উক্তি , উক্তির প্রকরণ, উক্তি পরিবর্তনের নিয়ম

উক্তি /Speech /Narration

প্রত্যয়ের মাধম্যে ‘উক্তি’ শব্দটি বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যায় ‘Öবচ্+ক্তি=উক্তি’। উক্তি মানে কথা বলা। কোন কথোকের বাককর্মের নামই উক্তি।

 

উক্তির প্রকরণ

উক্তিকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন :

১. প্রত্যক্ষ উক্তি : বক্তার হুবহু কথাকে প্রত্যক্ষ উক্তি বলে /Direct Speech। যেমন: রহিম বলল, ‘ফারুক এখন বাড়ি আছে।’

২. পরোক্ষ উক্তি : এক বক্তার কথা অন্য বক্তা পরিবর্তন করে বলাকে পরোক্ষ উক্তি/Indirect Speech বলে। যেমন : রহিম বলল যে ফারুক তখন বাড়ি ছিল।

 

উক্তি পরিবর্তনের নিয়ম

প্রত্যক্ষ উক্তিকে পরোক্ষ উক্তিতে রূপান্তর করাকেই উক্তি পরিবর্তন বলে। ইংরেজিতে উক্তি পরিবর্তনের কতগুলো নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। কিন্তু বাংলায় তেমন ধরাবাঁধা নিয়ম নাই। অর্থের দিকে দৃষ্টি রেখে উক্তির পরিবর্তন করতে হয়।

তবে ইংরেজি- Narration এর নিয়ম-কানুনের সঙ্গে বেশ মিল রয়েছে। ইংরেজির মতো জোড় ঊর্ধ্বকমা না বসে একক ঊর্ধ্বকমা বসে। যেমন:

১. প্রত্যক্ষ উক্তিতে বক্তার কথাগুলো উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রাখতে হয়। পরোক্ষ উক্তিতে উদ্ধৃতি চিহ্ন ব্যবহৃত হয় না এবং সংযোজক ‘যে’ দ্বারা বক্তার কথা সংযোজিত হয়। যেমন:

প্রত্যক্ষ উক্তি  : মিতু বলল, ‘আমি পুরস্কার পেয়েছি।’

পরোক্ষ উক্তি  : মিতু বলল যে সে পুরস্কার পেয়েছে।

২. ইংরেজিতে প্রত্যক্ষ উক্তির প্রধান বাক্যে যদি অতীত কালের ক্রিয়াপদ থাকে তবে পরোক্ষ বাক্যে সকল ক্রিয়াপদই অতীত কালে পরিবর্তিত হয়। যেমন:

প্রত্যক্ষ উক্তি  : রহিম বলল, ‘ফারুক এখন বাড়ি আছে।’

পরোক্ষ উক্তি  : রহিম বলল যে ফারুক তখন বাড়ি ছিল।

প্রত্যক্ষ উক্তি  : তিনি বললেন, ‘আমি বাজারে যাব।’

পরোক্ষ উক্তি  : তিনি বললেন যে তিনি বাজারে যাবেন।

৩. প্রত্যক্ষ উক্তিতে প্রধান বাক্যের ক্রিয়া বর্তমান বা ভবিষ্যৎ কালের হলে পরোক্ষ উক্তিতে অধীন বাক্যের ক্রিয়া যে কোন কালের হতে পারে। যেমন:

প্রত্যক্ষ উক্তি  : নাদিরা বলে, ‘আমি ডাক্তার হব।’

পরোক্ষ উক্তি  : নাদিরা বলে যে সে ডাক্তার হবে।

৪. আদেশ অনুরোধ, জিজ্ঞাসা ইত্যাদি বোঝায় এমন প্রত্যক্ষ উক্তিকে পরোক্ষ উক্তিতে পরিবর্তিত করতে হলে প্রধান বাক্যের ক্রিয়াকে ভাব অনুসারে পরিবর্তন করতে হয়। যেমন:

প্রত্যক্ষ উক্তি  : সে রিভাকে বলল, ‘তোমার নাম কী?’

পরোক্ষ উক্তি  : সে রিভাকে তার নাম জিজ্ঞাসা করল।

৫. আনন্দ, বিষাদ বা আবেগবাচক প্রত্যক্ষ উক্তিকে পরোক্ষ উক্তিতে পরিবর্তন করতে কেবল ভাবটি উপযুক্ত ক্রিয়াপদ বা ক্রিয়াবিশেষণের সাহায্যে প্রকাশ করতে হয়। প্রত্যক্ষ উক্তির আবেগ চিহ্ন তুলে দিতে হয়। যেমন:

প্রত্যক্ষ উক্তি  : জাকির বলল, ‘বা! আমরা খেলায় জিতেছি।’

পরোক্ষ উক্তি  : জাকির আনন্দের সঙ্গে বলল যে তারা খেলায় জিতেছে।

৬. প্রত্যক্ষ উক্তি চিরন্তন সত্য হলে ইংরেজি নিয়মের মত পরোক্ষ উক্তির কালের কোন পরিবর্তন ঘটে না। যেমন:

