বাংলাদেশের গ্যাস সম্পদ



(সংকেত: ভূমিকা; প্রাকৃতিক গ্যাস; প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ; প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন ও ব্যবহার; গ্যাসের বর্তমান অবস্থা; বহির্বিশ্বে গ্যাসের চাহিদা; বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গ্যাসের গুরুত্ব; গ্যাস সংকট মোকাবেলায় গৃহিত পদক্ষেপ; বাংলাদেশের সম্ভাবনা; উপসংহার।)
ভূমিকা: গ্যাস একটি মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ। আধুনিক সভ্যতায় রয়েছে এর বহুমুখী ব্যবহার। গ্যাস বিদ্যুৎ উৎপাদন, সার উৎপাদন, শিল্পে ব্যবহার, জ্বালানি ও গৃহস্থালী কাজে ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশে গ্যাসের পরিমাণ সীমিত কিন্তু ব্যবহার রয়েছে অসংখ্য ক্ষেত্রে। এ মহামূল্যবান সম্পদের যথার্থ ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন যাত্রা যোগ করা সম্ভব।
প্রাকৃতিক গ্যাস: প্রাকৃতিক গ্যাস বাংলাদেশের প্রধান খনিজ সম্পদ। মিথেন, হাইড্রোজেন, সালফাইড এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড প্রভৃতি প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রধান উপাদান। বাংলাদেশের প্রায় অধিকাংশ তেল খনি থেকে গ্যাস সংগৃহীত হয়ে থাকে। প্রাকৃতিক গ্যাস বাংলাদেশের বাণিজ্যিক জ্বালানি ব্যবহারের ৭৩% পূরণ করে।
প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ: প্রাকৃতিক গ্যাস বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি সম্পদ। দেশের আবিষ্কৃত মোট গ্যাস ক্ষেত্রের সংখ্যা ২৫টি। সম্প্রতি পেট্টোবাংলা কর্তৃক গ্যাস ক্ষেত্রসমূহের প্রাথমিক মজুদ নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে মোট প্রাক্কলিত গ্যাস মজুদের পরিমাণ ৩৭.৬৮০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট এবং উল্লেখযোগ্য প্রমাণিত ও মজুদের পরিমাণ ২৭.০৩৮ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। ডিসেম্বর ২০১২ পর্যন্ত প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনের পরিমাণ প্রায় ১০.৯১৫ ট্রিলিয়ন ঘটফুট। ফলে জানুয়ারি ২০১৩ সালে উত্তোলন যোগ্য নিট মজুদের পরিমাণ ১৬.৩৬৩ ট্রিলিয়ন ঘনফুট।
প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন ও ব্যবহার: বর্তমানে দেশে ১৯টি গ্যাস ক্ষেত্রের ৮৩টি কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলিত হচ্ছে। গ্যাস ক্ষেত্রগুলো হলো- তিতাস, বাখরাবাদ, হবিগঞ্জ, রশিদপুর, কৈলাশটিলা, সিলেট, নরসিংদী, মেঘনা, সালদা নদী, সাঙ্গু, জালালাবাদ, মৌলভী বাজার, বিয়ানীবাজার, ফেঞ্চুগঞ্জ, ফেনী, ভাংগুরা, শাহবাজপুর, সেমুতাং এবং বিবিয়ানা। বিদ্যুৎ উৎপাদন, সাার কারখানা, শিল্প ও গৃহস্থালী খাতে জ্বালানির প্রধান উৎস প্রাকৃতিক গ্যাস। নিম্নে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদন ও ব্যবহার ছকে দেখানো হলো-
(বিলিয়ন ঘন ফুট)
                                        উৎপাদন                ব্যবহার
সাল ২০১১-১২ ১০১২-১৩  ২০১১-১২  ১০১২-১৩
গ্যাস  ৭৪৩.৫৭ ৩৩২.০৭ ৭০৩.৮ ৩৫৯.৪৩
উৎসঃ পেট্রোবাংলা, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।
বাংলাদেশের গ্যাস সম্পদের বর্তমান অবস্থাঃ এদেশের অন্যতম প্রধান জ্বালানি সম্পদ প্রাকৃতিক গ্যাসের পরিকল্পিত ও সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে এদেশের উন্নয়নের ধারাকে গতিশীল করা যেতে পারে। জ্বালানি সম্পদ ব্যবহার যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করে। নিম্নে বাংলাদেশের গ্যাস সম্পদ হতে জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি ও অবদানের হার তুলে ধরা হলো-
                প্রবৃদ্ধির হার %      অবদানের হার %
সাল ২০১১-১২ ১০১২-১৩ ২০১১-১২ ১০১২-১৩
গ্যাস   ৪.২৭  ৯.১৬ ০.১৮  ০.১৯
উৎসঃ বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০১৩।
বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের গ্যাসের চাহিদা: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে শুরু হয় অর্থনৈতিক যুদ্ধ। এ যুদ্ধে পুজিঁকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করে শিল্পোন্নত দেশগুলো। পুজিঁর ধর্ম হলো মুনাফা অর্জন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গণতন্ত্র, যোগাযোগ বিপ্লব ও মুক্তবাজার অর্থনীতির দোহাই দিয়ে উন্নত দেশগুলো তৃতীয় বিশ্বের সম্পদ লুট করেছে। এ লুণ্ঠন প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের গ্যাস সম্পদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, কানাডা, রাশিয়া ও বহুজাতিক সংস্থাগুলোর স্বার্থ অভিন্ন বিন্দুতে এসে মিলেছে। বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি তেল কোম্পানি, বিভিন্ন সংস্থা, বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের গ্যাস রপ্তানির জন্য চাপ দিচ্ছে। এ গ্যাস সম্পদ আমদানির জন্য ওঁত পেতে আছে ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, যুক্তরাষ্ট্রসহ পূর্ব এশিয়া ও ইউরোপের অনেক শিল্পপ্রধান দেশ।