দুঃসাহসী অভিযাত্রীরা মানুষের চিরন্তন কল্পনার রাজ্য চাঁদের দেশে পৌঁছেছেন এবং মঙ্গলগ্রহেও যাওয়ার জন্য তাঁরা প্রস্তুত হচ্ছেন। উপরের বাক্যটিতে ‘রা’ (অভিযাত্রী+রা), ‘এর’ (মানুষ+এর), ‘র’ (কল্পনা+র), ‘এ’ (মঙ্গলগ্রহ+এ) প্রভৃতি চিহ্নগুলো বিভক্তি বলা হয়। বাক্যে ব্যবহৃত প্রত্যেকটি শব্দই এক একটি পদ। আলোচ্য বাক্যটিতে রয়েছে-
১. বিশেষ্য পদ : অভিযাত্রী, মানুষ, কল্পনা, রাজা, দেশ, মঙ্গলগ্রহ
২. সর্বনাম পদ : তাঁরা
৩. বিশেষণ পদ: দুঃসাহসী, চিরন্তন, প্রস্তুত
৪. ক্রিয়া পদ : পৌঁছেছেন, হচ্ছেন, যাওয়ার (অসমাপিকা ক্রিয়া)
৫. অব্যয় পদ : এবং, জন্য
পদ প্রকরণ
পদ প্রধানত দুই প্রকার। যেমন : সব্যয় পদ ও অব্যয় পদ
সব্যয় পদ চার প্রকার। যেমন : ১. বিশেষ্য ২. সর্বনাম ৩. বিশেষণ ৪. ক্রিয়া
পদ মোট পাঁচ প্রকার। যেমন : ১. বিশেষ্য ২. সর্বনাম ৩. বিশেষণ ৪. ক্রিয়া ৫. অব্যয়
বিশেষ্য পদের সংজ্ঞা ও প্রকরণ
কোনো কিছুর নামকে বিশেষ্য পদ বলে। বাক্যের মধ্যে ব্যবহৃত যে সমস্ত পদ দ্বারা কোনো ব্যক্তি, জাতি, সমষ্টি, বস্তু, স্থান, কাল, বার, কর্ম বা গুণের নাম বোঝানো হয় তাদের বিশেষ্য পদ বলে।
বিশেষ্য পদ ছয় প্রকার। যেমন : ১. নামবাচক বা সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য ২. জাতিবাচক বিশেষ্য
৩. বস্তুবাচক বা দ্রব্যবাচক বিশেষ্য ৪. সমষ্টিবাচক বিশেষ্য ৫. ভাববাচক বিশেষ্য
৬. গুণবাচক বিশেষ্য
নামবাচক বা সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য
যে পদ দ্বারা কোনো ব্যক্তি, ভৌগোলিক স্থান, গ্রন্থ ইত্যাদির নাম বা সংজ্ঞা প্রকাশ পায় তাকে নামবাচক বা সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন :
ক) ব্যক্তির নাম: নজরুল, ওমর, আনিস, মাইকেল
খ) ভৌগোলিক স্থানের : ঢাকা, দিল্লি, লন্ডন, মক্কা
গ) ভৌগোলিক সংজ্ঞা : (নদী, পর্বত, সমুদ্র ইত্যাদি)-মেঘনা, হিমায়ল, আরব সাগর
ঘ) গ্রন্থের নাম : গীতাঞ্জলি, অগ্নিবীণা, দেশে-বিদেশে, বিশ্বনবি
জাতিবাচক বিশেষ্য
যে পদ দ্বারা কোনো একজাতীয় প্রাণী বা পদার্থের সাধারণ নাম বোঝায় তাকে জাতিবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন : মানুষ, গরু, পাখি, গাছ, পর্বত, নদী, ইংরেজ।
বস্তুবাচক বা দ্রব্যবাচক বিশেষ্য
যে পদে কোনো উপাদানবাচক পদার্থের নাম বোঝায় তাকে বস্তুবাচক বা দ্রব্যবাচক বিশেষ্য বলে। এই জাতীয় বস্তুর সংখ্যা ও পরিমাণ নির্ণয় করা যায়। যেমন : বই, খাতা, কলম, থালা, বাটি, মাটি, চাল, চিনি, লবণ, পানি।
সমষ্টিবাচক বিশেষ্য
যে পদে বেশকিছু সংখ্যক ব্যক্তি বা প্রাণীর সমষ্টি বোঝায় তাই সমষ্টিবাচক বিশেষ্য যেমন : সভা, জনতা, সমিতি, পঞ্চায়েত, মাহফিল, ঝাঁক, বহর, দল।
ভাববাচক বিশেষ্য
যে বিশেষ্য পদে কোনো ক্রিয়ার ভাব বা কাজের ভাব প্রকাশিত হয় তাকে ভাববাচক বিশেষ্য বলে। যেমন : গমন (যাওয়ার ভাব বা কাজ), দর্শন (দেখার কাজ), ভোজন (খাওয়ার কাজ), শয়ন (শোয়ার কাজ), দেখা, শোনা।
গুণবাচক বিশেষ্য
যে বিশেষ্য দ্বারা কোনো বস্তুর দোষ বা গুণের নাম বোঝায় তাই গুণবাচক বিশেষ্য। যেমন :
মধুর মিষ্টত্বের গুণ-মধুরতা তরল দ্রব্যের গুণ-তারল্য তিক্ত দ্রব্যের দোষ বা গুণ-তিক্ততা তরুণের গুণ-তারুণ্য
এরূপ : সৌরভ, স্বাস্থ্য, যৌবন, সুখ, দুঃখ।
সর্বনাম পদের সংজ্ঞা ও প্রকরণ
বিশেষ্যের পরিবর্তে যে পদ ব্যবহৃত হয় তাকে সর্বনাম পদ বলে। সর্বনাম সাধারণত ইতোপূর্বে ব্যবহৃত বিশেষ্যের প্রতিনিধি স্থানীয় শব্দ। যেমন : হস্তী প্রাণিজগতের সর্ববৃহৎ প্রাণী। তার শরীরটি যেন বিরাট এক মাংসের স্তুপ। দ্বিতীয় বাক্যে ‘তার’ শব্দটি প্রথম বাক্যের ‘হস্তী’ বিশেষ্য পদটির প্রতিনিধি স্থানীয় শব্দরূপে ব্যবহৃত হয়েছে। তাই, ‘তার’ শব্দটি সর্বনাম পদ। বিশেষ্য পদ অনুক্ত থাকলেও ক্ষেত্রবিশেষে বিশেষ্য পদের পরিবর্তে সর্বনাম পদ ব্যবহৃত হতে পারে। যেমন :
ক) যারা দেশের ডাকে সাড়া দিতে পারে তারাই তো সত্যিকারের দেশপ্রেমিক।
খ) ধান ভানতে যারা শিবের গীত গায় তারা স্থির লক্ষে পৌঁছেতে পারে না।
বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত সর্বনামকে ১০ ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন :
১. ব্যক্তিবাচক বা পুরুষবাচক : আমি, আমরা, তুমি, তোমরা, সে, তারা, তাহারা, তিনি, তাঁরা, এ, এরা, ও, ওরা
২. আত্মবাচক : স্বয়ং, নিজে, খোদ, আপনি
৩. সামীপ্যবাচক: এ, এই, এরা, ইহারা, ইনি
৪. দূরত্ববাচক : ঐ, ঐসব ইত্যাদি
৫. সাকুল্যবাচক : সব, সকল, সমুদয়, তাবৎ
৬. প্রশ্নবাচক : কে, কি, কী, কোন, কাহার, কার, কিসে
৭. অনির্দিষ্টতাজ্ঞাপক : কোন, কেহ, কেউ, কিছু
৮. ব্যতিহারিক : আপনা আপনি, নিজে নিজে, আপসে, পরস্পর
৯. সংযোগজ্ঞাপক : যে, যিনি, যাঁরা, যারা, যাহারা
১০. অন্যাদিবাচক : অন্য, অপর, পর
সর্বনামের পুরুষের সংজ্ঞা ও প্রকরণ
