শব্দ ও শব্দ শুদ্ধি

শব্দ ও শব্দ শুদ্ধি

অর্থপূর্ণ ধ্বনি সমষ্টিই শব্দ। বাংলা ভাষার অভিধানে যেসব শব্দ আছে অথবা যেসব শব্দ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে, মুখে ব্যবহার করে বা লিখে মনের ভাব প্রকাশ করে সেসব সঞ্চিত শব্দই শব্দভাণ্ডার নামে পরিচিত। যে ভাষার শব্দভাণ্ডার যত উন্নত সেই ভাষা তত সমৃদ্ধ। বাংলা শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধির মূলে রয়েছে আমাদের উত্তরাধিকার থেকে পাওয়া শব্দ। যেগুলো অনেকটা পুরোনো শব্দ। ঋণকরা শব্দ এবং বিভিন্ন নিয়মের মাধ্যমে তৈরিকৃত শব্দ।

বাংলা ভাষা গোড়াপত্তনের যুগে স্বল্প সংখ্যক শব্দ নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও নানা ভাষার সংস্পর্শে এসে এর শব্দসম্ভার বহুল পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশে তুর্কি আগমন ও মুসলিম শাসন পত্তনের সুযোগে ক্রমে প্রচুর আরবি ও ফারসি শব্দ বাংলা ভাষার নিজস্ব সম্পদে পরিণত হয়েছে। এরপর এলো ইংরেজ। ইংরেজ শাসনামলেও তাদের নিজস্ব সাহিত্য এবং সংস্কৃতির বহু শব্দ বাংলা ভাষায় প্রবেশ লাভ করে। বাংলা ভাষা ঐ সব ভাষার শব্দগুলো আপন করে নিয়েছে।

বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে শব্দের শ্রেণিবিভাগ হতে পারে।

গঠন অনুসারে শব্দ দুই প্রকার। যেমন :

মৌলিক শব্দ

যেসব শব্দ বিশ্লেষণ করা যায় না বা ভেঙে আলাদা করা যায় না তাদের মৌলিক শব্দ বলে। মৌলিক শব্দগুলোই হলো ভাষার মূল উপকরণ। যেমন : গোলাপ, নাক, লাল, তিন।

সাধিত শব্দ

যেসব শব্দ বিশ্লেষণ করা হলে আলাদা অর্থবোধক শব্দ পাওয়া যায় তাদের সাধিত শব্দ বলে। সাধারণত একাধিক শব্দের সমাস হয়ে কিংবা প্রত্যয় বা উপসর্গ যোগ হয়ে সাধিত শব্দ গঠিত হয়ে থাকে। যেমন :চাঁদমুখ (চাঁদের মতো মুখ), নীলাকাশ (নীল যে আকাশ), ডুবুরি (ডুব্+উরি), চলন্ত (চল্+অন্ত), প্রশাসন (প্র+শাসন), গরমিল (গর+মিল)

অর্থ অনুসারে শব্দ তিন প্রকার। যেমন :

যৌগিক শব্দ (অর্থগত)

যেসব শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ও ব্যবহারিক অর্থ একই রকম তাদের যৌগিক শব্দ বলে। যেমন :

গায়ক=গৈ+ণক (অক)-অর্থ : গান করে যে, কর্তব্য =কৃ+তব্য-অর্থ : যা করা উচিত

বাবুয়ানা=বাবু+আনা-অর্থ : বাবুর ভাব, মধুর=মধু+র-অর্থ : মধুর মতো মিষ্টি গুণযুক্ত

দৌহিত্র=দুহিতা+ষ্ণ্য-অর্থ : কন্যার পুত্র, নাতি, চিকামারা= চিকা+মারা-অর্থ। দেওয়ালের লিখন= দেয়াললিখন।

রূঢ়ি শব্দ (অর্থগত)

যে শব্দ প্রত্যয় বা উপসর্গযোগে মূল শব্দের অর্থের অনুগামী না হয়ে অন্য কোনো বিশিষ্ট অর্থ জ্ঞাপন করে তাকে রূঢ়ি শব্দ বলে। যেমন : হস্তী=হস্ত+ইন, অর্থ-হস্ত আছে যার কিন্তু হস্তী বলতে একটি পশুকে বোঝায়। গবেষণা (গো+এষণা) অর্থ-গরু খোঁজা কিন্তু বর্তমান অর্থ ব্যাপক অধ্যয়ন ও পর্যালোচনা। এরূপ : বাঁশি-বাঁশ দিয়ে তৈরি যে কোনো বস্তু নয়, শব্দটি সুরের বিশেষ বাদ্যযন্ত্র, বিশেষ অর্থে প্রযুক্ত হয়।তৈল-শুধু তিলজাত স্নেহ পদার্থ নয়, শব্দটি যে কোনো উদ্ভিজ্জ পদার্থজাত স্নেহ পদার্থকে বোঝায়। যেমন : বাদাম-তেল। প্রবীণ-শব্দটির অর্থ হওয়া উচিত ছিল প্রকৃষ্ট রূপে বীণা বাজাতে পারেন যিনি। কিন্তু শব্দটি ‘অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বয়স্ক ব্যক্তি’ অর্থে ব্যবহৃত হয়। সন্দেশ-শব্দ ও প্রত্যয়গত অর্থে ‘সংবাদ’। কিন্তু রূঢ়ি অর্থে ‘মিষ্টান্ন বিশেষ’।

