একই শব্দের ভিন্নার্থক প্রয়োগ করতে পারবেন

বাংলাভাষায় কিছু শব্দ রয়েছে যাদের আভিধানিক অর্থ এক হলেও প্রতিবেশ ভেদে এরা বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত
হতে পারে। এই ভাষায় কিছু বিশেষ্য, বিশেষণ ও ক্রিয়াশব্দ রয়েছে যারা আভিধানিক অর্থ ছাড়াও ব্যবহারিক
বিশেষ অর্থ প্রকাশ করে। এদের পরে অন্য অর্থবোধক শব্দ বসে বিশেষ অর্থ প্রকাশ পায়। এদের একই
শব্দের ভিন্নার্থক প্রয়োগ বলে বিবেচনা করা হয়।
বিশিষ্টার্থ শব্দের ব্যবহার
শব্দ আভিধানিক বা সাধারণ অর্থ বিশেষ অর্থ বাক্যরচনা
অর্থ
আভিধানিক বা সাধারণ অর্থ : মানে বা টাকা
বিশেষ অর্থ :
১. অর্থ বোঝা (উদ্দেশ্য) তার কথার অর্থ বোঝা গেল না।
২. কথার অর্থ (মানে) তোমার কথার অর্থ কী?
৩. হাতে অর্থ নেই (টাকা) তার হাতে কোন অর্থ নেই।
৪. অর্থনীতি (শাস্ত্রবিশেষ) অর্থনীতি বেশি কঠিন নয়।
৫. অর্থবান (সম্পদশালী) অর্থবানের হাত সব সময় বড় হয়।
উঠা
আভিধানিক বা সাধারণ অর্থ : উত্থিত হওয়া
বিশেষ অর্থ :
১. রব উঠা (গুজব উঠা) কুকর্মটি মতি মিয়া করেছে বলে রব উঠেছে।
২. জাতে উঠা (সমাজে স্থান পাওয়া) প্রায়শ্চিত্ত করে সে জাতে উঠেছে।
৩. জ্বলে উঠা (ক্রুদ্ধ হওয়া) খুনি আসামির কথা শুনে হাকিম জ্বলে উঠলেন।
৪. কানে উঠা (শুনতে পাওয়া) কথাটা শেষ পর্যন্ত বাবার কানে উঠেছে।
৫. মন উঠা (সন্তুষ্ট হওয়া) এত অল্পে তার মন ওঠে না।
৬. খরচ উঠা (খরচ পোষানো) সে ব্যবসাতে মোটা টাকা লোকসান দিয়েছে;খরচ পর্যন্ত ওঠেনি।
৭. রঙ উঠা (বিবর্ণ হওয়া) কাপড়টার রঙ উঠে যাবে।
৮. চাঁদা উঠা (অর্থ সংগৃহীত হওয়া) সমিতিতে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা উঠেছে।
কথা
আভিধানিক বা সাধারণ অর্থ : বাক, বচন, ভাষা, উক্তি
বিশেষ অর্থ :
১. কথা দেওয়া (প্রতিশ্রুতি দেওয়া) তাকে আমি টাকা দেব বলে কথা দিয়েছি।
২. কথা চলা (প্রস্তাব হওয়া) আমাদের গ্রামে একটি হাই স্কুল খোলার কথা চলছে।
৩. শেষ কথা (প্রস্তাব হওয়া) তার মতো জুচ্চোর আমার কাছে কোন সাহায্য পাবে না;
এই আমার শেষ কথা।
৪. কথা (তুলনা) বড় লোকের ছেলে তুমি, তোমার সঙ্গে কার কথা!
