অনুচ্ছেদ কী তার বর্ণনা কর অনুচ্ছেদের সংজ্ঞার্থ লিখ অনুচ্ছেদের প্রকারভেদ লিখ

ইংরেজি paragraph এর বাংলা পারিভাষিক শব্দ অনুচ্ছেদ। কম কথায় ও কম লেখায় কোনো বিষয়কে অনুচ্ছেদ আকারে
প্রকাশ করা হয়। মূল বক্তব্যকে সহজ-সুন্দর ও সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশ করাই অনুচ্ছেদ রচনার উদ্দেশ্য।
অনুচ্ছেদ অর্থ হলো ছোট আকারের গদ্য রচনা। কোনো একটি বিষয়কে শিরোনাম করে সে বিষয়ে মোটামুটি পরিপূর্ণভাবে
ছোট আকারের যে রচনা তাকে অনুচ্ছেদ বলা হয়। অন্যভাবে বলা যায়, কোনো একটি বিষয়ের বক্তব্য প্রকাশের জন্য
পরস্পর সম্পর্কিত কিছু বাক্যের সমষ্টিকে অনুচ্ছেদ বলা হয়। অল্প সময়ে কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে পরিপূর্ণভাবে আলোচনা
করতে হয় বলেই অনুচ্ছেদ আকারে ছোট হয়।
কোন একটি বিষয়কে শিরোনাম করে সে বিষয়ে মোটামুটি পরিপূর্ণভাবে ছোট আকারের যে রচনা তাকে অনুচ্ছেদ বলা হয়।
অনুচ্ছেদের প্রকারভেদ
অনুচ্ছেদকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা :
ক) বস্তুনিষ্ঠ অনুচ্ছেদ
খ) ব্যক্তিনিষ্ঠ অনুচ্ছেদ
অনুচ্ছেদ রচনার প্রয়োজনীয়তা
অনুচ্ছেদে অল্প কথায় পূর্ণাঙ্গ একটি বিষয়কে প্রকাশ করা যায় বলে একে উৎকৃষ্ট শিল্পকর্ম বলে মনে করা হয়। বক্তব্যকে
সুন্দরভাবে গুছিয়ে উপস্থাপনের জন্য অনুচ্ছেদ রচনার বাস্তব ধারণা থাকা প্রয়োজন। অনুচ্ছেদে মূল কথাগুলোকে
আকর্ষণীয়ভাবে তুলে ধরা হয় বলে সবার কাছে তা গ্রহণযোগ্যতা পায়।
অনুচ্ছেদ রচনার নিয়ম
 সহজ-সরল ও ছোট আকারে বক্তব্য প্রকাশই অনুচ্ছেদ রচনার মূল প্রতিপাদ্য।
 অনুচ্ছেদ একটি প্যারাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
 শুরুতে শিরোনাম দিয়ে একটি প্যারার মধ্যে সূচনা, মূল বক্তব্য ও মন্তব্যকে উপস্থাপন করতে হবে।
 অনুচ্ছেদে উপমা-অলংকারের ব্যবহার না করাই সমীচীন।
 সাধু ও চলতি ভাষা একসঙ্গে প্রয়োগ করা যাবে না।
 অনুচ্ছেদ আকারে ছোট হলেও বক্তব্য হবে স্বয়ংসম্পূর্ণ।
কতিপয় অনুচ্ছেদ রচনার নমুনা
বাংলাদেশের উৎসব
বৈচিত্র্যময় দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। উৎসবে-উপলক্ষ্যে-আয়োজনে বাংলাদেশ প্রায় সারা বছরই মুখর থাকে। বিভিন্ন
উৎসব পালনের মধ্য দিয়ে বাঙালিরা প্রাণচঞ্চল হয়ে ওঠে। এদেশের শত দুঃখ-কষ্ট ও দারিদ্র্যের মধ্যেও মানুষ উৎসবমুখী।
এই উৎসবগুলোর মধ্যে রয়েছে সামাজিক-সাংস্কৃতিক-পারিবারিকÑধর্মীয় ও জাতীয় উৎসব। বাংলাদেশ একটি উদার সহিষ্ণু
দেশ। জাতীয় নানা উৎসবের মধ্যে তার প্রতিফলন দেখা যায়। নববর্ষের উৎসব বাংলাদেশের সব মানুষের উৎসব। এটি
একটি সর্বজনীন ধর্মনিরপেক্ষ উৎসব। বর্ণÑধর্ম নির্বিশেষে সব শ্রেণির মানুষ বাঙালি হিসেবে নিজের পরিচয় তুলে ধরে। এর
মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অসা¤প্রদায়িক শাশ্বত পরিচয়টি ফুটে ওঠে। সামাজিক উৎসবের মধ্য দিয়ে মানুষের সমাজবন্ধনস¤প্রীতি ও আন্তরিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। পারিবারিক উৎসব ও সামাজিক উৎসবের মধ্যে মূলত তেমন পার্থক্য করা
যায় না। পারিবারিক উৎসবগুলোও সামাজিক উৎসবের নামান্তর। বিবাহ-জন্মদিন প্রভৃতি উৎসবগুলো পারিবারিক গÐি
ছাপিয়ে সামাজিক উৎসবের রূপ লাভ করে। কৃষিভিত্তিক নবান্ন উৎসবটিও একইসঙ্গে পারিবারিক ও সামজিক উৎসব হয়ে
