৬১. অধ্যায়ঃ
মিথ্যা কসমের মাধ্যমে কোন মুসলিমের হাক তসরুফকারীর প্রতি জাহান্নামের হুমকী
২৫০
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ أَيُّوبَ، وَقُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، وَعَلِيُّ بْنُ حُجْرٍ، جَمِيعًا عَنْ إِسْمَاعِيلَ بْنِ جَعْفَرٍ، – قَالَ ابْنُ أَيُّوبَ حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ جَعْفَرٍ، – قَالَ أَخْبَرَنَا الْعَلاَءُ، – وَهُوَ ابْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ مَوْلَى الْحُرَقَةِ – عَنْ مَعْبَدِ بْنِ كَعْبٍ السَّلَمِيِّ، عَنْ أَخِيهِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ كَعْبٍ، عَنْ أَبِي أُمَامَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” مَنِ اقْتَطَعَ حَقَّ امْرِئٍ مُسْلِمٍ بِيَمِينِهِ فَقَدْ أَوْجَبَ اللَّهُ لَهُ النَّارَ وَحَرَّمَ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ ” . فَقَالَ لَهُ رَجُلٌ وَإِنْ كَانَ شَيْئًا يَسِيرًا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ ” وَإِنْ قَضِيبًا مِنْ أَرَاكٍ ” .
আবূ উমামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি কসমের মাধ্যমে কোন মুসলিমের হাক্ বিনষ্ট করে তার জন্য আল্লাহ জাহান্নাম ওয়াজিব করে রেখেছেন এবং জান্নাত হারাম করে রেখেছেন। তখন জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রসূল! অতি সামান্য বস্তু হলেও? রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আরাক (বাবলা গাছের মত এক ধরনের কাঁটাযুক্ত) গাছের ডাল হলেও এ শাস্তি দেয়া হবে। [৪৯] (ই.ফা. ২৫২; ই.সে. ২৬১)
[৪৯] মুসলিমের হাক্ নষ্ট করা পাপের কাজ। তদুপরি মিথ্যা কসম খেয়ে কারো হাক্ নষ্ট করা মহাপাপ। যার শাস্তি জান্নাত হতে বঞ্চিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করে। সে হাক্ ছোট হোক আর বড়ই হোক। শাস্তি ভোগ করতেই হবে। কেননা সে ইসলামের হাক্ উপলব্ধি করেনি এবং আল্লাহর নামের মর্যাদাও রক্ষা করেনি। ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, উপরোক্ত হাদীসের ব্যাখ্যা দুইভাবে করা যায়।
২৫১
وَحَدَّثَنَاهُ أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، وَإِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، وَهَارُونُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، جَمِيعًا عَنْ أَبِي أُسَامَةَ، عَنِ الْوَلِيدِ بْنِ كَثِيرٍ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ كَعْبٍ، أَنَّهُ سَمِعَ أَخَاهُ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ كَعْبٍ، يُحَدِّثُ أَنَّ أَبَا أُمَامَةَ الْحَارِثِيَّ، حَدَّثَهُ أَنَّهُ، سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِمِثْلِهِ .
আবূ উমামাহ আল হারিসী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ২৫৩; ই.সে. ২৬২)
২৫২
وَحَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، ح وَحَدَّثَنَا ابْنُ نُمَيْرٍ، حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، وَوَكِيعٌ، ح وَحَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ الْحَنْظَلِيُّ، – وَاللَّفْظُ لَهُ – أَخْبَرَنَا وَكِيعٌ، حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ، عَنْ أَبِي وَائِلٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” مَنْ حَلَفَ عَلَى يَمِينِ صَبْرٍ يَقْتَطِعُ بِهَا مَالَ امْرِئٍ مُسْلِمٍ هُوَ فِيهَا فَاجِرٌ لَقِيَ اللَّهَ وَهُوَ عَلَيْهِ غَضْبَانُ ” . قَالَ فَدَخَلَ الأَشْعَثُ بْنُ قَيْسٍ فَقَالَ مَا يُحَدِّثُكُمْ أَبُو عَبْدِ الرَّحْمَنِ قَالُوا كَذَا وَكَذَا . قَالَ صَدَقَ أَبُو عَبْدِ الرَّحْمَنِ فِيَّ نَزَلَتْ كَانَ بَيْنِي وَبَيْنَ رَجُلٍ أَرْضٌ بِالْيَمَنِ فَخَاصَمْتُهُ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ ” هَلْ لَكَ بَيِّنَةٌ ” . فَقُلْتُ لاَ . قَالَ ” فَيَمِينُهُ ” . قُلْتُ إِذًا يَحْلِفُ . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عِنْدَ ذَلِكَ ” مَنْ حَلَفَ عَلَى يَمِينِ صَبْرٍ يَقْتَطِعُ بِهَا مَالَ امْرِئٍ مُسْلِمٍ هُوَ فِيهَا فَاجِرٌ لَقِيَ اللَّهَ وَهُوَ عَلَيْهِ غَضْبَانُ ” . فَنَزَلَتْ { إِنَّ الَّذِينَ يَشْتَرُونَ بِعَهْدِ اللَّهِ وَأَيْمَانِهِمْ ثَمَنًا قَلِيلاً} إِلَى آخِرِ الآيَةِ .
‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি তার উপর অর্পিত চূড়ান্ত কসমের মাধ্যমে কোন মুসলিমের সম্পদ আত্মসাৎ করে অথচ সে মিথ্যাবাদী। এমন অবস্থায় আল্লাহর সাথে তার সাক্ষাৎ ঘটবে যে, তিনি তার প্রতি রেগে থাকবেন। রাবী বলেন, আশ’আস ইবনু কায়স তথায় প্রবেশ করলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, আবূ ‘আবদুর রহমান (‘আবদুল্লাহ) তোমাদেরকে কি বর্ণনা করলেন? তদুত্তরে সকলে উক্ত হাদীসটির কথা বললেন, তিনি বললেন, আবূ ‘আবদুর রহমান সত্যই বর্ণনা করেছেন, ঘটনাটি আমাকে কেন্দ্র করেই ঘটেছিল। ব্যাপার হলো ইয়ামানে জনৈক ব্যক্তির সাথে আমারও একখণ্ড ভূমি ছিল। এর মীমাংসা করার জন্য আমরা রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমাতে উপস্থিত হই, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার দাবীর স্বপক্ষে তোমার নিকট কোন প্রমাণ আছে কি? আমি বললাম, না। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তা হলে বিবাদীর কসম নেয়া হবে। আমি বললাম, এ ব্যক্তি তো কসম করবেই। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যে ব্যক্তি তার উপর অর্পিত চূড়ান্ত কসমের মাধ্যমে কোন মুসলিমের সম্পদ গ্রাস করে অথচ সে মিথ্যাবাদী আল্লাহর সাথে এমন অবস্থায় তার সাক্ষাৎ ঘটবে যে, আল্লাহ তার প্রতি ক্রোধান্বিত থাকবেন। এরপর এ আয়াত নাযিল হয়, “যারা আল্লাহর সাথে কৃত ওয়া’দা এবং নিজেদের কসম তুচ্ছ মূল্যে বিক্রি করে, পরকালে তাদের কোন অংশ নেই। কিয়ামাত দিবসে আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না এবং তাদেরকি পরিশুদ্ধ করবেন না; তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি”-(সূরাহ আ-লি ‘ইমরান ৩ : ৭৭)। (ই.ফা. ২৫৪; ই.সে. ২৬৩)
২৫৩
حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، أَخْبَرَنَا جَرِيرٌ، عَنْ مَنْصُورٍ، عَنْ أَبِي وَائِلٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ مَنْ حَلَفَ عَلَى يَمِينٍ يَسْتَحِقُّ بِهَا مَالاً هُوَ فِيهَا فَاجِرٌ لَقِيَ اللَّهَ وَهُوَ عَلَيْهِ غَضْبَانُ . ثُمَّ ذَكَرَ نَحْوَ حَدِيثِ الأَعْمَشِ غَيْرَ أَنَّهُ قَالَ كَانَتْ بَيْنِي وَبَيْنَ رَجُلٍ خُصُومَةٌ فِي بِئْرٍ فَاخْتَصَمْنَا إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ “ شَاهِدَاكَ أَوْ يَمِينُهُ ” .
‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
যে ব্যক্তি মিথ্যা কসমের মাধমে কোন সম্পদ আত্মসাৎ করবে আল্লাহর সঙ্গে তার সাক্ষাৎ ঘটবে এমন অবস্থায় যে, তিনি তার প্রতি রেগে থাকবেন। পরে বর্ণনাকারী আ’মাশ বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তবে তিনি (ইয়ামানের ভূমির স্থলে) এ কথা বলেন, জনৈক ব্যক্তির সাথে আমার সাথে একটি কূপ নিয়ে বিরোধ ছিল। আমরা এর মীমাংসার জন্য রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে উপস্থিত হই। তখন তিনি বললেন, তোমার দু’জন সাক্ষী লাগবে অথবা বিবাদী থেকে কসম নেয়া হবে। (ই.ফা. ২৫৫; ই.সে. ২৬৪)
২৫৪
وَحَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي عُمَرَ الْمَكِّيُّ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ جَامِعِ بْنِ أَبِي رَاشِدٍ، وَعَبْدِ الْمَلِكِ بْنِ أَعْيَنَ، سَمِعَا شَقِيقَ بْنَ سَلَمَةَ، يَقُولُ سَمِعْتُ ابْنَ مَسْعُودٍ، يَقُولُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ” مَنْ حَلَفَ عَلَى مَالِ امْرِئٍ مُسْلِمٍ بِغَيْرِ حَقِّهِ لَقِيَ اللَّهَ وَهُوَ عَلَيْهِ غَضْبَانُ ” قَالَ عَبْدُ اللَّهِ ثُمَّ قَرَأَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مِصْدَاقَهُ مِنْ كِتَابِ اللَّهِ { إِنَّ الَّذِينَ يَشْتَرُونَ بِعَهْدِ اللَّهِ وَأَيْمَانِهِمْ ثَمَنًا قَلِيلاً} إِلَى آخِرِ الآيَةِ .
ইবনু মাস’উদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি : যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের সম্পদ আত্মসাতের জন্য মিথ্যা কসম করবে আল্লাহর সঙ্গে তার সাক্ষাৎ ঘটবে এমন অবস্থায় যে, তিনি তার প্রতি রেগে থাকবেন। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, তারপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রমাণ হিসেবে এ আয়াত পাঠ করেন : “যারা আল্লাহর সাথে কৃত প্রতিশ্রুতি এবং নিজেদের শপথ তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে, (পরকালে তাদের কোন অংশ নেই। কিয়ামাতের দিনে আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবেন না; তাদের জন্য মর্মন্তুদ শাস্তি রয়েছে)-(সূরাহ আ-লি ইমরান ৩ : ৭৭)। (ই.ফা. ২৫৬; ই.সে. ২৬৫)
২৫৫
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، وَأَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ وَهَنَّادُ بْنُ السَّرِيِّ وَأَبُو عَاصِمٍ الْحَنَفِيُّ – وَاللَّفْظُ لِقُتَيْبَةَ – قَالُوا حَدَّثَنَا أَبُو الأَحْوَصِ، عَنْ سِمَاكٍ، عَنْ عَلْقَمَةَ بْنِ وَائِلٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ جَاءَ رَجُلٌ مِنْ حَضْرَمَوْتَ وَرَجُلٌ مِنْ كِنْدَةَ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ الْحَضْرَمِيُّ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ هَذَا قَدْ غَلَبَنِي عَلَى أَرْضٍ لِي كَانَتْ لأَبِي . فَقَالَ الْكِنْدِيُّ هِيَ أَرْضِي فِي يَدِي أَزْرَعُهَا لَيْسَ لَهُ فِيهَا حَقٌّ . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لِلْحَضْرَمِيِّ ” أَلَكَ بَيِّنَةٌ ” . قَالَ لاَ . قَالَ ” فَلَكَ يَمِينُهُ ” . قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ الرَّجُلَ فَاجِرٌ لاَ يُبَالِي عَلَى مَا حَلَفَ عَلَيْهِ وَلَيْسَ يَتَوَرَّعُ مِنْ شَىْءٍ . فَقَالَ ” لَيْسَ لَكَ مِنْهُ إِلاَّ ذَلِكَ ” فَانْطَلَقَ لِيَحْلِفَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لَمَّا أَدْبَرَ ” أَمَا لَئِنْ حَلَفَ عَلَى مَالِهِ لِيَأْكُلَهُ ظُلْمًا لَيَلْقَيَنَّ اللَّهَ وَهُوَ عَنْهُ مُعْرِضٌ ” .
ওয়ায়িল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
ওয়ায়িল (রাঃ) বলেন হাযরামাওতের জনৈক ব্যক্তি কিনদীর এক ব্যক্তিকে নিয়ে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে উপস্থিত হয়। হাযরামাওতবাসী লোকটি বলল, হে আল্লাহর রসূল! এ ব্যক্তি আমার একটি পৈতৃক ভূমি জোর করে দখল করে। কিনদী বলে উঠল না, এতো আমারই সম্পত্তি এবং আমারই দখলে আছে। এতে আমি চাষাবাদ করি, এতে কারোর কোন অধিকার নেই। তখন রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাযরামাওতবাসীকে বললেনঃ তোমার কোন সাক্ষী আছে? সে উত্তর দিল, না। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তা হলে এ বিষয়ে বিবাদী কসম করবে। হাযরামাওতবাসী বলল, হে আল্লাহর রসূল! এতো অসৎ লোক, কসম করার বিষয়ে তার আদৌ পরোয়া নেই। আর সে কোন কিছুরই বাছ বিচার করে না। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এছাড়া তার কাছ থেকে তোমার নেয়ার আর কোন পথ নেই। এরপর কিনদী শপথ করতে উদ্যোগ নিল। তখন রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যদি সে (কিনদী) অন্যায়ভাবে সম্পদ আত্মসাৎ করার জন্য শপথ করে তবে সে অবশ্যই আল্লাহর কাছে এমন অবস্থায় উপস্থিত হবে যে, তিনি তাঁর মুখ ফিরিয়ে নিবেন। (ই.ফা. ২৫৭; ই.সে. ২৬৬)
২৫৬
وَحَدَّثَنِي زُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، وَإِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، جَمِيعًا عَنْ أَبِي الْوَلِيدِ، قَالَ زُهَيْرٌ حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ عَبْدِ الْمَلِكِ، حَدَّثَنَا أَبُو عَوَانَةَ، عَنْ عَبْدِ الْمَلِكِ بْنِ عُمَيْرٍ، عَنْ عَلْقَمَةَ بْنِ وَائِلٍ، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ، قَالَ كُنْتُ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَأَتَاهُ رَجُلاَنِ يَخْتَصِمَانِ فِي أَرْضٍ فَقَالَ أَحَدُهُمَا إِنَّ هَذَا انْتَزَى عَلَى أَرْضِي يَا رَسُولَ اللَّهِ فِي الْجَاهِلِيَّةِ – وَهُوَ امْرُؤُ الْقَيْسِ بْنُ عَابِسٍ الْكِنْدِيُّ وَخَصْمُهُ رَبِيعَةُ بْنُ عِبْدَانَ – قَالَ ” بَيِّنَتُكَ ” . قَالَ لَيْسَ لِي بَيِّنَةٌ . قَالَ ” يَمِينُهُ ” . قَالَ إِذًا يَذْهَبُ بِهَا . قَالَ ” لَيْسَ لَكَ إِلاَّ ذَاكَ ” . قَالَ فَلَمَّا قَامَ لِيَحْلِفَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ” مَنِ اقْتَطَعَ أَرْضًا ظَالِمًا لَقِيَ اللَّهَ وَهُوَ عَلَيْهِ غَضْبَانُ ” . قَالَ إِسْحَاقُ فِي رِوَايَتِهِ رَبِيعَةُ بْنُ عَيْدَانَ .
