(সংকেত: ভূমিকা; T-২০ ক্রিকেটের ইতিহাস, T-২০ বিশ্বকাপ ক্রিকেট-২০১৪; স্বাগতিক দেশ; উদ্বোধনী অনুষ্ঠান; অংশগ্রহণকারী দেশসমূহ; বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অবস্থান; সেমিফাইনাল; ফাইনাল ম্যাচ; বিশ্বকাপের রোল অব অনার; T-২০ বিশ্বকাপ-২০১৪ এর রেকর্ডসমূহ; উপসংহার।)
ভূমিকা: বর্তমান বিশ্বে রাজকীয় খেলা নামে পরিচিত ক্রিকেট খেলা ক্রমান্বয়ে ফুটবলের জনপ্রিয়তাকেও অতিক্রম করতে শুরু করেছে। বিশেষত এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে এ খেলা জনপ্রিয়তার র্শীষে অবস্থান করছে। ক্রিকেটে অনিশ্চয়তা খেলাটিকে দান করেছে উত্তেজনা, উদ্দীপনা আর জনপ্রিয়তার শীর্ষস্থান। ICC এর অধীনে প্রতি দুই বছর পর পর অনুষ্ঠিত হয় T-২০ বিশ্বকাপ আসর। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৬ মার্চ, ২০১৪ অনুষ্ঠিত হলো ৫ম ICC T-২০ বিশ্বকাপের মহাযজ্ঞ।
T-২০ ক্রিকেটের ইতিহাস: ক্রিকেট খেলার উৎপত্তি হয় ইংল্যান্ডে। আঠারো শতক থেকে এ খেলা ইংল্যান্ডে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ১৮৭৭ সালে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া টেস্ট ম্যাচের মধ্য দিয়ে ক্রিকেট আন্তর্জাতিক খেলায় পরিণত হয়। ১৯৭১ সালে শুরু হয় ODI খেলা। এরই ধারাবাহিকতা ODI ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত রূপ হিসেবে উৎপত্তি লাভ করে বিশ ওভারের T-২০ খেলা। England and Wales Cricket Bord এর পরামর্শে ২০০৩ সালে এর উৎপত্তি হয়। T-২০ ক্রিকেট ২০০৭ সালে ICC প্রথম T-২০ বিশ্বকাপের আয়োজন করে।
T-২০ বিশ্বকাপ ক্রিকেট-২০১৪: ১৬ মার্চ-৬ এপ্রিল ২০১৪ বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হলো ICC ওর্য়াল্ড T-২০ বিশ্বকাপের ৫ম আসর। এটি ছিল পুরুষদের ৫ম আর নারীদের ৪র্থ T-২০ বিশ্বকাপ ক্রিকেট। র্দীঘ ২২ দিনের তুমুল রোমাঞ্চ ও শিহরণের সমাপ্তি ঘটে পুরুষ বিভাগে শ্রীলংকা আর মহিলা বিভাগে অস্ট্রেলিয়ার শিরোপা জয়ের মধ্য দিয়ে।
স্বাগতিক দেশ: ৫ম T-২০ বিশ্বকাপ ক্রিকেট -২০১৪ আসরের স্বাগতিক দেশ ছিল বাংলাদেশ। এই বিশ্বকাপের সবগুলো ম্যাচ বাংলাদেশ এককভাবে আয়োজন করে। এই সময়ে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকলেও বাংলাদেশ নির্ধারিত সময়ে ICC-র চাহিদা অনুযায়ী ভেন্যু প্রস্তুত, আবাসন এবং আইন শৃঙ্খলাসহ অন্যান্য সহযোগিতা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেয়। ৩টি ভেন্যু অর্থাৎ শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম, মিরপুর। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম, চট্টগ্রাম এবং সিলেট বিভাগীয় স্টেডিয়ামে খেলাগুলো অনুষ্ঠিত হয়। সবচেয়ে গৌরবের বিষয় দেশের রাজনৈতিক টানা-পোড়েনের মধ্য দিয়েও বাংলাদেশ T-২০ বিশ্বকাপ ক্রিকেট-২০১৪ সুন্দরভাবে সফল করতে সক্ষম হয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান: উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। “অপরূপ বাংলাদেশ” নামক প্রামাণ্য চিত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সৌন্দর্য তুলে ধরা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ICC-র প্রেসিডেন্ট অ্যালান রেনল্ড আইজ্যাক, BCB প্রধান নাজমুল হাসান পাপন