সহীহ বুখারী শরীফ হাদিস ইলম অধ্যায় হাদিস নং ১০১– ১৩৪

৩/৩৫. অধ্যায়ঃ
নারীদের জ্ঞান লাভের জন্য আলাদাভাবে দিন নির্ধারণ করা যায় কি?

১০১
حَدَّثَنَا آدَمُ، قَالَ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، قَالَ حَدَّثَنِي ابْنُ الأَصْبَهَانِيِّ، قَالَ سَمِعْتُ أَبَا صَالِحٍ، ذَكْوَانَ يُحَدِّثُ عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ،‏.‏ قَالَتِ النِّسَاءُ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم غَلَبَنَا عَلَيْكَ الرِّجَالُ، فَاجْعَلْ لَنَا يَوْمًا مِنْ نَفْسِكَ‏.‏ فَوَعَدَهُنَّ يَوْمًا لَقِيَهُنَّ فِيهِ، فَوَعَظَهُنَّ وَأَمَرَهُنَّ، فَكَانَ فِيمَا قَالَ لَهُنَّ ‏”‏ مَا مِنْكُنَّ امْرَأَةٌ تُقَدِّمُ ثَلاَثَةً مِنْ وَلَدِهَا إِلاَّ كَانَ لَهَا حِجَابًا مِنَ النَّارِ ‏”‏‏.‏ فَقَالَتِ امْرَأَةٌ وَاثْنَيْنِ فَقَالَ ‏”‏ وَاثْنَيْنِ

আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ নারীরা একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলল, পুরুষেরা আপনার নিকট আমাদের চেয়ে প্রাধান্য বিস্তার করে আছে। তাই আপনি নিজে আমাদের জন্য একটি দিন নির্ধারিত করে দিন। তিনি তাদের বিশেষ একটি দিনের অঙ্গীকার করলেন; সে দিন তিনি তাঁদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন এবং তাদের নাসীহাত করলেন ও নির্দেশ দিলেন। তিনি তাদের যা যা বলেছিলেন, তাঁর মধ্যে একথাও ছিলো যে, তোমাদের মধ্যে যে স্ত্রীলোক তিনটি সন্তান পূর্বেই পাঠাবে [১] , তারা তার জন্য জাহান্নামের প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াবে। তখন জনৈক স্ত্রীলোক বলল , আর দু’টি পাঠালে? তিনি বললেনঃ দু’টি পাঠালেও।

(১২৪৯,৭৩১০; মুসলিম ৪৫/৪৭, হাঃ ২৬৩৩, আহমাদ ১১২৯৬) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১০০, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ১০২)

[১] তার জীবিতাবস্থায় তিনটি সন্তান মারা গেলে।

১০২
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، قَالَ حَدَّثَنَا غُنْدَرٌ، قَالَ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ الأَصْبَهَانِيِّ، عَنْ ذَكْوَانَ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم بِهَذَا‏.‏ وَعَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ الأَصْبَهَانِيِّ، قَالَ سَمِعْتُ أَبَا حَازِمٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ ‏ “‏ ثَلاَثَةً لَمْ يَبْلُغُوا الْحِنْثَ

আবূ সা’ঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। আব্দুর রহমান আল-আসবাহানী (রহঃ) …… আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এমন তিনজন , যারা সাবালকত্বে পৌঁছেনি।

(১২৫০ দ্রষ্টব্য) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১০০ শেষাংশ, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ১০৩)

৩/৩৬. অধ্যায়ঃ
কোন কথা শুনে না বুঝলে জানার জন্য পুনরাবৃত্তি করা।

১০৩
حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ أَبِي مَرْيَمَ، قَالَ أَخْبَرَنَا نَافِعُ بْنُ عُمَرَ، قَالَ حَدَّثَنِي ابْنُ أَبِي مُلَيْكَةَ، أَنَّ عَائِشَةَ، زَوْجَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم كَانَتْ لاَ تَسْمَعُ شَيْئًا لاَ تَعْرِفُهُ إِلاَّ رَاجَعَتْ فِيهِ حَتَّى تَعْرِفَهُ، وَأَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏”‏ مَنْ حُوسِبَ عُذِّبَ ‏”‏‏.‏ قَالَتْ عَائِشَةُ فَقُلْتُ أَوَ لَيْسَ يَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى ‏{‏فَسَوْفَ يُحَاسَبُ حِسَابًا يَسِيرًا‏}‏ قَالَتْ فَقَالَ ‏”‏ إِنَّمَا ذَلِكَ الْعَرْضُ، وَلَكِنْ مَنْ نُوقِشَ الْحِسَابَ يَهْلِكْ

ইব্‌নু আবূ মুলাইকা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর স্ত্রী ‘আয়িশা (রাঃ) কোন কথা শুনে না বুঝলে বার বার প্রশ্ন করতেন। একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “(ক্বিয়ামতের দিন ) যার কাছ থেকে হিসেব নেয়া হবে তাঁকে শাস্তি দেয়া হবে।” ‘আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ আমি জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহ তা’আলা কি ইরশাদ করেননি, ‏‏فَسَوْفَ يُحَاسَبُ حِسَابًا يَسِيرًا‏ “তার হিসাব নিকাশ সহজেই নেয়া হবে” (সূরা ইনশিক্বাক ৮৪/৮)। তখন তিনি বললেনঃ তা কেবল হিসেব প্রকাশ করা। কিন্তু যার হিসাব পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে নেয়া হবে সে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।

(৪৯৩৯, ৬৫৩৬, ৬৫৩৭; মুসলিম ৫১/১৮, হাঃ ২৮৭৬, আহমাদ ২৪২৫৫) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১০১, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ১০৪)

৩/৩৭. অধ্যায়ঃ
উপস্থিত ব্যাক্তি যেন অনুপস্থিত ব্যক্তির নিকট ইলম পৌঁছে দেয়

ইব্‌নু আব্বাস (রাঃ) নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে তা বর্ণনা করেন।

১০৪
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يُوسُفَ، قَالَ حَدَّثَنِي اللَّيْثُ، قَالَ حَدَّثَنِي سَعِيدٌ، عَنْ أَبِي شُرَيْحٍ، أَنَّهُ قَالَ لِعَمْرِو بْنِ سَعِيدٍ وَهْوَ يَبْعَثُ الْبُعُوثَ إِلَى مَكَّةَ ائْذَنْ لِي أَيُّهَا الأَمِيرُ أُحَدِّثْكَ قَوْلاً قَامَ بِهِ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم الْغَدَ مِنْ يَوْمِ الْفَتْحِ، سَمِعَتْهُ أُذُنَاىَ وَوَعَاهُ قَلْبِي، وَأَبْصَرَتْهُ عَيْنَاىَ، حِينَ تَكَلَّمَ بِهِ، حَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ ثُمَّ قَالَ ‏ “‏ إِنَّ مَكَّةَ حَرَّمَهَا اللَّهُ، وَلَمْ يُحَرِّمْهَا النَّاسُ، فَلاَ يَحِلُّ لاِمْرِئٍ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ أَنْ يَسْفِكَ بِهَا دَمًا، وَلاَ يَعْضِدَ بِهَا شَجَرَةً، فَإِنْ أَحَدٌ تَرَخَّصَ لِقِتَالِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِيهَا فَقُولُوا إِنَّ اللَّهَ قَدْ أَذِنَ لِرَسُولِهِ، وَلَمْ يَأْذَنْ لَكُمْ‏.‏ وَإِنَّمَا أَذِنَ لِي فِيهَا سَاعَةً مِنْ نَهَارٍ، ثُمَّ عَادَتْ حُرْمَتُهَا الْيَوْمَ كَحُرْمَتِهَا بِالأَمْسِ، وَلْيُبَلِّغِ الشَّاهِدُ الْغَائِبَ ‏”‏‏.‏ فَقِيلَ لأَبِي شُرَيْحٍ مَا قَالَ عَمْرٌو قَالَ أَنَا أَعْلَمُ مِنْكَ يَا أَبَا شُرَيْحٍ، لاَ يُعِيذُ عَاصِيًا، وَلاَ فَارًّا بِدَمٍ، وَلاَ فَارًّا بِخَرْبَةٍ‏.‏

আবূ শুরায়হ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি ‘আমর ইব্‌নু সা’ঈদ (মদীনার গভর্নর )–কে বললেন, যখন তিনি মক্কায় সেনাবাহিনী পাঠিয়েছিলেন – ‘হে আমাদের নেতা ! আমাকে অনুমতি দিলে আপনাকে এমন একটি হাদীস শুনাতে পারি যেটা মক্কা বিজয়ের পরের দিন আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছিলেন। আমার দু’কান তা শ্রবণ করেছে, আমার হৃদয় তা আয়ত্ত রেখেছে, আর আমার চোখ দু’টো তা দেখেছে। তিনি আল্লাহর হামদ ও সানা বর্ণনা করে বললেনঃ মক্কাকে আল্লাহ হারাম করেছেন, কোন মানুষ তাকে হারাম করেনি। তাই যে ব্যক্তি আল্লাহয় ও আখিরাতে বিশ্বাস রাখে তাঁর জন্য সেখানে রক্তপাত করা, সেখানকার গাছ কাটা বৈধ নয়। কেউ যদি আল্লাহর রাসূলের (সেখানকার) লড়াইকে দলীল হিসেবে পেশ করে তবে তোমরা বলে দাও, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলকে এর অনুমতি দিয়েছিলেন; কিন্তু তোমাদেরকে তা দেননি। আমাকেও সে দিনের কিছু সময়ের জন্য অনুমতি দিয়েছিলেন। অতঃপর পূর্বের মতই আজ আবার একে তাঁর নিষিদ্ধ হবার মর্যাদা ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। উপস্থিতগণ যেন অনুপস্থিতদের নিকট (এ বাণী ) পৌঁছে দেয়।’ অতঃপর আবূ শুরায়হ (রাঃ)-কে প্রশ্ন করা হলো, ‘আপনার এ হাদীস শুনে ‘আম্‌র কী বললেন?’ [আবূ শুরায়হ (রাঃ) উত্তর দিলেন ] তিনি বললেনঃ ‘হে আবূ শুরায়হ ! (এ বিষয়ে ) আমি তোমার চেয়ে অধিক জানি। মক্কা কোন বিদ্রোহীকে , কোন খুনের পলাতক আসামীকে এবং চোরকে আশ্রয় দেয় না।’

(১৮৩২,৪২৯৫; মুসলিম ১৫/৮২, হাঃ ১৩৫৪, আহমাদ ১৬৩৭৩, ২৭২৩৪) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১০২, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ১০৫)