ওঠে। নবান্নতে আত্মীয়স্বজন ছাড়াও পাড়া-প্রতিবেশিদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়। বাংলাদেশে ধর্মীয় উৎসবগুলোর মধ্যে
রয়েছে ইদ, দুর্গাপূজা, বড়দিন ও বৌদ্ধ পূর্ণিমা। মুসলিম-হিন্দু-বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান স¤প্রদায়ের মানুষ নিজ নিজ রীতি মেনে
এইসব উৎসব পালন করে থাকে। উৎসব বাঙালির প্রাণ, বাঙালির আনন্দ। ধর্মীয় উৎসবগুলোও এখন সামাজিক রূপ
নিয়েছে। বছরব্যাপী উৎসব হওয়াতে আমাদের অর্থনীতি ও ব্যবসাবাণিজ্যেও এর দারুণ সুফল লক্ষ করা যায়। ব্যবসাবাণিজ্য চলে, ভালো বেচাকেনা হয়, মানুষের জীবনে সচ্ছলতা দেখা দেয়। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষের
জীবনমানের উন্নতি ঘটে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
মা, মাতৃভাষা ও মাতৃভূমিকে ঘিরেই মানুষের আবেগ প্রকাশ পায়। বাঙালির এই আবেগ ও মমতার চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটে
১৯৫২ সালের ২১শে ফ্রেব্রæয়ারিতে। মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে এইদিনে বাঙালি সন্তানেরা প্রাণ বিসর্জন
দেয়। এই দিনটিই সারা বিশ্বে আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। ১৭ই নভেম্বর ১৯৯৯ জাতিসংঘের
শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা এর সদরদপ্তর ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রতিবছর একুশে ফেব্রæয়ারি
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়। ২০০০ সাল থেকে জাতিসংঘের
সদস্য ১৮৮টি দেশে এই দিবসটি যথাযথ মর্যাদার সাথে পালিত হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের প্রতিটি মানুষ নিজ নিজ
ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হচ্ছে। বাংলার গৌরব ও অহংকার আজ ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীর সর্বত্র। প্রথম দিকে ২১শে ফেব্রæয়ারি
শহিদদিবস হিসেবে পালিত হতো, তারপর পালিত হয় ভাষাদিবস হিসেবে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের
ভাষাও গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে। সব ভাষাই মূল্যবান, সব ভাষাই মানুষের ঐতিহ্যÑ এই চেতনার বিকাশ ঘটেছে
মাতৃভাষার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা থেকে। মূলত নিজ নিজ মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকাই হলো আন্তর্জাতিক
মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য।
বর্ষণমুখর দিন
আষাঢ়ের পথ ধরেই আসে বর্ষা। শ্রাবণে বর্ষা পায় পূর্ণ রূপ। সকাল থেকেই কালো মেঘে ছেয়ে আছে আকাশ। শ্রাবণের
এই দিনে মেঘ-বৃষ্টির খেলা। গ্রীষ্মের দাবদাহে বর্ষা নিয়ে আসে স্বস্তির পরশ। বড় খেয়ালি এই বর্ষার দিন। কখনো
অতিবর্ষণ, কখনো অল্পবর্ষণ, কখনো বা প্লাবন বা বন্যা। বর্ষণমুখর দিনে হঠাৎ অন্ধকার করে আসে, কখনো বা শুরু হয়
বিজলির চমকানি। সবুজ শ্যামল গাছেরা ভিজতে থাকে অঝোর ধারায়। সমস্ত পশুপাখি নীড়ে আশ্রয় নেয়, মানুষও ঘরে
থেকে উপভোগ করে বর্ষার সৌন্দর্য। দিনের বেলাতেও নিবিড় অন্ধকার চারপাশ আবৃত করে রাখে। একটানা বৃষ্টিতে ধানপাট ক্ষেতের উপর দিয়ে বয়ে যায় বাতাসের ঢেউ। ডোবা-নালা থেকে ব্যাঙের ডাক, ঘরে দীর্ঘ কর্মহীন দিন। অঝোর
