খুদেগল্প কী তা বলতে পারবেন। খুদেগল্প রচনার কৌশল বর্ণনা করতে পারবে

খুদেগল্প মানে ছোট আকৃতির গল্প। সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হলো ছোটগল্প। কিন্তু ছোটগল্প কখনো
খুদেগল্প নয়। কোন গল্প আয়তনে ছোট হলে তাকে খুদেগল্প বলা যায় কিন্তু ছোটগল্প কেবল আয়তনের উপর
নির্ভর করে না। খুদেগল্প আকৃতি ও প্রকৃতিতে খুদেই হবে। খুদেগল্প লেখা শেখানোর প্রধান উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীদের
কল্পনাশক্তির বিকাশ ঘটানো।
খুদেগল্প লেখার ক্ষেত্রে নিচের বিষয়গুলোর দিকে খেয়াল রাখতে হবে :
১। গল্পের একটা ভাব বা রূপ তৈরি করে মনে মনে তাকে সাজিয়ে নিতে হবে।
২। ভূমিকা ছাড়াই সরাসরি ঘটনা শুরু করতে হবে।
৩। চরিত্রগুলো নিজেরাই নিজেদের উপস্থাপন করবে। চরিত্রের ভাষা যেন গল্পরচয়িতার ভাষা হয়ে না যায়।
৪। গল্পের ভাষা হবে সহজ সরল প্রাঞ্জল ও গতিময়।
৫। গল্পের সমাপ্তি হবে সুসংবদ্ধ।
একাত্তর
রিক্সায় বাসায় ফিরছি। ষাটের উপরে বয়স রিক্রাওয়ালা গল্প বলছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাকে কোয়ার্টারে পৌঁছে
দিতে যাচ্ছেন। সারা রাস্তায় গল্প বলছিলেন তিনি। একাত্তরে তার বয়স ছিল পনেরর কাছাকাছি। মাঠে ময়দানে সম্মুখ যুদ্ধে
অংশগ্রহণ করেছেন কিশোর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে। বাড়ির সাথে কোন যোগাযোগ ছিল না সেই সময়। বেশ কটি অপারেশনে
যোগ দিয়ে বেশ সুনাম কুড়িয়েছিলেন তিনি আশেপাশের এলাকায়। কিছুদিন পর গ্রামে এসে দেখেন যুদ্ধে যাবার অপরাধে
পাকসেনারা তার মা-বাবাকে গুলি করে হত্যা করেছে, তাদের বাড়িটাও আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে। যুদ্ধে যাবার কারণে তেমন
পড়াশুনো করতে পারেননি। তাই যুদ্ধ শেষে কোন চাকরিও জোটাতে পারেননি। রিক্স্রা চালিয়েই জীবন কাটাচ্ছেন এখন।
একাত্তরে আমার জন্ম, তাই যুদ্ধের কথা ইতিহাসে পড়েছি। কোন প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা নেই। ঐ রিক্স্রাওয়ালার কথাগুলো
আমার কাছে রূপকথার মতো লাগছিলো। বাসায় পৌঁছে রিক্স্রা থেকে নামলাম। রিক্স্রাভাড়া ছাড়াও তাকে বাড়তি কিছু টাকা
দিতে চাইলাম, তিনি নিলেন না। বললেনÑ ‘আিম মুক্তিযোদ্ধা, পরিশ্রম করে খেতে পছন্দ করি। কারো দয়া বা সাহায্যের
আমার প্রয়োজন নেই।’ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে।
পথশিশু
রফিক আগেই দাওয়াত দিয়েছিলো। তার বড় ভাই এসেছে আমেরিকা থেকে। অতএব বিরাট পার্টি বন্ধুদের জন্য। শীতের
রাত। তাড়াতাড়ি হাজির হয়ে গেলাম। অনেক বন্ধুবান্ধব আসতে শুরু করলো। রঙবেরঙের পোশাক তাদের। কেউ কেউ
এসেছেন দামি গাড়িতে। সঙ্গে ছেলেমেয়েরা। লাফালাফি করছে কেউ, কেউ উচ্চস্বরে চিৎকার করছে। কেউবা এটা-ওটা
নেবার জন্য বায়না করছে। রাত দশটার দিকে মূল আয়োজন শুরু হলো। হাসি-ঠাট্টা-গান, তীব্র স্বরে সাউÐ প্লেয়ার বাজছ্।ে
