সহীহ বুখারী শরীফ হাদিস মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য অধ্যায় ১ম ভাগ হাদিস নং ৩৪৮৯ – ৩৫২২

৬১/১. অধ্যায়ঃ
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেনঃ

আল্লাহ্ তা‘আলার বাণীঃ হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি একজন পুরুষ ও একজন স্ত্রীলোক থেকে এবং তোমাদেরকে পরিণত করেছি বিভিন্ন জাতিতে ও বিভিন্ন গোত্রে। (আল – হুজুরাত ১৩)

আল্লাহ্‌র বাণীঃ তোমরা ভয় কর আল্লাহ্‌কে যাঁর নামে তোমরা একে অপরের কাছে প্রার্থনা করে থাক এবং আত্মীয় – জ্ঞাতিদের সম্পর্কে সতর্ক থাক। নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমাদের উপর সতর্ক দৃষ্টি রাখেন – (আন্ – নিসা ১)। এবং জাহিলীয়্যাত আমলের কথা – বার্তা নিষিদ্ধ হওয়া সম্পর্কে। (আরবী) পূর্বতন বড় বংশ এবং (আরবী) এর চেয়ে ছোট বংশ।

৩৪৮৯
حَدَّثَنَا خَالِدُ بْنُ يَزِيدَ الكَاهِلِيُّ [ص: 178] ، حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرٍ، عَنْ أَبِي حَصِينٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، {وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا} [الحجرات: 13]، قَالَ: ” الشُّعُوبُ: القَبَائِلُ العِظَامُ، وَالقَبَائِلُ: البُطُونُ “

ইব্ন ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আয়াতে বর্ণিত (আরবী) অর্থ বড় গোত্র এবং (আরবী) অর্থ ছোট গোত্র।

৩৪৯০
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ، قَالَ: حَدَّثَنِي سَعِيدُ بْنُ أَبِي سَعِيدٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قِيلَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ مَنْ أَكْرَمُ النَّاسِ؟ قَالَ: «أَتْقَاهُمْ» قَالُوا: لَيْسَ عَنْ هَذَا نَسْأَلُكَ، قَالَ: «فَيُوسُفُ نَبِيُّ اللَّهِ»

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জিজ্ঞেস করা হল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! মানুষের মধ্যে সবচেয়ে মর্যাদাবান কে? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে সবচেয়ে আল্লাহ্‌ভীরু, সে-ই অধিক সম্মানিত। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমরা এ ধরনের কথা জিজ্ঞেস করিনি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাহলে আল্লাহ্‌র নবী ইউসূফ (‘আ)।

৩৪৯১
حَدَّثَنَا قَيْسُ بْنُ حَفْصٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الوَاحِدِ، حَدَّثَنَا كُلَيْبُ بْنُ وَائِلٍ، قَالَ: حَدَّثَتْنِي رَبِيبَةُ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، زَيْنَبُ بِنْتُ أَبِي سَلَمَةَ، قَالَ: قُلْتُ لَهَا: ” أَرَأَيْتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَكَانَ مِنْ مُضَرَ؟ قَالَتْ: فَمِمَّنْ كَانَ إِلَّا مِنْ مُضَرَ، مِنْ بَنِي النَّضْرِ بْنِ كِنَانَةَ “

কুলায়েব ইব্ন ওয়ায়িল (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর তত্ত্বাবধানে পালিতা আবূ সালমার কন্যা যায়নাবকে আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনি বলুন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি মুযার গোত্রের ছিলেন? তিনি বললেন, বনু নযর ইব্‌ন কিনানা উদ্ভূত গোত্র মুযার ব্যতীত আর কোন গোত্র হতে হবেন? এবং মুযার গোত্র নাযর ইব্‌ন কিনানা গোত্রের একটি শাখা ছিল।

৩৪৯২
حَدَّثَنَا مُوسَى، حَدَّثَنَا عَبْدُ الوَاحِدِ، حَدَّثَنَا كُلَيْبٌ، حَدَّثَتْنِي رَبِيبَةُ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَأَظُنُّهَا زَيْنَبَ قَالَتْ: «نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الدُّبَّاءِ، وَالحَنْتَمِ، وَالنَّقِيرِ، وَالمُزَفَّتِ»

وَقُلْتُ لَهَا: أَخْبِرِينِي النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِمَّنْ كَانَ مِنْ مُضَرَ كَانَ؟ قَالَتْ: «فَمِمَّنْ كَانَ إِلَّا مِنْ مُضَرَ كَانَ مِنْ وَلَدِ النَّضْرِ بْنِ كِنَانَةَ»

কুলায়ব থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর তত্ত্বাবধানে পালিতা কন্যা বলেনঃ আর আমার ধারণা তিনি হলেন যায়নাব। তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কদুর বাওশ, সবুজ মাটির পাত্র মুকাইয়ার ও মুযাফ্ফাত (আলকাতরা লাগানো পাত্র বিশেষ) ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। কুলায়ব বলেন, আমরা তাকে জিজ্ঞেস করলাম, বলেন তো দেখি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন গোত্রের ছিলেন? তিনি কি মুযার গোত্রের অন্তর্গত ছিলেন? তিনি জবাব দিলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুযার গোত্র ব্যতীত আর কোন গোত্রের হবেন? আর মুযার নাযর ইব্‌ন কিনানার বংশধর ছিল।

৩৪৯৩
حَدَّثَنِي إِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، أَخْبَرَنَا جَرِيرٌ، عَنْ عُمَارَةَ، عَنْ أَبِي زُرْعَةَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «تَجِدُونَ النَّاسَ مَعَادِنَ، خِيَارُهُمْ فِي الجَاهِلِيَّةِ خِيَارُهُمْ فِي الإِسْلاَمِ، إِذَا فَقِهُوا، وَتَجِدُونَ خَيْرَ النَّاسِ فِي هَذَا الشَّأْنِ أَشَدَّهُمْ لَهُ كَرَاهِيَةً،

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা মানুষকে খণির মত পাবে। আইয়্যামে জাহিলীয়্যাতের উত্তম ব্যক্তিগণ ইসলাম গ্রহণের পরও তারা উত্তম। যখন তারা দ্বীনী জ্ঞান অর্জন করে আর তোমরা শাসন ও কর্তৃত্বের ব্যাপারে লোকদের মধ্যে উত্তম ঐ ব্যক্তিকে পাবে যে এই ব্যাপারে তাদের মধ্যে সবচেয়ে অধিক অনাসক্ত।

৩৪৯৪
وَتَجِدُونَ شَرَّ النَّاسِ ذَا الوَجْهَيْنِ الَّذِي يَأْتِي هَؤُلاَءِ بِوَجْهٍ، وَيَأْتِي هَؤُلاَءِ بِوَجْهٍ»

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আর মানুষের মধ্যে সব থেকে নিকৃষ্ট ঐ দু’মুখী ব্যক্তি যে একদলের সঙ্গে এক ভাবে কথা বলে, অপর দলের সঙ্গে আরেকভাবে কথা বলে।

৩৪৯৫
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا المُغِيرَةُ، عَنْ أَبِي الزِّنَادِ، عَنِ الأَعْرَجِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «النَّاسُ تَبَعٌ لِقُرَيْشٍ فِي هَذَا الشَّأْنِ، مُسْلِمُهُمْ تَبَعٌ لِمُسْلِمِهِمْ، وَكَافِرُهُمْ تَبَعٌ لِكَافِرِهِمْ،

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, খিলাফত ও নেতৃত্বের ব্যাপারে সকলেই কুরাইশদের অনুগত থাকবে। মুসলিমগণ তাদের মুসলিমদের এবং কাফিররা তাদের কাফিরদের অনুগত।

৩৪৯৬
وَالنَّاسُ مَعَادِنُ، خِيَارُهُمْ فِي الجَاهِلِيَّةِ خِيَارُهُمْ فِي الإِسْلاَمِ، إِذَا فَقِهُوا تَجِدُونَ مِنْ خَيْرِ النَّاسِ أَشَدَّ النَّاسِ كَرَاهِيَةً لِهَذَا الشَّأْنِ، حَتَّى يَقَعَ فِيهِ»

بَابٌ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আর মানব সমাজ খণির মত। জাহিলী যুগের উত্তম ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণের পরও উত্তম যদি তারা দ্বীনী ইল্ম অর্জন করে। তোমরা নেতৃত্ব ও শাসনের ব্যাপারে ঐ লোককেই সবচেয়ে উত্তম পাবে যে এর প্রতি অনাসক্ত, যে পর্যন্ত না সে তা গ্রহণ করে।

৩৪৯৭
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا يَحْيَى، عَنْ شُعْبَةَ، حَدَّثَنِي عَبْدُ المَلِكِ، عَنْ طَاوُسٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، {إِلَّا المَوَدَّةَ فِي القُرْبَى} [الشورى: 23]، قَالَ: فَقَالَ سَعِيدُ بْنُ جُبَيْرٍ: قُرْبَى مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: ” إِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمْ يَكُنْ بَطْنٌ مِنْ قُرَيْشٍ، إِلَّا وَلَهُ فِيهِ قَرَابَةٌ، فَنَزَلَتْ عَلَيْهِ [ص: 179] : إِلَّا أَنْ تَصِلُوا قَرَابَةً بَيْنِي وَبَيْنَكُمْ “

ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

(আরবী) এ আয়াতের প্রসঙ্গে রাবী তাউস (রহঃ) বলেন যে, সায়িদ ইব্‌ন জুবায়র (রাঃ) বলেন, কুরবা শব্দ দ্বারা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট আত্মীয়কে বুঝান হয়েছে। তখন ইব্‌ন ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, কুরাইশের এমন কোন শাখা – গোত্র নেই যাঁদের সঙ্গে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর আত্মীয়তার বন্ধন ছিল না। আয়াতটি তখনই নাযিল হয়। অর্থাৎ তোমরা আমার ও তোমাদের মধ্যকার আত্মীয়তার প্রতি খেয়াল রাখ।

৩৪৯৮
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ إِسْمَاعِيلَ، عَنْ قَيْسٍ، عَنْ أَبِي مَسْعُودٍ، يَبْلُغُ بِهِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «مِنْ هَا هُنَا جَاءَتِ الفِتَنُ، نَحْوَ المَشْرِقِ، وَالجَفَاءُ وَغِلَظُ القُلُوبِ فِي الفَدَّادِينَ أَهْلِ الوَبَرِ، عِنْدَ أُصُولِ أَذْنَابِ الإِبِلِ وَالبَقَرِ، فِي رَبِيعَةَ، وَمُضَرَ»

আবূ মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, এই পূর্বদিক হতে ফিতনা-ফাসাদের উৎপত্তি হবে। নির্মমতা ও অন্তরের কাঠিন্য উট ও গরু নিয়ে ব্যস্ত লোকদের মধ্যে। পশমী তাঁবুর অধিবাসীরা রাবী‘আ ও মুযার গোত্রের যারা উট ও গরুর পিছনে চিৎকার করে (হাঁকায়), তাদের মধ্যেই রয়েছে নির্মমতা ও কঠোরতা।

৩৪৯৯
حَدَّثَنَا أَبُو اليَمَانِ، أَخْبَرَنَا شُعَيْبٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، قَالَ: أَخْبَرَنِي أَبُو سَلَمَةَ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «الفَخْرُ، وَالخُيَلاَءُ فِي الفَدَّادِينَ أَهْلِ الوَبَرِ، وَالسَّكِينَةُ فِي أَهْلِ الغَنَمِ، وَالإِيمَانُ يَمَانٍ، وَالحِكْمَةُ يَمَانِيَةٌ» قَالَ أَبُو عَبْدِ اللَّهِ: «سُمِّيَتِ اليَمَنَ لِأَنَّهَا عَنْ يَمِينِ الكَعْبَةِ، وَالشَّأْمَ لِأَنَّهَا عَنْ يَسَارِ الكَعْبَةِ، وَالمَشْأَمَةُ المَيْسَرَةُ، وَاليَدُ اليُسْرَى الشُّؤْمَى، وَالجَانِبُ الأَيْسَرُ الأَشْأَمُ»

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি বলতে শুনেছি যে, গর্ব-অহংকার পশমের তৈরি তাঁবুতে বসবাসকারী যারা (উট-গরু হাঁকানোর সময় চিৎকার করে) তাদের মধ্যে (আরবী) অর্থ বাম দিক, বাম হাতকে (আরবী) এবং বাম দিককে (আরবী) বলা হয়। আর শান্তভাব রয়েছে বকরী পালকদের মধ্যে। ঈমানের দৃশ্যতা ও হিক্মাত ইয়ামানবাসীদের মধ্যে রয়েছে। ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, ইয়ামান নাম দেয়া হয়েছে যেহেতু তা কা’বা ঘরের ডানদিকে (দক্ষিণ) অবস্থিত এবং শাম (সিরিয়া) কা‘বা ঘরের বাম (উত্তর) দিকে অবস্থিত বিধায় তার শাম নাম দেয়া হয়েছে।

৬১/২. অধ্যায়ঃ
কুরাইশদের মর্যাদা ও গুণাবলী

৩৫০০
حَدَّثَنَا أَبُو اليَمَانِ، أَخْبَرَنَا شُعَيْبٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، قَالَ: كَانَ مُحَمَّدُ بْنُ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ يُحَدِّثُ أَنَّهُ بَلَغَ مُعَاوِيَةَ وَهُوَ عِنْدَهُ فِي وَفْدٍ مِنْ قُرَيْشٍ: أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَمْرِو بْنِ العَاصِ يُحَدِّثُ أَنَّهُ سَيَكُونُ مَلِكٌ مِنْ قَحْطَانَ، فَغَضِبَ مُعَاوِيَةُ، فَقَامَ فَأَثْنَى عَلَى اللَّهِ بِمَا هُوَ أَهْلُهُ، ثُمَّ قَالَ: أَمَّا بَعْدُ، فَإِنَّهُ بَلَغَنِي أَنَّ رِجَالًا مِنْكُمْ يَتَحَدَّثُونَ أَحَادِيثَ لَيْسَتْ فِي كِتَابِ اللَّهِ، وَلاَ تُؤْثَرُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأُولَئِكَ جُهَّالُكُمْ، فَإِيَّاكُمْ وَالأَمَانِيَّ الَّتِي تُضِلُّ أَهْلَهَا، فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ «إِنَّ هَذَا الأَمْرَ فِي قُرَيْشٍ لاَ يُعَادِيهِمْ أَحَدٌ، إِلَّا كَبَّهُ اللَّهُ عَلَى وَجْهِهِ، مَا أَقَامُوا الدِّينَ»

মুহাম্মাদ ইব্ন জুবায়ের ইব্ন মুত্‘ঈম (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, মু‘আবিয়া (রাঃ) -এর নিকট কুরাইশ প্রতিনিধিদের সাথে তার উপস্থিতিতে সংবাদ পৌঁছলো যে, ‘আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) বর্ণনা করেন, শীঘ্রই কাহতান বংশীয় জনৈক বাদশাহর আগমন ঘটবে। এতদশ্রবণে মু‘আবিয়া (রাঃ) ক্রুদ্ধ হয়ে খুতবাহ দেয়ার উদ্দেশে দাঁড়িয়ে আল্লাহর যথাযোগ্য হামদ ও সানার পর তিনি বললেন, আমি জানতে পেরেছি, তোমাদের মধ্য থেকে কিছু লোক এমন সব কথাবার্তা বলতে শুরু করেছে যা আল্লাহর কিতাবে নেই এবং আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতেও বর্ণিত হয়নি। এরাই মূর্খ, এদের হতে সাবধান থাক এবং এমন কাল্পনিক ধারণা হতে সতর্ক থাক যা ধারণাকারীকে বিপথগামী করে। আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে আমি বলতে শুনেছি যে, যত দিন তারা দ্বীন কায়েমে লেগে থাকবে ততদিন খিলাফত ও শাসন ক্ষমতা কুরাইশদের হাতেই থাকবে। এ বিষয়ে যে – ই তাদের সাথে শত্রুতা করবে আল্লাহ্ তাকে অধোঃমুখে নিক্ষেপ করবেন।

৩৫০১
حَدَّثَنَا أَبُو الوَلِيدِ، حَدَّثَنَا عَاصِمُ بْنُ مُحَمَّدٍ، قَالَ: سَمِعْتُ أَبِي، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «لاَ يَزَالُ هَذَا الأَمْرُ فِي قُرَيْشٍ مَا بَقِيَ مِنْهُمُ اثْنَانِ»

ইব্ন ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, এ বিষয় (খিলাফত ও শাসন ক্ষমতা) সর্বদাই কুরাইশদের হাতে থাকবে, যতদিন তাদের দু’জন লোকও বেঁচে থাকবে।

৩৫০২
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ بُكَيْرٍ، حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، عَنْ عُقَيْلٍ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنِ ابْنِ المُسَيِّبِ، عَنْ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ، قَالَ: مَشَيْتُ أَنَا وَعُثْمَانُ بْنُ عَفَّانَ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَعْطَيْتَ بَنِي المُطَّلِبِ وَتَرَكْتَنَا، وَإِنَّمَا نَحْنُ وَهُمْ مِنْكَ بِمَنْزِلَةٍ وَاحِدَةٍ؟ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّمَا بَنُو هَاشِمٍ وَبَنُو المُطَّلِبِ شَيْءٌ وَاحِدٌ»،

জুবায়র ইব্ন মুত‘ঈম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি এবং ‘উসমান ইব্‌ন আফ্ফান (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর দরবারে হাযির হলাম। ‘উসমান (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আপনি মুত্তালিবের সন্তানদেরকে দান করলেন এবং আমাদেরকে বাদ দিলেন। অথচ তারা ও আমরা আপনার বংশগতভাবে সম স্তরের। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, বনূ হাশিম ও বনূ মুত্তালিব এক ও অভিন্ন।

৩৫০৩
وَقَالَ اللَّيْثُ، حَدَّثَنِي أَبُو الأَسْوَدِ مُحَمَّدٌ، عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ، قَالَ: ذَهَبَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الزُّبَيْرِ مَعَ أُنَاسٍ مِنْ بَنِي زُهْرَةَ إِلَى عَائِشَةَ، «وَكَانَتْ أَرَقَّ شَيْءٍ عَلَيْهِمْ، لِقَرَابَتِهِمْ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ»

‘উরওয়া ইব্‌নু যুবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন জুবায়র (রাঃ) বনূ যুহরার কতিপয় লোকের সঙ্গে ‘আয়িশা (রাঃ)-এর নিকটে হাযির হলেন। ‘আয়িশা (রাঃ) তাদের প্রতি অত্যন্ত নম্র ও দয়ার্দ্র ছিলেন। কেননা, আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে তাঁদের আত্মীয়তা ছিল।

৩৫০৪
حَدَّثَنَا أَبُو نُعَيْمٍ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ سَعْدٍ، قَالَ: يَعْقُوبُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، حَدَّثَنَا أَبِي، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: حَدَّثَنِي عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ هُرْمُزَ الأَعْرَجُ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ [ص: 180] ، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «قُرَيْشٌ، وَالأَنْصَارُ، وَجُهَيْنَةُ، وَمُزَيْنَةُ، وَأَسْلَمُ، وَأَشْجَعُ، وَغِفَارُ مَوَالِيَّ، لَيْسَ لَهُمْ مَوْلًى دُونَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ»