কান
আভিধানিক বা সাধারণ অর্থ : কর্ণ
বিশেষ অর্থ :
১. কান পাতা (শুনার জন্য মনোযোগ দেওয়া) দুষ্ট ছেলেটি বুড়োদের আলাপে কান পেতে থাকে।
২. কান দেওয়া (শোনা) সে কারো কথায় কান দেয় না।
৩. কানে উঠা (কর্ণগোচর হওয়া) তোমার অপরাধের কথা তোমার বাবার কানে উঠেছে।
৪. কানে তোলা (কথা উত্থাপন করা) এসব তুচ্ছ কথা তাঁর কানে তুলে লাভ নেই।
৫. কানে বাজা (রেশ থাকা) তার কথাগুলো এখনও আমার কানে বাজছে।
৬. কান ভার করা (সন্দেহ সৃষ্টি করা) ছোট ভাইয়ের বিরুদ্ধে নানা কথা বলে স্বামীর কান ভার করল মীরা।
কাজ
আভিধানিক বা সাধারণ অর্থ : কর্ম, কার্য
বিশেষ অর্থ :
১. কাজ দেওয়া (সহায়ক) ভাল গাড়ি পুরোনো হলেও কাজ দেয়।
২. কাজ (প্রয়োজন সিদ্ধ হওয়া) শিক্ষা ছাড়া জীবনে কেবল টাকাতে কাজ হয় না।
৩. কাজে লাগা (প্রয়োজনে আসা) পুরোনো চাদরটি রেখে দাও; কাজে লাগবে।
৪. কাজ পাওয়া (কর্মের সংস্থান হওয়া) অনেক ঘোরাঘুরির পর সে একটা ভাল কাজ পেয়েছে।
৫. কাজ হাসিল করা (উদ্দেশ্য সিদ্ধ হওয়া) কেবল মধুর কথায় কাজ হাসিল করা যায় না।
কাঁচা
আভিধানিক বা সাধারণ অর্থ : অপক্ব
বিশেষ অর্থ :
১. কাঁচা ইট (অপোড়া ইট) কাঁচা ইটের দালান ঝড়ে পড়ে যাবে।
২. কাঁচা লোক (অনিপুণ লোক) মতিন সাহেব কাঁচা লোক নন।
৩. কাঁচা ঘুম (সদ্য ঘুম) ছেলেটাকে কাঁচা ঘুমে ডেকো না।
৪. কাঁচারঙ (অস্থায়ীরঙ) শাড়িখানির কাঁচারঙ সহজে উঠে গেল।
৫. কাঁচা হাত (অনিপুণ হাত) কাঁচা হাতের লেখা; কত আর ভাল হবে!
৬. কাঁচা সোনা (বিশুদ্ধ সোনা) কাঁচা সোনার গয়নার ঔজ্জ্বল্যই আলাদা।
৭. কাঁচা মাথা (অপক্ব) ছেলেটির অঙ্কে কাঁচা মাথা বলে প্রতি বছরই ফেল করে।
৮. কাঁচা কথা (হালকা কথা) তিনি তো আর কাঁচা কথার লোক নন।
কড়া
আভিধানিক বা সাধারণ অর্থ : তীব্র, অকোমল
বিশেষ অর্থ :
১. কড়া (কঠোর) কড়া কথায় কারো মনে আঘাত দিয় না।
২. কড়া (প্রখর) কড়া রোদে দৌড়ান ভালো নয়।
৩. কড়া (সতর্ক) বাড়িটা কড়া পাহারা দিতে হচ্ছে।
৪. কড়া (খুব বেশি) কড়া সুদে টাকা ধার করা ঠিক নয়।
৫. কড়া (পাকা) এটি কড়ারঙের কাপড়।
৬. কড়া (উগ্র) তার কড়া মেজাজ অসহনীয়।
গরম
আভিধানিক বা সাধারণ অর্থ : উষ্ণ, তাপ, উত্তাপ
বিশেষ অর্থ :
১. গরম (উগ্র) আমাকে গরম মেজাজ দেখাবেন না।
২. গরম (অজীর্ণ) পেট গরম বলে সে আজ ভাত খায়নি।
৩. গরম (মূল্য বৃদ্ধি) এখন কাপড়ের বাজার গরম।
৪. গরম (অহংকার ) টাকার গরমে তার ঘুম হচ্ছে না।
৫. গরম (উত্তাপ) জ্বরে ছেলেটির গা গরম হয়েছে।
৬. গরম (গ্রীষ্ম) গরমকাল আমার মোটেই ভালো লাগে না।
