(সংকেত: ভূমিকা, মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি, আমাদের অস্তিত্বের ওপর প্রথম আঘাত, আমাদের অস্তিত্বের ওপর প্রথম আঘাত, মুক্তিযুদ্ধের প্রভাব ও চেতনার বিকাশ, উপসংহার)
ভূমিকা
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ শুরু হয়েছিল। কিন্তু বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রাম যুগ যুগান্তর ধরে চলে এসেছিল। ১৭৫৭ সালে পলাশীর আম্রকাননে বাংলার স্বধীনতার সূর্য যেদিন অস্তমিত হয় ওই ঐতিহাসিক আম্রকাননে মীর জাফর আলী ইংরেজ শাসক-শোষক গোষ্ঠীর পক্ষে বেঈমানের ভূমিকায় অংশ নেয় অপর দিকে যুদ্ধের একই ময়দানে স্বাধীনতা রক্ষার জন্য মোহনলাল নিজের জীবনের রক্ত ঢেলে দিয়ে আম্রকাননেই স্বধীনতার সংগ্রাম সূচিত করে। এরপর অনেক স্বপ্ন, সংগ্রাম, লড়াই, জেল, জুলুম, ফাঁসি, নির্বাসন। ক্ষুদিরাম, সূর্যসেন, প্রীতিলতা, সুভাষ বোস, দেশবন্ধু, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা সংগ্রামের এই মহাকালে কত যে মহামানবের নাম। অবশেষে ইংরেজ গেলো এলো পাকিস্তান । বাঙালির পরাধীনতার রাত পোহায়না। এরপর লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে বিজয় সূর্য উদিত হয় দীর্ঘ নয় মাসের বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম তথা সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রামের ফলে, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। এ দিন পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস একদিকে যেমন করুণ, শোকাবহ, লোহমর্ষক, তেমনি ত্যাগের মহিমাব্যঞ্জিত ও বীরত্বপূর্ণ।
মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি
বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের পেছনে রয়েছে একটি ঐতিহাসিক পটভূমি। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন এক ষড়যন্ত্রমূলক যুদ্ধে পলাশীর প্রান্তরে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাকে পরাজিত করার মাধ্যমে ইংরেজরা এ দেশ অধিকার করে। তারপর ২০০ বছর বাঙালি ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠীর পদানত ছিল। বিজাতীয় শাসন, শোষণ, বঞ্চনা আর নিপীড়নের যাঁতাকলে জাতি নিষ্পেষিত হয়েছে। মনের গোপনে লালিত স্বাধীনতার স্পৃহা আর ধূলিলুণ্ঠিত স্বপ্নসাধ থেকে বিভিন্ন সময় এ দেশের মানুষের মনে জন্ম দিয়েছে বিেেক্ষাভ, আন্দোলন আর সংগ্রামের চেতনা। ফলে ব্রিটিশরা এ দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়। ওরা যাবার কালে ভারত ভাগ করে দিয়ে যায় এক অবাস্তব কাল্পনিক, অবৈজ্ঞানিক রাষ্ট্রতত্ত্বের ভিত্তিতে। যা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিশ্লেষণে মেনে নেয়না। হিন্দু মুসলিম দুটি ধর্মের ভিত্তিতে দুটি আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তান’র জন্ম হয়। ভাষা সাহিত্য সংস্কৃতি অর্থনীতি সামাজিক আচার আবহাওয়া জলবায়ু ভৌগলিক অবস্থান কৃষি খাদ্যাভ্যাস এইসব মৌলিক ব্যবধান সত্ত্বেও ভৌগলিক দূরত্বে থাকা দুটি ভূখন্ড পাকিস্তান আর পূর্ব বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তান নামে পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠন করা হয়। বাংলা আর বাঙালিদের দুর্ভাগ্য, নামে স্বাধীন হলেও প্রকৃত স্বাধীনতার সুফল জাতি ভোগ করতে পারেনি। পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী রাষ্ট্রের শাসনযন্ত্র সম্পূর্ণ নিজেদের করায়ত্ত রেখে বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসকদের মতোই আরেক শোষণের ইতিহাস রচনা করে। বৈষম্যের নীতি বিস্তার করে তারা এ দেশের মানুষের শিক্ষা দীক্ষা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক মর্যাদা সকল ক্ষেত্রে চরম অবহেলা প্রদর্শন করে। সর্বক্ষেত্রে অধিকার হারিয়ে জনমনে যে পুঞ্জীভূত বিক্ষোভ জমা হয়েছিল, তাই অধিকার আদায়ের আন্দোলনের মাধ্যমে প্রকাশ হয়ে পড়ে। পাকিস্তানি রাষ্ট্র নায়ক জিন্নাহ সাহেব শাসন ভার গ্রহণের পরই ভাবেন কীভাবে তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তানকে