যতিচিহ্ন

যতিচিহ্ন /Punctuation

ভাব প্রকাশের মাধ্যম হলো ভাষা বা কথা যা বের হয় বাগযন্ত্রের সাহায্যে ফুসফুসের শ্বাসে। এসব কথা হতে পারে কবিতা, কাহিনি বা যে কোন রচনার সদৃশ। এরা কথ্যরূপে বা লেখ্যরূপে উপস্থিত হতে পারে। কথ্যরূপের দোষ না থাকলেও লেখ্যরূপের অনেক দোষ। ব্যাকরণে ধ্বনি, শব্দ, বানান ও বাক্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি যতিও। বাংলার যতি আর ইংরেজির Punctuation-এর ব্যবহার একই কারণ বাংলার যতি ইংরেজি থেকে হুবহু এসেছে (শুধু দাঁড়ি বাদে) যাদের ব্যবহারও একই রকম।

 

যতির ইতিহাস

দাঁড়ি (ইংরেজিতে ফুলস্টপ) বাদে বর্তমানে ব্যবহৃত সবগুলো যতিই ইংরেজি থেকে নেয়া। গ্রিক Punctus (বিন্দু) শব্দ থেকে ইংরেজি Punctuation এসেছে। এই বিন্দু বা Point থেকে Priod of fullstop ব্যবহৃত হয়।

যতির ব্যবহার শুরু এবং সার্থক ব্যবহারে যাঁদের অবদান রয়েছে তাঁদের মধ্যে রয়েছে—জন টমাস, উইলিয়াম কেরি (১৮৬১-১৮৩৪), জশুরা মার্শম্যান, রাজা রামমোহন রায়, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, অক্ষয়কুমার দত্ত ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।

১৮০০ সালের শুরুতে তৈরি হয় বাংলা মুদ্রণযন্ত্র। শুরু হয় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ। মুদ্রণযন্ত্র তৈরির কারণ হিসেবে দেখা যায় বাংলায় ধর্মপ্রচারের জন্য বাইবেল অনুবাদ এবং পাঠ্যবই রচনা। শ্রীরামপুর মিশনের ছিলেন প্রধান ইংরেজ পাদরি উইলিয়াম কেরি। এছাড়া অন্য তিনজন ইংরেজ পাদরি ছিলেন—জন টমাস, জশুরা মার্শম্যান। তারাই প্রথম তাদের রচনায় ইংরেজি যতির (১৮০১) ব্যবহার শুরু করেন বলে ইংরেজি নামেই অধিক পরিচিতি লাভ করে।

রাজা রামমোহন রায় প্রথম ইংরেজি যতি থেকে কয়েকটি যতি ব্যবহার করেন। ১৮২৩ সালে মার্চ মাসে প্রকাশিত ‘প্রার্থনাপত্র’-এ শব্দযতি, ঊর্র্ধ্বযতি, বাক্যযতি, প্রশ্নযতি ও নমুনাযতি ব্যবহার করেন।

দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের (১৮১৭—১৯০৫) রচনায় কয়েকটি যতির ব্যবহার (১৮৫২) লক্ষ করা যায়। অক্ষয়কুমার দত্তও (১৮২০—১৮৮৬) তাঁর গদ্যে যতি ব্যবহার (১৮৫২/৫৩) করেন। যতির সুষ্ঠু ও সার্থক ব্যবহারে (১৯৪৭) সবচে বেশি অবদান রয়েছে গদ্যের জনকখ্যাত লেখক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮২০-১৮৯১)। তিনি করলেন—বাংলা বর্ণমালার সঠিক উপস্থাপন, উচ্চারণ অনুসারে বাংলা বর্ণমালার সঙ্গে ইংরেজি লিখন এবং যতির সুষ্ঠু ব্যবহার।

 

যতির সংজ্ঞা

রচনার সম্যক অর্থ বা ভাব পরিস্ফুটনের জন্য এবং শ্বাসগ্রহণের প্রয়োজনে যে বিরতি নেয়া হয় তাকে যতি বলে। অন্যভাবে বলা যায়, রচনা পাঠকালে শ্বাসগ্রহণের জন্য যে বিরতি/বিরাম/ছেদ নেয়া হয় সেই বিরতি বা বিরাম বা ছেদকেই যতি বলে। লেখক ব্যাকরণবিদ হায়াৎ মামুদ ও মাহবুবুল হক তাঁদের ব্যাকরণ বইতে যতির সংজ্ঞা দিয়েছেন এভাবে, ‘বাক্যের বিভিন্ন ভাব সার্থকভাবে প্রকাশের জন্য কণ্ঠস্বরের ভঙ্গির তারতম্য বোঝাতে বর্ণের অতিরিক্ত যেসব চিহ্ন ব্যবহৃত হয় সেসবই যতি বা বিরাম বা ছেদ।’

বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা ভাষা ও ব্যাকরণ-এ যতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, মানুষ কথা বলার সময় মাঝে মধ্যে থামে। এই থামার মাধ্যমে কথার অর্থ স্পষ্ট হয়। অনেক সময়ে কথার সুর ওঠানামা করে। সেই ওঠানামা অর্থের পরিবর্তন ঘটায়। কথাকে লিখিতরূপ দেওয়ার সময়ে এই থামা এবং সুরের ওঠানামা নির্দেশের জন্য সাধারণত যতিচিহ্নের ব্যবহার হয়। এই গুলি বিরামচিহ্ন বা বিরতিচিহ্ন নামেও পরিচিত। যতিচিহ্নের প্রয়োগ যথাযথ না হলে বাক্য অস্পষ্ট বা দুর্বোধ্য হতে পারে, এমনকি প্রত্যাশিত অর্থ প্রকাশ না করে সম্পূর্ণ ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করতে পারে।

 

যতির প্রয়োজনীয়তা

শ্বাসকে বিরতি দিতে এবং বাক্যকে অর্থবোধক করতে এবং সাজিয়ে তুলতে যতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। যেমন:

ক) যতি বাক্যকে অর্থবহ করে তোলে অর্থাৎ ভুল অর্থ থেকে বাক্যকে রক্ষা করে

খ) বাক্যের অর্থ সঠিক, পরিষ্কার, সহজ, সুন্দর ও স্পষ্ট করতে সাহায্য করে

গ) বক্তব্যেরস, সুর ও মেজাজ ঠিক রাখে

ঘ) শব্দ বা বাক্যকে শুদ্ধ করতে এবং নির্দিষ্ট ছক অনুসারে সাজিয়ে তুলতে সাহায্য করে

ঙ) বাক্যে ব্যবহৃত বিভিন্ন পদ বা বাক্যের মধ্যে সংগতি বজায় রাখে

চ) বাক্যে ব্যবহৃত শব্দ, শব্দগুচ্ছ বা বাক্য, খণ্ডবাক্যকে পৃথক ও সংযোগবদ্ধ করতে সাহায্য করে এবং

ছ) সরল, যৌগিক ও জটিলবাক্য চিনতে সাহায্য করে এবং বক্তব্যের বিষয় অনুধাবন করতে সাহায্য করে

 

যতির অবস্থান

বাক্যের অর্থ ঠিক রাখার জন্য এবং শব্দ বা বাক্যকে পৃথক করতে যতি বাক্যে প্রথমে, মাঝে বা শেষে বসতে পারে। অনেকের ধারণা সময় অনুসারে ‘১ সেকেণ্ড বা তার দ্বিগুণ’ সময়ের বিরতির জন্য যতি বসে কিন্তু এটি যুক্তিসঙ্গত বিভাজন নয়।

 

বাংলাযতি

বাংলার প্রধান দুটি যতি

প্রাচীন পাণ্ডুলিপিতে যেসব যতি পাওয়া যায়

১. এক দাঁড়ি (।): এক দাঁড়ি বেজোড় বাক্যে বসে।

২. জোড় দাঁড়ি (॥: জোড় দাঁড়ি জোড় বাক্যে বসে।

 

১. ০।, ০।।, ০।০, ০॥০।

আর প্রাচীন আরবিতে ০ যতির সন্ধান পাওয়া যায়।

২. ত্রিবিন্দু : এটি অতএব চিহ্নের মতো।

 

যতির প্রকরণ (যতি কখনো শব্দ বা বাক্য থেকে দূরে বসে না)

ক) সমাপ্তিনির্দেশক যতি

বাংলা

ইংরেজি

চিহ্ন

নিয়ম ও অবস্থান

নমুনা

১. দাঁড়ি /পূর্ণযতি

ফুলস্টপ

. ।

পূর্ণবাক্যের শেষে বসে।

সে ভালো ছেলে।

২. প্রশ্নযতি/জিজ্ঞাসাযতি

কোশ্চেন মার্ক

?

প্রশ্ন করতে শেষে বসে।

তোমার নাম কী?

৩. আবেগযতি

এক্সক্লামেটরি মার্ক 

!

আবেগশব্দের শেষে বসে।

আবেগবাক্যের শেষে বসে।

বাহ! কী সুন্দর দৃশ্য।

দৃশ্যটি কত চমৎকার!