৭. গরম (টাটকা) এটা আজকের গরম খবর।
গা
আভিধানিক বা সাধারণ অর্থ : শরীর, গতর
বিশেষ অর্থ :
১. গায়ে মাখা (গ্রাহ্য করা) ছেলেটি বড় বেহায়া, কোনো কথাই গায়ে মাখে না।
২. গা ঢাকা দেওয়া (আত্মগোপন করা) অন্ধকারে লোকটা গা ঢাকা দিলো।
৩. গায়ে হাত তোলা (প্রহার করা) গরিবের গায়ে হাত তোলা ভালো নয়।
৪. গায়ে কাঁটা দেওয়া (রোমাঞ্চিত হওয়া) সেই রাত্রির কথা মনে পড়লে এখনও আমার গায়ে কাঁটা দিয়া ওঠে।
৫. গা করা (মন দেওয়া) বসে থেকে কি হবে? গা করে কাজ করো।
৬. গা জুড়ানো (স্বস্থি পাওয়া) তোমার ঐ দশটি টাকায় আমার গা জুড়াবে না।
চোখ
আভিধানিক বা সাধারণ অর্থ : চক্ষু, নয়ন
বিশেষ অর্থ :
১. চোখ দেখা (চোখ পরীক্ষা করা) ডাক্তার সাহেব রুগির চোখ দেখে চশমা নিতে বললেন।
২. চোখ পাকানো বা রাঙানো (রাগ দেখানো) তোমার চোখরাঙানিতে ঘাবড়াব, সে লোক আমি নই।
৩. চোখ উঠা (চক্ষূরোগ বিশেষ) ছেলেটার চোখ উঠেছে।
৪. চোখঠারা (চোখ দিয়ে ইশারা করা) কেনো তুমি চোখঠারাও প্রমিলার দিকে?
৫. চোখ ফোটা (প্রকৃত জ্ঞান হওয়া) কবে যে তোমার চোখ ফুটবে কে জানে!
৬. চোখ রাখা (দৃষ্টিরাখা) ছেলেটির প্রতি একটু চোখ রেখো।
৭. চোখ খোলা (বোধ হওয়া) কিন্তু তার কথা শুনে আমার কতখানি চোখ খুলে গেছে সে তো জানে না।
৮. চোখে ধুলো দেওয়া (ঠকানো) পরের চোখে ধুলো দিয়ে আর কতোদিন চলবে?
৯. চোখের মাথা খাওয়া (না দেখা) পা মাড়িয়ে যাও কেনো চোখের মাথা খেয়েছ নাকি?
১০. চোখের দেখা (দর্শন) মাঝে মাঝে চোখের দেখা দিও, বন্ধু।
১১. চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো
(ভালোভাবে বুঝানো) তাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে না দিলে কিছুই বুঝবে না।
১২. চোখ টাটানো (ঈর্ষা হওয়া) পরের মঙ্গল দেখলে খারাপ লোকের চোখ টাটায়।
ছোট
আভিধানিক বা সাধারণ অর্থ : ক্ষুদ্র, সংকীর্ণ
বিশেষ অর্থ :
১. ছোট (সংকীর্ণ) লোকটার মন ছোট।
২. ছোট (নীচ) ছোট লোক কত ভদ্রতাই বা জানবে।
৩. ছোট (কনিষ্ঠ) ছোট ছেলেটি মা-বাবার আদুরে।
৪. ছোট (তুচ্ছ) অত ছোট কথায় কান দিও না।
৫. ছোট (ক্ষুদ্র) ছোট কাজটি করতে বেশি সময় লাগবে না।
৬. ছোট (অপমানিত) ছেলেটির দুর্ব্যবহারে সমাজের কাছে আমার আমার মুখ ছোট হয়েছে।
৭. ছোট (বিনয়ী) বড়যদি হতে চাও ছোট হও আগে।
ছাড়া
আভিধানিক বা সাধারণ অর্থ : বর্জন বা ত্যাগ করা
বিশেষ অর্থ :
১. আশা ছাড়া (ত্যাগ করা) ঐ চাকরির আশা ছেড়েছি।
২. হাল ছাড়া (নিরাশ হওয়া) এতো শিগগির হাল ছাড়লে চলবে কি করে!
