ভাষণ কী তা লিখ ভাষণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বর্ণনা সার্থক ভাষণের বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করতে পারবে

কোনো সভা-সমাবেশ বা অনুষ্ঠানে বক্তা যা বলেন অর্থাৎ তার বক্তব্যকে সাধারণত ভাষণ বলা হয়। বাচন বা
বাকশিল্পের একটি বিষয় হলো ভাষণ। বিভিন্ন প্রয়োজনে সভা-সমিতিতে, নানা অনুষ্ঠানে কিংবা আয়োজনে বা
কোনো আলোচনায় অনেককে বক্তব্য প্রদান করতে হয়। ভাষণে কোনো বিষয় সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠ আলোচনা করতে হয়।
ভাষণ মাধুর্যমÐিত ও সাবলীল হওয়া উচিত। প্রাচীন গ্রিস ও রোমে বক্তৃতাবিদ্যা বা বাগ্মিতার চর্চা করা হতো। বাগ্মিতার
জন্য গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিস স্মরণীয়। এডমন্ড বার্ক ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে অভিভূত করেছিলেন তাঁর বাগ্মিতা দ্বারা। বঙ্গবন্ধুর
৭ মার্চের ভাষণ ইতিহাসে চিরস্মরণীয়। যিনি ভাষণ দেন তাকে বলে বক্তা এবং যারা সেই বক্তব্য শোনেন তাকে বলা হয়
শ্রোতা। ভাষণে কোনো একটি বিষয়কে সাবলীল ও আকর্ষণীয়ভাবে শ্রোতাদের সামনে উপস্থাপন করতে হয়।
কোনো সভা-সমাবেশ বা অনুষ্ঠানে বক্তা যা বলেন অর্থাৎ তার বক্তব্যকে সাধারণত ভাষণ বলা হয়। বাচন বা
বাকশিল্পের একটি বিষয় হলো ভাষণ।
ভাষণের প্রয়োজনীয়তা
সাধারণত কোনো একটি বিষয় শ্রোতা-দর্শকদের কাছে বোধগম্য ও গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য ভাষণের গুরুত্ব অনেক।
কোনো বিষয়ে জনমত গঠনে অথবা কোনো পদক্ষেপ বা ব্যবস্থা গ্রহণের সমর্থনে ভাষণ খুব কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
ভাষণের উদ্দেশ্য হলো কোনো একটি বিষয় সম্পর্কে মানুষকে বুঝিয়ে বলা।
সার্থক ভাষণের বৈশিষ্ট্য
১. বিষয়বস্তু সম্পর্কে বক্তার স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে।
২. বক্তব্যে যুক্তি ও ধারাবাহিকতা থাকতে হবে। এলোমেলো বক্তব্য শ্রোতাকে আকৃষ্ট করতে পারে না।
৩. বক্তব্যে আবেগ-আন্তরিকতা ও বক্তার গভীর বিশ্বাসের ছাপ থাকতে হবে যাতে শ্রোতারা মনে না করে যে, তিনি
কৃত্রিম কথা বলছেন।
৪. ভাষণে চলিত ভাষা ব্যবহার করতে হবেÑ সাধুভাষা গ্রহণযোগ্য হয় না।
৫. উচ্চারণ ও বাচনভঙ্গি সুন্দর হলে ভাষণ শুনতে ভালো লাগে।
৬. ভাষণে আঞ্চলিকতা ও অন্যান্য মুদ্রাদোষ পরিহার করা উচিত।
কতিপয় ভাষণের নমুনা
‘নবীনবরণ’ অনুষ্ঠানে নবাগতদেরকে স্বাগত জানিয়ে একজন ছাত্রের ভাষণ তৈরি করুন।
আজকের এই নবীনবরণ অনুষ্ঠানের সম্মানিত অধ্যক্ষ মহোদয়, শ্রদ্ধেয় শিক্ষকবৃন্দ এবং যাদের জন্য এই আয়োজন সেই
নবাগত শিক্ষার্থী ভাইবোনেরাÑ প্রথমেই সবার প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা ও অভিনন্দন।
ঐঝঈ-২৮৫১ নির্মিতিÑ২৫১
স্কুল জীবনের গÐি পেরিয়ে তোমরা আজ কলেজ জীবনে প্রবেশ করতে যাচ্ছ। তোমাদের চোখেমুখে উচ্ছ¡াস আর আনন্দ।
নতুন জীবনের স্বপ্ন তোমাদের চোখে। নিয়ম আর ঐতিহ্য মেনে আমরা একাদশ শ্রেণির নবাগত ছাত্রছাত্রীদের বরণ করে
নিই প্রতিবছর। এবছরও তার ব্যতিক্রম নয়। এই কলেজের সুন্দর পরিবেশে তোমাদের সবাইকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও
সাদর সম্ভাষণ।
