু মুখের সামনে করে দু’আ করতে দেখেছি’। অত্র হাদীসে মুহাম্মাদ ইবনু ফোলাইহ এবং তার পিতা তারা দু’জনই য’ঈফ রাবী। (আল আদাবুল মুফরাদ তাহক্বীক্ব হা/৬০৯ পৃঃ ২০৮ ‘দু’আয় দু’হাত তুলা অনুচ্ছেদ, পৃঃ ২০৮)

(১০) আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বলতে শুনেছি যে, যখন আদম সন্তানের কোন দল একত্রিত হয়ে কেউ কেউ দু’আ করে আর অন্যরা আ-মীন বলে, আল্লাহ তাদের দু’আ কবুল করেন- (মুস্তাদরাক হাকেম, ৩/৩৯০ পৃঃ হা/৫৪৭৮ ‘সাহাবায়ে কেরামের মর্যাদা অধ্যায়; তারগীব ওয়া তারহীব, ১ম খণ্ড, পৃঃ ৯০)। হাদীসটি য’ঈফ। ইবনু লাহইয়াহ নামে রাবী দুর্বল। (তাক্বরীবুত তাহযীব, পৃঃ ৩১৯ রাবী নং ৩৫৬৩)

(১১) একদা আলী হাজরামী সাহাবী লোকদের নিয়ে সলা-ত আদায় করেন। সলা-ত শেষে হাঁটু গেড়ে বসেন, লোকেরাও হাঁটু গেড়ে বসে। তিনি হাত দুলে দু’আ করেন এবং লোকেরা তার সাথে ছিল- (আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়াহ, ৩য় জিলদ, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃঃ ৩৩২)। অত্র ঘটনাটি ইতিহাসে বর্ণিত থাকলেও এর কোন সনদ নেই।

প্রকাশ থাকে যে, হাদীসের সনদ থাকা সত্ত্বেও কোন রাবী য’ঈফ হ’লে তার হাদীস গ্রহণযোগ্য নয়। আর অত্র ঘটনাটির কোন সনদই নেই। তাহ’লে তা দলীলের যোগ্য হয় কী করে? এ বিবরণকে হাদীস বললে ছাহাবীর উপর মিথ্যারোপ করা হবে।

(১২) হুসাইন ইবনু ওয়াহওয়াহ হ’তে বর্ণিত, ত্বালহা ইবনু বারায়া মৃত্যুবরণ করলে তাকে রাতে দাফন করা হয়। সকালে রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -কে সংবাদ দেয়া হ’লে রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এসে কবরের পার্শ্বে দাঁড়ান এবং লোকেরাও তাঁর সাথে সারিবদ্ধ হয়। অতঃপর তিনি দু’হাত তুলে বলেন, হে আল্লাহ্‌! ত্বালহা তোমার উপর সন্তুষ্ট ছিল, তুমি তার উপর রহমত বর্ষণ কর- (তাবারানী, মাজমাউয যাওয়ারেদ)। হাদীসটি য’ঈফ, মুনকার, (সহীহ হাদীস বিরোধী)। সহীহ হাদীসে কবরের পাশে জানাযা পড়ার কথা রয়েছে। (বুখারী, ১ম খণ্ড, ‘জানাযা’ অধ্যায়)। উল্লেখ্য কবর যিয়ারাতে গিয়ে মৃত ব্যক্তিকে সালাম প্রদানের পরে একাকী হাত দুলে দু’আ করার সমর্থনে সহীহ্‌ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তবে কবরকে সামনে না করে কিবলাকে সামনে করে মৃত ব্যক্তিদের জন্য দু’আ করতে হবে এবং দু’আ শেষে হাত মুখে মুছবে না। দেখুন “আহকামুল জানায়েয” মাসআলা নং ১২০ ও পৃষ্ঠা নং ২৪৬।

(১৩) তোফায়েল (রাঃ) -এর গোত্রের জনৈক ব্যক্তি তার সাথে হিজরত করেন এবং অসুস্থ হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে সে তার কাঁধের রগ কেটে ফেলে এবং মৃত্যুবরণ করে। তোফায়েল (রাঃ) একদা স্বপ্নে তাকে জিজ্ঞেস করেন, আল্লাহ আপনার সাথে কিরূপ আচরণ করেছেন? তিনি বললেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর নিকট হিজরত করার কারণে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। তোফায়েল (রাঃ) বললেন, আপনার দু’হাতের খবর কী? তিনি বললেন, আমাকে বলা হয়েছে, তুমি যে অংশ নিজে নষ্ট করেছ, তা আমি কখনো ঠিক করব না। এ স্বপ্ন তোফায়েল (রাঃ) রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট বর্ণনা করলে তিনি তার জন্য দু’হাত তুলে ক্ষমা চাইলেন-হাদীসটি য’ঈফ। (য’ঈফ আদাবুল মুফরাদ হা/৬১৪, পৃঃ ২১০)

প্রিয় পাঠক! উপরোক্ত য’ঈফ হাদীস সমূহের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলে বুঝা যায় যে, কোন কোন সময় সলাতের পর এককভাবে হাত দুলে দু’আ করা যায়। কিন্তু য’ঈফ হওয়ার কারণে হাদীসগুলো রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর কি-না, তা স্পষ্ট নয়। সে কারণে এর উপর ‘আমল করা থেকে বিরত থাকা জরূরী। বাংলা লিখনী জগতের রত্ন মাওলানা আব্দুর রহীম বলেন, কেবলমাত্র সহীহ হাদীস ব্যতীত অন্য কোন হাদীস গ্রহণ করা যাবে না। এ কথায় হাদীসের সকল ইমাম একমত ও দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। (হাদীস সংকলনের ইতিহাস, পৃঃ ৪৪৫)

সিরিয়ার মুজাদ্দেদ আল্লামা জামালুদ্দীন কাসেমী, ইমাম বুখারী, মুসলিম, ইয়াহইয়া, ইবনু মুঈন, ইবনুল আরাবী, ইবন হযম ও ইবনু তায়মিয়া (রহঃ) সহ অনেক হাদীসের পণ্ডিত দৃঢ়কণ্ঠে ব্যক্ত করেছেন, ফাযীলাত কিংবা আহকাম কোন ব্যাপারেই য’ঈফ হাদীস ‘আমলযোগ্য নয়। (ক্বাওয়াইদুত তাওহীদ পৃঃ ৯৫)

যারা সম্মিলিতভাবে হাত দুলে দু’আ করার পক্ষে মত পোষণ করেন, তারা পবিত্র কুরআন থেকে কিছু আয়াত এবং কিছু য’ঈফ হাদীস দলীল হিসেবে পেশ করে থাকেন। নিম্মে তাদের দলীল সমূহের পর্যালোচনা তুলে ধরা হ’ল।

