‘পরিভাষা’ শব্দটি আসলে ইংরেজি 'defination' শব্দের বাংলা অনুবাদ। এর কাছাকাছি আরেকটি শব্দ
আমরা জানি Ôtechnical term’--যার বাংলা অনুবাদ হচ্ছে ‘পারিভাষিক শব্দ’। আজকাল ‘পরিভাষা’ ও
‘পরিভাষিক শব্দ- প্রায় একই অর্থ বুঝিয়ে থাকে; যদিও ‘পরিভাষা’ এই বিশেষ্যবাচক শব্দটির বিশেষণ হচ্ছে ‘পারিভাষিক’।
পরিভাষা শব্দটি এদেশে ইংরেজ আসার অনেক আগে থেকেই প্রচলিত ছিল সংজ্ঞাবাচক বিশেষ অর্থে। অর্থান্তর নেই এমন
বিশেষ অর্থবোধক সংজ্ঞার নাম পরিভাষা। বস্তুত পরিভাষা বলতে বোঝায় কোনো বিষয়ের আলোচনায় ব্যবহৃত এমন কিছু
শব্দ যা সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশেষ বিশেষ ধারণাকে যথার্থভাবে, নির্ভুলভাবে, দ্ব্যর্থহীনভাবে ও সংক্ষিপ্তভাবে প্রকাশ করে।
পÐিতেরা একমত হয়ে একটি বিশেষ ধারণার (Concept) জন্য একটি বিশেষ শব্দকে বেঁধে দেন যে শব্দটি সংশয়হীনভাবে
কেবল ওই বেঁধে দেওয়া অর্থকেই বোঝাবে অন্য কোনো অর্থ বোঝাবে না।
জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত সুনির্দিষ্ট ও অদ্ব্যর্থ তাৎপর্য জ্ঞাপনকারী শব্দই হচ্ছে ওই বিশেষ জ্ঞানের পরিভাষা।
পরিভাষা হচ্ছে বিশেষজ্ঞদের কাছে হাতিয়ার স্বরূপ, যার উদ্দেশ্য হচ্ছে ঠিক কথাকে ঠিকমতো বোঝানো; ইংরেজিতে যাকে
বলে hitting the nail on the head সাধারণ শব্দের সঙ্গে পারিভাষিক শব্দের পার্থক্য এখানেই। একটি ‘পরিভাষা’ বা
পারিভাষিক শব্দ একাধিক অর্থে যেমন ব্যবহৃত হতে পারবে না, তেমনি একাধিক ভাব নির্দেশের জন্য একই পরিভাষা
ব্যবহৃত হতে পারবে না। যেমন ‘সমাস’ বললে পরস্পর অর্থসঙ্গতি বিশিষ্ট একাধিক পদের এক পদে পরিণত হওয়ার
প্রক্রিয়া ছাড়া আর কিছুই বোঝায় না। কিংবা ‘কারক’ বললে বাক্যে ব্যবহৃত ক্রিয়ার সঙ্গে অন্য শব্দের কোনো না কোনো
প্রকাশের সম্বন্ধ ছাড়া আর কিছুই বোঝায় না। তাই ‘সমাস’ বা ‘কারক’ বাংলা ব্যাকরণ শাস্ত্রের দুটি পারিভাষিক শব্দ।
তেমনি দর্শন, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, অর্থনীতি, বাণিজ্য প্রভৃতি জ্ঞান-বিজ্ঞানের সকল শাখাতেই ব্যবহৃত হয় অসংখ্য পরিভাষা বা
পারিভাষিক শব্দ।
কীভাবে চিনবেন পারিভাষিক শব্দ
আজকাল আমরা জেনেই হোক আর না জেনেই হোক পদে পদে পারিভাষিক শব্দ ব্যবহার করছি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এসব
পারিভাষিক শব্দ আপনি চিনবেন কী করে? একটু আগেই আমরা বলেছি জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রত্যেক শাখাতেই রয়েছে কিছু