নবীন শুভার্থী ভাইবোনেরা
সময়ের টানে কারো শুরু হয়, কারো বা হয় শেষ। এ অঞ্চলের স্বনামধন্য এই কলেজে পুরোনোদের বিদায় আর নতুনদের
আগমন চিরাচরিত একটি প্রথা। সেই প্রথা মেনেই আজ তোমরা একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পদার্পণ করলে পবিত্র কলেজ
প্রাঙ্গণে। এই যাওয়া আসার মধ্য দিয়েই জীবন বয়ে চলে। ফুলেল শুভেচ্ছায় তোমাদের অভিনন্দন। অল্প কিছুদিন পরেই
হয়তো তোমরা আমাদের বিদায় জানাবে। আমাদের দ্বাদশ শে্িরণর পক্ষ থেকে তোমাদের জানাই উদাত্ত অভিনন্দন।
প্রিয় নবীন শিক্ষার্থীরা
প্রকৃতিতে প্রাণের স্পর্শ আজ। আকাশ জুড়ে আনন্দধ্বনি। প্রকৃতির এই আনন্দ সাড়া ফেলেছে চারদিকে। তোমরা প্রকৃতির
এই মধুর হিল্লোলে ভেসে এই কলেজে পা রেখেছ। তোমাদের পদচারণায় মুখর এই কলেজ। তোমাদের জ্ঞান ও চেতনাকে
জাগ্রত করবে এই প্রতিষ্ঠান। প্রকৃত শিক্ষা ছাড়া সত্যিকারের মানুষ হওয়া যায় না। শিক্ষিত মানুষ না হলে দেশ-জাতির
মুক্তিও সম্ভব হবে না। আমরা প্রত্যাশা করি এই শিক্ষালয়ে তোমরা প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হবে। বিনয় ও নম্রতা তোমাদের
আলোকিত করে তুলক।
সোনালি সন্তানেরা
প্রাণপ্রিয় এই কলেজে শিক্ষকেরা হলেন পিতামাতার মতো। তাদের সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের বন্ধনটিও গভীর। শুধু ক্লাশের পড়া
নয়, তার বাইরেও সংস্কৃতি-খেলাধুলার এক ঐতিহ্য রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের। শিক্ষার্জনের পাশাপাশি সংস্কৃতিতেও তোমরা
এগিয়ে যাবে প্রত্যাশা রইল আমাদের।
মুক্তির অগ্রদূতেরা
নবীন ছাত্রছাত্রীরা,তোমরা মনে রাখবে শিক্ষা মানে আলোÑ শিক্ষা মানে মুক্তি। ভালোভাবে লেখাপড়া শেষ করে মানুষের
মতো মানুষ হতে হবে তোমাদের। কিন্তু কেবল নিজেরা ভালো থাকলেই চলবে নাÑ দেশ-জাতির মুক্তি ও উন্নতির জন্য
তোমাদের বিরাট দায়িত্ব রয়েছে। কঠোর পরিশ্রম করে তোমাদের সেই শক্তি অর্জন করতে হবে। তোমাদের চলার পথ
সুন্দর হোক, আনন্দময় হোক সেই কামনা করে আমার বক্তব্য এখানেই শেষ করছি।
‘নারীশিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে উপস্থাপনের জন্য প্রধান অতিথির একটি ভাষণ রচনা করুন।
সম্মানিত সভাপতি, প্রধান অতিথি, বিজ্ঞ আলোচকবৃন্দ এবং মঞ্চের সামনে উপস্থিত সুধীমÐলীÑ আপনাদের সবার প্িরত
রইল আন্তরিক শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা।
সুধীবৃন্দ, আমরা জানি নারী পুরুষের সম্মিলিত অবদানেই আজকের পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে। নারী হিসেবে কাউকে ছোট করে
দেখার কোনো সুযোগ নেই। সৃষ্টির প্রথম থেকেই পুরুষের সাথে সাথে নারীরাও কাজে অংশগ্রহণ করেছে। মাতৃনির্ভর সমাজ
ছিল একসময়। কিন্তু সুযোগসন্ধানী কিছু মানুষ আজ নানাভাবে নারীদের দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। ধর্মের দোহাই দিয়ে
নারীদের ঘরের ভেতরে রাখার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। শিক্ষাদীক্ষা-জ্ঞানবিজ্ঞান, সাহিত্য-সংস্কৃতি-গবেষণা সবকিছু থেকে
নারীদের দূরে ঠেলে দেয়ার চক্রান্ত চলছে। কিন্তু এর ফলে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। মেয়েদের অংশগ্রহণ ছাড়া দেশ
