সহীহ মুসলিম শরীফ হাদিস আরবি বাংলা ঈমান অধ্যায় তৃতীয় ভাগ হাদিস নং ৩০০ – ৩২৩

৭৪.অধ্যায়ঃ
রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মি’রাজ এবং সলাত ফারয হওয়া


৩০০
حَدَّثَنَا شَيْبَانُ بْنُ فَرُّوخَ، حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ سَلَمَةَ، حَدَّثَنَا ثَابِتٌ الْبُنَانِيُّ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏”‏ أُتِيتُ بِالْبُرَاقِ – وَهُوَ دَابَّةٌ أَبْيَضُ طَوِيلٌ فَوْقَ الْحِمَارِ وَدُونَ الْبَغْلِ يَضَعُ حَافِرَهُ عِنْدَ مُنْتَهَى طَرْفِهِ – قَالَ فَرَكِبْتُهُ حَتَّى أَتَيْتُ بَيْتَ الْمَقْدِسِ – قَالَ – فَرَبَطْتُهُ بِالْحَلْقَةِ الَّتِي يَرْبِطُ بِهِ الأَنْبِيَاءُ – قَالَ – ثُمَّ دَخَلْتُ الْمَسْجِدَ فَصَلَّيْتُ فِيهِ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ خَرَجْتُ فَجَاءَنِي جِبْرِيلُ – عَلَيْهِ السَّلاَمُ – بِإِنَاءٍ مِنْ خَمْرٍ وَإِنَاءٍ مِنْ لَبَنٍ فَاخْتَرْتُ اللَّبَنَ فَقَالَ جِبْرِيلُ صلى الله عليه وسلم اخْتَرْتَ الْفِطْرَةَ ‏.‏ ثُمَّ عَرَجَ بِنَا إِلَى السَّمَاءِ فَاسْتَفْتَحَ جِبْرِيلُ فَقِيلَ مَنْ أَنْتَ قَالَ جِبْرِيلُ ‏.‏ قِيلَ وَمَنْ مَعَكَ قَالَ مُحَمَّدٌ ‏.‏ قِيلَ وَقَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ قَالَ قَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ ‏.‏ فَفُتِحَ لَنَا فَإِذَا أَنَا بِآدَمَ فَرَحَّبَ بِي وَدَعَا لِي بِخَيْرٍ ‏.‏ ثُمَّ عَرَجَ بِنَا إِلَى السَّمَاءِ الثَّانِيَةِ فَاسْتَفْتَحَ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ ‏.‏ فَقِيلَ مَنْ أَنْتَ قَالَ جِبْرِيلُ ‏.‏ قِيلَ وَمَنْ مَعَكَ قَالَ مُحَمَّدٌ ‏.‏ قِيلَ وَقَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ قَالَ قَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ ‏.‏ فَفُتِحَ لَنَا فَإِذَا أَنَا بِابْنَىِ الْخَالَةِ عِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ وَيَحْيَى بْنِ زَكَرِيَّاءَ صَلَوَاتُ اللَّهِ عَلَيْهِمَا فَرَحَّبَا وَدَعَوَا لِي بِخَيْرٍ ‏.‏ ثُمَّ عَرَجَ بِي إِلَى السَّمَاءِ الثَّالِثَةِ فَاسْتَفْتَحَ جِبْرِيلُ ‏.‏ فَقِيلَ مَنْ أَنْتَ قَالَ جِبْرِيلُ ‏.‏ قِيلَ وَمَنْ مَعَكَ قَالَ مُحَمَّدٌ صلى الله عليه وسلم ‏.‏ قِيلَ وَقَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ قَالَ قَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ ‏.‏ فَفُتِحَ لَنَا فَإِذَا أَنَا بِيُوسُفَ صلى الله عليه وسلم إِذَا هُوَ قَدْ أُعْطِيَ شَطْرَ الْحُسْنِ فَرَحَّبَ وَدَعَا لِي بِخَيْرٍ ‏.‏ ثُمَّ عَرَجَ بِنَا إِلَى السَّمَاءِ الرَّابِعَةِ فَاسْتَفْتَحَ جِبْرِيلُ – عَلَيْهِ السَّلاَمُ – قِيلَ مَنْ هَذَا قَالَ جِبْرِيلُ ‏.‏ قِيلَ وَمَنْ مَعَكَ قَالَ مُحَمَّدٌ ‏.‏ قَالَ وَقَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ قَالَ قَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ ‏.‏ فَفُتِحَ لَنَا فَإِذَا أَنَا بِإِدْرِيسَ فَرَحَّبَ وَدَعَا لِي بِخَيْرٍ قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ ‏{‏ وَرَفَعْنَاهُ مَكَانًا عَلِيًّا‏}‏ ثُمَّ عَرَجَ بِنَا إِلَى السَّمَاءِ الْخَامِسَةِ فَاسْتَفْتَحَ جِبْرِيلُ ‏.‏ قِيلَ مَنْ هَذَا قَالَ جِبْرِيلُ ‏.‏ قِيلَ وَمَنْ مَعَكَ قَالَ مُحَمَّدٌ ‏.‏ قِيلَ وَقَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ قَالَ قَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ ‏.‏ فَفُتِحَ لَنَا فَإِذَا أَنَا بِهَارُونَ صلى الله عليه وسلم فَرَحَّبَ وَدَعَا لِي بِخَيْرٍ ‏.‏ ثُمَّ عَرَجَ بِنَا إِلَى السَّمَاءِ السَّادِسَةِ فَاسْتَفْتَحَ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ ‏.‏ قِيلَ مَنْ هَذَا قَالَ جِبْرِيلُ ‏.‏ قِيلَ وَمَنْ مَعَكَ قَالَ مُحَمَّدٌ ‏.‏ قِيلَ وَقَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ قَالَ قَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ ‏.‏ فَفُتِحَ لَنَا فَإِذَا أَنَا بِمُوسَى صلى الله عليه وسلم فَرَحَّبَ وَدَعَا لِي بِخَيْرٍ ‏.‏ ثُمَّ عَرَجَ بِنَا إِلَى السَّمَاءِ السَّابِعَةِ فَاسْتَفْتَحَ جِبْرِيلُ فَقِيلَ مَنْ هَذَا قَالَ جِبْرِيلُ ‏.‏ قِيلَ وَمَنْ مَعَكَ قَالَ مُحَمَّدٌ صلى الله عليه وسلم ‏.‏ قِيلَ وَقَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ قَالَ قَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ ‏.‏ فَفُتِحَ لَنَا فَإِذَا أَنَا بِإِبْرَاهِيمَ صلى الله عليه وسلم مُسْنِدًا ظَهْرَهُ إِلَى الْبَيْتِ الْمَعْمُورِ وَإِذَا هُوَ يَدْخُلُهُ كُلَّ يَوْمٍ سَبْعُونَ أَلْفَ مَلَكٍ لاَ يَعُودُونَ إِلَيْهِ ثُمَّ ذَهَبَ بِي إِلَى السِّدْرَةِ الْمُنْتَهَى وَإِذَا وَرَقُهَا كَآذَانِ الْفِيَلَةِ وَإِذَا ثَمَرُهَا كَالْقِلاَلِ – قَالَ – فَلَمَّا غَشِيَهَا مِنْ أَمْرِ اللَّهِ مَا غَشِيَ تَغَيَّرَتْ فَمَا أَحَدٌ مِنْ خَلْقِ اللَّهِ يَسْتَطِيعُ أَنْ يَنْعَتَهَا مِنْ حُسْنِهَا ‏.‏ فَأَوْحَى اللَّهُ إِلَىَّ مَا أَوْحَى فَفَرَضَ عَلَىَّ خَمْسِينَ صَلاَةً فِي كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ فَنَزَلْتُ إِلَى مُوسَى صلى الله عليه وسلم فَقَالَ مَا فَرَضَ رَبُّكَ عَلَى أُمَّتِكَ قُلْتُ خَمْسِينَ صَلاَةً ‏.‏ قَالَ ارْجِعْ إِلَى رَبِّكَ فَاسْأَلْهُ التَّخْفِيفَ فَإِنَّ أُمَّتَكَ لاَ يُطِيقُونَ ذَلِكَ فَإِنِّي قَدْ بَلَوْتُ بَنِي إِسْرَائِيلَ وَخَبَرْتُهُمْ ‏.‏ قَالَ فَرَجَعْتُ إِلَى رَبِّي فَقُلْتُ يَا رَبِّ خَفِّفْ عَلَى أُمَّتِي ‏.‏ فَحَطَّ عَنِّي خَمْسًا فَرَجَعْتُ إِلَى مُوسَى فَقُلْتُ حَطَّ عَنِّي خَمْسًا ‏.‏ قَالَ إِنَّ أُمَّتَكَ لاَ يُطِيقُونَ ذَلِكَ فَارْجِعْ إِلَى رَبِّكَ فَاسْأَلْهُ التَّخْفِيفَ ‏.‏ – قَالَ – فَلَمْ أَزَلْ أَرْجِعُ بَيْنَ رَبِّي تَبَارَكَ وَتَعَالَى وَبَيْنَ مُوسَى – عَلَيْهِ السَّلاَمُ – حَتَّى قَالَ يَا مُحَمَّدُ إِنَّهُنَّ خَمْسُ صَلَوَاتٍ كُلَّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ لِكُلِّ صَلاَةٍ عَشْرٌ فَذَلِكَ خَمْسُونَ صَلاَةً ‏.‏ وَمَنْ هَمَّ بِحَسَنَةٍ فَلَمْ يَعْمَلْهَا كُتِبَتْ لَهُ حَسَنَةً فَإِنْ عَمِلَهَا كُتِبَتْ لَهُ عَشْرًا وَمَنْ هَمَّ بِسَيِّئَةٍ فَلَمْ يَعْمَلْهَا لَمْ تُكْتَبْ شَيْئًا فَإِنْ عَمِلَهَا كُتِبَتْ سَيِّئَةً وَاحِدَةً – قَالَ – فَنَزَلْتُ حَتَّى انْتَهَيْتُ إِلَى مُوسَى صلى الله عليه وسلم فَأَخْبَرْتُهُ فَقَالَ ارْجِعْ إِلَى رَبِّكَ فَاسْأَلْهُ التَّخْفِيفَ ‏.‏ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقُلْتُ قَدْ رَجَعْتُ إِلَى رَبِّي حَتَّى اسْتَحْيَيْتُ مِنْهُ ‏”‏ ‏.‏

