বাংলা ব্যাকরণে ‘কারক’

বাংলা ব্যাকরণে ‘কারক’ (কৃ+নক = কারক) একটি সুপরিচিত প্রসঙ্গ। কারক শব্দটির অর্থÑ যা কোনো কাজ
বা ক্রিয়া সম্পাদন করে। বাক্যে কর্তাই ক্রিয়া সম্পাদন করে। সুতরাং কর্তাই কারক এই রকম মনে হতে
পারে। কিন্তু ব্যাকরণে শুধু কর্তাই কারক নয়। কর্তা কী করছে, কার সাহায্যে করছে, কোথায় করছে অর্থাৎ
ক্রিয়া সম্পাদনের অবলম্বন, উপকরণ, হেতু স্থান, কাল ইত্যাদি সবকিছুই এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়। ক্রিয়া সম্পাদনে ক্রিয়ার
সঙ্গে ঐ সব ব্যক্তি, বস্তু, স্থান, কাল ইত্যাদির যে সম্পর্ক রয়েছে ব্যাকরণে তা কারক নামে অভিহিত।
একটা দৃষ্টান্ত দিয়ে বিষয়টি বোঝানো যেতে পারে। যেমন− সে আগামী কাল সকালে পুকুরে জাল দিয়ে মাছ ধরবে। এই
বাক্যে ক্রিয়া ‘ধরবে’। ক্রিয়াটি সম্পাদন করছে সে’, কী ধরবে? মাছ; কোথায় ধরবে? পুকুরে জাল দিয়ে। তাহলে বোঝা
যাচ্ছে, ক্রিয়ার সঙ্গে নানা কিছুর সম্পর্ক রয়েছে। এই সম্পর্কগুলিই কারক। ব্যাকরণের পরিভাষায় সম্পর্ককে ‘অন্বয়’ও বলা
হয়। লক্ষণীয়, বাক্যে ক্রিয়াপদের সঙ্গে নানা দিক দিয়ে সম্পর্ক রয়েছে বিশেষ্য বা বিশেষ্য স্থানীয় সর্বনাম পদের। এগুলোকে নাম পদও বলা হয়।
কারকের সংজ্ঞার্থ
বাক্যস্থিত ক্রিয়াপদের সঙ্গে নামপদের যে সম্পর্ক বা অন্বয় তাকে বলা হয় কারক।
বিভক্তি
বাক্যের শব্দগুলোর নির্দিষ্ট বিন্যাস থাকে। বিন্যাসই সমগ্র বাক্যের অর্থ করে দেয়। দেখা যায় বাক্যের যথাযথ অর্থ জ্ঞাপনের
জন্য বাক্যস্থিত নাম শব্দগুলোর সঙ্গে কখনো কখনো বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি যুক্ত হয়ে থাকে। এই বর্ণ বা বর্ণ সমষ্টির নাম
বিভক্তি। বাংলা বাক্যের পদগুলির পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে কারক নির্দেশের জন্য এই বিভক্তিগুলির সবিশেষ গুরুত্ব
রয়েছে। অনেক সময় বিভক্তির প্রয়োজন পড়ে না। বিভক্তি না থাকলে শূন্য বিভক্তি (০) ধরে নিতে হয়। যেমনসন্ধ্যায় আকাশে চাঁদ উঠেছে।
এই বাক্যে তিনটি নাম শব্দ আছে − সন্ধ্যা, আকাশ, চাঁদ। আর ‘উঠেছে’ হল ক্রিয়াপদ। সমগ্র বাক্যটির অর্থ গ্রাহ্যতার জন্য
‘সন্ধ্যা শব্দের সঙ্গে ‘য়’ ‘আকাশ’ শব্দের সঙ্গে ‘এ’ যুক্ত হয়েছে। ‘য়, ‘এ’ হল বিভক্তি। চাঁদ-এর সঙ্গে কোন বর্ণ যুক্ত হয়নি
প্রয়োজন নেই বলে। কিন্তু ব্যাকরণ মতে সেখানেও বিভক্তি আছে, তবে তা শূন্য (০)। শূন্য (০) বিভক্তিকে অ-বিভক্তিও