কুরআন থেকে দলীলঃ

(১) তোমাদের রব বলেন, তোমরা আমার নিকট দু’আ কর, আমি তোমাদের দু’আ কবূল করব। যারা অহঙ্কার বশতঃ আমার ‘ইবাদত হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, তারা অচিরেই লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (সুরাহ্‌ মু’মিন ৬০)

(২) হে নবী! আমার বান্দারা যদি আমার সম্পর্কে নিকট জিজ্ঞেস করে, তাহলে আপনি বলে দিন যে, আমি তাদের নিকটেই আছি। যে আমাকে ডাকে, আমি তার ডাক শ্রবণ করি এবং তার ডাকে সাড়া দেই। কাজেই তাদের আমার আহবানে সাড়া দেয়া এবং আমার উপর ঈমান আনা উচিত। তবেই তারা সত্য-সরল পথের সন্ধান পাবে। (সূরাহ্‌ বাক্বারাহ ১৮৬)

(৩) তোমরা তোমাদের রবকে ভীতি ও বিনয় সহকারে গোপনে ডাক, নিশ্চয়ই তিনি সীমালঙ্ঘনকারীকে পছন্দ করেন না। (সূরাহ্‌ আ’রাফ ৫৫)

(৪) অতঃপর যখন অবসর পাও পরিশ্রম কর এবং তোমার পালনকর্তার প্রতি মনোনিবেশ কর। (সূরাহ্‌ ইন্‌শিরাহ ৭-৮)

উল্লিখিত আয়াতসমূহ হাত তোলার প্রমাণে পেশ করা হয়। অথচ আয়াতসমূহের কোথাও হাত তোলার প্রতি ইঙ্গিত দেয়া হয়নি। বরং সাধারণভাবে আল্লাহ্‌র নিকট প্রার্থনার কথা বলা হয়েছে মাত্র। তাছাড়া কোন মুফাসসিরই উক্ত আয়াতসমূহের তাফসীর করতে গিয়ে হাত তুলার কথা বলেননি। এমনকি এ সম্পর্কিত কোন হাদীসও দলীল হিসেবে পেশ করেননি। সুতরাং এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, উপরে বর্ণিত আয়াতসমূহ ফরয সালাতের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে দু’আ করা প্রমাণ করে না। কাজেই হাত তুলে দু’আ করার প্রমাণে অত্র আয়াতগুলো পেশ করা শরী’আত বিকৃত করার নামান্তর মাত্র।

ফরয সালাতে র পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে দু’আ করা সম্বন্ধে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আলেমগণের অভিমতঃ

(১) আহমাদ ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ)-কে ফরয সালাতের পর ইমাম-মুক্তাদী সম্মিলিতভাবে দু’আ করা জায়েয কি-না জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেন,

‘সালাতের পর ইমাম-মুক্তাদী সম্মিলিতভাবে দু’আ করা বিদ’আত। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর যুগে এরূপ দু’আ ছিল না। বরং তাঁর দু’আ ছিল সালাতের মধ্যে। কারণ (সলা-তের মধ্যে) মুসল্লী স্বীয় প্রতিপালকের সাথে নীরবে কথা বলে আর নীরবে কথা বলার সময় দু’আ করা যথাযথ’। (মাজমূ’আ ফাতাওয়া ২২/৫১৯ পৃঃ)

(২) শায়খ আবদুল্লাহ বিন বায (রহঃ) বলেন,

‘পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাত ও নফল সালাতের পর দলবদ্ধভাবে দু’আ করা স্পষ্ট বিদ’আত। কারণ এরূপ দু’আ রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর যুগে এবং তাঁর সাহাবীদের যুগে ছিল না। যে ব্যক্তি ফরয সালাতের পর অথবা নফল সালাতের পর দলবদ্ধভাবে দু’আ করে সে যেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের বিরোধিতা করে’। (হাইয়াতু কেবারিল ওলামা ১/২৪৪ পৃঃ)

তিনি আরো বলেন, ‘ইমাম-মুক্তাদী সম্মিলিতভাবে দু’আ করার প্রমাণে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে কথা, কর্ম ও অনুমোদনগত (কাওলী, ফে’লী ও তাক্বরীরী) কোন হাদীস সম্পর্কে আমরা অবগত নই। আর একমাত্র রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর আদর্শের অনুসরণেই রয়েছে সমস্ত কল্যাণ। সালাত আদায়ের পর ইমাম-মুক্তাদীর দু’আ সম্পর্কে রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর আদর্শ সুস্পষ্ট আছে, যা তিনি সালামের পর পালন করতেন। চার খলীফাসহ সাহাবীগণ এবং তাবেঈগণ যথাযথভাবে তাঁর আদর্শ অনুসরণ করেছেন। অতঃপর যে ব্যক্তি তাঁর আদর্শের বিরোধিতা করবে, তাঁর আমল পরিত্যাজ্য হবে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার নির্দেশ ব্যতীত কোন আমল করবে তা পরিত্যাজ্য। কাজেই যে ইমাম হাত তুলে দু’আ করবেন এবং মুক্তাদীগণ হাত তুলে আ-মীন আ-মীন বলবেন তাদের নিকটে এ সম্পর্কে গ্রহণযোগ্য দলীল চাওয়া হবে। অন্যথায় (তারা দলীল দেখাতে ব্যর্থ হ’লে) তা পরিত্যাজ্য’। (হাইয়াতূ কেবারিল ওলামা ১/২৫৭)

(৩) বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ আল্লামা শায়খ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) বলেন, দু’আয়ে কুনূতে হাত তুলার পর মুখে হাত মুছা বিদ’আত। সালাতের পরেও ঠিক নয়। এ সম্পর্কে যত হাদীস রয়েছে, এর সবগুলিই য’ঈফ। এজন্য ইমাম আযউদ্দীন বলেন, সালাতের পর হাত তুলে দু’আ করা মূর্খদের কাজ। (ছিফাতু ছালাতিন নবী সাঃ ১৪১)

(৪) শায়খ ওছায়মিন (রহঃ) বলেন, সালাতের পর দলবদ্ধভাবে দু’আ করা বিদ’আত। যার প্রমাণ রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও তাঁর সহাবীগণ থেকে নেই। মুসল্লীদের জন্য বিধান হচ্ছে প্রত্যেক মানুষ ব্যক্তিগতভাবে যিকর করবে। (ফাতাওয়া ওছায়মীন, পৃঃ ১২০)

