বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে কুসংস্কার: বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে কুসংস্কার হলো শুধুই মানুষের ভ্রান্ত ধারণা ও বিশ্বাস। যারা কুসংস্কারকে বিশ্বাস করে এবং মেনে চলে তারা সব সময়ই এই বিষয়টিকে অতিপ্রাকৃত বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত করে। তারা বিশ্বাস করে যে একটি প্রাকৃতিক ঘটনা ঘটে যাওয়ার প্রেক্ষিতেই অন্য একটি ঘটনা ঘটে। যেমন কাক এসে মাথার ওপরে কা কা করে ডাকলে আপনজনের মৃত্যুর সংবাদ আসে। এখানে কাকের কা কা ডাক একটি প্রাকৃতিক ঘটনা। এর প্রেক্ষিতে মৃত্যুকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞান দেখায় যে কাকের ডাক এবং মৃত্যু দুটোই খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। এ দুটির কোনটিই অতিপ্রাকৃত কোনো কিছু নয়। এদের মধ্যে কোনো সম্পর্কও নেই। এটা পুরোপুরি মানুষের ভ্রান্ত ধারণা ও অন্ধবিশ্বাস। প্রতিদিন হাজারো কাক ডেকে ওঠে। তাই বলে প্রতিদিন আমাদের আপনজনের মৃত্যু হয় না। তেমনি ঘরের মধ্যে লক্ষ্মী পেঁচা থাকলেই কেউ ধনী হয় না। বরং বিজ্ঞান দেখায় লক্ষ্মী পেঁচা ঘরকুনো স্বভাবের বলেই মানুষের ঘরে বাসা বাঁধে। আবার কেউ কেউ বিশ্বাস করে ঢেঁকির ফুল পেলে মানুষ বিত্তশালী হয়। কিন্তু বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ঢেঁকি একটি ফার্ন জাতীয় অপুষ্পক উদ্ভিদ। যা থেকে কখনোই কোনো ফুল হয় না। এভাবেই বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এক একটি কুসংস্কার ভ্রান্ত ধারণা বলে প্রতীয়মান হয়।
কুসংস্কার বিরোধী বিজ্ঞান চর্চা: মানুষের মধ্যে বিজ্ঞানের চর্চা থাকলে তার পক্ষে কুসংস্কারে বিশ্বাসী হওয়া সম্ভব নয়। কুসংস্কার তারাই বিশ্বাস করে যাদের মধ্যে বিজ্ঞানের কোনো চর্চা নেই। যে ব্যক্তি বিজ্ঞানের চর্চা করে, বিজ্ঞানে বিশ্বাস করে সে সর্বদাই সত্যের সন্ধান করে। যে ব্যক্তি বিজ্ঞানকে বোঝে সে জানে চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণ কেনো হয়। সে বোঝে চাঁদ বা সূর্য কেউ কাউকে ‘খেয়ে’ ফেলে না বরং একটির ছায়া অন্যটিকে ঢেকে দেয়। তাই এ সময়ে খাবার খেলে কোনো সমস্যা হয় না। বিজ্ঞানের চর্চার ফলে মানুষের জানার ক্ষেত্র অনেক বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মানুষ কুসংস্কারের মতো সংকীর্ণ বিষয়গুলোকে কাটিয়ে উঠতে পারে এবং কুসংস্কারের বিরোধীতা করে। বিজ্ঞান চর্চা মানুষকে সত্যের সন্ধান করতে শেখায় এবং ভ্রান্ত ধারণাগুলোকে দূরে সরিয়ে রাখে। ফলে বিজ্ঞানের চর্চা সব সময়ই কুসংস্কার বিরোধী হয়।
কু-সংস্কার দূরীকরণে বিজ্ঞান শিক্ষা: মানুষের মনে অজ্ঞতার অন্ধকারকে দূর করে সেখানে সত্যকে প্রতিষ্ঠা করতে পারে বিজ্ঞান শিক্ষা। তাই কুসংস্কার দূর করতে বিজ্ঞান শিক্ষার প্রয়োজন। সঠিকভাবে বিজ্ঞান শিক্ষা পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বস্তর থেকে কুসংস্কারকে দূর করতে পারে। বিজ্ঞান শিক্ষা মানুষের জ্ঞানের দরজা খুলে দেয়। ফলে এই শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ সত্য আর ভ্রান্ত বিশ্বাসের মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে তা বুঝতে পারে। বিজ্ঞান শিক্ষা মানুষকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কুসংস্কার ও ভ্রান্ত ধারণাগুলোকে চিহ্নিত ও পরিহার করতে শেখায়। বিজ্ঞান শিক্ষা মানুষের মন থেকে তার অলীক ভয় দূর করে। এর ফলে মানুষ যেকোনো ঘটনার বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে পারে এবং কুসংস্কারকে অবিশ্বাস করতে শেখে। বিজ্ঞান শিক্ষা মানুষকে জানায় কুসংস্কার না মানলে কখনোই কোনো অমঙ্গল মানুষকে আক্রমন করে না। কুসংস্কারের তথাকথিত অতিপ্রাকৃতিক ঘটনা যে ভিত্তিহীন, মানুষের কল্পিত তাও বিজ্ঞান শিক্ষার মাধ্যমেই মানুষ জানতে পারে। তাই জীবন থেকে কুসংস্কারকে সমূলে উৎপাটন করার জন্য বিজ্ঞান শিক্ষা খুবই জরুরী। কুসংস্কার দূরীকরণে এর বিকল্প নেই।
উপসংহার: সমাজের প্রচলিত সংস্কার-কুসংস্কার মানুষকে অলীক আতঙ্কে আটকে রাখে। কুসংস্কার বিশ্বাস করে কিছু ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে মানুষ বেঁচে থাকে যেগুলো আসলে একেবারেই ভিত্তিহীন। যুক্তিহীন এসব কুসংস্কারকে বিশ্বাস করেই মানুষ পড়ে থাকে আদিম যুগে। কিন্তু বর্তমানে এই বিজ্ঞানের যুগে, তথ্য-প্রযুক্তির যুগে তা একেবারেই বেমানান। আজ যেখানে সর্বত্রই বিজ্ঞানের জয়জয়কার, সেখানে কুসংস্কারে বিশ্বাসী হয়ে আমরা কুয়োর ব্যাঙ হয়ে থাকতে পারি না। বিজ্ঞান চর্চার অভ্যাস করে আমাদেরকে সব কুসংস্কার থেকে মুক্ত হতে হবে। সব কিছুকে বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করলেই তা সম্ভব। পুরো পৃথিবী এগিয়ে গিয়েছে। এখন সময় এসেছে আমাদেরও সামনে এগিয়ে যাবার।
FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