সহীহ বুখারী শরীফ জানাযা অধ্যায় ২য় ভাগ হাদিস নং ১২৮৪ – ১৩২০

২৩/৩২. অধ্যায়ঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর বাণীঃ পরিবার-পরিজনের কান্নার কারণে মৃত ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়া হয়, যদি বিলাপ করা তার অভ্যাস হয়ে থাকে।

কারণ আল্লাহ্‌ তা’আলা ইরশাদ করেনঃ (যার অর্থ) “তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর।” (তাহ্‌রীমঃ ৬)। এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকই তার নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। কিন্তু তা যদি তার অভ্যাস না হয়ে থাকে তবে তার বিধান হবে যা ‘আয়িশা (রাঃ) ব্যক্ত করেছেনঃ (যার অর্থ) “নিজ বোঝা বহনকারী কোন ব্যক্তি অপরের বোঝা বহন করবে না”- (আল-আন’আমঃ ১৬৪)। আর এ হলো আল্লাহ্‌ তা’আলার এ বাণীর ন্যায় “কোন (গুনাহের) বোঝা বহনকারী ব্যক্তি যদি কাউকেও তা বহন করার আহবান জানায় তবে তা থেকে কিছুই বহন করা হবে না- (ফাতিরঃ ১৮)। আর বিলাপ ব্যতীত ক্রন্দনের অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা হলে সে হত্যার অপরাধের অংশ প্রথম আদম সন্তান (কাবিল) এর উপর বর্তাবে। আর সেটা এ কারণে যে, সেই প্রথম ব্যক্তি যে হত্যার প্রবর্তন করেছে।

১২৮৪
حَدَّثَنَا عَبْدَانُ، وَمُحَمَّدٌ، قَالاَ أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللَّهِ، أَخْبَرَنَا عَاصِمُ بْنُ سُلَيْمَانَ، عَنْ أَبِي عُثْمَانَ، قَالَ حَدَّثَنِي أُسَامَةُ بْنُ زَيْدٍ ـ رضى الله عنهما ـ قَالَ أَرْسَلَتِ ابْنَةُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم إِلَيْهِ إِنَّ ابْنًا لِي قُبِضَ فَائْتِنَا‏.‏ فَأَرْسَلَ يُقْرِئُ السَّلاَمَ وَيَقُولُ ‏”‏ إِنَّ لِلَّهِ مَا أَخَذَ وَلَهُ مَا أَعْطَى وَكُلٌّ عِنْدَهُ بِأَجَلٍ مُسَمًّى، فَلْتَصْبِرْ وَلْتَحْتَسِبْ ‏”‏‏.‏ فَأَرْسَلَتْ إِلَيْهِ تُقْسِمُ عَلَيْهِ لَيَأْتِيَنَّهَا، فَقَامَ وَمَعَهُ سَعْدُ بْنُ عُبَادَةَ وَمُعَاذُ بْنُ جَبَلٍ وَأُبَىُّ بْنُ كَعْبٍ وَزَيْدُ بْنُ ثَابِتٍ وَرِجَالٌ، فَرُفِعَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الصَّبِيُّ وَنَفْسُهُ تَتَقَعْقَعُ ـ قَالَ حَسِبْتُهُ أَنَّهُ قَالَ ـ كَأَنَّهَا شَنٌّ‏.‏ فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ‏.‏ فَقَالَ سَعْدٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا هَذَا فَقَالَ ‏”‏ هَذِهِ رَحْمَةٌ جَعَلَهَا اللَّهُ فِي قُلُوبِ عِبَادِهِ، وَإِنَّمَا يَرْحَمُ اللَّهُ مِنْ عِبَادِهِ الرُّحَمَاءَ ‏”‏‏.‏

উসামাহ ইব্‌নু যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জনৈকা কন্যা (যায়নাব) তাঁর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট লোক পাঠালেন যে, আমার এক পুত্র মরণাপন্ন অবস্থায় রয়েছে, তাই আপনি আমাদের নিকট আসুন। তিনি বলে পাঠালেন, (তাঁকে) সালাম দিবে এবং বলবেঃ আল্লাহরই অধিকারে যা কিছু তিনি নিয়ে যান আর তাঁরই অধিকারে যা কিছু তিনি দান করেন। তাঁর নিকট সকল কিছুরই একটি নির্দিষ্ট সময় আছে। কাজেই সে যেন ধৈর্য ধারণ করে এবং সওয়াবের অপেক্ষায় থাকে। তখন তিনি তাঁর কাছে কসম দিয়ে পাঠালেন, তিনি যেন অবশ্যই আগমন করেন। তখন তিনি দন্ডায়মান হলেন এবং তাঁর সাথে ছিলেন সা’দ ইব্‌নু উবাদাহ, মু‘আয ইব্‌নু জাবাল, উবাই ইব্‌নু কা’ব, যাইদ ইব্‌নু সাবিত (রাঃ) এবং আরও কয়েকজন। তখন শিশুটিকে রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে তুলে দেয়া হল। তখন সে ছটফট করছিল। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা ধারনা যে, তিনি এ কথা বলেছিলেন, যেন তার শ্বাস মশকের মত (শব্দ হচ্ছিল)। আর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দু’ চক্ষু বেয়ে অশ্রু ঝরছিল। সা’দ (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রসূল! একি? তিনি বললেনঃ এ হচ্ছে রহমত, যা আল্লাহ্‌ তাঁর বান্দার অন্তরে গচ্ছিত রেখেছেন। আর আল্লাহ্‌ তো তাঁর দয়ালু বান্দাদের প্রতিই দয়া করেন।

১২৮৫
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُحَمَّدٍ، حَدَّثَنَا أَبُو عَامِرٍ، حَدَّثَنَا فُلَيْحُ بْنُ سُلَيْمَانَ، عَنْ هِلاَلِ بْنِ عَلِيٍّ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ شَهِدْنَا بِنْتًا لِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ وَرَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم جَالِسٌ عَلَى الْقَبْرِ ـ قَالَ فَرَأَيْتُ عَيْنَيْهِ تَدْمَعَانِ قَالَ ـ فَقَالَ ‏”‏ هَلْ مِنْكُمْ رَجُلٌ لَمْ يُقَارِفِ اللَّيْلَةَ ‏”‏‏.‏ فَقَالَ أَبُو طَلْحَةَ أَنَا‏.‏ قَالَ ‏”‏ فَانْزِلْ ‏”‏‏.‏ قَالَ فَنَزَلَ فِي قَبْرِهَا‏.‏

আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এক কন্যা [উম্মু কুলসুম (রাঃ)]-এর জানাযায় উপস্থিত হলাম। আল্লাহর রসূল কবরের পার্শ্বে উপবিষ্ট ছিলেন। আনাস (রাঃ) বলেন, তখন আমি তাঁর চক্ষু হতে অশ্রু ঝরতে দেখলাম। বর্ণনাকারী বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মধ্যে কি এমন কেউ আছে, যে আজ রাতে স্ত্রী মিলন করোনি? আবূ তালহা (রাঃ) বললেন, আমি। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তা হলে তুমি (কবরে) অবতরণ কর। রাবী বলেন, তখন তিনি আবূ তালহা (রাঃ) তাঁর কবরে অবতরণ করলেন।

১২৮৬
حَدَّثَنَا عَبْدَانُ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ، أَخْبَرَنَا ابْنُ جُرَيْجٍ، قَالَ أَخْبَرَنِي عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي مُلَيْكَةَ، قَالَ تُوُفِّيَتِ ابْنَةٌ لِعُثْمَانَ ـ رضى الله عنه ـ بِمَكَّةَ وَجِئْنَا لِنَشْهَدَهَا، وَحَضَرَهَا ابْنُ عُمَرَ وَابْنُ عَبَّاسٍ ـ رضى الله عنهم ـ وَإِنِّي لَجَالِسٌ بَيْنَهُمَا ـ أَوْ قَالَ جَلَسْتُ إِلَى أَحَدِهِمَا‏.‏ ثُمَّ جَاءَ الآخَرُ، فَجَلَسَ إِلَى جَنْبِي فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَمَرَ ـ رضى الله عنهما ـ لِعَمْرِو بْنِ عُثْمَانَ أَلاَ تَنْهَى عَنِ الْبُكَاءِ، فَإِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏”‏ إِنَّ الْمَيِّتَ لَيُعَذَّبُ بِبُكَاءِ أَهْلِهِ عَلَيْهِ ‏”‏‏.‏ فَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ ـ رضى الله عنهما ـ قَدْ كَانَ عُمَرُ ـ رضى الله عنه ـ يَقُولُ بَعْضَ ذَلِكَ، ثُمَّ حَدَّثَ قَالَ صَدَرْتُ مَعَ عُمَرَ ـ رضى الله عنه ـ مِنْ مَكَّةَ حَتَّى إِذَا كُنَّا بِالْبَيْدَاءِ، إِذَا هُوَ بِرَكْبٍ تَحْتَ ظِلِّ سَمُرَةٍ فَقَالَ اذْهَبْ، فَانْظُرْ مَنْ هَؤُلاَءِ الرَّكْبُ قَالَ فَنَظَرْتُ فَإِذَا صُهَيْبٌ، فَأَخْبَرْتُهُ فَقَالَ ادْعُهُ لِي‏.‏ فَرَجَعْتُ إِلَى صُهَيْبٍ فَقُلْتُ ارْتَحِلْ فَالْحَقْ أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ‏.‏ فَلَمَّا أُصِيبَ عُمَرُ دَخَلَ صُهَيْبٌ يَبْكِي يَقُولُ وَاأَخَاهُ، وَاصَاحِبَاهُ‏.‏ فَقَالَ عُمَرُ ـ رضى الله عنه ـ يَا صُهَيْبُ أَتَبْكِي عَلَىَّ وَقَدْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ إِنَّ الْمَيِّتَ يُعَذَّبُ بِبَعْضِ بُكَاءِ أَهْلِهِ عَلَيْهِ ‏”‏‏.‏ قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ ـ رضى الله عنهما فَلَمَّا مَاتَ عُمَرُ ـ رضى الله عنه ـ ذَكَرْتُ ذَلِكَ لِعَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ فَقَالَتْ رَحِمَ اللَّهُ عُمَرَ، وَاللَّهِ مَا حَدَّثَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّ اللَّهَ لَيُعَذِّبُ الْمُؤْمِنَ بِبُكَاءِ أَهْلِهِ عَلَيْهِ‏.‏ وَلَكِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏”‏ إِنَّ اللَّهَ لَيَزِيدُ الْكَافِرَ عَذَابًا بِبُكَاءِ أَهْلِهِ عَلَيْهِ ‏”‏‏.‏ وَقَالَتْ حَسْبُكُمُ الْقُرْآنُ ‏{‏وَلاَ تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَى‏}‏‏.‏ قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ ـ رضى الله عنهما ـ عِنْدَ ذَلِكَ وَاللَّهُ هُوَ أَضْحَكَ وَأَبْكَى‏.‏ قَالَ ابْنُ أَبِي مُلَيْكَةَ وَاللَّهِ مَا قَالَ ابْنُ عُمَرَ ـ رضى الله عنهما ـ شَيْئًا‏.‏

‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু ‘উবাইদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু আবূ মুলাইকা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, মক্কায় উসমান (রাঃ)-এর জনৈকা কন্যার মৃত্যু হল। আমরা সেখানে (জানাযায়) অংশগ্রহন করার জন্য গেলাম। ইব্‌নু ‘উমর এবং ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) -ও সেখানে উপস্থিত হলেন। আমি তাঁদের দু’জনের মধ্যে উপবিষ্ট ছিলাম, অথবা তিনি বলেছেন, আমি তাঁদের একজনের পার্শ্বে গিয়ে উপবেশন করলাম, পরে অন্যজন আগমন করে আমার পার্শ্বে উপবেশন করলেন। (ক্রন্দনের শব্দ শুনে) ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) ‘আমর ইব্‌নু ‘উসমানকে বললেন, তুমি কেন ক্রন্দন করতে নিষেধ করছ না? কেননা, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘মৃত ব্যক্তিকে তার পরিজনদের কান্নার কারণে ‘আযাব দেয়া হয়।’

১২৮৭
See previous Hadith

ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তখন ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, ‘উমর (রাঃ) -ও এমন কিছু বলতেন। অতঃপর ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করলেন, ‘উমর (রাঃ)-এর সাথে মক্কা থেকে প্রত্যাবর্তন করছিলাম। আমরা বাইদা (নামক স্থানে) উপস্থিত হলে ‘উমর (রাঃ) বাবলা বৃক্ষের ছায়ায় একটি কাফিলা দর্শন করতঃ আমাকে বললেন, গিয়ে দেখো এ কাফিলা কার? ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমি গিয়ে দেখলাম সেখানে সুহাইব (রাঃ) আছেন। আমি তাঁকে তা অবহিত করলাম। তিনি বললেন, তাঁকে আমার কাছে ডেকে নিয়ে এসো। আমি সুহাইব (রাঃ)-এর নিকট আবার গেলাম এবং বললাম, চলুন, আমীরুল মু’মিনীনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করুন। অতঃপর যখন ‘উমর (রাঃ) (ঘাতকের আঘাতে) আহত হলেন, তখন সুহাইব (রাঃ) তাঁর কাছে আগমন করতঃ এ বলে ক্রন্দন করতে লাগলেন, হায় আমার ভাই! হায় আমার বন্ধু! এতে ‘উমর (রাঃ) তাঁকে বললেন, তুমি আমার জন্য ক্রন্দন করছো? অথচ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মৃত ব্যক্তির জন্য তার আপন জনের কোন কোন কান্নার কারণে অবশ্যই তাকে ‘আযাব দেয়া হয়।

১২৮৮
See previous Hadith

ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, ‘উমর (রাঃ)-এর মৃত্যুর পর ‘আয়িশা (রাঃ)-এর নিকট আমি ‘উমর (রাঃ)-এর এ উক্তি উল্লেখ করলাম। তিনি বললেন, আল্লাহ্‌ ‘উমর (রাঃ)-কে রহম করুন। আল্লাহর কসম! আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ কথা বলেননি যে, আল্লাহ্‌ ঈমানদার (মৃত) ব্যক্তিকে তার পরিজনের কান্নার কারণে আযাব দিবেন। তবে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ তা‘আলা কাফিরদের আযাব বাড়িয়ে দেন তার পরিজনের কান্নার কারণে। অতঃপর ‘আয়িশা (রাঃ) বললেন, (এ ব্যাপারে) আল্লাহর কুরআনই তোমাদের জন্য যথেষ্ট। (ইরশাদ হয়েছে) : ‘বোঝা বহনকারী কোন ব্যক্তি অপরের বোঝা বহন করবে না’- (আন‘আম ১৬৪)। তখন ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, আল্লাহ্‌ই (বান্দাকে) হাসান এবং কাঁদান করান। রাবী ইব্‌নু আবূ মুলাইকা (রহঃ) বলেন, আল্লাহর কসম! (এ কথা শুনে) ইব্‌নু ‘উমর কোন মন্তব্য করলেন না।

১২৮৯
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يُوسُفَ، أَخْبَرَنَا مَالِكٌ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي بَكْرٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَمْرَةَ بِنْتِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، أَنَّهَا أَخْبَرَتْهُ أَنَّهَا، سَمِعَتْ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ زَوْجَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَتْ إِنَّمَا مَرَّ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَلَى يَهُودِيَّةٍ يَبْكِي عَلَيْهَا أَهْلُهَا فَقَالَ ‏ “‏ إِنَّهُمْ لَيَبْكُونَ عَلَيْهَا، وَإِنَّهَا لَتُعَذَّبُ فِي قَبْرِهَا ‏”‏‏.‏

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহধর্মিণী ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ইয়াহুদী স্ত্রীলোকের (কবরের) পার্শ্ব দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, যার পরিবারের লোকেরা তার জন্য ক্রন্দন করছিল। তখন তিনি বললেনঃ তারা তো তার জন্য ক্রন্দন করছে। অথচ তাকে কবরে ‘আযাব দেয়া হচ্ছে।

১২৯০
حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ خَلِيلٍ، حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ مُسْهِرٍ، حَدَّثَنَا أَبُو إِسْحَاقَ ـ وَهْوَ الشَّيْبَانِيُّ ـ عَنْ أَبِي بُرْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ لَمَّا أُصِيبَ عُمَرُ ـ رضى الله عنه ـ جَعَلَ صُهَيْبٌ يَقُولُ وَاأَخَاهُ‏.‏ فَقَالَ عُمَرُ أَمَا عَلِمْتَ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ إِنَّ الْمَيِّتَ لَيُعَذَّبُ بِبُكَاءِ الْحَىِّ ‏”‏‏.‏

আবূ বুরদার পিতা (আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যখন ‘উমর (রাঃ) আহত হলেন, তখন সুহাইব (রাঃ) হায়! আমার ভাই! বলতে লাগলেন। ‘উমর (রাঃ) বললেন, তুমি কি অবহিত নও যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জীবিতদের কান্নার কারণে অবশ্যই মৃতদের ‘আযাব দেয়া হয়?

২৩/৩৩. অধ্যায়ঃ
মৃতের জন্য বিলাপ করা মাকরূহ। [১৪]

উমর (রাঃ) বলেন, আবূ সুলাইমান (খালিদ ইব্‌ন ওয়ালীদ (রাঃ)-এর জন্য) তাঁর (পরিবার পরিজনকে) কাঁদতে দাও । যতক্ষণ نقع (নাক্’) কিংবা لقلقة (লাকলাকা) না হয় । নাক্’ হল, মাথায় মাটি নিক্ষেপ, আর ‘লাকলাকা’ হল, চিৎকার ।

[১৪] মৃত ব্যক্তির জন্য আত্মীয়দের যা করণীয়ঃ

(১) ধৈর্য ধারণ করা ও তাকদীরের উপর সন্তুষ্ট থাকা ও ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন’ বলা। (সূরা আল-বাক্বারাহ ১৫৫-১৫৭)

(২) তার জন্য দু‘আ করা ও তার সামনে উত্তম কথা বলা।

(৩) মৃত্যু সংবাদ দিয়ে মানুষকে এ কথা বলা যে, তোমরা মৃত ব্যক্তির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর।

(৪) যথাশীঘ্র তার জানাযা ও দাফনের ব্যবস্থা করা।

(৫) মৃতের ঋণ থাকলে তা পরিশোধের ব্যবস্থা করা।

মৃত্যুর পর মানুষ যে সব কাজের জন্য উপকৃত হবেঃ মানুষ মারা গেলে তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায় তিনটি আমল ব্যতীতঃ (১) সে নিজে বা তার পক্ষ থেকে সাদাকায়ে জারিয়া। (২) ইল্‌ম যার দ্বারা উপকার সাধিত হয়। (৩) সৎ সন্তান যে তার জন্য দু‘আ করতে থাকে। (মুসলিম)

মৃতের জন্য তার কবরে একাকীভাবে দু’হাত তুলে দু‘আ করা জায়িয। [ ‘আয়িশা (রাঃ)-এর হাদীস]

মসজিদ, মাদ্‌রাসাহ, মুসাফিরখানা প্রতিষ্ঠা, রাস্তাঘাট, সেতু নির্মাণ, কূপ, খাল, বিল, নহর খনন, কুরআন-হাদীসের কিতাবাদি ক্রয় করে প্রদান এসব কাজ সদকায়ে জারিয়ার অন্তর্ভুক্ত।