‘পুরুষ’ একটি পারিভাষিক শব্দ। বিশেষ্য, সর্বনাম ও ক্রিয়ারই পুরুষ আছে। বিশেষণ ও অব্যয়ের পুরুষ নাই। যে কাজ করে অর্থাৎ কর্তাই পুরুষ।
ব্যাকরণে পুরুষ তিন প্রকার। যেমন :
১. উত্তম পুরুষ : স্বয়ং বক্তাই উত্তম পুরুষ। আমি, আমরা, আমাকে, আমাদের ইত্যাদি সর্বনাম শব্দ উত্তম পুরুষ।
২. মধ্যম পুরুষ: প্রত্যক্ষভাবে উদ্দিষ্ট ব্যক্তি বা শ্রোতাই মধ্যম পুরুষ। তুমি, তোমরা, তোমাকে, তোমাদের, তোমাদিগকে, আপনি, আপনারা, আপনার, আপনাদের প্রভৃতি সর্বনাম শব্দ মধ্যম পুরুষ।
৩. নাম পুরুষ : অনুপস্থিত অথবা পরোভাবে উদ্দিষ্ট ব্যক্তি, বস্তু বা প্রাণীই নাম পুরুষ। সে, তারা, তাহারা, তাদের, তাহাকে, তিনি, তাঁকে, তাঁরা, তাঁদের প্রভৃতি নাম পুরুষ। সমস্ত বিশেষ্য শব্দই নাম পুরুষ।
ব্যক্তিবাচক সর্বনামের রূপ
১. সাধারণ রূপ
উত্তম পুরুষ : আমি, আমরা, আমাকে, আমাদিগকে, আমার, আমাদের, কবিতায় : মোর, মোরা
মধ্যম পুরুষ : তুমি, তোমরা, তোমাকে, তোমাদিগকে, তোমার, তোমাদের
নাম পুরুষ : সে, তারা, তাহারা, তাকে, তাহাকে
২. সম্ভ্রমাত্মক রূপ
মধ্যম পুরুষ : আপনি, আপনারা, আপনাকে, আপনার, আপনাদের
নাম পুরুষ : তিনি, তাঁরা, তাঁহারা, তাঁদের, তাঁহাদের, তাঁহাদিগকে, তাঁদেরকে, তাঁহাকে, তাঁকে, ইনি, এঁর, এঁরা, ইহাদের, এঁদের, ইহাকে এঁকে, উনি, ওঁর, ওঁরা, ওঁদের
৩. তুচ্ছার্থক বা ঘনিষ্ঠতাজ্ঞাপক রূপ
নাম পুরুষ : ইহা, ইহারা, এই, এ, এরা, উহা, উহারা, ও, ওরা, ওদের
সর্বনামের বিভক্তিগ্রাহী রূপ
বাংলা সর্বনামসমূহ কর্তৃকারক ভিন্ন অন্যান্য কারকে বিভক্তিযুক্ত হওয়ার পূর্বে একটি বিশেষ রূপ পরিগ্রহ করে। সর্বনামের এ রূপটিকে বিভক্তিগ্রাহী রূপ বলা হয়। কর্তৃকারকে সর্বনামের মূল রূপটিই ব্যবহৃত হয় এবং একে প্রথমা বিভক্তিযুক্ত একবচন ধরা হয়। যেমন :
কর্তৃকারকে প্রথমার একবচন অন্যান্য কারকে বিভক্তিগ্রাহী রূপ
সাধারণ সম্ভ্রমাত্মক তুচ্ছার্থক সম্ভ্রমাত্মক তুচ্ছার্থক
আমি
তুমি আপনি তুই আপনা তোমা, তো
সে তিনি তাঁহা, তাঁ তাহা, তা
যে যিনি যাঁহা, যাঁ যাহা, যা
ইনি এ ইহা, এ ইহা, এ
উনি উহা ওঁ ও
কে, কি, কী কে, কি, কী কা
সর্বনামের বিশিষ্ট প্রয়োগ
১. বিনয় প্রকাশ: বিনয় প্রকাশে উত্তম পুরুষের একবচনে দীন, অধম, বান্দা, সেবক, দাস প্রভৃতি শব্দ ব্যবহৃত হয়। যেমন : ‘আজ্ঞা কর দাসে, শাস্তি নরাধমে’। ‘দীনের আরজ’।
২. ছন্দবদ্ধ কবিতা : ছন্দবদ্ধ কবিতায় সাধারণত ‘আমার’ স্থানে মম, ‘আমাদের’ স্থানে ‘মোদের’ এবং ‘আমরা’ স্থানে ‘মোরা’ ব্যবহৃত হয়। যেমন : কে বুঝিবে ব্যথা মম। মোদের গরব, মোদের আশা, আ মরি। বাংলা ভাষা’। ক্ষুদ্র শিশু মোরা, করি তোমারি বন্দনা।
৩. উপাস্যের প্রতি ভক্তি : উপাস্যের প্রতি সাধারণত ‘আপনি’ স্থানে ‘তুমি’ প্রযুক্ত হয়। যেমন : (উপাস্যের প্রতি ভক্ত) প্রভু, তুমি রক্ষা কর এ দীন সেবকে।
৪. অভিনন্দনপত্র: অভিনন্দনপত্র রচনায়ও অনেক সময় সম্মানিত ব্যক্তিকে ‘তুমি’ সম্বোধন করা হয়।
তুমি : ঘনিষ্ঠজন, আপনজন বা সমবয়স্ক সাথীদের প্রতি ব্যবহার্য।
তুই : তুচ্ছার্থে ব্যবহৃত হয় এবং ঘনিষ্ঠতা বোঝাতেও আমরা তাই ব্যবহার করি।
সর্বনামে বিশেষ দ্রষ্টব্য/জ্ঞাতব্য
১. চলিত ভাষা : চলিত ভাষায় যেসব স্থানে সর্বনাম বসে সেসব হলো:
ক) তুচ্চার্থে : তাহা স্থানে তা, যাহা স্থানে যা, কাহা স্থানে কা, ইহা স্থানে এ, উহা স্থানে ও
খ) সম্ভ্রমার্থে (এগুলোর সাথে একটি চন্দ্রবিন্দু সংযোজিত হয়) :
তাহা+দের=তাহাদের(সাধু)>তাদের(চলিত),(সম্ভ্রমার্থে)তাঁহা+দের=তাঁহাদের(সাধু)>তাঁদের(চলিত)
২. করণ কারক : করণ কারকে অনুসর্গ ব্যবহারের পূর্বে মূল সর্বনাম শব্দের সঙ্গে র, এর বা কে বিভক্তি যোগ করে নিতে হয়। যেমন : তাহাকে দিয়া, তাকে দিয়ে, তাহার দ্বারা, তার দ্বারা আমাকে দিয়ে
৩. ষষ্ঠী বিভক্তি : ষষ্ঠী বিভক্তি অর্থে ঈয়-প্রত্যয়যুক্ত সর্বনামজাত বিশেষণ শুধু তৎসম সর্বনামের ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়। যেমন: মৎ+ঈয় = মদীয়, ভবৎ+ঈয় = ভবদীয়, তৎ+ঈয় = তদীয়
৪. ষষ্ঠী বিভক্তি : ‘কী’ সর্বনামটি কোনো কোনো কারকে ‘কিসে’ বা ‘কিসের’ (ষষ্ঠী বিভক্তিযুক্ত) রূপ গ্রহণ করে। যেমন: কী+দ্বারা = কিসের দ্বারা, কী+থেকে = কিসে থেকে কিসের থেকে
বিশেষণ পদের সংজ্ঞা
যে পদ বিশেষ্য, সর্বনাম ও ক্রিয়াপদের দোষ, গুণ, অবস্থা, সংখ্যা, পরিমাণ ইত্যাদি প্রকাশ করে তাকে বিশেষণ পদ বলে। যমন : চলন্ত গাড়ি : বিশেষ্যের বিশেষণ। করূণাময় তুমি : সর্বনামের বিশেষণ। দ্রুত চল : ক্রিয়া বিশেষণ
বিশেষণ পদের প্রকরণ
বিশেষণ দুই ভাগে বিভক্ত। যেমন :
১. নাম বিশেষণ: যে বিশেষণ পদ কোনো বিশেষ্য বা সর্বনাম পদকে বিশেষিত করে তাকে নাম বিশেষণ বলে।
২. ভাববিশেষণ : যে পদ বিশেষ্য ও সর্বনাম ভিন্ন অন্য পদকে বিশেষিত করে তাই ভাব বিশেষণ।
নাম বিশেষণ
যে বিশেষণ পদ কোনো বিশেষ্য বা সর্বনাম পদকে বিশেষিত করে তাকে নাম বিশেষণ বলে। যেমন:
বিশেষ্যের বিশেষণ : সুস্থ সবল দেহকে কে না ভালোবাসে?
