সহীহ মুসলিম শরীফ হাদিস আরবি বাংলা ঈমান অধ্যায় তৃতীয় ভাগ হাদিস নং ২৭৬ – ২৯৯


৬৯. অধ্যায়ঃ
সুস্পষ্ট প্রমাণের দ্বারা হৃদয়ের প্রশান্তি বৃদ্ধি পায়

২৭৬
وَحَدَّثَنِي حَرْمَلَةُ بْنُ يَحْيَى، أَخْبَرَنَا ابْنُ وَهْبٍ، أَخْبَرَنِي يُونُسُ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، وَسَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏”‏ نَحْنُ أَحَقُّ بِالشَّكِّ مِنْ إِبْرَاهِيمَ صلى الله عليه وسلم إِذْ قَالَ ‏{‏ رَبِّ أَرِنِي كَيْفَ تُحْيِي الْمَوْتَى قَالَ أَوَلَمْ تُؤْمِنْ قَالَ بَلَى وَلَكِنْ لِيَطْمَئِنَّ قَلْبِي‏}‏ قَالَ ‏”‏ وَيَرْحَمُ اللَّهُ لُوطًا لَقَدْ كَانَ يَأْوِي إِلَى رُكْنٍ شَدِيدٍ وَلَوْ لَبِثْتُ فِي السِّجْنِ طُولَ لَبْثِ يُوسُفَ لأَجَبْتُ الدَّاعِيَ ‏”‏ ‏.‏

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ইবরাহীম (‘আঃ)-এর তুলনায় আমাদের মনে অধিক সন্দেহ জাগতে পারে। [৫৮] তিনি বলেছিলেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! কিভাবে আপনি মৃতকে জীবিত করেন, আমাকে দেখান। আল্লাহ বললেনঃ “তবে কি তুমি বিশ্বাস কর না? তিনি উত্তরে বললেন, কেন করব না? তবে এটা কেবল আমার চিত্তের প্রশান্তির জন্য”-(সূরাহ আল বাকারাহ্‌ ২ : ২৬০)। আল্লাহ তা’আলা লূত (‘আঃ)-এর উপর রহমাত বর্ষণ করুন, তিনি কোন শক্তিশালী জনগোষ্ঠীর আশ্রয় গ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। [৫৯] ইউসুফের দীর্ঘ কারাবরণের ন্যায় আমাকেও যদি কারাগারে অবস্থান করতে হত, তবে আমি রাজদূতের আহ্বানে সাড়া দিতাম। [৬০] (ই.ফা. ২৮০; ই.সে. ২৯০)

[৫৮] “ইবরাহীম (‘আঃ)-এর তুলনায় আমাদের মনে অধিক সন্দেহ জাগতে পারে”- এর অর্থ নিয়ে উলামাদের মাঝে মত বিরোধ রয়েছে। রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এই উক্তির অর্থ এই যে, ইবরাহীম (‘আঃ)-এর “পুনরুত্থানের” প্রতি সন্দেহ হওয়া অসম্ভব ছিল। যদি তাঁর নাবী ও খলীলুল্লাহ হওয়া সত্ত্বেও সন্দেহ হয়, তা হলে অন্যান্য নাবীদেরও সন্দেহ হত। আমার অবস্থা তোমরা জান যে, আমার কোন সন্দেহ নেই। অতএব, ইবরাহীম (‘আঃ)-এরও সন্দেহ ছিল না।

রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপরোক্ত উক্তি এই জন্য করেছিলেন যে, যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলো, “হে আল্লাহ কিভাবে আপনি মৃতকে জীবিত করেন আমাকে দেখান” তখন কিছু লোক ইবরাহীম (‘আঃ)-এর উপর ভুল সন্দেহ করল। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের এ সন্দেহ দুর করার জন্য এ হাদীসটি বর্ণনা করেন।

[৫৯] আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ লূত (‘আঃ)-এর উপর রহমাত বর্ষণ করুন। তিনি শক্তিশালী জনগোষ্ঠীর আশ্রয় গ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। সুন্দর যুবকের অবয়বে আগত মেহমানদের (ফেরেশতা) সম্ভ্রম রক্ষার বেলায় তিনি মেহমানকে খুশি করার জন্য এ উক্তি করেছিলেন। তবে তিনি আল্লাহর সাহায্য থেকে গাফিল ছিলেন এমনটি নয়।

[৬০] আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “আমি রাজদূতের আহ্বানে সাড়া দিতাম” এখানে তিনি ইউসুফ (‘আঃ)-এর মর্যাদা বর্ণনা করেছেন যে, তাঁর কত ধৈর্য্ ছিল যা অন্যের মধ্যে পাওয়া খুব মুশকিল ব্যাপার। কেননা, দীর্ঘ কারাভোগ করেও বাদশার স্বপ্নের ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য রাজদূতের আহ্বানে সাড়া দিলেন না। অর্থাৎ যুলাইখার মিথ্যা অপবাদের সঠিক তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত বের হলেন না। তদন্তের পর যুলাইখার মিথ্যা অপবাদ সাব্যস্ত হলে তিনি জেলখানা হতে বের হয়ে আসেন ও বাদশাহ্‌র স্বপ্নের তাবীর করেন। (সংক্ষিপ্ত নাবাবী)

২৭৭
وَحَدَّثَنِي بِهِ، إِنْ شَاءَ اللَّهُ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ أَسْمَاءَ الضُّبَعِيُّ حَدَّثَنَا جُوَيْرِيَةُ، عَنْ مَالِكٍ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، أَنَّ سَعِيدَ بْنَ الْمُسَيَّبِ، وَأَبَا، عُبَيْدٍ أَخْبَرَاهُ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِمِثْلِ حَدِيثِ يُونُسَ عَنِ الزُّهْرِيِّ وَفِي حَدِيثِ مَالِكٍ ‏ “‏ وَلَكِنْ لِيَطْمَئِنَّ قَلْبِي ‏”‏ ‏.‏ قَالَ ثُمَّ قَرَأَ هَذِهِ الآيَةَ حَتَّى جَازَهَا ‏.‏

সা’ঈদ ইবনু মুসাইয়্যাব ও আবূ ‘উবায়দ (রহঃ) উভয়ে আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে উপরের হাদীসের অবিকল বর্ণনা করেছেন। যেরূপ বর্ণনা করেছেন ইউনুস (রহঃ) যুহরী (রহঃ) হতে। তবে মালিক (রহঃ) তাঁর হাদীসে কথাটির পর উল্লেখ করেন যে, “বরং আমার অন্তরের প্রশান্তির জন্যে”। এরপর রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আয়াতটি শেষ পর্যন্ত তিলাওয়াত করেন।

‘আব্‌দ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ….. যুহরী (রহঃ) থেকে মালিক-এর সূত্রে বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, এরপর রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আয়াতটি শেষ পর্যন্ত তিলাওয়াত করেন। (ই.ফা. ২৮০, ২৮১; ই.সে. ২৯১, ২৯২)

৭০. অধ্যায়ঃ
সকল মানুষের জন্য আমাদের নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রেরিত হয়েছেন এবং অন্যান্য সকল দ্বীন ও ধর্ম তাঁর দ্বীনের মাধ্যমে রহিত হয়ে গেছে- এ কথার উপর বিশ্বাস স্থাপন ওয়াজিব

২৭৮
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا لَيْثٌ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ أَبِي سَعِيدٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ مَا مِنَ الأَنْبِيَاءِ مِنْ نَبِيٍّ إِلاَّ قَدْ أُعْطِيَ مِنَ الآيَاتِ مَا مِثْلُهُ آمَنَ عَلَيْهِ الْبَشَرُ وَإِنَّمَا كَانَ الَّذِي أُوتِيتُ وَحْيًا أَوْحَى اللَّهُ إِلَىَّ فَأَرْجُو أَنْ أَكُونَ أَكْثَرَهُمْ تَابِعًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ ‏”‏ ‏.‏

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, প্রত্যেক নাবীকে সে পরিমাণ মু’জিযা দেয়া হয়েছে, যে পরিমাণ মু’জিযার প্রতি মানুষ ঈমান এনেছে। পক্ষান্তরে আমাকে যে মু’জিযা প্রদান করা হয়েছে, তা হচ্ছে আল্লাহ প্রেরিত ওয়াহী। [৬১] সুতরাং কিয়ামাতের দিন আমার অনুসারীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশী হবে বলে আশা রাখি। (ই.ফা. ২৮২; ই.সে. ২৯৩)

[৬১] কুরআন (ওয়াহী) এমন মু’জিযা যাতে যাদুটোনা ইত্যাদির সন্দেহ নেই। পক্ষান্তরে অন্যান্য মু’জিযার মধ্যে সন্দেহের অবকাশ আছে। এজন্য আমার অনুসারী বেশী হবে। অথবা অন্যান্য নাবীগণের মু’জিযা অতীত হয়ে গেছে, তাদের যুগ অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে। পক্ষান্তরে আমার মু’জিযা আল কুরআন কিয়ামাত পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকবে। অতএব আমার অনুসারী বেশি হবে। (সংক্ষিপ্ত নাবাবী)