ওয়ায়িল ইবনু হুজ্র (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। ইত্যবসরে দু’ব্যক্তি তাঁর নিকট এসে একটি ভূমি সম্পর্কে বিচার প্রার্থনা করে। তন্মধ্যে একজন বলল, হে আল্লাহর রসূল! জাহিলী যুগে এ ব্যক্তি আমার ভূমি জোর করে দখল করেছে। বর্ণনাকারী বলেন, বিচার প্রার্থনাকারী ছিল ইমরুল কায়স ইবনু ‘আবিস আল কিনদী আর তার বিবাদী ছিল রাবি’আহ ইবনু ‘আব্দান। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমার সাক্ষী পেশ কর। লোকটি বলল, আমার কোন সাক্ষী নেই। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তা হলে বিবাদী থেকে কসম নেয়া হবে। লোকটি বলল, তবে তো সে মিথ্যা কসম করে সম্পত্তি আত্মসাৎ করবে। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এছাড়া তার কাছ থেকে তোমার নেয়ার আর কোন পথ নেই। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর বিবাদী যখন শপথ করার জন্য প্রস্তুত হলো, তখন রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যে অন্যায়ভাবে সম্পত্তি আত্মসাৎ করবে সে আল্লাহর কাছে এমন অবস্থায় উপস্থিত হবে যে, তিনি তার প্রতি রেগে থাকবেন। রাবী ইসহাক্ তার বর্ণনায় (আরবী) (রাবী’আহ্ ইবনু ‘আইদান) উল্লেখ করেন। [৫০] (ই.ফা. ২৫৮; ই.সে. ২৬৭)
[৫০] ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন : এ হাদীস হতে কতগুলো মাসআলা লক্ষ্য করা যায়-
(১) অধিকার দখলকারী বেশী হাক্দার হবে, যার দখলে নেই তার থেকে। (২) বিবাদী অস্বীকার করবে আর বাদীর নিকট কোন সাক্ষী থাকবে না, তখন বিবাদী কসম খাবে। (৩) দখলের চাইতে সাক্ষী কার্যকরী বেশী। কাজেই যার নিকটে সাক্ষী থাকবে তার সাক্ষীর সাক্ষ্য নেয়ার পর তাকেই অভিযুক্ত জিনিসটি প্রদান করা হবে। কসমের প্রয়োজন হবে না। (৪) বিবাদী যদি অসৎ ফাসিক হয় তাহলেও তার কসম গ্রহণ করা হবে। এর সাথে বাদীর দাবী শেষ হয়ে যাবে। (৫) বাদী ও বিবাদী পরস্পর ঝগড়ার সময় যালিম, পাপী ইত্যাদি বললে, তার জন্য তাদের অভিযুক্ত করা হবে না বা শাস্তি দেয়া হবে না। (৬) যদি উত্তরাধিকারী দাবী করে মূল ব্যক্তির (যার মাধ্যম হতে সে উত্তরাধিকার প্রাপ্ত হয়েছে) পক্ষ হতে এবং বিচারক জানতে পারেন যে, মূল ব্যক্তি মারা গেছে, আর তার বাদী ছাড়া আর কেউ নেই। তখন বাদীকে উত্তরাধিকারী হিসেবে মীমাংসা করা সঠিক হবে। কসম গ্রহণের কোন প্রয়োজন নেই। কিন্তু যদি বিচারক জানতে না পারেন তাহলে উত্তরধিকারী প্রমাণের জন্য বাদীর নিকট কসম গ্রহণ করতে হবে। তারপর তার দাবী প্রাপ্যের ব্যাপারেও কসম গ্রহণ করতে হবে। (সংক্ষিপ্ত নাবাবী)
৬২. অধ্যায়ঃ
যুলম করে কারো সম্পদ আত্মসাৎ করতে চাইলে তার রক্ত তার জন্য বৃথা যাবে, আর নিহত হলে জাহান্নামে যাবে আর যে ব্যক্তি স্বীয় সম্পদ রক্ষায় নিহত হয় সে শাহীদ
২৫৭
حَدَّثَنِي أَبُو كُرَيْبٍ، مُحَمَّدُ بْنُ الْعَلاَءِ حَدَّثَنَا خَالِدٌ، – يَعْنِي ابْنَ مَخْلَدٍ – حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ، عَنِ الْعَلاَءِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَرَأَيْتَ إِنْ جَاءَ رَجُلٌ يُرِيدُ أَخْذَ مَالِي قَالَ ” فَلاَ تُعْطِهِ مَالَكَ ” . قَالَ أَرَأَيْتَ إِنْ قَاتَلَنِي قَالَ ” قَاتِلْهُ ” . قَالَ أَرَأَيْتَ إِنْ قَتَلَنِي قَالَ ” فَأَنْتَ شَهِيدٌ ” . قَالَ أَرَأَيْتَ إِنْ قَتَلْتُهُ قَالَ ” هُوَ فِي النَّارِ ” .
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রসূল! যদি কেউ আমার সম্পদ ছিনিয়ে নিতে উদ্যত হয় তবে আমি কী করব? রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি তাকে তোমার সম্পদ নিতে দিবে না। লোকটি বলল, যদি সে আমার সাথে এ নিয়ে মারামারি করে? রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি তার সাথে মারামারি করবে। লোকটি বলল, আপনি কি বলেন যদি সে আমাকে হত্যা করে? রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন- তা হলে তুমি শাহীদ বলে গণ্য হবে। [৫১] লোকটি বলল, আপনি কি মনে করেন, যদি আমি তাকে হত্যা করি? রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সে জাহান্নামী। (ই.ফা. ২৫৯; ই.সে. ২৬৮)
[৫১] আর লোকটির উত্তরে মহানাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : তা’হলে তুমি শাহীদ বলে গণ্য হবে। অর্থাৎ তমি শাহীদের সাওয়াব পাবে। যদিও দুনিয়ার নির্দেশাবলীতে শাহীদ হবে না। কেননা শাহীদ তিন প্রকার-
(১) ঐ ব্যক্তি যে ইসলামের জন্য কাফিরের সাথে জিহাদ করে মারা যাবে। সে তো দুনিয়া ও আখিরাতে এ নির্দেশাবলীর দিক দিয়ে তাকে গোসল দিতে হবে না। আর আখিরাতে সে শাহীদের দরজা পাবে।
(২) যে ব্যক্তি আখিরাতে সাওয়াবের দিক দিয়ে শাহীদ হবে সে দুনিয়ার নির্দেশাবলীতে শাহীদ হবে না। যেমন মহামারী বা পেটের অসুখে অথবা বাড়ী ধ্বসে বা নিজ মাল রক্ষা করতে গিয়ে মারা যাবে। এদের উপর হাদীসে শাহীদ বলে উল্লেখ এসেছে। কিন্তু এদের গোসল দিতে হবে এবং সালাতে জানাযাও পড়তে হবে। আখিরাতে এরা শাহীদের সাওয়াব পাবে। তবে এটা জরুরী নয় যে, প্রথম প্রকারের শাহীদদের সমতুল্য হবে।
(৩) ঐ ব্যক্তি যাকে দুনিয়ার নির্দেশাবলীর দিক দিয়ে শাহীদ বলা হবে। তবে শাহাদাতের পুরাপুরি সাওয়াব পাবে না। যেমন ঐ ব্যক্তি যে গনীমাতের মাল খিয়ানাত করেছে। এ ধরনের লোকের সম্পর্কে বলা হয়েছে শাহীদ নয়। তবে যেহেতু কাফিরদের সঙ্গে যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করেছে। দুনিয়ার নির্দেশাবলীর দিক দিয়ে শাহীদের মত তাকে গোসল দিতে হবে না। জানাযার সলাত আদায় করবে না। আখিরাতে সে পূর্ণ সাওয়াব পাবে না। প্রশ্ন শাহীদকে শাহীদ কেন বলা হয়? উত্তর শাহীদকে শাহীদ এজন্য বলা হয় যে, (‘আলামে বারযাখে) তারা জীবিত আছেন এবং তাদের রূহ্ (আত্মা) জান্নাতে উপস্থিত আছে। (অবশ্য শাহীদদের সালাতে জানাযা আদায় করা ও না করা নিয়ে মতভেদ রয়েছে)
ইবনু ‘আম্মার বলেছেন : শাহীদকে এজন্য শাহীদ বলা হয়ে যে, শাহীদের জন্য মহান আল্লাহ এবং ফেরেশতাগণ শাহাদাত বা সাক্ষ্য দিয়েছেন। আর কেউ কেউ বলেছেন : শাহীদের আত্মা বের হওয়ার সময় তার উচ্চ মর্যাদা দেখতে পায়। এজন্য শাহীদ বলা হয়। আরও কেউ কেউ বলেছেন : শাহীদের রক্তও তাদের জন্য সাক্ষ্য হবে। কেননা কিয়ামাদের দিন তাদের এমন অবস্থায় উঠানো হবে যে, তাদের ক্ষতস্থান হতে তাজা রক্ত প্রবাহিত হতে থাকবে। (সংক্ষিপ্ত নাবাবী)
২৫৮
حَدَّثَنِي الْحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ الْحُلْوَانِيُّ، وَإِسْحَاقُ بْنُ مَنْصُورٍ، وَمُحَمَّدُ بْنُ رَافِعٍ، – وَأَلْفَاظُهُمْ مُتَقَارِبَةٌ – قَالَ إِسْحَاقُ أَخْبَرَنَا وَقَالَ الآخَرَانِ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، أَخْبَرَنَا ابْنُ جُرَيْجٍ، قَالَ أَخْبَرَنِي سُلَيْمَانُ الأَحْوَلُ، أَنَّ ثَابِتًا، مَوْلَى عُمَرَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ أَخْبَرَهُ أَنَّهُ، لَمَّا كَانَ بَيْنَ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو وَبَيْنَ عَنْبَسَةَ بْنِ أَبِي سُفْيَانَ مَا كَانَ تَيَسَّرُوا لِلْقِتَالِ فَرَكِبَ خَالِدُ بْنُ الْعَاصِ إِلَى عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو فَوَعَظَهُ خَالِدٌ فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَمْرٍو أَمَا عَلِمْتَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ “ مَنْ قُتِلَ دُونَ مَالِهِ فَهُوَ شَهِيدٌ ” .