১২৯১
حَدَّثَنَا أَبُو نُعَيْمٍ، حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ عُبَيْدٍ، عَنْ عَلِيِّ بْنِ رَبِيعَةَ، عَنِ الْمُغِيرَةِ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏”‏ إِنَّ كَذِبًا عَلَىَّ لَيْسَ كَكَذِبٍ عَلَى أَحَدٍ، مَنْ كَذَبَ عَلَىَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ ‏”‏‏.‏ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏”‏ مَنْ نِيحَ عَلَيْهِ يُعَذَّبُ بِمَا نِيحَ عَلَيْهِ ‏”‏‏.‏

মুগীরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, আমার প্রতি মিথ্যারোপ করা অন্য কারো প্রতি মিথ্যারোপ করার মত নয়। যে ব্যক্তি আমার প্রতি মিথ্যারোপ করে সে যেন অবশ্যই তার ঠিকানা জাহান্নামে করে নেয়। [মুগীরা (রাঃ) আরও বলেছেন,] আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আরও বলতে শুনেছি, যে (মৃত) ব্যক্তির জন্য বিলাপ করা হয়, তাকে বিলাপকৃত বিষয়ের উপর ‘আযাব দেয়া হবে।

১২৯২
حَدَّثَنَا عَبْدَانُ، قَالَ أَخْبَرَنِي أَبِي، عَنْ شُعْبَةَ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنْ أَبِيهِ ـ رضى الله عنهما ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏”‏ الْمَيِّتُ يُعَذَّبُ فِي قَبْرِهِ بِمَا نِيحَ عَلَيْهِ ‏”‏‏.‏ تَابَعَهُ عَبْدُ الأَعْلَى حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ زُرَيْعٍ حَدَّثَنَا سَعِيدٌ حَدَّثَنَا قَتَادَةُ‏.‏ وَقَالَ آدَمُ عَنْ شُعْبَةَ ‏”‏ الْمَيِّتُ يُعَذَّبُ بِبُكَاءِ الْحَىِّ عَلَيْهِ ‏”‏‏.‏

‘উমর (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, মৃত ব্যক্তিকে তার জন্য কৃত বিলাপের বিষয়ের উপর কবরে শাস্তি দেয়া হয়। আবদুল আ‘লা (রহঃ) ……কাতাদা (রহঃ) হতে বর্ণনায় আবদান (রহঃ)-এর অনুসরণ করেছেন। আদম (রহঃ) শু’বাহ্‌ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, মৃত ব্যক্তিকে তার জন্য জীবিতদের কান্নার কারণে ‘আযাব দেয়া হয়।

২৩/৩৪. অধ্যায়ঃ
২৩/৩৪. অধ্যায়ঃ

১২৯৩
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، حَدَّثَنَا ابْنُ الْمُنْكَدِرِ، قَالَ سَمِعْتُ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ ـ رضى الله عنهما ـ قَالَ جِيءَ بِأَبِي يَوْمَ أُحُدٍ، قَدْ مُثِّلَ بِهِ حَتَّى وُضِعَ بَيْنَ يَدَىْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَقَدْ سُجِّيَ ثَوْبًا فَذَهَبْتُ أُرِيدُ أَنْ أَكْشِفَ عَنْهُ فَنَهَانِي قَوْمِي، ثُمَّ ذَهَبْتُ أَكْشِفُ عَنْهُ فَنَهَانِي قَوْمِي، فَأَمَرَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَرُفِعَ فَسَمِعَ صَوْتَ صَائِحَةٍ فَقَالَ ‏”‏ مَنْ هَذِهِ ‏”‏‏.‏ فَقَالُوا ابْنَةُ عَمْرٍو أَوْ أُخْتُ عَمْرٍو‏.‏ قَالَ ‏”‏ فَلِمَ تَبْكِي أَوْ لاَ تَبْكِي فَمَا زَالَتِ الْمَلاَئِكَةُ تُظِلُّهُ بِأَجْنِحَتِهَا حَتَّى رُفِعَ ‏”‏‏.‏

জাবির ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, উহুদের দিন আমার পিতাকে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কর্তিত অবস্থায় নিয়ে এসে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে রাখা হল। তখন একখানি বস্ত্র দ্বারা তাঁকে আবৃত রাখা হয়েছিল। আমি তাঁর উপর হতে আবরণ উন্মোচন করেতে আসলে আমার কওমের লোকেরা আমাকে নিষেধ করল। পুনরায় আমি আবরণ উন্মুক্ত করতে থাকলে আমার কওমের লোকেরা (আবার) আমাকে নিষেধ করল। পরে আল্লাহর রসূল(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নির্দেশে তাঁকে উঠিয়ে নেয়া হল। তখন তিনি (রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ) এক ক্রন্দনকারিণীর শব্দ শুনে জিজ্ঞেস করলেন, এ কে? লোকেরা বলল, ‘আমরের মেয়ে অথবা (তারা বলল,) ‘আমরের বোন। তিনি বললেন, ক্রন্দন করছো কেন? অথবা বললেন, ক্রন্দন করো না। কেননা, তাঁকে উঠিয়ে নেয়া পর্যন্ত ফেরেশতাগণ তাঁদের পক্ষ বিস্তার করে তাঁকে ছায়া দিয়ে রেখেছিলেন।

২৩/৩৫. অধ্যায়ঃ
যারা জামার বুক ছিঁড়ে ফেলে তারা আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।

১২৯৪
حَدَّثَنَا أَبُو نُعَيْمٍ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، حَدَّثَنَا زُبَيْدٌ الْيَامِيُّ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ مَسْرُوقٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ لَيْسَ مِنَّا مَنْ لَطَمَ الْخُدُودَ، وَشَقَّ الْجُيُوبَ، وَدَعَا بِدَعْوَى الْجَاهِلِيَّةِ ‏”‏‏.‏

‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু মাস‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যারা (মৃত ব্যক্তির জন্য শোক প্রকাশে) গন্ডে চপেটাঘাত করে, জামার বক্ষ ছিন্ন করে বং জাহিলী যুগের মত চিৎকার দেয়, তারা আমাদের দলভুক্ত নয়।

২৩/৩৬. অধ্যায়ঃ
সা‘দ ইব্‌নু খাওলা (রাঃ) –এর প্রতি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর দুঃখ প্রকাশ।

১২৯৫
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يُوسُفَ، أَخْبَرَنَا مَالِكٌ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ عَامِرِ بْنِ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ، عَنْ أَبِيهِ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَعُودُنِي عَامَ حَجَّةِ الْوَدَاعِ مِنْ وَجَعٍ اشْتَدَّ بِي فَقُلْتُ إِنِّي قَدْ بَلَغَ بِي مِنَ الْوَجَعِ وَأَنَا ذُو مَالٍ، وَلاَ يَرِثُنِي إِلاَّ ابْنَةٌ، أَفَأَتَصَدَّقُ بِثُلُثَىْ مَالِي قَالَ ‏”‏ لاَ ‏”‏‏.‏ فَقُلْتُ بِالشَّطْرِ فَقَالَ ‏”‏ لاَ ‏”‏ ثُمَّ قَالَ ‏”‏ الثُّلُثُ وَالثُّلْثُ كَبِيرٌ ـ أَوْ كَثِيرٌ ـ إِنَّكَ أَنْ تَذَرَ وَرَثَتَكَ أَغْنِيَاءَ خَيْرٌ مِنْ أَنْ تَذَرَهُمْ عَالَةً يَتَكَفَّفُونَ النَّاسَ، وَإِنَّكَ لَنْ تُنْفِقَ نَفَقَةً تَبْتَغِي بِهَا وَجْهَ اللَّهِ إِلاَّ أُجِرْتَ بِهَا، حَتَّى مَا تَجْعَلُ فِي فِي امْرَأَتِكَ ‏”‏‏.‏ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ، أُخَلَّفُ بَعْدَ أَصْحَابِي قَالَ ‏”‏ إِنَّكَ لَنْ تُخَلَّفَ فَتَعْمَلَ عَمَلاً صَالِحًا إِلاَّ ازْدَدْتَ بِهِ دَرَجَةً وَرِفْعَةً، ثُمَّ لَعَلَّكَ أَنْ تُخَلَّفَ حَتَّى يَنْتَفِعَ بِكَ أَقْوَامٌ وَيُضَرَّ بِكَ آخَرُونَ، اللَّهُمَّ أَمْضِ لأَصْحَابِي هِجْرَتَهُمْ، وَلاَ تَرُدَّهُمْ عَلَى أَعْقَابِهِمْ، لَكِنِ الْبَائِسُ سَعْدُ ابْنُ خَوْلَةَ، يَرْثِي لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنْ مَاتَ بِمَكَّةَ ‏”‏‏.‏

