প্রত্যয়

প্রত্যয়

ভাষার সমৃদ্ধি শব্দের উপর নির্ভরশীল। যে ভাষায় যত বেশি শব্দ আছে সে ভাষা তত বেশি সমৃদ্ধ। বাংলা ভাষায় শব্দ গঠনের একটি অন্যতম রীতি হলো প্রত্যয়। কিন্তু প্রত্যয়ের নিজের কোনো স্বাধীন অর্থ নেই। কৃৎ ও তদ্ধিত দুধরনের প্রত্যয়ই শব্দ গঠনের সহায়ক। যা পরে যুক্ত হয় তাই প্রত্যয়। সুতরাং যে বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি ধাতু বা প্রাতিপদিকের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে তাই প্রত্যয়। যে বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি ধাতু বা শব্দের পরে যুক্ত হয়ে নতুন অর্থবোধক শব্দ গঠন করে তাকে প্রত্যয় বলে। ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল−াহ্র মতে, ‘ধাতু বা শব্দের উত্তর ভিন্ন ভিন্ন অর্থে যে বর্ণ বা বর্ণসমূহ যুক্ত হইয়া শব্দ প্রস্তুত হয় তাহাদিগকে প্রত্যয় বলে।’ যেমন :

হাত+ আ= হাতা   মনু+অ=মানব   √চল্+অন্ত=চলন্ত     √কৃ+অক = কারক

এখানে, ‘ আ’, ‘অ’, ‘অন্ত’, আর ‘অক’ প্রত্যয়। ‘হাত’, ‘মনু’ নাম-প্রকৃতি এবং চল্’, ‘কৃ’ ক্রিয়াপ্রকৃতি।

প্রত্যয় প্রধানত দুই প্রকার। যেমন : কৃৎপ্রত্যয় ও তদ্ধিত প্রত্যয়।

প্রত্যয়ের উপাদান বা বিষয়

প্রত্যয়ের মাধ্যমে শব্দগঠনের ক্ষেত্রে ‘প্রকৃতি’ ও ‘প্রাতিপদিক’ এ দুটি উপাদান বা বিষয় সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন।

১. প্রকৃতি : শব্দ বা ধাতুর মূলই হলো প্রকৃতি। অর্থাৎ ‘মৌলিক শব্দের যে অংশকে আর কোনোভাবেই বিশ্লেষণ করা সম্ভব নয় তাকে বলা হয় প্রকৃতি।’ অথবা ভাষায় যার বিশ্লেষ সম্ভব নয়, এমন মৌলিক শব্দকে প্রকৃতি বলে। শব্দ কিংবা পদ থেকে প্রত্যয় ও বিভক্তি অপসারণ করলে প্রকৃতি অংশ পাওয়া যায়। ‘প্রকৃতি’ কথাটি বোঝানোর জন্য প্রকৃতির আগে √চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। প্রকৃতি চিহ্নটি ব্যবহার করলে ‘প্রকৃতি’ শব্দটি লেখার প্রয়োজন হয় না। যেমন : √পড়+উয়া=পড়–য়া। √নাচ্+উনে= নাচুনে।

প্রকৃতি দুই প্রকার। যেমন:

ক. ক্রিয়াপ্রকৃতি : প্রত্যয়নিষ্পন্ন শব্দের বিশ্লেষণে মৌলিক ভাবদ্যোতক যে অংশ পাওয়া যায় তা যদি অবস্থান, গতি বা অন্য কোনো প্রকারের ক্রিয়া বোঝায় তাকে ক্রিয়াপ্রকৃতি বলে। যেমন: √চল্ (চলন্ত=চল্+অন্ত-প্রত্যয়), √পড়্, √রাখ্, √দৃশ্, √কৃ।

খ. নামপ্রকৃতি বা সংজ্ঞা প্রকৃতি : প্রত্যয়নিষ্পন্ন শব্দের বিশে−ষণে মৌলিক ভাবদ্যোতক যে অংশ পাওয়া যায় তা যদি কোনো দ্রব্য, জাতি, গুণ বা কোনো পদার্থকে বোঝায় তাকে নামপ্রকৃতি বলে। যেমন : মা, চাঁদ, গাছ, হাতল (হাত+অল-প্রত্যয়)।

প্রত্যয়ে প্রাতিপদিক

বিভক্তিহীন নাম শব্দকে প্রাতিপদিক বলে। যেমন : হাত, বই, কলম, মাছ ইত্যাদি।

১. ক্রিয়াবাচক শব্দমূলের ক্ষেত্রে ধাতু চিহ্ন (√) ব্যবহৃত হয়। যেমন :

√চল্+অন্ত=চলন্ত      √পঠ্+অক=পাঠক

২. ‘ধাতু’ ও ‘প্রত্যয়’ উভয়কে একসঙ্গে উচ্চারণ করার সময় ধাতুর অন্ত্যধ্বনি এবং প্রত্যয়ের আদিধ্বনি অনেক ক্ষেত্রে পরস্পরের প্রভাবে সমতা প্রাপ্ত হয়। যেমন :

√কাঁদ্+না= কান্না         √রাঁধ্+না=রান্না

উলি−খিত উদাহরণে ধাতুর অন্ত্যধ্বনি ‘দ্’ ও ‘ধ্’ প্রত্যয়ের আদিধ্বনি ‘ন’-এর সমতা প্রাপ্ত হয়েছে।

প্রত্যয়ে কৃদন্ত পদ

কৃৎপ্রত্যয় সাধিত পদটিকে বলা হয় কৃদন্ত পদ। যেমন : √পড়+উয়া=পড়–য়া  √নাচ্+উনে=নাচুনে

এখানে ‘পড়–য়া’ ও ‘নাচুনে’ কৃদন্ত পদ।

তৎসম বা সংস্কৃত প্রকৃতির সঙ্গেও অনুরূপভাবে কৃৎপ্রত্যয় যোগে কৃদন্তপদ সাধিত হয়। যেমন :