(৫) আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী (রহঃ) বলেন, ফরয সালাতের পর হাত তুলে দু’আ করা ব্যতীত অনেক দু’আই রয়েছে। (রফুস সামী পৃঃ ৯৫)

(৬) আল্লামা আব্দুল হাই লক্ষ্ণৌভী (রহঃ) বলেন, বর্তমান সমাজে প্রচলিত প্রথা যে, ইমাম সালাম ফিরানোর পর হাত উঠিয়ে দু’আ করেন এবং মুক্তাদীগণ ‘আ-মীন’ ‘আ-মীন’ বলেন, এ প্রথা রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর যুগে ছিল না। (ফৎওয়ায়ে আব্দুল হাই, ১ম খণ্ড, পৃঃ ১০০)

(৭) আল্লামা ইউসুফ বিন নূরী বলেন, অনেক স্থানেই এ প্রথা চালু হয়ে গেছে যে, ফরয সালাতের সালাম ফিরানোর পর সম্মিলিতভাবে হাত উঠিয়ে মুনাজাত করা হয় যা রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হ’তে প্রমাণিত নয়। (মা’আরেফুস সুনান, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ৪০৭)

(৮) আল্লামা আবুল কাসেম নানুতুবী (রহঃ) বলেন, ফরয সলা-তের সালাম ফিরানোর পর ইমাম-মুক্তাদী সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা নিকৃষ্ট বিদ’আত। (এমাদুদ্দীন পৃঃ ৩৯৭)

(৯) আল্লামা ইবনুল ক্বাইয়িম (৬৯১-৮৫৬ হিঃ) বলেন, ইমাম পশ্চিমমুখী হয়ে অথবা মুক্তাদীগণের দিকে ফিরে মুক্তাদীগণকে নিয়ে মুনাজাত করা কখনও রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর তরীকা নয়। এ সম্পর্কে একটিও সহীহ অথবা হাসান হাদীস নেই। [ইবনুল ক্বাইয়িম, যাদুল মা’আদ (বৈরুত ছাপা ১৯৯৬), ১ম খণ্ড, পৃঃ ১৪৯ ‘ফরয ছালাতের পর দু’আ করা সম্পর্কে লেখকের মতামত’ অনুচ্ছেদ]

(১০) আল্লামা মাজদুদ্দীন ফিরোযাবাদী (রহঃ) বলেন, ফরয সালাতের সালাম ফিরানোর পর ইমামগণ যে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেন, তা কখনও রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) করেননি এবং এ সম্পর্কে কোন হাদীসও পাওয়া যায় না। (ছিফরুস সা’আদাত, পৃঃ ২০)

(১১) আল্লামা শাত্বেবী (৭০০ হিঃ) বলেন, শেষ কথা হ’ল এই যে, ফরয সালাতের পর সম্মিলিতভাবে রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজেও মুনাজাত করেননি, করার আদেশও দেননি। এমনকি তিনি এটা সমর্থন করেছেন, এ ধরনেরও কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। (আল-ই’তেসাম, ১ম খণ্ড, পৃঃ ৩৫২)

(১২) আল্লামা ইবনুল হাজ্ব মাক্কী বলেন, নিঃসন্দেহে এ কথা বলা চলে যে, রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফরয সালাতের সালাম ফিরানোর পর হাত উঠিয়ে দু’আ করেছেন এবং মুক্তাদীগণ আ-মীন আ-মীন বলেছেন, এরূপ কখনো দেখা যায় না। চার খলীফা থেকেও এর কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। তাই এ ধরনের কাজ, যা রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) করেননি, তাঁর সহাবীগণ করেননি, নিঃসন্দেহে তা না করা উত্তম এবং করা বিদ’আত। (মাদখাল, ২য় খণ্ড, পৃঃ ২৮৩)

আবূ মূসা (রাঃ) বর্ণনা করেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দু’খানা হাত এতটুকু উঠিয়ে দু’আ করতেন যে, আমি তাঁর বগলের ফর্সা রঙ দেখতে পেয়েছি। ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দু’খানা হাত উঠিয়ে দু’আ করেছেনঃ হে আল্লাহ! খালিদ যা করেছে আমি তা থেকে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করছি।

(১৩) আল্লামা আশরাফ আলী থানবী (রহঃ) বলেন, ফরয সালাতের পর ইমাম সাহেব দু’আ করবেন এবং মুক্তাদীগণ আ-মীন আ-মীন বলবেন, এ সম্পর্কে ইমাম আরফাহ এবং ইমাম গাবরহিনী বলেন, এ দু’আকে সালাতের সুন্নাত অথবা মুস্তাহাব মনে করা না জায়েয। (ইস্তিহবাবুদ দাওয়াহ পৃঃ ৮)

(১৪) আল্লামা মুফতী মোহাম্মদ শফী (রহঃ) বলেন, বর্তমানে অনেক মসজিদের ইমামদের অভ্যাস হয়ে গেছে যে, কিছু আরবী দু’আ মুখসস্থ করে নিয়ে সালাত শেষ করেই (দু’হাত উঠিয়ে) ঐ মুখস্থ দু’আগুলি পড়েন। কিন্তু যাচাই করে দেখলে দেখা যাবে যে, এ দু’আগুলোর সারমর্ম তাদের অনেকেই বলতে পারে না। আর ইমামগণ বলতে পারলেও এটা নিশ্চিত যে, অনেক মুক্তাদী এ সমস্ত দু’আর অর্থ মোটেই বুঝে না। কিন্তু না জেনে না বুঝে আ-মীন, আ-মীন বলতে থাকে। এ সমস্ত তামাশার সারমর্ম হচ্ছে কিছু শব্দ পাঠ করা মাত্র। প্রার্থনার যে রূপ বা প্রকৃতি, তা এতে পাওয়া যায় না- (মা’আরেফুল কুরআন ৩য় খণ্ড, পৃঃ ৫৭৭)। তিনি আরো বলেন, রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং সাহাবায়ে কিরাম এবং তাবিঈনে ইমাম হ’তে এবং শরী’আতের চার মাযহাবের ইমামগণ হ’তেও সালাতের পরে এ ধরনের মুনাজাতের প্রমাণ পাওয়া যায় না। সারকথা হ’ল, এ প্রথা পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসের প্রদর্শিত পন্থা ও সহাবায়ে কেরামের আদর্শের পরিপন্থী। (আহকামে দু’আ, পৃঃ ১৩)