এগোতে পারে না। তাই নারীদের শিক্ষা অপরিহার্য।
সম্মানিত সুধী
সময় অনেক পাল্টে গেছে। কাউকে আর ঘরের ভেতর বন্দি করে রাখার দিন নেই। ধর্মের নামে, নৈতিকতার নামে,
সমাজরক্ষার নামে নারীদের শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত রাখার কোনো সুযোগ নেই। রক্ষণশীলতা একটি ব্যাধি। মানবিক
সমাজ তৈরির জন্য নারীপুরুষ সবাইকে হাতে হাত রেখে কাজ করতে হবে। আমরা জানি যে, আমাদের দেশের মাননীয়
প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সংসদের স্পিকার, বিরোধী দলীয় নেত্রী সবাই নারী। এছাড়াও নারী বিচারপতি, নারী মন্ত্রী, নারী
প্রশাসক, নারী বৈমানিক সবই আছে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, নারীদের সামগ্রিক মুক্তি ও উন্নতি সাধিত হয়েছে। গ্রামেগঞ্জে এখনো নারীরা নানারকম শোষণ ও নিপীড়নের শিকার হচ্ছে।
প্রিয় নাগরিক সমাজ
ঐতিহাসিকভাবেই এ অঞ্চলে সামাজিক উন্নয়ন ঘটেছে দেরিতে। বাল্যবিবাহ, যৌতুক প্রথা, তালাক ব্যবস্থা, কথায় কথায়
নারীদের উপর পরিবারের অত্যাচার এখনো হরহামেশাই ঘটছে। পত্রিকার পাতা খুললেই চোখে পড়বে এরকম অসংখ্য
ঘটনার কথা। এসবের প্রতিকারে আমাদের সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। শুধু শহরে বসে নারীদের জন্য হাহুতাশ
করলেই চলবে না। তার জন্য থাকতে হবে সত্যিকারের দরদ।
প্রিয় শিক্ষিত সমাজ
নারীশিক্ষার প্রসারে এবং বেশি সংখ্যায় মেয়েদের লেখাপড়ায় নিয়ে আসার জন্য নানা রকম উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বৃত্তিউপবৃত্তিসহ আরও অনেক সুযোগ তৈরি করেছে সরকার নারী শিক্ষার বিস্তারে। গ্রামে-গঞ্জে-শহরে অনেক স্কুল-কলেজ গড়ে
উঠলেও মেয়েরা কতটা শিক্ষিত হচ্ছে তার কোনো পরিসংখ্যান আমাদের নেই। বাস্তবক্ষেত্রে ধর্মীয় গোঁড়ামি ছাড়াও সাধারণ
পরিবারে মেয়েদের শিক্ষিত করে তোলার ব্যাপারে অনেকেরই আপত্তি আছে। অনেক পিতা-মাতা মেয়েদের লেখাপড়া
শেখানোকে অর্থের অপচয় বলে মনে করে। একধরনের রক্ষণশীল পুরুষ নারীদের কেবল ঘরসংসারে বন্দি রাখাকে পছন্দ
করে ও তাদের ভোগের সামগ্রী বলে মনে করে। নানারকম কেতাব ঘেঁটে তারা দেখানোর চেষ্টা করে নারীশিক্ষার দরকার
নেই। ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখবে বৃটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা এবং
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে নারীরা বীরত্বের ও সাহসের পরিচয় দিয়েছে। তারা মিছিল করেছে, যুদ্ধক্ষেত্রে অস্ত্র চালিয়েছে, আহত
যোদ্ধাদের সেবা দিয়েছে ক্যাম্পে। নানা বাঁধার ভেতর দিয়ে আজ নারীরা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে জায়গা করে নিয়েছে।
এবছর এইচএসসি পরীক্ষায় ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের পাশের হার ও সাফল্য অনেক বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীশিক্ষার্থীর
সংখ্যা প্রায় অর্ধেক, কোথাও এর চেয়ে বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী অধ্যাপকের সংখ্যা পুরুষের প্রায় অর্ধেক।
শ্রদ্ধেয় সুধী
বেগম রোকেয়া অনেক আগে নারীশিক্ষার জন্য যে আলো জ্বালিয়ে গেছেন এখনকার মেয়েরা সেই পথ ধরেই এগিয়ে
