ভাষা হিসেবে বাংলা অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এই সমৃদ্ধির মূলে রয়েছে এর শব্দ-ভান্ডার। বিভিন্ন ভাষার শব্দ গ্রহণে
এবং আত্মীকরণে বাংলা ভাষা অত্যন্ত উদার। তবে, এই ঔদার্য মূলত শব্দ-ভাÐার পর্যায়েই সীমিত। ভাষার
সবচেয়ে ব্যবহারিক যে স্তর বাক্য, তাতে বাংলা ভাষা সবসময় নিজস্ব বিন্যাসরীতিই অনুসরণের পক্ষপাতী।
অপরদিকে, ধ্বনির ক্ষেত্রেও দেখা যায় যে, অন্য ভাষার অনেক ধ্বনি উচ্চারণের সামর্থ্য বাংলা ভাষীদের থাকলেও নিজস্ব
ধ্বনি-ব্যবস্থার প্রতিই তারা আস্থাশীল। কিন্তু শব্দের ক্ষেত্রে বিষয়টি মোটেই এরূপ নয়। বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক ও
রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক কারণে বিবিধ ভাষার শব্দ বাংলা ভাষায় প্রবেশ করেছে। এ কারণে বাংলা ভাষার শব্দকে উৎপত্তিগত
দিক দিয়ে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো হলো : তৎসম, অর্ধ-তৎসম, তদ্ভব, দেশি ও বিদেশি শব্দ। এদের মধ্যে অর্ধ-
তৎসম, তদ্ভব ও দেশি বলতে যেসব শব্দকে বোঝায় সেসব শব্দকে ‘খাঁটি বাংলা’ শব্দ নামেও অভিহিত করা হয়। বস্তুত,
এগুলোকে বলা যেতে পারে বাংলা শব্দের উৎস অনুসারে শ্রেণিবিভাগ। আবার শব্দের গঠনকে বিবেচনায় নিয়ে বাংলা ভাষার
শব্দকে মৌলিক ও সাধিত এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। এছাড়া বাগর্থমূলক বিবেচনায় বাংলা শব্দকে যৌগিক
শব্দ, রূঢ়ি শব্দ এবং যোগরূঢ় শব্দ এই তিন ভাগে ভাগ করার রীতি চালু রয়েছে। তাহলে বলা যায় যে, বাংলা ভাষার
শব্দকে মূলত তিনটি বিবেচনা অনুসারে শ্রেণিবিভক্ত করা যায়। এগুলো হলো :
ক. উৎস অনুসারে শ্রেণিবিভাগ;
খ. গঠন অনুসারে শ্রেণিবিভাগ;
গ. বাগর্থ অনুসারে শ্রেণিবিভাগ।
নিচে এদের সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো :
ক. উৎস অনুসারে বাংলা শব্দের শ্রেণিবিভাগ
১. তৎসম শব্দ : বাংলা ভাষায় প্রচুর শব্দ রয়েছে যেগুলো সংস্কৃত ভাষা থেকে এসেছে। এদের মধ্যে কিছু শব্দ রয়েছে
যেগুলো কোনো প্রকার পরিবর্তন ছাড়াই বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হচ্ছে। এদের বৈয়াকরণগণ ‘তৎসম’ বা তার (সংস্কৃতের)
সমান হিসেবে চিহ্নিত করতে চেয়েছেন। এক্ষেত্রে মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন যে, প্রায় সকল বৈয়াকরণই সংস্কৃতের প্রতি
বিশেষভাবে দুর্বল ছিলেন। তাই হিন্দি কিংবা গুজরাটি থেকে আসা শব্দের সঙ্গে সংস্কৃতকে একই কাতারে রাখা যায়নি,
যদিও এই তিনটি ভাষাই ইন্দো-ইরানীয় ভাষা-শাখারই অন্তর্গত। দীর্ঘদিন এরূপ ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত ছিল যে, বাংলা ভাষা