√গম্+অন=গমন       √কৃ+তব্য=কর্তব্য

প্রত্যয়ে গুণ ও বৃদ্ধি

কোনো কোনো ক্ষেত্রে কৃৎপ্রত্যয় যোগ করলে কৃৎপ্রকৃতির আদিস্বর পরিবর্তিত হয়। এ পরিবর্তনকে বলা হয় গুণ ও বৃদ্ধি। যেমন :

১. গুণ :

ক) ‘ই বা ঈ’ স্থলে ‘এ’ হয়। যেমন : চিন্+আ=চেনা   নী+আ=নেওয়া

খ) ‘উ বা ঊ’ স্থলে ‘ও’ হয়। যেমন : ধু+আ=ধোয়া

গ) ‘ঋ’ স্থলে ‘র্অ’ হয়।     যেমন : কৃ+তা=করতা>কর্তা

২. বৃদ্ধি

ক) ‘অ’ স্থলে ‘আ’ হয়। যেমন : পচ্+অ (ণক)= পাচক

খ) ই বা ঈ স্থলে ‘ঐ’ হয়। যেমন : শিশু+অ(ঞ্চ)= শৈশব

গ) উ বা ঊ স্থলে ‘ঔ’ হয়। যেমন : যুব+অন = যৌবন

ঘ) ঋ স্থলে ‘র্আ’ হয়। যেমন : কৃ+ঘ্যণ = কার্য

কৃৎপ্রত্যয়

ধাতুর পরে যে প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে তাকে কৃৎপ্রত্যয় বলে। যেমন : √ধর+আ=ধরা √ডুব্+উরি=ডুবুরি √দৃশ্+য=দৃশ্য

কৃৎপ্রত্যয় দুপ্রকার। যেমন :

ক) সংস্কৃত কৃৎপ্রত্যয় : সংস্কৃত নিয়মানুযায়ী ঐ ভাষার ধাতুর সঙ্গে যেসব সংস্কৃত প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠিত হয় তাদের সংস্কৃত কৃৎপ্রত্যয় বলে। যেমন : √কৃ+তব্য=কর্তব্য, √দৃশ্+অন =দর্শন ইত্যাদি।

খ) বাংলা কৃৎপ্রত্যয় : সংস্কৃত বা তৎসম ধাতু বিবর্জিত বাংলা ধাতুর সঙ্গে প্রাকৃত ভাষা থেকে আগত যেসব প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠিত হয় তাদের বাংলা কৃৎপ্রত্যয় বলে। যেমন : √ নাচ্+অন=নাচন, √ডুব্+অন্ত=ডুবন্ত ইত্যাদি।

কৃৎপ্রত্যয়ের বিস্তারিত আলোচনা

তোমরা লক্ষ করেছ যে, ক্রিয়ামূলকে বলা হয় ধাতু আর ধাতুর সঙ্গে পুরুষ ও কালবাচক বিভক্তি যোগ করে গঠন করা হয় ক্রিয়াপদ। ধাতুর সঙ্গে যখন কোনো ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টি যুক্ত হয়ে বিশেষ্য বা বিশেষণ পদ তৈরি হয় তখন (১) ক্রিয়ামূল বা ধাতুকে বলা হয় ক্রিয়াপ্রকৃতি বা প্রকৃতি আর (২) ক্রিয়াপ্রকৃতির সঙ্গে যে ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টি যুক্ত হয় তাকে বলে কৃৎপ্রত্যয়। যেমন : √চল্ (ক্রিয়াপ্রকৃতি)+অন (কৃৎপ্রত্যয়)=চলন (বিশেষ্য পদ)। √চল্ (ক্রিয়াপ্রকৃতি)+অন্ত (কৃৎপ্রত্যয়)=চলন্ত (বিশেষণ পদ)।

কৃৎপ্রত্যয়যোগে বাংলাশব্দ গঠন

(০) শূন্য-প্রত্যয় : কোনো প্রকার প্রত্যয়-চিহ্ন ব্যতিরেকেই কিছু ক্রিয়া-প্রকৃতি বিশেষ্য ও বিশেষণ পদ রূপে বাক্যে ব্যবহৃত হয়।

এরূপ স্থলে (০) শূন্য প্রত্যয় ধরা হয়। যেমন : এ মোকদ্দমায় তোমার জিত্ হবে না, হার-ই হবে। গ্রামে খুব ধর পাকড় চলছে।

অ-প্রত্যয় : কেবল ভাববাচ্যে অ-প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন :   √ধর+অ=ধর      √মার+অ=মার

আধুনিক বাংলায় অ-প্রত্যয় সর্বত্র উচ্চারিত হয় না। যেমন : √হার+অ=হার     √জিত্+অ=জিত

কোনো কোনো সময় অ-প্রত্যয়যুক্ত কৃদন্ত শব্দের দ্বিত্ব প্রয়োগ হয়। যেমন : (আসন্ন সম্ভাব্যতা অর্থে দ্বিত্বপ্রাপ্ত)

√কাঁদ্+অ=কাঁদকাঁদ (চেহারা)। এরূপ : √পড়+অ=পড়পড়    √মর+অ=মরমর (অবস্থা)

ইত্যাদি কখনো কখনো দ্বিত্বপ্রাপ্ত কৃদন্ত পদে উ-প্রত্যয় হয়। যেমন : √ডুব্+উ=ডুবুডুবু       √উড়+উ=উড়–উড়–

অন্-প্রত্যয় : ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য গঠনে ‘অন’ প্রত্যয়ের ব্যবহার হয়। যেমন : √কাঁদ্+অন=কাঁদন (কান্নার ভাব)।

এরূপ : নাচন, বাড়ন, ঝুলন, দোলন।

বিশেষ নিয়ম

ক) আ-কারান্ত ধাতুর সঙ্গে অন্ স্থলে ‘ওন’ হয়। যেমন : √খা+অন=খাওন   √ছা+অন=ছাওন   √দে+অন=দেওন

খ) আ-কারান্ত প্রযোজক (নিজন্ত) ধাতুর পরে ‘আন’ প্রত্যয় যুক্ত হলে ‘আনো’ হয়। যেমন : √জানা+আন=জানানো।

