মানুষ মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য কথা বলে। এই যে কথা, আমরা মুখে বলে আমাদের মনের ভাব প্রকাশ
করি তা কিন্তু লিখেও অন্যকে জানান যায়। দূরের আত্মীয় বা বন্ধুকে আমরা লিখে আমাদের মনের ভাব সম্পূর্ণ জানাতে
পারি। আবার যে ভাবনা সরাসরি কাউকে জানাচ্ছি না অনাগত মানুষ ও কালের জন্যও লিখে যেতে পারি। লিখিত ভাষায়−
আমরা চিহ্ন ব্যবহার করি। এ চিহ্নগুলো দুটো কারণে ব্যবহৃত হয় − (এক) বাক্যের অর্থকে সঠিকভাবে অন্যের কাছে
পৌঁছানোর জন্য, (দুই)− বাক্যটি উচ্চারণ করে পড়লে বাক যন্ত্রকে বিরাম দানের জন্য।
আমরা একনাগাড়ে কথা বলে যেতে পারি না। মাঝে মাঝে আমাদের নিঃশ্বাস গ্রহণ করতে হয়। তাছাড়া স্বরসঙ্গতিহীন
অবস্থায় একের পর শব্দ উচ্চারণ করে গেলে তার অর্থ বোঝা যায় না। এসব কারণে− কথা অন্যের কাছে বোধগম্য ও
আমাদের বাগযন্ত্রকে বিরাম দানের জন্য মাঝে মাঝে কথা বলার মধ্যে বিরতি দেই। এই বিরতিগুলোই কথা লেখার সময়
অর্থাৎ ভাষাকে যখন আমরা লিখিত রূপ দেই, তখন নানা রকম চিহ্ন দিয়ে বিরতির ইঙ্গিত দেই। কথা বলার সময় শ্বাস
গ্রহণের জন্য আমরা থামি, তাকে বলে শ্বাস পর্ব বা নৎবধঃয ঢ়ধঁংব, এবং অর্থ সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করার জন্যও আমরা বিরতি
দেই − একে বলে সার্থপর্ব বা ঝবহংব চধঁংব।
বিরাম চিহ্ন কথার অর্থ যে চিহ্নের সাহায্যে কথা বলার সময় জিহŸার কাজের বিরাম বা বিরতি নির্দেশিত হয়। মনোভাব
প্রকাশের সময় অর্থ ভালোভাবে বোঝার জন্য উচ্চারিত বাক্যের বিভিন্ন স্থানে বিরতি দিতে হয়। লেখার সময়ও বাক্যের
মধ্যে বিরতি বুঝিয়ে তা দেখানোর জন্য কিছু সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করা হয়, সেগুলোকেই বিরতি চিহ্ন, যতি চিহ্ন, ছেদ
চিহ্ন, বিরাম চিহ্ন বা ভাষা চিহ্ন বলে।
হাজার বছরের ঐতিহ্যে ভরপুর বাংলা ভাষা ও সাহিত্য কিন্তু বাংলা ভাষায় সুষ্ঠুভাবে বিরাম চিহ্ন ব্যবহার শুরু হয়েছে দেড়শ
দুইশ বছর আগে। মহামতি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮২০-১৮৯১) বাংলা গদ্যে বিরাম চিহ্ন ব্যবহারের প্রথম নৈপুর্ণ দেখান।
এ কারণেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে বাংলা গদ্যের জনক বলেছেন। যতি চিহ্নের প্রয়োগ যথাযথ না হলে
বাক্য অস্পষ্ট বা দুর্বোধ্য হতে পারে। এমনকী কখনো কখনো প্রত্যাশিত অর্থ প্রকাশ না করে সম্পূর্ণ ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করতে
পারে।
নিচে বিভিন্ন প্রকার যতি চিহ্নের নাম, আকৃতি এবং তাদের বিরতি কাল নির্দেশ করা হলো:
যতি চিহ্নের নাম আকৃতি বিরতি কাল
কমা , ১(এক) বলতে যে সময় লাগে
সেমিকোলন ; ১ বলার দ্বিগুণ সময়
দাঁড়ি (পূর্ণচ্ছেদ) । এক সেকেন্ড