ধারাবর্ষণ এই সময়ে মানুষের মনকে উদাস করে তোলে। বর্ষা মানবমনের উপর দারুণ প্রভাব বিস্তার করে। মানবমন হয়ে
ওঠে চঞ্চল, পাওয়া-না-পাওয়ার বেদনা জেগে ওঠে মানুষের মনের কোণে। কবিহৃদয়ে বর্ষার আবেদন গভীর। কবি
কালিদাস থেকে রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত বহু কবি বর্ষা নিয়ে কবিতা রচনা করেছেন। বর্ষা ও বিরহ নিয়ে লেখা হয়েছে কািলদাসের
বিখ্যাত কাব্য ‘মেঘদূতম্’, মৈথিলী কবি বিদ্যাপতি রচনা করেছেন বর্ষাবিরহের পদ, গোবিন্দদাস রচনা করেছেন বর্ষাভিসার
বিষয়ক পদাবলি। তবে একটানা বর্ষণ খেটে খাওয়া মানুষের জীবনে সংকট ডেকে আনে। যারা কায়িক শ্রমের বিনিময়ে দিন
এনে দিন খায় তাদের জীবিকা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে এই সময়ে।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
বাঙালি জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবময় ঘটনা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পাকিস্তানি
শাসকগোষ্ঠীর ২৪ বছরের শোষণ-নিপীড়নের হাত থেকে বাঙালি জাতি তার কষ্টার্জিত মুক্তি লাভ করে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য
দিয়ে। এই মুিক্তযুদ্ধ বাঙালির গৌরব, আমাদের অহংকার। মুক্তিযদ্ধের ইতিহাসকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ এবং ভবিষ্যৎ
প্রজন্মের সামনে সেই ইতিহাস তুলে ধরার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। এটি বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এবং
প্রতিষ্ঠাকাল ১৯৯৬ সালের ২২শে মার্চ। ঢাকার সেগুনবাগিচা এলাকায় এই জাদুঘরের অবস্থান। কয়েকজন বরেণ্য ব্যক্তির
উদ্যোগে নিরপেক্ষভাবে স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণের জন্য এটি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের
প্রবেশপথের মুখেই রয়েছে ‘শিখা চির অ¤øান’। এই জাদুঘরটি দ্বিতলা ছিল। গত ১৫ এপ্রিল ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে রাজধানীর
আগারগাঁওয়ে নয় তলাবিশিষ্ট নতুন ভবনে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরটি স্থানান্তর করা হয় এবং পরের দিন ১৬ এপ্রিল ‘শিখা চির
অ¤øান’ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। প্রায় দুই বিঘা জায়গাজুড়ে নির্মিত
ভবনের ব্যবহারযোগ্য আয়তন ১ লক্ষ ৮৫ হাজার বর্গফুট। মুক্তিযুদ্ধের নানা তথ্য, প্রমাণ, দলিল, ছবি, নিদর্শন, রেকর্ডপত্র,
স্মারকচিত্র সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের সুব্যবস্থা রয়েছে এই জাদুঘরে। বাঙালির ইতিহাস ও সংস্কৃতির হাজার বছরের
ধারবাহিকতা সংরক্ষিত হয়েছে এখানে। সাধারণ মানুষের মধ্যে বিশেষ করে এই প্রজন্মের তরুণ ছেলেমেয়েদের মধ্যে
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দেয়াই এই জাদুঘর প্রতিষ্ঠার প্রধান লক্ষ্য। এই জাদুঘর প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে
একটা ধারণা পাওয়া যাবে যা আমাদের এই মহান ইতিহাসের চেতনাকে বিকশিত করে তুলবে দিন দিন। তবে মুক্তিযুদ্ধের
গুরুত্ব বাড়াতে এই জাদুঘরকে কেবল সংগ্রহশালা ও প্রদর্শনশালা হিসেবে ব্যবহার করলে চলবে না। সবধরনের মানুষের
অংশগ্রহণের মাধ্যমে একে আরও উন্নত করে তুলতে হবে।
