সহীহ মুসলিম শরীফ হাদিস আরবি বাংলা মসজিদ ও সালাতের স্থানসমূহ অধ্যায় ১ম ভাগ হাদিস নং ১০৪৮ – ১০৯৮

১. অধ্যায়ঃ
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর মসজিদ নির্মাণ

১০৪৮
حَدَّثَنِي أَبُو كَامِلٍ الْجَحْدَرِيُّ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَاحِدِ، حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ، ح قَالَ وَحَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، وَأَبُو كُرَيْبٍ قَالاَ حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ التَّيْمِيِّ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي ذَرٍّ، قَالَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَىُّ مَسْجِدٍ وُضِعَ فِي الأَرْضِ أَوَّلُ قَالَ ‏”‏ الْمَسْجِدُ الْحَرَامُ ‏”‏ ‏.‏ قُلْتُ ثُمَّ أَىٌّ قَالَ ‏”‏ الْمَسْجِدُ الأَقْصَى ‏”‏ ‏.‏ قُلْتُ كَمْ بَيْنَهُمَا قَالَ ‏”‏ أَرْبَعُونَ سَنَةً وَأَيْنَمَا أَدْرَكَتْكَ الصَّلاَةُ فَصَلِّ فَهُوَ مَسْجِدٌ ‏”‏ ‏.‏ وَفِي حَدِيثِ أَبِي كَامِلٍ ‏”‏ ثُمَّ حَيْثُمَا أَدْرَكَتْكَ الصَّلاَةُ فَصَلِّهْ فَإِنَّهُ مَسْجِدٌ ‏”‏ ‏.

আবু যার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রসুল! পৃথিবীতে কোন্ মসজিদটি সর্বপ্রথম নির্মিত হয়েছিল? তিনি বললেন, মাসজিদুল হারাম। আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম এরপর কোনটি (মসজিদটি)। তিনি বললেন, আল মাসজিদুল আক্বসা বা বায়তুল মাক্বদিস। আমি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলাম, এ দুটি মাসজিদের নির্মাণকালের মধ্যে ব্যবধান কত? তিনি বললেন, চল্লিশ বছর। (তিনি আরো বললেনঃ) যে স্হানেই সলাতের সময় উপস্হিত হবে, তুমি সেখানেই সলাত আদায় করে নিবে। কারণ সে জায়গাটাও মসজিদ।

আবু কামিল বর্ণিত হাদীসে আছে, তাই যেখানেই সলাতের সময় হবে, তুমি সেখানেই সলাত আদায় করে নিবে। কারণ সেটিও মসজিদ। (ইসলামিক ফাঊন্ডেশন বাংলাদেশ ১০৪২, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার ১০৫২)

১০৪৯
حَدَّثَنِي عَلِيُّ بْنُ حُجْرٍ السَّعْدِيُّ، أَخْبَرَنَا عَلِيُّ بْنُ مُسْهِرٍ، حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ بْنِ يَزِيدَ التَّيْمِيِّ، قَالَ كُنْتُ أَقْرَأُ عَلَى أَبِي الْقُرْآنَ فِي السُّدَّةِ فَإِذَا قَرَأْتُ السَّجْدَةَ سَجَدَ فَقُلْتُ لَهُ يَا أَبَتِ أَتَسْجُدُ فِي الطَّرِيقِ قَالَ إِنِّي سَمِعْتُ أَبَا ذَرٍّ يَقُولُ سَأَلْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَنْ أَوَّلِ مَسْجِدٍ وُضِعَ فِي الأَرْضِ قَالَ ‏”‏ الْمَسْجِدُ الْحَرَامُ ‏”‏ ‏.‏ قُلْتُ ثُمَّ أَىٌّ قَالَ ‏”‏ الْمَسْجِدُ الأَقْصَى ‏”‏ ‏.‏ قُلْتُ كَمْ بَيْنَهُمَا قَالَ ‏”‏ أَرْبَعُونَ عَامًا ثُمَّ الأَرْضُ لَكَ مَسْجِدٌ فَحَيْثُمَا أَدْرَكَتْكَ الصَّلاَةُ فَصَلِّ ‏”‏ ‏.

ইবরাহীম ইবনু ইয়াযীদ আত্ তায়মী (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে “সাদ্দাহ” অর্থাৎ মাসজিদের দরজার বাইরে কুরআন মাজীদ পাঠ করে শুনাতাম। আমি সাজদার আয়াত পড়লে তিনি তখন সাজদাহ্ করতেন। আমি তাকে বলতাম, আব্বাজান! আপনি রাস্তায় সাজদাহ করছেন? তিনি বলতেন, আমি আবূ যার-কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে পৃথিবীতে নির্মিত সর্বপ্রথম মসজিদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, মাসজিদুল হারাম (সর্বপ্রথম নির্মিত হয়েছিল) আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এর পর কোন মসজিদ (নির্মিত হয়েছিল?) তিনি বললেন, মাসজিদুল আক্বসা। আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম, এ দু’টি মাসজিদের (নির্মিত কাজের) মধ্যে কতদিনের ব্যবধান? তিনি বললেন, চল্লিশ বছর। এছাড়া গোটা পৃথিবীইতো মসজিদ। সুতরাং যেখানেই সলাতের সময় হবে, সেখানেই সলাত আদায় করে নিবে। (ই. ফা. ১০৪৩ ই. সে. ১০৫৩)

১০৫০
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، أَخْبَرَنَا هُشَيْمٌ، عَنْ سَيَّارٍ، عَنْ يَزِيدَ الْفَقِيرِ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ الأَنْصَارِيِّ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ أُعْطِيتُ خَمْسًا لَمْ يُعْطَهُنَّ أَحَدٌ قَبْلِي كَانَ كُلُّ نَبِيٍّ يُبْعَثُ إِلَى قَوْمِهِ خَاصَّةً وَبُعِثْتُ إِلَى كُلِّ أَحْمَرَ وَأَسْوَدَ وَأُحِلَّتْ لِيَ الْغَنَائِمُ وَلَمْ تُحَلَّ لأَحَدٍ قَبْلِي وَجُعِلَتْ لِيَ الأَرْضُ طَيِّبَةً طَهُورًا وَمَسْجِدًا فَأَيُّمَا رَجُلٍ أَدْرَكَتْهُ الصَّلاَةُ صَلَّى حَيْثُ كَانَ وَنُصِرْتُ بِالرُّعْبِ بَيْنَ يَدَىْ مَسِيرَةِ شَهْرٍ وَأُعْطِيتُ الشَّفَاعَةَ ‏”‏ ‏.

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ আল আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

সূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমাকে এমন পাঁচটি বিশেষ মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য দান করা হয়েছে যা অন্য কোন নাবীকে দেয়া হয়নি, প্রত্যেক নাবীকে শুধু তার কাওমের জন্য পাঠানো হতো। কিন্তু আমাকে সাদা ও কালো সবার জন্য নবী করে পাঠানো হয়েছে। আমার জন্য গণীমাত বা যুদ্ধলব্ধ অর্থ-সম্পদ হালাল করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমার পূর্বে আর কারো (কোন নাবীর) জন্য তা হালাল ছিল না। আমার জন্য গোটা পৃথিবী পাক-পবিত্র ও মসজিদ করে দেয়া হয়েছে। সুতরাং সলাতের সময় হলে যে কোন লোক যে কোন স্হানে সলাত আদায় করে নিতে পারে। আমাকে একমাসের পথের দূরত্ব পর্যন্ত অত্যন্ত শান শাওকাত সহকারে (শত্রু ও অন্তর ভীতি দ্বারা) সাহায্য করা হয়েছে। আর আমাকে শাফা’আতের সুযোগ দান করা হয়েছে। (ই. ফা. ১০৪৪ ই. সে. ১০৫৪)

১০৫১
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا هُشَيْمٌ، أَخْبَرَنَا سَيَّارٌ، حَدَّثَنَا يَزِيدُ الْفَقِيرُ، أَخْبَرَنَا جَابِرُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏.‏ فَذَكَرَ نَحْوَهُ ‏.

জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নিশ্চয়ই রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন….. অতঃপর তিনি উপরে বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (ই. ফা. ১০৪৫ ই. সে. ১০৫৪)

১০৫২
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ فُضَيْلٍ، عَنْ أَبِي مَالِكٍ الأَشْجَعِيِّ، عَنْ رِبْعِيٍّ، عَنْ حُذَيْفَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ فُضِّلْنَا عَلَى النَّاسِ بِثَلاَثٍ جُعِلَتْ صُفُوفُنَا كَصُفُوفِ الْمَلاَئِكَةِ وَجُعِلَتْ لَنَا الأَرْضُ كُلُّهَا مَسْجِدًا وَجُعِلَتْ تُرْبَتُهَا لَنَا طَهُورًا إِذَا لَمْ نَجِدِ الْمَاءَ ‏”‏ ‏.‏ وَذَكَرَ خَصْلَةً أُخْرَى ‏.

হুযায়ফাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অন্য সব লোকের চেয়ে তিনটি বিষয়ে আমাদেরকে (উম্মাতে মুহাম্মাদীকে) মর্যাদা দান করা হয়েছে। আমাদের (সলাতের) কাতার বা সারি মালাকগণের (ফেরেশতাগণের) কাতার বা সারির মত করা হয়েছে। সমগ্র পৃথিবী আমাদের জন্য মসজিদ করে দেয়া হয়েছে। আর পানি না পেলে পৃথিবীর মাটিকে আমাদের পবিত্রতা অর্জনের উপকরণ করে দেয়া হয়েছে। এরপর তিনি আরেকটি বিষয়ও উল্লেখ করলেন। (ই. ফা. ১০৪৬ ই. সে. ১০৫৫)

১০৫৩
حَدَّثَنَا أَبُو كُرَيْبٍ، مُحَمَّدُ بْنُ الْعَلاَءِ أَخْبَرَنَا ابْنُ أَبِي زَائِدَةَ، عَنْ سَعْدِ بْنِ طَارِقٍ، حَدَّثَنِي رِبْعِيُّ بْنُ حِرَاشٍ، عَنْ حُذَيْفَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏.‏ بِمِثْلِهِ ‏.

হুযায়ফাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, …….. এরপর এ কথা বলে তিনি পূর্ব বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ হাদিস বর্ণনা করলেন। (ই. ফা. ১০৪৭ ই. সে. ১০৫৬)

১০৫৪
وَحَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ أَيُّوبَ، وَقُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، وَعَلِيُّ بْنُ حُجْرٍ، قَالُوا حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ، – وَهُوَ ابْنُ جَعْفَرٍ – عَنِ الْعَلاَءِ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ فُضِّلْتُ عَلَى الأَنْبِيَاءِ بِسِتٍّ أُعْطِيتُ جَوَامِعَ الْكَلِمِ وَنُصِرْتُ بِالرُّعْبِ وَأُحِلَّتْ لِيَ الْغَنَائِمُ وَجُعِلَتْ لِيَ الأَرْضُ طَهُورًا وَمَسْجِدًا وَأُرْسِلْتُ إِلَى الْخَلْقِ كَافَّةً وَخُتِمَ بِيَ النَّبِيُّونَ ‏”‏ ‏.

আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অন্য সব নাবীদের চাইতে আমাকে ছয়টি বিশেষ মর্যাদা দান করা হয়েছে। আমাকে সংক্ষিপ্ত অথচ ব্যাপক অর্থবোধক কথা বলার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। আমাকে অত্যন্ত প্রভাব দ্বারা সাহায্য করা হয়েছে। আমার জন্য গণীমাতের (যুদ্ধলব্ধ) অর্থ সম্পদ হালাল করা হয়েছে। আমার জন্য গোটা পৃথিবীর ভূমি বা মাটি পবিত্রতা হাসিলকারী বা মসজিদ করা হয়েছে। আমাকে সমগ্র সৃষ্টির জন্য (নাবী করে) পাঠানো হয়েছে। আর আমাকে দিয়ে নাবীদের আগমন-ধারা সমাপ্ত করা হয়েছে। (ই. ফা. ১০৪৮ ই. সে. ১০৫৭)

১০৫৫
حَدَّثَنِي أَبُو الطَّاهِرِ، وَحَرْمَلَةُ، قَالاَ أَخْبَرَنَا ابْنُ وَهْبٍ، حَدَّثَنِي يُونُسُ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ بُعِثْتُ بِجَوَامِعِ الْكَلِمِ وَنُصِرْتُ بِالرُّعْبِ وَبَيْنَا أَنَا نَائِمٌ أُتِيتُ بِمَفَاتِيحِ خَزَائِنِ الأَرْضِ فَوُضِعَتْ فِي يَدَىَّ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ فَذَهَبَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَنْتُمْ تَنْتَثِلُونَهَا ‏.

আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন। আমাকে সংক্ষিপ্ত অথচ ব্যাপক অর্থবোধক কথা বলার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। আমাকে অত্যন্ত প্রভাব দ্বারা সাহায্য করা হয়েছে। একদিন ঘুমের মাঝে স্বপ্নে আমার কাছে পৃথিবীর ধনভান্ডারের চাবিসমূহ এনে আমার হাতে দেয়া হলো। আবু হুরায়রাহ্…… (এর ব্যাখ্যা করে) বলেছেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তো বিদায় নিয়ে চলে গিয়েছেন, আর তোমরা তা আহরণ [১] করে চলেছ। (ই. ফা. ১০৪৯ ই. সে. ১০৫৮)

[১] দুনিয়ার দিক-দিগন্ত বিজিত হওয়া এবং ধনরাজী আহরণ করা। (শারহে নাবাবী – ১ম খন্ড, ১৯৯)

১০৫৬
وَحَدَّثَنَا حَاجِبُ بْنُ الْوَلِيدِ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ حَرْبٍ، عَنِ الزُّبَيْدِيِّ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، أَخْبَرَنِي سَعِيدُ بْنُ الْمُسَيَّبِ، وَأَبُو سَلَمَةَ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ، قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏.‏ مِثْلَ حَدِيثِ يُونُسَ ‏.

আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি যে, অতঃপর ইউনুছ বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (ই. ফা. ১০৫০ ই. সে. ১০৫৯)

১০৫৭
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ رَافِعٍ، وَعَبْدُ بْنُ حُمَيْدٍ، قَالاَ حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنِ ابْنِ الْمُسَيَّبِ، وَأَبِي، سَلَمَةَ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم بِمِثْلِهِ ‏.

আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) -এর মাধ্যমে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অনুরূপ হাদিস বর্ণনা করেছেন। (ই. ফা. ১০৫১ ই. সে. ১০৬০)

১০৫৮
وَحَدَّثَنِي أَبُو الطَّاهِرِ، أَخْبَرَنَا ابْنُ وَهْبٍ، عَنْ عَمْرِو بْنِ الْحَارِثِ، عَنْ أَبِي يُونُسَ، مَوْلَى أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّهُ حَدَّثَهُ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ قَالَ ‏ “‏ نُصِرْتُ بِالرُّعْبِ عَلَى الْعَدُوِّ وَأُوتِيتُ جَوَامِعَ الْكَلِمِ وَبَيْنَمَا أَنَا نَائِمٌ أُتِيتُ بِمَفَاتِيحِ خَزَائِنِ الأَرْضِ فَوُضِعَتْ فِي يَدَىَّ ‏”‏ ‏.

আবুত্ ত্বহির (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমাকে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রবল প্রভাব দ্বারা সাহায্য করা হয়েছে। আমাকে সংক্ষিপ্ত অথচ ব্যাপক অর্থবোধক কথা বলার ক্ষমতা দান করা হয়েছে। আর একদিন ঘুমের মাঝে স্বপ্নে আমার কাছে পৃথিবীর ধন-ভান্ডারের চাবিসমুহ এনে আমার হাতে দেয়া হয়েছে। (ই. ফা. ১০৫২ ই. সে. ১০৬১)

১০৫৯
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ رَافِعٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، حَدَّثَنَا مَعْمَرٌ، عَنْ هَمَّامِ بْنِ مُنَبِّهٍ، قَالَ هَذَا مَا حَدَّثَنَا أَبُو هُرَيْرَةَ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَذَكَرَ أَحَادِيثَ مِنْهَا وَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ نُصِرْتُ بِالرُّعْبِ وَأُوتِيتُ جَوَامِعَ الْكَلِمِ ‏”‏ ‏.

হাম্মাদ ইবনু মুনাববিহ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) … রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে কিছু সংখ্যক হাদিস বর্ণনা করে আমাদের শুনালেন। তার মধ্যে একটি হাদিস হলো, তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমাকে প্রবল প্রভাব দ্বারা সাহায্য করা হয়েছে। আমাকে সংক্ষিপ্ত অথচ ব্যাপক অর্থবোধক কথা বলার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। (ই. ফা. ১০৫৩ ই. সে. ১০৬২)

১০৬০
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، وَشَيْبَانُ بْنُ فَرُّوخَ، كِلاَهُمَا عَنْ عَبْدِ الْوَارِثِ، – قَالَ يَحْيَى أَخْبَرَنَا عَبْدُ الْوَارِثِ بْنُ سَعِيدٍ، عَنْ أَبِي التَّيَّاحِ الضُّبَعِيِّ، حَدَّثَنَا أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَدِمَ الْمَدِينَةَ فَنَزَلَ فِي عُلْوِ الْمَدِينَةِ فِي حَىٍّ يُقَالُ لَهُمْ بَنُو عَمْرِو بْنِ عَوْفٍ ‏.‏ فَأَقَامَ فِيهِمْ أَرْبَعَ عَشْرَةَ لَيْلَةً ثُمَّ إِنَّهُ أَرْسَلَ إِلَى مَلإِ بَنِي النَّجَّارِ فَجَاءُوا مُتَقَلِّدِينَ بِسُيُوفِهِمْ – قَالَ – فَكَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَلَى رَاحِلَتِهِ وَأَبُو بَكْرٍ رِدْفُهُ وَمَلأُ بَنِي النَّجَّارِ حَوْلَهُ حَتَّى أَلْقَى بِفِنَاءِ أَبِي أَيُّوبَ – قَالَ – فَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُصَلِّي حَيْثُ أَدْرَكَتْهُ الصَّلاَةُ وَيُصَلِّي فِي مَرَابِضِ الْغَنَمِ ثُمَّ إِنَّهُ أَمَرَ بِالْمَسْجِدِ قَالَ فَأَرْسَلَ إِلَى مَلإِ بَنِي النَّجَّارِ فَجَاءُوا فَقَالَ ‏ “‏ يَا بَنِي النَّجَّارِ ثَامِنُونِي بِحَائِطِكُمْ هَذَا ‏”‏ ‏.‏ قَالُوا لاَ وَاللَّهِ لاَ نَطْلُبُ ثَمَنَهُ إِلاَّ إِلَى اللَّهِ ‏.‏ قَالَ أَنَسٌ فَكَانَ فِيهِ مَا أَقُولُ كَانَ فِيهِ نَخْلٌ وَقُبُورُ الْمُشْرِكِينَ وَخِرَبٌ ‏.‏ فَأَمَرَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِالنَّخْلِ فَقُطِعَ وَبِقُبُورِ الْمُشْرِكِينَ فَنُبِشَتْ وَبِالْخِرَبِ فُسُوِّيَتْ – قَالَ – فَصَفُّوا النَّخْلَ قِبْلَةً وَجَعَلُوا عِضَادَتَيْهِ حِجَارَةً – قَالَ – فَكَانُوا يَرْتَجِزُونَ وَرَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَعَهُمْ وَهُمْ يَقُولُونَ اللَّهُمَّ إِنَّهُ لاَ خَيْرَ إِلاَّ خَيْرُ الآخِرَهْ فَانْصُرِ الأَنْصَارَ وَالْمُهَاجِرَهْ

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হিজরাত করে মদিনায় আগমন করলেন, মাদিনার উচ্চভূমিতে ‘বানী আমর ইবনু ‘আওফ গোত্রের এলাকায় অবতরণ করলেন, এবং সেখানে চৌদ্দ রাত অবস্থান করলেন। অতঃপর তিনি বানী নাজ্জার গোত্রের লোকজনকে ডেকে পাঠালেন তারা সবাই (খোলা) তরবারিসহ আগমন করলো। হাদীসের বর্ণনাকারী আনাস বলেন, আমি যেন রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে তাঁর সওয়ারী বা বাহনের উপর দেখতে পাচ্ছি। আবূ বাকর তাঁর পেছনে বসে আছেন এবং বানী নাজ্জারের লোকজন তাকে ঘিরে আছেন। অবশেষে তিনি আবূ আইয়ুবের (আনসারী) বাড়ীর আঙীনায় অবতরণ করলেন। বর্ণনাকারী আনাস বলেছেন, সলাতের সময় হলেই রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায় করে নিতেন। এমনকি তিনি বকরীর খোঁয়াড়েও সলাত আদায় করতেন। পরে তিনি মসজিদ নির্মাণ করতে আদিষ্ট হলে বানী নাজ্জার গোত্রের নেতৃস্হায়ী লোকদের ডেকে পাঠালেন। তারা উপস্হিত হলে তিনি তাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, হে বানী নাজ্জার! তোমরা তোমাদের এ বাগানটি অর্থের বিনিময়ে আমার কাছে বিক্রি কর। তারা বললো না, আল্লাহর শপথ, আমরা আল্লাহর নিকট ছাড়া আপনার কাছে এর মূল্য দাবী করব না। আনাস বলেন, ঐ বাগানটিতে যা ছিল তা আমি বর্ণনা করছি, ঐ বাগানে ছিল খেজুর গাছ, মুশরিকের কিছু কবর এবং কিছু ঘর-বাড়ির ধ্বংস স্তুপ। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নির্দেশে খেজুর গাছগুলো কেটে ফেলা হলো, মুশরিকদের কবরগুলো খুঁড়ে ফেলা হলো এবং ধ্বংসাবশেষ গুলো মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হলো। তারা (কর্তিত) খেজুর গাছের গুড়িসমুহ ক্বিবলার দিকে সারি করে রাখল এবং দরজার দু’পাশে পাথর স্হাপন করল। আনাস ইবনু মালিক বর্ণনা করেছেন। এসব কাজ করার সময় তারা একসুরে কবিতা আবৃতি করছিল। আর তাদের সাথে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একসুরে কবিতা আবৃতি করছিলেন।

তারা বলছিল,

‘হে আল্লাহ ! আখিরাতের কল্যান ছাড়া প্রকৃত কোন কল্যান নেই।

তুমি আনসার ও মুহাজিরদের সাহায্য করো’’ (ই. ফা. ১০৫৪ ই. সে. ১০৬৩)

১০৬১
حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ مُعَاذٍ الْعَنْبَرِيُّ، حَدَّثَنَا أَبِي، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، حَدَّثَنِي أَبُو التَّيَّاحِ، عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ يُصَلِّي فِي مَرَابِضِ الْغَنَمِ قَبْلَ أَنْ يُبْنَى الْمَسْجِدُ ‏.

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, মসজিদ নির্মাণের পূর্বে বকরীর খোঁয়াড়েও সলাত আদায় করতেন। (ই. ফা. ১০৫৫ ই. সে. ১০৬৪)

১০৬২
وَحَدَّثَنَاهُ يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، حَدَّثَنَا خَالِدٌ، – يَعْنِي ابْنَ الْحَارِثِ – حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ أَبِي التَّيَّاحِ، قَالَ سَمِعْتُ أَنَسًا، يَقُولُ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِمِثْلِهِ ‏.

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপরে বর্ণিত হাদীসটির বিষয়বস্তুর অনুরূপ করতেন। (ই. ফা. ১০৫৫ ই. সে. ১০৬৪)

২. অধ্যায়ঃ
বায়তুল মুকাদ্দাস হতে কা’বার দিকে ক্বিবলাহ্ পরিবর্তন

১০৬৩
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا أَبُو الأَحْوَصِ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ، قَالَ صَلَّيْتُ مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم إِلَى بَيْتِ الْمَقْدِسِ سِتَّةَ عَشَرَ شَهْرًا حَتَّى نَزَلَتِ الآيَةُ الَّتِي فِي الْبَقَرَةِ ‏{‏ وَحَيْثُمَا كُنْتُمْ فَوَلُّوا وُجُوهَكُمْ شَطْرَهُ‏}‏ فَنَزَلَتْ بَعْدَ مَا صَلَّى النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَانْطَلَقَ رَجُلٌ مِنَ الْقَوْمِ فَمَرَّ بِنَاسٍ مِنَ الأَنْصَارِ وَهُمْ يُصَلُّونَ فَحَدَّثَهُمْ فَوَلَّوْا وُجُوهَهُمْ قِبَلَ الْبَيْتِ ‏.