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কুরাইশ, আনসার, জুহায়না, মুযায়না, আসলাম, আশজা‘ ও গিফার গোত্রগুলো আমার সাহায্যকারী। আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল ছাড়া তাঁদের সাহায্যকারী আর কেউ নেই।

৩৫০৫
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يُوسُفَ، حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، قَالَ: حَدَّثَنِي أَبُو الأَسْوَدِ، عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ، قَالَ: كَانَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الزُّبَيْرِ أَحَبَّ البَشَرِ إِلَى عَائِشَةَ بَعْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبِي بَكْرٍ، وَكَانَ أَبَرَّ النَّاسِ بِهَا، وَكَانَتْ لاَ تُمْسِكُ شَيْئًا مِمَّا جَاءَهَا مِنْ رِزْقِ اللَّهِ إِلَّا تَصَدَّقَتْ، فَقَالَ ابْنُ الزُّبَيْرِ: يَنْبَغِي أَنْ يُؤْخَذَ عَلَى يَدَيْهَا، فَقَالَتْ: «أَيُؤْخَذُ عَلَى يَدَيَّ، عَلَيَّ نَذْرٌ إِنْ كَلَّمْتُهُ»، فَاسْتَشْفَعَ إِلَيْهَا بِرِجَالٍ مِنْ قُرَيْشٍ، وَبِأَخْوَالِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَاصَّةً فَامْتَنَعَتْ، فَقَالَ لَهُ الزُّهْرِيُّونَ أَخْوَالُ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، مِنْهُمْ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ الأَسْوَدِ بْنِ عَبْدِ يَغُوثَ، وَالمِسْوَرُ بْنُ مَخْرَمَةَ: إِذَا اسْتَأْذَنَّا فَاقْتَحِمُ الحِجَابَ، فَفَعَلَ فَأَرْسَلَ إِلَيْهَا بِعَشْرِ رِقَابٍ فَأَعْتَقَتْهُمْ، ثُمَّ لَمْ تَزَلْ تُعْتِقُهُمْ حَتَّى بَلَغَتْ أَرْبَعِينَ، فَقَالَتْ: «وَدِدْتُ أَنِّي جَعَلْتُ حِينَ حَلَفْتُ عَمَلًا أَعْمَلُهُ فَأَفْرُغُ مِنْهُ»

‘উরওয়া ইব্ন যুবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইব্‌ন যুবায়র (রহঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও আবূ বকর (রাঃ) -এর পর ‘আয়িশা (রাঃ) -এর নিকট সকল লোকদের মধ্যে সবচেয়ে প্রিয়পাত্র ছিলেন এবং তিনি সকল লোকদের মধ্যে ‘আয়িশা (রাঃ) -এর প্রতি সবচেয়ে অধিক সদাচারী ছিলেন। ‘আয়িশা (রাঃ) -এর নিকট আল্লাহ্‌র পক্ষ হতে রিজিক হিসেবে যা কিছু আসত তা জমা না রেখে সদাকাহ করে দিতেন। এতে ‘আবদুল্লাহ ইব্‌ন যুবায়র (রাঃ) বললেন, অধিক দান খয়রাত করা হতে তাকে বারণ করা উচিত। তখন ‘আয়িশা (রাঃ) বললেন, আমাকে দান করা হতে বারণ করা হবে? আমি যদি তার সঙ্গে কথা বলি, তাহলে আমাকে কাফ্ফারা দিতে হবে এবং ‘আবদুল্লাহ ইব্‌ন যুবায়র (রাঃ) তাঁর নিকট কুরাইশের কিছু লোক, বিশেষভাবে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর মাতৃবংশের কিছু লোক দ্বারা সুপারিশ করালেন। তবুও তিনি তাঁর সঙ্গে কথা বলা হতে বিরত থাকলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর মাতৃবংশ বনী যুহরার কতক বিশিষ্ট লোক যাদের মধ্যে ‘আবদুর রহমান ইব্‌ন আস্ওয়াদ এবং মিসওয়ার ইব্‌ন মাখরামাহ (রাঃ) ছিলেন তারা বললেন, আমরা যখন ‘আয়িশা (রাঃ) -এর গৃহে প্রবেশের অনুমতি চাইব তখন তুমি পর্দার ভিতরে ঢুকে পড়বে। তিনি তাই করলেন। পরে ইব্‌ন যুবায়র (রাঃ) কাফ্ফারা আদায়ের জন্য তার নিকট দশটি ক্রীতদাস পাঠিয়ে দিলেন। ‘আয়িশা (রাঃ) তাদের সবাইকে আযাদ করে দিলেন। অতঃপর তিনি বরাবর আযাদ করতে থাকলেন। এমন কি তা সংখ্যা চল্লিশে পৌঁছে। ‘আয়িশা (রাঃ) বললেন, আমি যখন কোন কাজ করার কসম করি, তখন এরাদা থাকে যে আমি যেন সে কাজটা করে দায়িত্ব মুক্ত হয়ে যাই এবং তিনি আরো বলেন, আমি যখন কোন কাজ করার কসম করি তা যথাযথ পূরণের ইচ্ছা রাখি।

৬১/৩. অধ্যায়ঃ
কুরআন কুরাইশদের ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে।

৩৫০৬
حَدَّثَنَا عَبْدُ العَزِيزِ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ سَعْدٍ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ عُثْمَانَ، دَعَا زَيْدَ بْنَ ثَابِتٍ، وَعَبْدَ اللَّهِ بْنَ الزُّبَيْرِ، وَسَعِيدَ بْنَ العَاصِ، وَعَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ الحَارِثِ بْنِ هِشَامٍ فَنَسَخُوهَا فِي المَصَاحِفِ، وَقَالَ عُثْمَانُ لِلرَّهْطِ القُرَشِيِّينَ الثَّلاَثَةِ: «إِذَا اخْتَلَفْتُمْ أَنْتُمْ وَزَيْدُ بْنُ ثَابِتٍ فِي شَيْءٍ مِنَ القُرْآنِ، فَاكْتُبُوهُ بِلِسَانِ قُرَيْشٍ، فَإِنَّمَا نَزَلَ بِلِسَانِهِمْ فَفَعَلُوا ذَلِكَ»

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

‘উসমান (রাঃ), যায়দ ইব্‌ন সাবিত (রাঃ), ‘আবদুল্লাহ ইব্‌ন যুবায়র (রাঃ), সা‘ঈদ ইবনুল ‘আস (রাঃ) ‘আবদুর রাহমান ইব্‌ন হারিস (রাঃ) -কে ডেকে পাঠালেন। তাঁরা সংরক্ষিত কুরআনকে সমবেতভাবে লিপিবদ্ধ করলেন। ‘উসমান (রাঃ) কুরাইশ বংশীয় তিনজনকে বললেন, যদি যায়দ ইব্‌ন সাবিত (রাঃ) এবং তোমাদের মধ্যে কোন শব্দে মতবিরোধ দেখা দেয় তবে কুরাইশের ভাষায় তা লিপিবদ্ধ কর। যেহেতু কুরআন শরীফ তাদের ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে। অতঃপর তাঁরা তা-ই করলেন।

৬১/৪. অধ্যায়ঃ
ইয়ামানবাসীর সম্পর্ক ইসমাঈল (‘আঃ) -এর সঙ্গে;

তার মধ্যে আসলাম ইব্ন আফসা ইব্ন হারিসাহ ইব্ন ‘আমর ইব্ন ‘আমির ও খুযা‘আহ গোত্রের অন্তর্গত।

৩৫০৭
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا يَحْيَى، عَنْ يَزِيدَ بْنِ أَبِي عُبَيْدٍ، حَدَّثَنَا سَلَمَةُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، عَلَى قَوْمٍ مِنْ أَسْلَمَ يَتَنَاضَلُونَ بِالسُّوقِ، فَقَالَ: «ارْمُوا بَنِي إِسْمَاعِيلَ فَإِنَّ أَبَاكُمْ كَانَ رَامِيًا، وَأَنَا مَعَ بَنِي فُلاَنٍ» لِأَحَدِ الفَرِيقَيْنِ، فَأَمْسَكُوا بِأَيْدِيهِمْ، فَقَالَ: «مَا لَهُمْ» قَالُوا: وَكَيْفَ نَرْمِي وَأَنْتَ مَعَ بَنِي فُلاَنٍ؟ قَالَ: «ارْمُوا وَأَنَا مَعَكُمْ كُلِّكُمْ»

সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একবার আসলাম গোত্রের কিছু লোক বাজারের নিকটে প্রতিযোগিতামূলক তীর নিক্ষেপের চর্চা করছিল। এমন সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বের হলেন এবং তাদেরকে দেখে বললেন, হে ইসমাঈল (আরবী) -এর বংশধর। তোমরা তীর নিক্ষেপ কর। কেননা তোমাদের পিতাও তীর নিক্ষেপে অভিজ্ঞ ছিলেন এবং আমি তোমাদের অমুক দলের পক্ষে রয়েছি। তখন একটি পক্ষ তাদের হাত গুটিয়ে নিল। বর্ণনাকারী বললেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমাদের কী হল? তারা বলল, আপনি অমুক পক্ষে থাকলে আমরা কী করে তীর নিক্ষেপ করতে পারি? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা তীর নিক্ষেপ কর। আমি তোমাদের উভয় দলের সাথে আছি।