বাংলাদেশের পোশাক শিল্প
বাংলাদেশের অর্থনীতর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি খাত পোশাক শিল্প। ‘পোশাককন্যা’ নামটি পোশাকশিল্পের কারণেই আজ
এত বিখ্যাত। কারণ বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে সবচাইতে বেশি শ্রম দেয় নারীরাই। বাংলাদেশের শিল্পায়নে এই তৈরি
পোশাকশিল্প বর্তমানে বিরাট ভূমিকা পালন করে চলেছে। বিশ্বের অধিকাংশ দেশের শিল্পায়ন শুরু হয়েছে শিল্প বা
পোশাকশিল্পের মাধ্যমে। তৈরি পোশাক বর্তমানে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে প্রধান খাত হিসেবে স্থান করে
নিয়েছে। স্বাধীনতার আগে আমরা যখন পশ্চিম পাকস্তানিদের অধীনে ছিলাম তখন পোশাকশিল্প নিয়ে তেমন উৎসাহউদ্দীপনা ছিল না। মূলত ১৯৭৬ সাল থেকেই এদেশে পোশাকশিল্পের যাত্রা শুরু হয়। দেশের তৈরি পোশাকশিল্প জাতীয়
আয়ের ৬৪ শতাংশ সরবরাহ করছে। বর্তমানে প্রায় ১২ লক্ষ নরনারী পোশাকশিল্পে কর্মরত। তার মধ্যে ৮৫ শতাংশ নারী।
আমাদের পোশাক বিদেশে রপ্তানি করা হয়। বিশ্বে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের স্থান পঞ্চম। বাংলাদেশের তৈরি
পোশাকশিল্পের সবচেয়ে বড় ক্রেতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তারপরেই ইউরোপ ও কানাডা। বিশ্বের ১২২টিরও বেশি দেশে
বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি করা হয়। এর বাজার যেমন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে তেমনি এর উৎপাদনও বৃিদ্ধ পাচ্ছে।
অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বেকার সমস্যা সমাধান, দ্রæত শিল্পায়নে পোশাকশিল্পের ভূমিকা বিরাট। কিন্তু আমাদের অভ্যন্তরীণ
সমস্যা, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, দুর্নীতি, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও মুক্ত বাজারের চাপ এ শিল্পকে বেশ খানিকটা
অনিশ্চয়তার মধ্যে রেখেছে। বাংলাদেশের বস্ত্রশিল্পের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা ও স¤প্রসারণ করা দরকার।
বর্তমান সরকার এই শিল্পের বিকাশে নানারকম সুবিধা ও উৎসাহ প্রদান করে যাচ্ছেন। বাণিজ্য মেলার আয়োজন করছেন
এবং বাংলাদেশকে এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত করাসহ নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন।
ইন্টারনেট
একুশ শতক বিজ্ঞানের চরম উন্নতির শতক। বিজ্ঞানের সাহায্যে মানুষ বিশ্বকে হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে। ইন্টারনেট তার
দৃষ্টান্ত। বর্তমান যুগ হলো তথ্য-প্রযুক্তির যুগ। ইন্টারনেট একটি বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ নেটওয়ার্ক। ১৯৬০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের
প্রতিরক্ষা বাহিনী সর্বপ্রথম ইন্টারনেট ব্যবহার করে। সফটওয়ার এর মূল উপকরণ। বর্তমানে এমন কোনো ক্ষেত্র নেই
যেখানে ইন্টারনেটের ছোঁয়া লাগেনি। যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে ইন্টারনেট নতুন দিগন্তের দ্বার খুলে দিয়েছে। মাত্র কয়েক
সেকেন্ডের মধ্যে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সহজেই ই-মেইল পাঠিয়ে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের
পত্রিকা, ম্যাগাজিন পড়া যায়। লাইব্রেরিতে লেখাপড়া করা যায়, ক্যাটালগ দেখে ইচ্ছেমত বই বাছাই করা যায়। প্রয়োজনীয়
তথ্য প্রিন্টও করা যায়। ইন্টারনেটে বিজ্ঞাপন দেখে কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়। ইন্টারনেটে দেশেবিদেশের ডাক্তারদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়। ইন্টারনেটে ফেসবুক ও টুইটারের মাধ্যমে সমস্ত রকম সামাজিক
যোগাযোগ রক্ষা করা যায়। ইন্টারনেটের বিরাট সুফলের পাশাপাশি কিছু কুফলও রয়েছে। ইন্টারনেট আধুনিক প্রযুক্তির
বিস্ময়কর সৃষ্টি। এর বহুমুখী ব্যবহার মানুষের জীবনে আমূল পরিবর্তন এনে দিয়েছে।
ছিটমহল বিনিময়
বাংলাদেশের সা¤প্রতিক ইতিহাসে ছিটমহল বিনিময় একটি যুগান্তকারী ঘটনা। ছিটমহল হলো একটি রাষ্ট্রের ভেতর অন্য
রাষ্ট্রের কোনো ভূখÐ থাকা। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্ত হবার সময় এই ছিটমহলের উৎপত্তি হয়। রেডক্লিফের তৈরি
মানচিত্রের কারণে এই ছিটমহল সংকটের সৃষ্টি হয়। বিতর্কিত বিভাজনের ফলে এক দেশের ভূখÐে থেকে যায় অন্য দেশের
অংশ। ২০১৫ সাল পর্যন্ত ভারতের ১১১টি ছিটমহল ছিল বাংলাদেশের ভেতরে এবং বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল ছিল
ভারতের ভূখÐে। ছিটমহলের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৫১ হাজার। দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে ভারতের অধিকাংশ ছিটমহল
অবস্থিত। লালমনিরহাটে ৫৯টি, পঞ্চগড়ে ৩৬টি, কুড়িগ্রামে ১২টি ও নীলফামারিতে ৪টি ছিটমহল ছিল ভারতের।
বাংলাদেশের ছিটমহলগুলির মধ্যে ৪৭টি কুচবিহার জেলায় এবং ৪টি জলপাইগুড়ি জেলায় অবস্থিত ছিল। দীর্ঘ ৬৮ বছর
ধরে ছিটমহল সমস্যা এক গভীর মানবিক সংকটের সৃষ্টি করে রেখেছিল। কোনোরকম বাছবিচার না করে হুট করে ভারত ও
পাকিস্তানের সীমানা ভাগ করায় এই সমস্যার সৃষ্টি হয়। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ১৯৭৪ সালে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির পর
ছিটমহলগুলোর তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়। তালিকায় গড়মিল দেখা দেয়ায় আবারো তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
অবশেষে ২০১৫ সালের ০১ আগস্ট রাত ১২:০১ মিনিটে দুই দেশ মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির আওতায় ছিটমহলগুলো একে
অপরের কাছে ফেরত দেয়। কুড়িগ্রামের দাসিয়ার ছড়া এই সময়ে মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার পায়। ৬৮ বছরের পরাধীন জীবন
থেকে ছিটমহলের মানুষেরা মুক্তি পায়। তারা নিজেদের পরিচয় ও ঠিকানা খুঁজে পায় এই ছিটমহল বিনিময়ের মধ্য দিয়ে।
পর্যটনশিল্প
বর্তমানে বাংলাদেশে যেসব শিল্প বিকাশ লাভ করেছে পর্যটনশিল্প তাদের মধ্যে অন্যতম। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পর্যটনশিল্প
বেড়েই চলেছে। এক দেশ থেকে অন্য দেশে মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই শিল্পকে ঘিরে মানুষের নানারকম কর্মসংস্থানের
সুযোগ তৈরি হয়েছে। বহু আগে থেকেই এদেশে অনেক বিখ্যাত লোক ভ্রমণে এসেছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ পর্যটনশিল্পে
প্রচুর বিনিয়োগ করছে। বছরে বাংলাদেশে পর্যটকের সংখ্যা দেড় লাখের মতো। কিন্তু ভারত, নেপাল ও মালদ্বীপের তুলনায়