২৭৯
حَدَّثَنِي يُونُسُ بْنُ عَبْدِ الأَعْلَى، أَخْبَرَنَا ابْنُ وَهْبٍ، قَالَ وَأَخْبَرَنِي عَمْرٌو، أَنَّ أَبَا يُونُسَ، حَدَّثَهُ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ قَالَ ‏ “‏ وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لاَ يَسْمَعُ بِي أَحَدٌ مِنْ هَذِهِ الأُمَّةِ يَهُودِيٌّ وَلاَ نَصْرَانِيٌّ ثُمَّ يَمُوتُ وَلَمْ يُؤْمِنْ بِالَّذِي أُرْسِلْتُ بِهِ إِلاَّ كَانَ مِنْ أَصْحَابِ النَّارِ ‏”‏ ‏.‏

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, সে সত্তার কসম, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! ইয়াহুদী হোক আর খৃস্টান হোক, যে ব্যক্তিই আমার এ রিসালাতের খবর শুনেছে অথচ আমার রিসালাতের উপর ঈমান না এনে মৃত্যুবরণ করবে, অবশ্যই সে জাহান্নামী হবে। (ই.ফা. ২৮৩; ই.সে. ২৯৪)

২৮০
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، أَخْبَرَنَا هُشَيْمٌ، عَنْ صَالِحِ بْنِ صَالِحٍ الْهَمْدَانِيِّ، عَنِ الشَّعْبِيِّ، قَالَ رَأَيْتُ رَجُلاً مِنْ أَهْلِ خُرَاسَانَ سَأَلَ الشَّعْبِيَّ فَقَالَ يَا أَبَا عَمْرٍو إِنَّ مَنْ قِبَلَنَا مِنْ أَهْلِ خُرَاسَانَ يَقُولُونَ فِي الرَّجُلِ إِذَا أَعْتَقَ أَمَتَهُ ثُمَّ تَزَوَّجَهَا فَهُوَ كَالرَّاكِبِ بَدَنَتَهُ ‏.‏ فَقَالَ الشَّعْبِيُّ حَدَّثَنِي أَبُو بُرْدَةَ بْنُ أَبِي مُوسَى عَنْ أَبِيهِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ ثَلاَثَةٌ يُؤْتَوْنَ أَجْرَهُمْ مَرَّتَيْنِ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ آمَنَ بِنَبِيِّهِ وَأَدْرَكَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَآمَنَ بِهِ وَاتَّبَعَهُ وَصَدَّقَهُ فَلَهُ أَجْرَانِ وَعَبْدٌ مَمْلُوكٌ أَدَّى حَقَّ اللَّهِ تَعَالَى وَحَقَّ سَيِّدِهِ فَلَهُ أَجْرَانِ وَرَجُلٌ كَانَتْ لَهُ أَمَةٌ فَغَذَاهَا فَأَحْسَنَ غِذَاءَهَا ثُمَّ أَدَّبَهَا فَأَحْسَنَ أَدَبَهَا ثُمَّ أَعْتَقَهَا وَتَزَوَّجَهَا فَلَهُ أَجْرَانِ ‏”‏ ‏.‏ ثُمَّ قَالَ الشَّعْبِيُّ لِلْخُرَاسَانِيِّ خُذْ هَذَا الْحَدِيثَ بِغَيْرِ شَىْءٍ ‏.‏ فَقَدْ كَانَ الرَّجُلُ يَرْحَلُ فِيمَا دُونَ هَذَا إِلَى الْمَدِينَةِ ‏.‏

সালিহ্‌ আল হামদানী (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ

ইমাম শা’বীর নিকট এসে জনৈক খুরাসানী ব্যক্তিকে প্রশ্ন করতে দেখলাম। সে বলল, হে আবূ ‘আমর! আমাদের অঞ্চলে কতিপয় খুরাসানীর মতামত হলো, যে ব্যক্তি নিজের দাসীকে আযাদ করে দিয়ে তাকে বিয়ে করল সে যেন নিজে কুরবানীর উটের উপর সওয়ার হলো (অর্থাৎ তা নিন্দনীয় কাজ মনে করে।) শা’বী উত্তরে বললেন, আমাকে আবূ বুরদাহ (রাঃ) তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, রসূলুল্লাহ বলেনঃ তিন ধরণের লোককে দ্বিগুণ সাওয়াব দান করা হবে। (তারা হলো) (১) যে আহলে কিতাব তার নাবীর প্রতি ঈমান এনেছে এবং পরে আমার প্রতি ঈমান এনেছে এবং সত্য বলে মেনে নিয়েছে এবং আমার অনুসরণ করেছে সে দ্বিগুণ সাওয়াব পাবে। (২) যে দাস আল্লাহ তা’আলার হাক্‌ আদায় করেছে এবং তার মালিকের হাক্‌ও আদায় করেছে, সেও দ্বিগুণ সাওয়াব লাভ করবে। (৩) যে ব্যক্তি তার দাসীকে উত্তম খাবার দিয়েছে, উত্তমরূপে আদব-কায়দা শিখিয়েছে, তারপর তাকে আযাদ করে বিয়ে করেছে; সেও দ্বিগুণ সাওয়াবের অধিকারী হবে। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর শা’বী উক্ত খোরাসানীকে বললেন, কোন বিনিময় ছাড়াই তুমি এ হাদীস নিয়ে যাও। অথচ এর চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ হাদীসের জন্যও এক সময় মাদীনাহ্‌ পর্যন্ত লোকেরা সফর করত।

আবূ বাক্‌র ইবনু আবূ শাইবাহ্‌ ও ইবনু আবূ ‘উমার ও ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) … সালিহ্‌ (রহঃ) থেকে পূর্বোল্লিখিত সানাদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ২৮৪, ২৮৫;; ই.সে. ২৯৫, ২৯৬)

৭১. অধ্যায়ঃ
আমাদের নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর শারী’আত অনুসারী প্রশাসক হিসেবে ‘ঈসা ইবনু মারইয়াম (‘আঃ)-এর অবতরণ

২৮১
وَحَدَّثَنَاهُ عَبْدُ الأَعْلَى بْنُ حَمَّادٍ، وَأَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ وَزُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ قَالُوا حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ، ح وَحَدَّثَنِيهِ حَرْمَلَةُ بْنُ يَحْيَى، أَخْبَرَنَا ابْنُ وَهْبٍ، قَالَ حَدَّثَنِي يُونُسُ، ح وَحَدَّثَنَا حَسَنٌ الْحُلْوَانِيُّ، وَعَبْدُ بْنُ حُمَيْدٍ، عَنْ يَعْقُوبَ بْنِ إِبْرَاهِيمَ بْنِ سَعْدٍ، حَدَّثَنَا أَبِي، عَنْ صَالِحٍ، كُلُّهُمْ عَنِ الزُّهْرِيِّ، بِهَذَا الإِسْنَادِ وَفِي رِوَايَةِ ابْنِ عُيَيْنَةَ ‏”‏ إِمَامًا مُقْسِطًا وَحَكَمًا عَدْلاً ‏”‏ ‏.‏ وَفِي رِوَايَةِ يُونُسَ ‏”‏ حَكَمًا عَادِلاً ‏”‏ ‏.‏ وَلَمْ يَذْكُرْ ‏”‏ إِمَامًا مُقْسِطًا ‏”‏ ‏.‏ وَفِي حَدِيثِ صَالِحٍ ‏”‏ حَكَمًا مُقْسِطًا ‏”‏ كَمَا قَالَ اللَّيْثُ ‏.‏ وَفِي حَدِيثِهِ مِنَ الزِّيَادَةِ ‏”‏ وَحَتَّى تَكُونَ السَّجْدَةُ الْوَاحِدَةُ خَيْرًا مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا ‏”‏ ‏.‏ ثُمَّ يَقُولُ أَبُو هُرَيْرَةَ اقْرَءُوا إِنْ شِئْتُمْ ‏{‏ وَإِنْ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ إِلاَّ لَيُؤْمِنَنَّ بِهِ قَبْلَ مَوْتِهِ‏}‏ الآيَةَ ‏.‏

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ সে সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ। শীঘ্রই তোমাদের মাঝে ‘ঈসা ইবনু মারইয়াম (‘আঃ)-কে একজন ন্যায়পরায়ণ প্রশাসক হিসেবে অবতীর্ণ করা হবে। [৬২] তখন তিনি ক্রুশ (চিহ্ন) ধ্বংস করবেন, শুকর হত্যা করবেন, জিয্‌য়াহ্‌ কর রহিত করবেন। [৬৩] তখন সম্পদ এত বেশী হবে যে তা গ্রহণ করার কেউ থাকবে না।