সংস্কৃত ভাষার ‘কন্যা’সমান। আর সেই কারণেই সংস্কৃতের এমন প্রাধান্য বৈয়াকরণদের মাঝে রয়ে গেছে। তৎসম শব্দের
কয়েকটি উদাহরণ হলো : চন্দ্র, নক্ষত্র, ভবন, প্রত্যাশা, পরীক্ষা, মনুষ্য প্রভৃতি।
২. অর্ধ-তৎসম শব্দ: সংস্কৃতকে মানদÐ ধরে নিয়েই নির্ধারণ করা হয়ে থাকে যে, সংস্কৃত ভাষা থেকে আগত যেসব শব্দ
কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে, সেগুলো অর্ধ-তৎসম শব্দ। এই শব্দগুলো মানুষের মুখে মুখেই পাল্টেছে
এবং এর থেকে এমন ধারণা করাও অসংগত হবে না যে, সাধারণ বাংলা ভাষী জনগণের আসলে সংস্কৃতকে অতিরিক্ত
গুরুত্ব প্রদানের কোনো আগ্রহ ছিল না। তাই তারা তাদের মতো করে সংস্কৃত অনেক শব্দকে সহজ করে নিয়েছে। অর্ধ
তৎসম শব্দের কয়েকটি উদাহরণ হলো : জ্যোৎস্না> জোছনা, শ্রাদ্ধ> ছেরাদ্দ, গৃহিণী> গিন্নী, বৈষ্ণব> বোষ্টম, কুৎসিত>
কুচ্ছিত প্রভৃতি।
৩. তদ্ভব শব্দ: প্রাকৃত তথা অপভ্রংশ স্তর অতিক্রম করে যেসব সংস্কৃত শব্দ পরিবর্তিতরূপে বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে,
সেগুলোকেই বলা হয় তদ্ভব শব্দ। অর্থাৎ, তদ্ভব শব্দের মূল অবশ্যই সংস্কৃত কিন্তু বাংলা ভাষায় তাদের পরিবর্তিত রূপ
ব্যবহৃত হচ্ছে। অর্থাৎ, এসব শব্দ সংস্কৃত থেকে পরিবর্তিত হয়ে প্রাকৃত এবং তৎ-পরবর্তী স্তর অপভ্রংশে ব্যবহৃত হতো,
পরে আবার সেগুলো আরও পরিবর্তিত হয়ে তদ্ভব শব্দ হিসেবে বাংলা শব্দ-ভাÐারের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তদ্ভব শব্দের
কয়েকটি উদাহরণ হলো: মস্তক > মত্থ > মাথা, চর্মকার> চম্মআর> চামার, হস্ত> হত্থ > হাত ইত্যাদি।
৪. দেশি শব্দ: বাংলা অঞ্চলে অতি প্রাচীন কাল থেকে বাঙালিদের পাশাপাশি অন্যভাষী নৃগোষ্ঠীর বাস ছিল। এদের কেউ
কেউ আবার বাঙালি জাতির উদ্ভবের আগে থেকেই এই ভূখÐে বাস করত বলে নৃবিজ্ঞানীদের গবেষণায় প্রতীয়মান হয়েছে।
এসব নৃগোষ্ঠীর ভাষা থেকে যে সব শব্দ বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে, সে সব শব্দকে বলা হয় দেশি শব্দ। বিশেষ করে
কোল, মুÐা, ভীলসহ প্রভৃতি নৃগোষ্ঠীর ভাষার শব্দ দেশি শব্দ হিসেবে বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়
যে, কুড়ি (বিশ), পেট (উদর), চুলা (উনুন) প্রভৃতি।
৫. বিদেশি শব্দ: সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পট পরিবর্তনের সূত্র ধরে বিভিন্ন সময়ে বাংলাভাষীরা অন্য ভাষা এবং
সেই ভাষার মানুষের সংস্পর্শে এসেছে। সেই সূত্রে, সেসব ভাষার অনেক শব্দ কখনও অবিকৃতভাবে, কখনও পরিবর্তিত
রূপে বাংলা ভাষার শব্দ ভাÐারে গৃহীত হয়েছে। এ ধরনের শব্দকে বলা হয় বিদেশি শব্দ। এ ধরনের শব্দের কিছু উদাহরণ
হলো:
আরবি শব্দ : আল্লাহ, ইমান, কোরবানি, গোসল, জান্নাত, জাহান্নাম, হাদিস, হালাল, আদালত, ইদ, উকিল, ওজর, কানুন,
কলম, কেচ্ছা, খারিজ, নগদ, বাকি, মহকুমা, মোক্তার, রায় প্রভৃতি।
ফারসি শব্দ: গুনাহ, দোজখ, নামাজ, ফেরেশতা, বেহেশত, রোজা, কারখানা, চশমা, তারিখ, তোশক, দফতর, দরবার,
দোকান, দৌলত, নালিশ, বাদশাহ, মেথর, রসদ, আমদানি, জানোয়ার, নমুনা, রফতানি, প্রভৃতি।
ইংরেজি শব্দ: চেয়ার, টেবিল, ইস্কুল (school),, বাক্স (box), হাসপাতাল (Hospital), বোতল (Bottle) প্রভৃতি।
পর্তুগিজ শব্দ : আনারস, আলপিন, আলমারি, গুদাম, চাবি, পাউরুটি, বালতি প্রভৃতি।
ফরাসি শব্দ : কুপন , ডিপো, রেস্তোরাঁ প্রভৃতি।
ওলন্দাজ শব্দ : ইস্কাপন, টেক্কা, তুরুপ প্রভৃতি।
গুজরাটি শব্দ : খদ্দর, হরতাল প্রভৃতি।
পাঞ্জাবি শব্দ : চাহিদা, শিখ প্রভৃতি।
তুর্কি শব্দ : চাকর, চাকু, দারোগা প্রভৃতি।
চিনা শব্দ : চা, চিনি, লিচু প্রভৃতি।
মায়ানমার/ বর্মি শব্দ : ফুঙ্গি, লুঙ্গি প্রভৃতি।
জাপানি শব্দ : রিকশা, হারিকিরি প্রভৃতি।
খ. গঠন অনুসারে বাংলা শব্দের শ্রেণিবিভাগ
গঠন অনুসারে বাংলা শব্দকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। এগুলো হলো:
১. মৌলিক শব্দ : যে সব শব্দকে অর্থসঙ্গতিপূর্ণভাবে বিভাজন করা সম্ভব নয় তাকে মৌলিক শব্দ বলে। যেমন : গোলাপ,
নাক, লাল, তিন, ইত্যাদি। এই শব্দগুলোকে আরও ছোট অংশে বিভাজনের চেষ্টা করা হলে দেখা যায় যে, কোনো
অর্থদ্যোতক কিংবা অর্থবাচক অংশ পাওয়া যায় না। উদাহরণের অন্তর্গত ‘গোলাপ’ শব্দটি হয়ত ‘গো’ এবং ‘লাপ’ এই দুটি
অংশে ভাগ করার চেষ্টা করা যেতে পারে। কিন্তু লক্ষণীয় যে, ‘গো’ অংশটি অর্থপূর্ণ হলেও এর সঙ্গে গোলাপের কোনো
সম্পর্ক নেই, আর লাপ বাংলা ভাষার কোনো শব্দই নয়। ফলে, গোলাপ শব্দটিকে আর কোনো ক্ষুদ্র অংশে ভাগ করা যায়
না। এই শব্দগুলোই মৌলিক শব্দ।
২. সাধিত শব্দ : যে সব শব্দকে বিভাজন করলে এক বা একাধিক অর্থদ্যোতক কিংবা অর্থবাচক অংশ পাওয়া যায় সেসব
শব্দকে সাধিত শব্দ বলে। মূলত, মৌলিক শব্দ থেকেই ব্যাকরণিক বিধি অনুসরণ করে প্রকৃতি ও প্রত্যয়ের সাহায্যে, উপসর্গ
যোগে কিংবা সমাসের মাধ্যমে সাধিত শব্দ গঠিত হয়। উদাহরণস্বরূপ : চাঁদমুখ, মশারি, প্রতিষ্ঠান প্রভৃতি।
গ. বাগর্থ অনুসারে বাংলা শব্দের শ্রেণিবিভাগ
১. যৌগিক শব্দ: প্রতিটি শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ যেমন থাকে তেমনি এর ব্যবহারিক অর্থও থাকে। প্রসঙ্গত বলা যায় যে,
একটি শব্দের উৎপত্তি যখন ঘটেছিল তখন তার যে অর্থ ছিল তা-ই হলো ওই শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ; আর শব্দটি বর্তমানে
কোন অর্থে প্রযুক্ত হচ্ছে তা-ই তার ব্যবহারিক অর্থ। যৌগিক শব্দের ক্ষেত্রে এই দুটি অর্থই অভিন্ন থাকবে। অর্থাৎ,