যাচ্ছে। কেউ তাদের এই অগ্রযাত্রাকে দমিয়ে রাখতে পারবে না। স্কুল-কলেজÑবিশ্ববিদ্যালয়-প্রশাসন-এনজিওÑ
বিমানচালনা-কোর্টকাচারি-ব্যবস্য-বাণিজ্য সর্বত্র নারীরা নিজের যোগ্যতায় প্রতিষ্ঠিত। শুধু সরকারের উপর নির্ভর না করে
বেসরকারি সাহায্য ও উদ্যোগে মেয়েদের জন্য আরও সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। তাহলে নারীশিক্ষা ও নারীমুক্তির কথাটি
কেবল শ্লোগান হবে না, সত্যিকারের উন্নয়ন হবে নারীদের । নজরুল বলেছেনÑ ‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর,
অর্ধেক তার আনিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।’ সম্রাট নেপোলিয়ান বলেছিলেন “আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি
একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দেব।” এর থেকে বোঝা যায় নারীশিক্ষা ও নারী উন্নয়ন ছাড়া দেশ ও জাতির সার্বিক মুক্তি
অর্জিত হতে পারে না। আপনারা যারা এতক্ষণ ধৈর্য ধরে আমার কথা শুনলেন তাদের আবারও শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা
জানিয়ে আমার বক্তব্য শেষ করছি।
‘ইভটিজিং প্রতিরোধে ছাত্রসমাজের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে একজন বক্তা হিসেবে একটি ভাষণ রচনা করুন।
আজকের এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী সেমিনারের সম্মানিত সভাপতি, শ্রদ্ধাভাজন আলোচকবৃন্দ, প্রিয়
শিক্ষকবৃন্দ, আমন্ত্রিত সুধীসমাজ ও উপস্থিত সকলেÑ আপনাদের প্রতি রইল আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা।
আজ একটি অত্যন্ত জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ সেমিনারে আমরা উপস্থিত হয়েছি। প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গায় নানা বিষয়ে সেমিনার
অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। কিন্তু আজকের এই সেমিনারটি নানা দিক থেকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ‘ইভটিজিং’ বা ‘যৌন হয়রানি’
বর্তমান সময়ের এক জটিল সমস্যা। ইভটিজিংয়ের কারণে প্রায়ই দেশের নানা জায়গায় মেয়েÑছাত্রী ও নারীরা হয়রানির
শিকার হচ্ছে। যৌন হয়রানির কারণে অনেকে আত্মহত্যার মতো পথও বেছে নিচ্ছে। অনেকে স্কুল-কলেজে যাওয়া বন্ধ
করে দিতে বাধ্য হচ্ছে। বর্তমানে রাস্তাঘাটে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, কর্মক্ষেত্রে কিংবা অন্য কোন জায়গায় পুরুষের দ্বারা নারীর
প্রতি যে কোন যৌন হয়রানিমূলক আচরণকে ইভটিজিং হিসেবে ধরা হয়। সভ্য যুগে প্রবেশ করে আমরা বোধ হয় আদিম
অসভ্য সমাজে আবার ফিরে যাবার চেষ্টা করছি। আমাদের চারদিকের পরিবেশ অসুস্থ করে ফেলছে, দম আটকে আসার
মতো ঘটনার খবরে আমরা গভীর উদ্বিগ্ন। এই সংকট মোকাবেলায় ছাত্রসমাজের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূিমকা রয়েছে বলে
আমরা মনে করি।
সুধীসমাজ
নারীর প্রতি সহিংসতা আর নিপীড়ন নতুন কোন বিষয় নয়। যুগে যুগে তারা অবহেলা ও বৈষম্যের শিকার। ইভটিজিং তারই
বর্তমান ফল। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এর জন্য বিশেষভাবে দায়ী। মেয়েদের মেধা ও যোগ্যতাকে
