প্রবন্ধের সংজ্ঞার্থ, আকৃতি, প্রকৃতি ও রূপ সম্পর্কে বল প্রবন্ধ রচনার বিভিন্ন দিক ব্যাখ্যা কর

প্রবন্ধ কী ?
প্রবন্ধ সাহিত্যের এক বিশেষ প্রকরণ। সংস্কৃত শব্দ ‘প্রবন্ধ’-এর ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হলো ‘প্রকৃষ্টরূপে বন্ধন’; বাংলায় শব্দটির
একই অর্থ রক্ষিত। গদ্যে রচিত লেখকের বুদ্ধিদীপ্ত, মননশীল, যুক্তিশাণিত আঁটোসাঁটো বন্ধনে নিয়ন্ত্রিত সাহিত্যরূপই হলো
প্রবন্ধ। প্রবন্ধ শব্দটির বিকল্প হিসেবে বাংলায় ‘রচনা’ শব্দের ব্যবহারও লক্ষণীয়, যার অর্থ ‘নির্মাণ করা’। ইংরেজি ঊংংধু
শব্দের পরিভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হলেও এর প্রকৃতি প্রবন্ধের সঙ্গে ঠিক মেলে না।
প্রবন্ধের প্রকারভেদ
প্রবন্ধ সাহিত্য প্রধানত দুই ভাগে বিভক্ত;
(ক) চিন্তাশ্রিত
(খ) ভাবাশ্রিত।
প্রথমোক্ত ধরনে বিষয়বস্তুর গুরুত্ব সর্বাধিক, আর দ্বিতীয়োক্ত ধরনে লেখকের মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গিরই প্রাধান্য।
প্রবন্ধের বিভিন্ন অংশ
রচনার প্রধান অংশ তিনটি;
(ক) ভ‚মিকা
(খ) মূল বিষয় ও
(গ) উপসংহার।
ভ‚মিকাংশে বক্তব্য বিষয়ের অবতারণা করা হয়, কোনো তথ্য-প্রমাণ ভিত্তিক বিশ্লেষণ থাকে না। ভ‚মিকা হতে হয় সব সময়
সংক্ষিপ্ত, সংহত ও মনোগ্রাহী। এরপর আসে মূল বিষয়। রচনার এই অংশেই মূলত কাক্সিক্ষত বক্তব্যটি যুক্তি, তত্ত¡, তথ্য,
উপাত্তের আলোকে পরিপূর্ণ অবয়বে রূপান্বিত হয়। বিষয়বস্তু সঠিক ও তাৎপর্যপূর্ণরূপে উপস্থাপনের জন্য মূল বিষয়কে
বিভিন্ন অনুচ্ছেদে ভাগ করে নিতে হয়। তথ্য যৌক্তিক পরম্পরায় উপস্থাপিত ও সন্নিবেশিত হতে হবে। মূল বিষয় বিস্তারিত
আলোচনার শেষে আসে উপসংহার। এ অংশে থাকে বিষয় সম্পর্কে লেখকের অভিমত ও সিদ্ধান্ত।
প্রবন্ধের ভাষা
প্রবন্ধের ভাষা হবে সহজ, প্রাঞ্জল, গতিশীল ও আড়ষ্টতামুক্ত। অপ্রচলিত, দুর্বোধ্য শব্দ ব্যবহারে ভাষাকে অনাবশ্যক জটিল
করার প্রবণতা পরিহার করা খুবই জরুরি। সাধু ও চলতি রীতির মিশ্রণ থেকে ভাষা মুক্ত হবে। বাক্য অনাবশ্যক জটিল ও
অলঙ্কারবহুল হওয়া উচিত নয়।
উদ্ধৃতি ব্যবহার
উদ্ধৃতি ব্যবহারে রচনার মান বাড়ে; বক্তব্য বিষয় অনেক বেশি সুবোধ্য ও গ্রহণযোগ্য হয়। তবে উদ্ধৃতির অনাবশ্যক ও
ত্রæটিপূর্ণ ব্যবহার হিতে বিপরীত হয়।
রচনার দৈর্ঘ্য
রচনা হতে হবে সুগঠিত ও পরিপূর্ণ। তবে এর আকার অতি ছোট বা অতি দীর্ঘ হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। পরিসর যা-ই হোক,
সামগ্রিকভাবে রচনার মান যেন বজায় থাকে এবং বিষয়ের প্রাসঙ্গিকতা ও সম্পূর্ণতা অর্জিত হয় সেদিকটা নিশ্চিত করা
রচনাকারের মূল দায়িত্ব।
নমুনা হিসেবে কতগুলো প্রবন্ধ/রচনা উপস্থাপন করা হলো।
রূপসি বাংলাদেশ
ভূমিকা
প্রকৃতির এক অপরূপ লীলাভূমি বাংলাদেশ। প্রকৃতি তার অকৃপণ উদারতায় তিল তিল করে সাজিয়েছে এই মনোলোভা
দেশটিকে। বিস্তীর্ণ সমভূমি, রূপালি নদীনালা, শ্যামল পাহাড়-টিলা, সবুজ বন-বনানী আর তরঙ্গমুখর সাগর বিচিত্ররূপের