‘উমার ইবনু ‘আবদুর রহমানের আযাদকৃত গোলাম সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ও ‘আম্বাসাহ্ ইবনু আবূ সুফ্ইয়ানের মধ্যে যখন কিছু সম্পদ নিয়ে ঝগড়া দেখা দেয়। আর তারা উভয়ে লড়াইয়ের জন্য উদ্যত হয়ে পড়ে। তখন খালিদ ইবনু ‘আস ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আম্র-এর নিকট গেলেন এবং বুঝাতে চেষ্টা করলেন। তখন ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আম্র বললেন, তুমি কি জান না? রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তাঁর সম্পদ রক্ষার্থে নিহত হয় সে শাহীদ।
মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম ও আহমাদ ইবনু ‘উসমান আস্ নাওফালী (রহঃ) ….. ইবনু জুরায়জ (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সানাদে অনুরূপ রিওয়ায়াত করেছেন। (ই.ফা. ২৬০; ই.সে. ২৬৯-২৭০)
৬৩. অধ্যায়ঃ
জনগণের সঙ্গে খিয়ানাতকারী শাসক জাহান্নামের যোগ্য
২৫৯
حَدَّثَنَا شَيْبَانُ بْنُ فَرُّوخَ، حَدَّثَنَا أَبُو الأَشْهَبِ، عَنِ الْحَسَنِ، قَالَ عَادَ عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ زِيَادٍ مَعْقِلَ بْنَ يَسَارٍ الْمُزَنِيَّ فِي مَرَضِهِ الَّذِي مَاتَ فِيهِ . قَالَ مَعْقِلٌ إِنِّي مُحَدِّثُكَ حَدِيثًا سَمِعْتُهُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لَوْ عَلِمْتُ أَنَّ لِي حَيَاةً مَا حَدَّثْتُكَ إِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ “ مَا مِنْ عَبْدٍ يَسْتَرْعِيهِ اللَّهُ رَعِيَّةً يَمُوتُ يَوْمَ يَمُوتُ وَهُوَ غَاشٌّ لِرَعِيَّتِهِ إِلاَّ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ ” .
হাসান (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
মা’কিল ইবনু ইয়াসার-এর মৃত্যুশয্যায় ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু যিয়াদ তাঁর সাক্ষাতে যান। মা’কিল তাকে বললেন, আজ তোমাকে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে শোনা এমন একটি হাদীস শুনাব যা আমি আরো বেঁচে থাকব বলে জানলে তা কিছুতেই শুনাতাম না। আমি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ তা’আলা যাকে জনগণের দায়িত্ব দিয়েছেন কিন্তু খিয়ানাতকারীরূপে যদি তার মৃত্যু হয় তবে আল্লাহ তা’আলা তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিবেন। (ই.ফা. ২৬১; ই.সে. ২৭১)
২৬০
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، أَخْبَرَنَا يَزِيدُ بْنُ زُرَيْعٍ، عَنْ يُونُسَ، عَنِ الْحَسَنِ، قَالَ دَخَلَ عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ زِيَادٍ عَلَى مَعْقِلِ بْنِ يَسَارٍ وَهُوَ وَجِعٌ فَسَأَلَهُ فَقَالَ إِنِّي مُحَدِّثُكَ حَدِيثًا لَمْ أَكُنْ حَدَّثْتُكَهُ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ “ لاَ يَسْتَرْعِي اللَّهُ عَبْدًا رَعِيَّةً يَمُوتُ حِينَ يَمُوتُ وَهُوَ غَاشٌّ لَهَا إِلاَّ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ ” . قَالَ أَلاَّ كُنْتَ حَدَّثْتَنِي هَذَا قَبْلَ الْيَوْمِ قَالَ مَا حَدَّثْتُكَ أَوْ لَمْ أَكُنْ لأُحَدِّثَكَ .
হাসান (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, মা’কিল ইবনু ইয়াসারের অসুস্থ অবস্থায় ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু যিয়াদ তাঁর সাক্ষাতে গেলেন এবং কিছু জানতে চাইলেন। তখন মা’কিল (রাঃ) বলেন, আজ তোমাকে এমন একটি হাদীস বর্ণনা করব যা আমি আগে তোমাকে বর্ণনা করার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ তা’আলা যাকে জনগণের শাসনভার প্রদান করেন আর সে যদি খিয়ানাতকারীরূপে মৃত্যুবরণ করে, তবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিবেন। ‘উবাইদুল্লাহ বললেন, আপনি কি আজ পর্যন্ত এ হাদীস আমাকে বর্ণনা করেননি? তিনি বললেন, না কখনো বর্ণনা করিনি। অথবা রাবী এ কথা বলেছেন, ‘না, বর্ণনা করতে ইচ্ছুক ছিলাম না। [৫২] (ই.ফা. ২৬২; ই.সে. ২৭২)
[৫২] মা’কিল ইবনু ইয়াসার তাঁর মৃত্যুর সময় ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু যিয়াদকে উক্ত হাদীস বর্ণনা করে শুনালেন। তিনি জানতেন যে, ‘উবাইদুল্লাহর এ হাদীস হয়ত কোন উপকারে আসবে না। তবুও তিনি বললেন, হাদীস গোপন করা ঠিক নয় মনে করে। আর সে মানুক আর নাই মানুক, ভাল কথা বলে দেয়া দরকার। মা’কিল (রাঃ) তাঁর জীবদ্দশায় বলার প্রয়োজন এজন্য মনে করেননি যে, মানুষ ‘উবাইদুল্লাহ র প্রতি ঘৃণা করে তাঁর ইতায়াত বা অনুসরণ পরিত্যাগ করে, সমাজে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি না হয়। আর ‘উবাইদুল্লাহ ঐ হাদীসের কারণে তাকে কষ্ট দিতে পারেন। যেহেতু ‘উবাইদুল্লাহ অত্যাচারী ছিলেন। তিনি প্রিয়নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আত্মীয়দের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতেন না। অন্যান্যরা তো দূরের কথা।
শাসক তার শাসিত জনগণের সাথে খিয়ানাতের অর্থ শাসককে দ্বীন ও দুনিয়ার সার্বিক কল্যাণ সাধনে সচেষ্ট থাকা অপরিহার্য। যে শাসক জনগণের দীনে আঘাত করে, শারী’আতের সীমালঙ্ঘন করে, জনগণের জান ও মালের হিফাযাত না করে, অন্যায় অত্যাচার করে; অথবা জনগণের সাথে কোন প্রকার সুবিচার করে না; হাক্ নষ্ট করে, তাহলে সে দায়িত্বে খিয়ানাত করল, সে জাহান্নামী হবে। হ্যাঁ, যদি সে অত্যাচারকে বৈধ মনে করে, তাহলে চিরস্থায়ী জাহান্নামে বসবাস করবে। অন্যান্য জান্নাতীদের সঙ্গে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। (সংক্ষিপ্ত নাবাবী)
২৬১
وَحَدَّثَنِي الْقَاسِمُ بْنُ زَكَرِيَّاءَ، حَدَّثَنَا حُسَيْنٌ، – يَعْنِي الْجُعْفِيَّ – عَنْ زَائِدَةَ، عَنْ هِشَامٍ، قَالَ قَالَ الْحَسَنُ كُنَّا عِنْدَ مَعْقِلِ بْنِ يَسَارٍ نَعُودُهُ فَجَاءَ عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ زِيَادٍ فَقَالَ لَهُ مَعْقِلٌ إِنِّي سَأُحَدِّثُكَ حَدِيثًا سَمِعْتُهُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ثُمَّ ذَكَرَ بِمَعْنَى حَدِيثِهِمَا .
হাসান (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমরা মা’কিল ইবনু ইয়াসার (রাঃ)-এর অসুস্থতাকালে তাঁর কুশলাদি জানতে গিয়েছিলাম। এমন সময় ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু যিয়াদ তথায় উপস্থিত হন। মা’কিল ইবনু ইয়াসার (রাঃ) তাকে বললেন, আজ তোমাকে একটি হাদীস শুনাব যা আমি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে শুনেছি …..। পরে তিনি উল্লেখিত হাদীসদ্বয়ের অনুরূপ বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ২৬৩; ই.সে. ২৭৩)
২৬২
وَحَدَّثَنَا أَبُو غَسَّانَ الْمِسْمَعِيُّ، وَمُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، وَإِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، قَالَ إِسْحَاقُ أَخْبَرَنَا وَقَالَ الآخَرَانِ، حَدَّثَنَا مُعَاذُ بْنُ هِشَامٍ، قَالَ حَدَّثَنِي أَبِي، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَبِي الْمَلِيحِ، أَنَّ عُبَيْدَ اللَّهِ بْنَ زِيَادٍ، عَادَ مَعْقِلَ بْنَ يَسَارٍ فِي مَرَضِهِ فَقَالَ لَهُ مَعْقِلٌ إِنِّي مُحَدِّثُكَ بِحَدِيثٍ لَوْلاَ أَنِّي فِي الْمَوْتِ لَمْ أُحَدِّثْكَ بِهِ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ “ مَا مِنْ أَمِيرٍ يَلِي أَمْرَ الْمُسْلِمِينَ ثُمَّ لاَ يَجْهَدُ لَهُمْ وَيَنْصَحُ إِلاَّ لَمْ يَدْخُلْ مَعَهُمُ الْجَنَّةَ ” .
