গঠন অনুসারে বাক্যের শ্রেণিবিভাগ কর অর্থ অনুসারে বাক্যের শ্রেণিবিভাগ কর বাক্য রূপান্তরের নিয়ম বল বাক্য রূপান্তর কর

বাক্যের শ্রেণিবিভাগ
সার্থক বাক্যকে দুটি দৃষ্টিকোণ থেকে ভাগ করা যায়। যেমন: ক. গঠন অনুসারে বাক্য খ. অর্থ অনুসারে বাক্য।
ক. গঠন অনুসারে বাক্য :
গঠনগত দিক থেকে বিচার করলে আমরা তিন প্রকার বাক্য পাই।
১. সরল বাক্য
২. মিশ্র বা জটিল বাক্য
৩. যৌগিক বাক্য
১. সরল বাক্য : যে বাক্যে একটি মাত্র উদ্দেশ্য ও একটি মাত্র বিধেয় থাকে তাকে সরল বাক্য বলে। যেমন- ‘রহিম
প্রতিদিন বিদ্যালয়ে যায়।’
প্রতিদিন বাক্যটিতে ‘রহিম’ উদ্দেশ্য ও ‘প্রত্যহ বিদ্যালয়ে যায়’ বিধেয়। সরল বাক্যের উদ্দেশ্য ও বিধেয় প্রয়োজনবোধে
সম্প্রসারিত হতে পারে।
২. মিশ্র বা জটিল বাক্য : কোনো কোনো বাক্যে উদ্দেশ্য ও বিধেয় অর্থাৎ কর্তা ও সমাপিকা ক্রিয়া ছাড়া এক বা একাধিক
অপ্রধান খÐবাক্য থাকতে পারে। এই অপ্রধান খÐাংশ মূল বাক্যেরই অংশ। এ ধরনের বাক্যকে মিশ্র বাক্য বলে। যেমন‘সে যদি আসে তবে আমি খাব।’
বাক্যটিতে ‘সে যদি আসে’ অপ্রধান খÐবাক্য আর ‘তবে আমি খাব’ প্রধান খÐবাক্য।
খÐবাক্য : একাধিক বাক্য মিলে একটি জটিল বাক্য তৈরি হলে বাক্যের অন্তর্গত প্রতিটি বাক্য যদি স্বাধীন বাক্য না হয়ে
অন্য কোনো বাক্যের অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হয় তবে তাকে খÐবাক্য বলে। যেমন- ‘যদি তুমি আস তাহলে আমি যাব’,
এখানে ‘তুমি আস’ এবং ‘আমি যাব’ বাক্যাংশ দুটি খÐবাক্য।
খÐবাক্যকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যেমনক. প্রধান খÐবাক্য
খ. অধীন বা আশ্রিত খÐবাক্য
ক. প্রধান খÐবাক্য : বাক্যে ব্যবহৃত যে খÐবাক্য অর্থÑ প্রকাশের জন্য বাক্যের অন্য অংশের ওপর নির্ভরশীল নয়, তাকে
প্রধান খÐবাক্য বলে। যেমন- ‘আমি জানি যে সে কাজটি করেছে।’
এখানে ‘সে কাজটি করেছে’ বাক্যটি প্রধান খÐবাক্য। বাক্যটি এককভাবে উপস্থাপন করা হলেও এর পূর্ণ অর্থ প্রকাশ পায়।
খ. অধীন বা আশ্রিত খÐবাক্য : বাক্যে ব্যবহৃত যে খÐবাক্য তার পূর্ণাঙ্গ অর্থ প্রকাশের জন্য প্রধান খÐবাক্যের ওপর
নির্ভরশীল হয়, তাকে অধীন বা আশ্রিত খÐবাক্য বলে। যেমন- ‘আমি অবাক হলাম তোমার কাÐজ্ঞান দেখে।’
এখানে ‘তোমার কাÐজ্ঞান দেখে’ আশ্রিত খÐবাক্য। বাক্যটি নিজেই নিজের পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করতে পারে না। অর্থ প্রকাশের
