বাক্য কাকে বলে? বাক্যের কয়টি অংশ ও কী কী? সার্থক বাক্যের বৈশিষ্ট্যগুলো বাক্যের উদ্দেশ্য ও বিধেয় বলতে কী বোঝেন?

বাক্য ভাষার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বাক্যে ব্যবহৃত শব্দকে পদ বলে। একাধিক শব্দকে পাশাপাশি
ব্যবহার করলেই বাক্য হয় না। বক্তার মনের ভাব সম্পূর্ণভাবে প্রকাশিত হলেই তা বাক্যের পর্যায়ে পড়ে।
ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ তাঁর ‘বাঙ্গালা ব্যাকরণ’ গ্রন্থে বাক্যের সংজ্ঞার্থ প্রদান করেছেন এভাবে: “একটি সম্পূর্ণ মনোভাব যে
সমস্ত পদ দ্বারা প্রকাশ করা যায়, তাদের সমষ্টিকে বাক্য বলে।”
মুনীর চৌধুরী ও মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর মতে, “যে সুবিন্যস্ত পদসমষ্টি দ্বারা কোনো বিষয়ে বক্তার মনোভাব
সম্পূর্ণরূপে প্রকাশিত হয়, তাকে বাক্য বলে।”
তাহলে বাক্যের সংজ্ঞার্থ এভাবে দেওয়া যায় যে, অর্থবোধক একাধিক পদের সমন্বয়ে যখন বক্তার মনের ভাব পরিপূর্ণভাবে
প্রকাশিত হয়, তখন তাকে বাক্য বলে।
সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে এমন বাক্যে কর্তা ও ক্রিয়া থাকে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে কর্তা ঊহ্য থাকতে পারে। যেমন:
যাও। খাও। শব্দগুলো গঠনের দিক থেকে একটিমাত্র শব্দের বাক্য হলেও এগুলোতে একাধিক শব্দের ব্যবহার রয়েছে।
যেমনযাও। বাক্যের অন্তর্নিহিত রূপÑ তুমি যাও। খাও। বাক্যের অন্তর্নিহিত রূপÑ তুমি খাও।
বাক্যের অংশ
প্রতিটি বাক্যের প্রধান অংশ থাকে দুটি। একটি বাক্যের উদ্দেশ্য এবং অপরটি বিধেয়।
উদ্দেশ্য: বাক্যে যাকে লক্ষ্য করে বা যার সম্বন্ধে কিছু বলা হয় তাকে উদ্দেশ্য বলা হয়। যেমন- মেয়েটি পড়ছে। প্রদত্ত
বাক্যে মেয়েটি উদ্দেশ্য। বাক্যের উদ্দেশ্য অংশে একাধিক পদও থাকতে পারে। যেমন‘সালমা, আরিফ, রিতা স্কুলে যায়।’
এখানে ‘সালাম’, ‘আরিফ’ ও ‘রিতা’ এই তিনটি পদ বাক্যের উদ্দেশ্য।
বিধেয়: বাক্যের যে অংশে উদ্দেশ্য সম্পর্কে কিছু বলা হয় তাকে বিধেয় বলে। যেমনÑ ছেলেরা খেলছে। প্রদত্ত বাক্যে
‘খেলছে’ বিধেয়। বাক্যের বিধেয় অংশের মূল হচ্ছে সমাপিকা ক্রিয়া। তবে অনেক সময় একাধিক ক্রিয়াও বিধেয় অংশে
থাকতে পারে। যেমন- রহিম যেতে পারবে না।
প্রদত্ত বাক্যে ‘যেতে পারবে না’ বিধেয়।
বাক্য দীর্ঘ হলে বাক্যের উদ্দেশ্য ও বিধেয় সম্প্রসারিত হয়। যেমনউদ্দেশ্যের সম্প্রসারণ
সম্প্রসারণ কৌশল সম্প্রসারণ উদ্দেশ্য বিধেয়
বিশেষণ যোগে কুখ্যাত জঙ্গি বাহিনী ধরা পড়েছে।
সম্বন্ধ পদ যোগে রহমানের ভাই এসেছে।
সমার্থক বাক্যাংশ যোগে যারা সাধক তারাই সফল হবে।
অসমাপিকা ক্রিয়া যোগে চাটুকার পরিবৃত হয়েই করিম সাহেব থাকেন।