বারা ইবনু ‘আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, কুরআন মাজীদের আয়াত ‘’ওয়া হায়সু মা কুনতুম ফাওয়ালু উজূহাকুম শাত্বরাহ্’’ (অর্থাৎ – এখন যেখানেই তোমরা অবস্হান করো না কেন, ঐ (কা’বাহ ঘরের) দিকে মুখ করে সলাত আদায় করো) অবতীর্ণ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আমরা ষোল মাস যাবৎ বায়তুল মাক্বদিসের দিকে মুখ করে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর পিছনে সলাত আদায় করেছি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায়ের পর এ আয়াত অবতীর্ণ হলো। তখন সবার মধ্য হতে জনৈক ব্যাক্তি উঠে রওয়ানা হলো। সে সলাতরত একদল আনসারের নিকট দিয়ে অতিক্রম করার সময় তাদের কাছে হাদীসটি বর্ণনা করলেন। তারা সবাই (সলাতরত অবস্থায়ই) মুখ ফিরিয়ে বায়তুল্লাহ বা কা’বাহ্ ঘরের দিকে করে নিলো। (ই. ফা. ১০৫৭ ই. সে. ১০৬৫)

১০৬৪
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، وَأَبُو بَكْرِ بْنُ خَلاَّدٍ جَمِيعًا عَنْ يَحْيَى، – قَالَ ابْنُ الْمُثَنَّى حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ، – عَنْ سُفْيَانَ، حَدَّثَنِي أَبُو إِسْحَاقَ، قَالَ سَمِعْتُ الْبَرَاءَ، يَقُولُ صَلَّيْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم نَحْوَ بَيْتِ الْمَقْدِسِ سِتَّةَ عَشَرَ شَهْرًا أَوْ سَبْعَةَ عَشَرَ شَهْرًا ثُمَّ صُرِفْنَا نَحْوَ الْكَعْبَةِ ‏.

বারা ইবনু ‘আযিয (রাঃ থেকে বর্ণিতঃ

আমরা বায়তুল মাক্বদিসের দিকে মুখ করে ষোল কিংবা সতের মাস পর্যন্ত রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর পেছনে সলাত আদায় করেছি। এরপর আমাদেরকে কা’বার দিকে মুখ ফিরিয়ে দেয়া হয়। অর্থাৎ – ষোল কিংবা সতের মাস পরে আমরা কা’বার দিকে মুখ করে সলাত আদায়ের নির্দেশ লাভ করি। (ই. ফা. ১০৫৮ ই. সে. ১০৬৬)

১০৬৫
حَدَّثَنَا شَيْبَانُ بْنُ فَرُّوخَ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ مُسْلِمٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ دِينَارٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، ح وَحَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، – وَاللَّفْظُ لَهُ – عَنْ مَالِكِ بْنِ أَنَسٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ دِينَارٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ بَيْنَمَا النَّاسُ فِي صَلاَةِ الصُّبْحِ بِقُبَاءٍ إِذْ جَاءَهُمْ آتٍ فَقَالَ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَدْ أُنْزِلَ عَلَيْهِ اللَّيْلَةَ ‏.‏ وَقَدْ أُمِرَ أَنْ يَسْتَقْبِلَ الْكَعْبَةَ فَاسْتَقْبِلُوهَا ‏.‏ وَكَانَتْ وُجُوهُهُمْ إِلَى الشَّامِ فَاسْتَدَارُوا إِلَى الْكَعْبَةِ ‏.

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (র থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেন, ‘কুবা’ নামক মাসজিদে লোকজন ফাজরের সলাত আদায় করছিল। ঠিক তখনই একজন আগন্তুক এসে তাদেরকে বলল,আজ রাতে কা’বার দিকে মুখ ফিরিয়ে সলাত আদায়ের নির্দেশ দিয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর ওপর একটি আয়াত অবর্তীণ হয়েছে। তখন তাদের (মাসজিদে কুবায় সলাত আদায়কারী মুসল্লীদের) মুখ ছিল শামের (বায়তুল মাক্বদিস বা মাসজিদে আক্বসার, বা যা বর্তমানে ফিলিস্তীনে অবস্হিত) দিকে। অতঃপর (সলাতরত অবস্হায়) তারা কা’বার দিকে ঘুরে দাঁড়ালো। (ই. ফা. ১০৫৯ ই. সে. ১০৬৭)

১০৬৬
حَدَّثَنِي سُوَيْدُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنِي حَفْصُ بْنُ مَيْسَرَةَ، عَنْ مُوسَى بْنِ عُقْبَةَ، عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ دِينَارٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ بَيْنَمَا النَّاسُ فِي صَلاَةِ الْغَدَاةِ إِذْ جَاءَهُمْ رَجُلٌ ‏.‏ بِمِثْلِ حَدِيثِ مَالِكٍ ‏.

সুওয়াইদ ইবনু সা’ঈদ (রহঃ) ইবনু ‘উমার ও ‘আবদুল্লাহ ইবনু দীনার-এর মাধ্যমে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেন, লোকজন ফাজ্বরের সলাত আদায় করছিল। ঠিক তখন একজন সেখানে এসে হাজির হলো … এতটুকু বর্ণনা করার পর তিনি মালিক বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বিষয়বস্তু বর্ণনা করলেন। (ই. ফা. ১০৬০ ই. সে. ১০৬৮)

১০৬৭
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا عَفَّانُ، حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ سَلَمَةَ، عَنْ ثَابِتٍ، عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ يُصَلِّي نَحْوَ بَيْتِ الْمَقْدِسِ فَنَزَلَتْ ‏{‏ قَدْ نَرَى تَقَلُّبَ وَجْهِكَ فِي السَّمَاءِ فَلَنُوَلِّيَنَّكَ قِبْلَةً تَرْضَاهَا فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ‏}‏ فَمَرَّ رَجُلٌ مِنْ بَنِي سَلِمَةَ وَهُمْ رُكُوعٌ فِي صَلاَةِ الْفَجْرِ وَقَدْ صَلَّوْا رَكْعَةً فَنَادَى أَلاَ إِنَّ الْقِبْلَةَ قَدْ حُوِّلَتْ ‏.‏ فَمَالُوا كَمَا هُمْ نَحْوَ الْقِبْلَةِ ‏.

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বায়তুল মাক্বদিসের দিকে মুখ করে সলাত আদায় করতেন। তারপর এক সময় এ আয়াত অবর্তীর্ণ হলো (আরবি) অর্থাৎ- “আমি বার বার তোমাকে আসমানের দিকে তাকানো দেখছিলাম। এখন আমি তোমাকে তোমার পছন্দনীয় ক্বিবলার দিকে ফিরিয়ে দিলাম। সুতরাং তুমি তোমার মুখ মাসজিদে হারামের দিকে ফিরিয়ে নাও”- (সূরাহ আল বাক্বারাহ্ ২ : ১৩৩)। এরপর জনৈক ব্যক্তি ভোরবেলা বানী সালমাহ্ গোত্রের এলাকা দিয়ে অতিক্রম করছিল। সে দেখতে পেলো তারা ফজর সলা্তের এক রাক’আত আদায় করেছে এবং দ্বিতীয় রাক’আতে রুকূ’রত আছে। তখন সে ডেকে বলল, ক্বিবলাহ্ কিন্তু পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছে। (এ কথা শুনার পর) তারা সলাতরত অবস্থায়ই (নতুন) ক্বিবলার দিকে ঘুরে গেল। (ই.ফা. ১০৬১, ই.সে. ১০৬৯)

৩. অধ্যায়ঃ
ক্ববরের উপর মসজিদ নির্মাণ, মাসজিদে ছবি বানানো, ক্ববরকে সাজদার স্থান নির্ধারণ করার প্রতি নিষেধাজ্ঞা

১০৬৮
وَحَدَّثَنِي زُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا هِشَامٌ، أَخْبَرَنِي أَبِي، عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّ أُمَّ حَبِيبَةَ، وَأُمَّ سَلَمَةَ ذَكَرَتَا كَنِيسَةً رَأَيْنَهَا بِالْحَبَشَةِ – فِيهَا تَصَاوِيرُ – لِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ إِنَّ أُولَئِكِ إِذَا كَانَ فِيهِمُ الرَّجُلُ الصَّالِحُ فَمَاتَ بَنَوْا عَلَى قَبْرِهِ مَسْجِدًا وَصَوَّرُوا فِيهِ تِلْكَ الصُّوَرَ أُولَئِكِ شِرَارُ الْخَلْقِ عِنْدَ اللَّهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ‏”‏ ‏.

‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

উম্মু হাবীবাহ্ ও উম্মু সালামাহ্ (রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর দু’ স্ত্রী) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে এমন একটি গীর্জার বর্ণনা দিলো যার মধ্যে মূর্তি বা ছবি যা তারা হাবশায় দেখেছিলেন। তাদের কথা শুনে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তারা এরূপই করে থাকে। তাদের মধ্যেকার কোন নেক লোক মারা গেলে তারা তার ক্ববরের উপর মসজিদ নির্মাণ করে এবং তার মধ্যে ছবি বা মূর্তি স্থাপন করে। ক্বিয়ামাতের দিন এরা হবে আল্লাহর কাছে সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট সৃষ্টি। (ই.ফা. ১০৬২, ই.সে. ১০৭০)

১০৬৯
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، وَعَمْرٌو النَّاقِدُ، قَالاَ حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ عُرْوَةَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّهُمْ تَذَاكَرُوا عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي مَرَضِهِ فَذَكَرَتْ أُمُّ سَلَمَةَ وَأُمُّ حَبِيبَةَ كَنِيسَةً ‏.‏ ثُمَّ ذَكَرَ نَحْوَهُ ‏.

‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

(তিনি বলেছেনঃ ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন পীড়িত তখন সাহাবীগণ তাঁর কাছে কাথা-বার্তা বললেন। তখন উম্মু সালামাহ্ ও উম্মু হাবীবাহ্ গীর্জার কথা বর্ণনা করলেন। এরপর বর্ণনাকারী হাদীসটিতে পূর্বে বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বিষয়বস্তু বর্ণনা করলেন। (ই.ফা. ১০৬৩, ই.সে. ১০৭১)

১০৭০
حَدَّثَنَا أَبُو كُرَيْبٍ، حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، حَدَّثَنَا هِشَامٌ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ ذَكَرْنَ أَزْوَاجُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم كَنِيسَةً رَأَيْنَهَا بِأَرْضِ الْحَبَشَةِ يُقَالُ لَهَا مَارِيَةُ ‏.‏ بِمِثْلِ حَدِيثِهِمْ ‏.

‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর স্ত্রীগণ আবিসিনিয়ায় (যা বর্তমানে ইথিওপিয়া) ‘মারিয়াহ্’ নামক যে এক রকম গীর্জা দেখেছিলেন তার আলোচনা করলেন। এ পর্যন্ত বর্ণনা করার পর বর্ণনাকারী হাদীসটির অবশিষ্টাংশ পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করলেন। (ই.ফা. ১০৬৪ ই.সে. ১০৭২)

১০৭১
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، وَعَمْرٌو النَّاقِدُ، قَالاَ حَدَّثَنَا هَاشِمُ بْنُ الْقَاسِمِ، حَدَّثَنَا شَيْبَانُ، عَنْ هِلاَلِ بْنِ أَبِي حُمَيْدٍ، عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي مَرَضِهِ الَّذِي لَمْ يَقُمْ مِنْهُ ‏ “‏ لَعَنَ اللَّهُ الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى اتَّخَذُوا قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ ‏”‏ ‏.‏ قَالَتْ فَلَوْلاَ ذَاكَ أُبْرِزَ قَبْرُهُ غَيْرَ أَنَّهُ خُشِيَ أَنْ يُتَّخَذَ مَسْجِدًا ‏.‏ وَفِي رِوَايَةِ ابْنِ أَبِي شَيْبَةَ وَلَوْلاَ ذَاكَ لَمْ يَذْكُرْ قَالَتْ ‏.

‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর রোগ-শয্যায় বলেছিলেন, আল্লাহ ইয়াহূদ ও নাসারাদের (খৃস্টানদের) প্রতি লা’নাত বর্ষণ করুন। কারণ তারা তাদের নাবীদের ক্ববরকে মসজিদ বা সাজদার স্থান করে নিয়েছেন। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেছেনঃ যদি এরূপ করার আশঙ্কা না থাকতো তাহলে তাকে উন্মুক্ত স্থানে ক্ববর দেয়া হত।

কিন্তু যেহেতু তিনি আশংকা করতেন যে, তাঁর ক্ববরকে মসজিদ বা সাজদার স্থান করা হতে পারে তাই উন্মুক্ত স্থানে ক্ববর করতে দেননি। বরং ‘আয়িশাহ (রাঃ) -এর কক্ষে তাঁর ক্ববর করা হয়েছে।

তবে ইবনু আবূ শায়বাহ্-এর বর্ণিত হাদীসে (আরবি) স্থানে (আরবি) কথাটি বর্ণনা করা হয়েছে। আর তিনি ক্বালাত শব্দটি বর্ণনা করেননি। (ই.ফা. ১০৬৫ ই.সে. ১০৭৩)

১০৭২
حَدَّثَنَا هَارُونُ بْنُ سَعِيدٍ الأَيْلِيُّ، حَدَّثَنَا ابْنُ وَهْبٍ، أَخْبَرَنِي يُونُسُ، وَمَالِكٌ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، حَدَّثَنِي سَعِيدُ بْنُ الْمُسَيَّبِ، أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ قَاتَلَ اللَّهُ الْيَهُودَ اتَّخَذُوا قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ ‏”‏ ‏.

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ ইয়াহূদদের ধ্বংস করুন। তারা তাদের নাবীদের ক্ববরকে মসজিদ বা সাজদার স্থান বানিয়ে নিয়েছে। (ই.ফা. ১০৬৬, ই.সে. ১০৭৪)

১০৭৩
وَحَدَّثَنِي قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا الْفَزَارِيُّ، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ الأَصَمِّ، حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ الأَصَمِّ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ لَعَنَ اللَّهُ الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى اتَّخَذُوا قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ ‏”‏ ‏.

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ ইয়াহূদ ও নাসারাদের (খৃষ্টানদের) ওপর অভিসম্পাত বর্ষণ করুন। কারণ তারা তাদের নাবীদের ক্ববরসমূহকে মসজিদ বা সাজদার স্থান করে নিয়েছে। (ই.ফা. ১০৬৭, ই.সে. ১০৭৫)

১০৭৪
وَحَدَّثَنِي هَارُونُ بْنُ سَعِيدٍ الأَيْلِيُّ، وَحَرْمَلَةُ بْنُ يَحْيَى، قَالَ حَرْمَلَةُ أَخْبَرَنَا وَقَالَ، هَارُونُ حَدَّثَنَا ابْنُ وَهْبٍ، أَخْبَرَنِي يُونُسُ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، أَخْبَرَنِي عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، أَنَّ عَائِشَةَ، وَعَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَبَّاسٍ، قَالاَ لَمَّا نَزَلَتْ بِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم طَفِقَ يَطْرَحُ خَمِيصَةً لَهُ عَلَى وَجْهِهِ فَإِذَا اغْتَمَّ كَشَفَهَا عَنْ وَجْهِهِ فَقَالَ وَهُوَ كَذَلِكَ ‏ “‏ لَعْنَةُ اللَّهِ عَلَى الْيَهُودِ وَالنَّصَارَى اتَّخَذُوا قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ ‏”‏ ‏.‏ يُحَذِّرُ مِثْلَ مَا صَنَعُوا ‏.

‘আয়িশাহ্ ও ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তারা উভয়েই বর্ণনা করেছেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর ওয়াফাতের সময় ঘনিয়ে আসলে তিনি চাদর টেনে টেনে মুখমন্ডলের উপর দিচ্ছিলেন। কিন্তু আবার যখন অস্বস্তিবোধ করছিলেন তখন তা সরিয়ে দিচ্ছিলেন। এ অবস্থায় তিনি বলছিলেন ইয়াহূদ (ইয়াহূদী) ও নাসারাদের (খৃষ্টানদের) ওপর আল্লাহর অভিসম্পাত বর্ষিত হোক। তারা তাদের নাবীদের ক্ববরসমূহকে মসজিদ বা সাজদার স্থান করে নিয়েছে (অর্থাৎ-সেখানে তারা সাজদাহ্ করে)। আর ইয়াহূদ ও নাসারাদের মতো না করতে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বার বার হুঁশিয়ার করে দিচ্ছিলেন। (ই.ফা. ১০৬৮, ই.সে. ১০৭৬)

১০৭৫
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، وَإِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، – وَاللَّفْظُ لأَبِي بَكْرٍ – قَالَ إِسْحَاقُ أَخْبَرَنَا وَقَالَ أَبُو بَكْرٍ، حَدَّثَنَا زَكَرِيَّاءُ بْنُ عَدِيٍّ، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، عَنْ زَيْدِ بْنِ أَبِي أُنَيْسَةَ، عَنْ عَمْرِو بْنِ مُرَّةَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الْحَارِثِ النَّجْرَانِيِّ، قَالَ حَدَّثَنِي جُنْدَبٌ، قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَبْلَ أَنْ يَمُوتَ بِخَمْسٍ وَهُوَ يَقُولُ ‏ “‏ إِنِّي أَبْرَأُ إِلَى اللَّهِ أَنْ يَكُونَ لِي مِنْكُمْ خَلِيلٌ فَإِنَّ اللَّهَ تَعَالَى قَدِ اتَّخَذَنِي خَلِيلاً كَمَا اتَّخَذَ إِبْرَاهِيمَ خَلِيلاً وَلَوْ كُنْتُ مُتَّخِذًا مِنْ أُمَّتِي خَلِيلاً لاَتَّخَذْتُ أَبَا بَكْرٍ خَلِيلاً أَلاَ وَإِنَّ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ كَانُوا يَتَّخِذُونَ قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ وَصَالِحِيهِمْ مَسَاجِدَ أَلاَ فَلاَ تَتَّخِذُوا الْقُبُورَ مَسَاجِدَ إِنِّي أَنْهَاكُمْ عَنْ ذَلِكَ ‏”‏ ‏.

জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর মৃত্যুর পাঁচদিন পূর্বে তাঁকে বলতে শুনেছি যে, তোমাদের মধ্যে থেকে আমার কোন খলীল বা একান্ত বন্ধু থাকার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে মুক্ত। কারণ মহান আল্লাহ ইব্রাহীমকে যেমন খলীল বা একান্ত বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছেন, সে রকমভাবে আমাকেও খলীল বা একান্ত বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছেন। আমি আমার উম্মাতের মধ্যে থেকে কাউকে খলীল বা একান্ত বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে চাইলে আবূ বকরকেই তা করতাম। সাবধান থেকো তোমাদের পূর্বের যুগের লোকেরা তাদের নবী ও নেককার লোকদের ক্ববরসমূহকে মসজিদ (সাজদার স্থান) হিসেবে গ্রহণ করত। সাবধান তোমরা ক্ববরসমূহকে সাজদার স্থান বানাবে না। আমি এরূপ করতে তোমাদেরকে নিষেধ করে যাচ্ছি। (ই.ফা. ১০৬৯, ই.সে. ১০৭৭)

৪. অধ্যায়ঃ
মসজিদ নির্মাণের ফাযীলত এবং তার প্রতি উৎসাহ প্রদান

১০৭৬
حَدَّثَنِي هَارُونُ بْنُ سَعِيدٍ الأَيْلِيُّ، وَأَحْمَدُ بْنُ عِيسَى، قَالاَ حَدَّثَنَا ابْنُ وَهْبٍ، أَخْبَرَنِي عَمْرٌو، أَنَّ بُكَيْرًا، حَدَّثَهُ أَنَّ عَاصِمَ بْنَ عُمَرَ بْنِ قَتَادَةَ حَدَّثَهُ أَنَّهُ، سَمِعَ عُبَيْدَ اللَّهِ الْخَوْلاَنِيَّ، يَذْكُرُ أَنَّهُ سَمِعَ عُثْمَانَ بْنَ عَفَّانَ، عِنْدَ قَوْلِ النَّاسِ فِيهِ حِينَ بَنَى مَسْجِدَ الرَّسُولِ صلى الله عليه وسلم ‏.‏ إِنَّكُمْ قَدْ أَكْثَرْتُمْ وَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏”‏ مَنْ بَنَى مَسْجِدًا لِلَّهِ تَعَالَى – قَالَ بُكَيْرٌ حَسِبْتُ أَنَّهُ قَالَ – يَبْتَغِي بِهِ وَجْهَ اللَّهِ – بَنَى اللَّهُ لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ ‏”‏ ‏.‏ وَقَالَ ابْنُ عِيسَى فِي رِوَايَتِهِ ‏”‏ مِثْلَهُ فِي الْجَنَّةِ ‏”‏ ‏.

‘উবায়দুল্লাহ আল খাওলানী (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ‘উসমান ইবনু ‘আফফান (রাঃ) যে সময় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর মসজিদ নির্মাণ করলেন এবং এ কারণে লোকজন তার সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করতে শুরু করলো তখন ‘উবায়দুল্লাহ খাওলানী ‘উসমানকে বলতে শুনেছেন, তোমরা আমার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করে ফেলেছ। আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে মসজিদ নির্মাণ করবে, হাদীস বর্ণনাকারী বুকায়র বলেন, আমার মনে হয় তিনি বলেছিলেন এর মাধ্যমে (মসজিদ নির্মাণ) যদি সে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের প্রত্যাশা করে তাহলে মহান আল্লাহ তা’আলাও তার জন্য জান্নাতের মধ্যে একটি ঘর নির্মাণ করেন বলে উল্লেখ করেছেন।

ইবনু ‘ঈসা তাঁর বর্ণনায় (জান্নাতের মধ্যে অনুরূপ) শব্দ ব্যবহার করেছেন। (ই.ফা. ১০৭০, ই.সে. ১০৭৮)

১০৭৭
حَدَّثَنَا زُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، وَمُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، – وَاللَّفْظُ لاِبْنِ الْمُثَنَّى – قَالاَ حَدَّثَنَا الضَّحَّاكُ بْنُ مَخْلَدٍ، أَخْبَرَنَا عَبْدُ الْحَمِيدِ بْنُ جَعْفَرٍ، حَدَّثَنِي أَبِي، عَنْ مَحْمُودِ بْنِ لَبِيدٍ، أَنَّ عُثْمَانَ بْنَ عَفَّانَ، أَرَادَ بِنَاءَ الْمَسْجِدِ فَكَرِهَ النَّاسُ ذَلِكَ فَأَحَبُّوا أَنْ يَدَعَهُ عَلَى هَيْئَتِهِ فَقَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏ “‏ مَنْ بَنَى مَسْجِدًا لِلَّهِ بَنَى اللَّهُ لَهُ فِي الْجَنَّةِ مِثْلَهُ ‏”‏ ‏.