জন্য প্রধান খÐবাক্যের উপর নির্ভর করতে হয়।
জটিল বাক্য প্রধানত তিন প্রকার। যথা-
ক. আশ্রয়-আশ্রিত জটিল বাক্য
খ. সাপেক্ষ-পদযুক্ত জটিল বাক্য ও
গ. প্রতি-নির্দেশক সর্বনামযুক্ত জটিল বাক্য।
ক. আশ্রয়-আশ্রিত জটিল বাক্য: যে জটিল বাক্যের আশ্রিত খÐবাক্যটি প্রধান খÐবাক্যের আশ্রয়ে থাকে এবং প্রধান
খÐবাক্যের সম্পূরক রূপে কাজ করে তাকে আশ্রয়-আশ্রিত জটিল বাক্য বলে। যেমন- ‘নিপা যে আসবে, তা বলা যায় না।
খ. সাপেক্ষ-পদযুক্ত জটিল বাক্য : যে জটিল বাক্যের আশ্রিত খÐবাক্য প্রধান খÐবাক্যের বিধেয় ক্রিয়া সংগঠনের উপর
নির্ভর করে, তাকে সাপেক্ষ-পদযুক্ত জটিল বাক্য বলে। যেমন- ‘কাল যদি বৃষ্টি হয়, তবে স্কুল বন্ধ থাকবে।’
এ ধরনের জটিল বাক্যের প্রধান খÐবাক্যে সাধারণত সাপেক্ষ অব্যয় ‘যদি’ এবং আশ্রিত খÐবাক্যে ‘তাহলে / তবে / না হয়’
ইত্যাদি যুক্ত থাকে।
গ. প্রতি-নির্দেশক সর্বনামযুক্ত জটিল বাক্য : যখন-তখন, যা-তা, যাহা-তাহা, যার-তার, যেখানে-সেখানে, যথা-তথা
ইত্যাদি প্রতিনির্দেশক সর্বনাম ব্যবহার করে জটিল বাক্য গঠন করলে। তাকে প্রতিনির্দেশক সর্বনাম যুক্ত জটিল বাক্য বলে।
যেমন- ‘যখন রোদ উঠল, তখন আমরা বাড়ি পৌঁছে গেছি।’
৩. যৌগিক বাক্য : দুই বা তার বেশি সরল বা জটিল বাক্য সংযোজক বা বিয়োজক অব্যয় দ্বারা যুক্ত হয়ে একটি দীর্ঘবাক্য
গঠন করলে তাকে যৌগিক বাক্য বলে। যৌগিক বাক্যের অন্তর্গত নিরপেক্ষ বাক্যগুলো এবং, ও, কিন্তু অথবা, কিংবা, বরং
তথাপি ইত্যাদি অব্যয়যোগে সংযুক্ত থাকে। সরল বাক্যের সাথে সরল বাক্য বা জটিল বাক্যের সঙ্গে জটিল বাক্য বা সরল
বাক্যের সঙ্গে জটিল বাক্য বা জটিল বাক্যের সাথে সরল বাক্য সংযোজক অব্যয় দ্বারা যুক্ত হয়ে যৌগিক বাক্য গঠিত হয়।
যেমন- ‘তুমি বুদ্ধিমান কিন্তু তোমার সাথে যে এসেছিল সে বোকা।’
খ. অর্থ অনুসারে বাক্য:
অর্থ অনুসারে বাংলা বাক্যকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন:
১. বিবৃতিমূলক বা বর্ণনামূলক বাক্য;
২. প্রশ্নসূচক বাক্য;
৩. আদেশসূচক বাক্য;
৪. ইচ্ছাসূচক বাক্য;
৫. বিস্ময়সূচক বাক্য;
তবে ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় অর্থ অনুযায়ী বাক্যকে সাত শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন। যেমন:
১. নির্দেশসূচক বাক্য;
২. প্রশ্নবাচক বাক্য;