যোগরূঢ় শব্দ (অর্থগত)

সমাস নিষ্পন্ন যে সকল শব্দ সম্পূর্ণভাবে সমস্যমান পদসমূহের অনুগামী না হয়ে কোনো বিশিষ্ট অর্থ গ্রহণ করে, তাদের যোগরূঢ় শব্দ বলে। যেমন : পঙ্কজ-পঙ্কে জন্মে যা (উপপদ তৎপুরুষ সমাস)। শৈবাল, শালুক, পদ্মফুল প্রভৃতি নানাবিধ উদ্ভিদ পঙ্কে জন্মে থাকে। কিন্তু ‘পঙ্কজ’ শব্দটি একমাত্র ‘পদ্মফুল’ অর্থেই ব্যবহৃত হয়। তাই পঙ্কজ একটি যোগরূঢ় শব্দ। রাজপুত-‘রাজার পুত্র’ অর্থ পরিত্রাগ করে যোগরূঢ় শব্দ হিসেবে অর্থ হয়েছে ‘জাতিবিশেষ’। মহাযাত্রা-মহাসমারোহে যাত্রা অর্থ পরিত্যাগ করে একমাত্র ‘সমুদ্র’ অর্থেই ব্যবহৃত হয়।

উৎসমূলক অনুসারে শব্দ পাঁচ প্রকার। যেমন :

তৎসম/সংস্কৃত শব্দ

যেসব শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে সোজাসুজি বা হুবহু বাংলায় এসেছে এবং যাদের রূপ অপরিবর্তিত রয়েছে সেসব শব্দকে বলা হয় তৎসম শব্দ। তৎসম একটি পারিভাষিক শব্দ। এর অর্থ [তৎ (তার)+সম (সমান)]=তার সমান অর্থাৎ সংস্কৃত। যেমন : চন্দ্র, সূর্য নক্ষত্র, ভবন, ধর্ম, পাত্র, মনুষ্য ইত্যাদি।

অধরতৎসম শব্দ

বাংলা ভাষায় যেসব সংস্কৃত শব্দ কিঞ্চিৎ বা সামান্য পরিবর্তিত আকারে বাংলা ভাষায় এসেছে সেসব শব্দকে অধরতৎসম শব্দ বলে। তৎসম মানে সংস্কৃত। আর অধরতৎসম মানে আধা সংস্কৃত। যেমন : জোছনা, ছেরাদ্দ, গিন্নি, বোষ্টম, কুচ্ছিত। এগুলো যথাক্রমে সংস্কৃত জ্যোৎস্না, শ্রাদ্ধ, গৃহিণী, বৈঞ্চব, কুৎসিত শব্দ থেকে আগত।

তদ্ভব শব্দ

যেসব শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে সম্পূর্ণ পরিবর্তিত আকারে বাংলা ভাষায় এসেছে সেসব শব্দকে তদ্ভব শব্দ বলে। অন্যভাবে বলা যায়, যেসব শব্দের মূল সংস্কৃত ভাষায় পাওয়া যায় কিন্তু ভাষার স্বাভাবিক বিবর্তন ধারায় প্রাকৃতের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়ে আধুনিক বাংলা ভাষায় স্থান করে নিয়েছে সেসব শব্দকে বলা হয় তদ্ভব শব্দ। তদ্ভব একটি পারিভাষিক শব্দ। এর অর্থ, ‘তৎ’ (তার) থেকে ‘ভব’ (উৎপন্ন)। যেমন : সংস্কৃত-হস্ত, প্রাকৃত-হথ, তদ্ভব-হাত। সংস্কৃত-চর্মকার, প্রাকৃত-চম্মআর, তদ্ভব-চামার ইত্যাদি। এই সব তদ্ভবশব্দকে খাঁটি বাংলা শব্দও বলা হয়।