‘আবদুল আ’লা ইবনু হাম্মাদ, আবূ বাক্‌র ইবনু আবূ শাইবাহ্‌, যুহায়র ইবনু হার্‌ব, হারমালাহ্‌ ইবনু ইয়াহ্‌ইয়া, হাসান আল হুলওয়ানী ও ‘আব্‌দ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ….. যুহরী (রহঃ) থেকে পূর্ব বর্ণিত সানাদের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (তবে প্রত্যেক রিওয়ায়াতে কিছু ব্যবধান যেমন) ইবনু ‘উয়াইনাহ্‌ তার রিওয়ায়াতে (আরবী) কথাটির উল্লেখ করেন। ইউনুস তাঁর রিওয়ায়াতে (আরবী) এর উল্লেখ করেছেন (আরবী) উল্লেখ করেননি। সালিহ তাঁর রিওয়ায়াতে লায়স বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ (আরবী) বর্ণনা করেছেন। তাঁর বর্ণনায় আরও রয়েছে, সে সময় এক একটি সাজদাহ পৃথিবী ও পৃথিবীর সমুদয় সম্পদ অপেক্ষা অধিক শ্রেয় বলে বিবেচিত হবে। তারপর আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেনঃ ইচ্ছা করলে তোমরা এ আয়াতটি পড়তে পার : “কিতাবীদের মধ্যে প্রত্যেকে তার মৃত্যুর পূর্বে তাঁকে [‘ঈসা (আ.-কে)] বিশ্বাস করবেই এবং কিয়ামাতের দিন তিনি তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবেন”-(সূরাহ আন্‌ নিসা ৪ : ১৫৯)। (ই.ফা. ২৮৬, ২৮৭; ই.সে. ২৯৭, ২৯৮)

[৬২] ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, ‘ঈসা (‘আঃ)-কে শেষ যুগে ন্যায়পরায়ন প্রশাসক হিসেবে অবতীর্ণ করা হবে। তখন তিনি ক্রুশ চিহ্ন ধ্বংস করবেন, খৃস্টানেরা যার সম্মান করে থাকে। এটা থেকে প্রমাণিত হয় যে, সমস্ত বর্জনীয় জিনিস যেমন : বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র, অবৈধ খেলাধূলার যন্ত্রপাতি, মূর্তি, ছবি ইত্যাদি সব ভেঙ্গে ফেলা উচিত। শুকর হত্যাও এর মধ্যে শামিল। কুরআন মাজীদে মহান আল্লাহ-এর গোশ্‌তকে হারাম বলে ঘোষণা করেছেন। কারণ এর গোশ্‌ত মানুষের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। আল্লামা কারযাভী (রহঃ) বলেন শুকরের অতি লোভনীয় খাদ্য সব রকমের পায়খানা ও ময়লা আবর্জনা। আধুনিক স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে তা খাওয়া বিশেষ করে গ্রীষ্ম প্রধান দেশে খুবই ক্ষতিকর। বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা থেকেও প্রমাণিত হয়েছে যে, শুকরের গোশ্‌ত আহার করা হলে দেহে এমন এক প্রাকরের পোকার সৃষ্টি হয় যা স্বাস্থ্যকে কুরে কুরে খায়। (অনুবাদক-ইসলামের হালাল হারামের বিধান, পৃষ্ঠা ৬৭)

[৬৩] জিযয়াহ্‌ রহিত করা তো মুহাম্মাদী শারী’আতের পরিপন্থী। এর সঠিক উত্তর এই যে, এ নির্দেশ শারী’আতে মুহাম্মাদীর পরিপন্থী নয়। এজন্য যে, জিয্‌য়াহ্‌ বা কর গ্রহণ করার হুকুম ‘ঈসা (‘আঃ) আসার পূর্ব পর্যন্ত থাকবে। যখন ‘ঈসা (‘আঃ) এসে যাবেন তখন জিয্‌য়াহ্‌ রহিত হয়ে যাবে। যা হাদীসে প্রকাশ্যে বলা হয়েছে। আর সম্পদ বেশি হওয়ার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ ‘আদল ও ইনসাফের কারণে খুব বারাকাত হবে ও মাল বেশি হবে। ভূগর্ভের খনিজ সম্পদ উত্তোলন করা হবে। অন্য হাদীসে এসেছে : কিয়ামাত নিকটবর্তী হওয়ার কারণে অর্থ-সম্পদের দিকে মানুষের লোভ-লালসা থাকবে না। কাজেই কেউ মাল দিতে চাইলে তা গ্রহণ করতে রাজি হবে না। (সংক্ষিপ্ত নাবাবী)

২৮২
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا لَيْثٌ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ أَبِي سَعِيدٍ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ مِينَاءَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ وَاللَّهِ لَيَنْزِلَنَّ ابْنُ مَرْيَمَ حَكَمًا عَادِلاً فَلَيَكْسِرَنَّ الصَّلِيبَ وَلَيَقْتُلَنَّ الْخِنْزِيرَ وَلَيَضَعَنَّ الْجِزْيَةَ وَلَتُتْرَكَنَّ الْقِلاَصُ فَلاَ يُسْعَى عَلَيْهَا وَلَتَذْهَبَنَّ الشَّحْنَاءُ وَالتَّبَاغُضُ وَالتَّحَاسُدُ وَلَيَدْعُوَنَّ إِلَى الْمَالِ فَلاَ يَقْبَلُهُ أَحَدٌ ‏”‏ ‏.‏

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহর কসম! ‘ঈসা ইবনু মারইয়াম (‘আঃ) অবশ্যই ন্যায়পরায়ণ প্রশাসকরূপে আসবেন এবং ক্রুশ চূর্ণ করবেন, শুকর হত্যা করবেন, জিয্‌য়াহ তথা কর রহিত করবেন। মোটা তাজা উটগুলো বন্ধনমুক্ত করে দেয়া হবে কিন্তু তা নেয়ার জন্য কেউ চেষ্ট করবে না। পরস্পর শত্রুতা, হিংসা-বিদ্বেষ থাকবে না এবং সম্পদ গ্রহণের জন্য মানুষকে ডাকা হবে কিন্তু তা কেউ গ্রহণ করবে না। (ই.ফা. ২৮৮; ই.সে. ২৯৯)

২৮৩
حَدَّثَنِي حَرْمَلَةُ بْنُ يَحْيَى، أَخْبَرَنَا ابْنُ وَهْبٍ، أَخْبَرَنِي يُونُسُ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، قَالَ أَخْبَرَنِي نَافِعٌ، مَوْلَى أَبِي قَتَادَةَ الأَنْصَارِيِّ أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ كَيْفَ أَنْتُمْ إِذَا نَزَلَ ابْنُ مَرْيَمَ فِيكُمْ وَإِمَامُكُمْ مِنْكُمْ ‏”‏ ‏.‏

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের জীবন কতই না ধন্য হবে, যখন ‘ঈসা ইবনু মারইয়াম (‘আঃ) তোমাদের মাঝে অবতরণ করবেন এবং তোমাদেরই একজন তোমাদের ইমাম হবেন। (ই.ফা. ২৮৯; ই.সে. ৩০০)

২৮৪
وَحَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ حَاتِمٍ، حَدَّثَنَا يَعْقُوبُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، حَدَّثَنَا ابْنُ أَخِي ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ عَمِّهِ، قَالَ أَخْبَرَنِي نَافِعٌ، مَوْلَى أَبِي قَتَادَةَ الأَنْصَارِيِّ أَنَّهُ سَمِعَ أَبَا هُرَيْرَةَ، يَقُولُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ كَيْفَ أَنْتُمْ إِذَا نَزَلَ ابْنُ مَرْيَمَ فِيكُمْ وَأَمَّكُمْ ‏”‏ ‏.‏

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের জীবন কতই না ধন্য হবে, যে সময়ে ‘ঈসা ইবনু মারইয়াম (‘আঃ)-কে তোমাদের মাঝে পাঠানো হবে আর তিনি তোমাদের নেতৃত্ব দিবেন। (ই.ফা. ২৯০; ই.সে. ৩০১)

২৮৫
وَحَدَّثَنَا زُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، حَدَّثَنِي الْوَلِيدُ بْنُ مُسْلِمٍ، حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي ذِئْبٍ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ نَافِعٍ، مَوْلَى أَبِي قَتَادَةَ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏”‏ كَيْفَ أَنْتُمْ إِذَا نَزَلَ فِيكُمُ ابْنُ مَرْيَمَ فَأَمَّكُمْ مِنْكُمْ ‏”‏ ‏.‏ فَقُلْتُ لاِبْنِ أَبِي ذِئْبٍ إِنَّ الأَوْزَاعِيَّ حَدَّثَنَا عَنِ الزُّهْرِيِّ عَنْ نَافِعٍ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ‏”‏ وَإِمَامُكُمْ مِنْكُمْ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ ابْنُ أَبِي ذِئْبٍ تَدْرِي مَا أَمَّكُمْ مِنْكُمْ قُلْتُ تُخْبِرُنِي ‏.‏ قَالَ فَأَمَّكُمْ بِكِتَابِ رَبِّكُمْ تَبَارَكَ وَتَعَالَى وَسُنَّةِ نَبِيِّكُمْ صلى الله عليه وسلم ‏.‏

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা কতই না ধন্য হবে, যে সময় ‘ঈসা ইবনু মারইয়াম (‘আঃ) আসবেন এবং তোমাদেরই একজন তোমাদের নেতৃত্ব প্রদান করবেন। [৬৪] ওয়ালীদ ইবনু মুসলিম বলেন, আমি ইবনু আবূ যিবকে জিজ্ঞেস করলাম, আওযা’ঈ আমাদেরকে যুহরীর সূত্রে, তিনি নাফি’ হতে, তিনি আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন : (আরবী) “আর তোমাদের থেকেই তোমাদের ইমাম হবে” কথাটির মর্ম জান কি? আমি বললাম, বলুন। তিনি বললেন অর্থাৎ তোমাদের প্রতিপালক প্রেরিত কিতাব ও তোমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অনুসৃত আদর্শের অবলম্বনে তিনি তোমাদের নেতৃত্ব প্রদান করবেন। (ই.ফা. ২৯১; ই.সে. ৩০২)