বিশেষণ স্থানীয় বাক্যাংশ
যোগে
যার কথা তোমরা প্রায়ই বলে থাক
তিনি এসেছেন।
বিধেয় সম্প্রসারণ
সম্প্রসারণ কৌশল উদ্দেশ্য সম্প্রসারণ বিধেয়
ক্রিয়া বিশেষণ যোগে কচ্ছপ ধীর গতিতে চলে।
ক্রিয়া বিশেষণ যোগে জেট বিমান অতিশয় দ্রæত চলে।
কারক সহযোগে আমি ভুবনের ঘাটে ঘাটে ভাসছি।
ক্রিয়া বিশেষণ স্থানীয়
বাক্যাংশ যোগে
তারা যেভাবেই হোক যাবেন।
বিধেয় বিশেষণ যোগে তারিন অতি সুন্দর গান গায়।
সার্থক বাক্যের গুণ বা বৈশিষ্ট্য:
একটি বাক্যকে সার্থক ও শুদ্ধ হতে হলে কতগুলো গুণ বা বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার। এগুলো হচ্ছেÑ
১. আকাক্সক্ষা
২. আসত্তি এবং
৩. যোগ্যতা
১. আকাক্সক্ষা: ‘আকাক্সক্ষা’ শব্দের আভিধানিক অর্থÑ ইচ্ছা, বাসনা। বাক্যের অর্থ সম্পূর্ণরূপে স্পষ্টভাবে বোঝার জন্য
একপদের পর অন্য পদ শোনার যে ইচ্ছা তা-ই আকাক্সক্ষা। অর্থাৎ বলা যায়Ñ শ্রোতার ইচ্ছা বা বাসনার নিবৃত্তি ঘটলেই
সার্থক বাক্য গঠিত হয়। যেমনআমরা গতকাল বই মেলায়, বাক্যটিতে বক্তার মনের ভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করে না এবং শ্রোতার শোনার আকাক্সক্ষাও
মেটে না। তাই বাক্যটি সার্থক নয়। কিন্তু ‘আমরা গতকাল বইমেলায় গিয়েছিলাম’ বাক্যটিতে বক্তার মনোভাব ও শ্রোতার
আকাক্সক্ষার নিবৃত্তি ঘটেছে। তাই বাক্যটি সার্থক।
২. আসত্তি : আসত্তি শব্দের অর্থ নৈকট্য। মনোভাব প্রকাশের জন্য বাক্যে শব্দগুলি এমনভাবে পরপর সাজাতে হবে যাতে
পরস্পরের মধ্যে সম্পর্ক থাকে এবং ভাষার নিয়ম অনুযায়ী নৈকট্য থাকে। যেমন- যাব আমি ভাত কলেজে খেয়ে। এখানে
কর্তা, কর্ম ও ক্রিয়া অনুযায়ী বাক্যগুলো সাজানো নেই। তাই এটি সার্থক বাক্য নয়। বরং একটি সার্থক বাক্য হতে হলে তা
হবে- “আমি ভাত খেয়ে কলেজে যাব।” এই বাক্যটিতে সঠিক পদবিন্যাস থাকায় এটি সার্থক বাক্য।
৩. যোগ্যতা : বাক্যের পদসমূহের অর্থগত ও ভাবগত মেলবন্ধনের নামই যোগ্যতা। যেমন- বর্ষাকালে জলপথে নৌকা
চলে। এটি একটি যোগ্যতা সম্পন্ন বাক্য। কারণ বাক্যটিতে পদসমূহের অর্থগত ও ভাবগত মিল রয়েছে। কিন্তু যদি বলা
হয়- “বর্ষাকালে আকাশ পথে নৌকা চলে” তবে বাক্যটি ভাব প্রকাশের যোগ্যতা হারাবে। কারণ নৌকা আকাশ পথে চলে
না। সার্থক বাক্যের জন্য অর্থ সংগতি বা যোগ্যতা থাকতে হবে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
১. বাক্য কাকে বলে? বাক্যের কয়টি অংশ ও কী কী?
২. সার্থক বাক্যের বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করুন।
৩. বাক্যের উদ্দেশ্য ও বিধেয় বলতে কী বোঝেন? উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]