প্রত্যক্ষ উক্তি  : শিক্ষক বললেন, ‘পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে।’

পরোক্ষ উক্তি  : শিক্ষক বললেন যে পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে।

৭. প্রত্যক্ষ উক্তির সর্বনামগুলোর পুরুষ পরোক্ষ বাক্যের অর্থানুসারে পরিবর্তিত হয়। যেমন:

প্রত্যক্ষ উক্তি  : তিনি আমাকে বললেন, ‘তুমি এ কাজ করেছ।’

পরোক্ষ উক্তি  : তিনি আমাকে বললেন যে আমি সেই কাজ করেছি।

৮. প্রত্যক্ষ উক্তি পরিবর্তনের সময় যদি দুই প্রকার অর্থ বোঝায় তাহলে বন্ধনীর মধ্যের ঠিক অর্থটি বুঝিয়ে দিতে হয়। যেমন:

প্রত্যক্ষ উক্তি  : দীপা শম্পাকে বলল, ‘আমি ভাত খাই নাই।’

পরোক্ষ উক্তি  : দীপা শম্পাকে বলল যে সে (দীপা) ভাত খায় নাই।

৯. প্রত্যক্ষ উক্তিতে বর্ণনাকারীর ভাষা যদি সাধু হয় মূলবক্তার ভাষার সাধু আবার চলিত হলে তা চলিত হবে। যেমন:

প্রত্যক্ষ উক্তি  : মদন বলিল, ‘আমি বাড়ি যাইব না।’

পরোক্ষ উক্তি  : মদন বলিল সে বাড়ি যাইবে না।

১০. বাক্যের অর্থ সঙ্গতিরক্ষার জন্য পরোক্ষ উক্তিতে সর্বনামপদের পরিবর্তন করতে হয়।

১১. অর্থ সঙ্গতিরক্ষার জন্য পরোক্ষ উক্তিতে ক্রিয়াপদের পরিবর্তন করতে হয়।

১২. প্রত্যক্ষ থেকে পরোক্ষ উক্তিতে পরিবর্তন করতে হলে ইংরেজির ন্যায় বাংলাতেও কতকগুলো শব্দ পরিবর্তিত হয়। যেমন:

প্রত্যক্ষ      পরোক্ষ      প্রত্যক্ষ      পরোক্ষ

এই        সেই        ইহা        তাহা

এই সকল    সেই সকল    এখন       তখন

এইরূপে      সেইরূপে          আজ       সেদিন

গতকাল      আগের দিন   আগামী কাল  পরের দিন

আসা       যাওয়া      এখানে      সেখানে

 

উক্তি পরিবর্তনের মাধ্যমে বাক্যের রূপান্তর ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ‘বাঙ্গলা ব্যাকরণ’ থেকে নমুনা দেয়া যায়। যেমন:

১. যে উক্তিতে বক্তার কথা যথাযথ বর্ণিত হয় তাহা প্রত্যক্ষ উক্তি (Direct Narration)। এতদ্ভিন্ন অন্য প্রকারের উক্তিকে পরোক্ষ উক্তি (Indirect Narration) বলা হয়।

২. প্রত্যক্ষ উক্তিকে পরোক্ষ উক্তিতে পরিবর্তিত করা যেতে পারে। যেমন:

প্রত্যক্ষ উক্তি  : বৃদ্ধ লোকটা বলিলেন, “হে বালক, তোমার পিতার নাম কি?”

পরোক্ষ উক্তি  : বৃদ্ধ লোকটি বালকটিকে তাহার পিতার নাম জিজ্ঞাসা করিলেন।

প্রত্যক্ষ উক্তি  : ভিখারী তাহাকে বলিল, “খোদা তোমার মঙ্গল করুন।”

পরোক্ষ উক্তি  : ভিখারী খোদার নিকট তাহার মঙ্গল প্রার্থনা করিল।

৩. ইংরেজিতে প্রত্যক্ষ উক্তি উদ্ধারচিহ্নের  (Quotation mark) মধ্যে ব্যবহার করিতে হয়। যেমন: He says, “I shall not go there. Ó ইংরেজিতে অনুকরণে আমরা লিখিতে পারি। যেমন: সে বলিল, “আমি সেখানে যাইব না।”

ইংরেজি হইতে বাঙ্গলায় এই চিহ্নের ব্যবহার প্রথা যদিও চলিয়াছে, তথাপি অনেক লেখক প্রত্যক্ষ উক্তি বুঝাইতে উদ্ধারচিহ্ন ব্যবহার করেন না।