১০৫
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَبْدِ الْوَهَّابِ، قَالَ حَدَّثَنَا حَمَّادٌ، عَنْ أَيُّوبَ، عَنْ مُحَمَّدٍ، عَنِ ابْنِ أَبِي بَكْرَةَ، عَنْ أَبِي بَكْرَةَ، ذُكِرَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏”‏ فَإِنَّ دِمَاءَكُمْ وَأَمْوَالَكُمْ ـ قَالَ مُحَمَّدٌ وَأَحْسِبُهُ قَالَ وَأَعْرَاضَكُمْ ـ عَلَيْكُمْ حَرَامٌ كَحُرْمَةِ يَوْمِكُمْ هَذَا فِي شَهْرِكُمْ هَذَا، أَلاَ لِيُبَلِّغِ الشَّاهِدُ مِنْكُمُ الْغَائِبَ ‏”‏‏.‏ وَكَانَ مُحَمَّدٌ يَقُولُ صَدَقَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ ذَلِكَ ‏”‏ أَلاَ هَلْ بَلَّغْتُ ‏”‏ مَرَّتَيْنِ

আবূ বাকরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর কথা উল্লেখ করে বলেন যে, তিনি বলেছেনঃ তোমাদের জান তোমাদের মাল; বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ (রহঃ) বলেন, ‘আমার মনে হয়, তিনি বলেছিলেনঃ এবং তোমাদের মান-সম্মান (অন্য মুসলমানদের জন্য) এ শহরে এ দিনের মতই মর্যাদা সম্পন্ন। শোন, (আমার এ বাণী যেন) তোমাদের মধ্যে উপস্থিত ব্যক্তি অনুপস্থিত ব্যক্তির নিকট পৌঁছে দেয়। বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ (রহঃ) বলেনঃ আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সত্য বলেছেন, তা-ই হয়েছে। তারপর আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’ দু’বার করে বললেন, হে লোক সকল! ‘আমি কি পৌঁছে দিয়েছি?’

(৬৭) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১০৩, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ১০৬)

৩/৩৮. অধ্যায়ঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর মিথ্যারোপ করার পাপ।

১০৬
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ الْجَعْدِ، قَالَ أَخْبَرَنَا شُعْبَةُ، قَالَ أَخْبَرَنِي مَنْصُورٌ، قَالَ سَمِعْتُ رِبْعِيَّ بْنَ حِرَاشٍ، يَقُولُ سَمِعْتُ عَلِيًّا، يَقُولُ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ لاَ تَكْذِبُوا عَلَىَّ، فَإِنَّهُ مَنْ كَذَبَ عَلَىَّ فَلْيَلِجِ النَّارَ

‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা আমার উপর মিথ্যারোপ করো না। কারণ আমার উপর যে মিথ্যারোপ করবে সে জাহান্নামে যাবে।

(মুসলিম মুকাদ্দামা, দ্বিতীয় অধ্যায়, হাঃ ২) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১০৪, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ১০৭)

১০৭
حَدَّثَنَا أَبُو الْوَلِيدِ، قَالَ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ جَامِعِ بْنِ شَدَّادٍ، عَنْ عَامِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الزُّبَيْرِ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ قُلْتُ لِلزُّبَيْرِ إِنِّي لاَ أَسْمَعُكَ تُحَدِّثُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَمَا يُحَدِّثُ فُلاَنٌ وَفُلاَنٌ‏.‏ قَالَ أَمَا إِنِّي لَمْ أُفَارِقْهُ وَلَكِنْ سَمِعْتُهُ يَقُولُ ‏ “‏ مَنْ كَذَبَ عَلَىَّ فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ

‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু’য্‌-যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমি আমার পিতা যুবায়রকে বললামঃ আমি তো আপনাকে অমুক অমুকের মত আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদীস বর্ণনা করতে শুনি না। তিনি বললেনঃ ‘জেনে রাখো, আমি তাঁর থেকে দূরে থাকিনি, কিন্তু আমি তাঁকে বলতে শুনেছি, যে আমার উপর মিথ্যারোপ করবে সে যেন জাহান্নামে তাঁর ঠিকানা বানিয়ে নিবে (এজন্য হাদীস বর্ণনা করি না)।’

(মুসলিম মুকাদ্দামা, দ্বিতীয় অধ্যায়, হাঃ ৩) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১০৫, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ১০৮)

১০৮
حَدَّثَنَا أَبُو مَعْمَرٍ، قَالَ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَارِثِ، عَنْ عَبْدِ الْعَزِيزِ، قَالَ أَنَسٌ إِنَّهُ لَيَمْنَعُنِي أَنْ أُحَدِّثَكُمْ حَدِيثًا كَثِيرًا أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ مَنْ تَعَمَّدَ عَلَىَّ كَذِبًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ এ কথাটি তোমাদের নিকট বহু হাদীস বর্ণনা করতে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায় যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ইচ্ছাকৃতভাবে আমার উপর মিথ্যারোপ করে সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়।

(আধুনিক প্রকাশনীঃ ১০৬, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ১০৯)

১০৯
حَدَّثَنَا مَكِّيُّ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، قَالَ حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ أَبِي عُبَيْدٍ، عَنْ سَلَمَةَ، قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏ “‏ مَنْ يَقُلْ عَلَىَّ مَا لَمْ أَقُلْ فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ

সালামা ইব্‌নু আক্‌ওয়া’ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি আমার উপর এমন কথা আরোপ করে যা আমি বলিনি, সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়।’

(আধুনিক প্রকাশনীঃ ১০৭, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ১১০)

১১০
حَدَّثَنَا مُوسَى، قَالَ حَدَّثَنَا أَبُو عَوَانَةَ، عَنْ أَبِي حَصِينٍ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ تَسَمَّوْا بِاسْمِي وَلاَ تَكْتَنُوا بِكُنْيَتِي، وَمَنْ رَآنِي فِي الْمَنَامِ فَقَدْ رَآنِي، فَإِنَّ الشَّيْطَانَ لاَ يَتَمَثَّلُ فِي صُورَتِي، وَمَنْ كَذَبَ عَلَىَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘আমার নামে তোমরা নাম রেখো; কিন্তু আমার উপনামে (কুনিয়াতে) তোমরা নাম রেখো না। আর যে আমাকে স্বপ্নে দেখে সে ঠিক আমাকেই দেখে। কারণ শয়তান আমার আকৃতির ন্যায় আকৃতি ধারণ করতে পারে না। যে ইচ্ছা করে আমার উপর মিথ্যারোপ করে সে যেন জাহান্নামে তার আসন বানিয়ে নেয়।’

(৩৫৩৯, ৬১৮৮, ৬১৯৭, ৬৯৯৩; মুসলিম মুকাদ্দামা, দ্বিতীয় অধ্যায়, হাঃ ৪) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১০৮, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ১১১)

৩/৩৯. অধ্যায়ঃ
ইল্‌ম লিপিবদ্ধ করা

১১১
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَلاَمٍ، قَالَ أَخْبَرَنَا وَكِيعٌ، عَنْ سُفْيَانَ، عَنْ مُطَرِّفٍ، عَنِ الشَّعْبِيِّ، عَنْ أَبِي جُحَيْفَةَ، قَالَ قُلْتُ لِعَلِيٍّ هَلْ عِنْدَكُمْ كِتَابٌ قَالَ لاَ، إِلاَّ كِتَابُ اللَّهِ، أَوْ فَهْمٌ أُعْطِيَهُ رَجُلٌ مُسْلِمٌ، أَوْ مَا فِي هَذِهِ الصَّحِيفَةِ‏.‏ قَالَ قُلْتُ فَمَا فِي هَذِهِ الصَّحِيفَةِ قَالَ الْعَقْلُ، وَفَكَاكُ الأَسِيرِ، وَلاَ يُقْتَلُ مُسْلِمٌ بِكَافِرٍ‏.‏

আবূ জুহাইফা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমি ‘আলী (রাঃ)-কে বললাম, আপনাদের নিকট কি কিছু লিপিবদ্ধ আছে? তিনি বললেনঃ ‘না, শুধুমাত্র আল্লাহর কিতাব রয়েছে, আর একজন মুসলিমকে যে জ্ঞান দান করা হয় সেই বুদ্ধি ও বিবেক। এছাড়া কিছু এ সহীফাতে লিপিবদ্ধ রয়েছে।’ তিনি [আবূ জুহাইফা (রাঃ)] বলেন, আমি বললাম, এ সহীফাটিতে কী আছে? তিনি বললেন, ‘ক্ষতিপূরণ ও বন্দী মুক্তির বিধান, আর এ বিধানটিও যে, ‘মুসলিমকে কাফির হত্যার বিনিময়ে হত্যা করা যাবে না।’

(১৮৭০, ৩০৪৭, ৩১৭২, ৩১৭৯, ৬৭৫৫, ৬৯০৩, ৬৯১৫, ৭৩০০ দ্রষ্টব্য) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১০৯, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ১১২)

১১২
حَدَّثَنَا أَبُو نُعَيْمٍ الْفَضْلُ بْنُ دُكَيْنٍ، قَالَ حَدَّثَنَا شَيْبَانُ، عَنْ يَحْيَى، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ خُزَاعَةَ، قَتَلُوا رَجُلاً مِنْ بَنِي لَيْثٍ عَامَ فَتْحِ مَكَّةَ بِقَتِيلٍ مِنْهُمْ قَتَلُوهُ، فَأُخْبِرَ بِذَلِكَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَرَكِبَ رَاحِلَتَهُ، فَخَطَبَ فَقَالَ ‏”‏ إِنَّ اللَّهَ حَبَسَ عَنْ مَكَّةَ الْقَتْلَ ـ أَوِ الْفِيلَ شَكَّ أَبُو عَبْدِ اللَّهِ ـ وَسَلَّطَ عَلَيْهِمْ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَالْمُؤْمِنِينَ، أَلاَ وَإِنَّهَا لَمْ تَحِلَّ لأَحَدٍ قَبْلِي، وَلاَ تَحِلُّ لأَحَدٍ بَعْدِي أَلاَ وَإِنَّهَا حَلَّتْ لِي سَاعَةً مِنْ نَهَارٍ، أَلاَ وَإِنَّهَا سَاعَتِي هَذِهِ حَرَامٌ، لاَ يُخْتَلَى شَوْكُهَا، وَلاَ يُعْضَدُ شَجَرُهَا، وَلاَ تُلْتَقَطُ سَاقِطَتُهَا إِلاَّ لِمُنْشِدٍ، فَمَنْ قُتِلَ فَهُوَ بِخَيْرِ النَّظَرَيْنِ إِمَّا أَنْ يُعْقَلَ، وَإِمَّا أَنْ يُقَادَ أَهْلُ الْقَتِيلِ ‏”‏‏.‏ فَجَاءَ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْيَمَنِ فَقَالَ اكْتُبْ لِي يَا رَسُولَ اللَّهِ‏.‏ فَقَالَ ‏”‏ اكْتُبُوا لأَبِي فُلاَنٍ ‏”‏‏.‏ فَقَالَ رَجُلٌ مِنْ قُرَيْشٍ إِلاَّ الإِذْخِرَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، فَإِنَّا نَجْعَلُهُ فِي بُيُوتِنَا وَقُبُورِنَا‏.‏ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ إِلاَّ الإِذْخِرَ، إِلاَّ الإِذْخِرَ ‏”‏‏.‏ قَالَ أَبُو عَبْدِ اللَّهِ يُقَالُ يُقَادُ بِالْقَافِ‏.‏ فَقِيلَ لأَبِي عَبْدِ اللَّهِ أَىُّ شَىْءٍ كَتَبَ لَهُ قَالَ كَتَبَ لَهُ هَذِهِ الْخُطْبَةَ‏.‏