৬১/৫. অধ্যায়ঃ
৬১/৫. অধ্যায়ঃ

৩৫০৮
حَدَّثَنَا أَبُو مَعْمَرٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الوَارِثِ، عَنِ الحُسَيْنِ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ بُرَيْدَةَ، قَالَ: حَدَّثَنِي يَحْيَى بْنُ يَعْمَرَ، أَنَّ أَبَا الأَسْوَدِ الدِّيلِيَّ، حَدَّثَهُ عَنْ أَبِي ذَرٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «لَيْسَ مِنْ رَجُلٍ ادَّعَى لِغَيْرِ أَبِيهِ – وَهُوَ يَعْلَمُهُ – إِلَّا كَفَرَ، وَمَنِ ادَّعَى قَوْمًا لَيْسَ لَهُ فِيهِمْ، فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ»

আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছেন, কোন লোক যদি নিজ পিতা সম্পর্কে অবগত থাকা সত্ত্বেও অন্য কাকে তার পিতা বলে দাবী করে তবে সে আল্লাহ্‌র কুফরী করল এবং যে ব্যক্তি নিজেকে এমন বংশের সঙ্গে বংশ সম্পর্কিত দাবী করল যে বংশের সঙ্গে তার কোন বংশ সম্পর্ক নেই, সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে বানিয়ে নেয়।

৩৫০৯
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَيَّاشٍ، حَدَّثَنَا حَرِيزٌ، قَالَ: حَدَّثَنِي عَبْدُ الوَاحِدِ [ص: 181] بْنُ عَبْدِ اللَّهِ النَّصْرِيُّ، قَالَ: سَمِعْتُ وَاثِلَةَ بْنَ الأَسْقَعِ، يَقُولُ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ مِنْ أَعْظَمِ الفِرَى أَنْ يَدَّعِيَ الرَّجُلُ إِلَى غَيْرِ أَبِيهِ، أَوْ يُرِيَ عَيْنَهُ مَا لَمْ تَرَ، أَوْ يَقُولُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا لَمْ يَقُلْ»

ওয়ায়িলাহ ইব্ন আসকা’ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কোন লোকের এমন লোককে পিতা বলে দাবি করা তার পিতা নয় এবং প্রকৃতই যা দেখেনি তা দেখার দাবি করা এবং আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা বলেননি তা তাঁর প্রতি মিথ্যারোপ করা নিঃসন্দেহে বড় মিথ্যা।

৩৫১০
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا حَمَّادٌ، عَنْ أَبِي جَمْرَةَ، قَالَ: سَمِعْتُ ابْنَ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، يَقُولُ: قَدِمَ وَفْدُ عَبْدِ القَيْسِ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ: إِنَّا مِنْ هَذَا الحَيِّ مِنْ رَبِيعَةَ، قَدْ حَالَتْ بَيْنَنَا وَبَيْنَكَ كُفَّارُ مُضَرَ، فَلَسْنَا نَخْلُصُ إِلَيْكَ إِلَّا فِي كُلِّ شَهْرٍ حَرَامٍ، فَلَوْ أَمَرْتَنَا بِأَمْرٍ نَأْخُذُهُ عَنْكَ وَنُبَلِّغُهُ مَنْ وَرَاءَنَا، قَالَ: ” آمُرُكُمْ بِأَرْبَعٍ، وَأَنْهَاكُمْ عَنْ أَرْبَعٍ: الإِيمَانِ بِاللَّهِ شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَإِقَامِ الصَّلاَةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَأَنْ تُؤَدُّوا إِلَى اللَّهِ خُمْسَ مَا غَنِمْتُمْ، وَأَنْهَاكُمْ عَنِ الدُّبَّاءِ، وَالحَنْتَمِ وَالنَّقِيرِ، وَالمُزَفَّتِ “

ইব্ন ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যখন ‘আবদুল কায়স গোত্রের এক প্রতিনিধি দল আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর দরবারে হাজির হয়ে আরয করল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! এ গোত্রটি রাবী’আহ বংশের। আমাদের এবং আপনার মধ্যে মূযার গোত্রের কাফিররা বাধা সৃষ্টি করে রেখেছে। আমরা সম্মানিত চার মাস ছাড়া অন্য সময় আপনার নিকট হাযির হতে পারি না। খুবই ভালো হতো যদি আপনি আমাদেরকে এমন কিছু আদেশ দিয়ে দিতেন যা আপনার নিকট হতে গ্রহণ করে আমাদের পিছনে অবস্থিত লোকদের পৌঁছে দিতাম। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি তোমাদেরকে চারটি কাজের আদেশ দিচ্ছি এবং চারটি কাজের নিষেধাজ্ঞা প্রদান করছি। (এক) আল্লাহ্‌র প্রতি ঈমান আনা এবং এ সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কোন প্রকৃত ইলাহ নেই, (দুই) সালাত কায়িম করা, (তিন) যাকাত আদায় করা, (চার) গনীমতের যে মাল তোমরা লাভ কর তার পঞ্চমাংশ আল্লাহ্‌র জন্য বায়তুল মালে দান করা। আর আমি তোমাদেরকে দুব্বা (কদু পাত্র), হান্তম (সবুজ রং এর ঘড়া), নাকীর (খেজুর বৃক্ষের মূল খোদাই করে তৈরি পাত্র), মযাফ্ফাত (আলকাতরা লাগানো মাটির পাত্র, এই চারটি পাত্রের) ব্যবহার করতে নিষেধ করছি।

৩৫১১
حَدَّثَنَا أَبُو اليَمَانِ، أَخْبَرَنَا شُعَيْبٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، قَالَ: حَدَّثَنِي سَالِمُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: وَهُوَ عَلَى المِنْبَرِ: «أَلاَ إِنَّ الفِتْنَةَ هَا هُنَا يُشِيرُ إِلَى المَشْرِقِ مِنْ حَيْثُ يَطْلُعُ قَرْنُ الشَّيْطَانِ»

‘আবদুল্লাহ ইব্ন ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে মিম্বরের উপর উপবিষ্ট অবস্থায় পূর্ব দিকে [১] ইঙ্গিত করে বলতে শুনেছি, সাবধান! ফিতনা ফাসাদের উদ্ভব ঐদিক থেকেই হবে এবং ঐদিক থেকেই শয়তানের শিং উদিত হবে।






[১] এখানে ‘আবদুল্লাহ বিন ‘উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসে দেখা যায় যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পূর্বদিকে ইশারা করে এক সাবধান বাণী বা ভবিষ্যদ্বাণী উচ্চারণ করলেন। এখানে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলছেন, পৃথিবীর পূর্বদিক হতেই সমস্ত ফিতনাহ্র উদ্ভব হবে। ইসলামের ইতিহাস তথা বিশ্ব ইসলাম ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, ইসলাম বিনাশী বড় বড় ফিত্না ফাসাদ ও প্রলয়কারী বিদ‘আতসমূহ পৃথিবীর পূর্বপ্রান্ত থেকেই মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে।

সর্বপ্রথম ‘আলী ও মু‘আবিয়া (রাঃ)’র খিলাফাত সম্পর্কিত গৃহযুদ্ধকে কেন্দ্র করে মুসলিমদের মধ্যে খারিজী ও শী’আ দলের উদ্ভব হয়। যা পূর্বদেশ থেকেই ঘটেছিল। অতঃপর যুগে যুগে মু‘তাজিলা, ক্বাদারিয়াহ, জাবারিয়াহ, জাহমিয়াহ, চিশতিয়া, মুজাদ্দেদীয়া, সাহরাওয়ার্দিয়াহ, আজমেরী রেযাখানী (রেজা আহমদ খান ব্রেলভী যিনি আজমিরের কবর পূজার প্রবর্তক), বাহাই, কাদিয়ানী, ইলিয়াসী ইত্যাদি যাবতীয় ফিতনার উদ্ভব পূর্ব দিক থেকেই ঘটেছে যার কয়েকটির অতি সংক্ষিপ্ত পরিচিত তুলে ধরা হলোঃ

খারিজী: ইসলামের সর্বপ্রথম ধর্মীয় সম্প্রদায়। খিলাফাত এবং বিশ্বাস বা কর্মের যৌক্তিকতা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে তারা নিজেদেরকে আলাদা করে ফেলে। রাজনীতি ক্ষেত্রে তারা যে প্রধান ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল তা ছিল পুনঃ পুনঃ বিদ্রোহ সংগঠন এবং সাময়িকভাবে কোন অঞ্চল দখল করতঃ গন্ডগোল সৃষ্টি করা। ‘আলী (রাঃ) -এর খিলাফাতের শেষ দুই বৎসর এবং উমায়্যাহ আমলে তারা মুসলিম সাম্রাজ্যের পূর্বাংশে অশান্তি সৃষ্টি করেছিল এবং পরোক্ষ ‘আলী (রাঃ) -এর বিরুদ্ধে মু‘আবিয়াকে এবং উমায়্যাহদের বিরুদ্ধে ‘আব্বাসীয়গণকে যুদ্ধে জয়লাভ করতে সাহায্য করেছিল।

