বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা



(সংকেত: ভূমিকা; জাতীয় পতাকা; বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা; পতাকার মাপ; পতাকা ব্যবহারের নিয়ম; পতাকা তৈরির ইতিহাস; পতাকা উত্তোলনের ইতিহাস; চেতনায় জাতীয় পতাকা; উপসংহার।)
ভূমিকা: বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা এ দেশের প্রতিটি মানুষের গর্ব ও অহংকার। এই পতাকা আমরা পেয়েছি দীর্ঘ নয় মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে অর্জিত স্বাধীনতার মাধ্যমে। তাই আমাদের জাতীয় পতাকা ও স্বাধীনতা যুদ্ধ পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এই পতাকা বাংলাদেশের মুক্তিকামী জনসাধারণকে একত্রিত করেছিলো। এই পতাকাতলে দাঁড়িয়ে দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধারা শপথ করেছিলো দেশমাতৃকাকে স্বাধীন করার জন্য। বীর শহিদদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা। পতাকার লাল বৃত্ত তাই সকল দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধার পবিত্র রক্তের প্রতীক হয়ে আছে। জাতীয় পতাকা তাই আমাদের কাছে গৌরবময় ও তাৎপর্যমন্তিত।
জাতীয় পতাকা: জাতীয় পতাকা একটি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। প্রত্যেক দেশের নিজস্ব প্রতীক হিসেবে পতাকা ব্যবহৃত হয়। পতাকা একখ- বস্ত্রবিশেষ, যা কোনো গোষ্ঠী, দল, জাতি, দেশ বা সংগঠনের এমনকি বিশেষ কোনো অনুষ্ঠানের প্রতীক তথা পরিচায়ক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত চারকোনা একটু বড়ো সাদা বা রঙিন কাপড় ব্যবহৃত হয় পতাকা হিসেবে। পতাকার এক প্রান্ত একটি দন্ডের সাথে বেঁধে ওড়ানো হয়। পতাকার বন্ডে ব্যবহৃত বিশেষ কোনো রঙ, নকশা, প্রতিকৃতি বা চিহ্নের দ্বারা কোনো আদর্শ কিংবা বার্তা উৎকীর্ণ থাকতে পারে। আধুনিক বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্রেরই একটি স্বতন্ত্র পতাকা আছে, যা জাতীয় পতাকা হিসেবে বিবেচিত। তেমনিভাবে বাংলাদেশেরও একটি নিজস্ব জাতীয় পতাকা আছে যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে প্রকাশ করে।
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা: বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা সবুজ আয়তক্ষেত্রের মধ্যে লাল বৃত্ত। ঘন উজ্জ্বল সবুজ রঙ বাংলাদেশের সবুজ প্রকৃতি, তারুণ্যের উদ্দীপনা ও বিস্তৃত গ্রাম বাংলার প্রতীক, বৃত্তের গাঢ় লাল রঙ উদীয়মান সূর্য ও স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারীদের প্রতীক। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার এই রূপটি ১৯৭২ সালের ১৭ জানুয়ারি সরকারিভাবে গৃহীত হয়। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় প্রায় একই রকম দেখতে একটি পতাকা ব্যবহার করা হতো, যেখানে মাঝের লাল বৃত্তে হলুদ রঙের একটি মানচিত্র ছিলো। যে ভূখন্ডের জন্য আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে তা প্রদর্শনের জন্য পতাকায় এই মানচিত্র অঙ্কিত হয়েছিল।
পতাকার মাপ: বাংলাদেশের পতাকা আয়তাকার; এর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত ১০ঃ৬ এবং মাঝের লাল বর্ণের বৃত্তটির ব্যাসার্ধ্য দৈর্ঘ্যরে পাঁচভাগের একভাগ। পতাকার দৈর্ঘ্যরে কুড়ি ভাগের বাম দিকের নয়ভাগের শেষ বিন্দুর উপর অঙ্কিত লম্ব এবং প্রস্থের দিকে মাঝখান বরাবর অঙ্কিত সরলরেখার ছেদবিন্দু হলো বৃত্তের কেন্দ্র। পতাকার দৈর্ঘ্য ১০ ফুট হলে প্রস্থ হবে ৬ ফুট। লাল বৃত্তের ব্যাসার্ধ্য হবে ২ ফুট। ভবনে ব্যবহারের জন্য পতাকার বিভিন্ন মাপ হলো ১০ঃ৬ ফুট, ৫ঃ৩ ফুট। মোটর গাড়িতে ব্যবহারের জন্য পতাকার বিভিন্ন মাপ হলো ৫ঃ৯ ইঞ্চি, ১০ঃ৬ ইঞ্চি। আন্তর্জাতিক ও দ্বিপাক্ষিক অনুষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য টেবিল পতাকার মাপ হলো ১০ঃ৬ ইঞ্চি।
পতাকা ব্যবহারের নিয়ম: বিভিন্ন জাতীয় দিবসে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ভবন, বাংলাদেশ কূটনৈতিক মিশন ও কনস্যুলেটে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। তাছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদাসম্পন্ন পদে অধিষ্টিত ব্যক্তিবর্গ যেমন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, মন্ত্রী এমন দশটি পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিবর্গ নিজ নিজ বাস ভবন বা গাড়িতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে পারেন। শোক দিবসে জাতীয় পতাকা রাখা হয় অর্ধনমিত। পতাকা অর্ধনমিত রাখার ক্ষেত্রে প্রথমে পতাকা শীর্ষস্থান পর্যন্ত উঠিয়ে তারপর অর্ধনমিত অবস্থানে রাখতে হয়। দিনের শেষে পতাকা নামানোর সময় পুনরায় শীর্ষ পর্যন্ত উঠিয়ে তারপর আবার নামাতে হয়। সরকারের অনুমতি ব্যতিত জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা যায় না।