[৬৪] অর্থাৎ ‘ঈসা (‘আঃ) শারী’আতে মুহাম্মাদীর অনুসারী হবেন। ‘ঈসা (‘আঃ) যদিও নাবী ছিলেন, কিন্তু তাঁর নুবূওয়াতী যুগ প্রথম দুনিয়া এসে নাবী হিসেবে প্রকাশ পাওয়ার পর শেষ হয়ে গেছে। কিয়ামাতের পূর্বে যখন তিনি আসবেন, আমাদের নাবীর উম্মাত হিসেবে এসে কুরআন ও হাদীসের প্রতি ‘আমাল করবেন। (সংক্ষিপ্ত নাবাবী)

২৮৬
حَدَّثَنَا الْوَلِيدُ بْنُ شُجَاعٍ، وَهَارُونُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، وَحَجَّاجُ بْنُ الشَّاعِرِ، قَالُوا حَدَّثَنَا حَجَّاجٌ، – وَهُوَ ابْنُ مُحَمَّدٍ – عَنِ ابْنِ جُرَيْجٍ، قَالَ أَخْبَرَنِي أَبُو الزُّبَيْرِ، أَنَّهُ سَمِعَ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ، يَقُولُ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏ “‏ لاَ تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي يُقَاتِلُونَ عَلَى الْحَقِّ ظَاهِرِينَ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ – قَالَ – فَيَنْزِلُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ صلى الله عليه وسلم فَيَقُولُ أَمِيرُهُمْ تَعَالَ صَلِّ لَنَا ‏.‏ فَيَقُولُ لاَ ‏.‏ إِنَّ بَعْضَكُمْ عَلَى بَعْضٍ أُمَرَاءُ ‏.‏ تَكْرِمَةَ اللَّهِ هَذِهِ الأُمَّةَ ‏”‏ ‏.‏

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, কিয়ামাত পর্যন্ত আমার উম্মাতের একদল সত্য দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে বাতিলের বিরুদ্ধে লড়তে থাকবে এবং অবশেষে ‘ঈসা (‘আঃ) অবতরণ করবেন। মুসলিমদের আমীর বলবেন, আসুন সালাতে আমাদের ইমামাতি করুন। তিনি বলবেন না, আপনাদেরই একজন অন্যদের জন্য ইমাম নিযুক্ত হবে। এ হলো আল্লাহ তা’আলা প্রদত্ত এ উম্মাতের সম্মান। (ই.ফা. ২৯২; ই.সে. ৩০৩)

৭২. অধ্যায়ঃ
যে সময়ে ঈমান কবূল হবে না

২৮৭
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ أَيُّوبَ، وَقُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، وَعَلِيُّ بْنُ حُجْرٍ، قَالُوا حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ، – يَعْنُونَ ابْنَ جَعْفَرٍ – عَنِ الْعَلاَءِ، – وَهُوَ ابْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ – عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا فَإِذَا طَلَعَتْ مِنْ مَغْرِبِهَا آمَنَ النَّاسُ كُلُّهُمْ أَجْمَعُونَ فَيَوْمَئِذٍ لاَ يَنْفَعُ نَفْسًا إِيمَانُهَا لَمْ تَكُنْ آمَنَتْ مِنْ قَبْلُ أَوْ كَسَبَتْ فِي إِيمَانِهَا خَيْرًا ‏”‏ ‏.‏

আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ পশ্চিম দিকে সূর্যোদয়ের পূর্বে কিয়ামাত সংঘটিত হবে না, আর যখন পশ্চিমাকাশে সূর্য উঠবে তখন সকল মানুষ একত্রে ঈমান আনবে। কিন্তু যে ইতঃপূর্বে ঈমান আনেনি অথবা যে ঈমান অনুযায়ী নেক কাজ করেনি সে সময়ে ঈমান আনায় তার কোন কল্যাণ সাধিত হবে না।

আবূ বাক্‌র ইবনু শাইবাহ্‌, ইবনু নুমায়র, আবূ কুরায়ব, যুহায়র ইবনু হার্‌ব ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি’ (রহঃ) ….. আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সূত্রে বর্ণিত হাদীসের অবিকল বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ২৯৩, ২৯৪; ই.সে. ৩০৪, ৩০৫)

২৮৮
وَحَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، وَزُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، قَالاَ حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، ح وَحَدَّثَنِيهِ زُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ يُوسُفَ الأَزْرَقُ، جَمِيعًا عَنْ فُضَيْلِ بْنِ غَزْوَانَ، ح وَحَدَّثَنَا أَبُو كُرَيْبٍ، مُحَمَّدُ بْنُ الْعَلاَءِ – وَاللَّفْظُ لَهُ – حَدَّثَنَا ابْنُ فُضَيْلٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي حَازِمٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ ثَلاَثٌ إِذَا خَرَجْنَ لاَ يَنْفَعُ نَفْسًا إِيمَانُهَا لَمْ تَكُنْ آمَنَتْ مِنْ قَبْلُ أَوْ كَسَبَتْ فِي إِيمَانِهَا خَيْرًا طُلُوعُ الشَّمْسِ مِنْ مَغْرِبِهَا وَالدَّجَّالُ وَدَابَّةُ الأَرْضِ ‏”‏ ‏.‏

আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ এ তিনটি বিষয় প্রকাশিত হওয়ার পূর্বে যারা ঈমান আনেনি বা ঈমান অনুযায়ী নেক কাজ করেনি, এগুলো প্রকাশ পাওয়ার পর তাদের ঈমানে কোন উপকার হবে না। (১) পশ্চিমাকাশ থেকে সূর্যোদয়, (২) দাজ্জাল (এর আবির্ভাব) ও (৩) দাব্বাতুল আর্‌য (ভূখণ্ড হতে এক প্রকার প্রাণীর আবির্ভাব)। [৬৫] (ই.ফা. ২৯৫; ই.সে. ৩০৬)

[৬৫] ‘দাব্বাতুল আর্‌য’ মাটি হতে একটি প্রাণী বের হবে। মানুষের সাথে কথা বলবে এবং মু’মিন ও কাফিরদের মধ্যে পার্থক্য করে দিবে। (নাবাবী)

২৮৯
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ أَيُّوبَ، وَإِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، جَمِيعًا عَنِ ابْنِ عُلَيَّةَ، – قَالَ ابْنُ أَيُّوبَ حَدَّثَنَا ابْنُ عُلَيَّةَ، – حَدَّثَنَا يُونُسُ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ بْنِ يَزِيدَ التَّيْمِيِّ، – سَمِعَهُ فِيمَا، أَعْلَمُ – عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي ذَرٍّ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ يَوْمًا ‏”‏ أَتَدْرُونَ أَيْنَ تَذْهَبُ هَذِهِ الشَّمْسُ ‏”‏ ‏.‏ قَالُوا اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ ‏.‏ قَالَ ‏”‏ إِنَّ هَذِهِ تَجْرِي حَتَّى تَنْتَهِيَ إِلَى مُسْتَقَرِّهَا تَحْتَ الْعَرْشِ فَتَخِرُّ سَاجِدَةً وَلاَ تَزَالُ كَذَلِكَ حَتَّى يُقَالَ لَهَا ارْتَفِعِي ارْجِعِي مِنْ حَيْثُ جِئْتِ فَتَرْجِعُ فَتُصْبِحُ طَالِعَةً مِنْ مَطْلِعِهَا ثُمَّ تَجْرِي حَتَّى تَنْتَهِيَ إِلَى مُسْتَقَرِّهَا تَحْتَ الْعَرْشِ فَتَخِرُّ سَاجِدَةً وَلاَ تَزَالُ كَذَلِكَ حَتَّى يُقَالَ لَهَا ارْتَفِعِي ارْجِعِي مِنْ حَيْثُ جِئْتِ فَتَرْجِعُ فَتُصْبِحُ طَالِعَةً مِنْ مَطْلِعِهَا ثُمَّ تَجْرِي لاَ يَسْتَنْكِرُ النَّاسُ مِنْهَا شَيْئًا حَتَّى تَنْتَهِيَ إِلَى مُسْتَقَرِّهَا ذَاكَ تَحْتَ الْعَرْشِ فَيُقَالُ لَهَا ارْتَفِعِي أَصْبِحِي طَالِعَةً مِنْ مَغْرِبِكِ فَتُصْبِحُ طَالِعَةً مِنْ مَغْرِبِهَا ‏”‏ ‏.‏ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ أَتَدْرُونَ مَتَى ذَاكُمْ ذَاكَ حِينَ لاَ يَنْفَعُ نَفْسًا إِيمَانُهَا لَمْ تَكُنْ آمَنَتْ مِنْ قَبْلُ أَوْ كَسَبَتْ فِي إِيمَانِهَا خَيْرًا ‏”‏ ‏.‏

আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

একদিন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা কি জান, এ সূর্য কোথায় যায়? সহাবাগণ বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেন, এ সূর্য চলতে থাকে এবং (আল্লাহ তা’আলার) ‘আর্‌শের নীচে অবস্থিত তার অবস্থান স্থলে যায়। সেখানে সে সাজদাবনত হয়ে পড়ে থাকে। শেষে যখন তাকে বলা হয়, উঠ এবং যেখান থেকে এসেছিলে সেখানে ফিরে যাও! অনন্তর সে ফিরে আসে এবং নির্ধারিত উদয়স্থল দিয়েই উদিত হয়। তা আবার চলতে থাকে এবং ‘আর্‌শের নীচে অবস্থিত তার অবস্থান স্থলে যায়। সেখানে সে সাজদাবনত অবস্থায় পড়ে থাকে। শেষে যখন তাকে বলা হয় উঠ এবং যেখান থেকে এসেছিলে সেখানে ফিরে যাও। তখন সে ফিরে আসে এবং নির্ধারিত উদয়স্থল হয়েই সে উদিত হয়। এমনিভাবে চলতে থাকবে; মানুষ তার থেকে অস্বাভাবিক কিছু হতে দেখবে না। শেষে একদিন সূর্য যথারীতি ‘আর্‌শের নীচে তার অবস্থানে যাবে। তাকে বলা হবে, উঠ এবং অস্তাচল থেকে উদিত হও। অনন্তর সেদিন সূর্য পশ্চিমাকাশে উদিত হবে। রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, (কুরআনের বাণী) “কোন দিন সে অবস্থা হবে তোমরা জান? সেদিন ঐ ব্যক্তির ঈমান কোন কাজে আসবে না, যে ব্যক্তি পূর্বে ঈমান আনেনি কিংবা যে ব্যক্তি ঈমানের মাধ্যমে কল্যাণ অর্জন করেনি”-(সূরাহ আল-আন’আম ৬ : ১৫৮)। [৬৬] (ই.ফা. ২৯৬; ই.সে. ৩০৭)
[৬৬] প্রত্যহ সূর্যের ‘আর্‌শের নীচে যাওয়া এবং সাজদায় পড়ে থাকার প্রকৃত তাৎপর্য আল্লাহ ও তাঁর রসূলই ভাল জানেন। আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের আলোকে ইহা আমাদের জ্ঞানের অগম্য মনে হলেও ভবিষ্যৎ বিজ্ঞান হয়ত এর তাৎপর্য বুঝতে সক্ষম হবে। সাজদার দ্বারা আমরা যদি আনুগত্য অর্থ গ্রহণ করি তবে বলা যায় চন্দ্র-সূর্যসহ সৃষ্টির সব কিছুই আল্লাহ তা’আলার নির্দেশ মেনে চলে। সূর্যও তার নির্দিষ্ট কার্যক্রমে সর্বক্ষণ আল্লাহর নির্দেশ প্রার্থনা করে। (নাবাবী)

২৯০
وَحَدَّثَنِي عَبْدُ الْحَمِيدِ بْنُ بَيَانٍ الْوَاسِطِيُّ، أَخْبَرَنَا خَالِدٌ، – يَعْنِي ابْنَ عَبْدِ اللَّهِ – عَنْ يُونُسَ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ التَّيْمِيِّ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي ذَرٍّ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ يَوْمًا ‏ “‏ أَتَدْرُونَ أَيْنَ تَذْهَبُ هَذِهِ الشَّمْسُ ‏”‏ بِمِثْلِ مَعْنَى حَدِيثِ ابْنِ عُلَيَّةَ ‏.‏

আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা আমাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, তোমরা কি জান এ সূর্য কোথায় গমন করে? ….. এরপর রাবী ইবনু ‘উলাইয়্যাহ্‌ বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ২৯৭; ই.সে. ৩০৮)

২৯১
وَحَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، وَأَبُو كُرَيْبٍ – وَاللَّفْظُ لأَبِي كُرَيْبٍ – قَالاَ حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ التَّيْمِيِّ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي ذَرٍّ، قَالَ دَخَلْتُ الْمَسْجِدَ وَرَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم جَالِسٌ فَلَمَّا غَابَتِ الشَّمْسُ قَالَ ‏”‏ يَا أَبَا ذَرٍّ هَلْ تَدْرِي أَيْنَ تَذْهَبُ هَذِهِ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ قُلْتُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ ‏.‏ قَالَ ‏”‏ فَإِنَّهَا تَذْهَبُ فَتَسْتَأْذِنُ فِي السُّجُودِ فَيُؤْذَنُ لَهَا وَكَأَنَّهَا قَدْ قِيلَ لَهَا ارْجِعِي مِنْ حَيْثُ جِئْتِ فَتَطْلُعُ مِنْ مَغْرِبِهَا ‏”‏ ‏.‏ قَالَ ثُمَّ قَرَأَ فِي قِرَاءَةِ عَبْدِ اللَّهِ وَذَلِكَ مُسْتَقَرٌّ لَهَا ‏.‏

আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

একদা আমি মাসজিদে নাবাবীতে প্রবেশ করলাম। রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তথায় উপবিষ্ট ছিলেন। সূর্য ঢলে পড়লে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে আবূ যার! জান এ সূর্য কোথায় যায়? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রসূলই ভাল জানেন। রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সে তার গন্তব্যে যায় এবং আল্লাহর নিকট সাজদার অনুমতি চায়। তখন তাকে অনুমতি দেয়া হয়। পরে একদিন যখন তাকে বলা হবে যেদিক থেকে এসেছো সেদিকে ফিরে যাও। তখন সে পশ্চিম দিক থেকে উঠবে।

এরপর তিনি ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস’উদের কিরাআত অনুসারে তিলাওয়াত করেঃ এ তার গন্তব্যস্থল। (ই.ফা. ২৯৮; ই.সে. ৩০৯)

২৯২
حَدَّثَنَا أَبُو سَعِيدٍ الأَشَجُّ، وَإِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، – قَالَ إِسْحَاقُ أَخْبَرَنَا وَقَالَ الأَشَجُّ، حَدَّثَنَا – وَكِيعٌ، حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ التَّيْمِيِّ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي ذَرٍّ، قَالَ سَأَلْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَنْ قَوْلِ اللَّهِ تَعَالَى ‏{‏ وَالشَّمْسُ تَجْرِي لِمُسْتَقَرٍّ لَهَا‏}‏ قَالَ ‏”‏ مُسْتَقَرُّهَا تَحْتَ الْعَرْشِ ‏”‏ ‏.‏

আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আমি রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে “এবং সূর্য ভ্রমণ করে তার নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে”-(সূরাহ ইয়া-সীন ৩৬ : ৩৮)। এ আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে, তিনি বললেনঃ ‘আর্‌শের নীচে হলো তার গন্তব্যস্থল। (ই.ফা. ২৯৯; ই.সে. ৩১০)

৭৩. অধ্যায়ঃ
রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি ওয়াহীর সূচনা