সা‘দ ইব্‌নু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, বিদায় হাজ্জে একটি কঠিন রোগে আমি আক্রান্ত হলে, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার খোঁজ খবর নেয়ার জন্য আসতেন। একদা আমি তাঁর কাছে নিবেদন করলাম, আমার রোগ চরমে পৌঁছেছে আর আমি সম্পদশালী। একমাত্র কন্যা ছাড়া কেউ আমার উত্তরাধিকারী নেই। তবে আমি কি আমার সম্পদের দু’ তৃতীয়াংশ সদকা করতে পারি? তিনি বললেন, না। আমি আবার নিবেদন করলাম, তাহলে অর্ধেক। তিনি বললেন, না। অতঃপর তিনি বললেন, এক তৃতীয়াংশ আর এক তৃতীয়াংশও বিরাট পরিমাণ অথবা অধিক। তোমরা ওয়ারিসদের অভাবমুক্ত রেখে যাওয়া, তাদের খালি হাতে পরমুখাপেক্ষী অবস্থায় রেখে যাওয়ার চেয়ে উত্তম। [১৫] আর আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য তুমি যে কোন ব্যয় করো না কেন, তোমাকে তার বিনিময়ে প্রদান করা হবে। এমনকি যা তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে দিবে (তারও প্রতিদান পাবে)। আমি নিবেদন করলাম, হে আল্লাহর রসূল! (আফসোস) আমি আমার সাথীদের হতে পিছনে থেকে যাব? তিনি বললেন, তুমি যদি পিছনে থেকে নেক ‘আমল করতে থাক, তাহলে তাতে তোমার মর্যাদা ও উন্নতি বৃদ্ধিই পেতে থাকবে। তাছাড়া, সম্ভবত, তুমি পিছনে (থেকে যাবে)। যার ফলে তোমার দ্বারা অনেক কওম উপকার লাভ করবে। আর অন্যরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। হে আল্লাহ্‌! আমার সাহাবীগনের হিজরত বলবৎ রাখুন। পশ্চাতে ফিরিয়ে দিবেন না। কিন্তু আফসোস! সা‘দ ইব্‌নু খাওলার জন্য (এ বলে) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর জন্য শোক প্রকাশ করছিলেন, যেহেতু মক্কায় তাঁর মৃত্যু হয়েছিল।

[১৫] বর্তমান সমাজে কিছু অতি পরহেজগার লোক দেখা যায় যারা নিজেদের ওয়ারিসদের বঞ্চিত করে মালের সিংহভাগ দান করে থাকেন, কেউ বা মেয়েদের বঞ্চিত করেন আবার কেউ বা সমাবেশ করে লিখে দিয়ে যান তাদেরকে এ হাদীস থেকে শিক্ষা নেয়া দরকার।

২৩/৩৭. অধ্যায়ঃ
বিপদে মাথা মুন্ডানো নিষেধ।

১২৯৬
وَقَالَ الْحَكَمُ بْنُ مُوسَى حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ حَمْزَةَ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ جَابِرٍ، أَنَّ الْقَاسِمَ بْنَ مُخَيْمِرَةَ، حَدَّثَهُ قَالَ حَدَّثَنِي أَبُو بُرْدَةَ بْنُ أَبِي مُوسَى ـ رضى الله عنه ـ قَالَ وَجِعَ أَبُو مُوسَى وَجَعًا فَغُشِيَ عَلَيْهِ، وَرَأْسُهُ فِي حَجْرِ امْرَأَةٍ مِنْ أَهْلِهِ، فَلَمْ يَسْتَطِعْ أَنْ يَرُدَّ عَلَيْهَا شَيْئًا، فَلَمَّا أَفَاقَ قَالَ أَنَا بَرِيءٌ مِمَّنْ بَرِئَ مِنْهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم، إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بَرِئَ مِنَ الصَّالِقَةِ وَالْحَالِقَةِ وَالشَّاقَّةِ‏.‏

আবূ বুরদা ইব্‌নু আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ) কঠিন রোগে আক্রান্ত হলেন। এমনকি তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়লেন। তখন তাঁর মাথা তাঁর পরিবারভুক্ত কোন এক মহিলার কোলে ছিল। তিনি তাকে কোন জবাব দিতে পারছিলেন না। জ্ঞান ফিরে পেলে তিনি বললেন, সে সব লোকের সঙ্গে আমি সম্পর্ক রাখিনা যাদের সাথে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সে সব নারীর সাথে সম্পর্কচ্ছেদের কথা প্রকাশ করেছেন- যারা চিৎকার করে ক্রন্দন করে, যারা মস্তক মুন্ডন করে এবং যারা জামা কাপড় ছিন্ন করে।

২৩/৩৮.অধ্যায়ঃ
যারা গাল চাপড়ায় তারা আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।

১২৯৭
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مُرَّةَ، عَنْ مَسْرُوقٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ ـ رضى الله عنه ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ لَيْسَ مِنَّا مَنْ ضَرَبَ الْخُدُودَ، وَشَقَّ الْجُيُوبَ، وَدَعَا بِدَعْوَى الْجَاهِلِيَّةِ ‏”‏‏.‏

‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নূ মাস’উদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ যারা শোকে গণ্ডে চপেটাঘাত করে, জামার বক্ষ ছিন্ন করে ও জাহিলী যুগের মত চিৎকার দেয়, তারা আমাদের দলভুক্ত নয়।

২৩/৩৯. অধ্যায়ঃ
বিপদের সময় হায়, ধ্বংস বলা ও জাহিলী যুগের মত চিৎকার করা নিষেধ।

১২৯৮
حَدَّثَنَا عُمَرُ بْنُ حَفْصٍ، حَدَّثَنَا أَبِي، حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مُرَّةَ، عَنْ مَسْرُوقٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ لَيْسَ مِنَّا مَنْ ضَرَبَ الْخُدُودَ، وَشَقَّ الْجُيُوبَ، وَدَعَا بِدَعْوَى الْجَاهِلِيَّةِ ‏”‏‏.‏

‘আব্দুল্লাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেছেনঃ যারা শোকে গণ্ডে চপেটাঘাত করে, জামার বক্ষ ছিন্ন করে ও জাহিলী যুগের মত চিৎকার দেয়, তারা আমাদের দলভুক্ত নয়।

২৩/৪০.অধ্যায়ঃ
যে ব্যক্তি বিপদের সময় এমন ভাবে বসে পড়ে যে, তার মধ্যে দুঃখবোধের পরিচয় পাওয়া যায়।

১২৯৯
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَهَّابِ، قَالَ سَمِعْتُ يَحْيَى، قَالَ أَخْبَرَتْنِي عَمْرَةُ، قَالَتْ سَمِعْتُ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ قَالَتْ لَمَّا جَاءَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَتْلُ ابْنِ حَارِثَةَ وَجَعْفَرٍ وَابْنِ رَوَاحَةَ جَلَسَ يُعْرَفُ فِيهِ الْحُزْنُ، وَأَنَا أَنْظُرُ مِنْ صَائِرِ الْبَابِ ـ شَقِّ الْبَابِ ـ فَأَتَاهُ رَجُلٌ، فَقَالَ إِنَّ نِسَاءَ جَعْفَرٍ، وَذَكَرَ بُكَاءَهُنَّ، فَأَمَرَهُ أَنْ يَنْهَاهُنَّ، فَذَهَبَ ثُمَّ أَتَاهُ الثَّانِيَةَ، لَمْ يُطِعْنَهُ فَقَالَ انْهَهُنَّ‏.‏ فَأَتَاهُ الثَّالِثَةَ قَالَ وَاللَّهِ غَلَبْنَنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ فَزَعَمَتْ أَنَّهُ قَالَ ‏ “‏ فَاحْثُ فِي أَفْوَاهِهِنَّ التُّرَابَ ‏”‏‏.‏ فَقُلْتُ أَرْغَمَ اللَّهُ أَنْفَكَ، لَمْ تَفْعَلْ مَا أَمَرَكَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَلَمْ تَتْرُكْ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مِنَ الْعَنَاءِ‏.‏

‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যখন (মুতা-র যুদ্ধ ক্ষেত্র হতে) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমতে (যায়দ) ইব্‌নূ হারিসা, জা’ফর ও ইব্‌নু রাওয়াহা (রাঃ)-এর শাহাদাতের খবর পৌঁছল, তখন তিনি (এমনভাবে) বসে পড়লেন যে, তাঁর মধ্যে দুঃখের চিহ্ন ফুটে উঠেছিল। আমি [‘আয়িশা (রাঃ)] দরজার ফাঁক দিয়ে তা প্রত্যক্ষ করছিলাম। এক ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত হয়ে জা’ফর (রাঃ)-এর পরিবারের মহিলাদের কান্নাকাটির কথা উল্লেখ করলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ ব্যক্তিকে নির্দেশ দিলেন, তিনি যেন তাদেরকে (কান্নাকাটি করতে) নিষেধ করেন, লোকটি চলে গেল এবং দ্বিতীয়বার এসে (বলল) তারা তার কথা মানেনি। তিনি ইরশাদ করলেনঃ তাঁদেরকে নিষেধ করো। ঐ ব্যক্তি তৃতীয়বার এসে বললেন, আল্লাহর কসম! সে আল্লাহর রাসূল! তাঁরা আমাদের হার মানিয়েছে। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমার মনে হয়, তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিরক্তির সাথে বললেনঃ তাহলে তাদের মুখে মাটি নিক্ষেপ করো। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, আল্লাহ্‌ তোমার নাকে ধূলি মিলিয়ে দেন। [১] তুমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নির্দেশ পালন করতে পারনি। অথচ তুমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বিরক্ত করতেও দ্বিধা করোনি।

[১] أَرغَمَ اللهُ : আরবী ব্যবহারে বাক্যটি তোমাকে অপছন্দনীয় বিষয়ের সম্মুখীন করুন ও তোমাকে লজ্জিত, অপমানিত করুন, অর্থে ব্যবহৃত।

১৩০০
حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ عَلِيٍّ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ فُضَيْلٍ، حَدَّثَنَا عَاصِمٌ الأَحْوَلُ، عَنْ أَنَسٍ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ قَنَتَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم شَهْرًا حِينَ قُتِلَ الْقُرَّاءُ، فَمَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم حَزِنَ حُزْنًا قَطُّ أَشَدَّ مِنْهُ‏.‏

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, (বীর-ই মাউনার ঘটনায়) ক্বারি (সাহাবীগনের) শাহাদাতের পর আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (ফজরের সালাতে) এক মাস যাবত কুনুত-ই নাযিলা [১] পাঠ করেছিলেন। (বর্ণনাকারী বলেন) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি আর কখনো এর চেয়ে অধিক শোকাভিভূত হতে দেখিনি।