অপরূপ সমারোহে বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে প্রকৃতির রূপসি কন্যা। বাংলাদেশের অনাবিল সৌন্দর্যে আপ্লুত হয়ে কবি
আবেগমথিত উচ্চারণে বলেছেন ‘রূপসি বাংলা’।
বাংলাদেশের ভূ-প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য
পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ বাংলাদেশ। এর উত্তরে হিমালয়, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। উত্তরের পাহাড় বেয়ে নেমে আসা পলি
জমে জমে সাগরের বুক থেকে জেগে উঠেছে এ দেশ। এর গায়ে জড়িয়ে আছে হাজারো নদীর জাল। এর সমতল ভূমি
দিগন্ত থেকে দিগন্তে প্রসারিত। শুকনো মৌসুমে সবুজ ফসলের মাঠে ঢেউ তোলে দখিনা বাতাস, আবার বর্ষাকালে সেই
মাঠেই দেখা যায় নদী উপচানো পানির তরঙ্গমালা। ফসলের মাঠের দিকে তাকালে মনে হয় সবুজ কাপড় গায়ে জড়িয়ে
দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ নামের প্রকৃতি-কন্যা। উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব দিকে মাথায় সবুজ টোপর পড়ে ধ্যানমগ্ন ঋষির
মতো নিশ্চল দাঁড়িয়ে আছে ছোট-বড় অসংখ্য পাহাড়। পাহাড়ের কোল জুড়ে সাজানো রয়েছে চা বাগান। বিচিত্র গাছপালা
আর জীবজন্তুতে পরিপূর্ণ এ পাহাড়ি বনাঞ্চল। পাহাড়ি ঝরনা আর জলপ্রপাত স্বপ্নাবেশ তৈরি করে সৌন্দর্যপ্রেমী মানুষের
মনে। উত্তরে রয়েছে গেরুয়া রঙের মাটির ভাওয়াল ও মধুপুরের গড়, যেখানে সৈনিকের মতো দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি
গজারি গাছ। পশ্চিমে রয়েছে অবারিত প্রান্তরের ধুলিধূসর রুক্ষতা। তবে সেখানেও আছে মাঠের পর মাঠ আমের বাগান,
পানের বরজ আর আখের ক্ষেতের সবুজ গালিচা। দক্ষিণে বাংলাদেশের পা চুমু দিয়ে শুয়ে আছে বঙ্গোপসাগর; আর
সাগরের সঙ্গে মিতালি স্থাপন করে উপকূল জুড়ে গড়ে উঠেছে পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন। বন জুড়ে সবুজ
পাতার ঘন আস্তরণ এক অপরূপ নৈসর্গিক দৃশ্য সৃষ্টি করেছে। সেখানে বসতি গড়েছে ডোরাকাটা রয়েল বেঙ্গল টাইগার আর
চিত্রল হরিণেরা। সুন্দরবনের ভিতর দিয়ে জালের মতো ছড়িয়ে থাকা নদীগুলোতে বাস করে ভয়ানক কুমির। সবকিছু
মিলিয়ে ভয়াল সুন্দর এ বনভূমি সৌন্দর্যপিপাসু মানুষের চিত্তকে হরণ করে নেয়। নীল সাগরের বুকে জেগে ওঠা দ্বীপসমূহে
তাল-নারকেল-সুপারির বাগান, বেত-শোলা-কেওড়ার বন আর প্রান্তর জোড়া ধানক্ষেতÑ সবুজে-নীলে মাখামাখি এ এক
অপরূপ দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য।
বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলে রয়েছে পৃথিবীর বৃহত্তম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। এখানে অবারিত জলরাশির শুভ্র-ফেনিল
তরঙ্গমালার গর্জন এক অপূর্ব সুরাবেশ তৈরি করে। বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন’স সমুদ্রমোহনায় অপরূপ
শোভা নিয়ে অবস্থান করছে। ফয়’স লেকের নৈসর্গিক শোভা মনোলোভা। কুয়াকাটা সমুদ্রতটে দাঁড়িয়ে দেখা যায় সমুদ্রে
সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের নান্দনিক দৃশ্য।