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রাকৃতিক গ্যাসের গুরুত্ব: প্রাকৃতিক গ্যাসই বাংলাদেশের একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি সম্পদ। বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদনে এর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। নিম্নে প্রাকৃতিক গ্যাসের অর্থনৈতিক গুরুত্ব তুলে ধরা হলো-
শিল্পোন্নয়ন: শিল্প-কারখানার জ্বালানি হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার অধিক। বিভিন্ন সার কারখানা প্রাকৃতিক গ্যাস প্রধান কাচাঁমাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
কৃষির উন্নতি: সার ও কীটনাশক উৎপাদনে গ্যাস ব্যবহৃত হয়। আবার কৃষিজ যন্ত্রপাতি ও নির্মাণ শিল্পেও প্রাকৃতিক গ্যাসের দরকার হয়।
বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয়: বাংলাদেশকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে খনিজ তেল, কয়লা ইত্যাদি জ্বালানি সম্পদ আমদানি করতে হয়। প্রাকৃতিক গ্যাস জ্বালানি সম্পদ ও কাচাঁমাল হিসাবে ব্যবহৃত হওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হ্রাস পেয়েছে।
কর্মসংস্থান: বেকার সমস্যায় জর্জরিত বাংলাদেশের গ্যাসের বহুমুখী ব্যবহারের ফলে বহুলোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। গ্যাসের কূপ খনন, সংগ্রহ, সংরক্ষণ, সরবরাহ ইত্যাদি কাজ বহু সংখ্যক লোকের প্রয়োজন হয়।
তাছাড়া তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন, গৃহস্থালি ও বাণিজ্যিক কাজ ও গবেষণা প্রভৃতি কাজে এ গ্যাসের গুরুত্ব অপরিসীম।
গ্যাস সংকট মোকাবেলায় গৃহিত পদক্ষেপ: বাংলাদেশে গ্যাস সম্পদের প্রাচুর্য থাকলেও নানাবিধ সমস্যার কারণে এই সম্পদ এখন তীব্র সংকটের মুখোমুখি। বর্তমানে গ্যাস সংকট মোকাবেলায় সরকার যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তা নিম্নরূপ-
নতুন নতুন কূপ অনুসন্ধান: বাংলাদেশ তেল-গ্যাস অনুসন্ধানকারী প্রতিষ্ঠান বাপেক্স (BAPEX) দেশের গ্যাস সংকট মোকাবিলায় নতুন নতুন কূপ অনুসন্ধান করছে। আবিষ্কৃত ২৫ টি গ্যাসক্ষেত্রের ৪টি আবিষ্কার করেছে বাপেক্স।
গ্যাস উত্তোলন: আবিষ্কৃত ২৫ টি গ্যাসক্ষেত্র থেকে সরকার গ্যাস উত্তোলনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখছে। বর্তমানে ১৯ টি গ্যাসক্ষেত্রের ৮৩ টি কূপ হতে গ্যাস উৎপাদিত হচ্ছে।
সামুদ্রিক এলাকায় ব্লক সৃষ্টি: দেশের গ্যাস সংকট নিরসনে সরকার সামুদ্রিক এলাকাকেও বিভিন্ন ব্লকে বিভক্ত করেছে। ভাগকৃত ব্লকের সংখ্যা প্রায় ২৮ টি।
পেট্রোবাংলাকে গতিশীল করার উদ্যোগ: দেশে নতুন নতুন কূপ খনন ও গ্যাস উত্তোলনের কাজ শুরু হলেও পেট্রোবাংলার কাজ অনেকটাই স্থবির। বিষয়টি উপলব্ধি করে সরকার পেট্রোবাংলাকে গতিশীল করার উদ্যোগ নেয়। ফলে পরবর্তীতে সুন্দলপুর ও শ্রীকাইল গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান পাওয়া যায়।
অপব্যবহার রোধে প্রচারণা: গ্যাসের অপব্যবহার রোধে রেডিও, টেলিভিশন, পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে সরকার ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে।
তাছাড়া কূপ খনন, মূল এলাকায় ব্লক সৃষ্টি, আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান প্রভূতি পদক্ষেপের মাধ্যমে গ্যাস সংকট দূর করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়।
বাংলাদেশের সম্ভাবনা: বাংলাদেশে রপ্তানি করার মতো গ্যাস নেই। যেটুকু গ্যাস আবিষ্কৃত হয়েছে এবং যেটুকু পাওয়ার সম্ভাবনা আছে তা যদি নিজেদের জন্য ব্যবহার করা হয় তবে ২৫-৩০ বছর ব্যবহার করা যেতে পারে। যদি গ্যাসভিত্তিক পরিকল্পনা সারাদেশে গ্রহণ করা হয় তবে তা আরো আগে শেষ হয়ে যাবে। যদি নতুন কোনো গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান পাওয়া না যায়, তবে আগামী ২০ বছরের মধ্যে গ্যাস আমদানি করতে হবে। সুতরাং নিজেদের গ্যাসের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পারে বহুদূর।
উপসংহার: তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়শীল দেশ বাংলাদেশ। দেশে সম্পদের পরিমাণ অপ্রতুল কিন্তু সমস্যা অগনিত। এই সসীম সম্পদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো প্রাকৃতিক গ্যাস। এ সম্পদের উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি আমাদের সকলকেই এর উন্নয়ন ও ব্যবহারে যত্মবান হতে হবে।

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]