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমার জন্য বুরাক পাঠানো হলো। [৬৮] বুরাক গাধা থেকে বড় এবং খচ্চর থেকে ছোট একটি সাদা রঙের জন্তু। যতদূর দৃষ্টি যায় এক পদক্ষেপে সে ততদূর চলে। রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমি এতে আরোহণ করলাম এবং বাইতুল মাকদাস পর্যন্ত এসে পৌছলাম। তারপর অন্যান্য আম্বিয়ায়ে কিরাম তাদের বাহনগুলো যে খুঁটির সাথে বাঁধতেন, আমি সে খুঁটির সাথে আমার বাহনটিও বাঁধলাম। তারপর মাসজিদে প্রবেশ করলাম ও দূ’ রাক’আত সলাত আদায় করে বের হলাম। জিবরীল (‘আঃ) একটি শরাবের পাত্র এবং একটি দুধের পাত্র নিয়ে আমার কাছে এলেন। আমি দুধ গ্রহণ করলাম। জিবরীল (‘আঃ) আমাকে বললেন, আপনি ফিত্‌রাহ্‌কেই গ্রহণ করলেন। তারপর জিবরীল (‘আঃ) আমাকে নিয়ে ঊর্ধ্বলোকে গেলেন এবং আসমান পর্যন্ত পৌছে দ্বার খুলতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি কে? তিনি বললেন, আমি জিবরীল। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনার সাথে কে? বললেন, মুহাম্মাদ। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠানো হয়েছিল? বললেন, হ্যাঁ! পাঠানো হয়েছিল। অতঃপর আমাদের জন্য দরজা খুলে দেয়া হলো। সেখানে আমি আদাম (‘আঃ)-এর দেখা পাই। তিনি আমাকে মুবারাকবাদ জানালেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দু’আ করলেন। তারপর জিবরীল (‘আঃ) আমাকে ঊর্ধ্বলোক নিয়ে চললেন। জিজ্ঞেস কর হলো, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ। জিজ্ঞেস করা হলো, তাঁকে কি আনতে পাঠানো হয়েছিল? বললেন, হ্যাঁ! পাঠানো হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেয়া হলো। সেখানে আমি ‘ঈসা ইবনু মারইয়াম ও ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু যাকারিয়্যা (‘আঃ) দুই খালাত ভাইয়ের দেখা পেলাম। তারা আমাকে মারহাবা বললেন, আমার জন্য কল্যাণের দু’আ করলেন। তারপর জিবরীল (‘আঃ) আমাকে নিয়ে ঊর্ধ্বলোকে চললেন এবং তৃতীয় আসমানের দ্বারপ্রান্তে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হলো, কে? তিনি বললেন, জিবরীল। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠানো হয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ! পাঠানো হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেয়া হলো। সেখানে ইউসুফ (‘আঃ)-এর দেখা পেলাম। সমুদয় সৌন্দর্যের অর্ধেক দেয়া হয়েছিল তাঁকে। তিনি আমাকে মারহাবা বললেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দু’আ করলেন। তারপর জিবরীল (‘আঃ) আমাকে নিয়ে চতুর্থ আসমানের দ্বারপ্রান্তে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হলো, কে? তিনি বললেন, জিবরীল। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠানো হয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ! পাঠানো হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেয়া হলো। সেখানে ইদরীস (‘আঃ)-এর দেখা পেলাম। তিনি আমাকে মারহাবা বললেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দু’আ করলেন। আল্লাহ তা’আলা তাঁর সম্পর্কে ইরশাদ করেছেনঃ “এবং আমি তাকে উন্নীত করেছি উচ্চ মর্যাদায়”-(সূরাহ আল হাদীদ ৫৭ : ১৯)। তারপর জিবরীল (‘আঃ) আমাকে নিয়ে পঞ্চম আসমানের দ্বারপ্রান্তে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি কে? [৬৯] তিনি বললেন, জিবরীল। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠানো হয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ! পাঠানো হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেয়া হলো। সেখানে হারূন (‘আঃ)-এর দেখা পেলাম। তিনি আমাকে মারহাবা বললেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দু’আ করলেন। তারপর জিবরীল (‘আঃ) আমাকে নিয়ে ষষ্ঠ আসমানের দ্বারপ্রান্তে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হলো, কে? তিনি বললেন, জিবরীল। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠানো হয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ! পাঠানো হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেয়া হলো। সেখানে মূসা (‘আঃ)-এর দেখা পেলাম। তিনি আমাকে মারহাবা বললেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দু’আ করলেন। তারপর জিবরীল (‘আঃ) সপ্তম আসমানের দ্বারপ্রান্তে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হলো, কে? তিনি বললেন, জিবরীল। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠানো হয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ! পাঠানো হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেয়া হলো। সেখানে ইবরাহীম (‘আঃ)-এর দেখা পেলাম। তিনি বাইতুল মা’মূরে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছেন।[৭০] বাইতুল মা’মূরে প্রত্যেহ সত্তর হাজার ফেরেশ্‌তা তাওয়াফের উদ্দেশ্যে প্রবেশ করেন যাঁরা আর সেখানে পুনরায় ফিরে আসার সুযোগ পান না। তারপর জিবরীল (‘আঃ) আমাকে সিদ্‌রাতুল মুনতাহায় [৭১] নিয়ে গেলেন। সে বৃক্ষের পাতাগুলো হাতির কানের ন্যায় আর ফলগুলো বড় বড় মটকার মত। রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, সে বৃক্ষটিকে যখন আল্লাহর নির্দেশে যা আবৃত করে তখন তা পরিবর্তিত হয়ে যায়। সে সৌন্দর্যের বর্ণনা আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে কারোর পক্ষে সম্ভব নয়। এরপর আল্লাহ তা’আলা আমার উপর যে ওয়াহী করার তা ওয়াহী করলেন। আমার উপর দিনরাত মোট পঞ্চাশ ওয়াক্ত সলাত ফরয করলেন, এরপর আমি মূসা (‘আঃ)-এর কাছে ফিরে আসলাম। তিনি আমাকে বললেন, আপনার প্রতিপালক আপনার উপর কি ফরয করেছেন। আমি বললাম, পঞ্চাস ওয়াক্ত সলাত। তিনি বললেন, আপনার প্রতিপালকের নিকট ফিরে যান এবং একে আরো সহজ করার আবেদন করুন। কেননা আপনার উম্মাত এ নির্দেশ পালনে সক্ষম হবে না। আমি বানী ইসরাঈলকে পরীক্ষা করেছি এবং তাদের বিষয়ে আমি অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তখন আমি আবার প্রতিপালকের কাছে ফিরে গেলাম এবং বললাম, হে আমার রব! আমার উম্মাতের জন্য এ হুকুম সহজ করে দিন। পাঁচ ওয়াক্ত কমিয়ে দেয়া হলো। তারপর মূসা (‘আঃ)-এর নিকট ফিরে এসে বললাম, আমার থেকে পাঁচ ওয়াক্ত কমানো হয়েছে। তিনি বললেন, আপনার উম্মাত এও পারবে না। আপনি ফিরে যান এবং আরো সহজ করার আবেদন করুন। রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এভাবে আমি একবার মূসা (‘আঃ) ও একবার আল্লাহর মাঝে আসা-যাওয়া করতে থাকলাম। শেষে আল্লাহ তা’আলা বললেনঃ হে মুহাম্মাদ! যাও দিন ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নির্ধারণ করা হলো। প্রতি ওয়াক্ত সালাতে দশ ওয়াক্ত সলাতের সমান সাওয়াব রয়েছে। এভাবে (পাঁচ ওয়াক্ত হলো) পঞ্চাশ ওয়াক্ত সলাতের সমান। যে ব্যক্তি কোন নেক কাজের নিয়্যাত করল এবং তা কাজে রূপান্তরিত করতে পারল না, আমি তার জন্য একটি সাওয়াব লিখব; আর তা কাজে রূপায়িত করলে তার জন্য লিখব দশটি সাওয়াব। পক্ষান্তরে যে কোন মন্দ কাজের নিয়্যাত করল অথচ তা কাজে পরিণত করল না তার জন্য কোন গুনাহ লিখা হয় না। আর তা কাজে পরিণত করলে তার উপর লিখা হয় একটি মাত্র গুনাহ। রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তারপর আমি মূসা (‘আঃ)-এর নিকট নেমে এলাম এবং তাঁকে এ বিষয়ে অবহিত করলাম। তিনি তখন বললেন, প্রতিপালকের কাছে ফিরে যান এবং আরো সহজ করার প্রার্থনা করুন। রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এ বিষয়টি নিয়ে বারবার আমি আমার প্রতিপালকের নিকট আসা-যাওয়া করেছি, এখন আবার যেতে লজ্জা হচ্ছে। (ই.ফা ৩০৮; ই.সে. ৩১৯)

[৬৮] কাযী ইয়ায (রহঃ) বলেন যে, মি’রাজ স্বশ্বরীরে হয়েছিল না স্বপ্নযোগে হয়েছিল এটা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, স্বপ্নযোগে হয়েছিল। এটা অত্যন্ত দুর্বল কথা। অধিকাংশ পূর্ব ও পরের ‘উলামা, ফুকাহা ও মুহাদ্দিসীনের অভিমত হলো প্রিয়নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জাগ্রত অবস্থায় স্বশরীরে মি’রাজ সংঘটিত হয়েছিল। হাদীসসমূহে প্রকাশ্যভাবে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। এর বিপরীত হাদীসের অন্য ব্যাখ্যার কোন কারণ বা সুযোগ নেই যে, অন্য তা’বীল করা যাবে। (সংক্ষিপ্ত নাবাবী)

খাদীজাহ্‌ (রাঃ)-এর মৃত্যু মি’রাজের পূর্বেই হয়েছিল। তাঁর মৃত্যু নুবূওয়াতের দশম বর্ষের রমাযান মাসে হয়েছিল বলে জানা যায়। কাজেই মি’রাজের ঘটনা এর পরেই ঘটেছে, আগে নয়। (আর রাহীকুল মাখতুম, অনুবাদ-খাদীজাহ আক্তার রেজায়ী ১৬৬ পৃঃ)

[৬৯] ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, এ হাদীস থেকে কয়েকটি কথা জানা যায়। (১) বাড়ীর মধ্যে হতে কোন আগন্তুককে যদি বলা হয় কে? তার উত্তরে বলবে নাঃ “আমি”; বরং নাম বলতে হবে। (২) আকাশের দরজা আছে (৩) দরজার নিকটে পাহারাদার আছে। (৪) মেহমানের সম্মানে মারহাবা বলে অভিবাদন জানানো যাবে। এটাই নাবীদের আদর্শ।



[৭০] “বাইতুল মা’মুর” নামে বাইতূল্লাহ্‌র সামনে আকাশের উপরে একটি ঘর আছে। বাইতুল মা’মূর এজন্য বলা হয় যে, সব সময় এ ঘরটি সমৃদ্ধ থাকে অর্থাৎ প্রত্যেকদিন নতূনভাবে সত্তর হাজার ফেরেশ্‌তা ‘ইবাদাতের জন্য আসে। বাইতুল মা’মুর সপ্তম আকাশে আছে। ইবরাহীম (‘আঃ) বাইতুল মা’মুর-এর দিকে পিঠ ফিরে বসে ছিলেন। এ হাদীস হতে এটাও প্রমাণ হয় যে, বাইতুল্লাহ্‌র দিকে পিঠ করে বসা যাবে।

[৭১] “সিদ্‌রাতুল মুন্‌তাহা” সপ্তম আকাশের উপরের একটি বরই গাছ এবং ফেরেশতাদের বিচরণের শেষ সীমা। অথবা গমনের শেষ সীমা। অর্থাৎ সিদ্‌রাতুল মুন্‌তাহার উপর কি আছে আল্লাহ ছাড়া কারও জ্ঞান নেই।

ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, সিদ্‌রাতুল মুন্‌তাহা এজন্য বলা হয় যে, ফেরেশতাদের জ্ঞান বিচরণ ওখান পর্যন্ত শেষ হয়েছিল। তার আগে তারা যেতে পারেনি, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ব্যতীত। আর যারা উপরে আছে তারা এখানে এসে থেমে যায়। নিচে আসতে পারে না এবং যারা নিচে আছে তারা এখানে এসে থেমে যায়। উপরে যেতে পারে না। এটা আল্লাহর নির্দেশ।

এ হাদীস হতে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ ‘আর্‌শের উপর সমাসীন আছেন এবং প্রিয় নাবীর সাথে কথা বলেছেন। যার কোন অপব্যাখ্যার সুযোগ নেই। এ কথোপকথনের মধ্যে পঞ্চাশ ওয়াক্ত হতে কমিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত ফারয করে নিয়েছেন।
৩০১
حَدَّثَنِي عَبْدُ اللَّهِ بْنُ هَاشِمٍ الْعَبْدِيُّ، حَدَّثَنَا بَهْزُ بْنُ أَسَدٍ، حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ الْمُغِيرَةِ، حَدَّثَنَا ثَابِتٌ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ أُتِيتُ فَانْطَلَقُوا بِي إِلَى زَمْزَمَ فَشُرِحَ عَنْ صَدْرِي ثُمَّ غُسِلَ بِمَاءِ زَمْزَمَ ثُمَّ أُنْزِلْتُ ‏”‏ ‏.‏

আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমার নিকট ফেরেশতা আসলেন এবং তাঁরা আমাকে নিয়ে যামযামে গেলেন। আমার বুক চিরে ফেলা হলো। তারপর যামযামের পানি দিয়ে আমাকে গোসল করানো হলো। এরপর নির্ধারিত স্থানে আমাকে ফিরিয়ে আনা হলো। (ই.ফা. ৩০৯; ই.সে. ৩২০)

৩০২
حَدَّثَنَا شَيْبَانُ بْنُ فَرُّوخَ، حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ سَلَمَةَ، حَدَّثَنَا ثَابِتٌ الْبُنَانِيُّ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَتَاهُ جِبْرِيلُ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ يَلْعَبُ مَعَ الْغِلْمَانِ فَأَخَذَهُ فَصَرَعَهُ فَشَقَّ عَنْ قَلْبِهِ فَاسْتَخْرَجَ الْقَلْبَ فَاسْتَخْرَجَ مِنْهُ عَلَقَةً فَقَالَ هَذَا حَظُّ الشَّيْطَانِ مِنْكَ ‏.‏ ثُمَّ غَسَلَهُ فِي طَسْتٍ مِنْ ذَهَبٍ بِمَاءِ زَمْزَمَ ثُمَّ لأَمَهُ ثُمَّ أَعَادَهُ فِي مَكَانِهِ وَجَاءَ الْغِلْمَانُ يَسْعَوْنَ إِلَى أُمِّهِ – يَعْنِي ظِئْرَهُ – فَقَالُوا إِنَّ مُحَمَّدًا قَدْ قُتِلَ ‏.‏ فَاسْتَقْبَلُوهُ وَهُوَ مُنْتَقَعُ اللَّوْنِ ‏.‏ قَالَ أَنَسٌ وَقَدْ كُنْتُ أَرَى أَثَرَ ذَلِكَ الْمِخْيَطِ فِي صَدْرِهِ ‏.‏

আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট জিবরীল (‘আঃ) এলেন, তখন তিনি শিশুদের সাথে খেলছিলেন। তিনি তাঁকে ধরে শোয়ালেন এবং বুক চিরে ফেরে তাঁর হৃদপিণ্ডটি বের করে আনলেন। তারপর তিনি তাঁর বক্ষ থেকে একটি রক্তপিণ্ড বের করলেন এবং বললেন, এ অংশটি হলো শয়তানের। এরপর হৃদপিণ্ডটি একটি স্বর্ণের পাত্রে রেখে যমযমের পানি দিয়ে ধৌত করলেন এবং তার অংশগুলো জড়ো করে আবার তা যথাস্থানে পুনঃস্থাপর করলেন। তখন ঐ শিশুরা দৌড়ে তাঁর দুধ মায়ের (হালীমা-এর) কাছে গেল এবং বললো, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে হত্যা করা হয়েছে। কথাটি শুনে সবাই সেদিকে এগিয়ে গিয়ে দেখল তিনি ভয়ে বিবর্ণ হয়ে আছেন। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বুকে সে সেলাই এর চিহ্ন দেখেছি। (ই.ফা. ৩১০; ই.সে. ৩২১)

৩০৩
حَدَّثَنَا هَارُونُ بْنُ سَعِيدٍ الأَيْلِيُّ، حَدَّثَنَا ابْنُ وَهْبٍ، قَالَ أَخْبَرَنِي سُلَيْمَانُ، – وَهُوَ ابْنُ بِلاَلٍ – قَالَ حَدَّثَنِي شَرِيكُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي نَمِرٍ، قَالَ سَمِعْتُ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ، يُحَدِّثُنَا عَنْ لَيْلَةَ، أُسْرِيَ بِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مِنْ مَسْجِدِ الْكَعْبَةِ أَنَّهُ جَاءَهُ ثَلاَثَةُ نَفَرٍ قَبْلَ أَنْ يُوحَى إِلَيْهِ وَهُوَ نَائِمٌ فِي الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَسَاقَ الْحَدِيثَ بِقِصَّتِهِ نَحْوَ حَدِيثِ ثَابِتٍ الْبُنَانِيِّ وَقَدَّمَ فِيهِ شَيْئًا وَأَخَّرَ وَزَادَ وَنَقَصَ ‏.‏

শারীক ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ নামির (রাযিঃ) থেকে বর্ণিতঃ

যে রাতে রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কা’বার মাসজিদ থেকে মি’রাজে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সে রাত সম্পর্কে আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে বর্ণনা করতে শুনেছি যে, ওয়াহী প্রাপ্তির পূর্বে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদিন মাসজিদুল হারামে নিদ্রিত অবস্থায় ছিলেন। এরূপে বর্ণনাকারী পূর্ব বর্ণিত সাবিতুল বুনানীর হাদীসেরই অনুরূপ বর্ণনা করে যান। তবে এ বর্ণনায় শব্দের কিছু আগপাছ ও কমবেশি রয়েছে। (ই.ফা. ৩১১; ই.সে. ৩২২)

৩০৪
وَحَدَّثَنِي حَرْمَلَةُ بْنُ يَحْيَى التُّجِيبِيُّ، أَخْبَرَنَا ابْنُ وَهْبٍ، قَالَ أَخْبَرَنِي يُونُسُ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ كَانَ أَبُو ذَرٍّ يُحَدِّثُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏”‏ فُرِجَ سَقْفُ بَيْتِي وَأَنَا بِمَكَّةَ فَنَزَلَ جِبْرِيلُ صلى الله عليه وسلم فَفَرَجَ صَدْرِي ثُمَّ غَسَلَهُ مِنْ مَاءِ زَمْزَمَ ثُمَّ جَاءَ بِطَسْتٍ مِنْ ذَهَبٍ مُمْتَلِئٍ حِكْمَةً وَإِيمَانًا فَأَفْرَغَهَا فِي صَدْرِي ثُمَّ أَطْبَقَهُ ثُمَّ أَخَذَ بِيَدِي فَعَرَجَ بِي إِلَى السَّمَاءِ فَلَمَّا جِئْنَا السَّمَاءَ الدُّنْيَا قَالَ جِبْرِيلُ – عَلَيْهِ السَّلاَمُ – لِخَازِنِ السَّمَاءِ الدُّنْيَا افْتَحْ ‏.‏ قَالَ مَنْ هَذَا قَالَ هَذَا جِبْرِيلُ ‏.‏ قَالَ هَلْ مَعَكَ أَحَدٌ قَالَ نَعَمْ مَعِيَ مُحَمَّدٌ صلى الله عليه وسلم ‏.‏ قَالَ فَأُرْسِلَ إِلَيْهِ قَالَ نَعَمْ فَفَتَحَ – قَالَ – فَلَمَّا عَلَوْنَا السَّمَاءَ الدُّنْيَا فَإِذَا رَجُلٌ عَنْ يَمِينِهِ أَسْوِدَةٌ وَعَنْ يَسَارِهِ أَسْوِدَةٌ – قَالَ – فَإِذَا نَظَرَ قِبَلَ يَمِينِهِ ضَحِكَ وَإِذَا نَظَرَ قِبَلَ شِمَالِهِ بَكَى – قَالَ – فَقَالَ مَرْحَبًا بِالنَّبِيِّ الصَّالِحِ وَالاِبْنِ الصَّالِحِ – قَالَ – قُلْتُ يَا جِبْرِيلُ مَنْ هَذَا قَالَ هَذَا آدَمُ صلى الله عليه وسلم وَهَذِهِ الأَسْوِدَةُ عَنْ يَمِينِهِ وَعَنْ شِمَالِهِ نَسَمُ بَنِيهِ فَأَهْلُ الْيَمِينِ أَهْلُ الْجَنَّةِ وَالأَسْوِدَةُ الَّتِي عَنْ شِمَالِهِ أَهْلُ النَّارِ فَإِذَا نَظَرَ قِبَلَ يَمِينِهِ ضَحِكَ وَإِذَا نَظَرَ قِبَلَ شِمَالِهِ بَكَى – قَالَ – ثُمَّ عَرَجَ بِي جِبْرِيلُ حَتَّى أَتَى السَّمَاءَ الثَّانِيَةَ ‏.‏ فَقَالَ لِخَازِنِهَا افْتَحْ – قَالَ – فَقَالَ لَهُ خَازِنُهَا مِثْلَ مَا قَالَ خَازِنُ السَّمَاءِ الدُّنْيَا فَفَتَحَ ‏”‏ ‏.‏ فَقَالَ أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ فَذَكَرَ أَنَّهُ وَجَدَ فِي السَّمَوَاتِ آدَمَ وَإِدْرِيسَ وَعِيسَى وَمُوسَى وَإِبْرَاهِيمَ – صَلَوَاتُ اللَّهِ عَلَيْهِمْ أَجْمَعِينَ – وَلَمْ يُثْبِتْ كَيْفَ مَنَازِلُهُمْ غَيْرَ أَنَّهُ ذَكَرَ أَنَّهُ قَدْ وَجَدَ آدَمَ – عَلَيْهِ السَّلاَمُ – فِي السَّمَاءِ الدُّنْيَا وَإِبْرَاهِيمَ فِي السَّمَاءِ السَّادِسَةِ ‏.‏ قَالَ ‏”‏ فَلَمَّا مَرَّ جِبْرِيلُ وَرَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِإِدْرِيسَ – صَلَوَاتُ اللَّهِ عَلَيْهِ – قَالَ مَرْحَبًا بِالنَّبِيِّ الصَّالِحِ وَالأَخِ الصَّالِحِ – قَالَ – ثُمَّ مَرَّ فَقُلْتُ مَنْ هَذَا فَقَالَ هَذَا إِدْرِيسُ – قَالَ – ثُمَّ مَرَرْتُ بِمُوسَى – عَلَيْهِ السَّلاَمُ – فَقَالَ مَرْحَبًا بِالنَّبِيِّ الصَّالِحِ وَالأَخِ الصَّالِحِ – قَالَ – قُلْتُ مَنْ هَذَا قَالَ هَذَا مُوسَى – قَالَ – ثُمَّ مَرَرْتُ بِعِيسَى فَقَالَ مَرْحَبًا بِالنَّبِيِّ الصَّالِحِ وَالأَخِ الصَّالِحِ ‏.‏ قُلْتُ مَنْ هَذَا قَالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ – قَالَ – ثُمَّ مَرَرْتُ بِإِبْرَاهِيمَ – عَلَيْهِ السَّلاَمُ – فَقَالَ مَرْحَبًا بِالنَّبِيِّ الصَّالِحِ وَالاِبْنِ الصَّالِحِ – قَالَ – قُلْتُ مَنْ هَذَا قَالَ هَذَا إِبْرَاهِيمُ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ ابْنُ شِهَابٍ وَأَخْبَرَنِي ابْنُ حَزْمٍ أَنَّ ابْنَ عَبَّاسٍ وَأَبَا حَبَّةَ الأَنْصَارِيَّ كَانَا يَقُولاَنِ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ ثُمَّ عَرَجَ بِي حَتَّى ظَهَرْتُ لِمُسْتَوًى أَسْمَعُ فِيهِ صَرِيفَ الأَقْلاَمِ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ ابْنُ حَزْمٍ وَ أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ فَفَرَضَ اللَّهُ عَلَى أُمَّتِي خَمْسِينَ صَلاَةً – قَالَ – فَرَجَعْتُ بِذَلِكَ حَتَّى أَمُرَّ بِمُوسَى فَقَالَ مُوسَى عَلَيْهِ السَّلاَمُ مَاذَا فَرَضَ رَبُّكَ عَلَى أُمَّتِكَ – قَالَ – قُلْتُ فَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسِينَ صَلاَةً ‏.‏ قَالَ لِي مُوسَى عَلَيْهِ السَّلاَمُ فَرَاجِعْ رَبَّكَ فَإِنَّ أُمَّتَكَ لاَ تُطِيقُ ذَلِكَ – قَالَ – فَرَاجَعْتُ رَبِّي فَوَضَعَ شَطْرَهَا – قَالَ – فَرَجَعْتُ إِلَى مُوسَى – عَلَيْهِ السَّلاَمُ – فَأَخْبَرْتُهُ قَالَ رَاجِعْ رَبَّكَ فَإِنَّ أُمَّتَكَ لاَ تُطِيقُ ذَلِكَ – قَالَ – فَرَاجَعْتُ رَبِّي فَقَالَ هِيَ خَمْسٌ وَهْىَ خَمْسُونَ لاَ يُبَدَّلُ الْقَوْلُ لَدَىَّ – قَالَ – فَرَجَعْتُ إِلَى مُوسَى فَقَالَ رَاجِعْ رَبَّكَ ‏.‏ فَقُلْتُ قَدِ اسْتَحْيَيْتُ مِنْ رَبِّي – قَالَ – ثُمَّ انْطَلَقَ بِي جِبْرِيلُ حَتَّى نَأْتِيَ سِدْرَةَ الْمُنْتَهَى فَغَشِيَهَا أَلْوَانٌ لاَ أَدْرِي مَا هِيَ – قَالَ – ثُمَّ أُدْخِلْتُ الْجَنَّةَ فَإِذَا فِيهَا جَنَابِذُ اللُّؤْلُؤِ وَإِذَا تُرَابُهَا الْمِسْكُ ‏”‏ ‏.‏

আবূ যার (রাযিঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমি মাক্কাতে ছিলাম। আমার ঘরের ছাদ ফাঁক করা হলো। তখন জিবরীল (‘আঃ) অবতরণ করলেন। তিনি আমার বুক ছিড়ে ফেললেন। এরপর তা যমযমের পানি দিয়ে ধৌত করলেন। তারপর হিকমাত ও ঈমানে পরিপূর্ণ একটি পাত্র আনা হলো এবং এতে তা রাখা হলো, পুনঃ তা আমার বুকে ঢেলে বুক বন্ধ করে দিলেন। এরপর আমার হাত ধরলেন এবং ঊর্ধ্বাকাশে যাত্রা করলেন। আমরা যখন প্রথম আসমানে গিয়ে পৌঁছলাম, তখন জিবরীল (‘আঃ) এ আসমানের দারোয়ানকে বললেন, দরজা খুলুন, তিনি বললেন কে? বললেন, জিবরীল। দারোয়ান বললেন, আপনার সাথে কি অন্য কেউ আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমার সাথে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আছেন। দারোয়ান বললেন, তাঁর কাছে আপনাকে পাঠানো হয়েছিল কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। এরপর দরজা খুলে দেয়া হলো। আমরা প্রবেশ করে দেখি, এক ব্যক্তি তাঁর ডানে একদল মানুষ এবং বাঁয়ে একদল মানুষ। যখন তিনি ডান দিকে তাকান তখন হাসেন, আর যখন বাঁ দিকে তাকান তখন কাঁদেন। তিনি আমাকে বললেন, মারহাবা হে সুযোগ্য নাবী। হে সুযোগ্য সন্তান! রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমি জিবরীলকে বললাম, ইনি কে? তিনি বললেন, ইনি আদাম (‘আঃ) আর ডান ও বাঁয়ের এ লোকগুলো তাঁর বংশধর। ডান দিকের লোকেরা হচ্ছে জান্নাতবাসী আর বাম দিকের লোকেরা হচ্ছে জাহান্নামবাসী। আর এ কারণেই তিনি ডান দিকে তাকালে হাসেন এবং বাঁ দিকে তাকালে কাঁদেন। তারপর জিবরীল (‘আঃ) আমাকে নিয়ে ঊর্ধ্বারোহণ করলেন এবং দ্বিতীয় আসমানে পৌছলেন এবং এর দারোয়ানকে বললেন, দরজা খুলুন। তিনি প্রথম আসমানের দারোয়ানের ন্যায় প্রশ্নোত্তর করে দরজা খুলে দিলেন। আনাস (রাঃ) বলেন, এরপর রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন যে, তিনি আসমানসমূহে আদাম, ইদ্‌রীস, মূসা এবং ইবরাহীম (‘আঃ)-এর সাথে দেখা করেছেন। আদাম (‘আঃ) প্রথম আসমানে এবং ইবরাহীম (‘আঃ) ৬ষ্ঠ আসমানে। এ ছাড়া অন্যান্য ‘নাবীর অবস্থান সম্পর্কে এ রিওয়ায়াতে কিছু উল্লেখ নেই।