সর্বনামের বিশেষণ : সে রূপবান ও গুণবান।
নাম বিশেষণকে কয়েক ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন :
ক) রূপবাচক : নীল আকাশ, সবুজ মাঠ, কালো মেঘ
খ) গুণবাচক : চৌকস লোক, দক্ষ কারিগর, ঠান্ডা হাওয়া
গ) অবস্থাবাচক : তাজা মাছ, রোগা ছেলে, খোঁড়া পা
ঘ) সংখ্যাবাচক : হাজার লোক, দশ দশা, শ টাকা
ঙ) ক্রমবাচক : দশম শ্রেণি, সত্তর পৃষ্ঠা, প্রথমা কন্যা
চ) পরিমাণবাচক : বিঘাটেক জমি, পাঁচ শতাংশ ভুমি, হাজার টনী জাহাজ, এক কেজি চাল, দুকিলোমিটার রাস্তা
ছ) অংশবাচক : অর্ধেক সম্পত্তি, ষোল আনা দখল, সিকি পথ
জ) উপাদানবাচক : বেলে মাটি, মেটে কলসি, পাথুরে মুর্তি
ঝ) প্রশ্নবাচক : কতদূর পথ? কেমন অবস্থা?
ঞ) নির্দিষ্টতাজ্ঞাপক : এই লোক, সেই ছেলে, ছাব্বিশে মার্চ
ভাববিশেষণ
যে পদ বিশেষ্য ও সর্বনাম ভিন্ন অন্য পদকে বিশেষিত করে তাই ভাব বিশেষণ। ভাব বিশেষণ চার প্রকার। যেমন :
১. ক্রিয়া বিশেষণ : যে পদ ক্রিয়া সংঘটনের ভাব, কাল বা রূপ নির্দেশ করে তাকে ক্রিয়া বিশেষণ বলে। যেমন :
ক) ক্রিয়া সংগঠনের ভাব : ধীরে ধীরে বায়ু বয়।
খ) ক্রিয়া সংগঠনের কাল : পরে একবার এসো।
২. বিশেষণীয় বিশেষণ : যে পদ নাম বিশেষণ অথবা ক্রিয়া বিশেষণকে বিশেষিত করে তাকে বিশেষণীয় বিশেষণ বলে। যেমন :
ক) নাম বিশেষণের বিশেষণ : সামান্য একটু দুধ দাও। এ ব্যাপারে সে অতিশয় দুঃখিত।
খ) ক্রিয়া বিশেষণের বিশেষণ : রকেট অতি দ্রুত চলে।
৩. অব্যয়ের বিশেষণ : যে ভাব বিশেষণ অব্যয় পদ অথবা অব্যয় পদের অর্থকে বিশেষিত করে তাকে অব্যয়ের বিশেষণ বলে। যেমন : ধিক্ তারে, শত ধিক্ নির্লজ্জ যে জন।
৪. বাক্যের বিশেষণ : কখনো কখনো কোনো বিশেষণ পদ একটি সম্পূূর্ণ বাক্যকে শেষিত করতে পারে তখন তাকে বাক্যের বিশেষণ বলা হয়। যেমন: দুর্ভাগ্যক্রমে দেশ আবার নানা সমস্যাজালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। বাস্তবিকই আজ আমাদের কঠিন পরিশ্রমের প্রয়োজন।
বিভিন্নভাবে বিশেষণ গঠন করা যায়। যেমন :
ক) ক্রিয়াজাত : হারানো সম্পত্তি, খাবার পানি, অনাগত দিন
খ) অব্যয়জাত : আচ্ছা মানুষ, উপরি পাওনা, হঠাৎ বড়লোক
গ) সর্বনাম জাত : কবেকার কথা, কোথাকার কে, স্বীয় সম্পত্তি
ঘ) সমাসসিদ্ধ : বেকার, নিয়ম-বিরুদ্ধ, জ্ঞানহারা চৌচালা ঘর
ঙ) বীপ্সামূলক : হাসিহাসি মুখ, কাঁদকাঁদ চেহারা, ডুবুডুবু নৌকা
চ) অনুকার অব্যয়জাত: কনকনে শীত, শনশনে হাওয়া, ধিকিধিকি আগুন, টসটসে ফল, তকতকে মেঝে
ছ) কৃদন্ত : কৃতী সন্তান, জানাশোনা লোক, পায়েচলা পথ, হৃত সম্পত্তি, অতীত কাল
জ) তদ্ধিতান্ত : জাতীয় সম্পদ, নৈতিক বল, মেঠো পথ
ঝ) উপসর্গযুক্ত : নিখুঁত কাজ, অপহৃত সম্পদ, নির্জলা মিথ্যে
ঞ) বিদেশি : নাস্তানাবুদ অবস্থা, লাওয়ারিশ মাল, লাখেরাজ সম্পত্তি, দরপত্তনি তালুক
বিশেষণের অতিশায়নের সংজ্ঞা ও প্রকরণ
বিশেষণ পদ যখন দুই বা ততোধিক বিশেষ্য পদের মধ্যে গুণ, অবস্থা, পরিমাণ প্রভৃতি বিষয়ে তুলনায় একের উৎকর্ষ বা অপকর্ষ বুঝিয়ে থাকে তখন তাকে বিশেষণের অতিশায়ন বলে। যেমন: যমুনা একটি দীর্ঘ নদী, পদ্মা দীর্ঘতর কিন্তু মেঘনা বাংলাদেশের দীর্ঘতম নদী। সূর্য, পৃথিবী ও চন্দ্রের মধ্যে তুলনায় সূর্য বৃহত্তম, পৃথিবী চন্দ্রের চেয়ে বৃহত্তর এবং চন্দ্র পৃথিবী অপেক্ষা ক্ষুদ্রতর।
বিশেষণের অতিশায়ন দুই প্রকার। যেমন : বাংলা শব্দের অতিশায়ন ও তৎসম শব্দের অতিশায়ন
বাংলা শব্দের অতিশায়ন
১. দুয়ের মধ্যে অতিশায়নে
বাংলা শব্দের অতিশায়নে দুয়ের মধ্যে চাইতে, চেয়ে, হইতে, হতে, অপেক্ষা, থেকে ইত্যাদি শব্দ ব্যবহৃত হয়। এসব ক্ষেত্রে দুয়ের মধ্যে তারতম্য বোঝাতে প্রথম বিশেষ্যটি প্রায়ই ষষ্ঠী বিভক্তিযুক্ত হয়ে থাকে এবং মূল বিশেষণের পর কোনো পরিবর্তন সাধিত হয় না। যেমন : গরুর থেকে ঘোড়ার দাম বেশি। বাঘের চেয়ে সিংহ বলবান।
২. বহুর মধ্যে অতিশায়ন
অনেকের মধ্যে একের উৎকর্ষ বা অপকর্ষ বোঝাতে মূল বিশেষণের কোনো পরিবর্তন হয় না। মূল বিশেষণের পূর্বে সবচাইতে, সবচেয়ে, সব থেকে, সর্বাপেক্ষা, সর্বাধিক প্রভৃতি শব্দ ব্যবহার হয়। যেমন : নবম শ্রেণির ছাত্রদের মধ্যে করিম সবচেয়ে বুদ্ধিমান। ভাইদের মধ্যে বিমলই সবচাইতে বিচক্ষণ। পশুর মধ্যে সিংহ সর্বাপেক্ষা বলবান।
৩. দুটি বস্তুর মধ্যে অতিশায়ন
দুটি বস্তুর মধ্যে অতিশায়নে জোর দিতে হলে মূল বিশেষণের আগে অনেক, অধিক, বেশি, অল্প, কম, অধিকতর প্রভৃতি বিশেষণীয় বিশেষণ যোগ করতে হয়। যেমন : পদ্মফুল গোলাপের চাইতে অনেক সুন্দর। ঘিয়ের চেয়ে দুধ বেশি উপকারী। কমলার চাইতে পাতিলেবু অল্প ছোট।
৪. ষষ্ঠী বিভক্তিযুক্ত অতিশায়ন
কখনো কখনো ষষ্ঠী বিভক্তিযুক্ত শব্দে ষষ্ঠী বিভক্তিই চেয়ে, থেকে প্রভৃতি শব্দের কার্যসাধন করে। যেমন : এ মাটি সোনার বাড়া।
