(সংকেত: ভূমিকা, জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়া, জনসংখ্যা সমস্যা ও বাংলাদেশ, জনসংখ্যার প্রভাব, জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ, দারিদ্র্যতা, শিক্ষার অভাব, বাল্য বিবাহ ও বহু বিবাহ, শিশু মৃত্যুহার, জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানের উপায়, শিক্ষার প্রসার, সরকার গৃহীত ব্যবস্থা, উপসংহার।)
ভূমিকা
পৃথিবী নামক আমাদের এই ক্ষুদ্র গ্রহটি নানা সমস্যায় পীড়িত। তার মধ্যে যে সমস্যাটি প্রকট রূপ ধারণ করেছে তা হল জনসংখ্যা সমস্যা। গোটা বিশ্ব আজ জনসংখ্যা বৃদ্ধির ব্যাপারে সচেতন ও সোচ্চার হয়ে উঠলেও তা লাগামহীন ঘোড়ার মতো দূরন্ত বেগে ছুটে চলছে। পৃথিবীর মানুষেরা সমস্যাটি নিয়ে অত্যন্ত চিন্তিত। কেননা জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে একদিন তা মানবজাতির অস্তিত্বের পক্ষেই হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। কোনো কোনো দেশে ইতোমধ্যেই হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে গোটা পৃথিবীর অর্থনীতি একটি চ্যালেঞ্জরূপে দাঁড়িয়ে যাবে। হিসাব করে দেখা গেছে যে, আগামী পঁচিশ বছরের মধ্যে পৃথিবীর জনসংখ্যা দ্বিগুণ হবে।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়া
জনসংখ্যা দিন দিন বেড়ে চললেও পৃথিবীর আয়তন বাড়ছে না। আবার খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির যে গতি তা জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে না। এর উপরে আছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়। ফলে দুর্ভিক্ষ, মহামারী, নৈরাজ্য, জাতিতে জাতিতে হিংসা অনিবার্য হয়ে উঠে। ভূপৃষ্ঠের অতি ক্ষুদ্রাংশ আবাদযোগ্য, তাও আবার অতিরিক্ত মানুষের ঘরবাড়ি ও কলকারখানা নির্মাণের কাজে ক্রমশ চলে যাচ্ছে। ফলে এত মানুষ কী খেয়ে বেঁচে থাকবে এ প্রশ্ন অনিবার্য হয়ে উঠেছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির আগে শিশু মৃত্যু ও নানাবিধ রোগে মৃত্যুসংখ্যা বেশি ছিল। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে দ্রুত মৃত্যুর সংখ্যা কমে গেছে।
জনসংখ্যা সমস্যা ও বাংলাদেশ
জনসংখ্যা সমস্যা বর্তমানে বাংলাদেশে এক ভয়াবহ অবস্থার সম্মুখীন। পৃথিবীর ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। জনসংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশ অষ্টম স্থানে অবস্থান করছে। বাংলাদেশের বর্তমান লোকসংখ্যা প্রায় সাড়ে ১৪ কোটির উপরে। সামান্য পঞ্চান্ন হাজার বর্গমাইলের এই ক্ষুদ্রায়তন বাংলাদেশে জনসংখ্যা অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বাড়ছে। এরূপে বাড়তে থাকলে অচিরেই বাংলাদেশ এক ভয়াবহ অবস্থার সম্মুখীন হবে। অথচ এমন একদিন ছিল, যেদিন কৃষকের ছিল গোলাভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ এবং গোয়াল ভরা গরু। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। যে আশা নিয়ে এদেশের মানুষ যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে তার কিছুই পূর্ণ হয় নি। খাদ্যের অভাবে বৃহত্তর জনগোষ্ঠী আজ দিশেহারা। দেশের সর্বত্র আজ একটানা হাহাকার- “অন্ন চাই, মাথা গুঁজার ঠাঁই চাই।”
জনসংখ্যার প্রভাব
জনসংখ্যার চাপে আমাদের জীবিকা উপার্জন ও খাদ্য সমস্যা প্রভৃতি ক্ষেত্রে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে আমাদের দেশের জীবনযাত্রার মান ও মাথাপিছু আয় অনেক কমে গেছে। আমাদের জীবিকা অর্জনের প্রধান উপায় কৃষি, কিন্তু তা মোটেই অগ্রসর নয়। অন্যদিকে শিল্প-বাণিজ্যে বাংলাদেশ অনগ্রসর। জনসংখ্যা বৃদ্ধির এই প্রকট সমস্যা আমাদের জীবনে দুঃখ-দুর্দশা বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিবছর বিদেশ থেকে খাদ্যশস্য আমদানি করলে দেশের উন্নয়ন খাতে ব্যয় করার মতো কিছুই থাকে না। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে আমাদের বেকার সমস্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবাসিক সমস্যা প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। ফলে শহরে বস্তি এলাকা গড়ে উঠেছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে আমাদের শিল্প ব্যবস্থার ওপর তীব্র আঘাত এসেছে। অত্যধিক জনসংখ্যার ভারেই বাংলাদেশের মানুষ আজ দুর্দশাগ্রস্ত এবং অভাব অনটনে জর্জরিত।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ
জনসংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে বহুবিধ সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণ বিদ্যমান। বাংলাদেশের জনসংখ্যা যেসব কারণে বৃদ্ধি পাচ্ছে তা নিম্নে আলোচনা করা হল:
দারিদ্র্যতা: আমাদের দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হল দারিদ্র্যতা। সাধারণত দরিদ্র পরিবারের মানুষের সন্তান উৎপাদন প্রবণতা অনেক বেশি। যার ফলে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
শিক্ষার অভাব
জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে উপযুক্ত শিক্ষার অভাব। শিক্ষার অভাবেই জনসাধারণের মধ্যে ধর্মীয় কুসংস্কার, অজ্ঞতা, অসচেতনতা ইত্যাদি দেখা যায়। দেশে শিক্ষার অভাবের ফলে শিক্ষিতের হার নৈরাশ্যজনকভাবে কম। জনসংখ্যা বৃদ্ধি এ অশিক্ষিত সমাজকে আরো ভয়াবহ করে তুলেছে। এ সমস্যার আশু সমাধানের জন্য বিগত দিনে কোনো উপযুক্ত পথ বের করতে পারে নি কোনো জাতি।
বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ
বাংলাদেশে বিশেষ করে গ্রামীণ সমাজে বাল্য বিবাহ প্রচলিত আছে। এখনো শতকরা ৫০ জন লোকের বাল্য বিবাহ হচ্ছে। গ্রামে ১৮ বছর বয়স হওয়ার পূর্বেই অনেক মেয়েকে বিয়ে দেওয়া হয় এবং বৈবাহিক জীবন শুরু করে। এই দীর্ঘ বৈবাহিক জীবনে তারা অধিক সন্তান লাভ করে। এদেশে অনেকে বহু বিবাহ করে থাকে। ফলে দেখা যায়, দেশের জনসংখ্যা উচ্চহারে বৃদ্ধি পায়।
শিশু মৃত্যুহার
বাংলাদেশে তুলনামূলকভাবে শিশু মৃত্যুহার অনেক বেশি ছিল। তাই অর্ধেক সংখ্যক শিশু যাতে বেঁচে থাকে সেজন্য মা-বাবা আগ্রহী। বিশ্বের অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশে গত ৩-৪ দশক যাবত শিশু মৃত্যুহার হ্রাস পাচ্ছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে এটা সম্ভব হয়েছে।
জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানের উপায়
জনসংখ্যা সমস্যা থেকে কীভাবে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে তা নিয়ে পৃথিবীর চিন্তাশীল মানুষেরা চিঞ্চিত। এর সমাধান নির্ণয় করা কঠিন নয়, কঠিন হল সমাধানটি প্রয়োগ করা। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণই এ সমস্যাটির প্রধান ও একমাত্র সমাধান। আর জনসংখ্যা বৃদ্ধির নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে দরকার জন্মনিয়ন্ত্রণ করা। পৃথিবীর প্রায় সব দেশই জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে সোচ্চার ও সচেষ্ট। আমাদের দেশে পরিবার পরিকল্পনা নামে একটি স্বতন্ত্র দপ্তর আছে, যার কাজ জন্মনিয়ন্ত্রণ করা। কিন্তু আন্তরিকতা ও কর্তব্যনিষ্ঠার অভাবে এর কাছ থেকে ভালো ফল পাওয়া যায় নি। তাই জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধে আমাদের সবাইকে আন্তরিকতার সাথে কাজ করতে হবে।
শিক্ষার প্রসার
জন্মনিয়ন্ত্রণ রোধে অত্যন্ত মুক্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানের প্রধান অন্তরায় দেশের বিপুল সংখ্যক জনসাধারণের অশিক্ষা, কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজ ব্যবস্থা, অজ্ঞতা ও মূর্খতা। সুতরাং এ সমস্ত অভিশাপ থেকে জনগণকে মুক্ত করে শিক্ষা ও জ্ঞানের আলোক ছড়াতে হবে। বয়স্ক শিক্ষা, গণশিক্ষা এবং ব্যাপকভাবে শিক্ষা বিস্তারের পরিকল্পনা করতে হবে। এ সমস্ত পরিকল্পনা সুষ্ঠুভাবে প্রয়োগ করতে পারলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধ করা সম্ভব।
সরকার গৃহীত ব্যবস্থা
সরকার কর্তৃক গৃহীত ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং জন্মহার কমানো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের কৃষির ফলন বাড়িয়ে, শিল্পের প্রসার ঘটিয়ে, ব্যবসায়-বাণিজ্যের প্রসার করে জনসংখ্যা সমস্যার সমাধানের দিকে অগ্রসর হওয়া যায়। কৃষি ব্যবস্থার সংস্কার সাধন করা দরকার। সে জন্য দরকার আধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ, উৎকৃষ্ট বীজ ও সারের যোগান, কৃষি ঋণের ব্যবস্থা ইত্যাদি।
উপসংহার
আজ আমাদের ভয়াবহ সমস্যা জনসংখ্যা সমস্যা। এ সমস্যায় হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দিলে চলবে না। যে করেই হোক, যেভাবেই হোক সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। পরিবার পরিকল্পনা, কৃষি, শিল্প, শিক্ষা প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অগ্রগতি সাধিত হলে একদিকে যেমন জনসংখ্যা কমবে, অপরদিকে দেশের জাতীয় আয় ও সম্পদ বৃদ্ধি পাবে। তখন জনসংখ্যা সমস্যা আর প্রকট হবে না তা আমাদের মনে রাখা উচিত। দেশের সামগ্রিক কল্যাণ উন্নতি ও অগ্রগতি নির্ভর করে জনসংখ্যা রোধের ওপর। নতুবা যত চেষ্টাই করি না কেন আমাদের মানবেতর জীবনযাপন করতে হবে।
FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