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

মক্কা বিজয়কালে খুযা’আহ গোত্র লায়স গোত্রের জনৈক ব্যক্তিকে হত্যা করলো। এ হত্যা ছিলো তাদের এক নিহত ব্যক্তির প্রতিশোধ, যাকে ইতোপূর্বে লায়স গোত্রের লোক হত্যা করেছিলো। তারপর এ খবর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট পৌঁছল। তিনি তাঁর উটের উপর আরোহণ করে ভাষণ দিলেন, তিনি বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা মক্কা হতে ‘হত্যা’-কে কিংবা ‘হাতী’-কে রোধ করেছেন। (২৪৩৪, ৬৮৮০ দ্রষ্টব্য)

ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘হত্যা’ বলেছেন না ‘হাতী’ বলেছেন এ ব্যাপারে বর্ণনাকারী আবূ নু’আয়ম সন্দেহ পোষণ করেন। অন্যরা শুধু ‘হাতী’ শব্দ উল্লেখ করেছেন। অবশ্য মক্কাবাসীদের উপর আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং মুমিনগণকে (যুদ্ধের মাধ্যমে) বিজয়ী করা হয়েছে। জেনে রাখো, আমার পূর্বে কারও জন্য মক্কাকে হালাল করা হয়নি এবং আমার পরেও হালাল হবে না। জেনে রাখো, তাও আমার জন্য দিনের কিছু সময়ের জন্য বৈধ করা হয়েছিলো। আরো জেনে রাখো যে, আমার এই কথা মুহূর্তে আবার তা অবৈধ হয়ে গেছে। সেখানকার কোন কাঁটা কিংবা গাছ কাটা যাবে না এবং সেখানে পড়ে থাকা কোন বস্তু কুড়িয়ে নেয়া যাবে না। তবে ঘোষণা দেয়ার জন্য তা নিতে পারবে। আর কেউ নিহত হলে তার আপনজনদের জন্য দু’টি ব্যবস্থার যে কোন একটি গ্রহণের এখতিয়ার আছে। হয় তার ‘রক্তপণ নিবে নয় ‘ক্বিসাসের ফায়সালা’ গ্রহণ করবে। অতঃপর ইয়ামানবাসী জনৈক ব্যক্তি এসে বললো, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! (এ কথাগুলো) আমাকে লিখে দিন। তিনি (সাহাবীদের) বললেনঃ তোমরা অমুকের পিতাকে লিখে দাও। তারপর জনৈক কুরায়শ [‘আব্বাস (রাঃ)] বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! গাছপালা কাটার নিষেধাজ্ঞা হতে ইযখির (এক প্রকার লম্বা ঘাষ) বাদ দিন। কারণ তা আমরা আমাদের গৃহে ও কবরে কাজে লাগাই।’ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘ইযখির ব্যতীত, ইযখির [১] ব্যতিত।’

(আধুনিক প্রকাশনীঃ ১১০, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ১১৩)

[১] ইযখির শন জাতীয় এক প্রকার ঘাস।

১১৩
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، قَالَ حَدَّثَنَا عَمْرٌو، قَالَ أَخْبَرَنِي وَهْبُ بْنُ مُنَبِّهٍ، عَنْ أَخِيهِ، قَالَ سَمِعْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ، يَقُولُ مَا مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَحَدٌ أَكْثَرَ حَدِيثًا عَنْهُ مِنِّي، إِلاَّ مَا كَانَ مِنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو فَإِنَّهُ كَانَ يَكْتُبُ وَلاَ أَكْتُبُ‏.‏ تَابَعَهُ مَعْمَرٌ عَنْ هَمَّامٍ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ‏.‏

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীগণের মধ্যে ‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু ‘আম্‌র (রাঃ) ব্যতীত আর কারো নিকট আমার চেয়ে অধিক হাদীস নেই। কারণ তিনি লিখতেন, আর আমি লিখতাম না। মা’মার (রহঃ) হাম্মাম (রহঃ) সূত্রে আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

(আধুনিক প্রকাশনীঃ ১১১, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ১১৪)

১১৪
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سُلَيْمَانَ، قَالَ حَدَّثَنِي ابْنُ وَهْبٍ، قَالَ أَخْبَرَنِي يُونُسُ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ لَمَّا اشْتَدَّ بِالنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَجَعُهُ قَالَ ‏”‏ ائْتُونِي بِكِتَابٍ أَكْتُبُ لَكُمْ كِتَابًا لاَ تَضِلُّوا بَعْدَهُ ‏”‏‏.‏ قَالَ عُمَرُ إِنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم غَلَبَهُ الْوَجَعُ وَعِنْدَنَا كِتَابُ اللَّهِ حَسْبُنَا فَاخْتَلَفُوا وَكَثُرَ اللَّغَطُ‏.‏ قَالَ ‏”‏ قُومُوا عَنِّي، وَلاَ يَنْبَغِي عِنْدِي التَّنَازُعُ ‏”‏‏.‏ فَخَرَجَ ابْنُ عَبَّاسٍ يَقُولُ إِنَّ الرَّزِيَّةَ كُلَّ الرَّزِيَّةِ مَا حَالَ بَيْنَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَبَيْنَ كِتَابِهِ‏.‏

ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অসুখ যখন বৃদ্ধি পেলো তখন তিনি বললেনঃ ‘আমার নিকট লেখার জিনিস নিয়ে এসো, আমি তোমাদের এমন কিছু লিখে দিব যাতে পরে তোমরা আর পথভ্রষ্ট হবে না।’ ‘উমার (রাঃ) বললেন, ‘নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর রোগ-যন্ত্রণা প্রবল হয়ে গেছে (এমতাবস্থায় কিছু বলতে বা লিখতে তাঁর কষ্ট হবে)। আর আমাদের নিকট তো আল্লাহর কিতাব আছে, যা আমাদের জন্য যথেষ্ট।’ এতে সাহাবীগণের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দিলো এবং শোরগোল বেড়ে গেলো। তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘তোমরা আমার কাছ থেকে উঠে যাও। আমার নিকট ঝগড়া-বিবাদ করা অনুচিত।’ এ পর্যন্ত বর্ণনা করে ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) (যেখানে বসে হাদীস বর্ণনা করছিলেন সেখান থেকে) এ কথা বলতে বলতে বেরিয়ে এলেন যে, ‘হায় বিপদ, সাংঘাতিক বিপদ! আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর লেখনীর মধ্যে যা বাধ সেধেছে।’

(৩০৫৩, ৩১৬৮, ৪৪৩১, ৪৪৩২, ৫৬৬৯, ৭৩৬৬ দ্রষ্টব্য) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১১২, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ১১৫)

৩/৪০. অধ্যায়ঃ
রাতে ‘ইল্‌ম শিক্ষাদান এবং ওয়ায-নাসীহাত করা।

১১৫
حَدَّثَنَا صَدَقَةُ، أَخْبَرَنَا ابْنُ عُيَيْنَةَ، عَنْ مَعْمَرٍ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ هِنْدٍ، عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، وَعَمْرٍو، وَيَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ هِنْدٍ، عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، قَالَتِ اسْتَيْقَظَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ذَاتَ لَيْلَةٍ فَقَالَ ‏ “‏ سُبْحَانَ اللَّهِ مَاذَا أُنْزِلَ اللَّيْلَةَ مِنَ الْفِتَنِ وَمَاذَا فُتِحَ مِنَ الْخَزَائِنِ أَيْقِظُوا صَوَاحِبَاتِ الْحُجَرِ، فَرُبَّ كَاسِيَةٍ فِي الدُّنْيَا عَارِيَةٍ فِي الآخِرَةِ

উম্মু সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ এক রাতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিদ্রা হতে জেগে বলেনঃ সুবহানাল্লাহ্‌ ! এ রাতে কতই না বিপদাপদ নেমে আসছে এবং কতই না ভান্ডার উন্মুক্ত করা হচ্ছে! অন্য সব ঘরের নারীদেরকেও জানিয়ে দাও, ‘বহু মহিলা যারা দুনিয়ায় পোশাক পরিহিতা, তারা আখিরাতে হবে বিবস্ত্র।’

(১১২৬, ৩৫৯৯, ৫৮৪৪, ৬২১৮, ৭০৬৯ দ্রষ্টব্য) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১১৩, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ১১৬)

৩/৪১. অধ্যায়ঃ
রাতে ইল্‌মের আলোচনা করা।

১১৬
حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ عُفَيْرٍ، قَالَ حَدَّثَنِي اللَّيْثُ، قَالَ حَدَّثَنِي عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ خَالِدٍ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ سَالِمٍ، وَأَبِي، بَكْرِ بْنِ سُلَيْمَانَ بْنِ أَبِي حَثْمَةَ أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ، قَالَ صَلَّى بِنَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم الْعِشَاءَ فِي آخِرِ حَيَاتِهِ، فَلَمَّا سَلَّمَ قَامَ فَقَالَ ‏ “‏ أَرَأَيْتَكُمْ لَيْلَتَكُمْ هَذِهِ، فَإِنَّ رَأْسَ مِائَةِ سَنَةٍ مِنْهَا لاَ يَبْقَى مِمَّنْ هُوَ عَلَى ظَهْرِ الأَرْضِ أَحَدٌ ‏”‏‏.