তৎসম শব্দের অতিশায়ন
১. দুয়ের মধ্যে অতিশায়ন
তৎসম শব্দের অতিশায়নে দুয়ের মধ্যে ‘তর’ এবং বহুর মধ্যে ‘তম’ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে থাকে। যেমন: গুরু-গুরুতর-গুরুতম। দীর্ঘ-দীর্ঘতর-দীর্ঘতম। কিন্তু ‘তর’ প্রত্যয়যুক্ত বিশেষণটি শ্রুতিকটু হলে ‘তর’ প্রত্যয় যোগ না করে বিশেষণের পূর্বে ‘অধিকতর’ শব্দটি যোগ করতে হয়। যেমন : অশ্ব হস্তী অপেক্ষা অধিকতর সুশ্রী।
২. বহুর মধ্যে অতিশায়ন
বহুর মধ্যে অতিশায়নে তুলনীয় বস্তুর উল্লেখ না করেও ‘তম’ প্রত্যয় যুক্ত হতে পারে। যেমন : মেঘনা বাংলাদেশের দীর্ঘতম নদী। দেশসেবার মহত্তম ব্রতই সৈনিকের দীক্ষা।
৩. দুয়ের মধ্যে তুলনায় অতিশায়ন (ঈয়স-প্রত্যয় ও ইষ্ঠ-প্রত্যয়)
তৎসম শব্দের অতিশায়নে দুয়ের মধ্যে তুলনায় ঈয়স-প্রত্যয় এবং বহুর মধ্যে তুলনায় ইষ্ঠ-প্রত্যয় যুক্ত হয়। বাংলায় সাধারণত ঈয়স-প্রত্যয়ান্ত শব্দগুলো ব্যবহৃত হয় না। যেমন :
মূল বিশেষণ দুয়ের তুলনায় বহুর তুলনায়
লগু লঘিয়ান লঘিষ্ঠ
অল্প কনীয়ান (বাংলায় ব্যবহার নাই) কনিষ্ঠ
বৃদ্ধ জ্যায়ান জ্যেষ্ঠ
শ্রেয় শ্রেয়ান শ্রেষ্ঠ
উদাহরণ : তিন ভাইয়ের মধ্যে রহিমই জ্যেষ্ঠ এবং করিম কনিষ্ঠ। সংখ্যাগুলোর লঘিষ্ঠ সাধারণ গুণিতক বের কর।
৪. ঈয়স-প্রত্যয়ান্ত শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ রূপ : ঈয়স-প্রত্যয়ান্ত কোনো কোনো শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ রূপ বাংলায় প্রচলিত আছে। যেমন : ভূয়সী প্রশংসা।
একই পদের বিশেষ্য ও বিশেষণ রূপে প্রয়োগ
বাংলা ভাষায় একই পদ বিশেষ্য ও বিশেষণ রূপে ব্যবহৃত হতে পারে। যেমন :
১. ভালো
বিশেষণ রূপে- ভালো বাড়ি পাওয়া কঠিন।
বিশেষ্য রূপে- আপন ভালো সবাই চায়।
২. মন্দ
বিশেষণ রূপে- মন্দ কথা বলতে নাই।
বিশেষ্য রূপে- এখানে কী মন্দটা তুমি দেখলে?
৩. পুণ্য
বিশেষণ রূপে- তোমার এ পূণ্য প্রচো সফল হোক।
বিশেষ্য রূপে- পূণ্যে মতি হোক।
৪. নিশীথ
বিশেষণ রূপে- নিশীথ রাতে বাজছে বাঁশি।
বিশেষ্য রূপে- গভীর নিশীথে প্রকৃতি সুপ্ত।
৫. শীত
বিশেষণ রূপে- শীতকালে কুয়াশা পড়ে।
বিশেষ্য রূপে- শীতের সকালে চারদিক কুয়াশায় অন্ধকার।
৬. সত্য
বিশেষণ রূপে- সত্য পথে থেকে সত্য কথা বল।
বিশেষ্য রূপে- এ এক বিরাট সত্য।
অব্যয় পদের সংজ্ঞা ও প্রকরণ
ন ব্যয়=অব্যয়। যার ব্যয় বা পরিবর্তন হয় না অর্থাৎ যা অপরিবর্তনীয় শব্দ তাই অব্যয়। অব্যয় শব্দের সাথে কোনো বিভক্তিচিহ্ন যুক্ত হয় না, সেগুলোর একবচন বা বহুবচন হয় না এবং সেগুলোর স্ত্রী ও পুরুষবাচকতা নির্ণয় করা যায় না।
যে পদ সর্বদা অপরিবর্তনীয় থেকে কখনো বাক্যের শোভা বধরন করে, কখনো একাধিক পদের, বাক্যাংশের বা বাক্যের সংযোগ বা বিয়োগ সম্বন্ধ ঘটায় তাকে অব্যয় পদ বলে।
উৎস বা উৎপত্তি অনুসারে বাংলা ভাষায় তিন প্রকার অব্যয় শব্দ/পদ রয়েছে। যেমন :
১. বাংলা অব্যয় শব্দ : আর, আবার, ও, হ্যাঁ, না ইত্যাদি।
২. তৎসম অব্যয় শব্দ : যদি, যথা, সদা, সহসা, হঠাৎ, অর্থাৎ, দৈবাৎ, বরং, পুনশ্চ, আপাতত, বস্তুর ইত্যাদি। ‘এবং ও ‘সুতরাং’ তৎসম শব্দ হলেও বাংলায় এগুলোর অর্থ পরিবর্তিত হয়েছে। সংস্কৃতে ‘এবং’ শব্দের অর্থ এমন, আর ‘সুতরাং’ অর্থ অত্যন্ত, অবশ্য। কিন্তু=ও (বাংলা), সুতরাং = অতএব (বাংলা)
৩. বিদেশি অব্যয় শব্দ : আলবত, বহুত, খুব, শাবাণ, খাসা, মাইরি, মারহাবা ইত্যাদি।
ব্যবহার অনুসারে অব্যয় প্রধানত চার প্রকার। যেমন :
১. সমুচ্চয়ী অব্যয় (সংযোজক, বিয়োজক, সংকোচক)
২. অনন্বয়ী অব্যয়
৩. অনুসর্গ (বিভক্তিসূচক, বিভক্তিসম)
৪. অনুকার বা ধ্বন্যাত্মক অব্যয়
বিবিধ উপায়ে গঠিত অব্যয় শব্দ
১. একাধিক অব্যয় শব্দযোগে : কদাপি, নতুবা, অতএব, অথবা ইত্যাদি।
২. আনন্দ বা দুঃখ প্রকাশক একই শব্দের দুইবার প্রয়োগে : ছি ছি, ধিক্ ধিক্ বেশ ইত্যাদি।
৩. দুটি ভিন্ন শব্দযোগে : মোটকথা, হয়তো, যেহেতু, নইলে
৪. অনুকার শব্দযোগে : কুহু কুহু, গুন গুন ঘেউ ঘেউ, শন শন, ছল ছল, কন কন ইত্যাদি।
সমুচ্চয়ী অব্যয়
যে অব্যয় পদ একটি বাক্যের সঙ্গে অন্য একটি বাক্যের অথবা বাক্যস্থিত একটি পদের সঙ্গে অন্য একটি পদের সংযোজন, বিয়োজন বা সংকোচন ঘটায় তাকে সমুচ্চয়ী অব্যয় বা সম্বন্ধবাচক অব্যয় বলে।
ক) সংযোজক অব্যয়
১. উচ্চপদ ও সামাজিক মর্যাদা সকলেই চায়। এখানে ‘ও’ অব্যয়টি বাক্যস্থিত দুটি পদের সংযোজন করছে।
২. তিনি সৎ, তাই সকলেই তাঁকে শ্রদ্ধা করে। এখানে ‘তাই’ অব্যয়টি দুটি বাক্যের সংযোজন ঘটাচ্ছে। আর, অধিকন্তু, সুতরাং শব্দগুলোও সংযোজক অব্যয়।
খ) বিয়োজক অব্যয়