সবুজ শ্যামলিমা ছায়া সুনিবিড় গ্রামগুলোই বাংলাদেশের প্রাণ। কতিপয় শহর বাদ দিলে বাংলাদেশ তো ‘গ্রাম বাংলা’।
প্রকৃতির নিটোল সৌন্দর্যে গর্বিত এই বাংলা। দিগন্ত প্রসারিত সবুজের অবগুণ্ঠন ভেদ করে উঁকি দেয় সোনালি শস্য। নদীবিল-ঝিলের স্বচ্ছ পানিতে দোলে সাদা, লাল কিংবা গোলাপি শাপলা। অলস দুপুরে একটানা বিরহের সুর তোলে ঘুঘু। গরু
চরানোর ফাঁকে গাছের গোড়ায় হেলান দিয়ে রাখাল বাঁশিতে তোলে করুণ রাগিণী। গোধূলি বেলায় আকাশে ধূলি উড়িয়ে
গরুর পাল লয়ে তারা ঘরে ফেরে। আলো-আঁধারির ঐ সময়ে দল বেঁধে বলাকাদের উড়ে যাওয়া এক অপার্থিব দৃশ্যের সৃষ্টি
করে। অন্ধকার নেমে না আসতেই বাঁশবাগানের মাথার ওপর জ্যোৎ¯œার ¯িœগ্ধতা নিয়ে উপস্থিত হয় চাঁদ; বন-বনানীর
পাতায় পাতায় লাগে আলোর নাচন। বাংলার এমন সৌন্দর্যে বাঙালির মন হয় মাতোয়ারা; এই সর্ববিস্তারী সৌন্দর্য বাঙালির
মনকে করেছে কোমল, শুভবোধে উদ্দীপ্ত।
ঋতুভেদে রূপের বৈচিত্র্য
ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। ঋতুর পালাবদলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রকৃতিতে ঘটে বর্ণময় রূপবদল। প্রতিটি ঋতু আসে আপন
স্বাতন্ত্র্যে, অপরূপ রূপসজ্জায়। প্রতিটি ঋতুর রয়েছে নিজস্ব রং ও সৌন্দর্য। বঙ্গঋতুর রঙ্গশালায় প্রথম ঋতু গ্রীষ্ম। দুই
চোখে ক্রুদ্ধ বহ্নিজ¦ালা নিয়ে তার আবির্ভাব। প্রচÐ অগ্নিবাণে এ সময় বাংলার বুক বিদীর্ণ হয়; চৌচির হয়ে যায় এর তৃষ্ণার্ত
প্রান্তর। নিদারুণ দহন যন্ত্রণায় কাতর হয় পাখ-পাখালি, জন্তু-জানোয়ার। চারিদিকে তখন কেবল ধূলিময় ধূসরতা। এরই
মধ্যে কাল-বোশেখী ধেয়ে আসে সবকিছুকে লÐভÐ করে দিতে। এই রাগী ঋতুও মধুময় হয়ে ওঠে আম, জাম,লিচু, কাঁঠাল,
আনারসের রসে।
দহন-কাতর প্রকৃতির করুণ প্রার্থনায় সাড়া দিয়ে ‘শ্যাম-গম্ভীর সরসা’ রূপে নবযৌবনা বর্ষা দিগি¦জয়ী যোদ্ধার ন্যায় মেঘের
পিঠে সওয়ার হয়ে বাংলার প্রকৃতির কোলে আসন পাতে। রৌদ্রদগ্ধ তৃষাতুর ধরণী বর্ষার অমৃতরসে অবগাহন করে প্রাণপ্রাচুর্যে মেতে ওঠে, শ্যাম-¯িœগ্ধ হয়ে ওঠে রুক্ষ ধরণী। প্রকৃতির বিষণœ অঙ্গ থেকে গ্রীষ্মের অবসাদ মুছে দিয়ে সজল বর্ষা
প্রকৃতিতে জাগায় নবপ্রাণের শিহরণ। শস্য শিশুরা জেগে ওঠে মাটির বুক ভেদ করে; কদম, জুঁই, হাসনাহেনার সৌরভে
মুখরিত হয় বাংলার প্রকৃতি। খেয়ালি বর্ষা বাংলার প্লাবনের ঢল নামায়, অবিশ্রান্ত বর্ষণে মাঠ-ঘাট, নদীনালা কানায় ভরে
ওঠে; দূর দিগন্ত থেকে মাথায় মেঘের বোঝা নিয়ে দুরন্ত গতিতে উন্মত্তের মতো ধেয়ে আসে ‘বাদল দিনের পাগলা
হাওয়া’। প্রবল ক্রোধে যেন দুমড়ে-মুচড়ে দিতে চায় বাড়িঘর, গাছপালা। কখনো গভীর প্রশান্তিতে আকাশ থেকে ঝরে
প্রবল মুষলধারা। নদীতে ¯্রােতের বান ডাকে; মত্ত ¯্রােত ঘরবাড়ি, গবাদি পশু, ফসল, রাস্তাঘাট সবকিছুভাসিয়ে নেওয়ার
প্রমত্ত খেলায় মেতে ওঠে। আবার কখনো বর্ষার কৃপণতা গ্রীষ্মের চÐতাকেও হার মানাতে চায়। বাংলার ঋতুবলয়ে বর্ষাই
