সমাস

সমাস

সমাস মানে সংক্ষেপ, মিলন, একাধিক পদের একপদীকরণ। অর্থসম্বন্ধ আছে এমন একাধিক শব্দের এক সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি বড় শব্দ গঠনের প্রক্রিয়াকে সমান বলে। যেমন : দেশে সেবা=দেশসেবা, বই ও পুস্তক=বইপুস্তক, নেই পরোয়া যার =বেপরোয়া। বাক্যে শব্দের ব্যবহার সংক্ষেপ করার উদ্দেশ্যে সমাসের সৃষ্টি। সমাস দ্বারা দুই বা ততোধিক শব্দের সমন্বয়ে নতুন অর্থবোধক পদ সৃষ্টি হয়। এটি শব্দ তৈরি ও প্রয়োগের একটি বিশেষ রীতি। সমাসের রীতি সংস্কৃত থেকে বাংলায় এসেছে। তবে খাঁটি বাংলা সমাসের দৃষ্টান্তও প্রচুর পাওয়া যায়। সেগুলোতে সংস্কৃতের নিয়ম খাটে না।

সমাসের বৈশিষ্ট্য

১. পাশাপাশি দুই বা তার অধিক শব্দ থাকতে হবে

২. এসব শব্দের মধ্যে অর্থসংগতি থাকতে হবে

৩. এসব শব্দের মধ্যে বৃহৎ শব্দ তৈরির যোগ্যতা থাকতে হবে

৪. নতুন শব্দ গঠন করার ক্ষমতা থাকতে হবে

৫. একাধিক শব্দকে সংকোচিত করার ক্ষমতা থাকতে হবে

৬. শব্দগুলোর বিভক্তি লোপ পেতে হবে

সমাসের প্রয়োজনীয়তা

বাংলা ব্যাকরণে সমাসের প্রয়োজন অনেক। সমাসের মাধ্যমে বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডার বৃদ্ধি ছাড়াও অন্যান্য প্রয়োজন মেটানো যায়। যেমন:

১. সমাসের মাধ্যমে অনেক নতুন শব্দ গঠন করা যায়

২. ভাষাকে সহজসরল, সংক্ষিপ্ত, প্রাঞ্জল ও শ্রুতিমধুর করা যায়

৩. অল্পকথায় ব্যাপকভাব প্রকাশ করা যায়

৪. সহজভাবে শব্দ উচ্চারণ করা যায়

৫. বক্তব্যকে সুন্দর, শ্রুতিমধুর, সংক্ষিপ্ত, সহজসরল, অর্থবহ ও তাৎপর্যপূর্ণ করা যায়

৬. বাক্যকে গতিশীল করা যায়।

সমাসের সাথে অন্য নিয়মের পার্থক্য

সন্ধি ও সমাস

১. বর্ণের সাথে বর্ণের মিলনকে সন্ধি বলে। আর শব্দের সাথে শব্দের মিলনকে সমাস বলে।

২. সন্ধি ব্যাকরণের ধ্বনিতত্ত্বে অবস্থিত। আর সমাস ব্যাকরণের রূপতত্ত্বে অবস্থিত।

৩. সন্ধি ৩ প্রকার। যেমন: স্বরসন্ধি, ব্যঞ্জনসন্ধি ও বিসর্গসন্ধি আর সমাস ৬ প্রকার। যেমন: দ্বন্দ্বসমাস, দ্বিগুসমাস, কর্মধারয়সমাস, তৎপুরুষসমাস, অব্যয়ীভাবসমাস ও বহুব্রীহিসমাস।

৪. সন্ধিতে বিভক্তি লোপ পায় না। আর সমাসে অলুক বাদে অন্য সমাসের বিভক্তি লোপ পায়।

৫. সন্ধিতে বর্ণে বর্ণে মিলন ঘটে। সন্ধিতে শব্দের মিলন বর্ণ ও উচ্চারণভিত্তিক। দুটি বর্ণের মিলন ঘটে। আর সমাসে শব্দে শব্দে বা পদে পদে মিলন ঘটে। সমাসে শব্দের মিলন অর্থভিত্তিক। দুই বা দুয়ের অধিক শব্দের মিলন ঘটে।

৬. সন্ধি অল্প সংখ্যক নতুন শব্দ তৈরি করতে পারে। আর সমাস অনেক নতুন শব্দ তৈরি করতে পারে।

৭. সন্ধির ফলে শব্দের অর্থের পরিবর্তন ঘটে না। আর সমাসের ফলে শব্দের অর্থের পরিবর্তন ঘটে।

৮. সন্ধি শব্দকে গতিশীল করে। সমাস বাক্যকে গতিশীল করে।

৯. সন্ধির নমুনা হলো বিদ্যা+আলয়=বিদ্যালয়, প্রতি+এক=প্রত্যেক, হিম+আলয়=হিমালয় আর সমাসের নমুনা হলো: বিদ্যার জন্য আলয়=বিদ্যালয়, একের পরে এক=প্রত্যেক, হিমের আলয়=হিমালয়।

১০. সন্ধি উচ্চারণকে পরিষ্কার করে। আর সমাস বক্তব্যকে সুন্দর, শ্রুতিমধুর ও সংক্ষিপ্ত করে। 

উপমান, উপমিত ও কর্মধারয় সমাস

১. উপমান ও উপমেয় পদের মধ্যে সাধারণ ধর্ম বা গুণ বজায় থাকলে যে সমাস হয় তাকে উপমান কর্মধারয় সমাস বলে। আর উপমান ও উপমেয় পদের মধ্যে সাধারণ ধর্ম বা গুণ বজায় না থাকলে যে সমাস হয় তাকে উপমিত কর্মধারয় সমাস বলে। আর উপমান ও উপমেয় পদের মধ্যে অভেদ কল্পনা করলে যে সমাস হয় তাকে রূপক কর্মধারয় সমাস বলে। 

২. উপমান বাচক পদ থাকে, সাধারণ ধর্ম বাচক পদ থাকে কিন্তু উপমেয় বাচক পদ থাকে না। উপমেয় বাচক পদ ও উপমান বাচক পদ থাকে কিন্তু সাধারণ ধর্মবাচক পদ থাকে না।   

দুটি শব্দের একটি শব্দ বিশেষ্য, অপরটি বিশেষণ।   দুটি শব্দই বিশেষ্য শব্দ।

দুটি শব্দই বিশেষ্য শব্দ।

সাধারণ ধর্মবাচক শব্দের প্রাধান্য। যেমন: তুষারের ন্যায় ধবল=তুষারধবল

তুষার=উপমান ও বিশেষ্য

ধবল=উপমিত ও বিশেষণ    উপমেয় বাচক শব্দের প্রাধান্য। যেমন:

পুরুষসিংহের ন্যায়=পুরুষসিংহ

পুরুষ=উপমেয় ও বিশেষ্য

সিংহ=উপমান ও বিশেষ্য     উপমেয় শব্দের পূর্বে বসে আর উপমান পরে বসে।

সমস্যমান পদে ন্যায় বসে। যদি তুলনামূলক শব্দ অর্থাৎ ‘মতো/ন্যায়’ থাকে তাহলে শব্দের মাঝে বসে।     সমস্যমান পদে ন্যায় বসে। যদি তুলনামূলক শব্দ অর্থাৎ ‘মতো/ন্যায়’ থাকে তাহলে শব্দের শেষে বসে।  সমস্যমান পদে রূপ বসে।

রূপ শব্দটি দুটি শব্দের মাঝে বসে।

তুষারশ্রুভ্র=তুষারের ন্যায়/মতো শুভ্র   মুখচন্দ্র=মুখ চন্দ্রের ন্যায়/মতো মনমাঝি=মন রূপ মাঝি

বিদ্যাধন=বিদ্যা রূপ ধন

অলুক দ্বন্দ্ব, অলুক তৎপুরুষ ও অলুক বহুব্রীহি

অলুক অর্থ লোপ হয় না এমন। যে সমাসে পূর্বশব্দের বিভক্তি লোপ হয় না তাকে অলুক সমাস বলে। তিনটি সমাসেই অলুকসমাস হয়। যেমন: অলুক দ্বন্দ্ব, অলুক তৎপুরুষ ও অলুক বহুব্রীহি।

যে দ্বন্দ্ব সমাসে সমস্যমান পদের বিভক্তি লোপ পায় না তাকে অলুক দ্বন্দ্ব সমাস বলে। যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বশব্দের বিভক্তি লোপ পায় না তাকে অলুক তৎপুরুষ সমাস বলে। যে বহুব্রীহি সমাসে পূর্বশব্দের বা পরশব্দের কোনো পরিবর্তন হয় না তাকে অলুক বহুব্রীহি সমাস বলে। দুধেভাতে=দুধে ও ভাতে। হাতেকলমে=হাতে ও কলমে। ঘিয়েভাজা=ঘিয়ে ভাজা। গায়েপড়া=গায়ে পড়া। কানেখাটো= কানে খাটো যে। মাথায়পাগড়ি=মাথায় পাগড়ি যার।