শব্দগঠনের প্রক্রিয়ায় যেসব শব্দের ব্যবহারিক অর্থ তাদের ব্যুৎপত্তিগত অর্থকেই অনুসরণ করে তাদের যৌগিক শব্দ বলে।
যেমন, ‘জীবনী’ শব্দটি গঠিত হয়েছে ‘জীব+ অন+ ঈ’ অর্থাৎ ‘জীব’ শব্দ হতে। তাই ‘জীবনী’ শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ
হওয়া উচিত জীব সংশ্লিষ্ট কোনো অর্থ। আর ‘জীবনী’ শব্দের অর্থ ‘জীবের বেঁচে থাকার বিবরণ’। অর্থাৎ, ‘জীবন’ শব্দটির
ব্যুৎপত্তিগত অর্থ বজায় থেকেছে। কয়েকটি যৌগিক শব্দের উদাহরণ হলো : -
মূল শব্দ শব্দ গঠন (অর্থ) অর্থ
গায়ক গৈ+অক যে গান করে
কর্তব্য কৃ+তব্য যা করা উচিত
বাবুয়ানা বাবু+আনা বাবুর ভাব
মধুর মধু+র মধুর মত মিষ্টি গুণযুক্ত
২. রূঢ়ি শব্দ: ব্যুৎপত্তিগত এবং ব্যবহারিক অর্থের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে এমন প্রত্যয় বা উপসর্গ যোগে গঠিত শব্দকে রূঢ়ি
শব্দ বলে। রূঢ়ি শব্দের কয়েকটি উদাহরণ হলো :
মূল শব্দ শব্দ গঠন ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ব্যবহারিক অর্থ
হস্তী হস্ত+ইন হাত আছে যার একটি বিশেষ প্রাণী, হাতি
গবেষণা গো+এষণা গরু খোঁজা ব্যাপক অধ্যয়ন ও পর্যালোচনা
বাঁশি বাঁশ+ইন বাঁশি দিয়ে তৈরি বাঁশের তৈরি বিশেষ বাদ্যযন্ত্র
প্রভাত প্র+ভাত প্রকৃষ্টভাবে আলোকিত সকাল বেলা
লক্ষণীয় যে, ওপরের উদাহরণের প্রতিটি শব্দই হয় প্রত্যয়নিষ্পন্ন অথবা উপসর্গ যোগে গঠিত। এবং প্রতিটি শব্দের
ব্যুৎপত্তিগত অর্থ এবং ব্যবহারিক অর্থ পৃথক। তাই এরা রূঢ়ি শব্দ হিসেবে নির্দেশিত হয়েছে।
৩. যোগরূঢ় শব্দ : সমাসনিষ্পন্ন শব্দ যদি ব্যুৎপত্তিগত অর্থ থেকে ভিন্ন কোনো ব্যবহারিক অর্থ ধারণ করে তবে তাকে
যোগরূঢ় শব্দ বলে। নিচের কয়েকটি উদাহরণ লক্ষ করা যেতে পারে :
মূল শব্দ শব্দ গঠন ব্যবহারিক অর্থ
পঙ্কজ পঙ্কে জন্মে যা পদ্মফুল
রাজপুত রাজার পুত্র একটি জাতি বিশেষ, ভারতের একটি জাতি
মহাযাত্রা মহাসমারোহে যাত্রা মৃত্যু
শব্দ ও রূপমূল
শব্দকে বিভাজন করলে আরো ক্ষুদ্রতর বাগর্থদ্যোতক অংশ পাওয়া যায়। ভাষার এই সব বাগর্থদ্যোতক ক্ষুদ্রতম একককে
বলা হয় রূপমূল। অর্থাৎ, রূপমূল হলো ভাষার এমন ক্ষুদ্রতম উপাদান যাদের হয় সুস্পষ্ট বাগর্থ থাকবে কিংবা অন্ততপক্ষে
বাগর্থের কোনো যৌক্তিক ইঙ্গিত থাকবে। আমরা জানি ভাষার সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম উপাদান হচ্ছে ধ্বনিমূল।
কিন্তু ধ্বনিমূলগুলো কোনো অর্থদ্যোতকতাকে ধারণ করে না। অপরদিকে, রূপমূল মাত্রই কোনো না কোনোভাবে অর্থসংশ্লিষ্ট
হবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, ‘অবোধ’ শব্দটিকে দুটি ক্ষুদ্রতর অংশে ভাগ করা যায় : ‘অ’ এবং ‘বোধ’। এখানে ‘অ’