৩. গলা ছাড়া (উদাত্ত কণ্ঠ) গলা ছেড়ে গান গাও।
৪. জ্বর ছাড়া (জ্বর থামা) ঘাম দিয়ে তার জ্বর ছেড়েছে।
৫. ছেড়ে দেওয়া (মুক্ত করা) পাখিটাকে ছেড়ে দাও।
৬. ঘর ছাড়া (গৃহত্যাগ করা) ঘর ছেড়ে ছেলেটি পথে পথে ঘুরছে।
৭. ছাড়া (ব্যতীত) তোমাকে ছাড়া বাঁচে কি পরান।
৯. ছাড়া (আশ্রয়) মা ছাড়া শিশু অসহায়।
তোলা
আভিধানিক বা সাধারণ অর্থ : উঠানো, উত্তোলন
বিশেষ অর্থ :
১. গুজব তোলা (রটনা করা) যে মিথ্যা গুজব তোলে, সে দেশের শত্রু।
২. ঘরে তোলা (গৃহজাত করা) সব ফসল ঘরে তোলা হয়েছে তো?
৩. সুর তোলা (সুর ভাঁজা) গায়ক গানের সুর তুলতে চেষ্টা করছে।
৪. পটল তোলা (মারা যাওয়া) সে অল্প বয়সে পটল তুলেছ।
৫. চাঁদা তোলা (চাঁদা সংগ্রহ করা) দুর্গত এলাকার জন্য স্বেচ্ছা সেবক বাহিনী রাস্তায় রাস্তায় চাঁদা তুলতে নেমেছে।
৬. হাত তোলা (প্রহার করা) গরিবের গায়ে হাত তোলা উচিত নয়।
৭. কথা তোলা (প্রসঙ্গ উত্থাপন করা) বড় সাহেবের কাছে আমার কথাটা তুলছে নাকি।
৮. জাতে তোলা (সমাজে স্থান দেওয়া) প্রায়শ্চিত্ত করে তাকে জাতে তোলা হয়েছে।
৯. কারবার তোলা (লোপ করা) ক্ষতির ভয়ে কারবার তুলে খুব ভাল কাজ করিনি।
১০. ফুল তোলা (চয়ন করা) সেলিনা বাগানে ফুল তুলছে।
১১. ফসল তোলা (গোলাজাত করা) কৃষক তার মাঠের ফসল তুলেছে।
দেওয়া
আভিধানিক বা সাধারণ অর্থ : প্রদান
বিশেষ অর্থ :
১. নাম দেওয়া (তালিকাভুক্ত হওয়া) তরুণ ছেলেটি সৈন্য বিভাগে নাম দিয়েছে।
২. সাড়া দেওয়া (আহŸানে জবাব দান) দেশের ডাকে সাড়া দেওয়া প্রতিটি নাগরিকের কর্তব্য।
৩. জাত দেওয়া (মান বিনষ্ট করা) অভাবে পড়ে ছেলেটি জাত দিয়েছে।
৪. হানা দেওয়া (আক্রমণ করা) দেশে শত্রু হানা দিয়েছে।
৫. কান দেওয়া (শুনা) গুজবে কান দিয়ো না।
৬. প্রাণ দেওয়া (আত্মত্যাগ করা) প্রকৃত দেশপ্রেমিক দেশের জন্য হেসে হেসে প্রাণ দিতে পারেন।
ঐঝঈ-২৮৫১ ব্যাকরণ-১৩৯
৭. তা দেওয়া (উষ্ণতা দেওয়া) মুরগি ডিমে তা দিচ্ছে।
৮. ছুটি দেওয়া (বন্ধ দেওয়া) আজ থেকে কলেজ দুদিনের ছুটি দেওয়া হয়েছে।
৯. মুখ দেওয়া (খাওয়া) বিড়াল দুধে মুখ দিয়েছে।
১০. চম্পট দেওয়া (পালাইয়া যাওয়া) দুষ্ট ছেলেটা টাকা মেরে চম্পট দিয়েছে।
ধরা
আভিধানিক বা সাধারণ অর্থ : স্পর্শ, পাকড়ানো, পৃথিবী
বিশেষ অর্থ :
১. দোষ ধরা (দেখান) পরের দোষ ধরার অভ্যাস ভালো নয়।
২. তাল ধরা (উৎসাহ দেওয়া) প্রতি কাজেই তাল ধরলে হয় না।
৩. রোগ ধরা (রোগাক্রান্ত হওয়া) লোকটাকে শক্ত রোগে ধরেছে।
৪. মনে ধরা (পছন্দ হওয়া) কলমটি আমার মনে ধরেনি।
৫. ট্রেন ধরা (ঠিক সময় ট্রেন পাওয়া) বড্ড দেরি হয়ে গেছে; ট্রেন ধরতে পারব কি?