আনাস (রাঃ) বলেন, যখন রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও জিবরীল (‘আঃ) ইদ্‌রীস (‘আঃ)-এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি বলেছিলেন, মারহাবা, হে সুযোগ্য নাবী! সুযোগ্য ভ্রাতা! রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? জিবরীল (‘আঃ) উত্তর দিলেন; ইনি ইদ্‌রীস (‘আঃ)। তারপর আমরা মূসা (‘আঃ)-এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। তিনিও বললেন, মারহাবা হে সুযোগ্য নাবী, সু্যোগ্য ভ্রাতা! জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? তিনি জবাব দিলেন, ইনি মূসা (‘আঃ)। তারপর আমরা ‘ঈসা (‘আঃ)-এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। তিনিও বললেন, ইনি ‘ঈসা (‘আঃ)। তারপর আমরা ইবরাহীম (‘আঃ)-এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম তিনিও বললেন, মারহাবা হে সুযোগ্য নাবী! সু্যোগ্য সন্তান! জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? তিনি বললেন, ইনি ইবরাহীম (‘আঃ)।

ইবনু শিহাব, ইবনু হায্‌ম, ইবনু ‘আব্বাস ও আবূ হাব্বাহ্‌ আনসারী থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তারপর জিবরীল (‘আঃ) আমাকে নিয়ে আরো ঊর্ধ্বে চললেন। আমরা এমন এক স্তরে পৌছলাম যে তথায় আমি কলম-এর খশখশ শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম।

ইবনু হাযম ও আনাস ইবনু মালিক বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তখন আল্লাহ তা’আলা আমার উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সলাত ফারয করেন। আমি এ নিয়ে ফেরার পথে মূসা (‘আঃ)-এর সাথে দেখা হয়। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার প্রতিপালক আপনার উম্মাতের উপর কি ফারয করেছেন? আমি উত্তরে বললাম, তাদের উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সলাত ফারয করা হয়েছে। মূসা (‘আঃ) আমাকে বললেন, আপনি আপনার প্রতিপালকের নিকট ফিরে যান; কেননা আপনার উম্মাত এতে সক্ষম হবে না। তাই আমি আল্লাহর দরবারে ফিরে গেলাম। তখন আল্লাহ এর অর্ধেক কমিয়ে দিলেন। আমি আবার ফিরে এসে মূসা (‘আঃ)-কে জানালে তিনি বললেন, না। আপনি পুনরায় ফিরে যান; কেননা আপনার উম্মাত এতেও সক্ষম হবে না। রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তারপর আমি আল্লাহর দরবারে ফিরে গেলে তিনি বললেন, এ নির্দেশ পাঁচ, আর পাঁচই পঞ্চাশের সমান করে দিলাম, আমার কথার কোন রদবদল নেই। এরপর আমি মূসা (‘আঃ)-এর নিকট ফিরে আসি। তিনি তখনো বললেন, আপনি ফিরে যান আল্লাহর দরবারে। আমি বললামঃ আমার লজ্জা লাগছে। তারপর জিবরীল (‘আঃ) আমাকে ‘সিদ্‌রাতুল মুন্‌তাহা’ নিয়ে চললেন, আমরা পৌছলাম। তা এর বিচিত্র রঙে আবৃত যে, আমি বুঝতে পারছি না যে, আসলে তা কী? তারপর আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হলো। তথায় ছিল মুক্তার গম্বুজ আর তার মাটি ছিল মিশকের। (ই.ফা. ৩১২; ই.সে. ৩২৩)

৩০৫
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي عَدِيٍّ، عَنْ سَعِيدٍ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، – لَعَلَّهُ قَالَ – عَنْ مَالِكِ بْنِ صَعْصَعَةَ، – رَجُلٌ مِنْ قَوْمِهِ – قَالَ قَالَ نَبِيُّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ بَيْنَا أَنَا عِنْدَ الْبَيْتِ بَيْنَ النَّائِمِ وَالْيَقْظَانِ إِذْ سَمِعْتُ قَائِلاً يَقُولُ أَحَدُ الثَّلاَثَةِ بَيْنَ الرَّجُلَيْنِ ‏.‏ فَأُتِيتُ فَانْطُلِقَ بِي فَأُتِيتُ بِطَسْتٍ مِنْ ذَهَبٍ فِيهَا مِنْ مَاءِ زَمْزَمَ فَشُرِحَ صَدْرِي إِلَى كَذَا وَكَذَا ‏”‏ ‏.‏ قَالَ قَتَادَةُ فَقُلْتُ لِلَّذِي مَعِي مَا يَعْنِي قَالَ إِلَى أَسْفَلِ بَطْنِهِ ‏”‏ فَاسْتُخْرِجَ قَلْبِي فَغُسِلَ بِمَاءِ زَمْزَمَ ثُمَّ أُعِيدَ مَكَانَهُ ثُمَّ حُشِيَ إِيمَانًا وَحِكْمَةً ثُمَّ أُتِيتُ بِدَابَّةٍ أَبْيَضَ يُقَالُ لَهُ الْبُرَاقُ فَوْقَ الْحِمَارِ وَدُونَ الْبَغْلِ يَقَعُ خَطْوُهُ عِنْدَ أَقْصَى طَرْفِهِ فَحُمِلْتُ عَلَيْهِ ثُمَّ انْطَلَقْنَا حَتَّى أَتَيْنَا السَّمَاءَ الدُّنْيَا فَاسْتَفْتَحَ جِبْرِيلُ صلى الله عليه وسلم فَقِيلَ مَنْ هَذَا قَالَ جِبْرِيلُ ‏.‏ قِيلَ وَمَنْ مَعَكَ قَالَ مُحَمَّدٌ صلى الله عليه وسلم ‏.‏ قِيلَ وَقَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ قَالَ نَعَمْ – قَالَ – فَفَتَحَ لَنَا وَقَالَ مَرْحَبًا بِهِ وَلَنِعْمَ الْمَجِيءُ جَاءَ – قَالَ – فَأَتَيْنَا عَلَى آدَمَ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ ‏.‏ وَسَاقَ الْحَدِيثَ بِقِصَّتِهِ ‏.‏ وَذَكَرَ أَنَّهُ لَقِيَ فِي السَّمَاءِ الثَّانِيَةِ عِيسَى وَيَحْيَى – عَلَيْهِمَا السَّلاَمُ – وَفِي الثَّالِثَةِ يُوسُفَ وَفِي الرَّابِعَةِ إِدْرِيسَ وَفِي الْخَامِسَةِ هَارُونَ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِمْ وَسَلَّمَ – قَالَ ‏”‏ ثُمَّ انْطَلَقْنَا حَتَّى انْتَهَيْنَا إِلَى السَّمَاءِ السَّادِسَةِ فَأَتَيْتُ عَلَى مُوسَى عَلَيْهِ السَّلاَمُ فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ فَقَالَ مَرْحَبًا بِالأَخِ الصَّالِحِ وَالنَّبِيِّ الصَّالِحِ ‏.‏ فَلَمَّا جَاوَزْتُهُ بَكَى فَنُودِيَ مَا يُبْكِيكَ قَالَ رَبِّ هَذَا غُلاَمٌ بَعَثْتَهُ بَعْدِي يَدْخُلُ مِنْ أُمَّتِهِ الْجَنَّةَ أَكْثَرُ مِمَّا يَدْخُلُ مِنْ أُمَّتِي ‏.‏ – قَالَ – ثُمَّ انْطَلَقْنَا حَتَّى انْتَهَيْنَا إِلَى السَّمَاءِ السَّابِعَةِ فَأَتَيْتُ عَلَى إِبْرَاهِيمَ ‏”‏ ‏.‏ وَقَالَ فِي الْحَدِيثِ وَحَدَّثَ نَبِيُّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ رَأَى أَرْبَعَةَ أَنْهَارٍ يَخْرُجُ مِنْ أَصْلِهَا نَهْرَانِ ظَاهِرَانِ وَنَهْرَانِ بَاطِنَانِ ‏”‏ فَقُلْتُ يَا جِبْرِيلُ مَا هَذِهِ الأَنْهَارُ قَالَ أَمَّا النَّهْرَانِ الْبَاطِنَانِ فَنَهْرَانِ فِي الْجَنَّةِ وَأَمَّا الظَّاهِرَانِ فَالنِّيلُ وَالْفُرَاتُ ‏.‏ ثُمَّ رُفِعَ لِيَ الْبَيْتُ الْمَعْمُورُ فَقُلْتُ يَا جِبْرِيلُ مَا هَذَا قَالَ هَذَا الْبَيْتُ الْمَعْمُورُ يَدْخُلُهُ كُلَّ يَوْمٍ سَبْعُونَ أَلْفَ مَلَكٍ إِذَا خَرَجُوا مِنْهُ لَمْ يَعُودُوا فِيهِ آخِرُ مَا عَلَيْهِمْ ‏.‏ ثُمَّ أُتِيتُ بِإِنَاءَيْنِ أَحَدُهُمَا خَمْرٌ وَالآخَرُ لَبَنٌ فَعُرِضَا عَلَىَّ فَاخْتَرْتُ اللَّبَنَ فَقِيلَ أَصَبْتَ أَصَابَ اللَّهُ بِكَ أُمَّتُكَ عَلَى الْفِطْرَةِ ‏.‏ ثُمَّ فُرِضَتْ عَلَىَّ كُلَّ يَوْمٍ خَمْسُونَ صَلاَةً ‏”‏ ‏.‏ ثُمَّ ذَكَرَ قِصَّتَهَا إِلَى آخِرِ الْحَدِيثِ ‏.‏

আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাবী বলেন, আনাস (রাঃ) সম্ভবত তাঁর সম্প্রদায়ের জনৈক মালিক ইবনু সা’সা’আহ্‌ (রাঃ) বলেন যে, ‘নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, একদিন আমি কা’বা শরীফের নিকটে নিদ্রা ও জাগরণের মাঝামাঝি ছিলাম। তখন তিন ব্যক্তির মধ্যবর্তী একজনকে কথা বলতে শুনতে পেলাম। যা হোক তিনি আমার নিকট এসে আমাকে নিয়ে গেলেন। তারপর আমার নিকট একটি স্বর্ণের পাত্র আনা হলো, তাতে যমযমের পানি ছিল। এরপর তিনি আমার বক্ষদেশ এখান থেকে ওখান পর্যন্ত বিদীর্ণ করলেন। বর্ণনাকারী কাতাদাহ্‌ (রহঃ) বলেন, আমি আমার পার্শ্বস্থ একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘এখান থেকে ওখান পর্যন্ত’ বলে কি বুঝাতে চেয়েছেন? তিনি জবাব দিলেন, “বুক থেকে পেটের নীচ পর্যন্ত।” রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, এরপর আমার হৃদপিণ্ডটি বের করা হলো এবং যমযমের পানি দিয়ে তা ধুয়ে পুনরায় যথাস্থানে স্থাপন করে দেয়া হলো। ঈমান ও হিকমাতে আমার হৃদয় পূর্ণ করে দেয়া হলো। এরপর আমার নিকট বুরাক নামের একটি সাদা জন্তু উপস্থিত করা হয়। এটি গাধা থেকে কিছু বড় এবং খচ্চর থেকে ছোট। যতদূর দৃষ্টি যায় একেক পদক্ষেপে সে ততদূর চলে। এর উপর আমাকে আরোহণ করানো হলো। আমরা চললাম এবং দুনিয়ার আসমান পর্যন্ত পৌছলাম। জিবরীল (‘আঃ) দরজা খুলতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হলো, কে? তিনি বললেন, জিবরীল। জিজ্ঞস করা হলো, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, আমার সাথে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আছেন। দ্বাররক্ষী বললেন, তাঁর কাছে আপনাকে পাঠানো হয়েছিল কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। এরপর দরজা খুলে দিলেন এবং বললেন, মারহাবা! কত সম্মানিত আগন্তুকের আগমন হয়েছে। রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তারপর আমরা আদাম (‘আঃ)-এর নিকট আসলাম ….. এভাবে বর্ণনাকারী পূর্ণ হাদীসটি বর্ণনা করে যান। তবে এ রিওয়ায়াতে বলা হয়েছে যে, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দ্বিতীয় আসমান ‘ঈসা ও ইয়াহ্‌ইয়া, তৃতীয় আসমানে ইউসুফ, চতুর্থ আসমানে ইদ্‌রীস, পঞ্চম আসমানে হারূন (‘আঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তারপর আমরা ষষ্ঠ আসমানে গিয়ে পৌছি এবং মূসা (‘আঃ)-এর নিকট গিয়ে তাঁকে সালাম দেই। তিনি বললেন, মারহাবা, হে সুযোগ্য ‘নাবী, সুযোগ্য ভ্রাতা! এরপর আমরা তাঁকে অতিক্রম করে চলে গেলে তিনি কাঁদতে শুরু করলেন। আওয়াজ এল, তুমি কেন কাঁদছো? তিনি জবাব দিলেন, প্রভু! এ বালককে আপনি আমার পরে পাঠিয়েছেন, অথচ আমার উম্মাত অপেক্ষা তাঁর উম্মাত অধিক সংখ্যায় জান্নাতে প্রবেশ করবে। রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমরা আবার চললাম এবং সপ্তম আসমানে গিয়ে পৌছলাম ও ইবরাহীম (‘আঃ)-এর নিকট আসলাম। সহাবা তা এ হাদীসে আরো উল্লেখ করেন যে, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেছেন, সেখানে তিনি চারটি নহর দেখেছেন। [৭২] তন্মধ্যে দু’টি প্রকাশ্য ও দু’টি অপ্রকাশ্য। সবগুলোই সিদরাতুল মুনতাহার গোড়া হতে প্রবাহিত। ‘নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমি বললাম, হে জিবরীল! এ নহরগুলো কি? তিনি বললেন, অপ্রকাশ্য নহরদ্বয় তো জান্নাতের নহর আর প্রকাশ্যগুলো নীল ও ফুরাত। অর্থাৎ এ দু’টি নহরের সাদৃশ্য রয়েছে জান্নাতের ঐ দু’টি নহরের সাথে। এরপর আমাকে বাইতুল মা’মূর-এ উঠানো হলো। বললাম, হে জিবরীল! এ কি? তিনি বললেন, এ হচ্ছে ‘বাইতুল মা’মূর’। প্রত্যহ এতে সত্তর হাজার ফেরেশতা (তাওয়াফের জন্য) প্রবেশ করে। তারা একবার তাওয়াফ সেরে বের হলে কখনো আর ফের তাওয়াফের সুযোগ হয় না তাদের। তারপর আমার সম্মুখে দু’টি পাত্র পেশ করা হলো- একটি শরাবের, অপরটি দুধের। আমি দুধের পাত্রটি গ্রহণ করলাম। তিনি আমাকে বললেন, আপনি ঠিক করেছেন। আল্লাহ আপনার উম্মাতকেও আপনার ওয়াসীলায় ফিত্‌রাহ-এর উপর কায়িম রাখুন। তারপর আমার উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সলাত ফারয করা হয় ….. এভাবে বর্ণনাকারী হাদীসের শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করেন। (ই.ফা ৩১৩, ই.সে ৩২৪)

[৭২] প্রিয়’নাবী ৪টি নহর দেখলেন। ২টি যাহিরী আর ২টি বাত্বিনী। যাহিরী বা প্রকাশ্য নহর ছিল, নীল এবং ফুরাত।এর তাৎপর্য সম্ভবত এই যে, তাঁর দ্বীন নীল এবং ফুরাতে সজীব এলাকা সমূহে বিস্তার লাভ করবে। অর্থাৎ এখানকার অধিবাসীরা বংশ পরম্পরায় মুসলিম হবে। এটার অর্থ এ নয় যে, এই দু’টি নহরের পানির উৎস জান্নাতে রয়েছে। নীল নদী আফ্রিকার মিসর রাজ্যের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গেছে এবং ফুরাত নদী ইরাকের কুফার নিকটে অবস্থিত। (সংক্ষিপ্ত নাবাবী)

৩০৬
حَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، حَدَّثَنَا مُعَاذُ بْنُ هِشَامٍ، قَالَ حَدَّثَنِي أَبِي، عَنْ قَتَادَةَ، حَدَّثَنَا أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ، عَنْ مَالِكِ بْنِ صَعْصَعَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ فَذَكَرَ نَحْوَهُ وَزَادَ فِيهِ ‏ “‏ فَأُتِيتُ بِطَسْتٍ مِنْ ذَهَبٍ مُمْتَلِئٍ حِكْمَةً وَإِيمَانًا فَشُقَّ مِنَ النَّحْرِ إِلَى مَرَاقِّ الْبَطْنِ فَغُسِلَ بِمَاءِ زَمْزَمَ ثُمَّ مُلِئَ حِكْمَةً وَإِيمَانًا ‏”‏ ‏.‏

মালিক ইবনু সা’সা’আহ্‌ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিতঃ

অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে রাবী এতে ….. এরপর আমার নিকট ঈমান ও হিকমাত ভর্তি একটি রেকাবী আনা হলো এবং আমার বুকের উপরিভাগ হতে পেটের নিম্নাংশ পর্যন্ত বিদীর্ণ করা হলো ও যামযামের পানি দিয়ে ধৌত করে হিকমাত ও ঈমান দিয়ে পরিপূর্ণ করে দেয়া হলো, এ অংশটুকু অতিরিক্ত বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা ৩১৪, ই.সে ৩২৫)

৩০৭
حَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، وَابْنُ، بَشَّارٍ قَالَ ابْنُ الْمُثَنَّى حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ قَتَادَةَ، قَالَ سَمِعْتُ أَبَا الْعَالِيَةِ، يَقُولُ حَدَّثَنِي ابْنُ عَمِّ، نَبِيِّكُمْ صلى الله عليه وسلم – يَعْنِي ابْنَ عَبَّاسٍ – قَالَ ذَكَرَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم حِينَ أُسْرِيَ بِهِ فَقَالَ ‏”‏ مُوسَى آدَمُ طُوَالٌ كَأَنَّهُ مِنْ رِجَالِ شَنُوءَةَ ‏”‏ ‏.‏ وَقَالَ ‏”‏ عِيسَى جَعْدٌ مَرْبُوعٌ ‏”‏ ‏.‏ وَذَكَرَ مَالِكًا خَازِنَ جَهَنَّمَ وَذَكَرَ الدَّجَّالَ ‏.‏

ইবনু ‘আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর মি’রাজ ভ্রমনের কথা উল্লেখ করে বলেনঃ মূসা (‘আঃ) হচ্ছেন শা্নূয়াহ গোত্রীয় লোকদের ন্যায় দীর্ঘদেহী, গন্দুম (গম) বর্ণের। ‘ঈসা (‘আঃ) মধ্যমাকৃতি সুঠাম দেহ বিশিষ্ট। তাছাড়া রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জাহান্নামের রক্ষী মালিক ও দাজ্জালের কথা উল্লেখ করেছিলেন। (ই.ফা. ৩১৫; ই.সে. ৩২৬)

৩০৮
وَحَدَّثَنَا عَبْدُ بْنُ حُمَيْدٍ، أَخْبَرَنَا يُونُسُ بْنُ مُحَمَّدٍ، حَدَّثَنَا شَيْبَانُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَبِي الْعَالِيَةِ، حَدَّثَنَا ابْنُ عَمِّ، نَبِيِّكُمْ صلى الله عليه وسلم ابْنُ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ مَرَرْتُ لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِي عَلَى مُوسَى بْنِ عِمْرَانَ – عَلَيْهِ السَّلاَمُ – رَجُلٌ آدَمُ طُوَالٌ جَعْدٌ كَأَنَّهُ مِنْ رِجَالِ شَنُوءَةَ وَرَأَيْتُ عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ مَرْبُوعَ الْخَلْقِ إِلَى الْحُمْرَةِ وَالْبَيَاضِ سَبِطَ الرَّأْسِ ‏”‏ ‏.‏ وَأُرِيَ مَالِكًا خَازِنَ النَّارِ وَالدَّجَّالَ ‏.‏ فِي آيَاتٍ أَرَاهُنَّ اللَّهُ إِيَّاهُ فَلاَ تَكُنْ فِي مِرْيَةٍ مِنْ لِقَائِهِ ‏.‏ قَالَ كَانَ قَتَادَةُ يُفَسِّرُهَا أَنَّ نَبِيَّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَدْ لَقِيَ مُوسَى عَلَيْهِ السَّلاَمُ ‏.‏

ইবনু ‘আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ মি’রাজের রাত্রে আমি মূসা (‘আঃ) এর নিকট দিয়ে গিয়েছি। তিনি দেখতে গন্দুম বর্ণের, দীর্ঘদেহী অনেকটা দেখতে শানূয়াহ গোত্রীয় লোকদের ন্যায়। ‘ঈসা ইবনু মারইয়াম (‘আঃ) কে দেখেছি, তাঁর রং ছিল শ্বেত লোহিত, সুঠামদেহী আর তাঁর চুলগুলো ছিল স্বাভাবিক। বর্ণনাকারী বলেন, যে নিদর্শনসমুহ কেবল তাকেই দেখানো হয়েছিল সেগুলোর মধ্যে জাহান্নামের রক্ষী মালিককে এবং দাজ্জালকে দেখানো হয়। “অতএব তুমি তাঁর সাক্ষাত সম্পর্কে সন্দেহ করো না”। (সূরাহ ‘আস সাজদাহ ৪১ : ২৩)

এ আয়াতের তাফসীরে কাতাদাহ (রহঃ) বলতেন যে, ‘নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মূসা (আঃ) এর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। (ই.ফা. ৩১৬, ই.সে. ৩২৭)

৩০৯
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ حَنْبَلٍ، وَسُرَيْجُ بْنُ يُونُسَ، قَالاَ حَدَّثَنَا هُشَيْمٌ، أَخْبَرَنَا دَاوُدُ بْنُ أَبِي هِنْدٍ، عَنْ أَبِي الْعَالِيَةِ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَرَّ بِوَادِي الأَزْرَقِ فَقَالَ ‏”‏ أَىُّ وَادٍ هَذَا ‏”‏ ‏.‏ فَقَالُوا هَذَا وَادِي الأَزْرَقِ ‏.‏ قَالَ ‏”‏ كَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى مُوسَى – عَلَيْهِ السَّلاَمُ – هَابِطًا مِنَ الثَّنِيَّةِ وَلَهُ جُؤَارٌ إِلَى اللَّهِ بِالتَّلْبِيَةِ ‏”‏ ‏.‏ ثُمَّ أَتَى عَلَى ثَنِيَّةِ هَرْشَى ‏.‏ فَقَالَ ‏”‏ أَىُّ ثَنِيَّةٍ هَذِهِ ‏”‏ ‏.‏ قَالُوا ثَنِيَّةُ هَرْشَى قَالَ ‏”‏ كَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى يُونُسَ بْنِ مَتَّى – عَلَيْهِ السَّلاَمُ – عَلَى نَاقَةٍ حَمْرَاءَ جَعْدَةٍ عَلَيْهِ جُبَّةٌ مِنْ صُوفٍ خِطَامُ نَاقَتِهِ خُلْبَةٌ وَهُوَ يُلَبِّي ‏”‏ ‏.‏ قَالَ ابْنُ حَنْبَلٍ فِي حَدِيثِهِ قَالَ هُشَيْمٌ يَعْنِي لِيفًا ‏.‏

ইবনু ‘আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন আযরাক উপত্যকা অতিক্রম করে যাচ্ছিলেন, তখন বললেন, এটি কোন উপত্যকা? সঙ্গীগন উত্তর দিলেন, আযরাক উপত্যকা। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি যেন মূসা (‘আঃ) কে গিরিপথ থেকে অবতরন করতে দেখেছি, তিনি উচ্চৈঃস্বরে তালবিয়াহ পাঠ করছিলেন। [৭৩] তারপর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হারশা গিরিপথে আসলেন। তিনি বললেন, এটি কোন গিরিপথ? সঙ্গীগন বললেন, হারশা গিরিপথ। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি যেন ইউনুস ইবনু মাত্তা (‘আঃ) কে দেখছি। তিনি সুঠামদেহী লাল ঊটের পিঠে আরোহিত। গায়ে একটি পশমী জোব্বা, আর তাঁর ঊটের রশিটি খেজুরের ছাল দিয়ে তৈরি।

ইবনু হাম্বাল তাঁর হাদীসে বলেনঃ হুশায়ম বলেছেন, এর অর্থ খেজুর বৃক্ষের ছাল। (ই.ফা. ৩১৭, ই.সে. ৩২৮)

[৭৩] প্রশ্ন হলো যে, ‘নাবী (আঃ), যিনি মারা গেছেন তিনি কি করে হাজ্জ করবেন ও তালবিয়্যাহ পাঠ পড়বেন? কাযী ইয়ায কয়েকভাবে এর ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। তাঁর মধ্যে তিনি বলেছেন যে, হতে পারে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এট মিরাজ ছাড়া অন্য কোন রাতে স্বপ্নে দেখেছিলেন এবং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে তাঁর পুর্ব ‘নাবীদের হাজ্জ উদাহরন স্বরুপ দেখিয়েছেন। (সংখিপ্ত নাবাবী)