মাহমূদ ইবনু লাবীদ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ

(তিনি বলেছেন) ‘উসমান ইবনু ‘আফফান (রাঃ) মসজিদ নির্মাণ করতে মনস্থ করলে লোকজন তা করা পছন্দ করলো না। বরং মসজিদ যেমন আছে তেমন রেখে দেয়াই তারা ভাল মনে করলো। তখন ‘উসমান বললেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কেউ মসজিদ নির্মাণ করলে আল্লাহ তা’আলাও তার জন্য জান্নাতের মধ্যে অনুরূপ একখানা ঘর তৈরি করেন। (ই.ফা. ১০৭১, ই.সে. ১০৭৯)

৫. অধ্যায়ঃ
রুকূর সময় দু’হাত হাঁটুতে রাখা উত্তম হওয়া এবং তাত্ববীক্ব(দু’ হাত জোড় করে দু’পায়ের মাঝখানে) রাখা রহিত হওয়া

১০৭৮
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْعَلاَءِ الْهَمْدَانِيُّ أَبُو كُرَيْبٍ، قَالَ حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنِ الأَسْوَدِ، وَعَلْقَمَةَ، قَالاَ أَتَيْنَا عَبْدَ اللَّهِ بْنَ مَسْعُودٍ فِي دَارِهِ فَقَالَ أَصَلَّى هَؤُلاَءِ خَلْفَكُمْ فَقُلْنَا لاَ ‏.‏ قَالَ فَقُومُوا فَصَلُّوا ‏.‏ فَلَمْ يَأْمُرْنَا بِأَذَانٍ وَلاَ إِقَامَةٍ – قَالَ – وَذَهَبْنَا لِنَقُومَ خَلْفَهُ فَأَخَذَ بِأَيْدِينَا فَجَعَلَ أَحَدَنَا عَنْ يَمِينِهِ وَالآخَرَ عَنْ شِمَالِهِ – قَالَ – فَلَمَّا رَكَعَ وَضَعْنَا أَيْدِيَنَا عَلَى رُكَبِنَا – قَالَ – فَضَرَبَ أَيْدِيَنَا وَطَبَّقَ بَيْنَ كَفَّيْهِ ثُمَّ أَدْخَلَهُمَا بَيْنَ فَخِذَيْهِ – قَالَ – فَلَمَّا صَلَّى قَالَ إِنَّهُ سَتَكُونُ عَلَيْكُمْ أُمَرَاءُ يُؤَخِّرُونَ الصَّلاَةَ عَنْ مِيقَاتِهَا وَيَخْنُقُونَهَا إِلَى شَرَقِ الْمَوْتَى فَإِذَا رَأَيْتُمُوهُمْ قَدْ فَعَلُوا ذَلِكَ فَصَلُّوا الصَّلاَةَ لِمِيقَاتِهَا وَاجْعَلُوا صَلاَتَكُمْ مَعَهُمْ سُبْحَةً وَإِذَا كُنْتُمْ ثَلاَثَةً فَصَلُّوا جَمِيعًا وَإِذَا كُنْتُمْ أَكْثَرَ مِنْ ذَلِكَ فَلْيَؤُمَّكُمْ أَحَدُكُمْ وَإِذَا رَكَعَ أَحَدُكُمْ فَلْيَفْرِشْ ذِرَاعَيْهِ عَلَى فَخِذَيْهِ وَلْيَجْنَأْ وَلْيُطَبِّقْ بَيْنَ كَفَّيْهِ فَلَكَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى اخْتِلاَفِ أَصَابِعِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَأَرَاهُمْ ‏.

আসওয়াদ ও ‘আলক্বামাহ্ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তারা (উভয়ে) বলেছেন, আমরা ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) -এর বাড়িতে তার কাছে গেলাম। তিনি আমাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, এসব আমীর-উমারাহ্ এবং তাদের অনুসারীগণ যারা তোমাদের পেছনে রয়েছে তারা কি সলাত আদায় করেছে? জবাবে আমরা বললাম, না। তখন তিনি বললেন, তাহলে উঠে সলাত আদায় করে নাও। (কারণ সলাতের সময় হয়ে গিয়েছে)। কিন্তু তিনি আমাদেরকে আযান কিংবা একামত দিতে বললেন না। [২] বর্ণনাকারী বর্ণনা করেছেন যে, সলাত আদায়ের জন্য আমরা তার পিছনে দাঁড়াতে গেলে তিনি আমাদের একজনকে ধরে তার ডানপাশে দাঁড় করিয়ে দিলেন এবং অপরজনকে বাঁ পাশে দাঁড় করিয়ে দিলেন। [৩] তিনি রুকূ’তে গেলে আমরাও রুকূতে গিয়ে হাঁটুর উপর আমাদের হাত রাখলাম। তখন তিনি আমাদের হাত ধরলেন এবং হাতের দু’তালু একত্রিত করে দু’উরুর মাঝখানে স্থাপন করলেন। পরে সলাত শেষে বললেন, অচিরেই এমন সব আমীর –উমারাহ্ ও ধনাঢ্য ব্যক্তিবর্গের আবির্ভাব ঘটবে যারা সময়মত সলাত না পড়ে বিলম্ব করবে এবং সলাতের সময় এত সংকীর্ণ করে ফেলবে যে, সূর্য অস্তমিত প্রায় হয়ে যাবে। তাদেরকে এরূপ করতে দেখলে তোমরা সময়মত সলাত আদায় করে নিবে। আর তাদের সাথে পুনরায় নফল হিসেবে পড়ে নিবে (ইমামকে মাঝখানে রেখে)। তিনের অধিকজন থাকলে একজন ইমাম হবে (সামনে দাঁড়াবে) আর রুকূ’ করার সময় দু’হাত উরুর উপর রেখে রুকূ’তে যাবে এবং উভয় (হাতের) তালু একত্রিত করে দু’ উরুর মাঝখানে রাখবে। (এসব কথা বলার পর তিনি বললেন, এ মুহূর্তে) আমি যেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর এক হাতের অঙ্গুলি অপর হাতের অঙ্গুলিতে ঢুকাতে দেখতে পাচ্ছি। অতঃপর তিনি তা তাদেরকে দেখালেন। (ই.ফা. ১০৭২, ই.সে. ১০৮০)

[২] একাকী ফাজ্র সলাত আদায় কালে আযান ও ইক্বামাতের বিধান সম্পর্কে ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, পূর্ববর্তী ও পরবর্তী জমহুর উলামাগণ মত দিয়েছেন যে, এক্ষেত্রে ইক্বামাত বলা সুন্নাত, বড় জামা’আতের ইক্বামাতে এটা যথেষ্ট হবে না। আর আযানের ব্যাপারে আমাদের সঠিক মত হল-জামা’আতের আযান শুনা না গেলে আযান দিয়ে নিতে হবে। (শারহে মুসলিম-১ম, ২০২ পৃঃ)

[৩] ইবনু মাস’ঊদ ও তাঁর সাথীদ্বয় ব্যতীত সহাবীগণের সকল উলামাহ্ এবং অদ্যাবধি কালের সকল ‘আলিমের মতে ইমামের সাথে দু’জন থাকলেই তারা ইমামের পিছনে দাড়াবে। এ মর্মে জাবির… থেকে সহীহ্ মুসলিমের অন্যত্র হাদীস বর্ণিত হয়েছে। (শারহে মুসলিম-১ম, ২০২ পৃঃ)

১০৭৯
وَحَدَّثَنَا مِنْجَابُ بْنُ الْحَارِثِ التَّمِيمِيُّ، أَخْبَرَنَا ابْنُ مُسْهِرٍ، ح قَالَ وَحَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا جَرِيرٌ، ح قَالَ وَحَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ رَافِعٍ، حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ آدَمَ، حَدَّثَنَا مُفَضَّلٌ، كُلُّهُمْ عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ عَلْقَمَةَ، وَالأَسْوَدِ، أَنَّهُمَا دَخَلاَ عَلَى عَبْدِ اللَّهِ ‏.‏ بِمَعْنَى حَدِيثِ أَبِي مُعَاوِيَةَ ‏.‏ وَفِي حَدِيثِ ابْنِ مُسْهِرٍ وَجَرِيرٍ فَلَكَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى اخْتِلاَفِ أَصَابِعِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ رَاكِعٌ ‏.

মিনজাব ইবনুল হারিস আত্ তামীমী, ‘উসমান ইবনু আবূ শায়বাহ্ ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি’ (রহঃ) ‘আলক্বামাহ্ ও আসওয়াদ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তারা (উভয়ে) ‘আবদুল্লাহ (ইবনু মাস’ঊদ) -এর কাছে গেলেন। এরপর তারা মু’আবিয়াহ্ বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ অর্থবোধক হাদীস বর্ণনা করলেন। তবে ইবনু মুসহির ও জারীর বর্ণিত হাদীসে এতটুকু অতিরিক্ত বর্ণনা করা হয়েছে যে, এ মুহূর্তে আমি যেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর পরস্পর বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে রাখা আঙ্গুলগুলো দেখতে পাচ্ছি এবং তিনি রুকূ‘ অবস্থায় আছেন। (ই.ফা. ১০৭৩, ই.সে. ১০৮১)

১০৮০
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الدَّارِمِيُّ، أَخْبَرَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ مُوسَى، عَنْ إِسْرَائِيلَ، عَنْ مَنْصُورٍ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ عَلْقَمَةَ، وَالأَسْوَدِ، أَنَّهُمَا دَخَلاَ عَلَى عَبْدِ اللَّهِ فَقَالَ أَصَلَّى مَنْ خَلْفَكُمْ قَالاَ نَعَمْ ‏.‏ فَقَامَ بَيْنَهُمَا وَجَعَلَ أَحَدَهُمَا عَنْ يَمِينِهِ وَالآخَرَ عَنْ شِمَالِهِ ثُمَّ رَكَعْنَا فَوَضَعْنَا أَيْدِيَنَا عَلَى رُكَبِنَا فَضَرَبَ أَيْدِيَنَا ثُمَّ طَبَّقَ بَيْنَ يَدَيْهِ ثُمَّ جَعَلَهُمَا بَيْنَ فَخِذَيْهِ فَلَمَّا صَلَّى قَالَ هَكَذَا فَعَلَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏.

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আবদুর রহমান আদ্ দারিমী (রহঃ) ‘আলক্বামাহ্ ও আসওয়াদ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তারা (‘আলকামাহ্ ও আসওয়াদ) এক সময়ে ‘আবদুল্লাহর কাছে গেলে ‘আবদুল্লাহ তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, যারা (‘আমীর-উমারাগণ) থেকে গেল তারা কি সলাত আদায় করেছে? তারা বললেন, হ্যাঁ। এরপর তিনি (‘আবদুল্লাহ) তাদের দু’জনের মাঝখানে দাঁড়ালেন। তখন তিনি তাদের দু’জনের একজনকে ডানে এবং অপরজনকে বামে দাঁড় করালেন। এরপর আমরা (তার সাথে) রুকূ’ করলাম। এতে তিনি আমাদের হাত আমাদের হাঁটুর উপর রাখলেন। তিনি আমাদের হাত ধরে তা পরস্পর মিলিয়ে (একত্রিত করে) দিয়ে দু’উরুর মাঝখানে স্থাপন করলেন। সলাত শেষে তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপ করেছেন। (ই.ফা. ১০৭৪, ই.সে. ১০৮২)

১০৮১
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، وَأَبُو كَامِلٍ الْجَحْدَرِيُّ – وَاللَّفْظُ لِقُتَيْبَةَ – قَالاَ حَدَّثَنَا أَبُو عَوَانَةَ، عَنْ أَبِي يَعْفُورٍ، عَنْ مُصْعَبِ بْنِ سَعْدٍ، قَالَ صَلَّيْتُ إِلَى جَنْبِ أَبِي قَالَ وَجَعَلْتُ يَدَىَّ بَيْنَ رُكْبَتَىَّ فَقَالَ لِي أَبِي اضْرِبْ بِكَفَّيْكَ عَلَى رُكْبَتَيْكَ ‏.‏ قَالَ ثُمَّ فَعَلْتُ ذَلِكَ مَرَّةً أُخْرَى فَضَرَبَ يَدَىَّ وَقَالَ إِنَّا نُهِينَا عَنْ هَذَا وَأُمِرْنَا أَنْ نَضْرِبَ بِالأَكُفِّ عَلَى الرُّكَبِ ‏.