২৯৩
حَدَّثَنِي أَبُو الطَّاهِرِ، أَحْمَدُ بْنُ عَمْرِو بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ سَرْحٍ أَخْبَرَنَا ابْنُ وَهْبٍ، قَالَ أَخْبَرَنِي يُونُسُ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، قَالَ حَدَّثَنِي عُرْوَةُ بْنُ الزُّبَيْرِ، أَنَّ عَائِشَةَ، زَوْجَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَخْبَرَتْهُ أَنَّهَا قَالَتْ كَانَ أَوَّلُ مَا بُدِئَ بِهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مِنَ الْوَحْىِ الرُّؤْيَا الصَّادِقَةَ فِي النَّوْمِ فَكَانَ لاَ يَرَى رُؤْيَا إِلاَّ جَاءَتْ مِثْلَ فَلَقِ الصُّبْحِ ثُمَّ حُبِّبَ إِلَيْهِ الْخَلاَءُ فَكَانَ يَخْلُو بِغَارِ حِرَاءٍ يَتَحَنَّثُ فِيهِ – وَهُوَ التَّعَبُّدُ – اللَّيَالِيَ أُولاَتِ الْعَدَدِ قَبْلَ أَنْ يَرْجِعَ إِلَى أَهْلِهِ وَيَتَزَوَّدُ لِذَلِكَ ثُمَّ يَرْجِعُ إِلَى خَدِيجَةَ فَيَتَزَوَّدُ لِمِثْلِهَا حَتَّى فَجِئَهُ الْحَقُّ وَهُوَ فِي غَارِ حِرَاءٍ فَجَاءَهُ الْمَلَكُ فَقَالَ اقْرَأْ ‏.‏ قَالَ ‏”‏ مَا أَنَا بِقَارِئٍ – قَالَ – فَأَخَذَنِي فَغَطَّنِي حَتَّى بَلَغَ مِنِّي الْجَهْدَ ثُمَّ أَرْسَلَنِي فَقَالَ اقْرَأْ ‏.‏ قَالَ قُلْتُ مَا أَنَا بِقَارِئٍ – قَالَ – فَأَخَذَنِي فَغَطَّنِي الثَّانِيَةَ حَتَّى بَلَغَ مِنِّي الْجَهْدَ ثُمَّ أَرْسَلَنِي فَقَالَ اقْرَأْ ‏.‏ فَقُلْتُ مَا أَنَا بِقَارِئٍ فَأَخَذَنِي فَغَطَّنِي الثَّالِثَةَ حَتَّى بَلَغَ مِنِّي الْجَهْدَ ثُمَّ أَرْسَلَنِي ‏.‏ فَقَالَ ‏{‏ اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ * خَلَقَ الإِنْسَانَ مِنْ عَلَقٍ * اقْرَأْ وَرَبُّكَ الأَكْرَمُ * الَّذِي عَلَّمَ بِالْقَلَمِ * عَلَّمَ الإِنْسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ‏}‏ ‏”‏ ‏.‏ فَرَجَعَ بِهَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم تَرْجُفُ بَوَادِرُهُ حَتَّى دَخَلَ عَلَى خَدِيجَةَ فَقَالَ ‏”‏ زَمِّلُونِي زَمِّلُونِي ‏”‏ ‏.‏ فَزَمَّلُوهُ حَتَّى ذَهَبَ عَنْهُ الرَّوْعُ ثُمَّ قَالَ لِخَدِيجَةَ ‏”‏ أَىْ خَدِيجَةُ مَا لِي ‏”‏ ‏.‏ وَأَخْبَرَهَا الْخَبَرَ قَالَ ‏”‏ لَقَدْ خَشِيتُ عَلَى نَفْسِي ‏”‏ ‏.‏ قَالَتْ لَهُ خَدِيجَةُ كَلاَّ أَبْشِرْ فَوَاللَّهِ لاَ يُخْزِيكَ اللَّهُ أَبَدًا وَاللَّهِ إِنَّكَ لَتَصِلُ الرَّحِمَ وَتَصْدُقُ الْحَدِيثَ وَتَحْمِلُ الْكَلَّ وَتَكْسِبُ الْمَعْدُومَ وَتَقْرِي الضَّيْفَ وَتُعِينُ عَلَى نَوَائِبِ الْحَقِّ ‏.‏ فَانْطَلَقَتْ بِهِ خَدِيجَةُ حَتَّى أَتَتْ بِهِ وَرَقَةَ بْنَ نَوْفَلِ بْنِ أَسَدِ بْنِ عَبْدِ الْعُزَّى وَهُوَ ابْنُ عَمِّ خَدِيجَةَ أَخِي أَبِيهَا وَكَانَ امْرَأً تَنَصَّرَ فِي الْجَاهِلِيَّةِ وَكَانَ يَكْتُبُ الْكِتَابَ الْعَرَبِيَّ وَيَكْتُبُ مِنَ الإِنْجِيلِ بِالْعَرَبِيَّةِ مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَكْتُبَ وَكَانَ شَيْخًا كَبِيرًا قَدْ عَمِيَ ‏.‏ فَقَالَتْ لَهُ خَدِيجَةُ أَىْ عَمِّ اسْمَعْ مِنِ ابْنِ أَخِيكَ ‏.‏ قَالَ وَرَقَةُ بْنُ نَوْفَلٍ يَا ابْنَ أَخِي مَاذَا تَرَى فَأَخْبَرَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم خَبَرَ مَا رَآهُ فَقَالَ لَهُ وَرَقَةُ هَذَا النَّامُوسُ الَّذِي أُنْزِلَ عَلَى مُوسَى صلى الله عليه وسلم يَا لَيْتَنِي فِيهَا جَذَعًا يَا لَيْتَنِي أَكُونُ حَيًّا حِينَ يُخْرِجُكَ قَوْمُكَ ‏.‏ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ أَوَمُخْرِجِيَّ هُمْ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ وَرَقَةُ نَعَمْ لَمْ يَأْتِ رَجُلٌ قَطُّ بِمَا جِئْتَ بِهِ إِلاَّ عُودِيَ وَإِنْ يُدْرِكْنِي يَوْمُكَ أَنْصُرْكَ نَصْرًا مُؤَزَّرًا ‏”‏ ‏.‏

‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট ওয়াহীর সূচনা হয়েছিল সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে। আর তিনি যে স্বপ্নই দেখতেন তা সকালের সূর্যের মতই সুস্পষ্টরূপে সত্যে পরিণত হত। অতঃপর তাঁর কাছে একাকী থাকা প্রিয় হয়ে পড়ে এবং তারপর তিনি হেরা গুহায় নির্জনে কাটাতে থাকেন। আপন পরিবারের কাছে ফিরে আসার পূর্ব পর্যন্ত সেখানে তিনি একাধারে বেশ কয়েক রাত ‘ইবাদাতে মগ্ন থাকতেন এবং এর জন্য কিছু খাদ্য সামগ্রী সঙ্গে নিয়ে যেতেন। তারপর তিনি খাদীজার কাছে ফিরে যেতেন এবং আরো কয়েক দিনের জন্য অনুরূপভাবে খাদ্য সামগ্রী নিয়ে আসতেন। তিনি হেরা গুহায় যখন ধ্যানে রত ছিলেন, তখন তাঁর নিকট ফেরেশ্‌তা আসলেন, এরপর বললেন, পড়ুন! তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি তো পড়তে জানি না। রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তখন ফেরেশ্‌তা আমাকে জড়িয়ে ধরে এমন চাপ দিলেন যে, আমার খুবই কষ্ট হলো। তারপর আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, পড়ুন! আমি বললাম, আমি তো পড়তে সক্ষম নই। তারপর আমাকে জড়িয়ে ধরলেন এবং দ্বিতীয়বারও এমন জোরে চাপ দিলেন যে, আমার খুবই কষ্ট হলো। পরে ছেড়ে দিয়ে বললেন, পড়ুন! আমি বললাম, আমি তো পড়তে সক্ষম নই। এরপর আবার আমাকে জড়িয়ে ধরলেন এবং তৃতীয়বারও এমন জোরে চাপ দিলেন যে আমার খুবই কষ্ট হলো। এরপর আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, “পাঠ করুন! আপনার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন; সৃষ্টি করেছেন মানুষকে ‘আলাক্‌’ হতে। পাঠ করুন! আর আপনার প্রতিপালক মহিমান্বিত, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন, শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না” – (সূরাহ ‘আলাক্‌ ৯৬ : ১-৫)। এরপর রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ ওয়াহী নিয়ে ফিরে এলেন। তাঁর স্কন্ধের পেশীগুলো কাঁপছিল। খাদীজাহ্‌ (রাঃ)-এর নিকট এসে বললেন, তোমরা আমাকে চাদর দ্বারা ঢেকে দাও, তোমরা আমাকে চাদর দ্বারা ঢেকে দাও। তাঁরা রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে চাদর দিয়ে ঢেকে দিলেন। অবশেষে তাঁর ভীতি দূর হলো। এরপর খাদীজাহ (রাঃ)-কে সকল ঘটনা উল্লেখ করে বললেন, খাদীজাহ্‌ আমার কি হলো? আমি আমার নিজের উপর আশঙ্কা করছি। খাদীজাহ্‌ (রাঃ) বললেনঃ না, কখনো তা হবে না। বরং সুসংবাদ গ্রহণ করুন। আল্লাহর কসম! তিনি কখনো আপনাকে অপমানিত করবেন না। আল্লাহর কসম! আপনি স্বজনদের খোঁজ-খবর রাখেন, সত্য কথা বলেন, দুঃখীদের দুঃখ নিবারণ করেন, দরিদ্রদের বাঁচার ব্যবস্থা করেন, অতিথি সেবা করেন এবং প্রকৃত দুর্দশাগ্রস্তদের সাহায্য করেন। এরপর খাদীজাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ওয়ারাকাহ্‌ ইবনু নাওফাল ইবনু আসাদ ইবনু ‘আবদুল ‘উয্‌যা এর নিকট নিয়ে আসেন। ওয়ারাকাহ্‌ ছিলেন খাদীজাহ্‌ (রাঃ)-এর চাচাত ভাই; ইনি জাহিলিয়্যাতের যুগে খৃষ্টধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি আরবী লিখতে জানতেন এবং ইন্‌জীল কিতাবের ‘আরবী অনুবাদ করতেন। তিনি ছিলেন বৃদ্ধ এবং তিনি দৃষ্টিশক্তিহীন হয়ে পড়েছিলেন। খাদীজাহ্‌ (রাঃ) তাঁকে বললেনঃ চাচা, (সম্মানার্থে চাচা বলে সম্বোধন করেছিলেন। অন্য রিওয়ায়াতে “হে চাচাত ভাই” এ কথা উল্লেখ রয়েছে) আপনার ভাতিজা কি বলছে শুনুন তো! ওয়ারাকাহ্‌ ইবনু নাওফাল বললেন, হে ভাতিজা! কি দেখেছিলেন? রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা দেখেছিলেন সব কিছু বিবৃত করলেন। ওয়ারাকাহ্‌ বললেন, এ তো সে সংবাদবাহক যাকে আল্লাহ মূসা (‘আঃ)-এর নিকট প্রেরণ করেছিলেন। হায়! আমি যদি সে সময় যুবক থাকতাম, হায়! আমি যদি সে সময় জীবিত থাকতাম, যখন আপনার জাতিগোষ্ঠী আপনাকে দেশ থেকে বের করে দিবে। রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সত্যি কি আমাকে তারা বের করে দিবে? ওয়ারাকাহ্‌ বললেন, হ্যাঁ। যে ব্যক্তিই আপনার মত কিছু (নুবূওয়াত ও রিসালাত) নিয়ে পৃথিবীতে আগমন করেছে, তাঁর সঙ্গেই এরূপ দুশমনী করা হয়েছে। আর আমি যদি আপনার সে যুগ পাই তবে অবশ্যই আপনাকে পূর্ণ সহযোগিতা করব। [৬৭] (ই.ফা. ৩০০; ই.সে. ৩১১)