[২] কুনূত-ই-নাযিলাঃ মুসলমানদের জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় সার্বিক বিপদকালে ফজরের সালাতে দ্বিতীয় রাকা’আতের রুকূ’র পর দাঁড়িয়ে ইমাম সাহেব উচ্চস্বরে বিশেষ দু’আ পড়েন, (মুক্তাদীগণ আমীন, আমীন, বলতে থাকেন) এ দু’আকে কুনূত-ই-নাযিলা বলা হয়।

২৩/৪১. অধ্যায়ঃ
বিপদের সময় দুঃখ প্রকাশ না করা।

মুহাম্মদ ইব্‌নু কা’ব (রহঃ) বলেন, অস্থিরতা হচ্ছে মন্দ বাক্য উচ্চারন করা, কুধারনা পোষণ করা। ই’য়াকূব আলাইহিস্‌ সালাম বলেছেনঃ “আমি আমার অসহনীয় বেদনা ও আমার দুঃখ শুধু আল্লাহর নিকট নিবেদন করছি।” (সূরা ইউসুফ (১২) : ৮৬)

১৩০১
حَدَّثَنَا بِشْرُ بْنُ الْحَكَمِ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ، أَخْبَرَنَا إِسْحَاقُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي طَلْحَةَ، أَنَّهُ سَمِعَ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ ـ رضى الله عنه ـ يَقُولُ اشْتَكَى ابْنٌ لأَبِي طَلْحَةَ ـ قَالَ ـ فَمَاتَ وَأَبُو طَلْحَةَ خَارِجٌ، فَلَمَّا رَأَتِ امْرَأَتُهُ أَنَّهُ قَدْ مَاتَ هَيَّأَتْ شَيْئًا وَنَحَّتْهُ فِي جَانِبِ الْبَيْتِ، فَلَمَّا جَاءَ أَبُو طَلْحَةَ قَالَ كَيْفَ الْغُلاَمُ قَالَتْ قَدْ هَدَأَتْ نَفْسُهُ، وَأَرْجُو أَنْ يَكُونَ قَدِ اسْتَرَاحَ‏.‏ وَظَنَّ أَبُو طَلْحَةَ أَنَّهَا صَادِقَةٌ، قَالَ فَبَاتَ، فَلَمَّا أَصْبَحَ اغْتَسَلَ، فَلَمَّا أَرَادَ أَنْ يَخْرُجَ، أَعْلَمَتْهُ أَنَّهُ قَدْ مَاتَ، فَصَلَّى مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ثُمَّ أَخْبَرَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم بِمَا كَانَ مِنْهُمَا، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ لَعَلَّ اللَّهَ أَنْ يُبَارِكَ لَكُمَا فِي لَيْلَتِكُمَا ‏”‏‏.‏ قَالَ سُفْيَانُ فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الأَنْصَارِ فَرَأَيْتُ لَهُمَا تِسْعَةَ أَوْلاَدٍ كُلُّهُمْ قَدْ قَرَأَ الْقُرْآنَ‏.‏

আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবূ তালহা (রাঃ)-এর এক পুত্র অসুস্থ হয়ে পড়ল। বর্ণনাকারী বলেন, তার মৃত্যু হলো। তখন আবূ তালহা (রাঃ) বাড়ির বাইরে ছিলেন। তাঁর স্ত্রী যখন দেখলেন যে, ছেলেটি মারা গেছে, তখন তিনি কিছু প্রস্তুতি নিলেন [১] এবং ছেলেটিকে ঘরের এক কোণে রেখে দিলেন। আবূ তালহা (রাঃ) বাড়িতে এসে জিজ্ঞেস করলেন, ছেলের অবস্থা কেমন? স্ত্রী জওয়াব দিলেন, তার আত্মা শান্ত হয়েছে এবং আশা করি সে এখন আরাম পাচ্ছে। আবূ তালহা ভাবলেন তাঁর স্ত্রী সত্য বলেছেন। রাবী বলেন, তিনি রাত যাপন করলেন এবং ভোরে গোসল করলেন। তিনি বাইরে যেতে উদ্যত হলে স্ত্রী তাঁকে জানালেন, ছেলেটি মারা গেছে। অতঃপর তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে (ফজরের) সালাত আদায় করলেন। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাঁদের রাতের ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করলেন। তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করলেনঃ আশা করা যায়, আল্লাহ্‌ তা’আলা তোমাদের এ রাতে বরকত দিবেন। সুফিয়ান (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি বর্ণনা করেছেন, আমি আবূ তালহা (রাঃ) দম্পতির নয় জন সন্তান দেখেছি, তাঁরা সবাই কুরআন পাঠ করেছে।

[১] যাতে স্বামী ব্যাপারটি বুঝতে না পারেন তজ্জন্য তিনি নিজেই শিশুটির গোসল ও কাফনের ব্যবস্থা করলেন, অথবা খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত করলেন, অথবা স্বামীর সঙ্গলাভের জন্য সাজ-সজ্জার প্রস্তুতি নিলেন।

২৩/৪২. অধ্যায়ঃ
মুসীবতের প্রথম অবস্থায়ই প্রকৃত সবর।

‘উমর (রাঃ) বলেন, কতই না উত্তম দুই ঈদ্‌ল এবং কতই না উত্তম ইলাওয়াহ্‌ [১৬] (আল্লাহর বাণী) : [যার অর্থ] “যারা তাদের উপর যখন কোন বিপদ আপতিত হয় তখন বলেঃ আমরা তো আল্লাহরই জন্য এবং আমরা সবাই অবশ্যই তাঁরই কাছে ফিরে যাব। এরাই তাঁরা যাদের প্রতি রয়েছে তাদের পালনকর্তার তরফ থেকে অশেষ অনুগ্রহ ও করুণা আর এরাই হল হিদায়াতপ্রাপ্ত।” (আল-বাকারাহ ১৫৬-১৫৭)

আর আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ (যার অর্থ) “তোমরা সাহায্য প্রার্থনা কর ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে। অবশ্যটা অত্যন্ত কঠিন, তবে সেসব বিনীত লোকদের ব্যতিরেকে।” (আল-বাকারাহ্ ৪৫)

[১৬] উটের পিঠে দুই পার্শের বোঝাকে ঈদ্‌লান বলা হয় এবং তাঁর উপরে মধ্যবর্তী স্থানে যে বোঝা রাখা হয় তাকে ইলাওয়াহ বলা হয়। (১৫৭)।

১৩০২
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا غُنْدَرٌ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ ثَابِتٍ، قَالَ سَمِعْتُ أَنَسًا ـ رضى الله عنه ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ الصَّبْرُ عِنْدَ الصَّدْمَةِ الأُولَى ‏”‏‏.‏

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, বিপদের প্রথম অবস্থায়ই প্রকৃত সবর।

২৩/৪৩. অধ্যায়ঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বাণীঃ তোমার জন্য আমরা অবশ্যই শোকাভিভূত।

ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন, (বিপদে) চোখ অশ্রু সজল হয়, অন্তর হয় ব্যথিত।

১৩০৩
حَدَّثَنَا الْحَسَنُ بْنُ عَبْدِ الْعَزِيزِ، حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ حَسَّانَ، حَدَّثَنَا قُرَيْشٌ ـ هُوَ ابْنُ حَيَّانَ ـ عَنْ ثَابِتٍ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ دَخَلْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَلَى أَبِي سَيْفٍ الْقَيْنِ ـ وَكَانَ ظِئْرًا لإِبْرَاهِيمَ ـ عَلَيْهِ السَّلاَمُ ـ فَأَخَذَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِبْرَاهِيمَ فَقَبَّلَهُ وَشَمَّهُ، ثُمَّ دَخَلْنَا عَلَيْهِ بَعْدَ ذَلِكَ، وَإِبْرَاهِيمُ يَجُودُ بِنَفْسِهِ، فَجَعَلَتْ عَيْنَا رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم تَذْرِفَانِ‏.‏ فَقَالَ لَهُ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عَوْفٍ ـ رضى الله عنه ـ وَأَنْتَ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَقَالَ ‏”‏ يَا ابْنَ عَوْفٍ إِنَّهَا رَحْمَةٌ ‏”‏‏.‏ ثُمَّ أَتْبَعَهَا بِأُخْرَى فَقَالَ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ إِنَّ الْعَيْنَ تَدْمَعُ، وَالْقَلْبَ يَحْزَنُ، وَلاَ نَقُولُ إِلاَّ مَا يَرْضَى رَبُّنَا، وَإِنَّا بِفِرَاقِكَ يَا إِبْرَاهِيمُ لَمَحْزُونُونَ ‏”‏‏.‏ رَوَاهُ مُوسَى عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ الْمُغِيرَةِ عَنْ ثَابِتٍ عَنْ أَنَسٍ ـ رضى الله عنه ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم‏.‏

‘আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে আবূ সায়ফ্‌ কর্মকারের নিকট গেলাম। তিনি ছিলেন (নবী -তনয়) ইব্‌রাহীম (রাঃ)-এর দুধ সম্পর্কীয় পিতা। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইব্‌রাহীম (রাঃ)-কে তুলে নিয়ে চুমু খেলেন এবং নাকে-মুখে লাগালেন। অতঃপর (আরেক বার) আমরা তাঁর (আবূ সায়ফ্‌-এর) বাড়িতে গেলাম। তখন ইব্‌রাহীম (রাঃ) মুমূর্ষু অবস্থায়। এতে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উভয় চক্ষু হতে অশ্রু ঝরতে লাগল। তখন ‘আবদুর রহমান ইব্‌নু ‘আওফ (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আর আপনিও? (ক্রন্দন করছেন?)। তখন তিনি বললেনঃ অশ্রু প্রবাহিত হয় আর হৃদয় হয় ব্যথিত। তবে আমরা মুখে তা-ই বলি যা আমাদের রব পছন্দ করেন। [১৭] আর হে ইব্‌রাহীম! তোমার বিচ্ছেদে আমরা অবশ্যই শোকসন্তপ্ত। [১৮]