(১৫) মুফতী আযম ফয়যুল্লাহ হাটহাজারী বলেন, ফরয সালাতের পর দু’আর চারটি নিয়ম আছে। (১) মাঝে মাঝে একা একা হাত উঠানো ব্যতীত হাদীসে উল্লিখিত মাসনূন দু’আ সমূহ পড়া। নিঃসন্দেহে তা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। (২) মাঝে মাঝে একা একা হাত উঠিয়ে দু’আ করা। এটা কোন সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। তবে কিছু য’ঈফ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। (৩) ইমাম ও মুক্তাদীগণ সম্মিলিতভাবে দু’আ করা। এটা না কোন সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত, না কোন য’ঈফ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। (৪) ফরয সালাতের পর সর্বদা দলবদ্ধভাবে হাত উঠিয়ে প্রার্থনা করার কোন প্রমাণ শরী’আতে নেই। না ছাহাবী ও তাবেঈদের আমল দ্বারা প্রমাণিত, না হাদীস সমূহ দ্বারা, সহীহ হোক অথবা য’ঈফ হোক অথবা জাল হোক। আর না ফিক্বহ-এর কিতাবের কোন পাতায় লিখা আছে। এ দু’আ অবশ্যই বিদ’আত। (আহকামে দু’আ ২১ পৃঃ)

(১৬) পাকিস্তানের বিখ্যাত মুফতী আল্লামা রশীদ আহমাদ বলেন, রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সলা-ত পাঁচবার প্রকাশ্যে জামা’আত সহকারে পড়াতেন। যদি রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কখনো সম্মিলিতভাবে মুক্তাদীগণকে নিয়ে মুনাজাত করতেন তাহ’লে নিশ্চয়ই একজন ছাহাবী হ’লেও তা বর্ণনা করতেন। কিন্তু এতগুলো হাদীসের মধ্যে একটি হাদীসও এ মুনাজাত সম্পর্কে পাওয়া যায়নি। তারপর কিছুক্ষণের জন্য মুস্তাহাব মানলেও বর্তমানে যেরূপ গুরুত্ব দিয়ে করা হচ্ছে, তা নিঃসন্দেহে বিদ’আত। (আহসানুল ফাতাওয়া ৩য় খণ্ড, পৃঃ ৬৮)

(১৭) আল্লামা মওদূদী বলেন, এতে সন্দেহ নেই যে, বর্তমানে জামা’আতে সালাত আদায় করার পর ইমাম ও মুক্তাদীগণ মিলে যে নিয়মে দু’আ করেন, এ নিয়ম রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর যামানায় প্রচলিত ছিল না। এ কারণে বহুসংখ্যক আলেম এ নিয়মকে বিদ’আত আখ্যায়িত করেছেন। (আহসানুল ফাতাওয়া ৩য় খণ্ড, পৃঃ ৬৯৮)

(১৮) মাসিক মঈনুল ইসলাম পত্রিকার প্রশ্নোত্তর কলামে বলা হয়েছে, জামা’আতে ফরয সলাতান্তে ইমাম-মুক্তাদী সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা বিদ’আত ও মাকরূহে তাহরীমী। কেননা সহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন, তাবে তাবেঈনদের কেউ এ কাজ শরী’আত মনে করে ‘আমাল করেছেন বলে কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। তা নিশ্চয়ই মাকরূহ ও বিদ’আত। (মাসিক মুঈনুল ইসলাম, ছফর সংখ্যা ১৪১৩ হিঃ)

প্রকাশ থাকে যে, কোন কোন ‘আলেম ফরয সালাতান্তে হাত উঠিয়ে দু’আ করার প্রমাণে কিছু পুস্তক লিখলেও প্রকৃতপক্ষে বিষয়টি বিতর্কিত নয়। সিদ্ধান্তহীনতার ফলে অথবা স্বার্থান্বেষী হয়ে আমরাই বিষয়টিকে বিতর্কিত করেছি। কারণ এ কথা সর্বজনবিদিত যে, রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম), সহাবীগণ ও তাবেঈগণ ইমাম-মুক্তাদী মিলে হাত উঠিয়ে কখনো দু’আ করেননি এবং পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় ‘আলিমগণ করেননি এবং বর্তমানেও করেন না। কাজেই এটি স্পষ্ট বিদ’আত।

আল্লাহ তা’আলা আমাদের সকলকে পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীস অনুযায়ী ‘আমল করার তাওফীক দান করুন-আ-মীন!!

৬৩৪১
قَالَ أَبُو عَبْدِ اللَّهِ وَقَالَ الأُوَيْسِيُّ حَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ، عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ، وَشَرِيكٍ، سَمِعَا أَنَسًا، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم رَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى رَأَيْتُ بَيَاضَ إِبْطَيْهِ‏.‏

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

অন্য এক সূত্রে আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দু’ হাত এতটুকু তুলে দু’আ করেছেন যে, আমি তার বগলের শুভ্রতা দেখতে পেয়েছি।(আধুনিক প্রকাশনী- অনুচ্ছেদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- অনুচেছদ)

৮০/২৪. অধ্যায়ঃ
কিবলামুখী না হয়ে দু’আ করা।

৬৩৪২
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ مَحْبُوبٍ، حَدَّثَنَا أَبُو عَوَانَةَ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَنَسٍ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ بَيْنَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَخْطُبُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ فَقَامَ رَجُلٌ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ ادْعُ اللَّهَ أَنْ يَسْقِيَنَا‏.‏ فَتَغَيَّمَتِ السَّمَاءُ وَمُطِرْنَا، حَتَّى مَا كَادَ الرَّجُلُ يَصِلُ إِلَى مَنْزِلِهِ، فَلَمْ تَزَلْ تُمْطَرُ إِلَى الْجُمُعَةِ الْمُقْبِلَةِ، فَقَامَ ذَلِكَ الرَّجُلُ أَوْ غَيْرُهُ فَقَالَ ادْعُ اللَّهَ أَنْ يَصْرِفَهُ عَنَّا، فَقَدْ غَرِقْنَا‏.‏ فَقَالَ ‏ “‏ اللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا وَلاَ عَلَيْنَا ‏”‏‏.‏ فَجَعَلَ السَّحَابُ يَتَقَطَّعُ حَوْلَ الْمَدِينَةِ، وَلاَ يُمْطِرُ أَهْلَ الْمَدِينَةِ‏.‏