৬. দাম ধরা (মূল্য নির্ধারণ) ন্যায্য দাম ধরে গরুটি দিয়ে দাও।
৭. কলম ধরা (লিখা শুরু করা) শেষ পর্যন্ত আমাকে তার বিরুদ্ধে কলম ধরতে হলো।
৮. ধরা (অনুরোধ করা) বড় কর্তাকে ধরলেই চাকরি হয়ে যাবে।
৯. গান ধরা (গান গাওয়া) অনেক সাধাসাধির পর তিনি গান ধরলেন।
পা
আভিধানিক বা সাধারণ অর্থ : পদ, চরণ
বিশেষ অর্থ :
১. পা বাড়ানো (অগ্রসর হওয়া) পা বাড়িয়ে চলো; সাফল্য তোমার আসবেই।
২. পা চালান (দ্রæতবেগে চলন) অফিসের সময় হওয়াতে সে পা চালিয়ে চলে গেল।
৩. পায়ে পড়া (ক্ষমা চাওয়া) কৃত অপরাধের জন্য ছাত্রটি শিক্ষকের পায়ে পড়ল।
৪. পায়ে ঠেলা (তুচ্ছ করা) হাতের ল²ী পায়ে ঠেলো না।
৫. পায়ে ধরা (অনুরোধ করা) ওর মতো কৃপণের পায়ে ধরলেও দুটি টাকা দেবে না।
৬. পা চাটা (হীন খোশামোদ করা) দুমুঠো ভাতের জন্য কারো পা চাটতেও তার আপত্তি নাই।
পাকা
আভিধানিক বা সাধারণ অর্থ : পক্ব, পরিণত
বিশেষ অর্থ :
১. পাকা ইট ( পোড়ানো) পাকা ইটের বাড়ি খুব শক্ত মজবুত।
২. পাকা (অভিজ্ঞ) রহমান সাহেব পাকা ডাক্তার।
৩. পাকা সোনা (খাঁটি) পাকা সোনার অলংকার টিকে বেশি।
৪. পাকারং (স্থায়ী) পাকা রঙের শাড়ি দামে সস্তা নয়।
৫. পাকা চুল (সাদা) বুড়োর পাকা চুলের বাহার দেখো।
৬. পাকা খাতা(শেষ) পাকা খাতায় হিসেব তোলা হয়েছে; আর কাটাকাটি সম্ভব নয়।
৭. পাকা (নিপুণ) বুড়োর কাজে খুঁত থাকে না সে এতই পাকা।
৮. পাকা (সম্পূর্ণ) এ কাজটি করতে যকির পাকা এক সপ্তাহ লেগেছে।
৯. পাকাকথা (অপরিবর্তনীয়) তারা বিয়েতে পাকাকথা দিয়েছে।
বড়
আভিধানিক বা সাধারণ অর্থ : বৃহৎ, দীর্ঘ, মহৎ, খুব
বিশেষ অর্থ :
১. বড় (ধনী) সে বেশ বড় লোক।
২. বড় (উচ্চপদস্থ) অফিসের বড় বাবু বদমেজাজি লোক।
৩. বড় (অত্যন্ত) বড় বিপদে পড়েই তোমার কাছে এসেছিলাম।
৪. বড় (উদার) সম্রাট আকবর বড় মনের অধিকারী ছিলেন।
৫. বড় ( জ্যেষ্ঠ) মৈত্রী বাবা মায়ের বড় মেয়ে।
৬. বড় (উচ্চবংশ) বড় ঘরের মেয়ে বলে তার এত দেমাক।
৭. বড় (কঠোর) সে আমার মুখের উপর এত বড় কথা বলতে পারল!