জিজ্ঞাসা চিহ্ন ? এক সেকেন্ড
বিস্ময় চিহ্ন ! এক সেকেন্ড
কোলন চিহ্ন : এক সেকেন্ড
কোলন ড্যাস :- এক সেকেন্ড
ড্যাস - এক সেকেন্ড
হাইফেন - থামার প্রয়োজন নেই
ইলেক বা লোপ চিহ্ন ’ থামার প্রয়োজন নেই
উদ্ধরণ চিহ্ন “ ” ‘এক’ উচ্চারণে যে সময় লাগে
ব্র্যাকেট ()
{}
[ ]
থামার প্রয়োজন নেই
থামার প্রয়োজন নেই
থামার প্রয়োজন নেই
যতি বা ছেদচিহ্নের ব্যবহার :
১. কমা {পাদচ্ছেদ (,)}সাধারণত একটি দীর্ঘ বাক্যের ভেতরে দম নেয়া ও অর্থের স্পষ্টতা বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। বাক্যের
মধ্যে স্বল্পতম সময়ের বিরতি নির্দেশ করে কমা। নিচে কমার প্রয়োগ ক্ষেত্র উল্লেখ করা হলো:
ক. বাক্যে সমজাতীয় একাধিক পদ থাকলে কমা ব্যবহৃত হয়। যথা: সালাম, বরকত, রফিক- নাম না জানা আরো অনেকে
শহিদ হয়েছেন ভাষা আন্দোলনে।
খ. পরস্পর সম্বন্ধসূচক একাধিক বিশেষ্য বা বিশেষণ পদ একসঙ্গে বসলে শেষ পদটি ছাড়া বাকি সবগুলোর পরই কমা
বসবে। যেমন: সুখ, দুঃখ, আশা, নৈরাশ্য একই মালিকার পুষ্প।
গ. সমজাতীয় একাধিক বাক্য বা বাক্যাংশ থাকলে কমা ব্যবহৃত হয়। যথাÑ বসতে দিলে শুতে চায়, শুতে দিলে ঘুমাতে
চায়।
ঘ. বাক্যের প্রারম্ভে সম্বোধনের পরে কমা বসাতে হয়। যেমন: শুভ, এদিকে এসো।
ঙ. জটিল বাক্যের অন্তর্গত প্রত্যেক খÐ বাক্যের পরে কমা বসবে। যেমন: গতকাল যে লোকটি এসেছিল, সে আমার
পরিচিত।
চ. উদ্ধরণ চিহ্নের পূর্বে কমা বসাতে হয়। যেমন: সাহেব বললেন, “এখানে একবার এসো।”
ছ. মাসের তারিখ লিখতে বার ও মাসের পর কমা বসবে। যেমন: ১৮ পৌষ, বুধবার, ১৩১০ সাল।
জ. বাড়ি বা রাস্তার নম্বরের পরে কমা বসবে। যেমন: ৬৮, নবাবপুর রোড, ঢাকা-১০৮০।
ঝ. নামের পরে ডিগ্রিসূচক পরিচয় সংযোজিত হলে সেগুলোর প্রত্যেকটির পরে কমা বসবে। যেমন: ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ
এম. এ, পি এইচ ডি।
ঞ. দুই বা ততোধিক অসমাপিকা ক্রিয়াপদ পরপর ব্যবহৃত হলে কমা বসানো হয়। যেমন: খেতে খেতে, যেতে যেতে,
দেখতে দেখতে কক্সবাজার পৌঁছলাম।
ট. সংযোজক এবং বিয়োজক অব্যয়ের আগে কমা বসে। যেমন: আমি তাকে পছন্দ করি। কিন্তু তা সে বুঝতে চায় না।
ঠ. বড় রাশিতে হাজার, লক্ষ, কোটি লেখতে কমা বসে। যেমন: ১, ৬, ১২, ৭৩, ৪৫৮।
ড. বাক্যের সূচনায় সুতরাং, বিশেষত, মুখ্যত ইত্যাদি পদের পরে কমা বসে। যথা: সুতরাং, তোমার কোনো কথা আমরা
শুনবো না।
২. সেমিকোলন (;)
ক. কমা অপেক্ষা বেশি কিন্তু দাঁড়ির চেয়ে কম সময়ের বিরতির প্রয়োজন হলে সেমিকোলন বসে। শব্দ বা পদের পরে
সেমিকেলন বসে না। সাধারণত বাক্যাংশের পরে বসে। যেমন: সংসারের মায়াজালে আবদ্ধ আমরা; এ মায়ার বাঁধন
কি সত্যিই টুটে।