মূসা (রহঃ)….আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে হাদীসটি বর্ণনা করেন।

[১৭] হাদিসটি হতে বিপদে অশ্রু ঝড়ানো আর মহান আল্লাহর নাফরমানী প্রকাশক শব্দাবলী বাদ দিয়ে মুখে শোক প্রকাশ করার অনুমতি পাওয়া যায়, পক্ষান্তরে মহান আল্লাহর নাফরমানী হয় কিংবা তাকদীরের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশক শব্দাবলী পরিত্যাগ করার তাকীদ দেয়া হয়।

[১৮] এ ধরনের বাকরীতি বিভিন্ন ভাষায় বিদ্যমান আছে। সুতরাং আরবীতে তো থাকবেই। বিধায় মৃত ব্যক্তিকে সংশোধন করার দলীল হিসাবে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বাণীটি ব্যবহার করার কোনই অবকাশ নেই।

২৩/৪৪. অধ্যায়ঃ
রোগাক্রান্ত ব্যক্তির নিকট কান্নাকাটি করা।

১৩০৪
حَدَّثَنَا أَصْبَغُ، عَنِ ابْنِ وَهْبٍ، قَالَ أَخْبَرَنِي عَمْرٌو، عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْحَارِثِ الأَنْصَارِيِّ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ ـ رضى الله عنهما ـ قَالَ اشْتَكَى سَعْدُ بْنُ عُبَادَةَ شَكْوَى لَهُ فَأَتَاهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَعُودُهُ مَعَ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ وَسَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ وَعَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ ـ رضى الله عنهم ـ فَلَمَّا دَخَلَ عَلَيْهِ فَوَجَدَهُ فِي غَاشِيَةِ أَهْلِهِ فَقَالَ ‏”‏ قَدْ قَضَى ‏”‏‏.‏ قَالُوا لاَ يَا رَسُولَ اللَّهِ‏.‏ فَبَكَى النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَلَمَّا رَأَى الْقَوْمُ بُكَاءَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم بَكَوْا فَقَالَ ‏”‏ أَلاَ تَسْمَعُونَ إِنَّ اللَّهَ لاَ يُعَذِّبُ بِدَمْعِ الْعَيْنِ، وَلاَ بِحُزْنِ الْقَلْبِ، وَلَكِنْ يُعَذِّبُ بِهَذَا ـ وَأَشَارَ إِلَى لِسَانِهِ ـ أَوْ يَرْحَمُ وَإِنَّ الْمَيِّتَ يُعَذَّبُ بِبُكَاءِ أَهْلِهِ عَلَيْهِ ‏”‏‏.‏ وَكَانَ عُمَرُ ـ رضى الله عنه ـ يَضْرِبُ فِيهِ بِالْعَصَا، وَيَرْمِي بِالْحِجَارَةِ وَيَحْثِي بِالتُّرَابِ‏.‏

‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, সা’দ ইব্‌নু ‘উবাদাহ (রাঃ) রোগাক্রান্ত হলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আবদুর রাহমান ইব্‌নু ‘আওফ’ সা’দ ইব্‌নু আবূ ওয়াক্কাস এবং ‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু মাস’উদ (রাঃ)-কে সঙ্গে নিয়ে তাঁকে দেখতে আসলেন। তিনি তাঁর ঘরে প্রবেশ করে তাঁকে পরিজনের মাঝে দেখতে পেলেন। জিজ্ঞেস করলেন, তার কি মৃত্যু হয়েছে! তাঁরা বললেন, না। হে আল্লাহর রসূল! তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কেঁদে ফেললেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কান্না দেখে উপস্থিত লকেরা কাঁদতে লাগলেন। তখন তিনি ইরশাদ করলেনঃ শুনে রাখ! নিঃসন্দেহে আল্লাহ্‌ তা’আলা চোখের পানি ও অন্তরের শোক-ব্যথার কারনে ‘আযাব দিবেন না। তিনি ‘আযাব দিবেন এর কারনে (এ বলে) জিহ্বার দিকে ইঙ্গিত করলেন। অথবা এর কারণেই তিনি রহম করে থাকেন। আর নিশ্চয় মৃত ব্যক্তিকে তাঁর পরিজনের বিলাপের কারণে ‘আযাব দেয়া হয়’। ‘উমর (রাঃ) এ (ধরণের কান্নার) কারণে লাঠি দ্বারা আঘাত করতেন, কঙ্কর নিক্ষেপ করতেন বা মুখে মাটি পুরে দিতেন।

২৩/৪৫. অধ্যায়ঃ
(সরবে) কাঁদা ও বিলাপ নিষিদ্ধ হওয়া এবং তাতে বাধা প্রদান করা।

১৩০৫
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ حَوْشَبٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَهَّابِ، حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ، قَالَ أَخْبَرَتْنِي عَمْرَةُ، قَالَتْ سَمِعْتُ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ تَقُولُ لَمَّا جَاءَ قَتْلُ زَيْدِ بْنِ حَارِثَةَ وَجَعْفَرٍ وَعَبْدِ اللَّهِ بْنِ رَوَاحَةَ، جَلَسَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يُعْرَفُ فِيهِ الْحُزْنُ، وَأَنَا أَطَّلِعُ مِنْ شَقِّ الْبَابِ، فَأَتَاهُ رَجُلٌ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ نِسَاءَ جَعْفَرٍ وَذَكَرَ بُكَاءَهُنَّ فَأَمَرَهُ بِأَنْ يَنْهَاهُنَّ، فَذَهَبَ الرَّجُلُ ثُمَّ أَتَى فَقَالَ قَدْ نَهَيْتُهُنَّ، وَذَكَرَ أَنَّهُنَّ لَمْ يُطِعْنَهُ، فَأَمَرَهُ الثَّانِيَةَ أَنْ يَنْهَاهُنَّ، فَذَهَبَ، ثُمَّ أَتَى، فَقَالَ وَاللَّهِ لَقَدْ غَلَبْنَنِي أَوْ غَلَبْنَنَا الشَّكُّ مِنْ مُحَمَّدِ بْنِ حَوْشَبٍ ـ فَزَعَمَتْ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ فَاحْثُ فِي أَفْوَاهِهِنَّ التُّرَابَ ‏”‏‏.‏ فَقُلْتُ أَرْغَمَ اللَّهُ أَنْفَكَ، فَوَاللَّهِ مَا أَنْتَ بِفَاعِلٍ وَمَا تَرَكْتَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مِنَ الْعَنَاءِ‏.‏

‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, (মুতার যুদ্ধ ক্ষেত্র হতে) যায়দ ইব্‌নু হারিসাহ, জা’ফর এবং ‘আব্দুল্লাহ্‌ ইব্‌নু রাওয়াহা (রাঃ)-এর শাহাদাতের খবর পৌঁছলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বসে পড়লেন; তাঁর মধ্যে শোকের আলামত প্রকাশ পেল। আমি [‘আয়িশা (রাঃ)] দরজার ফাঁক দিয়ে ঝুঁকে তা দেখছিলাম। তখন এক ব্যক্তি তাঁর নিকট এসে সম্বোধন করেন, হে আল্লাহর রসূল! জা’ফর (রাঃ)-এর (পরিবারের) মহিলাগণ কান্নাকাটি করছে। তিনি তাদের নিষেধ করার জন্য তাকে আদেশ করলেন। সেই ব্যক্তি চলে গেলেন। পরে এসে বললেন, আমি তাদের নিষেধ করেছি। তিনি উল্লেখ করলেন যে, তারা তাকে মানেনি। তিনি তাদের নিষেধ করার জন্য দ্বিতীয়বার তাকে নির্দেশ দিলেন। তিনি চলে গেলেন এবং আবার এসে বললেন, আল্লাহর কসম! অবশ্যই তাঁরা আমাকে (বা বলেছেন আমাদেরকে) হার মানিয়েছে। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তা হলে তাঁদের মুখে মাটি ছুঁড়ে মারো। [‘আয়িশা (রাঃ) বলেন] আমি বললাম, আল্লাহ্‌ তোমার নাকে ধূলি মিশ্রিত করুন। আল্লাহর কসম! তোমাকে যে কাজের নির্দেশ দেয়া হয়েছে তা করতে পারছ না আর আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বিরক্ত করতেও ছাড়ছ না।

১৩০৬
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَبْدِ الْوَهَّابِ، حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ زَيْدٍ، حَدَّثَنَا أَيُّوبُ، عَنْ مُحَمَّدٍ، عَنْ أُمِّ عَطِيَّةَ ـ رضى الله عنها ـ قَالَتْ أَخَذَ عَلَيْنَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم عِنْدَ الْبَيْعَةِ أَنْ لاَ نَنُوحَ، فَمَا وَفَتْ مِنَّا امْرَأَةٌ غَيْرَ خَمْسِ نِسْوَةٍ أُمِّ سُلَيْمٍ وَأُمِّ الْعَلاَءِ وَابْنَةِ أَبِي سَبْرَةَ امْرَأَةِ مُعَاذٍ وَامْرَأَتَيْنِ أَوِ ابْنَةِ أَبِي سَبْرَةَ وَامْرَأَةِ مُعَاذٍ وَامْرَأَةٍ أُخْرَى‏.‏

উম্মু আতিয়্যা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাই’আত গ্রহণকালে আমাদের কাছ হতে এ অঙ্গীকার নিয়েছিলেন যে, আমরা (কোন মৃতের জন্য) বিলাপ করব না। ….আমাদের মধ্য হতে পাঁচজন মহিলা উম্মু সুলাইম, উম্মুল ‘আলা, আবূ সাব্‌রাহ্‌র কন্যা মু’আযের স্ত্রী, আরো দু’জন মহিলা বা মু’আযের স্ত্রী ও আরেকজন মহিলা ব্যতীত কোন নারীই সে ওয়াদা রক্ষা করেনি।