[৭৩] প্রশ্ন হলো যে, ‘নাবী; যিনি মারা গেছেন, তিনি কি করে হাজ্জ করবেন ও তালবিয়্যাহ পাঠ করবেন? কাযী ইয়ায কয়েকভাবে এর ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। তার মধ্যে তিনি বলেছেন যে, হতে পারে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এটা মি’রাজ ছাড়া অন্য কোন রাতে স্বপ্নে দেখেছিলেন এবং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে তার পূর্ব ‘নাবীদের হাজ্জ উদাহরণ স্বরুপ দেখিছেন। (সংক্ষিপ্ত নাবাবী)

৩১০
وَحَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي عَدِيٍّ، عَنْ دَاوُدَ، عَنْ أَبِي الْعَالِيَةِ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ سِرْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بَيْنَ مَكَّةَ وَالْمَدِينَةِ فَمَرَرْنَا بِوَادٍ فَقَالَ ‏”‏ أَىُّ وَادٍ هَذَا ‏”‏ ‏.‏ فَقَالُوا وَادِي الأَزْرَقِ ‏.‏ فَقَالَ ‏”‏ كَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى مُوسَى صلى الله عليه وسلم فَذَكَرَ مِنْ لَوْنِهِ وَشَعْرِهِ شَيْئًا لَمْ يَحْفَظْهُ دَاوُدُ وَاضِعًا إِصْبَعَيْهِ فِي أُذُنَيْهِ لَهُ جُؤَارٌ إِلَى اللَّهِ بِالتَّلْبِيَةِ مَارًّا بِهَذَا الْوَادِي ‏”‏ ‏.‏ قَالَ ‏”‏ ثُمَّ سِرْنَا حَتَّى أَتَيْنَا عَلَى ثَنِيَّةٍ فَقَالَ ‏”‏ أَىُّ ثَنِيَّةٍ هَذِهِ ‏”‏ ‏.‏ قَالُوا هَرْشَى أَوْ لِفْتٌ ‏.‏ فَقَالَ ‏”‏ كَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى يُونُسَ عَلَى نَاقَةٍ حَمْرَاءَ عَلَيْهِ جُبَّةُ صُوفٍ خِطَامُ نَاقَتِهِ لِيفٌ خُلْبَةٌ مَارًّا بِهَذَا الْوَادِي مُلَبِّيًا ‏”‏ ‏.‏

ইবনু আব্বাস (রাযি ? থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে আমরা মাক্কাহ ও মাদীনার মধ্যকার এক স্থানে সফর করছিলাম। আমরা একটি উপত্যকা অতিক্রম করছি, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, এটি কোন উপত্যকা? সঙ্গীগন উত্তর করলেন, আযরাক উপত্যকা। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি যেন এখনো মূসা (‘আঃ) কে দেখতে পাচ্ছি, তিনি তাঁর কর্নদ্বয়ের ছিদ্রে অঙ্গুলি রেখে উচ্চৈঃস্বরে তালবিয়াহ পাঠ করে এ উপত্যকা অতিক্রম করে যাচ্ছেন। বর্ণনাকারী বলেন, এখানে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মূসা (‘আঃ) এর দেহের বর্ন ও চুলের আকৃতি সম্পর্কে উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু রাবী দাঊদ তা স্মরণ রাখতে পারেননি। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, তারপর আমরা সামনে আরো অগ্রসর হলাম এবং একটি গিরিপথে এসে পৌছলাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, এটি কোন গিরিপথ? সঙ্গীগন বললেন হারশা কিংবা লিফত। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি যেন এখনো ইউনুস (‘আঃ) কে দেখতে পাচ্ছি তালবিয়াহ পাঠ করা অবস্থায় তিনি গিরিপথে গিরিপথ অতিক্রম করে যাচ্ছেন। তাঁর গায়ে একটি পশমি জুব্বা, আর তিনি একটি লাল উটের পিঠে আরোহিত। তাঁর উটের রশিটি খেজুর বৃক্ষের ছাল দ্বারা তৈরি। (ই.ফা. ৩১৮, ই.সে. ৩২৯)

৩১১
حَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي عَدِيٍّ، عَنِ ابْنِ عَوْنٍ، عَنْ مُجَاهِدٍ، قَالَ كُنَّا عِنْدَ ابْنِ عَبَّاسٍ فَذَكَرُوا الدَّجَّالَ فَقَالَ إِنَّهُ مَكْتُوبٌ بَيْنَ عَيْنَيْهِ كَافِرٌ ‏.‏ قَالَ فَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ لَمْ أَسْمَعْهُ ‏.‏ قَالَ ذَاكَ وَلَكِنَّهُ قَالَ ‏ “‏ أَمَّا إِبْرَاهِيمُ فَانْظُرُوا إِلَى صَاحِبِكُمْ وَأَمَّا مُوسَى فَرَجُلٌ آدَمُ جَعْدٌ عَلَى جَمَلٍ أَحْمَرَ مَخْطُومٍ بِخُلْبَةٍ كَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَيْهِ إِذَا انْحَدَرَ فِي الْوَادِي يُلَبِّي ‏”‏ ‏.‏

মুজাহিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আমরা ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। উপস্থিত সবাই দাজ্জালের আলোচনা উঠালেন। তখন কোন একজন বললেন, তার (দাজ্জালের) দু’ চোখের মাঝামাঝিতে “কাফির” শব্দ খচিত আছে। তখন ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন কিছু বলেছেন বলে আমি শুনিনি। তবে এতটুকু বলতে শুনেছি যে, ইবরাহীম (‘আঃ) এর আকৃতি জানতে হলে তোমাদের এ সাথীরই (নিজের দিকে ইঙ্গিত) দিকে তাকাও। (তিনি অনুরুপই ছিলেন) আর মূসা (‘আঃ) ছিলেন গন্দুমী বর্ণের সুঠামদেহী। তাকে লাল বর্ণের একটি ঊটের পিঠে আরোহিত দেখেছি। আমি যেন তাকে এখনো তালবিয়াহ পাঠ করা অবস্থায় উপত্যকার ঢালু দিয়ে নামতে দেখেছি। (ই.ফা. ৩১৯, ই.সে. ৩৩০)

৩১২
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا لَيْثٌ، ح وَحَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ رُمْحٍ، أَخْبَرَنَا اللَّيْثُ، عَنْ أَبِي الزُّبَيْرِ، عَنْ جَابِرٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏”‏ عُرِضَ عَلَىَّ الأَنْبِيَاءُ فَإِذَا مُوسَى ضَرْبٌ مِنَ الرِّجَالِ كَأَنَّهُ مِنْ رِجَالِ شَنُوءَةَ وَرَأَيْتُ عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ – عَلَيْهِ السَّلاَمُ – فَإِذَا أَقْرَبُ مَنْ رَأَيْتُ بِهِ شَبَهًا عُرْوَةُ بْنُ مَسْعُودٍ وَرَأَيْتُ إِبْرَاهِيمَ صَلَوَاتُ اللَّهِ عَلَيْهِ فَإِذَا أَقْرَبُ مَنْ رَأَيْتُ بِهِ شَبَهًا صَاحِبُكُمْ – يَعْنِي نَفْسَهُ – وَرَأَيْتُ جِبْرِيلَ – عَلَيْهِ السَّلاَمُ – فَإِذَا أَقْرَبُ مَنْ رَأَيْتُ بِهِ شَبَهًا دِحْيَةُ ‏”‏ ‏.‏ وَفِي رِوَايَةِ ابْنِ رُمْحٍ ‏”‏ دِحْيَةُ بْنُ خَلِيفَةَ ‏”‏ ‏.‏

জাবির (রাযিঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন য, আমার নিকট ‘নাবীগনকে উপস্থিত করা হলো, তখন মূসা (‘আঃ) কে দেখলাম একজন মধ্যম ধরনের মানুষ, অনেকটা শানূয়াহ গোত্রীয় লোকদের ন্যায়। আর ‘ঈসা ইবনু মারইয়াম (‘আঃ) কে দেখলাম, তাঁর নিকটতম ব্যক্তি হলেন ‘উরওয়াহ ইবনু মাস’ঊদ। ইবরাহীম (‘আঃ) কে দেখলাম, তাঁর অনেকটা কাছাকাছি সদৃশ ব্যক্তি হচ্ছেন তোমাদের এ সাথী অর্থাৎ স্বয়ং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। জিবরীল (‘আঃ) কে দেখলাম তাঁর কাছাকাছি সদৃশ ব্যক্তি হচ্ছেন দিহইয়া। ইবনু রুমহ-এর বর্ণনায় আছে, দিহইয়া ইবনু খলীফার ন্যায়। (ই.ফা. ৩২০; ই.সে. ৩৩১)

৩১৩
وَحَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ رَافِعٍ، وَعَبْدُ بْنُ حُمَيْدٍ، – وَتَقَارَبَا فِي اللَّفْظِ – قَالَ ابْنُ رَافِعٍ حَدَّثَنَا وَقَالَ عَبْدٌ، أَخْبَرَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، قَالَ أَخْبَرَنِي سَعِيدُ بْنُ الْمُسَيَّبِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ حِينَ أُسْرِيَ بِي لَقِيتُ مُوسَى – عَلَيْهِ السَّلاَمُ – ‏”‏ ‏.‏ فَنَعَتَهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ فَإِذَا رَجُلٌ – حَسِبْتُهُ قَالَ – مُضْطَرِبٌ رَجِلُ الرَّأْسِ كَأَنَّهُ مِنْ رِجَالِ شَنُوءَةَ – قَالَ – وَلَقِيتُ عِيسَى ‏”‏ ‏.‏ فَنَعَتَهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ فَإِذَا رَبْعَةٌ أَحْمَرُ كَأَنَّمَا خَرَجَ مِنْ دِيمَاسٍ ‏”‏ ‏.‏ – يَعْنِي حَمَّامًا – قَالَ ‏”‏ وَرَأَيْتُ إِبْرَاهِيمَ – صَلَوَاتُ اللَّهِ عَلَيْهِ – وَأَنَا أَشْبَهُ وَلَدِهِ بِهِ – قَالَ – فَأُتِيتُ بِإِنَاءَيْنِ فِي أَحَدِهِمَا لَبَنٌ وَفِي الآخَرِ خَمْرٌ فَقِيلَ لِي خُذْ أَيَّهُمَا شِئْتَ ‏.‏ فَأَخَذْتُ اللَّبَنَ فَشَرِبْتُهُ ‏.‏ فَقَالَ هُدِيتَ الْفِطْرَةَ أَوْ أَصَبْتَ الْفِطْرَةَ أَمَا إِنَّكَ لَوْ أَخَذْتَ الْخَمْرَ غَوَتْ أُمَّتُكَ ‏”‏ ‏.‏

আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ‘নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, মি’রাজ রজনীতে আমি মূসা (‘আঃ) এর সাথে দেখা করেছি। এরপর ‘নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর দেহের আকৃতি বর্ণনা করেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, ‘নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর দেহের আকৃতি বর্ণনা করেছেন যে, তিনি মৃদু কোঁকড়ানো চুল বিশিষ্ট। দেখতে শানুয়াহ গোত্রের লোকদের ন্যায়। ‘নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমি ঈসা (‘আঃ) এর সাথে দেখা করেছি। এরপর তিনি ‘ঈসা আ এর আকৃতি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, তিনি মধ্যম ধরনের লোহিত বর্ণের পুরুষ। মনে হচ্ছিল এক্ষুনি যেন গোসলখানা থেকে বেরিয়ে আসলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমি ইবরাহীম (‘আঃ) কে দেখেছি। তাঁর সন্তানদের মধ্যে আমিই সবচেয়ে বেশী তাঁর সাদৃশ্যের অধিকারী। এরপর আমার সম্মুখে দু’টি পাত্র পেশ করা হয়, এর একটি দুধের অপরটি শরাবের। আমাকে বলা হলো, এর মধ্যে যেটা আপনার ইচ্ছা সেটা গ্রহন করুন। আমি দুধ গ্রহন করে তা পান করলাম। জিবরীল (‘আঃ) আমাকে বললেন, আপনাকে ফিতরাহ এরই হিদায়াত করা হয়েছে। আপনি যদি শরাব গ্রহন করতেন তবে আপনার উম্মাত গোমরাহ হয়ে যেত। (ই.ফা. ৩২১; ই.সে. ৩৩২)