খ. একাধিক স্বাধীন বাক্যকে একবাক্যে লিখতে মাঝখানে সেমিকোলন হয়। যেমন: চাঁদ পৃথিবীর চারদিকে ঘুরে; পৃথিবী
সূর্যের চারদিকে।
গ. দুটি বা তিনটি বাক্য সংযোজক অব্যয়ের সাহায্যে যুক্ত না হলে সেমিকোলন হয়। যেমন: আগে পড়া; তারপর খাওয়া;
অতঃপর স্কুল।
ঘ. পরস্পর নির্ভরশীল বাক্য সংযোজক অব্যয় দিয়ে যুক্ত হলেও কখনো কখনো প্রথম বাক্যের শেষেও সংযোজক অব্যয়ের
আগে সেমিকোলন বসে। যথাÑ দুঃখ তো মানুষের জন্যই আসে; কিন্তু তা জয় করার জন্য চাই মনোবল।
ঙ. যেসব বাক্যে ভাব সাদৃশ্য আছে তাদের মধ্যে সেমিকোলন বসে। যেমন: শরীরটা ভালো নয়; মাঝে মাঝে হাঁচি ও কাশি
আসছে।
চ. বাক্যের কোনো বক্তব্যকে পরবর্তী অংশে বিষদভাবে বর্ণনাকরার সময় দুই অংশের মাঝে সেমিকোলন বসে। যেমনআমরা স্বাধীন জাতি; আমাদের উন্নতি কীসে হবে, কিভাবে হবে তা ভেবে দেখতে হবে।
ছ. শ্রেণিভুক্ত করার সময় এর জাতীয় বিষয়কে অন্য শ্রেণি থেকে পৃথক করতে সেমিকোলনের ব্যবহার হয়। যেমন:
শীতকালে ফুলকপি, গাজর, বাধাকপি; কমলা ও আঙুর পাওয়া যায়।
৩. দাঁড়ি বা পূর্ণছেদ (।)
বাংলাভাষায় দাঁড়ি একটি বহুল ব্যবহৃত যতিচিহ্ন। বাক্যের মধ্যে বক্তব্য সমাপ্ত হলে অথবা অর্থ সম্পূর্ণ হলে দাড়ি বা
পূর্নচ্ছেদ বসে। এর প্রয়োগ ক্ষেত্র হচ্ছেÑ
ক. অনুজ্ঞাসূচক বাক্যের শেষে দাঁড়ি বসে। যেমন: কাল একবার এসো।
খ. নির্দেশাত্মক বাক্যের শেষে দাঁড়ি বসে। যেমন: সব সময় সত্য কথা বলবে।
গ. পরোক্ষ প্রশ্নের শেষে প্রশ্নবোধক চিহ্নের বদলে দাড়ি ব্যবহার হয়। যেমন: সীমা জানতে চাইল রীমা কবে আসবে।
৪. প্রশ্নবোধক চিহ্ন (?)
প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে প্রশ্নবোধক চিহ্ন বসা হয়। এর ব্যবহার ক্ষেত্রÑ
ক. বাক্যে কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করা হলে বাক্যের শেষে প্রশ্নবোধক চিহ্ন বসে। যেমন: তুমি এখন এলে? সে কি যাবে?
খ. সন্দেহ বোঝাতে প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়। যেমন: সে কি কাল আসবে?
গ. ব্যাঙ্গাত্মক মনোভাব প্রকাশে কখনো কখনো বাক্যের মধ্যে প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়। যেমন: আপনার মতো উপকারী বন্ধু (?)
না থাকাই ভালো।
ঘ. প্রশ্নবাচক পদের পরে প্রশ্নবোধক চিহ্ন করতে পারে। যেমন: কোথায় যাবেন?
৫. বিস্ময় ও সম্বোধন চিহ্ন (!)
ক. হৃদয়াবেগ প্রকাশ করতে হলে এবং সম্বোধন পদের পরে (!) চিহ্নটি বসে। যেমন: আহা! কি চমৎকার দৃশ্য। জননী!
আজ্ঞা দেহ মোরে যাই রণস্থলে।
খ. আবেদন, ভীতি, হতাশা, আনন্দ প্রকাশের ক্ষেত্রে (!) চিহ্নটি বসে। যেমন: দয়া করে আমার কথা শুনুন!
গ. সবিস্ময় প্রশ্নের জায়গায় প্রশ্ন চিহ্নের পরিবর্তে বিস্ময়সূচক চিহ্ন বসে। যেমন: তোমার হৃদয় কি পাষাণে গড়া! একটি
বারও পলাশের কথা ভাবলে না!
