(সংকেত: ভূমিকা, শিষ্টাচার কী, মানবজীবনে শিষ্টাচারের প্রয়োজনীয়তা, ছাত্রজীবনে শিষ্টাচার, শিষ্টাচারহীনতার বর্তমান চিত্র, শিষ্টাচার অনুশীলন, উপসংহার।)
ভূমিকা
আদি যুগে মানুষ ছিল অসামাজিক। তাকে প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকতে হয়েছে। এরপর মানুষ সমাজবদ্ধ হয়েছে, পরিণত হয়েছে সামাজিক জীবে। সমাজবদ্ধ জীবনযাপনে মানুষকে কতকগুলো চারিত্রিক গুণাবলি অর্জন করতে হয়। সকলের সঙ্গে প্রীতির বন্ধন, সৌজন্য ও সামাজিকতাই মানুষকে সামাজিক জীব হিসেবে মর্যাদা দেয়। মানুষের আন্তরিক সৌজন্যবোধের বাহ্যিক প্রকাশের নাম শিষ্টাচার। সামাজিক জীবনে শিষ্টাচারের প্রয়োজনীয়তা গভীর ও ব্যাপক। এটি ব্যক্তিজীবনের সৌন্দর্য, সমাজ জীবনের অলঙ্কারস্বরূপ।
শিষ্টাচার
মার্জিত, রুচিশীল ভদ্র ব্যবহারই শিষ্টাচার অভিধায় চিহ্নিত। আত্মীয়-অনাত্মীয়, পরিচিত-অপরিচিতি সকলের সাথে প্রীতিপূর্ণ, রুচিশীল ব্যবহারই শিষ্টাচার। শিষ্টাচার মানুষকে সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলে। এটি কোনো স্বাভাবিক সৌজন্য নয়। সৌজন্য বলতে শুধু বাইরের মার্জিত ব্যবহারকে বোঝায়। কিন্তু শিষ্টাচার হল সাধারণ সৌজন্য বোধের মহৎ হৃদয়ের উষ্ণ অনুভূতির প্রকাশ।
মানবজীবনের শিষ্টাচারের প্রয়োজনীয়তা
শিষ্টাচার মানবজীবনের এক দুর্লভ সম্পদ। এটি মানুষের দীর্ঘদিনের সাধনার ফল। শিষ্টাচারের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় ব্যক্তিজীবনের গৌরব। শিষ্টাচারের অধিকারী মানুষ হয় ভদ্র ও বিনয়ী। যে ব্যক্তি এ গুণার্জন করে সে সকলের কাছে প্রিয়ভাজন হয়। যে সমাজ একে আয়ত্ত করে, সে সমাজ সভ্যতার স্বর্ণশিখরে আরোহণ করে। আবার ব্যক্তিজীবনকেও পরিপূর্ণ করতে হলে প্রয়োজন শিষ্টাচার।
ছাত্রজীবনে শিষ্টাচার
ছাত্রজীবন হল মহৎ মানবজীবন গঠন করার উপযুক্ত সময়। সমগ্র জীবনের সাফল্য ও ব্যর্থতা নির্ভর করে এর ওপর। ভবিষ্যৎ জীবনের গতি প্রকৃতির নির্দেশনা তৈরি হয় ছাত্রজীবনে। শিষ্টাচার অর্জনের সবচেয়ে যথার্থ সময় ছাত্রজীবন। শিষ্টাচারের ছোঁয়ায় একজন ছাত্র হয়ে ওঠে ভদ্র ও বিনয়ী। লাভ করে এক নতুন প্রাণস্পন্দন। ছাত্রজীবনে গুরুজনকে শ্রদ্ধা করতে না শিখলে পরবর্তী জীবনে এ গুণ অর্জন করা সম্ভব নয়। কোনো ছাত্রের আচরণ যদি তার শিক্ষককে বিরক্ত করে, সহপাঠীদের করে বেদনাহত, পরবর্তী জীবনেও এর পুনরাবৃত্তি ঘটে। সমাজের জন্য সে হয়ে ওঠে ক্ষতির কারণ। ছাত্রজীবনই মুনষ্যত্ব অর্জনের