শী‘আ: রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর মৃত্যুর পর ‘আলী (রাঃ) ন্যায়তঃ খালীফাহ হওয়ার দাবীদার ছিলেন। এই মতবাদের ভিত্তিতে শী‘আ দলের উদ্ভব হয়। শী‘আগণ খিলাফত বনাম গণসমর্থনের ভিত্তিতে নির্বাচিত খালীফাহ্র আনুগত্য স্বীকার করতে রাজী নয় – এমনকি কুরাইশ হলেও না। তাদের মত হল, আহলি বায়ত (নবীর পরিবার) অর্থাৎ ‘আলী ও ফাতিমাহ্ (রাঃ) -এর বংশোদ্ভূতগণই ইমামাত (খিলাফাত নয়) এর অধিকারী। পূর্ববর্তী ইমাম তাঁর উত্তরাধিকারী পরবর্তী ইমামের মনোনয়ন দিবেন। শী‘আ ধর্ম – পুস্তকে দেখা যায় যে, যে ব্যক্তি তার সময়ের প্রকৃত ইমাম কে (?) তা না জেনে মারা যায়, সে কাফিররূপে মারা যায় (আরবী) “আলীর দল’ কথাটি হতে সংক্ষেপে শী‘আ নামের প্রচলন হয়েছিল।

মু‘তাযিলা: যে ধর্মতাত্ত্বিক দল ইসলামী ধর্ম বিশ্বাসের ব্যাপারে যুক্তিমূলক মতবাদকে সর্বপ্রধান সূত্র হিসেবে গ্রহণ করে তার নাম।

কাদারিয়্যাহ: তাকদীরের সঠিক ব্যাখ্যা সম্পর্কে তাত্ত্বিক আলোচনার ফলে বসরাতে এই দলের উদ্ভব হয়। কাদারিয়্যা দলের মত হল মন্দ ইচ্ছা ও কর্মের সম্পর্ক আল্লাহর প্রতি প্রযোজ্য হতে পারে না। এর সম্পর্ক মানুষের সঙ্গে।

জাবারিয়্যাহ: জাবারিয়্যাহ মতে মানুষের ইচ্ছা বা কর্ম – স্বাধীনতা নাই। আল্লাহ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তিনি যা ইচ্ছে তাই করেন।

জাহমিয়্যাহ: জাহম ইব্ন সাফওয়ান (মৃত্যু ৭৪৬ খ্রীঃ) ধর্মতত্ত্ববিদ হিসেবে কিছুটা স্বাধীন মত পোষণ করতেন। ঈমানকে তিনি অন্তরের ব্যাপার বলে জানতেন, জান্নাত ও জাহান্নামকে চিরস্থায়ী মনে করতেন না। তার অনুসারীরা জাহমিয়্যাহ নামে পরিচিত।

চিশতিয়্যা: ভারত উপমহাদেশের একটি সূফী তারীকা। খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী দ্বাদশ শতাব্দীতে সূফীবাদের এই সিলসিলাঃ ভারত উপমহাদেশে নিয়ে আসেন এবং আজমীরে এর প্রথম কেন্দ্র স্থাপন করেন।

নাকশ্বন্দী: মুহাম্মাদ ইব্ন মুহাম্মাদ বাহাউদ্দীন আল – বুখারী (৭১৭ – ৭৯১/১৩১৭ – ১৩৮৯) নাকশ্বন্দী প্রতিষ্ঠিত সূফী সম্প্রদায়।

কাদিরিয়্যাহ: আব্দুল কাদির জীলানী (রহঃ) নামানুসারে একটি সূফী তারীকার নাম কাদিরিয়্যাহ।

বাহাঈ: বাহাউল্লাহ ও ‘আব্দুল বাহা কর্তৃক ইরান থেকে প্রচারিত ধর্মমত। সময়কাল ১৮১৭ – ১৮৯২ খ্রীঃ।

কাদিয়ানী: ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের গুরুদাসপুর জেলার কাদিয়ান উপশহরে ১৮৩৫ সালে জন্মগ্রহণকারী ভন্ড নবী মির্যা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীর প্রচারিত ধর্মমত।

কবরপূজা, দরগাহপূজা, ইসলামের বিকৃত অবস্থা, বিকৃতিকরণ, তথা উক্ত প্রক্রিয়ার উৎসস্থল নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী পৃথিবীর পূর্ব প্রান্ত বটে। এখান থেকেই শয়তানের শিং গজিয়ে উঠবে এবং উক্ত শিং সঠিক ইসলামকে গূতা দিতে দিতে একেবারে কোণঠাসা করে ফেলবে। যার বাস্তব চিত্র অনেকটা প্রকাশ পেতে চলেছে। যেমন ঈদে মিলাদুন্নবীর মিছিলকারী বিদ‘আতীদের রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পদচারণা ও তৎপরতায় মনে হয় এ দেশের ইসলাম ও দ্বীন দরদী একমাত্র এরাই। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সারা জীবনে পূর্ববর্তী কোন নবীদের জন্ম দিবস পালন করে যাননি। নিজের জন্মদিনও পালন করেননি। তদ্বীয় সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) তাঁদের প্রাণাধিক প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর জন্মদিবস, মৃত্যুদিবস পালন করেননি। অথচ পূর্বদেশীয় উক্ত বিভ্রান্ত লোকেদের ধারণা মতে যারা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর জন্ম ও ওফাত দিবস পালন না করবে তারা ফাসেক, গোমরাহ্ ইত্যাদি ইত্যাদি। এখন প্রশ্ন হলো, নবীর যুগে, সাহাবাদের যুগে, তাবি’ঈনদের যুগে তথা ইসলামের মহামতি ইমাম চতুষ্টয়ের যুগে এভাবে ঘটা করে বিশাল আয়োজনের সাথে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর জন্ম দিবস ও ওফাত দিবস পালন না করায় তাদের কি কোন অন্যায় বা ক্ষতি হয়েছে? নিশ্চয় বলবেন, তাঁদের কোন অন্যায় হয়নি। বরং তাঁরা এবম্বিধ কার্যাদি পালন হতে বিরত থেকেই সঠিক কাজ করেছেন। সুতরাং ইত্যাকার কাজে যারা জড়িত তাদের কাজ যে সঠিক নয় তা আর যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন নেই।

অতঃপর চিল্লাধারী বন্ধুদের চিল্লার পর চিল্লার মাধ্যমে স্বীয় পরিবার – পরিজনের প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে অবজ্ঞা প্রদর্শন করা, আল্লাহর নির্দেশ- (আরবী) (তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে ও পরিবারবর্গকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও)’র প্রতি ভ্রুক্ষেপ না ক’রে দেশ – দেশান্তরে গমন করা, (আরবী) (তোমাদের কাছে দু’টো জিনিস ছেড়ে গেলাম (আরবী) আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নবীর সুন্নাহ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর এ অন্তিম বাণীকে উপেক্ষা করে বানোয়াট, জাল, উদ্ভট ও আজগুবি কথায় পরিপূর্ণ নিজেদের সিলেবাসের কিতাব পড়তে বাধ্য করা, হাজারো অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, সুদ, ঘুষ, জুয়া ইত্যাদির ব্যাপারে মুখ – চোখ – কান বন্ধ করে রেখে (আরবী) এর ফারযকে দূরে নিক্ষেপ করে মুসলমানদের খাসি করণের অভিযান পরিচালনা করা, দা’ওয়াত দেয়ার নামে মু’মিন মুসল্লীদেরকে মসজিদের গেটে যখন তখন বিরক্ত করা ও বিভিন্ন বিদ’আতী তৎপরতা, অন্যায়ের প্রতিবাদী ইসলামের জিহাদী রূপকে ম্লান করতে চলেছে বটে।

পাক – ভারত উপমহাদেশ তথা ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তানসহ পূর্বাঞ্চলীয় মুসলিমদের মধ্যে প্রচলিত তাবলীগের মাধ্যমে যে ধর্মনিরপেক্ষ তথাকথিত এক প্রকারের ইসলামী চেতনা পরিলক্ষিত হচ্ছে তা যদি যুল্ম, নির্যাতন, হত্যা, শোষণ, লুন্ঠন, অত্যাচার, অবিচার, অশ্লীলতা, নির্লজ্জতা ও বেহায়াপনার বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদী না হয়, শিরক, বিদ‘আতের বিরুদ্ধে আপোষহীন না হয়, সর্বশ্রেণীকে ম্যানেজ করে চলার সুবিধাবাদী নীতি পরিহারকারী না হয়, তাহলে রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী উক্ত প্রচলিত তাবলীগ জামা‘আতকেও পূর্বাঞ্চলীয় বিভেদ সৃষ্টিকারী, ফিতনা ও ফাসাদ সৃষ্টিকারী দ্বীন বিকৃতিকারী একটি দল ব’লে নিঃসন্দেহে সনাক্ত করা যাবে। কেননা উক্ত দলটির তথাকথিত নবীওয়ালা কাজের ফাঁকা বুলি পূর্ববর্তী দ্বীনদার মুসলিমদের কাজের সহিত সামঞ্জস্যশীল নয় বলেই তখন গণ্য হবে।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

 সরাসরি

৬১/৬. অধ্যায়ঃ
আসলাম, গিফার, মুযায়না, জুহায়না ও আশজা’ গোত্রের উল্লেখ।

৩৫১২
حَدَّثَنَا أَبُو نُعَيْمٍ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ سَعْدِ بْنِ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ هُرْمُزَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «قُرَيْشٌ، وَالأَنْصَارُ، وَجُهَيْنَةُ، وَمُزَيْنَةُ، وَأَسْلَمُ، وَغِفَارُ، وَأَشْجَعُ مَوَالِيَّ لَيْسَ لَهُمْ مَوْلًى دُونَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ»

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন কুরাইশ, আনসার, জুহায়নাহ, মুযায়নাহ, আসলাম, গিফার এবং আশজা‘ গোত্রগুলো আমার আপনজন। আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল ছাড়া অন্য কেউ তাদের আপনজন নেই।