স্বীকৃতি না দিয়ে তাদের কেবল ভোগের সামগ্রী হিসেবে গণ্য করায় ইভটিজিংয়ের মতো নোংরা ঘটনার জন্ম হয়েছে। বখে
যাওয়া ছেলেরা এই ধরনের ঘটনা বেশি ঘটাচ্ছে। তাদের ওপর পরিবারের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই, মা-বাবার বাধ্য নয় তারা।
ইভটিজিংয়ের মতো ঘটনা যারা ঘটাচ্ছে তারা হয়তো আমাদের বিপথগামী ভাই কিংবা সন্তান, আত্মীয় অথবা পাড়াপ্রতিবেশি স্বজন। ইভটিজিংয়ের সঙ্গে তরুণ-যুবকরা ছাড়াও মধ্যবয়সী বিকৃত রুচির কিছু লোকও জড়িত।
প্রিয় শ্রোতাবৃন্দ
ঘরের বন্দিদশা কাটিয়ে মেয়েরা যখন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়-অফিস-আদালত ও বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে যাওয়া শুরু করে
ইভটিজিংয়ের ঘটনা তখন থেকেই বেশি পরিমাণে ঘটতে শুরু করে। অনেক মূর্খ অশিক্ষিত পুরুষ ইভটিজিংয়ের জন্য
মেয়েদের খোলামেলা পোশাককে দায়ী করে। কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে দেখা গেছে শালীন রক্ষণশীল পোশাক পরিহিত মেয়েরাও
ইভটিজিংয়ের শিকার হয়। অনেক নারীবাদী সংগঠন এই ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার। কিন্তু আমরা মনে করি এটা
নারীদের একার কোন ব্যাপার নয়। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে আমাদের সবাইকে। বিশেষ করে ছাত্রসমাজকে
এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করতে হবে। তারা পাড়ায় পাড়ায় মহল্লায় মহল্লায় গিয়ে পরিবার ও সমাজের বিভিন্ন স্তরে
প্রচারণা চালাতে পারে। সরকারকেও এ কাজে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। সচেতনতামূলক কবিতা, গান, পোস্টার
প্রদর্শনী, ডক্যুমেন্টারি, জারি গান ইত্যাদি আয়োজনের মাধ্যমে ছাত্ররা তৈরি করতে পারে ব্যাপক সচেতনতা।
সম্মানিত সুধীবৃন্দ
ইভটিজিং বর্তমানে একটি মারাত্মক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এর হাত থেকে কীভাবে রেহাই পাওয়া যায় আমাদের সেই
উপায়ই বের করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনিকে কঠোর হতে হবে এর প্রতিরোধে। এর পাশাপাশি
ইভটিজারদের আমরা বয়কট করে চলবো। তারা কেন এধরনের আচরণ করে সরকারকেও তার কারণ খুঁজে দেখতে হবে।
তাদের ভালো পথে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে সরকারেরও একটি নৈতিক দায় রয়েছে।
প্রিয় সুধীজন
সময় এসেছে আমাদের নারীদের প্রতি আরও শ্রদ্ধাশীল হবার। পরিবার থেকেই এই শিক্ষা শুরু করতে হবে। কোন
মৌলবাদী ধর্মান্ধ ফতোয়া দিয়ে যাতে নারীদের হেয় করা না হয় সেদিকে সরকারের বিভাগগুলোর খেয়াল রাখতে হবে।
বেশি বেশি করে সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাÐের চর্চা করতে হবে। খেলাধুলা, চিত্তবিনোদন ও সৃষ্টিশীল নানা কাজের সঙ্গে
তরুণ সমাজকে সংযুক্ত করতে হবে। বেকার সমস্যা সমাধানেরও কোনো বিকল্প নেই। কাজের সুযোগ থাকলে এই ধরনের
নোংরা ঘটনা কমে আসবে। আমাকে এরকম একটি সেমিনারে বক্তব্য রাখার সুযোগ দিয়ে আমাকে আপনারা সম্মানিত
করেছেন। তাই আপনাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আমার কথা এখানেই শেষ করলাম। ভালো থাকবেন সবাই।
‘দুর্নীতি : উন্নয়নের বাধা’ শিরোনামে প্রধান অতিথির একটি ভাষণ রচনা করুন।