১. হাসেম কিংবা কাসেম এর জন্য দায়ী। এখানে ‘কিংবা’ অব্যয়টি দুটি পদের (হাসেম এবং কাসেমের) বিয়োগ সম্বন্ধ ঘটাচ্ছে।
২. ‘মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পাতন’। এখানে ‘কিংবা’ অব্যয়টি দুটি বাক্যাংশের বিয়োজক। আমরা চেষ্টা করেছি বটে কিন্তু কৃতকার্য হতে পারিনি। এখানে ‘কিন্তু’ অব্যয় দুটি বাক্যের বিয়োজক। বা, অথবা, নতুবা, না হয়, নয়তো শব্দগুলো বিয়োজক অব্যয়।
গ) সংকোচক অব্যয় : তিনি বিদ্বান অথচ সৎ ব্যক্তি নন। এখানে ‘অথচ’ অব্যয়টি দুটি বাক্যের মধ্যে ভাবের সংকোচ সাধন করেছে। কিন্তু, বরং শব্দগুলোও সংকোচক অব্যয়।
অনুগামী সমুচ্চয়ী অব্যয় : যে, যদি, যদিও, যেন প্রভৃতি কয়েকটি শব্দ সংযোজক অব্যয়ের কাজ করে থাকে। তাই তাদের অনুগামী সমুচ্চয়ী অব্যয় বলে। যেমন :
১. তিনি এত পরিশ্রম করেন যে তার স্বাস্থ্যভঙ্গ হওয়ার আশঙ্কা আছে।
২. আজ যদি (শর্তবাচক) পানি, একবার সেখানে যাব।
৩. এভাবে চেষ্টা করবে যেন কৃতকার্য হতে পার।
অনন্বয়ী অব্যয়
যে সকল অব্যয় বাক্যের অন্য পদের সঙ্গে কোনো সম্বন্ধ না রেখে স্বাধীনভাবে নানাবিধ ভাব প্রকাশে ব্যবহৃত হয় তাদের অনন্বয়ী অব্যয় বলে। যেমন :
ক) উচ্ছ্বাস প্রকাশে: মরি মরি! কী সুন্দর প্রভাতের রূপ।
খ) স্বীকৃতি বা অস্বীকৃতি জ্ঞাপনে : হ্যাঁ, আমি যাব। না, আমি যাব না।
গ) সম্মতি প্রকাশে: আমি আজ আলবত যাব। নিশ্চয়ই পারব।
ঘ) অনুমোদনবাচকতায়: আপনি যখন বলছেন, বেশ তো আমি যাব।
ঙ) সমর্থনসূচক জবাবে: আপনি যা জানেন তা তো ঠিকই বটে।
চ) যন্ত্রণা প্রকাশে: উঃ! পায়ে বড্ড লেগেছে। নাঃ! এ ক অসহ্য।
ছ) ঘৃণা বা বিরক্তি প্রকাশে: ছি ছি! তুমি এত নীচ। কী আপদ! লোকটা যে পিছু ছাড়ে না।
জ) সম্বোধনে : ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে।
ঝ) সম্ভাবনায় : সংশয়ে সংকল্প সদা টলে, পাছে লোকে কিছু বলে।
ঞ) বাক্যালংকার অব্যয়: কয়েকটি অব্যয় শব্দ নিরর্থকভাবে ব্যবহৃত হয়ে বাক্যের শোভাবধরন করে,
১. কত না হারানো স্মৃতি জাগে আজও মনে।
২. হায়রে ভাগ্য, হায়রে লজ্জা, কোথায় সভা, কোথায় সজ্জা।
অনুসর্গ অব্যয়
যে সকল অব্যয় শব্দ বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের বিভক্তির ন্যায় বসে কারকবাচকতা প্রকাশ করে তাদের অনুসর্গ অব্যয় বলে। যেমন : ওকে দিয়ে এ কাজ হবে না। (দিয়ে অনুসর্গ অব্যয়)। অনুসর্গ অব্যয় ‘পদান্বয়ী অব্যয়’ নামেও পরিচিত।
অনুসর্গ অব্যয় দুই প্রকার। যেমন : বিভক্তিসূচক অনুসর্গ অব্যয় ও বিভক্তিসম অনুসর্গ অব্যয়
অনুকার অব্যয়
যে সকল অব্যয় অব্যক্ত রব, শব্দ বা ধ্বনির অনুকরণে গঠিত হয় তাদের অনুকার বা ধ্বন্যাত্মক অব্যয় বলে। যেমন :
বজ্রের ধ্বনি : কড় কড়, মেঘের গর্জন : গুড় গুড়, বৃষ্টির তুমূল শব্দ : ঝম ঝম, সিংহের গর্জন : গর গর
স্রোতের ধ্বনি : কল কল, ঘোড়ার ডাক : চিহি চিহি, বাতাসের গতি : শন শন, কাকের ডাক : কা কা
শুষ্ক পাতার শব্দ: মর মর, কোকিলের ডাক : কুহু কুহু, নুপূরের আওয়াজ: রুম ঝুম, চুড়ির শব্দ : টুং টাং
অনুভূতিমূলক অব্যয়ও অনুকার অব্যয়ের শ্রেণিভূক্ত। যেমন: ঝাঁ ঝাঁ (প্রখরতাবাচক), খাঁ খাঁ (শূন্যতাবাচক), কচ কচ, কট কট, টল মল, ঝল মল, চক চক, ছম ছম, টন টন, খট খট ইত্যাদি।
অব্যয় বিশেষণ
কতগুলো অব্যয় বাক্যে ব্যবহৃত হলে নামবিশেষণ, ক্রিয়াবিশেষণ ও বিশেষণীয় বিশেষণের অর্থবাচকতা প্রকাশ করে থাকে। এদের অব্যয় বিশেষণ বলা হয়। যেমন:
নামবিশেষণ : অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ
ভাব বিশেষণ : আবার যেতে হবে
ক্রিয়াবিশেষণ : অনত্র চলে যায়
নিত্য সম্বন্ধীয় অব্যয়
কতগুলো যুগ্মশব্দ পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল সেগুলো নিত্য সম্বন্ধীয় অব্যয় রূপে পরিচিত। যেমন : যেমন, তথা, যত-তত, যখন-তখন, যেমন- তেমন, যেরূপ-সেরূপ ইত্যাদি। যথা ধর্ম তথা জয়। যত গর্জে তত বর্ষে না।
ত-প্রত্যয়ান্ত অব্যয় (সংস্কৃত তস্)
ত-প্রত্যয়ান্ত অব্যয় বাংলায় ব্যবহৃত হয়। যেমন : ধর্মত বলছি। দুর্ভাগ্যবশত পরীক্ষায় ফেল করেছি। অন্তত তোমার যাওয়া উচিত। জ্ঞানত মিথ্যা বলিনি।
একই অব্যয় শব্দের বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার
১. আর
পুনরাবৃত্তির অর্থে: ও দিকে আর যাব না।
নির্দেশ অর্থে : বল, আর কী চাও?
নিরাশায় : সে দিন কি আর আসবে?
বাক্যালংকারে : আর কি বাজবে বাঁশি?
২. ও
সংযোগ অর্থে : করিম ও রহিম দুই ভাই।
সম্ভাবনায়: আজ বৃষ্টি হতেও পারে।
তুলনায় : ওকে বলাও যা, না বলা তা।
স্বীকৃতি জ্ঞাপনে : খেতে যাবে? গেলেও হয়।
হতাশা জ্ঞাপনে : এত চেষ্টাতেও হলো না।
৩. কি/কী
জিজ্ঞাসায়: তুমি কি বাড়ি যাচ্ছ?