প্রধানতম ঋতু; বাংলার শ্যামল প্রকৃতিতে আর কৃষি-নির্ভর অর্থনীতিতে এই ঋতুর সুগভীর প্রভাব। বাংলার প্রধানতম কবি
রবীন্দ্রনাথের কবিতা-গানে-গল্পে কেবলি বর্ষা-প্রকৃতির বন্দনা :
“নীল নব ঘনে আষাঢ় গগনে তিল ঠাঁই আর নাহিরে।
ওগো আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে।
বাদলের ধারা ঝরে ঝরঝর
আউশের ক্ষেত জলে ভরভর
কালিমাখা মেঘে ওপারে আঁধার ঘনায়েছে দেখ চাহিরে
ওগো আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে।”
প্রকৃতিকে ধুয়ে-মুছে শুচি-¯িœগ্ধ কোমলতা দিয়ে বাংলার শ্যামল অঙ্গনে উপস্থিত হয় শরৎকাল। বর্ষার ঘন মেঘ ধীরে ধীরে
হালকা হয়ে আসে, অলস মন্দ্র-মন্থর গতিতে আকাশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ঘুরে বেড়ায় ‘সাদা মেঘের ভেলা’।
কোমল রোদের ¯িœগ্ধ আভায় ঝলমল করে ওঠে প্রকৃতি। কাশফুলের শুভ্রতা প্রকৃতিতে শান্তির পরশ বুলিয়ে দেয়; শিউলি
ফুলের সৌরভে মন যায় উদাস হয়ে। শরতের সকালে কচি ঘাসের ডগায় মুক্তো দানার মতো শিশির ঝলমল করে ওঠে।
শারদ শোভায় মোহিত কবি তাই আপন মনে গেয়ে উঠেনÑ
“আজিকে তোমার মধুর মুরতি
হেরিনু শারদ প্রভাতে
হে মাতঃ বঙ্গ শ্যামল অঙ্গ
ঝলিছে অমল শোভাতে।”
অমল ধবল শরতের পেছনে পেছনে প্রকৃতিকে সোনার রঙে রাঙিয়ে বাংলার রূপময় মঞ্চে আবির্ভূত হয় হিমের চাদর গায়ে-
মোড়ানো হেমন্ত। ধান কাটার ধুম পড়ে যায় মাঠে মাঠে। ধান কাটা শেষ হলে প্রকৃতিতে যেন ছড়িয়ে থাকে বৈরাগ্যের
বিষণœতা। ইতোমধ্যে অবশ্য মাথা তুলে দাঁড়াতে শুরু করে দেয় শীতের সবজির কচি পাতা। ঘরে ঘরে তখন নবান্নের
উৎসব। আবহমান বাংলার মানুষের কাছে এটিই সবচেয়ে সুখের সময়।
পিঠার গন্ধ পেয়েই যেন বাংলার প্রকৃতিতে হাজির হয় শীতের হিমবুড়ি। খেজুরের রসে বাঙালির পিঠা-উৎসব পূর্ণতা পায় এ
সময়। শীতের কুয়াশায় ঢেকে যায় সকালের সূর্য। শীতের তীব্রতায় মানুষ জবুথবু হয়ে যায়, কাপড়ের ওপর কাপড় জড়িয়ে
মানুষ শীত নিবারণের চেষ্টা চালায়। দরিদ্র মানুষেরা কাপড়ের অভাবে কষ্ট পায়। শীতের প্রকোপে গাছে গাছে চলে পাতা
ঝরার পালা। গাছগুলো যেন নিজেদের মৃত ঘোষণা করে দেয়। তবে শীতকালে সবজির বিপুল সমারোহ ঘটে। গাঁদা,
গোলাপÑ এমনি সব বাহারি ফুলে নিষ্প্রাণ প্রকৃতিও রঙিন হয়ে ওঠে।
শীতের তীব্রতা কমতেই আড়মোড়া দিয়ে জেগে ওঠে প্রকৃতি, মৃতবৎ গাছগুলোর নিষ্পত্র শাখাগুলো রাতারাতি পত্রপুষ্পে
মঞ্জুরিত হয়ে ওঠে। ঋতুমঞ্চে আগমন ঘটে মহারাজ বসন্তের। দখিনা মৃদুমন্দ বাতাসের সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে ফুষ্পের সৌরভ,
অলিকুলের গুঞ্জরণে আর উদাস দুপুরে কোকিলের কুহুতানে মন মাতোয়ারা হয়ে ওঠে। বসন্ত-প্রকৃতির রূপে মুগ্ধ কবি তাই
গেয়ে ওঠেনÑ
“ওগো দখিনা মলয়, আজি তব পরশনে,
কার কথা পড়ে মনে।
মধূপ হয়েছে আজি পাগল পারা
কুসুমে কুসুমে তাই জেগেছে সাড়া।”
উপসংহার
রূপের বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ বাংলাদেশ যেন কোনো এক রূপদক্ষ শিল্পীর আঁকা এক অসাধারণ শিল্প-প্রতিমা; শিল্পীর তুলির