৩. ইচ্ছা বা প্রার্থনাসূচক বাক্য;
৪. আজ্ঞাসূচক বাক্য;
৫. কার্যকারণাত্মক বাক্য;
৬. সংশয়সূচক বা সন্দেহদ্যোতক বাক্য;
৭. আবেগসূচক বাক্য।
নিচে এগুলোর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
১. বিবৃতিমূলক বাক্য :
যে বাক্যে কোনো বক্তব্য সাধারণভাবে বিবৃত বা বর্ণনা নির্দেশ করা হয়, তাকে বর্ণনামূলক বা বিবৃতিমূলক বাক্য বলে।
যেমন- ‘ওসমান ভালো ক্রিকেট খেলতে পারে। বিবৃতিমূলক বাক্য দুই প্রকারের। যথা-
ক. অস্তিবাচক বাক্য
খ. নেতিবাচক বাক্য
ক. অস্তিবাচক বাক্য: যে বাক্যে কোনো ঘটনা, ভাব বা বক্তব্যের অস্তিত্ব হ্যাঁ-বোধক অর্থ প্রকাশ করে, তাকে অস্তিবাচক
বাক্য বা হ্যাঁ-বাচক বাক্য বলে। যেমন- ‘ভাল জিনিসের কদর বেশি।’
খ. নেতিবাচক বাক্য : যে বাক্যে কোনো ঘটনা, ভাব বা বক্তব্যের অস্তিত্ব না-বোধক অর্থে প্রকাশ করে, তাকে নেতিবাচক
বাক্য বলে। যেমন: ‘ফরিদা আজ স্কুলে যাবে না।’
২. প্রশ্নবোধক বাক্য :
যে বাক্যে কোনো ঘটনা, কাহিনি বা বক্তব্য বর্ণনায় প্রশ্নসূচক অর্থ প্রকাশ পায়, তাকে প্রশ্নবোধক বাক্য বলে। যেমন:
‘আপনি কোথা থেকে এসেছেন?’
৩. অনুজ্ঞাবাচক বাক্য :
যে বাক্য দ্বারা বর্তমান ও ভবিষ্যতের কোনো আদেশ, অনুরোধ, উপদেশ, অনুমতি, নিষেধ ইত্যাদি বোঝায়, তাকে
অনুজ্ঞাবাচক বাক্য বলে। যেমন- ‘দয়া করে বইটি দিন।’
৪. ইচ্ছা বা প্রার্থনাসূচক বাক্য :
যে বাক্যে বক্তার ইচ্ছা বা প্রার্থনাসূচক অর্থ প্রকাশ পায়, তাকে ইচ্ছা বা প্রার্থনাসূচক বাক্য বলে। যেমন- ‘তুমি সাধনায়
সফল হও।’
৫. আবেগসূচক বাক্য:
যে বাক্যে বক্তার মনের আনন্দ, বেদনা, শোক-বিষাদ ইত্যাদি আবেগ প্রকাশ পায়, তাকে আবেগসূচক বাক্য বলে। যেমন‘হুররে! আমরা খেলায় জিতেছি।’
৬. সংশয়সূচক বাক্য:
যে ধরনের নির্দেশক বাক্যে বক্তব্য বিষয় সম্পর্কে সংশয়, সন্দেহ, সম্ভাবনা, অনুমান, অনিশ্চয়তা ইত্যাদি ভাব প্রকাশিত হয়,
তাকে সংশয়সূচক বাক্য বলে। যেমন- ‘মনে হয়, রহমান পাস করবে না।’
৭. কার্যকারণাত্মক বাক্য:
যে সব বাক্যে কোনো নিয়ম, স্বীকৃতি, শর্ত বা সংকেত প্রকাশ পায়, তাকে কার্যকরাণাত্মক বাক্য বলে। যেমন- ‘যদি আমি
আসতে না পারি, তাহলে তুমি চলে যেও।’
বাক্যের পরিবর্তন
বাক্যের অর্থের পরিবর্তন না করে এক প্রকারের বাক্যকে অন্য প্রকারের বাক্যে পরিবর্তন বা রূপান্তর করার নামই বাক্য