[৬৭] নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট ওয়াহীর সূচনা হয়েছিল সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে। তাঁর স্বপ্ন সূর্যের মতই স্পষ্টরূপে সত্যে পরিণত হত।

ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, ‘আলিমদের মত যে, নুবূওয়াতের পূর্বে এ অবস্থা ছয় মাস ছিল। তারপর জিবরীল (আঃ) সরাসরি ওয়াহী নিয়ে আসেন। সম্ভবতঃ এ প্রক্রিয়াই ওয়াহীর সূচনা এভাবে করা হয়েছে এজন্য যে, সরাসরি প্রথম হতেই জিবরীল (আঃ) ওয়াহী নিয়ে আসলে, তিনি হতবুদ্ধি বা কর্তব্য বিমূঢ় হয়ে যেতেন। মানুষ হিসেবে হঠাৎ করে নুবূওয়াতের বোঝা উঠাতে সক্ষম হতেন না। ওয়াহীর বিস্তারিত বর্ণনা ‘আয়িশাহ্‌ সিদ্দীকাহ্‌ (রাঃ)-এর মুরসাল হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।

তারপর আল্লাহ তা’আলা সূরাহ আল মুদ্দাস্‌সিরের প্রথম কয়েকটি আয়াত অবতীর্ণ করেন। এরপর হতেই ঘন ঘন ওয়াহী নাযিল হতে থাকে।

ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেনঃ কেউ কেউ বলেছেন যে, সূরাহ আল মুদ্দাস্‌সির সর্বপ্রথম নাযিল হয়েছিল। আবার কেউ কেউ বলেন যে, সূরাহ ফা-তিহাহ্‌ সর্বপ্রথম নাযিল হয়েছিল। এসব কথার কোন ভিত্তি নেই।

ওয়াহী স্থগিত থাকার কারণ কি? ইবনু হাজার (রহঃ) ফাতহুল বারীর ১ম খণ্ডের ২৭ পৃষ্ঠায় লিখেছেন যে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভয় পেয়েছিলেন। সে ভয় যেন কেটে যায় এবং পুনরায় ওয়াহী প্রাপ্তির আগ্রহ এবং প্রতিক্ষা যেন তাঁর মনে জাগ্রত হয়। (আর রাহীকুল মাখতুম, অনুবাদ-খাদীজা আখতার রেজায়ী ৯৩-৯৪ পৃষ্ঠা)

২৯৪
وَحَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ رَافِعٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ، قَالَ قَالَ الزُّهْرِيُّ وَأَخْبَرَنِي عُرْوَةُ، عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّهَا قَالَتْ أَوَّلُ مَا بُدِئَ بِهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مِنَ الْوَحْىِ ‏.‏ وَسَاقَ الْحَدِيثَ بِمِثْلِ حَدِيثِ يُونُسَ ‏.‏ غَيْرَ أَنَّهُ قَالَ فَوَاللَّهِ لاَ يُحْزِنُكَ اللَّهُ أَبَدًا ‏.‏ وَقَالَ قَالَتْ خَدِيجَةُ أَىِ ابْنَ عَمِّ اسْمَعْ مِنِ ابْنِ أَخِيكَ ‏.‏

‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ‘প্রথম অবস্থায় রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট যে ওয়াহীর সূচনা হয় ….. ’। অতঃপর হাদীসের অবশিষ্টাংশ ইউনুসের বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে এখানে কিছুটা শব্দগত পার্থক্য রয়েছে। যেমন-খাদীজাহ্‌ (রাঃ) বলেন, আল্লাহর শপথ! আল্লাহ আপনাকে কখনো দুশ্চিন্তায় নিক্ষেপ করবেন না। খাদীজহ্‌ (রাঃ) ওয়ারাকাকে সম্বোধন করে বললেন, হে আমার চাচাতো ভাই! আপনার ভাতিজা কি বলে তা শুনেন। (ই.ফা. ৩০১; ই.সে. ৩১২)

২৯৫
وَحَدَّثَنِي عَبْدُ الْمَلِكِ بْنُ شُعَيْبِ بْنِ اللَّيْثِ، قَالَ حَدَّثَنِي أَبِي، عَنْ جَدِّي، قَالَ حَدَّثَنِي عُقَيْلُ بْنُ خَالِدٍ، قَالَ ابْنُ شِهَابٍ سَمِعْتُ عُرْوَةَ بْنَ الزُّبَيْرِ، يَقُولُ قَالَتْ عَائِشَةُ زَوْجُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَرَجَعَ إِلَى خَدِيجَةَ يَرْجُفُ فُؤَادُهُ وَاقْتَصَّ الْحَدِيثَ بِمِثْلِ حَدِيثِ يُونُسَ وَمَعْمَرٍ وَلَمْ يَذْكُرْ أَوَّلَ حَدِيثِهِمَا مِنْ قَوْلِهِ أَوَّلُ مَا بُدِئَ بِهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مِنَ الْوَحْىِ الرُّؤْيَا الصَّادِقَةُ ‏.‏ وَتَابَعَ يُونُسَ عَلَى قَوْلِهِ فَوَاللَّهِ لاَ يُخْزِيكَ اللَّهُ أَبَدًا ‏.‏ وَذَكَرَ قَوْلَ خَدِيجَةَ أَىِ ابْنَ عَمِّ اسْمَعْ مِنِ ابْنِ أَخِيكَ ‏.‏

নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হেরা গুহা থেকে এমন অবস্থায় খাদিজাহ্‌ (রাঃ)-এর নিকট (বাড়ি) ফিরলেন যে, ভয়ে তাঁর অন্তর কাঁপছিল। এরপর হাদীসের অবশিষ্ট ঘটনা ইউনুস ও মা’মারের হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। কিন্তু তাদের উভয়ের বর্ণিত হাদীসের প্রথম অংশে ‘আয়িশা (রাঃ)-এর বক্তব্য “রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে ওয়াহী আসার প্রথম অবস্থা ছিল সত্য-স্বপ্ন”-এ বাক্যটির উল্লেখ নেই। তবে মা’মার “আল্লাহর শপথ! আল্লাহ কখনো আপনাকে অপমান করবেন না”-এ বাক্য বর্ণনায় ইউনুসের অনুসরণ করেছেন এবং এ কথাও বর্ণনা করেছেন যে, “খাদীজাহ্‌ ওয়ারাকাকে বললেন, হে আমার চাচাত ভাই! আপনার ভাতিজা কি বলেন, তা শুনেন।” (ই.ফা. ৩০২; ই.সে. ৩১৩)

২৯৬
وَحَدَّثَنِي أَبُو الطَّاهِرِ، أَخْبَرَنَا ابْنُ وَهْبٍ، قَالَ حَدَّثَنِي يُونُسُ، قَالَ قَالَ ابْنُ شِهَابٍ أَخْبَرَنِي أَبُو سَلَمَةَ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، أَنَّ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ الأَنْصَارِيَّ، – وَكَانَ مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ يُحَدِّثُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ يُحَدِّثُ عَنْ فَتْرَةِ الْوَحْىِ – قَالَ فِي حَدِيثِهِ ‏”‏ فَبَيْنَا أَنَا أَمْشِي سَمِعْتُ صَوْتًا مِنَ السَّمَاءِ فَرَفَعْتُ رَأْسِي فَإِذَا الْمَلَكُ الَّذِي جَاءَنِي بِحِرَاءٍ جَالِسًا عَلَى كُرْسِيٍّ بَيْنَ السَّمَاءِ وَالأَرْضِ ‏”‏ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ فَجُئِثْتُ مِنْهُ فَرَقًا فَرَجَعْتُ فَقُلْتُ زَمِّلُونِي زَمِّلُونِي ‏.‏ فَدَثَّرُونِي فَأَنْزَلَ اللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى ‏{‏ يَا أَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ * قُمْ فَأَنْذِرْ * وَرَبَّكَ فَكَبِّرْ * وَثِيَابَكَ فَطَهِّرْ * وَالرُّجْزَ فَاهْجُرْ‏}‏ وَهِيَ الأَوْثَانُ قَالَ ثُمَّ تَتَابَعَ الْوَحْىُ ‏.‏