পদানত করা যায় তার কৌশল হিসেবে প্রথমেই সিদ্ধান্ত নেয় পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে ঊর্দু। ১৯৪৮ সালেই বাঙালি বুঝতে পারে তার মায়ের ভাষা বাংলা কেড়ে নিয়ে প্রথমেই তাদের বোবা বানিয়ে শাসন শোষণ চালিয়ে যাবে। কিন্তু বাঙালির আছে এক ঐতিহ্যমন্ডিত সংস্কৃতি, আছে শিল্প সাহিত্য, আছে রবীন্দ্রনাথ, বিদ্রোহী কবি নজরুল, জীবনানন্দ দাশ, মানুষের কবি সংগ্রমের কবি সুকান্ত, আছে লালন, হাসন, মুকুন্দদাস, কবিয়াল বিজয়, স্বাধীনতার লড়াইয়ে জীবন দানকারী মাস্টার দা, ক্ষুদিরাম, প্রীতিলতা। মায়ের ভাষা রক্ষার্থে প্রথমেই জীবন দিতে হলো ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি। জীবন দিলো সালাম বরকত রফিক জব্বার আরো অনেকে। এভাবে বাংলার মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ফুসে উঠতে থাকে। অন্যদিকে পাকিস্তানি শাসক শ্রেণির অত্যাচার, বৈষম্যও বাড়তে থাকে। বাঙালির সংস্কৃতি এক অসামপ্রদায়িক চেতনা সমৃদ্ধ চিরয়ত সম্প্রীতির সমাজ। কিন্তু শাসক গোষ্ঠী নানা ভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করবার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। বাঙালিরা বুঝতে পারে। এসব ষড়যন্ত্রের কারণে
বাঙালির জাতীয় চেতনার ঐক্য আরো দৃঢ় হয়।
১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে পাকিস্তানি সরকারের চরম পরাজয়ের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির স্বাধিকার আন্দোলন ও জাতীয় চেতনার বিজয় ঘোষিত হয়। পরাজয়ের গ্লানি মুছতে শুরু হয় দমননীতি। ১৯৫৮ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত দেশে নিরঙ্কুশ সামরিক শাসন চলে। ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ঘটে চরম বিস্ফোরণ। ১৯৭০ সালের জাতীয় পরিষদের সাধারণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু কুচক্রী ইয়াহিয়া সরকার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা দিতে গড়িমসি করার ফলে বাঙালির মনে অসন্তোষ স্তব্ধ করার জন্য ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ রাতে ইয়াহিয়া সরকার বিশ্বের ইতিহাসে বৃহত্তম গণহত্যা সংঘটিত করে। আন্দোলনের নেতা শেখ মুজিবকে বন্দি করে পশ্চিম পাকিস্তানের নিরুদ্দেশ কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
আমাদের অস্তিত্বের ওপর প্রথম আঘাত
দেশ বিভাগের পর আমাদের ওপর প্রথম আঘাত আসে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণার মাধ্যমে। ১৯৪৮ সালে গণপরিষদে বাংলা ভাষার পরিবর্তে উর্দুকে রাষ্ট্র ভাষা ঘোষণা দিলে গণপরিষদের দেশপ্রেমিক বাঙালি সদস্য প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। এরপর মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কার্জন হলে ১৯৪৮ সালে এক জনসভায় ‘উর্দু এবং উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’ এভাবে ঘোষণা দিলে বীর বাঙালি, ছাত্রসমাজ এর প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলে। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি এ দেশের তরুণ সমাজ বুকের তাজা রক্ত ত্যাগের মাধ্যমে, নিজেদের উৎসর্গের মাধ্যমে এ দেশের সংগ্রামী জনতা তাদের ওপর নেমে আসা জুলুম ও নির্যাতনকে প্রতিরোধ করে। বাঙালিরা বুঝতে পারলো পাকিস্তান নামের এই রাষ্ট্র আমাদের না। আমারা আসলে পশ্চিম পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক শাসন আর শোষণের জালে নতুন করে আটকে পড়েছি। বাঙালিরা বুঝতে পারলো এই জাল ছিন্ন করে বেড়িয়ে আসতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধের প্রভাব ও চেতনার বিকাশ
বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের আত্মত্যাগ থেকে যে চেতনা লাভ করেছে তা জাতির সকল আন্দোলনে প্রেরণা হিসেবে কাজ করছে। সমগ্র জাতি একতার বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে এই যুদ্ধের ঘটনাকে কেন্দ্র করে। ঐক্যবদ্ধ জাতি দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়েছে তার পেছনে মুক্তিসংগ্রামের আত্মত্যাগ কাজ করেছে। অত্যাচার আর শোষণের কালো হাত গুঁড়িয়ে দেয়ার শক্তি ও প্রেরণা এসেছে এই স্বাধীনতার যুদ্ধ থেকে। বাংলাদেশের মানুষের স্বজাত্যবোধের স্ফুরণের উৎস এই যুদ্ধ। ’৭১ সাল দেশে ও জাতির নতুন ইতিহাসের জন্মদাতা। অধিকার আদায়ের জন্য আত্মসচেতন হওয়ার প্রেরণা দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ। এই দিনগুলোতে মানুষ নতুন করে জেগে উঠেছিল। সে জাগ্রত চেতনা ছড়িয়ে গেছে বাংলাদেশের মানুষের পরবর্তী কর্মকাণ্ডে।
গত তেত্রিশ বছর ধরে নানাভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকশিত হয়েছে আমাদের সমাজজীবনে। ব্যক্তিস্বাধীনতা, নারীমুক্তি আন্দোলন, নারীশিক্ষা, গণশিক্ষা, সংবাদপত্রের ব্যাপক বিকাশ, সর্বোপরি গণতান্ত্রিক অধিকার চেতনা ব্যাপকভাবে বিস্তৃতি লাভ করেছে সমাজে। এরশাদ সরকারের নয় বছরে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে যে প্রবল গণজোয়ারের মধ্য দিয়ে নবতর বিজয় অর্জন ও গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে তারও প্রেরণা যুগিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাদের সাহিত্যে বিশেষ করে কবিতা ও কথাসাহিত্যে এক নবতর সাহিত্যধারার জন্ম দিয়েছে। বাংলাদেশে কবিতা চর্চা ও কথাসাহিত্য চর্চা আজকে যতটা ব্যাপ্তি পেয়েছে তার পেছনে বড় প্রেরণা ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাদের সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে প্রকাশিত হয়েছে গানে এবং নাটকে। গণসচেতনতামূলক বক্তব্যধর্মী নাটক ব্যাপকভাবে রচিত হয়েছে স্বাধীনতার পর। আমাদের দেশাত্মবোধক গানের ক্ষেত্রে এক নতুন জোয়ার এনেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। অসংখ্য গীতিকার রচনা করেছেন মুক্তিযুদ্ধে বিজয়গাথা তাদের গানে। তবে আমাদের চলচ্চিত্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আশানরূপভাবে প্রতিফলিত হয়নি। খুব সামান্য সংখ্যক চলচ্চিত্রেই মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাথা প্রকাশ পেয়েছে।
রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রতিফলন: যে স্বপ্ন বা আকাঙ্ক্ষা সামনে রেখে মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল সেই স্বপ্ন নানা কারণেই গত তেত্রিশ বছরেও সাফল্যের লক্ষ্যমাত্রা স্পর্শ করতে পারেনি। স্বাধীনতার পর বারবার সামরিক অতভ্যুত্থান, হত্যা আর রক্তপাতের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখল, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী দেশী ও বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীদের তৎপরতা, অর্থনেতিক বৈষম্য, যুবসমাজের মধ্যে সৃষ্ট হতাশা, বেকারত্ব, জনস্ফীতি, আইন শৃঙ্খলার অবনতি, ঘুষ, দুর্নীতি ইত্যাদি অবক্ষয় স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিপন্ন করে চলেছে। প্রতিটি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই সভা সমিতি, বিবৃতিতে বারবার যে কথাটি সবচেয়ে বেশি উচ্চারণ করেছেন তা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখার কথা। অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী কার্যকলাপ বারবার সংঘটিত হয়েছে প্রশাসনের ভেতরে এবং বাইরে। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা তাদের প্রাপ্য সম্মান এবং অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
বর্তমানে আমাদের সমাজজীবনে চরম অবক্ষয়ের চিত্র জীবন্ত হয়ে আছে। এ অবক্ষয় যুবসমাজকেও প্রভাবিত করছে, দোলা দিচ্ছে তাদের মন মানসিকতাকে। আমাদের যুবসমাজের সামনে আজ কোনো আদর্শ নেই। নেই অনুপ্রাণিত করার মতো কোনো মহৎপ্রাণমানুষ। ঘরে বাইরে সর্বত্রই আজ মনুষ্যত্বের দীনতার চিত্র। যুব সমাজকে নতুন চেতনায় উদ্দীপ্ত করার মতো কোনো পরিকল্পনা নেই, ফলে তারা প্রতিনিয়ত অবক্ষয়ের দিকে অগ্রসরমান। অর্থনৈতিক বিপর্যয়ই আমাদের যুবসমাজের অবক্ষয়ের অন্যতম কারণ। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাও যুবসমাজের অবক্ষয়ের আর একটি কারণ। একদিকে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব কলহ, অপরদিকে অর্থনৈতিক দুর্দশা, শিক্ষাজগতে নৈরাজ্য, সমাজসেবার নামে নিজের স্বার্থ হাসিল এবং স্বেচ্ছাচারিতা যুবসমাজকে বিপথগামী করেছে। তরুণসমাজ অবাক বিস্ময়ে প্রত্যক্ষ করে, সমাজে সমাজবিরোধীর যে সম্মান, যে প্রতিপত্তি, সেখানে একজন জ্ঞানী, সৎ মানুষের মূল্য তুচ্ছ। সততা সেখানে লাঞ্ছিত, অসহায়। বিবেক সেখানে বিবর্জিত। অথচ জ্ঞানী, গুণীরাও তাদের খাতির করে। রাজনৈতিক নেতাদের তারা ডান হাত। জঘন্য, নিষ্ঠুর কাজকর্ম করেও তারা আইনের চোখে নিরাপদ। প্রশাসন প্রয়োজনমতো ওদের ব্যবহার করে। কী তাদের মূলধন? তারা অনায়াসে মানুষ খুন করে, ডাকাতি করে, জনজীবনে ত্রাসের সৃষ্টি করে। এই মূলধন নিয়েই ওরা সমাজের বিশিষ্ট মানুষ। আজ তাই মানবিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধও গৌণ হয়ে উঠেছে। বস্তুত সমাজের সর্বস্তরে আজ যে মূল্যবোধের অভাব, তার মারাত্মক প্রতিক্রিয়া যুবকদের মাঝে প্রতিনিয়ত বিস্তৃত হচ্ছে। এভাবে তরুণসমাজকে বিপথগামী করার জন্য আরও নানা উপকরণ সদা সক্রিয়।
আজ আমাদের যুবকদের সুসংগঠিত করে সত্য এবং ন্যায়ের পথে পরিচালিত করতে হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবোধ জাগিয়ে তুলতে হবে। তাদের সত্যিকার অর্থে স্বাধীনতা সংগ্রমে আমাদের যে আত্মত্যাগ ছিল, সমগ্র জাতি একতার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে যে জীবন উৎসর্গ করেছিল, তা আবার পুনরায় স্মরণ করিয়ে দিয়ে তরুণদের জাগিয়ে তুলতে হবে। তারা সচেতন হলে কোনোকরম অন্যায় মন্ত্রণা তাদের বশীভূত করতে পারবে না। সমাজে যতদিন অন্যায় অবিচার মাথা উঁচু করে থাকবে ততদিন যুবসমাজকে সুপথে আনা কষ্টকর। শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিয়ে তাদের সামনে থেকে অন্ধকার দূর করতে হবে। রীতিমতো শরীরচর্চা এবং নানারকম খেলাধুলার ব্যবস্থা করতে হবে। দ্রুত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে বেকার সমস্যা দূর করতে হবে। তাছাড়া যারাই সমাজে অপরাধকর্মে লিপ্ত হয় তাদের জন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। যুবকরাই দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ এবং জাতির কর্ণধার। তাদের মনে এ চেতনাবোধ জাগিয়ে তুলতে হবে। একই সাথে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সত্যিকার অর্থে প্রতিষ্ঠা করতে হলে প্রয়োজন দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক শক্তির সংঘবদ্ধ প্রয়াস ও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে আন্তরিক পদক্ষেপ। এজন্য দুর্নীতিমুক্ত কল্যাণমূলক শাসনব্যবস্থা যেমন প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন তেমনি প্রয়োজন মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত গৌরবগাথা আর আত্মত্যাগের ইতিহাস ভবিষ্যৎ বংশধরদের কাছে তুলে ধরা। যে আদর্শ, লক্ষ্য ও চেতনা নিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিকামী লাখ লাখ মানুষ তাদের তাজা প্রাণ দিয়েছে, শত সহস্র মা বোন ইজ্জত দিয়েছে সমাজ ও জাতীয় জীবনে মুক্তিযুদ্ধের সেই আদর্শ ও চেতনাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এটাই হোক আমাদের অঙ্গিকার।
উপসংহার
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ছিল জাতির অস্তিত্বের সংগ্রাম। পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকে যে শোষণ আর অত্যাচারের শুরু হয়েছিল তার অবসান ঘটে এই যুদ্ধের মাধ্যমে। সমগ্র জাতি, জাতির সর্বপর্যায়ের মানুষ দেশের মুক্তির জন্য আত্মোৎসর্গের চেতনায় নিজেদের উৎসর্গ করেছিল বলেই প্রবল শক্তিধর হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটাতে সক্ষম হয়েছিল। এই সংগ্রাম বাংলাদেশের মানুষকে সীমাহীন মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে। ত্রিশ লক্ষ মানুষের এক সাগর রক্তের বিনিময়ে এই স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। স্বাধীনতার মর্যাদা রক্ষার জন্য আত্মোৎসর্গের মনোভাব নিয়ে সকলের দায়িত্ব পালন করতে হবে।
FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