চরিত্র



(সংকেত: ভূমিকা; চরিত্রের বৈশিষ্ট্য; চরিত্র গঠনের সময়; চরিত্র বিনির্মাণে পরিবারের অবদান; চরিত্রের উপর সমাজ ও পরিবেশের প্রভাব; চরিত্র গঠনে ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা; জীবনে সাফলতা অর্জনে চরিত্রের ভূমিকা; সুস্থ সমাজ গঠনে সচ্চরিত্র; জাতীয় উন্নয়নে সচ্চরিত্র; চরিত্রহীনতার কুফল; উপসংহার।)
ভূমিকা: সৃষ্টির ঊষা লগ্নে মানুষ সভ্য জীবন যাপন করত না। নানা বৈরী পরিবেশ ও হিংস্র জীব জন্তুর সাথে যুদ্ধ করে তাদের বেঁচে থাকতে হতো। তাছাড়া মানুষে মানুষে গোত্রে গোত্রেও সংঘাত লেগেই থাকত। তাই হিংসা, বিদ্বেষ, হানাহানি ছিল তাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সেসময় পশুর সাথে মানুষের পার্থক্য ছিল না বললেই চলে। কিন্তু কালক্রমে মানুষের আচরণ থেকে পশুত্ব ঘুচে যায়। মানুষ ক্রমাগত চর্চার ফলে অর্জন করে নানা মানবীয় গুণাবলী। এসব মানবীয় গুণের সমষ্টিই হচ্ছে চরিত্র।
চরিত্রের বৈশিষ্ট্য: মানুষের বিভিন্ন অভ্যন্তরীন গুণাবলী যেমন সত্যবাদিতা, নিয়মানুবর্তিতা, অধ্যবসায়, শিষ্টাচার, সৌজন্যবোধ, শৃঙ্খলা, মানবপ্রেম, দেশপ্রেম, সাহসিকতা ইত্যাদি একত্রে মিলিত হয়ে কোনো ব্যক্তি হয়ে উঠে চরিত্রবান। চরিত্রের রয়েছে এমন একটি লৌকিক ক্ষমতা যা মানুষের মনকে সংকীর্ণতার বেড়াজাল থেকে মুক্তি দিয়ে করে তোলে উদার, শত লোভ লালসায় চাপা পড়া মনুষ্যত্বকে টেনে বের করে দান করে পূর্ণতা। মানুষের নশ্বর জীবনকে গৌরবময় করে তোলে সচ্চরিত্র। চরিত্র গঠিত হয় সব মানবিক গুণাবলীর সমন্নয়ে আর এর বহিঃ প্রকাশ ঘটে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ আচার-আচরণের মধ্য দিয়ে।
চরিত্র গঠনের সময়: চরিত্র মানুষের মান মর্যাদা নিরূপণের মাপকাঠি। হঠাৎ করেই একজন মানুষ সৎ চরিত্রের অধিকারী হতে পারে না। এর জন্য প্রয়োজন র্দীঘ প্রচেষ্টা। মানুষের চরিত্র গঠনের প্রক্রিয়া মূলত শুরু হয় শিশু কাল থেকেই। শিশুদের মনে যে ছাপ পড়ে তাই সারা জীবনের জন্য স্থায়ী হয়ে যায়। শিশুরা তাদের চারপাশের মানুষজনদের কাছ থেকে যেসব আচরণ শিখে তাই তাদের চরিত্রে ফুটে উঠে। তাই বড়দের উচিত শিশুদের উন্নত চরিত্র তৈরির জন্য যথাযথ শিক্ষা প্রদান করা। শিশুকালে চরিত্র গড়ে না উঠলে পরবর্তী পর্যায়ে তা গড়ে ওঠার সম্ভাবনা কম থাকে। তবে একজন মানুষ আপ্রাণ চেষ্টা করলে জীবনের যেকোনো পর্যায়েই তার ক্রটিগুলো সংশোধন করে নিয়ে সচ্চরিত্রের অধিকারী হতে পারে।
চরিত্র বিনির্মাণে পরিবারের অবদান: একটি শিশু জন্মের পর পরিবারের সদস্যরা তাকে আদর-যত্ন দিয়ে বড় করে তোলে, এ পৃথিবীর বুকে নির্ভয়ে পথ চলতে শেখায়। পরিবারই মানুষের প্রথম শিক্ষাকেন্দ্র। একজন মানুষের চরিত্র বিনির্মাণে পরিবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। তারা পরিবারের বড়দের আচার-আচরণ অনুকরণ করে। তাই পরিবারের সদস্যদের চরিত্রের প্রভাব ব্যাপক ভাবে শিশুদের উপর ক্রিয়াশীল হয়।