মুস’আব ইবনু সা’দ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেন, আমি আমার পিতার পাশে দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করেছি। তিনি বর্ণনা করেছেন যে, ঐ সময় (পিতার সাথে সলাত আদায়ের সময়) আমি আমার হাত দু’টি দু’ হাঁটুর মাঝখানে রাখলে আমার পিতা আমাকে বললেন, তোমার হাত দু’টি হাঁটুর উপর রাখো। কিন্তু আবারও ঐ রকম করলে তিনি আমার হাত দু’টি ধরে বললেন, আমাদেরকে এরূপ করতে নিষেধ করা হয়েছে এবং হাতের তালু হাঁটুর উপর রাখার আদেশ দেয়া হয়েছে। (ই.ফা. ১০৭৫, ই.সে. ১০৮৩)

১০৮২
حَدَّثَنَا خَلَفُ بْنُ هِشَامٍ، حَدَّثَنَا أَبُو الأَحْوَصِ، ح قَالَ وَحَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي عُمَرَ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، كِلاَهُمَا عَنْ أَبِي يَعْفُورٍ، بِهَذَا الإِسْنَادِ إِلَى قَوْلِهِ فَنُهِينَا عَنْهُ ‏.‏ وَلَمْ يَذْكُرَا مَا بَعْدَهُ ‏.

আবূ ইয়া’ফুর (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি এ একই সানাদে (উপরে বর্ণিত হাদীসটি) “ফানুহীনা ‘আনহু” পর্যন্ত বর্ণনা করেছেন। তবে তারা উভয়েই (ফানুহীনা ‘আনহু) পরবর্তী অংশটুকু বর্ণনা করেননি। (ই.ফা. ১০৭৬, ই.সে. ১০৮৪)

১০৮৩
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ إِسْمَاعِيلَ بْنِ أَبِي خَالِدٍ، عَنِ الزُّبَيْرِ بْنِ عَدِيٍّ، عَنْ مُصْعَبِ بْنِ سَعْدٍ، قَالَ رَكَعْتُ فَقُلْتُ بِيَدَىَّ هَكَذَا – يَعْنِي طَبَّقَ بِهِمَا وَوَضَعَهُمَا بَيْنَ فَخِذَيْهِ – فَقَالَ أَبِي قَدْ كُنَّا نَفْعَلُ هَذَا ثُمَّ أُمِرْنَا بِالرُّكَبِ ‏.

মুস’আব ইবনু সা’দ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, (কোন এক সময়ে সলাত আদায় করতে) আমি রুকূ’তে গিয়ে হাত দু’টি একত্রে মিলিয়ে দু’ উরুর মাঝে রাখলাম। তখন আমার পিতা আমাকে বললেন, আমরাও এরূপ করতাম। কিন্তু এরপর আমাদেরকে হাঁটুর উপর হাত রাখতে আদেশ করা হয়েছে। (ইফা ১০৭৭, ইসে ১০৮৫)

১০৮৪
حَدَّثَنِي الْحَكَمُ بْنُ مُوسَى، حَدَّثَنَا عِيسَى بْنُ يُونُسَ، حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ أَبِي خَالِدٍ، عَنِ الزُّبَيْرِ بْنِ عَدِيٍّ، عَنِ مُصْعَبِ بْنِ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ، قَالَ صَلَّيْتُ إِلَى جَنْبِ أَبِي فَلَمَّا رَكَعْتُ شَبَّكْتُ أَصَابِعِي وَجَعَلْتُهُمَا بَيْنَ رُكْبَتَىَّ فَضَرَبَ يَدَىَّ فَلَمَّا صَلَّى قَالَ قَدْ كُنَّا نَفْعَلُ هَذَا ثُمَّ أُمِرْنَا أَنْ نَرْفَعَ إِلَى الرُّكَبِ ‏.

মুস’আব ইবনু সা’দ বিন আবূ ওয়াক্কাস (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আমার পিতা [সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) ]-এর পাশে দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করেছি। রুকূ’তে গিয়ে আমি এক হাতের আঙ্গুলসমূহ অন্য হাতের আঙ্গুলসমূহের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে হাত দু’টি হাঁটুর মাঝে রাখলে তিনি আমার হাতে মৃদু আঘাত করলেন। সলাত শেষে তিনি বললেন, প্রথমে আমরা এরূপই করতাম। কিন্তু পরে আমাদেরকে হাঁটুর উপর রাখার নির্দেশ করা হয়েছে। (ই.ফা. ১০৭৮, ই.সে. ১০৮৬)

৬. অধ্যায়ঃ
গোড়ালির উপর নিতম্ব রেখে বসা

১০৮৫
حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَكْرٍ، ح قَالَ وَحَدَّثَنَا حَسَنٌ الْحُلْوَانِيُّ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، – وَتَقَارَبَا فِي اللَّفْظِ – قَالاَ جَمِيعًا أَخْبَرَنَا ابْنُ جُرَيْجٍ أَخْبَرَنِي أَبُو الزُّبَيْرِ أَنَّهُ سَمِعَ طَاوُسًا يَقُولُ قُلْنَا لاِبْنِ عَبَّاسٍ فِي الإِقْعَاءِ عَلَى الْقَدَمَيْنِ فَقَالَ هِيَ السُّنَّةُ ‏.‏ فَقُلْنَا لَهُ إِنَّا لَنَرَاهُ جَفَاءً بِالرَّجُلِ ‏.‏ فَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ بَلْ هِيَ سُنَّةُ نَبِيِّكَ صلى الله عليه وسلم ‏.

ত্বাউস (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) -কে দু’পায়ের উপর নিতম্ব রেখে বসা (ইক্ব’আ করা) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, এরূপ করা সুন্নাত। (এ কথা শুনে) আমি তাকে বললাম, এভাবে বসা তো মানুষের জন্য কষ্টকর। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস বললেন, এটা তো বরং তোমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সুন্নাত। (ই.ফা. ১০৭৯, ই.সে. ১০৮৭)

৭. অধ্যায়ঃ
সলাতে কথা বলা নিষেধ এবং এর পূর্ব অনুমতির বিধান রহিতকরণ

১০৮৬
حَدَّثَنَا أَبُو جَعْفَرٍ، مُحَمَّدُ بْنُ الصَّبَّاحِ وَأَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ – وَتَقَارَبَا فِي لَفْظِ الْحَدِيثِ – قَالاَ حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ حَجَّاجٍ الصَّوَّافِ، عَنْ يَحْيَى بْنِ أَبِي كَثِيرٍ، عَنْ هِلاَلِ بْنِ أَبِي مَيْمُونَةَ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَسَارٍ، عَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ الْحَكَمِ السُّلَمِيِّ، قَالَ بَيْنَا أَنَا أُصَلِّي، مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِذْ عَطَسَ رَجُلٌ مِنَ الْقَوْمِ فَقُلْتُ يَرْحَمُكَ اللَّهُ ‏.‏ فَرَمَانِي الْقَوْمُ بِأَبْصَارِهِمْ فَقُلْتُ وَاثُكْلَ أُمِّيَاهْ مَا شَأْنُكُمْ تَنْظُرُونَ إِلَىَّ ‏.‏ فَجَعَلُوا يَضْرِبُونَ بِأَيْدِيهِمْ عَلَى أَفْخَاذِهِمْ فَلَمَّا رَأَيْتُهُمْ يُصَمِّتُونَنِي لَكِنِّي سَكَتُّ فَلَمَّا صَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَبِأَبِي هُوَ وَأُمِّي مَا رَأَيْتُ مُعَلِّمًا قَبْلَهُ وَلاَ بَعْدَهُ أَحْسَنَ تَعْلِيمًا مِنْهُ فَوَاللَّهِ مَا كَهَرَنِي وَلاَ ضَرَبَنِي وَلاَ شَتَمَنِي قَالَ ‏”‏ إِنَّ هَذِهِ الصَّلاَةَ لاَ يَصْلُحُ فِيهَا شَىْءٌ مِنْ كَلاَمِ النَّاسِ إِنَّمَا هُوَ التَّسْبِيحُ وَالتَّكْبِيرُ وَقِرَاءَةُ الْقُرْآنِ ‏”‏ ‏.‏ أَوْ كَمَا قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي حَدِيثُ عَهْدٍ بِجَاهِلِيَّةٍ وَقَدْ جَاءَ اللَّهُ بِالإِسْلاَمِ وَإِنَّ مِنَّا رِجَالاً يَأْتُونَ الْكُهَّانَ ‏.‏ قَالَ ‏”‏ فَلاَ تَأْتِهِمْ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ وَمِنَّا رِجَالٌ يَتَطَيَّرُونَ ‏.‏ قَالَ ‏”‏ ذَاكَ شَىْءٌ يَجِدُونَهُ فِي صُدُورِهِمْ فَلاَ يَصُدَّنَّهُمْ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ ابْنُ الصَّبَّاحِ ‏”‏ فَلاَ يَصُدَّنَّكُمْ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ قُلْتُ وَمِنَّا رِجَالٌ يَخُطُّونَ ‏.‏ قَالَ ‏”‏ كَانَ نَبِيٌّ مِنَ الأَنْبِيَاءِ يَخُطُّ فَمَنْ وَافَقَ خَطَّهُ فَذَاكَ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ وَكَانَتْ لِي جَارِيَةٌ تَرْعَى غَنَمًا لِي قِبَلَ أُحُدٍ وَالْجَوَّانِيَّةِ فَاطَّلَعْتُ ذَاتَ يَوْمٍ فَإِذَا الذِّيبُ قَدْ ذَهَبَ بِشَاةٍ مِنْ غَنَمِهَا وَأَنَا رَجُلٌ مِنْ بَنِي آدَمَ آسَفُ كَمَا يَأْسَفُونَ لَكِنِّي صَكَكْتُهَا صَكَّةً فَأَتَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَعَظَّمَ ذَلِكَ عَلَىَّ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَفَلاَ أُعْتِقُهَا قَالَ ‏”‏ ائْتِنِي بِهَا ‏”‏ ‏.‏ فَأَتَيْتُهُ بِهَا فَقَالَ لَهَا ‏”‏ أَيْنَ اللَّهُ ‏”‏ ‏.‏ قَالَتْ فِي السَّمَاءِ ‏.‏ قَالَ ‏”‏ مَنْ أَنَا ‏”‏ ‏.‏ قَالَتْ أَنْتَ رَسُولُ اللَّهِ ‏.‏ قَالَ ‏”‏ أَعْتِقْهَا فَإِنَّهَا مُؤْمِنَةٌ ‏”‏ ‏.

মু’আবিয়াহ্ ইবনুল হাকাম আস্ সুলামী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, কোন এক সময় আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে সলাত আদায় করছিলামভ। ইতোমধ্যে (সলাত আদায়কারীদের মধ্যে) কোন একজন লোক হাঁচি দিলে (জবাবে) আমি “ইয়ার্হামুকাল্ল-হ” (অর্থাৎ- আল্লাহ তোমার প্রতি রহম করুন) বললাম। এতে সবাই রুষ্ট দৃষ্টিতে আমার প্রতি তাকাতে থাকল। তা দেখে আমি বললামঃ আমার মা আমার বিয়োগ ব্যথায় কাতর হোক। (অর্থাৎ-এভাবে আমি নিজেকে ভৎসনা করলাম)। কি ব্যাপার! তোমরা আমার দিকে এভাবে তাকাচ্ছ যে? তখন তারা নিজ নিজ উরুতে হাত চাপড়াতে থাকল। (আমার খুব রাগ হওয়া সত্ত্বেও) আমি যখন দেখলাম যে, তারা আমাকে চুপ করাতে চায় তখন আমি চুপ করে রইলাম। পরে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত শেষ করলে আমি তাঁকে সবকিছু বললাম। আমার পিতা ও মাতা তাঁর জন্য কুরবান হোক। আমি ইতোপূর্বে বা এর পরে আর কখনো অন্য কোন শিক্ষককে তাঁর চেয়ে উত্তম পন্থায় শিক্ষা দিতে দেখিনি। আল্লাহর শপথ করে বলছি, তিনি আমাকে ধমকালেন না বা মারলেন না কিংবা বকাঝকাও করলেন না। বরং বললেনঃ সলাতের মধ্যে কথাবার্তা ধরণের কিছু বলা যথোচিত নয়। বরং প্রয়োজনবশতঃ তাসবীহ, তাকবীর বা কুরআন পাঠ করতে হবে অথবা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেরূপ বলেছেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! আমি সবেমাত্র জাহিলিয়াত বর্জন করেছি এবং এরপর আল্লাহ আমাকে ইসলাম গ্রহণের তাওফীক দিয়েছেন। আমাদের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে যারা গণকদের কথায় বিশ্বাস করে। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (এ কথা শুনে) বললেনঃ তুমি গণকদের কাছে যেয়ো না। সে বললঃ আমাদের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে যারা শুভ অশুভ লক্ষণ নির্ধারণ করে থাকে। তিনি বললেনঃ এটা তাদের হৃদয়ের বদ্ধমূল বিশ্বাস। এটি তাদেরকে (ভাল কাজ করতে) বাধা না দেয়। হাদীস বর্ণনাকারী সাববাহ বলেছেন, তা যেন তোমাকে বাধা না দেয়। লোকটি বর্ণনা করেছেন- আমি আবারও বললামঃ আমাদের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে যারা রেখা টেনে শুভ-অশুভ নির্ধারণ করে থাকে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ একজন নবী এভাবে রেখা টানতেন। সুতরাং কারো রেখা যদি (নাবীর রেখা) অনুরূপ হয় তাহলে তা ঠিক হবে।[৪]