এরূপ : শোনানো, ভাসানো।

৪. অনা-প্রত্যয়: √দুল্+অনা=দুলনা>দোলনা       √খেল+অনা= খেলনা

৫. অনি, (বিকল্পে) উনি-প্রত্যয় :  √বাঁধ্+অনি = বাঁধনি>বাঁধুনি √আঁট+ অনি= আঁটনি >আঁটুনি

৬. অন্ত-প্রত্যয় : বিশেষণ গঠনে ‘অন্ত’ প্রত্যয় হয়। যেমন: √উড়+অন্ত=উড়ন্ত    √ডুব্+অন্ত=ডুবন্ত

৭. অক-প্রত্যয় : √মুড়+অক=মোড়ক   √ঝল্+অক=ঝলক

৮. আ-প্রত্যয় : বিশেষ্য ও বিশেষণ গঠনে ‘আ’ প্রত্যয় হয়। যেমন : √পড়+আ=পড়া (পড়া বই)

এরূপ : রাঁধ (বিশেষ্য), রাঁধা (বিশেষণ), কেনা, বেচা, ফোটা

৯. আও-প্রত্যয় : ভাববাচক বিশেষ্য গঠনে ‘আও’ প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন :    √পাকড়+আও=পাকড়াও       √চড়+আও=চড়াও

১১. আন (আনো) প্রত্যয় : বিশেষ্য গঠনে প্রযোজক ধাতু ও কর্মবাচ্যের ধাতুর পরে ‘আন/আনো’ প্রত্যয় হয়। যেমন : √চাল্=আন=চালান/চালানো   √মান্+আন=মানান/মানানো

১২. আনি-প্রত্যয় : বিশেষ্য গঠনে প্রযুক্ত হয়। যেমন :

√জান্+আনি=জানানি     √শুন্+আনি=শুনানি  √উড়+আনি= উড়ানি  √উড়+উনি=উড়িন

১৩. আরি বা বিকল্পে রি/উরি- প্রত্যয় : √ডুব্+উরি=ডুবুরি। এরূপ : ধুনারি।

১৪. আল-প্রত্যয় : √মাত+আল=মাতাল   √মিশ্+আল =মিশাল

১৫. ই-প্রত্যয় : বিশেষ্য গঠনে ‘ই’ প্রত্যয় প্রযুক্ত হয়। যেমন: √ভাজ্+ই= ভাজি   √বেড়+ই=বেড়ি

১৬. ইয়া>ইয়ে-প্রত্যয় : বিশেষণ গঠনে ইয়া/ ইয়ে প্রত্যয় ব্যবহৃত হয়। যেমন :

√মর+ইয়া=মরিয়া (মরতে প্রস্তুত)     √বল্+ইয়ে=বলিয়ে (বাকপটু)।

এরূপ : নাচিয়ে, পাইয়ে, লিখিয়ে, বাজিয়ে, কইয়ে ইত্যাদি।

১৭. উ-প্রত্যয় : বিশেষ্য ও বিশেষণ গঠনে ‘উ’ প্রত্যয়ের প্রয়োগ হয়। যেমন :

√ডাক্+উ=ডাকু      √ঝাড়+উ=ঝাড়–     √উড়+উ=উড়– (দ্বিত্ব উড়–উড়–)

১৮. ‘উয়া’ বিকল্পে ‘ও’- প্রত্যয় : বিশেষ্য বিশেষণ গঠনে ‘উয়া’ এবং ‘ও’ প্রত্যয় হয়। যেমন :

√পড়+উয়া=পড়–য়া>পড়ো      √উড়+উয়া=উড়–য়া>উড়ো     √উড়+ও=উড়ো (চিঠি)

১৯. তা-প্রত্যয় : বিশেষণ গঠনে ‘তা’ প্রত্যয় হয়। যেমন : √ফির+তা=ফিরতা>ফেরতা   √পড়+তা=পড়তা    √বহ্+তা= বহতা

২০. তি-প্রত্যয় : বিশেষ্য ও বিশেষণ গঠনে ‘তি’ প্রত্যয় হয়। যেমন : √ঘাট্+তি=ঘাটতি    √বাড়+তি=বাড়তি

এরূপ : কাটতি, উঠতি ইত্যাদি।

২১. না-প্রত্যয় : বিশেষ্য গঠনে ‘না’ প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন: √কাঁদ্+না=কাঁদনা> কান্না, √রাঁধ্+না=রাঁধনা>রান্না। এরূপ: ঝরনা

কৃৎপ্রত্যয়যোগে সংস্কৃতশব্দ গঠন

অনট্-প্রত্যয় : (‘ট’ ইৎ (বিলুপ্ত) হয়, ‘অন’ থাকে)। যেমন :

√নী+অনট্=√নী+অন>নে+অন (গুণসূত্রে)=নয়ন  √শ্রু+ অনট্=√শ্রু+অন(গুণ ও সন্ধির ফলে)=শ্রবণ

এরূপ : স্থান, ভোজন, নর্তন, দর্শন ইত্যাদি।

ক্ত-প্রত্যয় (‘ক্’ ইৎ ‘ত’ থাকে) : √জ্ঞা+ক্ত (জ্ঞা+ত) =জ্ঞাত √খ্যা+ক্ত=খ্যাত।

বিশেষ নিয়ম

ক) ক্ত-প্রত্যয় যুক্ত হলে নিম্নলিখিত ধাতুর অন্ত্যস্বর ‘ই’ কার হয়। যেমন :  √পঠ্+ক্ত +(পঠ্+ই+ত) =পঠিত।

এরূপ : লিখিত, বিদিত, বেষ্টিত, চলিত, পতিত, লুণ্ঠিত, ক্ষুধিত, শিক্ষিত ইত্যাদি।

খ) ক্ত প্রত্যয় যুক্ত হলে, ধাতুর অন্তস্থিত ‘চ’ ও ‘জ’ স্থলে ‘ক’ হয়। যেমন : √সিচ্+ক্ত=(সিক্+ত) সিক্ত। এরূপ : √মুচ্+ক্ত=মুক্ত, √ভুজ্+ক্ত=ভুক্ত।

