সহীহ বুখারী শরীফ হাদিস স্বপ্নের ব্যাখ্যা প্রদান অধ্যায় ১ম ভাগ হাদিস নং ৭০১৯ – ৭০৪৭

৯১/২৮. অধ্যায় :
স্বপ্নে কূপ থেকে এমনভাবে পানি তুলতে দেখা যে লোকদের পিপাসা মিটে যায় । নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে এ ব্যাপারে হাদীস আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন ।

৭০১৯
يَعْقُوبُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ بْنِ كَثِيرٍ حَدَّثَنَا شُعَيْبُ بْنُ حَرْبٍ حَدَّثَنَا صَخْرُ بْنُ جُوَيْرِيَةَ حَدَّثَنَا نَافِعٌ أَنَّ ابْنَ عُمَرَ حَدَّثَهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم بَيْنَا أَنَا عَلَى بِئْرٍ أَنْزِعُ مِنْهَا إِذْ جَاءَ أَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ فَأَخَذَ أَبُو بَكْرٍ الدَّلْوَ فَنَزَعَ ذَنُوبًا أَوْ ذَنُوبَيْنِ وَفِي نَزْعِهِ ضَعْفٌ فَغَفَرَ اللهُ لَهُ ثُمَّ أَخَذَهَا عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ مِنْ يَدِ أَبِي بَكْرٍ فَاسْتَحَالَتْ فِي يَدِهِ غَرْبًا فَلَمْ أَرَ عَبْقَرِيًّا مِنْ النَّاسِ يَفْرِي فَرْيَهُ حَتَّى ضَرَبَ النَّاسُ بِعَطَنٍ.

ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ একবার (আমি স্বপ্নে দেখলাম) আমি একটি কূপের কাছে বসে কূপ থেকে পানি তুলছি। এমন সময় আমার কাছে আবূ বাক্‌র ও ‘উমার আসল। আবূ বাক্‌র বালতিটি হাতে নিয়ে এক বা দু’বালতি পানি উঠাল। আর তার উঠানোতে কিছুটা দুর্বলতা ছিল। আল্লাহ্‌ তাকে ক্ষমা করুন। এরপর আবূ বাক্‌রের হাত থেকে ‘উমার তা নিল। তার হাতে বালতিটি বেশ বড় হয়ে গেল। আমি কোন শক্তিশালী লোককে ‘উমারের মত এত অভিজ্ঞ কর্মঠ দেখিনি। যার ফলে লোকেরা তাদের পরিতৃপ্ত উটগুলো নিয়ে বাসস্থানে পৌঁছে গেল। [১৫০](আধুনিক প্রকাশনী- ৬৫৩৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৪৬)

[১৫০] ইসলামের নিয়ম নীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে মানুষের কল্যাণ সাধনকে এখানে বালতি দিয়ে পানি উঠানো দ্বারা বুঝানো হয়েছে । আল্লাহর রসূলের পর প্রথম খলীফা আবূ বাকরের আমলে যুদ্ধ-বিদ্রোহের কারণে খেলাফাত পরিচালনা ও তা থেকে সুফল লাভের ধারা বিঘ্নিত হয় । অত:পর ‘উমার (রাঃ) দায়িত্ব গ্রহণ করলে তিনি অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে খেলাফাত পরিচালনা করেন । ইসলামী হুকুমাত রাজ্যে রাজ্যে বিস্তৃতি লাভ করে এবং মানুষেরা এর সুফল লাভ করে চরমভাবে তৃপ্ত হয় ।

৯১/২৯. অধ্যায় :
স্বপ্নে দুর্বলতার সঙ্গে কূপ থেকে এক বা দু’বালতি পানি তুলতে দেখা ।

৭০২০
أَحْمَدُ بْنُ يُونُسَ حَدَّثَنَا زُهَيْرٌ حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ عُقْبَةَ عَنْ سَالِمٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ رُؤْيَا النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِي أَبِي بَكْرٍ وَعُمَرَ قَالَ رَأَيْتُ النَّاسَ اجْتَمَعُوا فَقَامَ أَبُو بَكْرٍ فَنَزَعَ ذَنُوبًا أَوْ ذَنُوبَيْنِ وَفِي نَزْعِهِ ضَعْفٌ وَاللهُ يَغْفِرُ لَهُ ثُمَّ قَامَ ابْنُ الْخَطَّابِ فَاسْتَحَالَتْ غَرْبًا فَمَا رَأَيْتُ مِنْ النَّاسِ مَنْ يَفْرِي فَرْيَهُ حَتَّى ضَرَبَ النَّاسُ بِعَطَنٍ.

সালিমের পিতা [‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ)] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি আবূ বাক্‌র ও ‘উমার (রাঃ) সম্পর্কে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্বপ্ন বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি লোকদেরকে জড় হতে দেখলাম। তখন আবূ বাক্‌র দাঁড়িয়ে এক বা দু’বালতি পানি উঠালো। আর তার উঠানোতে কিছু দুর্বলতা ছিল। আল্লাহ্‌ তাকে ক্ষমা করুন। এরপর ইব্‌নুল খাত্তাব দাঁড়াল। আর তার হাতে বালতিটি বেশ বড় হয়ে গেল। আমি লোকদের মধ্যে ‘উমারের মত এতটা অভিজ্ঞ কর্মঠ কাউকে দেখিনি। যার ফলে লোকেরা তাদের পরিতৃপ্ত উটগুলো নিয়ে বাসস্থানে পৌঁছে গেল। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৫৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৪৭)

৭০২১
سَعِيدُ بْنُ عُفَيْرٍ حَدَّثَنِي اللَّيْثُ قَالَ حَدَّثَنِي عُقَيْلٌ عَنْ ابْنِ شِهَابٍ أَخْبَرَنِي سَعِيدٌ أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ أَخْبَرَهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ بَيْنَا أَنَا نَائِمٌ رَأَيْتُنِي عَلَى قَلِيبٍ وَعَلَيْهَا دَلْوٌ فَنَزَعْتُ مِنْهَا مَا شَاءَ اللهُ ثُمَّ أَخَذَهَا ابْنُ أَبِي قُحَافَةَ فَنَزَعَ مِنْهَا ذَنُوبًا أَوْ ذَنُوبَيْنِ وَفِي نَزْعِهِ ضَعْفٌ وَاللهُ يَغْفِرُ لَهُ ثُمَّ اسْتَحَالَتْ غَرْبًا فَأَخَذَهَا عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ فَلَمْ أَرَ عَبْقَرِيًّا مِنْ النَّاسِ يَنْزِعُ نَزْعَ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ حَتَّى ضَرَبَ النَّاسُ بِعَطَنٍ.

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ একবার আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। দেখলাম, আমি একটি কূপের কাছে আছি। আর এর নিকট একটি বালতি আছে। আমি কূপ থেকে পানি উঠালাম – যতখানি আল্লাহ্‌র ইচ্ছা ছিল। এরপর বালতিটি ইব্‌নু আবূ কুহাফা নিলেন। তিনি কূপ থেকে এক বা দু’বালতি পানি উঠালেন। তার উঠানোতে কিছুটা দুর্বলতা ছিল। আল্লাহ্‌ তাকে ক্ষমা করুন। তারপর বালতিটি বেশ বড় হয়ে গেল। তখন তা ‘উমার ইব্‌নুল খাত্তাব নিলেন। আমি কোন শক্তিশালী লোককে ‘উমারের মত পানি উঠাতে দেখিনি। অবশেষে লোকেরা তাদের পরিতৃপ্ত উটগুলো নিয়ে বাসস্থানে পৌঁছে গেল।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৫৩৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৪৮)

৯১/৩০. অধ্যায় :
স্বপ্নে বিশ্রাম করতে দেখা ।

৭০২২
إِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ عَنْ مَعْمَرٍ عَنْ هَمَّامٍ أَنَّهُ سَمِعَ أَبَا هُرَيْرَةَ يَقُولُ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم بَيْنَا أَنَا نَائِمٌ رَأَيْتُ أَنِّي عَلَى حَوْضٍ أَسْقِي النَّاسَ فَأَتَانِي أَبُو بَكْرٍ فَأَخَذَ الدَّلْوَ مِنْ يَدِي لِيُرِيحَنِي فَنَزَعَ ذَنُوبَيْنِ وَفِي نَزْعِهِ ضَعْفٌ وَاللهُ يَغْفِرُ لَهُ فَأَتَى ابْنُ الْخَطَّابِ فَأَخَذَ مِنْهُ فَلَمْ يَزَلْ يَنْزِعُ حَتَّى تَوَلَّى النَّاسُ وَالْحَوْضُ يَتَفَجَّرُ.

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি একবার ঘুমিয়ে ছিলাম। দেখলাম, আমি একটি হাউযের নিকট হতে লোকদেরকে পানি পান করাচ্ছি। তখন আমার কাছে আবূ বাক্‌র আসল। আমাকে বিশ্রাম দেয়ার জন্য আমার হাত থেকে সে বালতিটি নিয়ে গেল এবং দু’বালতি পানি উঠাল। আর তার উঠানোতে কিছুটা দুর্বলতা ছিল। আল্লাহ্‌ তাকে ক্ষমা করুন। এরপর ইব্‌নুল খাত্তাব এসে তার নিকট হতে তা নিয়ে নিল এবং পানি উঠাতে থাকল। অবশেষে লোকেরা (তৃপ্ত হয়ে) ফিরে গেল, অথচ হাউযের পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৫৩৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৪৯)

৯১/৩১. অধ্যায় :
স্বপ্নে প্রাসাদ দেখা ।

৭০২৩
سَعِيدُ بْنُ عُفَيْرٍ حَدَّثَنِي اللَّيْثُ حَدَّثَنِي عُقَيْلٌ عَنْ ابْنِ شِهَابٍ قَالَ أَخْبَرَنِي سَعِيدُ بْنُ الْمُسَيَّبِ أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ قَالَ بَيْنَا نَحْنُ جُلُوسٌ عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ بَيْنَا أَنَا نَائِمٌ رَأَيْتُنِي فِي الْجَنَّةِ فَإِذَا امْرَأَةٌ تَتَوَضَّأُ إِلَى جَانِبِ قَصْرٍ قُلْتُ لِمَنْ هَذَا الْقَصْرُ قَالُوا لِعُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ فَذَكَرْتُ غَيْرَتَهُ فَوَلَّيْتُ مُدْبِرًا قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ فَبَكَى عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ ثُمَّ قَالَ أَعَلَيْكَ بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي يَا رَسُولَ اللهِ أَغَارُ.