নিজস্ব পারিভাষিক শব্দ। যে শব্দগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সাধারণ কথাবার্তায় তেমন প্রয়োজন পড়ে না কিন্তু ওই
বিশেষ জ্ঞানের আলোচনায় শব্দটি যদি অনিবার্যভাবে প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে তাহলেই বুঝতে হবে শব্দটি একটি পারিভাষিক
শব্দ। মনে করুন আপনি সমাস সম্পর্কে আলোচনা করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনি ‘পূর্বপদ’, ‘পরপদ’, ‘সমস্যমান
পদ’, ‘ব্যাসবাক্য’ এসব শব্দের সাহায্য ছাড়া আপনি আলোচনাই করতে পারবেন না। সুতরাং আপনি ধরে নেবেন ওই
শব্দগুলো পারিভাষিক শব্দ।
সব সময় পারিভাষিক শব্দ আবার এতো সহজে চেনা যায় না। কারণ পারিভাষিক শব্দটির বহুল ব্যবহার ও জনপ্রিয়তা।
উকিল, মোক্তার, আবাসিক, অনাবাসিক এগুলো যে পারিভাষিক শব্দ তা আজ আর আমাদের মনেই হয় না। একারণে
পারিভাষিক শব্দ চেনার জন্য আমাদের প্রয়োজন খানিকটা অতিরিক্ত সতর্কতা। যখনই কোনো পারিভাষিক শব্দের সঙ্গে
পরিচিত হবেন, শব্দটি একাধিকবার আবৃত্তি করে মনে গেঁথে নিন, প্রয়োজনে একটি নোট খাতায় আপনার পরিচিত
পারিভাষিক শব্দগুলোর তালিকা তৈরি করুন।
পরিভাষা কেন প্রয়োজন
এক-একটি পরিভাষার সঙ্গে বিশেষ ধরনের জ্ঞান-বিজ্ঞানের স্মৃতি ধারণা-বোধ মিশে থাকে। সে সঙ্গে জড়িয়ে থাকে মানুষের
উপলব্ধি ও চেতনা। নাইট্টোজেন চক্র, শীতনিদ্রা, অভিযোজন ক্ষমতা, নিরক্ষীয় বায়ু, মরাকাটাল এ পারিভাষিক শব্দগুলো
যেমন বিশেষ বিশেষ জ্ঞান-জগতের সঙ্গে সম্পর্কিত তেমনি প্রতিটি শব্দের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে মানুষের অনুভ‚তি। ফলে
রসায়ন (এটি একটি পারিভাষিক শব্দ) সম্পর্কিত আলোচনায় শীতনিদ্রা ও অভিযোজন ক্ষমতা, ভ‚গোল (এটি একটি
পারিভাষিক শব্দ) সম্পর্কিত আলোচনার বেলাতেই নিরক্ষীয় বায়ু ও মরাকাটাল শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়। ফলে ওই
পারিভাষিক শব্দগুলোর সঙ্গে পরিচিত মানুষের মনে জড়িয়ে থাকে বিশেষ ধরনের অনুভ‚তি, যার ফলে বিজ্ঞানের
পরিভাষাগুলো বাণিজ্যের আলোচনায় কিংবা ভ‚গোলের পরিভাষাগুলো রসায়নের আলোচনায় অচল। যেহেতু পরিভাষাগুলোর
সঙ্গে মানুষের উপলব্ধি ও চেতনা ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে থাকে তাই বিশেষ জ্ঞানের আলোচনায় ওই জ্ঞানের সঙ্গে সম্পর্কিত
পরিভাষা অবশ্যই প্রয়োজন। যার সাহায্যে সহজেই বক্তব্যের মূলকথা পাঠকের বা শ্রোতার মনে সঞ্চারিত করে দেয়া যায়।