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জুমু’আহ্‌র দিন খুৎবাহ দিচ্ছিলেন। এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললোঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনি আমাদের উপর বৃষ্টির জন্য দু’আ করুন। (তিনি দু’আ করলে) তখনই আকাশ মেঘে ছেয়ে গেল এবং এমনি বৃষ্টি হলো যে, মানুষ আপন ঘরে পৌঁছতে পারলো না এবং পরবর্তী জুমু’আহ পর্যন্ত এক নাগাড়ে বৃষ্টি হতে থাকলো। পরবর্তী জুমু’আহ্‌য় সেই লোক অথবা অন্য এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললোঃ আপনি আল্লাহ্‌র নিকট দু’আ করুন, তিনি যেন আমাদের উপর মেঘ সরিয়ে নেন। আমরা তো ডুবে গেলাম। তখন তিনি দু’আ করলেনঃ হে আল্লাহ! আপনি আমাদের আশেপাশে বর্ষণ করুন। আমাদের উপর (আর) বর্ষণ করবেন না। তখন মেঘ বিক্ষিপ্ত হয়ে মাদীনাহ্‌র পার্শ্ববর্তী এলাকায় ছড়িয়ে পড়লো। মাদীনাহ্‌বাসীর উপর আর বৃষ্টি হলো না।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৯৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৮৯)

৮০/২৫. অধ্যায়ঃ
কিবলার দিকে মুখ করে দু’আ করা।

৬৩৪৩
حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ إِسْمَاعِيلَ، حَدَّثَنَا وُهَيْبٌ، حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ يَحْيَى، عَنْ عَبَّادِ بْنِ تَمِيمٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ زَيْدٍ، قَالَ خَرَجَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِلَى هَذَا الْمُصَلَّى يَسْتَسْقِي، فَدَعَا وَاسْتَسْقَى ثُمَّ اسْتَقْبَلَ الْقِبْلَةَ وَقَلَبَ رِدَاءَهُ‏.‏

আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একবার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইস্‌তিস্‌কার (বৃষ্টির) সালাতের জন্য ঈদ্গাহে গমন করলেন এবং বৃষ্টির জন্য দু’আ করলেন। অতঃপর কিবলার দিকে মুখ করে নিজের চাদরখানা উল্টিয়ে গায়ে দিলেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৯৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৯০)

৮০/২৬. অধ্যায়ঃ
আপন খাদিমের দীর্ঘজীবী হওয়া এবং অধিক মালদার হবার জন্য নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর দু’আ।

৬৩৪৪
عَبْدُ اللَّهِ بْنُ أَبِي الْأَسْوَدِ حَدَّثَنَا حَرَمِيٌّ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ قَتَادَةَ عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَتْ أُمِّي يَا رَسُولَ اللَّهِ خَادِمُكَ أَنَسٌ ادْعُ اللَّهَ لَهُ قَالَ اللَّهُمَّ أَكْثِرْ مَالَهُ وَوَلَدَهُ وَبَارِكْ لَهُ فِيمَا أَعْطَيْتَهُ.

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমার মা বললেনঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! আনাস আপনারই খাদিম। আপনি তার জন্য দু’আ করুন। তিনি দু’আ করলেনঃ হে আল্লাহ! আপনি তার সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বৃদ্ধি করে দিন। আর তাকে আপনি যা কিছু দিয়েছেন তাতে বারাকাত দিন।(আধুনিক প্রকাশনী- ,৫৮৯৮ ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৯১)

৮০/২৭. অধ্যায়ঃ
বিপদের সময় দু’আ করা।

৬৩৪৫
حَدَّثَنَا مُسْلِمُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، حَدَّثَنَا هِشَامٌ، حَدَّثَنَا قَتَادَةُ، عَنْ أَبِي الْعَالِيَةِ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ـ رضى الله عنهما ـ قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَدْعُو عِنْدَ الْكَرْبِ ‏ “‏ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ الْعَظِيمُ الْحَلِيمُ، لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ رَبُّ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ، رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ ‏”‏‏.‏

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিপদের সময় এ দু’আ পড়তেনঃ আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। যিনি মহান ও ধৈর্যশীল। আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। তিনিই আসমান যমীনের প্রতিপালক ও মহান আরশের প্রভু। [৬৩৪৬, ৭৪২৬, ৭৪৩১; মুসলিম ৪৮/২১, হাঃ ২৭৩০, আহমাদ ৩৩৫৪] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৯৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৯২)

৬৩৪৬
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا يَحْيَى، عَنْ هِشَامِ بْنِ أَبِي عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَبِي الْعَالِيَةِ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَقُولُ عِنْدَ الْكَرْبِ ‏ “‏ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ الْعَظِيمُ الْحَلِيمُ، لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ، لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ رَبُّ السَّمَوَاتِ، وَرَبُّ الأَرْضِ، وَرَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيمِ ‏”‏‏.‏ وَقَالَ وَهْبٌ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ قَتَادَةَ مِثْلَهُ‏.‏

মুসান্নাদ (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

বিপদের সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ দু’আ পড়তেনঃ আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, যিনি অতি উচ্চ মর্যাদাপূর্ণ ও অশেষ ধৈর্যশীল, আরশে আযীমের প্রভু। আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবূদ নেই। আসমান যমীনের প্রতিপালক ও সম্মানিত আরশের মালিক। আল্লাহ ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই। [৬৩৪৫; মুসলিম ৪৮/২১, হাঃ ২৭৩০, আহমাদ ৩৩৫৪] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৯০০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৯৩)

৮০/২৮. অধ্যায়ঃ
ভীষণ বিপদ থেকে আশ্রয় চাওয়া।

৬৩৪৭
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، حَدَّثَنِي سُمَىٌّ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَتَعَوَّذُ مِنْ جَهْدِ الْبَلاَءِ، وَدَرَكِ الشَّقَاءِ، وَسُوءِ الْقَضَاءِ، وَشَمَاتَةِ الأَعْدَاءِ‏.‏ قَالَ سُفْيَانُ الْحَدِيثُ ثَلاَثٌ زِدْتُ أَنَا وَاحِدَةً، لاَ أَدْرِي أَيَّتُهُنَّ هِيَ‏.‏

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বালা মুসীবতের কঠোরতা, দুর্ভাগ্যে পতিত হওয়া, ভাগ্যের অশুভ পরিণতি এবং দুশমনের আনন্দিত হওয়া থেকে আশ্রয় চাইলেন। সুফ্‌ইয়ান (রহঃ)-এর হাদীসে তিনটি বিষয়ের উল্লেখ আছে। একটি আমি বৃদ্ধি করেছি। জানি না তা এগুলোর কোন্‌টি।[৬৬১৬; মুসলিম ৪৮/১৬, হাঃ ২৭০৭] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৯০১ ,ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৯৪)

৮০/২৯. অধ্যায়ঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর দু’আ আল্লাহুম্মা রাফীকাল ‘আলা।