বিরক্তি প্রকাশে: কী বিপদ, লোকটা যে পিছু ছাড়ে না।
সাকুল্য অর্থে: কি আমীর কি ফকির, একদিন সকলকেই যেতে হবে।
বিড়ম্বনা প্রকাশে: তোমাকে নিয়ে কী মুশকিলেই না পড়লাম।
৪. না
নিষেধ অর্থে: এখন যেও না।
বিকল্প প্রকাশে : তিনি যাবেন, না হয় আমি যাব।
আদর প্রকাশে বা অনুরোধে: আর একটি মিষ্টি খাও না খোকা। আর একটা গান গাও না।
সম্ভাবনায়: তিনি না কি ঢাকায় যাবেন।
বিস্ময়ে: কী করেই না দিন কাটাচ্ছ।
তুলনায় : ছেলে তো না, যেন একটা হিটলার।
৫. যেন
উপমায় : মুখ যেন পদ্মফুল।
প্রার্থনায় : খোদা যেন তোমার মঙ্গল করেন।
তুলনায় : ইস্, ঠান্ডা, যেন বরফ।
অনুমানে: লোকটা যেন আমার পরিচিত মনে হলো।
সতকরকরণে: সাবধানে চল, যেন পা পিছলে না পড়।
ব্যঙ্গ প্রকাশে: ছেলে তো নয় যেন ননীর পুতুল।
ক্রিয়াপদের সংজ্ঞা, প্রকরণ ও গঠন
১. কবির বই পড়ছে।
২. তোমরা আগামী বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে।
‘পড়ছে’ ও ‘দেবে’ পদ দুটো দ্বারা কোনো কার্য সম্পাদন করা বোঝাচ্ছে বলে এরা ক্রিয়াপদ।
যে পদের দ্বারা কোনো কার্য সম্পাদন করা বোঝায় তাকে ক্রিয়াপদ বলে।
বাক্যের অন্তর্গত যে পদ দ্বারা কোনো পুরুষ কর্তৃক নির্দিষ্ট কালে কোনো কার্যের সংঘটন বোঝায় তাকে ক্রিয়াপদ বলে। ওপরের প্রথম উদাহরণে নাম পুরুষ ‘কবির’ কর্তৃক বর্তমান কালে ‘পড়া’ কার্যের সংঘটন প্রকাশ করছে। দ্বিতীয় উদাহরণে মধ্যম পুরুষ, ‘তোমরা’ ভবিষ্যত ক্রিয়া সংঘটনের সম্ভাবনা প্রকাশ করছে।
বিবিধ অর্থে ক্রিয়াপদকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। যেমন :
১. ভাবপ্রকাশ ক্রিয়া : ভাব প্রকাশের দিক দিয়ে ক্রিয়াপদ ২ প্রকার। যেমন : সমাপিকা ক্রিয়া, অসমাপিকা ক্রিয়া
২. বিবিধ : অন্যান্যভাবে ক্রিয়াপদ ৬ প্রকার। যেমন : অকর্মক, সকর্মক দ্বিকর্মক, প্রযোজক ক্রিয়া, যৌগিক ক্রিয়া, মিশ্র ক্রিয়া
ক্রিয়াপদের গঠন
ক্রিয়ামূল বা ধাতুর সঙ্গে পুরুষ অনুযায়ী কালসূচক ক্রিয়াবিভক্তি যোগ করে ক্রিয়াপদ গঠন করতে হয়। যেমন: ‘পড়ছে’-পড় ‘ধাতু’+‘ছে’ বিভক্তি।
সকল ক্রিয়াপদের সংজ্ঞা
১. ক্রিয়া : যে শব্দ দিয়ে কাজ বুঝায় তাকে ক্রিয়া বলে।
২. অনুক্ত ক্রিয়া : যে বাক্যে ক্রিয়া উহ্য থাকে তাকে অনুক্ত ক্রিয়া বলে।
৩. সমাপিকা ক্রিয়া : যে ক্রিয়া বাক্যকে সমাপ্ত করে তাকে সমাপিকা ক্রিয়া বলে।
৪. অসমাপিকা ক্রিয়া : যে ক্রিয়া বাক্যকে সমাপ্ত করতে পারে না তাকে অসমাপিকা ক্রিয়া বলে।
৫. সকর্মক ক্রিয়া : যে ক্রিয়ার কর্মপদ থাকে তাকে সকর্মক ক্রিয়া বলে।
৬. অকর্মক ক্রিয়া : যে বাক্যে কোনো কর্মপদ থাকে না তাকে অকর্মক ক্রিয়া বলে।
৭. দ্বিকর্মক ক্রিয়া : যে ক্রিয়ার দুটি কর্ম থাকে তাকে দ্বিকর্মক ক্রিয়া বলে।
৮. সমধাতুজ/ধাত্বর্থক: যে বাক্যে ক্রিয়া ও কর্মপদ একই ধাতু থেকে তৈরি তাকে সমধাতুজ/ধাত্বর্থক কর্ম বলে।
৯. প্রযোজক ক্রিয়া : যে ক্রিয়া প্রযোজনা করে তাকে প্রযোজক ক্রিয়া বলে।
১০. নামধাতু : বিশেষ্য, বিশেষণ ও ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের পরে আ-প্রত্যয়যোগে গঠিত ধাতুকে নামধাতু বলে।
১১. যৌগিক ক্রিয়া : সমাপিকা ও অসমাপিকা ক্রিয়া দিয়ে গঠিত বিশেষ বা সম্প্রসারিত অর্থ প্রকাশক ক্রিয়াকে যৌগিক ক্রিয়া বলে।
১২. মিশ্রক্রিয়া : বিশেষ্য, বিশেষণ ও ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের সঙ্গে কর, হ, দে, পা, যা, কাট, গা, ছায়, মার ইত্যাদি ধাতু দিয়ে গঠিত ক্রিয়াকে মিশ্রক্রিয়া বলে।
অনুক্ত ক্রিয়াপদ
ক্রিয়াপদ বাক্যগঠনের অপরিহার্য অঙ্গ। ক্রিয়াপদ ভিন্ন কোনো মনোভাবই সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করা যায় না। তবে কখনো কখনো বাক্যে ক্রিয়াপদ উহ্য বা অনুক্ত থাকতে পারে। যেমন :
ইনি আমার ভাই = ইনি আমার ভাই (হন)।
আজ প্রচণ্ড গরম = আজ প্রচণ্ড গরম (অনুভূত হচ্ছে)
তোমার মা কেমন?= তোমার মা কেমন (আছেন)?
বাক্যে সাধারণত ‘হু’ ও ‘আছ’ ধাতু গঠিত ক্রিয়াপদ উহ্য থাকে।
সমাপিকা ক্রিয়া
যে ক্রিয়াপদ দ্বারা বাক্যের (মনোভাবের) পরিসমাপ্তি জ্ঞাপিত হয় তাকে সমাপিকা ক্রিয়া বলে। যেমন : ছেলেরা খেলা করছে। এ বছর বন্যায় ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
সমাপিকা ক্রিয়া সকর্মক, অকর্মক ও দ্বিকর্মক হতে পারে। ধাতুর সঙ্গে বর্তমান, অতীত বা ভবিষ্যত কালের বিভক্তি যুক্ত হয়ে সমাপিকা ক্রিয়া গঠিত হয়। যেমন :
*আনোয়ার বই পড়ে। এখানে ক্রিয়া-সকর্মক আর কাল-বর্তমান
*মাসুদ সারাদিন খেলেছিল। এখানে ক্রিয়া-অকর্মক আর কাল-অতীত
*আমি তোমাকে একটি কলম উপহার দেব। এখানে ক্রিয়া-দ্বিকর্মক আর কাল-ভবিষ্যত
অসমাপিকা ক্রিয়া
যে ক্রিয়া দ্বারা বাক্যের পরিসমাপ্তি ঘটে না, বক্তার কথা অসম্পূর্ণ থেকে যায় তাকে অসমাপিকা ক্রিয়া বলে। যেমন : প্রভাতে সূর্য উঠলে ...। আমরা হাত-মুখ ধুয়ে ...। আমরা বিকেলে খেলতে ...। এখানে, ‘উঠলে’ ‘ধুয়ে’ ও ‘খেলতে’ ক্রিয়াপদগুলোর দ্বারা কথা শেষ হয়নি। কথা সম্পূর্ণ হতে আরও শব্দের প্রয়োজন। তাই এর শব্দগুলো অসমাপিকা ক্রিয়া। উপযুক্ত বাক্যগুলো পূর্ণ মনোভাব জ্ঞাপন করলে দাঁড়াবে : প্রভাতে সূর্য উঠলে অন্ধকার দূর হয়। আমরা হাত মুখ ধুয়ে পড়তে বসলাম। আমরা বিকেলে খেলতে যাই। পূর্ণাঙ্গ বাক্য গঠন করতে হলে সমাপিকা ক্রিয়া অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। সাধারণত ইয়া (পড়িয়া), ইলে (পড়িলে), ইতে (পড়িতে), এ (পড়ে), লে (পড়লে), তে (পড়তে) বিভক্তিযুক্ত ক্রিয়াপদ অসমাপিকা ক্রিয়া।
অসমাপিকা ক্রিয়ার গঠন
ধাতুর সঙ্গে কাল নিরপেক্ষ-ইয়া (য়ে),-ইতে (তে) অথবা ইলে (লে বিভক্তি যুক্ত হয়ে অসমাপিকা ক্রিয়া ক্রিয়া গঠিত হয়। যেমন : ‘দরিদ্র পাইলে ধন হয় গর্বস্ফীত।’ যত্ন করলে রত্ন মেলে। তাকে খুঁজে নিয়ে আসতে চেষ্টা করবে।
ধাতুর ক্রিয়া ঘটিত বাক্যে একাধিক প্রকার কর্তা (কর্তৃকারক) দেখা যায়। যেমন :
এক কর্তা
বাক্যস্থিত সমাপিকা ও অসমাপিকা ক্রিয়ার কর্তা এক বা অভিন্ন হতে পারে। যেমন : তুমি চাকরি পেলে আর কি দেশে আসবে? ‘পেলে’ (অসমাপিকা ক্রিয়া) এবং ‘আসবে’ (সমাপিকা ক্রিয়া) উভয় ক্রিয়ার কর্তা এখানে ‘তুমি’।
অসমান কর্তা
বাক্যস্থিত সমাপিকা ও অসমাপিকা ক্রিয়ার কর্তা এক না হলে সেখানে কর্তাকে অসমান কর্তা বলা হয়। যেমন :
শর্তাধীন কর্তা
এ জাতীয় কর্তাদের ব্যবহার শর্তাধীন হতে পারে। যেমন : তোমরা বাড়ি এলে আমি রওনা হব। এখানে ‘এলে’ অসমাপিকা ক্রিয়ার কর্তা ‘তোমরা’ এবং ‘রওনা হব’ সমাপিকা ক্রিয়ার কর্তা ‘আমি’। তোমাদের বাড়ি আসার ওপর আমার রওনা হওয়া নির্ভরশীল বলে এ জাতীয় বাক্যে কর্তৃপক্ষেও ব্যবহার শর্তাধীন।
নিরপেক্ষ কর্তা
শর্তাধীন না হয়েও সমাপিকা ও অসমাপিকা ক্রিয়ার ভিন্ন ভিন্ন কর্তৃপদ থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রথম কর্তৃপদটিকে বলা হয় নিরপেক্ষ কর্তা। যেমন : সূূর্য অস্তমিত হলে যাত্রীদল পথ চলা শুরু করল। এখানে ‘যাত্রীদের’ পথ চলার সঙ্গে ‘সূর্য’ অস্তমিত হওয়ার কোনো শর্ত বা সম্পকর নাই বলে ‘সূর্য’ নিরপেক্ষ কর্তা।
অসমাপিকা ক্রিয়ার ব্যবহার
১. ‘ইলে’>‘লে’ বিভক্তিযুক্ত অসমাপিকা ক্রিয়ার ব্যবহার
ক) কার্যপরম্পরা বোঝাতে : চারটা বাজলে স্কুলের ছুটি হবে।
খ) প্রশ্ন বা বিস্ময় জ্ঞাপনে : একবার মরলে কি কেউ ফেরে?