আজকের এই সভার শ্রদ্ধেয় সভাপতি, বিশেষ অতিখি, বিজ্ঞ আলোচকবৃন্দ এবং উপস্থিত সুধীমÐলিÑ আপনাদের প্রতি রইল
আমার সালাম ও শুভেচ্ছা।
সুধীজন
আজ খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি সভায় আমরা মিলিত হয়েছি। কারণ যে বিষয়টি নিয়ে আমরা সবাই উদ্বিগ্ন এবং আমরা কমবেশি
সবাই যার শিকার সে বিষয়টি হলো দুর্নীতি। দুর্নীতি যেভাবে সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে এবং যেভাবে মানুষকে গ্রাস করছে তা
খুবই চিন্তার কারণ। পরপর কয়েকবার বাংলাদেশ বিশ্বে এক নম্বর দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এটি
আমাদের জন্য খুবই লজ্জাজনক। বাংলাদেশ স্বাধীন একটি দেশ কিন্তু দুর্নীতি আমাদের সুনাম ক্ষুণœ করে চলেছে। রাজনীতি,
অর্থনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি, শিল্প, ব্যবসাবাণিজ্য সর্বত্র দুর্নীতি মহামারির আকার ধারণ করেছে। এর ফলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে
আমাদের সব সম্ভাবনা।
প্রিয় সুধীবৃন্দ
দুর্নীতি বর্তমানে সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। অথচ প্রকৃতপক্ষে দুর্নীতিবাজের সংখ্যা কম হলেও তার ফল ভোগ
করতে হয় সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে। সরকারি অফিসগুলো হচ্ছে দুর্নীতির আখড়া। ঘুষ গ্রহণ ও প্রদান, সরকারি কর্মচারিকে
অপরাধে সহায়তা করা, অসৎ উদ্দেশ্যে ভুল নথিপত্র তৈরি, জালিয়াতি করে সম্পত্তি আত্মসাৎ, নথি জাল করা, হিসাব বিকৃত
করা দুর্নীতির অন্তর্ভুক্ত। ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যক্তিগত সুবিধা স্বার্থ উদ্ধার করাই হলো দুর্নীতি। নানা কারণে আমাদের
সমাজে দুর্নীতি বেড়েই চলেছে। এটি একদিনে ঘটেনি। সমাজ ও রাষ্ট্রকে দুর্নীতিমুক্ত রাখতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে সৎ ও স্বচ্ছ
হতে হয়। দুর্নীতি বাড়ার পেছনে একটি বড় কারণ হলো রাজনৈতিক প্রভাব। রাজনৈতিক স্বার্থের কারণে এবং নিজের
ক্ষমতাকে ধরে রাখার জন্য রাজনৈতিক দলগুলো দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়ে থাকে। তৃণমূল পর্যায় থেকে সর্বোচ্চ মহল পর্যন্ত এই
অরাজকতা চলছে। ত্যাগের চেয়ে ভোগের দিকে সবার লক্ষ্য। বড়লোক হবার জন্য বিকৃত প্রতিযোগিতা, আয়ের চেয়ে ব্যয়
বেশি দুর্নীতির অন্যতম কারণ। দারিদ্রের কারণেও মানুষ দুর্নীতির আশ্রয় নেয়। এদেশের মানুষ ধর্মের প্রতি আগ্রহী হলেও
অনেক সময় বাধ্য হয়ে দুর্নীতি করে। অভাব-অনটন ও দারিদ্রের কারণে যেমন অনেকে দুর্নীতিগ্রস্ত হয় তেমনি লোভ ও
অতিরিক্ত বড়লোক হবার আশায়ও অনেকে লাগামহীনভাবে দুর্নীতি করে থাকে।
দুর্নীতি একটি রাষ্ট্রের উন্নতির পথে সবচেয়ে বড় বাধা। বিদেশি সরকার ও সংস্থাগুলো বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য প্রচুর
অর্থ সাহায্য দিলেও তার বেশিরভাগ টাকা লুটপাট হয়। সে কারণে বিদেশিরা সাহায্য দেয়ার ক্ষেত্রে অনেক বাদবিচার করে
এবং নানারকম শর্ত আরোপ করে। শিক্ষা-চিকিৎসা-অবকাঠামো উন্নয়ন প্রভৃতি খাতে বিদেশি সাহায্য প্রচুর পরিমাণে
আসে। কিন্তু তারপরও এক্ষেত্রে আশানুরূপ উন্নয়ন নেই।
প্রিয় শ্রোতাবৃন্দ