বলা হয়। সমগ্র বাক্যটির সজ্জা এই রকম,
সন্ধ্যায় আকাশে চাঁদ উঠেছে
সন্ধ্যা+য় আকাশ+এ চাঁদ+০ উঠেছে।
এই বাক্যের বিভক্ত অংশগুলোই (য়, এ, ০) বিভক্তি।
অনেক সময় বাক্যে বিভক্তির বদলে বিভক্তি স্থানীয় শব্দও ব্যবহৃত হয়। এগুলি বিভক্তিরই কাজ করে। যেমনÑ
আমি ছেলেগুলিকে রাস্তা দিয়ে যেতে দেখলাম।
কিংবা, সে ঢাকা থেকে এসেছে।
উপরের দুটি বাক্যে ‘দিয়ে’ ও ‘থেকে’ বিভক্তি স্থানীয় শব্দ। এগুলোকে অনুসর্গ বা কর্মপ্রবচনীয় বলা হয়। তাহলে অনুসর্গের
সংজ্ঞা হল,
বাংলা বাক্যে যে অব্যয়জাতীয় শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়ে বিভক্তির ন্যায় বাক্যের অর্থ প্রকাশে সাহায্য করে সেগুলোকে অনুসর্গ
বা কর্মপ্রবচনীয় বলে।
বিভক্তির প্রয়োজনীয়তা
বাংলায় অনেক বাক্য রয়েছে যেগুলোতে ক্রিয়াপদ নেই। যেমনÑ
মাঠে মাঠে অজস্র ফসল।
ছোট ছোট ডিঙি নৌকাগুলো নদীতে ভাসমান।
এই জাতীয় ক্রিয়াহীন অনেক বাক্য বাংলায় রয়েছে। ক্রিয়া নেই বলে এই বাক্যগুলোর অন্তর্গত নাম শব্দগুলোর কারকও
নেই। সেজন্য বলা হয় বাংলা বাক্য কারক প্রধান নয়। কিন্তু বিভক্তি ছাড়া বাংলা বাক্য ঠিকভাবে গঠিত হতে পারে না এবং
বাক্যও অর্থগ্রাহ্য হয় না। উপরের দুটি বাক্যের বিভক্তি তুলে নিলে বাক্যগুলো যথাযথ অর্থ প্রকাশ করবে না। ‘মাঠ মাঠ
অজস্র ফসল কিংবা’ ‘ছোট ছোট ডিঙি নৌকাগুলো নদী ভাসমান’ বাক্য হিসেবে ত্রæটিপূর্ণ। প্রথম বাক্যে ‘এ’ বিভক্তি
(মাঠ+এ), দ্বিতীয় বাক্যে ‘তে’ বিভক্তি (নদী+তে) বাক্য দুটির বিন্যাস ও অর্থ ঠিক করে দিয়েছে। ‘গাছের পাতায় রাতের
শিশির লেগে আছে’− এই বাক্যে আমরা দেখছি এর বিভক্তি [গাছ+এর, রাত+এর] ও ‘য়’ বিভক্তি [পাতা+য়] বাক্যটিকে
সম্পূর্ণ অর্থগ্রাহ্য করেছে। নতুবা গাছ পাতা রাত শিশির’ কোন বাক্য নয়। তাহলে বোঝা যাচ্ছে, বিভক্তি বাক্যের অন্তর্গত
শব্দ অর্থাৎ পদগুলোর মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টি করে এবং বাক্যের অর্থ নির্দিষ্ট করে। সেজন্য বাংলা বাক্য বিভক্তি প্রধান। এর
থেকে বাংলা বাক্যে বিভক্তির প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করা যায়। অবশ্য সব সময় বিভক্তি দিয়ে বাংলা ভাষা ভাব প্রকাশ
করতে পারে না, সে সব ক্ষেত্রে বিভক্তির স্থানে বিভক্তি স্থানীয় শব্দগুলো যেমন ‘দ্বারা’ ‘দিয়ে’ ‘কর্তৃক’, ‘হতে’, ‘থেকে,
চেয়ে ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। বিভক্তি স্থানীয় অনুসর্গ বা কর্মপ্রবচনীয়ের কথা পূর্বে উল্লেখিত হয়েছে।