৩৫১৩
حَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ غُرَيْرٍ الزُّهْرِيُّ، حَدَّثَنَا يَعْقُوبُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ صَالِحٍ، حَدَّثَنَا نَافِعٌ، أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ، أَخْبَرَهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ عَلَى المِنْبَرِ: «غِفَارُ غَفَرَ اللَّهُ لَهَا، وَأَسْلَمُ سَالَمَهَا اللَّهُ، وَعُصَيَّةُ عَصَتِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ»

‘আবদুল্লাহ (ইব্ন ‘উমর) (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিম্বারে উপবিষ্ট অবস্থায় বলেন, গিফার গোত্র, আল্লাহ্ তাদেরকে মাফ করুন, আসলাম গোত্র, আল্লাহ্ তাদেরকে নিরাপত্তা দান করুন আর ‘উসাইয়া গোত্র, তারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল অবাধ্যতা করেছে।

৩৫১৪
حَدَّثَنِي مُحَمَّدٌ، أَخْبَرَنَا عَبْدُ الوَهَّابِ الثَّقَفِيُّ، عَنْ أَيُّوبَ، عَنْ مُحَمَّدٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «أَسْلَمُ سَالَمَهَا اللَّهُ، وَغِفَارُ غَفَرَ اللَّهُ لَهَا»

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আসলাম গোত্র, আল্লাহ্ তাদেরকে নিরাপত্তা দিন। গিফার গোত্র, আল্লাহ তাদেরকে মাফ করুন।

৩৫১৫
حَدَّثَنَا قَبِيصَةُ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، حَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا ابْنُ مَهْدِيٍّ، عَنْ سُفْيَانَ، عَنْ عَبْدِ المَلِكِ بْنِ عُمَيْرٍ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي بَكْرَةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَرَأَيْتُمْ إِنْ كَانَ جُهَيْنَةُ، وَمُزَيْنَةُ، وَأَسْلَمُ، وَغِفَارُ، خَيْرًا مِنْ بَنِي تَمِيمٍ، وَبَنِي أَسَدٍ، وَمِنْ بَنِي عَبْدِ اللَّهِ بْنِ غَطَفَانَ، وَمِنْ بَنِي عَامِرِ بْنِ صَعْصَعَةَ» [ص: 182] فَقَالَ رَجُلٌ: خَابُوا وَخَسِرُوا، فَقَالَ: «هُمْ خَيْرٌ مِنْ بَنِي تَمِيمٍ، وَمِنْ بَنِي أَسَدٍ، وَمِنْ بَنِي عَبْدِ اللَّهِ بْنِ غَطَفَانَ، وَمِنْ بَنِي عَامِرِ بْنِ صَعْصَعَةَ»

আবূ বাক্‌রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, বলত জুহায়নাহ, মুযায়নাহ, আসলাম ও গিফার গোত্র যদি আল্লাহর নিকট বানূ তামীম, বানূ আসাদ, বানূ গাতফান ও বানূ ‘আমের হতে উত্তম বিবেচিত হয় তবে কেমন হবে? তখন এক সহাবী বললেন, তবে তারা বঞ্চিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হলো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তারা বানূ তামীম, বানূ আসাদ, বানূ ‘আবদুল্লাহ ইব্‌ন গাত্ফান এবং বানূ ‘আমের ইব্‌ন সা‘সা‘আহ হতে উত্তম।

৩৫১৬
حَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا غُنْدَرٌ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ أَبِي يَعْقُوبَ، قَالَ: سَمِعْتُ عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ أَبِي بَكْرَةَ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّ الأَقْرَعَ بْنَ حَابِسٍ، قَالَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّمَا بَايَعَكَ سُرَّاقُ الحَجِيجِ، مِنْ أَسْلَمَ وَغِفَارَ وَمُزَيْنَةَ، – وَأَحْسِبُهُ – وَجُهَيْنَةَ – ابْنُ أَبِي يَعْقُوبَ شَكَّ – قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَرَأَيْتَ إِنْ كَانَ أَسْلَمُ، وَغِفَارُ، وَمُزَيْنَةُ، – وَأَحْسِبُهُ – وَجُهَيْنَةُ، خَيْرًا مِنْ بَنِي تَمِيمٍ، وَبَنِي عَامِرٍ، وَأَسَدٍ، وَغَطَفَانَ خَابُوا وَخَسِرُوا» قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: «وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ إِنَّهُمْ لَخَيْرٌ مِنْهُمْ»

আবূ বাকরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আকরা‘ ইব্‌ন হাবিস নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট ‘আরয করলেন, আসলাম গোত্রের সুররাক হাজীজ, গিফার ও মুযায়না গোত্রদ্বয় আপনার নিকট বায়‘আত করেছে এবং (রাবী বলেন) আমার ধারণা জুহায়না গোত্রও। এ ব্যাপারে ইব্‌ন আবূ ইয়াকুব সন্দেহ পোষণ করেছেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তুমি কি জান, আসলাম, গিফার ও মুযায়নাহ গোত্রত্রয়, (রাবী বলেন) আমার মনে হয় তিনি জুহায়নাহ গোত্রের কথাও উল্লেখ করেছেন যে বনূ তামীম, বনূ ‘আমির, আসাদ ও গাতফান (গোত্রগুলো) যারা ক্ষতিগ্রস্ত ও বঞ্চিত হয়েছে, তাদের তুলনায় পূর্বোক্ত গোত্রগুলো উত্তম। রাবী বলেন, হাঁ। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, সে সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার প্রাণ, পূর্বোক্তগুলো শেষোক্ত গোত্রগুলোর তুলনায় অবশ্যই অতি উত্তম। (৩৫১৫)

(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩২৫৩, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩২৬৩)

————-

৩৫১৬ মীম. আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী বলেন, আসলাম, গিফার এবং মুযাইনাহ ও জুহানাহ গোত্রের কিছু অংশ অথবা জুহানাহ্ও কিছু অংশ মুযায়নাহ্ও কিছু অংশ আল্লাহর নিকট অথবা বলেছেন কিয়ামাতের দিন আসাদ, তামীম, হাওয়াযিন ও গাতাফান গোত্র অপেক্ষা উত্তম বলে বিবেচিত হবে।

(আ.প্র. ৩২৫৪, ই.ফা. ৩২৬৪)

৬১/৭. অধ্যায়ঃ
কাহতান গোত্রের উল্লেখ।

৩৫১৭
حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ حَدَّثَنِي سُلَيْمَانُ بْنُ بِلاَلٍ، عَنْ ثَوْرِ بْنِ زَيْدٍ، عَنْ أَبِي الْغَيْثِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَخْرُجَ رَجُلٌ مِنْ قَحْطَانَ يَسُوقُ النَّاسَ بِعَصَاهُ ‏”‏‏.‏

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কিয়ামত সংঘটিত হবে না যে পর্যন্ত কাহ্তান গোত্র হতে এমন এক ব্যক্তির আগমন না হবে যে মানুষ জাতিকে তার লাঠির সাহায্যে পরিচালিত করবে।

৬১/৮. অধ্যায়ঃ
জাহেলী যুগের মত সাহাস্য প্রার্থনা করা নিষিদ্ধ

৩৫১৮
حَدَّثَنَا مُحَمَّدٌ، أَخْبَرَنَا مَخْلَدُ بْنُ يَزِيدَ، أَخْبَرَنَا ابْنُ جُرَيْجٍ، قَالَ أَخْبَرَنِي عَمْرُو بْنُ دِينَارٍ، أَنَّهُ سَمِعَ جَابِرًا ـ رضى الله عنه ـ يَقُولُ غَزَوْنَا مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَقَدْ ثَابَ مَعَهُ نَاسٌ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ حَتَّى كَثُرُوا، وَكَانَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ رَجُلٌ لَعَّابٌ فَكَسَعَ أَنْصَارِيًّا، فَغَضِبَ الأَنْصَارِيُّ غَضَبًا شَدِيدًا، حَتَّى تَدَاعَوْا، وَقَالَ الأَنْصَارِيُّ يَا لَلأَنْصَارِ‏.‏ وَقَالَ الْمُهَاجِرِيُّ يَا لَلْمُهَاجِرِينَ‏.‏ فَخَرَجَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ ‏”‏ مَا بَالُ دَعْوَى أَهْلِ الْجَاهِلِيَّةِ ‏”‏‏.‏ ثُمَّ قَالَ ‏”‏ مَا شَأْنُهُمْ ‏”‏‏.‏ فَأُخْبِرَ بِكَسْعَةِ الْمُهَاجِرِيِّ الأَنْصَارِيَّ قَالَ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ دَعُوهَا فَإِنَّهَا خَبِيثَةٌ ‏”‏‏.‏ وَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ أُبَىٍّ ابْنُ سَلُولَ أَقَدْ تَدَاعَوْا عَلَيْنَا، لَئِنْ رَجَعْنَا إِلَى الْمَدِينَةِ لَيُخْرِجَنَّ الأَعَزُّ مِنْهَا الأَذَلَّ‏.‏ فَقَالَ عُمَرُ أَلاَ نَقْتُلُ يَا رَسُولَ اللَّهِ هَذَا الْخَبِيثَ لِعَبْدِ اللَّهِ‏.‏ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ لاَ يَتَحَدَّثُ النَّاسُ أَنَّهُ كَانَ يَقْتُلُ أَصْحَابَهُ ‏”‏‏.‏