৮. বড় (বিশেষ) বড়দিনের ছুটিতে লিপি বন্ধুর বাড়ি বেড়াতে গেল।
৯. বড় (নিকট) লোকটি আমার বড় কুটুম।
বুক
আভিধানিক বা সাধারণ অর্থ : বক্ষস্থল, অন্তর, ছাতি
বিশেষ অর্থ :
১. বুক বাঁধা (মন দৃঢ় করা) পিতৃহীন ছেলেটি বুক বেঁধে জীবন সংগ্রামে নেমেছে।
২. বুক ফাটা (হৃদয় বিদীর্ণ হওয়া) কোন কোন মায়ের বুক ফাটলেও মুখ ফোটেনা।
৩. বুকের পাটা (সাহস) বিড়াল দেখলে যে ভয় পায়, তার আবার বুকের পাটা!
৪. বুক পাতা (সাহায্য করা) প্রকৃত মানুষ যাঁরা, তাঁরা পরের জন্য বুক পাততে পারেন।
৫. বুক ফুলা (গর্ব করা) ছেলের পরীক্ষা পাশে বুড়োর বুক ফুলে গেছে।
৬. বুকে লাগা (আঘাত পাওয়া) তোমার কঠোর বাক্য বন্ধুর বুকে লেগেছে।
৭. বুক লাগান (সাহায্য করা) পরের বিপদে বুক লাগান মহত্তে¡র কাজ।
মন
আভিধানিক বা সাধারণ অর্থ : চিত্ত, হৃদয়
বিশেষ অর্থ :
১. মন উঠা (সন্তুষ্ট হওয়া) যতই দাও না কেন তার কিন্তু মন উঠবে না।
২. মন পড়া (পছন্দ হওয়া) মেয়েটাতে তার মন পড়েছে।
৩. মন লাগা (মনোযোগী হওয়া) কিছুতেই কাজে মন লাগছে না।
৪. মনে পড়ে (স্মরণে আসা) কবিতার লাইনটা মনে পড়ছে না।
৫. মনে লাগা (পছন্দ হওয়া) বাড়িটি আমার বেশ মনে লেগেছে।
৬. মন পাওয়া (ভালোবাসা পাওয়া) এত করেও তোমার মন পাইনি।
৭. মনের মিল (সদ্ভাব) ওদের দুজনের মধ্যে মনের মিল নেই।
৮. মন কষাকষি (মনোমালিন্য) সম্পত্তি নিয়ে উভয়ের মধ্যে মন কষাকষি আছে।
মাথা
আভিধানিক বা সাধারণ অর্থ : মস্তক, শির, আগা, আরম্ভ ,শরীরের একটি অঙ্গ
বিশেষ অর্থ :
১. মাথা দেওয়া (সাহায্য করা) বিপদে যে মাথা দেয় সেই প্রকৃত বন্ধু।
২. মাথা ধরা (মাথায় যন্ত্রণা হওয়া) ওষুধ খেয়ে রোগীর মাথা ধরেছে।
৩. মাথা পাতা (সম্মত হওয়া) এ কাজে আমি মাথা পাততে পারি না।
৪. মাথা আসা (বোধগম্য হওয়া) অঙ্কটি কিছুতেই আমার মাথায় আসছে না।
৫. মাথা খাওয়া (নষ্ট করা) অতি আদর দিয়ে ছেলেটার মাথা খেয়ো না।
৬. মাথা ঠেকান (প্রণাম করা) ও আমার দেশের মাটি, তোমার তরে ঠেকাই মাথা।
৭. মাথায় উঠা (প্রশ্রয় পাওয়া) আদর পেয়ে ছেলেটা মাথায় উঠে যাচ্ছে।
৮. মাথা গরম করা (চটিয়া যাওয়া) এত অল্পে ছেলেটা মাথায় গরম করছে।
৯. চোখের মাথা খাওয়া (অন্ধ হওয়া) চোখের মাথা খেয়েছ নাকি?
