সংলাপ হলো দুই ব্যক্তির মধ্যে কথোপকথন বা আলাপ। সংলাপে সাধারণত কোনো বিষয়ের উপর দুই বা
ততোধিক ব্যক্তি মত বিনিময় করে থাকে। প্রতিদিন আমরা একে অপরের সঙ্গে অনেক কথা বলে থাকি। এই
কথার সবগুলো গোছানো বা সুসংহত নয়। কোনোটি বিচ্ছিন্ন অসম্পূর্ণ, কোনোটি আবার উপযুক্ত শব্দ দিয়ে
গঠিত নয়। ইংরেজি উরধষড়মঁব Ñএর বাংলা প্রতিশব্দ হচ্ছে সংলাপ। আমরা একে অন্যের সঙ্গে যে কথা বলি অর্থাৎ দুই
বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যে কথোপকথনকে সংলাপ বলা হয়।
সংলাপের বৈশিষ্ট্য
১। সংলাপে একটি বিষয় থাকবে। কোন সংলাপ রচনা করতে গেলে একটি বিষয় ঠিক করে নিয়ে মনের মধ্যে তা
গুছিয়ে নিতে হবে ভালোভাবে।
২। সংলাপ সংক্ষিপ্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়।
৩। সংলাপের ভাষা সহজ সরল প্রাঞ্জল ও সুস্পষ্ট হওয়া উচিত।
৪। সংলাপ যেন গুরুগম্ভীর ও বক্তৃতাধর্মী না হয়।
৫। ইতিবাচক বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সংলাপ শেষ হওয়া ভালো।
কিছু সংলাপের নমুনা
ভবিষ্যতে কী হতে চাও তা নিয়ে পিতা-পুত্রের সংলাপ
ভবিষ্যতে কী হতে চাও তা নিয়ে পিতা-পুত্রের সংলাপ নিচে দেয়া হলো :
বাবা : অতনু, কেমন আছ ? তোমার এইচএসসির ভালো ফলাফলে আমি খুবই খুশি। এখন ভবিষ্যতে তুমি কী হতে
চাও ?
ছেলে : আপনিই তো সব নির্দেশ দেন আমাকে। আপনি যা চাইবেন সেটাই করার চেষ্টা করবো।
বাবা : আমি প্রথমে তোমার পছন্দকে গুরুত্ব দিতে চাই।
ছেলে : আপনি যদি আপত্তি না করেন তবে আমি ডাক্তার হতে চাই।
বাবা : কেন তুমি ডাক্তারি পেশাকে পছন্দ করলে ?
ছেলে : ডাক্তারি একটি মহান পেশা। সমাজের সবশ্রেণির মানুষকে সেবা দেয়া যায়।
ঊাবা : তোমার পছন্দকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু মনে রাখবে এ পেশায় পরিশ্রম, ধৈর্য ও মানবিক গুণের ভীষণ
দরকার।
ছেলে : হ্যাঁ বাবা, আমি তা জানি। আমাদের মতো গরিব দেশে অনেক লোক চিকিৎসা পায় না, অবহেলায় অনাদরে
মারা যায়। বিশেষ করে গ্রাাঞ্চলে। আমার খুব ইচ্ছা ডাক্তার হয়ে পল্লি অঞ্চলে গরিব মানুষদের চিকিৎসা দেব।
বাবা : গ্রামের দরিদ্র মানুষদের সেবা করতে চাও জেনে খুব খুশি হলাম। তোমার প্রতি অনেক আশির্বাদ রইল।
ছেলে : আশির্বাদ করো বাবা, আমি যেন আমার স্বপ্ন পূরণ করতে পারি।
একজন ফুল ক্রেতা ও ফুল বালিকার মধ্যে সংলাপ
ফুল ক্রেতা ও ফুল বালিকার মধ্যে সংলাপ নিচে দেয়া হলো :
বালিকা : স্যার, ফুল লইবেন, ফুল ? লন না স্যার একটা ?
ক্রেতা : কী ফুল দেখি ?
বালিকা : স্যার, গোলাপ আর বকুল আছে। কুনটা লইবেন স্যার ?
ক্রেতা : কত দাম ? টাটকা তো ?
বালিকা : হ স্যার, এক্কেবারে টাটকা। গোলাপ ১৫ ট্যাকা, আর বকুল এক স্টিক ১০ ট্যাকা স্যার। দেই স্যার ?
ক্রেতা : গোলাপ ৫ টা দাও আর বকুল ৪ স্টিক। তোমার নাম কী ?
