বাচ্য
‘বাচ্য’ শব্দের অর্থ বক্তব্য। বক্তব্য বিষয়টিতে যখন কর্তা প্রাধান্য লাভ করে, তখন বাক্যটি কর্তৃবাচ্যের, যখন
কর্ম প্রাধান্য লাভ করে, তখন কর্মবাচ্যের এবং যখন ক্রিয়াপদ প্রাধান্য লাভ করে, তখন ভাববাচ্যের অন্তর্গত
বলে ধরা হয়। উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি আরো স্পষ্ট করা যেতে পারে। যেমন−
১. সেলিনা স্কুলে যাচ্ছে।
২. পুলিশের গুলিতে ডাকাত আহত হয়েছে।
৩. আবুলের বাড়ি যাওয়া হলো না।
উপরিউক্ত প্রথম বাক্যে কর্তার, দ্বিতীয় বাক্যে কর্মের এবং তৃতীয় বাক্যে ক্রিয়ার প্রাধান্য রয়েছে। অর্থাৎ এক কথায় বলা যায়,
বাক্যের বিভিন্ন ধরনের প্রকাশ ভঙ্গিই বাচ্য।
বাক্যের বিভিন্ন প্রকাশভঙ্গিকে বলা হয় বাচ্য।
বাংলাভাষায় বাচ্য চার প্রকার। যথাক. কর্তৃবাচ্য খ. কর্মবাচ্য, গ. ভাববাচ্য, ঘ. কর্ম-কর্তৃবাচ্য
কর্তৃবাচ্য
যে বাক্যে কর্তার প্রাধান্য থাকে এবং ক্রিয়াপদ কর্তার অনুসারী হয় তাকে কর্তৃবাচ্যের বাক্য বলে। যেমন- অভি বই পড়ছে।
১. কর্তৃবাচ্যে ক্রিয়াপদ সবসময় কর্তার অনুসারী হয়। অর্থাৎ কর্তার যে পুরুষ ক্রিয়াও সেই পুরুষের হয়ে থাকে। যেমন−
শিলা কাজ করছে, সোহাগ খেলা করছে।
২. কর্তৃবাচ্যে কর্তায় প্রথমা বা শূন্য বিভক্তি এবং কর্মে দ্বিতীয়, ষষ্ঠী বা শূন্য বিভক্তি হয়। যেমন−
ক) তাকে খেতে বলেছি।
খ) শিক্ষক ছাত্রদের পড়ান।
গ) রোগী পথ্য সেবন করে।
ঘ) চোর আমগুলো চুরি করে নিয়ে গিয়েছে।
ঙ) কাঠুরে বনে কাঠ সংগ্রহ করছে।
কর্মবাচ্য
যে বাক্যে কর্মেরই প্রাধান্য এবং ক্রিয়াটি কর্মের অনুগামী অর্থাৎ কর্ম যে পুরুষের, ক্রিয়াটিও যদি সেই পুরুষের হয়, তবে
তাকে কর্মবাচ্য বলে। যেমন− পাহারাদার কর্তৃক চোর ধরা পড়েছে।
১. কর্মবাচ্যে, কর্মে প্রথমা, কর্তায় তৃতীয়া বিভক্তি ও দ্বারা, দিয়া (দিয়ে) কর্তৃক অনুসর্গের ব্যবহার হয়। যেমন−
ক) আলেকজান্ডার কর্তৃক পারস্য দেশ বিজিত হয়।
খ) চোরটা ধরা পড়েছে।
গ) আমাকে আবৃত্তি করতে হবে।
ঘ) আজ গান শোনা হবে।
২. কখনো কখনো কর্মে দ্বিতীয়া বিভক্তি হতে পারে। যেমন−
ক) আসামিকে জরিমানা করা হয়েছে।
খ) আলমকে ডাক।
গ) আমাকে আবৃত্তি করতে হবে।
ভাববাচ্য
যে বাক্যে কর্ম থাকে না, ক্রিয়ার অর্থই বিশেষভাবে ব্যক্ত হয় তাকে ভাববাচ্য বলে।
১. ভাববাচ্যের ক্রিয়া সর্বদাই নাম পুরুষের হয়। ভাববাচ্যের কর্তায় ষষ্ঠী, দ্বিতীয়া অথবা তৃতীয়া বিভক্তি হয়ে থাকে।
যেমন-
ক) আমার (কর্তায় ষষ্ঠী) বাড়ি যাওয়া হলো না (নাম পুরুষের ক্রিয়া)।
খ) আমাকে (কর্তায় দ্বিতীয়া) ঢাকা যেতে হবে। (নাম পুরুষের ক্রিয়া)।
গ) তোমার দ্বারা (কর্তায় তৃতীয়া) এ কাজ হবে না। (নাম পুরুষের ক্রিয়া)।
২. কখনো কখনো ভাববাচ্যে কর্তা উহ্য থাকে, কর্মের দ্বারাই ভাববাচ্য গঠিত হয়। যেমন−
ক) এ পথে চলা দুষ্কর।
খ) এবার ওঠা যাক।
গ) কোথা থেকে আসা হচ্ছে?