এজন্য রাজশেখর বসু বলেছেন, পরিভাষা মিশিয়ে ভাষাকে সংহত না করলে বিজ্ঞানী তার বক্তব্য প্রকাশ করতে পারেন না।
মোট কথা পরিভাষা ছাড়া জ্ঞানবিজ্ঞানের আলোচনা প্রায় অসম্ভব। পরিভাষার ব্যবহারের মাধ্যমে লেখক-পাঠক বা বক্তা-
শ্রোতার মধ্যে নির্বিঘœ যোগাযোগ গড়ে তোলা সম্ভব। তাছাড়া পরিভাষা ব্যবহারের ফলে তত্ত¡মূলক রচনার প্রকাশভঙ্গি
শক্তিশালী ও সংহত হয়ে ওঠে।
পরিভাষা ব্যবহারের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয়তা পরিলক্ষিত হয় যখন প্রচলিত শব্দটির কোনো বাংলা প্রতিশব্দ পাওয়া
যায় না। আর পাওয়া গেলেও সেটি যদি অপ্রচলিত থাকে তবে পরিভাষার প্রয়োজন অত্যাবশ্যক হয়ে ওঠে। এ কথা সত্য
যে, ভাষা চাপিয়ে দেবার বিষয় নয়। ভাষা প্রবহমান নদীর মতো। বিদেশি বা ইংরেজি শব্দ আমাদের ভাষায় এসেছে প্রচুর।
যেটি গ্রহণ করবার তা গ্রহণ করেছে, আর যা বর্জন করবার তাও বর্জন করেছে। তাছাড়া পরিভাষা সুনির্দিষ্ট ও অর্থবহ বলেই
তা প্রচলিত হয়েছে। অনেক সময় মূলভাষার শব্দ টেকসই থাকে না বলেও পরিভাষা ব্যবহার করা হয়। অস্বীকার করার
উপায় নেই যে, বিকল্প ভাষা সহজবোধ্যতার জন্যেই ব্যবহৃত হয়। যেমন- পুলিশ, ফ্যান, এর প্রতিশব্দ অদ্যাবধি অনাবিষ্কৃত
বলেই পরিভাষা ব্যবহার না করে উপায় নেই।
সারসংক্ষেপ
পরিভাষা সংক্ষেপে কোনো বিষয়কে সুনির্দিষ্টভাবে ব্যক্ত করে, পÐিতগণের সম্মতির মাধ্যমে স্থিরীকৃত, একটি মাত্র
ভাবকেই কেবল প্রকাশ করে, একাধিক ভাবকে প্রকাশের জন্য ব্যবহৃত হয় না এবং মূলের সঙ্গে সঙ্গতিহীন হলেও তার
প্রযুক্ত অর্থই শব্দটির যথার্থ পারিভাষিক অর্থ। জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত সুনির্দিষ্ট ও অদ্ব্যর্থ তাৎপর্য জ্ঞাপনকারী
শব্দই হচ্ছে ওই বিশেষ জ্ঞানের পরিভাষা। যখন প্রচলিত শব্দটির কোনো বাংলা প্রতিশব্দ পাওয়া যায় না। আর পাওয়া
গেলেও সেটি যদি অপ্রচলিত থাকে তবে পরিভাষার প্রয়োজন অত্যাবশ্যক হয়ে ওঠে। অনেক সময় মূল ভাষা শব্দ
টেকসই থাকে না বলেও পরিভাষা ব্যবহার করা হয়। বিকল্প ভাষা সহজবোধ্যতার জন্যেই ব্যবহৃত হয়। যেমন- পুলিশ,
ফ্যান, এর প্রতিশব্দ অদ্যাবধি অনাবিষ্কৃত বলেই পরিভাষা ব্যবহার না করে উপায় নেই।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
১. পরিভাষার সংজ্ঞার্থ দিন।
২. পারিভাষিক শব্দ কীভাবে চেনা যায়?
৩. পারিভাষিক শব্দের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করুন।
FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