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর পরিচালনায় যুদ্ধে শামিল ছিলাম। এ যুদ্ধে বহু মুহাজির সাহাবী যোগদান করেছিলেন। মুহাজিরদের মধ্যে একজন কৌতুক পুরুষ ছিলেন। তিনি কৌতুকবশতঃ একজন আনসারীকে আঘাত করলেন। তাতে আনসারী সাহাবী অত্যন্ত রাগান্বিত হলেন এবং উভয় গোত্রের সাহায্যের জন্য নিজ নিজ লোকদের আহবান জানালেন। আনসারী সহাবী বললেন, হে আনসারীগণ! মুহাজির সাহাবী বললেন, হে মুহাজিরগণ সাহায্যে এগিয়ে আস। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এতদশ্রবণে বের হয়ে আসলেন এবং বললেন, জাহেলী যুগের ডাকাডাকি কেন? অতঃপর বললেন, তাদের ব্যাপার কী? তাঁকে ঘটনা জানানো হল। মুহাজির সাহাবী আনসারী সাহাবীর কোমরে আঘাত করেছে। রাবী বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এ ধরনের হাঁকডাক ত্যাগ কর, এ অত্যন্ত ঘৃণিত কাজ। ‘আবদুল্লাহ ইব্‌ন উবাই ইব্‌ন সালূল বলল, তারা আমাদের বিরুদ্ধে ডাক দিয়েছে? আমরা যদি মদীনায় নিরাপদে ফিরে যাই তবে সম্মানিত ব্যক্তিগণ অবশ্যই বাহির করে দিবে অপদস্ত ব্যক্তিদেরকে। তখন ‘উমর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আপনি কি এই খাবীসকে হত্যা করার অনুমতি দিবেন? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, লোকজন বলাবলি করবে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাহাবীদেরকে হত্যা করে থাকে।

৩৫১৯
حَدَّثَنِي ثَابِتُ بْنُ مُحَمَّدٍ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مُرَّةَ، عَنْ مَسْرُوقٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ ـ رضى الله عنه ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم‏.‏ وَعَنْ سُفْيَانَ، عَنْ زُبَيْدٍ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ مَسْرُوقٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ لَيْسَ مِنَّا مَنْ ضَرَبَ الْخُدُودَ، وَشَقَّ الْجُيُوبَ، وَدَعَا بِدَعْوَى الْجَاهِلِيَّةِ ‏”‏‏.‏

‘আবদুল্লাহ ইব্ন মাস’উদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ঐ ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয় যে গালে চপেটাঘাত করে, পরনের কাপড় ছিন্নভিন্ন করে এবং জাহিলীয়াতের যুগের মত হাঁকডাক করে।

৬১/৯. অধ্যায়ঃ
খুযা’আহ গোত্রের কাহিনী।

৩৫২০
حَدَّثَنِي إِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ آدَمَ، أَخْبَرَنَا إِسْرَائِيلُ، عَنْ أَبِي حَصِينٍ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ عَمْرُو بْنُ لُحَىِّ بْنِ قَمَعَةَ بْنِ خِنْدِفَ أَبُو خُزَاعَةَ ‏”‏‏.‏

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘আম্‌র ইব্‌ন লুহাই ইব্‌ন কাম’আহ ইব্‌ন খিনদাফ খুযা’আহ গোত্রের পূর্বপুরুষ ছিল।

৩৫২১
حَدَّثَنَا أَبُو الْيَمَانِ، أَخْبَرَنَا شُعَيْبٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، قَالَ سَمِعْتُ سَعِيدَ بْنَ الْمُسَيَّبِ، قَالَ الْبَحِيرَةُ الَّتِي يُمْنَعُ دَرُّهَا لِلطَّوَاغِيتِ وَلاَ يَحْلُبُهَا أَحَدٌ مِنَ النَّاسِ، وَالسَّائِبَةُ الَّتِي كَانُوا يُسَيِّبُونَهَا لآلِهَتِهِمْ فَلاَ يُحْمَلُ عَلَيْهَا شَىْءٌ‏.‏ قَالَ وَقَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ رَأَيْتُ عَمْرَو بْنَ عَامِرِ بْنِ لُحَىٍّ الْخُزَاعِيَّ يَجُرُّ قُصْبَهُ فِي النَّارِ، وَكَانَ أَوَّلَ مَنْ سَيَّبَ السَّوَائِبَ ‏”‏‏.‏

যুহরী (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আমি সাঈ’দ ইব্‌ন মুসাইয়্যাব (রহঃ) -কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেন, বাহীরাহ বলে দেবতার নামে উৎসর্গ করা উটনী যার দুধ আট্কিয়ে রাখা হত এবং কোন লোক তার দুধ দোহন করত না। সা-য়িবাহ বলে ঐ পশুকে যাকে তারা ছেড়ে দিত দেবতার নামে। তাকে বোঝা বহন ইত্যাদি কোন কাজ কর্মে ব্যবহার করা হয় না। রাবী বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেছেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমি ‘আম্‌র ইব্‌ন ‘আমির খুয’আহকে তার বহির্গত নাড়ি – ভুঁড়ি নিয়ে জাহান্নামের আগুনে চলাফেরা করতে দেখেছি। সেই প্রথম ব্যক্তি যে সা-য়্যিবাহ উৎসর্গ করার প্রথা প্রচলন করে।

৬১/১০. অধ্যায়ঃ
আবূ যর গিফারী (রাঃ) -এর ইসলাম গ্রহণের ঘটনা। [১]

[১] এ অধ্যায়ের হাদীস ৩৮৬১ নং হাদীস যথাস্থানেই বর্ণিত হয়েছে।

৬১/১১. অধ্যায়ঃ
যমযম কূপের ঘটনা।

৩৫২২
حَدَّثَنَا زَيْدٌ ـ هُوَ ابْنُ أَخْزَمَ ـ قَالَ أَبُو قُتَيْبَةَ سَلْمُ بْنُ قُتَيْبَةَ حَدَّثَنِي مُثَنَّى بْنُ سَعِيدٍ الْقَصِيرُ، قَالَ حَدَّثَنِي أَبُو جَمْرَةَ، قَالَ لَنَا ابْنُ عَبَّاسِ أَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِإِسْلاَمِ أَبِي ذَرٍّ، قَالَ قُلْنَا بَلَى‏.‏ قَالَ قَالَ أَبُو ذَرٍّ كُنْتُ رَجُلاً مِنْ غِفَارٍ، فَبَلَغَنَا أَنَّ رَجُلاً قَدْ خَرَجَ بِمَكَّةَ، يَزْعُمُ أَنَّهُ نَبِيٌّ، فَقُلْتُ لأَخِي انْطَلِقْ إِلَى هَذَا الرَّجُلِ كَلِّمْهُ وَأْتِنِي بِخَبَرِهِ‏.‏ فَانْطَلَقَ فَلَقِيَهُ، ثُمَّ رَجَعَ فَقُلْتُ مَا عِنْدَكَ فَقَالَ وَاللَّهِ لَقَدْ رَأَيْتُ رَجُلاً يَأْمُرُ بِالْخَيْرِ وَيَنْهَى عَنِ الشَّرِّ‏.‏ فَقُلْتُ لَهُ لَمْ تَشْفِنِي مِنَ الْخَبَرِ‏.‏ فَأَخَذْتُ جِرَابًا وَعَصًا، ثُمَّ أَقْبَلْتُ إِلَى مَكَّةَ فَجَعَلْتُ لاَ أَعْرِفُهُ، وَأَكْرَهُ أَنْ أَسْأَلَ عَنْهُ، وَأَشْرَبُ مِنْ مَاءِ زَمْزَمَ وَأَكُونُ فِي الْمَسْجِدِ‏.‏ قَالَ فَمَرَّ بِي عَلِيٌّ فَقَالَ كَأَنَّ الرَّجُلَ غَرِيبٌ‏.‏ قَالَ قُلْتُ نَعَمْ‏.‏ قَالَ فَانْطَلِقْ إِلَى الْمَنْزِلِ‏.‏ قَالَ فَانْطَلَقْتُ مَعَهُ لاَ يَسْأَلُنِي عَنْ شَىْءٍ، وَلاَ أُخْبِرُهُ، فَلَمَّا أَصْبَحْتُ غَدَوْتُ إِلَى الْمَسْجِدِ لأَسْأَلَ عَنْهُ، وَلَيْسَ أَحَدٌ يُخْبِرُنِي عَنْهُ بِشَىْءٍ‏.‏ قَالَ فَمَرَّ بِي عَلِيٌّ فَقَالَ أَمَا نَالَ لِلرَّجُلِ يَعْرِفُ مَنْزِلَهُ بَعْدُ قَالَ قُلْتُ لاَ‏.‏ قَالَ انْطَلِقْ مَعِي‏.‏ قَالَ فَقَالَ مَا أَمْرُكَ وَمَا أَقْدَمَكَ هَذِهِ الْبَلْدَةَ قَالَ قُلْتُ لَهُ إِنْ كَتَمْتَ عَلَىَّ أَخْبَرْتُكَ‏.‏ قَالَ فَإِنِّي أَفْعَلُ‏.‏ قَالَ قُلْتُ لَهُ بَلَغَنَا أَنَّهُ قَدْ خَرَجَ هَا هُنَا رَجُلٌ يَزْعُمُ أَنَّهُ نَبِيٌّ، فَأَرْسَلْتُ أَخِي لِيُكَلِّمَهُ فَرَجَعَ وَلَمْ يَشْفِنِي مِنَ الْخَبَرِ، فَأَرَدْتُ أَنْ أَلْقَاهُ‏.‏ فَقَالَ لَهُ أَمَا إِنَّكَ قَدْ رَشَدْتَ، هَذَا وَجْهِي إِلَيْهِ، فَاتَّبِعْنِي، ادْخُلْ حَيْثُ أَدْخُلُ، فَإِنِّي إِنْ رَأَيْتُ أَحَدًا أَخَافُهُ عَلَيْكَ، قُمْتُ إِلَى الْحَائِطِ، كَأَنِّي أُصْلِحُ نَعْلِي، وَامْضِ أَنْتَ، فَمَضَى وَمَضَيْتُ مَعَهُ، حَتَّى دَخَلَ وَدَخَلْتُ مَعَهُ عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقُلْتُ لَهُ اعْرِضْ عَلَىَّ الإِسْلاَمَ‏.‏ فَعَرَضَهُ فَأَسْلَمْتُ مَكَانِي، فَقَالَ لِي ‏ “‏ يَا أَبَا ذَرٍّ اكْتُمْ هَذَا الأَمْرَ، وَارْجِعْ إِلَى بَلَدِكَ، فَإِذَا بَلَغَكَ ظُهُورُنَا فَأَقْبِلْ ‏”‏‏.‏ فَقُلْتُ وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ لأَصْرُخَنَّ بِهَا بَيْنَ أَظْهُرِهِمْ‏.‏ فَجَاءَ إِلَى الْمَسْجِدِ، وَقُرَيْشٌ فِيهِ فَقَالَ يَا مَعْشَرَ قُرَيْشٍ، إِنِّي أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ‏.‏ فَقَالُوا قُومُوا إِلَى هَذَا الصَّابِئِ‏.‏ فَقَامُوا فَضُرِبْتُ لأَمُوتَ فَأَدْرَكَنِي الْعَبَّاسُ، فَأَكَبَّ عَلَىَّ ثُمَّ أَقْبَلَ عَلَيْهِمْ، فَقَالَ وَيْلَكُمْ تَقْتُلُونَ رَجُلاً مِنْ غِفَارَ، وَمَتْجَرُكُمْ وَمَمَرُّكُمْ عَلَى غِفَارَ‏.‏ فَأَقْلَعُوا عَنِّي، فَلَمَّا أَنْ أَصْبَحْتُ الْغَدَ رَجَعْتُ فَقُلْتُ مِثْلَ مَا قُلْتُ بِالأَمْسِ، فَقَالُوا قُومُوا إِلَى هَذَا الصَّابِئِ‏.‏ فَصُنِعَ ‏{‏بِي‏}‏ مِثْلَ مَا صُنِعَ بِالأَمْسِ وَأَدْرَكَنِي الْعَبَّاسُ فَأَكَبَّ عَلَىَّ، وَقَالَ مِثْلَ مَقَالَتِهِ بِالأَمْسِ‏.‏ قَالَ فَكَانَ هَذَا أَوَّلَ إِسْلاَمِ أَبِي ذَرٍّ رَحِمَهُ اللَّهُ‏.‏