ঘ. সংক্ষিপ্ত উত্তরের শেষে কখনো কখনো পূর্ণচ্ছেদ না বসে বিস্ময়সূচক চিহ্ন বসে। যেমন: আমাকে একটু আদর করবে!
৬. কোলন (:)
বিষয়ান্তের অবতারণা প্রসঙ্গের পরিণতি অথবা দৃষ্টান্ত দেখানের জন্য কোলন চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। তবে সতর্ক থাকা
দরকার, কোলন কখনোই যেন দেখতে বিসর্গ (ঃ) এর মত না হয়। কোলনের মাঝখানে কোনো ফাঁক থাকবে না। এর
ব্যবহার হলোÑ
ক. একটি অপূর্ণ বাক্যের পরে আর একটি বাক্যের অবতারণা করতে গেলে কোলন ব্যবহৃত হয়। যেমন: সভায় সাব্যস্ত
হলো: এক মাস পরে নতুন সভাপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
খ. কোনো বিবৃতিকে সম্পূর্ণ করতে দৃষ্টান্ত দিতে হলে কোলন ব্যবহার করতে হয়। যেমন: পদ পাঁচ প্রকার: বিশেষ্য,
বিশেষণ, সর্বনাম, অব্যয়, ক্রিয়া।
গ. নাটকের চরিত্রের পরে ও সংলাপের আগে কোলন বসে। যেমন: সিরাজ : আমার দুর্ভাগ্য যে আপনাকে আমার অপমান
করতে হয়েছে।
ঘ. আবেদন পত্রে ভুক্তি, উপভুক্তির পরে কোলন বসে। যেমন: নাম : পিতার নাম: ঠিকানা : শিক্ষাগত যোগ্যতা : স্বাক্ষর :
তারিখ:।
ঙ. সময়কে সংখ্যায় নির্দেশ করতে : ১২:৩০, ২:১৫।
৭. ড্যাশ চিহ্ন (Ñ)
ড্যাস শব্দের বাংলা অর্থ বাক্য সঙ্গতি চিহ্ন। বাক্যের মধ্যে গতির জন্য ড্যাস চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। এর ব্যবহার ক্ষেত্র হলোÑ
ক. যৌগিক বা মিশ্র বাক্যে পৃথক ভাবাপন্ন দুই বা তার কোনো বাক্যের সমন্বয় বা সংযোগ বোঝাতে ড্যাশ চিহ্ন ব্যবহৃত
হয়। যেমন: তোমরা দরিদ্রের উপকার কর- এতে তোমাদের সম্মান যাবে না- বাড়বে।
খ. উদাহরণ প্রয়োগ করতে হলে ড্যাশ চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন: বচন দুই প্রকার- একবচন, বহুবচন।
গ. কোনো কথার দৃষ্টান্ত বা বিস্তার বোঝাতে ড্যাশ হয়। যেমন: বার্ধক্য তাহাই- যাহা পুরাতনকে, মিথ্যাকে, মৃত্যুকে
আকড়িয়া পড়িয়া থাকে।
ঘ. বাক্য অসম্পূর্ণ থাকলে বাক্যের শেষে ড্যাশ চিহ্ন হয়। যেমন: বাবা গর্জিয়া উঠিলেন, “বটে রে”-ইত্যাদি।
ঙ. উদ্ধৃতি চিহ্নের পরিবর্তে ড্যাশ চিহ্ন বসে। যেমন: শিক্ষক বলিলেনÑ এই দিকে আয়।
চ. স্বরকে দীর্ঘ করে দেখানোর জন্য ড্যাশ চিহ্ন হয়। যেমন: ঘু-ম-আ-সে-না দু-চো-খে-আ-মা-র।
৮. হাইফেন বা সংযোগ চিহ্ন (-)
হাইফেন সবসময় দুই বা ততোধিক শব্দের মধ্যে বসে। বাংলা লেখার সময় এর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। এর ব্যবহার ক্ষেত্র
হলোÑ
ক. সমাসবদ্ধ পদের অংশগুলো বিচ্ছিন্ন করে দেখানোর জন্য হাইফেন ব্যবহৃত হয়। যেমন: হাট-বাজার, সাত-পাঁচ।