গ) এ ছাড়া ক্ত প্রত্যয় পরে থাকলে ধাতুর মধ্যে বিভিন্ন রকমের পরিবর্তন হয়। এখানে এরূপ কয়েকটি প্রকৃতি-প্রত্যয়ের উদাহরণ দেওয়া হলো। যেমন :

√গম্+ক্ত=গত  √গ্রন্থ+ক্ত=গ্রথিত  √ চুর+ক্ত=চূর্ণ  √ছিদ্+ক্ত=ছিন্ন  √জন্+ক্ত=জাত   √দা+ক্ত=দত্ত

√দহ্+ক্ত=দগ্ধ  √বচ্+ক্ত+উক্ত     √বপ্+ক্ত=উপ্ত √মুহ্+ক্ত=মুগ্ধ  √যুধ্+ক্ত=যুদ্ধ  √লভ্+ক্ত=লব্ধ

√স্বপ্+ক্ত=সুপ্ত     √সূজ্+ক্ত=সৃষ্ট       √হন্+ক্ত=হত

৩. ক্তি-প্রত্যয় (‘ক’ ইং ‘তি’ থাকে) : √গম্+ক্তি/তি=গতি (এখানে ‘ম’ লোপ হয়েছে)।

ক) ক্তি-প্রত্যয় যোগ করলে কোনো কোনো ধাতুর অন্ত ব্যঞ্জনের লোপ হয়। যেমন :

√মন্+ক্তি=মতি       √রম্+ ক্তি= রতি

খ) কোনো কোনো ধাতুর উপধা অ-কারের বৃদ্ধি হয় অর্থাৎ আ-কার হয়। যেমন :

√শ্রম্+ক্তি=শ্রান্তি (সন্ধিসূত্রে ম>না, √শম্+ক্তি=শান্তি

গ) ‘চ’ এবং ‘জ’ স্থলে ‘ক’ হয়। যেমন:  √বচ্+ক্তি=উক্তি √মুছ+ক্তি =মুক্তি √ভজ্+ক্তি=ভক্তি

ঘ) নিপাতনে সিদ্ধ : √গৈদ+ক্তি=গীতি  √সিধ্+ক্তি=সিদ্ধি    √বুধ্+ক্তি=বুদ্ধি  √শক্+ক্তি=শক্তি

৪. তব্য ও অনীয় প্রত্যয় : কর্ম ও ভাববাচ্যের ধাতুর পরে ক) তথ্য ও খ) অনীয় প্রত্যয় হয়।

ক) তব্য:   √কৃ+তব্য=কর্তব্য     √দা+তব্য=দাতব্য     √পঠ্+তব্য=পঠিতব্য

খ) অনীয় : √কৃ+অনীয়=করণীয়   √রক্+অনীয়=রক্ষণীয়

এরূপ : দর্শনীয়, পানীয়, শ্রবণীয়, পালনীয় ইত্যাদি।

৫. তৃচ্-প্রত্যয় (‘চ’ ইৎ ‘তৃ’ থাকে) : প্রথমা একবচনে ‘তৃ’ স্থলে ‘তা’ হয়।

যেমন : √দা+তৃচ্/তৃ/তা=দাতা   √মা+তৃচ্=মাতা  √ক্রী+তৃচ্=ক্রেতা

বিশেষ নিয়মে : √যুধ্+তৃচ/তা=যোদ্ধা

৬. ণক-প্রত্যয় (‘ণ’ ইৎ ‘অক’ থাকে) : √পঠ্+ণক/অক=পাঠক

মূল স্বরের বৃদ্ধি হয়ে ‘অ’ স্থানে ‘আ’ হয়েছে। যেমন : √নী=ণক=(নৈ+অক=প্রথম স্বরের বৃদ্ধি) নায়ক, √গৈ+ণক=গায়ক, √লিখ্+ণক= লেখক ইত্যাদি

বিশেষ নিয়ম :

ক) ণক-প্রত্যয় পরে থাকলে নিজন্ত ধাতুর ‘ই’ কারের লোপ হয়। যেমন: √পুঁজি+ণক=পুজক

এরূপ : জনক, চালক, স্তাবক

খ) আ-কারান্ত ধাতুর পরে ণক প্রত্যয় হলে ধাতুর শেষে ‘য়’ আসে। যেমন : √দা+ণক=দায়ক   বি-√ধা+ণক=বিধায়ক

৭. ঘ্যণ-প্রত্যয় [ঘ, ণ-ইৎ, য (য-ফলা) থাকে] : কর্ম ও ভাববাচ্যে ঘ্যণ্ হয়। যেমন : √কৃ+ঘ্যণ্=কায্য>কার্য, √ধৃ+ঘ্যণ্=ধায্য। এরূপ : পরিহার্য, বাচ্য, ভোজা, যোগ্য, হাস্য ইত্যাদি। (দ্রষ্টব্য : আধুনিক বাংলা বানানে রেফ+য+য=র্য্য হয় না, র্য হয়।)

৮. য-প্রত্যয় : কর্ম ও ভাববাচ্যে যোগ্যতা ও ঔচিত্য অর্থে ‘ষ’ প্রত্যয় যুক্ত হয়। ‘ষ’ যুক্ত হলে আ-কারান্ত ধাতুর আ-কার স্থলে এ- কারান্ত হয় এবং ‘ষ’ ‘য়’ হয়। যেমন : √দা+য= দা>দে+ষ>য়= দেয়। √হা+ষ=হেয়।

এরূপ : বিধেয়, অজেয়, পরিমেয়, অনুমেয় ইত্যাদি।

৯. ণিন-প্রত্যয় (ণ ইৎ, ইণ্ থাকে, ইন্ ‘ঈ’- কার হয়) : √গ্রহ+ণিন=গ্রাহী, √পা+ণিন=পায়ী। এরূপ : কারী, দ্রোহী, সত্যবাদী, ভাবী, স্থায়ী গামী। কিন্তু ‘দিন’ যুক্ত হলে ‘হন’ ধাতুর স্থলে ‘ঘাত’ হয়। যেমন : আত্ম-√হণ্+ণিন=আত্মবাতী