আবূ জামরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইব্‌ন ‘আব্বাস (রাঃ) আমাদেরকে বললেন, আমি কি তোমাদেরকে আবূ যার (রাঃ) এর ইসলাম গ্রহণের ঘটনা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করব? আমরা বললাম হাঁ, অবশ্যই। তিনি বলেন, আবূ যার (রাঃ) বলেছেন, আমি গিফার গোত্রের একজন মানুষ। আমরা জানতে পেলাম মক্কায় এক ব্যক্তি আত্মপ্রকাশ করে নিজেকে নবী বলে দাবী করছেন। আমি আমার ভাইকে বললাম, তুমি মক্কায় গিয়ে ঐ ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ ও আলোচনা করে বিস্তারিত খোঁজ – খবর নিয়ে এস। সে রওয়ানা হয়ে গেল এবং মক্কার ঐ লোকটির সঙ্গে সাক্ষাৎ ও আলাপ – আলোচনা করে ফিরে আসলে আমি জিজ্ঞেস করলাম- কী খবর নিয়ে এলে? সে বলল, আল্লাহ্‌র কসম! আমি একজন মহান ব্যক্তিকে দেখেছি যিনি সৎকাজের আদেশ এবং মন্দ কাজ হতে নিষেধ করেন। আমি বললাম, তোমার খবরে আমি সন্তুষ্ট হতে পারলাম না। অতঃপর আমি একটি ছড়ি ও এক পাত্র খাবার নিয়ে মক্কার দিকে রওয়ানা হলাম। মক্কায় পৌছে আমার অবস্থা দাঁড়াল এমন- তিনি আমার পরিচিত নন, কারো নিকট জিজ্ঞেস করাও আমি সমীচীন মনে করি না। তাই আমি যমযমের পানি পান করে মসজিদে থাকতে লাগলাম। একদিন সন্ধ্যা বেলা ‘আলী (রাঃ) আমার নিকট দিয়ে গমনকালে আমার প্রতি ইশারা করে বললেন, মনে হয় লোকটি বিদেশী। আমি বললাম, হাঁ। তিনি বললেন, আমার সঙ্গে আমার বাড়িতে চল। পথেই তিনি আমাকে কোন কিছু জিজ্ঞেস করেননি। আর আমিও ইচ্ছা করে কোন কিছু বলিনি। তাঁর বাড়িতে রাত্রি যাপন করে ভোর বেলায় আবার মসজিদে গেলাম যাতে ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করব। কিন্তু ওখানে এমন কোন লোক ছিল না যে ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে কিছু বলবে। ঐ দিনও ‘আলী (রাঃ) আমার নিকট দিয়ে চলার সময় বললেন, এখনো কি লোকটি তার গন্তব্যস্থল ঠিক করতে পারেনি? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, আমার সঙ্গে চল। পথিমধ্যে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন বল, তোমার বিষয় কী? কেন এ শহরে এসেছ? আমি বললাম, যদি আপনি আমার বিষয়টি গোপন রাখার আশ্বাস দেন তাহলে তা আপনাকে বলতে পারি। তিনি বললেন নিশ্চয়ই আমি গোপন করব। আমি বললাম, আমরা জানতে পেরেছি, এখানে এমন এক লোকের আবির্ভাব হয়েছে যিনি নিজেকে নবী বলে দাবী করেন। আমি তাঁর সঙ্গে বিস্তারিত আলাপ আলোচনা করার জন্য আমার ভাইকে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সে ফেরত গিয়ে আমাকে সন্তোষজনক কোন কিছু বলতে পারেনি। তাই নিজে দেখা করার ইচ্ছা নিয়ে এখানে আগমন করেছি। ‘আলী (রাঃ) বললেন, তুমি সঠিক পথপ্রদর্শক পেয়েছ। আমি এখনই তাঁর কাছে উপস্থিত হবার জন্য রওয়ানা হয়েছি। তুমি আমাকে অনুসরণ কর এবং আমি যে গৃহে প্রবেশ করি তুমিও সে গৃহে প্রবেশ করবে। রাস্তায় যদি তোমার বিপদজনক কোন লোক দেখতে পাই তবে আমি জুতা ঠিক করার অজুহাতে দেয়ালের পার্শ্বে সরে দাঁড়াব, যেন আমি জুতা ঠিক করছি। তুমি কিন্তু চলতেই থাকবে। ‘আলী (রাঃ) পথ চলতে শুরু করলেন। আমিও তাঁর অনুসরণ করে চলতে লাগলাম। তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট প্রবেশ করলে, আমিও তাঁর সঙ্গে ঢুকে পড়লাম। আমি বললাম, আমার নিকট ইসলাম পেশ করুন। তিনি পেশ করলেন। আর আমি মুসলিম হয়ে গেলাম। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে আবূ যার। এখনকার মত তোমার ইসলাম গ্রহণ গোপন রেখে তোমার দেশে চলে যাও। যখন আমাদের বিজয়ের খবর জানতে পাবে তখন এসো। আমি বললাম, যে আল্লাহ্ আপনাকে সত্য দীনসহ পাঠিয়েছেন তাঁর শপথ! আমি কাফির মুশরিকদের সামনে উচ্চঃস্বরে তৌহীদের বাণী ঘোষণা করব। (ইব্‌ন ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, ) এই কথা বলে তিনি মসজিদে হারামে গমন করলেন, কুরাইশের লোকজনও সেখানে হাজির ছিল। তিনি বললেন হে কুরাইশগণ! আমি নিশ্চিতভাবে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন মা’বুদ নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ্‌র বান্দা ও তাঁর রাসূল। এতদশ্রবণে কুরাইশগণ বলে উঠল, ধর এই ধর্মত্যাগী লোকটিকে। তারা আমার দিকে এগিয়ে আসলো এবং আমাকে নির্মমভাবে প্রহার করতে লাগল; যেন আমি মরে যাই। তখন ‘আব্বাস (রাঃ) আমার নিকট পৌঁছে আমাকে ঘিরে রাখলেন। অতঃপর তিনি কুরাইশকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তোমাদের বিপদ অবশ্যম্ভাবী। তোমরা গিফার বংশের জনৈক ব্যক্তিকে হত্যা করতে উদ্যোগী হয়েছ অথচ তোমাদের ব্যবসা – বাণিজ্যের কাফেলাকে গিফার গোত্রের নিকট দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। এ কথা শুনে তারা সরে পড়ল। পরদিন ভোরবেলা কাবাগৃহে উপস্থিত হয়ে গতদিনের মতই আমি আমার ইসলাম গ্রহণের পূর্ণ ঘোষনা দিলাম। কুরাইশগণ বলে উঠলো, ধর এই ধর্মত্যাগী লোকটিকে। গতদিনের মত আজও তারা নির্মমভাবে আমাকে মারধর করলো। এই দিনও ‘আব্বাস (রাঃ) এসে আমাকে রক্ষা করলেন এবং কুরাইশদেরকে উদ্দেশ্য করে ঐ দিনের মত বক্তব্য রাখলেন। ইব্‌ন ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, এটাই ছিল আবূ যার (রাঃ) -এর ইসলাম গ্রহণের প্রথম ঘটনা।

FOR MORE CLICK HERE

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]