সমাসের উপাদান

সমাসের প্রক্রিয়ায় সমাসবদ্ধ বা সমাসনিষ্পন্ন পদকে সমস্ত পদ বলে। সমস্ত পদ বা সমাসবদ্ধ পদটির অন্তর্গত পদকে সমস্যমান পদ বলে। সমাসযুক্ত পদের প্রথম অংশ বা শব্দকে পূর্বপদ বলে এবং পরবর্তী অংশ বা শব্দকে উত্তরপদ বা পরপদ বলে। সমস্ত পদকে ভেঙে যে বাক্যাংশ করা হয় তাকে সমাসবাক্য, ব্যাসবাক্য বা বিগ্রহবাক্য বলে। যেমন : বিলাতফেরত রাজকুমার সিংহাসনে বসলেন। এখানে বিলাতফেরত, রাজকুমার ও সিংহাসন-তিনটিই সমাসবদ্ধ পদ। এগুলোর গঠন প্রক্রিয়া ও রকম-বিলাত হতে ফেরত, রাজার কুমার, সিংহ চিহ্নিত আসন-এগুলো হলো ব্যাসবাক্য। এসব ব্যাসবাক্যে ‘বিলাত’, ‘ফেরত’, ‘রাজা, ‘কুমার,’ ‘সিংহ’, ‘আসন’ হলো এক একটি সমস্যমান পদ। আর বিলাতফেরত, রাজকুমার ও সিংহাসন সমস্ত পদ। বিলাত, রাজা ও সিংহ হলো পূর্বপদ এবং ফেরত, কুমার ও আসন হলো পরপদ।

১. সমাসজাত শব্দ/সমাসবদ্ধ শব্দ/সমস্ত= শব্দ শব্দে শব্দে তৈরিকৃত শব্দই সমাসজাত শব্দ। সমাসের প্রক্রিয়ায় সমাসবদ্ধ বা সমাস নিষ্পন্ন পদটির নাম সমস্ত পদ।

২. সমস্যমানপদ-সমাসজাত শব্দ বা ব্যাসবাক্যের প্রতিটি পদকে সমস্যমানপদ বলে। সমস্ত পদ বা সমাসবদ্ধ পদটির অন্তর্গত পদগুলোই সমস্যমান পদ।

৩. ব্যাসবাক্য /সমাসবদ্ধ/বিগ্রহবাক্য-সমস্যমানপদকে ব্যাসবাক্য বলে। সমস্ত পদকে ভেঙে যে বাক্যাংশ করা হয় তার নাম সমাসবাক্য, ব্যাসবাক্য বা বিগ্রহবাক্য।

৪. পূর্বপদ-ব্যাসবাক্যে প্রথম শব্দকে পূর্বপদ বলে। সমাসযুক্ত পদের প্রথম অংশ বা শব্দকে বলা হয় পূর্বপদ।

৫. পরপদ/উত্তরপদ-ব্যাসবাক্যে শেষ পদকে পরপদ বা উত্তরপদ বলে। আর পরবর্তী অংশ বা শব্দকে বলা হয় উত্তরপদ বা পরপদ।

৬. বিলাতফেরত রাজকুমার সিংহাসনে বসলেন। এখানে ‘বিলাতফেরত, রাজকুমার ও সিংহাসন’ তিনটিই সমাসবদ্ধ পদ। এগুলোর গঠন প্রক্রিয়া : বিলাত হতে ফেরত, রাজার কুমার, সিংহ চিহ্নিত আসন-এগুলো হলো ব্যাসবাক্য। এসব ব্যাসবাক্যে ‘বিলাত’, ‘ফেরত’, ‘রাজা, ‘কুমার,’ ‘সিংহ’, ‘আসন’ হলো এক একটি সমস্যমান পদ। আর বিলাতফেরত, রাজকুমার ও সিংহাসন সমস্ত পদ। বিলাত, রাজা ও সিংহ হলো পূর্বপদ আর ফেরত, কুমার ও আসন হলো পরপদ।

সমাসের প্রকরণ

সমাস প্রধানত ছয় প্রকার। যেমন : দ্বন্দ্ব, কর্মধারয়, তৎপুরুষ, বহুব্রীহি, দ্বিগু ও অব্যয়ীভাব সমাস। দ্বিগু সমাসকে অনেক ব্যাকরণবিদ কর্মধারয় সমাসের অন্তর্ভূক্ত করেছেন। আবার কেউ কেউ কর্মধারয়কেও তৎপুরুষ সমাসের অন্তর্ভুক্ত বলে মনে করেছেন। এদিক থেকে সমাস মূলত চার প্রকার। যেমন: দ্বন্দ্ব, তৎপুরুষ, বহুব্রীহি, অব্যয়ীভাব সমাস। কিন্তু সাধারণভাবে ছয়টি সমাসেরই আলোচনা করা গেলো। এছাড়া প্রাদিসমাস, নিত্যসমাস, অলুকসমাস ইত্যাদি কয়েকটি অপ্রধান সমাস রয়েছে। সংক্ষেপে সেগুলোও আলোচনা করা হয়েছে।

সকল সমাসের সংজ্ঞা

সমাস : অর্থসম্বন্ধ আছে এমন একাধিক শব্দের এক সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি বড় শব্দ গঠনের প্রক্রিয়াকে সমান বলে।

১. দ্বন্দ্ব সমাস : যে সমাসে প্রত্যেকটি সমস্যমান পদের অর্থের প্রাধান্য থাকে তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে। যেমন:

২. দ্বিগু সমাস : সমাহার (সমষ্টি) বা মিলন অর্থে সংখ্যাবাচক শব্দের সঙ্গে বিশেষ্য পদের যে সমাস হয় তাকে দ্বিগু সমাস বলে। যেমন: মা ও বাবা=মা-বাবা।

৩. কর্মধারয় সমাস : যেখানে বিশেষণ বা বিশেষণভাবাপন্ন পদের সাথে বিশেষ্য বা বিশেষ্যভাবাপন্ন পদের সমাস হয় এবং পরপদের অর্থই প্রধানরূপে প্রতীয়মান হয় তাকে কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন: নীল যে পদ্ম =নীলপদ্ম।

৪. তৎপুরুষ সমাস : পূর্বপদের বিভক্তির লোপে যে সমাস হয় এবং যে সমাসে পরপদের অর্থ প্রধানভাবে বোঝায় তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন: মন দিয়ে গড়া =মনগড়া।

৫. বহুব্রীহি সমাস : যে সমাসে সমস্যমান পদগুলোর কোনোটির অর্থ না বুঝিয়ে অন্যকোনো পদকে বোঝায় তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন: মহান আত্মা যার=মহাত্মা।

৬. অব্যয়ীভাব সমাস : পূর্বপদে অব্যয়যোগে নিষ্পন্ন সমাসে যদি অব্যয়েরই অর্থের প্রাধান্য থাকে তবে তাকে অব্যয়ীভাব সমাস বলে। যেমন: মরণ পর্যন্ত=আমরণ।

৭. প্রাদি সমাস : প্র, প্রতি, অনু প্রভৃতি অব্যয়ের সঙ্গে যদি কৃৎপ্রত্যয় সাধিত বিশেষ্যের সমাস হয় তবে তাকে বলে প্রাদি সমাস। যেমন: প্র যে বচন =প্রবচন।

৮. নিত্যসমাস : যে সমাসে সমস্যমান পদগুলো নিত্যসমাসবদ্ধ থাকে, ব্যাসবাক্যের দরকার হয় না তাকে নিত্যসমাস বলে। যেমন: অন্য গ্রাম=গ্রামান্তর।

৯. অলুক দ্বন্দ্ব : যে দ্বন্দ্ব সমাসে কোনো সমস্যমান পদের বিভক্তি লোপ হয় না তাকে অলুক দ্বন্দ্ব বলে। যেমন : দুধে-ভাতে, হাতে-কলমে।

১০. মধ্যপদলোপী কর্মধারয় : যে কর্মধারয় সমাসে ব্যাসবাক্যের মধ্যপদের লোপ হয় তাকে মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন: স্মৃতি রক্ষার্থে সৌধ=স্মৃতিসৌধ।

১১. উপমান কর্মধারয় : সাধারণ ধর্মবাচক পদের সাথে উপমানবাচক পদের যে সমাস হয় তাকে উপমান কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন: তুষারের ন্যায় শুভ্র=তুষারশুভ্র।

১২. উপমিত কর্মধারয় : সাধারণ গুণের উল্লেখ না করে উপমেয় পদের সাথে উপমানের যে সমাস হয় তাকে উপমিত কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন: মুখ চন্দ্রের ন্যায়=মুখচন্দ্র।