বর্ণনাকারী মু’আবিয়াহ্ বলেন, আমার এক দাসী ছিল সে উহুদ ও জাও্ওয়ানিয়্যাহ্ এলাকায় আমার বকরীপাল চরাত। একদিন আমি হঠাৎ সেখানে গিয়ে দেখলাম তার বকরীপাল থেকে বাঘে একটি বকরী নিয়ে গিয়েছে। আমি তো অন্যান্য আদম সন্তানের মত একজন মানুষ। তাদের মত আমিও ক্ষোভ ও চপেটাঘাত করলাম। এরপর আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে আসলাম (এবং সব কথা বললাম) কেননা বিষয়টি আমার কাছে খুবই গুরুতর মনে হলো। আমি জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহর রসূল! আমি কি তাকে (দাসী) মুক্ত করে দিব? তিনি বললেনঃ তাকে আমার কাছে নিয়ে আসো। সুতরাং আমি তাকে এনে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে হাজির করলাম। তিনি তাঁকে (দাসীকে) জিজ্ঞেস করলেনঃ (বলো তো) আল্লাহ কোথায়? সে বলল- আকাশে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, (বলো তো) আমি কে? সে বললঃ আপনি আল্লাহর রসূল। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেনঃ তুমি তাকে মুক্ত করে দাও, সে একজন মু’মিনাহ্ নারী। (ই.ফা. ১০৮০, ই.সে. ১০৮৮)

[৪] খাত্ত্বাবী (রহঃ) বলেন, সে নাবীর জন্য রেখা বিদ্যা ‘ইল্মে নবূওয়্যাতের একটা অংশ ছিল। হাদীসের মর্মানুসারে তার সাথে সামঞ্জস্য হতে হবে ‘ইল্মুল ইয়াকীন বা সুদৃঢ় অবগতির মাধ্যমে কোন ধারণার ভিত্তিতে নয়। আর এ শর্ত পাওয়া অসম্ভবপর বিধায় প্রকারান্তরে এটা হারামের হুকুমভুক্ত হয়েছে। এমনকি রেখা বিদ্যা মুবাহ হওয়া আমাদের শারী’আতে রহিত হয়ে গেছে- এ ব্যাপারে আলিমগণের ঐকমত্য রয়েছে।

(শারহে মুসলিম-১ম খন্ড ২০৩ পৃষ্ঠা)

১০৮৭
حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، أَخْبَرَنَا عِيسَى بْنُ يُونُسَ، حَدَّثَنَا الأَوْزَاعِيُّ، عَنْ يَحْيَى بْنِ أَبِي كَثِيرٍ، بِهَذَا الإِسْنَادِ نَحْوَهُ ‏.

ইয়াহ্ইয়া ইবনু আবূ কাসীর থেকে বর্ণিতঃ

একই সানাদে অনুরূপ অর্থবোধক হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ১০৮১, ই.সে. ১০৮৯)

১০৮৮
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، وَزُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، وَابْنُ، نُمَيْرٍ وَأَبُو سَعِيدٍ الأَشَجُّ – وَأَلْفَاظُهُمْ مُتَقَارِبَةٌ – قَالُوا حَدَّثَنَا ابْنُ فُضَيْلٍ، حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ عَلْقَمَةَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ كُنَّا نُسَلِّمُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ فِي الصَّلاَةِ فَيَرُدُّ عَلَيْنَا فَلَمَّا رَجَعْنَا مِنْ عِنْدِ النَّجَاشِي سَلَّمْنَا عَلَيْهِ فَلَمْ يَرُدَّ عَلَيْنَا فَقُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ كُنَّا نُسَلِّمُ عَلَيْكَ فِي الصَّلاَةِ فَتَرُدُّ عَلَيْنَا ‏.‏ فَقَالَ ‏ “‏ إِنَّ فِي الصَّلاَةِ شُغُلاً ‏”‏ ‏.

‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস’উদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায় করতেন সে অবস্থায় আমরা তাঁকে সালাম দিলে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর জবাব দিতেন কিন্তু (হাবশায় হিজরাতের পর) নাজাশীর কাছ থেকে আমরা ফিরে এসে তাঁকে (সলাতরত অবস্থায়) সালাম দিলে তিনি জবাব দিলেন না। তখন (সলাত শেষে) আমরা বললামঃ হে আল্লাহর রসূল! আপনি সলাত আদায় করতেন এমন অবস্থায় আমরা আপনাকে সালাম দিলে তার জবাব দিতেন। (কিন্তু আজকে আমাদের সালামের জবাব দিলেন না!) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সলাতের মধ্যে নির্ধারিত করণীয় থাকে।[৫] (ই.ফা. ১০৮২, ই.সে. ১০৯০)

[৫] ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেনঃ সলাতরত অবস্থায় শব্দ বিনিময়ে সালামের জবাব দান নিষিদ্ব, তবে ইশারা দ্বারা জবাব্দান নিষিদ্ব নয়; বরং মুস্তাহাব। জাবির (রাঃ) -এর হাদীসে এর সাবিত রয়েছে। (শারহে মুসলিম-১ম খণ্ড ২০৪ পৃষ্ঠা)

১০৮৯
حَدَّثَنِي ابْنُ نُمَيْرٍ، حَدَّثَنِي إِسْحَاقُ بْنُ مَنْصُورٍ السَّلُولِيُّ، حَدَّثَنَا هُرَيْمُ بْنُ سُفْيَانَ، عَنِ الأَعْمَشِ، بِهَذَا الإِسْنَادِ ‏.‏ نَحْوَهُ ‏.

আ’মাশ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ

একই সানাদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ১০৮৩, ই.সে. ১০৯১)

১০৯০
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، أَخْبَرَنَا هُشَيْمٌ، عَنْ إِسْمَاعِيلَ بْنِ أَبِي خَالِدٍ، عَنِ الْحَارِثِ بْنِ شُبَيْلٍ، عَنْ أَبِي عَمْرٍو الشَّيْبَانِيِّ، عَنْ زَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ، قَالَ كُنَّا نَتَكَلَّمُ فِي الصَّلاَةِ يُكَلِّمُ الرَّجُلُ صَاحِبَهُ وَهُوَ إِلَى جَنْبِهِ فِي الصَّلاَةِ حَتَّى نَزَلَتْ ‏{‏ وَقُومُوا لِلَّهِ قَانِتِينَ‏}‏ فَأُمِرْنَا بِالسُّكُوتِ وَنُهِينَا عَنِ الْكَلاَمِ ‏.

যায়দ ইবনু আরকাম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা সলাতরত অবস্থায় কথা বলতাম। লোকে সলাতরত অবস্থায় তার পাশে (সলাতে) দাঁড়ানো অপর ব্যক্তির সাথে কথা বলত। এরপর আয়াত অবতীর্ণ হলোঃ (আরবি) “আর তোমরা আল্লাহর প্রতি পূর্ণ অনুগত ও একনিষ্ঠ হয়ে দাঁড়াও” – (সূরাহ্ আল বাকারাহ্ ২ : ২৩৮)। এ হুকুম অবতীর্ণ হওয়ার পর আমাদেরকে সলাতের মধ্যে চুপ থাকতে আদেশ দেয়া হলো এবং কথা বলতে নিষেধ করা হলো। (ই.ফা. ১০৮৪, ই.সে. ১০৯২)

১০৯১
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ نُمَيْرٍ، وَوَكِيعٌ، ح قَالَ وَحَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، أَخْبَرَنَا عِيسَى بْنُ يُونُسَ، كُلُّهُمْ عَنْ إِسْمَاعِيلَ بْنِ أَبِي خَالِدٍ، بِهَذَا الإِسْنَادِ نَحْوَهُ ‏.

ইসমা’ঈল ইবনু আবূ খালিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ

অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ১০৮৫, ই.সে. ১০৯৩)

১০৯২
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا لَيْثٌ، ح وَحَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ رُمْحٍ، أَخْبَرَنَا اللَّيْثُ، عَنْ أَبِي الزُّبَيْرِ، عَنْ جَابِرٍ، أَنَّهُ قَالَ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بَعَثَنِي لِحَاجَةٍ ثُمَّ أَدْرَكْتُهُ وَهُوَ يَسِيرُ – قَالَ قُتَيْبَةُ يُصَلِّي – فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ فَأَشَارَ إِلَىَّ فَلَمَّا فَرَغَ دَعَانِي فَقَالَ ‏ “‏ إِنَّكَ سَلَّمْتَ آنِفًا وَأَنَا أُصَلِّي ‏”‏ ‏.‏ وَهُوَ مُوَجِّهٌ حِينَئِذٍ قِبَلَ الْمَشْرِقِ ‏.

জাবির ইবনূ ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক সময়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে কোন একটি কাজে পাঠালেন। আমি ফিরে এসে দেখলাম সওয়ারীতে আরোহণ করে (নাফ্ল সলাত আদায়রত) অতিক্রম করেছেন। কুতায়বাহ্ বর্ণনা করেছেন যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায় করছিলেন। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ বলেনঃ আমি (ফিরে আসার পর ঐ অবস্থায়) তাঁকে সালাম দিলে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে ইশারা করলেন (ইশারা দ্বারা সালামের জবাব দিলেন)। সলাত শেষ করে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে ডেকে বললেনঃ তুমি এইমাত্র আমাকে সালাম দিয়েছ। তখন আমি সলাত আদায় করছিলাম। ঐ সময় তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পূর্ব দিকে মুখ করে ছিলেন। (ই.ফা. ১০৮৬, ই.সে. ১০৯৪)

১০৯৩
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ يُونُسَ، حَدَّثَنَا زُهَيْرٌ، حَدَّثَنِي أَبُو الزُّبَيْرِ، عَنْ جَابِرٍ، قَالَ أَرْسَلَنِي رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ مُنْطَلِقٌ إِلَى بَنِي الْمُصْطَلِقِ فَأَتَيْتُهُ وَهُوَ يُصَلِّي عَلَى بَعِيرِهِ فَكَلَّمْتُهُ فَقَالَ لِي بِيَدِهِ هَكَذَا – وَأَوْمَأَ زُهَيْرٌ بِيَدِهِ – ثُمَّ كَلَّمْتُهُ فَقَالَ لِي هَكَذَا – فَأَوْمَأَ زُهَيْرٌ أَيْضًا بِيَدِهِ نَحْوَ الأَرْضِ – وَأَنَا أَسْمَعُهُ يَقْرَأُ يُومِئُ بِرَأْسِهِ فَلَمَّا فَرَغَ قَالَ ‏ “‏ مَا فَعَلْتَ فِي الَّذِي أَرْسَلْتُكَ لَهُ فَإِنَّهُ لَمْ يَمْنَعْنِي أَنْ أُكَلِّمَكَ إِلاَّ أَنِّي كُنْتُ أُصَلِّي ‏”‏ ‏.‏ قَالَ زُهَيْرٌ وَأَبُو الزُّبَيْرِ جَالِسٌ مُسْتَقْبِلَ الْكَعْبَةِ فَقَالَ بِيَدِهِ أَبُو الزُّبَيْرِ إِلَى بَنِي الْمُصْطَلِقِ فَقَالَ بِيَدِهِ إِلَى غَيْرِ الْكَعْبَةِ ‏.