এই সংখ্যা অনেক কম। অথচ আমাদের রয়েছে অপরূপ সুন্দর ভূÑপ্রকৃতি, রয়েছে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত। বিস্তৃত
সমুদ্র উপকূল ছাড়াও সুন্দরবনের মোহনীয় রূপ পর্যটনশিল্পে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। দক্ষিণে পার্বত্য জেলা রাঙামাটি,
বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির মনোরম প্রকৃতি, পাহাড়-পর্বত, জলপ্রপাত, সিলেট-শ্রীমঙ্গলের চোখ জুড়ানো চা-বাগান,
পাহাড়পুর-ময়নামতি-লালবাগের ঐতিহাসিক নিদর্শন আমাদের মূল্যবান পর্যটন-সম্পদ। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এই শিল্প
ব্যাপক অবদান রাখতে পারে। এর জন্য দরকার সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ পর্যটন
কর্পোরেশনের রয়েছে গুরুদায়িত্ব। পর্যটনশিল্পের বিকাশে সরকার বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা
করলেও তা আশানুরূপ ভূমিকা রাখতে পারেনি। বাংলাদেশ ভ্রমণে বিদেশিদের আগ্রহ থাকলেও ভিসাসহ নানা প্রশাসনিক
জটিলতার কারণে অনেকেই এদেশে আসতে অনীহা বোধ করে। তাছাড়া বিশ্বব্যাপী জঙ্গিবাদী হামলার কারণেও
সাময়িকভাবে পর্যটনশিল্পে একধরনের স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। তবে এটা নিঃসন্দেহে বলা যায় বাংলাদেশের চমৎকার
প্রকৃতি, ভূ-দৃশ্য, সমুদ্রতট, ঐতিহাসিক ও প্রতœতাত্তি¡ক নিদর্শন, দিগন্তবি¯তৃত সুন্দরবন, ঋতুবৈচিত্র্য এবং এদেশের মানুষের
সহজ সরল ব্যবহার ও আতিথেয়তা আমাদের পর্যটনশিল্পের বিকাশে অনুপম উৎস হতে পারে।
নারীশিক্ষা
জাতীয় উন্নয়নে নারীশিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ নারীরাও দেশের মানবসম্পদ। আমাদের দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক
নারী। আমাদের সামাজিক-অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক অগ্রগতিতে এখন নারীদের জয়জয়কার। গুহাবাসী
আদিম সমাজে নরনারীদের যৌথ চেষ্টার ফলেই গড়ে উঠেছে আজকের সভ্যতা। সামন্ত যুগে ধর্ম ও নৈতিক অনুশাসনের
মাধ্যমে নারীদের ঘরে বন্দি করে রাখা হতো। শিক্ষা দূরে থাক, নারীদের মানুষ হিসেবেই গণ্য করা হতো না। ভোগের পণ্য
হিসেবে মনে করা হতো তাদের। কিন্তু সেই সময় পেছনে ফেলে নারীদের বিজয়গাথা এখন চারদিকে শোনা যাচ্ছে। মেধায়,
দক্ষতায়, কর্মে ও শিক্ষায় নারীরা আজ বিশ্বকে জয় করেছে। ইউরোপের মতো উন্নত বিশ্বে নারীরা শিক্ষা-সমাজ-অর্থনীতি ও
রাজনীতির ক্ষেত্রে ব্যাপক স্থান দখল করে নিয়েছে। কিন্তু এশিয়া, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশে নারীশিক্ষা দারুণভাবে
ব্যাহত হচ্ছে। ওই সব স্থানে যেন প্রাচীন অন্ধকার ফিরে এসেছে। ধর্র্মীয় ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে নারীদের কেবল যৌনদাসী
বানানোর চেষ্টা চলছে। সমাজতান্ত্রিক বিশ্বে সবার মতো নারীদের জন্যও শিক্ষাকে কেবল বাধ্যতামূলক করা হয়নি, বরং
তাদের নানারকম সুযোগসুবিধাও দেয়া হয়। বাংলাদেশের সংবিধানে নারীদের অধিকারের কথা বলা হলেও বাস্তবক্ষেত্রে
তার সুযোগ সীমিত। পথশিশুরা অনেকেই এখনও শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। বাল্যবিবাহের কারণে অনেক মেয়ের বিয়ে