১০. মাথার দিব্যি (শপথ) মাথার দিব্যি, তুমি সেখানে যাবে না।
মুখ
আভিধানিক বা সাধারণ অর্থ : মুখমÐল, সম্মুখ
বিশেষ অর্থ :
১. মুখ রাখা (মান রাখা) ছেলেটা তার বাবার মুখ রেখেছে।
২. মুখ উজ্জ্বল করা (গৌরব বাড়ানো) সুপুত্র বংশের মুখ উজ্জ্বল করতে পারে।
৩. মুখ চাওয়া (নির্ভর করা) আমি তার মুখ চেয়ে বসে আছি।
৪. মুখ তোলা (প্রসন্ন হওয়া) খোদা দরিদ্র লোকটির দিকে মুখ তুলে চেয়েছেন।
৫. মুখে খই ফোটা (বেশি কথা বলা) মনে হয়, বক্তার মুখে যেন খই ফুটছে।
৬. মুখ খোলা (নীরবতার পর কথা বলা) অনেকক্ষণ পর দেখি আপনি মুখ খুললেন।
৭. মুখ সামলানো (সংযত হওয়া) খবরদার মুখ সামলিয়ে কথা বলো।
৮. মুখ করা (তিরস্কার করা) আমি আপনার খাই, না পরি; আমাকে মুখ করছেন কেন?
৯. মুখ চুন হওয়া (লজ্জা পাওয়া) ছোট ভাইয়ের অভদ্র ব্যবহারে আমার মুখ চুন হয়েছে।
১০. মুখ ভার করা (অভিমান করা) মুখ ভার করে বসে থেকে কি লাভ?
১১. মুখ ফুটে বলা (সাহস করে বলা) এ সামান্য কথাটাও মুখ ফুটে তুমি বলতে পারলে না?
১২. মুখচোরা (লাজুক) তার মতো মুখচোরা ছেলে আবার আইন পড়ে।
১৩. মুখবন্ধ (ভূমিকা) মুখবন্ধে বইটির সংক্ষিপ্ত পরিচয় আছে।
১৪. মুখ লাল হওয়া (রাগান্বিত হওয়া) তার কথা শুনে কবির সাহেবের মুখ লাল হয়ে গিয়েছিল।
মোটা
আভিধানিক বা সাধারণ অর্থ :
বিশেষ অর্থ :
১. মোটা (স্থূল) মোটা বুদ্ধিতে সব কাজ হয় না।
২. মোটা (অমসৃণ) মোটা কাপড় আমি পরি না।
৩. মোটা (মিহি নয়-এমন) মোটা ভাত ও মোটা কাপড়েই সে তুষ্ট।
৪. মোটা (বেশি) মোটা আয়ের লোক গরিবকে চোখে দেখে না।
৫. মোটা (বহু) আমার মোটা কাজ আছে।
৬. মোটা (প্রচুর) মোটা ধার নিলে শেষে শোধ করতে পারে না।
রাখা
আভিধানিক বা সাধারণ অর্থ :
বিশেষ অর্থ :
১. পায়ে রাখা (আশ্রয় দেওয়া) এ অধমকে পায়ে রেখ, হে খোদা!
২. মান রাখা (সম্মান রাখা) সন্তান বংশের মান রাখতে পারে।
৩. মন রাখা ( সন্তুষ্ট করা) সকলের মনরেখে চলা কঠিন।
৪. কথা রাখা (অনুরোধ রক্ষা করা) আমার বিশ্বাস, সে আমার কথা রাখবে।
৫. চোখ রাখা (নজর রাখা) শিশুটির প্রতি চোখ রেখো।
৬. মনে রাখা (স্মরণ রাখা) সে বংশের মান রেখেছে।
৭. নাম রাখা (সম্মান রাখা) ছেলেটা বাপের নাম রেখেছে।
৮. কথা রাখা (প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা) শেষ পর্যন্ত কথা রাখলেন বড় সাহেব।
লাগা
আভিধানিক বা সাধারণ অর্থ :
বিশেষ অর্থ :
১. পিছু লাগা (শত্রুতা করা) সে আমার পিছু লেগেছে কেন বুঝতে পারছি না।
২. জোড়া লাগা (সংলগ্ন হওয়া) ভাঙা মন জোড়া লাগে না।
৩. মন লাগা (মনোযোগ দেওয়া) কাজে মন লাগাও।
৪. চমক লাগা (আশ্চর্যান্বিত হওয়া) দৃশ্যটি দেখে আমার চমক লেগেছে।