আঁচড়ে শিল্পীর মনোভ‚মির নির্যাস থেকে যেন গড়ে উঠেছে এই রূপময় বাংলাদেশ। তাই মুগ্ধ কবি বাংলার গর্বিত পরিচয়
তুলে ধরেন এভাবেÑ
“এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি,
সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি।”
স্বদেশপ্রেম
ভূমিকা
মাতৃভূমির প্রতি অনুরাগ মানুষের সহজাত প্রবণতা। স্বদেশের ধুলিকণা গায়ে মেখে, স্বদেশের শস্য-দানায় শরীরের
পুষ্টিসাধন করে, স্বদেশের প্রকৃতির শ্যামল ছায়ায় আশ্রয় নিয়েই মানুষের জীবন। মায়ের কোলে মতোই দেশ মানুষের কাছে
এক পরম নির্ভরতার স্থল, এক বরাভয় আশ্রয়। দেশ তাই মানুষেরর চেতনার অংশ; দেশের সঙ্গে মানুষের সমগ্র সত্তার
সংযোগ। মানুষের চেতনায় নিরন্তর বয়ে যায় দেশপ্রেমের অনিঃশেষ ফল্গুধারা; দেশকে ভালবেসে মানুষ নিজেকে ধন্য
করে, নিজেকে পূর্ণ করে। বিশ^কবি রবীন্দ্রনাথের কণ্ঠে ধ্বনিত হয় দেশের প্রতি বাঙালির অনুরাগ:
“সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে,
সার্থক জনম মা গো তোমায় ভালবেসে।”
স্বদেশপ্রেম কী
নিজের দেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি, মাতৃভাষার প্রতি, দেশের প্রকৃতির প্রতি বিমুগ্ধ ভালবাসা আর গভীর শ্রদ্ধাবোধই
হলো স্বদেশপ্রেম। স্বদেশপ্রেম উৎসারিত হয় মানুষের আত্মার নিবিড় চৈতন্যবোধ থেকে। দেশের প্রতি ভালবাসা, শ্রদ্ধা আর
গৌরবের অনুভ‚তি তার অভিভ‚ত মনকে আচ্ছন্ন করে রাখে। দেশপ্রেমীর মনে স্বদেশপ্রেমের অনুভ‚তি এত প্রগাঢ় হয় যে,
স্বদেশের কোনো অবমাননা অথবা স্বদেশবাসীর দুঃখ-দৈন্য নিরসনে নিতান্ত হেলায় নিজের জীবন, ধন, মান সর্বস্ব উৎসর্গ
করে দিতে পারে। দেশপ্রেমে উজ্জীবিত মানুষদের নিবেদিতপ্রাণ কর্মযজ্ঞেই গড়ে ওঠে একটি দেশের সমৃদ্ধির সৌধ; বৈশি^ক
পরিমÐলে গড়ে ওঠে দেশটির গৌরবময় অবস্থান।
দেশপ্রেমের উৎসবীজ
বিশ^ময় বিরাজমান প্রতিটি প্রাণিরই নিজের জন্মস্থান ও পরিবেশের প্রতি রয়েছে অন্তর্নিহিত টান। বনের পশুকে লোকালয়ে
আনলে সে তার স্বাভাবিক জীবন হারায়, মর্মান্তিক যন্ত্রণায় সে ছটফট করতে থাকে। নীড়ের প্রতি আসক্তি পাখির চিরায়ত।
প্রাচুর্যময় ইমারতের চেয়ে খড়কুটোর দরিদ্র আবাসই তার কাছে শ্রেয়। পাখিকে নীড়চ্যুত করলে সে আর্তনাদ করে ওঠে।
কোনো সুরক্ষিত আশ্রয়ের মোহে কখনোই বিবর ত্যাগ করে না মুষিক। তার মানে জন্মস্থানই সবার কাছে সবচেয়ে প্রিয়,
জন্মস্থানেই সবাই নিজেকে নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দ অনুভব করে। অনুরূপভাবে, দেশ মানুষের কাছে এক সুবিশাল বাসগৃহস্বরূপ।
নিজ আবাসের প্রতি নাড়ীর টানেই মানুষের মধ্যে গড়ে ওঠে দেশের প্রতি ভালবাসা।
দেশপ্রেমের স্বরূপ
স্বদেশের উপাদান দিয়েই তৈরি হয় মানবদেহের অণু-পরমাণুÑ অস্থি-মজ্জা, রক্ত-মাংস। দেশের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক জৈবমানসিক। এ কারণেই দেশের সঙ্গে বিচ্ছিন্নতায় সে অনুভব করে অঙ্গহানির যন্ত্রণা। স্বীয় দেশ দরিদ্র হলেও দেশপ্রেমী