বালিকা : ময়না স্যার। নীলক্ষেত বস্তিতে থাকি।
ক্রেতা : কয় টাকা পাও ফুল বিক্রি করে ?
বালিকা : হের কুনো ঠিক নাই স্যার । যেমুন বিক্রি তেমুন ট্যাকা।
ক্রেতা : স্কুলে যাও না কেন ?
বালিকা : স্কুল গ্যালে খামু কী স্যার ? বাপ তো কামকাইজ করতে পারে না।
ক্রেতা : কেন কী হয়েছে তোমার বাবার ?
বালিকা : রিক্সা চালাইতে গিয়া এক্সিডেন্ট কইরা পাও ভাইঙা ফালাইছে। হেইর লাই¹াইতো ফুল বিক্রি করি আমি।
ক্রেতা : বড় ভাই নাই তোমার ময়না ?
বালিকা : বড় ভাইয়ে বিয়া কইরা আলেদা থাহে। আমগো দ্যাহে না।
ক্রেতা : ও তাহলে তো তোমার অনেক কষ্ট । তোমার মা কী করে ?
বালিকা : মায়ে পরের বাড়ি কাম করে। ছুট ভাই আছে একটা। তিন জনের খাওন হয় না ঐ দিয়া।
ক্রেতা : শোন ময়না, তুমি লেখাপড়া করতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু আমি খুব খুশি হয়েছি যে, তুমি নিজে কাজ
করে খাও। এই নাও বাড়তি ১০০ টাকা দিলাম তোমাকে। কিছু কিনে খেও।
বালিকা : আপনে অনেক ভালা স্যার।
ইংরেজি শেখার গুরুত্ব নিয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে সংলাপ
নিচে আমি ও আমার বন্ধু বকুলের মধ্যে ইংরেজি শেখার গুরুত্ব নিয়ে সংলাপ দেওয়া হলো :
আমি : কেমন আছে বকুল ?
বকুল : হ্যাঁ আমি ভালো আছি। তুমি ?
আমি : ভালো। তুমি কি ইংরেজির ব্যবহার সম্পর্কে কোনো কিছু জানো ?
বকুল : হ্যাঁ। ইংরেজির গুরুত্ব সম্পর্কে আমি জানি। এটি আন্তর্জাতিক ভাষা এবং সারা পৃথিবীতে এটি ব্যবহার করা
হয়। বর্তমান যুগকে ইংরেজির যুগ বলা হয়।
আমি : কেন এটি আমাদের শেখা উচিত ?
বকুল : যদি তুমি ভালো চাকরি পেতে চাও অথবা পৃথিবীর অন্য দেশ ভ্রমণ করতে চাও তোমার অবশ্যই ইংরেজি
জানা দরকার। এটি একজন পর্যটক, পাইলট, প্রকৌশলী এবং যে কারও জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আমি : আর কিছু ?
বকুল : ইংরেজি ছাড়া তুমি বর্তমান সময়ের সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাবে না। তোমার জ্ঞান সীমিত থাকবে এবং
প্রযুক্তিনির্ভর বিদ্যা থেকে তুমি বঞ্চিত হবে।
আমি : অবশ্যই। তুমি কি ইংরেজিতে ভালো কথা বলতে পার ?
বকুল : অবশ্যই। আমি ইংরেজিতে দ্রæত কথা বলতে ও লিখতে পারি। ইংরেজিতে ভালো দক্ষতার জন্য তোমাকে
অবশ্যই চেষ্টা করতে হবে।
আমি : আমিও তাই আশা করি। আমি এখন আধুনিকতার বাইরে। সত্যি বলতে কি আমি এতোদিন ইংরেজির
গুরুত্ব বুঝতেই পারিনি।
বকুল : তুমি এক্ষেত্রে আমার কাছে যেকোন সাহায্য পেতে পার।
আমি : তোমার পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ
বকুল : তোমাকেও অনেক ধন্যবাদ।
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে তরুণ প্রজন্মের কাছে ফেসবুকের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে দুই বন্ধুর মধ্যে
একটি সংলাপ লিখুন।
আমি কাজল ও বন্ধু চপলের মধ্যে ফেসবুক সম্পর্কে সংলাপ নিচে দেওয়া হলো :
কাজল : সবকিছু কেমন ?
চপল : সব ভালো, ধন্যবাদ। তুমি কি ভালো ?
কাজল : আজ অনেক ভালো। এখন তুমি কি ব্যস্ত ?