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ আল আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহাবাগণ ওয়াহীর বিরতি প্রসঙ্গে পরস্পর কথাবার্তা বলছিলেন। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওয়াহীর বিরতি বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন যে, আমি পথ চলছিলাম সে মুহূর্তে আকাশ হতে একটি শব্দ শুনে মাথা তুলে তাকালাম, দেখি সে হিরা গুহায় যে ফেরেশতা আমার কাছে এসেছিলেন সে ফেরেশতা জমিন ও আসমানের মধ্যস্থলে কুরসীর উপর বসে আছেন। রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, এ দেখে আমি ভয় পেয়ে গেলাম। আর দ্রুত বাড়ি ফিরে এসে বলতে লাগলাম, আমাকে কম্বল দ্বারা ঢেকে দাও, আমাকে কম্বল দ্বারা ঢেকে দাও। তারা আমায় কম্বল দ্বারা ঢেকে দিল। এরপর এ আয়াত অবতীর্ণ হলঃ “অর্থাৎ “হে কম্বল জড়ানো ব্যক্তি! উঠুন, সতর্কবাণী প্রচার করুন। আপনার প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন! আপনার পরিচ্ছেদ পবিত্র রাখুন এবং অপবিত্রতা হতে দূরে থাকুন’-(সূরাহ আল মুদ্দাস্‌সির ৭৪ : ১-৫) এখানে ‘অপবিত্রতা’ বলে প্রতিমাকে বুঝানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন, তারপর ধারাবাহিকভাবে ওয়াহী অবতরণ আরম্ভ হয়। (ই.ফা. ৩০৩; ই.সে. ৩১৪)

২৯৭
وَحَدَّثَنِي عَبْدُ الْمَلِكِ بْنُ شُعَيْبِ بْنِ اللَّيْثِ، قَالَ حَدَّثَنِي أَبِي، عَنْ جَدِّي، قَالَ حَدَّثَنِي عُقَيْلُ بْنُ خَالِدٍ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، قَالَ سَمِعْتُ أَبَا سَلَمَةَ بْنَ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، يَقُولُ أَخْبَرَنِي جَابِرُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏”‏ ثُمَّ فَتَرَ الْوَحْىُ عَنِّي فَتْرَةً فَبَيْنَا أَنَا أَمْشِي ‏”‏ ثُمَّ ذَكَرَ مِثْلَ حَدِيثِ يُونُسَ غَيْرَ أَنَّهُ قَالَ ‏”‏ فَجُثِثْتُ مِنْهُ فَرَقًا حَتَّى هَوَيْتُ إِلَى الأَرْضِ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ وَقَالَ أَبُو سَلَمَةَ وَالرُّجْزُ الأَوْثَانُ قَالَ ثُمَّ حَمِيَ الْوَحْىُ بَعْدُ وَتَتَابَعَ



وَحَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ رَافِعٍ حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ عَنِ الزُّهْرِيِّ بِهَذَا الإِسْنَادِ نَحْوَ حَدِيثِ يُونُسَ وَقَالَ فَأَنْزَلَ اللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى ‏{‏ يَا أَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ‏}‏ إِلَى قَوْلِهِ ‏{‏ وَالرُّجْزَ فَاهْجُرْ‏}‏ قَبْلَ أَنْ تُفْرَضَ الصَّلاَةُ – وَهِيَ الأَوْثَانُ – وَقَالَ ‏ “‏ فَجُثِثْتُ مِنْهُ ‏”‏ ‏.‏ كَمَا قَالَ عُقَيْلٌ

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন, অতঃপর আমার কাছে ওয়াহী আসা বন্ধ থাকল, একদিন আমি পথ চলছিলাম।’ হাদীসের বাকী অংশ ইউনুসের হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে এতে আরো বলেছেনঃ “তাঁকে (জিবরীল) দেখে আমি ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে জমিনে পড়ে গেলাম।” ইবনু শিহাব বলেন, আবূ সালামাহ্‌ বলেছেন, ‘আর্‌ রুজ্‌য’ অর্থ হচ্ছে ‘মূর্তি, প্রতিমা’। তিনি আরো বলেন, তারপর ধারাবাহিকভাবে ওয়াহী আসতে লাগলো।

মুহাম্মাদ ইবনু রাফি’ (রহঃ) ….. যুহরী (রাঃ) থেকে ইউনুস (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে বর্ণনাকারী এ হাদীসে উল্লেখ করেন যে, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, এরপর আল্লাহ তা’আলা এ আয়াতটি অবতীর্ণ করেনঃ “হে বস্ত্রাচ্ছাদিত! ….. এবং অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকুন”-(সূরাহ আল মুদ্দাস্‌সির ৭৪ : ১-৫) এ আয়াতটি সলাত ফারয হবার পূর্বেই নাযিল হয়। অর্থ ‘প্রতিমা’ এবং মা’মার এ হাদীসে ‘উকায়লের ন্যায় বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৩০৪, ৩০৫; ই.সে. ৩১৫, ৩১৬)

২৯৮
وَحَدَّثَنَا زُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، حَدَّثَنَا الْوَلِيدُ بْنُ مُسْلِمٍ، حَدَّثَنَا الأَوْزَاعِيُّ، قَالَ سَمِعْتُ يَحْيَى، يَقُولُ سَأَلْتُ أَبَا سَلَمَةَ أَىُّ الْقُرْآنِ أُنْزِلَ قَبْلُ قَالَ يَا أَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ ‏.‏ فَقُلْتُ أَوِ اقْرَأْ ‏.‏ فَقَالَ سَأَلْتُ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ أَىُّ الْقُرْآنِ أُنْزِلَ قَبْلُ قَالَ يَا أَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ ‏.‏ فَقُلْتُ أَوِ اقْرَأْ قَالَ جَابِرٌ أُحَدِّثُكُمْ مَا حَدَّثَنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏”‏ جَاوَرْتُ بِحِرَاءٍ شَهْرًا فَلَمَّا قَضَيْتُ جِوَارِي نَزَلْتُ فَاسْتَبْطَنْتُ بَطْنَ الْوَادِي فَنُودِيتُ فَنَظَرْتُ أَمَامِي وَخَلْفِي وَعَنْ يَمِينِي وَعَنْ شِمَالِي فَلَمْ أَرَ أَحَدًا ثُمَّ نُودِيتُ فَنَظَرْتُ فَلَمْ أَرَ أَحَدًا ثُمَّ نُودِيتُ فَرَفَعْتُ رَأْسِي فَإِذَا هُوَ عَلَى الْعَرْشِ فِي الْهَوَاءِ – يَعْنِي جِبْرِيلَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ – فَأَخَذَتْنِي رَجْفَةٌ شَدِيدَةٌ فَأَتَيْتُ خَدِيجَةَ فَقُلْتُ دَثِّرُونِي ‏.‏ فَدَثَّرُونِي فَصَبُّوا عَلَىَّ مَاءً فَأَنْزَلَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ ‏{‏ يَا أَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ * قُمْ فَأَنْذِرْ * وَرَبَّكَ فَكَبِّرْ * وَثِيَابَكَ فَطَهِّرْ‏}‏ ‏”‏ ‏.‏

ইয়াহ্‌ইয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আবূ সালামাহ্‌কে জিজ্ঞেস করলাম, কুরআনের কোন্‌ আয়াতটি সর্বপ্রথম অবতীর্ণ হয়েছে? তিনি বললেন, يَا أَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ (সূরাহ আল মুদ্দাস্‌সির ৭৪ : ১-৫)। আমি বললাম, اقْرَأْ (সূরাহ আল ‘আলাক ৯৬ : ১-৫)। তিনি বললেন, আমিও জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কুরআনের কোন্‌ আয়াতটি প্রথম অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি বলেছেন, আমি বললাম, জাবির (রাঃ) বললেন, আমি তোমাদেরই তা-ই বর্ণনা করছি। রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের যা বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, আমি একমাস হিরা গুহায় অবস্থান করি। অবস্থান শেষে আমি নিচে নেমে এলাম। উপত্যকায় মাঝখানে যখন পৌঁছলাম তখন আমাকে ডাকা হলো। আমি সামনে-পেছনে, ডানে-বায়ে তাকালাম, কাউকে দেখলাম না। তারপর আমাকে ডাকা হলো, তখনো কাউকে দেখতে পেলাম না। পুনঃ আমাকে ডাকা হলো। আমি তাকালাম, দেখি সে ফেরেশতা অর্থাৎ জিবরীল (‘আঃ) শূন্যে একটি কুরসীর উপর উপবিষ্ট। আবার প্রবল কম্পন শুরু হলো। অনন্তর খাদীজার নিকট আসলাম। বললাম, তোমরা আমার গায়ে কম্বল জড়িয়ে দাও, তোমরা আমার গায়ে কম্বল জড়িয়ে দাও। তারা আমাকে চাদর দিয়ে ঢেকে দিল। আমার উপর পানি ঢাললো। অনন্তর আল্লাহ তা’আলা এ আয়াত নাযিল করেনঃ “হে কম্বল জড়ানো ব্যক্তি! উঠুন সতর্কবাণী প্রচার করুন, আপনার প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন, আপনার পরিচ্ছেদ পবিত্র রাখুন”-(সূরাহ আল মুদ্দাস্‌সির ৭৪ : ১-৪)। (ই.ফা. ৩০৬; ই.সে. ৩১৭)

FOR MORE CLICK HERE

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]