থরে থরে খাবার সাজানো। যে যেমন ইচ্ছা খাবার নিচ্ছে, খাচ্ছে। অনেক খাবার নষ্টও হলো। অল্প খানিকটা খেয়ে অনেকে
বাকি খাবার প্লেটেই ফেলে রেখেছে। কেমন যেন অস্বস্তি লাগছিলো। কোন মতে খাওয়া শেষ করে বন্ধুর কাছ থেকে বিদায়
নিয়ে বাইরে এলাম। চমকে উঠলাম., এত রাতে অনেকগুলো ছোট ছোট শিশু তখনও বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। একটু খাবার
চায় তারা। এত শীতেও গায়ে তেমন কাপড় নেই ওদের। অনেকেই ক্ষুধায় কাতর বোঝা গেল।
মনটা খুব খারাপ করে বাসায় ফিরলাম। ভাছিলাম এরপরে আর কখনও এধরনের পার্টিতে যাব না। যে দেশে শীতের
রািত্রতেও পথে শিশুরা একটু খাবারের জন্য দাঁড়িয়ে থাকে, সেখানে এই রকম অনুষ্ঠান আয়োজন করাটাও অমানবিক
নিষ্ঠুরতা।
প্রতিজ্ঞা
বন্যায় ঢাকা শহরের চারদিক পানিতে থৈ থৈ। শুকনো খাবার আর স্যালাইন নিয়ে আজাদ ও তার বন্ধুরা দুর্গতদের কাছে
পৌঁছে দিচ্ছে। ১৯৮৮ সালের কথা। আজাদ সেই বন্যার কথা এখনো মনে করতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া শেষ করে
আজাদ গ্রামের একটি ভালো কলেজে শিক্ষকতা করতে শুরু করলো। আবারও বন্যা। আজাদ ও তার বন্ধুরা খবর পেল
রিলিফের সরকারি সাহায্য স্থানীয় হোমরা-চোমড়ারা লুটেপুটে খাচ্ছে। সেদিন রাতে এক বৈঠক করে আজাদ ও তার বন্ধুরা।
ঠিক করলো এই অন্যায় ঠেকাতেই হবে এবং সাহায্য দুর্গতদের কাছে পৌঁছাতেই হবে। যেই কথা সেই কাজ। রাতে
গোপনে পাহারা বসালো আজাদরা। ট্রাকে করে চাল, আটা পাচার করার মুহূর্তেই পুলিশ এসে হাজির। আজাদরা আগেই
ইশারা দিয়ে রেখেছিল পুলিশ সুপারকে। পরের দিন আজাদ ও তার বন্ধুদের নেতৃত্বে সেই খাদ্যসামগ্রী গরিব লোকদের
মধ্যে বিলি করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে মানুষের সেবা করার যে প্রতিজ্ঞা করেছিল আজাদ, এবারের এই বন্যার সময়
তার কিছুটা করতে পেরে খুব তৃপ্তি ও আনন্দ বোধ করলো সে।
নিঃসঙ্গতা
তাহমিনা আক্তারকে নিয়ে আশেপাশের সবার খুব কৌতূহল। এনজিওতে চাকরি করেন, একা থাকেন তাহমিনা। সবারই
জিজ্ঞাসা তার ঘর-সংসার নেই ? কিন্তু কেউ হয়তো জানে না তাহমিনার অতীত ইতিহাস। কলেজে পড়ার সময় বিয়ে
হয়েছিলো তাহমিনার। স্বামী হঠাৎ দুর্ঘটনায় মারা যাবার পর তাহমিনার নতুন জীবন শুরু হয়, শুরু হয় তার অন্য রকমের
সংগ্রাম। ছোট ছোট দুই ভাই-বোনকে লেখাপড়া শেখানোর জন্য তাকে অনেক কষ্ট করতে হয়। টিউশনি থেকে শুরু করে
ছোট চাকরিতে যোগ দেয় সে। ভাই-বোনরাও তাহমিনার এই কষ্টের প্রতিদান দেয়। লেখাপড়ায় মেধাবী ছিল তারা।
তাদের একজন আজ ডাক্তার, অন্যজন সরকার কলেজে অধ্যাপনা করে। কিন্তু ভাই-বোনদের মানুষ করতে গিয়ে তাহমিনার
আর সংসার করা হয় না। স্বামী মারা যাবার পর অনেক ভালো ভালো প্রস্তাব এসেছিলো তার বিয়ের। বাবা অকালে মারা