গ) সম্ভাব্যতা অর্থে : এখন বৃষ্টি হলে ফসলের ক্ষতি হবে।
ঘ) সাপেক্ষতা বোঝাতে : তিনি গেলে কাজ হবে।
ঙ) দার্শনিক সত্য প্রকাশে : সজন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে?
চ) বিধিনির্দেশে : এখানে প্রচারপত্র লাগালে ফৌজদারিতে সোপর্দ হবে।
ছ) সম্ভাবনার বিকল্পে : আজ গেলেও যা, কাল গেলেও তা।
জ) পরিণতি বোঝাতে : বৃষ্টিতে ভিজলে সর্দি হবে।
২. ‘ইয়া’>‘এ’ বিভক্তিযুক্ত অসমাপিকা ক্রিয়ার ব্যবহার
ক) অনন্তরতা বা পর্যায় বোঝাতে : হাত-মুখ ধুয়ে পড়তে বস।
খ) হেতু অর্থে : ছেলেটি কুসঙ্গে মিশে নষ্ট হয়ে গেল।
গ) ক্রিয়া বিশেষণ অর্থে : চেঁচিয়ে কথা বলো না।
ঘ) ক্রিয়ার অবিচ্ছিন্নতা বোঝাতে : হৃদয়ের কথা কহিয়া কহিয়া গাহিয়া গান।
ঙ) ভাববাচক বিশেষ্য গঠনে : সেখানে আর গিয়ে কাজ নাই।
চ) অব্যয় পদেও অনুরূপ : ঢাকা গিয়ে বাড়ি যাব।
৩. ‘ইতে’>‘তে’ বিভক্তিযুক্ত অসমাপিকা ক্রিয়ার ব্যবহার
ক) ইচ্ছা প্রকাশে : এখন আমি যেতে চাই।
খ) উদ্দেশ্য বা নিমিত্ত অর্থে : মেলা দেখতে ঢাকা যাব।
গ) সামর্থ্য বোঝাতে : খোকা এখন হাঁটতে পারে।
ঘ) বিধি বোঝাতে : বাল্যকালে বিদ্যাভ্যাস করতে হয়।
ঙ) দেখা বা জানা অর্থে : রমলা গাইতে জানে।
চ) আবশ্যকতা বোঝাতে : এখন ট্রেন ধরতে হবে।
ছ) সূচনা বোঝাতে : রানি এখন ইংরেজি পড়তে শিখেছে।
জ) বিশেষণবাচকতায় : লোকটাকে দৌড়াতে দেখলাম।
ঝ) ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য গঠনে : তোমাকে তো এ গ্রামে থাকতে দেখিনি।
ঞ) অনুসর্গরূপে : কোন দেশেতে তরুলতা সকল দেশের চাইতে শ্যামল।
ট) বিশেষ্যেও সঙ্গে অন্বয় সাধনে : দেখিতে বাসনা মাগো তোমার চরণ।
ঠ) বিশেষণের সঙ্গে অন্বয় সাধনে : পদ্মফুল দেখতে সুন্দর।
৪. ‘ইতে’>‘তে’ বিভক্তিযুক্ত ক্রিয়ার দ্বিত্ব প্রয়োগ
ক) নিরন্তরতা প্রকাশে : কাটিতে কাটিতে ধান এলো বরষা।
খ) সমকাল বোঝাতে: সেঁউতিতে পদ দেবী রাখিতে রাখিতে। সেঁউতি হইল সোনা দেখিতে দেখিতে।
টীকা : রীতিসিদ্ধ প্রয়োগের ক্ষেত্রে সমাপিকা ক্রিয়া অনুপস্থিত থেকে অসমাপিকা ক্রিয়ার ব্যবহারে বাক্য গঠিত হতে পারে। যেমন : গরু মেরে জুতা দান। আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ।
সকর্মক ক্রিয়া
যে ক্রিয়ার কর্মপদ আছে তাই সকর্মক ক্রিয়া। ক্রিয়ার সাথে কী বা কাকে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় তাই ক্রিয়ার কর্মপদ। কর্মপদযুক্ত ক্রিয়াই সকর্মক ক্রিয়া। যেমন : বাবা আমাকে একটি কলম কিনে দিয়েছেন।
প্রশ্ন : কী দিয়েছেন? উত্তর : কলম (কর্মপদ)
প্রশ্ন : কাকে দিয়েছেন? উত্তর : আমাকে (কর্মপদ)
‘দিয়েছেন’ ক্রিয়াপদটির কর্ম পদ থাকায় এটি সকর্মক ক্রিয়া।
অকর্মক ক্রিয়া
যে ক্রিয়ার কর্ম নাই, তা অকর্মক ক্রিয়া। যেমন : মেয়েটি হাসে। ‘কী হাসে’ বা ‘কাকে হাসে’ প্রশ্ন করলে কোন উত্তর হয় না। কাজেই ‘হাসে’ ক্রিয়াটি অকর্মক ক্রিয়া।
দ্বিকর্মক ক্রিয়া
যে ক্রিয়ার দুটি কর্মপদ থাকে তাকে দ্বিকর্মক ক্রিয়া বলে। দ্বিকর্মক ক্রিয়ার বস্তুবাচক কর্মপদটিকে মুখ্য বা প্রধান কর্ম এবং ব্যক্তিবাচক কর্মপদটিকে গৌণকর্ম বলে। বাবা আমাকে একটি কলম কিনে দিয়েছেন বাক্যে ‘কলম’ (বস্তু) মুখ্যকর্ম এবং ‘আমাকে’ (ব্যক্তি) গৌণকর্ম।
সমধাতুজ কর্ম
বাক্যের ক্রিয়া ও কর্মপদ একই ধাতু থেকে গঠিত হলে ঐ কর্মপদকে সমধাতুজ কর্ম বা ধাত্বর্থক কর্মপদ বলে। যেমন : আর কত খেলা খেলবে। মূল ‘খেলা’ ধাতু থেকে ক্রিয়াপদ ‘খেলবে’ এবং কর্মপদ ‘খেলা’ উভয়ই গঠিত হয়েছে। তাই ‘খেলা’ পদটি সমধাতুজ বা ধাত্বর্থক কর্ম।
সমধাতুজ কর্মপদ অকর্মক ক্রিয়াকে সকর্মক করে। যেমন :
এমন সুখের মরণ কে মরতে পারে? বেশ এক ঘুম ঘুমিয়েছি। আর মায়াকান্না কেঁদো না গো বাপু।
সকর্মক ক্রিয়ার অকর্মক রূপ
প্রয়োগ বৈশিষ্ট্য সকর্মক ক্রিয়া ও অকর্মক হতে পারে। যেমন :
অকর্মক সকর্মক
আমি চোখে দেখি না। আকাশে চাঁদ দেখি না।
ছেলেটা কানে শোনে না। ছেলেটা কথা শোনে।
আমি রাতে খাব না। আমি রাতে ভাত খাব না।
অন্ধকারে আমার খুব ভয় করে। বাবাকে আমার খুব ভয় করে।
প্রযোজক ক্রিয়া
যে ক্রিয়া একজনের প্রযোজনা বা চালনায় অন্য কর্তৃক অনুষ্ঠিত হয় সেই ক্রিয়াকে প্রযোজক ক্রিয়া বলে। সংস্কৃত ব্যাকরণে একে ণিজন্ত ক্রিয়া বলা হয়।
প্রযোজক ক্রিয়া : যে ক্রিয়া প্রযোজনা করে তাকে প্রযোজক কর্তা বলে।
প্রযোজ্য কর্তা : যাকে দিয়ে ক্রিয়াটি অনুষ্ঠিত হয় তাকে প্রযোজ্য কর্তা বলে। যেমন :
প্রযোজক কর্তা প্রযোজ্য কর্তা প্রযোজক ক্রিয়া