৬৩৪৮
حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ عُفَيْرٍ، قَالَ حَدَّثَنِي اللَّيْثُ، قَالَ حَدَّثَنِي عُقَيْلٌ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، أَخْبَرَنِي سَعِيدُ بْنُ الْمُسَيَّبِ، وَعُرْوَةُ بْنُ الزُّبَيْرِ، فِي رِجَالٍ مِنْ أَهْلِ الْعِلْمِ أَنَّ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ قَالَتْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ وَهْوَ صَحِيحٌ ‏”‏ لَنْ يُقْبَضَ نَبِيٌّ قَطُّ حَتَّى يَرَى مَقْعَدَهُ مِنَ الْجَنَّةِ ثُمَّ يُخَيَّرُ ‏”‏‏.‏ فَلَمَّا نَزَلَ بِهِ وَرَأْسُهُ عَلَى فَخِذِي، غُشِيَ عَلَيْهِ سَاعَةً، ثُمَّ أَفَاقَ فَأَشْخَصَ بَصَرَهُ إِلَى السَّقْفِ ثُمَّ قَالَ ‏”‏ اللَّهُمَّ الرَّفِيقَ الأَعْلَى ‏”‏‏.‏ قُلْتُ إِذًا لاَ يَخْتَارُنَا، وَعَلِمْتُ أَنَّهُ الْحَدِيثُ الَّذِي كَانَ يُحَدِّثُنَا، وَهْوَ صَحِيحٌ‏.‏ قَالَتْ فَكَانَتْ تِلْكَ آخِرَ كَلِمَةٍ تَكَلَّمَ بِهَا ‏”‏ اللَّهُمَّ الرَّفِيقَ الأَعْلَى ‏”‏‏.‏

আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সুস্থাবস্থায় বলতেনঃ জান্নাতের জায়গা না দেখিয়ে কোন নবীর জান কব্‌য করা হয় না, যতক্ষণ না তাঁকে তাঁর বাসস্থান দেখানো হয় এবং তাঁকে ইখ্‌তিকার দেয়া হয় (দুনিয়া বা আখিরাত গ্রহণ করার)। এরপর যখন তাঁর মৃত্যুর সময় উপস্থিত হলো, তখন তাঁর মাথাটা আমার উরুর উপর ছিল। কিছুক্ষণ অজ্ঞান থাকার পর তাঁর জ্ঞান ফিরে এলো। তখন তিনি ছাদের দিকে তাকিয়ে বললেনঃ “আল্লাহুম্মা রাফীকাল ‘আলা” হে আল্লাহ! আমি রাফীকে ‘আলা (শ্রেষ্ঠ বন্ধু)-কে গ্রহণ করলাম। আমি বললামঃ এখন থেকে তিনি আর আমাদের পছন্দ করবেন না। আর এটাও বুঝতে পারলাম যে, তিনি সুস্থ অবস্থায় আমাদের নিকট যা বলতেন এটি তাই। আর তা সঠিক। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, এটি ছিল তাঁর সর্বশেষ বাক্য যা তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ! আমি শ্রেষ্ঠ বন্ধু গ্রহণ করলাম।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৯০২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৯৫)

৮০/৩০. অধ্যায়ঃ মৃ
মৃত্যু আর জীবনের জন্য দু’আ করা।

৬৩৪৯
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا يَحْيَى، عَنْ إِسْمَاعِيلَ، عَنْ قَيْسٍ، قَالَ أَتَيْتُ خَبَّابًا وَقَدِ اكْتَوَى سَبْعًا قَالَ لَوْلاَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم نَهَانَا أَنْ نَدْعُوَ بِالْمَوْتِ لَدَعَوْتُ بِهِ‏.‏

কায়স (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি খাব্বাব (রাঃ) -এর নিকট আসলাম। তিনি লোহা গরম করে শরীরে সাতবার দাগ দিয়েছিলেন। তিনি বললেনঃ যদি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে মৃত্যুর জন্য দু’আ করতে নিষেধ না করতেন, তাহলে আমি এজন্য দু’আ করতাম।[৫৬৭২; মুসলিম ৪৮/৪, হাঃ ২৬৮১, আহমাদ ৮১৯৬] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৯০৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৯৬)

৬৩৫০
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، حَدَّثَنَا يَحْيَى، عَنْ إِسْمَاعِيلَ، قَالَ حَدَّثَنِي قَيْسٌ، قَالَ أَتَيْتُ خَبَّابًا وَقَدِ اكْتَوَى سَبْعًا فِي بَطْنِهِ فَسَمِعْتُهُ يَقُولُ لَوْلاَ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم نَهَانَا أَنْ نَدْعُوَ بِالْمَوْتِ لَدَعَوْتُ بِهِ‏.‏

কায়স (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ

কায়স (রহঃ) বলেন, আমি খাব্বাব (রাঃ) -এর নিকট গেলাম। তিনি তাঁর পেটে সাতবার দাগ দিয়েছিলেন। তখন আমি তাঁকে বলতে শুনলামঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যদি আমাদের মৃত্যুর জন্য দু’আ করতে নিষেধ না করতেন, তবে আমি এজন্য দু’আ করতাম।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৯০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৯৭)

৬৩৫১
حَدَّثَنَا ابْنُ سَلاَمٍ، أَخْبَرَنَا إِسْمَاعِيلُ ابْنُ عُلَيَّةَ، عَنْ عَبْدِ الْعَزِيزِ بْنِ صُهَيْبٍ، عَنْ أَنَسٍ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ لاَ يَتَمَنَّيَنَّ أَحَدٌ مِنْكُمُ الْمَوْتَ لِضُرٍّ نَزَلَ بِهِ، فَإِنْ كَانَ لاَ بُدَّ مُتَمَنِّيًا لِلْمَوْتِ فَلْيَقُلِ اللَّهُمَّ أَحْيِنِي مَا كَانَتِ الْحَيَاةُ خَيْرًا لِي، وَتَوَفَّنِي إِذَا كَانَتِ الْوَفَاةُ خَيْرًا لِي ‏”‏‏.‏

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ কোন বিপদের কারণে মৃত্যু কামনা করবে না। আর কেউ যদি এমন অবস্থায় পড়ে যে, তাকে মৃত্যু কামনা করতেই হয়, তবে সে দু’আ করবেঃ হে আল্লাহ! যতদিন বেঁচে থাকা আমার জন্য কল্যাণকর হয়, ততদিন আমাকে জীবিত রাখো, আর যখন আমার জন্য মৃত্যুই কল্যাণকর হয় তখন আমার মৃত্যু দাও।[৫৬৭১; মুসলিম ৪৮/৪, হাঃ ২৬৮০, আহমাদ ১১৯৭৯] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৯০৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৯৮)