খ. একই শব্দ পরপর দুবার বসলে তাদের মাঝে হাইফেন বসে। যেমন: চলতে-চলতে কোথায় চলে যায়। যেতে-যেতে
হয়রান হয়ে পড়েছি।
গ. দিক বা স্থান বা সময় নির্দেশের ক্ষেত্রে অনেক সময় হাইফেন বসে। যেমন: উত্তর-পশ্চিম কোণে মেঘ জমেছে।
ঘ. কোনো কোনো উপসর্গের পরে হাইফেন বসে। যেমন: অ-তৎসম, কু-অভ্যাস, বে-আঙ্কেল।
ঙ. সংখ্যা বা পরিমাণগত ব্যবধান বোঝাতে হাইফেন হয়। যেমন: আমাদের দল ৪-০ গোলে জিতেছে।
চ. দপ্তর, প্রতিষ্ঠান, মন্ত্রণালয় ইত্যাদির ক্ষেত্রে হাইফেন ব্যবহৃত হয়। যেমন- মুক্তিযোদ্ধা-মন্ত্রণালয় যাচাই বাছাইয়ের
মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা সনদ বিতরণ করছে।
৯. ইলেক (’) বা লোপ চিহ্ন বা উর্ধ্বকমা
ক. শব্দে বর্ণের লোপ বোঝাতে ইলেক বা লোপ চিহ্ন হয়। যেমন: মাথার’ পরে জ্বলছে রবি (’পরে=ওপরে), পাগড়ি বাঁধা
যাচ্ছে কা’রা? (কা’রা = কাহারা) দু’বেলা ভাত জোটে নাÑ রেডিও কিনবো কি দিয়ে?
খ. হাইফেনের বিকল্প চিহ্ন হিসেবে ইলেক চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন: তোমার মা’র অসুখ সেরেছে কি?
গ. সালের বর্জিত সংখ্যা বোঝাতে ইলেক চিহ্ন বসে। যেমন: ২৬ মার্চ ’৭১, ২১ ফেব্রæয়ারি ’৫২।
১০. উদ্ধরণ চিহ্ন (“ ”)
বক্তার বক্তব্য অবিকৃতভাবে তুলে ধরতে হলে উদ্ধৃতি চিহ্নের ব্যবহার হয়। এর ব্যবহার ক্ষেত্র-
ক. বক্তার প্রত্যক্ষ উক্তিকে এ চিহ্নের অন্তর্ভুক্ত করতে হয়। যেমন: শিক্ষক বললেন, “পৃথিবী গোলাকার”।
খ. কোনো বিশেষ শব্দ বা শব্দগুচ্ছ এবং গ্রন্থের নামে উদ্ধৃতি চিহ্ন বসে। যেমন: শরৎচন্দ্রের ‘বিলাসী’।
গ. উদ্ধৃতির মধ্যে উদ্ধৃতি থাকলে ভিতরের অংশের শুরুতে ও শেষে একটি উদ্ধৃতি চিহ্ন দিতে হয়। যেমন: “শৈবাল দিঘিরে
বলে উচ্চ করি শির / ‘লিখে রেখ এক ফোঁটা দিলেম শিশির’।”
ঘ. বাক্যের মধ্যে বাগধারা অথবা বিশেষার্থক শব্দ ব্যবহার করলে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে থাকে। যথা- “ইতিপূর্বে পাঁচছয়দিন ইন্দ্র ‘চুরিবিদ্যা’ সপ্রমাণ করিয়া নির্বিঘেœ প্রস্থান করিয়াছে।”
১১. ব্র্যাকেট বা বন্ধনী চিহ্ন (), {}, [].
বাক্যের মধ্যে কোনো শব্দের অর্থ স্পষ্ট করার জন্য অথবা অন্য কোনো প্রসঙ্গের অবতারণা করার জন্য এ চিহ্ন ব্যবহৃত
হয়। বাক্যে সাধারণত প্রথম ও তৃতীয় বন্ধনীর ব্যবহার হয়।
সাধারণত এই তিনটি চিহ্ন (), {}, [] গণিতশাস্ত্রে ব্যবহৃত হয়। তবে প্রথম বন্ধনীটি বিশেষ ব্যাখ্যামূলক অর্থে সাহিত্যে
ব্যবহৃত হয়। যেমন: ত্রিপুরায় (বর্তমানে কুমিল্লা) তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
১২. বর্জন চিহ্ন ....