হয়ে যায়, ফলে শিক্ষাগ্রহণ আর হয় না। ইভ টিজিং ও এসিড সন্ত্রাসের ভয়ে অনেক মা-বাবা মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে চায়
না। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী, সংসদের স্পিকার প্রত্যেকেই নারী, পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে জেলা
প্রশাসক, নারী উদ্যোক্তাসহ বিমানচালক এবং বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনে নারীরা যোগ্যতার সঙ্গে অধিষ্ঠিত হলেও
নারীশিক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের আরও অনেক উন্নতি করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে শুধু সরকারের দিকে তাকিয়ে না থেকে
সমাজের সকলকেই নারীশিক্ষার বিস্তারে এগিয়ে আসতে হবে।
মিতব্যয়িতা
জীবনকে সুন্দরভাবে যাপন করার জন্য মিতব্যয়িতার প্রয়োজন অপরিসীম। পরিমিত ব্যয় করার অভ্যাসের নাম
মিতব্যয়িতা। এটি মানুষের জীবনের একটি প্রধান গুণ। জীবনের সবক্ষেত্রে মিতব্যয়িতার দরকার পড়ে। কথায়, আচরণে,
আয়-ব্যয়ে মিতব্যয়িতার প্রয়োজন সর্বাধিক। আয় বুঝে ব্যয় না করলে তার কপালে দুঃখ অনিবার্য। আয় বেশি হলেও
দরকারের চেয়ে বেশি খরচ করাটা অপচয়মাত্র। মিতব্যয়ী মানুষ জীবনে কখনো সংকটে পড়ে না। মিতব্যয়ী হলে
ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করা যায়। এই সঞ্চিত অর্থ দুর্দিনে অনেক কাজে লাগে। কেবল নিজের কাজে নয়, সঞ্চিত অর্থ
অন্যের বিপদেও উপকারে লাগে। মিতব্যয়ী না হলে মানুষ ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে। দিনের আলোতে যদি কেউ শখ করে মোমের
বাতি জ্বালিয়ে অহেতুক অপচয় করে তবে এমন একদিন আসবে যখন রাতের অন্ধকারেও তার ঘরে আলো জ্বলবে না।
জীবনকে গুছিয়ে যাপন করার জন্যই মানুষ অর্থ আয় করে কিন্তু সেই অর্থ অযথা উল্লাসে, অসংযত বিলাসে ব্যয় করলে তার
পরিণতি ভালো হয় না। মিতব্যয়িতা কেবল ব্যক্তিজীবনে নয়, সমাজজীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন এবং আন্তর্জাতিকভাবেও মানুষের
ও বিভিন্ন রাষ্ট্রের মিতব্যয়ী হতে হবে। রাষ্ট্রীয় ব্যয়ের ক্ষেত্রে বিশেষ করে সংযমী না হলে দেশের কল্যাণ ও জবাবদিহিতা
হুমকির মুখে পড়ে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ জনগণের সবার সম্পদ। তাই রাষ্ট্রের কল্যাণে এমন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে যাতে
অর্থ অপচয় না হয় বা বাজে কাজে বিপুল পরিমাণ টাকা নষ্ট না হয়। আমাদের সম্পদ সীমিত কিন্তু জনসংখ্যা অধিক। ফলে
সব সামাজিক ও রাষ্ট্রিক উদ্যোগ হতে হবে জনকল্যাণমূলক ও উন্নয়নবান্ধব। অপ্রয়োজনে বেশি কথা বলাও স্বাস্থ্য ও
পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। বাকসংযম ব্যক্তির দায়িত্ব ও ব্যক্তিত্বকে ফুটিয়ে তোলে। মিতব্যয়ী হলে জীবন সহজ ও
কল্যাণময় হয়ে ওঠে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
১। অনুচ্ছেদ বলতে কী বোঝায় ? অনুচ্ছেদের সংজ্ঞার্থ আলোচনা করুন।
২। অনুচ্ছেদ রচনার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করুন।
৩। নিচের বিষয়গুলো নিয়ে অনুচ্ছেদ রচনা করুন :
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মাদকাসক্তি, বই পড়ার আনন্দ, জনসংখ্যা সমস্যা, সুন্দরবন

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]