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একবার আমরা রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে উপবিষ্ট ছিলাম। তখন তিনি বললেনঃ আমি একবার নিদ্রিত ছিলাম। আমি আমাকে জান্নাতে দেখতে পেলাম। একজন মহিলা একটি প্রাসাদের পাশে উযূ করছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এই প্রাসাদটি কার? তারা বলল, ‘উমারের। তখন তার আত্মমর্যাদাবোধের কথা স্মরণ করলাম। তাই আমি ফিরে এলাম। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, এ কথা শুনে ‘উমার ইব্‌নুল খাত্তাব (রাঃ) কেঁদে ফেললেন এবং বললেন, আমার পিতা-মাতা আপনার ওপর কুরবান হোক! হে আল্লাহ্‌র রসূল (আপনার কাছেও কি) আমি আত্মমর্যাদাবোধ প্রদর্শন করব? (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৫৩৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৫০)

৭০২৪
عَمْرُو بْنُ عَلِيٍّ حَدَّثَنَا مُعْتَمِرُ بْنُ سُلَيْمَانَ حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللهِ بْنُ عُمَرَ عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ الْمُنْكَدِرِ عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم دَخَلْتُ الْجَنَّةَ فَإِذَا أَنَا بِقَصْرٍ مِنْ ذَهَبٍ فَقُلْتُ لِمَنْ هَذَا فَقَالُوا لِرَجُلٍ مِنْ قُرَيْشٍ فَمَا مَنَعَنِي أَنْ أَدْخُلَهُ يَا ابْنَ الْخَطَّابِ إِلاَّ مَا أَعْلَمُ مِنْ غَيْرَتِكَ قَالَ وَعَلَيْكَ أَغَارُ يَا رَسُولَ اللهِ

জাবির ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি জান্নাতে প্রবেশ করলাম। আমি আমাকে একটা স্বর্ণের প্রাসাদের কাছে দেখতে পেলাম। তখন আমি জিজ্ঞেস করলাম, এটা কার? তারা বলল, কুরাইশের এক লোকের। হে ইবনুল খাত্তাব! এ প্রাসাদে ঢুকতে আমাকে কিছুই বাধা দিচ্ছিল না। কেবল তোমার আত্মমর্যাদাবোধ, যা আমার জানা ছিল। ‘উমার (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনার কাছেও কি আমি আত্মমর্যাদাবোধ দেখাবো? (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৫৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৫১)

৯১/৩২. অধ্যায় :
স্বপ্নে ওযূ করতে দেখা ।

৭০২৫
يَحْيَى بْنُ بُكَيْرٍ حَدَّثَنَا اللَّيْثُ عَنْ عُقَيْلٍ عَنْ ابْنِ شِهَابٍ أَخْبَرَنِي سَعِيدُ بْنُ الْمُسَيَّبِ أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ قَالَ بَيْنَمَا نَحْنُ جُلُوسٌ عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ بَيْنَا أَنَا نَائِمٌ رَأَيْتُنِي فِي الْجَنَّةِ فَإِذَا امْرَأَةٌ تَتَوَضَّأُ إِلَى جَانِبِ قَصْرٍ فَقُلْتُ لِمَنْ هَذَا الْقَصْرُ فَقَالُوا لِعُمَرَ فَذَكَرْتُ غَيْرَتَهُ فَوَلَّيْتُ مُدْبِرًا فَبَكَى عُمَرُ وَقَالَ عَلَيْكَ بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي يَا رَسُولَ اللهِ أَغَارُ

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক সময় আমরা রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। তখন তিনি বললেনঃ আমি একবার নিদ্রিত ছিলাম। আমি আমাকে জান্নাতে দেখতে পেলাম এবং (দেখতে পেলাম) যে এক মহিলা একটি প্রাসাদের পাশে ওযূ করছে। আমি বললাম : এ প্রাসাদটি কার? তারা বলল, উমারের। তখন তার আত্মমর্যাদাবোধের কথা মনে করে আমি ফিরে এলাম। তা শুনে ‘উমার (রাঃ) কেঁদে ফেললেন এবং বললেন, আমার পিতা-মাতা আপনার ওপর কুরবান হোক। হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনার কাছেও কি আমি আত্মমর্যাদাবোধ দেখাব? (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৫৩৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৫২)

৯১/৩৩. অধ্যায় :
স্বপ্নে কা‘বা গৃহ তাওয়াফ করা ।

৭০২৬
أَبُو الْيَمَانِ أَخْبَرَنَا شُعَيْبٌ عَنْ الزُّهْرِيِّ أَخْبَرَنِي سَالِمُ بْنُ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم بَيْنَا أَنَا نَائِمٌ رَأَيْتُنِي أَطُوفُ بِالْكَعْبَةِ فَإِذَا رَجُلٌ آدَمُ سَبْطُ الشَّعَرِ بَيْنَ رَجُلَيْنِ يَنْطُفُ رَأْسُهُ مَاءً فَقُلْتُ مَنْ هَذَا قَالُوا ابْنُ مَرْيَمَ فَذَهَبْتُ أَلْتَفِتُ فَإِذَا رَجُلٌ أَحْمَرُ جَسِيمٌ جَعْدُ الرَّأْسِ أَعْوَرُ الْعَيْنِ الْيُمْنَى كَأَنَّ عَيْنَهُ عِنَبَةٌ طَافِيَةٌ قُلْتُ مَنْ هَذَا قَالُوا هَذَا الدَّجَّالُ أَقْرَبُ النَّاسِ بِهِ شَبَهًا ابْنُ قَطَنٍ وَابْنُ قَطَنٍ رَجُلٌ مِنْ بَنِي الْمُصْطَلِقِ مِنْ خُزَاعَةَ.

আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু ‘উমার (রা:) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি একবার ঘুমিয়ে ছিলাম। তখন আমি আমাকে কা‘বা গৃহ তাওয়াফরত অবস্থায় দেখতে পেলাম। এমন সময় সোজা চুলওয়ালা একজন পুরুষকে দু’জন পুরুষের মাঝে দেখলাম, যার মাথা থেকে পানি ঝরছিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? তারা বলল, ইব্‌নু মারইয়াম। এরপর আমি ফিরে আসতে লাগলাম। এ সময় একজন লাল রঙ্গের মোটাসোটা, কোঁকড়ান চুলওয়ালা, ডান চোখ কানা ব্যক্তিকে দেখলাম। তার চোখটি যেন ভাসমান আঙুর। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এ ব্যক্তি কে? তারা বলল, এ হচ্ছে দাজ্‌জাল। তার সঙ্গে সবচেয়ে সাদৃশ্যপূর্ণ লোক হল ইব্‌নু কাতান। আর ইব্‌নু কাতান হল বনু মুস্‌তালিক গোত্রের খুযাআ বংশের একজন লোক। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৫৪০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৫৩)

৯১/৩৪. অধ্যায় :
স্বপ্নের ভিতর নিজের বাকী পানীয় থেকে অন্যকে দেয়া ।

৭০২৭
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ بُكَيْرٍ، حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، عَنْ عُقَيْلٍ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، أَخْبَرَنِي حَمْزَةُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ، قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏”‏ بَيْنَا أَنَا نَائِمٌ أُتِيتُ بِقَدَحِ لَبَنٍ فَشَرِبْتُ مِنْهُ، حَتَّى إِنِّي لأَرَى الرِّيَّ يَجْرِي، ثُمَّ أَعْطَيْتُ فَضْلَهُ عُمَرَ ‏”‏‏.‏ قَالُوا فَمَا أَوَّلْتَهُ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ ‏”‏ الْعِلْمُ ‏”‏‏.‏

আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু ‘উমার থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি যে, আমি একবার ঘুমিয়ে ছিলাম। আমি দেখলাম দুধের একটা পেয়ালা আমাকে দেয়া হল। তা থেকে আমি (এত অধিক) পান করলাম যে, আমা হতে তৃপ্তির চিহ্ন প্রকাশিত হচ্ছিল। অতঃপর (অবশিষ্টাংশ) উমরকে দিলাম। সহাবাগণ বললেন, এ স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী দিলেন হে আল্লাহ্‌র রসূল? তিনি বললেনঃ ইল্‌ম।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৫৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৫৪)

৯১/৩৫. অধ্যায় :
স্বপ্নে নিরাপদ মনে করা ও ভীতি দূর হতে দেখা ।

৭০২৮
عُبَيْدُ اللهِ بْنُ سَعِيدٍ حَدَّثَنَا عَفَّانُ بْنُ مُسْلِمٍ حَدَّثَنَا صَخْرُ بْنُ جُوَيْرِيَةَ حَدَّثَنَا نَافِعٌ أَنَّ ابْنَ عُمَرَ قَالَ إِنَّ رِجَالاً مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم كَانُوا يَرَوْنَ الرُّؤْيَا عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَيَقُصُّونَهَا عَلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَيَقُولُ فِيهَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَا شَاءَ اللهُ وَأَنَا غُلاَمٌ حَدِيثُ السِّنِّ وَبَيْتِي الْمَسْجِدُ قَبْلَ أَنْ أَنْكِحَ فَقُلْتُ فِي نَفْسِي لَوْ كَانَ فِيكَ خَيْرٌ لَرَأَيْتَ مِثْلَ مَا يَرَى هَؤُلاَءِ فَلَمَّا اضْطَجَعْتُ ذَاتَ لَيْلَةٍ قُلْتُ اللهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ فِيَّ خَيْرًا فَأَرِنِي رُؤْيَا فَبَيْنَمَا أَنَا كَذَلِكَ إِذْ جَاءَنِي مَلَكَانِ فِي يَدِ كُلِّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا مِقْمَعَةٌ مِنْ حَدِيدٍ يُقْبِلاَنِ بِي إِلَى جَهَنَّمَ وَأَنَا بَيْنَهُمَا أَدْعُو اللهَ اللهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ جَهَنَّمَ ثُمَّ أُرَانِي لَقِيَنِي مَلَكٌ فِي يَدِهِ مِقْمَعَةٌ مِنْ حَدِيدٍ فَقَالَ لَنْ تُرَاعَ نِعْمَ الرَّجُلُ أَنْتَ لَوْ كُنْتَ تُكْثِرُ الصَّلاَةَ فَانْطَلَقُوا بِي حَتَّى وَقَفُوا بِي عَلَى شَفِيرِ جَهَنَّمَ فَإِذَا هِيَ مَطْوِيَّةٌ كَطَيِّ الْبِئْرِ لَهُ قُرُونٌ كَقَرْنِ الْبِئْرِ بَيْنَ كُلِّ قَرْنَيْنِ مَلَكٌ بِيَدِهِ مِقْمَعَةٌ مِنْ حَدِيدٍ وَأَرَى فِيهَا رِجَالاً مُعَلَّقِينَ بِالسَّلاَسِلِ رُءُوسُهُمْ أَسْفَلَهُمْ عَرَفْتُ فِيهَا رِجَالاً مِنْ قُرَيْشٍ فَانْصَرَفُوا بِي عَنْ ذَاتِ الْيَمِينِ.