২৩/৪৬. অধ্যায়ঃ
জানাযার জন্য দণ্ডায়মান হওয়া।

১৩০৭
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، حَدَّثَنَا الزُّهْرِيُّ، عَنْ سَالِمٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَامِرِ بْنِ رَبِيعَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏”‏ إِذَا رَأَيْتُمُ الْجَنَازَةَ فَقُومُوا حَتَّى تُخَلِّفَكُمْ ‏”‏‏.‏ قَالَ سُفْيَانُ قَالَ الزُّهْرِيُّ أَخْبَرَنِي سَالِمٌ عَنْ أَبِيهِ قَالَ أَخْبَرَنَا عَامِرُ بْنُ رَبِيعَةَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم‏.‏ زَادَ الْحُمَيْدِيُّ ‏”‏ حَتَّى تُخَلِّفَكُمْ أَوْ تُوضَعَ

‘আমির ইব্‌নু রাবী’আ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, তোমরা জানাযা দেখলে তা তোমাদের পিছনে ফেলে যাওয়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকবে। হুমাইদী আরও উল্লেখ করেছেন, তা তোমাদের পশ্চাতে ফেলে যাওয়া বা মাটিতে নামিয়ে রাখা পর্যন্ত।

২৩/৪৭. অধ্যায়ঃ
জানাযার জন্য দাঁড়ালে কখন বসবে ?

১৩০৮
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ ـ رضى الله عنهما ـ عَنْ عَامِرِ بْنِ رَبِيعَةَ ـ رضى الله عنه ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ إِذَا رَأَى أَحَدُكُمْ جَنَازَةً فَإِنْ لَمْ يَكُنْ مَاشِيًا مَعَهَا فَلْيَقُمْ حَتَّى يُخَلِّفَهَا، أَوْ تُخَلِّفَهُ أَوْ تُوضَعَ مِنْ قَبْلِ أَنْ تُخَلِّفَهُ ‏”‏‏.‏

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, তোমাদের কেউ জানাযা যেতে দেখলে যদি সে তাঁর সহযাত্রী না হয়, তবে ততক্ষন সে দাঁড়িয়ে থাকবে, যতক্ষণ না সে ব্যক্তি জানাযা পিছনে ফেলে বা জানাযা তাকে পিছনে ফেলে যায় অথবা পিছনে ফেলে যাওয়ার পূর্বে তা (মাটিতে) নামিয়ে রাখা হয়।

১৩০৯
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ يُونُسَ، حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي ذِئْبٍ، عَنْ سَعِيدٍ الْمَقْبُرِيِّ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ كُنَّا فِي جَنَازَةٍ فَأَخَذَ أَبُو هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ بِيَدِ مَرْوَانَ فَجَلَسَا قَبْلَ أَنْ تُوضَعَ، فَجَاءَ أَبُو سَعِيدٍ ـ رضى الله عنه ـ فَأَخَذَ بِيَدِ مَرْوَانَ فَقَالَ قُمْ فَوَاللَّهِ لَقَدْ عَلِمَ هَذَا أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم نَهَانَا عَنْ ذَلِكَ‏.‏ فَقَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ صَدَقَ‏.‏

সা’ঈদ মাক্‌বুরী (রহঃ) এর পিতা থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা একটি জানাযায় শরীক হলাম। (সেখানে) আবূ হুরায়রা (রাঃ) মারওয়ানের হাত ধরলেন এবং তাঁর জানাযা নামিয়ে রাখার পূর্বেই বসে পড়লেন। তখন আবূ সা’ঈদ এগিয়ে এসে মারওয়ানের হাত ধরে বললেন, দাঁড়িয়ে পড়ুন ! আল্লাহর কসম! ইনি [আবূ হুরায়রা (রাঃ)] তো জানেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ কাজ করতে (জানাযা নামিয়ে রাখার পূর্বে বসতে) নিষেধ করেছেন। তখন আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেন, তিনি ঠিকই বলেছেন।

২৩/৪৮. অধ্যায়ঃ
যে ব্যক্তি জানাযার পিছে পিছে যায়, সে লোকদের কাঁধ হতে তা নামিয়ে না রাখা পর্যন্ত বসবে না আর বসে পড়লে তাকে দাঁড়াবার নির্দেশ দেওয়া হবে।

১৩১০
حَدَّثَنَا مُسْلِمٌ ـ يَعْنِي ابْنَ إِبْرَاهِيمَ ـ حَدَّثَنَا هِشَامٌ، حَدَّثَنَا يَحْيَى، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ ـ رضى الله عنه ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ إِذَا رَأَيْتُمُ الْجَنَازَةَ فَقُومُوا، فَمَنْ تَبِعَهَا فَلاَ يَقْعُدْ حَتَّى تُوضَعَ ‏”‏‏.‏

আবূ সা’ঈদ খুদ্‌রী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমাদের কেউ যখন কোন জানাযা যেতে দেখবে, যদি সে তার সহযাত্রী না হয় তাহলে সে ততক্ষন দাঁড়িয়ে থাকবে, যতক্ষণ না তা চলে যায় অথবা নামিয়ে না রাখা হয়।

২৩/৪৯. অধ্যায়ঃ
যে ব্যক্তি ইয়াহূদীর জানাযা দেখে দাঁড়ায়।

১৩১১
حَدَّثَنَا مُعَاذُ بْنُ فَضَالَةَ، حَدَّثَنَا هِشَامٌ، عَنْ يَحْيَى، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ مِقْسَمٍ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ ـ رضى الله عنهما ـ قَالَ مَرَّ بِنَا جَنَازَةٌ فَقَامَ لَهَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم وَقُمْنَا بِهِ‏.‏ فَقُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّهَا جَنَازَةُ يَهُودِيٍّ‏.‏ قَالَ ‏ “‏ إِذَا رَأَيْتُمُ الْجَنَازَةَ فَقُومُوا ‏”‏‏.

জাবির ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমাদের পার্শ্ব দিয়ে একটি জানাযা যাচ্ছিল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা দেখে দাঁড়িয়ে গেলেন। আমরাও দাঁড়িয়ে পড়লাম এবং নিবেদন করলাম, হে আল্লাহর রসূল! এ তো ইয়াহূদীর জানাযা। তিনি বললেনঃ তোমরা যে কোন জানাযা দেখলে দাঁড়িয়ে পড়বে।

১৩১২
حَدَّثَنَا آدَمُ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ مُرَّةَ، قَالَ سَمِعْتُ عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ أَبِي لَيْلَى، قَالَ كَانَ سَهْلُ بْنُ حُنَيْفٍ وَقَيْسُ بْنُ سَعْدٍ قَاعِدَيْنِ بِالْقَادِسِيَّةِ، فَمَرُّوا عَلَيْهِمَا بِجَنَازَةٍ فَقَامَا‏.‏ فَقِيلَ لَهُمَا إِنَّهَا مِنْ أَهْلِ الأَرْضِ، أَىْ مِنْ أَهْلِ الذِّمَّةِ فَقَالاَ إِنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم مَرَّتْ بِهِ جَنَازَةٌ فَقَامَ فَقِيلَ لَهُ إِنَّهَا جَنَازَةُ يَهُودِيٍّ‏.‏ فَقَالَ ‏ “‏ أَلَيْسَتْ نَفْسًا ‏”‏‏.‏ وَقَالَ أَبُو حَمْزَةَ عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ عَمْرٍو، عَنِ ابْنِ أَبِي لَيْلَى، قَالَ كُنْتُ مَعَ قَيْسٍ وَسَهْلٍ ـ رضى الله عنهما ـ فَقَالاَ كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم‏.‏ وَقَالَ زَكَرِيَّاءُ عَنِ الشَّعْبِيِّ عَنِ ابْنِ أَبِي لَيْلَى كَانَ أَبُو مَسْعُودٍ وَقَيْسٌ يَقُومَانِ لِلْجِنَازَةِ‏.‏

‘আবদুর রহমান ইব্‌নু আবূ লাইলাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, সাহ্‌ল ইব্‌নু হুনাইফ ও কায়স ইব্‌নু সা’দ (রাঃ) কাদিসিয়াতে উপবিষ্ট ছিলেন, তখন লোকেরা তাদের সামনে দিয়ে একটি জানাযা নিয়ে যাচ্ছিল। (তা দেখে) তারা দাঁড়িয়ে গেলেন। তখন তাদের বলা হল, এটা তো এ দেশীয় জিম্মী ব্যক্তির (অমুসলিমের) জানাযা। তখন তারা বললেন, (একদা) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে দিয়ে একটি জানাযা যাচ্ছিল। তখন তিনি দাঁড়িয়ে গেলে তাঁকে বলা হল, এটা তো এক ইয়াহুদীর জানাযা। তিনি এরশাদ করলেনঃ সে কি মানুষ নয়? [১৯]

[১৯] একমাত্র ইসলামই মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। যারা আজ মানব অধিকার প্রতিষ্ঠার ফাঁকা বুলি আওড়াচ্ছে তারা দেখাক এরূপ দু’একটি দৃষ্টান্ত।

১৩১৩
See previous Hadith

ইবন আবূ লাযলাহ (রহ.) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি সাহল এবং কায়স (রাঃ) এর সঙ্গে ছিলাম। তখন তারা দু’জন বললেন,আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে ছিলাম। জাকারিয়া (রহঃ) সূত্রে ইবনু আবূ লাযলাহ (রহঃ) হতে বর্ণনা করেন,আবূ মাস’উদ ও কায়স (রাঃ) জানাযা যেতে দেখলে দাড়িয়ে যেতেন।