মা শিশুকে চাঁদ দেখাচ্ছেন।
(তুমি) খোকাকে কাঁদিও না।
সাপুড়ে সাপ খেলায়।
বিশেষ দ্রষ্টব্য বা জ্ঞাতব্য : প্রযোজক ক্রিয়া রূপে ব্যবহৃত হলে অকর্মক প্রযোজক ক্রিয়া সকর্মক হয়।
প্রযোজক ক্রিয়ার গঠন : প্রযোজক ক্রিয়ার ধাতু=মূল ক্রিয়ার দাতু+আ। যেমন: মূল ধাতু হাস্+আ= হাসা (প্রযোজক ক্রিয়ার ধাতু)। হাসা+চ্ছেন বিভক্তি= হাসাচ্ছেন (প্রযোজক ক্রিয়া)।
নামধাতু ও নামধাতুর ক্রিয়া
বিশেষ্য, বিশেষণ এবং ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের পরে ‘আ’ প্রত্যয়যোগে যেসব ধাতু গঠিত হয় তাদের নামধাতু বলা হয়। নামধাতুর সঙ্গে পুরুষ বা কালসূচক ক্রিয়াবিভক্তি যোগে নামধাতুর ক্রিয়াপদ গঠিত হয়। যেমন:
ক) বেত (বিশেষ্য)+আ (প্রত্যয়)= বেতা: শিক্ষক ছাত্রটিকে বেতাচ্ছেন
খ) বাঁকা (বিশেষণ)+আ (প্রত্যয়)= বাঁকা: কঞ্চিটি বাঁকিয়ে ধর
গ) ধ্বন্যাত্মক অব্যয় : কন কন-দাঁতটি ব্যথায় কনকনাচ্ছে। ফোঁস অজাকারটি ফোঁসাচ্ছে।
আ-প্রত্যয় যুক্ত না হয়েও কয়েকটি নামধাতু বাংলা ভাষায় মৌলিক ধাতুর মতো ব্যবহৃত হয়। যেমন :
ফল : বাগানে বেশ কিছু লিচু ফলেছে।
টক : তরকারি বাসি হলে টকে।
ছাপা : আমার বন্ধু বইটা ছেপেছে।
যৌগিক ক্রিয়া
একটি সমাপিকা ও একটি অসমাপিকা ক্রিয়া যদি একত্রে একটি বিশেষ বা সম্প্রসারিত অর্থ প্রকাশ করে তাকে যৌগিক ক্রিয়া বলে। যেমন :
ক) তাগিদ দেওয়া অর্থে : ঘটনাটা শুনে রাখ।
খ) নিরন্তরতা অর্থে : তিনি বলতে লাগলেন।
গ) কার্যসমাপ্তি অর্থে : ছেলেমেয়েরা শুয়ে পড়ল।
ঘ) আকস্মিকতা অর্থে : সাইরেন বেজে উঠল।
ঙ) অভ্যস্ততা অর্থে : শিক্ষায় মন সংস্কারমুক্ত হয়ে থাকে।
চ) অনুমোদন অর্থে : এখন যেতে পার।
যৌগিক ক্রিয়ার গঠন বিধি
অসমাপিকা ক্রিয়ার পরে যা, পড়, দেখ্, লাগ্, ফেল্, আস্, উঠ্, দে, লহ, থাক প্রভৃতি ধাতু থেকে সমাপিকা ক্রিয়া গঠিত হয়ে উভয়ে মিলিতভাবে যৌগিক ক্রিয়া তৈরি করে। এসব যৌগিক ক্রিয়া বিশেষ অর্থ প্রকাশ করে। যেমন :
১. যা- ধাতু
ক) সমাপ্তি অর্থে : বৃষ্টি থেমে গেল।
খ) অবিরম অর্থে : গয়ক গেয়ে যাচ্ছেন।
গ) ক্রমশ অর্থে : চা জুড়িয়ে যাচ্ছে।
ঘ) সম্ভাবনা অর্থে : এখন যাওয়া যেতে পারে।
২. পড়-ধাতু
ক) সমাপ্তি অর্থে : এখন শুয়ে পড়।
খ) ব্যাপ্তি অর্থে : কথাটা ছড়িয়ে পড়েছে।
গ) আকস্মিকতা অর্থে : এখনই তুফান এসে পড়বে।
ঘ) ক্রমশ অর্থে : কেমন যেন মনমরা হয়ে পড়েছি।
৩. দেখ্-ধাতু
ক) মনোযোগ আকর্ষণে: এদিকে চেয়ে দেখ।
খ) পরীক্ষা অর্থে : লবণটা চেখে দেখ।
গ) ফল সম্ভাবনায় : সাহেবকে বলে দেখ।
৪. আস্- ধাতু
ক) সম্ভাবনায় : আজ বিকেলে বৃষ্টি আসতে পারে।
খ) অভ্যস্ততায় : আমরা এ কাজই করে আসছি।
গ) আসন্ন সমাপ্তি অর্থে : ছুটি ফুরিয়ে আসছে।
৫. দি- ধাতু
ক) অনুমতি অর্থে : আমাকে যেতে দাও।
খ) পূর্ণতা অর্থে : কাজটা শেষ করে দিলাম।
গ) সাহায্য প্রার্থনায় : আমাকে অঙ্কটা বুঝিয়ে দাও।
৬. নি- ধাতু
ক) নির্দেশ জ্ঞাপনে : এবার কাপড়-চোপড় গুছিয়ে নাও।
খ) পরীক্ষা অর্থে : কষ্টি পাথরে সোনাটা কষে নাও।
৭. ফেল্- ধাতু
ক) সম্পূর্ণতা অর্থে : সন্দেশগুলো খেয়ে ফেল।
খ) আকস্মিকতা অর্থে : ছেলেরা হেসে ফেলল।
৮. উঠ্-ধাতু
ক) ক্রমান্বয়তা বোঝাতে: ঋণের বোঝা ভারী হয়ে উঠছে।
খ) অভ্যাস অর্থে : শুধু শুধু তিনি রেগে ওঠেন।
গ) আকস্মিকতা অর্থে : সে হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠল।
ঘ) সম্ভাবনা অর্থে : আমার আর থাকা হয়ে উঠল না।
ঙ. সামর্থ্য অর্থে : এসব কথা আমার সহ্য হয়ে ওঠে না।
৯. লাগ্-ধাতু
ক) অবিরাম অর্থে : খোকা কাঁদতে লাগল।
খ) সূচন নির্দেশে : এখন কাজে লাগ তো দেখি।
১০. থাক্-ধাতু
ক) নিরন্তরতা অর্থে : এবার ভাবতে থাক।
খ) সম্ভবনায় : তিনি হয়তো বলে থাকবেন।
গ) সন্দেহ প্রকাশে : সেই কাজটা করে থাকবে।
ঘ) নির্দেশে : আর সরকার নাই, এবার বসে থাক।
মিশ্র ক্রিয়া
বিশেষ্য, বিশেষণ ও ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের সঙ্গে কর, হ্, দে, পা, যা, কাট্, গা, ছাড়, ধর, মার, প্রভৃতি ধাতুযোগে গঠিত ক্রিয়াপদ বিশেষ বিশেষ অর্থে মিশ্র ক্রিয়া গঠন করে। যেমন :
ক) বিশেষ্যের উত্তর (পরে) : আমরা তাজমহল দর্শন করলাম। এখন গোল্লায় যাও।
খ) বিশেষণের উত্তর (পরে) : তোমাকে দেখে বিশেষ প্রীত হলাম।
গ) ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের উত্তর (পরে) : মাথা ঝিম ঝিম্ করছে। ঝম্ ঝম্ করে বৃষ্টি পড়ছে।
FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