দুর্নীতি হলো অক্টোপাশের মতো। এখন সময়ের দাবি এই দুর্নীতির হাত থেকে নিজে রক্ষা পাওয়া এবং অন্যকে রক্ষা করা।
দুর্নীতি কমাতে না পারলে অন্য দেশগুলোও আমাদের উন্নয়নে সাহায্য করতে চাইবে না। আমাদের মতো উন্নয়নশীল
দেশগুলোর সবচেয়ে বড় সমস্যা দুর্নীতি। কিন্তু সরকারের একার পক্ষে সম্ভব না এই দুর্নীতি দূর করা। এর জন্য দরকার
আইনের শাসন এবং ব্যাপক সামাজিক উদ্যোগ। কিন্তু রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া আইনের প্রয়োগ করা যায় না। দুর্নীতি
দমনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব থাকলে দুর্নীতি দূর করা যাবে না। সরকারি প্রভাব খাটালে দুর্নীতিবাজরা উৎসাহিত হবে।
মানুষের জীবনমানের দিকে লক্ষ রেখে বেতন বৃদ্ধি, দ্রব্যমূলের দাম ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা, জনসচেতনতা সৃষ্টি করে
সামাজিকভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশে দুর্নীতি দমন কমিশন দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই
ছালিয়ে যাচ্ছে। দুর্নীতি দমন কমিশন যদি স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারে তবে সেটা দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে না।
রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় বাংলাদেশে বেশিরভাগ দুর্নীতি হয়ে থাকে। অতএব রাজনৈতিকভাবে দুর্নীতি মোকাবিলা করতে
হবে। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে যদি স্পষ্টভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া না হয় তবে একা দুর্নীতি দমন
কমিশনের পক্ষে এই ব্যাধি নির্মূল করা সম্ভব না। এক্ষেত্রে মিডিয়া বা প্রচার মাধ্যমের বিরাট ভূমিকা রয়েছে।
জনসচেতনতামূলক অনুষ্ঠান, আলোচনা, কথিকা, নাটক প্রভৃতি প্রচার করে মানুষকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করে তুলতে
মিডিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকা উচিত। এর পাশাপাশি পারিবারিকভাবে নৈতিক শিক্ষার উপরও জোর দো দরকার।
অতিরিক্ত ভোগ-লালসা-চাহিদা থেকে বিরত থাকার জন্য নৈতিক শিক্ষার কোন বিকল্প নেই।
সচেতন সুধীসমাজ
এ দেশ আমাদের সবার। কেউ খাবে কেউ খাবে না এরকমটি এদেশে আমরা হতে দিতে পারি না। আমাদের নবীন
প্রজন্মকে সুখী ও নিরাপদ রাখতে আসুন আমরা সবাই দুর্নীতর বিরুদ্ধে লড়াই ঘোষণা করি। দুর্নীতি দূর হলে দেশ উন্নত
হবে, শক্তিশালী হবে, মানুষের কল্যাণ হবে। এই প্রত্যয় ব্যক্ত করে আপনাদের সবার মঙ্গল কামনা করে বক্তব্য শেষ করছি।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
১। ভাষণ কী ? ভাষণের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করুন।
২। সার্থক ভাষণের বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখ করুন।
৩। নিচের বিষয়গুলো নিয়ে ভাষণ রচনা করুন :
ক) ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক বিষয়ক একটি ভাষণ তৈরি করুন।
খ) যুবসমাজের অবক্ষয় প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে একটি ভাষণ রচনা করুন।
গ) ‘বাংলাদেশের সাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ বিষয়ে একটি ভাষণ তৈরি করুন।

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]