তদ্ভব শব্দ <সংস্কৃত শব্দ

অপরূপ < অপূর্ব

অমিয় < অমৃত

অলখ < অলক্ষে

আঁখি < অক্ষি

আঁচল < অঞ্চল

আজ < অদ্য

আঁটি < অস্থি

আদিখ্যেতা < আধিক্যতা

আন্ধার < অন্ধকার

আপন < আত্মপন

আমড়া < আম্রাতক

আমি < অস্মাভি

আরশি < আদর্শিকা

আলতা < অলক্তক

আশি < অশীতি

আঁশ < অংশু

আষ < আমিষ

আস্তাবল <stable

আনারস <Ananos

আলমারি < Armario

এগার < একাদশ

কনে < কন্যা

কলা < কদলি

কাঁথা < কন্থা

কাঁদন < ক্রন্দন

কানু < কৃষ্ণ

কাম < কর্ম

কামার < কর্মকার

কাহন < কার্যাপন   

তদ্ভব শব্দ <সংস্কৃত শব্দ

কুমার < কুম্ভকার

কুঁড়ি < কোরক/কমডল

কেয়া < কেতকী

খই < খদিকা

খাজা < খাদ্য

খুদ < খুদ্র

খেয়া < ক্ষেপ

গরজে < গর্জে

গা < গাত্র

গাঁ < গ্রাম

গাং < গঙ্গা

গাজন < গর্জন

গামছা < গামোছা

গারদ < Guard

ঘর < গৃহ

ঘরনি < গৃহিণী

চাকা < চক্র

চৌকা < চতুঙ্ক

ছা < শাবক

ঝি < দুহিতা

ঠোঁট < তুণ্ড

দুয়ার < দ্বার

দেরাজ < Drawer

নতুন < নূতন

নিশ্চুপ < নিশ্চল+চুপ

পরশে < স্পর্শে

পরান < প্রাণ

পাখা < পক্ষ

বাঁদর < বানর

তদ্ভব শব্দ <সংস্কৃত শব্দ

বুক < বক্ষ

বুনো < বন্য

বোঁটা < বৃন্ত

ভাত < ভত্ত

ভালো < ভদ্রক

মাইরি < mary

মাছ < মৎস্য

মাঝ < মধ্য

মাটি < মৃত্তিকা

মাথা < মস্তক

মেজো < মধ্যক

রাখাল <রক্ষপাল

লাট < Lord

শিউলি < শেফালিকা

সঁপা < সমর্পণ

সরগ < স্বর্গ

সাঁই < স্বামী

সাত < সপ্ত

সাপ< সর্প

সায়র < সাগর

সিঙ্গারা < শৃঙ্গটাক

সিঁথি < সিমন্তিকা

সুন্দর < সুনর

সেয়ানা < সজ্ঞান

সোনা < স্বর্ণ

সোহাগ < সৌভাগ্য

হাঁটা < হণ্টন

হালকা < লঘুক

গেন্ডারিয়া <Grand Area

দেশি শব্দ

যেসব শব্দ বাংলাদেশের কোল, মুণ্ডা প্রভৃতি আদিম অধিবাসীদের ভাষা ও সংস্কৃতির কিছু কিছু উপাদান বাংলায় রক্ষিত রয়েছে সেসব শব্দকে দেশি শব্দ বলে। অনেক সময় এসব শব্দের মূল নির্ধারণ করা যায় না কিন্তু কোন ভাষা থেকে এসেছে তার হদিস মেলে। যেমন : কুড়ি (বিশ)-কোলভাষা, পেট (উদর)-তামিল ভাষা, চুলা (উনন)-মুন্ডারী ভাষা।

এরূপ: কুলা, গঞ্জ, চোঙ্গা, টোপর, ডাব, ডাগর, ঢেঁকি ইত্যাদি আরও বহু দেশি শব্দ বাংলায় ব্যবহৃত হয়।

বিদেশি শব্দ

যেসব শব্দ রাজনৈতিক, ধর্মীয়, সংস্কৃতিগত ও বাণিজ্যিক কারণে বাংলাদেশে আগত বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের বহুশব্দ বাংলায় স্থান করে নিয়েছে সেসব শব্দকে বিদেশি শব্দ বলে। এদের মধ্যে আরবি, ফারসি ও ইংরেজি শব্দই বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সে কালের সমাজ জীবনের প্রয়োজনীয় উপকরণরূপে বিদেশি শব্দ এ দেশের ভাষায় গৃহীত হয়েছে। এছাড়া রয়েছে পর্তুগিজ, ফরাসি, ওলন্দাজ, তুর্কি প্রভৃতি দেশ। এসব ভাষারও কিছু শব্দ একইভাবে বাংলা ভাষায় এসে গেছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী ভারত, মায়ানমার/বার্মা, মালয়, চীন, জাপান প্রভৃতি দেশেরও কিছু শব্দ আমাদের ভাষায় প্রচলিত রয়েছে।

আরবি শব্দ

বাংলায় ব্যবহৃত আরবি শব্দগুলো দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন :

ধর্মসংক্রান্ত শব্দ : আল্লাহ, ইসলাম, ঈমান, ওজু, কোরবানি, কুরআন, কিয়ামত, গোসল, জান্নাত, জাহান্নাম, তওবা, তসবি, জাকাত, হজ, হাদিস, হারাম, হালাল ইত্যাদি।

প্রশাসনিক ও সাংস্কৃতিক শব্দ : আদালত, আলেম, ইনসান, ঈদ, উকিল, ওজর, এজলাস, এলেম, কানুন, কলম, কিতাব, কেচ্ছা, খারিজ, গায়েব, দোয়াত, নগদ, বাকি, মহকুমা, মুন্সেফ, মোক্তার, রায় ইত্যাদি

ফারসি শব্দ

বাংলা ভাষায় আগত ফারসি শব্দগুলো তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন :

ধর্মসংক্রান্ত  শব্দ : খোদা, গুনাহ, দোজখ, নামাজ, পয়গম্বর, ফেরেশতা, বেহেশত, রোজা ইত্যাদি।