৮০/৩১. অধ্যায়ঃ
শিশুদের জন্য বারাকাতের দু’আ করা এবং তাদের মাথায় হাত বুলানো।

আবূ মূসা (রাঃ) বলেন, আমার এক ছেলে হলে নবী তার জন্য বারাকাতের দু’আ করলেন।

৬৩৫২
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا حَاتِمٌ، عَنِ الْجَعْدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، قَالَ سَمِعْتُ السَّائِبَ بْنَ يَزِيدَ، يَقُولُ ذَهَبَتْ بِي خَالَتِي إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَتْ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ ابْنَ أُخْتِي وَجِعٌ‏.‏ فَمَسَحَ رَأْسِي، وَدَعَا لِي بِالْبَرَكَةِ، ثُمَّ تَوَضَّأَ فَشَرِبْتُ مِنْ وَضُوئِهِ، ثُمَّ قُمْتُ خَلْفَ ظَهْرِهِ، فَنَظَرْتُ إِلَى خَاتَمِهِ بَيْنَ كَتِفَيْهِ مِثْلَ زِرِّ الْحَجَلَةِ‏.‏

সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আমার খালা আমাকে নিয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর নিকটে গেলেন এবং বললেনঃ হে আল্লাহর রসূল! আমার এ ভাগ্নেটি অসুস্থ। তিনি আমার মাথায় হাত বুলালেন এবং আমার জন্য বারাকাতের দু’আ করলেন। এরপর তিনি অযূ করলে, আমি তার অযূর পানি থেকে কিছুটা পান করলাম। তারপর আমি তাঁর পিঠের দিকে দাঁড়ালাম। তখন আমি তাঁর দু’ কাঁধের মাঝে মোহ্‌রে নবূওয়াত দেখতে পেলাম। তা ছিল খাটের চাঁদোয়ার ঝালরের ন্যায়।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৯০৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৯৯)

৬৩৫৩
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يُوسُفَ، حَدَّثَنَا ابْنُ وَهْبٍ، حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ أَبِي أَيُّوبَ، عَنْ أَبِي عَقِيلٍ، أَنَّهُ كَانَ يَخْرُجُ بِهِ جَدُّهُ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ هِشَامٍ مِنَ السُّوقِ أَوْ إِلَى السُّوقِ فَيَشْتَرِي الطَّعَامَ، فَيَلْقَاهُ ابْنُ الزُّبَيْرِ وَابْنُ عُمَرَ فَيَقُولاَنِ أَشْرِكْنَا فَإِنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَدْ دَعَا لَكَ بِالْبَرَكَةِ‏.‏ فَرُبَّمَا أَصَابَ الرَّاحِلَةَ كَمَا هِيَ، فَيَبْعَثُ بِهَا إِلَى الْمَنْزِلِ‏.‏

আবূ ‘আকীল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তাঁর দাদা ‘আবদুল্লাহ ইবনু হিশাম (রাঃ) তাকে নিয়ে বাজারের দিকে বের হতেন। সেখানে তিনি খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করতেন। তখন পথে ইবনু যুবায়র (রাঃ) ও ইবনু ‘উমার (রাঃ) -এর দেখা হলে, তাঁরা তাঁকে বলতেন যে, এতে আপনি আমাদেরও অংশীদার করে নিন। কারণ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আপনার জন্য বারাকাতের দু’আ করেছেন। তখন তিনি তাঁদের অংশীদার করে নিতেন। তিনি বাহনের পৃষ্ঠে লাভের শস্যাদি পূর্ণরূপে পেতেন, আর তা ঘরে পাঠিয়ে দিতেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৯০৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৮০০)

৬৩৫৪
حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ سَعْدٍ، عَنْ صَالِحِ بْنِ كَيْسَانَ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، قَالَ أَخْبَرَنِي مَحْمُودُ بْنُ الرَّبِيعِ، وَهُوَ الَّذِي مَجَّ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي وَجْهِهِ وَهْوَ غُلاَمٌ مِنْ بِئْرِهِمْ‏.‏

ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ

মাহমূদ ইবনু রাবী বর্ণনা করেছেন যে, তিনিই ছিলেন সেই লোক, বাল্যাবস্থায় তাঁদেরই কূপ থেকে পানি মুখে নিয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যার চেহারার উপর ছিটিয়ে দিয়েছিলেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৯০৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৮০১)

৬৩৫৫
حَدَّثَنَا عَبْدَانُ، أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللَّهِ، أَخْبَرَنَا هِشَامُ بْنُ عُرْوَةَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ قَالَتْ كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يُؤْتَى بِالصِّبْيَانِ فَيَدْعُو لَهُمْ، فَأُتِيَ بِصَبِيٍّ فَبَالَ عَلَى ثَوْبِهِ، فَدَعَا بِمَاءٍ فَأَتْبَعَهُ إِيَّاهُ، وَلَمْ يَغْسِلْهُ‏.‏

আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর খিদমতে শিশুদের নিয়ে আসা হতো। তিনি তাদের জন্য দু’আ করতেন। একদা একটি শিশুকে আনা হলো। শিশুটি তাঁর কাপড়ে পেশাব করে দিল। তিনি কিছু পানি আনালেন এবং তা তিনি কাপড়ের উপর ছিটিয়ে দিলেন আর তা ধুলেন না।[২২২; মুসলিম ২/৩১, হাঃ ২৮৬, আহমাদ ২৫৮২৯] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৯০৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৮০২)

৬৩৫৬
حَدَّثَنَا أَبُو الْيَمَانِ، أَخْبَرَنَا شُعَيْبٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، قَالَ أَخْبَرَنِي عَبْدُ اللَّهُ بْنُ ثَعْلَبَةَ بْنِ صُعَيْرٍ ـ وَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَدْ مَسَحَ عَنْهُ ـ أَنَّهُ رَأَى سَعْدَ بْنَ أَبِي وَقَّاصٍ يُوتِرُ بِرَكْعَةٍ‏.‏

আব্দুল্লাহ ইবনু সা’আলাবাহ ইবনু সু’আইর থেকে বর্ণিতঃ

. ‘আব্দুল্লাহ ইবনু সা’আলাবাহ ইবনু সু’আইর, যার মাথায় (শিশুকালে) রসূলুল্লাহ হাত বুলিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি বর্ণনা করেন যে, তিনি সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাসকে বিত্‌রের সালাত এক রাক’আত আদায় করতে দেখেছেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৯১০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৮০৩)