ইব্‌নু ‘উমার থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বেশ ক’জন সহাবী রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে স্বপ্ন দেখতেন। অতঃপর তারা রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে তা বর্ণনা করতেন। আর রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ব্যাখ্যা দিতেন যা আল্লাহ্‌ ইচ্ছা করতেন। আমি তখন অল্প বয়সের যুবক। আর বিয়ের আগে মাসজিদই ছিল আমার ঘর। আমি মনে মনে নিজেকে সম্বোধন করে বললাম, যদি তোমার মধ্যে কোন কল্যাণ থাকত তাহলে তুমি তাদের মত স্বপ্ন দেখতে। আমি এক রাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে বললাম, হে আল্লাহ্‌! আপনি যদি জানেন যে, আমার মধ্যে কোন কল্যাণ আছে তাহলে আমাকে কোন একটি স্বপ্ন দেখান। আমি ঐ অবস্থায়ই (ঘুমিয়ে) থাকলাম। দেখলাম আমার কাছে দু’জন ফেরেশ্‌তা এসেছেন। তাদের প্রত্যেকের হাতেই লোহার একটি করে হাতুড়ি। তারা আমাকে নিয়ে (জাহান্নামের দিকে) এগোচ্ছে। আর আমি তাদের দু’জনের মাঝে থেকে আল্লাহ্‌র কাছে দু‘আ করছি, হে আল্লাহ্‌! আমি জাহান্নাম থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। এরপর আমাকে দেখান হল যে, একজন ফেরেশ্‌তা আমার কাছে এসেছেন। তাঁর হাতে লোহার একটি হাতুড়ি। সে আমাকে বলল, তোমার অবশ্যই কোন ভয় নেই। তুমি খুবই ভাল লোক, যদি অধিক করে সলাত আদায় করতে। তারা আমাকে নিয়ে চলল, অবশেষে তারা আমাকে জাহান্নামের (ধারে এনে) দাঁড় করাল, (যা দেখতে) কূপের মত গোল আকৃতির। আর কূপের মত এরও রয়েছে অনেক শিং। আর দু’শিং-এর মাঝখানে একজন ফেরেশ্‌তা, যার হাতে লোহার একটি হাতুড়ি। আর আমি এতে কিছু লোককে (জাহান্নামে) শিকল পরিহিত দেখলাম। তাদের মাথা ছিল নিচের দিকে। কুরাইশের এক ব্যক্তিকে সেখানে আমি চিনে ফেললাম। অতঃপর তারা আমাকে ডান দিকে নিয়ে ফিরল। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৫৪২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৫৫)

৭০২৯
فَقَصَصْتُهَا عَلَى حَفْصَةَ فَقَصَّتْهَا حَفْصَةُ عَلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّ عَبْدَ اللهِ رَجُلٌ صَالِحٌ لَوْ كَانَ يُصَلِّي مِنْ اللَّيْلِ فَقَالَ نَافِعٌ فَلَمْ يَزَلْ بَعْدَ ذَلِكَ يُكْثِرُ الصَّلاَةَ.

ইব্‌নু ‘উমার থেকে বর্ণিতঃ

এ ঘটনা (স্বপ্ন) আমি হাফসাহ (রাঃ)-এর নিকট বর্ণনা করলাম। আর হাফসাহ (রাঃ) তা রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বর্ণনা করলেন : তখন রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ‘আবদুল্লাহ্‌ তো নেক্‌কার লোক। নাফি‘ (রহঃ) বলেন, এরপর থেকে তিনি সর্বদা অধিক করে (নফল) সলাত আদায় করতেন। [১৫১](আধুনিক প্রকাশনী- ৬৫৪২ শেষাংশ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৫৫)

[১৫১] হাদীসের শিক্ষা :

(১) নফল বা তাহাজ্জুদ নামাযের ফযীলত ।

(২) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে আব্দুল্লাহ্ ইবনু ওমরের শিষ্টাচারিতা ও তাঁকে ভয় করা-যার কারনে তিনি স্বীয় স্বপ্ন বর্ণনা করেননি ।

(৩) স্বপ্ন বর্ণনা করার ক্ষেত্রে প্রতিনিধিত্বের বৈধতা ।

(৪) মসজিদে রাত্রী যাপনের বৈধতা ।

(৫) সুন্নাত পরিহার সম্পর্কে ভীতি প্রদর্শন ।

(৬) কোন কোন স্বপ্নের ব্যাখ্যা প্রয়োজন হয় না । (ফাতহুল বারী)

৯১/৩৬. অধ্যায় :
স্বপ্নে ডান দিক গ্রহণ করতে দেখা ।

৭০৩০
عَبْدُ اللهِ بْنُ مُحَمَّدٍ حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ يُوسُفَ أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ عَنْ الزُّهْرِيِّ عَنْ سَالِمٍ عَنْ ابْنِ عُمَرَ قَالَ كُنْتُ غُلاَمًا شَابًّا عَزَبًا فِي عَهْدِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَكُنْتُ أَبِيتُ فِي الْمَسْجِدِ وَكَانَ مَنْ رَأَى مَنَامًا قَصَّهُ عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقُلْتُ اللهُمَّ إِنْ كَانَ لِي عِنْدكَ خَيْرٌ فَأَرِنِي مَنَامًا يُعَبِّرُهُ لِي رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَنِمْتُ فَرَأَيْتُ مَلَكَيْنِ أَتَيَانِي فَانْطَلَقَا بِي فَلَقِيَهُمَا مَلَكٌ آخَرُ فَقَالَ لِي لَنْ تُرَاعَ إِنَّكَ رَجُلٌ صَالِحٌ فَانْطَلَقَا بِي إِلَى النَّارِ فَإِذَا هِيَ مَطْوِيَّةٌ كَطَيِّ الْبِئْرِ وَإِذَا فِيهَا نَاسٌ قَدْ عَرَفْتُ بَعْضَهُمْ فَأَخَذَا بِي ذَاتَ الْيَمِينِ فَلَمَّا أَصْبَحْتُ ذَكَرْتُ ذَلِكَ لِحَفْصَةَ.

ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে অবিবাহিত যুবক ছিলাম। আমি মাসজিদেই রাত কাটাতাম। আর যারাই স্বপ্নে কিছু দেখত তারা তা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে বর্ণনা করত। আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌! যদি তোমার নিকট আমার জন্য কোন কল্যাণ নিহিত থাকে, তাহলে আমাকে কোন স্বপ্ন দেখাও, যাতে রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার এ স্বপ্নের ব্যাখ্যা প্রদান করেন। আমি ঘুমিয়ে গেলাম, তখন দেখতে পেলাম যে দু’জন ফেরেশতা আমার কাছে এসে আমাকে নিয়ে চলল, এরপর তাদের সঙ্গে অপর একজন ফেরেশতার সাক্ষাৎ ঘটল। সে আমাকে বলল, তোমার কোন ভয়ের কারণ নেই। তুমি তো একজন নেক্‌কার লোক। এরপর তারা আমাকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে চলল, এটি যেন কূপের মত গোলাকার নির্মিত। আর এর মধ্যে বেশ কিছু লোক রয়েছে। এদের কতককে আমি চিনতে পারলাম। এরপর তারা আমাকে ডানদিকে নিয়ে চলল। যখন সকাল হল, আমি হাফসাহ (রাঃ)-এর নিকট সব ঘটনা উল্লেখ করলাম।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৫৪৩ প্রথমাংশ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৫৬)

৭০৩১
فَزَعَمَتْ حَفْصَةُ أَنَّهَا قَصَّتْهَا عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ إِنَّ عَبْدَ اللهِ رَجُلٌ صَالِحٌ لَوْ كَانَ يُكْثِرُ الصَّلاَةَ مِنْ اللَّيْلِ قَالَ الزُّهْرِيُّ وَكَانَ عَبْدُ اللهِ بَعْدَ ذَلِكَ يُكْثِرُ الصَّلاَةَ مِنْ اللَّيْلِ.

হাফসাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

পরে হাফসাহ (রাঃ) বললেন যে, তিনি তা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে বর্ণনা করেছেন। আর তিনি বলেছেন: ‘আবদুল্লাহ্‌ নেক্‌কার লোক। (তিনি আরও বলেছেন) যদি সে রাতে অধিক করে সলাত আদায় করত। যুহরী (রহঃ) বলেন, এরপর থেকে ‘আবদুল্লাহ্‌ (ইব্‌নু ‘উমার) (রাঃ) রাতে অধিক করে সলাত আদায় করতে লাগলেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৫৪৩ শেষাংশ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৫৬)

৯১/৩৭. অধ্যায় :
স্বপ্নে পেয়ালা দেখা ।

৭০৩২
قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ حَدَّثَنَا اللَّيْثُ عَنْ عُقَيْلٍ عَنْ ابْنِ شِهَابٍ عَنْ حَمْزَةَ بْنِ عَبْدِ اللهِ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ بَيْنَا أَنَا نَائِمٌ أُتِيتُ بِقَدَحِ لَبَنٍ فَشَرِبْتُ مِنْهُ ثُمَّ أَعْطَيْتُ فَضْلِي عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ قَالُوا فَمَا أَوَّلْتَهُ يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ الْعِلْمَ.

আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, আমি একবার ঘুমিয়ে ছিলাম। দেখলাম, আমার কাছে দুধের একটি পিয়ালা আনা হল। আমি তা থেকে পান করলাম। এরপর আমার বাকী অংশ ‘উমার ইব্‌নু খাত্তাবকে দিলাম। সহাবাগণ বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনি এর ব্যাখ্যা কী দিলেন। তিনি বললেনঃ …..ইল্‌ম। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৫৪৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৫৭)

৯১/৩৮. অধ্যায় :
স্বপ্নে কোন কিছু উড়তে দেখা ।

৭০৩৩
سَعِيدُ بْنُ مُحَمَّدٍ أَبُو عَبْدِ اللهِ الْجَرْمِيُّ حَدَّثَنَا يَعْقُوبُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ حَدَّثَنَا أَبِي عَنْ صَالِحٍ عَنْ ابْنِ عُبَيْدَةَ بْنِ نَشِيطٍ قَالَ قَالَ عُبَيْدُ اللهِ بْنُ عَبْدِ اللهِ سَأَلْتُ عَبْدَ اللهِ بْنَ عَبَّاسٍ عَنْ رُؤْيَا رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم الَّتِي ذَكَرَ.

উবাইদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ্‌ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে সব স্বপ্নের উল্লেখ করেছেন আমি ‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে সে ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলাম। (আধুনিক প্রকাশনী- নাই, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৫৮)

৭০৩৪
فَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ ذُكِرَ لِي أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ بَيْنَا أَنَا نَائِمٌ رَأَيْتُ أَنَّهُ وُضِعَ فِي يَدَيَّ سِوَارَانِ مِنْ ذَهَبٍ فَفُظِعْتُهُمَا وَكَرِهْتُهُمَا فَأُذِنَ لِي فَنَفَخْتُهُمَا فَطَارَا فَأَوَّلْتُهُمَا كَذَّابَيْنِ يَخْرُجَانِ فَقَالَ عُبَيْدُ اللهِ أَحَدُهُمَا الْعَنْسِيُّ الَّذِي قَتَلَهُ فَيْرُوزٌ بِالْيَمَنِ وَالْآخَرُ مُسَيْلِمَةُ

আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, আমার কাছে উল্লেখ করা হয়েছে যে, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি একবার ঘুমিয়ে ছিলাম, আমাকে দেখানো হলো যে আমার হাত দু’টিতে স্বর্ণের দু’টি চুড়ি রাখা হয়েছে। আমি সে দু’টি কেটে ফেললাম এবং অপছন্দ করলাম। অতঃপর আমাকে অনুমতি দেয়া হল, আমাই উভয়টিকে ফুঁ দিলাম, ফলে উভয়টি উড়ে গেল। আমি চুড়ি দু’টির এ ব্যাখ্যা করলাম যে, দু’জন মিথ্যা নবুয়তের দাবিদার বের হবে। ‘উবাইদুল্লাহ্‌ (রহঃ) বলেন, এদের একজন হল, আল আন্‌সী যাকে ইয়ামানে ফায়রূয (রাঃ) কতল করেছেন। আর অন্যজন হল মুসাইলিমা।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৫৪৫ , ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৫৮)

৯১/৩৯. অধ্যায় :
স্বপ্নে গরু যব্‌হ হতে দেখা ।

৭০৩৫
مُحَمَّدُ بْنُ الْعَلاَءِ حَدَّثَنَا أَبُو أُسَامَةَ عَنْ بُرَيْدٍ عَنْ جَدِّهِ أَبِي بُرْدَةَ عَنْ أَبِي مُوسَى أُرَاهُ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ رَأَيْتُ فِي الْمَنَامِ أَنِّي أُهَاجِرُ مِنْ مَكَّةَ إِلَى أَرْضٍ بِهَا نَخْلٌ فَذَهَبَ وَهَلِي إِلَى أَنَّهَا الْيَمَامَةُ أَوْ هَجَرٌ فَإِذَا هِيَ الْمَدِينَةُ يَثْرِبُ وَرَأَيْتُ فِيهَا بَقَرًا وَاللهِ خَيْرٌ فَإِذَا هُمْ الْمُؤْمِنُونَ يَوْمَ أُحُدٍ وَإِذَا الْخَيْرُ مَا جَاءَ اللهُ مِنْ الْخَيْرِ وَثَوَابِ الصِّدْقِ الَّذِي آتَانَا اللهُ بِهِ بَعْدَ يَوْمِ بَدْرٍ.

আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি স্বপ্নে দেখলাম যে আমি মাক্কাহ থেকে এমন এক জায়গার দিকে হিজরাত করছি যেখানে খেজুর গাছ আছে। তখন আমার ধারণা হল, সেই জায়গাটি ‘ইয়ামামা’ অথবা ‘হাজার’ হবে। অথচ সে জায়গাটি হল মাদীনাহ তথা ইয়াসরিব। আর আমি (স্বপ্নে) সেখানে একটি গরু দেখলাম। আল্লাহ্‌র কসম! এটা কল্যাণকরই। গরুর ব্যাখ্যা হল উহুদের যুদ্ধে (শাহাদাত প্রাপ্ত) মু’মিনগণ। আর কল্যাণের ব্যাখ্যা হল এটাই, যে কল্যাণ আল্লাহ্‌ আমাদের দিয়েছেন এবং সত্যের বিনিময় যা আল্লাহ্‌ বদর যুদ্ধের পর আমাদেরকে প্রদান করেছেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৫৪৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৫৯)

৯১/৪০. অধ্যায় :
স্বপ্নে ফুঁ দেয়া ।

৭০৩৬
حَدَّثَنِي إِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ الْحَنْظَلِيُّ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ، عَنْ هَمَّامِ بْنِ مُنَبِّهٍ، قَالَ هَذَا مَا حَدَّثَنَا بِهِ أَبُو هُرَيْرَةَ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏”‏ نَحْنُ الآخِرُونَ السَّابِقُونَ ‏”‏‏.‏

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমরা সর্বশেষ এবং সর্বপ্রথম। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৫৪৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৬০)

৭০৩৭
وَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم بَيْنَا أَنَا نَائِمٌ إِذْ أُوتِيتُ خَزَائِنَ الأَرْضِ فَوُضِعَ فِي يَدَيَّ سِوَارَانِ مِنْ ذَهَبٍ فَكَبُرَا عَلَيَّ وَأَهَمَّانِي فَأُوحِيَ إِلَيَّ أَنْ انْفُخْهُمَا فَنَفَخْتُهُمَا فَطَارَا فَأَوَّلْتُهُمَا الْكَذَّابَيْنِ اللَّذَيْنِ أَنَا بَيْنَهُمَا صَاحِبَ صَنْعَاءَ وَصَاحِبَ الْيَمَامَةِ

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরও বলেছেনঃ একবার আমি নিদ্রিত ছিলাম। দেখলাম আমাকে পৃথিবীর ভান্ডারসমূহ দেয়া হয়েছে। আর আমার হাতে স্বর্ণের দু’টি চুড়ি রাখা হয়, যা আমার কাছে কষ্টকর মনে হল। আর আমাকে চিন্তায় ফেলে দিল। তখন আমাকে নির্দেশ করা হল, যেন আমি চুড়ি দু’টিতে ফুঁ দেই। তাই আমি ও দু’টিতে ফুঁ দিলাম (চুড়ি দু’টি উড়ে গেল)। আমি চুড়ি দু’টির ব্যাখ্যা এভাবে করলাম যে, (নবুয়তের) দু’জন মিথ্যা দাবিদার রয়েছে, যাদের মাঝখানে আমি আছি। সান‘আর বাসিন্দা (আলআনসী) ও ইয়ামামার বাসিন্দা (মুসায়লিমা)।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৫৪৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৬০)

৯১/৪১. অধ্যায় :
কেউ স্বপ্নে দেখল যে, সে একদিক থেকে একটা জিনিস বের করে অন্য জায়গায় রেখেছে ।

৭০৩৮
إِسْمَاعِيلُ بْنُ عَبْدِ اللهِ حَدَّثَنِي أَخِي عَبْدُ الْحَمِيدِ عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ بِلاَلٍ عَنْ مُوسَى بْنِ عُقْبَةَ عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللهِ عَنْ أَبِيهِ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ رَأَيْتُ كَأَنَّ امْرَأَةً سَوْدَاءَ ثَائِرَةَ الرَّأْسِ خَرَجَتْ مِنْ الْمَدِينَةِ حَتَّى قَامَتْ بِمَهْيَعَةَ وَهِيَ الْجُحْفَةُ فَأَوَّلْتُ أَنَّ وَبَاءَ الْمَدِينَةِ نُقِلَ إِلَيْهَا.

সালিমার পিতা ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি দেখেছি যেন এলোমেলো চুলওয়ালা একজন কালো মহিলা মাদীনাহ থেকে বের হয়ে মাহইয়াআ নামক স্থানে গিয়ে দাঁড়িয়েছে আর এটিকে জুহ্‌ফা বলা হয়। আমি এ স্বপ্নের ব্যাখ্যা করলাম যে, মাদীনাহর মহামারী সেখানে স্থানান্তরিত হল।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৫৪৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৬১)

৯১/৪২. অধ্যায় :
স্বপ্নে কালো মহিলা দেখা ।

৭০৩৯
مُحَمَّدُ بْنُ أَبِي بَكْرٍ الْمُقَدَّمِيُّ حَدَّثَنَا فُضَيْلُ بْنُ سُلَيْمَانَ حَدَّثَنَا مُوسَى حَدَّثَنِي سَالِمُ بْنُ عَبْدِ اللهِ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ فِي رُؤْيَا النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِي الْمَدِينَةِ رَأَيْتُ امْرَأَةً سَوْدَاءَ ثَائِرَةَ الرَّأْسِ خَرَجَتْ مِنْ الْمَدِينَةِ حَتَّى نَزَلَتْ بِمَهْيَعَةَ فَتَأَوَّلْتُهَا أَنَّ وَبَاءَ الْمَدِينَةِ نُقِلَ إِلَى مَهْيَعَةَ وَهِيَ الْجُحْفَةُ

আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি মাদীনাহ সম্পর্কে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্বপ্নের বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন। তিনি বলেছেনঃ আমি দেখেছি এলোমেলো চুল ওয়ালা একজন কালো মহিলা মাদীনাহ থেকে বের হয়েছে। অবশেষে মাহইয়ায়া নামক জায়গায় অবস্থান নিয়েছে। আমি এর ব্যাখ্যা করলাম যে, মদীনার মহামারী মাহইয়া‘আহ তথা জুহ্‌ফা নামক জায়গায় স্থানান্তরিত হল।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৫৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৬২)

৯১/৪৩. অধ্যায় :
স্বপ্নে এলোমেলো চুল ওয়ালা মহিলা দেখা ।

৭০৪০
إِبْرَاهِيمُ بْنُ الْمُنْذِرِ حَدَّثَنِي أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي أُوَيْسٍ حَدَّثَنِي سُلَيْمَانُ عَنْ مُوسَى بْنِ عُقْبَةَ عَنْ سَالِمٍ عَنْ أَبِيهِ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ رَأَيْتُ امْرَأَةً سَوْدَاءَ ثَائِرَةَ الرَّأْسِ خَرَجَتْ مِنْ الْمَدِينَةِ حَتَّى قَامَتْ بِمَهْيَعَةَ فَأَوَّلْتُ أَنَّ وَبَاءَ الْمَدِينَةِ نُقِلَ إِلَى مَهْيَعَةَ وَهِيَ الْجُحْفَةُ.

সালিমার পিতা ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি স্বপ্নে দেখেছি। এলোমেলো চুলওয়ালা একজন কালো মহিলা মাদীনাহ থেকে বের হয়ে মাহইয়ায়া তথা জুহ্‌ফা নামক জায়গায় গিয়ে থেমেছে। আমি এর ব্যাখ্যা করলাম যে, মদীনার মহামারী সেখানে স্থানান্তরিত হল।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৫৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৬৩)

৯১/৪৪. অধ্যায় :
স্বপ্নে নিজেকে তরবারী নাড়াচাড়া করতে দেখা ।

৭০৪১
مُحَمَّدُ بْنُ الْعَلاَءِ حَدَّثَنَا أَبُو أُسَامَةَ عَنْ بُرَيْدِ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِي بُرْدَةَ عَنْ جَدِّهِ أَبِي بُرْدَةَ عَنْ أَبِي مُوسَى أُرَاهُ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ رَأَيْتُ فِي رُؤْيَايَ أَنِّي هَزَزْتُ سَيْفًا فَانْقَطَعَ صَدْرُهُ فَإِذَا هُوَ مَا أُصِيبَ مِنْ الْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ أُحُدٍ ثُمَّ هَزَزْتُهُ أُخْرَى فَعَادَ أَحْسَنَ مَا كَانَ فَإِذَا هُوَ مَا جَاءَ اللهُ بِهِ مِنْ الْفَتْحِ وَاجْتِمَاعِ الْمُؤْمِنِينَ.

আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্বপ্ন বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন, তিনি বলেছেনঃ আমি স্বপ্নে দেখলাম একটা তরবারী নাড়াচাড়া করছি। আর এ মধ্যভাগ ভেঙ্গে গেল। এর ব্যাখ্যা হল বিপদ, যা উহুদের যুদ্ধে মু’মিনদের ভাগ্যে ঘটেছে। আবার আমি তরবারিটি নাড়লাম। এতে তরবারীটি আগের থেকে সুন্দর অবস্থায় ফিরে এল। এর ব্যাখ্যা হল আল্লাহ্‌র দেয়া বিজয় ও মু’মিনদের ঐক্য। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৫৫১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৬৪)

৯১/৪৫. অধ্যায় :
যে ব্যক্তি স্বীয় স্বপ্ন বর্ণনায় মিথ্যা বলল ।

৭০৪২
عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللهِ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ عَنْ أَيُّوبَ عَنْ عِكْرِمَةَ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَنْ تَحَلَّمَ بِحُلْمٍ لَمْ يَرَهُ كُلِّفَ أَنْ يَعْقِدَ بَيْنَ شَعِيرَتَيْنِ وَلَنْ يَفْعَلَ وَمَنْ اسْتَمَعَ إِلَى حَدِيثِ قَوْمٍ وَهُمْ لَهُ كَارِهُونَ أَوْ يَفِرُّونَ مِنْهُ صُبَّ فِي أُذُنِهِ الْآنُكُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَمَنْ صَوَّرَ صُورَةً عُذِّبَ وَكُلِّفَ أَنْ يَنْفُخَ فِيهَا وَلَيْسَ بِنَافِخٍ قَالَ سُفْيَانُ وَصَلَهُ لَنا أَيُّوبُ وَقَالَ قُتَيْبَةُ حَدَّثَنَا أَبُو عَوَانَةَ عَنْ قَتَادَةَ عَنْ عِكْرِمَةَ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَوْلَهُ مَنْ كَذَبَ فِي رُؤْيَاهُ وَقَالَ شُعْبَةُ عَنْ أَبِي هَاشِمٍ الرُّمَّانِيِّ سَمِعْتُ عِكْرِمَةَ قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ قَوْلَهُ مَنْ صَوَّرَ صُورَةً وَمَنْ تَحَلَّمَ وَمَنْ اسْتَمَعَ حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ حَدَّثَنَا خَالِدٌ عَنْ خَالِدٍ عَنْ عِكْرِمَةَ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ مَنْ اسْتَمَعَ وَمَنْ تَحَلَّمَ وَمَنْ صَوَّرَ نَحْوَهُ تَابَعَهُ هِشَامٌ عَنْ عِكْرِمَةَ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَوْلَهُ.

ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, যে লোক এমন স্বপ্ন দেখার ভান করল যা সে দেখেনি তাকে দু’টি যবের দানায় গিট দেয়ার জন্য বাধ্য করা হবে। অথচ সে তা কখনও পারবে না। যে কেউ কোন এক দলের কথার দিকে কান লাগাল। অথচ তারা এটা পছন্দ করে না অথবা বলেছেন, অথচ তারা তার থেকে পলায়নপর। ক্বিয়ামাতের দিন তার উভয় কানে সীসা ঢেলে দেয়া হবে। আর যে কেউ প্রাণীর ছবি আঁকে তাকে শাস্তি দেয়া হবে এবং তাতে প্রাণ ফুঁকে দেয়ার জন্য বাধ্য করা হবে। কিন্তু সে প্রাণ ফুঁকতে পারবে না। সুফ্ইয়ান বলেছেন, আইউব এ হাদীসটি আমাদেরকে মওসুল রূপে বর্ণনা করেছেন।

কুতাইবাহ (রহঃ) বলেন, আবূ আওয়ানা (রহঃ)…..আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে তাঁর উক্তি বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি নিজের স্বপ্ন মিথ্যা বর্ণনা করে।

শু’বা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে তাঁর উক্তি বর্ণনা করেন, যে কেউ ছবি আঁকে…..যে কেউ মিথ্যা স্বপ্ন বর্ণনা করে…..যে কেউ কান লাগায়…..।

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। (তিনি বলেন) যে কেউ কান লাগাবে…..যে কেউ মিথ্যা স্বপ্ন বর্ণনা করবে…..যে কেউ ছবি আঁকবে…..অবশিষ্ট হাদীস একই রকম বর্ণনা করেছেন…..। হিশাম (রহঃ) ইকরামাহ থেকে ইব্‌নু ‘আব্বাস সূত্রে খালিদ এর অনুসরণ করেছেন। [১৫২] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৫৫৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৬৬)

[১] এই হাদীসটিতে তিনটি হুকুম শামিল রয়েছে, যথা :

(১) মিথ্যা স্বপ্ন বর্ণনা করা, (২) যে ব্যক্তি চায়, তার কথা কেউ শ্রবণ না করুক এমন কথা শ্রবণ করা এবং (৩) ছবি সংক্রান্ত।

ইমাম ত্ববারী মিথ্যা স্বপ্ন বর্ণনা সম্পর্কে বলেন, এ ব্যাপারে শাস্তি দেয়ার ওয়াদা তীব্র হয়েছে। অথচ সজাগ থাকা অবস্থায় মিথ্যা বলা কখনও কখনও তার চাইতে অধিকতর মারাত্মক অন্যায়। যেমন : হত্যা, হাদ্দ অথবা সম্পদের ব্যাপারে সাক্ষ্য দেয়া। কারণ স্বপ্নের ব্যাপারে মিথ্যারোপ যেন আল্লাহর উপরেই মিথ্যারোপ করা যে আল্লাহ তাকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন অথচ তা সে দেখেনি। আর আল্লাহর উপর মিথ্যা বলা সৃষ্টিকুলের উপর মিথ্যা বলার চাইতে অধিকতর গুরুতর।

এর প্রমাণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

{وَيَقُولُ الْأَشْهَادُ هَؤُلاءِ الَّذِينَ كَذَبُوا عَلَى رَبِّهِمْ} (هود: من الآية১৮)

আর স্বপ্নের ব্যাপারে মিথ্যা বলা যেন প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর উপরেই মিথ্যা বলা। তার প্রমাণ, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন الرؤيا جزء من النبوة সুতরাং যা নবুওয়াতের অংশ তা তো আল্লাহর পক্ষ থেকেই হবে।

৭০৪৩
عَلِيُّ بْنُ مُسْلِمٍ حَدَّثَنَا عَبْدُ الصَّمَدِ حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عَبْدِ اللهِ بْنِ دِينَارٍ مَوْلَى ابْنِ عُمَرَ عَنْ أَبِيهِ عَنْ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِنَّ مِنْ أَفْرَى الْفِرَى أَنْ يُرِيَ عَيْنَيْهِ مَا لَمْ تَرَ.

ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সবচেয়ে নিকৃষ্ট মিথ্যা হল আপন চক্ষু দিয়ে এমন কিছু দেখার (দাবি করা) যা চক্ষুদয় দেখতে পায়নি।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৫৫৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৬৭)

৯১/৪৬. অধ্যায় :
পছন্দনীয় নয় স্বপ্নে এমন কিছু দেখলে তা কারো কাছে না বলা এবং সে সম্পর্কে কোন আলোচনা না করা ।

৭০৪৪
سَعِيدُ بْنُ الرَّبِيعِ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ عَبْدِ رَبِّهِ بْنِ سَعِيدٍ قَالَ سَمِعْتُ أَبَا سَلَمَةَ يَقُولُ لَقَدْ كُنْتُ أَرَى الرُّؤْيَا فَتُمْرِضُنِي حَتَّى سَمِعْتُ أَبَا قَتَادَةَ يَقُولُ وَأَنَا كُنْتُ لأرَى الرُّؤْيَا تُمْرِضُنِي حَتَّى سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ الرُّؤْيَا الْحَسَنَةُ مِنْ اللهِ فَإِذَا رَأَى أَحَدُكُمْ مَا يُحِبُّ فَلاَ يُحَدِّثْ بِهِ إِلاَّ مَنْ يُحِبُّ وَإِذَا رَأَى مَا يَكْرَهُ فَلْيَتَعَوَّذْ بِاللهِ مِنْ شَرِّهَا وَمِنْ شَرِّ الشَّيْطَانِ وَلْيَتْفِلْ ثَلاَثًا وَلاَ يُحَدِّثْ بِهَا أَحَدًا فَإِنَّهَا لَنْ تَضُرَّهُ.

আবূ সালামাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি এমন স্বপ্ন দেখতাম যা আমাকে রোগাক্রান্ত করে ফেলত। অবশেষে আমি আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি এমন স্বপ্ন দেখতাম যা আমাকে রোগাক্রান্ত করে দিত। শেষে আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, ভাল স্বপ্ন আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। তাই যখন কেউ পছন্দনীয় কোন স্বপ্ন দেখে তখন এমন লোকের কাছেই বলবে, যাকে সে পছন্দ করে। আর যখন অপছন্দনীয় কোন স্বপ্ন দেখে তখন যেন সে এর ক্ষতি ও শয়তানের ক্ষতি থেকে আল্লাহ্‌র আশ্রয় চায় এবং তিনবার থু থু ফেলে আর সে যেন তা কারো কাছে বর্ণনা না করে। তাহলে এ স্বপ্ন তার কোন ক্ষতি করবে না। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৫৫৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৬৮)

৭০৪৫
إِبْرَاهِيمُ بْنُ حَمْزَةَ حَدَّثَنِي ابْنُ أَبِي حَازِمٍ وَالدَّرَاوَرْدِيُّ عَنْ يَزِيدَ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ أُسَامَةَ بْنِ الْهَادِ اللَّيْثِيِّ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ خَبَّابٍ عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ إِذَا رَأَى أَحَدُكُمْ الرُّؤْيَا يُحِبُّهَا فَإِنَّهَا مِنْ اللهِ فَلْيَحْمَدْ اللهَ عَلَيْهَا وَلْيُحَدِّثْ بِهَا وَإِذَا رَأَى غَيْرَ ذَلِكَ مِمَّا يَكْرَهُ فَإِنَّمَا هِيَ مِنْ الشَّيْطَانِ فَلْيَسْتَعِذْ مِنْ شَرِّهَا وَلاَ يَذْكُرْهَا لِأَحَدٍ فَإِنَّهَا لَنْ تَضُرَّهُ.