শ্রেষ্ঠ সময়। শিষ্টাচার সেই মনুষ্যত্ব অর্জনের সিঁড়ি। এর মধ্যে রয়েছে নিজেকে সুন্দর ও সার্থকতায় পূর্ণ করে তোলার শক্তি। শিষ্টাচার একজন ছাত্রকে দেয় সমৃদ্ধ জীবনের সন্ধান। বিনয়ী ও ভদ্র ছাত্র শিক্ষকের স্নেহ ও আশীর্বাদে ধন্য হয়। এর অভাবে একজন ছাত্র হয়ে ওঠে স্বার্থপর, নিষ্ঠুর ও অভদ্র। সে ধ্বংস করে হৃদয়ের প্রেম, মমতা, দয়া ও সহানুভূতির গুণ। এসব গুণের অভাব তাকে পরিচালিত করে অন্যায় ও অসত্যের পথে।
শিষ্টাচারহীনতার বর্তমান চিত্র
বিদেশি সংস্কৃতির প্রভাবে সমাজে শিষ্টাচারহীনতার চিত্র দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সীমাহীন উদ্ধত আচরণ, বড়দের প্রতি সম্মান প্রদর্শন রীতি ও সুস্থ মানসিকতা কমছে। অর্থ, বিত্ত আর পেশিশক্তির দম্ভ সমাজজীবনকে করে তুলছে বিষাক্ত। শিষ্টাচার যেন বর্তমানে দুর্বলের অসহায়ত্বের প্রকাশ। শিষ্টাচারের সৌন্দর্য হারিয়ে মানুষ হৃদয়হীন হয়ে উঠছে। এ অবস্থা থেকে মানুষ নিজেদের মুক্ত করতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে সমাজজীবনে নেমে আসবে ভয়াবহ পরিণতি।
শিষ্টাচার অনুশীলন
সমাজজীবনকে নতুন প্রাণস্পন্দনে অনুপ্রাণিত ও জাতিকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে প্রয়োজন শিষ্টাচারের অনুশীলন। প্রতিটি মানুষকে অর্জন করতে হবে এই দুর্লভ চারিত্রিক ঐশ্বর্য। স্কুল-কলেজ, গৃহ-পরিবেশ ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই এই গুণের বিকাশ ঘটাতে হবে। শৈশব থেকেই যাতে শিষ্টাচার আয়ত্ত করা যায় সে পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এর ধারাবাহিক অনুশীলনের মাধ্যমে সুন্দর জীবন গড়ে তুলতে সামগ্রিক সহযোগিতা প্রদান করতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থা ও সামাজিক পরিবেশের মাধ্যমে যাতে শিষ্টাচার অনুশীলন করা যায় তার ব্যবস্থাও করতে হবে এবং তবেই অমার্জিত, শিষ্টাচার বর্জিত নৈতিকতা বিরোধ পাশবিকতার কবল থেকে মুক্ত করতে হবে আমাদের সমাজকে।
উপসংহার
উপরিউক্ত আলোচনার আলোকে বলা যায়, প্রত্যেক মানুষের শিষ্টাচার অনুশীলনের মধ্য দিয়েই আমাদের সমাজ মুক্ত হতে পারে বর্তমান অসুন্দর, অশুভ পরিস্থিতির হাত থেকে। এর মাধ্যমেই জাতি খুঁজে পেতে পারে মুক্তির পথ, বিশৃঙ্খল জীবনে আসতে পারে নতুন ছন্দ। শুভ ও কল্যাণকর সমাজ গড়ে তুলতে হলে শিষ্টাচার অনুশীলন একান্ত প্রয়োজন।
FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