৭৫. অধ্যায়ঃ
মারইয়াম পুত্র ‘ঈসা (‘আ) ও মাসীহিদ দাজ্জাল- এর বর্ণনা।

৩১৪
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، قَالَ قَرَأْتُ عَلَى مَالِكٍ عَنْ نَافِعٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ أَرَانِي لَيْلَةً عِنْدَ الْكَعْبَةِ فَرَأَيْتُ رَجُلاً آدَمَ كَأَحْسَنِ مَا أَنْتَ رَاءٍ مِنْ أُدْمِ الرِّجَالِ لَهُ لِمَّةٌ كَأَحْسَنِ مَا أَنْتَ رَاءٍ مِنَ اللِّمَمِ قَدْ رَجَّلَهَا فَهِيَ تَقْطُرُ مَاءً مُتَّكِئًا عَلَى رَجُلَيْنِ – أَوْ عَلَى عَوَاتِقِ رَجُلَيْنِ – يَطُوفُ بِالْبَيْتِ فَسَأَلْتُ مَنْ هَذَا فَقِيلَ هَذَا الْمَسِيحُ ابْنُ مَرْيَمَ ‏.‏ ثُمَّ إِذَا أَنَا بِرَجُلٍ جَعْدٍ قَطَطٍ أَعْوَرِ الْعَيْنِ الْيُمْنَى كَأَنَّهَا عِنَبَةٌ طَافِيَةٌ فَسَأَلْتُ مَنْ هَذَا فَقِيلَ هَذَا الْمَسِيحُ الدَّجَّالُ ‏”‏ ‏.‏

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাযিঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রসুলুলাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, একরাতে (স্বপ্নে) আমি কা’বা শরীফের কাছে আমাকে দেখতে পেলাম। গোধুম (গম) বর্ণের এক ব্যক্তিকে দেখলাম। এ বর্ণের যত লোক তোমরা দেখেছ তিনি ছিলেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর।ঘাড় পর্যন্ত লম্বা চুল ছিল তাঁর। তিনি এ চুল আচড়িয়ে রেখেছেন আর তা থেকে পানি ঝরছিল। দু’জনের উপর বা বর্ণনাকারী বলেন, দু’জনের কাধের উপর ভর করে বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করছেন। জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? বলা হলো ইনি মাসীহ ইবনু মারইয়াম। [৭৪] তারপর দেখি আরেক ব্যক্তি, অধিক কোকড়ানো চুল, ডান চক্ষুটি টেরা যেন একটি আঙুর ফুলে আছে। জিজ্ঞেস করলাম, এ কে? বলা হলো, মাসীহুদ দাজ্জাল। [৭৫] (ই.ফা. ৩২২; ই.সে. ৩৩৩)


[৭৪] ‘ঈসা আ কে এজন্য মাসীহ বলা হয় যে, যখন তিনি কোন অসুস্থ ব্যক্তির উপর হাত ফিরাতেন তখন সে ভাল হয়ে যেত এবং কেউ কেউ বলেন যে, তাঁর পায়ের তলা বরাবর ছিল, গভীর ছিলনা। এজন্য মাসীহ বলা হয়েছে আরো অনেকেই বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন এবং দাজ্জালকেও মাসীহ বলা হয়েছে। এজন্য যে, তাঁর চক্ষু বসা হবে ও ডান চক্ষু কানা হবে। আবার কেউ বলেছেন, শেষ যুগে যখন সে বের হবে তখন সারা দুনিয়া বিচরন করবে। যার জন্য তাকে মাসীহ বলা হয়েছে। (সংক্ষিপ্ত নাবাবী)

[৭৫] ইবনু ‘উমার (রাযিঃ) এর বর্ণিত এ হাদীস থেকে এটাই প্রমানিত হয় যে, ‘ঈসা (‘আঃ)-এর তাওয়াফের ঘটনা ‘নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্বপ্নযোগে ছিল। কেননা, এ হাদীসে দাজ্জালের তাওয়াফ করার বর্ণনাও এসেছে। যদিও সহীহ হাদীস হতে প্রমান আছে যে, দাজ্জাল মাক্কাহ ও মাদীনায় প্রবেশ করতে পারবেনা। কাযী ইয়ায (রহঃ) বলেন যে, সম্ভবত এর ব্যাখ্যা এ হতে পারে যে, দাজ্জালের মাক্কাহ ও মাদীনায় প্রবেশ করতে না দেয়া ওই যুগের সাথে খাস যখন সে ফাসাদে লিপ্ত হবে।

৩১৫
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ إِسْحَاقَ الْمُسَيَّبِيُّ، حَدَّثَنَا أَنَسٌ، – يَعْنِي ابْنَ عِيَاضٍ – عَنْ مُوسَى، – وَهُوَ ابْنُ عُقْبَةَ – عَنْ نَافِعٍ، قَالَ قَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ ذَكَرَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَوْمًا بَيْنَ ظَهْرَانَىِ النَّاسِ الْمَسِيحَ الدَّجَّالَ فَقَالَ ‏”‏ إِنَّ اللَّهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى لَيْسَ بِأَعْوَرَ أَلاَ إِنَّ الْمَسِيحَ الدَّجَّالَ أَعْوَرُ عَيْنِ الْيُمْنَى كَأَنَّ عَيْنَهُ عِنَبَةٌ طَافِيَةٌ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ وَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ أَرَانِي اللَّيْلَةَ فِي الْمَنَامِ عِنْدَ الْكَعْبَةِ فَإِذَا رَجُلٌ آدَمُ كَأَحْسَنِ مَا تَرَى مِنْ أُدْمِ الرِّجَالِ تَضْرِبُ لِمَّتُهُ بَيْنَ مَنْكِبَيْهِ رَجِلُ الشَّعَرِ يَقْطُرُ رَأْسُهُ مَاءً ‏.‏ وَاضِعًا يَدَيْهِ عَلَى مَنْكِبَىْ رَجُلَيْنِ وَهُوَ بَيْنَهُمَا يَطُوفُ بِالْبَيْتِ فَقُلْتُ مَنْ هَذَا فَقَالُوا الْمَسِيحُ ابْنُ مَرْيَمَ ‏.‏ وَرَأَيْتُ وَرَاءَهُ رَجُلاً جَعْدًا قَطَطًا أَعْوَرَ عَيْنِ الْيُمْنَى كَأَشْبَهِ مَنْ رَأَيْتُ مِنَ النَّاسِ بِابْنِ قَطَنٍ وَاضِعًا يَدَيْهِ عَلَى مَنْكِبَىْ رَجُلَيْنِ يَطُوفُ بِالْبَيْتِ فَقُلْتُ مَنْ هَذَا قَالُوا هَذَا الْمَسِيحُ الدَّجَّالُ ‏”‏ ‏.‏

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাযিঃ) থেকে বর্ণিতঃ

একদিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সহাবাদের সম্মুখে দাজ্জালের কথা উল্লেখ করে বললেন, অবশ্যই আল্লাহ তা’য়ালা টেরা চোখ বিশিষ্ট নন। জেনে রাখ দাজ্জালের ডান চোখ টেরা যেন ফোলা একটি আঙ্গুর। ইবনু উ’মার (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাআল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, একবার আমি স্বপ্নে আমাকে কা’বার কাছে পেলাম। গোধুম বর্ণের এক ব্যক্তিকে দেখলাম। এ বর্ণের তোমরা যত লোক দেখেছ তিনি ছিলেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর। চুল তাঁর কাধ পর্যন্ত ঝুলছিল। তাঁর চুলগুলো ছিল সোজা। তা থেকে তখন পানি ঝরছিল। তিনি দু’ ব্যক্তির কাধে হাত রেখে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করছিলেন। জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? বলা হলো, ইনি মাসীহ ইবনু মারইয়াম। তাঁরই পেছনে দেখলাম, আরেক ব্যক্তি, অধিক কোকড়ানো চুল। তার ডান চোখ ছিল টেরা। সে দেখতে ছিল ইবনু কাতান-এর ন্যায়। সেও দু ব্যক্তির কাধে হাত রেখে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করছিল। জিজ্ঞেস করলাম, এ কে? বলা হলো, মাসিহুদ দাজ্জাল। (ই.ফা. ৩২৩; ই.সে. ৩৩৪)

৩১৬
حَدَّثَنَا ابْنُ نُمَيْرٍ، حَدَّثَنَا أَبِي، حَدَّثَنَا حَنْظَلَةُ، عَنْ سَالِمٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ رَأَيْتُ عِنْدَ الْكَعْبَةِ رَجُلاً آدَمَ سَبِطَ الرَّأْسِ وَاضِعًا يَدَيْهِ عَلَى رَجُلَيْنِ ‏.‏ يَسْكُبُ رَأْسُهُ – أَوْ يَقْطُرُ رَأْسُهُ – فَسَأَلْتُ مَنْ هَذَا فَقَالُوا عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ أَوِ الْمَسِيحُ ابْنُ مَرْيَمَ – لاَ نَدْرِي أَىَّ ذَلِكَ قَالَ – وَرَأَيْتُ وَرَاءَهُ رَجُلاً أَحْمَرَ جَعْدَ الرَّأْسِ أَعْوَرَ الْعَيْنِ الْيُمْنَى أَشْبَهُ مَنْ رَأَيْتُ بِهِ ابْنُ قَطَنٍ فَسَأَلْتُ مَنْ هَذَا فَقَالُوا الْمَسِيحُ الدَّجَّالُ ‏”‏ ‏.‏

ইবনু ‘উমার (রাযিঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমি স্বপ্নযোগে কা’বার নিকটে খাড়া চুল বিশিষ্ট বাদামী রংয়ের এক ব্যক্তিকে দু’জন লোকের কাধের উপর হাত রাখা অবস্থায় দেখেছি। তাঁর মাথা থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছিল অথবা বলেছেন, ফোটা ফোটা পানি পড়ছিল। আমি জানতে চাইলাম, ইনি কে? লোকেরা বললো, ‘ঈসা ইবনু মারইয়াম (‘আঃ) অথবা বলেছেন, আল মাসীহ ইবনু মারইয়াম (‘আঃ)। সালিম বলেন, ইবনু ‘উমার (রাযি) সঠিকভাবে অবগত নন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোনটি বলেছেন। তবে তিনি এ কথাও বলেছেন যে, তাঁর পেছনে আমি এমন ব্যক্তিকেও দেখেছি, যে রক্তবর্ণের, স্থুল দেহী, মাথার চুল কোকড়ানো, ডান চোখ কানা, আকৃতিতে আমার দেখা (কাফির) ইবনু কাতানের সাথে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ। আমি জানতে চাইলাম, এ লোকটি কে? তারা বললেন, এ হলো ‘মাসীহে দাজ্জাল’। (ই.ফা. ৩২৪; ই.সে. ৩৩৫)

৩১৭
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا لَيْثٌ، عَنْ عُقَيْلٍ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ لَمَّا كَذَّبَتْنِي قُرَيْشٌ قُمْتُ فِي الْحِجْرِ فَجَلاَ اللَّهُ لِي بَيْتَ الْمَقْدِسِ فَطَفِقْتُ أُخْبِرُهُمْ عَنْ آيَاتِهِ وَأَنَا أَنْظُرُ إِلَيْهِ ‏”‏ ‏.‏

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, (মি’রাজের সংবাদে) কুরায়শরা আমাকে মিথ্যাবাদি বলে অপবাদ দিল। তখন আমি হাজরে আসওয়াদের পাশে দাঁড়ালে আল্লাহ্‌ তা’আলা আমার সম্মুখে বাইতুল মাকদাসকে তুলে ধরেন, আর আমি চোখে দেখেই তাঁর সকল সকল নিদর্শনাবলী উল্লেখ করে যেতে লাগলাম। (ই.ফা. ৩২৫, ই, সে, ৩৩৬)

৩১৮
حَدَّثَنِي حَرْمَلَةُ بْنُ يَحْيَى، حَدَّثَنَا ابْنُ وَهْبٍ، قَالَ أَخْبَرَنِي يُونُسُ بْنُ يَزِيدَ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏ “‏ بَيْنَمَا أَنَا نَائِمٌ رَأَيْتُنِي أَطُوفُ بِالْكَعْبَةِ فَإِذَا رَجُلٌ آدَمُ سَبِطُ الشَّعْرِ بَيْنَ رَجُلَيْنِ يَنْطِفُ رَأْسُهُ مَاءً – أَوْ يُهَرَاقُ رَأْسُهُ مَاءً – قُلْتُ مَنْ هَذَا قَالُوا هَذَا ابْنُ مَرْيَمَ ‏.‏ ثُمَّ ذَهَبْتُ أَلْتَفِتُ فَإِذَا رَجُلٌ أَحْمَرُ جَسِيمٌ جَعْدُ الرَّأْسِ أَعْوَرُ الْعَيْنِ كَأَنَّ عَيْنَهُ عِنَبَةٌ طَافِيَةٌ ‏.‏ قُلْتُ مَنْ هَذَا قَالُوا الدَّجَّالُ ‏.‏ أَقْرَبُ النَّاسِ بِهِ شَبَهًا ابْنُ قَطَنٍ ‏”‏ ‏.‏

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাযিঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, একদিন আমি ঘুমিয়েছিলাম। তখন দেখি যে, আমি কা’বা তাওয়াফ করছি। বাদামী বর্ণের মধ্যমাকৃতির এক ব্যক্তিকে সেখানে দেখলাম। তাঁর চুল গুলো ছিল সোজা। তিনি দু’জনের কাধে ভর করে তওয়াফ করছেন। আর তাঁর মাথা হতে টপটপ করে পানি ঝরছে। বর্ণনাকারী বলেন, এখানে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘হয়তো’ ‘অথবা’ শব্দ ব্যবহার করেছেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? বলা হয় ইনি ইবনু মারিয়াম (আঃ)। তারপর আমি চোখ ফিরিয়ে তাকালাম; লোহিত বর্ণের মোটা এক ব্যক্তিকে দেখলাম, তাঁর চুলগুলো ছিল কোঁকড়ানো। তার চোখ ছিল টেরা, যেন একটি ফোলা আঙ্গুর। জিজ্ঞেস করলাম, এ কে? বলা হলো, এ হলো দাজ্জাল। তার নিকটতম সদৃশ হলো ইবনু কাতান। (ই, ফা.৩২৬, ই সে.৩৩৭)