‘আব্দুল্লাহ্‌ ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর জীবনের শেষের দিকে আমাদের নিয়ে ‘ইশার সালাত আদায় করলেন। সালাম ফিরানোর পর তিনি দাঁড়িয়ে বললেনঃ তোমরা কি এ রাতের সম্পর্কে জানো? বর্তমানে যারা পৃথিবীতে রয়েছে, একশ বছরের মাথায় তাদের কেউ আর অবশিষ্ট থাকবে না।

(৫৬৪, ৬০১; মুসলিম ৪৪/৫৩, হাঃ ২৫৩৬) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১১৪, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ১১৭)

১১৭
حَدَّثَنَا آدَمُ، قَالَ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، قَالَ حَدَّثَنَا الْحَكَمُ، قَالَ سَمِعْتُ سَعِيدَ بْنَ جُبَيْرٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ بِتُّ فِي بَيْتِ خَالَتِي مَيْمُونَةَ بِنْتِ الْحَارِثِ زَوْجِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَكَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم عِنْدَهَا فِي لَيْلَتِهَا، فَصَلَّى النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم الْعِشَاءَ، ثُمَّ جَاءَ إِلَى مَنْزِلِهِ، فَصَلَّى أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ، ثُمَّ نَامَ، ثُمَّ قَامَ، ثُمَّ قَالَ ‏ “‏ نَامَ الْغُلَيِّمُ ‏”‏‏.‏ أَوْ كَلِمَةً تُشْبِهُهَا، ثُمَّ قَامَ فَقُمْتُ عَنْ يَسَارِهِ، فَجَعَلَنِي عَنْ يَمِينِهِ، فَصَلَّى خَمْسَ رَكَعَاتٍ ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ، ثُمَّ نَامَ حَتَّى سَمِعْتُ غَطِيطَهُ ـ أَوْ خَطِيطَهُ ـ ثُمَّ خَرَجَ إِلَى الصَّلاَةِ‏.‏

ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আমার খালা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী মায়মূনা বিন্‌ত হারিস (রাঃ) এর ঘরে এক রাতে ছিলাম। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সে (পালার) রাতে সেখানে ছিলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘ইশার সালাত আদায় করে তাঁর ঘরে চলে আসলেন এবং চার রাক’আত সালাত আদায় করে শুয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ পর উঠে বললেনঃ বালকটি ঘুমিয়ে পড়েছে? বা এরূপ কোন কথা বললেন। অতঃপর (সালাতে) দাঁড়িয়ে গেলেন, আমিও তাঁর বাঁ দিকে গিয়ে দাঁড়ালাম। তিনি আমাকে তাঁর ডান দিকে সরিয়ে এনে পাঁচ রাক’আত সালাত আদায় করলেন। পরে আরো দু’ রাক’আত আদায় করলেন। অতঃপর শুয়ে পড়লেন। এমনকি আমি তাঁর নাক ডাকার আওয়াজ শুনতে পেলাম। অতঃপর উঠে তিনি (ফজরের) সালাতের জন্য বের হলেন।

(১৩৮, ১৮৩, ৬৯৭, ৬৯৮, ৬৯৯, ৭২৬, ৮৫৯, ১১৯৮, ৪৫৬৯, ৪৫৭০, ৪৫৭১, ৪৫৭২, ৫৯১৯, ৬২১৫, ৬৩১৬, ৭৪৫২ দ্রষ্টব্য) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১১৫, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ১১৮)

৩/৪২. অধ্যায়ঃ
‘ইলম আয়ত্ত করা।

১১৮
حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ حَدَّثَنِي مَالِكٌ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنِ الأَعْرَجِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ إِنَّ النَّاسَ يَقُولُونَ أَكْثَرَ أَبُو هُرَيْرَةَ، وَلَوْلاَ آيَتَانِ فِي كِتَابِ اللَّهِ مَا حَدَّثْتُ حَدِيثًا، ثُمَّ يَتْلُو ‏{‏إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنْزَلْنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ‏}‏ إِلَى قَوْلِهِ ‏{‏الرَّحِيمُ‏}‏ إِنَّ إِخْوَانَنَا مِنَ الْمُهَاجِرِينَ كَانَ يَشْغَلُهُمُ الصَّفْقُ بِالأَسْوَاقِ، وِإِنَّ إِخْوَانَنَا مِنَ الأَنْصَارِ كَانَ يَشْغَلُهُمُ الْعَمَلُ فِي أَمْوَالِهِمْ، وَإِنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ كَانَ يَلْزَمُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِشِبَعِ بَطْنِهِ وَيَحْضُرُ مَا لاَ يَحْضُرُونَ، وَيَحْفَظُ مَا لاَ يَحْفَظُونَ‏.‏

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ লোকে বলে, আবূ হুরায়রা (রাঃ) অধিক হাদীস বর্ণনা করে। (জেনে রাখো) কিতাবে দু’টি আয়াত যদি না থাকতো, তবে আমি একটি হাদীসও পেশ করতাম না। অতঃপর তিনি তিলাওয়াত করলেনঃ

إن الذين يكتمون ما أنزلنا من البينات والهدى من بعد ما بيناه للناس في الكتاب أولئك يلعنهم الله ويلعنهم اللاعنون . إلا الذين تابوا وأصلحوا وبينوا فأولئك أتوب عليهم وأنا التواب الرحيم

“আমি সেসব স্পষ্ট নিদর্শন ও পথ-নির্দেশ অবতীর্ণ করেছি মানুষের জন্য কিতাবে তা বিস্তারিত বর্ণনার পরও যারা তা গোপন রাখে আল্লাহ তাদেরকে অভিশাপ দেন এবং অভিশাপকারীগণও তাদেরকে অভিশাপ দেয় কিন্তু যারা তাওবাহ করে এবং আর সংশোধন করে এবং প্রকাশ করে দেয় যে, আমি তাদের (ক্ষমার) জন্য ফিরে আসি, আর আমি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সূরা আল-বাকারাহ ২/১৫৯-১৬০)। (প্রকৃত ঘটনা এই যে,) আমার মুহাজির ভাইয়েরা বাজারে কেনাবেচায় এবং আমার আনসার ভাইয়েরা জমা-জমির কাজে মশগুল থাকতো। আর আবূ হুরায়রা (রাঃ) (অভুক্ত থেকে) তুষ্ট থেকে আল্লাহর রাসূল –এর সঙ্গে লেগে থাকতো। তাই তারা যখন উপস্থিত থাকতো না, তখন সে উপস্থিত থাকতো এবং তারা যা আয়ত্ত করতো না সে তা আয়ত্ত রাখতো।

(১১৯, ২০৪৭, ২৩৫০, ৩৬৪৮, ৭৩৫৪ দ্রষ্টব্য) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১১৬, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ১১৯)

১১৯
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ أَبِي بَكْرٍ أَبُو مُصْعَبٍ، قَالَ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ بْنِ دِينَارٍ، عَنِ ابْنِ أَبِي ذِئْبٍ، عَنْ سَعِيدٍ الْمَقْبُرِيِّ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنِّي أَسْمَعُ مِنْكَ حَدِيثًا كَثِيرًا أَنْسَاهُ‏.‏ قَالَ ‏”‏ ابْسُطْ رِدَاءَكَ ‏”‏ فَبَسَطْتُهُ‏.‏ قَالَ فَغَرَفَ بِيَدَيْهِ ثُمَّ قَالَ ‏”‏ ضُمُّهُ ‏”‏ فَضَمَمْتُهُ فَمَا نَسِيتُ شَيْئًا بَعْدَهُ‏.

حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ الْمُنْذِرِ قَالَ حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي فُدَيْكٍ بِهَذَا أَوْ قَالَ غَرَفَ بِيَدِهِ فِيهِ‏.‏

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি বললামঃ ‘হে আল্লাহর রসূল! আমি আপনার নিকট হতে অনেক হাদীস শুনি কিন্তু ভুলে যাই।’ তিনি বললেনঃ তোমার চাদর মেলে ধরো। আমি তা মেলে ধরলাম। তিনি দু’হাত খাবল করে তাতে কিছু ঢেলে দেয়ার মতো করে বললেনঃ এটা তোমার বুকের সাথে লাগাও। আমি তা বুকের সাথে লাগালাম। অতঃপর আমি আর কিছুই ভুলে যাইনি।

(১১৮) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১১৭, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ১২০)

ইবরাহীম ইব্‌নুল মুনযির (রহঃ) …… ইব্‌নু আবূ ফুদায়ক (রহঃ) সূত্রে একইরূপ হাদীস বর্ণনা করেন এবং তাতে বলেন যে, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর হাত দিয়ে সে চাদরের মধ্যে (কিছু) দিলেন।

(ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ১২১)

১২০
حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ، قَالَ حَدَّثَنِي أَخِي، عَنِ ابْنِ أَبِي ذِئْبٍ، عَنْ سَعِيدٍ الْمَقْبُرِيِّ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ حَفِظْتُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وِعَاءَيْنِ، فَأَمَّا أَحَدُهُمَا فَبَثَثْتُهُ، وَأَمَّا الآخَرُ فَلَوْ بَثَثْتُهُ قُطِعَ هَذَا الْبُلْعُومُ‏.‏

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে দু’পাত্র ‘ইলম আয়ত্ত করে রেখেছিলাম। তার একটি পাত্র আমি বিতরণ করে দিয়েছি। আর অপরটি এমন যে, প্রকাশ করলে আমার কণ্ঠনালী কেটে দেয়া হবে। ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, হাদীসে উল্লিখিত الْبُلْعُومُ শব্দের অর্থ খাদ্যনালী।

(আধুনিক প্রকাশনীঃ ১১৮, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ১২২)

৩/৪৩. অধ্যায়ঃ
‘আলিমদের কথা শ্রবণের জন্য লোকদের চুপ করানো।

১২১
حَدَّثَنَا حَجَّاجٌ، قَالَ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، قَالَ أَخْبَرَنِي عَلِيُّ بْنُ مُدْرِكٍ، عَنْ أَبِي زُرْعَةَ، عَنْ جَرِيرٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ لَهُ فِي حَجَّةِ الْوَدَاعِ ‏”‏ اسْتَنْصِتِ النَّاسَ ‏”‏ فَقَالَ ‏”‏ لاَ تَرْجِعُوا بَعْدِي كُفَّارًا يَضْرِبُ بَعْضُكُمْ رِقَابَ بَعْضٍ

জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

বিদায় হাজ্জের সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ তুমি লোকদেরকে চুপ করিয়ে দাও, তারপর তিনি বললেনঃ ‘আমার পরে তোমরা একে অপরের গর্দান কাটাকাটি করে কাফির (এর মতো) হয়ে যেও না।’