চরিত্রের উপর সমাজ ও পরিবেশের প্রভাব: একটি শিশু চরিত্র গঠনের প্রাথমিক শিক্ষা পেয়ে থাকে তার পরিবারের কাছ থেকে। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে সে তার পরিবারের গন্ডি অতিক্রম করে পা ফেলে বাইরের জগতে। তখন সমাজের নানা শ্রেণির মানুষের সাথে মেলামেশা করতে হয়, নানা বিচিত্র পরিবেশের সম্মুখীন হতে হয়। তখন তার চারপাশের পরিবেশ, সমাজ ও সমাজের মানুষগুলোর প্রভাব তার চরিত্রের উপর পড়ে। বিদ্যালয়, খেলার মাঠ, নানা সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত হয়ে মানুষ তাদের জীবন সুনিয়ন্ত্রিত পথে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। আর এসব নানা কাজকর্মে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে তাদের মনে দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ জন্মে যা তাদেরকে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন করে তোলে।
চরিত্র গঠনে ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা: চরিত্র গঠনে পরিবার ও পরিবেশের ভূমিকা থাকলেও সেই সাথে প্রয়োজন ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা। চরিত্র হঠাৎ করেই অর্জন করা যায় না। চরিত্র বিনির্মাণে প্রয়োজন ব্যক্তির আন্তরিক প্রচেষ্টা ও সাধনা। সমাজের চার পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা অন্যায়-অসত্য। পাপ পঙ্কিলতা তার কুটিল জাল নিপুণভাবে বিস্তার করে রেখেছে মানুষের জীবন চলার পথে। তাই চরিত্র গঠনে মানুষকে সকল লোভ-লালসা, কামনা-বাসনার ঊর্ধ্বে উঠতে হয়। জাগতিক সকল অন্যায় অসত্যের মোকাবিলা করে সকল পাপাচার পায়ে মারিয়ে জীবনের পথ পাড়ি দিতে হয়। তাহলেই একজন মানুষ সচ্চরিত্রের অধিকারী হতে পারে।
জীবনে সফলতা অর্জনে চরিত্রের ভূমিকা: চরিত্র মানুষের জীবনে সাফল্য লাভের চাবি-কাঠি। একজন সুন্দর চেহারার ব্যক্তি বা একজন ধনী ব্যক্তির চরিত্র যদি খারাপ হয় তাহলে সে সমাজের অন্যান্য মানুষের কাছ থেকে কোনো সম্মান পায় না। পক্ষান্তরে একজন চরিত্রবান ব্যক্তি অসুন্দর কিংবা গরীব হলেও সমাজে তার মান মর্যাদা অনেক বেশি। একজন চরিত্রবান মানুষ তার চরিত্রের মাধুর্য দিয়ে সহজেই সবার মন জয় করে নিতে পারে। সমাজ তাদের উচ্চ সম্মানে বসায়। সমাজের মানুষ যেকোনো বিষয়ে তাদের মতামতকেই অধিক প্রাধান্য দেয়। একজন চরিত্রবান ব্যক্তি সৎ ও সত্যবাদী হয়। ফলে শত্রু-মিত্র সবাই তাদের বিশ্বাস করে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এর কথা। তিনি আপন চরিত্রের মহিমায় নিজের কালকে অতিক্রম করে আজও সমুজ্জ্বল হয়ে আছেন মানুষের চিন্তা-চেতনায়।
সুস্থ সমাজ বিনির্মাণে সচ্চরিত্র: মানব সভ্যতা ও সমাজ যতই এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে মানুষ ততই হয়ে উঠেছে বিবেকশূন্য। দিন দিন মানুষ হারাচ্ছে তার মানবীয় গুণাবলী, হয়ে পরছে চরিত্রহীন। বর্তমান অসুস্থ উচ্ছৃখল সমাজের প্রধান কারণ মানুষের চরিত্রহীনতা। উন্নত চরিত্রের অভাব সমাজকে করে তুলছে অশান্ত। তাই প্রতিদিনই ঘটছে হত্যা, ছিনতাই, ইভটিজিং, ধর্ষণের মতো ঘটনা। বেড়ে যাচ্ছে মাদকাসক্তির প্রবণতা। কিছু সংখ্যক চরিত্রহীন মানুষের জন্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে পুরো সমাজের ভারসাম্য। সমাজকে সুস্থ ধারায় প্রবাহিত করতে এবং সমাজ থেকে সব কদর্যতা দূর করতে সচ্চরিত্রের ভূমিকা অপরিসীম। চরিত্রবান মানুষদের এমন শক্তি থাকে যা দিয়ে সহজেই তারা অন্যকে প্রভাবিত করতে পারে। তারা তাদের সদিচ্ছা, সৎ চিন্তা ও সৎ কর্ম দ্বারা বদলে দিতে পারে পুরো সমাজকে। দূরীভূত করতে পারে সব অন্যায় অবিচার।