১০. ইন্ প্রত্যয় (ইন্) =ঈ=কার হয়) : শ্রম্+ইন্=শ্রমী।

১১. অল্-প্রত্যয় (ল ইৎ, অ থাকে) : √জি+অল্=জয়      √ক্ষি+অল্=ক্ষয়

এরূপ : ভয়, নিচয়, বিনয়, ভেদ, বিলয়।

ব্যতিক্রম: √হণ্+অল্=বধ।

কৃদন্ত বিশেষণ গঠনে কতিপয় কৃৎপ্রত্যয়

১. ইষ্ণু-প্রত্যয় : √চল্+ইষ্ণু=চলিষ্ণু। এরূপ : ক্ষয়িষ্ণু, বর্ধিষ্ণু।

২. বর-প্রত্যয় : √ঈশ।+বর=ঈশ্বর √তাস্+বর=ভাস্বর

এরূপ : নশ্বর, স্বাবর।

৩. র-প্রত্যয় : √হিন+স। +র=হিংস্র     √নম্+র=নম্র

৪. উক/উক-প্রত্যয় : √ভু+উক=(ভৌ+উক)=ভাবুক √জাগৃ+উক=(জাগর+ঊক) জাগরূক

৫. শানচ্ - প্রত্যয় (‘শ’ ও ‘চ’ ইৎ ‘আন’ বিকল্পে ‘মান’ থাকে) : √দীপ্+শানচ্=দীপ্যমান।

এরূপ : √চল্+শানচ্= চলমান, √বৃধ্+শানচ্=বধরমান।

৬. ঘঞ- প্রত্যয় [(কৃদন্ত বিশেষ্য গঠনে), ঘৃ ও ঞ ইৎ, ‘অ’ থাকে] :

√বস্+ঘঞ্=বাস √যুজ্+ঘঞ=যোগ   √ক্রুধ্+ ঘঞ্=ক্রোধ √খুদ্+ঘঞ্=খেদ √ভিদ্+ঘঞ্=ভেদ

বিশেষ নিয়ম : √ত্যজ্+ঘঞ্=ত্যাগ  √পচ্+ঘঞ্=পাক  √শুচ্+ ঘঞ্= শোক    

কিন্তু √নন্দি+অন=নন্দন। এক্ষেত্রে আ যোগে ‘নন্দনা’ হয় না।

তদ্ধিত প্রত্যয়ের সংজ্ঞা ও প্রকরণ

শব্দের পরে যে প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে তাকে তদ্ধিত প্রত্যয় বলে। যেমন : বাঘ+আ=বাঘা সোনা+আলি =সোনালি সপ্তাহ+ইক=সাপ্তাহিক ইত্যাদি।

শব্দের সঙ্গে (শেষে) যেসব প্রত্যয় যোগে নতুন শব্দ গঠিত হয় তাদের তদ্ধিত প্রত্যয় বলা হয়। যেমন : ১. ছেলেটি বড় লাজুক ২. বড়াই করা ভালো না ৩. ঘরামি ডেকে ঘর ছেয়ে নে

ওপরের ‘লাজুক’, ‘বড়াই’ শব্দগুলো গঠিত হয়েছে এভাবে : লাজুক=লাজ+উক; বড়াই=বড়+আই, ঘরামি=ঘর+আমি। ‘লাজ’ ‘বড়’ ও ‘ঘর’ শব্দগুলোর পরে যথাক্রমে ‘উক’, ‘আই’ ও ‘আমি’ (প্রত্যয়) যোগ করে নতুন শব্দ গঠিত হয়েছে। এখানে ‘লাজ’ ‘বড়’ ও ‘ঘর’ শব্দগুলোর সাথে কোনো শব্দ/ বিভক্তি যুক্ত হয়নি। বিভক্তিহীন নাম শব্দকে বলা হয় প্রাতিপদিক। প্রাতিপদিক তদ্ধিত প্রত্যয়ের প্রকৃতি বলে প্রাতিপদিককে নামপ্রকৃতিও বলা হয়। ধাতু যেমন কৃৎপ্রত্যয়ের প্রকৃতি তেমনি প্রাতিপদিকও তদ্ধিত প্রত্যয়ের প্রকৃতি। প্রত্যয় যুক্ত হলে ধাতুকে বলা হয় ক্রিয়াপ্রকৃতি এবং প্রাতিপদিককে বলা হয় নামপ্রকৃতি। তদ্ধিত প্রত্যয়গুলো বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়।

বাংলা ভাষায় তদ্ধিত প্রত্যয় তিন প্রকার। যেমন :

ক. সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয় : যে তদ্ধিত প্রত্যয় সংস্কৃত বা তৎসম শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে তাকে সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয় বলে। যেমন : মনু+ষ্ণ=মানব; লোক+ষ্ণিক=লৌকিক ইত্যাদি।

খ. বাংলা তদ্ধিত প্রত্যয় : বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত সংস্কৃত ও বিদেশি প্রত্যয় ছাড়া বাকি সব প্রত্যয়কে বাংলা তদ্ধিত প্রত্যয় বলে। যেমন : বাঘ+আ=বাঘা; ঘর+আমি=ঘরামি ইত্যাদি।

গ. বিদেশি তদ্ধিত প্রত্যয় : শব্দের শেষে যেসব বিদেশি প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে তাদের বিদেশি তদ্ধিত প্রত্যয় বলে। যেমন: ডাক্তার+খানা=ডাক্তারখানা, ধড়ি+বাজ= ধড়িবাজ।

সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয়

ষ্ণ, ষ্ণি, ষ্ণ্য, ষ্ণিক, ইত, ইমন, ইল, ইষ্ট, ঈন, তর, তম, তা, ত্ব, নীন, নীয়, বতুপ্, বিন, র, ল প্রভৃতি সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয়যোগে যে সমস্ত শব্দ গঠিত হয় সেগুলো বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হয়। এখানে কতগুলো সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয়ের উদাহরণ দেয়া হলো।

যে শব্দের সঙ্গে ষ্ণ (অ)-প্রত্যয় যুক্ত হয়, তার মূল স্বরের বৃদ্ধি হয়। যেমন : নগর+ষ্ণ=নাগর, মধুর+ষ্ণ/য=মাধুর্য।

