ক্রিকেট খেলা ও বাংলাদেশ / বাংলাদেশের ক্রিকেট



(সংকেত: ভূমিকা, ক্রিকেটের ইতিহাস, উপকরণ ও নিয়ম, সাম্প্রতিক ক্রিকেট, উপকারিতা, উপসংহার।)
ভূমিকা
ক্রিকেট খেলাকে বলা হয় খেলার রাজা। একে রাজার খেলাও বলা হয়ে থাকে। এর কারণ এই রাজকীয় খেলাটির উদ্ভব হয় ইংল্যান্ডের রাজকীয় পরিবেশে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে যখন সূর্য অস্ত যেত না তখন থেকে এ খেলাটির যাত্রা শুরু। খেলাটি যেমন ব্যয়সাপেক্ষ তেমনি সময়সাপেক্ষ। এ খেলাটি উপভোগ করতে হলেও অফুরন্ত অবকাশের প্রয়োজন। এ খেলায় রয়েছে যথেষ্ট আনন্দ ও বেদনা। শরীরচর্চা ও বুদ্ধিমত্তার অর্প্বূ সমন্বয় এ খেলায় যেমন ঘটেছে আর কোনো খেলায় তেমন হয় নি।
ক্রিকেটের ইতিহাস
ক্রিকেটের জন্মভূমি ইংল্যান্ড। ইংরেজদের অপূর্ব শক্তিশালী সৃষ্টিশীল প্রতিভার তেলে-জলে ক্রিকেটের আত্মপ্রকাশ ঘটে আঠারো শতকের দিকে। ক্রিকেট জগতের প্রথম দল গড়ে ওঠে হ্যাম্পশায়ারের অন্তর্গত হ্যাপেবলডন। এই হ্যাম্পশায়ারের মাতৃস্নেহে ক্রিকেট শিশু বেড়ে উঠতে থাকে। তারপর একদিন এই রাজকীয় খেলাটি সমগ্র ব্রিটেনের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে এবং আজ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের গৌরব সূর্য অস্তমিত হলেও ক্রিকেটের সাম্রাজ্য বিশ্ব জোড়া। প্রথমে ব্রিটেনের খেলোয়াড়রা এ খেলাটি ভালোভাবে আয়ত্ত করে নেয়। তারপর তারা বিভিন্ন উপনিবেশে যেয়ে সে সব দেশের খেলোয়াড়দের সাথে খেলা করে। আর এভাবে এ খেলাটি ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, পাকিস্তান, কানাডা, দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলংকা প্রভৃতি দেশে। উঁচুমানের নৈপুণ্য দেখিয়ে বর্তমানে টেস্ট খেলার মর্যাদা অজর্নকারী দেশগুলো হচ্ছে ব্রিটেনের বাইরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলংকা, জিম্বাবুয়ে ও বাংলাদেশ।
উপকরণ ও নিয়ম
এ খেলা দুই দলের বাইশ জন খেলোয়াড়ের ভেতর অনুষ্ঠিত হয়। প্রত্যেক দলে এগারো জন করে খেলোয়াড় থাকে। খেলার শুরুতে দুই দলের অধিনায়কদ্বয় মাঠে নামে। তারপর টসের মাধ্যমে নির্ধারিত হয় কোন দল ব্যাট করবে আর কোন দল ফিল্ডিং করবে। দলের অধিনায়ক মাঠে নেমে প্রথমে পিচটি ভালোভাবে পরীক্ষা করে নেন। বিশাল গোলাকৃতি মাঠের মাঝে বাইশ গজ লম্বা বিশেষভাবে নির্মিত স্থানটিকে পিচ বলে। পিচ ভালোভাবে পরীক্ষা করে টসে বিজয়ী অধিনায়ক ব্যাট করার বা বল করার সিদ্ধান্ত নেন। পিচের দুই প্রান্তে থাকে তিনটি তিনটি করে মোট ছয়টি স্ট্যাম্প। দুই প্রান্তে দ’ুজন ব্যাটসম্যান। দু’জনের হাতেই থাকে ব্যাট। প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়ের হাতে থাকে আট আউন্স ওজনের একটি বল। সহযোগী ব্যাটসম্যানের দিক থেকে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড় প্রধান ব্যাটসম্যানকে বল ছুঁড়ে আউট করার চেষ্টা করে। অপরদিকে ব্যাটসম্যান বলটি ব্যাটের সাহায্যে পিটিয়ে দূরে পাঠিয়ে দিয়ে রান সংগ্রহের চেষ্টা করে। জমে ওঠে খেলা। সারা মাঠে ছড়িয়ে থাকে প্রতিপক্ষের এগারো জন খেলোয়াড়, তারা থাকে বলের গতি রোধ করার জন্য। বল ধরে তারা ছুঁড়ে দেয় স্ট্যাম্পের দিকে। প্রধান ব্যাটসম্যান এই সুযোগে যতবার স্থান পরিবর্তন করতে পারবেন তিনি তত রানের অধিকারী হবেন। ব্যাটের আঘাতে বল