৫. ভেল্কি লাগা (ধাঁধাঁ লাগা) মন্ত্র আউড়িয়ে লোকের মনে ভেল্কি লাগানোর যুগ চলে গেছে।
৬. নজর লাগা (কু দৃষ্টি লাগা) রমেশবাবুর বাড়ির প্রতি চোরের নজর লেগেছে।
৭. ভাল লাগা (পছন্দ হওয়া) একই জায়গায় বেশিদিন ভাল লাগে না।
৮. ঘাটে লাগানো (ভিড়ান) জাহাজ ঘাটে লেগেছে।
৯. কাজে লাগা (শুরু করা) স¤প্রতি এক নতুন কাজে লেগেছি।
১০. হাতে লাগা (হাতে আঘাত পাওয়া) সাবধানে কাজ করো নতুবা হাতে লাগবে।
শক্ত
আভিধানিক বা সাধারণ অর্থ : কঠিন, নরম না
বিশেষ অর্থ :
১. শক্ত কথা (কড়া) কাউকে শক্ত কথা বলো না।
২. শক্ত (কঠিন) অঙ্কটি খুবই শক্ত।
৩. শক্ত (দুরারোগ্য) বড় শক্ত পীড়ায় সে ভুগছে।
৪. শক্ত লোক (নির্দয়) শক্ত লোক অনেকেরই পছন্দ নয়।
৫. শক্ত (মজবুত) করিম সাহেবের হাতের কাজ খুবই শক্ত।
হাত
আভিধানিক বা সাধারণ অর্থ : হস্ত /শরীরের একটি অঙ্গ
বিশেষ অর্থ :
১. হাত আসা (অভ্যাস হওয়া/রপ্ত হওয়া) কাজটিতে তার হাত এসেছে।
২. হাত করা (বশীভূত করা) চাকরটাকে হাত করে চোর ঘরে ঢুকেছে।
৩. হাত থাকা (প্রস্তাব) এ ব্যাপারে আমার হাত নেই।
৪. হাত পাতা (অনুগ্রহ চাওয়া/ভিক্ষা করা) আমি তার কাছে হাত পাততে পারবো না।
৫. হাত দেওয়া (কাজ করতে চাওয়া) এক সপ্তাহ ধরে কাজটিতে হাত দিতে পারি না।
৬. হাতটান (চুরির অভ্যাস) হাতটানের জন্য চাকরটাকে বিদায় দেওয়া হয়েছে।
৭. হাত তোলা (প্রহার করা) গরিবের গায়ে হাত তোলা ভাল নয়।
৮. হাত দেখা (ভাগ্য গণনা করা) জ্যোতিষী তার হাত দেখেছে।
৯. হাত যশ (সুখ্যাতি) ডা. রফিকের হাত যশ আছে।
১০. হাত চলা (তাড়াতাড়ি করা) একটু হাত চালাও বাছারা, অনেক কাজ যে বাকি।
১১. হাতজোড় করা (ক্ষমা চাওয়া) থাক হয়েছে ভাই, আর বকোনা;
তোমার কাছে হাতজোড় করছি।
১২. হাত পাকা (দক্ষ হওয়া) চেষ্টা করলেই হাত পাকাতে পারবে।
১৩. হাত খরচ (ব্যক্তিগত খুচরা ব্যয়) প্রতি মাসে সে তার বাবার নিকট থেকে সামান্য হাত খরচ পায়।
১৪. হাত খালি (নিঃস্ব হওয়া) মাসের শেষে সবারই হাত খালি থাকে।
১৫. হাতেনাতে (প্রমাণসহ ধরা) চোরটিকে শেষে হাতেনাতে ধরা হয়েছে।
১৬. হাতে পাওয়া (আয়ত্তে পাওয়া) অনেক দিন পর তাকে হাতে পেয়েছি।
১৭. হাতেখড়ি (প্রাথমিক শিক্ষা) শিরিনের হাতে খড়ি হয়েছে।
১৮. হাতের পাঁচ (শেষ সম্বল) বৃদ্ধা শেষে হাতের পাঁচকেও হারালো।
১৯. হাতের পুতুল (যাকে দিয়ে ইচ্ছামতো কাজ করানো যায়) সে তার হাতের পুতুল।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
১. নিচের শব্দগুলোর একই শব্দের ভিন্নার্থক প্রয়োগ দেখান।
কথা, চোখ, মাথা, পাকা, মুখ।

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]