প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ ভাষণ দেন। বর্ণাঢ্য এই অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন বিশ্ববিখ্যাত গায়ক অ্যাকন, ভারতের এ. আর. খান প্রমুখ। দর্শক শ্রোতার আনন্দময় উপস্থিতি আর আতশবাজির ঝলকানিতে এক মহোৎসবে পরিণত হয় বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। T-২০ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের অফিসিয়াল ইভেন্ট সং- এর শিরোনাম ছিল চার ছক্কা হই হই/ বল গড়াইয়া গেল কই।
অংশগ্রহণকারী দল/দেশ সমূহ: আইসিসি T-২০ বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০১৪ -তে অংশগ্রহণ করে মোট ১৬টি দেশ। এদের মধ্যে ১০টি টেস্ট খেলুড়ে দেশ যথাঃ ভারত, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলংকা, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে ও বাংলাদেশ। বাকী ৬টি দেশ হলো আফগানিস্তান, হংকং, নেপাল, আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ড ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। এবারের বিশ্বকাপে টেস্ট খেলুড়ে দল হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়েকে ১ম পর্বের খেলা পেরিয়ে মূল পর্বে অংশগ্রহণের জন্য শর্ত দেওয়া হয়।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অবস্থান: বিশ্বকাপ ক্রিকেট T-২০ ২০১৪-তে বাংলাদেশ ছিল ১ম পর্বের গ্রুপ ‘এ’-তে। বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল আফগানিস্তান, নেপাল ও হংকং। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে বাংলাদেশ-আফগানিস্তানকে ৯ উইকেটে হারিয়ে শুভ সূচনা করে। ১৮ মার্চ বাংলাদেশ নেপালকে হারায় ৮ উইকেটে। কিন্তু ২০ মার্চ বাংলাদেশ দুর্বল হংকং এর কাছে ২ উইকেটে লজ্জাজনকভাবে হেরে যায়। তারপরও বাংলাদেশ রান রেটে এগিয়ে থাকায় নেপালকে পিছনে ফেলে সুপার টেনের গ্রুপ ‘২’ এ জায়গা করে নেয়। এখানে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ভারত, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। উল্লেখ্য যে, সুপার টেনের সবগুলো ম্যাচে বাংলাদেশ হেরে বিশ্বকাপ হতে ছিটকে পড়ে সেমিফাইনালের আগেই। বাংলাদেশের পক্ষে সাকিব ৭ ম্যাচে সর্বমোট ১৮৬ রান আর আল-আমিন ১০ উইকেট নেয়।
সেমিফাইনাল: ৫ম T-২০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠে ভারত, শ্রীলংকা, দক্ষিণ আফ্রিকা আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৩ এপ্রিল ১ম সেমিফাইনালে শ্রীলংকা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে DL পদ্ধতিতে ২৭ রানে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে। ৪ এপ্রিল ২য় সেমিফাইনালে ভারত দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৬ উইকেটে হারিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো ফাইনালে খেলার সুযোগ তৈরি করে নেয়।
