স্বেচ্ছায় রক্তদান



(সংকেত: ভূমিকা; রক্তদান কী; রক্তের গ্রুপ; রক্তদানের নিয়ম; রক্তদান ও সংরক্ষণ নীতি; রক্তদানে সমস্যা; রক্ত গ্রহণে সতর্কতা; রক্তদানে বিভিন্ন কর্মসূচি; বাংলাদেশে নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন কার্যক্রম; রক্তদান সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা; উপসংহার।)
ভূমিকা: সভ্যতার উষালগ্ন থেকেই মানুষ আপদে-বিপদে একে অন্যের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে এবং সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। দুঃস্থ মানবতার পাশে এসে দাঁড়ানো এবং ব্যথিত জনের দুঃখ-কষ্ট, যন্ত্রণা এবং হাহাকার দূর করে মুখে হাসি ফুটানোই হলো মহৎ হৃদয়ের মানুষের স্বভাবজাত ধর্ম। আজকের দিনে অন্যের জীবন বাঁচাতে ‘স্বেচ্ছায় রক্তদান’ কর্মসূচি মানবতার নতুন অধ্যায় সূচনা করেছে। নিজের রক্ত দিয়ে অন্যের জীবন বাঁচানোর উদ্যোগ মানুষকে মানবতাবোধে সমৃদ্ধ করে তোলে।
রক্তদান কী: কোনো কারণে মানবদেহে প্রয়োজনীয় রক্তের অভাব ঘটলে তার জীবন সংকটময় হয়ে পড়ে।  হঠাৎ করে কোনো দুর্ঘটনা অথবা আঘাতের ফলে অত্যধিক রক্তপাত হলে প্রাণের সংশয় দেখা দেয়। কোনো অসুখের ফলে শরীরের রক্তের পরিমাণ কমে যেতে পারে। আবার কখনও অপারেশনের সময় রক্তের অভাব পূরণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে। আর প্রয়োজনীয় রক্তের অভাব দূর করার জন্য যে ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে তাই হলো রক্তদান। এটি অন্যতম একটি মহৎ কাজ।
রক্তের গ্রুপ: মানুষের রক্তের ৪টি গ্রুপ আছে। সে গুলো হলো- A, B, AB  এবং O গ্রুপ। বিজ্ঞানী Landois রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ে প্রথম কৃতিত্ব দেখান। রক্ত নেওয়ার সময় প্রথমে রোগীর রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করা হয়। তারপর রক্তের গ্রুপের সঙ্গে মিলিয়ে সুস্থ দেহের রক্ত রোগীর দেহে সঞ্চালন করা হয়। তবে তার আগে অবশ্য Rh গ্রুপও দেখা হয়।
রক্তদানের নিয়ম: রক্তদানের মাধ্যমে রোগীর জীবন বাঁচানোর প্রক্রিয়াটি একটু জটিল ধরণের হয়। উপযুক্ত বৈশিষ্ট্যের রক্ত হলেই তা রোগীর শরীরে সঞ্চালন করা যাবে। রক্তগ্রহণের জন্য কিছু আন্তর্জাতিক নিয়ম-নীতি প্রচলিত আছে। প্রাপ্ত বয়স্ক সুস্থ সবল দেহের অধিকারী যেকোনো ব্যক্তি রক্ত দিতে পারে। তবে তার কোনো মারাত্মক রোগ থাকবে না। তার বয়স ১৮-৫৭ বছরের মধ্যে হতে হবে। একজন রক্তদাতা প্রতি তিন মাস পর পর রক্ত দিতে পারে। রক্তদাতার শরীরের তাপমাত্রা থাকতে হবে ৯৯ ডিগ্রির নিচে। রক্তচাপ থাকবে ১০০/৬০ থেকে ২০০/৯০ এর মধ্যে। অনেক সময় রক্তদাতার শরীর থেকে রক্ত নিয়ে ব্লাড ব্যাংকে সংরক্ষণ করা হয় এবং প্রয়োজন বিবেচনা করে তা ব্যবহার করা হয়।
রক্তদান ও সংরক্ষণ নীতি: রক্তদান হলো শুভ চেতনাসম্পন্ন মানুষের কাছে এক মহান ব্রত। এ মহান কাজে অংশগ্রহণের জন্য একজন সুস্থ ব্যক্তির দেহ থেকে ২৫০ সি.সি. রক্ত একসাথে টেনে নেয়া যায়। এতে শরীরের কোনো ক্ষতি হয় না। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা রক্ত সংরক্ষণের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে। প্রতিটি চিকিৎসা কেন্দ্রে এবং হাসপাতালে এখন ব্লাড ব্যাংক রয়েছে। ১৯৩৭ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরে প্রথম ব্লাড ব্যাংক স্থাপিত হয়। একজন সুস্থ মানুষের দেহ থেকে ২৫০ সি.সি রক্ত নিয়ে একটি ব্যাগে রাখা হয়। এ ব্যাগটি ৫০ সি. সি. অ্যাসিড সাইট্রেট ডেক্সট্রোজ সম্বলিত থাকে। ১৯১৪ সালে বৈজ্ঞানিক Houstain ব্যাগে রক্ত জমাট না বাঁধার বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। রক্তের বিশুদ্ধ থাকা নির্ভর করে উপযুক্ত তাপমাত্রা এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থার উপর। সাধারণত ৪ ডিগ্রি থেকে ৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপ সমন্বিত ফ্রিজে তিন মাস পর্যন্ত রক্ত বিশুদ্ধ থাকে।