প্রশাসনিক ও সাংস্কৃতিক শব্দ: কারখানা, চশমা, জবানবন্দি, তারিখ, তোশক, দফতর, দরবার, দোকান, দস্তখত, দৌলত, নালিশ, বাদশাহ, বান্দা, বেগম, মেথর, রসদ ইত্যাদি।

বিবিধ শব্দ : আদমি, আমদানি, জানোয়ার, জিন্দা, নমুনা, বদমাশ, রফতানি, হাঙ্গামা ইত্যাদি।

ইংরেজি শব্দ

ইংরেজি শব্দ দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন :

অনেকটা ইংরেজি উচ্চারণে : ইউনিভার্সিটি, ইউনিয়ন, কলেজ, টিন, নভেল, নোট, পাউডার, পেন্সিল, ব্যাগ, ফুটবল, মাস্টার, লাইব্রেরি, স্কুল ইত্যাদি।

পরিবর্তিত উচ্চারণে : আফিম/Opium, অফিস/Office, ইস্কুল/School, বাক্স/বাকশ/Box, হাসপাতাল /Hospital, বোতল /Bottle ইত্যাদি।

ইংরেজি ছাড়া অন্যান্য ইউরোপীয় ভাষার শব্দ

পর্তুগিজ : আনারস, আলপিন, আলমারি, গির্জা, গুদাম, চাবি, পাউরুটি, পাদ্রি, বালতি

ফরাসি  : কার্তুজ, কুপন, ডিপো, রেস্তোরাঁ

ওলন্দাজ : ইস্কাপন, টেক্কা, তুরুপ, রুইতন, হরতন

গুজরাটি : খদ্দর, হরতাল

পাঞ্জাবি : চাহিদা, শিখ

তুর্কি : চাকর, চাকু, তোপ, দারোগা

চিনা : চা, চিনি

মায়ানমার/বার্মিজ : ফুঙ্গি, লুংগি

জাপানি : রিকশা, হারিকিরি

                                                       শব্দ শুদ্ধি

অত্র/যত্র/তত্র

সংস্কৃত ‘অত্র/যত্র/তত্র’ থেকে বাংলা ‘এখানে-সেখানে-সেখানে’।

অশুদ্ধ ব্যবহার: অত্র : এ/এই/সে/সেই। যত্র : যে/যেই।

অনুগত/বাধ্যগত

অর্থ: অনুগত অর্থ বাধ্য, অধীন বা আশ্রিত।

অশুদ্ধ ব্যবহার : ‘বাধ্যগত’ তাই কারো অধীনে লিখতে ‘অনুগত’ লিখতে হবে।

অনুপস্থিত/অবর্তমান

যিনি বর্তমানে (আজ/কাল) উপস্থিত নাই তিনি অনুপস্থিত। আর যিনি মারা গিয়েছেন তিনি অবর্তমান (মৃতব্যক্তি)। তাই জীবিত ব্যক্তি কোথায়ও অনুপস্থিত থাকলে ‘অবর্তমান’ লেখা যাবে না। 

অচেনা/অজ্ঞাত

যা চেনা নয় তাই অচেনা (অজানা, অপরিচিত)। যা জ্ঞাত নয় তাই অজ্ঞাত (জাÍ, বংশ পরিচয়, স্বভাব, চরিত্র, সম্পূর্ণ পরিচয়, গোপন)। যেমন : লাশটি অজ্ঞাত না হয়ে হবে ‘লাশটি অচেনা ব্যক্তির বা অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির’ আর ‘মৃত্যুর বিষয়টি অজ্ঞাত’। 

আশঙ্কা (খারাপ) /সম্ভাবনা (ভালো)

বন্যার আশঙ্কা থাকলে পলিমাটির সম্ভানা থাকে।

মারাত্মক (খারাপ)/দারুণ (ভালো)

মারাত্মক অসভ্য ছেলে দারুণ মেধাবী ধোবী হতে পারে।

ই/আর/ও

শব্দে জোর দিতে ‘ই’/‘ও’ বসে। যেমন: তুমিই কাল আসবে। তুমি কালই আসবে। তুমি কাল আসবেই। আমিও যাব। আবার ই-দিয়ে আবার অনুরোধ বোঝায়। যেমন : যখন এসেছ তখন একদিন থাকই না।

ইতিপূর্বে /ইতোমধ্যে

ইতিপূর্বে, ইতঃপূর্বে, ইতিবৃত্ত, ইতিরাজ, ইতিহাস, ইতোমধ্যে (ইতি+মধ্যে)।

উপরোক্ত/উপরিউক্ত/উপর্যুক্ত

উপরোক্ত বা উপরুক্ত ভুল ব্যবহার। উপরিউক্ত-এর সন্ধি হলো উপর্যুক্ত। এদের অর্থ উপরে যা বলা হয়েছে। পূর্বোক্ত বা প্রাগুক্ত বা উপরিউল্লিখিত লেখা যায়। 