৩১৯
وَحَدَّثَنِي زُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، حَدَّثَنَا حُجَيْنُ بْنُ الْمُثَنَّى، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ، – وَهُوَ ابْنُ أَبِي سَلَمَةَ – عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الْفَضْلِ، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ لَقَدْ رَأَيْتُنِي فِي الْحِجْرِ وَقُرَيْشٌ تَسْأَلُنِي عَنْ مَسْرَاىَ فَسَأَلَتْنِي عَنْ أَشْيَاءَ مِنْ بَيْتِ الْمَقْدِسِ لَمْ أُثْبِتْهَا ‏.‏ فَكُرِبْتُ كُرْبَةً مَا كُرِبْتُ مِثْلَهُ قَطُّ قَالَ فَرَفَعَهُ اللَّهُ لِي أَنْظُرُ إِلَيْهِ مَا يَسْأَلُونِي عَنْ شَىْءٍ إِلاَّ أَنْبَأْتُهُمْ بِهِ وَقَدْ رَأَيْتُنِي فِي جَمَاعَةٍ مِنَ الأَنْبِيَاءِ فَإِذَا مُوسَى قَائِمٌ يُصَلِّي فَإِذَا رَجُلٌ ضَرْبٌ جَعْدٌ كَأَنَّهُ مِنْ رِجَالِ شَنُوءَةَ وَإِذَا عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ – عَلَيْهِ السَّلاَمُ – قَائِمٌ يُصَلِّي أَقْرَبُ النَّاسِ بِهِ شَبَهًا عُرْوَةُ بْنُ مَسْعُودٍ الثَّقَفِيُّ وَإِذَا إِبْرَاهِيمُ – عَلَيْهِ السَّلاَمُ – قَائِمٌ يُصَلِّي أَشْبَهُ النَّاسِ بِهِ صَاحِبُكُمْ – يَعْنِي نَفْسَهُ – فَحَانَتِ الصَّلاَةُ فَأَمَمْتُهُمْ فَلَمَّا فَرَغْتُ مِنَ الصَّلاَةِ قَالَ قَائِلٌ يَا مُحَمَّدُ هَذَا مَالِكٌ صَاحِبُ النَّارِ فَسَلِّمْ عَلَيْهِ ‏.‏ فَالْتَفَتُّ إِلَيْهِ فَبَدَأَنِي بِالسَّلاَمِ ‏”‏ ‏.‏

আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমি হাজরে আসওয়াদ এর নিকট ছিলাম। এ সময় কুরায়শরা আমাকে আমার মি’রাজ সম্পর্কে প্রশ্ন করতে শুরু করে। তারা আমাকে বাইতুল মাকদাসের এমন সব বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে লাগল যা আমি ভালভাবে দেখিনি। ফলে আমি খুবই চিন্তিত হয়ে পড়লাম।রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তারপর আল্লাহ্‌ তা’আলা আমার সামনে বাইতুল মাকদাসকে উদ্ভাসিত করে দিলেন এবং আমি তা দেখছিলাম। তারা আমকে যে প্রশ্ন করছিল তাঁর জবাব দিতে লাগলাম। এরপর ‘নাবীদের এক জামা’আতে ও আমি নিজেকে উদ্ভাসিত দেখলাম। মূসা (আঃ)-কে সালাতে দণ্ডায়মান দেখলাম। তিনি শানূয়াহ গোত্রের লোকদের ন্যায় মধ্যমাকৃতি। তাঁর ছুল ছিল কোঁকড়ানো। ‘ঈসা (আঃ)-কে ও সালাতে দাঁড়ানো দেখলাম। তিনি তোমাদের এ সাথীর মতই দেখতে অর্থাৎ মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মত। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তারপর সলাতের সময় হলো, আমি তাঁদের ইমামত করলাম। সলাত শেষে এক ব্যক্তি আমাকে বললেন, হে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! ইনি জাহান্নামের তত্ত্বাবধায়ক ‘মালিক’ ওকে সালাম করুন। আমি তাঁর দিকে তাকালাম। তিনি আমাকে আগেই সালাম করলেন। (ই.ফা. ৩২৭; ই.সে. ৩৩৮)

৭৬. অধ্যায়ঃ
সিদরাতুল মুনতাহার আলোচনা।

৩২০
وَحَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا أَبُو أُسَامَةَ، حَدَّثَنَا مَالِكُ بْنُ مِغْوَلٍ، ح وَحَدَّثَنَا ابْنُ نُمَيْرٍ، وَزُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، جَمِيعًا عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ نُمَيْرٍ، – وَأَلْفَاظُهُمْ مُتَقَارِبَةٌ – قَالَ ابْنُ نُمَيْرٍ حَدَّثَنَا أَبِي، حَدَّثَنَا مَالِكُ بْنُ مِغْوَلٍ، عَنِ الزُّبَيْرِ بْنِ عَدِيٍّ، عَنْ طَلْحَةَ، عَنْ مُرَّةَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ لَمَّا أُسْرِيَ بِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم انْتُهِيَ بِهِ إِلَى سِدْرَةِ الْمُنْتَهَى وَهِيَ فِي السَّمَاءِ السَّادِسَةِ إِلَيْهَا يَنْتَهِي مَا يُعْرَجُ بِهِ مِنَ الأَرْضِ فَيُقْبَضُ مِنْهَا وَإِلَيْهَا يَنْتَهِي مَا يُهْبَطُ بِهِ مِنْ فَوْقِهَا فَيُقْبَضُ مِنْهَا قَالَ ‏{‏ إِذْ يَغْشَى السِّدْرَةَ مَا يَغْشَى‏}‏ قَالَ فَرَاشٌ مِنْ ذَهَبٍ ‏.‏ قَالَ فَأُعْطِيَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ثَلاَثًا أُعْطِيَ الصَّلَوَاتِ الْخَمْسَ وَأُعْطِيَ خَوَاتِيمَ سُورَةِ الْبَقَرَةِ وَغُفِرَ لِمَنْ لَمْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ مِنْ أُمَّتِهِ شَيْئًا الْمُقْحِمَاتُ ‏.‏

‘আবদুল্লাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে মি’রাজ রজনীতে ‘সিদ্‌রাতুল মুন্‌তাহা’ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হলো। এটি ষষ্ঠ আসমানে অবস্থিত। [৭৬] জমিন থেকে যা কিছু উত্থিত হয় তা সে পর্যন্ত এসে পৌছে এবং সেখানে থেকে তা গ্রহণ করা হয়। তদ্রূপ ঊর্ধ্বলোক থেকে যা কিছু অবতরণ হয় তাও এ পর্যন্ত এসে পৌছে এবং সেখান থেকে তা গ্রহণ করা হয়। এরপর ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিলাওয়াত করলেনঃ “ যখন প্রান্তবর্তী বাদরী বৃক্ষটি যা দ্বারা আচ্ছাদিত হবার, তা দ্বারা আচ্ছাদিত হলো” – (সূরাহ আন্‌ নাজম ৫৩ : ১৬) এবং বলেন, এখানে ‘যা দ্বারা’ কথাটির অর্থ সোনার পতঙ্গসমূহ। তিনি বলেন, তারপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তিনটি বিষয় দান করা হলো, পাঁচ ওয়াক্ত সলাত। সূরাহ আল-বাকারায় শেষ দু’ আয়াত এবং শির্‌ক মুক্ত উম্মাতের মারাত্মক গুনাহ তাওবার মাধ্যমে ক্ষমার সুসংবাদ”। [৭৭] (ই.ফা. ৩২৮; ই.সে. ৩৩৯)

[৭৬] ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন যে, প্রত্যেক কিতাবে উল্লেখ আছে যে, সিদরাতুল মুনতাহা ষষ্ঠ আসমানে। শুধু আনাস (রাযিঃ) –এর বর্ণিত হাদীস সমূহে আছে যে, সিদরাতুল মুনতাহা সপ্তম আসমানের উপরে। কাযী ইয়ায বলেনঃ সঠিক এবং অধিকাংশের মত এটাই। এ দু’ প্রকার হাদীসের মধ্যে সামঞ্জস্য এভাবে করা যায় যে, ‘সিদরাতুল মুনতাহা’র জড় বা গোড়া ষষ্ঠ আসমানে এবং এ গাছের ডালপাতা সপ্তম আসমানের উপর পর্যন্ত গেছে। কারণ খুব বড় গাছ। খলীল বলেনঃ সিদরাতুল মুনতাহা একটি গাছ যা সপ্তম আসমানে আছে। যা আসমান সমূহ এবং জান্নাত সমূহকে ছায়া করে আছে।

[৭৭] মারাত্মক গুনাহ ক্ষমার অর্থ এ উম্মাহর যে ব্যক্তি শিরক মুক্ত অবস্থায় মারা যাবে, সে চিরস্তায়ী জাহান্নামে থাকবে না। বরং আল্লাহ্‌ তাকে যখনই হোক ক্ষমা করে দিবেন। হে আল্লাহ্‌! তোমার খাস রহমতে শিরক হতে আমাদের বাচিয়ে রেখ এবং তাওহিদের উপর যেন আমাদের সমাপ্তি হয় এ প্রার্থনা করি। (সক্ষিপ্ত নাবাবী)

৩২১
وَحَدَّثَنِي أَبُو الرَّبِيعِ الزَّهْرَانِيُّ، حَدَّثَنَا عَبَّادٌ، – وَهُوَ ابْنُ الْعَوَّامِ – حَدَّثَنَا الشَّيْبَانِيُّ، قَالَ سَأَلْتُ زِرَّ بْنَ حُبَيْشٍ عَنْ قَوْلِ اللَّهِ، عَزَّ وَجَلَّ ‏{‏ فَكَانَ قَابَ قَوْسَيْنِ أَوْ أَدْنَى‏}‏ قَالَ أَخْبَرَنِي ابْنُ مَسْعُودٍ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم رَأَى جِبْرِيلَ لَهُ سِتُّمِائَةِ جَنَاحٍ ‏.‏

শাইবানী (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আমি যির ইবনু হুবায়শকে “তাদের মধ্যে দু’ ধনুকের ব্যবধান ছিল কিংবা তাঁর ও কম”-(সূরাহ আন্‌ নাজ্‌ম ৫৩ : ৯)। এ আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বললেন, ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) আমাকে বলেছেন, ‘নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিবরীল (আঃ)-কে দেখেছিলেন, তাঁর ছয়শ’ ডানা আছে (ই.ফা. ৩২৯; ই.সে. ৩৪০)

৩২২
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا حَفْصُ بْنُ غِيَاثٍ، عَنِ الشَّيْبَانِيِّ، عَنْ زِرٍّ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ ‏{‏ مَا كَذَبَ الْفُؤَادُ مَا رَأَى‏}‏ قَالَ رَأَى جِبْرِيلَ – عَلَيْهِ السَّلاَمُ – لَهُ سِتُّمِائَةِ جَنَاحٍ ‏.‏

‘আবদুল্লাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিতঃ

“তিনি যা দেখেছেন তাঁর অন্তকরণ তা অস্বীকার করেনি”-(সূরাহ আন্‌ নাজ্‌ম ৫৩ : ১১)। আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন এবং এর ব্যাখা প্রসঙ্গে বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিবরীল (আঃ)-কে দেখেছিলেন তাঁর ছয়শ’ ডানা আছে। (ই.ফা. ৩৩০; ই.সে. ৩৪১)

৩২৩
حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ مُعَاذٍ الْعَنْبَرِيُّ، حَدَّثَنَا أَبِي، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ سُلَيْمَانَ الشَّيْبَانِيِّ، سَمِعَ زِرَّ بْنَ حُبَيْشٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ ‏{‏ لَقَدْ رَأَى مِنْ آيَاتِ رَبِّهِ الْكُبْرَى‏}‏ قَالَ رَأَى جِبْرِيلَ فِي صُورَتِهِ لَهُ سِتُّمِائَةِ جَنَاحٍ ‏.‏

‘আবদুল্লাহ থেকে বর্ণিতঃ

“তিনি তো তাঁর প্রতিপালকের মহান নিদর্শনাবলী দেখেছিলেন”-(সূরাহ আন্‌ নাজ্‌ম ৫৩ : ১৮)। এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন এবং এর ব্যাখা প্রসঙ্গে বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিবরীল (আঃ)-কে তাঁর আকৃতিতে দেখেছিলেন, তাঁর ছয়শ’ ডানা আছে। (ই.ফা. ৩৩১; ই.সে. ৩৪২)

FOR MORE CLICK HERE

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]