১৩. রূপক কর্মধারয় : উপমান ও উপমেয়ের মধ্যে অভিন্নতা কল্পনা করা হলে রূপক কর্মধারয় সমাস হয়। যেমন : মন রূপ মাঝি=মনমাঝি।

১৪. দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস : পূর্বপদের দ্বিতীয়া বিভক্তি (কে, রে) ইত্যাদি লোপ হয়ে যে সমাস হয় তাকে দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন: বিপদকে আপন্ন=বিপদাপন্ন।

১৫. তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস : পূর্বপদে তৃতীয়া বিভক্তির (দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক ইত্যাদি) লোপে যে সমাস হয় তাকে তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন: মধু দিয়ে মাখা=মধুমাখা।

১৬. অলুক তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস : পূর্বপদের তৃতীয়া বিভক্তি দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক ইত্যাদি লোপ না হলে অলুক তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস হয়। যেমন: তেলে ভাজা=তেলে ভাজা।

১৭. চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস : পূর্বপদে চতুর্থী বিভক্তি (কে, জন্য, নিমিত্ত ইত্যাদি) লোপে যে সমাস হয় তাকে চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন: মেয়েদের জন্য স্কুল= মেয়েস্কুল।

১৮. পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস : পূর্বপদে পঞ্চমী বিভক্তি (হতে, থেকে ইত্যাদি) লোপে যে তৎপুরুষ সমাস হয় তাকে পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন: বিলাত থেকে ফেরত =বিলাতফেরত।

১৯. ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস : পূর্বপদে ষষ্ঠী বিভক্তির (র, এর) লোপ হয়ে যে সমাস হয় তাকে ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন: রাজার পুত্র=রাজপুত্র।

২০. অলুক ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস : র/এর-বিভক্তি লোপ না পেয়ে যে সমাস হয় তাকে অলুক ষষ্ঠী সমাস বলে। যেমন: মাটির মানুষ=মাটির মানুষ।

২১. সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস : পূর্বপদে সপ্তমী বিভক্তি (এ,য়, তে) লোপ হয়ে যে সমাস হয় তাকে সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন: গাছে পাকা =গাছপাকা।

২২. নঞ্ তৎপুরুষ সমাস : না বাচক নঞ অব্যয় (না, নেই, নাই, নয়) পূর্বে বসে যে তৎপুরুষ সমাস হয় তাকে নঞ্ তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন: ন আচার =অনাচার।

২৩. উপপদ তৎপুরুষ সমাস : কৃদন্ত পদের সঙ্গে উপপদের যে সমাস হয় তাকে বলে উপপদ তৎপুরুষ সমাস। যেমন: পঙ্কে জন্মে যা=পঙ্কজ।

২৪. অলুক তৎপুরুষ সমাস : যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদের দ্বিতীয়াদি বিভক্তি লোপ হয় না তাকে অলুক তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন: ঘিয়ে ভাজা=ঘিয়ে ভাজা।

২৫. সমানাধিকরণ বহুব্রীহি : পূর্বপদ বিশেষণ ও পরপদ বিশেষ হলে সমানাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস হয়। যেমন: খোশ মেজাজ যার =খোসমেজাজ।

২৬. ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি : বহুব্রীহি সমাসের পূর্বপদ এবং পরপদ কোনোটিই যদি বিশেষণ না হয় তাকে বলে ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি। যেমন: দুই কান কাটা যার=দু কানকাটা।

২৭. ব্যতিহার বহুব্রীহি : ক্রিয়ার পারস্পরিক অর্থে ব্যতিহার বহুব্রীহি হয়। যেমন: কানে কানে যে কথা=কানাকানি।

২৮. নঞ্ বহুব্রীহি : বিশেষ্য পূর্বপদের আগে নঞ্ (না অর্থবোধক) অব্যয় যোগ করে বহুব্রীহি সমাস করা হলে তাকে নঞ্ বহুব্রীহি বলে। যেমন: নাই জ্ঞান যার=অজ্ঞান।

২৯. মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি : বহুব্রীহি সমাসের ব্যাখ্যার জন্য ব্যবহৃত বাক্যাংশের কোনো অংশ যদি সমস্তপদে লোপ পায় তবে তাকে মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি বলে। যেমন: হাতে খড়ি দেয়া হয় যে অনুষ্ঠানে=হাতেখড়ি।

৩০. প্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহি : যে বহুব্রীহি সমাসের সমস্তপদে আ, এ, ও ইত্যাদি প্রত্যয় যুক্ত হয় তাকে বলা হয় প্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহি। যেমন: এক দিকে চোখ যার=একচোখা।

৩১. অলুক বহুব্রীহি : যে বহুব্রীহি সমাসে পূর্ব বা পরপদের কোনো পরিবর্তন হয় না তাকে অলুক বহুব্রীহি বলে। যেমন: মাথায় পাগড়ি যার=মাথায় পাগড়ি।

৩২. সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি : পূর্বপদ সংখ্যাবাচক এবং পরপদ বিশেষ্য হলে এবং সমস্তপদটি বিশেষণ বোঝালে তাকে সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি বলা হয়। যেমন: দশ গজ পরিমাণ যার= দশগজি।

৩৩. নিপাতনে বহুব্রীহি সিদ্ধ : যে সমাস কোনো নিয়মের অধীনে নয় তাকে নিপাতনে বহুব্রীহি সিদ্ধ বলে। যেমন : দু দিকে অপ যার=দ্বীপ। জীবিত থেকেও যে মৃত= জীবন্মৃত।

দ্বন্দ্ব সমাসের সংজ্ঞা

যে সমাসে প্রত্যেকটি সমস্যমান পদের অর্থের প্রাধান্য থাকে তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে। যেমন :

তাল ও তমাল=তাল-তমাল      দোয়াত ও কলম=দোয়াত-কলম

এখানে তাল ও তমাল এবং দোয়াত ও কলম প্রতিটি পদেরই অর্থের প্রাধান্য সমস্ত পদে রক্ষিত হয়েছে। দ্বন্দ্ব সমাসে পূর্বপদ ও পরপদের সম্বন্ধ বোঝানোর জন্য ব্যাসবাক্যে এবং, ও, আর-এ তিনটি অব্যয় পদ ব্যবহৃত হয়। যেমন : মাতা ও পিতা=মাতাপিতা।

দ্বন্দ্ব সমাসের প্রকরণ

দ্বন্দ্ব সমাস কয়েক প্রকারে সাধিত হয়। যেমন :

১. মিলনার্থক শব্দযোগে: মা-বাপ, মাসি-পিসি, জ্বিন-পরি, চা-বিস্কুট ইত্যাদি।

২. বিরোধার্থক শব্দযোগে : দা-কুমড়া, অহি-নকুল, স্বর্গ-নরক ইত্যাদি।

৩. বিপরীতার্থক শব্দযোগে: আয়-ব্যয়, জমা-খচর, ছোট-বড়, ছেলে-বুড়ো, লাভ-লোকসান ইত্যাদি।

৪. অঙ্গবাচক শব্দযোগে : হাত-পা, নাক-কান, বুক-পিঠ, মাথা-মুন্ডু, নাক-মুখ ইত্যাদি।

৫. সংখ্যাবাচক শব্দযোগে : সাত-পাঁচ, নয়-ছয়, সাত-সতের, উনিশ-বিশ ইত্যাদি।

৬. সমার্থক শব্দযোগে: হাট-বাজার, ঘর-দুয়ার, কল-কারখানা, মোল্লা-মৌলভি, খাতা-পত্র ইত্যাদি।

৭. প্রায় সমার্থক ও সহচর শব্দযোগে: কাপড়-চোপড়,পোকা-মাকড়, দয়া-মায়া, ধূতি-চাদর ইত্যাদি।

৮. দুটি সর্বনামযোগে: যা-তা, যে-সে, যেমন-তেমন,যথা-তথা,তুমি-আমি, এখানে-সেখানে ইত্যাদি।

৯. দুটি ক্রিয়াযোগে : দেখা-শোনা, যাওয়া-আসা, চলা-ফেরা, দেওয়া-থোওয়া ইত্যাদি।

১০. দুটি ক্রিয়া বিশেষণযোগে : ধীরে-সুস্থে, আগে-পাশে, আকারে-ইঙ্গিতে ইত্যাদি।

১১. দুটি বিশেষণযোগে : ভালো-মন্দ, কম-বেশি, আসল-নকল, বাকি-বকেয়া ইত্যাদি।

অলুক দ্বন্দ্ব : যে দ্বন্দ্ব সমাসে কোনো সমস্যমান পদের বিভক্তি লোপ হয় না তাকে অলুক দ্বন্দ্ব বলে। যেমন : দুধে-ভাতে, জলে-স্থলে, দেশে-বিদেশে, হাতে-কলমে।