(৪৪০৫, ৬৮৬৯, ৭০৮০; মুসলিম ১/২৯, হাঃ ৬৫, আহমাদ ১৯২৩৭) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১১৯, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ১২৩)

৩/৪৪. অধ্যায়ঃ
‘আলিমের জন্য মুস্তাহাব এই যে, সবচেয়ে জ্ঞানী কে? এ প্রশ্ন যখন তাঁকে করা হয় তখন তার উচিত এটা আল্লাহর দিকে সোপর্দ করা।

১২২
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُحَمَّدٍ، قَالَ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، قَالَ حَدَّثَنَا عَمْرٌو، قَالَ أَخْبَرَنِي سَعِيدُ بْنُ جُبَيْرٍ، قَالَ قُلْتُ لاِبْنِ عَبَّاسٍ إِنَّ نَوْفًا الْبِكَالِيَّ يَزْعُمُ أَنَّ مُوسَى لَيْسَ بِمُوسَى بَنِي إِسْرَائِيلَ، إِنَّمَا هُوَ مُوسَى آخَرُ‏.‏ فَقَالَ كَذَبَ عَدُوُّ اللَّهِ، حَدَّثَنَا أُبَىُّ بْنُ كَعْبٍ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏”‏ قَامَ مُوسَى النَّبِيُّ خَطِيبًا فِي بَنِي إِسْرَائِيلَ، فَسُئِلَ أَىُّ النَّاسِ أَعْلَمُ فَقَالَ أَنَا أَعْلَمُ‏.‏ فَعَتَبَ اللَّهُ عَلَيْهِ، إِذْ لَمْ يَرُدَّ الْعِلْمَ إِلَيْهِ، فَأَوْحَى اللَّهُ إِلَيْهِ أَنَّ عَبْدًا مِنْ عِبَادِي بِمَجْمَعِ الْبَحْرَيْنِ هُوَ أَعْلَمُ مِنْكَ‏.‏ قَالَ يَا رَبِّ وَكَيْفَ بِهِ فَقِيلَ لَهُ احْمِلْ حُوتًا فِي مِكْتَلٍ فَإِذَا فَقَدْتَهُ فَهْوَ ثَمَّ، فَانْطَلَقَ وَانْطَلَقَ بِفَتَاهُ يُوشَعَ بْنِ نُونٍ، وَحَمَلاَ حُوتًا فِي مِكْتَلٍ، حَتَّى كَانَا عِنْدَ الصَّخْرَةِ وَضَعَا رُءُوسَهُمَا وَنَامَا فَانْسَلَّ الْحُوتُ مِنَ الْمِكْتَلِ فَاتَّخَذَ سَبِيلَهُ فِي الْبَحْرِ سَرَبًا، وَكَانَ لِمُوسَى وَفَتَاهُ عَجَبًا، فَانْطَلَقَا بَقِيَّةَ لَيْلَتِهِمَا وَيَوْمِهِمَا فَلَمَّا أَصْبَحَ قَالَ مُوسَى لِفَتَاهُ آتِنَا غَدَاءَنَا، لَقَدْ لَقِينَا مِنْ سَفَرِنَا هَذَا نَصَبًا، وَلَمْ يَجِدْ مُوسَى مَسًّا مِنَ النَّصَبِ حَتَّى جَاوَزَ الْمَكَانَ الَّذِي أُمِرَ بِهِ‏.‏ فَقَالَ لَهُ فَتَاهُ أَرَأَيْتَ إِذْ أَوَيْنَا إِلَى الصَّخْرَةِ فَإِنِّي نَسِيتُ الْحُوتَ، قَالَ مُوسَى ذَلِكَ مَا كُنَّا نَبْغِي، فَارْتَدَّا عَلَى آثَارِهِمَا قَصَصًا، فَلَمَّا انْتَهَيَا إِلَى الصَّخْرَةِ إِذَا رَجُلٌ مُسَجًّى بِثَوْبٍ ـ أَوْ قَالَ تَسَجَّى بِثَوْبِهِ ـ فَسَلَّمَ مُوسَى‏.‏ فَقَالَ الْخَضِرُ وَأَنَّى بِأَرْضِكَ السَّلاَمُ فَقَالَ أَنَا مُوسَى‏.‏ فَقَالَ مُوسَى بَنِي إِسْرَائِيلَ قَالَ نَعَمْ‏.‏ قَالَ هَلْ أَتَّبِعُكَ عَلَى أَنْ تُعَلِّمَنِي مِمَّا عُلِّمْتَ رَشَدًا قَالَ إِنَّكَ لَنْ تَسْتَطِيعَ مَعِيَ صَبْرًا، يَا مُوسَى إِنِّي عَلَى عِلْمٍ مِنْ عِلْمِ اللَّهِ عَلَّمَنِيهِ لاَ تَعْلَمُهُ أَنْتَ، وَأَنْتَ عَلَى عِلْمٍ عَلَّمَكَهُ لاَ أَعْلَمُهُ‏.‏ قَالَ سَتَجِدُنِي إِنْ شَاءَ اللَّهُ صَابِرًا، وَلاَ أَعْصِي لَكَ أَمْرًا، فَانْطَلَقَا يَمْشِيَانِ عَلَى سَاحِلِ الْبَحْرِ لَيْسَ لَهُمَا سَفِينَةٌ، فَمَرَّتْ بِهِمَا سَفِينَةٌ، فَكَلَّمُوهُمْ أَنْ يَحْمِلُوهُمَا، فَعُرِفَ الْخَضِرُ، فَحَمَلُوهُمَا بِغَيْرِ نَوْلٍ، فَجَاءَ عُصْفُورٌ فَوَقَعَ عَلَى حَرْفِ السَّفِينَةِ، فَنَقَرَ نَقْرَةً أَوْ نَقْرَتَيْنِ فِي الْبَحْرِ‏.‏ فَقَالَ الْخَضِرُ يَا مُوسَى، مَا نَقَصَ عِلْمِي وَعِلْمُكَ مِنْ عِلْمِ اللَّهِ إِلاَّ كَنَقْرَةِ هَذَا الْعُصْفُورِ فِي الْبَحْرِ‏.‏ فَعَمَدَ الْخَضِرُ إِلَى لَوْحٍ مِنْ أَلْوَاحِ السَّفِينَةِ فَنَزَعَهُ‏.‏ فَقَالَ مُوسَى قَوْمٌ حَمَلُونَا بِغَيْرِ نَوْلٍ، عَمَدْتَ إِلَى سَفِينَتِهِمْ فَخَرَقْتَهَا لِتُغْرِقَ أَهْلَهَا قَالَ أَلَمْ أَقُلْ إِنَّكَ لَنْ تَسْتَطِيعَ مَعِيَ صَبْرًا قَالَ لاَ تُؤَاخِذْنِي بِمَا نَسِيتُ‏.‏ فَكَانَتِ الأُولَى مِنْ مُوسَى نِسْيَانًا‏.‏ فَانْطَلَقَا فَإِذَا غُلاَمٌ يَلْعَبُ مَعَ الْغِلْمَانِ، فَأَخَذَ الْخَضِرُ بِرَأْسِهِ مِنْ أَعْلاَهُ فَاقْتَلَعَ رَأْسَهُ بِيَدِهِ‏.‏ فَقَالَ مُوسَى أَقَتَلْتَ نَفْسًا زَكِيَّةً بِغَيْرِ نَفْسٍ قَالَ أَلَمْ أَقُلْ لَكَ إِنَّكَ لَنْ تَسْتَطِيعَ مَعِيَ صَبْرًا ـ قَالَ ابْنُ عُيَيْنَةَ وَهَذَا أَوْكَدُ ـ فَانْطَلَقَا حَتَّى إِذَا أَتَيَا أَهْلَ قَرْيَةٍ اسْتَطْعَمَا أَهْلَهَا، فَأَبَوْا أَنْ يُضَيِّفُوهُمَا، فَوَجَدَا فِيهَا جِدَارًا يُرِيدُ أَنْ يَنْقَضَّ فَأَقَامَهُ‏.‏ قَالَ الْخَضِرُ بِيَدِهِ فَأَقَامَهُ‏.‏ فَقَالَ لَهُ مُوسَى لَوْ شِئْتَ لاَتَّخَذْتَ عَلَيْهِ أَجْرًا‏.‏ قَالَ هَذَا فِرَاقُ بَيْنِي وَبَيْنِكَ ‏”‏‏.‏ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ يَرْحَمُ اللَّهُ مُوسَى، لَوَدِدْنَا لَوْ صَبَرَ حَتَّى يُقَصَّ عَلَيْنَا مِنْ أَمْرِهِمَا