রক্তদানে সমস্যা: রক্তদান একটি স্পর্শকাতর বিষয়। সে জন্য এর নিয়ম-নীতি সুষ্ঠুভাবে মেনে চলা উচিত। অনেক সময় রক্ত সংগ্রহের ভালো কোনো ব্যবস্থা না থাকায় সমস্যা দেখা দেয়। রক্ত যাতে দূষিত না হয় সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে। রক্ত দূষিত হলে তা ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে। আবার কিছু পেশাদার রক্তদাতাগণ অর্থের জন্য রক্ত বিক্রি করে এবং একে লাভজনক ব্যবসা মনে করে। লোভের ফলে এখানে দুর্নীতি প্রবেশ করতে পারে। এতে রোগীর মৃত্যু হতে পারে।
রক্ত গ্রহণে সতর্কতা: রক্ত গ্রহণের সময় রক্ত গ্রহীতা এবং রক্তদাতাকে একই শ্রেণির রক্তের অধিকারী হতে হয়। রক্তের গ্রুপ যদি না মিলে তাহলে গ্রহীতার রক্তে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এতে করে রোগীর মৃত্যুর আশঙ্কাও তৈরি হয়। তাছাড়া রক্ত গ্রহণের সময় কোনো প্রকার ব্যবহৃত সুই বা সিরিঞ্জ ব্যবহার করা যাবে না। নতুন সুই বা সিরিঞ্জ ব্যবহার করতে হবে।
রক্তদানে বিভিন্ন কর্মসূচি: স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে রক্তদান কর্মসূচির কাজ শুরু হয়। বর্তমানে এদেশের প্রত্যেক জেলায় ব্লাড ব্যাংক স্থাপিত হয়েছে। এখন মানুষের মধ্যে স্বেচ্ছায় রক্তদানের প্রবণতা বেড়েছে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে সাধারণ মানুষকে রক্তদানে অনুপ্রাণিত করা হচ্ছে। বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানও রক্তদানের কাজে এগিয়ে আসছে। এদের মধ্যে রেড ক্রিসেন্ট, সন্ধানী ও বাঁধন প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়াও বিভিন্ন ক্লাব-সংঘ, স্কুল, কলেজ থেকে স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস ও আলোচনা সভা থেকে রক্ত সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।
বাংলাদেশে নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন কার্যক্রম: নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন কার্যক্রম মানব জীবন রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। বাংলাদেশে এ কার্যক্রমের আওতায় বিশেষজ্ঞ হাসপাতাল, সামরিক হাসপাতাল, জেলা হাসপাতালসহ মোট ৯৭টি হাসপাতালে নিরাপদ রক্ত সরবরাহ ও সঞ্চালন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
রক্তদান সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা: আমাদের দেশে অনেকের মধ্যে রক্তদান সম্পর্কে কিছু ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত আছে। রক্তদানের কথা শুনলে অনেকে ভয়ে চমকে উঠে। তারা মনে করে রক্তদান স্বাস্থ্যহানি ঘটায়। তাদের ধারণা পুরোটাই ভ্রান্ত। কারণ আমাদের দেহে প্রতিদিন রক্ত কোষ সৃষ্টি হচ্ছে এবং পুরাতন রক্ত কোষ অকেজো হয়ে পড়ছে। রক্ত না দিলেও পুরাতন রক্ত কোষ অকেজো হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পায় না। তাই প্রতি তিন মাস পর পর যে কোনো প্রাপ্ত বয়স্ক সুস্থ সবল মানুষ রক্ত দিতে পারে।
উপসংহার: রক্তদান ধনী-গরীবের বৈষম্য, সাদা-কালোর ভেদাভেদ এবং ধর্মীয় ব্যবধান ঘুচিয়ে দেয়। রক্তদান মানব জাতির জন্য এক মহান সেবাকর্ম। এক ব্যাগ রক্তই একজন মুমূর্ষু ব্যক্তির জীবন বাঁচাতে পারে। এ জন্য আমাদের সকলকে রক্তদানে এগিয়ে আসতে হবে এবং এ ব্যাপারে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]