৪. প্রত্যক্ষ উক্তি পরোক্ষ উক্তিতে পরিবর্তিত করিতে হইলে, ইংরেজিতে that (যে) প্রভৃতি কতকগুলো শব্দ বক্তার উক্তির পূর্বে বসাইতে হয়। যেমন: Abu says, ÒI am ill” ইহা পরোক্ষ উক্তিতে হইলে Abu says that he is ill-এইরূপ কোনও বাঁধাবাঁধি নিয়ম নাই।

ক) আবু বলে যে সে অসুস্থ অথবা আবু বলে সে অসুস্থ, এইরূপ দুই প্রকারেই বলিতে পারি।

৫. ইংরেজিকে প্রত্যক্ষ উক্তির প্রধান বাক্যে যদি অতীত কালবোধক ক্রিয়াপদ থাকে, তাহা হইলে পরোক্ষ বাক্যে সমস্ত ক্রিয়াপদকেই অতীত কালে পরিবর্তন করিতে হয়। যেমন : Abu said that he had done it বাঙ্গালায় খণ্ড বাক্যের ক্রিয়া প্রধান বাক্যের ক্রিয়াপদের কাল অনুসারে সকল স্থলে পরিবর্তিত হয়। যেমন : তিনি বলিয়াছিলেন যে তিনি কলিকাতায় যাইবেন।

৬. বাক্যের অর্থের দিকে লক্ষ্য রাখিয়া উক্ত পরিবর্তন কালে পরোক্ষ উক্তিতে সর্বনামগুলোর পুরুষ (Person) পরিবর্তন করিতে হয়। সর্বনামের পুরুষের পরিবর্তন বাঙ্গালাতে ইংরেজির মতনই হইয়া থাকে। যেমন :

প্রত্যক্ষ উক্তি  : তিনি আমাকে বলিয়াছিলেন, “তুমি এই কাজ করিয়াছ।”

পরোক্ষ উক্তি  : তিনি আমাকে বলিয়ছিলেন যে আমি সেই কাজ করিয়াছি।

৭. প্রত্যক্ষ উক্তিতে যদি আদেশ, অনুরোধ, জিজ্ঞাসা প্রভৃতি বোঝায়, তাহা হইলে, যাহা আদেশ, অনুরোধ বা জিজ্ঞাসা করা হইল তাহার ভাবার্থ লইয়া পরোক্ষ উক্তিতে সম্পূর্ণ পৃথক বাক্যে অর্থ প্রকাশ করিতে হয়। যেমন:

প্রত্যক্ষ উক্তি  : তিনি হারুনকে বলিলেন, “আপনি কবে আসিলেন?”

পরোক্ষ উক্তি  : হারুন কবে আসিলেন তাহা তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন।

প্রত্যক্ষ উক্তি  : তিনি আমাকে বলিলেন, “তুমি এখান হইতে যাও।”

পরোক্ষ উক্তি  : তিনি আমাকে সেখান হইতে চলিয়া যাইতে বলিলেন।

৮. প্রত্যক্ষ হইতে পরোক্ষ উক্তিতে পরিবর্তন করিতে হইলে ইংরেজির ন্যায় বাঙ্গালাতেও কতকগুলো শব্দ সাধারণত পরিবর্তন করিয়া লেখা হয়। যেমন :

প্রত্যক্ষ      পরোক্ষ      প্রত্যক্ষ      পরোক্ষ

এই        সেই        এইরূপে      সেইরূপে

আসা       যাওয়া      আজ       সেইদিন

এখন       তখন       ইহা        তাহা

আগামী কাল  পরের দিন   এই সকল    সেই সকল

প্রত্যক্ষ উক্তি হইতে পরোক্ষ উক্তিতে পরিবর্তন করিলে যদি দুই প্রকার অর্থ বোঝায়, তাহা হইলে যাহাতে ঠিক অর্থ বুঝিতে পারা যায়, সেইজন্য বন্ধনীর মধ্যে তাহা বুঝাইয়া দিতে হইবে। যেমন : নুরু বলিলেন যে তিনি (নুরু) ভাত খান নাই।

প্রত্যক্ষ উক্তি  : তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমার নাম কি?”

পরোক্ষ উক্তি  : তিনি আমাকে আমার নাম জিজ্ঞাসা করলেন।

প্রত্যক্ষ উক্তি  : অজয় বলল, “আমি এখন বেশ সুস্থ আছি।”

পরোক্ষ উক্তি  : অজয় বলল যে সে তখন বেশ সুস্থ ছিল।

প্রত্যক্ষ উক্তি  : পথিক বলল, “তুমি কি আমাকে গ্রামে যাবার পথ বলে দিতে পার?”

পরোক্ষ উক্তি  : পথিক আমাকে গ্রামে যাবার পথ বলে দিতে পারি কিনা জিজ্ঞাসা করল।

প্রত্যক্ষ উক্তি  : বৃদ্ধ বলল, “আহা কী মধুর সঙ্গীত!”

পরোক্ষ উক্তি  : বৃদ্ধ আনন্দ প্রকাশ করে বলল যে সঙ্গীত বড়ই মধুর হয়েছে।

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]