সা’ঈদ ইব্‌নু জুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমি ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) কে বললাম, নাওফ আল-বাকালী দাবী করে যে, মূসা (‘আঃ) [যিনি খাযির (‘আঃ) এর সাক্ষাৎ লাভ করেছিলেন তিনি] বনী ইসরাঈলের মূসা নন বরং তিনি অন্য এক মূসা। (একথা শুনে) তিনি বললেনঃ আল্লাহর দুশমন মিথ্যা বলেছে। উবাই ইব্‌নু কা’ব (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেনঃ মূসা (‘আঃ) একদা বনী ইসরাঈলদের মধ্যে বক্তৃতা দিতে দাঁড়ালেন। তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়, সবচেয়ে জ্ঞানী কে? তিনি বললেন, ‘আমি সবচেয়ে জ্ঞানী।’ মহান আল্লাহ তাঁকে সতর্ক করে দিলেন। কেননা তিনি ‘ইলমকে আল্লাহর দিকে সোপর্দ করেন নি। অতঃপর আল্লাহ তাঁর নিকট এ ওয়াহী প্রেরণ করলেনঃ দুই সমুদ্রের সঙ্গমস্থলে আমার বান্দাদের মধ্যে এক বান্দা রয়েছে, যে তোমার চেয়ে অধিক জ্ঞানী। তিনি বলেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! কীভাবে তার সাক্ষাৎ পাবো?’ তখন তাঁকে বলা হল, থলের মধ্যে একটি মাছ নিয়ে নাও। অতঃপর যেখানে সেটি হারিয়ে ফেলবে সেখানেই তাকে পাবে। অতঃপর তিনি ইউশা ‘ইব্‌নু নূনকে সাথে নিয়ে যাত্রা করলেন। তাঁরা থলের মধ্যে একটি মাছ নিলেন। পথিমধ্যে তাঁরা একটি বড় পাথরের নিকট এসে মাথা রেখে শুয়ে পড়লেন। তারপর মাছটি থলে হতে বেরিয়ে গেলো এবং সুড়ঙ্গের মত পথ করে সমুদ্রে চলে গেলো। এ ব্যাপারটি মূসা (‘আঃ) ও তাঁর খাদিম এর জন্য ছিলো আশ্চর্যের বিষয়। অতঃপর তাঁরা তাদের বাকী দিন ও রাতভর চলতে থাকলেন। পরে ভোরবেলা মূসা তাঁর খাদিমকে বললেন, ‘আমাদের নাস্তা নিয়ে এস, আমরা আমাদের এ সফরে খুবই ক্লান্ত, আর মূসা (‘আঃ) কে যে স্থানের নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো, সে স্থান অতিক্রম করার পূর্বে তিনি ক্লান্তি অনুভব করেন নি। তারপর তাঁর সাথী তাঁকে বলল, ‘আপনি কি লক্ষ্য করেছেন, আমরা যখন পাথরের পাশে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম, তখন আমি মাছের কথা ভুলে গিয়েছিলাম?’ মূসা (‘আঃ) বললেন, ‘আমরা তো সেই স্থানটিরই খোঁজ করছিলাম।’ অতঃপর তাঁরা পদচিহ্ন ধরে ফিরে চললেন। তাঁরা সেই পাথরের নিকট পৌঁছে দেখতে গেলেন, এক ব্যক্তি (বর্ণনাকারী বলেন,) কাপড় মুড়ি দিয়ে আছেন। মূসা (‘আঃ) তাঁকে সালাম দিলেন। তখন খাযির বললেন, এ দেশে সালাম কোথা হতে আসলো! তিনি বললেন, ‘আমি মূসা।’ খাযির প্রশ্ন করলেন, ‘বনী ইসরাঈলের মূসা (‘আঃ)?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ। তিনি আরো বললেন, সত্য পথের যে জ্ঞান আপনাকে দান করা হয়েছে, তা থেকে শিক্ষা নেয়ার জন্য আমি কি আপনাকে অনুসরণ করতে পারি?’ খাযির বললেন, “তুমি কিছুতেই আমার সাথে ধৈর্য ধরে থাকতে পারবে না। হে মূসা (‘আঃ)! আল্লাহর ‘ইলমের মধ্যে আমি এমন এক ‘ইলম নিয়ে আছি যা তিনি কেবল আমাকেই শিখিয়েছেন, যা তুমি জানো না। আর তুমি এমন ‘ইলমের অধিকারী, যা আল্লাহ তোমাকেই শিখিয়েছেন, তা আমি জানি না।” ‘মূসা (‘আঃ) বললেন, “আল্লাহ চাইলে আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন এবং আমি আপনার আদেশ অমান্য করবো না। অতঃপর তাঁরা দু’জন সমুদ্র তীর দিয়ে চলতে লাগলেন, তাদের কোন নৌকা ছিলো না। ইতোমধ্যে তাদের নিকট দিয়ে একটি নৌকা যাচ্ছিলো। তাঁরা নৌকাওয়ালাদের সাথে তাদের তুলে নেয়ার কথা বললেন। তারা খাযিরকে চিনতে পারলো এবং ভাড়া ব্যতিরেকে তাঁদের নৌকায় তুলে নিলো। তখন একটি চড়ুই পাখি এসে নৌকার এক প্রান্তে বসে একবার কি দু’বার সমুদ্রে তার ঠোঁট ডুবালো। খাযির বললেনঃ ‘হে মুসা (‘আঃ) ! আমার এবং তোমার জ্ঞান (সব মিলেও) আল্লাহর জ্ঞানের তুলনায় চড়ুই পাখির ঠোঁটে যতটুকু পানি এসেছে তার চেয়েও কম।’ অতঃপর খাযির নৌকার তক্তাগুলোর মধ্য থেকে একটি খুলে ফেললেন। মূসা (‘আঃ) বললেন, এরা আমাদের বিনা ভাড়ায় আরোহণ করিয়েছে, আর আপনি আরোহীদের ডুবিয়ে দেয়ার জন্য নৌকাটি ছিদ্র করে দিলেন?’ খাযির বললেন, “আমি কি বলিনি যে, তুমি আমার সঙ্গে কিছুতেই ধৈর্য ধরে থাকতে পারবে না?” মূসা (‘আঃ) বললেন, ‘আমার ত্রুটির জন্য আমাকে অপরাধী করবেন না এবং আমার ব্যাপারে অধিক কঠোর হবেন না।’ বর্ণনাকারী বলেন, এটা মূসা (‘আঃ) এর প্রথমবারের ভুল। অতঃপর তাঁরা দু’জন (নৌকা থেকে নেমে) চলতে লাগলেন। (পথে) একটি বলক অন্যান্য বালকের সাথে খেলা করছিলো। খাযির তার মাথার উপর দিক দিয়ে ধরলেন এবং হাত দিয়ে তার মাথা ছিন্ন করে ফেললেন। মূসা (‘আঃ) বললেন, ‘আপনি হত্যার অপরাধ ছাড়াই একটি নিষ্পাপ জীবন নাশ করলেন?’ খাযির বললেন “আমি কি তোমাকে বলিনি যে, তুমি আমার সঙ্গে কখনো ধৈর্য ধরতে পারবে না?” ইব্‌নু ‘উয়ায়নাহ (রহঃ) বলেন, এটা ছিলো পূর্বের চেয়ে অধিক জোরালো। “তারপর আবারো চলতে লাগলেন; চলতে চলতে তারা এক গ্রামের অধিবাসীদের নিকট পৌঁছে তাদের নিকট খাদ্য চাইলেন কিন্তু তারা তাঁদের মেহমানদারী করতে অস্বীকার করল। অতঃপর সেখানে তাঁরা ধ্বসে যাওয়ার উপক্রম এমন একটি প্রাচীর দেখতে পেলেন। খাযির তাঁর হাত দিয়ে সেটি দাঁড় করে দিলেন। মূসা (‘আঃ) বললেন, “আপনি ইচ্ছে করলে এর জন্য মজুরী নিতে পারতেন। তিনি বললেন, ‘এখানেই তোমার আর আমার মধ্যে সম্পর্কের অবসান।” (সূরা কাহফঃ ৭৭-৭৮); নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা মূসার উপর রহম করুন। আমাদের কতই না মনোবাঞ্চা পূর্ণ হতো যদি তিনি সবর করতেন, তাহলে আমাদের নিকট তাঁদের আরো ঘটনাবলী বর্ণনা করা হতো। [১]

(৭৪; মুসলিম ৪৩/৪৬, হাঃ ২৩৮০, আহমাদ ২১১৬৭) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১২০, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ১২৪)

[১] এ হাদিসে বর্ণিত আয়াতে কারীমাহগুলো সূরা কাহ্‌ফ ৬১ থেকে ৭৮ আয়াত পর্যন্ত।

৩/৪৫. অধ্যায়ঃ
‘আলিমের বসে থাকা অবস্থায় দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করা।

১২৩
حَدَّثَنَا عُثْمَانُ، قَالَ أَخْبَرَنَا جَرِيرٌ، عَنْ مَنْصُورٍ، عَنْ أَبِي وَائِلٍ، عَنْ أَبِي مُوسَى، قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَا الْقِتَالُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَإِنَّ أَحَدَنَا يُقَاتِلُ غَضَبًا، وَيُقَاتِلُ حَمِيَّةً‏.‏ فَرَفَعَ إِلَيْهِ رَأْسَهُ ـ قَالَ وَمَا رَفَعَ إِلَيْهِ رَأْسَهُ إِلاَّ أَنَّهُ كَانَ قَائِمًا ـ فَقَالَ ‏ “‏ مَنْ قَاتَلَ لِتَكُونَ كَلِمَةُ اللَّهِ هِيَ الْعُلْيَا فَهُوَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ ‏”‏‏.‏

আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহর পথে যুদ্ধ কোনটি, কেননা আমাদের কেউ লড়াই করে রাগের বশবর্তী হয়ে, আবার কেউ লড়াই করে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য। তিনি তার দিকে মাথা তুলে তাকালেন। বর্ণনাকারী বলেন, তাঁর মাথা তোলার কারণ ছিলো যে, সে ছিলো দাঁড়ানো। অতঃপর তিনি বললেনঃ ‘আল্লাহর বাণী বিজয়ী করার জন্য যে যুদ্ধ করে তার লড়াই আল্লাহর পথে হয়।’

(২৮১০, ৩১২৬, ৭৪৫৮; মুসলিম ৩৩/৪২, হাঃ ১৯০৪, আহমাদ ১৯৫১০, ১৯৫৬০, ১৯৬১৩) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১২১, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ১২৫)

৩/৪৬. অধ্যায়ঃ
কঙ্কর মারার সময় কোন মাসআলা জিজ্ঞেস করা।

১২৪
حَدَّثَنَا أَبُو نُعَيْمٍ، قَالَ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ أَبِي سَلَمَةَ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ عِيسَى بْنِ طَلْحَةَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، قَالَ رَأَيْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم عِنْدَ الْجَمْرَةِ وَهُوَ يُسْأَلُ، فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ نَحَرْتُ قَبْلَ أَنْ أَرْمِيَ‏.‏ قَالَ ‏”‏ ارْمِ وَلاَ حَرَجَ ‏”‏‏.‏ قَالَ آخَرُ يَا رَسُولَ اللَّهِ حَلَقْتُ قَبْلَ أَنْ أَنْحَرَ‏.‏ قَالَ ‏”‏ انْحَرْ وَلاَ حَرَجَ ‏”‏‏.‏ فَمَا سُئِلَ عَنْ شَىْءٍ قُدِّمَ وَلاَ أُخِّرَ إِلاَّ قَالَ افْعَلْ وَلاَ حَرَجَ‏.‏

‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখলাম, জামরাহ্‌র নিকট তাঁকে মাসআলা জিজ্ঞেস করা হচ্ছে। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলোঃ ‘হে আল্লাহর রসূল! আমি কঙ্কর মারার পূর্বেই কুরবানী করে ফেলেছি।’ তিনি বললেনঃ ‘কঙ্কর মারো, তাতে কোন ক্ষতি নেই।’ অন্য এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলোঃ ‘হে আল্লাহর রসূল! আমি কুরবানী করার পূর্বেই মাথা কামিয়ে ফেলেছি।’ তিনি বললেনঃ ‘কুরবানী করে নাও, কোন ক্ষতি নেই।’ বস্তুত আগ পিছ করার যে কোন প্রশ্নই তাঁকে করা হচ্ছিলো, তিনি বলছিলেনঃ ‘করো, কোন ক্ষতি নেই।’