পরিবর্তন বা বাক্য রূপান্তর। তবে বাক্য রূপান্তরের সময় মূল বাক্যের সাধু ও চলতিভাষারীতি অপরিবর্তিত রাখা দরকার।
যেমনপরিশ্রমী লোক সফলতা লাভ করে।
এর রূপান্তর হয় এভাবে- যে পরিশ্রম করে সেই সফলতা লাভ করে।
বাক্য পরিবর্তনের প্রকারভেদ:
বাক্যের পরিবর্তনকে তিনভাবে ভাগ করে আলোচনা করা যায়। যথা১. গঠনগত পরিবর্তন।
২. ভাবগত পরিবর্তন।
৩. উক্তির পরিবর্তন।
নি¤েœ একটি ছকের মাধ্যমে বিষয়টি তুলে ধরা হলো:
বাক্য পরিবর্তন
১. গঠনগত পরিবর্তন ২. ভাবগত পরিবর্তন ৩. উক্তির পরিবর্তনগত পবিরর্তন
সরল থেকে জটিল বাক্য অস্তিবাচক থেকে নেতিবাচক প্রত্যক্ষ থেকে পরোক্ষ
জটিল থেকে সরল বাক্য নেতিবাচক থেকে অস্তিবাচক পরোক্ষ থেকে প্রত্যক্ষ
সরল থেকে যৌগিক বাক্য নির্দেশাত্মক থেকে প্রশ্নবাচক
যৌগিক থেকে সরল বাক্য প্রশ্নবাচক থেকে নির্দেশাত্মক
জটিল থেকে যৌগিক বাক্য নির্দেশাত্মক থেকে অনুজ্ঞাসূচক
যৌগিক থেকে জটিল বাক্য অনুজ্ঞাসূচক থেকে নির্দেশাত্মক
নির্দেশাত্মক থেকে প্রার্থনাসূচক
প্রার্থনাসূচক থেকে নির্দেশাত্মক
নির্দেশাত্মক থেকে বিস্ময়সূচক
বিস্ময়সূচক থেকে নির্দেশাত্মক।
নিচে বিভিন্ন প্রকার বাক্য পরিবর্তনের সূত্র ও উদাহরণ তুলে ধরা হলো:
১। গঠনগত পরিবর্তন:
ক. সরল বাক্য থেকে জটিল বাক্যে পরিবর্তনের সূত্র।
১. সরল বাক্যটিকে দুটি অংশে বিভক্ত করতে হবে।
২. বাক্য দুটির প্রথমে সম্বন্ধসূচক অব্যয় (যদি-তবে, যে-সে, যখন-তখন ইত্যাদি) ব্যবহার করতে হবে।
৩. আশ্রিত খÐবাক্য ও প্রধান খÐবাক্যকে পরস্পর সাপেক্ষ করতে হবে।
৪. বাক্য পরিবর্তিত হলেও মৌলিক অর্থ অপরিবর্তিত থাকবে।
যেমন: সরল: সত্যবাদীকে সবাই ভালোবাসে।
জটিল: যে সত্যবাদী, তাকেই সবাই ভালোবাসে।
সরল: বিদ্বান ব্যক্তিরা সম্মান পায়।
জটিল: যারা বিদ্বান, তারা সম্মান পায়।
সরল: ধনীরা প্রায় কৃপণ হয়।
জটিল: যারা ধনী, তারা প্রায়ই কৃপণ হয়।
সরল: আমি তোমাকে নিতে এসেছি।
জটিল: তুমি সেই, যাকে আমি নিতে এসেছি।
খ. জটিল বাক্য থেকে সরল বাক্যে পরিবর্তনের সূত্র :
১. জটিল বাক্যকে একটি অংশে রূপান্তর করতে হয়।
২. প্রধান খÐবাক্যকে পরিবর্তন না করে অপ্রধান বা আশ্রিত খÐবাক্যের সমাপিকা ক্রিয়াকে অসমাপিকা ক্রিয়ায় পরিবর্তন
করতে হয়।
৩. অপ্রধান খÐবাক্যকে সংকোচন করতে হয়।
৪. সম্বন্ধসূচক অব্যয় বা সাপেক্ষ সর্বনাম পদের বিলুপ্তি ঘটাতে হয়।
৫. একটি বাক্যাংশে পরিণত করতে হয়।
৬. বাক্য পরিবর্তন হলেও মৌলিক অর্থ অপরিবর্তিত থাকবে।