রচনার বিশেষ অংশ বর্জন করা হলে সেখানে বর্জন চিহ্নের প্রয়োগ ঘটে।
ব্যাকরণিক চিহ্ন
বিশেষভাবে ব্যাকরণে নি¤œলিখিত চিহ্নগুলো ব্যবহৃত হয়।
ক. ধাতু বা ক্রিয়ামূল বোঝাতে (√) চিহ্ন : √কৃ+অক = কারক
খ. পরবর্তী শব্দ থেকে উৎপন্ন বোঝাতে (<) চিহ্ন হয়। যেমন: গাঁ < গ্রাম।
গ. পূর্ববর্তী শব্দ থেকে উৎপন্ন বোঝাতে (>) চিহ্ন হয়। যেমন: স্বর্ণ > সোনা।
ঘ. সমানবাচক বা সমস্তবাচক বোঝাতে (=) সমান চিহ্ন হয়। পিতা ও মাতা = পিতামাতা
নিচের অনুচ্ছেদগুলোতে বিরাম চিহ্নের প্রয়োগ দেখানো হলো:
১. রেণু মাঝে মাঝে আমাদের জন্য ডালমুট ভেজে আনতো বাসা থেকে গেঁয়ো পথে হাঁটতে হাঁটতে মুড় মুড় করে ডালমুট
চিবোতাম আমরা তপু বলতো দেখো রাহাত আমার মাঝে মাঝে কী মনে হয় জান।
উ: রেণু মাঝে মাঝে আমাদের জন্য ডালমুট ভেজে আনতো বাসা থেকে। গেঁয়ো পথে হাঁটতে হাঁটতে মুড় মুড় করে
ডালমুট চিবোতাম আমরা। তপু বলতো, দেখো, রাহাত, আমরা মাঝে মাঝে কী মনে হয় জান?
২. শকুন্তলা অনুসুয়া ও প্রিয়ংবদা নামে দুই সহচরীর সহিত বৃক্ষবাটিকাতে উপস্থিত হইয়া আলবালে জলসেচন করিতে
আরম্ভ করিলেন অনসূয়া পরিহাস করিয়া শকুন্তলাকে কহিলেন সখি শকুন্তলে বোধ করি তাত কণু আশ্রমপাদদিগকে
তোমা অপেক্ষা অধিক ভালবাসেন।
উ: শকুন্তলা, অনসূয়া ও প্রিয়ংবদা নামে দুই সহচরীর সহিত বৃক্ষবাটিকাতে উপস্থিত হইয়া, আলবালে জলসেচন
করিতে আরম্ভ করিলেন। অনসূয়া, পরিহাস করিয়া, শকুন্তলাকে কহিলেন, সখি শকুন্তলে! বোধ করি, তাত কণ্ব
আশ্রমপাদপদিগকে তোমা অপেক্ষা অধিক ভালবাসেন।
৩. সমাজের মনোরঞ্জন করতে গেলে সাহিত্য যে স্বধর্মচ্যুত হয়ে পড়ে তার প্রমাণ বাংলাদেশে আজ দুর্লভ নয় কাব্যের
ঝুমঝুমি বিজ্ঞানের চুষিকাঠি দর্শনের বেলুন রাজনীতির রাঙালাঠি ইতিহাসের ন্যাকড়ার পুতুল নীতির টিনের ভেঁপু এবং
ধর্মের জয়ঢাক এইসব জিনিসে সাহিত্যের বাজার ছেয়ে গেছে।
উ: সমাজের মনোরঞ্জন করতে গেলে সাহিত্য যে স্বধর্মচ্যুত হয়ে পড়ে, তার প্রমাণ বাংলাদেশে আজ দুর্লভ নয়।
কাব্যের ঝুমঝুমি, বিজ্ঞানের চুষিকাঠি, দর্শনের বেলুন, রাজনীতির রাঙালাঠি, ইতিহাসের ন্যাকড়ার পুতুল, নীতির টিনের
ভেঁপু এবং ধর্মের জয়ঢাকÑ এইসব জিনিসে সাহিত্যের বাজার ছেয়ে গেছে।
৪. কিন্তু মুখের প্রতি চাহিবামাত্রই টের পাইলাম বয়স যাই হোক খাটিয়া খাটিয়া আর রাত জাগিয়া জাগিয়া ইহার শরীরে
আর কিছু নাই ঠিক যেন ফুলদানিতে জল দিয়া ভিজাইয়া রাখা বাসি ফুলের মত হাত দিয়া এতটুকু স্পর্শ করিলে
এতটুকু নাড়াচাড়া করিতে গেলেই ঝরিয়া পড়িবে।