(৮৩) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১২২, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ১২৬)

৩/৪৭. অধ্যায়ঃ
আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণী, وَمَا أُوتِيتُمْ مِنَ الْعِلْمِ إِلاَّ قَلِيلاً “তোমাদেরকে ইল্‌ম দেওয়া হয়েছে অতি অল্পই।” (সূরা আল-ইসরা : ৮৫)

১২৫
حَدَّثَنَا قَيْسُ بْنُ حَفْصٍ، قَالَ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَاحِدِ، قَالَ حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ، سُلَيْمَانُ عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ عَلْقَمَةَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ بَيْنَا أَنَا أَمْشِي، مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِي خَرِبِ الْمَدِينَةِ، وَهُوَ يَتَوَكَّأُ عَلَى عَسِيبٍ مَعَهُ، فَمَرَّ بِنَفَرٍ مِنَ الْيَهُودِ، فَقَالَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ سَلُوهُ عَنِ الرُّوحِ‏.‏ وَقَالَ بَعْضُهُمْ لاَ تَسْأَلُوهُ لاَ يَجِيءُ فِيهِ بِشَىْءٍ تَكْرَهُونَهُ‏.‏ فَقَالَ بَعْضُهُمْ لَنَسْأَلَنَّهُ‏.‏ فَقَامَ رَجُلٌ مِنْهُمْ فَقَالَ يَا أَبَا الْقَاسِمِ، مَا الرُّوحُ فَسَكَتَ‏.‏ فَقُلْتُ إِنَّهُ يُوحَى إِلَيْهِ‏.‏ فَقُمْتُ، فَلَمَّا انْجَلَى عَنْهُ، قَالَ ‏{‏وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الرُّوحِ قُلِ الرُّوحُ مِنْ أَمْرِ رَبِّي وَمَا أُوتُيتُمْ مِنَ الْعِلْمِ إِلاَّ قَلِيلاً‏}‏‏.‏ قَالَ الأَعْمَشُ هَكَذَا فِي قِرَاءَتِنَا‏.

‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু মাস’ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ একদা আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে মদীনার বসতিহীন এলাকা দিয়ে চলছিলাম। তিনি একখানি খেজুরের ডালে ভর দিয়ে একদল ইয়াহুদীর কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তারা একজন অন্যজনকে বলতে লাগলো, ‘তাঁকে রূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো।’ আর একজন বললো, ‘তাঁকে কোন প্রশ্ন করো না, হয়ত এমন কোন জবাব দিবেন যা তোমরা পছন্দ করোনা।’ আবার কেউ কেউ বললো, ‘তাঁকে আমরা প্রশ্ন করবোই।’ অতঃপর তাদের মধ্য হতে এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললো, ‘হে আবুল কাসিম! রূহ কী?’ আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চুপ করে রইলেন, আমি মনে মনে বললাম, তাঁর প্রতি ওয়াহী অবতীর্ণ হচ্ছে। তাই আমি দাঁড়িয়ে রইলাম। অতঃপর যখন সে অবস্থা কেটে গেলো তখন তিনি বললেনঃ

وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الرُّوحِ قُلِ الرُّوحُ مِنْ أَمْرِ رَبِّي وَمَا أُوتُيتُمْ مِنَ الْعِلْمِ إِلاَّ قَلِيلاً‏‏‏.‏

“তারা তোমাকে রূহ সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বলো, রূহ আমার প্রতিপালকের আদেশ ঘটিত। এবং তাদেরকে সামান্যই জ্ঞান দেয়া হয়েছে।” (সূরা আল-ইসরা ১৭/৮৫)

আ’মাশ (রহঃ) বলেন, এভাবেই আয়াতটিকে আমাদের কিরাআতে أُوتِيتُم এর স্থলে أُوتُو পড়া হয়েছে।

(৪৭২১, ৭২৯৭, ৭৪৫৬, ৭৪৬২; মুসলিম ৫০/৪, হাঃ ২৭৯৪, আহমাদ ৩৬৮৮) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১২৩, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ১২৭)

৩/৪৮. অধ্যায়ঃ
কোন কোন মুস্তাহাব কাজ এই আশঙ্কায় ছেড়ে দেয়া যে, কিছু কম মেধাবী লোকে ভুল বুঝতে পারে এবং তারা আরো অধিকতর বিভ্রান্তিতে পড়তে পারে।

১২৬
حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ مُوسَى، عَنْ إِسْرَائِيلَ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنِ الأَسْوَدِ، قَالَ قَالَ لِي ابْنُ الزُّبَيْرِ كَانَتْ عَائِشَةُ تُسِرُّ إِلَيْكَ كَثِيرًا فَمَا حَدَّثَتْكَ فِي الْكَعْبَةِ قُلْتُ قَالَتْ لِي قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ يَا عَائِشَةُ، لَوْلاَ قَوْمُكِ حَدِيثٌ عَهْدُهُمْ ـ قَالَ ابْنُ الزُّبَيْرِ بِكُفْرٍ ـ لَنَقَضْتُ الْكَعْبَةَ فَجَعَلْتُ لَهَا بَابَيْنِ باب يَدْخُلُ النَّاسُ، وَبَابٌ يَخْرُجُونَ ‏”‏‏.‏ فَفَعَلَهُ ابْنُ الزُّبَيْرِ

আসওয়াদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ ইব্‌নু যুবায়র (রাঃ) আমাকে বললেন, ‘আয়িশা (রাঃ) তোমাকে অনেক হাদীস গোপনে বলতেন। বলো তো কা’বা সম্পর্কে তোমাকে কী বলেছেন? আমি বললাম, তিনি আমাকে বলেছেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘আয়িশা! তোমাদের কওম যদি (ইসলাম গ্রহণে) নতুন না হতো, ইব্‌নু যুবায়র বলেনঃ কুফর থেকে; তবে আমি কা’বা ভেঙ্গে ফেলে তার দু’টি দরজা বানাতাম। এক দরজা দিয়ে লোক প্রবেশ করতো আর এক দরজা দিয়ে বের হতো। (পরবর্তীকালে মক্কার আধিপত্য পেলে) তিনি এরূপ করেছিলেন।

(১৫৮৩, ১৫৮৪, ১৫৮৫, ১৫৮৬, ৩৩৬৮, ৪৪৮৪, ৭২৪৩ দ্রষ্টব্য) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১২৪, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ১২৮)

৩/৪৯. অধ্যায়ঃ
বুঝতে না পারার আশঙ্কায় ‘ইলম শিক্ষায় কোন এক গোত্র ছেড়ে আর এক গোত্র বেছে নেয়া।

‘আলী (রাঃ) বলেন, ‘মানুষের কাছে সেই ধরনের কথা বল, যা তারা বুঝতে পারে। তোমরা কি পছন্দ কর যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি মিথ্যা আরোপ করা হোক ?

১২৭
حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ مُوسَى عَنْ مَعْرُوفِ بْنِ خَرَّبُوذٍ عَنْ أَبِي الطُّفَيْلِ عَنْ عَلِيٍّ بِذَلِكَ‏.‏

‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ



(আধুনিক প্রকাশনীঃ নাই, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ১২৯)

১২৮
حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، قَالَ حَدَّثَنَا مُعَاذُ بْنُ هِشَامٍ، قَالَ حَدَّثَنِي أَبِي، عَنْ قَتَادَةَ، قَالَ حَدَّثَنَا أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم وَمُعَاذٌ رَدِيفُهُ عَلَى الرَّحْلِ قَالَ ‏”‏ يَا مُعَاذُ بْنَ جَبَلٍ ‏”‏‏.‏ قَالَ لَبَّيْكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَسَعْدَيْكَ‏.‏ قَالَ ‏”‏ يَا مُعَاذُ ‏”‏‏.‏ قَالَ لَبَّيْكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَسَعْدَيْكَ‏.‏ ثَلاَثًا‏.‏ قَالَ ‏”‏ مَا مِنْ أَحَدٍ يَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ صِدْقًا مِنْ قَلْبِهِ إِلاَّ حَرَّمَهُ اللَّهُ عَلَى النَّارِ ‏”‏‏.‏ قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَفَلاَ أُخْبِرُ بِهِ النَّاسَ فَيَسْتَبْشِرُوا قَالَ ‏”‏ إِذًا يَتَّكِلُوا ‏”‏‏.‏ وَأَخْبَرَ بِهَا مُعَاذٌ عِنْدَ مَوْتِهِ تَأَثُّمًا

আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

একদা মু‘আয (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পিছনে সওয়ারীতে ছিলেন, তখন তিনি তাকে ডাকলেন, হে মু‘আয ইব্‌নু জাবাল! মু‘আয (রাঃ) বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল আমি আপনার সার্বিক সহযোগিতা ও খেদমতে হাযির আছি। তিনি ডাকলেন, মু‘আয! মু‘আয (রাঃ) উত্তর দিলেন, আমি হাযির হে আল্লাহর রসূল ও প্রস্তুত। তিনি আবার ডাকলেন, মু‘আয। তিনি উত্তর দিলেন, ‘আমি হাযির এবং প্রস্তুত’। এরূপ তিনবার করলেন। অতঃপর বললেনঃ যে কোন বান্দা আন্তরিকতার সাথে এ সাক্ষ্য দেবে যে, ‘আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রসূল’-তার জন্য আল্লাহ তা’আলা জাহান্নাম হারাম করে দিবেন। মু‘আয বললেন, ‘হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমি কি মানুষকে এ খবর দেবো না, যাতে তারা সুসংবাদ পেতে পারে?’ তিনি বললেন, ‘তাহলে তারা এর উপরই ভরসা করবে।’ মু‘আয (রাঃ) (জীবন ভর এ হাদীসটি বর্ণনা করেননি) মৃত্যুর সময় এ হাদীসটি বর্ণনা করে গেছেন যাতে (‘ইলম গোপন রাখার) গুনাহ না হয়।

(১২৯; মুসলিম ১/১০, হাঃ ৩২) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১২৫, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ১৩০)

১২৯
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، قَالَ حَدَّثَنَا مُعْتَمِرٌ، قَالَ سَمِعْتُ أَبِي قَالَ، سَمِعْتُ أَنَسًا، قَالَ ذُكِرَ لِي أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ لِمُعَاذٍ ‏”‏ مَنْ لَقِيَ اللَّهَ لاَ يُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا دَخَلَ الْجَنَّةَ ‏”‏‏.‏ قَالَ أَلاَ أُبَشِّرُ النَّاسَ قَالَ ‏”‏ لاَ، إِنِّي أَخَافُ أَنْ يَتَّكِلُوا