 

খ) শব্দ, বাক্য ও খণ্ডবাক্য পৃথকিকরণ যতি

বাংলা

ইংরেজি

চিহ্ন

নিয়ম ও অবস্থান

নমুনা

৪. শব্দযতি

 

কমা

,

একই জাতীয় একাধিক শব্দ বা শব্দগুচ্ছের পরে বসে।

মালেক, সোহাগ, হাসান ভালো বন্ধু। বন্ধু চাও, বন্ধু পাবে ভালো ব্যবহার।

৫. শব্দযোজক যতি

হাইফেন

-

সমাস জাতীয় শব্দ যুক্ত করতে মাঝে বসে।

আমাদের প্রীতি-উপহার নিও।

৬. বাক্যযতি

 /অর্ধযতি

সেমিকোলন

;

দুটি বাক্যকে জুড়ে দিতে তাদের মাঝে বসে।

বাংলাদেশের উপর দিয়ে বহু নদী বয়ে গেছে; এগুলো/নদীগুলো দেখতে মনোরম।

৭. নমুনাযতি

কোলন

:

বাক্যের মাঝে নমুনা দিতে বসে।

যেমন: ছাগল, গরুর ঘোড়া।

সিদ্ধান্ত হলো: সে সভাপতি হবে।

৮. নমুনাযোজক যতি

 

ড্যাশ

জটিল/যৌগিক বাক্যকে সংযুক্ত করতে বা শব্দের নমুনা হিসাবে মাঝে বা শেষে বসে।

তুমি আসো— তোমার উপকার হবে— অপকার হবে না। যদি তুমি আসো তাহলে তোমার উপকার ছাড়া অপকার হবে না। তুমি আসো এবং তোমার উপকার ছাড়া অপকার হবে না।

৯. ঊর্র্ধ্বযতি

/উদ্ধৃতি

কোটেশন মার্ক

‘ ’

“ ”

শব্দ বা বাক্যের দুই পাশে বসে।

‘ঝিঙেফুল’ ছোটদের চমৎকার ছড়ার বই।

ইমরান বলল, ‘সে প্রথম হয়েছে।’

১০. বর্ণলোপ যতি

ইলেক মার্ক

এ্যাপস্ট্রফি

যে স্থানে বর্ণ লোপ পায় সেই স্থানে বসে।

তোমার ’পরে/উপরে ঠেকাই মাথা।

১১. বিকল্পযতি

অবলিগ /

 

‘বিকল্প বা অথবা’ হিসেবে শব্দদ্বয়ের মাঝে বসে।

মন অর্থ আত্মা /হৃদয়।

১২. বিন্দুযতি

ডট

.

 

...

ক্রমিক সংখ্যার পরে বসে।

সংক্ষিপ্ত শব্দের পরে বসে।

অসমাপ্ত কথার পরে তিনটি বসে।

১. যতির ব্যবহার।

ড. শহীদুল্লাহ

হাজার বছর ধরে...

 

১৩. বন্ধনি

ব্রাকেট

( ) { }

[ ]

ব্যাখ্যা দিতে শব্দ বা বাক্যের দুইপাশে বসে।

তিনি চাটগাঁয় (চট্টগ্রাম) বাস করতেন।

 

গ) উৎপত্তি, গুরুত্ব ও আলংকারিক যতি

বাংলা

ইংরেজি

চিহ্ন

নিয়ম ও অবস্থান

নমুনা

১৪. ধাতুযতি

রুটওভার

ক্রিয়া জাতীয় শব্দের আগে বসে।

√চল+অন্ত =চলন্ত

১৫. উৎসযতি

 

< >

শব্দের উৎপত্তি বুঝাতে বসে।

মস্তক>মাথা, মাথা<মস্তক

১৬. সমযতি

ইজিকালটু

=

সমান বুঝাতে বসে।

২+২=৪

১৭. তারকাযতি

স্টারমার্ক

*

গুরুত্ব বুঝাতে বসে।

*বিজয় দিবস (রচনাটি গুরুত্বপূর্ণ)

১৮. অনুচ্ছেদ যতি

প্যারামার্ক

#

লিস্ট বা প্যারার প্রথমে বসে।

# একজোড়া জুতা

১৯. তিরযতি

এ্যারো

কিছু নির্দেশ করতে প্রথমে বসে।

→ দিয়ে যাও।

২০. বুলেট

বুলেট

নমুনা দিয়ে প্রথমে বসে।

যেসব কবিতা ছন্দে লেখা

• আমাদের ছোটনদী চলে বাঁকে বাঁকে।

২১. অনুপাত যতি

%

 

অনুপাত বুঝাতে পরে বসে।

মাথাপিছু আয় ৬০%

 

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]