বৃদ্ধি :

১. ‘অ’ স্থানে আ হয়      ২. ‘ই বা ঈ’ স্থানে ঐ হয়    ৩. ‘উ বা ঊ’ স্থানে ঔ হয়    

৪. ‘ঋ’ স্থানে আর হয় -এসব হওয়াকে বৃদ্ধি বলে

যে শব্দের সঙ্গে ষ্ণ (অ) প্রত্যয় যুক্ত হয়, তার প্রাতিপদিকের অন্ত্যস্বরের উ-কারও ও-কারে পরিণত হয়। ও+অ সন্ধিতে ‘অব’ হয়। যেমন :

গুরু+ষ্ণ=গৌরব   লঘু+ষ্ণ=লাঘব   শিশু+ ষ্ণ+ শৈশব মধু+ষ্ণ=মাধব       মনু+ষ্ণ=মানব

দুটি শব্দের দ্বারা গঠিত সমাসবদ্ধ শব্দের অথবা উপসর্গযুক্ত শব্দের সঙ্গে তদ্ধিত প্রত্যয় যুক্ত হয়ে উপসর্গসহ শব্দের বা শব্দ দুটির মূলস্বরের বৃদ্ধি হয়। যেমন :

পরলোক+ষ্ণিক=পারলৌকিক সুভগ+ষ্ণ্য=সৌভাগ্য পঞ্চভূত+ষ্ণিক=পাঞ্চভৌতিক  সর্বভূমি+ষ্ণ=সার্বভৌম

ব্যাতিক্রম : ‘বর্ষ’ শব্দ পরপদ হলে পূর্বপদের সংখ্যাবাচক শব্দের মূল স্বরের বৃদ্ধি হয় না। যেমন : দ্বিবর্ষ+ ষ্ণিক=দ্বিবার্ষিক। সংখ্যাবাচক শব্দ না থাকলেও নিয়মমতো মূল স্বরের বৃদ্ধি হয়। যেমন : বর্ষ+ষ্ণিক=বার্ষিক

৪. ‘য’ প্রত্যয় যুক্ত হলে প্রাতিপদিকের অস্তে স্থিত অ, আ, ই এবং ঈ-এর লোপ হয়। যেমন :

সম্+য=সাম্য কবি+ য= কাব্য      মধুর+য=মাধুর্য         প্রাচী+য=প্রাচ্য

ব্যতিক্রম : সভা+য=সভ্য (‘সাভ্য’ নয়)।

কয়েকটি সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয়ের নিয়ম

১. ইত- প্রত্যয় : উপকরণজাত বিশেষণ গঠনে : কুসুম+ইত= কুসুমিত, তরঙ্গ+ইত=তরঙ্গিত, কণ্টক+ইত=কণ্টকিত

২. ইমন্-প্রত্যয় : বিশেষ্য গঠনে : নীল+ইমন=নলিমা, মহৎ+ইমন=মহিমা

৩. ইল্-প্রত্যয় : উপকরণজাত বিশেষণ গঠনে : পঙ্ক+ইল্=পঙ্কিল, উর্মি+ইল্=উর্মিল, ফেন+ইল্=ফেনিল

৪. ইষ্ঠ-প্রত্যয় : অভিশায়নে : গুরু+ইষ্ঠ=গরিষ্ঠ, লঘু+ইষ্ঠ=লঘিষ্ঠ

৫. ইন্ (ঈ)-প্রত্যয় : সাধারণ বিশেষণ গঠনে : জ্ঞান+ ইন্=জ্ঞানিন্, সুখ+ইন্=সুখিন্, গুণ+ইন্= গুণিন্, মান+ইন্= মানিন্

সমাসে ইন্ প্রত্যয়ান্ত শব্দের পরে তৎসম শব্দ থাকলে ইন্ প্রত্যয়ান্ত শব্দের ন্ লোপ পায়। যেমন : গুণিগণ, সুখিগণ, মানিজন

কর্তৃকারকের একবচনে ইন্ প্রত্যয় ঈ রূপ গ্রহণ করে। যেমন : জ্ঞান+ইন্ (ঈ) -জ্ঞানী, গুণ+ইন্(ঈ) গুণী

৬. তা ও ত্ব-প্রত্যয় : বিশেষ্য গঠনে : বন্ধু+তা=বন্ধুতা, শত্র“+তা=শত্র“তা, বন্ধু+ত্ব=বন্ধুত্ব, গুরু+ ত্ব= গুরুত্ব, ঘন+ত্ব=ঘনত্ব, মহৎ+ত্ব=মহত্ব

৭. তর ও তম-প্রত্যয় : অতিশায়নে : মধুর-মধুরতর, মধুরতম। প্রিয়-প্রিয়তর, প্রিয়তম

৮. নীন (ঈন্)-প্রত্যয় : তৎসম্পর্কিত অর্থে বিশেষণ গঠনে : সর্বজন+নীন=সর্বজনীন, কুল+নীন=কুলীন, নব+নীন= নবীন

৯. নীয় (ঈয়)-প্রত্যয় : বিশেষণ গঠনে : জল+নীয়=জলীয়, বায়ু+নীয়-বায়বীয়, বর্ষ+ নীয়= বর্ষীয়

বিশেষ নিয়মে : পর-পরকীয়, রাজা-রাজকীয়

১০. বতুপ্ (বৎ) এবং মতুপ্ (মৎ) -প্রত্যয় [প্রথমার এক বচনে যথাক্রমে ‘বান্ এবং ‘মান্’ হয়] : বিশেষণ গঠনে : গুণ+বতুপ্=গুণবান, দয়া+বতুপ্=দয়াবান। শ্রী+মতুপ্= শ্রীমান, বুদ্ধি+মতুপ=বুদ্ধিমান

১১. বিন (বী) প্রত্যয় : আছে অর্থে বিশেষণ গঠনে : মেধা+বিন্=মেধাবী, মায়া+বিন্=মায়াবী, তেজঃ+বিন্=তেজস্বী, যশঃ+বিন্=যশস্বী