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, বানী মুস্ত্বালিক্ব গোত্রের দিকে যাওয়ার সময় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে একটি কাজে পাঠালেন। আমি ফিরে এসে দেখলাম তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উটের পিঠে বসে সলাত আদায় করছেন। আমি তাঁকে বললাম (অর্থাৎ- যে কাজে পাঠিয়েছিলেন সে সম্পর্কে) কিন্তু তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে হাত দ্বারা এভাবে ইশারা করলেন। বর্ণনাকারী যুহায়র ইবনু হারয্ তাঁর হাত দিয়ে ইশারা করে [তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ] কিভাবে ইশারা করেছিলেন তা দেখালেন। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ বলেনঃ আমি তখন শুনেছিলাম রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিছু পড়ছেন এবং মাথা দ্বারা ইশারা করছেন। সলাত শেষ হলে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ আমি তোমাকে যে জন্য পাঠিয়েছিলাম তার কি করেছ? আমি শুধু এ কারনে তোমার সাথে কথা বলিনি যে, আমি তখন সলাত আদায় করেছিলাম।

হাদীসটির বর্ণনাকারী যুহ্য়র ইবনু হার্ব (রহঃ) বলেনঃ কথাগুলো বলার সময় আবুয্ যুবায়র কা’বার দিকে মুখ করে বসে ছিলেন। কিন্তু যখন তিনি (আবুয্ যুবায়র) হাত দিয়ে ইশারা দেখাচ্ছিলেন তখন কা’বার দিকে মুখ না করে বানী মুস্তালিকের দিকে মুখ করে বলছিলেন। (ই.ফা. ১০৮৭, ই.সে. ১০৯৫)

১০৯৪
حَدَّثَنَا أَبُو كَامِلٍ الْجَحْدَرِيُّ، حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ زَيْدٍ، عَنْ كَثِيرٍ، عَنْ عَطَاءٍ، عَنْ جَابِرٍ، قَالَ كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَبَعَثَنِي فِي حَاجَةٍ فَرَجَعْتُ وَهُوَ يُصَلِّي عَلَى رَاحِلَتِهِ وَوَجْهُهُ عَلَى غَيْرِ الْقِبْلَةِ فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ فَلَمْ يَرُدَّ عَلَىَّ فَلَمَّا انْصَرَفَ قَالَ ‏ “‏ إِنَّهُ لَمْ يَمْنَعْنِي أَنْ أَرُدَّ عَلَيْكَ إِلاَّ أَنِّي كُنْتُ أُصَلِّي ‏”‏ ‏.

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, কোন এক সফরে আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে ছিলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে একটি কাজে পাঠালেন। আমি ফিরে এসে দেখতে পেলাম তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সওয়ারীর পিছে বসে কিবলাহ্ ছাড়া অন্যদিকে মুখ করে সলাত আদায় করছেন। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। কিন্তু তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার সালামের কোন জবাব দিলেন না। সলাত শেষ করে বললেনঃ আমি সলাত আদায় করছিলাম তাই তোমার সালামের কোন জবাব দিতে পারিনি। এছাড়া আর কিছুই আমাকে তোমার সালামের জবাব দেয়া থেকে বিরত রাখেনি। (ই.ফা. ১০৮৮, ই.সে. ১০৯৬)

১০৯৫
وَحَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ حَاتِمٍ، حَدَّثَنَا مُعَلَّى بْنُ مَنْصُورٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَارِثِ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا كَثِيرُ بْنُ شِنْظِيرٍ، عَنْ عَطَاءٍ، عَنْ جَابِرٍ، قَالَ بَعَثَنِي رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي حَاجَةٍ ‏.‏ بِمَعْنَى حَدِيثِ حَمَّادٍ ‏.

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, (এক সময়ে) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে কোন একটি কাজে পাঠিয়েছিলেন। এরপর তিনি হাম্মাদ বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করলেন। (ই.ফা. ১০৮৯, ই.সে. ১০৯৬)

৮. অধ্যায়ঃ
সলাতে শায়ত্বনকে লা’নাত করা, শয়তান হতে আশ্রয় প্রার্থনা করা এবং ‘আমালে ক্বালীল’ (সামান্য কাজ) করা বৈধ

১০৯৬
حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، وَإِسْحَاقُ بْنُ مَنْصُورٍ، قَالاَ أَخْبَرَنَا النَّضْرُ بْنُ شُمَيْلٍ، أَخْبَرَنَا شُعْبَةُ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدٌ، – وَهُوَ ابْنُ زِيَادٍ – قَالَ سَمِعْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ، يَقُولُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ إِنَّ عِفْرِيتًا مِنَ الْجِنِّ جَعَلَ يَفْتِكُ عَلَىَّ الْبَارِحَةَ لِيَقْطَعَ عَلَىَّ الصَّلاَةَ وَإِنَّ اللَّهَ أَمْكَنَنِي مِنْهُ فَذَعَتُّهُ فَلَقَدْ هَمَمْتُ أَنْ أَرْبِطَهُ إِلَى جَنْبِ سَارِيَةٍ مِنْ سَوَارِي الْمَسْجِدِ حَتَّى تُصْبِحُوا تَنْظُرُونَ إِلَيْهِ أَجْمَعُونَ – أَوْ كُلُّكُمْ – ثُمَّ ذَكَرْتُ قَوْلَ أَخِي سُلَيْمَانَ رَبِّ اغْفِرْ لِي وَهَبْ لِي مُلْكًا لاَ يَنْبَغِي لأَحَدٍ مِنْ بَعْدِي ‏.‏ فَرَدَّهُ اللَّهُ خَاسِئًا ‏”‏ ‏.‏ وَقَالَ ابْنُ مَنْصُورٍ شُعْبَةُ عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ زِيَادٍ ‏.

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ গত রাতে এক দুষ্ট জিন আমার সলাত নষ্ট করার জন্য আমার উপর আক্রমন করতে শুরু করল। তবে আল্লাহ তা’আলা আমাকে তাকে কাবু করার শক্তি দান করলেন। আমি তাকে গলা টিপে ধরেছিলাম। আমার ইচ্ছে হলো তাকে মাসজিদের একটি খুঁটির সাথে বেঁধে রাখি যাতে সকাল বেলা তোমরা সবাই তাকে দেখতে পাও। কিন্তু তখনই আমার স্মরণ হল আমার ভাই নবী সুলায়মানের দু’আর কথা। তিনি (‘আঃ) দু’আ করেছিলেনঃ (আরবি) “হে প্রভু; তুমি আমাকে এমন রাজত্ব দান করো যা আমার পরে আর কার জন্য যেন না হয়”- (সূরাহ্ সোয়াদ ৩৮ : ৩৫)। (অর্থাৎ- জিন, বাতাস ও পশু-পাখির ওপর রাজত্ব করার ক্ষমতা। তাই আমি তাকে বেঁধে রাখা থেকে বিরত থাকলাম।) অতঃপর আল্লাহ তা’আলা জিনটিকে (আমার হাতে) লাঞ্ছিত করে তাড়িয়ে দিলেন। ইবনু মানসূর, শু’বাহ্‌, মুহাম্মাদ ইবনু যিয়াদ থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ১০৯০,ই.সে. ১০৯৮)

১০৯৭
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدٌ، هُوَ ابْنُ جَعْفَرٍ ح قَالَ وَحَدَّثَنَاهُ أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا شَبَابَةُ، كِلاَهُمَا عَنْ شُعْبَةَ، فِي هَذَا الإِسْنَادِ وَلَيْسَ فِي حَدِيثِ ابْنِ جَعْفَرٍ قَوْلُهُ فَذَعَتُّهُ ‏.‏ وَأَمَّا ابْنُ أَبِي شَيْبَةَ فَقَالَ فِي رِوَايَتِهِ فَدَعَتُّهُ ‏.

শু’বাহ্‌ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ

উপরোক্ত সানাদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তবে মুহাম্মাদ ইবনু জা’ফার বর্ণিত হাদীসে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কথা (আরবি) অর্থাৎ- “আমি তাকে গলা টিপে ধরেছিলাম” বর্ণিত হয়নি। আর আবূ বকর ইবনু আবূ শায়াবাহ্‌ বর্ণিত হাদীসে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কথা (আরবি) বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ১০৯১, ই.স.১০৯৯)

১০৯৮
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَلَمَةَ الْمُرَادِيُّ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ وَهْبٍ، عَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ صَالِحٍ، يَقُولُ حَدَّثَنِي رَبِيعَةُ بْنُ يَزِيدَ، عَنْ أَبِي إِدْرِيسَ الْخَوْلاَنِيِّ، عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ، قَالَ قَامَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَسَمِعْنَاهُ يَقُولُ ‏”‏ أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْكَ ‏”‏ ‏.‏ ثُمَّ قَالَ ‏”‏ أَلْعَنُكَ بِلَعْنَةِ اللَّهِ ‏”‏ ‏.‏ ثَلاَثًا ‏.‏ وَبَسَطَ يَدَهُ كَأَنَّهُ يَتَنَاوَلُ شَيْئًا فَلَمَّا فَرَغَ مِنَ الصَّلاَةِ قُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَدْ سَمِعْنَاكَ تَقُولُ فِي الصَّلاَةِ شَيْئًا لَمْ نَسْمَعْكَ تَقُولُهُ قَبْلَ ذَلِكَ وَرَأَيْنَاكَ بَسَطْتَ يَدَكَ ‏.‏ قَالَ ‏”‏ إِنَّ عَدُوَّ اللَّهِ إِبْلِيسَ جَاءَ بِشِهَابٍ مِنْ نَارٍ لِيَجْعَلَهُ فِي وَجْهِي فَقُلْتُ أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْكَ ‏.‏ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ ثُمَّ قُلْتُ أَلْعَنُكَ بِلَعْنَةِ اللَّهِ التَّامَّةِ فَلَمْ يَسْتَأْخِرْ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ ثُمَّ أَرَدْتُ أَخْذَهُ وَاللَّهِ لَوْلاَ دَعْوَةُ أَخِينَا سُلَيْمَانَ لأَصْبَحَ مُوثَقًا يَلْعَبُ بِهِ وِلْدَانُ أَهْلِ الْمَدِينَةِ ‏”‏ ‏.

আবুদ্ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, (একদিন) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায় করতে দাঁড়ালে আমরা শুনতে পেলাম, তিনি বলেছেনঃ (আরবি) “আউযু বিল্লা-হি মিন্‌কা” [অর্থাৎ- আমি তোমার (অনিষ্ট) থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (আমরা শুনলাম) এরপর তিনি বলছেনঃ (আরবি) “আল্‌ ‘আনুকা বি লা’নাতিল্লা-হি” (অর্থাৎ-আমি তাকে লা’নাত করছি যেমন আল্লাহ লা’নাত করেছিলেন)। তিনি এ কথাগুলো তিনবার বললেন। এ সময় (যে সময় তিনি লা’নাত করছিলেন) তিনি হাত বাড়ালেন যেন কিছু ধরতে যাচ্ছেন। সলাত শেষ করলে আমরা তাঁকে বললামঃ হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! (আজ) আমরা সলাতের মধ্যে আপনাকে এমন কিছু কথা বলতে শুনেছি যা ইতিপূর্বে আর কোন দিন বলতে শুনিনি। আর আমরা দেখলাম যে আপনি হাতও বাড়িয়ে দিলেন। (এর কারন কি?) তিনি বললেনঃ আল্লাহর দুশমন ইবলীশ আমার মুখের উপর নিক্ষেপ করার জন্য দগদগে অগ্নি-শিখা নিয়ে এসেছিল। তাই আমি তিনবারঃ (আরবি) বললাম। এরপর তিনবার (আরবি) বললাম। এ কথাটিও আমি তিনবার বললাম। কিন্তু তবু সে পিছু হটল না। অবশেষে আমি তাকে পাকড়াও করতে ইচ্ছা করলাম | আল্লাহ্‌র শপথ করে বলছি, আমাদের ভাই নবী সুলায়মান যদি দু’আ না করে থাকতেন তাহলে সে সকাল পর্যন্ত বাঁধা থাকত। আর সকালবেলা মাদীনাবাসীদের ছেলে সন্তানেরা তাকে নিয়ে আনন্দ করত বা মজা করে খেলত। (ই.ফা. ১০৯২, ই.সে. ১১০০)

FOR MORE CLICK HERE

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]