উল্লেখিত/উল্লিখিত

উল্লেখিত ব্যবহার ভুল আর উল্লিখিত ব্যবহার শুদ্ধ।

উপর/ওপর

ইংরেজি অন, আপ, অ্যাবাব অর্থাৎ উচ্চতা বুঝাতে ‘উপর’ ব্যবহার করা যায়। যেমন : জমির উপর পানি জমে আছে। টেবিলের উপর বইটি রাখো। আর উচ্চতা না বুঝিয়ে বিষয় বা অন্যকিছু বোঝাতে ‘ওপর’ ব্যবহার করা যায়। যেমন : স্বাধীনতার ওপর সকলেরই আস্থা রয়েছে। তার ওপর আমার বিশ্বাস রয়েছে। একমাত্র পানি সেচের ওপরেই ভালো ফসল আশা করা যায়।

উদ্দেশ/উদ্দেশ্য

সন্ধান, খোঁজ, যাত্র, অ্যাড্র্রেস, প্রতি, দিকে প্রকাশ করতে উদ্দেশ ব্যবহার করা হয়। যেমন : শেষপর্যন্ত তার উদ্দেশ পওয়া গেল না। আজ তারা ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছে। আশায়, মতলব, প্রয়োজন, লক্ষ্য (উদ্দেশের বিষয়) প্রকাশ করতে উদ্দেশ্য ব্যবহার করা হয়। যেমন : শেষপর্যন্ত তার উদ্দেশ্য বোঝা গেল। জনমত আদায়ের উদ্দেশ্যেই মন্ত্রিগণ জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন।

উচ্ছল/উজ্জ্বল

উচ্ছল (উৎ+ছল) আর উজ্জ্বল (উৎ+জ্বল- ব্যবহারে সতর্ক হওয়া দরকার। অনেকেই ভুলে উচ্ছলে ব-ফলা ব্যবহার করেন যা অশুদ্ধ।

এই পৃথিবী/পৃথিবী

পৃথিবী কী এই বা ওই হয়। পৃথিবী তো একটিই তাই এই বা ওই না লিখে সরাসরি পৃথিবী লিখলেই চলে।

একুশ/একুশে

একুশ টাকা আর একুশে ফেব্রুয়ারি এক নয়। ‘সংখ্যা’ বোঝাতে ‘একুশ’ লেখা হয় আর ‘ভাষাদিবস’ বোঝাতে ‘একুশে’ লেখা হয়। 

ও/আর/এবং

শব্দ ও শব্দ যুক্ত করতে ‘ও/আর’ বসে। বাক্য ও বাক্য যুক্ত করতে ‘এবং/আর’ বসে। আবার শব্দাংশ যুক্ত করতেও এবং লাগে। রহিম ও/আর করিম। রহিম স্কুলে যায় এবং লেখাপড়া করে। দুধ ও ভাত এবং মাছ ও মাংশ তার প্রিয় খাবার।

কত/কতক/বহু (বিশেষণ)

দুটি শব্দই সংখ্যা/পরিমাণবাচক অর্থাৎ বহুত্ববাচক শব্দ। তবে সর্তকতার সাথে ব্যভহার করা দরকার। কত টাকা তার দরকার? কত কথা বলে রে! মাঝে মাঝে কত বিচিত্র শব্দ কানে আসে। কতক=কিছু বা খানিকটা। কিছু পরিমাণ ব্যবহার ভুল। কতক মানুষ আছে শুধু শুধু কথা প্যাঁচায়। আর কত দূর যেতে হবে? বহু দূর যেতে হবে। কত/বহু মানুষ অকারণে মারা যাচ্ছে।

কনিষ্ঠ/সর্বকনিষ্ঠ

কনিষ্ঠ অর্থ সবার ছোট আর সর্বকনিষ্ঠ অর্থ বয়সে সবচেয়ে ছোট। অশুদ্ধ : ছেলেটি তার সর্বকনিষ্ঠতম সন্তান। 

কিছু/কিছু পরিমাণ

কিছু/বিপুল/বহু/বেশি/অনেক-পরিমাণ/সংখ্যকজ্ঞাপক শব্দ তাই এদের পরে পরিমাণ ব্যবহার করা করা দরকার হয় না। কিছু পরিমাণ মাল তাকে দাও। কিছু সংখ্যক লোক এই ব্যাপারে সতর্ক। 

কারণ/হেতু

নানাবিধ প্রাকৃতিক কারণ হেতু (কারণে) এই অঞ্চলের জনবসতি অতি বিরল।

কারণ/জনিত

ভুল-ক্যান্সার জনিত কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। শুদ্ধ-ক্যান্সারে তার মৃত্যু হয়েছে। ক্যান্সারের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। তার মৃত্যু কারণ ক্যান্সার। ক্যান্সারজনিত রোগে তার মৃত্যু হয়েছে।

গিয়ে/যেয়ে

‘গিয়ে’র স্থলে ‘যেয়ে’ ব্যবহার ভুল। অনেকে ‘যায়’ থেকে ‘যেয়ে’ ব্যবহার করেন যা ভুল। আমি বাসায় গিয়ে তোমাকে ফোন দেব।

তর/তম

বিশেষণের তুলনা দুয়ের মধ্যে উৎকর্ষ বা অপকর্ষ বুঝাতে ‘তর’ আর বহুর মধ্যে উৎকর্ষ বা অপকর্ষ বুঝাতে ‘তম’ বসে। এরা বিশেষ্যবাচক শব্দে বসে না। যেমন: বৃহৎ-বৃহত্তর/বৃহত্তম, দীর্ঘ-দীর্ঘতর/দীর্ঘতম। কিন্তু সংস্কৃত শব্দে ‘য়ান/ষ্ঠ’ বসলে ‘তর/তম’ বসে না। যেমন : শ্রেষ্ঠতর/শ্রেষ্ঠতম।