আবূ মালীহ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
মা’কিল ইবনু ইয়াসার-এর অসুস্থতাবস্থায় তাকে দেখতে ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু যিয়াদ উপস্থিত হলে তাকে মা’কিল বলেন, আজ আমি তোমাকে একটি হাদীস বলব, আমি মৃত্যুশয্যায় না থাকলে তা বর্ণনা করতাম না। আমি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, মুসলিমদের দায়িত্বে নিযুক্ত কোন আমীর (শাসক) যদি তাদের কল্যাণ কামনা না করে এবং তাদের স্বার্থ রক্ষায় সর্বাত্মক প্রয়াস না চালায় তবে সে মুসলিমদের সঙ্গে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। (ই.ফা. ২৬৪; ই.সে. ২৭৪)
৬৪. অধ্যায়ঃ
কারো কারো অন্তর থেকে ঈমান ও আমানাতদারী উঠিয়ে নেয়া এবং অন্তরে ফিত্নার সৃষ্টি হওয়া
২৬৩
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، وَوَكِيعٌ، ح وَحَدَّثَنَا أَبُو كُرَيْبٍ، حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ زَيْدِ بْنِ وَهْبٍ، عَنْ حُذَيْفَةَ، قَالَ حَدَّثَنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم حَدِيثَيْنِ قَدْ رَأَيْتُ أَحَدَهُمَا وَأَنَا أَنْتَظِرُ الآخَرَ حَدَّثَنَا ” أَنَّ الأَمَانَةَ نَزَلَتْ فِي جِذْرِ قُلُوبِ الرِّجَالِ ثُمَّ نَزَلَ الْقُرْآنُ فَعَلِمُوا مِنَ الْقُرْآنِ وَعَلِمُوا مِنَ السُّنَّةِ ” . ثُمَّ حَدَّثَنَا عَنْ رَفْعِ الأَمَانَةِ قَالَ ” يَنَامُ الرَّجُلُ النَّوْمَةَ فَتُقْبَضُ الأَمَانَةُ مِنْ قَلْبِهِ فَيَظَلُّ أَثَرُهَا مِثْلَ الْوَكْتِ ثُمَّ يَنَامُ النَّوْمَةَ فَتُقْبَضُ الأَمَانَةُ مِنْ قَلْبِهِ فَيَظَلُّ أَثَرُهَا مِثْلَ الْمَجْلِ كَجَمْرٍ دَحْرَجْتَهُ عَلَى رِجْلِكَ فَنَفِطَ فَتَرَاهُ مُنْتَبِرًا وَلَيْسَ فِيهِ شَىْءٌ – ثُمَّ أَخَذَ حَصًى فَدَحْرَجَهُ عَلَى رِجْلِهِ – فَيُصْبِحُ النَّاسُ يَتَبَايَعُونَ لاَ يَكَادُ أَحَدٌ يُؤَدِّي الأَمَانَةَ حَتَّى يُقَالَ إِنَّ فِي بَنِي فُلاَنٍ رَجُلاً أَمِينًا . حَتَّى يُقَالَ لِلرَّجُلِ مَا أَجْلَدَهُ مَا أَظْرَفَهُ مَا أَعْقَلَهُ وَمَا فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ حَبَّةٍ مِنْ خَرْدَلٍ مِنْ إِيمَانٍ ” . وَلَقَدْ أَتَى عَلَىَّ زَمَانٌ وَمَا أُبَالِي أَيَّكُمْ بَايَعْتُ لَئِنْ كَانَ مُسْلِمًا لَيَرُدَّنَّهُ عَلَىَّ دِينُهُ وَلَئِنْ كَانَ نَصْرَانِيًّا أَوْ يَهُودِيًّا لَيَرُدَّنَّهُ عَلَىَّ سَاعِيهِ وَأَمَّا الْيَوْمَ فَمَا كُنْتُ لأُبَايِعَ مِنْكُمْ إِلاَّ فُلاَنًا وَفُلاَنًا .
হুযাইফাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে দু’টি কথা বলেছিলেন, সে দু’টির একটি তো আমি স্বচোখেই দেখেছি আর অপরটির অপেক্ষা করছি। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মানব হৃদয়ের মূলে আমানাত নাযিল হয়, [৫৩] তারপর কুরআন অবতীর্ণ হয়। অনন্তর তারা কুরআন শিখেছে এবং সুন্নাহর জ্ঞান লাভ করেছে। তারপর তিনি আমাদেরকে আমানাত উঠিয়ে নেয়ার বর্ণনা দিলেন। বললেন, মানুষ ঘুমাবে আর তখন তার অন্তর হতে আমানাত তুলে নেয়া হবে। ফলে তার চিহ্ন থেকে যাবে একটি নুকতার মত। এরপর আবার সে ঘুমায় তখন তার অন্তর থেকে আমানাত তুলে নেয়া হবে। ফলে তার চিহ্ন থেকে যাবে ফোস্কার মত; যেন একটি আগুনের ফুলকি যা তুমি তোমার পায়ে রগড়ে দিলে। তখন তাতে ফোস্কা পড়ে যায় এবং তুমি তা ফোলা দেখতে পাও অথচ তাতে (পুঁজ-পানি ব্যতীত) কিছু নেই। তারপর রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কয়েকটি কাঁকর নিয়ে তাঁর পায়ে ঘষলেন এবং বললেন, যখন এমন অবস্থা হয়ে যাবে তখন মানুষ বেচাকেনা করবে কিন্তু কেউ আমানাত শোধ করবে না। এমন কি বলা হবে যে, অমুক বংশে একজন আমানাতদার আছেন। এমন অবস্থা হবে যে, কাউকে বলা হবে বড়ই বাহাদুর, হুঁশিয়ার ও বুদ্ধিমান অথচ তার অন্তরে দানা পরিমাণ ঈমান থাকবে না।
হুযাইফাহ্ (রাঃ) বলেন, এমন এক যুগও গেছে যখন যে কারোর সাথে লেনদেন করতে দ্বিধা করতাম না। কারণ সে যদি মুসলিম হতো তবে তার দীনদারীই তাকে আমার হাক্ পরিশোধ করতে বাধ্য করতো। আর যদি সে খৃষ্টান বা ইয়াহূদী হতো তবে তার প্রশাসক তা শোধ করতে তাকে বাধ্য করত। কিন্তু বর্তমানে আমি অমুক অমুক ব্যতীত কারো সাথে লেনদেন করতে রাজি না।
ইবনু নুমায়র ও ইসহাক্ ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ….. আ’মাশ (রহঃ)-এর সূত্রে পূর্ব বর্ণিত সানাদের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ২৬৫, ২৬৬; ই.সে. ২৭৫, ২৭৬)
[৫৩] হাসান বলেন, আমানাত অর্থ দ্বীন ইসলাম, তাঁর দ্বীন সম্পূর্ণ আমানাত। আর আবুল আলিয়া বলেন, আমানাত অর্থ শারী’আতের বিধি ও নিষেধ। মুকাতিল (রাঃ) বলেন, আমানাত অর্থ ‘ইবাদাত। ইমাম ওয়াহিদী বলেন, অধিকাংশ মুফাস্সিরীনদের কথা এটাই যে, আমানাত অর্থ ফারযসমূহ ও ‘ইবাদাতসমূহ যা পালন করতে হবে। পালন না করলে আল্লাহর ‘আযাব হবে। (সংক্ষিপ্ত নাবাবী)
৬৫. অধ্যায়ঃ
শুরুতেই ইসলাম ছিল অপরিচিত; শিঘ্রই আবার তা অপরিচিতের ন্যায় হয়ে যাবে এবং তা দু’ মাসজিদ (মাসজিদুল হারাম ও মাসজিদুন নাবাবী) এর মাঝে আশ্রয় নিবে
২৬৪
وَحَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ نُمَيْرٍ، حَدَّثَنَا أَبُو خَالِدٍ، – يَعْنِي سُلَيْمَانَ بْنَ حَيَّانَ – عَنْ سَعْدِ بْنِ طَارِقٍ، عَنْ رِبْعِيٍّ، عَنْ حُذَيْفَةَ، قَالَ كُنَّا عِنْدَ عُمَرَ فَقَالَ أَيُّكُمْ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَذْكُرُ الْفِتَنَ فَقَالَ قَوْمٌ نَحْنُ سَمِعْنَاهُ . فَقَالَ لَعَلَّكُمْ تَعْنُونَ فِتْنَةَ الرَّجُلِ فِي أَهْلِهِ وَجَارِهِ قَالُوا أَجَلْ . قَالَ تِلْكَ تُكَفِّرُهَا الصَّلاَةُ وَالصِّيَامُ وَالصَّدَقَةُ وَلَكِنْ أَيُّكُمْ سَمِعَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَذْكُرُ الْفِتَنَ الَّتِي تَمُوجُ مَوْجَ الْبَحْرِ قَالَ حُذَيْفَةُ فَأَسْكَتَ الْقَوْمُ فَقُلْتُ أَنَا . قَالَ أَنْتَ لِلَّهِ أَبُوكَ . قَالَ حُذَيْفَةُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ “ تُعْرَضُ الْفِتَنُ عَلَى الْقُلُوبِ كَالْحَصِيرِ عُودًا عُودًا فَأَىُّ قَلْبٍ أُشْرِبَهَا نُكِتَ فِيهِ نُكْتَةٌ سَوْدَاءُ وَأَىُّ قَلْبٍ أَنْكَرَهَا نُكِتَ فِيهِ نُكْتَةٌ بَيْضَاءُ حَتَّى تَصِيرَ عَلَى قَلْبَيْنِ عَلَى أَبْيَضَ مِثْلِ الصَّفَا فَلاَ تَضُرُّهُ فِتْنَةٌ مَا دَامَتِ السَّمَوَاتُ وَالأَرْضُ وَالآخَرُ أَسْوَدُ مُرْبَادًّا كَالْكُوزِ مُجَخِّيًا لاَ يَعْرِفُ مَعْرُوفًا وَلاَ يُنْكِرُ مُنْكَرًا إِلاَّ مَا أُشْرِبَ مِنْ هَوَاهُ ” . قَالَ حُذَيْفَةُ وَحَدَّثْتُهُ أَنَّ بَيْنَكَ وَبَيْنَهَا بَابًا مُغْلَقًا يُوشِكُ أَنْ يُكْسَرَ . قَالَ عُمَرُ أَكَسْرًا لاَ أَبَا لَكَ فَلَوْ أَنَّهُ فُتِحَ لَعَلَّهُ كَانَ يُعَادُ . قُلْتُ لاَ بَلْ يُكْسَرُ . وَحَدَّثْتُهُ أَنَّ ذَلِكَ الْبَابَ رَجُلٌ يُقْتَلُ أَوْ يَمُوتُ . حَدِيثًا لَيْسَ بِالأَغَالِيطِ . قَالَ أَبُو خَالِدٍ فَقُلْتُ لِسَعْدٍ يَا أَبَا مَالِكٍ مَا أَسْوَدُ مُرْبَادًّا قَالَ شِدَّةُ الْبَيَاضِ فِي سَوَادٍ . قَالَ قُلْتُ فَمَا الْكُوزُ مُجَخِّيًا قَالَ مَنْكُوسًا .
হুযাইফাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদিন আমরা ‘উমার (রাঃ)-এর কাছে ছিলাম। তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে কে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ফিত্নাহ সম্পর্কে আলোচনা করতে শুনেছ? উপস্থিত একদল বললেন, আমরা শুনেছি। ‘উমার (রাঃ) বললেন, তোমরা হয়তো একজনের পরিবার ও প্রতিবেশীর ফিতনার কথা মনে করেছ। তারা বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই। তিনি বললেন, সলাত, সিয়াম ও সদাকার মাধ্যমে এগুলোর কাফ্ফারাহ্ হয়ে যায়। কিন্তু তোমাদের মধ্যে কে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বড় বড় ফিত্নার কথা বর্ণনা করতে শুনেছ, যা সমুদ্র তরঙ্গের ন্যায় ধেয়ে আসবে।
হুযাইফাহ্ (রাঃ) বলেন, প্রশ্ন শুনে সবাই চুপ হয়ে গেল। আমি বললাম, আমি (শুনেছি)। ‘উমার (রাঃ) বললেন, তুমি শুনেছ, মাশাআল্লাহ। হুযাইফাহ্ (রাঃ) বললেন, আমি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) —কে বলতে শুনেছি, চাটাই বুননের মত এক এক করে ফিত্না মানুষের অন্তরে আসতে থাকে। যে অন্তরে তা গেঁথে যায় তাতে একটি করে কালো দাগ পড়ে। আর যে অন্তর তা প্রত্যাখ্যান করবে তাতে একটি উজ্জ্বল দাগ পড়বে। এমনি করে দু’টি অন্তর দু’ধরনের হয়ে যায়। এটি সাদা পাথরের ন্যায়; আসমান ও জমিন যতদিন থাকবে ততদিন কোন ফিত্না তার কোন ক্ষতি করতে পারে না। আর অপরটি হয়ে যায় উল্টানো সাদা মিশ্রিত কলসির ন্যায়, তার প্রবৃত্তির মধ্যে যা গেছে তা ছাড়া ভাল-মন্দ বলতে সে কিছুই চিনে না।
হুযাইফাহ্ (রাঃ) বললেন, ‘উমার (রাঃ)-কে আমি আরো বললাম, আপনি এবং সে ফিতনার মধ্যে একটি বন্ধ দরজা রয়েছে। অচিরেই সেটি ভেঙ্গে ফেলা হবে। ‘উমার (রাঃ) বললেন, সর্বনাশ! তা ভেঙ্গে ফেলা হবে? যদি ভেঙ্গে ফেলা না হত তাহলে হয়ত পুনরায় বন্ধ করা যেত। হুযাইফাহ্ (রাঃ) উত্তর করলেন, না ভেঙ্গে ফেলাই হবে। হুযাইফাহ্ (রাঃ) বললেন, আমি ‘উমার (রাঃ)-কে এ কথাও শুনিয়েছি, সে দরজাটি হলো একজন মানুষ; সে নিহত হবে কিংবা স্বাভাবিত মৃত্যুবরণ করবে। এটি কোন গল্প নয় বরং রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদীস।
বর্ণনাকারী আবূ খালিদ বলেনঃ আমি সা’দকে জিজ্ঞেস করলাম, এর অর্থ কী? উত্তরে তিনি বললেন, ‘কালো-সাদায় মিশ্রিত রং’। আমি বললাম, এর অর্থ কী? তিনি বললেন, ‘উল্টানো কলসি’। (ই.ফা. ২৬৭; ই.সে. ২৭৭)
২৬৫
وَحَدَّثَنِي ابْنُ أَبِي عُمَرَ، حَدَّثَنَا مَرْوَانُ الْفَزَارِيُّ، حَدَّثَنَا أَبُو مَالِكٍ الأَشْجَعِيُّ، عَنْ رِبْعِيٍّ، قَالَ لَمَّا قَدِمَ حُذَيْفَةُ مِنْ عِنْدِ عُمَرَ جَلَسَ فَحَدَّثَنَا فَقَالَ إِنَّ أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ أَمْسِ لَمَّا جَلَسْتُ إِلَيْهِ سَأَلَ أَصْحَابَهُ أَيُّكُمْ يَحْفَظُ قَوْلَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي الْفِتَنِ وَسَاقَ الْحَدِيثَ بِمِثْلِ حَدِيثِ أَبِي خَالِدٍ وَلَمْ يَذْكُرْ تَفْسِيرَ أَبِي مَالِكٍ لِقَوْلِهِ “ مُرْبَادًّا مُجَخِّيًا ” .
রিব’ঈ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
হুযাইফাহ্ (রাঃ)-এর নিকট থেকে ফিরে এসে আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করছিলেন। তিনি বললেন, গতকাল যখন আমি আমীরুল মু’মিনীন ‘উমার (রাঃ)-এর কাছে বসা ছিলাম, তখন তিনি তাঁর সঙ্গীদের জিজ্ঞেস করেছিলেন, তোমাদের মধ্যে কার ফিত্না সম্পর্কীয় হাদীস স্মরণ আছে …..। এরপর রাবী আবূ খালিদ বর্ণিত পূর্বের হাদীসটির ন্যায় বর্ণনা করেন। তবে তিনি এর আবূ মালিক বর্ণিত ব্যাখ্যার উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ২৬৮; ই.সে. ২৭৮)
২৬৬
وَحَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، وَعَمْرُو بْنُ عَلِيٍّ، وَعُقْبَةُ بْنُ مُكْرَمٍ الْعَمِّيُّ، قَالُوا حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ أَبِي عَدِيٍّ، عَنْ سُلَيْمَانَ التَّيْمِيِّ، عَنْ نُعَيْمِ بْنِ أَبِي هِنْدٍ، عَنْ رِبْعِيِّ بْنِ حِرَاشٍ، عَنْ حُذَيْفَةَ، أَنَّ عُمَرَ، قَالَ مَنْ يُحَدِّثُنَا أَوْ قَالَ أَيُّكُمْ يُحَدِّثُنَا – وَفِيهِمْ حُذَيْفَةُ – مَا قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي الْفِتْنَةِ قَالَ حُذَيْفَةُ أَنَا . وَسَاقَ الْحَدِيثَ كَنَحْوِ حَدِيثِ أَبِي مَالِكٍ عَنْ رِبْعِيٍّ وَقَالَ فِي الْحَدِيثِ قَالَ حُذَيْفَةُ حَدَّثْتُهُ حَدِيثًا لَيْسَ بِالأَغَالِيطِ وَقَالَ يَعْنِي أَنَّهُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم .
রিব’ঈ ইবনু হিরাশ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদিন ‘উমার (রাঃ) বললেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফিত্নাহ্ সম্পর্কে কি বলেছেন এ সম্পর্কে তোমাদের কেউ আমাকে হাদীস বর্ণনা করতে পারবে? তখন হুযাইফাহ্ (রাঃ)-ও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বললেন, আমি পারব …..। এরপর রিব’ঈ-এর সূত্রে বর্ণিত আবূ মালিক-এর রিওয়ায়াতের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তবে বর্ণনাকারী এ হাদীসে এও উল্লেখ করেন যে, হুযাইফাহ্ (রাঃ) বলেছেন, আমি ‘উমার (রাঃ)-কে যে হাদীস বর্ণনা করেছি তা কোন বানোয়াট কথা নয়; বরং রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকেই তা বর্ণনা করেছি। (ই.ফা. ২৬৯; ই.সে. ২৭৯)
২৬৭
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبَّادٍ، وَابْنُ أَبِي عُمَرَ، جَمِيعًا عَنْ مَرْوَانَ الْفَزَارِيِّ، قَالَ ابْنُ عَبَّادٍ حَدَّثَنَا مَرْوَانُ، عَنْ يَزِيدَ، – يَعْنِي ابْنَ كَيْسَانَ – عَنْ أَبِي حَازِمٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “ بَدَأَ الإِسْلاَمُ غَرِيبًا وَسَيَعُودُ كَمَا بَدَأَ غَرِيبًا فَطُوبَى لِلْغُرَبَاءِ ” .
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : ইসলাম শুরুতে অপরিচিত ছিল, অচিরেই তা আবার শুরুর মতো অপরিচিত হয়ে যাবে। [৫৪] সুতরাং এরূপ অপরিচিত অবস্থায়ও যারা ইসলামের উপর টিকে থাকবে তাদের জন্য মুবারাকবাদ। (ই.ফা ২৭০; ই.সে. ২৮০)
[৫৪] ইসলামের শুরু হয়েছে মাদীনাহ্ হতে অর্থাৎ পবিত্র মাক্কাহ্ হতে কিছু অপরিচিত মানুষ হিজরত করে মাদীনায় আসেন। তাদের দ্বারাই ইসলাম শুরু হয়েছে। ইসলাম শেষ যুগে ঐ অবস্থায় ফিরে যাবে। অর্থাৎ সারা বিশ্বে কাফির ও বেঈমানদের রাজ্য কায়িম হবে। আর ঈমানদারগণ ওদের ভয়ে মাদীনায় ফিরে আসবে।
কাযী ইয়াজ বলেন : হাদীসের উদ্দেশ্য এই যে, প্রথমে ইসলাম আরম্ভ হয়েছিল অল্প সংখ্যক লোকের দ্বারা, শেষে যুগে কমতে কমতে ইসলাম আবার অল্প সংখ্যক লোকের মধ্যে রয়ে যাবে। (সংক্ষিপ্ত নাবাবী)
২৬৮
وَحَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ رَافِعٍ، وَالْفَضْلُ بْنُ سَهْلٍ الأَعْرَجُ، قَالاَ حَدَّثَنَا شَبَابَةُ بْنُ سَوَّارٍ، حَدَّثَنَا عَاصِمٌ، – وَهُوَ ابْنُ مُحَمَّدٍ الْعُمَرِيُّ – عَنْ أَبِيهِ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ “ إِنَّ الإِسْلاَمَ بَدَأَ غَرِيبًا وَسَيَعُودُ غَرِيبًا كَمَا بَدَأَ وَهُوَ يَأْرِزُ بَيْنَ الْمَسْجِدَيْنِ كَمَا تَأْرِزُ الْحَيَّةُ فِي جُحْرِهَا ” .
ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করে বলেন, অপরিচিতের ন্যায় ইসলাম শুরু হয়েছিল, অচিরেই তা আবার অপরিচিত অবস্থায় ফিরে যাবে। সাপ যেমন সংকুচিত হয়ে তার গর্তে প্রবেশ করে তদ্রূপ ইসলামও দুই মাসজিদের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে যাবে। [৫৫] (ই.ফা. ২৭১; ই.সে. ২৮১)
[৫৫] যখন পৃথিবীতে আল্লাহর নাম বলার মতো লোক থাকবে না। তখন মহাপ্রলয় সংঘটিত হবে। ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেনঃ যখন সমস্ত মানুষ অসৎ ও নিকৃষ্ট হয়ে যাবে তখন কিয়ামাত সংঘটিত হবে। আর অন্য হাদীসে আছে কিয়ামাতের পূর্বে ইয়ামানের দিক হতে এক প্রকার হাওয়া প্রবাহিত হয়ে আসবে যার ফলে সব ঈমানদার লোক মৃত্যুবরণ করবে। আর কিয়ামাতের ‘আযাব নিকৃষ্ট দুর্ভাগা লোকদের উপরই কায়িম হবে। (নাবাবী)
২৬৯
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ نُمَيْرٍ، وَأَبُو أُسَامَةَ عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، ح وَحَدَّثَنَا ابْنُ نُمَيْرٍ، حَدَّثَنَا أَبِي، حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ، عَنْ خُبَيْبِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ حَفْصِ بْنِ عَاصِمٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ “ إِنَّ الإِيمَانَ لَيَأْرِزُ إِلَى الْمَدِينَةِ كَمَا تَأْرِزُ الْحَيَّةُ إِلَى جُحْرِهَا ” .
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ সাপ যেমন সংকুচিত হয়ে আপন গর্তের দিকে প্রত্যাবর্তন করে তদ্রূপ ইসলামও সংকুচিত হয়ে মাদীনার দিকে প্রত্যাবর্তন করবে। (ই.ফা. ২৭২; ই.সে. ২৮২)
৬৬. অধ্যায়ঃ
শেষ যুগে ঈমান বিদায় নিবে।
২৭০
حَدَّثَنِي زُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، حَدَّثَنَا عَفَّانُ، حَدَّثَنَا حَمَّادٌ، أَخْبَرَنَا ثَابِتٌ، عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ “ لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى لاَ يُقَالَ فِي الأَرْضِ اللَّهُ اللَّهُ ” .
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত পৃথিবীতে ‘আল্লাহ’ ‘আল্লাহ’ বলার মতো লোক থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামাত হবে না।
‘আব্দ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ….. আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেন : ‘আল্লাহ’ ‘আল্লাহ’ বলার মতো একটি মানুষ অবশিষ্ট থাকতে কিয়ামাত হবে না। (ই.ফা. ২৭৩, ২৭৪; ই.সে. ২৮৪)
৬৭. অধ্যায়ঃ
ভয়-ভীতির কারণে ঈমান গোপন রাখা যায়
২৭১
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، وَمُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ نُمَيْرٍ، وَأَبُو كُرَيْبٍ – وَاللَّفْظُ لأَبِي كُرَيْبٍ – قَالُوا حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ شَقِيقٍ، عَنْ حُذَيْفَةَ، قَالَ كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ ” أَحْصُوا لِي كَمْ يَلْفِظُ الإِسْلاَمَ ” . قَالَ فَقُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَتَخَافُ عَلَيْنَا وَنَحْنُ مَا بَيْنَ السِّتِّمِائَةِ إِلَى السَّبْعِمِائَةِ قَالَ ” إِنَّكُمْ لاَ تَدْرُونَ لَعَلَّكُمْ أَنْ تُبْتَلَوْا ” . قَالَ فَابْتُلِينَا حَتَّى جَعَلَ الرَّجُلُ مِنَّا لاَ يُصَلِّي إِلاَّ سِرًّا .
হুযাইফাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা আমরা রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে ছিলাম। তিনি নির্দেশ দিলেন, কতজন লোক ইসলাম গ্রহণ করেছে তার হিসাব করে আমাকে বল। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি কি আমাদের সম্পর্কে কিছু আশঙ্কা করেন? আমাদের সংখ্যা ছয়শ’ থেকে সাতশ’ পর্যন্ত। তিনি বললেন, তোমরা জান না, হয়ত তোমরা কোন পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। [৫৬] রাবী বলেন, এরপর এক সময় আমরা এমন পরীক্ষা ও বিপদের সম্মুখীন হই যে, আমাদের কোন কোন লোককে ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় আত্মগোপন করে সলাত আদায় করতে হয়েছে। (ই.ফা. ২৭৫; ই.সে. ২৮৫)
[৫৬] আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা জান না হয়ত তোমরা পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। অর্থাৎ রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ ফিত্নার দিকে ইশারা করেছেন, যা তাঁর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওফাতের পর সংঘটিত হয়েছে এবং মুসলিমরা একে অপরের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। যার ফলে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল যে, মাসজিদে সলাত আদায় করা ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়; কোন কোন লোক প্রাণের ভয়ে ঘরেই সলাত আদায় করতেন। (সংক্ষিপ্ত নাবাবী)
৬৮. অধ্যায়ঃ
ঈমানের দূর্বলতার দরুণ যার ব্যাপারে ধর্মত্যাগের সন্দেহ হয়, তার হৃদয় জয়ের জন্য বিশেষ সৌজন্য প্রদর্শন এবং সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ছাড়া কাউকে নিশ্চিত মু’মিন বলে ঘোষণা দেয়া থেকে বিরত থাকা
২৭২
حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي عُمَرَ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ عَامِرِ بْنِ سَعْدٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ قَسَمَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَسْمًا فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَعْطِ فُلاَنًا فَإِنَّهُ مُؤْمِنٌ . فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ” أَوْ مُسْلِمٌ ” أَقُولُهَا ثَلاَثًا . وَيُرَدِّدُهَا عَلَىَّ ثَلاَثًا ” أَوْ مُسْلِمٌ ” ثُمَّ قَالَ ” إِنِّي لأُعْطِي الرَّجُلَ وَغَيْرُهُ أَحَبُّ إِلَىَّ مِنْهُ مَخَافَةَ أَنْ يَكُبَّهُ اللَّهُ فِي النَّارِ ” .
সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার কিছু মাল বণ্টন করছিলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! অমুককে কিছু দিন, কেননা সে নিশ্চয়ই একজন মু’মিন ব্যক্তি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, বরং বল যে, সে একজন মুসলিম। সাহাবী বললেন, আমি কথাটি তিনবার পুনরাবৃত্তি করেছি, তিনিও তিনবারই আমাকে ঐ একই উত্তর দিয়েছেন। এরপর রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, অপরজন আমার নিকট অধিক প্রিয় হওয়া সত্ত্বেও আমি কাউকে এ কারণে দিয়ে থাকি যে, আল্লাহ তা’আলা যেন তাকে উল্টো করে জাহান্নামে না ফেলেন। (ই.ফা. ২৭৬; ই.সে. ২৮৬)
২৭৩
حَدَّثَنِي زُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، حَدَّثَنَا يَعْقُوبُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، حَدَّثَنَا ابْنُ أَخِي ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ عَمِّهِ، قَالَ أَخْبَرَنِي عَامِرُ بْنُ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ، عَنْ أَبِيهِ، سَعْدٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَعْطَى رَهْطًا وَسَعْدٌ جَالِسٌ فِيهِمْ قَالَ سَعْدٌ فَتَرَكَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مِنْهُمْ مَنْ لَمْ يُعْطِهِ وَهُوَ أَعْجَبُهُمْ إِلَىَّ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا لَكَ عَنْ فُلاَنٍ فَوَاللَّهِ إِنِّي لأَرَاهُ مُؤْمِنًا . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ” أَوْ مُسْلِمًا ” . قَالَ فَسَكَتُّ قَلِيلاً ثُمَّ غَلَبَنِي مَا أَعْلَمُ مِنْهُ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا لَكَ عَنْ فُلاَنٍ فَوَاللَّهِ إِنِّي لأَرَاهُ مُؤْمِنًا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ” أَوْ مُسْلِمًا ” . قَالَ فَسَكَتُّ قَلِيلاً ثُمَّ غَلَبَنِي مَا عَلِمْتُ مِنْهُ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا لَكَ عَنْ فُلاَنٍ فَوَاللَّهِ إِنِّي لأَرَاهُ مُؤْمِنًا . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ” أَوْ مُسْلِمًا . إِنِّي لأُعْطِي الرَّجُلَ وَغَيْرُهُ أَحَبُّ إِلَىَّ مِنْهُ خَشْيَةَ أَنْ يُكَبَّ فِي النَّارِ عَلَى وَجْهِهِ ” .
সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন যে, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিছু লোককে কিছু মাল দিলেন। তখন সা’দ (রাঃ) তাদের মধ্যে বসেছিলেন। সা’দ (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের মধ্যে এক ব্যক্তিকে কিছু দিলেন না, অথচ আমার দৃষ্টিতে সে ছিল পাওয়ার বেশি উপযুক্ত। তাই আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! অমুককে না দেয়ার কারণ কি? আল্লাহর কসম! অবশ্যই আমি তাকে তো মু’মিন বলে জানি। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, বরং বল সে মুসলিম। আমি কিছুক্ষণ নীরব থাকলাম। তার সম্পর্কে আমি যা জানি তা আমার নিকট প্রবল হয়ে উঠল, তাই আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! অমুককে না দেয়ার কারণ কি? আল্লাহর কসম! আমি তো তাকে অবশ্যই মু’মিন বলে ধারণা করি! রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, বরং বল সে মুসলিম। আমি কিছুক্ষণ চুপ রইলাম। পুনরায় তার সম্পর্কে আমি যা জানি তা প্রবল হয়ে উঠল, তাই আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! অমুককে না দেয়ার কারণ কি? আল্লাহর কসম, আমি তো তাকে অবশ্যই মু’মিন বলে জানি! রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, বরং বল সে মুসলিম। অন্যজন আমার নিকট অধিক প্রিয় হওয়া সত্ত্বেও আমি কাউকে এ আশঙ্কায় কিছু দান করে থাকি যে, আল্লাহ তা’আলা যেন তাকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ না করেন। [৫৭] (ই.ফা. ২৭৭; ই.সে. ২৮৭)
[৫৭] ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন : এ হাদীস হতে প্রমাণিত হয় যে, (১) হাকিম বা শাসকের নিকট বৈধ কাজের একাধিকবার অনুরোধ করা জায়িয। (২) যুক্তিসঙ্গত কাজ হলে অধম উত্তমকে দিক-নির্দেশনা দিতে পারে। আর উত্তমের জন্য আবশ্যকও নয় যে, তা মেনে নিবেন। বরং তাকে যে বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। যুক্তিসঙ্গত না হলে প্রত্যাখ্যান করতে পারেন। (৩) কাউকেও নিশ্চিতভাবে মু’মিন বলা সঠিক নয়। যতক্ষণ পর্যন্ত নিশ্চিত প্রমাণ না পাওয়া যায়। (৪) ইমাম নিজের ইচ্ছানুযায়ী প্রয়োজনীয় কাজে পর্যায়ক্রমে মাল খরচ করতে পারেন। (৫) শার’ঈ দলীল ছাড়া কাউকেও জান্নাতে যাওয়ার নিশ্চয়তা দেয়া সঠিক হবে না। শার’ঈ দলীল যেমন- ১০ জন সহাবা ও অন্যান্য ব্যক্তিগণ যার উপর আহলে সুন্নাতের ইজমা আছে। (সংক্ষিপ্ত নাবাবী)
২৭৪
حَدَّثَنَا الْحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ الْحُلْوَانِيُّ، وَعَبْدُ بْنُ حُمَيْدٍ، قَالاَ حَدَّثَنَا يَعْقُوبُ، – وَهُوَ ابْنُ إِبْرَاهِيمَ بْنِ سَعْدٍ – حَدَّثَنَا أَبِي، عَنْ صَالِحٍ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، قَالَ حَدَّثَنِي عَامِرُ بْنُ سَعْدٍ، عَنْ أَبِيهِ، سَعْدٍ أَنَّهُ قَالَ أَعْطَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم رَهْطًا وَأَنَا جَالِسٌ فِيهِمْ . بِمِثْلِ حَدِيثِ ابْنِ أَخِي ابْنِ شِهَابٍ عَنْ عَمِّهِ . وَزَادَ فَقُمْتُ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَسَارَرْتُهُ فَقُلْتُ مَا لَكَ عَنْ فُلاَنٍ .
সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কয়েকজন লোককে কিছু দিলেন। তখন আমি তাদের মধ্যে বসা ছিলাম। এভাবে বর্ণনাকারী পূর্ব বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তবে তিনি এতটুকু বর্ণনা করেছেন যে, আমি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট গেলাম এবং চুপে চুপে বললাম, হে আল্লাহর রসূল! অমুককে না দেয়ার কারণ কি? (ই.ফা. ২৭৮, ই.সে ২৮৮)
২৭৫
وَحَدَّثَنَا الْحَسَنُ الْحُلْوَانِيُّ، حَدَّثَنَا يَعْقُوبُ، حَدَّثَنَا أَبِي، عَنْ صَالِحٍ، عَنْ إِسْمَاعِيلَ بْنِ مُحَمَّدٍ، قَالَ سَمِعْتُ مُحَمَّدَ بْنَ سَعْدٍ، يُحَدِّثُ هَذَا فَقَالَ فِي حَدِيثِهِ فَضَرَبَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِيَدِهِ بَيْنَ عُنُقِي وَكَتِفِي ثُمَّ قَالَ “ أَقِتَالاً أَىْ سَعْدُ إِنِّي لأُعْطِي الرَّجُلَ ” .
ইসমা’ঈল ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি মুহাম্মাদ ইবনু সা’দকে এ হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছি। তবে তিনি তাঁর বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ করেন যে, সা’দ (রাঃ) বলেন, এরপর রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার ঘাড় ও বাহুর মাঝখানে সজোরে হাত রেখে বললেন, হে সা’দ! তুমি কি এজন্য বিতর্ক করতে চাও? আমি কাউকে দান করি। (ই.ফা. ২৭৯; ই.সে. ২৮৯)