আবূ সা‘ঈদ খুদ্‌রী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন, যখন কেউ এমন কোন স্বপ্ন দেখে যা সে পছন্দ করে, তবে মনে করবে যে তা আল্লাহ্‌র তরফ থেকে হয়েছে। তখন যেন সে এজন্য আল্লাহ্‌র শোকর আদায় করে এবং তা বর্ণনা করে। আর যখন এর বিপরীত কোন স্বপ্ন দেখে, যা সে পছন্দ করে না, মনে করবে তা শয়তানের তরফ থেকে হয়েছে। তখন যেন সে এর অনিষ্ট থেকে আল্লাহ্‌র আশ্রয় চায় এবং তা কারো কাছে বর্ণনা না করে। তাহলে এ স্বপ্ন তার কোন ক্ষতি করবে না। [১৫৩](আধুনিক প্রকাশনী- ৬৫৫৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৬৯)

[১] এই হাদীসের মধ্যে সরকারকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের জন্য তার বিরুদ্ধে অন্দোলন করতে বের হওয়া পরিহার করার প্রমাণ রয়েছে। এমনকি সরকার যদি অত্যাচারও করে। যেমন ত্ববারানীতে ইয়াযীদ ইবনু সালামা আল জু’ফী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:

يارسول اله إن كان علينا أمراء يأخذون بالحق الذي علينا ويمنعونا الحق الذي لنا أنقاتلهم؟ قال لا، عليهم ما حملوا وعليكم ما حملته

এবং ইমাম মুসলিম মারফু সূত্রে উম্মু সালামাহ থেকে বর্ণনা করেন :

سيكون أمراء فيعرفون وينكرون فمن كره برئ ومن أنكر مسلم، لكن من رضي وتابع قالوا، أفلا نقاتلهم؟ قال: لا، ما صلوا

ফিকাহবীদগণ সকলে একমত হয়েছেন যে, বিজয়ী সরকারের আনুগত্য করা ও তার জিহাদে অংশগ্রহণ করা ওয়াজিব। আর সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে বের হওয়ার চেয়ে তার আনুগত্য করা অতি উত্তম। কেননা আনুগত্যের মাধ্যমেই খুনা-খুনী রোধ ও শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব। কিন্তু যদি সরকারের মাঝে সুস্পষ্ট কুফর দেখা যায় তাহলে ঐ ক্ষেত্রে তার আনুগত্য করা জায়েয না। বরং তখন যাদের আন্দোলন করার শক্তি রয়েছে তাদের আন্দোলন করা ওয়াজিব। [এটিও শর্ত সাপেক্ষে]। (ফাতহুল বারী)

৯১/৪৭. অধ্যায় :
ভুল ব্যাখ্যাকারীর ব্যখ্যাকে প্রথমেই চূড়ান্ত বলে মনে না করা ।

৭০৪৬
حَدَّثَنِي يَحْيَى بْنُ بُكَيْرٍ، حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، عَنْ يُونُسَ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُتْبَةَ، أَنَّ ابْنَ عَبَّاسٍ ـ رضى الله عنهما ـ كَانَ يُحَدِّثُ أَنَّ رَجُلاً أَتَى رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ إِنِّي رَأَيْتُ اللَّيْلَةَ فِي الْمَنَامِ ظُلَّةً تَنْطِفُ السَّمْنَ وَالْعَسَلَ، فَأَرَى النَّاسَ يَتَكَفَّفُونَ مِنْهَا فَالْمُسْتَكْثِرُ وَالْمُسْتَقِلُّ، وَإِذَا سَبَبٌ وَاصِلٌ مِنَ الأَرْضِ إِلَى السَّمَاءِ، فَأَرَاكَ أَخَذْتَ بِهِ فَعَلَوْتَ، ثُمَّ أَخَذَ بِهِ رَجُلٌ آخَرُ فَعَلاَ بِهِ، ثُمَّ أَخَذَ بِهِ رَجُلٌ آخَرُ فَعَلاَ بِهِ ثُمَّ أَخَذَ بِهِ رَجُلٌ آخَرُ فَانْقَطَعَ ثُمَّ وُصِلَ‏.‏ فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ يَا رَسُولَ اللَّهِ بِأَبِي أَنْتَ وَاللَّهِ لَتَدَعَنِّي فَأَعْبُرَهَا‏.‏ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ اعْبُرْ ‏”‏‏.‏ قَالَ أَمَّا الظُّلَّةُ فَالإِسْلاَمُ، وَأَمَّا الَّذِي يَنْطِفُ مِنَ الْعَسَلِ وَالسَّمْنِ فَالْقُرْآنُ حَلاَوَتُهُ تَنْطُفُ، فَالْمُسْتَكْثِرُ مِنَ الْقُرْآنِ وَالْمُسْتَقِلُّ، وَأَمَّا السَّبَبُ الْوَاصِلُ مِنَ السَّمَاءِ إِلَى الأَرْضِ فَالْحَقُّ الَّذِي أَنْتَ عَلَيْهِ تَأْخُذُ بِهِ فَيُعْلِيكَ اللَّهُ، ثُمَّ يَأْخُذُ بِهِ رَجُلٌ مِنْ بَعْدِكَ فَيَعْلُو بِهِ، ثُمَّ يَأْخُذُ رَجُلٌ آخَرُ فَيَعْلُو بِهِ، ثُمَّ يَأْخُذُهُ رَجُلٌ آخَرُ فَيَنْقَطِعُ بِهِ ثُمَّ يُوَصَّلُ لَهُ فَيَعْلُو بِهِ، فَأَخْبِرْنِي يَا رَسُولَ اللَّهِ بِأَبِي أَنْتَ أَصَبْتُ أَمْ أَخْطَأْتُ‏.‏ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ أَصَبْتَ بَعْضًا وَأَخْطَأْتَ بَعْضًا ‏”‏‏.‏ قَالَ فَوَاللَّهِ لَتُحَدِّثَنِّي بِالَّذِي أَخْطَأْتُ‏.‏ قَالَ ‏”‏ لاَ تُقْسِمْ ‏”‏‏.‏

ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক লোক রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বলল, আমি গত রাতে স্বপ্নে একখণ্ড মেঘ দেখলাম, যা থেকে ঘি ও মধু ঝরছে। আমি লোকদেরকে দেখলাম তারা তা থেকে তুলে নিচ্ছে। কেউ অধিক পরিমাণ আবার কেউ কম পরিমাণ। আর দেখলাম, একটা রশি যমীন থেকে আসমান পর্যন্ত মিলে রয়েছে। আমি দেখলাম আপনি তা ধরে উপরে উঠছেন। তারপর অন্য এক লোক তা ধরল ও এর সাহায্যে উপরে উঠে গেল। এরপর আরেক লোক তা ধরে এর দ্বারা উপরে উঠে গেল। এরপর আরেক লোক তা ধরল। কিন্তু তা ছিঁড়ে গেল। পুনরায় তা জোড়া লেগে গেল। তখন আবূ বকর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনার প্রতি আমার পিতা কুরবান হোক! আল্লাহ্‌র কসম! আপনি অবশ্যই আমাকে এ স্বপ্নের ব্যাখ্যা দেয়ার সুযোগ দিবেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি এর ব্যাখ্যা দাও। আবূ বকর (রাঃ) বললেন, মেঘের ব্যাখ্যা হল ইসলাম। আর তার থেকে যে ঘি ও মধু ঝরছে তা হল কুরআন যার মিষ্টতা ঝরছে। কুরআন থেকে কেউ বেশি সংগ্রহ করছে, আর কেউ কম। আসমান থেকে যমীন পর্যন্ত ঝুলন্ত দড়িটি হচ্ছে ঐ হক (মহাসত্য) যার উপর আপনি প্রতিষ্ঠিত রয়েছেন। আপনি তা ধরবেন, আর আল্লাহ্ আপনাকে উচ্চে উঠাবেন। আপনার পরে আরেকজন তা ধরবে। ফলে এর দ্বারা সে উচ্চে উঠবে। অতঃপর আরেকজন তা ধরে এর মাধ্যমে সে উচ্চে উঠবে। এরপর আরেকজন তা ধরবে। কিন্তু তা ছিঁড়ে যাবে। পুনরায় তা জোড়া লেগে যাবে, ফলে সে এর দ্বারা উচ্চে উঠবে। হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমার পিতা আপনার উপর কুরবান হোক। আমাকে বলুন, আমি ঠিক বলেছি, না ভুল? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কিছু ঠিক বলেছ। আর কিছু ভুল বলেছ। তিনি বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আল্লাহ্‌র কসম! আপনি অবশ্যই আমাকে বলে দিবেন যা আমি ভুল করেছি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ কসম করো না।[মুসলিম ৪২/৩, হাঃ ২২৬৯, আহমাদ ১৮৯৪] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৫৫৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৭০)