যেমন: জটিল: যখন মেঘগর্জন করে, তখন ময়ূর নৃত্য করে।
সরল: মেঘগর্জন করলে ময়ূর নৃত্য করে।
জটিল: সে যদি কাল আসে, তবে আমি যাব।
সরল: সে কাল এলে আমি যাব।
জটিল: যে সকল পশু মাংস ভোজন করে, তারা অত্যন্ত বলবান।
সরল: মাংসভোজী পশুরা অত্যন্ত বলবান হয়।
জটিল: যে রক্ষক, সেই ভক্ষক।
সরল: রক্ষকই ভক্ষক।
গ. সরল বাক্যকে যৌগিক বাক্যে রূপান্তরের সূত্র:
১. সরল বাক্যটিকে দুটি অংশে বিভক্ত করতে হয়।
২. আশ্রিত বাক্যের অসমাপিকা ক্রিয়াকে সমাপিকা ক্রিয়ায় রূপান্তর করতে হয়।
৩. খÐবাক্যগুলোকে সংযোজক, বিয়োজক ও ব্যতিরেকাত্মক প্রভৃতি অব্যয় দ্বারা যুক্ত করতে হয়।
৪. বাক্যের পরিবর্তন হলেও বাক্যের অর্থের কোনো পরিবর্তন হয় না।
যেমন: সরল: আমি বহু কষ্টে শিক্ষালাভ করেছি।
যৌগিক : আমি বহু কষ্ট করেছি, তাই শিক্ষা লাভ করেছি।
সরল: দয়া করে সব খুলে বলুন।
যৌগিক : দয়া করুন এবং সব খুলে বলুন।
সরল: তার বয়স হলেও বুদ্ধি হয়নি।
যৌগিক : তার বয়স হয়েছে কিন্তু বুদ্ধি হয়নি।
সরল: বিদ্বান হলেও তার অহংকার নেই।
যৌগিক: তিনি বিদ্বান তথাপি তার অহংকার নেই।
ঘ. যৌগিক বাক্যকে সরল বাক্যে রূপান্তরের সূত্র :
১. বাক্য পরিবর্তন হলেও বাক্যের মূল অর্থের পরিবর্তন হয় না।
২. বাক্যটিকে একটি অংশে পরিণত করতে হয়।
৩. প্রধান খÐবাক্যের সমাপিকা ক্রিয়াকে অপরিবর্তিত রাখতে হয়।
৪. আশ্রিত খÐবাক্যের সমাপিকা ক্রিয়াকে অসমাপিকা ক্রিয়ায় পরিণত করতে হয়।
৫. সংযোজক, বিয়োজক ও ব্যতিরেকাত্মক ইত্যাদি অব্যয় পদ থাকলে তা বর্জন করতে হয়।
যেমন: যৌগিক বাক্য: সত্য কথা বলিনি, তাই বিপদে পড়েছি।
সরল: সত্য কথা না বলে বিপদে পড়েছি।
যৌগিক বাক্য: তুমি আসবে এবং আমি যাবো।
সরল বাক্য: তুমি এলে আমি যাব।
যৌগিক: ছেলেটি গরিব কিন্তু মেধাবী।
সরল: ছেলেটি গরিব হলেও মেধাবী।
যৌগিক: আকাশে মেঘ ছিল না, কিন্তু বজ্রপাত হলো।
সরল: আকাশে মেঘ না থাকা সত্তে¡ও বজ্রপাত হলো।
ঙ. জটিল বাক্যকে যৌগিক বাক্যে রূাপন্তরের সূত্র:
১. জটিল বাক্যকে দুটি অংশে বিভক্ত করতে হয়।
২. সম্বন্ধসূচক অব্যয় পদ বিলুপ্ত হয়।
৩. খÐবাক্যগুলোকে স্বাধীন বা নিরপেক্ষ খÐবাক্যে পরিণত করতে হয়।
৪. সংযোজক, বিয়োজক ও ব্যতিরেকাত্মক অব্যয় ব্যবহারের মাধ্যমে স্বাধীন বাক্যগুলো যুক্ত করতে হয়।
যেমন: জটিল: তুমি যদি না খাও তবে আমিও খাব না।