মানুষের কাছে দেশের মর্যাদা রাজরাণীর। দেশের প্রতি সুগভীর অনুরাগ ও আনুগত্যের কারণেই স্বদেশের সুখের দিনে
মানুষ আনন্দে পরিপ্লাবিত হয়, দেশের যে কোনো গৌরবে নিজে হয় গৌরবান্বিত; আবার দেশের কোনো দুর্যোগে সে গভীর
বেদনা অনুভব করে, স্বদেশের স্বাধীনতা ও মান-মর্যাদা রক্ষার জন্য আত্মত্যাগেও দ্বিধা করে না। স্বদেশপ্রেম দেশের
মানুষকে নিজের সবকিছুউজাড় করে দিতে উদ্বুদ্ধ করে।
দেশপ্রেমিকের গুণাবলি
একজন দেশপ্রেমিক সবসময় স্বদেশের মঙ্গল-চিন্তায় থাকে বিভোর, স্বদেশের মঙ্গল-সাধনে নিবেদিত। তার কাছে
স্বার্থপরতা ও আত্মসুখ নিতান্তই তুচ্ছ। একজন যথার্থ দেশপ্রেমিক দেশের প্রয়োজনে স্বেচ্ছায় দুঃখকে বরণ করে, হাসিমুখে
পান করে মৃত্যুর হলাহল। পরাধীন দেশকে স্বাধীন করতে জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করে দেশপ্রেমী জনতা, শত্রæ নিধনের যজ্ঞে
হাসতে হাসতে প্রাণ দেয় অকুতোভয় দেশপ্রেমিক। দেশের জন্য যারা জীবন-পণ লড়াই করে তারা যেমন দেশপ্রেমিক;
তারাও দেশপ্রেমিক, যারা স্বদেশের কল্যাণ ও সমৃদ্ধি সাধনে নীরবে নিভৃতে কাজ করে যায়। কবি-সাহিত্যিক, শিল্পী,
সমাজকর্মী, চিকিৎসক, শিক্ষক, বিজ্ঞানী, শ্রমজীবী মানুষ তাদের মেধা ও মননের চর্চায় এবং অক্লান্ত পরিশ্রমে তিলে তিলে
গড়ে তোলে দেশের সমৃদ্ধির সোপান, বিশ^-সভায় নিশ্চিত করে দেশের জন্য গৌরবের আসন। এভাবেই দেশের প্রতি
তাদের গভীর ভালবাসার অভিপ্রকাশ ঘটে।
স্বদেশপ্রেমের উদাহরণ
স্বদেশের স্বাধীনতা, গৌরব ও মর্যাদা রক্ষার জন্য যুগে যুগে অসংখ্য মানুষ দেশপ্রেমের প্রেরণায় নিজেদের জীবন উৎসর্গ
করেছেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে লক্ষ লক্ষ লোকের আত্মদান মানবেতিহাসে দেশপ্রেমের এক অনন্য নজির। দেশপ্রেমের
কঠিন ব্রতে উত্তীর্ণ হয়েই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হয়েছেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুর বিশ^কবি হয়ে উঠেছেন স্বদেশ ও মাতৃভাষাকে ভালবেসেই। শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক, হোসেন শহীদ
সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, জগদীশ চন্দ্র বসু, কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশ, প্রীতিলতা
ওয়াদ্দেদার, তীতুমীর, মাস্টার্দা সূর্যসেনÑ এমনি আরো বহু দেশপ্রেমিকের কীর্তিতে উজ্জ্বল হয়েছে বাংলা মায়ের শ্যামল
মুখ। উপমহাদেশে দেশপ্রেমের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহেরু, মাওলানা আবুল
কালাম আজাদ, এ.পি.জে. আব্দুল কালাম প্রমুখ মনীষীগণ। ইতালির গ্যারিবল্ডি, চীনের সান ইয়াতসেন, মাওসেতুং,
আয়ারল্যান্ডের ভেলোরা, তুরস্কের কামাল আতাতুর্ক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন, আব্রাহাম লিঙ্কন, মার্টিন লুথার
কিং, রাশিয়ার লেনিন, ফিলিস্তিনের ইয়াসির আরাফাত, দক্ষিণ আমেরিকার নেলসন ম্যান্ডেলা প্রমুখ ব্যক্তির অতুলনীয়
দেশপ্রেম পৃথিবীর ইতিহাসে অ¤øান হয়ে থাকবে।
জাতীয় জীবনে দেশপ্রেমের গুরুত্ব
