মানব কল্যাণে সাহিত্য



(সংকেত: ভূমিকা; সাহিত্য পরিচিতি; মানবজীবনে সাহিত্য; আনন্দদানে সাহিত্য; সাহিত্য ও আত্মোপলব্ধি; মানব সভ্যতায় সাহিত্য; সমাজচিত্রের রূপায়নে সাহিত্য; মানসিক উৎকর্ষতায় সাহিত্য; সাহিত্য পাঠের প্রয়োজনীয়তা; উপসংহার।)
ভূমিকা: সাহিত্য হচ্ছে সমাজের দর্পণ স্বরূপ। একটি সমাজের প্রতিচ্ছবি বিভিন্নরূপে ফুটে উঠে সাহিত্যের পাতায়। নির্মল বিনোদন দানের মাধ্যমে সাহিত্য উন্মোচিত করে মানুষের মন ও মনন। সেই সাথে সমাজ ব্যবস্থার কল্যাণমুখী বার্তাও দেয় সাহিত্য। সমাজের নানা অসঙ্গতির সম্ভাব্য সমাধানের উপায়ও অনেক সময় সাহিত্যের কাছ থেকে পাওয়া যায়। মানুষের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, হর্ষ-বিষাদের অপূর্ব এক সংমিশ্রণে সৃষ্টি হয় সাহিত্য। মানব কল্যাণেও সাহিত্য নানামুখী ভূমিকা পালন করে থাকে।
সাহিত্য পরিচিতি: “বস্তুত বহিঃপ্রকৃতি এবং মানবচরিত্র মানুষের হৃদয়ের মধ্যে অনুক্ষণ যে আকার ধারণ করিতেছে, যে সংগীত ধ্বনিত করিয়া তুলিতেছে, ভাষায় রচিত সেই চিত্রই এবং গানই সাহিত্য।”
                                             -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
‘সাহিত্য’ শব্দটি ‘সহিত’ থেকে উদ্ভুত। সাহিত্য বলতে সঙ্গ, সাহচর্য বা মিলনকে বুঝায়। মানুষের ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক চিন্তার সম্মিলনে সাহিত্যের সৃষ্টি হয়। সাহিত্য হচ্ছে একই সাথে মানুষের জ্ঞানের ভিত্তি এবং অভিজ্ঞতার সমন্বয়। আরো বিশদভাবে সাহিত্য হচ্ছে মানুষের সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী চিন্তাশক্তির বহিঃপ্রকাশ। কবিতা, নাটক, গল্প, উপন্যাস প্রভৃতিকে একেকটি সাহিত্যরূপ বলে বিবেচনা করা হয়। যারা এসব সাহিত্যকর্ম সম্পাদন করেন তাদেরকে বলা হয় সাহিত্যিক।
মানবজীবনে সাহিত্য: মানবজীবনের সাথে সাহিত্যের সম্পর্ক অতীব গভীর ও সম্প্রসারিত। সভ্যতার জন্মলগ্ন থেকে মানুষের জীবনের সাথে মিশে আছে সাহিত্য। মানুষের দৈনন্দিন আনন্দ-বেদনার মধ্য থেকে রচিত হয়ে সাহিত্য মানব মনের আনন্দের খোরাক জোগায়। যুগে যুগে সাহিত্যিকরা মানবজীবনের রহস্য উন্মোচন করার প্রয়াস পেয়েছেন সাহিত্য রচনার ভেতর দিয়ে। সাহিত্য পাঠের মাধ্যমে পাঠকও অনুভব করেন অধরা মাধুর্যের আনন্দ-স্পর্শ। মানব জীবনের দুঃখ গাঁথা বা আনন্দ-গাঁথা রচিত হয় সাহিত্যিকের হাতেই।