জাতীয় উন্নয়নে সচ্চরিত্র: যে দেশের মানুষের নৈতিকতা দূর্বল সে দেশে দুর্নীতি, ঘুষ, চুরি, অবৈধ দখলদারীর আগ্রাসন অনেক বেশি। ব্যক্তির নৈতিকতা ও উন্নত চরিত্রের অভাব গোটা দেশকেই নিয়ে যায় অবনতির দিকে। এরূপ দেশে আইন হয়ে যায় অন্ধ, জাতি আটকে পড়ে দুর্নীতির কালো থাবায়। সমস্ত রাষ্ট্রীয় ব্যবসা হয়ে পড়ে অকেজো। চরিত্রহীন ব্যক্তিরা দেশ ও জাতির কথা বিবেচনা করে না। সবছিুর ঊর্ধ্বে তাদের স্বার্থ। এসব হীণমন্য লোক তাদের ক্ষুদ্র স্বার্থে দেশের বিরাট ক্ষতি করতেও দ্বিধা বোধ করে না। চোরাকারবারি, কালোবাজারি করে দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করে। বিশ্বের কাছে নিজের দেশকে হেয় প্রতিপন্ন করে। কিন্তু যারা চরিত্রবান তারা নিজের স্বার্থ দেশের কল্যাণে জলাঞ্জলি দিতে পিছপা হয় না। দেশ ও জাতির উন্নতিই একজন চরিত্রবান লোকের কাছে পরম আকাক্সক্ষার বিষয়। তাই দেশের অগ্রগতির জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন একটি চরিত্রবান জাতি গড়ে তোলা।
চরিত্রহীনতার কুফল: পৃথিবীতে একটি শিশু জন্ম নেয় পবিত্র ও নিষ্কলুষ হয়ে। ধীরে ধীরে এ শিশু বড় হতে থাকে। শিক্ষা জীবন সমাপ্ত করে প্রবেশ করে কর্ম ক্ষেত্রে। তার সামনে উন্মোচিত হয় বিশাল এ পৃথিবীর বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবন। এ জীবন চলতে গিয়ে মানুষ তাড়িত হয় নানা রকম চাহিদার দ্বারা। এই অসংখ্য চাহিদা পূরণের জন্য মানুষ জড়িয়ে পড়ে নানা অন্যায় অবিচারে। আবদ্ধ হয়ে পড়ে দুর্নীতির বেড়াজালে। ফলে সে হয়ে পড়ে চরিত্রহীন। চরিত্রহীন মানুষ পশুর সমান। চরিত্রহীন ব্যক্তির জীবন পঙ্কিলতা পূর্ণ হয়। এদের মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটে না ফলে সমাজের চোখে এরা হয়ে থাকে কীট-পতঙ্গ সাদৃশ্য। চরিত্রহীন ব্যক্তি কেবল তার নিজের জীবনকেই কলঙ্কিত করে না। গোটা সমাজ ও জাতিকেই কালিমায় ঢেকে দেয়। চরিত্রহীন মানুষেরা যে সমাজে বাস করে সে সমাজ নানা অন্যায় ও কদর্যতায় ভরে যায়। সমাজের অন্যান্য মানুষরাও তাদের মান-মর্যাদা নিয়ে সবসময় আতঙ্কে থাকে। এই চরিত্রহীনতা ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের শান্তি নষ্ট করে।
উপসংহার: চরিত্র আমৃত্যু একটি কালো ছায়ার মতো মানুষকে ধাওয়া করে। অসৎ চরিত্র জীবনের সকল সুখ-শান্তি বিনষ্ট হয়। ফলে সারাজীবনের উপার্জিত ধন-সম্পদ কোনো কাজেই আসে না। তাই মোহময় এ পৃথিবীর মিথ্যা ছলনায় ভুলে চরিত্র হারানো উচিৎ নয়। একজন চরিত্রবান ব্যক্তি সমাজের কাছ থেকে যে সম্মান ও ভালোবাসা পায় তার মূল্য কোনো কিছুর সাথেই তুলনা করা সম্ভব না। চরিত্র মনুষ্যত্বের পূর্ণ বিকাশ ঘটিয়ে মানুষের ক্ষুদ্র জীবনকে করে তোলে মহীয়ান। এজন্যই বলা যায় “চরিত্র মানুষের অমূল্য সম্পদ”।

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]