পতাকা তৈরির ইতিহাস: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত পতাকার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয় বর্তমান পতাকা। যুদ্ধের সময়কার পতাকার লালবৃত্তে বাংলাদেশের মানচিত্র ছিল, পরবর্তীতে পতাকাকে সহজ করতেই মানচিত্রটি বাদ দেয়া হয়েছিল। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার সাথে জাপানের জাতীয় পতাকার মিল রয়েছে কিন্তু পার্থক্য হচ্ছে বাংলাদেশের সবুজের স্থলে জাপানিরা সাদা রঙ ব্যবহার করে। লাল বৃত্তটি একপাশে একটু চাপানো রয়েছে, পতাকা যখন উড়বে তখন যেন এটি পতাকার মাঝখানে দেখা যায়, এ কারণেই। আদি পতাকাটি এঁকেছিলেন স্বভাব আঁকিয়ে নারায়ণ দাশ। ১৯৭১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি শিব নারায়ণ দাশ ইউসুফ সালাউদ্দিন নামে তার এক সহযোগীকে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ইকবাল হলের ১০৫ নং রুমে নকশা করেন জাতীয় পতাকার। ঢাকা নিউমার্কেটে অবস্থিত অ্যাপোলো টেইলরের মালিক বজলুর রহমান লসকর এই পতাকার জন্য কাপড় দিয়েছিলেন।
পতাকা উত্তোলনের ইতিহাস: ১৯৭১ সালের মার্চের ২ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় এক ছাত্র সভায় বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন তৎকালীন ডাকসু ভিপি আ.স.ম আব্দুর রব। ২ মার্চ জাতীয় পতাকা প্রথম উত্তোলিত হয় বলে এই দিনকে জাতীয় পতাকা দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়। শেখ মুজিবুর রহমান মার্চের ২৩ তারিখে ধানমন্ডিস্থ নিজ বাসভবনে স্বাধীনতা ঘোষণার প্রাক্কালে প্রথম জাতীয় পতাকা পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। দেশের বাইরে প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হয় ১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল কলকাতাস্থ পাকিস্তানের ডেপুটি হাই কমিশনে এবং জাতীয় সংগীত গাওয়ার সাথে প্রথম উত্তোলিত হয় ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ, পল্টনে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে তৎকালীন সরকার শিব নারায়ণ দাশের ডিজাইনকৃত পতাকার মাঝের মানচিত্র উঠিয়ে দিয়ে পতাকার মাপ, রং ও তার ব্যাখ্যা সম্বলিত একটি প্রতিবেদন দিতে বলেন পটুয়া কামরুল হাসানকে। কামরুল হাসান কর্তৃক পরিমার্জিত রূপটিই বাংলাদেশের বর্তমান জাতীয় পতাকা।
চেতনায় জাতীয় পতাকা: বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা রাষ্ট্র ও জাতি হিসেবে আমাদের স্বকীয়তার প্রতীক, আমাদের সার্বভৌমত্ব এবং রাষ্ট্রের অখন্ডতার এক নির্ভরযোগ্য চিহ্ন। আনন্দ আর উদ্দীপনার এক শিহরণ সৃষ্টি হয় আমাদের হৃদয়ে, যখন জাতীয় পতাকা উড়ানো হয়। জাতীয় পতাকার প্রতি অবিচল আস্থা, ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা শেখানো হয় অতি শৈশবকাল থেকে, যখন একজন শিশু স্কুলে ভর্তি হয় ঠিক সে সময় থেকে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার সময় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মনে জাগ্রত হয় স্বজাত্যবোধ। মা মাতৃভূমির প্রতি শ্রদ্ধাবোধের মাধ্যমে যেমন মনুষ্যত্বের পরিচয় পাওয়া যায়, তেমনি মাতৃভূমির সাথে জাতীয় পতাকাও ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। তাই ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকেই লাল-সবুজের পতাকার প্রতি অবিচল আনুগত্য ও শ্রদ্ধা আমাদের চেতনার অবিচ্ছেদ্য অংশ।
উপসংহার: লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা, আমাদের সার্বভৌমত্বের নিদর্শন লাল সবুজের পতাকা। এই পতাকা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় শহিদের বুকের তাজা রক্তে সিক্ত সবুজ জমিনের কথা। স্মরণ করিয়ে দেয় সেসব মানুষের কথা যারা নির্দ্বিধায়, অকাতরে প্রাণ দিয়েছে এই ছাপ্পান্নো হাজার বর্গ মাইলের মুক্তির জন্য। লাল সবুজের এই পতাকা তাই আমাদের হৃদয়ে জাগায় দেশপ্রেম, আর জোগায় দেশের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করার প্রেরণা।

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]