যৌগিক : তুমি খাও, নইলে আমিও খাব না।
জটিল: যদিও রামলালের বয়স কম ছিল তথাপি তার দুষ্টুবুদ্ধি কম ছিল না।
যৌগিক : রামলালের বয়স কম ছিল, কিন্তু দুষ্টবুদ্ধি কম ছিল না।
জটিল: যখন বিপদ আসে, তখন দুঃখও আসে।
যৌগিক: বিপদ ও দুঃখ একসাথে আসে।
জটিল: যেহেতু দোষ করেছো সেহেতু শাস্তি পাবে।
যৌগিক: দোষ করেছো অতএব শাস্তি পাবে।
চ. যৌগিক বাক্যকে জটিল বাক্যে পরিবর্তনের সূত্র :
১. বাক্যটিকে দুটি অংশে বিভক্ত করতে হবে।
২. সংযোজক, বিয়োজক ও ব্যতিরেকাত্মক অব্যয় পদের বিলুপ্তি ঘটাতে হবে।
৩. নিরপেক্ষ খÐবাক্যগুলোর মধ্যে একটিকে প্রধান রেখে অন্যান্য খÐবাক্যগুলোকে অপ্রধান বা আশ্রিত বাক্যে পরিণত
করতে হবে।
৪. নিরপেক্ষ বাক্য দুটির পূর্বে সম্বন্ধসূচক অব্যয় পদ ব্যবহার করতে হয়।
যেমন: যৌগিক : মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা কর, তবে পাস করতে পারবে।
জটিল : যদি মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা কর, তবে পাস করতে পারবে।
যৌগিক : তুমি ধনী কিন্তু উদার নও।
জটিল : যদিও তুমি ধনী তবু উদার নও।
যৌগিক : ধনীদের নিজেদের গরজ আছে তাই তারা দারিদ্র্য সৃষ্টি করে।
জটিল : যেহেতু ধনীদের নিজেদের গরজ আছে, সেহেতু তারা দারিদ্র্য সৃষ্টি করে।
২। ভাবগত পরিবর্তন
ক. অস্তিবাচক বাক্যকে নেতিবাচক বাক্যে পরিবর্তনের সূত্র :
১. বাক্যে না, নয়, নহে, নি, নেই, নাহি, নাই ইত্যাদি নঞর্থক অব্যয়যোগে অস্তিবাচক বাক্যের বিধেয় ক্রিয়াকে (সমাপিকা
ক্রিয়া) নেতিবাচক করতে হবে।
২. হ্যাঁ-সূচক বাক্যকে না করতে হলে মুল অর্থ পরিবর্তন না করে বাক্য পরিবর্তন করতে হবে।
৩. বাক্যের বিশেষণ পদটিকে বিপরীত শব্দে রূপান্তর করতে হবে।
৪. প্রয়োজন মত বাক্যের অন্য শব্দকে ‘না’ সূচক বাক্যের প্রয়োগের আওতাভুক্ত করতে হবে।
৫. ‘না’ বাচক ক্রিয়া ও ‘না’ বাচক শব্দ বা ‘না’ বাচক অব্যয় মিলে বাক্যের অস্তিবাচক বা হ্যাঁ-সূচক ভাবটি বজায় রাখতে
হয়।
যেমন: অস্তিবাচক : হৈমন্তী চুপ করিয়া রহিল।
নেতিবাচক : হৈমন্তী চুপ না থাকিয়া পারিল না।
অস্তিবাচক : পাখিটা মরল।
নেতিবাচক : পাখিটা বাঁচল না।
ঐঝঈ-২৮৫১ ব্যাকরণ-৯২
অস্তিবাচক : এভাবে সমাজ অচল হয়ে পড়ে।
নেতিবাচক : এভাবে সমাজ চলে না।
অস্তিবাচক : অনুপমার উচিত কাজ হয়েছে।
নেতিবাচক : অনুপমার অনুচিত কাজ হয়নি।
অস্তিবাচক : বাড়িটা তারা দখল করেছে।