চপল : না। কোন প্রশ্ন আছে কি ?
কাজল : অবশ্যই। ফেসবুক সম্পর্কে আমার কিছু তথ্য প্রয়োজন।
চপল : ওহ্ ! ফেসবুক ! এখন আমি ফেসবুকের একজন সদস্য। তুমি এটির ব্যাপারে কিছু তথ্য পেতে পার।
কাজল : যে কেউ এটিতে প্রবেশ করতে পারে কি ?
চপল : অবশ্যই। যে কেউ ইন্টারনেট সংযোগ নিয়ে এটি ব্যবহার করতে পারে। প্রথমে তোমার এটির সদস্য
হতে হবে। তারপর তোমার সাইন আপ করতে হবে।
কাজল : কথার প্রসঙ্গে, এটি কি আমাদের জন্য প্রােজনীয় ? কীভাবে ?
চপল : প্রয়োজন। এটি কাছে ও দূরে বসবাসকারী লোকের মধ্যে সামাজিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে
সাহায্য করে। অনেকে বন্ধু হতে পারে ও অনেক তথ্য ধারণ করতে পারে।
কাজল : আর কিছু আছে ?
চপল : হ্যাঁ, তুমি খোশগল্প করার সুযোগ পাবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সদস্য হয়ে যাও। অন্যদের সাথে বন্ধুত্ব
তৈরি কর। নাহলে তুমি অনেক আনন্দ উপভোগে ব্যর্থ হবে।
কাজল : সম্পূর্ণ ঠিক বলেছ। আমি অবশ্যই তা করবো।
চপল : অনেক ধন্যবাদ। বিদায়।
কাজল : বিদায়। আবার দেখা হবে।
যৌতুক প্রথা নিয়ে দুই বান্ধবীর মধ্যে একটি সংলাপ রচনা করুন।
যৌতুক প্রথা নিয়ে দুই বান্ধবী কানিজ ও কেয়ার মধ্যে সংলাপ রচনা করা হলো :
কানিজ : আমি কিন্তু হেলেনার বিয়েতে যাচ্ছি না।
কেয়া : আমাদের বান্ধবীর বিয়েতে আমরা সবাই একসাথে আনন্দ করতে যাবো,তুমি শুধু বাধ সাধছো কেন ?
কানিজ : হেলেনার বাবা এই বিয়েতে যৌতুক দিচ্ছেন। আর বরপক্ষও বড় অংকের যৌতুক নিয়েই হেলেনাকে
বিয়ে করছে। এই কারণে আমার আপত্তি।
কেয়া : এতে আপত্তির কী আছে ? আমাদের দেশের অধিকাংশ বিয়ে তো এভাবেই হয়ে থাকে। তাছাড়া
হেলেনাদের তো টাকা-পয়সার অভাব নেই।
কানিজ : বিয়েতে টাকা-পয়সা লেনদেনের পরিণতি ভালো হয় না। কেননা এতে অর্থের লোভ থাকে। এ অর্থের
লোভ থেকেই স্ত্রী নির্যাতন, স্ত্রী হত্যার মতো ঘটনাও ঘটে থাকে। এসব তো যৌতুকেরই ফল।
কেয়া : বিয়ের সময় টাকা পয়সার লেনদেন কি আইন করে বন্ধ করা যায় না ?
কানিজ : আইন তো রয়েছে। শুধু আইন দিয়েই কি যৌতুক দেয়া-নেয়া বন্ধ করা যায় ?
ঐঝঈ-২৮৫১ নির্মিতিÑ৩০১
কেয়া : তাহলে কীভাবে যৌতুক প্রথা বন্ধ করা যায় ?
কানিজ : এ বিষয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে। সামাজিকভাবে এ কুপ্রথাকে বয়কট করতে হবে। মেয়েদেরকেও
যৌতুকের বিনিময়ে বিয়ে নয়, এই শিক্ষা নিতে হবে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
১। সংলাপ বলতে কী বুঝায় ? আদর্শ সংলাপের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা কর।
২। নিচের বিষয়গুলো নিয়ে সংলাপ রচনা কর :
ক) বৈশাখি মেলা নিয়ে একটি সংলাপ লিখ
খ) স¤প্রতি পড়া একটি বই নিয়ে বন্ধুর সঙ্গে একটি সংলাপ রচনা কর।
গ) ইংরেজিতে উন্নতি করার উপায় সম্পর্কে শিক্ষকের সঙ্গে একটি সংলাপ রচনা কর।
FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