বাক তথা কথার অর্থই বাগর্থ। একটি শব্দে আভিধানিক অর্থ থাকলেও সেই অর্থের বাইরেও বিভিন্ন অর্থ প্রকাশ
পেতে পারে। যদি কেউ বলে, চলার সময় চোখ কান খোলা রেখো। এখানে শরীরের সাথে যে ‘চোখ বা কান’
থাকে তার কথা না বলে সজাগ বা সচেতন থাকার কথা বলা হয়েছে। শব্দ ও বাক্যের অর্থবিচার, অর্থের বিভিন্ন দিক, তার
পরিবর্তন, প্রসার ও সংকোচন ইত্যাদি বিচারই বাগর্থের কাজ। তবে এই অর্থ একইসঙ্গে, সাধারণ বা আক্ষরিক অর্থ এবং
বিশেষ বা ব্যঞ্জনাময় অর্থকে বুঝিয়ে থাকে। বাগর্থের একাধিক স্তর থাকতে পারে। তা সত্তে¡ও কথার আক্ষরিক অর্থ প্রকাশের
সূত্রেই এর সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অর্থ প্রকাশিত হয়। যদি কথার অর্থ গূঢ় হয় তাহলেও এর আক্ষরিক অর্থ অগ্রাহ্য করার উপায়
থাকে না।
বাংলা ভাষায় যেসব শব্দ স্থায়ী আসন নিয়েছে সেসব শব্দ কালক্রমে অর্থগত পরিবর্তনের মুখোমুখি হয়েছে। সাধারণত
অর্থকে কেন্দ্র করেই কিন্তু এই পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। এ ধরনের তিনটি অর্থপরিবর্তনের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে।
কোনো কোনো অর্থ নির্দিষ্ট, অভিধানে গৃহীত বা আভিধানিক। এসব শব্দকে মুখ্যার্থ আর অন্যদিকে মুখ্যার্থ থেকে জাত
আলংকারিক বিশিষ্টার্থকে বলা হয় গৌণার্থ। বিশেষ বিশেষ ব্যবহারের ক্ষেত্রে এসব শব্দ বদলে যায়। তিনটি কারণে,
‘অর্থপ্রসার, অর্থসংকোচন, অর্থবদল বা অর্থসংক্রম হয়’। এছাড়া অর্থালংকার অনুসারেও শব্দের অর্থ পরিবর্তন হতে পারে।
যেমন :
শব্দের অর্থপ্রসার বা উৎকর্ষ বা উন্নতি : যেসব শব্দের মূল বা পূর্বরূপ ও স¤প্রসারিত রূপ এক নয় সেসব শব্দে অর্থপ্রসার বা
উৎকর্ষ বা উন্নতি ঘটেছে বলে বিবেচনা করা হয়। রূপক বা অতিশয়োক্তির ফলে কখনো কখনো অর্থের বিস্তৃতি ঘটে।
এখানে ক্ষুদ্র অর্থ থেকে অর্থের বিস্তৃতি ঘটে। যেমন :
শব্দ মূল বা পূর্বরূপ স¤প্রসারিত অর্থ শব্দ মূল বা পূর্বরূপ স¤প্রসারিত রূপ
গুন গরুর নাড়িভুড়ি
বা তাঁত
দড়ি ইতিকথা অর্থশূন্য বাক্য ইতিহাস
অপরূপ কদাকার অপূর্ব সুন্দর মন্দির গৃহ দেবতার আলয়
অদৃষ্ট অদেখা ভাগ্য/নিয়তি ধ্যান চিন্তা পরমার্থ চিন্তা
অভিষেক স্নান উচ্চপদে আসীন গাঙ গঙ্গা যে কোনো নদী
দরিয়া নদী সমুদ্র
শব্দের অর্থসংকোচ বা অপকর্ষ বা অবনতি : যেসব শব্দের মূল বা পূর্বরূপ ও সংকোচিত রূপ এক নয় তাদের শব্দের
অর্থসংকোচ বা অপকর্ষ বা অবনতি বলে। শব্দের বিভিন্ন অর্থের মধ্যে কোনো একটি মুখ্য হয়ে উঠলে অন্যান্য অর্থের বিলুপ্তি
ঘটে অর্থসংকোচ হয়। এখানে বিস্তৃত অর্থ থেকে ক্ষুদ্র অর্থ ঘটে। যেমন :
শব্দ মূল বা পূর্বরূপ সংকোচিত অর্থ শব্দ মূল বা পূর্বরূপ সংকোচিত রূপ