নেতিবাচক : বাড়িটা তারা দখল না করে ছাড়েনি।
খ. নেতিবাচক বাক্যকে অস্তিবাচক বাক্যে রূপান্তরের সূত্র :
১. বাক্যে না, নয়, নহে, নি, নেই, নাহি, নাই ইত্যাদি নঞর্থক অব্যয় তুলে দিতে হয়।
২. শব্দের পরিবর্তন ঘটিয়ে বাক্যে হ্যাঁ-সূচক ভাবটা ফুটিয়ে তুলতে হয়।
৩. বাক্যের বিশেষণ পদটিকে বিপরীত শব্দে রূপান্তর করতে হয়।
৪. প্রয়োজন মত নেতিবাচক শব্দের বাক্যাংশকে অস্তিবাচক শব্দ দ্বারা অস্তিবাচকে রূপান্তর করতে হয়।
যেমন: নেতিবাচক : তারা যাবে না কোথাও।
অস্তিবাচক : তারা এখানেই থাকবে।
নেতিবাচক : আমি অন্য ঘরে যাব না।
অস্তিবাচক : আমি এ ঘরে থাকব।
নেতিবাচক : দেশের প্রচলিত ধর্মে কর্মে তাহার আস্থা ছিল না।
অস্তিবাচক : দেশের প্রচলিত ধর্মে কর্মে তাহার অনাস্থা ছিল।
নেতিবাচক : হৈম তাহার অর্থ বুঝিল না।
অস্তিবাচক : হৈম তাহার অর্থ বুঝিতে ব্যর্থ হইল।
গ. নেতিবাচক বাক্যকে প্রশ্নবাচক বাক্যে রূপান্তরের সূত্র :
১. নেতিবাচক বাক্যের না-সূচক শব্দ তুলে দিতে হয়।
২. মূল বা মৌলিক অর্থ অপরিবর্তিত থাকে।
৩. নির্দেশক বাক্য হলে ‘কি’ এবং নঞর্থক বাক্য হলে ‘নাকি’, ‘নয়-কি’-সহ জিজ্ঞাসার চিহ্ন (?) ব্যবহার করতে হয়।
৪. না-সূচক অব্যয় তুলে দিয়ে হ্যাঁ-সূচক অর্থপূর্ণ শব্দ ব্যবহার করতে হয়।
৫. সাধারণত বর্তমান কালের ‘ল’, ‘ইল’-ক্রিয়া বিভক্তি থাকলে তার সঙ্গে আগে ‘হয়’ ক্রিয়া-বিভক্তি ব্যবহার করতে হয়।
যেমন:
নেতিবাচক : এতে দোষ নেই।
প্রশ্নবাচক : এতে দোষ কী?
নেতিবাচক : টাকায় সব হয় না।
প্রশ্নবাচক : টাকায় কি সব হয়?
নেতিবাচক : আর পথ নেই।
প্রশ্নবাচক : আর কি পথ আছে?
নেতিবাচক : পুলিশের লোক জানিবে না।
প্রশ্নবাচক : পুলিশের লোক জানিবে কী করিয়া?
ঘ. প্রশ্নবাচক বাক্যকে নেতিবাচক বাক্যে রূপান্তরের সূত্র :
১. মূল অর্থ বা মৌলিক অর্থ অপরিবর্তিত রেখে বাক্য পরিবর্তন করতে হয়।
২. প্রশ্নবোধক অব্যয় ‘কি’ তুলে দিতে হয়।
৩. নেতিবাচক বা নঞর্থক না, নাই, নেই, নি, জানি না, বুঝি না ইত্যাদি ব্যবহার করতে হয়।
৪. বাক্যটিকে নেতিবাচক ভাব ধারায় গঠন করতে হয়।
যেমন: প্রশ্নবাচক : তারা কি পাষাণ?
নেতিবাচক : তারা পাষাণ কি না জানি না।
প্রশ্নবাচক : এ কেমন কথা?
নেতিবাচক : এ কেমন কথা জানি না।
প্রশ্নবাচক : তাহাদের গ্রামে ফিরিয়া আসা চলে কি?
নেতিবাচক : তাহাদের গ্রামে ফিরিয়া আসা চলে না।
প্রশ্নবাচক : সরস্বতী বর দেবেন কি?