৩. মূলক্রিয়ার সঙ্গে সহযোগী ক্রিয়ার সংযোগ ও বিভিন্ন অর্থে বাচ্যের ক্রিয়া গঠিত হয়। যেমন−
ক) এ ব্যাপারে আমাকে দায়ী করা অনুচিত।
খ) এ পথ আমার চেনা নেই।
গ) মরণরে তুঁহু মম শ্যাম সমান।
ঘ) জিজ্ঞাসিলে কহিবারে পারি, জানো তো স্বামীর নাম নাহি ধরে নারী।
কর্ম-কর্তৃবাচ্য
যে বাক্যে কর্মকারক কর্তার মতো প্রতীয়মান হয় অর্থাৎ ক্রিয়ার কর্ম কর্তার মনোযোগ ব্যতীত সম্পাদিত হয়, তাকে কর্ম-
কর্তৃবাচ্যের বাক্য বলে। যেমন−
ক) আম পেকেছে খুব।
খ) তাঁর বইটি বাজারে বেশ কাটছে।
গ) অব্যয় বাঁশি বাজায়।
ঘ) কাপড় ছেঁড়ে।
ঙ) তোমাকে রোগা দেখায়।
সাধারণত প্রাকৃতিক ঘটনামূলক ক্রিয়ায় এই বাচ্যের প্রয়োগ দেখা যায়।
বাচ্য পরির্বতন
কর্তৃবাচ্য থেকে কর্মবাচ্য :
নিয়ম : কর্তৃবাচ্যের বাক্যকে কর্মবাচ্যে পরিবর্তিত করতে হলে−
ক) বাক্য পরিবর্তনের অর্থ অপরিবর্তিত থাকে।
খ) কর্তায় তৃতীয়া বিভক্তি হবে।
গ) কর্মে প্রথমা বা শূন্য বিভক্তি হয় এবং ক্রিয়া কর্মের অনুগামী হয়।
জ্ঞাতব্য : কর্তৃবাচ্যের ক্রিয়া অকর্মক হলে তার কর্মবাচ্য হয় না।
কর্তৃবাচ্য কর্মবাচ্য
ক) বিদ্বানকে সকলেই আদর করে। ক) বিদ্বান সকলের দ্বারা আদৃত হন।
খ) ঈশ্বর বিশ্বজগৎ সৃষ্টি করেছেন। খ) বিশ্বজগৎ ঈশ্বর কর্তৃক সৃষ্টি হয়েছে।
গ) আনন্দময়ী পুস্তক পাঠ করছে। গ) আনন্দময়ী কর্তৃক পুস্তক পঠিত হচ্ছে।
লক্ষণীয় : কর্তৃবাচ্য ব্যবহৃত তৎসম ক্রিয়াটি কর্মবাচ্যে যৌগিক ক্রিয়াজাত ক্রিয়াবিশেষণ রূপে ব্যবহৃত হয়।
কর্তৃবাচ্য থেকে ভাববাচ্য :
নিয়ম : কর্তৃবাচ্যের বাক্যকে ভাববাচ্যে পরিবর্তিত করতে হলে
ক) কর্তার ষষ্ঠী বা দ্বিতীয়া বিভক্তি হয়।
খ) ক্রিয়া নামপুরুষ অনুযায়ী হয়। যেমন−
কর্তৃবাচ্য ভাববাচ্য
ক) আমি কোথাও যাবো না। ক) আমার যাওয়া হবে না কোথাও।
খ) তুমিই রাজশাহী যাবে। খ) তোমাকেই রাজশাহী যেতে হবে।
গ) তোমরা কখন এলে। গ) তোমাদের কখন আসা হল।
কর্মবাচ্য থেকে কর্তৃবাচ্য :