আনন্দদানে সাহিত্য: সাহিত্য সুস্থ বিনোদনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম। প্রখ্যাত সাহিত্যিক ‘প্রথম চৌধুরী’ বলেছেন- ‘সাহিত্যের উদ্দেশ্য সকলকে আনন্দ দেওয়া, কারো মনোরঞ্জন করা নয়।’ সাহিত্যের রসাস্বাদন করার মাধ্যমে শাশ্বত সত্য উপলব্ধি করা যায়। আর যেখানে সত্যের উপলব্ধি রয়েছে, সেখানে রয়েছে অনাবিল আনন্দের ছোঁয়া। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যকে আরো মোহনীয় ভঙ্গিতে মানুষের কাছে উপস্থাপন করে সাহিত্য। সাহিত্য চর্চা কেবল জ্ঞানচর্চাই নয়, এটা জীবনকে জানা ও বোঝার আনন্দও বটে। সাংস্কৃতিক বিভিন্ন দিক সাহিত্যের মাধ্যমে ফুটে ওঠে বলে তা মানুষের আনন্দকে বাড়িয়ে দেয় আরো কয়েক গুণ।
সাহিত্য ও আত্মোপলব্ধি: সাহিত্য মানুষকে সত্য উপলব্ধির শিক্ষা দেয়। মানুষের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনকে সাহিত্যের মাধ্যমে অনুভব করা যায়। এ জন্যই সাহিত্য আত্মোপলব্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। আত্মার যথার্থ উপলব্ধি অনুভব করা যায় সাহিত্য পাঠের মাধ্যমে। মহৎ সাহিত্য তাই কাল থেকে কালান্তরে পাঠক মনে দিয়েছে অপার তৃপ্তি। এ তৃপ্তি নিজেকে জানার, নিজেকে উপলব্ধি করতে পারার।
মানব সভ্যতায় সাহিত্য: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রযাত্রার ছন্দে ছন্দে এগিয়ে চলেছে মানব সভ্যতা। নতুনত্বের আহ্বান সভ্যতাকে করে তুলেছে আরো বেশি গতিশীল। জটিল কর্তব্য-শৃঙ্খলে মানুষ এখন মহাব্যস্ত। সেখানে আবেগের কোনো স্থান নেই। কিন্তু আবেগ ছাড়া সাহিত্য চর্চা হয় না। সাহিত্য সৃষ্টির জন্য দরকার একটু খানি অবকাশ। তবে সভ্যতার গতির কাছে সাহিত্য হারিয়ে যায়নি। আধুনিক জীবনের ব্যস্ততার চোখ ফাঁকি দিয়ে সাহিত্য ঠিকই তার যাত্রা অব্যাহত রেখেছে। ধ্রুপদী সাহিত্যের আবেদন পাঠক মনে এখনো অম্লান। প্রযুক্তিগত উন্নতিকেই মানুষ একমাত্র পাথেয় করে নেয়নি। বরং সভ্যতার উন্নতি সাধনেও মানব সমাজ সাহিত্যকে কাজে লাগাচ্ছে। বরেণ্য সাহিত্যিকদের উদ্ভাবনী চিন্তা শক্তির প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করে এগিয়ে চলেছে বিশ্ব সভ্যতা।
সমাজচিত্র রূপায়নে সাহিত্য: মানব সমাজ সর্বদা আপন গতিতে সম্মুখ পানে অগ্রসরমান। মানুষকে নিয়েই সমাজ টিকে আছে। সমাজের সাথে মিশে আছে মানব জাতির সকল আনন্দ-বেদনা ও বিরহ-মিলনের সুর। পরাজিত জীবনের দীর্ঘশ্বাস ও প্রাপ্তির উল্লাস মিশে একাকার হয়ে আছে সমাজে। সমাজ জীবনের তুচ্ছ ঘটনা থেকে শুরু করে জীবনের চড়াই-উৎরাই নানা ধরণের অভিজ্ঞতা সাহিত্যের উপজীব্য। সমাজচিত্রের বাস্তব রূপ ফুটিয়ে তুলতে পারে কেবল সাহিত্যই। কালের অতল গহবরে ব্যক্তি হারিয়ে যায়। কিন্তু সাহিত্যের পাতায় ঠিকই তার চিত্র চিরদিন রয়ে যায়। সমাজের প্রতিটি উপাদান সাহিত্য আঁকড়ে ধরে রাখে পরম মমতায়। চর্যাপদ, মঙ্গলকাব্য, বৈষ্ণবকবিতা গুলোই তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ।