নিচ/নীচ

ইংরেজি আন্ডার বা বিলো অর্থে ‘নিচ’ ব্যবহার করা হয়। নিম্নশ্রেণি/জাত, খারাপ, হীন, ইতর, নিকৃষ্ট অর্থে ‘নীচ’ ব্যবহার করা হয়।

প্রচার/সম্প্রচার

প্রচার অল্প পরিসরে ঘোষণা বা বিজ্ঞপ্তি সম্প্রচার ব্যাপক পরিসরে রেডি বা টিভিতে ঘোষণা বা বিজ্ঞপ্তি।

প্রমুখ/প্রভৃতি/ইত্যাদি

বহু ব্যক্তি উলে¬খ করলে ‘প্রমুখ’ হয়। বহু বস্তু/বিষয়  উল্লেখ করলে ‘প্রভৃতি/ ইত্যাদি’ ব্যবহার করা হয়। যেমন : আম, জাম, কাঁঠাল ইত্যাদি/প্রভৃতি ফল শরীরের জন্য উপকারী। সুকুমার রায়, কাজী নজরুল ইসলাম, সুকুমার বড়ুয়া প্রমুখ বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত ছড়াকার।   

ফলে/বলে/সত্ত্বেও

‘ফলে’ অর্থ সমাধানে-অসুস্থার ফলে তার রেজাল্ট খারাপ হয়েছে। ‘বলে’ অর্থ সেজন্য/সে কারণে/সেহেতু-তুমি আসনি বলে আমি চলে গিয়েছি। ‘সত্ত্বেও’ অর্থ কোনো কিছু হলেও বা ঘটলেও। কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও সে কাজটি করেছে।

ফলশ্রুতি/ফলশ্রুতিতে/ফলে

ফলশ্রুতি অর্থ পুণ্যকাহিনি শ্রবণে যে ফল পাওয়া যায়। কিন্তু ‘ফলে’ প্রকাশ করতে ‘ফলশ্রুতিতে’ ব্যবহার ভুল।

ফলাফল /গুণাগুণ

ফল আর অফল নিয়ে ফলাফল। গুণ ও অগুণ নিয়ে গুণাগুণ। তাই সচেতনভাবে লেখা দরকার। কোথায় গুণ আর অগুণ রয়েছে তা খেয়াল করে লেখা দরকার। দুটি গুণাগুণ বুঝিয়ে দাও-দুটি গুণ বুঝিয়ে দাও। স্যার শিক্ষার্থীদের ফলাফল দিয়ে দেন। হাসান পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করেছে-হাসান পরীক্ষায় ভালো ফল করেছে।

বন্দি/বন্দী/বন্ধী

বন্দি অর্থ কয়েদি বা আটক। বন্দী অর্থ যিনি বন্দনা করেন। বন্ধ অর্থ বাধা /রোধ/ সংযোগ/অবকাশ/ছুটি/স্থগিত। এর সাথে ইন+প্রত্যয় যুক্ত হলে বন্ধী হয়। কিন্তু এটি কোনো সময় শব্দের আগে না বসে পরে বসে। যেমন : প্রতিবন্ধী।

বাধা/বাঁধা

বাধা অর্থ রুদ্ধ, প্রতিবন্ধকতা, অন্তরায়, বিঘœ, নিষেধ, অমান্য আর বাঁধা অর্থ বাঁধ, বন্ধন, বাঁধন, গিট দেয়া, বন্দি করা। যেমন : সকল বাধা পেরিয়ে আজ তারা চিরসম্পর্কে বাঁধা পড়ে গেল।

ভূগোল/ভুবন

ভূ+গোল অর্থ পৃথিবী গোল। আর ‘ভুবন’ অর্থ পৃথিবী। তাই ‘ভূ’ আর ‘ভু’ এক নয়।

ভারি/ভারী

ভারি অর্থ খুব আর ভারী অর্থ ওজন/ভার।

ভাবে/ভাবে

ভাব-জন্ম, সত্তা, ভক্তি, অভিপ্রায়, মনের অবস্থা, মর্ম, ধরন, প্রেম ইত্যাদি অর্থে ব্যবহৃত হয়। ভাব-এর সাথে এ-বিভক্তি/প্রত্যয় যোগে পদ হয়। আর ‘ভাবে’ শব্দের পরের যুক্ত হয়ে অর্থ প্রকাশ করে। যেমন : ভাবের মধ্যে কোনো জড়তা না রেখে খোলাখুলিভাবে ভাব প্রকাশ করো।  

মুখ্য/মুর্খ

মুখ্য হলো প্রধান আর মুর্খ হলো নির্বোধ।

মুখপত্র/মুখপাত্র

মুখপত্রটি (কাগজ) প্রকাশ হওয়ার পর জানতে পারলাম তিনি বাংলাদেশের মুখপাত্র (ব্যক্তিপ্রধান) হিসেবে সেখানে ভাষণ দেবেন।