৮০/৩২. অধ্যায় :
নবী এর উপর সালাত পাঠ করা ।

৬৩৫৭
حَدَّثَنَا آدَمُ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، حَدَّثَنَا الْحَكَمُ، قَالَ سَمِعْتُ عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ أَبِي لَيْلَى، قَالَ لَقِيَنِي كَعْبُ بْنُ عُجْرَةَ فَقَالَ أَلاَ أُهْدِي لَكَ هَدِيَّةً، إِنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم خَرَجَ عَلَيْنَا فَقُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَدْ عَلِمْنَا كَيْفَ نُسَلِّمُ عَلَيْكَ، فَكَيْفَ نُصَلِّي عَلَيْكَ قَالَ ‏ “‏ فَقُولُوا اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ ‏”‏‏.‏

আবদুর রহমান ইবনু আবূ লাইলা (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ

একবার আমার সঙ্গে কা’ব ইবনু উজরাহ (রাঃ) এর দেখা হলো। তিনি বললেনঃ আমি কি তোমাকে একটি হাদিয়া দেবো না। তা হলো এইঃ একদিন নবী আমাদের নিকট বেরিয়ে আসলেন, তখন আমরা বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমরা আপনাকে কেমন করে সালাম দেব, আমরা আপনার উপর কীভাবে সালাত (দূরুদ) পাঠ করবো? তিনি বললেনঃ তোমরা বলবে, হে আল্লাহ্‌! আপনি মুহাম্মাদের উপর ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর রাহমাত নাযিল করুন, যেমন আপনি ইবরাহীম (আঃ) এর পরিবারের উপর রাহমাত বর্ষণ করেছেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত, উচ্চ মর্যাদাশীল। হে আল্লাহ্‌! আপনি মুহাম্মাদের উপর ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর বারাকাত অবতীর্ণ করুন, যেমন আপনি ইবরাহীম (আঃ) এর পরিবারবর্গের উপর বারাকাত অবতীর্ণ করেছেন নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত, উচ্চ মর্যাদাশীল।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৯১১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৮০৪)

৬৩৫৮
حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ حَمْزَةَ، حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي حَازِمٍ، وَالدَّرَاوَرْدِيُّ، عَنْ يَزِيدَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ خَبَّابٍ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، قَالَ قُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ هَذَا السَّلاَمُ عَلَيْكَ، فَكَيْفَ نُصَلِّي قَالَ ‏ “‏ قُولُوا اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ عَبْدِكَ وَرَسُولِكَ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَآلِ إِبْرَاهِيمَ ‏”‏‏.‏

আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

একবার আমরা বললাম : হে আল্লাহ্‌র রসূল! এই যে ‘আসসালামু ‘আলাইকা’ তা তো আমরা জেনে নিয়েছি। তবে আপনার উপর সালাম কীভাবে পাঠ করবো? তিনি বললেন, তোমরা পড়বে : হে আল্লাহ্‌! আপনি আপনার বান্দা ও আপনার রসূল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপর রাহমাত বর্ষণ করুন। যেমন করে আপনি ইবরাহীম (আঃ) এর উপর রাহমাত অবতীর্ণ করেছেন। আর আপনি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর বারাকাত নাযিল করুন, যে রকম আপনি ইবরাহীম (আঃ) -এর উপর এবং ইব্রাহীম (আঃ) -এর পরিবারবর্গের উপর বারাকাত অবতীর্ণ করেছেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫১২৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৮০৫)

৮০/৩৩. অধ্যায় :
নবী ব্যতীত অন্য কারো উপর দরূদ পড়া যায় কিনা?

আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণী : আপনি তাদের জন্য দু’আ করুন । নিশ্চয়ই আপনার দু’আ তাদের জন্য শান্তিদায়ক । (সূরাহ আত্ তাওবাহ ৯/১০৩)

৬৩৫৯
حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ حَرْبٍ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ عَمْرِو بْنِ مُرَّةَ، عَنِ ابْنِ أَبِي أَوْفَى، قَالَ كَانَ إِذَا أَتَى رَجُلٌ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم بِصَدَقَتِهِ قَالَ ‏”‏ اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَيْهِ‏”‏ فَأَتَاهُ أَبِي بِصَدَقَتِهِ فَقَالَ ‏”‏ اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى آلِ أَبِي أَوْفَى‏”‏

সুলাইমান ইবনু হারব (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ

সুলাইমান ইবনু হারব (রহঃ) থেকে আবূ আওফা (রাঃ) বর্ণনা করেন। যখন কেউ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর নিকট তার সদাকাহ নিয়ে আসতেন, তখন তিনি দু’আ করতেন : হে আল্লাহ্‌! আপনি তার উপর রাহমাত নাযিল করুন। আমার পিতা একদিন সদাকাহ নিয়ে তাঁর কাছে এলে তিনি দু’আ করলেন : হে আল্লাহ্‌! আপনি আবূ আওফার পরিবারবর্গের উপর রাহমাত বর্ষণ করুন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৯১৩,ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৮০৬)

৬৩৬০
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْلَمَةَ، عَنْ مَالِكٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي بَكْرٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَمْرِو بْنِ سُلَيْمٍ الزُّرَقِيِّ، قَالَ أَخْبَرَنِي أَبُو حُمَيْدٍ السَّاعِدِيُّ، أَنَّهُمْ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ كَيْفَ نُصَلِّي عَلَيْكَ قَالَ ‏ “‏ قُولُوا اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَأَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَأَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ ‏”‏‏.‏

আবূ হুমায়দ সা’ঈদ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ

একবার লোকেরা বলল : হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমরা আপনার উপর কীভাবে সালাত পাঠ করবো? তিনি বললেনঃ তোমরা পড়বে, হে আল্লাহ্‌! আপনি মুহাম্মাদের ও তাঁর স্ত্রী এবং সন্তান-সন্ততি উপর রাহমাত অবতীর্ণ করুন। যেমন করে আপনি ইবরাহীম (‘আঃ) -এর পরিবারবর্গের উপর রাহমাত অবতীর্ণ করেছেন। আর আপনি মুহাম্মাদ, তাঁর স্ত্রী এবং তাঁর সন্তানদের উপর বারাকাত অবতীর্ণ করুন, যেমনিভাবে আপনি ইবরাহীম (‘আঃ) -এর পরিবারবর্গের উপর বারাকাত অবতীর্ণ করেছেন। আপনি অতি প্রশংসিত, উচ্চ মর্যাদাশীল।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৯১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৮০৭)

FOR MORE CLICK HERE

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]