মানসিক উৎকর্ষতায় সাহিত্য: কেবল দেহের সুস্থতা নিয়েই মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না। পাশাপাশি প্রয়োজন হয় মনের সজীবতা। কারণ দেহ ও মন নিয়েই মানুষ। বেঁচে থাকার জন্য দু’টোরই রয়েছে সমান অবদান। দেহের পুষ্টির জন্য যেমন মানুষ খাদ্য গ্রহণ করে তেমনি মনের খাদ্য হচ্ছে নির্মল বিনোদন। আর এ ক্ষেত্রে সাহিত্যই মনের সর্বোৎকৃষ্ট খাদ্য। মানসিক উৎকর্ষতা সাধনের জন্য সাহিত্যের ভূমিকা অপরিহার্য। মনের খাদ্য অনুভবের বিষয়, আত্মোপলব্ধির বিষয়। একমাত্র সাহিত্যই পারে মানুষকে অনুভব করার ও নিজেকে উপলব্ধি করার সুযোগ তৈরি করে দিতে। সাহিত্যের মাধ্যমে মানুষ হৃদয় দিয়ে হৃদয়কে অনুভব করার ক্ষমতা লাভ করে। সাহিত্য কেবল আনন্দই দান করে না এটি মানুষের অন্তরাত্মাকে নাড়া দেয়। মানব হৃদয়কে জাগ্রত করে। সাহিত্য মানুষকে মহৎ ও সুন্দর জীবনের শিক্ষা দেয়। সাহিত্য চর্চা মানুষকে ভালোবাসতে শেখায়। মনের সংকীর্ণতা দূর করতে সাহিত্যের রয়েছে অসামান্য অবদান। সর্বোপরি মানসিক উৎকর্ষতা অর্জনে সাহিত্যের ভূমিকা অপরিসীম।
সাহিত্য পাঠের প্রয়োজনীয়তা: সাহিত্য হচ্ছে জীবনের প্রতিবিম্ব। মানুষের জীবন প্রতিফলিত হয় সাহিত্যের দর্পণে। তাই সাহিত্য চর্চা মানে জীবন চর্চা। সাহিত্য মানুষকে জীবন থেকে শিক্ষা নেওয়ার উপায় দেখিয়ে দেয়। সমাজের ও নিজের ভুল-ত্রুটি শুধরে সঠিক পথে চলার প্রেরণা দান করে। মানব কল্যাণে উদ্বুদ্ধ করতে সাহিত্য মানুষকে পরোপকারের তাৎপর্য বুঝিয়ে দেয়। মানুষ মানুষের জন্য এ কথা মানুষকে বারবার স্মরণ করিয়ে দেয় সাহিত্য। এক কথায়, মানব জীবনের অগ্রগতির জন্য দরকার একে অপরের কল্যাণসাধন আর এই মানব কল্যাণের শিক্ষা ও বাস্তবায়নের পথ দেখিয়ে দেয় সাহিত্য।
উপসংহার: সাহিত্য মানুষের ছন্দময় জীবনের নিত্য সঙ্গী। সাহিত্য মানুষকে সামাজিক জীব হিসেবে নিজের অবস্থান উপলব্ধি করার সামর্থ্য দান করে। সাহিত্যই দেশে-দেশে, কালে-কালে, মানুষে-মানুষের বন্ধনকে অনেক বেশি দৃঢ় ও মজবুত করে। মানুষকে অনুপ্রাণিত করে কল্যাণব্রতে। তাই মানবজীবনে সাহিত্যের মূল্য গভীর ও ব্যাপক।

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]