বুয়া দাদি, নানি কাজের মহিলা কীর্তিকলাপ নানা সুখ্যাতি অপকীর্তিসমূহ
মহাজন মহৎজন সুদখোর মুর্গ যে কোনো পাখি মোরগ
ঝি কন্যা/মেয়ে কাজের মেয়ে/দাসী অন্ন যে কোনো খাদ্য ভাত
মৃগ যে কোনো পশু হরিণ
উজবুক উজবেকের
অধিবাসী
নির্বোধ/বোকা/মূর্খ
শব্দের অর্থবদল বা অর্থসংক্রম : যেসব শব্দের মূল বা পূর্বরূপ ও সংক্রমিতরূপ এক নয় তাদের শব্দের অর্থবদল বা
অর্থসংক্রম বলে। অর্থের প্রসার ও সংকোচনের ফলে কখনো কখনো কোনো কোনো শব্দের এমন অর্থ তৈরি হয়ে যায় যখন
তাদের সঙ্গে মূল অর্থের সংযোগ নির্ণয় করা কঠিন হয়ে পড়ে তখন তাদের অর্থবদল বা অর্থসংক্রম বলা হয়।
শব্দ মূল বা পূর্বরূপ সংক্রমিত রূপ শব্দ মূল বা পূবরূপ সংক্রমিত রূপ
ঘর্ম গরম ঘাম পাষÐ ধর্মস¤প্রদায় নিষ্ঠুর
পাত্র পানাধার বর অনটন গতিহীন অভাব
শুশ্রƒষা জানার ইচ্ছা সেবা অবকাশ ফাঁক অবসর
অমূলক মূলহীন কাল্পনিক
এছাড়াও বিভিন্ন আলংকারিক প্রয়োগে বাগর্থ পরিবর্তন ঘটে থাকে। যখন বলা হয় ‘সম্ভাবনার দুয়ার’, তখন এর অর্থের সঙ্গে
দুয়ারের কোনো প্রত্যক্ষ সম্পর্ক থাকে না। এভাবে, উপমা ও রূপকসহ বিভিন্ন অলংকারের সাহায্যে অনেক সময় শব্দের অর্থ
পরিবর্তন হয়। এই সূত্রে আরও উল্লেখ্য যে, শব্দ যখন গূঢ়ার্থ প্রকাশ করে তখন সেই অর্থকে বলে ব্যঞ্জনার্থ। এখানে শব্দের
অর্থ বা বাক্যের ব্যঞ্জনার্থের দ্যোতনা থাকতে পারে। আসলে ব্যঞ্জনার সংশ্লিষ্ট অভিব্যক্তিই ব্যঞ্জনার্থ। এখানে শব্দের অর্থ
মুখ্যার্থ অথবা লক্ষ্যার্থ না ধরে তাকে অতিক্রম করে যে অর্থ তাই বিবেচনা করা হয়। অর্থপ্রকাশের দিক দিয়ে ব্যঞ্জনার্থ দুই
প্রকার। এরা হলো :
অভিধা : যা সরলভাবে বলা হচ্ছে তাই হলো অভিধা বা সরল অর্থ। একটি শব্দের একাধিক অর্থ থেকে অধিক ব্যবহৃত
একটি শব্দকে অভিধা বা প্রসিদ্ধ অর্থ বা সরল অর্থ বলে। যেমন: ‘করী’ অর্থ ‘যার হাত আছে বুঝালেও’ ‘হাতি’ অর্থেই
ব্যবহৃত হয়। এক্ষেত্রে প্রথমটি হলো অভিধা, একে বাচ্যার্থও বলে। একে অভিধা শক্তিও বলে। কারণ এখানে যেসব শব্দের
অর্থ সাধারণভাবে বোঝা যায় শুধু সেসব শব্দই এ পর্যায়ে পড়ে। যেমন: মানুষ, গরু, ছাগল, গাছ, বই, আকাশ ইত্যাদি।
তির্যক ব্যঞ্জনার্থ : সরলভাবে না বুঝিয়ে অন্য অর্থ প্রকাশক শব্দ বা বাক্যকে তির্যক ব্যঞ্জনার্থ বলে। একই বাক্যের মাধ্যমে
বহুমাত্রিক ব্যঞ্জনা প্রকাশ পেতে পারে। অর্থপ্রকাশ বা বাগর্থ প্রকাশ যখন গভীর ও একাধিক মাত্রাকে অবলম্বন করে
উপস্থাপিত হয় তখনই কথায় তির্যক ব্যঞ্জনার্থ যুক্ত হতে পারে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
৪. বাগর্থতত্ত¡ কী আলোচনা করুন।
৫. শব্দের অর্থ পরিবর্তনের কারণগুলো আলোচনা করুন।
FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