যদি সীমানার বাইরে পাঠিয়ে দিতে পারে তবে একে বলে বাউন্ডারি। রান হয় চার। আর যদি ব্যাটের আঘাতে বল মাটি স্পর্শ না করে সরাসরি সীমানার ওপাশে গিয়ে পড়ে তবে তাতে হয় ছয় রান। একে বলে ওভার বাউন্ডারি। তবে এই বল যদি প্রতিপক্ষের খেলোয়াড় শূন্যে থাকতে ধরে ফেলে তবে ব্যাটসম্যান আউট হয়ে যায়। সেখানে অন্য একজন খেলোয়াড় এসে ব্যাট ধরে। একজন খেলোয়াড় বিভিন্নভাবে আউট হতে পারে। যেমন-বোল্ড আউট, কট আউট, রান আউট। বোলার যদি সরাসরি বল উইকেটে নিক্ষেপ করতে পারে তবে ব্যাটসম্যান বোল্ড আউট হয়ে যাবে। একজন উইকেট কিপার বোলারের বল ছোঁড়ার এ কায়দা অনুযায়ী ব্যাটসম্যানের পেছনের উইকেটের সঙ্গে কিংবা একটু পেছনে থাকে। বাকি ফিল্ডাররা মাঠের অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে থাকে। ব্যাটসম্যান যখন বল মেরে রান সংগ্রহ করার জন্য দৌড়াতে থাকে তখন প্রান্তে আসার আগে মাঠের অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা খেলোয়াড়রা যদি বলটা কুড়িয়ে উইকেটে মেরে দেয়, তবে ব্যাটসম্যান রান আউট হন। ব্যাটসম্যান যদি পা দিয়ে উইকেট ঢেকে রাখে আর বোলারের ছোড়া বল ব্যাটসম্যানের পায়ে এসে লাগে তবে তাকে বলে এলবিডব্লিউ। বল করারও বিশেষ কতকগুলো ধরন আছে। এগুলো হচ্ছে ফার্স্ট, স্পিন, অফ স্পিন, ইনসুইং গুগলি, অফব্রেক, বাউন্ডার ফুলটস ইত্যাদি। যে বোলারের বলে যে ব্যাটসম্যান আউট হয় সেই বোলার ঐ ব্যাটসম্যানের উইকেট লাভ করে। দশ জন খেলোয়াড় আউট হয়ে গেলে এক ইনিংস খেলা শেষ হয়। দলের অধিনায়ক অবশ্য সব খেলোয়াড় আউট হওয়ার আগে খেলা শেষ হয়েছে  বলে ইনিংস ঘোষণা করতে পারেন। এভাবে দুই ইনিংস খেলা শেষ হলে যে দলে রান সংখ্যা বেশি হয়, সেই দল বিজয়ী হয়। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলা তিনদিন ধরে হয়। টেস্ট খেলা পাঁচদিন ধরে হয়।
সাম্প্রতিক ক্রিকেট
এখন অবশ্য খেলার রীতি কিছুটা পরিবর্তন করে নতুন এক ধরনের খেলার প্রচলন হয়েছে। এতে ওভার বেঁধে দেওয়া হয়। প্রত্যেক দল ৫০ ওভার করে খেলার সুযোগ পায়। এই পঞ্চাশ ওভারের ভেতর যে দল বেশি রান সংগ্রহ করতে পারে সেই দলই বিজয়ী হয়। বর্তমান সময় স্বল্পতার জন্য ক্রিকেট খেলা ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
উপকারিতা
খেলার ভেতর চিত্তবিনোদনের প্রচুর উপকরণ রয়েছে। ক্রিকেট খেলার ভেতরে মন এবং দেহের জন্য অনেক উপকার লুকিয়ে রয়েছে। এর আনন্দ যেমন মন ও স্বাস্থ্য ভালো রাখে তেমনি দেহের সৌষ্ঠবও দান করে। এ খেলার মাধ্যমে একজন খেলোয়াড় সময়ানুবর্তিতা, নিয়মানুবর্তিতা, ধৈর্যশীলতা, দায়িত্ববোধ, উপস্থিত বুদ্ধি, সতর্কতা ইত্যাদি গুণের অধিকারী হতে পারে।
উপসংহার
ক্রিকেট খেলার সময় বেশি লাগে এবং ব্যয়ও বেশি হয়। এই সময় ও অর্থের এত অধিক অপচয় অনেকে জাতীয় অপচয় বলে মনে করে থাকেন। এ খেলায় কিছু ঝুঁকিও আছে। দ্রুতগামী বল খেলোয়াড়কে আঘাত করে আহত করতে পারে। তবে কিনা সব খেলাতেই এ ধরনের ঝুঁকি রয়েছে। ক্রিকেট খেলাটি বর্তমানে আমাদের দেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে এবং সবচেয়ে গৌরবের ব্যাপার হল বাংলাদেশে ইতোমধ্যে বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে ও কয়েকটি বিশ্ববিজয়ী দেশের দলকে হারিয়ে গৌরব অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]