জন্মভূমি জননীর মতো। মাতৃগর্ভে জন্ম নিয়ে মায়ের শরীর থেকে রস নিয়ে যেমন একজন শিশু বেড়ে ওঠে, মায়ের অস্তিত্ব
ছাড়া যেমন সন্তানের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না, তেমনি দেশহীন মানুষের অস্তিত্বও কল্পনা করা অসম্ভব। জন্মভূমির আলো,
বাতাস, খাদ্য, পানীয় সেবন করেই মানুষ বেঁচে থাকে, বড় হয়ে ওঠে। তাই দেশের সঙ্গে মানুষ আত্মিক বন্ধনে বাঁধা।
সন্তানের ভালবাসায় মায়ের মুখের হাসি যেমন মুক্তো দানার মতো উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, তেমনি দেশপ্রেমী মানুষের অপার
ভালবাসায়, ত্যাগে, কর্মে দেশ উন্নত ও সমৃদ্ধ হয়। দেশ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাঁচে না, দেশ বাঁচে মানুষের ভালবাসায়।
জন্মভূমির প্রতি মানুষের ঋণ অনুভব করতে হয়, ঋণের দায় থেকেই মানুষ দেশের প্রতি দায়িত্বশীল হয়, এ ঋণই দেশের
উন্নয়নে ও সেবায় মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে। দেশের মানুষ তাদের কর্মতৎপরতায় দেশকে যতটুকু সমৃদ্ধ করে, দেশ ততটুকুই
এগোয়। মনে রাখতে হবে, দেশ সম্মানিত হলে এর মানুষও সমানভাবে সম্মানিত হয়। বাংলাদেশের মানুষ হিসেবে
আমাদের প্রত্যেকের উচিত দেশপ্রেমের যে চেতনায় ১৯৭১-এ আমরা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশকে শত্রæমুক্ত করেছি, সেই
একই চেতনায় শাণিত হয়ে দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করার যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়া। এক্ষেত্রে সর্বাগ্রে প্রয়োজন, নিজের সঙ্কীর্ণ স্বার্থ
পরিহার করা। দেশের প্রতি গভীর আবেগ নিয়ে আমরা যদি দেশের বৃহত্তর কল্যাণের লক্ষ্যে সুস্থ গণতান্ত্রিক রাজনীতির চর্চা
করি, জ্ঞান-বিজ্ঞান-সাহিত্য-সংস্কৃতির চর্চায় নিবেদিত হই, দুর্নীতি পরিত্যাগ করে নিজ নিজ কর্তব্য নিষ্ঠার সঙ্গে সম্পাদন
করি, সন্ত্রাস-হত্যা-রাহাজানি বন্ধ করে দেশের উৎপাদন বাড়াতে আত্মনিয়োগ করি, বিদেশি পণ্যের প্রতি মোহ ত্যাগ করে
দেশীয় পণ্যের ব্যবহার বাড়াই, দেশের প্রতি আনুগত্য বাড়িয়ে নাগরিক দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন পারি, তবেই দেশের
প্রতি আমাদের ভালবাসা পূর্ণতা পাবে। অন্যথায় দেশের প্রতি আমাদের ভালবাসা ফাঁকা আওয়াজে পরিণত হবে মাত্র।
প্রবাসে দেশপ্রেমের উপলব্ধি
প্রবাসে মানুষ দেশের সঙ্গসুধা থেকে বঞ্চিত হয়। স্বজনবিহীন বিচ্ছিন্ন পরিবেশে স্বদেশের প্রতি মানুষের আবেগ যথার্থ
পরিসর লাভ করে। প্রবাসে মানুষ উপলব্ধি করতে পারে জন্মভ‚মির যথার্থ মূল্য। যেমনটি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন প্রথম
জীবনে জন্মভূমি-বৈরী কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত। সুদূর ফ্রান্সের ভার্সাই নগরীতে বসে অনুতপ্ত কবি এক অপার আবেগে
জন্মভ‚মির বন্দনায় মেতে উঠেন :
“বহু দেশ দেখিয়াছি বহু নদ-দলে
কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মিটে কার জলে?