উ: কিন্তু মুখের প্রতি চাহিবামাত্রই টের পাইলাম, বয়স যাই হোক, খাটিয়া খাটিয়া আর রাত জাগিয়া জাগিয়া ইহার
শরীরে আর কিছু নাই। ঠিক যেন ফুলদানিতে জল দিয়া ভিজাইয়া রাখা বাসি ফুলের মত। হাত দিয়া এতটুকু স্পর্শ
করিলে, এতটুকু নাড়াচাড়া করিতে গেলেই ঝরিয়া পড়িবে।
৫. এ চক্র ছিন্ন তো করতেই হবে করবে কে প্রকাশক না ক্রেতা প্রকাশকের পক্ষে করা কঠিন কারণ ঐ দিয়ে সে পেটের
ভাত জোগাড় করে সে ঝুঁকিটা নিতে নারাজ এক্সপেরিমেন্ট করতে নারাজ দেউলে হবার ভয়ে কিন্তু বই কিনে কেউ তো
কখনো দেউলে হয়নি।
উ: এ চক্র ছিন্ন তো করতেই হবে। করবে কে? প্রকাশক না ক্রেতা? প্রকাশকের পক্ষে করা কঠিন, কারণ ঐ দিয়ে সে
পেটের ভাত জোগাড় করে। সে ঝুঁকিটা নিতে নারাজ। এক্সপেরিমেন্ট করতে নারাজÑ দেউলে হবার ভয়ে। কিন্তু বই
কিনে কেউ তো কখনো দেউলে হয়নি।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
১. বিরাম চিহ্ন কাকে বলে? বাংলা ভাষায় সাধারণত কতগুলো বিরাম চিহ্ন ব্যবহার করা হয়।
২. বাংলা ভাষার বিরাম চিহ্নের ব্যবহারগুলো লিখুন।
৩. নিচের অনুচ্ছেদগুলোতে বিরাম চিহ্নের প্রয়োগ দেখান।
ক. বার্ধক্য তাহাই যাহা পুরাতনকে মিথ্যাকে মৃত্যুকে আঁকড়িয়া পড়িয়া থাকে বৃদ্ধ তাহারাই যাহারা মায়াচ্ছন্ন নব
মানবের অভিনব জয়যাত্রার শুধু বোঝা নয় বিঘœ শতাব্দীর নব যাত্রীর চলার ছন্দে ছন্দ মিলাইয়া যাহারা কুচকাওয়াজ
করিতে জানে না পারে না যাহারা জীব হইয়াও জড় যাহারা অটল সংস্কারের পাষাণস্তূপ আঁকড়িয়া পড়িয়া আছে।
খ. বালিকা বলিল হাঁটিয়া যাইতে আপনার আপত্তি আছে কি আমি বলিলাম কিছুমাত্র না কিন্তু তোমার কথা হইবে না
না আমি ত রোজই হাঁটিয়া বাড়ি যাই।
গ. দেখ আমি চোর বটে কিন্তু আমি কি সাধ করিয়া চোর হইয়াছি খাইতে পাইলে কে চোর হয় দেখ যাঁহারা বড় বড়
সাধু চোরের নামে শিহরিয়া উঠেন তাঁহারা অনেকে চোর অপেক্ষাও অধার্মিক তাঁহাদের চুরি করিবার প্রয়োজন নাই
বলিয়াই চুরি করেন না।
ঘ. মা রাগ করিয়া বাবার কাছে তাঁহার বধূর মূঢ়তা এবং ততোধিক একগুঁয়েমির কথা বলিয়া দিলেন বাবা হৈমকে
ডাকিয়া বলিলেন আইবড় মেয়ের বয়স সতেরো এটা কি খুব একটা গৌরবের কথা তাই ঢাক পিটিয়ে বেড়াইতে
হবে।
ঙ. সৌদামিনীর স্বামী স্থির করল আরেকটা বিয়ে করাই যুক্তিযুক্ত অন্তত চেষ্টা করে দেখা যাক বংশতো গুম করে
দেওয়া চলে না কিন্তু বেচারা বর সাজার অবসর পায় নি হঠাৎ মরে গেল অথচ বিয়ের কথাবার্তা ঠিক তার মৃত্যুটা
আজও রহস্য রয়ে গেছে।
FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