নেতিবাচক : সরস্বতী বর দেবেন না।
ঙ. অস্তিবাচক বাক্যকে প্রশ্নবাচক বাক্যে রূপান্তরের সূত্র :
১. মৌলিক বা মূল অর্থ অপরিবর্তিত রেখে বাক্য পরিবর্তন করতে হয়।
২. কর্তার পরে প্রশ্নবাচক অব্যয় ব্যবহার করতে হয়।
৩. ক্রিয়ার পরে নঞর্থক অব্যয় ব্যবহার করতে হয়।
৪. বাক্য শেষে প্রশ্নবোধক জিজ্ঞাসা চিহ্ন (?) ব্যবহার করতে হয়।
যেমন: অস্তিবাচক : ফুলকে সকলেই ভালোবাসে।
প্রশ্নবাচক : ফুলকে কি সকলেই ভালোবাসে না?
অস্তিবাচক : এরা অন্য জাতের মানুষ।
প্রশ্নবাচক : এরা কি অন্য জাতের মানুষ নয়?
অস্তিবাচক : শৈশবে তার বাবা মারা যান।
প্রশ্নবাচক : শৈশবে কি তার বাবা মারা যাননি?
অস্তিবাচক : বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ।
প্রশ্নবাচক : বাংলাদেশ কি একটি উন্নয়নশীল দেশ নয়?
চ. প্রশ্নবাচক বাক্যকে অস্তিবাচক বাক্যে পরিবর্তনের সূত্র :
১. মূল বা মৌলিক অর্থ অপরিবর্তিত রেখে বাক্য পরিবর্তন করতে হয়।
২. প্রশ্নবাচক ‘কি’ অব্যয় বিলুপ্ত হবে।
৩. নঞর্থক অব্যয় পদও বিলুপ্ত হবে।
৪. জিজ্ঞাসা (?) চিহ্ন স্থানে দাঁড়ি (।) বসাতে হবে।
যেমন: প্রশ্নবাচক : ভুল কি সকলেই করে না?
অস্তিবাচক : ভুল সকলেই করে।
প্রশ্নবাচক : একলা যেতে ভয় করবে না তো?
অস্তিবাচক : একলা যেতে ভয় করবে কি না জানতে চাই।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
১. বাক্য কাকে বলে? গঠন অনুসারে বাক্য কত প্রকার ও কী কী? উদাহরণসহ আলোচনা করুন।
২. অর্থ অনুসারে বাক্য কত প্রকার ও কী কী? উদাহরণসহ আলোচনা করুন।
৩. সরল বাক্য ও যৌগিক বাক্যের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করুন।
৪. খÐবাক্য ও আশ্রিত খÐবাক্য বলতে কী বোঝেন? উদাহরণসহ আলোচনা করুন।
৫. বাক্যের উদ্দেশ্য ও বিধেয় এর সম্প্রসারণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করুন।
৬. বাক্যের রূপান্তর বা পরিবর্তন বলতে কী বোঝেন? কী কী বিষয়ের উপর ভিত্তি করে এই পরিবর্তন হয়ে থাকে
উদাহরণসহ আলোচনা করুন।
৭. বাক্য পরিবর্তন করুন:
ক. শিক্ষিত লোককে সবাই শ্রদ্ধা করে। (জটিল বাক্য)
খ. যদি দোষ স্বীকার কর তাহলে শাস্তি পাবে না। (সরল বাক্য)
গ. তুমি দীর্ঘজীবী হও। (বিবৃতিমূলক বাক্য)
ঘ. তিনি ধনী হয়েও সুখী ছিলেন না। (যৌগিক বাক্য)
ঙ. বেশির ভাগ লোকই বেদের অর্থ বুঝত না। (অস্তিবাচক বাক্য)
চ. দেশের সেবা করা কর্তব্য। (অনুজ্ঞাসূচক বাক্য)
ছ. কথাটায় তার অবিশ্বাস হয়। (নেতিবাচক বাক্য)
জ. এতে দোষ কী? (নির্দেশাত্মক বাক্য)

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]