বাংলা বিভক্তি
বাংলা বিভক্তিগুলি নি¤œরূপ
১) শূন্য (০) বা অ-বিভক্তি (২) এ-বিভক্তি
৩) ‘তে’ বিভক্তি ৪) ‘কে’ বিভক্তি
৫) ‘রে’ বিভক্তি
এই বিভক্তিগুলোর মধ্যে প্রথম চারটি বাক্যের কারক সম্বন্ধ নির্ণয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়; শেষেরটি অর্থাৎ ‘র’ বা ‘এর’ বিভক্তি
সম্বন্ধ পদ নির্দেশের জন্য ব্যবহৃত হয়। সংস্কৃত ভাষার মতো বাংলায় প্রত্যেক কারকের জন্য নির্দিষ্ট বিভক্তি নেই। বাংলা
বিভক্তিগুলি কমবেশি প্রায় প্রত্যেক কারকে ব্যবহৃত হতে পারে। সেজন্য বিভক্তি দিয়ে বাংলা কারক চেনা যায় না, বাক্যের
ক্রিয়াপদের সঙ্গে নাম পদগুলোর অর্থাৎ বিশেষ্য ও সর্বনামপদগুলোর সম্বন্ধ স্থির করে বাংলা কারক নির্ণয় করতে হয়। এ
প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, বাংলা বিভক্তিগুলোর এক বচন রূপ আছে, বহুবচন নেই। বাংলায় একবচনে ও বহুবচনে একই বিভক্তি
দেখা যায়। বহুবচনের চিহ্ন জ্ঞাপক কিছু বর্ণ সমষ্টি দেখা যায়, সেগুলি বহুবচনের রূপ মাত্র, বিভক্তি নয়। যেমন−
মানুষ+গুলো+কে = মানুষগুলোকে; এখানে বিভক্তি ‘কে’, গুলো বিভক্তি নয়।
নদী+গুলো+তে = নদীগুলোতে; এখানে বিভক্তি ‘তে’।
প্রত্যেক কারকের জন্য বিভক্তিকে সাতভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো
বিভক্তির নাম বিভক্তির রূপ বহুবচন
প্রথমা
দ্বিতীয়া
তৃতীয়া
চতুর্থী
পঞ্চমী
ষষ্ঠী
সপ্তমী
শূন্য (০), অ
কে, রে (এরে)
দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক, [বিভক্তি স্থানীয় অনুসর্গ]
কে, রে (এরে) [দ্বিতীয়ার মতো]
হতে, থেকে, চেয়ে [বিভক্তি স্থানীয় অনুসর্গ]
র, এর
এ, য়, তে, এতে
রা, এরা, গুলি, গণ
দিগকে, দিগেরে
দিগের দ্বারা, দের দ্বারা
দিগকে, দিগেরে
দিগ হতে, দিগের চেয়ে
দিগেরে, দের, দিগে, দিগেতে, গণে
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
১. কারক বলতে কী বোঝায়? কারকের সংজ্ঞার্থ দিন।
২. বিভক্তি কাকে বলে? বিভক্তি কেন ব্যবহৃত হয়?
৩. বিভক্তি স্থানীয় শব্দগুলো কী? এগুলোর কী কাজ?
৪. বাংলা ভাষায় বিভক্তির প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে লিখুন।
৫. বাংলা বাক্য কারক প্রধান নয়, বিভক্তি প্রধান- কথাটি বুঝিয়ে দিন।
৬. বাংলা বিভক্তিগুলির পরিচয় দিন।
৭. বুঝিয়ে দিনÑ শূন্য (০) বিভক্তি, অনুসর্গ

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]