একটি রূপমূল যা উপসর্গ হিসেবে এই শব্দে ব্যবহৃত হয়েছে এবং ‘বোধ’ আরেকটি রূপমূল। লক্ষণীয় যে, ‘অ’ রূপমূলটির
স্বাধীনভাবে অর্থ প্রকাশের সুযোগ না থাকলেও এর সাহায্যে কোনো প্রকার অভাবকে বোঝানো হচ্ছে তা আমরা উপলব্ধি
করতে পারি। অপরদিকে, ‘বোধ’ রূপমূলটি স্বাধীনভাবেই অর্থ প্রকাশ করতে পারছে। এর ওপর ভিত্তি করে রূপমূলকে দুটি
ভাগে ভাগ ভাগ করা যায়। এগুলো হলো :
মুক্ত রূপমূল
বদ্ধ রূপমূল
মুক্তরূপমূলগুলো মুক্ত তথা স্বাধীনভাবে ব্যবহৃত হতে পারে। এদেরকে আর বিভাজন করা সম্ভব নয়। অর্থাৎ, মৌলিক শব্দ
হিসেবে নির্দেশিত প্রত্যেকেই মুক্তরূপমূল হিসেবে পরিগণিত হতে পারে। অপরদিকে বদ্ধরূপমূলগুলোর কোনো স্বাধীন
প্রকাশ সম্ভব নয়। বিভিন্ন উপসর্গ, প্রত্যয় প্রভৃতি বদ্ধরূপমূল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। নিচে কয়েকটি শব্দের রূপমূল
বিভাজন দেখানো যেতে পারে :
প্রদত্ত শব্দ গঠন মুক্তরূপমূল বদ্ধরূপমূল
সম্প্রীতি সম্+ প্রীত্+ ই প্রীত্ সম্, ই
পরিবর্তনশীলতা পরি+ বর্তন (বৃত্+ অনট্)+ শীল+ তা বর্তন পরি, শীল, তা
শব্দ ও গঠনবৈচিত্র্য
বাংলা শব্দের গঠন বিবেচনা করলে দেখা যায় যে, মূলত তিনভাবে বাংলা শব্দ গঠিত হতে পারে। এগুলো হলো : উপসর্গ
যোগে, প্রত্যয় যোগে এবং যৌগিকীকরণ তথা সমাসের মাধ্যমে। মনে রাখা প্রয়োজন যে, সন্ধির সাহায্যে শব্দ গঠনের
প্রচলিত ধারণা যথাযথ নয়। সন্ধি মূলত একটি ধ্বনিতাত্তি¡ক প্রক্রিয়া যা শব্দস্তরে প্রযুক্ত হয়। অর্থাৎ, একটি শব্দ গঠনের পর
যদি দেখা যায় যে, ওই শব্দে এমন কতগুলো ধ্বনি পাশাপাশি বসেছে যাদের এক ধ্বনিতে পরিণত করা সম্ভব তাহলে
সেখানে সন্ধি ঘটতে পারে। কিন্তু এটি যে বাধ্যতামূলক কোনো বিষয়, তা কিন্তু নয়। দুটি উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি স্পষ্ট
করা যেতে পারে। আমরা জানি, ‘সিংহাসন’ শব্দটি গঠিত হয়েছে ‘সিংহ চিহ্নিত আসন’ থেকে। অর্থাৎ, এই সমাসের
পূর্বপদ সিংহ এবং পরপদ আসন পাশাপাশি বসেছে। এখন লক্ষ করা গেল যে, সিংহ-এর শেষে একটি স্বরধ্বনি রয়েছে
এবং আসন-এর শুরুতে একটি স্বরধ্বনি রয়েছে। তাই এই দুটি স্বরধ্বনি এক ধ্বনিতে পরিণত হয়ে সিংহাসন শব্দটি গঠিত
হয়েছে। অর্থাৎ, শব্দ গঠনের মূল অংশে সন্ধির কোনো ভ‚মিকা ছিল না। আবার বাংলা ভাষায় প্রচলিত অভিন্নার্থক দুটি শব্দ
উপরিউক্ত এবং উপর্যুক্ত। দুটি শব্দই ব্যাকরণসম্মত এবং প্রথমটিতে সন্ধি ঘটেনি এবং দ্বিতীয়টিতে সন্ধি ঘটেছে। তাতে
শব্দটির গঠনগত কোনো ত্রæটি তৈরি হয়নি। সুতরাং বাংলা শব্দ গঠনে উপসর্গ, প্রত্যয় এবং সমাসই ভ‚মিকা পালন করে।
FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