বচন
বিশেষ্য বা সর্বনাম শব্দের সংখ্যাবাচকতা বোঝাতে বচন ব্যবহৃত হয়। বাংলা ভাষায় বচন দুই প্রকার : একবচন ও
বহুবচন। একজন ব্যক্তি, বস্তু বা প্রাণীকে বোঝাতে সংখ্যাবাচক শব্দের এক বচনের রূপ ব্যবহৃত হয়। যেমন : ছেলেটা,
একটি মেয়ে, প্রভৃতি। অপরদিকে, বহুবচন নির্দেশক শব্দ দ্বারা একের বেশি ব্যক্তি, বস্তু বা প্রাণীকে বোঝান হয়। যেমন :
ছেলেগুলো, কয়েকটি কলম, সারি সারি গাছ প্রভৃতি। বাংলা ভাষায় কেবল বিশেষ্য ও সর্বনামের বচনভেদ হয়। কখনোই
বিশেষণের বচনভেদ হয় না। কেবল উন্নত প্রাণীবাচক শব্দের সঙ্গে, অর্থাৎ মানুষ বা মনুষ্যবাচক শব্দের সঙ্গে ‘রা/এরা’
ব্যবহৃত হয়। সাধারণভাবে, বস্তু ও প্রাণীবাচক শব্দের সঙ্গে ‘গুলা/গুলি/গুলো’ যুক্ত হয়।
বহুবচন বাচক শব্দের ব্যবহার
গণ- দেবগণ, নরগণ, জনগণ
বৃন্দ- সুধীবৃন্দ, ভক্তবৃন্দ, শিক্ষকবৃন্দ,
মÐলী- শিক্ষকমÐলী, সম্পাদকমÐলী
বর্গ- পÐিতবর্গ, মন্ত্রিবর্গ
কুল- পক্ষিকুল, বৃক্ষকুল
সকল- পর্বতসকল, মনুষ্যসকল
সব- ভাইসব, পাখিসব
সমূহ- বৃক্ষসমূহ, মনুষ্যসমূহ
পাল- গরুর পাল
যূথ- হস্তিযূথ
আবলি- পুস্তকাবলি
গুচ্ছ- কবিতাগুচ্ছ
দাম- কুসুমদাম
নিকর- কমলনিকর
পুঞ্জ- মেঘপুঞ্জ
মালা- পর্বতমালা
রাজি- তারকারাজি
রাশি- বালিরাশি
নিচয়- কুসুমনিচয়
কখনও কখনও একবচন নির্দেশক বিশেষ্য ব্যবহার করেও বহুবচন বোঝানো যেতে পারে। যেমন : সিংহ বনে থাকে (সব
সিংহ বনে থাকে বোঝাচ্ছে)। পোকার আক্রমণে ফসল নষ্ট হয়। বাজারে লোক জমেছে।
একবচন নির্দেশক বিশেষ্যের আগে বহুত্ব জ্ঞাপক শব্দ, যেমন : অজ¯্র, অনেক, বিস্তর, বহু, নানা, ঢের ব্যবহার করেও
বহুবচন বোঝানো যেতে পারে। যেমন : অজ¯্র লোক, অনেক ছাত্র, বিস্তর টাকা প্রভৃতি। বিশেষ্য পদ বা তার সম্পর্কে
বর্ণনাকারী বিশেষণ পদের দ্বিত্ব প্রয়োগে, অর্থাৎ পদটি পরপর দুইবার ব্যবহার করেও বহুবচন বোঝানো যেতে পারে। যেমন
হাঁড়ি হাঁড়ি ভাত, লাল লাল ফুল, বড় বড় মাঠ প্রভৃতি। এছাড়াও বিশেষ কিছু নিয়মে বাংলা ভাষায় বহুবচন নির্দেশ করা
হয়। যেমন : এটাই করিমদের বাড়ি (‘করিমদের’ বলতে এখানে করিমের পরিবারকে বোঝানো হচ্ছে)। রবীন্দ্রনাথরা
প্রতিদিন জন্মান না (‘রবীন্দ্রনাথরা’ বলতে রবীন্দ্রনাথের মতো সাহিত্যিকদের বোঝানো হচ্ছে)। উল্লেখ্য যে, বাংলা ভাষায়
একই সঙ্গে একাধিক/ একটির বেশি বহুবচন নির্দেশক শব্দ ও শব্দাংশ ব্যবহার করা যায় না। যেমন : ‘সকল ছেলেরা’
বললে তা ভুল হবে। বলতে হবে ‘সকল ছেলে’ বা ‘ছেলেরা’।
নারী ও পুরুষবাচক শব্দ
বিশ্বের অনেক ভাষার মতোই বাংলা ভাষাতেও নারী ও পুরুষ ভেদে শব্দের রূপ পরিবর্তিত হয়। তবে, বাংলা ভাষায় নারীপুরুষের এই ভেদ ব্যাকরণিক নয়। অর্থাৎ, আরবি, হিন্দি প্রভৃতি ভাষার মতো জড়বস্তু কিংবা বিশেষণে নারী কিংবা
পুরুষবাচক চিহ্ন যুক্ত হয় না। বাংলা ভাষায় নারীবাচক শব্দ যেমন রয়েছে তেমনি পুরুষবাচক শব্দ রয়েছে। পুরুষবাচক