যাওয়ায় সেই প্রস্তাবে রাজি হতে পারেনি সে। তাহলে দুই ভাই-বোনের লেখাপড়া হতো না। তাহমিনার পঞ্চাশ পেরিয়ে
যাওয়া এই বয়সে এসে অনেক কথা মনে পড়ে। কেন এমন হলো জীবনটা ? নিজেকেই সে প্রশ্ন করে। সারাদিন এই
মফস্বল শহরে এনজিওর কাজ শেষ করে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। নিজেকে তখন অনেক নিঃসঙ্গ লাগে, একা মনে হয়।
টিউশনি
জীবনকে সেভাবে দেখা হয়নি অমিতের। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেছে উত্তরবঙ্গের প্রত্যন্ত জেলা থেকে। টাকা-পয়সার
টানাটানি। একই হলে থাকে অমিতের বন্ধু সজিব। সজিব ধনী পিতার সন্তান। সজিবই অমিতকে একটি টিউশনি
জোগাড়কওে দিয়েছে। ফোনে কথা বলেছে অমিত ছেলেটির বাবার সঙ্গে। ঐ ছেলেটিকেই পড়াবে অমিত, নাম তন্ময়।
তন্ময়ের বাবা অমিত বলেছে পারিশ্রমিক হিসেবে অন্যদেরচেয়ে বেশিই দিবেন তিনি। অমিত প্রথমে বুঝতে পারেনি কেন
তিনি বেশি দিবেন ? প্রথম দিন তন্ময়কে পড়াতে গেলে এক অন্য অভিজ্ঞতা হয় অমিতের। পঙ্গু বিকলাঙ্গ মানুষ দেখেছে
অমিত কিন্তু বুদ্ধি প্রতিবন্ধীদের সম্পর্কে তেমন ধারণা ছিল না তার। তন্ময়ের মা তন্ময়কে সামনে নিয়ে আসার পর অবাক
হলো অমিত। চমৎকার সুদর্শন দেখতে তন্ময়। কিন্তু কোথায় যেন একটু সমস্যা আছে বলে মনে হলো অমিতের। কয়েকটি
কথা বলার পরই বুঝলো তন্ময়ের বুদ্ধিটা যথেষ্ট পরিণত নয়, একটু কম বিকশিত। প্রথমে একটু বিব্রত বিরক্ত হলেও সামলে
নেয় অমিত। টাকার দরকার, তাই টিউশনিটা ছাড়তে পারছে না। এভাবেই প্রথম মাসটা কাটলো। এর মধ্যে তন্ময়ের সঙ্গে
একধরনের বন্ধুত্বও হয়ে গেছে অমিতের। অমিতের সবকিছু বুঝতে পারে তন্ময়, তন্ময়ের কোনকিছুই অমিতের কাছে
দুর্বোধ্য নয়। মাঝে মাঝে নিজ গ্রামের গল্প করতো অমিত। তন্ময় অবাক হয়ে শুনতো সেই গল্প। একদিন অমিতের কাছে
নিজের আঁকা একটি ছবি নিয়ে আসে তন্ময়। অমিত দেখলো তাদের গ্রামের অবিকল ছবি এঁকেছে তন্ময়। যেভাবে গল্প
করেছে সে, তন্ময় রঙ-তুলিতে তাইÑই তুলে এনেছে। অমিতের বুঝতে বাকি রইলো না যে, তন্ময়ের মেধা শাণিত হলেও
তার প্রকাশ কিছু ধীরে। সেদিন থেকে সব দ্বিধা মুছে ফেলে সমস্ত ধৈর্য ও শক্তি দিয়ে তন্ময়কে পড়াতে লাগলো। মাস শেষে
তন্ময়ের মা নির্ধারিত বেতনের চাইতেও বেশি টাকা দিতে চাইলেন। কিন্তু তন্ময় জানালো বেশি বেতন লাগবে না, অন্যদের
মতো দিলেই সে খুশি।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
১। খুদেগল্প বলতে কী বুঝায় ? সার্থক খুদেগল্প রচনার বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখ কর।
২। নিচের বিষয়গুলো নিয়ে খুদেগল্প রচনা কর :
ক) পানি দূষণ বিষয়ে একটি খুদেগল্প রচনা কর।
খ) শিশুশ্রম নিয়ে একটি খুদেগল্প রচনা কর।
গ) গ্রাম থেকে শহরে নতুন আসা একজন লোককে নিয়ে একটি খুদেগল্প রচনা কর।

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]