যা-তা, যত-তত

জটিল বাক্যে কর্তার পরে জটিলচিহ্ন (যা-তা, যত-তত) বসে। যেমন: যে যত পড়ালেখা করে সে তত ভালো রেজাল্ট করে না।

রুপা/রূপ

রৌপপ্য থেকে রুপা বাংলা লেখা হয়। রূপ থেকে না তবে ভুল করে লেখা হয়-রূপা, রূপো, রূপালি/লী।

লক্ষ/লক্ষ্য

লক্ষ-সংখ্যা, লক্ষ-দেখা/অবলোকন (পরে ক্রিয়া থাকবে),লক্ষ্য-উদ্দেশ্য।

সমূহ/সমূহ

সমূহ বহুত্ব সংখ্যাবচক শব্দ যা বিশেষ্যের আগে বসলে আলাদা আর পরে বসলে একসাথে বসে। তার থেকে ভালো কাজ পাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। তার কাজসমূহ দেখে মনে হচ্ছে সে জিনিয়াস। 

সঙ্গে/সাথে

দুটিই সংস্কৃত সহিত শব্দ থেকে উৎপত্তি হয়েছে। তবে পাঠ্যবইতে ‘সঙ্গে’ ব্যবহার করা হয়েছে।

সপক্ষে/স্বপক্ষে

সপক্ষে : নিজের পক্ষ সমর্থনকারী। পক্ষ অবলম্বনকারী। যেমন : তিনি সবসময় তার সপক্ষে। তার সপক্ষে। স্বপক্ষে : আত্মপক্ষ, স্বদল, নেজর দল, বন্ধুপক্ষ।

সাক্ষর/স্বাক্ষর

সাক্ষর (স+অক্ষর) : ‘স’ অর্থ সহ/সহিত (সস্ত্রী), সমান (সজাতি), সত্তা/সম্ভাবনা/বিদ্যমান (সজীব), অত্যন্ত (সঘন), স্বার্থে (সঠিক, সক্ষম), সক্ষম, অক্ষরযুক্ত, অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন, অল্পশিক্ষিত, শিক্ষাপ্রাপ্ত, শিক্ষিত। অবদান-তিনি বাংলা সাহিত্যে সাক্ষর রেখেছেন। সাক্ষরতা জ্ঞান অর্জন করা দরকার-বাক্যটি ভুল ব্যবহার।

স্বাক্ষর (স্ব+অক্ষর) : ‘স্ব’ অর্থ আত্ম, সয়ং, নিজ, স্ব স্ব। আত্মীয় (স্বজন), নিজের (স্বগৃহ), নিজের সবকিছু (সর্বস্ব), নামসই, দস্তক্ষত। তিনি খাতায় স্বাক্ষর দিয়েছেন।

সপক্ষ/স্বপক্ষ

নিজ পক্ষ সমর্থনকারী, পক্ষালম্বী। যেমন : তিনি সবসময় তার সপক্ষে। সপক্ষপাখি (ডানাআলা পাখি)। স্বপক্ষ অর্থ আত্মপক্ষ, স্বদল, নিজের দল। মিত্রপক্ষ, বন্ধুপক্ষ।

সর্বপরি (মোট) /সর্বোপরি (সকলের ওপরে, সর্বোচ্চ, অধিকন্তু)

সর্বপরি দশ টাকা দাও। সর্বোপরি ব্যাপারটা ভালো না। 

সন/সাল

বাংলা লিখতে সন আর ইংরেজি লিখতে সাল লেখা হয়। যেমন  তিনি ১৪১২ সনে জন্মগ্রহণ করেছেন। তিনি ১৯৭০ সালে জন্মগ্রহণ করেছেন।

সুদ্ধ/শুদ্ধ

সুদ্ধ হলো সকল বা সব আর শুদ্ধ হলো ভালো বা মঙ্গল।

স্বাগত/সুস্বাগত

সুন্দরের সাথে আগতই স্বাগত। তাই সুস্বাগত (সু+সু+আগত) লেখা ঠিক নয়।

সনদ/সনদপত্র

সনদ নিজেই পত্র তাই আবার পত্র লেখার দরকার হয় না।

সাতপাঁচ/সাতসকাল

‘সাত’ সংখ্যা হলেও সংখ্যার অতিরিক্ত অর্থ প্রকাশ করে বলে এটি বাগধারা হয়। যেমন: সাতসকালে (খুব সকাল) উঠেই সে সাতপাঁচ (অন্য কোনো কিছু) না ভেবে দৌড়াতে থাকে।  

স্ব আর স

সহ অর্থ বুঝালে ‘স্ব’ না বসে ‘স’ বসে। ভাইসহ/সভাই। স্বজাতি হলো নিজের জাতি আর সজাতি হলো জাতিসহ।

স্বচ্ছ/সচ্ছল

স্বচ্ছ (পরিষ্কার/টলটলে) আর সচ্ছল (সঙ্গতিপূর্ণ) এক অর্থে ব্যবহৃত হয় না তাই এ দুটি ব্যবহারে সতর্ক হওয়া দরকার। মাছ স্বচ্ছ পানিতেই সচ্ছল জীবনযাপন করে।