*তিন বা বহু পদে দ্বন্দ্ব সমাস হলে তাকে বহুপদী দ্বন্দ্ব সমাস বলে। যেমন : সাহেব-বিবি-গোলাম, হাত-পা-নাক-মুখ-চোখ ইত্যাদি।

দ্বন্দ্ব সমাসের গাণিতিক গঠন

পূর্বপদ  + ও/আর  + পরপদ   =দ্বন্দ্ব সমাস

বিশেষ্য + ও/আর  + বিশেষ্য    =দ্বন্দ্ব সমাস

সর্বনাম + ও/আর  +সর্বনাম     =দ্বন্দ্ব সমাস

বিশেষণ + ও/আর  + বিশেষণ   =দ্বন্দ্ব সমাস

ক্রিয়া    + ও/আর  + ক্রিয়া     =দ্বন্দ্ব সমাস

ক্রিয়াবিশেষণ  + ও/আর + ক্রিয়াবিশেষণ =দ্বন্দ্ব সমাস

দিগু সমাসের সংজ্ঞা ও ব্যবহার

সমাহার (সমষ্টি) বা মিলন অর্থে সংখ্যাবাচক শব্দের সঙ্গে বিশেষ্য পদের যে সমাস হয় তাকে দ্বিগু সমাস বলে। দ্বিগু সমাসে সমাসনিষ্পন্ন পদটি বিশেষ্য পদ হয়। যেমন :

তিন কালের সমাহার=ত্রিকাল     চৌরাস্তার সমাহার=চৌরাস্তা তিন মাথার সমাহার=তেমাথা

শত অব্দের সমাহার=শতাব্দী     পঞ্চবটের সমাহার=পঞ্চবটী  ত্রি (তিন) পদের সমাহার=ত্রিপদী

এরূপ : অষ্টধাতু, চতুর্ভুজ, চতুরঙ্গা, ত্রিমোহিনী, তেরনদী, পঞ্চভূত, সাতসমুদ্র ইত্যাদি।

দ্বিগু সমাসের গাণিতিক গঠন

সংখ্যা + বিশেষ্য    + র/এর    + সমাহার   =দ্বিগু সমাস

কর্মধারয় সমাসের সংজ্ঞা ও প্রকরণ

যেখানে বিশেষণ বা বিশেষণভাবাপন্ন পদের সাথে বিশেষ্য বা বিশেষ্যভাবাপন্ন পদের সমাস হয় এবং পরপদের অর্থই প্রধানরূপে প্রতীয়মান হয় তাকে কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন : নীল যে পদ্ম=নীলপদ্ম      শান্ত অথচ শিষ্ট=শান্তশিষ্ট      কাঁচা অথচ মিঠা=কাঁচামিঠা

কর্মধারয় সমাস কয়েক প্রকার হতে পারে। যেমন : মধ্যপদলোপী, উপমান, উপমিত ও রূপক কর্মধারয় সমাস।

কর্মধারয় সমাস গঠনের নিয়ম

কর্মধারয় সমাস কয়েক প্রকারে সাধিত হয়। যেমন :

১. দুটি বিশেষণ পদে একটি বিশেষ্যকে যেমন : যে চালাক সেই চতুর=চালাক-চতুর।

২. দুটি বিশেষ্য পদে একই ব্যক্তি বা বস্তুকে বোঝালে। যেমন: যিনি জজ তিনিই সাহেব=জজ সাহেব।

৩. কার্যে পরম্পরা বোঝাতে দুটি কৃদন্ত বিশেষণ পদের কর্মধারয় সমাস হয়। যেমন : আগে ধোয়া পরে মোছা =ধোয়ামোছা।

৪. পূর্বপদে স্ত্রীবাচক বিশেষণ থাকলে কর্মধারয় সমাসে সেটি পুরুষ বাচক হয়। যেমন :

সুন্দরী যে লতা=সুন্দরলতা       মহতী যে কীর্তি=মহাকীর্তি

৫. বিশেষণবাচক মহান বা মহৎ শব্দ পূর্বপদ হলে, ‘মহৎ’ ও ‘মহান’ স্থানে ‘মহা’ হয়। যেমন :

মহৎ যে জ্ঞান=মহাজ্ঞান   মহান যে নবি =মহানবি     মহৎ/মহতী যে কীর্তি=মহাকীর্তি

৬. পূর্বপদে ‘কু’ বিশেষণ থাকলে এবং পরপদের প্রথমে স্বরধনি থাকলে ‘কু’ স্থানে ‘কৎ’ হয়। যেমন

কু যে অর্থ=কদর্থ                  কু যে আচার=কদাচার

৭. পরপদে ‘রাজা’ শব্দ থাকলে কর্মধারয় সমাসে ‘রাজ’ হয়। যেমন : মহান যে রাজা=মহারাজ।

৮. বিশেষণ ও বিশেষ্য পদে কর্মধারয় সমাস হলে কখনো কখনো বিশেষণ পরে আসে, বিশেষ্য আগে যায়। যেমন :

সিদ্ধ যে আলু=আলুসিদ্ধ          অধম যে নর=নরাধম

কর্মধারয় সমাসের গাণিতিক গঠন

১. সাধারণ কর্মধারয়

*বিশেষণ + যে + বিশেষ্য=কর্মধারয় সমাস অথবা বিশেষ্য + যে + বিশেষণ=কর্মধারয় সমাস

*বিশেষ্য +বিশেষ্য +যে=কর্মধারয় সমাস

*যা+বিশেষণ + তাই + বিশেষণ=কর্মধারয় সমাস

*যে+বিশেষণ+ সে + বিশেষণ=কর্মধারয় সমাস

*যে+বিশেষ্য+সেই+ বিশেষ্য=কর্মধারয় সমাস অথবা যে+বিশেষণ+সেই+ বিশেষণ=কর্মধারয় সমাস

*যিনি + বিশেষ্য + তিনি + বিশেষ্য=কর্মধারয় সমাস

২. মধ্যপদলোপি কর্মধারয়

বিশেষ্য + চিহ্নিত/মিশ্রিত/বিষয়ক/রক্ষার্থে/মাখা/ + বিশেষ্য=মধ্যপদলোপি কর্মধারয়

৩. উপমান কর্মধারয়

বিশেষ্য + র/এর + মতো/ন্যায় + বিশেষণ= উপমান কর্মধারয়

৪. উপমিত কর্মধারয়

বিশেষ্য + বিশেষ্য + র/এর + মতো/ন্যায়= উপমিত কর্মধারয়

৫. রূপক কর্মধারয়

বিশেষণ (বিশেষ্য থাকলেও বিশেষণ অর্থ প্রকাশ পায়)+ রূপ + বিশেষ্য=রূপক কর্মধারয়

মধ্যপদলোপী কর্মধারয়

যে কর্মধারয় সমাসে ব্যাসবাক্যের মধ্যপদের লোপ হয় তাকে মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন :

সিংহ চিহ্নিত আসন=সিংহাসন  সাহিত্য বিষয়ক সভা=সাহিত্যসভা স্মৃতি রক্ষার্থে সৌধ=মৃতিসৌধ

মধ্যপদলোপি কর্মধারয় সমাসের গাণিতিক সূত্র

বিশেষ্য + চিহ্নিত/মিশ্রিত/বিষয়ক/রক্ষার্থে/মাখা/ + বিশেষ্য=মধ্যপদলোপি কর্মধারয়

উপমান কর্মধারয়

উপমান অর্থ তুলনীয় বস্তু। প্রত্যক্ষ কোনো বস্তুর সাথে পরোক্ষ কোনো বস্তুর তুলনা করলে প্রত্যক্ষ বস্তুটিকে বলা হয় উপমেয় আর যার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে তাকে বলা হয় উপমান। উপমান ও উপমেয়ের একটি সাধারণ ধর্ম থাকবে। যেমন : ভ্রমরের ন্যায় কৃষ্ণ কেশ=ভ্রমরকৃষ্ণকেশ

এখানে ভ্রমর উপমান এবং কেশ উপমেয়। কৃষ্ণত্ব হলো সাধারণ ধর্ম। সাধারণ ধর্মবাচক পদের সাথে উপমানবাচক পদের যে সমাস হয় তাকে উপমান কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন : তুষারের ন্যায় শুভ্র=তুষারশুভ্র, অরুণের ন্যায় রাঙা=অরুণরাঙা

উপমান কর্মধারয় সমাসের গাণিতিক সূত্র

বিশেষ্য + র/এর + মতো/ন্যায় + বিশেষণ=উপমান কর্মধারয়

উপমিত কর্মধারয়

সাধারণ গুণের উল্লেখ না করে উপমেয় পদের সাথে উপমানের যে সমাস হয় তাকে উপমিত কর্মধারয় সমাস বলে (এ ক্ষেত্রে সাধারণ গুণটিকে অনুমান করে নেওয়া হয়)। এ সমাসে উপমেয় পদটি পূর্বে বসে। যেমন :