১২. র-প্রত্যয় : বিশেষ্য গঠনে : মধু+র=মধুর, মুখ+র= মুখর

১৩. ল-প্রত্যয় : বিশেষ্য গঠনে : শীত+ল=শীতল, বৎস+ল= বৎসল

১৪. ষ্ণ (অ) প্রত্যয়

ক) অপত্য অর্থে : মনু+ষ্ণ=মানব, যদু+ষ্ণ=যাদব।

খ) উপাসক অর্থে : শিব+ষ্ণ=শৈব, জিন+ষ্ণ=জৈন। এরূপ : শক্তি-শাক্ত, বৃদ্ধ-বৌদ্ধ, বিষ্ণু-বৈষ্ণব

গ) ভাব অর্থে: শিশু+ষ্ণ=শৈশব, গুরু+ষ্ণ=গৌরব, কিশোর+ ষ্ণ=কৈশোর

ঘ) সম্পকর বোঝাতে : পৃথিবী+ষ্ণ=পার্থিব, দেব+ষ্ণ=দৈব, চিত্র (একটি নক্ষত্রের নাম)+ষ্ণ=চৈত্র

নিপাতনে সিদ্ধ : সূর্য+ষ্ণ=সৌর (সাধারণ নিয়মে সুর+ষ্ণ (অ) =সৌর

১৫. ষ্ণ্য

ক) অপত্যার্থে : মনুঃ+ষ্ণ্য=মনুষ্য, জমদগ্নি+ষ্ণ্য=জামদগ্ন্য।

খ) ভাবার্থে : সুন্দর+ষ্ণ্য=সৌন্দর্য, শূর+ষ্ণ্য=শৌর্ষ। ধীর+ষ্ণ্য=ধৈর্য, কুমার+ষ্ণ্য=কৌমার্য

গ) বিশেষণ গঠনে : পর্বত+ষ্ণ্য=পার্বত্য, বেদ+ষ্ণ্য=বৈদ্য।

১৬. ষ্ণি (ই)-প্রত্যয় : অপত্য অর্থে : রাবণ+ষ্ণি=রাবণি (রাবণের পুত্র), দশরথ+ষ্ণি=দাশরথি

১৭. ষ্ণিক (ইক)-প্রত্যয়

ক) দক্ষ বা বেত্তা অর্থে : সাহিত্য+ষ্ণিক=সাহিতিক, বেদ+ ষ্ণিক=বৈদিক, বিজ্ঞান+ষ্ণিক=বৈজ্ঞানিক

খ) বিষয়ক অর্থে : সমুদ্র+ষ্ণিক=সামুদ্রিক, নগর-নাগরিক, মাস-মাসিক, ধর্ম-ধার্মিক, সমর-সামরিক, সমাজ-সামাজিক

গ) বিশেষণ গঠনে : হেমন্ত+ষ্ণিক=হৈমন্তিক, অকস্মাৎ +ষ্ণিক=আকস্মিক

১৮. ষ্ণেয় (এর-প্রত্যয় : ভগিনী+ষ্ণেয়=বাগিনেয়, অগ্নি+ ষ্ণেয়=আগ্নেয়, বিমাতৃ (বিমাতা) +ষ্ণেয়=বৈমাত্রেয়

বাংলা তদ্ধিত প্রত্যয়

১. আ- প্রত্যয়

ক) অবজ্ঞার্থে : চোর+আ=চোরা, কেষ্ট+আ=কেষ্টা

খ) বৃহদার্থে : ডিঙি+আ=ডিঙা (সপ্তডিঙা মধুকর)

গ) সদৃশ্য অর্থে : বাঘ+আ=বাঘা, হাত+আ=হাতা। এরূপ : কাল-কালা (চিকন কালা), কান-কানা

ঘ) ‘তাতে আছে’ বা ‘তার আছে’ অর্থে : জল+আ=জলা, গোদ +আ=গোদা। এরূপ : রোগ-রোগা, চাল-চালা, লুন- লুনা>লোনা

ঙ) সমষ্টি অর্থে : বিশ-বিশা, বাইশ-বাইশা (মাসের বাইশা> বাইশে

চ) স্বার্থে : জট+আ=জটা, চোখ-চোখা, চাক- চাকা

ছ) ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য গঠনে : হাজির- হাজিরা, চাষ-চাষা

জ) জাত ও আগত অর্থে : মহিষ, ভইস-ভয়সা (ঘি), দখিন-দখিনা>দখনে (হাওয়া)

২. আই-প্রত্যয়

ক) ভাববাচক বিশেষ্য গঠনে : বড়+আই=বড়াই, চড়া+আই= চড়াই

খ) আদরার্থে : কানু+আই=কানাই, নিম+আই=নিমাই

গ) স্ত্রী বা পুরুষবাচক শব্দের বিপরীত বোঝাতে : বোন+আই =বোনাই, ননদ - নন্দাই, জেঠা-জেঠাই (মা)

ঘ) সমগুণবাচক বিশেষ্য গঠনে : মিঠা+আই=মিঠাই

ঙ) জাত অর্থে : ঢাকা+আই=ঢাকাই (জামদানি), পাবনা-পাবনাই (শাড়ি)

চ) বিশেষণ গঠনে : চোর-চোরাই (মাল), মোগল-মোগলাই (পরোটা)

৩. আমি/আম/আমো/মি-প্রত্যয়

ক) ভাব অর্থে : ইতর+আমি=ইতরামি, পাগল+আমি=পাগলামি, চোর+আমি=চোরামি, বাঁদর+আমি= বাঁদরামি, ফাজিল+আমো= ফাজলামো।

খ) বৃত্তি (জীবিকা) অর্থে : ঠক+আমো =ঠকামো (ঠেকের বৃত্তি বা ভাব), ঘর+আমি=ঘরামি

গ) নিন্দা জ্ঞাপন : জেঠা+আমি=জেঠামি, ছেলে+আমি =ছেলেমি

৪. ই / ঈ- প্রত্যয়

ক) ভাব অর্থে : বাহাদুর+ই=বাহাদুরি, উমেদার- উমেদারি

খ) বৃত্তি বা ব্যবসায় অর্থে : ডাক্তার-ডাক্তারি, মোক্তার-মোক্তারি, পোদ্দার-পোদ্দারি, ব্যাপার-ব্যাপারি, চাষ-চাষি