সময়জ্ঞাপক শব্দ (পরবর্তীতে/আগামীতে/ইদানীংকাল)

সময় বোঝাতে বাংলায় কিছু সময়জ্ঞাপক শব্দ ব্যবহার করা হয়। এগুলো কখনও বিভক্তির সাথে যুক্ত হয়ে একা বসে আবার কখন অন্য সময় যুক্ত হয়ে বসে। তবে কিছু সময়জ্ঞাপক শব্দ আছে যাদের সাথে ‘তে’ যুক্ত করে ব্যবহার করা হয় যা ঠিক নয়। যেমন : পরবর্তীতে, আগামীতে। কিছু শব্দ সরাসরি সময় প্রকাশ করে। যেমন : সকালে, বিকালে, সন্ধ্যায়, দিনে, রাতে। এদের সাথে আবার ‘বেলা’ও যোগ করা যায়। যেমন : সকালবেলা। পূর্বাহ্ণ অর্থ প্রভাত বা সকাল, অপরাহ্ণ বা পরাহ্ণ অর্থ বিকাল অর্থাৎ দুপুর থেকে সূর্য ডুবার আগপর্যন্ত, মধ্যাহ্ন থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। পরবর্তী অর্থ পরে অবস্থীত। তাই এর সাথে ‘তে’ যুক্ত হয়ে ঠিক সময় প্রকাশ পায় না। তাই পরবর্তীতে শব্দটি ভুল। পরবর্তী সময়/দিন/কাল/বছর বোঝাতে পরবর্তীতে ব্যবহার করা ঠিক নয়।

গত/বিগত : শেষ হয়েছে এমন বা অতীত (গতকাল), প্রাপ্ত (পুঁথিগত), নিহিত (বংশগত), অনুমত (প্রথাগত)। উপসর্গ ‘বি’ যোগে কালশব্দ যেমন কাল/বছর/দিন বসে না। যেমন : গতকাল, বিগতপ্রাণ। গত বছর তিনি ঢাকায় এসেছিলেন। বিগত বছরগুলো ছিল আমার জন্য আশীর্বাদ। গত/বিগত চার বছর পূর্বে তিনি মৃত্যুবরণ করেন-এই বাক্যে গত/বিগত লেখার প্রয়োজন নাই।

‘ইদানীংকাল/সম্প্রতিকাল’ শব্দটি অনেকেই ব্যবহার করে থাকেন যা ঠিক নয়। ইদানীং শব্দের সাথে অন্যকোনো সময়জ্ঞাপক শব্দ বসে না। ইদানীং অর্থ আজকাল বা সম্প্রতি।

সম্প্রতি/অতিসম্প্রতি : সম্প্রতি অর্থ অধুনা, ইদানীং, এইমাত্র, সবে, সবেমাত্র, আজকাল। সম্প্রতি নিজেই ‘অতিমাত্র’ সেখানে ‘অতিসম্প্রতি’ ব্যবহরার অশুদ্ধ।

সমসময়/সমসাময়িক : সমসময় অর্থ ‘একই সময় বা কাল’ যা বিশেষ্য। এর সাথে ইক-প্রত্যয় যুক্ত করে বিশেষণ ‘একই সময়ের বা কলের’ করা হয়। তাই দুটিই শুদ্ধ। তবে সমসাময়িক সময়ের বা সমসাময়িক কালের ব্যবহার অশুদ্ধ।

হচ্ছে/হলো

হচ্ছে আর হলো ব্যবহারে সতর্ক হওয়া দরকার। হচ্ছে কথ্য ব্যবহার। আবার ঘটমান বর্তমান কাল বোঝায়। আর হলো হয়েছিল বোঝায়। আবার অর্থ অর্থে বোঝায়। শুধু তাই না বানানের ক্ষেত্রেও এর বহু ব্যবহার লক্ষ করা যায়। যেমন : হল-হলন্ত, হল-লাঙল, হল-কামরা/কক্ষ, হল-দ্রবীকরণ, হলহল-ঢলঢলে।  

জল হলো পানির প্রতিশব্দ।

হিসাব/হিসেব

হিসাব গণণা করণ আর হিসেব গণণা বাদে অন্য বিষয় বোঝাতে হিসেব ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন : কত টাকা খরচ হয়েছে হিসাব দাও। সে বেহিসাবি। স্বাধীনতা কত দামি তার হিসেব নাই। মায়েল ভালোবাসা হিসেব করা যাবে না।

হতে/থেকে

সংস্কৃত হইতে থেকে উৎপত্তি হয়েছে হতে। যদি ‘থেকে, অবধি, ফলে’ অর্থ প্রকাশ করে তাহলে হতে বা থেকে দুটির একটি ব্যবহার করা যায়। কিন্তু চেয়ে (তুলনা), সময় (মাঝে মাঝে, সময়ে সময়ে, পর পর)-অর্থে ব্যবহার করতে শুধু ‘থেকে’ ব্যভহার করতে হবে। যেমন : বাড়ি হতে যে ছেলিটি বের হয়েছে সে সবার থেকে ছোট।

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]