মুখ চন্দ্রের ন্যায়=চন্দ্রমুখ     পুরুষ সিংহের ন্যায়=সিংহপুরুষ

উপমিত কর্মধারয় সমাসের গাণিতিক সূত্র

বিশেষ্য + বিশেষ্য + র/এর + মতো/ন্যায়=উপমিত কর্মধারয়

রূপক কর্মধারয়

উপমান ও উপমেয়ের মধ্যে অভিন্নতা কল্পনা করা হলে রূপক কর্মধারয় সমাস হয়। এ সমাসে উপমেয় পদ পূর্বে বসে এবং উপমান পদ পরে বসে এবং সমস্যমান পদে ‘রূপ’ অথবা ‘ই’ যোগ করে ব্যাসবাক্য গঠন করা হয়। যেমন :

ক্রোধ রূপ অনল=ক্রোধানল         বিষাদ রূপ সিন্ধু= বিষাদসিন্ধু                মন রূপ মাঝি=মনমাঝি

আরও কয়েক ধরনের কর্মধারয় সমাস রয়েছে। কখনো কখনো সর্বনাম, সংখ্যাবাচক শব্দ এবং উপসর্গ আগে বসে পরপদের সাথে কর্মধারয় সমাস গঠন করতে পারে। যেমন :

অব্যয় : কুকর্ম, যথাযোগ্য        

সর্বনাম : সেকাল, একাল         

সংখ্যাবাচক শব্দ : একজন, দোতলা          

উপসর্গ : বিকাল, সকাল, বিদেশ, বেসুর

রূপক কর্মধারয় সমাসের গাণিতিক সূত্র

বিশেষণ (বিশেষ্য থাকলেও বিশেষণ অর্থ প্রকাশ পায়)+ রূপ + বিশেষ্য=রূপক কর্মধারয়

তৎপুরুষ সমাসের সংজ্ঞা ও প্রকরণ

পূর্বপদের বিভক্তির লোপে যে সমাস হয় এবং যে সমাসে পরপদের অর্থ প্রধানভাবে বোঝায় তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে। তৎপুরুষ সমাসের পূর্বপদে দ্বিতীয়া থেকে সপ্তমী পর্যন্ত যে কোনো বিভক্তি থাকতে পারে আর পূর্বপদের বিভক্তি অনুসারে এদের নামকরণ হয়। যেমন : বিপদকে আপন্ন=বিপদাপন্ন। এখানে দ্বিতীয়া বিভক্তি ‘কে’ লোপ পেয়েছে বলে এর নাম দ্বিতীয়া তৎপুরুষ।

তৎপুরুষ সমাস নয় প্রকার। যেমন : দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস, তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস, চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস, পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস, ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস, সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস, নঞ তৎপুরুষ সমাস, উপপদ তৎপুরুষ সমাস ও অলুক তৎপুরুষ সমাস।

দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস

পূর্বপদের দ্বিতীয়া বিভক্তি (কে, রে) ইত্যাদি লোপ হয়ে যে সমাস হয় তাকে দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন:

দুঃখকে প্রাপ্ত=দুঃখপ্রাপ্ত  বিপদকে আপন্ন=বিপদাপন্ন পরলোকে গত =পরলোকগত

ব্যাপ্তি অর্থেও দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস হয়। যেমন :

চিরকাল ব্যাপিয়া সুখী=চিরসুখী। এরূপ : গা-ঢাকা, রথদেখা, বীজবোনা, ভাতরাঁধা, ছেলে-ভুলানো (ছড়া), নভেল-পড়

তৎপুরুষ সমাসের গাণিতিক সূত্র

বিশেষ্য (বস্তুবাচক/ব্যক্তি) + কে/ব্যাপিয়া +বিশেষ্য=দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস

তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস

পূর্বপদে তৃতীয়া বিভক্তির (দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক ইত্যাদি) লোপে যে সমাস হয় তাকে তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন :

মন দিয়ে গড়া=মনগড়া শ্রম দ্বারা লব্ধ=শ্রমলব্ধ  মধু দিয়ে মাখা= মধুমাখা ধনে আঢ্য=ধনাঢ্য

ঊন, হীন, শূন্য প্রভৃতি শব্দ উত্তরপদ হলেও তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস হয়। যেমন :

এক দ্বারা উন=একোন    বিদ্যা দ্বারা হীন= বিদ্যাহীন      

জ্ঞান দ্বারা বা জ্ঞানে শূন্য   পাঁচ দ্বারা কম=পাঁচ কম (এক শ)

ক) উপকরণবাচক বিশেষ্য পদ পূর্বপদে বসলেও তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস হয়। যেমন : স্বর্ণ দ্বারা মণ্ডিত=স্বর্ণমণ্ডিত

এরূপ : হীরকখচিত, চন্দনচর্চিত, রত্নশোভিত ইত্যাদি।

খ) পূর্বপদের তৃতীয়া বিভক্তি দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক ইত্যাদি লোপ না হলে অলুক তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস হয়। যেমন :

তেলে ভাজা=তেলেভাজা, কলে ছাঁটা=কলেছাঁটা

এরূপ : তাঁতেবোনা, মায়েখেদানো, পোকায়কাটা (কাপড়), হাতেকাটা (সুতা)

তৎপুরুষ সমাসের গাণিতিক সূত্র

বিশেষ্য + দ্বারা/দিয়ে/কর্তৃক + বিশেষ্য=তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস

চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস

পূর্বপদে চতুর্থী বিভক্তি (কে, জন্য, নিমিত্ত ইত্যাদি) লোপে যে সমাস হয় তাকে চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন :

গুরুকে ভক্তি=গুরুভক্তি  আরামের জন্য কেদারা=আরামকেদারা  বসতের নিমিত্ত বাড়ি=বসতবাড়ি 

বিয়ের জন্য পাগলা = বিয়েপাগলা

এরূপ : ছাত্রাবাস, ডাকমাশুল, চোষকাগজ, শিশুমঙ্গল, মুসাফিরখানা, হজ্জযাত্রা, মালগুদাম, রান্নাঘর, মাপকাঠি, মেয়েস্কুল, বালিকা-বিদ্যালয়, পাগলাগারদ ইত্যাদি।

তৎপুরুষ সমাসের গাণিতিক সূত্র

বিশেষ্য + জন্য/নিমিত্ত + বিশেষ্য=চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস

পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস

পূর্বপদে পঞ্চমী বিভক্তি (হতে, থেকে ইত্যাদি) লোপে যে তৎপুরুষ সমাস হয় তাকে পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন:

খাঁচা থেকে ছাড়া=খাঁচাছাড়া  বিলাত থেকে ফেরত=বিলাতফেরত

সাধারণত চ্যুত, আগত, ভীত, গৃহীত, বিরত, মুক্ত, উত্তীর্ণ, পালানো, ভ্রষ্ট ইত্যাদি পরপদের সঙ্গে যুক্ত হলে পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস হয়। যেমন: স্কুল থেকে পালানো=স্কুলপালানো জেল থেকে মুক্ত=জেলমুক্ত

এরূপ : জেলখালাস, বোঁটাখসা, আগাগোড়া, শাপমুক্ত, ঋণমুক্ত

কোনো কোনো সময় পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাসের ব্যাসবাক্যে ‘এর’ ‘চেয়ে’ ইত্যাদি অনুসর্গের ব্যবহার হয়। যেমন: পরাণের চেয়ে প্রিয়= পরাণপ্রিয়।

তৎপুরুষ সমাসের গাণিতিক সূত্র

বিশেষ্য + হতে/থেকে/চেয়ে + বিশেষ্য=পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস

ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস

পূর্বপদে ষষ্ঠী বিভক্তির (র, এর) লোপ হয়ে যে সমাস হয় তাকে ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন :

চায়ের বাগান=চাবাগান      রাজার পুত্র=রাজপুত্র             খেয়ার ঘাট =খেয়াঘাট

এরূপ : ছাত্রসমাজ, দেশসেবা, দিল্লীশ্বর, বাঁদরনাচ, পাটক্ষেত, ছবিঘর, ঘোড়দৌড়, শ্বশুরবাড়ি, বিড়ালছানা ইত্যাদি।

তৎপুরুষ সমাসের গাণিতিক সূত্র

বিশেষ্য + র/এর + বিশেষ্য=ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস

সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস

পূর্বপদে সপ্তমী বিভক্তি (এ,য়, তে) লোপ হয়ে যে সমাস হয় তাকে সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন :

গাছে পাকা= গাছপাকা     দিবায় নিন্দ্রা=দিবানিদ্রা

এরূপ: বাকপটু, গোলাভরা, তালকানা, অকালমৃত্যু, বিশ্ববিখ্যাত, ভোজনপটু, দানবীর, বাক্সবন্দি, বস্তাপচা, রাতকানা, মনমরা ইত্যাদি।