ঐঝঈ-২৮৫১ ব্যাকরণ-৮২
শব্দের কয়েকটি উদাহরণ হলো : বাপ, ভাই, ছেলে প্রভৃতি। নারীবাচক কয়েকটি শব্দ হলো : মা, বোন, মেয়ে প্রভৃতি। নারী
প্রত্যয় যোগে শব্দ গঠনের দৃষ্টান্ত নি¤œরূপ :
ঈ-প্রত্যয় : নিশাচর-নিশাচরী, ভয়ংকর-ভয়ংকরী, রজক-রজকী, কিশোর-কিশোরী, বেঙ্গম-বেঙ্গমী, ভাগনা/ভাগনে- ভাগনী
নী-প্রত্যয় : কামার-কামারনি, জেলে-জেলেনি, কুমার-কুমারনি, ধোপা-ধোপানি, মজুর-মজুরনি পুরুবাচক শব্দের শেষে ‘ঈ’
থাকলে নী-প্রত্যয় যোগ হলে আগের ‘ঈ’, ‘ই’ হয়। যেমন: ভিখারী- ভিখারিনী
আনী-প্রত্যয় : আচার্য-আচার্যানী
ইনি-প্রত্যয় : কাঙাল-কাঙালিনি, গোয়ালা- গোয়ালিনি, বাঘ-বাঘিনি
উন-প্রত্যয় : ঠাকুর-ঠাকরুন
আইন-প্রত্যয় : ঠাকুর-ঠাকুরাইন
আ-প্রত্যয় : মৃত-মৃতা, বিবাহিত-বিবাহিতা, মাননীয়-মাননীয়া, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, চতুর-চতুরা, চপল-চপলা, নবীন-নবীনা, কনিষ্ঠকনিষ্ঠা, মলিন-মলিনা, অজ-অজা, শিষ্য-শিষ্যা, ক্ষত্রিয়-ক্ষত্রিয়া
ইকা-প্রত্যয় : শব্দের শেষে অক থাকলে ইকা-প্রত্যয় যোগ হয় এবং অক’-এর স্থলে ইকা হয়। যেমন : বালক-বালিকা,
নায়ক-নায়িকা, গায়ক-গায়িকা, সেবক-সেবিকা।
পুরুবাচক শব্দ গঠনের জন্য কতগুলো শব্দের আগে নর, মদ্দা প্রভৃতি ও নারীবাচক শব্দ গঠনের জন্য স্ত্রী, মাদি, মাদা,
ইত্যাদি শব্দ যোগ করা হয়। যেমন: মর/ মদ্দা/ হুলো বিড়াল- মেনি বিড়াল, পুরুষলোক-মেয়েলোক, বেটাছেলে- মেয়েছেলে,
পুরুষ কয়েদি- নারী কয়েদি, বলদ গরু- গাই গরু প্রভৃতি।
শব্দের শেষে পুরুষ বা নারীবাচক শব্দ যোগ করেও এ ধরনের শব্দ তৈরি করা যায়। যেমন : বোন-পো- বোন-ঝি, ঠাকুর-
পো- ঠাকুর-ঝি, গয়লা- গয়লা-বউ, জেলে- জেলে-বউ। যে সব পুরুষবাচক শব্দের শেষে ‘তা’ আছে, সেগুলোর শেষে ‘ত্রী’
হয়। যেমন- নেতা-নেত্রী, কর্তা-কর্ত্রী প্রভৃতি। পুরুষবাচক শব্দের শেষে অত, বান, মান, ঈয়ান থাকলে নারীবাচক শব্দে
যথাক্রমে অতী, বতী, মতী, ঈয়সী হয়। যেমন : সৎ-সতী, গুণবান-গুণবতী, বুদ্ধিমান-বুদ্ধিমতী, গরীয়ান-গরিয়সী। এছাড়া,
বিশেষ নিয়মে গঠিত নারীবাচক শব্দ : স¤্রাট- স¤্রাজ্ঞী, যুবক-যুবতি, শ্বশুর-শ্বশ্রƒ, বন্ধু-বান্ধবী, দেবর- জা, শিক্ষক- শিক্ষয়িত্রী,
পতি-পতœী, সভাপতি-সভানেত্রী প্রভৃতি।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
২. শব্দ বলতে কী বোঝেন? উৎস অনুসারে শব্দের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা করুন।
৩. গঠন অনুসারে শব্দের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা করুন।
৪. বাগর্থ অনুসারে শব্দের শ্রেণিবিভাগ ব্যাখ্যা করুন।
৫. শব্দের গঠন প্রক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করুন।
FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