২৩/৫০. অধ্যায়ঃ
পুরুষরা জানাযা বহন করবে, স্ত্রীলোকেরা নয়।

১৩১৪
حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، عَنْ سَعِيدٍ الْمَقْبُرِيِّ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّهُ سَمِعَ أَبَا سَعِيدٍ الْخُدْرِيَّ ـ رضى الله عنه ـ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ إِذَا وُضِعَتِ الْجِنَازَةُ وَاحْتَمَلَهَا الرِّجَالُ عَلَى أَعْنَاقِهِمْ، فَإِنْ كَانَتْ صَالِحَةً قَالَتْ قَدِّمُونِي‏.‏ وَإِنْ كَانَتْ غَيْرَ صَالِحَةٍ قَالَتْ يَا وَيْلَهَا أَيْنَ يَذْهَبُونَ بِهَا يَسْمَعُ صَوْتَهَا كُلُّ شَىْءٍ إِلاَّ الإِنْسَانَ، وَلَوْ سَمِعَهُ صَعِقَ ‏”‏‏.‏

আবূ সা’ঈদ খুদ্‌রী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন জানাযা খাটে রাখা হয় এবং পুরুষরা তা কাঁধে বহন করে নেয়, তখন সে সৎ হলে বলতে থাকে, আমাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাও। আর সৎ না হলে সে বলতে থাকে, হায় আফসোস! তোমরা এটাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ? মানব জাতি ব্যতীত সবাই তার চিৎকার শুনতে পায়। মানুষ তা শুনলে জ্ঞান হারিয়ে ফেলত।

২৩/৫১. অধ্যায়ঃ
জানাযার কাজ শীঘ্র সম্পাদন করা।

আনাস (রাঃ) বলেন, তোমরা (জানাযাকে) বিদায় দানকারী। অতএব, তোমরা তার সম্মুখে, পশ্চাতে এবং ডানে বামে চলবে। অন্যান্যরা বলেছেন, তার নিকট নিকট (চলবে)।

১৩১৫
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، قَالَ حَفِظْنَاهُ مِنَ الزُّهْرِيِّ عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ أَسْرِعُوا بِالْجِنَازَةِ، فَإِنْ تَكُ صَالِحَةً فَخَيْرٌ تُقَدِّمُونَهَا ‏{‏إِلَيْهِ‏}‏، وَإِنْ يَكُ سِوَى ذَلِكَ فَشَرٌّ تَضَعُونَهُ عَنْ رِقَابِكُمْ ‏”‏‏.‏

আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, তোমরা জানাযা নিয়ে দ্রুতগতিতে চলবে। কেননা, সে যদি পুণ্যবান হয়, তবে এটা উত্তম, যার দিকে তোমরা তাঁকে এগিয়ে দিচ্ছ আর যদি সে অন কিছু হয়, তবে সে একটি আপদ, যাকে তোমরা তোমাদের ঘাড় হতে জলদি নামিয়ে ফেলছ।

২৩/৫২. অধ্যায়ঃ
খাটিয়ায় [১] থাকাকালে মৃত ব্যক্তির উক্তিঃ আমাকে নিয়ে এগিয়ে চল

[১] ‘الجنازَة’ শব্দটির প্রথম অক্ষর জীম-‘যবর’ বিশিষ্ট হলে তার অর্থ-জানাযা, মৃত ব্যক্তি, লাশ আর প্রথম অক্ষর ‘যের’ বিশিষ্ট হলে অর্থ হবে, জানাযা বহনের খাটিয়া বা খাট ।

১৩১৬
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يُوسُفَ، حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، حَدَّثَنَا سَعِيدٌ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّهُ سَمِعَ أَبَا سَعِيدٍ الْخُدْرِيَّ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏ “‏ إِذَا وُضِعَتِ الْجِنَازَةُ فَاحْتَمَلَهَا الرِّجَالُ عَلَى أَعْنَاقِهِمْ، فَإِنْ كَانَتْ صَالِحَةً قَالَتْ قَدِّمُونِي‏.‏ وَإِنْ كَانَتْ غَيْرَ صَالِحَةٍ قَالَتْ لأَهْلِهَا يَا وَيْلَهَا أَيْنَ يَذْهَبُونَ بِهَا يَسْمَعُ صَوْتَهَا كُلُّ شَىْءٍ إِلاَّ الإِنْسَانَ، وَلَوْ سَمِعَ الإِنْسَانُ لَصَعِقَ ‏”‏‏.‏

আবূ সা’ঈদ খুদ্‌রী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যখন জানাযা (খাটিয়ায়) রাখা হয় এবং পুরুষ লোকেরা তা তাদের কাঁধে তুলে নেয়, সে পুণ্যবান হলে তখন বলতে থাকে, আমাকে সামনে এগিয়ে দাও। আর পুণ্যবান না হলে সে আপন পরিজনকে বলতে থাকে, হায় আফসোস! এটা নিয়ে তোমরা কোথায় যাচ্ছ? মানুষ জাতি ব্যতীত সবাই তার চিৎকার সুন্তে পায়। মানুষ যদি তা শুনতে পেত তবে অবশ্যই অজ্ঞান হয়ে যেত।

২৩/৫৩. অধ্যায়ঃ
জানাযার সালাতে ইমামের পিছনে দু’ বা তিন কাতারে দাঁড়ানো।

১৩১৭
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، عَنْ أَبِي عَوَانَةَ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ عَطَاءٍ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ ـ رضى الله عنهما ـ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم صَلَّى عَلَى النَّجَاشِيِّ، فَكُنْتُ فِي الصَّفِّ الثَّانِي أَوِ الثَّالِثِ‏.‏

জাবির ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (আবিসিনিয়ার বাদশাহ্‌) নাজাশীর জানাযা আদায় করেন। আমি দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় কাতারে ছিলাম।

২৩/৫৪. অধ্যায়ঃ
জানাযার সালাতের কাতার।

১৩১৮
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ زُرَيْعٍ، حَدَّثَنَا مَعْمَرٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ سَعِيدٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ نَعَى النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِلَى أَصْحَابِهِ النَّجَاشِيَّ، ثُمَّ تَقَدَّمَ فَصَفُّوا خَلْفَهُ فَكَبَّرَ أَرْبَعًا‏.‏

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাহাবীগণকে নাজাশীর মৃত্যু খবর শোনালেন, পরে তিনি সম্মুখে অগ্রসর হলেন এবং সাহাবীগন তাঁর পিছনে কাতারবন্দী হলে তিনি চার তাক্‌বীরে [২০] (জানাযার সালাত) আদায় করলেন।

[২০] জানাযার সালাত ৪ থেকে ৯ পর্যন্ত তাকবীরে পড়া নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে প্রমাণিত। এবং প্রত্যেক তাকবীর বলার সময় রফউল ইয়াদাইন করতে হবে। এটি ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ)-এর আমল- (এটা বাইহাকী সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন- আহকামুল জানায়িয ১৪৮ পৃষ্ঠা)। ৪ থেকে ৯ তাকবীরের যেটাই করবে যথেষ্ট হবে। এক প্রকারকে অপরিহার্যভাবে ধরে রাখতে চাইলে সেটা হল ৪ তাকবীর। কেননা এ ব্যাপারে হাদীসসমূহ শক্তিশালী ও অধিক। (আহকামুল জানায়িয ১৪১ পৃষ্ঠা)

১৩১৯
حَدَّثَنَا مُسْلِمٌ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، حَدَّثَنَا الشَّيْبَانِيُّ، عَنِ الشَّعْبِيِّ، قَالَ أَخْبَرَنِي مَنْ، شَهِدَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ أَتَى عَلَى قَبْرٍ مَنْبُوذٍ فَصَفَّهُمْ وَكَبَّرَ أَرْبَعًا‏.‏ قُلْتُ مَنْ حَدَّثَكَ قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ رضى الله عنهما‏.‏

শা’বী (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এমন এক সাহাবী যিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন, তিনি আমাকে খবর দিয়েছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি পৃথক কবরের নিকট গমন করলেন এবং লোকেদের কাতারবন্দী করে চার তাক্‌বীরের সঙ্গে (জানাযার সালাত) আদায় করলেন। [শাইবানী (রহঃ) বলেন] আমি শা’বী (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, এ হাদীস আপনাকে কে বর্ণনা করেছেন? তিনি বললেন, ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ)।

১৩২০
حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ مُوسَى، أَخْبَرَنَا هِشَامُ بْنُ يُوسُفَ، أَنَّ ابْنَ جُرَيْجٍ، أَخْبَرَهُمْ قَالَ أَخْبَرَنِي عَطَاءٌ، أَنَّهُ سَمِعَ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ ـ رضى الله عنهما ـ يَقُولُ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ قَدْ تُوُفِّيَ الْيَوْمَ رَجُلٌ صَالِحٌ مِنَ الْحَبَشِ فَهَلُمَّ فَصَلُّوا عَلَيْهِ ‏”‏‏.‏ قَالَ فَصَفَفْنَا فَصَلَّى النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم عَلَيْهِ وَنَحْنُ صُفُوفٌ‏.‏ قَالَ أَبُو الزُّبَيْرِ عَنْ جَابِرٍ كُنْتُ فِي الصَّفِّ الثَّانِي‏.‏

জাবির ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আজ হাবাশা দেশের (আবিসিনিয়ার) একজন পুণ্যবান লোকের মৃত্যু হয়েছে, তোমরা এসো তাঁর জন্য (জানাযার) সালাত আদায় কর। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা তখন কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়ালে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (জানাযার) সালাত আদায় করলেন, আমরা ছিলাম কয়েক কাতার। আবূ যুবাইর (রহঃ) জাবির (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন, জাবির (রাঃ) বলেছেন, আমি দ্বিতীয় কাতারে ছিলাম।

FOR MORE CLICK HERE

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]