কর্মবাচ্যের বাক্যকে কর্তৃবাচ্যে পরিবর্তিত করতে হলে−
ক) কর্তায় প্রথমা, কর্মে দ্বিতীয় বা শূন্য বিভক্তি হয়ে থাকে।
খ) ক্রিয়া কর্তা অনুযায়ী হয়। যেমন−
কর্মবাচ্য কর্তবাচ্য
ক) দস্যুদল কর্তৃক গৃহটি লুণ্ঠিত হয়েছে। ক) দস্যুদল গৃহটি লুণ্ঠন করেছে।
খ) শিক্ষক কর্তৃক সে জ্ঞানী হয়েছে। খ) শিক্ষক তাকে জ্ঞানী করেছে।
ভাব বাচ্যের বাক্যকে কর্তৃবাচ্যে রূপান্তর করার সময়Ñ
ক) কর্তৃবাচ্যের কর্তায় প্রথমা বা শূন্য বিভক্তি হবে।
খ) ক্রিয়াপদটি কর্তা অনুযায়ী হবে।
ভাববাচ্য কর্তৃবাচ্য
ক) তোমাকে পাশ করতে হবে। ক) তুমি পাশ করবে।
খ) এবার একটি গান করা হোক। খ) এবার (তুমি) একটি গান কর।
গ) তার যেন আসা হয়। গ) সে যেন আসে।
ঘ) চা পান করা হোক। ঘ) (তুমি) চা পান কর।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
ক. বাচ্য কাকে বলে? বাচ্য কত প্রকার ও কী কী?
খ. বাচ্যান্তর করুন
১. কর্তৃবাচ্য থেকে কর্মবাচ্যে রূপান্তর করুন।
ক. আলেকজান্ডার পারস্য দেশ জয় করেন।
খ. মহাকবি ফেরদৌসি শাহনামা মহাকাব্য রচনা করেছেন।
গ. শিকারি বাঘ মেরেছে।
ঘ. আমি বইটি পড়েছি।
২. কর্মবাচ্য থেকে কর্তৃবাচ্যে রূপান্তর করুন।
ক. কাফেলা দুস্যদল দ্বারা আক্রান্ত
খ. স্থপতি ইসা বুমির তত্ত¡াবধানে তাজমহল নির্মিত হয়েছে।
গ. মধুসূদন কর্তৃক মেঘনাদবধকাব্য রচিত হয়েছিল।
৩. কর্তৃবাচ্য থেকে ভাব বাচ্যে এবং ভাববাচ্য থেকে কর্তৃবাচ্যে পরিবর্তিত করুন
ক. এবার একটি কবিতা আবৃত্তি হোক।
খ. আমি একাই খাব।
গ. আজ আর তোমার খাওয়া হবে না।
ঘ. ধর্মস্থানে বেয়াদবি করতে নেই।
৪. বাচ্যের ব্যবহারে ভুল থাকলে শুদ্ধ করুন :
ক. তোমার যাওয়া হউক আমি যাওয়া হবে না।
খ. ছাত্রগণ তোমাদিগকে কর্তৃক ব্যাকরণের পাঠ শোনা হউক।
গ. শাসন করা তাই সাজে, সোহাগ করে যে।
ঘ. আজি নিঝুম রাতে কে বাঁশি বাজে।
ঙ. মাতা কর্তৃক একটি কলম দান করা হইয়াছি।
FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