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমার নিকট বর্ণনা করা হয়েছে যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মু‘আয (রাঃ)-কে বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে কোনরূপ শির্‌ক না করে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। মু‘আয (রাঃ) বললেন, ‘আমি কি লোকদের সুসংবাদ দেব না?’ তিনি বললেন, ‘না, আমার আশংকা হচ্ছে যে, তারা এর উপরই ভরসা করে বসে থাকবে।’

(১২৮) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১২৬, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ১৩১)

৩/৫০. অধ্যায়ঃ
‘ইল্‌ম শিক্ষা করতে লজ্জাবোধ করা।

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, ‘লাজুক এবং অহংকারী ব্যক্তি জ্ঞান অর্জন করতে পারে না। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, ‘আনসারী মহিলারাই উত্তম। লজ্জা তাদেরকে ইসলামী জ্ঞান অন্বেষণ থেকে ফিরিয়ে রাখতে পারেনি।

১৩০
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَلاَمٍ، قَالَ أَخْبَرَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، قَالَ حَدَّثَنَا هِشَامٌ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ زَيْنَبَ ابْنَةِ أُمِّ سَلَمَةَ، عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، قَالَتْ جَاءَتْ أُمُّ سُلَيْمٍ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَتْ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ لاَ يَسْتَحْيِي مِنَ الْحَقِّ، فَهَلْ عَلَى الْمَرْأَةِ مِنْ غُسْلٍ إِذَا احْتَلَمَتْ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ إِذَا رَأَتِ الْمَاءَ ‏”‏‏.‏ فَغَطَّتْ أُمُّ سَلَمَةَ ـ تَعْنِي وَجْهَهَا ـ وَقَالَتْ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَتَحْتَلِمُ الْمَرْأَةُ قَالَ ‏”‏ نَعَمْ تَرِبَتْ يَمِينُكِ فَبِمَ يُشْبِهُهَا وَلَدُهَا ‏”‏‏.‏

উম্মু সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উম্মু সুলায়ম (রাঃ) এসে বললেনঃ হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহ হক কথা প্রকাশ করতে লজ্জাবোধ করেন না। মহিলাদের স্বপ্নদোষ হলে কি গোসল করতে হবে? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ‘হ্যাঁ, যখন সে বীর্য দেখতে পাবে।’ তখন উম্মু সালামা (লজ্জায়) তার মুখ ঢেকে নিয়ে বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! মহিলাদেরও স্বপ্নদোষ হয় কি?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, তোমার ডান হাতে মাটি পড়ুক! [১] (তা না হলে) তাদের সন্তান তাদের আকৃতি পায় কীভাবে?

(২৮২, ৩৩২৮, ৬০৯১, ৬১২১; মুসলিম ৩/৭, হাঃ ৩১৩, আহমাদ ২৬৬৭৫) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১২৭, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ১৩২)

[১] এটি কোন বদ দু’আ নয়, বরং বিস্ময় প্রকাশের জন্য আরবীতে ব্যবহৃত হয়।

১৩১
حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ، قَالَ حَدَّثَنِي مَالِكٌ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ دِينَارٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏”‏ إِنَّ مِنَ الشَّجَرِ شَجَرَةً لاَ يَسْقُطُ وَرَقُهَا، وَهِيَ مَثَلُ الْمُسْلِمِ، حَدِّثُونِي مَا هِيَ ‏”‏‏.‏ فَوَقَعَ النَّاسُ فِي شَجَرِ الْبَادِيَةِ، وَوَقَعَ فِي نَفْسِي أَنَّهَا النَّخْلَةُ‏.‏ قَالَ عَبْدُ اللَّهِ فَاسْتَحْيَيْتُ‏.‏ فَقَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَخْبِرْنَا بِهَا‏.‏ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ هِيَ النَّخْلَةُ ‏”‏‏.‏ قَالَ عَبْدُ اللَّهِ فَحَدَّثْتُ أَبِي بِمَا وَقَعَ فِي نَفْسِي فَقَالَ لأَنْ تَكُونَ قُلْتَهَا أَحَبُّ إِلَىَّ مِنْ أَنْ يَكُونَ لِي كَذَا وَكَذَا‏.‏

ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ গাছের মধ্যে এমন একটি গাছ রয়েছে যার পাতা ঝরে পড়ে না এবং তা হ’ল মুসলিমের দৃষ্টান্ত। তোমরা আমাকে বলো তো সেটা কোন গাছ? তখন লোকজনের খেয়াল জঙ্গলের গাছপালার প্রতি গেলো। আর আমার মনে হতে লাগলো যে, সেটি খেজুর গাছ। ‘আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, ‘কিন্তু আমি লজ্জাবোধ করলাম।‘ সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনিই আমাদের তা বলে দিন।’ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ‘তা হ’ল খেজুর গাছ।’ ‘আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, ‘তারপর আমি আমার পিতাকে আমার মনে যা এসেছিলো তা বললাম।’ তিনি বললেন, ‘তুমি তখন তা বলে দিলে তা আমার নিকট এরূপ এরূপ জিনিস লাভ করার চেয়ে অধিক প্রিয় হতো।’

(৬১) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১২৮, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ১৩৩)

৩/৫১. অধ্যায়ঃ
নিজে লজ্জা করলে অন্যকে দিয়ে প্রশ্ন করানো।

১৩২
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، قَالَ حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ دَاوُدَ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ مُنْذِرٍ الثَّوْرِيِّ، عَنْ مُحَمَّدٍ ابْنِ الْحَنَفِيَّةِ، عَنْ عَلِيٍّ، قَالَ كُنْتُ رَجُلاً مَذَّاءً فَأَمَرْتُ الْمِقْدَادَ أَنْ يَسْأَلَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَسَأَلَهُ فَقَالَ ‏”‏ فِيهِ الْوُضُوءُ

‘আলী ইব্‌নু আবূ তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমার অধিক পরিমাণে ‘মযী’ বের হতো। তাই এ ব্যাপারে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করার জন্য মিকদাদকে বললাম। তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ‘এতে কেবল উযূ করতে হয়।’

(১৭৮,২৬৯; মুসলিম ৩/৪, হাঃ ৩০৩, আহমাদ ৬০৬, ১০০৯, ১০৩৫) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১২৯, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ১৩৪)

৩/৫২. অধ্যায়ঃ
মসজিদে ‘ইলম ও ফতোয়া আলোচনা করা।

১৩৩
حَدَّثَنِي قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، قَالَ حَدَّثَنَا اللَّيْثُ بْنُ سَعْدٍ، قَالَ حَدَّثَنَا نَافِعٌ، مَوْلَى عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ،‏.‏ أَنَّ رَجُلاً، قَامَ فِي الْمَسْجِدِ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، مِنْ أَيْنَ تَأْمُرُنَا أَنْ نُهِلَّ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ يُهِلُّ أَهْلُ الْمَدِينَةِ مِنْ ذِي الْحُلَيْفَةِ، وَيُهِلُّ أَهْلُ الشَّأْمِ مِنَ الْجُحْفَةِ، وَيُهِلُّ أَهْلُ نَجْدٍ مِنْ قَرْنٍ ‏”‏‏.‏ وَقَالَ ابْنُ عُمَرَ وَيَزْعُمُونَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏”‏ وَيُهِلُّ أَهْلُ الْيَمَنِ مِنْ يَلَمْلَمَ ‏”‏‏.‏ وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ يَقُولُ لَمْ أَفْقَهْ هَذِهِ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم‏.‏

‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

এক ব্যক্তি মসজিদে দাঁড়িয়ে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাদের কোন স্থান হতে ইহ্‌রাম বাঁধার নির্দেশ দেন?’ আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ মদীনাবাসী ইহ্‌রাম বাঁধবে ‘যু’ল-হুলাইফাহ’ হতে, সিরিয়াবাসী ইহ্‌রাম বাঁধবে ‘জুহফা’ হতে এবং নাজদবাসী ইহ্‌রাম বাঁধবে ‘কর্‌ন’ হতে। ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) বলেন, সাহাবীগণ বলেন যে, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এও বলেছেনঃ ‘এবং ইয়ামানবাসী ইহ্‌রাম বাঁধবে ‘ইয়ালামলাম’ হতে।’ ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) বলেছেন, ‘এ কথাটি আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বুঝে নেইনি।’

(১৫২২, ১৫২৫, ১৫২৭, ১৫২৮, ৭৩৩৪) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৩০, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ১৩৫)

৩/৫৩. অধ্যায়ঃ
প্রশ্নকারীর প্রশ্নের চেয়ে বেশী উত্তর প্রদান।

১৩৪
حَدَّثَنَا آدَمُ، قَالَ حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي ذِئْبٍ، عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم‏.‏ وَعَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ سَالِمٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّ رَجُلاً سَأَلَهُ مَا يَلْبَسُ الْمُحْرِمُ فَقَالَ ‏ “‏ لاَ يَلْبَسِ الْقَمِيصَ وَلاَ الْعِمَامَةَ وَلاَ السَّرَاوِيلَ وَلاَ الْبُرْنُسَ وَلاَ ثَوْبًا مَسَّهُ الْوَرْسُ أَوِ الزَّعْفَرَانُ، فَإِنْ لَمْ يَجِدِ النَّعْلَيْنِ فَلْيَلْبَسِ الْخُفَّيْنِ وَلْيَقْطَعْهُمَا حَتَّى يَكُونَا تَحْتَ الْكَعْبَيْنِ ‏”‏‏.‏

ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি তাঁকে জিজ্ঞেস করলো, ‘মুহরিম কী কাপড় পরিধান করবে?’ তিনি বললেনঃ ‘জামা, পাগড়ী, পাজামা, টুপি, এবং কুসুম বা যা’ফরান রঙ্গে রঞ্জিত কোন কাপড় পরিধান করবে না। জুতা না পেলে চামড়ার মোজা পরতে পারে, তবে এমনভাবে কেটে ফেলতে হবে যাতে মোজা দু’টি পায়ের গিরার নিচে থাকে।

(৩৬৬, ১৫৪২, ১৮৩৮, ১৮৪২, ৫৭৯৪, ৫৮০৩, ৫৮০৫, ৫৮০৬, ৫৮৪৭, ৫৮৫২) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৩১, ইসলামী

FOR MORE CLICK HERE

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]