দুগ্ধ স্রোতরূপী তুমি জন্মভূমি স্তনে।”
প্রবাসে স্বদেশ হাতছানি দিয়ে ডাকে। দীর্ঘ প্রবাস জীবন শেষে দেশের ¯েœহময় সংস্পর্শে এলে মানুষের তৃষ্ণা-কাতর
প্রাণের ওপর দিয়ে যেন গভীর শান্তিদায়ী অমৃতরসের ফোয়ারা বয়ে যায়।
স্বদেশপ্রেম ও বিশ্বপ্রেমের পারস্পরিক সম্পর্ক
সঙ্কীর্ণ স্বার্থচিন্তার ঊর্ধ্বে মানবতাবাদে নিহিত রয়েছে দেশপ্রেম ও বিশ^প্রেমের মূল। স্বদেশপ্রেমের ভ্রƒণেই জন্ম নেয়
বিশ^প্রেম। দেশ ও দেশের মানুষকে ভালো বাসতে বাসতেই একজন স্বদেশপ্রেমী মানুষ বিশ^কে ভালবাসতে শেখে। দেশের
প্রতি উৎসারিত ভালবাসা একসময় বিশ^প্রবাহে ধাবিত হয়; তখন একজন দেশপ্রেমী তার দেশের মধ্যেই পেয়ে যায় বিশে^র
মহাবার্তা। বাংলার কবি দেশকে ভালবেসেই হয়ে যান বিশ^কবি, বাংলার কায়ায় দেখেন বিশে^ ছায়া :
“ও আমার দেশের মাটি, তোমার ’পরে ঠেকাই মাথা
তোমাতে বিশ্বময়ীর, তোমাতে বিশ্বমায়ের আঁচল পাতা।”
উগ্র দেশপ্রেম
দেশপ্রেম কখনো কখনো উদার প্রশস্ত রাস্তা ছেড়ে সঙ্কীর্ণতার পথে হাঁটে; তখনি জন্ম নেয় অতি-দেশপ্রেম, যার রূপ প্রমত্ত,
পরিণতি ভয়ঙ্কর। উগ্র দেশপ্রেমের বিনাশী পরিচয় বিশ^ পেয়েছে দুটি বিশ^যুদ্ধের মধ্য দিয়ে। জার্মানির হিটলার আর ইতালির
মুসোলিনীর উগ্র দেশপ্রেমের বলি হয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষ। দেশপ্রেম সবসময়ই শুভ, কল্যাণকর; কিন্তু উগ্র দেশপ্রেম কট্টর
জাতীয়তাবাদের জন্ম দেয়, যা চিরকালই অকল্যাণের ও অশান্তির।
ঐঝঈ-২৮৫১ নির্মিতিÑ৩১৫
মানুষের ওপর স্বদেশপ্রেমের প্রভাব
স্বদেশপ্রেমের শেকড় মানুষের মনুষ্যত্বে। দেশপ্রেম মানুষের মন থেকে মুছে দেয় সঙ্কীর্ণ স্বার্থবুদ্ধি, মানুষের মনে বয়ে আনে
মহত্ত¡। স্বদেশপ্রেমীর তপস্যা ত্যাগের; দেশ ও জাতির জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার মন্ত্রে তার মন উজ্জীবিত।
স্বাধীনচেতা দেশপ্রেমিকদের ত্যাগের প্রভায় গৌরবোজ্জ্বল হয়েছে মানবেতিহাস। অনাদিকালের মানুষ ঐ মহাপুরুষদের
কাছ থেকে পেয়েছে আত্মত্যাগের দীক্ষা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার অবিনাশী প্রেরণা।
উপসংহার
দেশপ্রেম পবিত্র ও কল্যাণকর। দেশপ্রেমীদের ত্যাগে আর দায়িত্ববোধেই একটি দেশ উন্নতির শিখরে আরোহণে সক্ষম হয়।
দেশপ্রেমিকের ভাবনা জুড়ে থাকে দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণ। প্রতিটি মানুষেরই উচিত দেশকে ভালবাসা ও তার
কল্যাণে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করা। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে, দেশের প্রতি ভালবাসার আতিশয্যে অন্য কোনো দেশ যাতে
ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, মানবতা যেন কোনোভাবেই লঙ্ঘিত না হয়। এটি নিশ্চিত হলেই দেশপ্রেম সর্বাংশে কল্যাণদায়ী হবে।

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]