ফাইনাল ম্যাচ: বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ৫ম আসরে ফাইনাল ম্যাচে অনুষ্ঠিত হয় সার্কভুক্ত দুটি দেশ ভারত এবং শ্রীলংকার মধ্যে। ৬ এপ্রিল মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় ম্যাচটি। ভারত প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৪ উইকেটে সংগ্রহ করে মাত্র ১৩০ রান। জবাবে শ্রীলংকা ৬ উইকেট হাতে রেখেই সাঙ্গাকারার অসাধারণ ব্যাটিং নৈপুণ্যে মাত্র ১৭.৫ ওভারেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায়। শ্রীলংকা প্রথম বারের মতো T-২০ বিশ্বকাপের শিরোপা জয় করে। ব্যাটিং নৈপুণ্যে অসাধারণ ইনিংস খেলে ৩৫ বলে ৫২ রান করায় ম্যান অব দ্যা ফাইনাল হন শ্রীলংকার কুমারা সাঙ্গাকারা। ভারতের বিরাট কোহলির ৪টি হাফ সেঞ্চুরিসহ ৬ ম্যাচে মোট ৩১৯ রান করে ম্যান অব দ্যা টুর্নামেন্ট বা বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন।
একই সাথে মহিলা T-২০ বিশ্বকাপও বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়। মহিলা বিভাগে ইংল্যান্ডের ১০৪ রানের জবাবে ১৫.১ ওভারেই জয়ী হয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় অস্ট্রেলিয়া। মহিলা বিভাগে ম্যান অব দ্যা ফাইনাল হন অস্ট্রেলিয়ার সারাহ কোয়াট। মহিলা বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের আনিয়া মার্বসোল ১৩টি উইকেট নিয়ে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট হওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেন।
বিশ্বকাপের রোল অব অনার: ২০০৩ সাল হতে T-২০ খেলার উৎপত্তি হলেও ২০০৭ সালে প্রথম T-২০ বিশ্বকাপের আয়োজন করা হয়। ২০১৪ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয় ৫ম T-২০ বিশ্বকাপ। এক নজরে T-২০ বিশ্বকাপের রোল অব অনার।
কততম বিশ্বকাপ সাল সাল স্বাগতিক দেশ চ্যাম্পিয়ন রানার্স আপ
১ম T-২০ বিশ্বকাপ ২০০৭ দক্ষিণ আফ্রিকা ভারত পাকিস্তান
২য় T-২০ বিশ্বকাপ ২০০৯ ইংল্যান্ড পাকিস্তান শ্রীলংকা
৩য় T-২০ বিশ্বকাপ ২০১০ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়া
৪র্থ T-২০ বিশ্বকাপ ২০১২ শ্রীলংকা ওয়েস্ট ইন্ডিজ শ্রীলংকা
৫ম T-২০ বিশ্বকাপ ২০১৪ বাংলাদেশ শ্রীলংকা ভারত
T-২০ বিশ্বকাপ-২০১৪-এর রেকর্ডসমূহ: T-২০ বিশ্বকাপের (২১ মার্চ, ২০১৪) আয়াল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডের ম্যাচটি ছিল রেকর্ডময়। আয়ারল্যান্ডের ১৯০ রানের টার্গেট নেদারল্যান্ড মাত্র ১৩.৫ ওভারেই টপকে গিয়ে সুপার টেনে জায়গা করে নেয়। এ বিশ্বকাপের একমাত্র সেঞ্চুরি করেন ইংল্যান্ডের অ্যালেক হেল ৬৪ বলে ১১৬ রান। বেশি রান বিরাট কোহলি ৩১৯। ইমরান তাহির সর্বাধিক উইকেট লাভ করেন। মহিলা বিভাগে অস্ট্রেলিয়ার মেগ ল্যানিং সর্বাধিক রান ২৫৭, সর্বোচ্চ উইকেট ইংল্যান্ডের আনিয়া মকুসোল। এই বিশ্বকাপেই প্রথম আলোর স্ট্যাম্প ও স্পাইডার ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়। বিশ্বকাপের থিম সং ও ফ্ল্যাশ মব বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক সাড়া ফেলে দেয়।
উপসংহার: ১৬ মার্চ-৬ এপ্রিল ২০১৪ বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয় ICC ওয়ার্ল্ড T-২০ বিশ্বকাপের ৫ম আসর। প্রথম বারের মতো T-২০ বিশ্বকাপের আয়োজন করে বাংলাদেশ সবদিক থেকে বিশ্ববাসীর প্রশংসা পেয়েছে। বিশ্বকাপে যদিও বাংলাদেশ খুব বেশি ভালো করতে পারেনি কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নানা বাধা-বিপত্তির মধ্য দিয়েও আয়োজক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করে।
FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