৯১/৪৮. অধ্যায় :
ফাজ্‌রের সলাতের পরে স্বপ্নের ব্যাখ্যা দেয়া

৭০৪৭
مُؤَمَّلُ بْنُ هِشَامٍ أَبُو هِشَامٍ حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ حَدَّثَنَا عَوْفٌ حَدَّثَنَا أَبُو رَجَاءٍ حَدَّثَنَا سَمُرَةُ بْنُ جُنْدُبٍ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مِمَّا يُكْثِرُ أَنْ يَقُولَ لِأَصْحَابِهِ هَلْ رَأَى أَحَدٌ مِنْكُمْ مِنْ رُؤْيَا قَالَ فَيَقُصُّ عَلَيْهِ مَنْ شَاءَ اللهُ أَنْ يَقُصَّ وَإِنَّهُ قَالَ ذَاتَ غَدَاةٍ إِنَّهُ أَتَانِي اللَّيْلَةَ آتِيَانِ وَإِنَّهُمَا ابْتَعَثَانِي وَإِنَّهُمَا قَالاَ لِي انْطَلِقْ وَإِنِّي انْطَلَقْتُ مَعَهُمَا وَإِنَّا أَتَيْنَا عَلَى رَجُلٍ مُضْطَجِعٍ وَإِذَا آخَرُ قَائِمٌ عَلَيْهِ بِصَخْرَةٍ وَإِذَا هُوَ يَهْوِي بِالصَّخْرَةِ لِرَأْسِهِ فَيَثْلَغُ رَأْسَهُ فَيَتَهَدْهَدُ الْحَجَرُ هَا هُنَا فَيَتْبَعُ الْحَجَرَ فَيَأْخُذُهُ فَلاَ يَرْجِعُ إِلَيْهِ حَتَّى يَصِحَّ رَأْسُهُ كَمَا كَانَ ثُمَّ يَعُودُ عَلَيْهِ فَيَفْعَلُ بِهِ مِثْلَ مَا فَعَلَ الْمَرَّةَ الْأُولَى قَالَ قُلْتُ لَهُمَا سُبْحَانَ اللهِ مَا هَذَانِ قَالَ قَالاَ لِي انْطَلِقْ انْطَلِقْ قَالَ فَانْطَلَقْنَا فَأَتَيْنَا عَلَى رَجُلٍ مُسْتَلْقٍ لِقَفَاهُ وَإِذَا آخَرُ قَائِمٌ عَلَيْهِ بِكَلُّوبٍ مِنْ حَدِيدٍ وَإِذَا هُوَ يَأْتِي أَحَدَ شِقَّيْ وَجْهِهِ فَيُشَرْشِرُ شِدْقَهُ إِلَى قَفَاهُ وَمَنْخِرَهُ إِلَى قَفَاهُ وَعَيْنَهُ إِلَى قَفَاهُ قَالَ وَرُبَّمَا قَالَ أَبُو رَجَاءٍ فَيَشُقُّ قَالَ ثُمَّ يَتَحَوَّلُ إِلَى الْجَانِبِ الْآخَرِ فَيَفْعَلُ بِهِ مِثْلَ مَا فَعَلَ بِالْجَانِبِ الأَوَّلِ فَمَا يَفْرُغُ مِنْ ذَلِكَ الْجَانِبِ حَتَّى يَصِحَّ ذَلِكَ الْجَانِبُ كَمَا كَانَ ثُمَّ يَعُودُ عَلَيْهِ فَيَفْعَلُ مِثْلَ مَا فَعَلَ الْمَرَّةَ الْأُولَى قَالَ قُلْتُ سُبْحَانَ اللهِ مَا هَذَانِ قَالَ قَالاَ لِي انْطَلِقْ انْطَلِقْ فَانْطَلَقْنَا فَأَتَيْنَا عَلَى مِثْلِ التَّنُّورِ قَالَ فَأَحْسِبُ أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ فَإِذَا فِيهِ لَغَطٌ وَأَصْوَاتٌ قَالَ فَاطَّلَعْنَا فِيهِ فَإِذَا فِيهِ رِجَالٌ وَنِسَاءٌ عُرَاةٌ وَإِذَا هُمْ يَأْتِيهِمْ لَهَبٌ مِنْ أَسْفَلَ مِنْهُمْ فَإِذَا أَتَاهُمْ ذَلِكَ اللهَبُ ضَوْضَوْا قَالَ قُلْتُ لَهُمَا مَا هَؤُلاَءِ قَالَ قَالاَ لِي انْطَلِقْ انْطَلِقْ قَالَ فَانْطَلَقْنَا فَأَتَيْنَا عَلَى نَهَرٍ حَسِبْتُ أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ أَحْمَرَ مِثْلِ الدَّمِ وَإِذَا فِي النَّهَرِ رَجُلٌ سَابِحٌ يَسْبَحُ وَإِذَا عَلَى شَطِّ النَّهَرِ رَجُلٌ قَدْ جَمَعَ عِنْدَهُ حِجَارَةً كَثِيرَةً وَإِذَا ذَلِكَ السَّابِحُ يَسْبَحُ مَا يَسْبَحُ ثُمَّ يَأْتِي ذَلِكَ الَّذِي قَدْ جَمَعَ عِنْدَهُ الْحِجَارَةَ فَيَفْغَرُ لَهُ فَاهُ فَيُلْقِمُهُ حَجَرًا فَيَنْطَلِقُ يَسْبَحُ ثُمَّ يَرْجِعُ إِلَيْهِ كُلَّمَا رَجَعَ إِلَيْهِ فَغَرَ لَهُ فَاهُ فَأَلْقَمَهُ حَجَرًا قَالَ قُلْتُ لَهُمَا مَا هَذَانِ قَالَ قَالاَ لِي انْطَلِقْ انْطَلِقْ قَالَ فَانْطَلَقْنَا فَأَتَيْنَا عَلَى رَجُلٍ كَرِيهِ الْمَرْآةِ كَأَكْرَهِ مَا أَنْتَ رَاءٍ رَجُلاً مَرْآةً وَإِذَا عِنْدَهُ نَارٌ يَحُشُّهَا وَيَسْعَى حَوْلَهَا قَالَ قُلْتُ لَهُمَا مَا هَذَا قَالَ قَالاَ لِي انْطَلِقْ انْطَلِقْ فَانْطَلَقْنَا فَأَتَيْنَا عَلَى رَوْضَةٍ مُعْتَمَّةٍ فِيهَا مِنْ كُلِّ لَوْنِ الرَّبِيعِ وَإِذَا بَيْنَ ظَهْرَيْ الرَّوْضَةِ رَجُلٌ طَوِيلٌ لاَ أَكَادُ أَرَى رَأْسَهُ طُولاً فِي السَّمَاءِ وَإِذَا حَوْلَ الرَّجُلِ مِنْ أَكْثَرِ وِلْدَانٍ رَأَيْتُهُمْ قَطُّ قَالَ قُلْتُ لَهُمَا مَا هَذَا مَا هَؤُلاَءِ قَالَ قَالاَ لِي انْطَلِقْ انْطَلِقْ قَالَ فَانْطَلَقْنَا فَانْتَهَيْنَا إِلَى رَوْضَةٍ عَظِيمَةٍ لَمْ أَرَ رَوْضَةً قَطُّ أَعْظَمَ مِنْهَا وَلاَ أَحْسَنَ قَالَ قَالاَ لِي ارْقَ فِيهَا قَالَ فَارْتَقَيْنَا فِيهَا فَانْتَهَيْنَا إِلَى مَدِينَةٍ مَبْنِيَّةٍ بِلَبِنِ ذَهَبٍ وَلَبِنِ فِضَّةٍ فَأَتَيْنَا بَابَ الْمَدِينَةِ فَاسْتَفْتَحْنَا فَفُتِحَ لَنَا فَدَخَلْنَاهَا فَتَلَقَّانَا فِيهَا رِجَالٌ شَطْرٌ مِنْ خَلْقِهِمْ كَأَحْسَنِ مَا أَنْتَ رَاءٍ وَشَطْرٌ كَأَقْبَحِ مَا أَنْتَ رَاءٍ قَالَ قَالاَ لَهُمْ اذْهَبُوا فَقَعُوا فِي ذَلِكَ النَّهَرِ قَالَ وَإِذَا نَهَرٌ مُعْتَرِضٌ يَجْرِي كَأَنَّ مَاءَهُ الْمَحْضُ فِي الْبَيَاضِ فَذَهَبُوا فَوَقَعُوا فِيهِ ثُمَّ رَجَعُوا إِلَيْنَا قَدْ ذَهَبَ ذَلِكَ السُّوءُ عَنْهُمْ فَصَارُوا فِي أَحْسَنِ صُورَةٍ قَالَ قَالاَ لِي هَذِهِ جَنَّةُ عَدْنٍ وَهَذَاكَ مَنْزِلُكَ قَالَ فَسَمَا بَصَرِي صُعُدًا فَإِذَا قَصْرٌ مِثْلُ الرَّبَابَةِ الْبَيْضَاءِ قَالَ قَالاَ لِي هَذَاكَ مَنْزِلُكَ قَالَ قُلْتُ لَهُمَا بَارَكَ اللهُ فِيكُمَا ذَرَانِي فَأَدْخُلَهُ قَالاَ أَمَّا الْآنَ فَلاَ وَأَنْتَ دَاخِلَهُ قَالَ قُلْتُ لَهُمَا فَإِنِّي قَدْ رَأَيْتُ مُنْذُ اللَّيْلَةِ عَجَبًا فَمَا هَذَا الَّذِي رَأَيْتُ قَالَ قَالاَ لِي أَمَا إِنَّا سَنُخْبِرُكَ أَمَّا الرَّجُلُ الأَوَّلُ الَّذِي أَتَيْتَ عَلَيْهِ يُثْلَغُ رَأْسُهُ بِالْحَجَرِ فَإِنَّهُ الرَّجُلُ يَأْخُذُ الْقُرْآنَ فَيَرْفُضُهُ وَيَنَامُ عَنْ الصَّلاَةِ الْمَكْتُوبَةِ وَأَمَّا الرَّجُلُ الَّذِي أَتَيْتَ عَلَيْهِ يُشَرْشَرُ شِدْقُهُ إِلَى قَفَاهُ وَمَنْخِرُهُ إِلَى قَفَاهُ وَعَيْنُهُ إِلَى قَفَاهُ فَإِنَّهُ الرَّجُلُ يَغْدُو مِنْ بَيْتِهِ فَيَكْذِبُ الْكَذْبَةَ تَبْلُغُ الْآفَاقَ وَأَمَّا الرِّجَالُ وَالنِّسَاءُ الْعُرَاةُ الَّذِينَ فِي مِثْلِ بِنَاءِ التَّنُّورِ فَإِنَّهُمْ الزُّنَاةُ وَالزَّوَانِي وَأَمَّا الرَّجُلُ الَّذِي أَتَيْتَ عَلَيْهِ يَسْبَحُ فِي النَّهَرِ وَيُلْقَمُ الْحَجَرَ فَإِنَّهُ آكِلُ الرِّبَا وَأَمَّا الرَّجُلُ الْكَرِيهُ الْمَرْآةِ الَّذِي عِنْدَ النَّارِ يَحُشُّهَا وَيَسْعَى حَوْلَهَا فَإِنَّهُ مَالِكٌ خَازِنُ جَهَنَّمَ وَأَمَّا الرَّجُلُ الطَّوِيلُ الَّذِي فِي الرَّوْضَةِ فَإِنَّهُ إِبْرَاهِيمُ صلى الله عليه وسلم وَأَمَّا الْوِلْدَانُ الَّذِينَ حَوْلَهُ فَكُلُّ مَوْلُودٍ مَاتَ عَلَى الْفِطْرَةِ قَالَ فَقَالَ بَعْضُ الْمُسْلِمِينَ يَا رَسُولَ اللهِ وَأَوْلاَدُ الْمُشْرِكِينَ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَأَوْلاَدُ الْمُشْرِكِينَ وَأَمَّا الْقَوْمُ الَّذِينَ كَانُوا شَطْرٌ مِنْهُمْ حَسَنًا وَشَطْرٌ قَبِيحًا فَإِنَّهُمْ قَوْمٌ خَلَطُوا عَمَلاً صَالِحًا وَآخَرَ سَيِّئًا تَجَاوَزَ اللهُ عَنْهُمْ.