সপ্তমী তৎপুরুষ সমাসে কোনো কোনো সময় ব্যাসবাক্যে পরপদ সমস্তপদের পূর্বে আসে। যেমন :

পূর্বে ভূত=ভূতপূব    পূর্বে অশ্রুত=অশ্রুতপূর্ব পূর্বে অদৃষ্ট=অদৃষ্টপূর্ব

তৎপুরুষ সমাসের গাণিতিক সূত্র

বিশেষ্য + এ/তে/য় + বিশেষ্য=সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস

নঞ্ তৎপুরুষ সমাস

না বাচক নঞ অব্যয় (না, নেই, নাই, নয়) পূর্বে বসে যে তৎপুরুষ সমাস হয় তাকে নঞ্ তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন :

ন আচার=অনাচার        ন কাতর=অকাতর

এরূপ : অনাদর নাতিদীর্ঘ, নাতিখর্ব, অভাব, বেতাল ইত্যাদি।

খাঁটি বাংলায় অ, আ, না কিংবা অনা হয়। যেমন : ন কাল= অকাল বা আকাল

এরূপ : আধোয়া নামঞ্জুর, অকেজো, অজানা, অচেনা, আলুনি, নাছোড়, অনাবাদী, নাবালক ইত্যাদি।

না বাচক অর্থ ছাড়াও বিশেষ বিশেষ অর্থে নঞ তৎপুরুষ সমাস হতে পারে। যেমন :

অভাব-ন বিশ্বাস = অবিশ্বাস (বিশ্বাসের অভাব)  ভিন্নতা-ন লৌকিক = অলৌকিক অল্পতা - ন কেশা = অকেশা

বিরোধ- ন সুর  = অসুর   অপ্রশস্ত- ন কাল = অসুর  মন্দ     - ন ঘাট = অঘাট

এরূপ : অমানুষ, অসঙ্গত, অভদ্র, অনন্য, অগম্য ইত্যাদি।

তৎপুরুষ সমাসের গাণিতিক সূত্র

ন /নাই /নয় (অ/অন/বে/না/নি/গর) + বিশেষ্য=নং/নঞ তৎপুরুষ সমাস

উপপদ তৎপুরুষ সমাস

যে পদের পরবর্তী ক্রিয়ামূলের সঙ্গে কৃৎপ্রত্যয় যুক্ত হয় সে পদকে উপপদ বলে। কৃদন্ত পদের সঙ্গে উপপদের যে সমাস হয় তাকে বলে উপপদ তৎপুরুষ সমাস। যেমন : জলে চরে যা=জলচর            জল দেয় যে= জলদ         পঙ্কে জন্মে যা=পঙ্কজ

এরূপ : গৃহস্থ, সত্যবাদী, ইন্দ্রজিৎ, ছেলেধরা, ধামাধরা, পকেটমার, পাতাচাটা, হাড়ভাঙ্গা, মাছিমারা, ছারপোকা, ঘরপোড়া, বর্ণচোরা, গলাকাটা, পা-চাটা, পাড়াবেড়ানি, ছা-পোষা ইত্যাদি।

তৎপুরুষ সমাসের গাণিতিক সূত্র

বিশেষ্য + এ বিভক্তি + ক্রিয়া + যে = উপপদ তৎপুরুষ সমাস

অলুক তৎপুরুষ সমাস

যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদের দ্বিতীয়াদি বিভক্তি লোপ হয় না তাকে অলুক তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন : গায়ে পড়া= গায়েপড়া

এরূপ : ঘিয়ে ভাজা, কলে ছাঁটা, কলের গান, গরুর গাড়ি ইত্যাদি।

তৎপুরুষ সমাসের গাণিতিক সূত্র

বিশেষ্য+বিশেষ্য (বিভক্তি লোপ পায় না)=অলুক তৎপুরুষ সমাস

বহুব্রীহি সমাসের সংজ্ঞা

যে সমাসে সমস্যমান পদগুলোর কোনোটির অর্থ না বুঝিয়ে অন্যকোনো পদকে বোঝায় তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন: বহুব্রীহি (ধান) আছে যার=বহুব্রীহি। এখানে ‘বহু’ কিংবা ‘ব্রীহি’ কোনোটিরই অর্থের প্রাধান্য নেই, যার বহু ধান আছে এমন লোককে বোঝাচ্ছে।

বহুব্রীহি সমাসে সাধারণত যার, যাতে ইত্যাদি শব্দ ব্যাসবাক্যরূপে ব্যবহৃত হয়। যেমন :

আয়ত লোচন যার=আয়তলোচনা (স্ত্রী) মহান আত্মা যার=মহাত্মা  স্বচ্ছ সলিল যার=স্বচ্ছসলিলা

নীল বসন যার=নীলবসনা স্থির প্রতিজ্ঞা যার=স্থিরপ্রতিজ্ঞ ধীর বুদ্ধি যার=ধীরবুদ্ধি

‘সহ’ কিংবা ‘সহিত’ শব্দের সঙ্গে অন্য পদের বহুব্রীহি সমাস হলে ‘সহ’ ও ‘সহিত’ এর স্থলে ‘স’ হয়। যেমন :

বান্দবসহ বর্তমান=সবান্ধব   সহ উদর যার=সহোদর>সোদর

এরূপ : সজল, সফল, সদর্প, সলজ্জ, সকল্যাণ ইত্যাদি।

বহুব্রীহি সমাসে সমস্ত পদে ‘অক্ষি’ শব্দের স্থলে ‘অক্ষ’ ও ‘নাভি’ শব্দ স্থলে ‘নাভ’ হয়। যেমন :

কমলের ন্যায় অক্ষি যার=কমলাক্ষ পদ্ম নাভিতে যার=পদ্মনাভ

এরূপ : ঊর্ণনাভ

বহুব্রীহি সমাসে পরপদে ‘জায়া’ শব্দ স্থানে ‘জানি’ হয় এবং পূর্বপদের কিছু পরিবর্তন হয়। যেমন :

যুবতী জায়া যার= যুবজানি (যুবতী স্থলে ‘যুব’ ও ‘জায়া’ স্থলে জানি হয়েছে)।

বহুব্রীহি সমাসে পরপদে ‘চুড়া’ শব্দ সমস্ত পদে ‘চূড়’ ও ‘কর্ম’ শব্দ সমস্ত পদে ‘কর্মা’ হয়। যেমন :

চন্দ্র চূড়া যার= চন্দ্রচূড়    বিচিত্র কর্ম যার=বিচিত্রকর্মা

বহুব্রীহি সমাসে পরপদে ‘গন্ধ’ শব্দ স্থানে ‘গন্ধি’ বা ‘গন্ধা’ হয়। যেমন :

সুগন্ধ যার=সুগন্ধি    পদ্মের ন্যায় গন্ধ যার= পদ্মগন্ধি    মৎস্যের ন্যায় গন্ধ যার=মৎস্যগন্ধা

বহুব্রীহি সমাসের প্রকরণ ও গঠন

বহুব্রীহি সমাস আট প্রকার। যেমন : সমানাধিকরণ, ব্যাধিকরণ, ব্যতিহার, নঞ, মধ্যপদলোপী, প্রত্যয়ান্ত, অলুক ও সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি।

বহুব্রীহি সমাসের গাণিতিক গঠন

১. সাধারণ বহুব্রীহি

*বিশেষ্য+ বিশেষ্য+ যার=বহুব্রীহি সমাস

*বিশেষ্য+ সপ্তমি বিভক্তি+বিশেষ্য+ যার=বহুব্রীহি সমাস

*বিশেষণ+ বিশেষ্য+ যার=বহুব্রীহি সমাস

*বিশেষ্য + র/এর + দিকে/সাথে+ বিশেষ্য+ যার=বহুব্রীহি সমাস

*বিশেষ্য + বিশেষ্য + যে = বহুব্রীহি সমাস

*বিশেষ্য + ক্রিয়াপদ + যে=বহুব্রীহি সমাস

*বিশেষ্য+ ক্রিয়া +যিনি=বহুব্রীহি সমাস

*বিশেষ্য+ ক্রিয়া +যিনি=বহুব্রীহি সমাস

*সংখ্যা + বিশেষ্য+ র/এর + বিশেষ্য +যার=বহুব্রীহি সমাস

 অথবা সংখ্যা + বিশেষ্য+ যে + বিশেষ্য +র/এর=বহুব্রীহি সমাস

২. সমানাধিকরণ বহুব্রীহি

*বিশেষণ + বিশেষ্য +যার =সমানাধিকার বহুব্রীহি সমাস

৩. ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি

*বিশেষ্য+ বিশেষ্য/ক্রিয়া বিশেষ্য+ যার = ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস

৪. ব্যতিহার বহুব্রীহি

*বিশেষ্য-বিভক্তি+বিশেষ্য-বিভক্তি+ যে+ ক্রিয়াবিশেষ্য /নামক্রিয়া =ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস

৫. মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি

*বিশেষ্য+ র/এর + সহিত বর্তমান = মধ্যপদলপী বহুব্রীহি সমাস

*বিশেষ্য+ বিশেষ্য+ দেয়া হয় যে অনুষ্ঠানে = মধ্যপদলোপি বহুব্রীহি সমাস

৬. প্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহি

*বিশেষ্য + বিশেষ্য +প্রত্যয়+যার = প্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহি

৭. অলুক বহুব্রীহি

*বিশেষ্য + বিভক্তি + বিশেষ্য + যার = অলুক বহুব্রীহি (বিভক্তি লোপ পায় না)

৮. সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি

*সংখ্যাবাচক বিশেষ্য +বিশেষ্য + প্রত্যয়+যার = সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি

৯. নঞ বহুব্রীহি

*বিশেষ্য+ নাই/+যাতে=নং/নঞ বহুব্রীহি সমাস অথবা নাই +বিশেষ্য+ যার=নং/নঞ বহুব্রীহি সমাস

*নয়+ বিশেষ্য + (যার) =নং/নঞ বহুব্রীহি সমাস

*ন (নয় করা যায়) + বিশেষ্য+ যা=নং/নঞ বহুব্রীহি সমাস

সমানাধিকরণ বহুব্রীহি

পূর্বপদ বিশেষণ ও পরপদ বিশেষ্য হলে সমানাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস হয়। যেমন :

হত হয়েছে শ্রী যার=হতশ্রী          খোশ মেজাজ যার= খোশমেজাজ

এরূপ: হৃতসর্বস্ব, উচ্চশির, পীতাম্বর, নীলকণ্ঠ, জবরদস্তি, সুশীল, সুশ্রী, বদবখ্ত, কমবখ্ত ইত্যাদি।

বহুব্রীহি সমাসের গাণিতিক গঠন

বিশেষণ + বিশেষ্য +যার =সমানাধিকার বহুব্রীহি সমাস

ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি

বহুব্রীহি সমাসের পূর্বপদ এবং পরপদ কোনোটিই যদি বিশেষণ না হয় তবে তাকে বলে ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি। যেমন :

আশীতে (দাঁতে) বিষ যার=আশীবিষ  কথা সর্বস্ব যার=কথাসর্বস্ব

পরপদ কৃদন্ত বিশেষণ হলেও ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস হয়। যেমন :

দুই কান কাটা যার=দু কানকাটা    বোঁটা খসেছে যার= বোঁটাখসা

এরূপ : ছা-পোষা, পা-চাটা, পাতা- চাটা, পাতাছেঁড়া, ধামাধরা ইত্যাদি।

বহুব্রীহি সমাসের গাণিতিক গঠন

বিশেষ্য+ বিশেষ্য/ক্রিয়া বিশেষ্য+ যার = ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস

ব্যতিহার বহুব্রীহি

ক্রিয়ার পারস্পরিক অর্থে ব্যতিহার বহুব্রীহি হয়। এ সমাসে পূর্বপদে ‘আ’ এবং উত্তরপদে ‘ই’ যুক্ত হয়। যেমন :

হাতে হাতে যে যুদ্ধ=হাতাহাতি  কানে কানে যে কথা=কানাকানি

এরূপ: চুলাচুলি, কাড়াকাড়ি, গালাগালি, দেখাদেখি, কোলাকুলি, লাঠালাঠি, হাসাহাসি, গুঁতাগুঁতি, ঘুষাঘুষি ইত্যাদি।

বহুব্রীহি সমাসের গাণিতিক গঠন

বিশেষ্য-বিভক্তি+বিশেষ্য-বিভক্তি+ যে+ ক্রিয়াবিশেষ্য /নামক্রিয়া =ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস

নঞ বহুব্রীহি

বিশেষ্য পূর্বপদের আগে নঞ্ (না অর্থবোধক) অব্যয় যোগ করে বহুব্রীহি সমাস করা হলে তাকে নঞ বহুব্রীহি বলে। নঞ বহুব্রীহি সমাসে সাধিত পদটি বিশেষণ হয়। যেমন :

ন (নাই) জ্ঞান যার=অজ্ঞান           বে (নাই) হেড যার=বেহেড          না (নাই) চারা (উপায়) যার=নাচার

নি (নাই) ভুল যার=নির্ভুল             না (নয়) জানা যা=নাজানা /অজানা

এরূপ: নাহক, নিরূপায়, নির্ঝঞ্ঝাট, অবুঝ, অকেজো, বেপরোয়া, বেহুশ, অনন্ত, বেতার ইত্যাদি।

বহুব্রীহি সমাসের গাণিতিক গঠন

*বিশেষ্য+ নাই/+যাতে=নং/নঞ বহুব্রীহি সমাস অথবা নাই +বিশেষ্য+ যার=নং/নঞ বহুব্রীহি সমাস

*নয়+ বিশেষ্য + (যার) =নং/নঞ বহুব্রীহি সমাস

*ন (নয় করা যায়) + বিশেষ্য+ যা=নং/নঞ বহুব্রীহি সমাস

মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি

বহুব্রীহি সমাসের ব্যাখ্যার জন্য ব্যবহৃত বাক্যাংশের কোনো অংশ যদি সমস্তপদে লোপ পায় তাকে মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি বলে। যেমন :

বিড়ালের চোখের ন্যায় চোখ যে নারীর=বিড়ালচোখী হাতে খড়ি দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে=হাতেখড়ি

এরূপ : গায়েহলুদ, মেনিমুখো ইত্যাদি।

বহুব্রীহি সমাসের গাণিতিক গঠন

*বিশেষ্য+ র/এর + সহিত বর্তমান = মধ্যপদলপী বহুব্রীহি সমাস

*বিশেষ্য+ বিশেষ্য+ দেয়া হয় যে অনুষ্ঠানে = মধ্যপদলোপি বহুব্রীহি সমাস

প্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহি

যে বহুব্রীহি সমাসের সমস্তপদে ‘আ’, ‘এ’, ‘ও’ ইত্যাদি প্রত্যয় যুক্ত হয় তাকে বলা হয় প্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহি। যেমন :

এক দিকে চোখ (দৃষ্টি) যার=একচোখা (চোখ+আ)  ঘরের দিকে মুখ যার=ঘরমুখো (মুখ+ও)

নি (নেই) খরচ যার=নি খরচে (খরচ+এ)

এরূপ: দোটানা, দোমনা, একগুঁয়ে, অকেজো, একঘরে, দোনলা, দোতলা, ঊনপাজুরে ইত্যাদি।

বহুব্রীহি সমাসের গাণিতিক গঠন

বিশেষ্য + বিশেষ্য +প্রত্যয়+যার = প্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহি

অলুক বহুব্রীহি

যে বহুব্রীহি সমাসে পূর্ব বা পরপদের কোনো পরিবর্তন হয় না তাকে অলুক বহুব্রীহি বলে।

অলুক বহুব্রীহি সমাসে সমস্ত পদটি বিশেষণ হয়। যেমন : মাথায় পাগড়ি যার=মাথায়পাগড়ি   গলায় গামছা যার=গলায়গামছা (লোকটি)

এরূপ : হাতে-ছড়ি, কানে-কলম, গায়ে-পড়া, হাতে-বেড়ি, মাথায়-ছাতা, মুখে-ভাত, কানে-খাটো ইত্যাদি।

বহুব্রীহি সমাসের গাণিতিক গঠন

বিশেষ্য + বিভক্তি + বিশেষ্য + যার = অলুক বহুব্রীহি (বিভক্তি লোপ পায় না)

সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি

পূর্বপদ সংখ্যাবাচক এবং পরপদ বিশেষ্য হলে এবং সমস্তপদটি বিশেষণ বোঝালে তাকে সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি বলা হয়। এ সমাসে সমস্তপদে ‘আ’ বা ‘ঈ’ যুক্ত হয়। যেমন : দশ গজ পরিমাণ যার=দশগজি   চৌ (চার) চাল যে ঘরের=চৌচালা

এরূপ : চারহাতি, তেপায়া ইত্যাদি। কিন্তু সে (তিন) তার (যে যন্ত্রের) =সেতার (বিশেষ)।

বহুব্রীহি সমাসের গাণিতিক গঠন

সংখ্যাবাচক বিশেষ্য +বিশেষ্য + প্রত্যয়+যার = সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি

নিপাতনে সিদ্ধ বহুব্রীহি

যে বহুব্রীহি সমাস কোনো নিয়মের অধীনে নয় সেই সমাসকে নিপাতনে সিদ্ধ বহুব্রীহি বলে। যেমন : 