গ) মালিক অর্থে : জমিদার-জমিদারি, দোকান-দোকানি।

ঘ) জাত, আগত বা সম্বন্ধ বোঝাতে : ভাগলপুর- ভাগলপুরি, মাদ্রাজ- মাদ্রাজি, রেশম-রেশমি, সরকার-সরকারি (সম্বন্ধ বাচক)

৫. ইয়া>এ-প্রত্যয়

ক) তৎকালীনতা বোঝাতে: সেকাল+এ=সেকেলে, একাল+এ=একেলে,ভাদর+ইয়া=ভাদরিয়া>ভাদুরে (কইমাছ)

খ) উপকরণ বোঝাতে : পাথর-পাথরিয়া>পাথুরে, মাটি- মেটে, বালি-বেলে

গ) উপজীবিকা অর্থে : জাল-জালিয়া>জেলে, মোট- মুটে

ঘ) নৈপুণ্য বোঝাতে : খুন-খুনিয়া>খুনে, দেমাক-দেমাকে, না (নৌকা)-নাইয়া>নেয়ে

ঙ) অব্যয়জাত বিশেষণ গঠনে : টনটন-টনটনে (জ্ঞান), কনকন-কনকনে (শীত), গনগন-গনগনে (আগুন), চকচক-চকচকে (জুতা)

৬. উয়া>ও- প্রত্যয়

ক) রোগগ্রস্ত অর্থে : জ্বর+উয়া=জ্বরুয়া>জ্বরো। বাত+উয়া =বাতুয়া>বেতো (ঘোড়া)

খ) যুক্ত অর্থে : টাক -টেকো

গ) সেই উপকরণে নির্মিত অর্থে : খড়-খড়ো (খড়োঘর)

ঘ) জাত অর্থে : ধান-ধেনো।

ঙ) সংশ্লিষ্ট অর্থে : মাঠ-মেঠো, গাঁ-গাঁইয়া>গেঁয়ো

চ) উপজীবিকা অর্থে : দাঁত-দেঁতো (হাসি), ছাঁদ-ছেঁদো (কথা), তেল-তেলো>তেলা (মাথা), কুঁজ- কুঁজো (লোক)

৭. উ-প্রত্যয় : বিশেষণ গঠনে : ঢাল+উ=ঢালু, কল+উ=কল্

ু৮. উক-প্রত্যয় : বিশেষণ গঠনে : লাজ-লাজুক, মিশ-মিশুক, মিথ্যা-মিথ্যুক

৯. আরি/আরী/আরু-প্রত্যয় : বিশেষণ গঠনে : ভিখ-ভিখারি, শাঁখ-শাঁখারি, বোমা-বোমারু

১০. আলি/আলো/আলি/আলী>এল-প্রত্যয় : বিশেষ্য ও বিশেষণ গঠনে : দাঁত-দাঁতাল, লাঠি-লাঠিয়াল>লেঠেল, চতুর-চতুরালি, ঘটক-ঘটকালি, সিঁদ-সিঁদেল, গাঁজা-গেঁজেল

১১. উরিয়া >উড়িয়া/উড়ে/রে-প্রত্যয় : হাট-হাটুরিয়া>হাটুরে, সাপ-সাপুড়িয়া>সাপুড়ে, কাঠ-কাঠুরিয়া>কাঠুরে

১২. উড়-প্রত্যয় : অর্থহীনভাবে : লেজ-লেজুড়।

১৩. উয়া/ওয়া>ও-প্রত্যয় : সম্পর্কিত অর্থে : ঘর+ওয়া = ঘরোয়া, জল উয়া=জলুয়া>জলো (দুধ)

১৪. আটিয়া / টে-প্রত্যয় : বিশেষণ গঠনে : তামা-তামাটিয়া>তামাটে, ঝগড়া-ঝগড়াটে, ভাড়া-ভাড়াটে, রোগা-রোগাটে

১৫. অট>ট-প্রত্যয় : স্বার্থে : ভরা- ভরাট, জমা-জমাট

১৬. লা-প্রত্যয় :

ক) বিশেষণ গঠনে : মেঘ-মেঘলা       খ) স্বার্থে : এক-একলা, আধ-আধলা

বিদেশি তদ্ধিত প্রত্যয়

১. ওয়ালা>আলা (হিন্দি) : বাড়ি-বাড়িওয়ালা (মালিক অর্থে), দিল্লি-দিল্লিওয়ালা (অধিকারী অর্থে), মাছ-মাছওয়ালা (বৃত্তি অর্থে), দুধ-দুধওয়ালা (বৃত্তি অর্থে)

২. ওয়ান>আন (হিন্দি) : গাড়ি-গাড়োয়ান, দার-দারোয়ান

৩. আনা>আনি (হিন্দি) : মুনশি-মুনশিয়ানা, বিবি-বিবিআনা, হিন্দু-হিন্দুয়ানি

৪. পনা (হিন্দি) : পানি-পানসা>পানসে, এক-একসা, কাল (কাল)-কালসা>কালসে

৫. গর>কর (ফারসি) : কারিগর, বাজিকর, সওদাগর

৬. দার (ফারসি) : তাঁবেদার, খবরদার, বুটিদার, দেনাদার, চৌকিদার, পাহারাদার

৭. বাজ (দক্ষ অর্থে-ফারসি) : কলমবাজ, ধড়িবাজ, ধোঁকাবাজ, গলাবাজ+ই=গলাবাজি (বিশেষ্য)

৮. বন্দি (বন্দ্-ফারসি) : জবানবন্দি, সারিবন্দি, নজরবন্দি, কোমরবন্দি

৯. সই (মতো অর্থে): জুতসই, মানানসই, চলনসই, টেকসই

দ্রষ্টব্য : ‘টিপসই’ ও ‘নামসই’ শব্দ দুটোর ‘সই’ প্রত্যয় নয়। এটি ‘সহি’ (অর্থ-স্বাক্ষর) শব্দ থেকে উৎপন্ন

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]