সামুরাহ ইব্‌নু জুনদাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রায়ই তাঁর সহাবীদেরকে বলতেন, তোমাদের কেউ কোন স্বপ্ন দেখেছ কি? রাবী বলেন, যাদের ক্ষেত্রে আল্লাহ্‌র ইচ্ছা, তারা রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে স্বপ্ন বর্ণনা করতেন। তিনি একদিন সকালে আমাদেরকে বললেনঃ গত রাতে আমার কাছে দু’জন আগন্তুক আসল। তারা আমাকে উঠাল। আর আমাকে বলল, চলুন। আমি তাদের সঙ্গে চললাম। আমরা কাত হয়ে শুয়ে থাকা এক লোকের কাছে আসলাম। দেখলাম, অন্য এক লোক তার নিকট পাথর নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সে তার মাথায় পাথর নিক্ষেপ করছে। ফলে তার মাথা ফেটে যাচ্ছে। আর পাথর নিচে গিয়ে পড়ছে। এরপর আবার সে পাথরটি অনুসরণ করে তা আবার নিয়ে আসছে। ফিরে আসতে না আসতেই লোকটির মাথা আগের মত আবার ভাল হয়ে যায়। ফিরে এসে আবার তেমনি আচরণ করে, যা পূর্বে প্রথমবার করেছিল। তিনি বলেন, আমি তাদের (সাথীদ্বয়কে) বললাম, সুবহানআল্লাহ্! এরা কারা? তিনি বললেন, তারা আমাকে বলল, চলুন, চলুন। তিনি বলেন, আমরা চললাম, এরপর আমরা চিৎ হয়ে শোয়া এক লোকের কাছে আসলাম। এখানেও দেখলাম, তার নিকট এক লোক লোহার আঁকড়া নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আর সে তার চেহারার একদিকে এসে এটা দ্বারা মুখমণ্ডলের একদিক মাথার পিছনের দিক পর্যন্ত এবং অনুরূপভাবে নাসারন্ধ্র, চোখ ও মাথার পিছন দিক পর্যন্ত চিরে ফেলছে। আওফ (রহঃ) বলেন, আবূ রাজা (রহঃ) কোন কোন সময় ‘ইয়ুশারশিরু’ শব্দের পরিবর্তে ‘ইয়াশুক্‌কু’ শব্দ বলতেন। এরপর ঐ লোকটি শায়িত লোকটির অপরদিকে যায় এবং প্রথম দিকের সঙ্গে যেমন আচরণ করেছে তেমনি আচরণই অপরদিকের সঙ্গেও করে। ঐ দিক হতে অবসর হতে না হতেই প্রথম দিকটি আগের মত ভাল হয়ে যায়। তারপর আবার প্রথমবারের মত আচরণ করে। তিনি বলেনঃ আমি বললাম, সুবহানআল্লাহ্! এরা কারা? তিনি বলেন, তারা আমাকে বলল, চলুন, চলুন। আমরা চললাম এবং চুলার মত একটি গর্তের কাছে পৌঁছলাম। রাবী বলেন, আমার মনে হয় যেন তিনি বলেছিলেন, আর তথায় শোরগোলের শব্দ ছিল। তিনি বলেন, আমরা তাতে উঁকি মারলাম, দেখলাম তাতে বেশ কিছু উলঙ্গ নারী ও পুরুষ রয়েছে। আর নিচ থেকে বের হওয়া আগুনের লেলিহান শিখা তাদেরকে স্পর্শ করছে। যখনই লেলিহান শিখা তাদেরকে স্পর্শ করে, তখনই তারা উচ্চস্বরে চিৎকার করে উঠে। তিনি বলেন, আমি তাদেরকে বললাম, এরা কারা? তারা আমাকে বলল, চলুন, চলুন। তিনি বলেন, আমরা চললাম এবং একটা নদীর (তীরে) গিয়ে পৌঁছলাম। রাবী বলেন, আমার যতদূর মনে পড়ে তিনি বলেছিলেন, নদীটি ছিল রক্তের মত লাল। আর দেখলাম, এই নদীতে এক ব্যক্তি সাঁতার কাটছে। আর নদীর তীরে অন্য এক লোক আছে এবং সে তার কাছে অনেকগুলো পাথর একত্রিত করে রেখেছে। আর ঐ সাঁতারকারী লোকটি বেশ কিছুক্ষণ সাঁতার কাটার পর সে লোক কাছে এসে পৌঁছে যে নিজের নিকট পাথর একত্রিত করে রেখেছে। সেখানে এসে সে তার মুখ খুলে দেয় আর ঐ লোক তার মুখে একটি পাথর ঢুকিয়ে দেয়। এরপর সে চলে যায়, সাঁতার কাটতে থাকে; আবার তার কাছে ফিরে আসে, যখনই সে তার কাছে ফিরে আসে তখনই সে তার মুখ খুলে দেয়, আর ঐ ব্যক্তি তার মুখে একটা পাথর ঢুকিয়ে দেয়। তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, এরা কারা? তার বলল, চলুন, চলুন। তিনি বলেন, আমরা চললাম এবং এমন একজন কুশ্রী লোকের কাছে এসে পৌঁছলাম, যে তোমার দৃষ্টিতে সবচেয়ে কুশ্রী বলে মনে হয়। আর দেখলাম, তার নিকট রয়েছে আগুন, যা সে জ্বালাচ্ছে ও তার চতুর্দিকে দৌড়াচ্ছে। তিনি বলেন, আমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলাম, ঐ লোকটি কে? তারা বলল, চলুন, চলুন। আমরা চললাম এবং একটা সজীব শ্যামল বাগানে হাজির হলাম, যেখানে বসন্তের হরেক রকম ফুলের কলি রয়েছে। আর বাগানের মাঝে আসমানের থেকে অধিক উঁচু দীর্ঘকায় একজন পুরুষ রয়েছে যার মাথা যেন আমি দেখতেই পাচ্ছি না। এমনিভাবে তার চারপাশে এত বিপুল সংখ্যক বালক-বালিকা দেখলাম যে, এত অধিক আর কখনো আমি দেখিনি। আমি তাদেরকে বললাম, উনি কে? এরা কারা? তারা আমাকে বলল, চলুন, চলুন। আমরা চললাম এবং একটা বিরাট বাগানে গিয়ে পৌঁছলাম। এমন বড় এবং সুন্দর বাগান আমি আর কখনো দেখিনি। তিনি বলেন, তারা আমাকে বলল, এর ওপরে চড়ুন। আমরা ওপরে চড়লাম। শেষ পর্যন্ত সোনা-রূপার ইটের তৈরি একটি শহরে গিয়ে আমরা হাজির হলাম। আমরা শহরের দরজায় পৌঁছলাম এবং দরজা খুলতে বললাম। আমাদের জন্য দরজা খুলে দেয়া হল, আমরা তাতে প্রবেশ করলাম। তখন সেখানে আমাদের সঙ্গে এমন কিছু লোক সাক্ষাৎ করল যাদের শরীরের অর্ধেক খুবই সুন্দর, যা তোমার দৃষ্টিতে সবচেয়ে সুন্দর মনে হয়। আর শরীরের অর্ধেক এমনই কুশ্রী ছিল যা তোমার দৃষ্টিতে সবচেয়ে কুশ্রী মনে হয়। তিনি বলেন, সাথীদ্বয় ওদেরকে বলল, যাও ঐ নদীতে গিয়ে নেমে পড়। আর সেটা ছিল প্রশস্ত প্রবাহিত নদী, যার পানি ছিল দুধের মত সাদা। ওরা তাতে গিয়ে নেমে পড়ল। অতঃপর এরা আমাদের কাছে ফিরে এল, দেখা গেল তাদের এ শ্রীহীনতা দূর হয়ে গেছে এবং তারা খুবই সুন্দর আকৃতির হয়ে গেছে। তিনি বলেন, তারা আমাকে বলল, এটা জান্নাতে আদন এবং এটা আপনার বাসস্থান। তিনি বলেন, আমি বেশ উপরের দিকে তাকালাম, দেখলাম ধবধবে সাদা মেঘের মত একটি প্রাসাদ আছে। তিনি বলেন, তারা আমাকে বলল, এটা আপনার বাসগৃহ। তিনি বলেন, আমি তাদেরকে বললাম, আল্লাহ্ তোমাদের মাঝে বরকত দিন! আমাকে ছেড়ে দাও। আমি এতে প্রবেশ করি। তারা বলল, আপনি অবশ্য এতে প্রবেশ করবেন। তবে এখন নয়। তিনি বলেন, আমি এ রাতে অনেক বিস্ময়কর বিষয় দেখতে পেলাম, এগুলোর তাৎপর্য কী? তারা আমাকে বলল, আচ্ছা! আমরা আপনাকে বলে দিচ্ছি। ঐ যে প্রথম ব্যক্তিকে যার কাছে আপনি পৌঁছেছিলেন, যার মাথা পাথর দিয়ে চূর্ণ-বিচূর্ণ করা হচ্ছিল, সে হল ঐ ব্যক্তি যে কুরআন গ্রহণ করে তা ছেড়ে দিয়েছে। আর ফরয সলাত ছেড়ে ঘুমিয়ে থাকে। আর ঐ ব্যক্তি যার কাছে গিয়ে দেখেছেন যে, তার মুখের এক ভাগ মাথার পিছন দিক পর্যন্ত, এমনিভাবে নাসারন্ধ্র ও চোখ মাথার পিছন দিক পর্যন্ত চিরে ফেলা হচ্ছিল সে হল ঐ ব্যক্তি, যে সকালে নিজ ঘর থেকে বের হয়ে এমন মিথ্যা বলে যা চারদিকে ছড়িয়ে পরে। আর এ সকল উলঙ্গ নারী-পুরুষ যারা চুলা সদৃশ গর্তের ভিতর আছে তারা হল ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীর দল। আর ঐ ব্যক্তি, যার কাছে পৌঁছে দেখেছিলেন যে, সে নদীতে সাঁতার কাটছে ও তার মুখে পাথর ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে সে হল সুদখোর। আর ঐ কুশ্রী ব্যক্তি, যে আগুনের কাছে ছিল এবং আগুন জ্বালাচ্ছিল আর সে এর চারপাশে দৌড়াচ্ছিল, সে হল জাহান্নামের দারোগা, মালিক ফেরেশ্‌তা। আর এ দীর্ঘকায় ব্যক্তি যিনি বাগানে ছিলেন, তিনি হলেন, ইবরাহীম (আঃ)। আর তাঁর আশেপাশের বালক-বালিকারা হলো ঐসব শিশু, যারা ফিত্‌রাতের (স্বভাবধর্মের) ওপর মৃত্যুবরণ করেছে। তিনি বলেন, তখন কিছু সংখ্যক মুসলিম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! মুশরিকদের শিশু সন্তানরাও কি? তখন রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ মুশরিকদের শিশু সন্তানরাও। আর ঐসব লোক যাদের অর্ধাংশ অতি সুন্দর ও অর্ধাংশ অতি কুশ্রী তারা হল ঐ সম্প্রদায় যারা সৎ-অসৎ উভয় কাজ মিশ্রিতভাবে করেছে। আল্লাহ্ তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। [৮৪৫; মুসলিম ৪২/৪, হাঃ ২২৭৫, আহমাদ ২০১১৫] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৫৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৭১)

FOR MORE CLICK HERE

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]