দু দিকে অপ যার=দ্বীপ       অন্তর্গত অপ যার=অন্তরীপ   নরাকারের পশু যে=নরপশু   

জীবিত থেকেও যে মৃত= জীবন্মৃত   পণ্ডিত হয়েও যে মুর্খ=পণ্ডিতমুর্খ

অব্যয়ীভাব সমাসের সংজ্ঞা

পূর্বপদে অব্যয়যোগে নিষ্পন্ন সমাসে যদি অব্যয়েরই অর্থের প্রাধান্য থাকে তাকে অব্যয়ীভাব সমাস বলে। অব্যয়ীভাব সমাসে কেবল অব্যয়ের অর্থযোগে ব্যাসবাক্যটি রচিত হয়। যেমন:

জানু পর্যন্ত লম্বিত (পর্যন্ত শব্দের অব্যয় ‘আ’) = আজানুলন্বিত (বাহু) মরণ পর্যন্ত=আমরণ

অব্যয়ীভাব সমাসের প্রকরণ

সামীপ্য (নৈকট্য), বিপ্সা (পৌনঃপুনিকতা), পর্যন্ত, অভাব, অনতিক্রম্যতা, সাদৃশ্য, যোগ্যতা প্রভৃতি নানা অর্থে অব্যয়ীভাব সমাস হয়। নিচের উদাহরণগুলোতে অব্যয়ীভাব সমাসের অব্যয় পদটি বন্ধনীর মধ্যে দেখানো হলো।

১. সামীপ্য (উপ)   : কণ্ঠের সমীপে=উপকণ্ঠ, কূলের সমীপে= উপকূল

২. বিপ্সা (অনু, প্রতি)    : দিন দিন=প্রতি দিন, ক্ষণে ক্ষণে= প্রতিক্ষণে, ক্ষণ ক্ষণ=অনুক্ষণ

৩. অভাব (নিঃ=নির): আমিষের অভাব=নিরামিষ, ভাবনার অভাব=নির্ভাবনা, জলের অভাব-নির্জল, উৎসাহের অভাব= নিরুৎসাহ

৪. পর্যন্ত (আ): সমুদ্র থেকে হিমাচল পর্যন্ত= আসমুদ্রহিমাচল, পা থেকে মাথা পর্যন্ত=আপাদমস্তক

৫. সাদৃশ্য (উপ): শহরের সদৃশ=উপশহর, গ্রহের তুল্য = উপগ্রহ, বনের সদৃশ=উপবন

৬. অনতিক্রম্যতা (যথা): রীতিকে অতিক্রম না করে= যথারীতি, সাধ্যকে অতিক্রম না করে= যথাসাধ্য। এরূপ : যথাবিধি, যথাযোগ্য

৭. অতিক্রান্ত (উৎ) : বেলাকে অতিক্রান্ত=উদ্বেল, শৃঙ্খলাকে অতিক্রান্ত =উচ্ছৃঙ্খল

৮. বিরোধ (প্রতি)  : বিরুদ্ধ বাদ=প্রতিবাদ, বিরুদ্ধ কূল= প্রতিকুল

৯. পশ্চাৎ (অনু)   : পশ্চাৎ গমন=অনুগমন, পশ্চাৎ ধাবন= অনুধাবন

১০. ঈষৎ (আ)    : ঈষৎ নত=আনত, ঈষৎ রক্তিম=আরক্তিম

১১. ক্ষুদ্র অর্থে (উপ) : উপগ্রহ, উপনদী

১২. পূর্ণ বা সমগ্র অর্থে (পরি বা সম): পরিপূর্ণ, সম্পূর্ণ

১৩. দূরবর্তী অর্থে (প্র, পর) : অক্ষির অগোচরে=পরোক্ষ। এরূপ : প্রপিতামহ

১৪. প্রতিনিধি অর্থে (প্রতি)  : প্রতিচ্ছায়া, প্রতিচ্ছবি, প্রতিবিদ্ধ

১৫. প্রতিদ্বন্দ্বী অর্থে (প্রতি)  : প্রতিপক্ষ, প্রত্যুত্তর

প্রাদি সমাস

উল্লিখিত প্রধান ছয়টি সমাস ছাড়াও কয়েকটি অপ্রধান সমাস রয়েছে। প্রাদি, নিত্য, উপপদ ও অলুক সমাস সম্বন্ধে নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো। এসব সমাসের প্রচুর উদাহরণ পাওয়া যায় না। এজন্য এদের অপ্রধান মনে করা হয়।

প্র, পরি, অনু প্রভৃতি অব্যয়ের সঙ্গে যদি কৃৎপ্রত্যয় সাধিত বিশেষ্যের সমাস হয় তবে তাকে বলে প্রাদি সমাস। যেমন :

*প্র (প্রকৃষ্ট রূপে)  যে বচন=প্রবচন                  

*প্র (প্রকৃষ্ট রূপে) ভাত (আলোকিত)=প্রভাত

*প্র (প্রকৃষ্ট) রূপে) গতি=প্রগতি

*পরি (চতুর্দিকে) যে ভ্রমণ= পরিভ্রমণ

*অনুতে (পশ্চাতে) যে তাপ=অনুতাপ         

নিত্যসমাস

যে সমাসে সমস্যমান পদগুলো নিত্যসমাসবদ্ধ থাকে, ব্যাসবাক্যের দরকার হয় না তাকে নিত্যসমাস বলে। তদর্থবাচক ব্যাখ্যামূলক শব্দ বা বাক্যাংশ যোগে এগুলোর অর্থ বিশদ করতে হয়। যেমন :

অন্য গ্রাম=গ্রামান্তর কেবল দর্শন =দর্শনমাত্র, অন্য গৃহ=গৃহান্তর

(বিষাক্ত) কাল (যম) তুল্য (কাল বর্ণের নয়) সাপ=কালসাপ, তুমি আমি ও সে=আমরা            দুই এবং নব্বই=বিরানব্বই

বিশেষ দ্রষ্টব্য /জ্ঞাতব্য

১. ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাসে শব্দ পরিবর্তন হয়ে বসে। যেমন:

*রাজা স্থলে রাজ   *পিতা/মাতা/ভ্রাতা স্থলে পিতৃ/মাতৃ/ভ্রাতৃ হয়

যেমন : গজনীর রাজা=গজনীরাজ  রাজার পুত্র = রাজপুত্র  পিতার ধন=পিতৃধন, মাতার সেবা = মাতৃসেবা, ভ্রাতার স্নেহ= ভ্রাতৃস্নেহ, পুত্রের বধূ = পুত্রবধু

২. ব্যাসবাক্যে ‘রাজা’ শব্দ পরে থাকলে সমস্তপদে তা আগে আসে। যেমন: পথের রাজা=রাজপথ, হাঁসের রাজা=রাজহাঁস।

৩. পরপদে সহ, তুল্য, নিভ, প্রায়, সহ প্রতিম-এসব পক্ষ থাকলেও ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস হয়। যেমন : পত্নীর সহ= পত্নীসহ  কন্যার সহ=কন্যাসহ, সহোদয়ের প্রতিম= সহোদরপ্রতিম /সোদরপ্রতিম

৪. কালের কোনো অংশবোধক শব্দ পরে থাকলে তা পূর্বে বসে। যেমন : অহ্নের (দিনের) পূর্বভাগ=পূর্বা‎হ্ন।

৫. পরপদে রাজি, গ্রাম, বৃন্দ, গণ, যূথ প্রভৃতি সমষ্টিবাচক শব্দ থাকলে ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস হয়। যেমন : ছাত্রের বৃন্দ= ছাত্রবৃন্দ, গুণের গ্রাম-গুণগ্রাম, হস্তীর যুথ=হস্তীযুথ

৬. অধর শব্দ পরপদ হলে সমস্তপদে তা পূর্বপদ হয়। যেমন : পথের অধর-অধরপথ, দিনের অধর-অধরদিন

৭. শিশু ও দুগ্ধ শব্দ পরে থাকলে স্ত্রীবাচক পূর্বপদ পুরুষবাচক হয়। যেমন : মৃগীর শিশু = মৃগশিশুছাগীর দুগ্ধ=ছাগদুগ্ধ

৮. অলুক ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস

ঘোড়ার ডিম  মাটির মানুষ  হাতের পাঁচ   মামার বাড়ি  সাপের পা  মনের মানুষ কলের গান

কিন্তু ভ্রাতার পুত্র=ভ্রাতুষ্পুত্র (নিপাতনে সিদ্ধ)

৯. গায়েহলুদ, হাতেখড়ি প্রভৃতি সমস্তপদে পরপদের অর্থ প্রধানরূপে প্রতীয়মান হয় না অর্থাৎ হলুদ বা খড়ি বোঝায় না, অনুষ্ঠান বিশেষকে বোঝায়। সুতরাং এগুলো অলুক তৎপুরুষ নয়, অলুক বহুব্রীহি সমাস।

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]